বিশ্ব মশা দিবস বা বিশ্ব মশক দিবস প্রতিবছর ২০শে আগস্ট পালিত একটি দিবস। মশা বাহিত রোগগুলি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিপজ্জনক, এ কারণে প্রতিবছর বহু মৃত্যু হয়। ভারতবর্ষে শুধু নয় সারা বিশ্বে শুধু মশার আক্রমণে প্রতিবছর বহু মানুষের মৃত্যু হয়। তাই বিশ্বজুড়ে ম্যালেরিয়া মুক্ত বিশ্ব গড়ার টার্গেট নিয়েই এই মশা দিবস পালন করা হয় ।
২০শে আগস্ট ‘মশা দিবস’ পালন করা হয় মূলত চিকিৎসক রোনাল্ড রসের আবিষ্কারকে সম্মান জানানোর জন্য।
দীর্ঘদিন গবেষণার পর ভারতীয় মেডিকেল সার্ভিসের মেডিকেল অফিসার রোনাল্ড রস ১৮৯৭ সালে প্রমাণ করেন অ্যানোফিলিস মশা ম্যালেরিয়া পরজীবী বহন করতে পারে। তিনি ২০ আগস্ট তার আবিষ্কারের এই দিনটিকে ‘মশা দিবস’ বলে অভিহিত করেন। পরবর্তীকালে তিনি এই আবিষ্কারের জন্য ‘নোবেল’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন।১৯৩০-এর দশক থেকে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন তার আবিষ্কারের তাৎপর্য তুলে ধরতে ২০ আগস্ট বিশ্ব মশা দিবসের নামকরণ করেন।
বিভিন্ন ভয়াবহ অসুখের মধ্যে মশা বাহিত ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু উল্লেখযোগ্য। তাই ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু ইত্যাদি মশাবাহিত রোগের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জনসাধারণকে বিশেষভাবে সচেতন করার জন্য এই দিন সারা বিশ্ব জুড়ে পালিত হয়। মশা বাহিত রোগ থেকে সাবধান হওয়ার জন্য, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এই দিনে সমগ্র বিশ্ব জুড়ে বেশ কিছু সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করা হয়।
দিন দিন মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়ছে। এর জন্য চাই সচেতনতা। সচেতন না হলে এর পরিসংখ্যান বাড়বে। আমরা জানি মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বেশী দেখা দেয় বর্ষায়। আর
বর্ষাকালের সময় মশাবাহিত রোগশোক গুলি খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়। বর্ষাকাল মশাদের প্রজননের সময়। অতএব বর্ষার সময় মশার উপদ্রব দেখা যায় বেশি। তাই এই সময় আমাদের সচেতন থাকতে হবে অনেক বেশি। তাই মশার কামড় থেকে বাঁচার জন্য কিছু জরুরী বিষয় মেনে চলা আমাদের দরকার–
(ক) মশার হাত থেকে বাঁচতে হলে আমাদের প্রথম পালনীয় কর্তব্য হলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা। আমাদের আশপাশে সর্বদা পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। বাড়ি ও তার আশেপাশে কোথাও জল জমতে দেবেন না জমা জল বা আবর্জনা জমতে দেওয়া মানেই মশার বংশবৃদ্ধির সুযোগ করে দেওয়া। তাই কেবল বাড়ি পরিষ্কার রাখলেই চলবে না, সতর্ক দৃষ্টি রাখুন আশপাশের এলাকার প্রতিও। ঠিকমতো জঞ্জাল পরিষ্কার করুন, ড্রেন পরিষ্কার করে রাখতে হবে। বাড়ির মধ্যে থাকা টবে জল জমতে দেবেন না, অ্যাকোয়ারিয়াম এর জল নিয়মিত পরিষ্কার করুন, ছেড়ে রাখুন গাপ্পির মতো মাছ যা মশার লার্ভা খেয়ে নেয়৷
(খ) বাড়ীর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বজায় রাখুনঃ বাড়ির ছাদে, বাগানে বা বাড়ি সংলগ্ন স্থানে জল জমা হতে দেবেন না। কারণ এই জলেই প্রজনন করে মশা। তা ছাড়াও অপ্রয়োজনে দরজা, জানালা খোলা রাখবেন না। সপ্তাহে একদিন অন্ততঃ আমাদের বাড়ির ভেতর এবং বাইরে ঘুরে দেখা উচিৎ কোথাও কোন পাত্রে জল জমা আছে কিনা, যদি থাকে তাহলে সেটি ফেলে দেই অথবা উল্টিয়ে রাখি অথবা সেখানে মশা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
(গ) পাশাপাশি বর্ষাকালে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার মতো রোগ দেখা যায় সবচেয়ে বেশি। তাই জ্বর, ঠান্ডা লাগা, গাঁটে ব্যথা, বমির মতো লক্ষণ দেখা গেলে একদম দেরী না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। যথা সময়ে সঠিক পরামর্শ নিয়ে নিজেকে সুস্থ রাখুন।
মশা থেকে বাঁচতে কিছু ঘরোয়া উপায়—
তুলসী গাছ লাগান—
অনেকেই বিশ্বাস করে যে বাড়িতে তুলসী গাছ থাকলে নাকি মশা বা মাছি ঘরে ঢুকতে পারে না। ব্যালকনিতে বা জানলার কাছে তুলসী গাছ রেখে দেখতে পারেন।
মশা তাড়াতে রসুন কার্যকর–
কয়েক কোয়া রসুন নিয়ে থেঁতো করে নিন। তার পর সেটা খুব ভালো করে ফুটিয়ে নিন তিন কাপ জলে। জল ফুটে অর্ধেক হলে নামিয়ে ছেঁকে বোতলে ভরে রাখুন। ঠান্ডা হলে ঘরের কোণে কোণে স্প্রে করে দিন এই মিশ্রণ।
মশারি খাটিয়ে ঘুমোনো উচিৎ—
মশার কামড় থেকে বাঁচে হলে অতি অবশ্যই মশারি ব্যবহার করুন। এর কোন বিকল্প নেই। এখনো অনেকেই রাতে ঘুমোনর সময় মশারি ব্যবহার করেন না। এটা মোটেই ঠিক নয়। ঘুমোনোর সময় নিয়মিত মশারি খাটিয়ে ঘুমোনো উচিৎ এবং সকল মানুষ কে এই বিষয়ে সচেতন করা উচিৎ।
সর্বপরি বলাচলে সাধারণ মানুষের সচেতনতা এবং সম্পৃক্ততা মশা নিয়ন্ত্রণে মুখ্য ভূমিকা পালন করবে এবং মশাবাহিত রোগ থেকে মুক্ত থাকবে পরিবার, পরিবেশ ও দেশ।
তাই, বিশ্বব্যাপী মশাবাহিত রোগের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জনসাধারণকে বিশেষভাবে সচেতন করার জন্য প্রতিবছর ২০ আগস্ট দিবসটি পালন করা হয়ে আসছে।
।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।