আজ আন্তর্জাতিক সিডও দিবস। শতাব্দীব্যাপী নারী আন্দোলনের অভিযাত্রা ও বিংশ শতাব্দীর মানবাধিকার আন্দোলনের অনুকূল পরিবেশে জাতিসংঘ নারী আন্দোলনের অগ্রগতির নানা উদ্যোগের ফসল ‘সিডও সনদ’। এই সনদ প্রণয়ন বা কার্যকর করার লক্ষ্যে বিভিন্ন ওয়ার্কিং গ্রুপ নারী জাতির মর্যাদাবিষয়ক কমিশন ও সাধারণ পরিষদের মধ্যে পাঁচ বছর ধরে বিভিন্ন সময় আলোচনা ও পর্যালোচনার পর গৃহীত হয় ‘সিডও সনদ’। বিভিন্ন রাষ্ট্র সনদে স্বাক্ষর শুরু করে ১৯৮০ সালে।
নারীর বিরুদ্ধে সকল প্রকার বৈষম্য দূর করার কনভেনশন (CEDAW) হল একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি যা 1979 সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক গৃহীত হয়। নারীর অধিকারের একটি আন্তর্জাতিক বিল হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, এটি 3 সেপ্টেম্বর 1981 সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং 189টি রাজ্য এটি অনুমোদন করেছে। কনভেনশনটি অনুসমর্থনকারী পঞ্চাশটিরও বেশি দেশ কিছু ঘোষণা, সংরক্ষণ এবং আপত্তির সাপেক্ষে তা করেছে, যার মধ্যে 38টি দেশ রয়েছে যারা প্রয়োগকারী নিবন্ধ 29 প্রত্যাখ্যান করেছে, যা কনভেনশনের ব্যাখ্যা বা প্রয়োগ সম্পর্কিত বিরোধ নিষ্পত্তির উপায়গুলিকে সম্বোধন করে। অস্ট্রেলিয়ার ঘোষণায় তার ফেডারেল সাংবিধানিক ব্যবস্থার ফলে কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা উল্লেখ করা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পালাও স্বাক্ষর করেছে, কিন্তু চুক্তিটি অনুমোদন করেনি। হলি সি, ইরান, সোমালিয়া, সুদান এবং টোঙ্গা CEDAW-তে স্বাক্ষরকারী নয়।
জাতিসংঘের উদ্যোগে প্রতিবছর ‘সিডও’ দিবস পালিত হয়। নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য বিলোপ সনদ Convention on the Elimination of All forms of Discrimination(CEDAW)।নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে ১৯৭৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয় Convention on the Elimination of All Forms of Discrimination against Women, সংক্ষেপে যা CEDAW হিসেবে পরিচিত। বাংলায় এটিকে চিহ্নিত করা হয় ‘নারীর প্রতি সব বৈষম্য বিলোপ সনদ (সিডও)’। ১৯৭৯ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক সনদটি গৃহীত হলেও ১৯৮১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর থেকে তা কার্যকর করা শুরু হয়।
মহিলাদের বিরুদ্ধে বৈষম্য দূরীকরণ সংক্রান্ত কমিটি, সাধারণত ‘CEDAW কমিটি’ হিসাবে সংক্ষেপে, জাতিসংঘের (UN) চুক্তি সংস্থা যা নারীর বিরুদ্ধে সকল প্রকার বৈষম্য দূরীকরণের কনভেনশন (CEDAW) তত্ত্বাবধান করে। এই কমিটির গঠনটি CEDAW-এর 17 অনুচ্ছেদে রূপরেখা দেওয়া হয়েছিল, যা কমিটির নিয়ম, উদ্দেশ্য এবং পরিচালনা পদ্ধতিও প্রতিষ্ঠা করে। CEDAW-তে বর্ণিত নিয়মগুলি অনুসরণ করা হচ্ছে তা নিশ্চিত করতে কমিটি তার কার্যকালের পুরো বছর ধরে একাধিক সেশন করেছে। সময়ের সাথে সাথে কমিটির অনুশীলনগুলি নারীর অধিকার সংক্রান্ত বিষয়গুলির উপর বর্ধিত ফোকাসের কারণে বিকশিত হয়েছে।
CEDAW কার্যকর হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় 20টি অনুমোদন পাওয়ার পর 3 সেপ্টেম্বর 1981-এ মহিলাদের বিরুদ্ধে বৈষম্য দূরীকরণ সংক্রান্ত কমিটি গঠিত হয়েছিল৷ CEDAW-এর 17 অনুচ্ছেদ কমিটি গঠন করেছে যাতে CEDAW-এর বিধানগুলি যে দেশগুলি স্বাক্ষর করেছে এবং এর দ্বারা আবদ্ধ হতে সম্মত হয়েছে তাদের দ্বারা অনুসরণ করা হয়েছে। কমিটির প্রথম নিয়মিত অধিবেশন 18 থেকে 22 অক্টোবর 1982 পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। এই অধিবেশনে কমিটির প্রথম কর্মকর্তারা সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দ্বারা নির্বাচিত হন, মঙ্গোলিয়ার মিসেস এল. ইদার চেয়ারপারসন হন। নির্বাচিত অন্য কর্মকর্তারা হলেন তিনজন ভাইস-চেয়ারপারসন: কানাডার এম. ক্যারন, যুগোস্লাভিয়ার জেড ইলিক এবং রুয়ান্ডার এল. মুকাইরাঙ্গা। কমিটির প্রতিনিধি হিসেবে গিয়ানার ডি.পি. বার্নার্ড নির্বাচিত চূড়ান্ত কর্মকর্তা ছিলেন। এই অধিবেশন চলাকালীন, কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে তার প্রক্রিয়ার নিয়মগুলি গ্রহণ করার জন্য অনুমোদন করেছে৷
এর মূল বিষয় হচ্ছে, নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ বা দূরীকরণ। যেখানে রাজনৈতিক, সামাজিক, পারিবারিক সব ক্ষেত্রে নারীর মানবাধিকার নিশ্চিত করার বিষয়টি স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। এটি আইনগত ভিত্তি নিয়ে একটি কনভেনশন আকারে রূপ লাভ করেছে। এ সনদটি মূলত তিনটি প্রেক্ষিত থেকে সমস্যা সমাধানের নির্দেশ দেয়। ক. নারীর নাগরিক অধিকার ও আইনি সমতা নিশ্চিতকরণ, যার মাধ্যমে নারী গণজীবনে ও সমাজে পুরুষের সমপর্যায়ে সব সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। খ. নারীর প্রজনন ভূমিকাকে সামাজিক ভূমিকা হিসেবে গণ্য করা, যাতে প্রজননের কারণে নারীকে কোণঠাসা না করে এ ক্ষেত্রে নারীর অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়া। গ. আচার-প্রথা, সংস্কার ও বিধি যা নারীর জেন্ডার ভূমিকা নির্ধারণ করে, তা বাতিল করা। পরিবার ও সমাজে শুধু ‘মানুষ’ হিসেবে নারীকে গণ্য করা এবং পুরুষের ক্ষমতাভিত্তিতে তার অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। সিডও একমাত্র আন্তর্জাতিক চুক্তি বা সনদ, যা শুধু নারী সংক্রান্ত।
।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।