শহরের অলস সন্ধ্যায় ধীরে ধীরে নেমে এসেছিলো মেঘ। টিনের চালে টুপটাপ শব্দে বৃষ্টির সুর বাজছিলো। রিকশার চাকায় ছিটকে পড়া জলের ছোঁয়ায় শহর যেনো ভিজে উঠেছিলো স্মৃতির মতো।
রানু আজও অপেক্ষায় — ঠিক সেই টং দোকানের সামনে, যেখানে প্রথম দেখা হয়েছিলো তাদের। সাত বছর আগের এক বর্ষার রাতেও এমনই বৃষ্টি ছিলো। ছাতা ছিলো না কারোরই। ভিজতে ভিজতে, চায়ের কাপ হাতেই কথা শুরু হয়েছিলো তাদের।
তখন সোহম বলেছিলো,
“বৃষ্টি যদি থামে না, তবে মনে হয় আমাদের গল্পও থামবে না।”
সেই গল্প আর শেষ হয়নি ঠিকই, কিন্তু মাঝপথে একদিন সোহম হারিয়ে যায় — পড়াশোনার জন্য বিদেশ, তারপর চাকরি, তারপর যোগাযোগহীনতা।
কিন্তু রানু থেমে যায়নি অপেক্ষা করা থেকে। বৃষ্টি হলেই সে চলে আসে এখানে — যেদিন প্রথম ভালোবাসা স্পর্শ করেছিলো।
আজও ঠিক তেমনই বৃষ্টি। চায়ের কাপে ধোঁয়া উঠছে, মাটির গন্ধে হৃদয় নরম হয়ে যাচ্ছে।
হঠাৎ পেছন থেকে এক চেনা কণ্ঠ —
“এক কাপ কম চিনি, তাই তো?”
রানু ধীরে ফিরে তাকায়। দাঁড়িয়ে সোহম, পুরো ভিজে, চোখে অনুশোচনা আর ভালোবাসার মিশেল।
রানুর চোখে জল, মুখে হাসি —
“তুমি আবার এসেছো?”
সোহম কাঁপা গলায় বলে,
“তুমি যে অপেক্ষা করছো এখনো… বৃষ্টির মতো ধুয়ে দিলো সব ভুল।”
আর শহরজুড়ে তখনো বৃষ্টি পড়ছে — কিন্তু ভেতরে, রানু আর সোহমের মনে তখন এক রকম শান্ত রোদ উঠে গেছে।