Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

আজ ৩০ জুন, ইতিহাসের দিকে চোখ বুলিয়ে দেখে নেব ইতিহাসের এই দিনে বিশিষ্টজনদের জন্ম-মৃত্যু, দিনসহ ঘটে যাওয়া ঘটনা।।।

আজ ৩০ জুন। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য ঘটনা, বিশিষ্টজনদের জন্ম-মৃত্যু দিনসহ গুরুত্বপূর্ণ আরও কিছু বিষয়।

দিবস—–

(ক) হুল দিবস বা সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস।(ভারত – পশ্চিমবঙ্গ)
(খ) আন্তর্জাতিক রবীন্দ্রকাব্যপাঠ দিবস।
আজ যাদের জন্মদিন—-

১৯২৬ – পল বার্গ, নোবেল পুরস্কার বিজয়ী আমেরিকান প্রাণরসায়নী।

১৯৩৩ – এম. জে. কে. স্মিথ, সাবেক ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা।
১৯৩৯ – হোসে এমিলিও পাচেকো, মেক্সিকোর তরুণ প্রজন্মের শীর্ষসারির কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, ছোটগল্পকার, অনুবাদক ও প্রাবন্ধিক।
১৯৪১ – পিটার পোলক, সাবেক ও বিখ্যাত দক্ষিণ আফ্রিকান আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা।

১৯৪৩ – (ক)  সৈয়দ আখতার মির্জা,ভারতের জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত চিত্রনাট্যকার, চলচিত্র পরিচালক।
(খ) আহমদ ছফা, বাংলাদেশী লেখক, চিন্তক ও ঔপন্যাসিক।
১৯৫৪ – সেরযহ সারগসয়ান, আর্মেনিয় রাজনীতিবিদ ও ৩য় প্রেসিডেন্ট।
১৯৬৩ – য়ংওইয়ে মাল্মস্টেন, সুইডিশ গিটারিষ্ট ও গীতিকার।

১৯৬৪ – মার্ক ওয়াটার্স, মার্কিন চলচ্চিত্র পরিচালক।

১৯৬৫ – গ্যারি প্যালিস্টার, ইংরেজ ফুটবল খেলোয়াড়।

১৯৬৬ – মাইক টাইসন, মার্কিন পেশাদার বক্সিং খেলোয়াড়।

১৯৬৯ – সনাথ জয়াসুরিয়া, শ্রীলংকার সাবেক ক্রিকেটার ও রাজনীতিবিদ।

১৯৭৭ – জুস্টো ভিলার, প্যারাগুয়ের ফুটবলার।
১৯৭৮ – লুসিয়ানা লেওন লুসি, ছোটবেলা থেকে রাজনীতির মাঠে এবং অসংখ্য তরুণের মনে ঝড় তোলেন।
১৯৮০ – রায়ান টেন ডেসকাট, নেদারল্যান্ডসের ক্রিকেটার।
১৯৮৩ – শেরিল কোল, ইংরেজ গায়ক, গীতিকার, ড্যন্সার ও মডেল।

১৯৮৫ – মাইকেল ফেলপস, মার্কিন সাঁতারু এবং ২৩ টি অলিম্পিক স্বর্ণ পদক বিজয়ী।
১৯৮৬ – ফ্রেডয় গুয়ারিন, কলম্বিয়ান ফুটবলার।

ইতিহাসের পাতায় আজকের দিনের ঘটনাবলী—-

১৭৫৭ – বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা ত্রিশ হাজার সেনা নিয়ে ইংরেজ অধিকৃত কোলকাতা দখল করেন।
১৭৫৭ – নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা স্বীয় পত্নী ও কন্যাসহ পালিয়ে যাবার সময় পথিমধ্যে রাজমহলে রাত কাটাতে গিয়ে তিনি ধরা পড়েন।
১৭৭২ – বাংলাদেশের রংপুরে ফকির মজনু শাহ জেহাদ শুরু করেন।
১৮৫৫ – ব্রিটিশবিরোধী সাঁওতাল বিদ্রোহ সংঘটিত হয়।
১৮৮৬ – ন্যায়বান গভরমেন্ট দক্ষিণ সাহাবাজপুর পরগনা কোর্ট অব ওয়ার্ডসের শাষনাধীনে গ্রহণ করে বাবু পিতাম্বর বন্ধ্যোপাধ্যায়কে অস্থায়ী ম্যানেজার নির্ধারণ করে দৌলতখায় প্রেরণ করে।
১৮৯৪ – কোরিয়া চীন থেকে স্বাধীনতা পেয়ে জাপানের সহযোগিতা কামনা করে।
১৮৯৪ – লন্ডন টাওয়ার ব্রিজ উদ্বোধন করা হয়।
১৯০৮ – রাশিয়ার সাইবেরিয়ার বৈকাল হ্রদের উত্তর-পশ্চিমের দুর্গম পার্বত্য এলাকা টাঙ্গুস্কায় এক প্রচন্ড শক্তির বিস্ফোরন ঘটে।
১৯১৬ – রাশিয়া ও জাপানের মধ্যে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
১৯২০ – আয়াতুল্লাহ মীর্যা মোঃ ত্বাক্বী শিরাজীর নেতৃত্বে ইরাকের জনগণ বৃটিশ দখলদারদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু করে।
১৯৩৪ – জার্মানিতে ফ্যাসিবাদী হিটলারের বিরোধীতা করায় প্রায় এক হাজার লোককে হত্যা করা হয়।
১৯৩৭ – বিশ্বে প্রথম আপৎকালীন টেলিফোন নম্বর ‘৯৯৯’ চালু হয় লণ্ডনে।
১৯৪১ – নাজি গ্রুপের অনুসারীরা ইউক্রেনের স্বাধীনতা ঘোষণা করে।
১৯৫৭ – আওয়ামী লীগের প্রাদেশিক প্রধান, মাওলানা ভাসানী দলের সভাপতি হিসেবে পদত্যাগ করেন।
১৯৬০ – কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র বা জায়ার স্বাধীনতা ঘোষণা করে।
১৯৬৯ – নাইজেরীয় সরকার বায়াফ্রায় পাঠানো রেডক্রসের সব ধরনের সাহায্য বন্ধ করে দেন।
১৯৭১ – ‘নিউইয়র্ক টাইমস’- এর প্রতিনিধি সিডনি শ্যানবার্গকে ঢাকা থেকে বহিষ্কার করা হয়।
১৯৭১ – মুক্তিযোদ্ধারা তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে নীলমনিগঞ্জ, হালসা ও আলমডাঙ্গা রেল লাইন বিষ্ফোরকের সাহায্যে উড়িয়ে দিয়ে পাকসেনাদের রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
১৯৭৪ – বিশিষ্ট রাজনীতিক ভাষাসৈনিক জাতীয় লীগ প্রধান জনাব অলি আহাদ বিশেষ ক্ষমতা আইনে গ্রেফতার হয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক হন।
১৯৭৯ – সুদানের জেনারেল ওমর আল বাশীর অভ্যন্তরীন সংকটের সম্মুখীন সুদানের সাদেক আল মাহদীর সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেন।
১৯৯১ – দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদী শাসনের অবসান ঘটে।
১৯৯৩ – ভারতে বাবরী মসজিদ ভাঙ্গার প্রতিবাদে ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদ থেকে লাখো জনতা অযোধ্যা অভিমুখে প্রতীকি লংমার্চ শুরু করেন।
১৯৯৭ – বর্ণাঢ্য এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে চীনের কাছে হংকং হস্তান্তর করা হয়।
২০০০ – সমাপ্য অর্থ বত্সরের কার্যাদি নির্বাহের জন্য সংযুক্ত তহবিল হইতে অর্থ প্রদান ও নির্দিষ্টকরণের কর্তৃত্ব প্রদানের জন্য আইন প্রণয়ন করা হয় ৷
২০০২ – বিশ্বের সবচেয়ে বড় পাটকল আদমজী জুট মিল বন্ধ করে দেয় বিএনপি জোট সরকার৷

এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন যারা—-

১৬৬০ – উইলিয়াম অউগট্রেড, ইংরেজ মন্ত্রী ও গণিতবিদ।
১৭১৭ – নবাব মুর্শিদ কুলি খান, বাংলার প্রথম নবাব।
১৮৩৯ – দ্বিতীয় মাহমুদ খাঁ, তুর্কি সুলতান।
১৯১৭ – দাদাভাই নওরোজি, বৃটিশ পার্লামেন্টের প্রথম ভারতীয় সদস্য।
১৯১৯ – জন উইলিয়াম স্ট্রাট ৩য় ব্যারন রেলি, নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ইংরেজ পদার্থবিজ্ঞানী।
১৯৩৪ – কার্ট ভন সচলেইচের, জার্মান জেনারেল, রাজনীতিবিদ ও ২৩ তম চ্যান্সেলর।

১৯৫৯ – খ্যাতনামা বাঙালি অভিনেতা ও নাট্যাচার্য শিশিরকুমার ভাদুড়ী।

১৯৬২ – প্রমীলা নজরুল, বিদ্রোহী কবি কাজি নজরুল ইসলামের পত্নী।

১৯৭১ – ভ্লাডিস্লাভ ভোল্কোভ, রাশিয়ান প্রকৌশলী ও মহাকাশচারী।

১৯৭৪ – এ্যালবার্ট কিং, মার্টিন লুথার কিং এর মা।
২০০১ – চ্যাট অ্যাটকিন্স, আমেরিকান গায়ক, গীতিকার, গিটার ও প্রযোজক।
২০০৩ – বাডি হাকেট, আমেরিকান অভিনেতা ও কৌতুকাভিনেতা।
২০০৯ – পিনা বাউসচ্, জার্মান ড্যন্সার, কোরিওগ্রাফার ও পরিচালক।
২০১৪ – পল মাযুরস্কয়, আমেরিকান অভিনেতা, পরিচালক, প্রযোজক ও চিত্রনাট্যকার।

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

Share This
Categories
গল্প

স্মরণে ভারতের জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত চিত্রনাট্যকার, চলচিত্র পরিচালক – সৈয়দ আখতার মির্জা।।।

সাইদ আখতার মির্জা (জন্ম 30 জুন 1943) একজন ভারতীয় চিত্রনাট্যকার এবং হিন্দি চলচ্চিত্র এবং টেলিভিশনের পরিচালক । তিনি মোহন জোশী হাজির হো- এর মতো উল্লেখযোগ্য সমান্তরাল চলচ্চিত্রের নির্মাতা ! (1984), আলবার্ট পিন্টো কো গুসা কিয়ুন আতা হ্যায় (1980), সেলিম ল্যাংদে পে মাত রো (1989) এবং নাসিম (1995), যেটি 1996 সালে দুটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছিল।

সাইদ মির্জা আজীবন সম্মাননা পেয়েছিলেন। ICA-তে কৃতিত্ব পুরস্কার – 2020 সালে আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক আর্টিফ্যাক্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল।তিনি জনপ্রিয় টিভি সিরিয়াল নুক্কাদ (রাস্তার কোণ) (1986) এবং ইন্তেজার (অপেক্ষা করুন) (1988) এর পরিচালক এবং সামাজিক কল্যাণ এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের উপর বিভিন্ন তথ্যচিত্রের পরিচালক।
প্রাথমিক জীবন এবং শিক্ষা——-
সাইদ 1943 সালে মুম্বাই , মহারাষ্ট্রে আখতার মির্জার কাছে জন্মগ্রহণ করেন , যিনি 1960 এর দশকে স্বয়ং বিখ্যাত চিত্রনাট্যকার।
কিছুকাল বিজ্ঞাপনে কাজ করার পর, মির্জা ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া (এফটিআইআই), পুনে, ভারতে যোগ দেন, যেখান থেকে তিনি 1976 সালে স্নাতক হন। পরবর্তীকালে, পরবর্তীতে তার কর্মজীবনে, তিনি ইনস্টিটিউটে শিক্ষকতাও করেন, যা পরবর্তীকালে হয়ে ওঠে। প্রিমিয়ার ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান।

ব্যক্তিগত জীবন—–

তার বাবা আখতার মির্জা ছিলেন একজন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র স্ক্রিপ্ট লেখক, যার কৃতিত্ব ছিল নয়া দৌর এবং ওয়াক্তের মতো । তার ভাই হলেন আজিজ মির্জা , 1989 সালের টেলিভিশন সিরিয়াল সার্কাস পরিচালনার পর শাহরুখ খানকে চালু করার জন্য দায়ী বলিউড পরিচালক ।
তিনি তার স্ত্রী জেনিফারের সাথে মুম্বাই এবং গোয়াতে থাকেন। তার ছেলে সফদার ও জহির যথাক্রমে নিউইয়র্ক ও দুবাইতে থাকেন।

কর্মজীবন—–

সাঈদ আখতার মির্জা 1976 সালে একটি ডকুমেন্টারি ফিল্ম মেকার হিসাবে তার কর্মজীবন শুরু করেন, প্রশংসিত অরবিন্দ দেশাই কি আজীব দাস্তান (1978) এর সাথে চলচ্চিত্রে স্নাতক হন, সামন্ততান্ত্রিক অর্থ সংস্কৃতির ফাঁদে আটকে পড়া আদর্শবাদী যুবকের হতাশা সম্পর্কে। এটি বছরের সেরা চলচ্চিত্রের জন্য ফিল্মফেয়ার সমালোচক পুরস্কার জিতেছে । বহু কাজ তিনি করেছেন। সাঈদ আখতার মির্জা এশিয়ান একাডেমি অফ ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশনের আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ক্লাবের আজীবন সদস্য ।

ফিল্মগ্রাফি——-

বস্তি উচ্ছেদ (1976), হত্যা (1976), ঘাশিরাম কোতোয়াল (1976), একজন অভিনেতা প্রস্তুত (1976), শহুরে হাউজিং (1977), অরবিন্দ দেশাই কি আজিব দাস্তান (1978), আলবার্ট পিন্টো কো গুসা কিয়ুন আতা হ্যায় (1980), পিপারসোদ (1982), মোহন জোশী হাজির হো! (1984), জবলপুরের রিকশা চালক (1984), নুক্কাদ (1986) টিভি সিরিজ, কেউ কি শুনছেন? (1987), আমরা কাবু করব (1988), ইন্তেজার (1988) টিভি সিরিজ, সেলিম ল্যাংদে পে মাত রো (1989), অজন্তা এবং ইলোরা (1992), নাসিম (1995), এক থো চান্স (2009)।

লেখক——

অরবিন্দ দেশাই কি আজিব দাস্তান (1978) (গল্প), আলবার্ট পিন্টো কো গুসা কিয়ুন আতা হ্যায় (1980), মোহন জোশী হাজির হো! (1984) (চিত্রনাট্য এবং গল্প), সেলিম ল্যাংদে পে মাত রো (1989) (চিত্রনাট্য ও গল্প), নাসিম (1995), চু লেঙ্গে আকাশ (2001), কর্ম ক্যাফে (সংক্ষিপ্ত) (2018)।

পুরস্কার——-

শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের জন্য 1979 ফিল্মফেয়ার সমালোচক পুরস্কার : অরবিন্দ দেশাই কি আজীব দাস্তান (1978), শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের জন্য 1981 ফিল্মফেয়ার সমালোচক পুরস্কার : আলবার্ট পিন্টো কো গুসা কিয়ুন আতা হ্যায় (1980) , 1984 পরিবার কল্যাণের জন্য শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার : মোহন জোশী হাজির হো! (1984), 1990 হিন্দিতে শ্রেষ্ঠ ফিচার ফিল্মের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার : সেলিম ল্যাংদে পে মাত রো (1989), 1996 শ্রেষ্ঠ পরিচালনার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার : নাসিম, 1996 শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র, পুরস্কার : নাসিম (1995)।

উপন্যাস——–

আম্মি: একটি গণতান্ত্রিক মায়ের চিঠি (2008), দ্য মঙ্ক, দ্য মুর এবং মোসেস বেন জালোন (2012)।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

বীরভূমের রাঙা মাটির রাঙ্গা-পথে সিধু-কানুর নেতৃত্বে সাঁওতাল বিদ্রোহ।।।।

উনিশ শতকে বঙ্গীয় ‘রেনেসান্স’ বা রেনেসাঁ যে সময়ে প্রকৃত জাতিয়তাবাদের ভিত্তি রচনা করতে ব্যর্থ হয়েছিল ঠিক সেই সময়েই ইংরেজ শাসকের অপশাসন ও জমিদার শ্রেণী আর মহাজনদের শোষণের বিরুদ্ধে সশস্ত্র কৃষক- সংগ্রাম সমগ্র জাতির সামনে এক নতুন সংগ্রামী ঐতিহ্য সৃষ্টি করেছিল যাকে ভারতের বৈপ্লবিক জাতিয়তাবাদের ভিত্তিভূমি বলা চলে।

ব্রিটিশ শাসনকালে যে সমস্ত কৃষক বিদ্রোহ হয়েছিল তাদের মধ্যে অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য ছিল সাঁওতাল বিদ্রোহ বা খেরওয়ারি হুল বিদ্রোহ।
১৮৫৫ সালের সাঁওতাল বিদ্রোহ ও ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ বা মহাবিদ্রোহ – দুটোকেই ভারতের প্রথম ঐক্যবদ্ধ স্বাধীনতা সংগ্রাম বলা চলে। এই উভয় সংগ্রামই শুরু হয়েছিল ইংরেজ শাসনের কবল থেকে, শোষণ থেকে মুক্তি ও স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার ধ্বনি নিয়ে।
সাঁওতাল বিদ্রোহের প্রকৃত কারণ ছিল জমির উপর একছত্র অধিকার প্রতিষ্ঠার অকাঙ্খা এবং তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল স্বাধীনতা স্পৃহা- যার ফলে তারা ধ্বনি তুলেছিল – “আমাদের নিজ সম্পত্তির অধীনে স্বাধীন সাঁওতাল রাজ্য চাই।”

এই প্রসঙ্গে ওল্ডহাম সাহেব মন্তব্য করেছিলেন – “পুলিশ ও মহাজনের অত্যাচারের স্মৃতি যাহাদের দেশপ্রেম জাগাইয়া তুলিয়াছিল সেই আন্দোলন তাহাদের সকলকেই আকৃষ্ট করিল,কিন্তু যে মূল ভাবধারাকে কার্যে পরিণত করিবার চেষ্টা হইতেছিল তাহা ছিল সাঁওতাল অঞ্চল ও সাঁওতাল রাজ্য প্রতিষ্ঠার চিন্তা।”
সাঁওতালী ভাষার বিদ্রোহকে বলা হয় ‘হুল’,সুতরাং সাঁওতাল বিদ্রোহ ‘সাঁওতাল হুল’ নামেই বেশি পরিচিত । ১৮৫৪ সাল থেকেই এই বিদ্রোহের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ উঠতে আরম্ভ করেছিল,তারপর ১৮৫৫ সালে সেই বিদ্রোহ পরিপূর্ণ ভাবে আত্মপ্রকাশ করে দাবাগ্নির মতো চতুর্দিকে বিস্তৃত হলো।শত শত বছরের প্রায় বিচ্ছিন্ন সমাজ জীবনের ধারা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সাঁওতালরা পথ খোঁজে মুক্তি আন্দোলনের মাধ্যমে। জমির অধিকার,জঙ্গলের অধিকার,ফসলের অধিকার,জমিদার ও মহাজনদের শোষণমুক্তির অধিকার ফিরে পাওয়ার স্বপ্ন যেন এই প্রথম ঘুম থেকে হঠাৎ জেগে ওঠে তারা দেখতে পায়।

সাঁওতালরা তাদের সমাজের দুর্দশার কথা গানের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে কোম্পানির কুশাসনের স্বরূপ তুলে ধরেছিল । যেমন –
“নেরা নিয়া নুরু নিয়া
ডিণ্ডা নিয়া ভিটা নিয়া
হায়রে হায়রে! মাপাঃ গপচদ,
নুরিচ নাড়াঁড় গাই কাডা নাচেল লৌগিৎ পাচেল লৌগিৎ
সেদায় লেকা বেতাবেতেৎ ঞাম রুওয়ৌড় লৌগিৎ
তবে দ বোন লুনাগেয়া হো।”
এর অর্থ হচ্ছে – “স্ত্রীপুত্রের জন্য
জমি জায়গা বাস্তুভিটার জন্য
হায় হায় ! এ মারামারি কাটাকাটি
গো-মহিষ-লাঙ্গল ধন-সম্পত্তির জন্য
পূর্বের মত আবার ফিরে পাবার জন্য
আমরা বিদ্রোহ করবো।”
গানটির প্রতিটি লাইনে প্রতিটি শব্দে শোষণ আর উৎপীড়নে গুমড়ে ওঠা সাঁওতালদের মনের গোপন কথা প্রকাশ পেয়েছিল। সেদিন এই প্রকার আরও অনেক গান তারা রচনা করেছিল সংগ্রাম করে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে।
এরূপ আরো একটা গান এখানে তুলে ধরা হলে –
“আদ বাংবন পৌচঃ সিধু আদ বাংবন থিরঃ,
বাইরি ঞেলতে লৌড়হাই ঘন বাংবন ঞিরঃ।
বহঃক্ ঞুরুঃ রেহঁ সিধু মায়াম লিঙ্গি রেহঁ,
বাংবন পাচঃ লৌড়হাই আবন দেবন সহরঃ।।
এই গানের অর্থ হচ্ছে –
“আর আমরা পিছু হঠব না সিধু আর চুপ থাকবে না,
শত্রু দেখে লড়াই থেকে পালাব না,
মাথা উড়ে গেলেও সিধুর রক্ত বইতে থাকলেও,
আমরা আর পিছু হটবনা,লড়াই মুখো হব।।”

এই সব কবিতা বা গানের মধ্য থেকে বোঝা যাচ্ছে আদিবাসী সহজ সরল সাঁওতালরা যুগ যুগ ধরে শোষণ-অত্যাচারের শিকার হওয়ার জন্য তারা বাধ্য হয়ে সশস্ত্র বিপ্লবের পথ বেছে নিয়েছিল। এভাবে ইংরেজ শাসক,জমিদার ও মহাজনদের শোষন -অত্যাচার-অবিচার থেকেই এই বিদ্রোহের সৃষ্টি হয়েছিল এবং বিদ্রোহের মধ্য থেকেই জন্ম নিয়েছিল নেতৃত্ব। সাঁওতাল পরগনার ধূমায়িত বিদ্রোহের মধ্য থেকে বার হয়ে এলেন ঐতিহাসিক সাঁওতাল বা হূল বিদ্রোহের নায়ক সিধু, কানু, চাঁদ ও ভৈরব নামে চার ভাই। এছাড়া এই নেতাদের মধ্যে ছিলেন কালো প্রামানিক, ডোমন মাঝি,বীরসিংহ মাঝি, গোক্ক ইত্যাদি সাওতাঁল আদিবাসী ।
১৮৫৫ সালের ৩০ শে জুন এই সব নেতাদের নেতৃত্বে প্রায় ১০ হাজার সাঁওতাল ভাগনাডিহির মাঠে সমবেত হয়েছিল। তাদের মধ্যে রটনা করে দেওয়া হয়েছিল যে , সিধু, কানু, দৈব নির্দেশপ্রাপ্ত। বিভিন্ন এলাকার কামার, কুমোর, তাঁতি, ছুতোর প্রভৃতি নিম্নশ্রেণির মানুষও এই বিদ্রোহে যোগদান করেছিল, শোনা যায়, দুই লক্ষ সাঁওতাল এই বিদ্রোহে সামিল হয়েছিল,ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে সাঁওতালরা গেরিলা পদ্ধতিতে হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে জমিদার ও মহাজনদের আক্রমণ করে। এই বিদ্রোহীরা এক সময় রাজমহল ভাগলপুরের মধ্যে রেল ও ডাক যোগাযোগের ব্যবস্থা বিছিন্ন করে দেয়,তাদের হাতে শতাধিক ইংরেজ নিহত হয়।”ক্যলকাটা রিভিউ” পত্রিকা থেকে জানা যায় যে, একজন ইংরেজ সেনাপতি মেজর বরোজ সাঁওতালদের সঙ্গে যুদ্ধে পরাজিত হন।

এই বিদ্রোহের সংবাদ বিনা মেঘে বজ্রাঘাতের মতো সমস্ত শাসকগোষ্ঠীকে স্তম্ভিত করে দেয়। “ক্যালকাটা রিভিউ” পত্রিকার একজন ইংরেজ মন্তব্য করেছিলেন – “এই রূপ আর কোনো অদ্ভুত ঘটনা ইংরেজের স্মরণকালের মধ্যে দক্ষিণবঙ্গের সমৃদ্ধিকে বিপদগ্রস্ত করিয়া তোলে নাই।”
এই সংবাদে সেনাপতি মেজর বরোজ ভাগলপুরের দিকে সাঁওতাল বাহিনীর গতিরোধ করেন। ১৮৫৫ সালের ১৬ই আগষ্ট ভাগলপুর জেলায় পীরপাইতির ময়দানে উভয়পক্ষের মধ্যে প্রচন্ড রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়। শোনা যায়, মেজর বরোজের বাহিনী চূড়ান্তভাবে অপদস্থ ও পরাজিত হয়, এতে একজন ইংরেজ অফিসারসহ কয়েক জন ইংরেজ সৈন্য এবং বেশকিছু সাওতাঁল বিদ্রোহী নিহত হয়। ভাগলপুরের কমিশনার এই যুদ্ধের একটা বিবরণ দিয়েছিলেন – “বিদ্রোহীরা নির্ভিক চিত্তে প্রাণপণে যুদ্ধ করিয়াছিল।তাহাদের যুদ্ধাস্ত্র কেবল তীর ধনুক আর কুঠার। তাহারা মাটির উপর বসিয়া পায়ের দ্বারা ধনুক হইতে তীর ছুড়িতে অভ্যস্ত।”
এক সময়ে বীরভূম জেলার সমগ্র উত্তর পশ্চিমাংশে বিদ্রোহীদের দখলভুক্ত হয়েছিল। সরকারের আত্মসমর্পণ নির্দেশকে বিদ্রোহীরা ঘৃণাভরে পরিত্যাগ করেছিল। সিধু ও কানুর নেতৃত্বে সাঁওতাল বাহিনী পাকুড়ে পৌঁছায় এবং তিনদিন ও তিনরাত্রি পাকুড়কে অবরোধ করে রাখে। এভাবে তারা বীরভূম থেকে ভাগলপুর পর্যন্ত এক বিরাট ভূখন্ডকে অধিকার করে। ডাক-তার ব্যবস্থা, রাস্তাঘাট প্রভৃতি সমস্ত রকমের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে বিছিন্ন করে দেয়।
কিন্তু কয়েকদিন পরেই ইংরেজশাসক চরমপন্থা গ্রহণ করে সামরিক আইন জারি করে অবাধে লুণ্ঠন, নরহত্যা ও ধ্বংস সাধন করে মানুষের মনে এক বিভীষিকার সৃষ্টি করে। তখন সাঁওতালরা বাধ্য হয়ে পশ্চাৎপদ হতে থাকে।জনৈক ইংরেজ সেনাপতি নিজেই স্বীকার করেছিলেন – “আমরা যুদ্ধ করিনি, করেছিলাম গণহত্যা।”

১৮৫৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে একদল সাঁওতাল হতাশাগ্রস্ত হয়ে সিধুর গোপন আশ্রয় স্থল জানিয়ে দেয়। তাই ইংরেজরা সহজেই সিধুকে গ্রেপ্তার করে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে। এভাবে পরাধীন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম বীরসন্তান সিধু ইংরেজ শত্রুর হাতে প্রাণ বিসর্জন দিয়ে ভারতের ইতিহাসে অমর হয়ে রয়েছেন। এর কিছুদিন পরে আর এক নায়ক কানু বীরভূমের ওপারবাঁধের নিকটে সশস্ত্র পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।তাকেও ইংরেজ বাহিনী নৃশংসভাবে গুলি করে হত্যা করে। প্রকৃতপক্ষে,এই সাওতাঁল বিদ্রোহে অন্ততপক্ষে ২৫ হাজার সাঁওতাল নিহত হয়েছিলেন ।এভাবে বীরভূম থেকে ভাগলপুর পর্যন্ত বিশাল অঞ্চল সাঁওতালদের রক্তস্রোতে রঞ্জিত হয়েছিল।
সাঁওতাল বিদ্রোহের প্রচন্ড আঘাত থেকে ইংরেজ সরকার উপলব্ধি করে যে, যারা অনায়াসে প্রাণ দিতে পারে, যারা আত্মসমর্পণ করতে চায় না তাদের সঙ্গে সাধারণ মানুষের মিশ্রণের ফলে সারাভারতে আরও বিদ্রোহের বীজ ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই তারা কৌশল করে সাঁওতালদের জনজীবন থেকে বিছিন্ন করার উদ্দেশ্যে সাঁওতাল পরগণাকে ‘সাঁওতাল ডিহি পরগণা’ নামে একটা পৃথক পরগণা গঠন করে।
দুঃখের বিষয় মৃত্যুভয়হীন বীরত্ব ও শৌর্য থাকা সত্ত্বেও সেদিন সাঁওতাল বিদ্রোহের ভবিষ্যৎ ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন, কারন ভারতের অন্য অঞ্চলসমূহ এই বিদ্রোহের সময়েও ছিল শান্ত, নির্লিপ্ত,ও নিস্তরঙ্গ । তাই ইংরেজ শাসক এই বিদ্রোহকে সহজেই দমন করতে সক্ষম হয়েছিল। তা সত্ত্বেও একথা বলা যেতে পারে শুধুমাত্র তীর-ধনুক-টাঙ্গিকে সম্বল করে ত্রিশ থেকে পঞ্চাশ হাজার সাওতাঁল আধুনিক কামান-বন্দুক সজ্জিত পনের হাজার সুশিক্ষিত সেনার বিরুদ্ধে বীরবিক্রমে যুদ্ধ পরিচালনা করে সমগ্র ভারতবাসীর সম্মুখে যে পথনির্দেশ করেছিল, সেই পথ ১৮৫৭ সালে মহাবিদ্রোহের মধ্য দিয়ে ভারতের মুক্তি সংগ্রামের সুপ্রশস্ত রাজপথে পরিণত হয়েছিল আর সেই রাজপথই পরবর্তীকালে বিংশ শতাব্দীর মধ্য দিয়ে প্রসারিত হলো। ভারতের এই অশিক্ষিত দরিদ্র আদিবাসী সাঁওতাল তথা কৃষক সমাজ সেই রাজপথেরই অভিযাত্রী- তাঁরাই হচ্ছেন ভারত মাতার মহান বীর সন্তান, বীরযোদ্ধা – তাই আমরা তাঁদেরই জয়গান গাইবো।

কলমে : প্রশান্ত কুমার দাস।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

পূরবী দত্ত শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পী হলেও তিনি মূলত নজরুল গান গাওয়ার জন্য বিখ্যাত – একটি বিশেষ পর্যালোচনা।।।

পূরবী দত্ত ১৭ মার্চ ১৯৪২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন ভারতীয় গায়িকা ছিলেন। তিনি কলকাতায় থাকতেন এবং শুধুমাত্র বাংলা ভাষায় গান গেয়েছিলেন, প্রধানত নজরুলের গান গাওয়ার জন্য বিখ্যাত। পূরবী দত্ত ছিলেন প্রখ্যাত শাস্ত্রীয় কণ্ঠশিল্পী বিভূতি দত্তের মেয়ে, তাই ছোটবেলা থেকেই বাড়িতে তার প্রশিক্ষণ শুরু হয়।

১৯৪৬ সালে, মাত্র চার বছর বয়সে, তিনি চেতলা মুরারি স্মৃতি সঙ্গীত সম্মিলনী আয়োজিত সর্বভারতীয় সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন যেখানে তিনি তার গানের জন্য রৌপ্য ট্রফি জিতেছিলেন।
পূরবী দত্ত শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পী হলেও তিনি মূলত নজরুল গান গাওয়ার জন্য বিখ্যাত। তার প্রথম দিনগুলিতে তিনি কলকাতায় অল ইন্ডিয়া রেডিওর বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সাথে যুক্ত ছিলেন এবং তার সঙ্গীত জীবনের বেশিরভাগ অংশ সেখানে রেকর্ড করা হয়েছিল। যার অধিকাংশই ছিল নজরুলের গান।1950 এবং 60 এর দশকে, তিনি অল ইন্ডিয়া রেডিওর সাথে যুক্ত ছিলেন এবং বিভিন্ন প্রোগ্রামে গান গেয়েছিলেন। তিনি সারাজীবন নজরুল গীতির প্রশিক্ষণে নিঃস্বার্থভাবে আত্মনিয়োগ করেছেন। বহু বছর ধরে তিনি গড়িয়াহাটের “বাণীচক্র” এবং পরে “বেঙ্গল মিউজিক কলেজ” এর সাথে যুক্ত ছিলেন। যেখানে তিনি হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, চিন্ময় চট্টোপাধ্যায় এবং অখিলবন্ধু ঘোষের সাথে পড়াশোনা করেছেন। তিনি পণ্ডিত জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ, বিমান মুখোপাধ্যায়, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, অধীর বাগচী এবং বাংলার অন্যান্য বিশিষ্ট শিল্পী ও গায়কদের খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন।
নজরুল গীতি নিয়ে পূরবী দত্তের অ্যালবামগুলি খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। নিচে কিছু অ্যালবামের শিরোনাম উল্লেখ করা হলো——
১৯৭৪ কাজী নজরুলের গান – সারেগামা, ১৯৭৫ কাজী নজরুলের গান – সারেগামা, ১৯৮০ ভ্যালেন্টাইন স্পেশাল – বাংলা রোম্যান্টিক নজরুলগীতি, ১৯৮২ হালুদ গন্দর ফুল, ২০১৪ ছাড় ছাড় আঁচল, ২০১৪ ঝুম ঝুম ঝুমরা নাচতে, ২০১৪ শিউলি তোলে ভোরবেলা – আইএনআরইসিও।
প্রায় দেড় বছর নিজেকে সবার থেকে দূরে রাখার পর, ২০০৪ সালের এপ্রিল মাসে পূরবী দত্ত বাংলা সঙ্গীত মেলার মঞ্চে আবার আত্মপ্রকাশ করেন। তিনি দুটি গান গেয়েছিলেন:”মনে পরে আজ সে কোন জনমে” এবং তার পর “নিরন্ধ্র মেঘে মেঘে অন্ধ গগন।”
তিনি তার গড়িয়াহাটের বাড়ি থেকে চলে আসার পর এই বাড়িতে থাকতেন, জীবনের শেষ দিন অবধি। তার সোনারপুরের বাড়িতে ১ ডিসেম্বর ২০১৩ সালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

স্মরণে বাংলার বাঘ আশুতোষ মুখোপাধ্যায় : প্রশান্ত কুমার দাস।।।।

“সেই ধন্য নরকূলে লোকে যারে নাহি ভুলে, মনের মন্দিরে যারে পূজে সর্বজন।”

উনিশ শতকে বাংলার বুকে এমন অনেক মনীষী আবির্ভূত হয়েছিলেন যাঁরা আমাদের মনের মন্দিরে সর্বদা পুজো পেয়ে থাকেন, তাঁদের মহৎ কর্মের জন্য আমরা বাঙালি হিসাবে গর্বিত।
এইরূপ একজন স্বনামখ্যাত পুরুষ সিংহ ছিলেন যিনি “বাংলার বাঘ” নামেই সর্বাধিক পরিচিত।আজ থেকে একশত পঞ্চান্ন বছর আগে কলকাতার বৌবাজারে ১৮৬৪ খ্রীষ্টাব্দের ২৬ শে জুন তারিখে আশুতোষ মুখোপাধ্যায় জন্মগ্রহণ করেন।তাঁর পিতা গঙ্গাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ছিলেন একজন বিখ্যাত চিকিৎসক।

তাঁর মাতা ছিলেন জগত্তারিনী দেবী।
ছোট বেলা থেকেই আশুতোষ ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী।চক্রবেড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়া শেষ করে তিনি কলকাতার সাউথ সুবার্বন স্কুলে পড়াশুনা করেন।তিনি পড়াশুনাতে অত্যন্ত মনোযোগী ও অধ্যবসায়ী ছিলেন।সারাদিন তিনি এত পড়াশুনা করতেন যে তাঁর স্বাস্থ্য ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হলো।তখন একদিন তাঁর পিতা তাঁকে একটা ঘরে আবদ্ধ করে রাখলেন।সারদিন শেষে ঘরের দরজা খুলে দেখা গেল যে,ঘরের মেঝেতে ও দেওয়াল গুলিতে অংক কষা ও জ্যামিতি আঁকা রয়েছে।সকলে উনার অধ্যবসায় দেখে বিস্মিত হলেন।প্রবেশিকা পরীক্ষায় তিনি দ্বিতীয় স্থান এবং বি.এ পরীক্ষায় প্রথম স্থান লাভ করেন এবং সেই সঙ্গে “প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ” বৃত্তি লাভ করলেন।তাঁর অংক শাস্ত্র সম্পর্কে কয়েকটি তথ্যপূর্ণ প্রবন্ধ ইংল্যান্ডেও প্রকাশিত হওয়ায় তাঁর নাম সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।

আশুতোষ শুধুমাত্র অংকশাস্ত্রে পণ্ডিত ছিলেন না,তিনি বিজ্ঞান,দর্শন,আইন,এমনকি বাংলা সাহিত্যের ক্ষেত্রে কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন।আইন গবেষণা করার জন্য তিনি “ডক্টর অফ ল” উপাধিতে ভূষিত হন। ১৯০৩ খ্রিঃ থেকে ১৯১৩ খ্রিঃ পর্যন্ত তিনি কলকাতা তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদ অলংকৃত করেছিলেন। ২৪ বছর বয়সেই তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হন।
তিনি আজীবন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নতিকল্পে নানাপ্রকার কাজ করেছিলেন।তিনিই প্রথম বাংলাভাষার মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থার প্রচলন করেছিলেন।
তিনি আইন পরীক্ষায় ভালভাবে উত্তীর্ন হয়ে কলকাতা হাইকোর্টে ওকালতি করতে শুরু করেন।অল্পদিন পরে নিজ প্রতিভার জোরে তিনি হাইকোর্টের বিচারপতির পদ অলংকৃত করেন।এক্ষেত্রেও তিনি যথেষ্ট সুনাম ও প্রতিভার সাক্ষর রেখেছেন।
তখন ব্রিটিশ রাজত্ব পুরোদমে চলছে।তাদের দাপটে সকলে তটস্থ।এই অবস্থাতেও কত নির্ভিক ও সাহসী পুরুষ ছিলেন আশুতোষ মুখোপাধ্যায় তার পরিচয় পাওয়া যায়।একদা তিনি আলিগড় থেকে ট্রেনে আসছেন ।আশুতোষ মুখোপাধ্যায় সেখানে ট্রেনের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন,তাঁর নতুন জুতো খুলে রেখে ঘুমোচ্ছিলেন।
এমন সময়ে একটা স্টেশনে একজন ইংরেজ সাহেব সেই কামরাতে আরোহন করলেন।ধুতি-চাদর পরিহিত এক বাঙালিকে ট্রেনের কামরার মধ্যে ঘুমোতে দেখে তিনি তো রেগে আগুন।তিনি আশুতোষের নতুন জুতো জোড়া জানলার বাইরে ফেলে দিয়ে অপর একটা বেঞ্চে ঘুমোতে শুরু করলেন।কিছুক্ষণ পরে আশুতোষের ঘুম ভেঙ্গে গেল। তিনি তাঁর জুতো দুটি দেখতে না পেয়ে বিস্মৃত হলেন।তিনি বুঝতে পারলেন যে,ঐ ইংরেজ সাহেবই তাঁর জুতা ফেলে দিয়েছে।আশুতোষও কম সাহসী ছিলেন না।তিনি দেখলেন সাহেবের মাথার উপর তাঁর টুপিটা ঝুলছে।আশুতোষ টুপিটা নিয়ে জানলা দিয়ে বাইরে ফেলে দিলেন।একটু পরে সাহেব ঘুম থেকে উঠলেন,কিন্তু তিনি তাঁর টুপি খুঁজে না পেয়ে খুব রেগে গেলেন এবং আশুতোষকে টুপি সম্পর্কে জিঙ্গাসা করলেন ।আশুতোষ নির্ভিক ভাবে উত্তর দিলেন – “Your hat has gone to fetch my shoes”. সাহেব নিজের অন্যায় বুঝতে পেরে আশুতোষ কে আর কিছু বলতে সাহস করলেন না।এরূপ তেজস্বী নির্ভিক পুরুষ বাঙালীর মধ্যে খুবই কম দেখা যায়।তাঁর এই তেজস্বীতার জন্য তিনি ‘বাংলার বাঘ’ নামে সুপরিচিত।

আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের মাতৃভক্তি ছিল প্রবল।প্রাতঃস্মরণীয় বিদ্যাসাগর মহাশয়ের মাতৃভক্তির মতই ছিল তাঁরও অসীম মাতৃভক্তি একবার বাংলার তৎকালীন গভর্নর লর্ড কার্জন আশুতোষকে ইংল্যান্ড যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানান।কিন্তু আশুতোষের মাতার ছেলেকে ইংল্যন্ড যেতে দিতে মত ছিল না।আশুতোষ লর্ড কার্জনকে জানালেন ‘মায়ের অমতে আমি ইংল্যান্ড যেতে পারব না।’ তখন গর্বিত লর্ড-কার্জন আশুতোষকে লিখলেন- ‘আপনি আপনার মাকে জানিয়ে দেন যে,ভারতের বড়লাট আপনাকে ইংল্যান্ড যেতে আদেশ করছেন।’ কিন্তু নির্ভিক আশুতোষ মুখোপাধ্যায় স্পষ্ট করে জানালেন – “আমার কাছে মায়ের আদেশই সবচেয়ে বড় আদেশ।মায়ের আদেশ ছাড়া আমার পক্ষে ইংল্যান্ড যাওয়া সম্ভব নয়।”
এভাবে সারাজীবন তিনি অনেক তেজস্বীতার পরিচয় দিয়েছিলেন। ‘বাংলার বাঘ’ নামকরন তাঁর সার্থক হয়েছিল।
বাংলার এই তেজস্বী দেশপ্রেমিক কর্মবীর আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ শে মে তারিখে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আজও তাঁর সম্পর্কে মূল্যায়ন ঠিক মত হয়নি।আমরা তাঁর জন্মদিনে শ্রদ্ধাবনত চিত্তে তাঁকে স্মরণ করবো। যদি বর্তমান প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা আশুতোষের মত ব্যক্তির উজ্জ্বল কর্মপ্রেরণা,তেজস্বীতা,স্বদেশপ্রেম ইত্যাদি বিষয় সমূহ জানতে পেরে অনুপ্রানিত হতে পারে তাহলেই তাঁর মত মনীষীর জন্মদিন পালন করা সার্থক হবে।
আমরা জানি,তিনি বাংলার বুকে যে জ্ঞানের আলো জ্বেলেছিলেন –
“সেই আলোক-শিখা আজও উজ্জ্বল
ঘুচে গেছে সব কালো।”
শিক্ষারত্ন প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক (বাজিতপুর উচ্চ বিদ্যালয়(উঃমাঃ)
(পোঃ-পাথাই, ময়ূরেশ্বর-১,বীরভূম)

Share This
Categories
প্রবন্ধ

স্মরণে প্রখ্যাত অধ্যাপক ও লেখক – চারুচন্দ্র ভট্টাচার্য।।।

চারুচন্দ্র ভট্টাচার্য বিশিষ্ট অধ্যাপক ও বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধের রচয়িতা। চারুচন্দ্র ভট্টাচার্য দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার হরিনাভিতে ২৯ জুন, ১৮৮৩ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতার নাম বসন্ত কুমার ভট্টাচার্য ও মাতার নাম মেনকা দেবী। অতিশয় মেধাবি ছিলেন তিনি।।

শিক্ষা জীবন——

১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন থেকে প্রথম বিভাগে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এফ. এ পরীক্ষায় দ্বাদশ স্থান অর্জন করেন (১৯০১ খ্রিস্টাব্দে)। এরপর তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে থেকে পদার্থবিদ্যায় স্নাতক হন ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় এম.এ পাশ করেন ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে।

কর্মজীবন—–

এম. এ পাশের পর পরই তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন এবং দীর্ঘ ৩৫ বৎসর তিনি সেখানে অধ্যাপনা করেছেন। আর এ প্রসঙ্গে তিনি বলতেন-
“বাংলার পাঁচজন এফ.আর.এস – এর মধ্যে একজন আমার শিক্ষক, বাকি চারজন ছাত্র ।”
শিক্ষক হচ্ছেন আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু এবং ছাত্ররা হচ্ছেন সত্যেন্দ্রনাথ বসু , মেঘনাদ সাহা, প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশ ও শিশির কুমার মিত্র। তার আর এক ছাত্র প্রতুল চন্দ্র গুপ্ত বলতেন – “কত কঠিন বিষয় তিনি অত্যন্ত সহজে ব্যাখ্যা করতে পারতেন”।

সাহিত্যক্ষেত্রে অমর অবদান———

চারুচন্দ্র 1939 খ্রিস্টাব্দে শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতীর সাহিত্য বিভাগে যোগদান করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সাহিত্য বিভাগের আর্থিক সংকটের সময় তিনি রবীন্দ্রনাথের বাংলা রচনার সংকলন রবীন্দ্র-রচনাবলী প্রকাশ করে বাংলার সাহিত্যক্ষেত্রে অমর অবদান রাখেন। শিক্ষা সম্প্রসারণের জন্য রবীন্দ্রনাথের পরিকল্পনায়, বিশ্বভারতী তার নিজস্ব দক্ষতায় “বিশ্ববিদ্যাসংগ্রহ গ্রন্থমালা” এবং লোকশিক্ষার বই প্রকাশের ব্যবস্থা করে। উল্লেখযোগ্য লোকশিক্ষার প্রথম বইটি “বিশ্ব-পরিচয়: রবীন্দ্রনাথ সত্যেন্দ্রনাথ বসুকেই উৎসর্গ করেন।

সহজ সরল ও হৃদয়গ্রাহী বাংলা ভাষায় লেখা উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল –

আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার কাহিনী, নব্যবিজ্ঞান, বাঙালির খাদ্য, বিশ্বের উপাদান, তড়িতের অভ্যুত্থান, ব্যাধির পরাজয়, পদার্ধবিদ্যার নবযুগ।
সত্যেন্দ্রনাথ বসু প্রতিষ্ঠিত বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদের পক্ষ থেকে তিনি বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান প্রচার চেষ্টার সূচনা করেন ‘বিজ্ঞান প্রবেশ’ ও পদার্থবিদ্যা’ গ্রন্থ রচনার মধ্য দিয়ে। নানা বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধের মাধ্যমে তিনি জগদীশচন্দ্রের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারকে সাধারণের মধ্যে পরিচিত করান। তার রচিত ‘কবিস্মরণে’ একখানি রসমধুর স্মৃতিচারণ গ্রন্থ তিনি ছদ্মনামে রচনা করেন। কয়েক বছর তিনি সমবায় সমিতির ‘ভাণ্ডার’ পত্রিকা এবং আমৃত্যু ‘বসুধারা’ পত্রিকার সম্পাদনা করেছেন। বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদে প্রথম রাজশেখর বসু স্মৃতি বক্তৃতা “পরমাণু নিউক্লিয়াস “বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান রচনার অন্যতম মূল্যবান সংযোজন। পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের ষষ্ঠ ও অষ্টম শ্রেণীর জন্য দুটি বিজ্ঞানের পাঠ্যপুস্তক ও রচনা করেন। বিজ্ঞানে ব্যবহারের জন্য বহু বাংলা প্রতিশব্দ নির্ধারণ করেছেন। এ বিষয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিযুক্ত কমিটিতে তিনি সচিব ছিলেন এবং সভাপতি ছিলেন রাজশেখর বসু। তিনি পরিমাপ ও বৈজ্ঞানিক প্রতিশব্দ চয়ন ও নির্ধারণে ভারত সরকারকেও সহায়তা করেন।

মৃত্যু———

চারুচন্দ্র ভট্টাচার্য ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে ২৬ শে আগস্ট প্রয়াত হন।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি কবি, সাহিত্যিক এবং নাট্যকার মাইকেল মধুসূদন দত্ত : সুভাষ চন্দ্র দাশ।।।

তিনিই এক এবং অদ্বিতীয় মাইকেল মধুসূদন দত্ত। তাঁর সমাধিস্থলে স্বরচিত কবিতাটি লেখা রয়েছে, “দাঁড়াও, পথিক-বর, জন্ম যদি তব

বঙ্গে! তিষ্ঠ ক্ষণকাল! এ সমাধিস্থলে
জননীর কোলে শিশু লভয়ে যেমতি বিরাম মহীর পদে মহানিদ্রাবৃত
দত্তকুলোদ্ভব কবি শ্রীমধুসূদন!
যশোরে সাগরদাঁড়ী কবতক্ষ-তীরে
জন্মভূমি, জন্মদাতা দত্ত মহামতি
রাজনারায়ণ নামে, জননী জাহ্নবী!.” রামনারায়ণ তর্করত্ন বিরচিত ‘রত্নাবলী’ নাটকের ইংরেজি অনুবাদ করতে গিয়ে তিনি বাংলা নাট্যসাহিত্যে উপযুক্ত নাটকের অভাব বোধ করেন। এই অভাব পূরণের লক্ষ্য নিয়েই তিনি নাটক লেখায় আগ্রহী হয়েছিলেন। ১৮৫৯ খৃস্টাব্দে তিনি রচনা করেন ‘শর্মিষ্ঠা’ নামক একটি নাটক। এটিই প্রকৃত অর্থে বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম মৌলিক নাটক। ১৮৬০ খৃস্টাব্দে তিনি রচনা করেন দুটি প্রহসন, যথা: ‘একেই কি বলে সভ্যতা’ এবং ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’ এবং পূর্ণাঙ্গ ‘পদ্মাবতী’ নাটক। পদ্মাবতী নাটকেই তিনি প্রথম অমিত্রাক্ষর ছন্দ ব্যবহার করেন। ১৮৬০ খৃস্টাব্দেই তিনি অমিত্রাক্ষরে লেখেন ‘তিলোত্তমাসম্ভব’ কাব্য। এরপর একে একে রচিত হয় ‘মেঘনাদ বধ কাব্য’ (১৮৬১) নামে মহাকাব্য, ‘ব্রজাঙ্গনা’ কাব্য (১৮৬১), ‘কৃষ্ণকুমারী’ নাটক (১৮৬১), ‘বীরাঙ্গনা’ কাব্য (১৮৬২), চতুর্দশপদী কবিতা (১৮৬৬)। যশোর জেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামে জন্ম তাঁর। পাশ্চাত্য সাহিত্যের দুর্নিবার আকর্ষণ বশতঃ ইংরেজি ভাষায় সাহিত্য রচনায় তিনি মনোনিবেশ করেন। জীবনের দ্বিতীয় পর্বে মধুসূদন আকৃষ্ট হন নিজের মাতৃভাষা বাংলার প্রতি। এই সময়েই তিনি বাংলায় নাটক, প্রহসন ও কাব্যরচনা করতে শুরু করেন। মাইকেল মধুসূদন বাংলা ভাষায় সনেট ও অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক। তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি অমিত্রাক্ষর ছন্দে রামায়ণের উপাখ্যান অবলম্বনে রচিত “মেঘনাদবধ কাব্য” নামক মহাকাব্য। তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গ্রন্থাবলি: দ্য ক্যাপটিভ লেডি, শর্মিষ্ঠা, কৃষ্ণকুমারী (নাটক), পদ্মাবতী (নাটক),বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ, একেই কি বলে সভ্যতা, তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য, বীরাঙ্গনা কাব্য, ব্রজাঙ্গনা কাব্য, চতুর্দশপদী কবিতাবলী, হেকটর বধ ইত্যাদি। মাইকেল মধুসূদন দত্তের ব্যক্তিগত জীবন ছিল নাটকীয় এবং বেদনাময়।মাত্র ৪৯ বছর বয়সে কলকাতায় কপর্দকশূন্য করুণ অবস্থায় মৃত্যু হয় এই মহাকবির।
১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারী তিনি জন্মগ্রহন করেন। তিনি ছিলেন রাজনারায়ণ দত্ত ও জাহ্নবী দেবীর একমাত্র সন্তান। রাজনারায়ণ দত্ত ছিলেন কলকাতার সদর দেওয়ানি আদালতের এক খ্যাতনামা উকিল। মধুসূদন দত্তের যখন সাত বছর বয়স, সেই সময় থেকেই তাঁকে কলকাতায় বসবাস করতে হত। খিদিরপুর সার্কুলার গার্ডেন রিচ রোডে (বর্তমানে কার্ল মার্কস সরণী) অঞ্চলে তিনি এক বিরাট অট্টালিকা নির্মাণ করেছিলেন। মধুসূদন দত্তের প্রাথমিক শিক্ষা শুরু তাঁর মাতৃদেবী জাহ্নবী দেবীর কাছে। জাহ্নবী দেবীই তাঁকে রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ প্রভৃতির সঙ্গে সুপরিচিত করে তোলেন।মাত্রতেরো বছর বয়সে মধুসূদন কলকাতায় আসেন। স্থানীয় একটি স্কুলে কিছুদিন পড়ার পর তিনি তদনীন্তন হিন্দু কলেজে (বর্তমানে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি হন। মধুসূদন দত্ত খুব মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তাই অচিরেই কলেজের অধ্যক্ষ ক্যাপ্টেন ডি. এল. রিচার্ডসনের প্রিয় ছাত্র হয়ে ওঠেন। রিচার্ডসন মধুসূদনের মনে কাব্যপ্রীতি সঞ্চারিত করেছিলেন। হিন্দু কলেজের প্রাক্তন অধ্যাপক ডিরোজিওর স্বদেশানুরাগের স্মৃতিও তাঁকে বিশেষ উদ্বুদ্ধ করতো,এছাড়া কলেজে তাঁর সহপাঠী ছিলেন ভূদেব মুখোপাধ্যায়, রাজনারায়ণ বসু, গৌরদাস বসাক, প্যারীচরণ সরকার প্রমুখ ঊনবিংশ শতাব্দীর বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। আঠারো বছর বয়সেই মহাকবি হওয়ার ও বিলাতে যাওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা তাঁর মনে বদ্ধমূল হয়ে যায়। ১৮৪৩ সালে রেভারেন্ড কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিকট মধুসূদন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণের ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। এরপর ওই বছরই ১৩ ফেব্রুয়ারি মিশন রো-তে অবস্থিত “ওল্ড মিশন চার্চ” নামে এক অ্যাংলিক্যান চার্চে গিয়ে তিনি খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেন। তাঁকে দীক্ষিত করেছিলেন “পাদ্রী ডিলট্রি”।তিনিই মধুসূদন দত্ত্কে “মাইকেল” নামকরণ করেন। মধুসূদন পরিচিত হন “মাইকেল মধুসূদন দত্ত” নামে। তাঁর এই ধর্মান্তর সমাজে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। রাজনারায়ণ দত্ত তাঁর বিধর্মী পুত্রকে ত্যাজ্যপুত্র ঘোষণা করেন। খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণের পর মধুসূদন শিবপুরের বিশপস কলেজে থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যান। এখানে তিনি গ্রিক, লাতিন, সংস্কৃত প্রভৃতি ভাষা শিক্ষা করেন। রাজনারায়ণ দত্ত তাঁকে পরিত্যাগ করলেও, বিশপস কলেজে পড়াশোনার ব্যয়ভার বহন করছিলেন। চার বছর পর তিনি টাকা পাঠানো বন্ধ করেন। বিশপস কলেজে কয়েকজন মাদ্রাজি ছাত্রের সঙ্গে মধুসূদনের বন্ধুত্ব হয়েছিল। বিশপস কলেজে অধ্যয়ন শেষ করে যখন কলকাতায় চাকরির চেষ্টা করে ব্যর্থ হন মধুসূদন। তখন তাঁর সেই মাদ্রাজি বন্ধুদের সঙ্গে ভাগ্যান্বেষণে মাদ্রাজে (অধুনা চেন্নাই) চলে যান মধুসূদন। কথিত আছে, আত্মীয়স্বজনের অজ্ঞাতসারে নিজের পাঠ্যপুস্তক বিক্রি করে সেই টাকায় মাদ্রাজ গিয়েছিলেন তিনি। মাদ্রাজেও বিশেষ সুবিধা করে উঠতে পারেননি মধুসূদন দত্ত। স্থানীয় খ্রিষ্টান ও ইংরেজদের সহায়তায় তিনি একটি স্কুলে ইংরেজি শিক্ষকের চাকরি পান। তবে বেতন যা পেতেন, তাতে তাঁর ব্যয়সংকুলান হত না। এই সময় তাই তিনি ইংরেজি পত্রপত্রিকায় লিখতে শুরু করেন। মাদ্রাজ “ক্রনিকল” পত্রিকায় ছদ্মনামে তাঁর কবিতা প্রকাশিত হতে থাকে। “হিন্দু ক্রনিকল” নামে একটি পত্রিকাও সম্পাদনা করেছিলেন তিনি। কিন্তু অল্পকালের মধ্যেই অর্থাভাবে পত্রিকাটি বন্ধ করে দিতে হয়। পঁচিশ বছর বয়সে নিদারুণ দারিদ্র্যের মধ্যেই তিনি “দ্য ক্যাপটিভ লেডি” তাঁর প্রথম কাব্যটির রচনা করেন। কবি ও দক্ষ ইংরেজি লেখক হিসেবে তাঁর সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। মাদ্রাজে আসার কিছুকাল পরেই মধুসূদন “রেবেকা ম্যাকটিভিস” নামে এক ইংরেজ যুবতীকে বিবাহ করেন। উভয়ের দাম্পত্যজীবন সাত বছর স্থায়ী হয়েছিল। রেবেকার গর্ভে মধুসূদনের দুই পুত্র ও দুই কন্যার জন্ম হয়। মাদ্রাজ জীবনের শেষ পর্বে রেবেকার সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়ার অল্পকাল পরে মধুসূদন দত্ত “এমিলিয়া আঁরিয়েতা সোফিয়া” নামে এক ফরাসি তরুণীকে বিবাহ করেন। আঁরিয়েতা মধুসূদনের সারাজীবনের সঙ্গিনী ছিলেন। এদিকে মাইকেল তাঁর এক কপি দ্য ক্যাপটিভ লেডি বন্ধু গৌরদাস বসাককে উপহার পাঠালে, গৌরদাস সেটিকে জে ই ডি বেথুনের কাছে উপহার হিসেবে পাঠান। উক্ত গ্রন্থ পাঠ করে অভিভূত বেথুন মাইকেলকে চিঠি লিখে দেশে ফিরে আসতে এবং বাংলায় কাব্যরচনা করতে পরামর্শ দেন। ১৮৫৬ সালে মধুসূদন কলকাতায় ফিরে আসেন। পত্নীকে সেই সময় তিনি সঙ্গে আনেননি। নাটক বাংলা নাটকে মাইকেল মধুসূদনের আবির্ভাব আকস্মিক। ১৮৫২ সালে তারাচরণ শিকদার, জে. সি. গুপ্ত ও রামনারায়ণ তর্করত্নের হাত ধরে বাংলায় শৌখিন রঙ্গমঞ্চে নাট্য মঞ্চায়ন শুরু হয়। এই সময় লেখা নাটকগুলির গুণগত মান খুব ভাল ছিল না। ১৮৫৮ সালে পাইকপাড়ার জমিদার ঈশ্বরচন্দ্র সিংহ ও প্রতাপচন্দ্র সিংহের পৃষ্ঠপোষকতায় কলকাতার বেলগাছিয়া নাট্যমঞ্চে রামনারায়ণ তর্করত্নের রত্নাবলী নাটকটি অভিনীত হয়। শিল্পগুণবিবর্জিত এই সাধারণ নাটকটির জন্য জমিদারদের বিপুল অর্থব্যয় ও উৎসাহ দেখে মধুসূদনের শিক্ষিত মন ব্যথিত হয়ে ওঠে। এরপর তিনি নিজেই নাট্যরচনায় ব্রতী হন। রামনারায়ণ তর্করত্নের সংস্কৃত নাট্যশৈলীর প্রথা ভেঙে তিনি পাশ্চাত্য শৈলীর অনুসরণে প্রথম আধুনিক বাংলা নাটক রচনা করেন। মাইকেল মধুসূদনের নাট্যচর্চার কাল ও রচিত নাটকের সংখ্যা দুইই সীমিত। ১৮৫৯ থেকে ১৮৬১ – এই তিন বছর তিনি নাট্যচর্চা করেন। এই সময়ে তাঁর রচিত নাটকগুলি হল: শর্মিষ্ঠা (১৮৫৯), একেই কি বলে সভ্যতা (১৮৬০), বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ (১৮৬০), পদ্মাবতী (১৮৬০), কৃষ্ণকুমারী (১৮৬১)। এছাড়া মৃত্যুর পূর্বে মায়াকানন (১৮৭৪) নামে একটি অসমাপ্ত নাটক। “মেঘনাদবধ” কাব্য মধুসূদন দত্তের সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি হচ্ছে – অমিত্রাক্ষর ছন্দে রামায়ণ উপাখ্যান অবলম্বনে রচিত মেঘনাদবধ কাব্য নামক মহাকাব্যটি। চরিত্র-চিত্র হিসেবে রয়েছেন – রাবণ, ইন্দ্রজিৎ, সীতা, সরমা, প্রমীলা প্রমূখ। তিনি তাঁর কাব্যকে অষ্টাধিক সর্গে বিভক্ত করেছেন এবং সংস্কৃত অলঙ্কারশাস্ত্র অনুযায়ী এতে নগর, বন, উপবন, শৈল, সমুদ্র, প্রভাত, সন্ধ্যা, যুদ্ধ, মন্ত্রণা প্রভৃতির সমাবেশও করেছেন। কিন্তু সর্গান্তে তিনি নূতন ছন্দ ব্যবহার করেননি, সর্গশেষে পরবর্তী সর্গকথা আভাসিত করেননি। যদিও তিনি বলেছিলেন – ” গাইব মা বীররসে ভাসি মহাগীত ” তবুও কাব্যে করুণ রসেরই জয় হয়েছে। মেঘনাদবধ কাব্য রামায়ণ-আহৃত কাহিনীর পুণরাবৃত্তি নয় – এটি নবজাগ্রত বাঙালীর দৃষ্টি নিয়তি-লাঞ্ছিত নবমানবতাবোধের সকরুণ মহাকাব্যের রূপে অপূর্ব গীতি-কাব্য। মেঘনাদবধ কাব্য এ দিক দিয়ে বাংলা কাব্য সাহিত্যে একক সৃষ্টি। মধুসূদন অতি আশ্চর্য্যজনকভাবে নির্মাণ-কুশলতা গুণে মহাকাব্যোচিত কাব্য-বিগ্রহ সৃষ্টি করেছেন। এ কাব্যের তাৎপর্য্য রাবণ-চরিত্রের প্রতীকতায়। তাঁর সৃষ্ট রাবণ চরিত্রে পরম দাম্ভিকতা প্রকট হয়ে উঠেনি। রামায়ণকে তিনি তাঁর মানবতার আলোকে বিধৌত করে যে মহাকাব্য রচনা করেছেন, তা আসলে রোমান্টিক মহাকাব্য। এ কারণে আকারে ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ মহাকাব্যোচিত হলেও, এর প্রাণ-নন্দিনী সম্পূর্ণ রোমান্টিক এবং মধুসূদন দত্ত এ কাব্যে জীবনের যে জয়গান করেছেন, তা বীররসের নয়, কারুণ্যের।বিশ্বকবি রবীন্দ্র ঠাকুরের ভাষায়, ” সমুদ্রতীরের শ্মশানে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলিয়া কাব্যের উপসংহার করিয়াছেন। ” মৃত্যু মধুসূদনের শেষ জীবন চরম দুঃখ ও দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়। আইন ব্যবসায়ে তিনি তেমন সাফল্য লাভ করতে পারেননি। তাছাড়া অমিতব্যয়ী স্বভাবের জন্য তিনি ঋণগ্রস্তও হয়ে পড়েন। ১৮৭৩ খ্রীস্টাব্দের ২৯ জুন আলিপুর জেনারেল হাসপাতালে কপর্দকহীন(অর্থাভাবে) অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মহাকবি জীবনের অন্তিম পর্যায়ে জন্মভূমির প্রতি তাঁর সুগভীর ভালবাসার চিহ্ন রেখে গেছেন অবিস্মরণীয় পংক্তিমালায়। তাঁর সমাধিস্থলে নিচে লেখা “যশোরে সাগরদাঁড়ী কবতক্ষ-তীরে জন্মভূমি, জন্মদাতা দত্ত মহামতি রাজনারায়ণ নামে, জননী জাহ্নবী! ………………………………….

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

আজ ২৯ জুন, ইতিহাসের দিকে চোখ বুলিয়ে দেখে নেব ইতিহাসের এই দিনে বিশিষ্টজনদের জন্ম-মৃত্যু, দিনসহ ঘটে যাওয়া ঘটনা।।।।

আজ ২৯ জুন। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য ঘটনা, বিশিষ্টজনদের জন্ম-মৃত্যু দিনসহ গুরুত্বপূর্ণ আরও কিছু বিষয়।

আজ যাদের জন্মদিন—-

১৮৬৪ – আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, শিক্ষাবিদ, কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য।
১৮৮৩ – চারুচন্দ্র ভট্টাচার্য, প্রখ্যাত অধ্যাপক ও লেখক ।

১৮৯৩ – প্রশান্ত চন্দ্র মহলানবীশ, ভারতীয় বিজ্ঞানী, পরিসংখ্যানবিদ এবং ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট এর প্রতিষ্ঠাতা।
১৯০০ – অঁতোয়ান দ্য স্যাঁত-এগজ্যুপেরি, একজন ফরাসি লেখক, কবি, অভিজাত, সাংবাদিক এবং বৈমানিক।

১৯০৯ – শ্যামাদাস চট্টোপাধ্যায়, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পরমাণুবিজ্ঞানী।
১৯২০ – ফরাসি লেখক ফ্রেদরিক দার্দ ।
১৯২৫ – জর্জো নেপোলিতানো, ইতালির নেপলসে জন্মগ্রহণকারী বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ।
১৯২৬ – জাবের আল-আহমেদ আল-সাবাহ, আল-সাবা রাজবংশের স্বাধীনতা পরবর্তী কুয়েতে তৃতীয় আমির।

১৯৩৬ – বুদ্ধদেব গুহ, ভারতীয় বাঙালি লেখক।

১৯৩৬ – পি কে আয়েঙ্গার, ভারতে পরমাণু কর্মসূচির অন্যতম ব্যক্তিত্ব,ভাবা পরমাণু কেন্দ্রের অধিকর্তা ও ভারতের খ্যাতনামা পরমাণু বিজ্ঞানী।

১৯৩৮ – অজিত রায়, বাংলাদেশী সংগীতশিল্পী, সুরকার ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সংগঠক।
১৯৩৯ – অ্যালেন কনলি, অস্ট্রেলীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার।
১৯৪৪ – গ্যারি বিউসি, আমেরিকান অভিনেতা।
১৯৪৫ – চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা, শ্রীলঙ্কার বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ।
১৯৫৭ – গুরবানগুলি বেরদিমুহামেদু – একজন তুর্কমেনিস্তানের রাজনীতিবিদ।
১৯৫৭ – লেসলি ব্রাউন, মার্কিন প্রিমা বেলেরিনা ও অভিনেত্রী।
১৯৬২ – অ্যামান্ডা ডনোহো, ইংরেজ অভিনেত্রী।
১৯৮০ – বিখ্যাত ইংরেজ গায়িকা ক্যাথেরিন জেনকিনস।
১৯৮৫ – ইয়ান ওয়ার্ডল, স্কটিশ ক্রিকেটার।
১৯৮৬ – এ্যাডওয়ার্ড মায়া, রোমানীয় গায়ক ও ডিজে।
১৯৮৮ – এভার বানেগা, আর্জেন্টিনীয় পেশাদার ফুটবলার।
১৯৯৪ – ক্যামিলা মেন্ডেস, মার্কিন অভিনেত্রী।

ইতিহাসের পাতায় আজকের দিনের ঘটনাবলী—-

১৬১৩ – শেক্সপিয়ারের গ্লোব থিয়েটার ভস্মীভূত হয়।
১৭৫৭ – লর্ড ক্লাইভ মুর্শিদাবাদে প্রবেশ করেন এবং মীরজাফর বাংলা বিহার ও উড়িষ্যার নবাব হন।
১৮০৭ – রাশিয়া-তুরস্ক যুদ্ধে অ্যাডমিরাল দিমিত্রি সেনিয়াভিন অটোমান নৌবহর ধ্বংস করেন।
১৮১৭ – ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ট্রেড ইউনিয়ন আইন পাস।
১৮৬৮ – প্রেস অ্যাসোসিয়েশনের নিউজ এজেন্সি প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯১৩ – নরওয়েতে মহিলাদের ভোটাধিকার প্রদান।
১৯১৩ – বলকান অঞ্চলে দ্বিতীয় যুদ্ধের সূচনা হয়।
১৯৪৬ – বিকিনিতে আমেরিকার প্রথম পরমাণু বোমা পরীক্ষা।
১৯৬০ – জায়ারের স্বাধীনতা লাভ।
১৯৬৬ – মার্কিন বোমারু বিমান উত্তর ভিয়েতনামের হ্যানয়ে বোমা বর্ষণ করে।
১৯৭৬ – ব্রিটেনের কাছ থেকে সেইশেলস নামক দীপপুঞ্জটি স্বাধীনতা লাভ করে।
১৯৯১ – কোমেকোন নামক অর্থনৈতিক জোটের বিলুপ্তি ঘোষণা করা হয়।
১৯৯২ – আততায়ীর গুলিতে আলজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোদিয়াফ নিহত হন।

এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন যারা—-

১৩১৫ – র‍্যামন লাল, লেখক ও দার্শনিক।

১৮৭৩ – মাইকেল মধুসূদন দত্ত, উনিশ শতকের বাঙালি কবি।
১৮৮৬ – এডলফ মন্টিসেলি, ফরাসি চিত্রশিল্পী ।

১৮৯৫ – টমাস হেনরি হাক্সলি, ইংরেজ জীববিজ্ঞানী, শিক্ষক ও অজ্ঞেয়বাদ দর্শনের অন্যতম প্রবক্তা।

১৯০৪ – টম এমেট, ইংরেজ ক্রিকেটার।
১৯১৯ – কার্ল ব্রুগমান, জার্মান ভাষাবিজ্ঞানী।

১৯৫৮ – জর্জ গান, ইংরেজ ক্রিকেটার।

১৯৬৬ – দামেদার কোশাম্বী, বৌদ্ধ ধর্ম বিশারদ।
২০০২ – উলাহ্‌-ইয়োহান ডাল, নরওয়েজীয় কম্পিউটার বিজ্ঞানী।
২০০৩ – ক্যাথরিন হেপবার্ন, মার্কিন অভিনেত্রী।
২০০৭ – এডওয়ার্ড ইয়াং, তাইওয়ানীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা।
২০১৩ – মারগেরিতা হ্যাক, ইতালীয় নভোপদার্থবিজ্ঞানী ও লেখক।
২০১৪ – আবুল হোসেন, বাংলাদেশী বাঙালি কবি।
২০১৫ – মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশি চিকিৎসা বিজ্ঞানী।
২০২০ – আবদুল্লাহ আল মোহসিন চৌধুরী, বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব।

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

প্রখ্যাত ‘কল্লোল’ পত্রিকার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সহকারী সম্পাদক গোকুলচন্দ্র নাগ – একটি বিশেষ পর্যালোচনা।।।।

জন্ম ——– গোকুলচন্দ্র নাগ একজন চিত্রশিল্পী, প্রখ্যাত ‘কল্লোল’ পত্রিকার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সহকারী সম্পাদক। গোকুলচন্দ্র নাগের জন্ম বৃটিশ ভারতের কলকাতায় ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দের ২৮ শে জুন।

প্রারম্ভিক জীবন——–

গোকুলচন্দ্র নাগ এর পিতা মতিলাল নাগ মাতা কমলা দেবী। বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরে ছিল আদি পৈত্রিক নিবাস। প্রখ্যাত ঐতিহাসিক ড. কালিদাস নাগ তার অগ্রজ। শৈশবেই মাতৃপিতৃহীন হন। তাই তিনি মানুষ হন মাতুলালয়ে গোঁড়া ব্রাহ্ম পরিবারের আবহাওয়ায়। কৃতি ফটোগ্রাফার ছিলেন তিনি।অতি অল্প বয়সে চিত্রাঙ্কন ও সাহিত্য চর্চা শুরু করেন।

কর্মজীবন———

আর্ট স্কুল থেকে পাস করার পর, গোকুলচন্দ্র প্রত্নতাত্ত্বিক রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাজে যোগ দিতে পুনে চলে আসেন। কিন্তু কয়েক বছর পর সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়েন। বোম্বেতে একজন সলিসিটর দম্পতির তত্ত্বাবধানে সুস্থ হয়ে ওঠেন কিন্তু কাজ করতে পারেননি। তাই কলকাতায় ফিরে এলেন বিধবা দিদির কাছে । তিনি একজন অকৃত্রিম বন্ধু পেয়েছিলেন, দিনেশরঞ্জন দাশ। তারা দুজনেই নতুন লেখকদের নিয়ে ১৩৩০ বঙ্গাব্দের পহেলা বৈশাখে ‘কল্লোল’ মাসিক সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করেন। সম্পাদক দীনেশরঞ্জন দাস পত্রিকায় নতুন ধারার প্রবর্তন করেন। একদল নবীনদের লেখায় সমৃদ্ধ, বাংলা সাহিত্যের যে সময়টি লেখক-পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল তাকে ‘কল্লোল যুগ’ বলে চিহ্নিত করা হয়। গোকুলচন্দ্র সহ-সম্পাদক হলেও প্রকৃত নেতা ছিলেন তিনি। গোকুলচন্দ্র অর্থক্লিষ্ট পত্রিকা সংরক্ষণের জন্য বিজ্ঞাপন সংগ্রহ, গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি, মুদ্রণের কাজ তদারকি করতেন। তার বন্ধু দীনেশরঞ্জন দাসের সাথে, তিনি ‘সোল অফ আ স্লেভ’ চলচ্চিত্র প্রযোজনা ও অভিনয়ে সহায়তা করেছিলেন। এসবের পাশাপাশি তিনি তার সাহিত্যচর্চাও বজায় রেখেছেন।

তার রচিত গ্রন্থগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল –

রূপরেখা (কথিকা সংকলন), রাজকন্যা ও পরীস্থান’ (অনুবাদ রচনা) – ১৯২৪, মায়ামুকুল (ছোটগল্প সংকলন), পথিক (উপন্যাস), ঝড়ের দোলা।
হাওড়ার শিবপুরের বাড়িতে চলে যাওয়ার পর আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিন্তু অসুস্থ অবস্থাতেই চলে তার সাহিত্য রচনা। শেষে যক্ষায় আক্রান্ত হয়ে পড়লেন গোকুলচন্দ্র। ‘কল্লোল’-এর বন্ধুরা প্রায়ই আসতেন শিবপুরের বাড়ীতে। গভীর সহমর্মিতায় আপ্লুত সাহিত্যিক পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায় রোজ আসতেন তার কাছে। ডাক্তারের পরামর্শে গোকুলকে শেষে দার্জিলিঙে নিয়ে যাওয়া হল।

মৃত্যু———-

১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় এবং অবশেষে ২৪ শে সেপ্টেম্বর তিনি দার্জিলিংঙে মাত্র ৩১ বৎসর বয়সে প্রয়াত হন।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

স্মরণে প্রখ্যাত ভারতীয় ব্যালে নর্তকী – অমলা শংকর।।।।

অমলা শংকর একজন ভারতীয় ব্যালে নৃত্যশিল্পী। তিনি উদয় শঙ্করের স্ত্রী, আনন্দ শংকর এবং মমতা শঙ্করের মা এবং রবি শঙ্করের ভাইঝি। উদয় শংকর পরিচালিত কল্পনা সিনেমায় অভিনয় করেন অমলা শংকর।

জীবনী—————-

অমলা শঙ্কর ১৯১৯ সালের ২৭ জুন মাগুরা জেলার বাটাজোর গ্রামে অমলা নন্দী নামে জন্মগ্রহণ করেন।

তার বাবা অক্ষয় কুমার নন্দী চেয়েছিলেন তার সন্তানরা প্রকৃতি এবং গ্রামাঞ্চলের প্রতি আগ্রহী হোক। ১৯৩১ সালে, যখন তিনি ১১ বছর বয়সে, তিনি প্যারিসে আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে গিয়েছিলেন, যেখানে তিনি উদয় শঙ্কর এবং তার পরিবারের সাথে দেখা করেছিলেন। অমলা তখন ফ্রক পরিহিতা। উদয় শঙ্করের মা হেমাঙ্গিনী দেবী তাকে শাড়ি পরিয়ে দেন। অমলা উদয় শঙ্করের নাচের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন এবং সারা বিশ্বে পরিবেশন করেছিলেন।

অভিনয় জীবন——-

অমলা শঙ্কর কল্পনা ছবিতে অভিনয় করেছিলেন।অমলা, উমার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। ছবিটি রচনা, সহ-প্রযোজনা, পরিচালনা করেছিলেন উদয় শঙ্কর, যিনি ছবিতেও উপস্থিত ছিলেন। অমলা শঙ্কর ২০১২ সালের কান চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিয়েছিলেন যেখানে ছবিটি প্রদর্শিত হয়েছিল অমলা শঙ্কর একটি সাক্ষাত্কারে বলেছিলেন- “২০১২ কান ফিল্ম ফেস্টিভাল … আমি কান ফিল্ম ফেস্টিভালের সর্বকনিষ্ঠ চলচ্চিত্র তারকা হিসাবে এসেছি… আমি ৮১ বছর পরে কানে আবার এলাম”।

পুরস্কার——–

২০১১ সালে বঙ্গবিভূষণ (নৃত্য এর জন্য) পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রদত্ত পুরস্কার। তিনি ভারত সরকারের পদ্মভূষণ সম্মানে সম্মানিত হন ( ১৯৯১ সালে )।

মৃত্যু———–

২০২০ সালের ২৪ জুলাই ১০১ বছর বয়েসে পশ্চিমবঙ্গে কলকাতায় তার মৃত্যু হয়।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This