Categories
প্রবন্ধ

ত্রিশূল পূর্ণিমা ও সঙ্কল্প মাস : স্বামী আত্মভোলানন্দ।

ওঁ নমঃ শ্রীভগবতে প্রনবায়  নমঃ…!

আজ ১০ই মাঘ বৃস্পতিবার -১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ইং ২৫/০১/২০২৪. পৌষ পূর্ণিমা বা শুভ ত্রিশূল পূর্ণিমা !

 

ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের ইতিহাসে পৌষ পূর্ণিমা বা  “ত্রিশূল পূর্ণিমা” সকল শিষ্য ,ভক্তদের জন্য একমাস মহাপূণ্যময় মাস, পরম পবিত্র মাস। পৌষ পূর্ণিমা হতে  মাঘী পূর্ণিমা পর্যন্ত এই একমাস “সঙ্কল্প মাস” বলে সঙ্ঘে পরিচিত। ১৯১৬ খ্রীষ্টাব্দের পৌষ পূর্ণিমাতে চরমতম সঙ্কল্প গ্রহণ করে এই দিনটিতে বাজিতপুরের ব্রহ্মচারী বিনোদ, যিনি পরবর্তী কালে সুমহান ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা, আচার্য স্বামী প্রণবানন্দজী মহারাজ জঙ্গলের  মধ্যে তার সাধন কুটিরে হাতের ত্রিশূলটি মাটিতে পুতে দৃঢ় সঙ্কল্প  নিয়ে পদ্মাসনে বসলেন, যতক্ষণ সিদ্ধিলাভ করতে না পারবেন ততক্ষণ এই আসন পরিত্যাগ করবেন না । দীর্ঘ একমাস একই ভাবে, একই আসনে বসে পুণ্যময়ী শ্রীশ্রীমাঘী পূর্ণিমার পুণ্যলগ্নে ব্রহ্মচারীজী সিদ্ধি লাভ করেন। তারপর থেকে পৌষ পূর্ণিমা হতে শ্রীশ্রীমাঘী পূর্ণিমা পর্যন্ত এই একমাস “সঙ্কল্প মাস” বলে সঙ্ঘে পরিচিত।

১৯২৫ খ্রীষ্টাব্দের এই পৌষ পূর্ণিমাতে ভারত সেবাশ্রম সংঘের মহান প্রতিষ্ঠাতা ভগবান শ্রীশ্রী প্রণবানন্দজী মহারাজ বাজিতপুরে তাঁর সিদ্ধাসনে সমাধিমগ্ন অবস্থায় এযুগের তারকব্রহ্ম নাম — “ওঁ হর গুরো শঙ্কর শিব শম্ভো” নাম প্রাপ্ত হন এবং আবাল্য তাঁর নিত্যসঙ্গী সিদ্ধ ত্রিশূলটি স্বীয় সিদ্ধাসনে প্রতিষ্ঠিত করে যে উৎসবের আয়োজন করেন, তাহাই  “শ্রীশ্রী ত্রিশূল উৎসব” নামে   সঙ্ঘে পরিচিত লাভ করে। তারপর  হতে ভারত সেবাশ্রম সংঘে ভাবগম্ভীর পরিবেশে পালিত হয় “শ্রীশ্রীত্রিশূল উৎসব”।

এই একমাস (বাক্য,দৃষ্টি,আহার,শ্রবণ,আচরণ,নিদ্রা) কঠোর সংযম ও সাধনা করলে  শ্রীশ্রী গুরু মহারাজের বিশেষ আশীর্বাদ লাভ হয়। এই ১মাস ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের সকল শিষ্য ,ভক্তদের জন্য মহাপূন্যময় পরম পবিত্র মাস। যারা সংযমের  মধ্য দিয়ে পালন করবেন, এবং শ্রী শ্রী ঠাকুরের  সান্নিধ্যে থাকতে পারবেন ততটাই লাভ।  তাই, এই পূর্ণময় সময়ে, শুভ পৌষী “ত্রিশূল” পূর্ণিমায় জপ সংকল্প গ্রহণ করলে এবং মাঘী পূর্ণীমা পর্যন্ত শ্রী শ্রী গুরুমহারাজের বাণী মেনে চললে তাহাতে ৫০ বৎসরের সাধনা ও তপস্যা পূর্ণ হবে।

ত্রিশূল পূ্র্ণীমা থেকে মাঘী পূর্ণীমা পর্যন্ত আচার্যদেবের ঐশ্বরিক ক্ষমতা ক্রমশঃ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে মাঘী পূর্ণীমাতে তা পূর্ণতা পায়। এই সময়ে মনকে সর্বদা গুরুমুখী রেখে সাধন ভজন করলে দশ বছরের কাজ একমাসে হয়। সাধনার সময়ে বাধাও আসে যে বাধাকে অতিক্রম করে দৃঢ় প্রত্যয়ে একাগ্র মনে ভজনা করে তার উন্নতি কেউ আটকাতে পারবে না, তাই, আমাদের সকলের উচিৎ এই সময়ে যথাসাধ্য ধ্যান জপ করা যাতে মন নির্মল হয়। গুরু মহারাজ বলেছেন নির্দিষ্ট লক্ষ্যে জপ করলে মন শুদ্ধ হয় আর মন শুদ্ধ হলে ধর্মতত্ত আপনিই উদ্ভেদ হয়।

এই সঙ্কল্প মাসে সঙ্ঘের শিষ্য, ভক্ত, আনুরাগীগণ বিভিন্ন সঙ্কল্প নেবেন, যেমন নিরামীষ ভোজন,  প্রতিদিন নির্দিষ্ট সংখ্যায় জপ , প্রতিদিন গীতার  কিছু শ্লোক ও সঙ্ঘগীতার কিছু অংশ পাঠ  ইত্যাদি যে কোন জীবন গঠণমুলক ও আত্ম-উন্নতি মুলক  পবিত্র সঙ্কল্প গ্রহণ করবেন, নিকটবর্তী আশ্রমে , বাড়িতে বা মন্দিরে গিয়ে অধিক সময় নিয়ে অধিক হতে অধিকতর সংখ্যক জপ-ধ্যান করবেন। বাড়িতে বা মন্দিরে গিয়ে ,কত সংখক, কত সময়, কতবার বসে জপ-ধ্যান করেছেন নিজের নিজের ডায়রীতে লিখে রাখবেন, মাসের শেষে সঠিক হিসেব পাবেন। শ্রীভগবান স্বয়ংই সদগুরুরূপে অবতীর্ণ l সদ্‌গুরু চরণে আত্মসমর্পণই শিষ্যের সাধনা l পরম করুণাময় শ্রী শ্রী ঠাকুরের শরণাগত হও। তিনি আমাদের ধর্ম, অর্থ, কাম, মোক্ষ চতুর্বর্গ ফল প্রদান  করিবেন । এই  পবিত্র পূণ্য তিথিতে তার শ্রীপাদপদ্মে আমাদের অনন্ত  কোটিপ্রণাম নিবেদন করি l***
ওঁ গুরু কৃপাহি কেবলম….
স্বামী আত্মভোলানন্দ

Share This

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *