Categories
গল্প

গল্পের নাম – তুমি ফিরে এসো না।

১.
দীপ্ত আর অনন্যার গল্প শুরু হয়েছিল এক বসন্ত সন্ধ্যায়। কলেজ ফেস্টিভ্যালে, এক ক্লান্ত বিকেলে দীপ্ত গিটার হাতে মঞ্চে গাইছিল —
“তুমি আসবে বলে, আজো আমি পথ চেয়ে থাকি…”
সেই সুর যেন অনন্যার হৃদয়ে গেঁথে গিয়েছিল। গানের শেষে করতালির মাঝে, এক পলকের চাহনিতে তারা বুঝেছিল — এই গল্পের শুরুটা সুন্দর হবে।
দুই বছর ধরে তারা একই পথের যাত্রী ছিল। তারা হাঁটত শিয়ালদহ থেকে কলেজস্ট্রিট, ভাগ করত এক কাপ কড়া লেবু চা, আর ভিজত হঠাৎ নেমে আসা বৃষ্টিতে।
২.
কিন্তু প্রতিটা প্রেমে যেমন এক রকম রঙিন অধ্যায় থাকে, তেমনই আসে ধূসর এক পর্ব। দীপ্ত পড়ালেখায় খুব ভালো ছিল। সে চাইছিল উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যেতে। অনন্যা চাইছিল কিছুদিন পরে বিয়েটা হোক।
দুই জনের চাওয়া ভিন্ন হচ্ছিল, অথচ ভালোবাসাটা ছিল একদম খাঁটি। অনন্যা বলেছিল,
— “তুমি যাও, আমি অপেক্ষা করব।”
দীপ্ত বলেছিল,
— “আমি চাই না তুমি একা থাকো। আমি চিঠি লিখব, ফোন করব, কিন্তু জানি না সময় কেমন বদলাবে।”
৩.
বিদেশ থেকে দীপ্তের প্রথম কয়েকটা মেইল এসেছিল, কিছু চিঠিও। অনন্যা প্রতিদিন পোস্টবক্সের দিকে তাকিয়ে থাকত।
কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ কমে এলো। ব্যস্ততা, পড়ালেখা, চাকরির চাপ — দীপ্ত আর নিয়মিত লিখত না। অনন্যা তবু প্রতিদিন ডায়েরিতে লিখে রাখত তার কথা, তার পুরোনো মেসেজ, মেইলের শেষ লাইনগুলো।
একদিন শেষ চিঠিটা এলো —
“আমার এক সহপাঠীর সঙ্গে বিয়ের কথা চলছে। আমি জানি তুমি কষ্ট পাবে, কিন্তু বিশ্বাস করো, আমি তোমাকে আজও ভালোবাসি। কিন্তু বাস্তব আর ভালোবাসা সবসময় মেলে না।”
৪.
অনন্যার সেই দিনের ডায়েরির পৃষ্ঠা ভিজে ছিল অশ্রুজলে। সে চিৎকার করে কাঁদতে চায়নি, শুধু চুপচাপ জানালার ধারে বসেছিল, মাথায় ঘুরছিল একটাই কথা —
“ভালোবাসলেও কেউ কাউকে এভাবে ছেড়ে যেতে পারে?”
এরপর কেটে গেছে তিন বছর। এখন অনন্যা শহরের এক স্কুলে বাংলা পড়ায়। সাদা শাড়ি, লাল পাড়, মাটি রঙের বালা, চোখে ঘুমহীনতা — সে আজও দীপ্তের চিঠিগুলো নিজের বুকের ড্রয়ারে রেখে দেয়।
সে বিয়ে করেনি। কেউ পছন্দ হলে বলে,
— “ভালোবাসা একবারই হয়। দ্বিতীয়বার হলে সেটা বোঝাপড়া হয়, প্রেম নয়।”
৫.
একদিন স্কুল শেষে রাস্তায় হঠাৎ এক গানের সুর ভেসে এলো —
“তুমি আসবে বলে, আজো আমি পথ চেয়ে থাকি…”
পেছন ফিরে অনন্যা দেখল — রাস্তার এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে দীপ্ত, চোখে পুরোনো দৃষ্টিটা, মুখে অপরাধবোধ।
সে বলল না “চলো”, বলল না “ফিরে এসো”, শুধু বলল —
“তুমি ভালো থেকো।
আমার হৃদয়ের এক কোণে তুমি থাকো, কিন্তু আমার জীবনে নয়।”
দীপ্ত চলে গেল।
আর অনন্যা জানে, এই বিরহও ভালোবাসারই আরেক রূপ। প্রতীক্ষা করা মানেই ফিরে পাওয়ার আশা নয়, বরং এক রকম সম্মান জানানো অতীতকে — যা ছিল, যা আর নেই।

📌 গল্পের বার্তা:

ভালোবাসা কখনো-কখনো পাওয়া নয়, হারিয়েও থাকে। কিন্তু সেটাই হয়তো মানুষের জীবনে সবচেয়ে বড় সত্য — যে ভালোবাসা একসময় ছিল, আর তার স্মৃতি হয়ে থাকে চিরকাল।

Share This

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *