Categories
অনুগল্প

গল্পের নাম: “চিঠি ফেরত”।

সাত বছর পর ডাকবাক্সে একটা হলুদ খাম দেখে থমকে দাঁড়াল অনিকেত। প্রেরকের নাম – মেঘলা!

হাত কাঁপছিল… খুলতেই পড়ল চিঠির প্রথম লাইন:
“আমি জানি তুমি আর পড়বে না। কিন্তু আমি লিখেছি, কারণ মনে হয়েছিল—একটা শেষ হাওয়া ছুঁয়ে যাক তোমাকে…”

মেঘলা লিখেছিল—সে এখন পাহাড়ে থাকে, মোবাইল ছাড়াই। জীবনের সব শব্দ থেকে দূরে। ওরা যেদিন আলাদা হয়েছিল, সেদিনের পর থেকেই নাকি সে আর কারও দিকে তাকায়নি ভালোবাসা নিয়ে।

চিঠির শেষে একটা লাইন:
“এই চিঠি ফেরত দিলে বুঝে নেব, তুমি বেঁচে আছো। রেখে দিলে বুঝব, তুমিও হারিয়ে গেছো আমার মতো।”

অনিকেত চিঠিটা আবার ভাঁজ করল।
তারপর ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল বাড়ির পাশের পুরনো গাছে ঝোলানো সেই ছোট্ট ডাকবাক্সটার দিকে।
চিঠিটা ফেরত দিল না।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

বিশ্বাসে শক্তি খুঁজুন : বিপত্তারিণী পূজার ইতিহাস ও তাৎপর্য।।।

বিপত্তারিণী পূজা হল দেবী বিপত্তারিণীকে উৎসর্গ করা একটি শ্রদ্ধেয় হিন্দু আচার, যা দেবী কালীর প্রকাশ। জীবনের প্রতিবন্ধকতা, চ্যালেঞ্জ এবং প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠতে এই পবিত্র উপাসনা করা হয়। বিশ্বাস করা হয় যে পূজাটি ভক্তদের সান্ত্বনা, শক্তি এবং দিকনির্দেশনা দেয় যারা অসুবিধার সম্মুখীন হয়, তাদের মঙ্গল ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করে।

উৎপত্তি এবং তাৎপর্য—

বিপত্তারিণী পূজার শিকড় হিন্দু পুরাণে রয়েছে, যেখানে দেবী বিপত্তারিণীকে একজন উগ্র ও করুণাময় দেবতা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি একজন রক্ষক এবং ত্রাণকর্তা হিসাবে উপাসনা করেন, যা দুঃখ এবং দুর্দশা দূর করতে সক্ষম। পূজাটি বাংলায় এবং ভারতের অন্যান্য অংশে তাৎপর্যপূর্ণ, যেখানে ভক্তরা প্রার্থনা করতে এবং দেবীর আশীর্বাদ পেতে সমবেত হন।

আচার এবং পদ্ধতি—

বিপত্তারিণী পূজা অত্যন্ত ধুমধাম ও ভক্তি সহকারে সম্পন্ন হয়। আচারের মধ্যে রয়েছে:
– শুদ্ধিকরণ আচার
– দেবীর আবাহন
– ফুল, ফল এবং মিষ্টির নৈবেদ্য
– মন্ত্র এবং স্তোত্র উচ্চারণ
– আরতি ও ভজন
পূজা সাধারণত একজন পুরোহিত বা ভক্ত দ্বারা পরিচালিত হয়, যারা নির্ধারিত পদ্ধতি এবং আচার-অনুষ্ঠান অনুসরণ করে।

সুবিধা এবং তাৎপর্য—

বিপত্তারিণী পূজার অনেক সুবিধা রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:
– প্রতিকূলতা এবং চ্যালেঞ্জ থেকে মুক্তি
– ক্ষতি এবং মন্দ থেকে সুরক্ষা
– নির্দেশিকা এবং প্রজ্ঞা
– শক্তি ও সাহস
– সমৃদ্ধি এবং মঙ্গল
পূজাটি ভক্তদের মধ্যে সম্প্রদায় এবং সম্প্রীতির বোধ জাগিয়ে তোলে, যারা দেবীর আশীর্বাদ পেতে একত্রিত হয় বলে বিশ্বাস করা হয়।

উপসংহার—

বিপত্তারিণী পূজা একটি শক্তিশালী এবং পবিত্র আচার যা জীবনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন ভক্তদের সান্ত্বনা ও শক্তি প্রদান করে। এর সমৃদ্ধ তাৎপর্য এবং উপকারিতা সহ, এই পূজা হিন্দু পূজা এবং সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। ভক্তি ও বিশ্বাসের সাথে এই পূজা করলে ভক্তরা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে সমৃদ্ধি ও মঙ্গল অর্জন করতে পারে।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

জাতীয় মৎস্য দিবস: ইতিহাস, তাৎপর্য, উদযাপন ও গুরুত্ব।

জাতীয় মৎস্য দিবস: ইতিহাস, তাৎপর্য, উদযাপন ও গুরুত্ব

ভূমিকা

“মাছে-ভাতে বাঙালি” – এই প্রবাদের মধ্যে বাঙালির খাদ্যাভ্যাস এবং সংস্কৃতির গভীর সম্পর্ক ফুটে ওঠে। শুধু বাংলাদেশ বা পশ্চিমবঙ্গ নয়, সমগ্র ভারতের বহু অঞ্চলে মাছ একটি প্রধান খাদ্য উপাদান। ভারত তথা বিশ্বের অর্থনীতি, পুষ্টি নিরাপত্তা, জীবিকা ও পরিবেশের জন্য মাছ এবং মৎস্যচাষ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ক্ষেত্র। এই গুরুত্বের স্বীকৃতি দিতেই প্রতিবছর জাতীয় মৎস্য দিবস (National Fishery Day) পালন করা হয়।
এই প্রবন্ধে আলোচনা করা হবে:

জাতীয় মৎস্য দিবস কবে ও কেন পালিত হয়

ইতিহাস ও প্রেক্ষাপট

থিম ও বার্তা

ভারতের মৎস্য খাতের অবস্থা

মৎস্যসম্পদের গুরুত্ব

পরিবেশ ও অর্থনীতির সঙ্গে সম্পর্ক

ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

উৎসব ও উদযাপনের রীতি

🗓️ জাতীয় মৎস্য দিবস কবে পালিত হয়?

জাতীয় মৎস্য দিবস প্রতি বছর পালিত হয় ১০ জুলাই (10th July)।
এই দিনটি ভারতের মৎস্য বিজ্ঞানী ডঃ হরসিংহ গিলের জন্মদিন উপলক্ষে পালন করা হয়, যিনি দেশকে নীল বিপ্লবের পথে পরিচালিত করে মাছ উৎপাদনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটিয়েছিলেন।

🎯 জাতীয় মৎস্য দিবস পালনের উদ্দেশ্য

জাতীয় মৎস্য দিবসের মূল উদ্দেশ্য:

মৎস্যজীবীদের অবদানের স্বীকৃতি দেওয়া

মৎস্য চাষের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের গুরুত্ব তুলে ধরা

পুষ্টি নিরাপত্তায় মাছের ভূমিকা প্রচার

বৈজ্ঞানিক ও আধুনিক পদ্ধতিতে মাছচাষ প্রসারিত করা

পরিবেশবান্ধব ও টেকসই মৎস্যচাষে মানুষকে উৎসাহিত করা

📚 ইতিহাস ও প্রেক্ষাপট

🧑‍🔬 ড. হরসিংহ গিল ও নীল বিপ্লব

১৯৭০-এর দশকে ভারতে মাছের উৎপাদন ছিল সীমিত। এই সময় ড. হরসিংহ গিল আধুনিক প্রযুক্তি ও গবেষণার মাধ্যমে নীল বিপ্লব (Blue Revolution)-এর সূচনা করেন, যা ভারতকে মাছ উৎপাদনে বিশ্বের অন্যতম দেশ হিসেবে গড়ে তোলে।
তার অবদানের স্মরণে, ২০০১ সাল থেকে ১০ জুলাই-কে জাতীয় মৎস্য দিবস হিসেবে পালন করা শুরু হয়।

🎨 ২০২৫ সালের জাতীয় মৎস্য দিবসের থিম

২০২৫ সালের নির্দিষ্ট থিম এখনো সরকারি ঘোষণায় আসেনি। তবে প্রতি বছরের মতোই থিমগুলো মূলত হয়:

“Blue Revolution 2.0: Empowering Fish Farmers for a Better Tomorrow”

“Sustainable Fisheries, Healthy Planet”

“মৎস্য, পুষ্টি ও জীবিকার উৎস”

থিমের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব, প্রযুক্তি-নির্ভর এবং কৃষক-কেন্দ্রিক মাছচাষে গুরুত্ব দেওয়া হয়।

📈 ভারতের মৎস্যখাত: পরিসংখ্যান ও বর্তমান অবস্থা

✅ মুখ্য তথ্য:

ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মাছ উৎপাদনকারী দেশ

বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ১৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন (2023 অনুযায়ী)

প্রায় ২.৮ কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মৎস্য খাতে যুক্ত

ভারতের রপ্তানিযোগ্য কৃষিপণ্যের মধ্যে মাছ অন্যতম

অন্ধ্রপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা, অসম, ওড়িশা—এই রাজ্যগুলি মাছ উৎপাদনে এগিয়ে

✅ অর্থনৈতিক অবদান:

ভারতের জিডিপির ১.১% আসে মৎস্য খাত থেকে

মৎস্য পণ্য রপ্তানি: বছরে প্রায় ৫০,০০০ কোটি টাকার পণ্য বিদেশে রপ্তানি হয়

মাছচাষে নতুন প্রযুক্তি ও বায়োফ্লক সিস্টেমের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে

💡 মৎস্যসম্পদের গুরুত্ব ও বহুমাত্রিক অবদান

🥗 ১. পুষ্টি নিরাপত্তা

মাছ প্রোটিনের এক গুরুত্বপূর্ণ উৎস

ভিটামিন D, B12, Omega-3, আয়রন, ক্যালসিয়াম ইত্যাদির উৎস

শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়ক

👨‍👩‍👦 ২. জীবিকা ও কর্মসংস্থান

মৎস্যজীবী, ব্যবসায়ী, পরিবহনকারী, রপ্তানিকারক—সবাই এই চেইনের অংশ

গ্রামীণ ও উপকূলবর্তী মানুষের আয়ের প্রধান উৎস

🌍 ৩. পরিবেশগত গুরুত্ব

জলজ পরিবেশ সংরক্ষণে ভূমিকা

প্রাকৃতিক খাদ্যচক্র রক্ষা করে

জলাশয় রক্ষণাবেক্ষণে সহায়ক

🧪 প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন: আধুনিক মাছচাষ পদ্ধতি

📌 বায়োফ্লক প্রযুক্তি

জল ব্যবহার কম, উৎপাদন বেশি

বায়োব্যাকটেরিয়া ব্যবহারে পানির গুণমান বজায় থাকে

📌 রিকির্কুলেটরি অ্যাকুয়াকালচার সিস্টেম (RAS)

নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে মাছচাষ

ছাদে, শহরে ও ছোট পরিসরে চাষ সম্ভব

📌 স্মার্ট ফিশারি অ্যাপ ও সেন্সর ব্যবহার

পানির গুণমান, খাদ্য মিশ্রণ, অক্সিজেন পরিমাপ

মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ

🎉 জাতীয় মৎস্য দিবস উদযাপন

✅ সরকারি স্তরে

কৃষি ও মৎস্য মন্ত্রণালয় দ্বারা সভা, সেমিনার, পুরস্কার বিতরণ

সফল মৎস্যচাষীদের সম্মাননা প্রদান

আধুনিক প্রযুক্তির প্রদর্শনী ও কর্মশালা

✅ রাজ্য ও জেলা স্তরে

মাছচাষী সম্মেলন

প্রশিক্ষণ শিবির

ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা

✅ সোশ্যাল মিডিয়া ও গণমাধ্যমে প্রচার

তথ্যচিত্র, ভিডিও, পুষ্টিমূল্য প্রচার

জেলিফিশ, ক্যাটফিশ, টাংরা, চিংড়ি ইত্যাদি মাছের গুরুত্ব তুলে ধরা

🧭 বিভিন্ন রাজ্যের উদ্যোগ: কয়েকটি উদাহরণ

🐟 পশ্চিমবঙ্গ

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ দপ্তরের নেতৃত্বে সচেতনতা শিবির

পুরস্কার বিতরণী, প্রযুক্তি মেলা

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাছের পুষ্টি বিষয়ে কর্মশালা

🐠 কেরালা

ব্যাকওয়াটারে মাছচাষ প্রসার

‘Matsya Bhavan’ প্রকল্প

Co-operative Fisheries Growth

🦐 অন্ধ্রপ্রদেশ

রাজ্যের জিডিপিতে বিশাল অবদান

রাজ্য সরকার বায়োফ্লক প্রযুক্তি ছাড়ের উদ্যোগ নিয়েছে

🌱 চ্যালেঞ্জ ও সমস্যাসমূহ

জলদূষণ ও নদী-নালা শুকিয়ে যাওয়া

অতিরিক্ত মাছ ধরার ফলে প্রাকৃতিক মৎস্যসম্পদ হ্রাস

প্রযুক্তির অভাব ও প্রশিক্ষণ ঘাটতি

জলজ জীববৈচিত্র্যের বিপন্নতা

বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা ও মধ্যস্বত্বভোগীদের আধিপত্য

🚀 ভবিষ্যতের সম্ভাবনা ও পরামর্শ

ডিজিটাল ফিশারিজ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা

বায়োফ্লক ও RAS-এর মতো প্রযুক্তি সহজলভ্য করা

বিশ্বমানের হ্যাচারি ও খাদ্য গবেষণাকেন্দ্র স্থাপন

বিমা ও ঋণসুবিধা বাড়ানো

জলজ পরিবেশ সংরক্ষণে সচেতনতা গড়ে তোলা

📝 উপসংহার

জাতীয় মৎস্য দিবস কেবল একটি দিবস নয়, এটি একটি সচেতনতা-আন্দোলন যা দেশের পুষ্টি, কর্মসংস্থান ও পরিবেশকে ঘিরে গড়ে উঠেছে। মাছচাষকে আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত করে এটি দেশের আত্মনির্ভরতার পথে এক উল্লেখযোগ্য সহায়ক হতে পারে। সরকারের পাশাপাশি জনগণকেও এগিয়ে আসতে হবে এই সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রকে আরও সমৃদ্ধ করার জন্য।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

পানিপথে বাবরের জয়: ভারতীয় ইতিহাসের একটি টার্নিং পয়েন্ট।।।।

1526 সালের 21শে এপ্রিলে সংঘটিত পানিপথের যুদ্ধ ছিল ভারতীয় ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। এটি ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের রাজত্বের সূচনা এবং লোদি রাজবংশের সমাপ্তি চিহ্নিত করে। মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বাবর, লোদি রাজবংশের শেষ শাসক ইব্রাহিম লোদির অনেক বৃহত্তর সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তার সৈন্যদের একটি নির্ণায়ক বিজয়ের দিকে নিয়ে যান।

*পটভূমি*
মধ্য এশিয়ার শাসক বাবর বছরের পর বছর ধরে ভারতের সম্পদের দিকে নজর রেখেছিলেন। তিনি ইতিমধ্যে ভারত আক্রমণ করার জন্য বেশ কয়েকটি চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু ব্যর্থ হন। যাইহোক, 1526 সালে, তিনি একটি বিশাল সেনাবাহিনী সংগ্রহ করেন এবং ভারতের দিকে অগ্রসর হন। ইব্রাহিম লোদি, যিনি সম্প্রতি সিংহাসনে আরোহণ করেছিলেন, আসন্ন বিপদ সম্পর্কে অবগত ছিলেন না।
*যুদ্ধ*
পানিপথের সমভূমিতে দুই সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ হয়। বাবরের সেনাবাহিনী ছোট ছিল, প্রায় 12,000 সৈন্য ছিল, যখন ইব্রাহিম লোদির সেনাবাহিনীতে 100,000 সৈন্য ছিল। যাইহোক, বাবরের সেনাবাহিনী উন্নততর প্রশিক্ষিত এবং উন্নত অস্ত্রে সজ্জিত ছিল। বাবরও উদ্ভাবনী কৌশল প্রয়োগ করেছিলেন, যেমন আর্টিলারি ব্যবহার এবং অর্ধচন্দ্রাকার আকারে তার সৈন্যদের মোতায়েন।
যুদ্ধ প্রচণ্ড ছিল, কিন্তু বাবরের সেনাবাহিনী বিজয়ী হয়। যুদ্ধে ইব্রাহিম লোদি নিহত হন এবং তার বাহিনী বিশৃঙ্খল অবস্থায় পালিয়ে যায়।
*আগ্রায় প্রবেশ*
পানিপথে বিজয়ের পর বাবর লোদী রাজবংশের রাজধানী আগ্রার দিকে অগ্রসর হন। শহরটি বিনা যুদ্ধে আত্মসমর্পণ করে এবং বাবর বিজয়ের সাথে আগ্রায় প্রবেশ করেন। শহরের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিবর্গ এবং কর্মকর্তারা তাকে অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন, যারা তার প্রতি আনুগত্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
আগ্রায় বাবরের প্রবেশ ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের রাজত্বের সূচনা করে। তিনি আগ্রায় তার রাজধানী স্থাপন করেন এবং তার ক্ষমতা সুসংহত করতে শুরু করেন। তিনি তার প্রশাসনিক ও সামরিক সংস্কারও বাস্তবায়ন করতে শুরু করেছিলেন, যা আগামী শতাব্দীর জন্য ভারতীয় ইতিহাসের গতিপথকে রূপ দেবে।
*উপসংহার*
পানিপথের যুদ্ধে বাবরের বিজয় ছিল ভারতীয় ইতিহাসের একটি টার্নিং পয়েন্ট। এটি লোদি রাজবংশের সমাপ্তি এবং ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের রাজত্বের সূচনা চিহ্নিত করে। আগ্রায় বাবরের প্রবেশ একটি উল্লেখযোগ্য মুহূর্ত ছিল, কারণ এটি ভারতীয় ইতিহাসে একটি নতুন যুগের সূচনা করে। মুঘল সাম্রাজ্য ভারতীয় ইতিহাসের অন্যতম শক্তিশালী সাম্রাজ্য হয়ে উঠবে, যা আগামী শতাব্দীর জন্য দেশের সংস্কৃতি, স্থাপত্য এবং রাজনীতিকে রূপ দেবে।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

সুনীল গাভাস্কার: একজন কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান এবং ভারতীয় ক্রিকেটের একজন সত্যিকারের আইকন।।।

সুনীল গাভাস্কারকে ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে গণ্য করা হয়। 10 জুলাই, 1949 তারিখে ভারতের মুম্বাইতে জন্মগ্রহণ করেন, গাভাস্কার খেলাধুলায় একজন কিংবদন্তি ব্যক্তিত্বে পরিণত হন, যা তার প্রযুক্তিগত দক্ষতা, করুণা এবং অটল উত্সর্গের জন্য পরিচিত।

প্রারম্ভিক জীবন এবং কর্মজীবন—

অল্প বয়সে ক্রিকেটের সাথে গাভাস্কারের প্রেমের সম্পর্ক শুরু হয় এবং তিনি দ্রুত স্কুল ও কলেজ ক্রিকেটে নিজের নাম তৈরি করেন। তিনি 1967 সালে মুম্বাইয়ের হয়ে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক করেন এবং শীঘ্রই নিজেকে একজন দুর্দান্ত রান-স্কোরার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার—

গাভাস্কারের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার দুই দশক ধরে বিস্তৃত, এই সময়ে তিনি ভারতের হয়ে 125টি টেস্ট এবং 108টি একদিনের আন্তর্জাতিক (ODI) খেলেছেন। তিনি 1971 সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তার টেস্ট অভিষেক করেন এবং 51.12 গড়ে 10,000 রান করেন। এছাড়াও তিনি ওয়ানডেতে ৩৫.৩১ গড়ে ৩,০০০ রান করেছেন।

অধিনায়কত্ব এবং নেতৃত্ব—

গাভাস্কার একজন ব্যতিক্রমী নেতা ছিলেন যিনি 47টি টেস্ট এবং 37টি ওয়ানডেতে ভারতীয় দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তিনি দলকে 1976 সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক সিরিজ জয় সহ বেশ কয়েকটি জয়ের নেতৃত্ব দেন।

ব্যাটিং স্টাইল এবং টেকনিক—-

গাভাস্কারের ব্যাটিং শৈলীটি তার কম্প্যাক্ট কৌশল, ফুটওয়ার্ক এবং রক্ষণাত্মক এবং আক্রমণাত্মক শট উভয়ই সমান স্বাচ্ছন্দ্যে খেলার ক্ষমতা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছিল। তিনি বিশেষভাবে হুক শটে দক্ষতা এবং স্বাচ্ছন্দ্যে স্পিন বোলিং খেলার দক্ষতার জন্য পরিচিত ছিলেন।

অর্জন এবং রেকর্ড—

মাঠে গাভাস্কারের অর্জন কিংবদন্তি। তিনিই প্রথম ব্যাটসম্যান যিনি টেস্ট ক্রিকেটে 10,000 রান করেন এবং শচীন টেন্ডুলকারের দ্বারা ভেঙ্গে না যাওয়া পর্যন্ত সর্বাধিক টেস্ট সেঞ্চুরির (34) রেকর্ডটি ধরে রেখেছিলেন। 1976 সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে (774) সর্বোচ্চ রান করার রেকর্ডও তার দখলে।

উত্তরাধিকার এবং প্রভাব—-

ভারতীয় ক্রিকেটে গাভাস্কারের প্রভাব অপরিসীম। তিনি শচীন টেন্ডুলকার সহ এক প্রজন্মের ক্রিকেটারদের অনুপ্রাণিত করেছিলেন, যিনি প্রায়শই গাভাস্কারকে তার শৈশবের নায়ক হিসাবে কৃতিত্ব দিয়েছেন। তার নেতৃত্ব এবং ব্যাটিং শৈলী বিশ্বজুড়ে ক্রিকেটারদের দ্বারা অধ্যয়ন করা হয়েছে, এবং তিনি খেলাধুলার সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তিত্বদের একজন।

উপসংহার—

সুনীল গাভাস্কার ভারতীয় ক্রিকেটের একজন সত্যিকারের আইকন, যার মাঠে এবং মাঠের বাইরে কৃতিত্বগুলি প্রজন্মের ক্রিকেটার এবং ভক্তদের অনুপ্রাণিত করেছে। তার উত্তরাধিকার পালিত হচ্ছে, এবং খেলাধুলায় তার অবদান অতুলনীয়।

Share This
Categories
অনুগল্প

ফিরে যদি আসো…।

বিরহের অনুগল্প — হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া, নরম, নীরব এক ভালোবাসার পরিণতি।

নির্মলা রোজ ভোরবেলা উঠেই ব্যালকনির দিকের চিঠির বাক্সটা দেখে।
আজও… কিচ্ছু নেই।
পঁচিশ বছর আগেও ঠিক এমন এক সকালে, রুদ্র বলেছিল —
— “চলে যাচ্ছি, কিন্তু লিখব রোজ। জানবে, আমি ভুলিনি।”
প্রথমে চিঠি এসেছিল নিয়মিত, তারপর মাসে একবার, তারপর বছরে একবার…
তারপর… আর কিছুই না।
তবু নির্মলা অপেক্ষা করে গেছে।
চুলের রঙ বদলেছে, চোখের দৃষ্টিতে এসেছে কাচের ঝাপসা, তবুও অপেক্ষা বদলায়নি।
আজ সে চিঠি লেখে —

“রুদ্র,
যদি ফিরে আসো, জানিও… আমি রোজই অপেক্ষা করেছি।
দরজাটা আজও খোলা…
— নির্মলা”

চিঠিটা সে রাখে জানলার পাশে, বাতাসে উড়তে থাকে।
পেছনে তার ঘর — নিঃসঙ্গ, নীরব… কিন্তু দরজাটা আজও হালকা খোলা।

Share This
Categories
উপন্যাস গল্প

চিঠিতে লেখা প্রেম।

🧩 গল্পের সারাংশ:

এই গল্প একটি চিঠিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এক অসম্ভব প্রেমের, যেখানে দু’জন অচেনা মানুষ — ঋদ্ধি ও আকাশ — এক ভুল ঠিকানায় পৌঁছানো চিঠি থেকে শুরু করে, এক গভীর আত্মিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। সময়, দূরত্ব, পরিবার ও সমাজের বাস্তবতা তাদের পরীক্ষা নেয়, কিন্তু ভালোবাসা বারবার ফিরে আসে… কখনো চিঠিতে, কখনো নীরবতায়।

🎭 প্রধান চরিত্র:

ঋদ্ধি সরকার: কলকাতার কলেজ পড়ুয়া মেয়ে, সাহিত্যে আগ্রহী, আবেগপ্রবণ, অন্তর্মুখী।

আকাশ দত্ত: এক গ্রাম্য ডাকঘরের কর্মচারী, শান্ত স্বভাবের, কবিতা ভালোবাসে, দায়িত্বশীল।

কাকলি (ঋদ্ধির বন্ধু), মিস্টার মুখার্জি (আকাশের ডাকঘরের বস), ঋদ্ধির বাবা-মা, আকাশের দিদি মালবিকা — সহায়ক চরিত্র।

🗂️ গল্পের কাঠামো (২৫ পর্ব):

ভুল ঠিকানায় পাঠানো চিঠি

আকাশের আগ্রহে প্রথম উত্তর

চিঠির উত্তর-পত্র চলতে থাকে

নামহীন পরিচয়ের টান

ঋদ্ধির কাকলির সন্দেহ

আকাশের ব্যক্তিজীবন প্রকাশ

ঋদ্ধির কলেজে নাটক, প্রথম কবিতা পাঠ

আকাশের ডাকঘরের গোলমাল

ঋদ্ধির অভিমান

এক দীর্ঘ চিঠিতে ক্ষমা

আকাশের দিদির দেখা মেলানো চেষ্টা

পুজোর সময় কলকাতায় দেখা হতে পারত

দেখা হয়নি, বেড়ে যায় দুরত্ব

ঋদ্ধির বাবা অন্যত্র বিয়ের প্রস্তাব দেন

আকাশের ভেতর যুদ্ধ

কাকলির সাহসী পদক্ষেপ

ঋদ্ধির বিদ্রোহ

প্রথম ফোনালাপ

একপাক্ষিক সিদ্ধান্তের বিপরীতে

আকাশ কলকাতা আসে

মুখোমুখি দেখা

পরিবার জানে সব

সম্পর্কের স্বীকৃতি চাওয়া

চিঠির শেষ পাতা

নতুন ঠিকানা — একই নামে

এখন নিচে এই কাহিনির জন্য একটি কল্পচিত্র তৈরি করছি, যাতে পুরো সিরিজটির অনুভব উঠে আসে।

📖 চিঠিতে লেখা প্রেম

পর্ব ১: ভুল ঠিকানায় পাঠানো চিঠি
কলকাতার একটি মেঘলা বিকেল। ঋদ্ধি তার জানালার ধারে বসে ছিল, এক হাতে চায়ের কাপ, আরেক হাতে একটি সাদা খাম। চোখে চিন্তা — চিঠিটা লিখেছে সে, কিন্তু পাঠাবে কি পাঠাবে না, তা বুঝে উঠতে পারছে না।
চিঠিটা সে লিখেছে একজনকে, যার নাম অনিরুদ্ধ — তার কলেজের সিনিয়র, যাকে সে অনেক দিন ধরে পছন্দ করে। কিন্তু সাহস হয়নি মুখোমুখি বলার। সে ভেবেছিল, একটা চিঠি পাঠালে হয়তো মনের কথা কিছু বলা যাবে।
অবশেষে, খানিক সাহস করে সে পিন কোড, এলাকা সব লিখে দিয়ে পোস্টবক্সে ফেলে দেয় চিঠিটা।
তবে ভুলটা সেখানেই ঘটে।
ঋদ্ধি ভুল করে পিন কোডে দুটি সংখ্যা উল্টে লিখে ফেলে। চিঠিটা পৌঁছে যায় ৭০০০১৬ নয়, ৭০০০৬১-তে — দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার এক ছোট ডাকঘরে।
অন্যদিকে —
সেই ছোট্ট ডাকঘরের ভিতরে এক তরুণ কর্মচারী — আকাশ দত্ত। ছুটির শেষে একটা অদ্ভুত চিঠি তার হাতে এসে পড়ে। প্রাপক যাকে লেখা, সেই ঠিকানায় এমন কেউ নেই।
কিন্তু চিঠির কাগজে এমন শব্দ, এমন আন্তরিকতা — যেন সেটা কারোর ব্যক্তিগত কবিতা।
“তুমি জানো না আমি কে, কিন্তু আমি তো তোমায় প্রতিদিন দেখি…” — এমন এক চিঠির পংক্তি পড়ে আকাশ অবাক হয়।
সে ভাবে: “এই চিঠির উত্তর যদি দিই? যদি তার লেখার মতো করে লিখি কিছু? সে কি উত্তর দেবে?”
সেই সন্ধ্যায়, আকাশ লেখে তার জীবনের প্রথম চিঠি — যা ঠিক প্রেরকের নামে নয়, বরং এক অচেনা হৃদয়ের খামে।

 

📖 চিঠিতে লেখা প্রেম

পর্ব ২: (আকাশের আগ্রহে প্রথম উত্তর)

আকাশ দত্তর জীবন ছিল একরকম ছন্দে বাঁধা — সকালে অফিস, দুপুরে চা, বিকেলে কাগজপত্রের ঝাঁপি গুছিয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরা।
কিন্তু সেই একটি ভুল ঠিকানায় পৌঁছনো চিঠি যেন তার ছন্দে এক নতুন সুর এনে দিল।
চিঠিটা সে অন্তত দশবার পড়েছে।
লেখা ছিল —
“তুমি জানো না আমি কে, তবু প্রতিদিন তোমার চোখে কিছু দেখার ইচ্ছে হয় আমার। যদি জানত তুমি, কীভাবে আমি তোমায় অনুভব করি — হয়তো হাসতে, হয়তো কাঁদতে।”
চিঠির লেখার ভঙ্গি আকাশকে অভিভূত করেছিল। এই যে কেউ একজন, এই শহরের কোথাও, এমন নিঃশব্দে কারো দিকে তাকিয়ে প্রেম করছে — একরকম সাহস আর নরম আবেগের সংমিশ্রণ ছিল তাতে।
সেই রাতে আকাশের ঘরে ছিল কেরোসিনের আলো।
সে টেবিলে বসে প্রথমবার কাগজে কলম রাখে, অনেক ভেবে লিখে ফেলে:

“প্রিয় অচেনা তুমি,
তোমার লেখা পড়ে আমি ভীষণ চমকে গেছি। চিঠিটা কাকতালীয়ভাবে আমার হাতে পড়েছে।
জানি, তুমি যাকে চিঠি লিখেছো, আমি সে নই। তবু তুমি যা লিখেছো, তা এতটা সত্য আর আন্তরিক, যে আমি নিজেকে আটকাতে পারিনি।
আমি জানি না, তুমি আমাকে উত্তর দেবে কিনা, কিংবা আদৌ পড়বে কিনা আমার চিঠি।
তবু যদি উত্তর দাও, তবে আমি খুশি হব।
— আকাশ”

চিঠিটা শেষ করে সে লিখে দেয় খামের গায়ে প্রেরকের ঠিকানা — ঋদ্ধি সরকার।
তারপর পোস্ট করে দেয় পরদিন সকালে।
কলকাতার অন্যপ্রান্তে, দুদিন পরে, ঋদ্ধি ডাকঘর থেকে ফেরার পথে চিঠি হাতে পায়। প্রথমে অবাক হয়ে ভাবে — “আকাশ? কে?”
চিঠি খুলে পড়ে সে অবাক হয়ে যায় —
“তার মানে… আমার চিঠি… সে পেয়েছে? কিন্তু সে তো অনিরুদ্ধ না!”
তবু, চিঠির একেকটা বাক্য তার মনে নরম স্পর্শ ছুঁয়ে যায়।
একটা অচেনা নাম, এক অচেনা ভাষা — কিন্তু তাতে এক অদ্ভুত টান।
চোখে যেন ধরা পড়ে এক স্বীকারোক্তি —
“ভুল ঠিকানায় পাঠানো ভালোবাসা যদি উত্তর পায়, তবে সেটা কি সত্যিই ভুল থাকে?”

 

পর্ব ৩: (চিঠির উত্তর-পত্র চলতে থাকে)

ঋদ্ধি চিঠিটা পড়ার পর বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে বসে ছিল। জানালার কাঁচে ধেয়ে আসা হালকা বৃষ্টি আর দূরের কাকের ডাক যেন চুপচাপ সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়েছিল তার ভেতরের আলোড়নের।
চিঠিটা সে বারবার পড়ে। কে এই আকাশ? ডাকঘরের কর্মচারী, কিন্তু কী সুন্দরভাবে লিখেছে! কোনো অভিযোগ নেই, কৌতূহলও কম — তবু কোথাও যেন একটা ভদ্রতা মেশানো আন্তরিকতা।
তারপর হঠাৎ যেন একটা কিশোরীর হাসি ঝরে পড়ে ওর ঠোঁটে।
“চলো, এই খেলাটা দেখি কতদূর যায়। চিঠিতে চিঠির জবাব দেওয়া — এটাও তো একরকম প্রেম নয় কি?”
সেই রাতে সে লিখে ফেলে তার উত্তর।

প্রিয় আকাশ,
তোমার চিঠি পেয়ে বিস্ময় আর আনন্দ একসাথে কাজ করেছে।
হ্যাঁ, এই চিঠি আমি অনিরুদ্ধ নামে একজনকে লিখেছিলাম, যে হয়তো কোনোদিনই পড়বে না। তুমি পড়েছো, তাতে খারাপ লাগেনি। বরং ভালোই লেগেছে।
তুমি যদি লেখো, আমিও লিখব।
নাহ, আমরা কোনোদিন দেখব না হয়তো, তবু কয়েকটা পৃষ্ঠা থাক আমাদের মাঝে।
তুমি জানতে চেয়েছিলে আমি কে — আমার নাম ঋদ্ধি, সাহিত্যে স্নাতক করছি। কবিতা পড়ি, সিনেমা দেখি, আর মাঝে মাঝে এমন চিঠি লিখি…
তুমি লিখতে পারো, আকাশ। ঠিকানাটা তো এখন জানো।
— ঋদ্ধি

চিঠিটা পাঠিয়ে দিয়ে সে একরকম অপেক্ষা করতে থাকে।
প্রথমে ১ দিন, তারপর ২ দিন, ৩ দিন…
৪র্থ দিনে এক বিকেলে আবার এক খাম আসে।
আকাশের লেখা — নীল কালিতে।
এবার লিখেছে নিজের পছন্দ-অপছন্দ, ছোটবেলার গল্প, কীভাবে সে প্রতি সন্ধ্যায় চায়ের দোকানে কবিতা পড়ে…
আর শেষে লিখেছে:

*”তুমি বলেছিলে, আমরা দেখা করবো না।
আমি বলছি, চিঠিতে যদি একদিন চোখে দেখা পাওয়া যায় — তবে আর বাইরে দেখা না হলেও চলবে।”*

ঋদ্ধির মুখে এক শান্ত হাসি।
এইভাবে শুরু হয় চিঠির যাত্রা —
সপ্তাহে একবার করে।
কখনো কবিতা, কখনো গল্প, কখনো নিঃশব্দ যন্ত্রণার কথা — তারা সব বলে, শুধু লিখে।

 

পর্ব ৪: (নামহীন পরিচয়ের টান)

চিঠির খামে কখনো নাম থাকত না — শুধু “প্রিয় তুমি” আর “তোমার আকাশ”।
সপ্তাহের সেই নির্দিষ্ট দিনে ঋদ্ধি ডান হাতের কড়ে আঙুলে মেহেদির মতো অপেক্ষা বয়ে বেড়াত — আজ চিঠি আসবে।
আর আকাশ? সে প্রতিদিন ডাকঘরের ব্যাগ থেকে একটা খালি জায়গা রেখে দিত — ওখানে থাকত ঋদ্ধির চিঠির জন্য আলাদা জায়গা।
তাদের মধ্যে কোনো মোবাইল নম্বর নেই, ছবি নেই, সোশ্যাল মিডিয়াও না।
তবু এই অদ্ভুত অদৃশ্য যোগাযোগ — একটা অদেখা মানুষের জন্য এমন করে অপেক্ষা?
প্রথমে কাকলি — ঋদ্ধির ঘনিষ্ঠ বান্ধবী — কিছু না বুঝে জিজ্ঞেস করেছিল,
— “তোকে কি সত্যিই চিঠিতে ভালো লাগা শুরু হয়েছে? নাম জানিস, পেশা জানিস, ছবি জানিস না। তার মানে কি?”
ঋদ্ধি শুধু হেসে বলেছিল,
— “কিছু কিছু সম্পর্ক জানার নয়, অনুভব করার। ওর নাম তো আকাশ — সীমাহীন, অথচ ধরা যায় না।”
অন্যদিকে আকাশও এক সন্ধ্যায় লিখে ফেলে:

“প্রিয় তুমি,
আজ সকাল থেকে অফিসে খুব চাপ, কিন্তু মাথার ভিতরে শুধু একটা কথাই ঘুরছে —
তোমার চোখ কেমন? তুমি বৃষ্টিতে ভেজো? চায়ের কাপ ধরে গাল ভিজে যায় তোমার?
কেমন অদ্ভুত না, আমি এসব জানি না, তবু মনে হয় জানি।
তুমি কি আমায় দেখতে চাও?
নাকি এই না-দেখা, না-জানা ভালোবাসাটাই আমাদের গল্প?”
— তোমার আকাশ

ঋদ্ধি উত্তর দেয় না সোজাসুজি। পরের চিঠিতে সে শুধু লিখে —

“বৃষ্টিতে ভেজা চোখের ছবি ভালোবাসি। দেখা নয়, অনুভব — সেটাই সবচেয়ে সত্যি।”

তারা নিজেরা যেন এক ছায়ায় ছায়া খুঁজছিল। এক অচেনা টান, এক নামহীন গভীরতা তাদের টেনে নিয়ে যাচ্ছিল এক এমন জগতে, যেখানে পরিচয় মুখ নয়, আত্মা।
এইভাবে কেটে যায় কয়েকটি মাস।
শহরের মাঝে, ছেলেমেয়ের গলার সুরে, বইমেলার ভিড়ে, তারা আলাদা আলাদা থেকেও যেন একসাথে হাঁটছিল।
তাদের নাম ছিল না একে অপরের ঠোঁটে, কিন্তু হৃদয়ের পৃষ্ঠায় একেকটা চিঠি হয়ে লিখে যাচ্ছিল —
ভালোবাসার অপরিচিত গল্প।

অসাধারণ! নিচে আমি তোমার জন্য পর্ব ৫ থেকে ১০ পর্যন্ত গল্পটি পরপর সাজিয়ে দিচ্ছি। প্রতিটি পর্ব ছোট ছোট করে হলেও আবেগ, টান ও নাটকীয়তা ধরে রাখার চেষ্টা করেছি।

পর্ব ৫: (কাকলির সন্দেহ)।

কাকলি এখন আর চুপ করে নেই।
একদিন চিঠিগুলো দেখে বলে বসলো,
— “দেখ, ঋদ্ধি, অচেনা কারও সঙ্গে এমন আবেগ দিয়ে জড়িয়ে পড়া ঠিক নয়। হয়তো ও বিবাহিত, কিংবা…”
— “তুমি ওকে চেনো না, কাকলি,” বলে ঋদ্ধি শান্তভাবে চিঠিগুলো গুছিয়ে রাখে।
— “তুইও কি চাস না, একবার ওকে দেখতে?”
— “না কাকলি। আমি চাই চিঠিগুলো থাকুক… ওকে না দেখেই এই অনুভবটা সত্যি।”
কিন্তু কাকলির মনে একটা অস্থির সন্দেহ বাসা বাঁধে — আর সে চুপচাপ কিছু খোঁজ নিতে শুরু করে…

পর্ব ৬: (আকাশের ব্যক্তিজীবন প্রকাশ)।

ঋদ্ধির চিঠির উত্তরে আকাশ এবার নিজের কিছু ব্যক্তিগত কথা জানায়।

“তুমি জেনো, আমি ছোটবেলা থেকে বইয়ের মধ্যে থাকতাম। মা মারা যান যখন আমি দশ বছরের, বাবা এরপর আর নতুন সংসার করেননি। এখন আমি আর দিদি — আমাদের দুইজনের ছোট সংসার।
আমি চিঠিগুলোর মধ্যে যেন একটা বন্ধ দরজার ওপাশে আলো দেখি — সেই আলো তুমি।
তুমি কেমন? তোমার মা-বাবা? কাউকে বলেছো আমার কথা?”

ঋদ্ধির চোখে জল আসে। সে ভাবে, একজন ছেলে, এতটা ভেতর খুলে দেয় কাউকে — শুধু চিঠিতে?
এই গভীর আত্মার ছোঁয়া যে খুব কম পাওয়া যায়।

পর্ব ৭: (ঋদ্ধির কলেজে নাটক, প্রথম কবিতা পাঠ)।

ঋদ্ধির কলেজে বসন্তোৎসব। সে এবার নিজের লেখা কবিতা পাঠ করবে।
মঞ্চে দাঁড়িয়ে তার চোখ বারবার খোঁজে সেই একজনকে, যে আসবে না, তবু তার সব কবিতার উৎস।
সে পড়ে তার নিজের লেখা কবিতা:

“চিঠির কাগজে আঁকা নামহীন মুখ,
প্রতিটি অক্ষরে তুমি ছিলে, তবু চেনা হলে না।
তুমি এসোনি কোনো সন্ধ্যায়,
কিন্তু আমার প্রতিটি সকাল, তোমায় দিয়েই শুরু।”

বন্ধুরা প্রশংসা করে, কিন্তু সে জানে কবিতার মূল শ্রোতা আজ নেই।
পরদিন সে চিঠির সঙ্গে কবিতার কপি পাঠিয়ে দেয় আকাশকে।

পর্ব ৮: (আকাশের ডাকঘরের গোলমাল)।

ডাকঘরে হঠাৎ চিঠি হারানোর অভিযোগে একটা তদন্ত হয়।
আকাশকে প্রশ্ন করা হয় — সে কি ব্যক্তিগত চিঠি খুলে পড়ে?
কিন্তু সে নিজেকে সামলে নেয়। ঋদ্ধির চিঠির কথা কাউকে না বলে কেবল নিজের সততা প্রমাণ করে।
বস, মিস্টার মুখার্জি, পরে বলে,
— “তোকে জানি বেটা, কিন্তু সাবধান। আজকের দিনে কেউ কাউকে চিঠি লেখে?”
আকাশ একভাবে হেসে ফেলে।
সে জানে, আজও কেউ কেউ হৃদয়ের খামে ভালোবাসা ভরে পাঠায়…

পর্ব ৯: (ঋদ্ধির অভিমান)।

এক সপ্তাহ চিঠি আসে না।
ঋদ্ধি ঘুমাতে পারে না, চোখে কালি পড়ে যায়।
সে ভাবে —
“তাহলে কি আকাশও চলে গেল? সেও কি এখন বাস্তবের দিকে ফিরে গেল?”
চিঠির প্রতীক্ষায় দিন কেটে যায়।
অবশেষে চতুর্থ সপ্তাহে চিঠি আসে, কিন্তু অল্প কথায় লেখা:

“কিছুদিন ডাকঘরের ঝামেলায় মন ছিল না, দুঃখ দিয়েছি।
তবে বিশ্বাস করো, আমি তোমাকে লেখা বন্ধ করিনি — শুধু একটু হারিয়ে গিয়েছিলাম।
তুমি রাগ করো?
তুমি কি এই চিঠির উত্তর দেবে, নাকি আমায় ক্ষমা করবে না আর?”
— তোমার আকাশ

ঋদ্ধি ভেতরে কেঁপে ওঠে।
তার চোখে জল গড়িয়ে পড়ে — সে রাগ করতে পারেনি, শুধু মন খারাপ করেছিল।
সে উত্তর লেখে —

“আমি চিঠি পাওয়ার অপেক্ষা করি, রাগ করি না। আমি আজকাল তোমার শব্দেই বাঁচি আকাশ…”

পর্ব ১০: (এক দীর্ঘ চিঠিতে ক্ষমা)।

এই পর্বে আকাশ নিজের সমস্ত অনুশোচনা এক চিঠিতে লেখে।

“ঋদ্ধি, তুমি জানো, চিঠি না পাঠিয়ে আমি নিজেকেই যেন ভুলে গিয়েছিলাম।
আমি এখন বুঝি, এই চিঠিগুলো শুধু লেখা নয় — এটা আমাদের অস্তিত্ব।
আমি তোমায় না দেখে ভালোবেসে ফেলেছি, হয়তো অযৌক্তিক, কিন্তু এর চেয়ে সত্য আর কিছুই নেই।
যদি পারো, আমাকে ক্ষমা কোরো।
আমি আর কখনো হারিয়ে যাবো না।”

চিঠির শেষে ছিল একটা প্রশ্ন —
“তুমি কি আমাকে ঠিকঠাক ভালোবাসো, ঋদ্ধি?”
ঋদ্ধি উত্তর দেয় না সাথে সাথে।
সে জানে, এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া মানে… তার ভিতরটাও মেলে ধরা।
তার চোখে তখন মেঘ জমে —
“ভালোবাসা কি সত্যিই হয় চিঠিতে?
না কি… এটাও একটা গল্প মাত্র?”

অসাধারণ! নিচে আমি তোমার জন্য পর্ব ৫ থেকে ১০ পর্যন্ত গল্পটি পরপর সাজিয়ে দিচ্ছি। প্রতিটি পর্ব ছোট ছোট করে হলেও আবেগ, টান ও নাটকীয়তা ধরে রাখার চেষ্টা করেছি।

📖 চিঠিতে লেখা প্রেম

পর্ব ৫–১০

পর্ব ৫: কাকলির সন্দেহ

কাকলি এখন আর চুপ করে নেই।
একদিন চিঠিগুলো দেখে বলে বসলো,
— “দেখ, ঋদ্ধি, অচেনা কারও সঙ্গে এমন আবেগ দিয়ে জড়িয়ে পড়া ঠিক নয়। হয়তো ও বিবাহিত, কিংবা…”
— “তুমি ওকে চেনো না, কাকলি,” বলে ঋদ্ধি শান্তভাবে চিঠিগুলো গুছিয়ে রাখে।
— “তুইও কি চাস না, একবার ওকে দেখতে?”
— “না কাকলি। আমি চাই চিঠিগুলো থাকুক… ওকে না দেখেই এই অনুভবটা সত্যি।”
কিন্তু কাকলির মনে একটা অস্থির সন্দেহ বাসা বাঁধে — আর সে চুপচাপ কিছু খোঁজ নিতে শুরু করে…

পর্ব ৬: আকাশের ব্যক্তিজীবন প্রকাশ

ঋদ্ধির চিঠির উত্তরে আকাশ এবার নিজের কিছু ব্যক্তিগত কথা জানায়।

“তুমি জেনো, আমি ছোটবেলা থেকে বইয়ের মধ্যে থাকতাম। মা মারা যান যখন আমি দশ বছরের, বাবা এরপর আর নতুন সংসার করেননি। এখন আমি আর দিদি — আমাদের দুইজনের ছোট সংসার।
আমি চিঠিগুলোর মধ্যে যেন একটা বন্ধ দরজার ওপাশে আলো দেখি — সেই আলো তুমি।
তুমি কেমন? তোমার মা-বাবা? কাউকে বলেছো আমার কথা?”

ঋদ্ধির চোখে জল আসে। সে ভাবে, একজন ছেলে, এতটা ভেতর খুলে দেয় কাউকে — শুধু চিঠিতে?
এই গভীর আত্মার ছোঁয়া যে খুব কম পাওয়া যায়।

পর্ব ৭: ঋদ্ধির কলেজে নাটক, প্রথম কবিতা পাঠ

ঋদ্ধির কলেজে বসন্তোৎসব। সে এবার নিজের লেখা কবিতা পাঠ করবে।
মঞ্চে দাঁড়িয়ে তার চোখ বারবার খোঁজে সেই একজনকে, যে আসবে না, তবু তার সব কবিতার উৎস।
সে পড়ে তার নিজের লেখা কবিতা:

“চিঠির কাগজে আঁকা নামহীন মুখ,
প্রতিটি অক্ষরে তুমি ছিলে, তবু চেনা হলে না।
তুমি এসোনি কোনো সন্ধ্যায়,
কিন্তু আমার প্রতিটি সকাল, তোমায় দিয়েই শুরু।”

বন্ধুরা প্রশংসা করে, কিন্তু সে জানে কবিতার মূল শ্রোতা আজ নেই।
পরদিন সে চিঠির সঙ্গে কবিতার কপি পাঠিয়ে দেয় আকাশকে।

পর্ব ৮: আকাশের ডাকঘরের গোলমাল

ডাকঘরে হঠাৎ চিঠি হারানোর অভিযোগে একটা তদন্ত হয়।
আকাশকে প্রশ্ন করা হয় — সে কি ব্যক্তিগত চিঠি খুলে পড়ে?
কিন্তু সে নিজেকে সামলে নেয়। ঋদ্ধির চিঠির কথা কাউকে না বলে কেবল নিজের সততা প্রমাণ করে।
বস, মিস্টার মুখার্জি, পরে বলে,
— “তোকে জানি বেটা, কিন্তু সাবধান। আজকের দিনে কেউ কাউকে চিঠি লেখে?”
আকাশ একভাবে হেসে ফেলে।
সে জানে, আজও কেউ কেউ হৃদয়ের খামে ভালোবাসা ভরে পাঠায়…

পর্ব ৯: ঋদ্ধির অভিমান

এক সপ্তাহ চিঠি আসে না।
ঋদ্ধি ঘুমাতে পারে না, চোখে কালি পড়ে যায়।
সে ভাবে —
“তাহলে কি আকাশও চলে গেল? সেও কি এখন বাস্তবের দিকে ফিরে গেল?”
চিঠির প্রতীক্ষায় দিন কেটে যায়।
অবশেষে চতুর্থ সপ্তাহে চিঠি আসে, কিন্তু অল্প কথায় লেখা:

“কিছুদিন ডাকঘরের ঝামেলায় মন ছিল না, দুঃখ দিয়েছি।
তবে বিশ্বাস করো, আমি তোমাকে লেখা বন্ধ করিনি — শুধু একটু হারিয়ে গিয়েছিলাম।
তুমি রাগ করো?
তুমি কি এই চিঠির উত্তর দেবে, নাকি আমায় ক্ষমা করবে না আর?”
— তোমার আকাশ

ঋদ্ধি ভেতরে কেঁপে ওঠে।
তার চোখে জল গড়িয়ে পড়ে — সে রাগ করতে পারেনি, শুধু মন খারাপ করেছিল।
সে উত্তর লেখে —

“আমি চিঠি পাওয়ার অপেক্ষা করি, রাগ করি না। আমি আজকাল তোমার শব্দেই বাঁচি আকাশ…”

পর্ব ১০: এক দীর্ঘ চিঠিতে ক্ষমা

এই পর্বে আকাশ নিজের সমস্ত অনুশোচনা এক চিঠিতে লেখে।

“ঋদ্ধি, তুমি জানো, চিঠি না পাঠিয়ে আমি নিজেকেই যেন ভুলে গিয়েছিলাম।
আমি এখন বুঝি, এই চিঠিগুলো শুধু লেখা নয় — এটা আমাদের অস্তিত্ব।
আমি তোমায় না দেখে ভালোবেসে ফেলেছি, হয়তো অযৌক্তিক, কিন্তু এর চেয়ে সত্য আর কিছুই নেই।
যদি পারো, আমাকে ক্ষমা কোরো।
আমি আর কখনো হারিয়ে যাবো না।”

চিঠির শেষে ছিল একটা প্রশ্ন —
“তুমি কি আমাকে ঠিকঠাক ভালোবাসো, ঋদ্ধি?”
ঋদ্ধি উত্তর দেয় না সাথে সাথে।
সে জানে, এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া মানে… তার ভিতরটাও মেলে ধরা।
তার চোখে তখন মেঘ জমে —
“ভালোবাসা কি সত্যিই হয় চিঠিতে?
না কি… এটাও একটা গল্প মাত্র?”

 

পর্ব ১১: (আকাশের দিদির দেখা মেলানোর চেষ্টা)।

আকাশের দিদি মালবিকা অনেক দিন ধরেই ছোট ভাইয়ের এই “চিঠি প্রেম” নিয়ে চিন্তিত।
একদিন রাতে আকাশ যখন রান্নাঘরে, তখন মালবিকা ওর ড্রয়ার থেকে কয়েকটা চিঠি দেখে ফেলে।
চোখে পড়ে —

“ঋদ্ধি সরকার, কলেজ স্কোয়ার, কলকাতা…”

মালবিকা ঠিক করে, ছেলেটাকে বাঁচাতে হলে, মেয়েটার বাস্তব অস্তিত্ব জানা দরকার।
সে নিজের একজন পরিচিতের মাধ্যমে কলেজ স্কোয়ার এলাকায় খোঁজ শুরু করে…
পায় একটা সূত্র —
“ঋদ্ধি, কলকাতার সিটি কলেজে পড়ে, সাহিত্যের ছাত্রী।”
মালবিকা আর আকাশকে কিছু না বলে চুপচাপ একদিন কলকাতা রওনা দেয়…

পর্ব ১২: (পুজোর সময় কলকাতায় দেখা হতে পারত)।

এদিকে শরৎ এসেছে। দুর্গাপূজার ঢাকে শহর ভরে গেছে।
ঋদ্ধি আকাশকে চিঠিতে লিখে —

“পুজোর সময় যদি তুমি কলকাতায় আসো, আমি কলেজ ফেস্টিভ্যালে কবিতা পাঠ করব।
দেখা না হলেও, crowd-এর মধ্যে একটা অচেনা চোখ যদি আমার দিকে তাকিয়ে থাকে… জানব, তুমি এসেছো।”

আকাশ খুব করে চায় যাওয়া, কিন্তু অফিস থেকে ছুটি মেলে না।
তার দিদি তখনো শহরে… এবং সে গিয়ে দেখে ঋদ্ধিকে ফেস্টিভ্যালে পারফর্ম করতে।
এক মুহূর্ত, মঞ্চে দাঁড়িয়ে থাকা সেই সাদা-শাড়ি-পরা মেয়েটার চোখে একরাশ গভীরতা দেখে মালবিকা থমকে যায়।
সে ভাবে,
“এই মেয়েটাই কি আমার ভাইয়ের চিঠির নায়িকা?”
কিন্তু সে সামনে গিয়ে কিছু বলে না। শুধু দূর থেকে দেখে যায়।

পর্ব ১৩: (দেখা হয়নি, বেড়ে যায় দূরত্ব)।

পূজোর পর চিঠিতে ঋদ্ধি লেখে:

“তুমি এলে না কেন? আমি ওইদিন একটু একটু করে তোমাকে খুঁজছিলাম।
crowd-এ অনেক চোখ, কিন্তু কোনোটাই ছিল না আমার আকাশ…”

আকাশ কেবল লিখে:

“তুমি বলেছিলে দেখা না হলেও চলবে… এখন তুমি কাঁদছো কেন?”

ঋদ্ধি অভিমান করে চিঠির উত্তর দেয় না।
একটা সপ্তাহ, তারপর আরেকটা…
আকাশও কিছু লেখে না।
এক নীরবতা জমতে থাকে তাদের মাঝখানে —
যেন প্রতিটা না-পাওয়া শব্দ এক একটা শূন্য খাম হয়ে ফেরত যাচ্ছে…

পর্ব ১৪: (ঋদ্ধির বাবা অন্যত্র বিয়ের প্রস্তাব দেন)।

এক সন্ধ্যায় ঋদ্ধির বাবা বলেন,
— “একটা ভালো পরিবার থেকে প্রস্তাব এসেছে, ঋদ্ধি। ছেলে কলকাতায় চাকরি করে। দেখা করবি একবার?”
ঋদ্ধি চমকে ওঠে।
সে বলে না কিছু, শুধু নিজের ঘরে গিয়ে একটার পর একটা চিঠি বের করে বিছানায় ছড়িয়ে দেয়।
প্রত্যেকটা কাগজে যেন আকাশের ছোঁয়া —
তার না দেখা ভালোবাসা।
সে রাতটা ঘুমায় না। শুধু লেখে ডায়েরিতে —
“আমি যদি হেরে যাই, তাহলে কাগজের ভালোবাসা কি জিতবে কখনও?”

পর্ব ১৫: (আকাশের ভেতর যুদ্ধ)।

অন্যদিকে আকাশ মালবিকার মুখোমুখি।
মালবিকা বলে,
— “আমি ওকে দেখেছি। মেয়েটা খুব ভালো। কিন্তু ও তো জানে না তুমি কে। এক অদ্ভুত মোহ তৈরি হয়েছে তোমাদের মধ্যে।
এটা যদি একদিন ভেঙে পড়ে? ও কি সামলাতে পারবে?”
আকাশ চুপ করে থাকে।
তার মাথার ভিতর চলছে এক যুদ্ধ —
“আমি কি নিজে থেকেই দূরে সরে যাই?
নাকি ওকে জানাই আমি কে?
আমার ছবি পাঠাবো?
ও যদি আমাকে দেখে পছন্দ না করে? যদি…”
কিন্তু সেই রাতে, আকাশ একটা ছোট্ট খামে নিজের একটা পুরনো ছবি রেখে চিঠির সঙ্গে পাঠায়।
চিঠির শেষ লাইনে লেখে —

“ঋদ্ধি, আজ আমি তোমায় আমার মুখটা দিলাম।
দেখো, তুমি যদি ভালোবাসো আমাকে — চিঠির মতোই।”

পর্ব ১৬: (কাকলির সাহসী পদক্ষেপ)।

ঋদ্ধি আকাশের ছবি হাতে নিয়ে চুপচাপ বসে থাকে।
না সে কাঁদে, না হাসে। কেবল দেখে। আর ভাবে –
“এই মানুষটাই? এই সেই আকাশ, যে আমার প্রতিটি দুঃখের ওষুধ হয়ে উঠেছিল?”
কিন্তু চিঠিতে সে কোনো উত্তর দেয় না।
দুদিন, চারদিন… এক সপ্তাহ কেটে যায়।
এদিকে কাকলি চুপচাপ সব লক্ষ্য করছিল।
একদিন সে বলে,
— “দেখ, তোদের গল্পটা কাগজে আঁকা, কিন্তু তাতে রং আছে। যদি তুই কিছু না বলিস, সব মুছে যাবে।
তোর যদি ভয় লাগে, আমি তোকে নিয়ে ওর সঙ্গে দেখা করব।”
ঋদ্ধি চমকে যায়।
— “তুই জানিস কোথায়?”
— “না, কিন্তু আমরা বের করব। পিওনের খামে মোহর দেওয়া নাম আর এলাকা তো রয়েছেই।”
সেই শুরু —
কাকলি ঠিক করে, সে নিজেই একদিন চিঠি লেখবে আকাশকে।

পর্ব ১৭: (ঋদ্ধির বিদ্রোহ)।

ঋদ্ধির বাবা আবার বিয়ের ব্যাপারে চাপ দেন।
তিনি বলেন,
— “এই বয়সে কবিতা দিয়ে পেট চলে না। ভালো ছেলে, ভালো চাকরি — জীবন সহজ হবে।”
ঋদ্ধি শান্ত গলায় বলে,
— “বাবা, তুমি কি জানো, আমি কোনোদিন কারো সঙ্গে এতখানি মন খুলে কথা বলিনি?
তুমি যাকে পছন্দ করছো, সে আমাকে বুঝবে তো?”
রাগে-অভিমানে সেই রাতে সে নিজের ঘরে বসে চিঠি লেখে আকাশকে:

“আমি জানি না আমাদের শেষ কোথায়, কিন্তু আমি চাই না এটা চিঠির মাঝখানে আটকে থাকুক।
আমি তোমাকে ছুঁতে চাই না, আমি তোমার সত্যটা জানতে চাই।
তুমি যদি পারো, এসো দেখা করতে।
আমি থাকব কলেজের সামনে, আগামী শনিবার, দুপুর ৩টায়।
যদি না আসো, বুঝব — গল্পটা শেষ।”

পর্ব ১৮: (প্রথম ফোনালাপ)।

আকাশ এই চিঠি পড়ে কাঁপতে থাকে।
সেই মুহূর্তে প্রথমবার সে নিজের মনের ভয় ভেঙে দিদিকে বলে,
— “আমাকে ওর সঙ্গে দেখা করতেই হবে। এখনই। কিন্তু একটা কথা বলতেই হবে আগে…”
দিদি একটা ফোন নম্বর জোগাড় করে দেয়। কাকলির মাধ‍্যমে।
রাতে, বহুদিনের পর, চিঠির শব্দ কণ্ঠে রূপ নেয়।
ঋদ্ধি ফোনটা তোলে:
— “হ্যালো?”
— “আমি… আকাশ।”
এক মুহূর্ত নীরবতা। তারপর দু’পাশেই নিঃশ্বাস।
আরো কিছু না বলেও তারা সব বলে ফেলে।
শব্দের মাঝখানে শুধু কান্না আর হাসির সুর।
ঋদ্ধি শুধু ফিসফিসিয়ে বলে,
— “তুমি আসবে তো?”
— “আসব। এবার সত্যিই আসব।”

পর্ব ১৯: (একপাক্ষিক সিদ্ধান্তের বিপরীতে)।

শনিবার সকাল।
আকাশ ট্রেন ধরে কলকাতা আসছে। তার ব্যাগে কয়েকটি চিঠি, একটা পুরনো বই, আর একটা ছোট্ট উপহার।
কিন্তু সেই মুহূর্তে, মালবিকা রাস্তায় দুর্ঘটনায় পড়ে। হাসপাতালে ভর্তি।
আকাশ দ্বিধায় পড়ে যায় — সে কি যাবে দেখা করতে, নাকি থাকবে দিদির পাশে?
সে ফোন করে কাকলিকে —
— “ঋদ্ধিকে বলো, আমি কথা রেখেও রাখতে পারলাম না। আমি আসতে পারছি না…”
কাকলি ফোন রাখার পর ঋদ্ধিকে কিছু বলে না।
ঋদ্ধি বিকেলে কলেজ স্কোয়ারে দাঁড়িয়ে থাকে।
ঘড়ির কাঁটা চলে যায় ৩টা, ৪টা, ৫টা…
সে জানে, হয়তো আকাশ আর আসবে না।
কিন্তু মন বলে —
“ভালোবাসা চলে যেতে পারে, কিন্তু প্রতীক্ষা কখনও মরে না…”

পর্ব ২০: (আকাশ কলকাতা আসে)।

তিনদিন পর মালবিকার অবস্থার উন্নতি হয়।
আকাশ সেই রাতেই একটি ট্রেন ধরে কলকাতা আসে।
সকাল ৬টা, সিটি কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে…
সে দেখে — একজন মেয়ে মাধবীলতা ফুলের নিচে দাঁড়িয়ে আছে, চোখে ক্লান্তি, মুখে আলো।
ঋদ্ধি।
তারা চুপ করে একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকে।
নজর এড়িয়ে থাকা সেইসব চিঠির শব্দ যেন এবার হাওয়ায় ভাসে।
আকাশ ফিসফিস করে বলে —
— “তুমি চিঠিতে যেমন ছিলে, চোখেও ঠিক তেমনই…”
ঋদ্ধি শুধু বলে —
— “তুমি আসবে বলেছিলে। তুমি এসেছো। বাকিটা আমি মানি…”
এক মুহূর্ত, সময় থেমে যায়।
আর, একটা পুরনো প্রেম… কাগজের গন্ধ থেকে সত্যিকারের শ্বাসে রূপ নেয়।

পর্ব ২১: (মুখোমুখি দেখা)।

সিটি কলেজের সামনের সেই বেঞ্চ — যেখানে একসময় ঋদ্ধি একা বসে চিঠি লিখত, আজ সেখানেই বসে আকাশ।
দু’জনে একসাথে।
তারা অনেকক্ষণ চুপ করে থাকে।
পরে আকাশ বলে,
— “তুমি জানো? আমি ভেবেছিলাম দেখা হলে সবকিছু বদলে যাবে।
কিন্তু না… চিঠির ঋদ্ধি আর এই ঋদ্ধি — একদম এক!”
ঋদ্ধি হেসে বলে,
— “তুমি ঠিক বলেছো… চিঠিতে আমরা একে অপরের মধ্যে যা খুঁজেছি, চোখে সেটা হারাবে না। কারণ চিঠি তো শুধু কাগজ নয়, ওটা তো আত্মা।”
ওই বিকেলে, তারা আর কিছু চায় না — শুধু একটু পাশে থাকা, একটু চুপচাপ থাকাই যেন বহুদিনের পূর্ণতা।

পর্ব ২২: (পরিবার জানে সব)

ঋদ্ধি নিজের পরিবারকে সব বলে দেয়।
প্রথমে বাবা রেগে যান।
— “তুমি একজন সাধারণ ডাকঘরের কর্মচারীর সঙ্গে জীবন কাটাবে?”
মা বোঝাতে চেষ্টা করেন:
— “ওকে এতদিন তুমি জানো না, আর মেয়েটা তাকে ভালোবাসে… এতটাই গভীরভাবে।”
কিন্তু বাবা সহজে মানতে চান না।
তবু, আকাশের চিঠিগুলো পড়ে তাঁর মুখে একরকম নরমতা আসে।
তিনি বলেন,
— “ছেলেটার কলমে যা আছে, সেটা যদি তার হৃদয়ে থাকে — তাহলে আমি কিছু বলব না। কিন্তু জীবনটা কঠিন, ও পারবে তো?”
ঋদ্ধি জবাব দেয়,
— “যে মানুষ কথা না রেখেও ক্ষমা চাইতে জানে, সে কষ্ট এলেও পাশে থাকবে।”

পর্ব ২৩: (সম্পর্কের স্বীকৃতি চাওয়া)।

আকাশ এবার নিজের দিদিকে সব জানায়।
মালবিকা প্রথমে একটু চিন্তিত ছিল, কিন্তু তারপর বলে,
— “যদি ও তোমার সেই ঋদ্ধি হয়, তাহলে আর ভয় কিসে? এগিয়ে যা, ভাই।”
আকাশ এবং ঋদ্ধি এবার একসাথে দুই পরিবারের সামনে দাঁড়ায়।
আকাশ বলে,
— “আমি বড় কিছু দিতে পারব না, কিন্তু ওর প্রতিটি চিঠির মতোই প্রতিদিন ওর পাশে থাকব। ভুল করলেও চিঠির মতো ক্ষমা চাইব।”
বাবা একটু চুপ করে, তারপর বলেন,
— “আচ্ছা, এবার যদি আমার মেয়ের চোখের জল ফেলে রাখো — তখন কিন্তু আমি চিঠিতে নয়, সামনে দাঁড়িয়ে আসব!”
ঘরজুড়ে হাসি।
প্রেম এবার সত্যিকারের নাম পায় — “একটি সম্পর্ক”।

পর্ব ২৪: (চিঠির শেষ পাতা)।

বিয়ের ঠিক আগের রাতে আকাশ ও ঋদ্ধি আবার চিঠি লেখে —
একটি শেষ চিঠি, যেটা তারা একে অপরকে দেবে বিয়ের দিন সকালে।
চিঠিতে ছিল…
আকাশের চিঠি:

“আমার প্রিয় চিঠির মেয়ে,
আগামীকাল থেকে আমাদের আর কাগজে কাগজে দেখা হবে না।
তুমি আমার পাশে থাকবে, আমার হাতে হাত রাখবে, আর প্রতিটি কথা — সরাসরি হৃদয় থেকে কানে পৌঁছাবে।
তবুও এই শেষ চিঠি রাখো — যেন কোনোদিন ঝড় এলে, তুমি পড়ে নিতে পারো আমাদের শুরুটা।”

ঋদ্ধির চিঠি:

“আকাশ,
তুমি শুধু একজন চিঠির মানুষ ছিলে না, তুমি আমার নীরবতা ছিলে।
আমি জানি, একদিন আমাদের কথা কমে যাবে — দায়িত্বে, বাস্তবতায় হারিয়ে যাবে।
কিন্তু আমি প্রতিদিন অন্তত একবার তোমার নামের আগে ‘আমার’ শব্দটা বসিয়ে ভাবব — আর মনে করব, ‘আমার আকাশ’ তখনও আছে।”

পর্ব ২৫: (নতুন ঠিকানা — একই নামে)।

বিয়ের দিন।
ঋদ্ধি লাল বেনারসি পরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে।
আকাশ আশীর্বাদের ভিড়ে দাঁড়িয়ে, চোখে জল।
পান্ডেল জুড়ে সবাই জানে — এই বিয়ে শুধু দুটি মানুষ নয়,
দুইটি আত্মা — যারা চিঠির অক্ষরে ভালোবেসেছিল।
বিয়ের পর প্রথম রাত।
আকাশ ঋদ্ধির হাতে একটা খাম দেয়।
ঋদ্ধি অবাক হয়ে বলে,
— “আবার চিঠি?”
আকাশ হাসে,
— “এটাই শেষ নয়।
এখন থেকে প্রতি বছর আমাদের বিবাহবার্ষিকীতে আমি তোমায় একটা চিঠি লিখব…
ঠিক যেমন আমাদের শুরু হয়েছিল।”
ঋদ্ধি খামটা খোলে।
সেখানে লেখা ছিল —

“আমার নতুন ঠিকানা:
ঋদ্ধির হৃদয়ের ভেতরে,
চিরকাল আকাশ।”

✅ সমাপ্তি

চিঠিতে লেখা প্রেম —
একটি কাগজে আঁকা ভালোবাসা, যা কালজয়ী।

Share This
Categories
কবিতা

বাস্তবতা : রাণু সরকার।।

ঘুমোলেই স্বপ্নেরা করে আমায় তাড়া,
শয্যা ত্যাগ করা মাত্রই জীবনটা হয় বাঁধনছাড়া।

চোখ মেলে দেখি বাস্তবতার সাথে করে সবাই গুঞ্জরণ,
দুঃখ-কষ্টের বাসস্থান কোথায়- কেউ কী জানেন?

দেখাই অতিশয় ব্যস্ততা তাই তাকিয়ে চলি সবার
দিকে সবাই,
কথা বলার সময়ের ভীষণ যে অভাব,
নিজের পথে চলাটা পছন্দ এটাই হলো আমাদের
স্বভাব।

হৃদয় হলো দুঃখের সাগর-ঝরে অশ্রুবর্ষণ রূপে
আসে যায় না কারোর কিছুই বন্দী তো সবাই অন্ধকূপে।

সাফল্যতায় আমাদের চোখ গেছে ধাঁধিয়ে
ভালো চিন্তা করতে গেলে ইন্দ্রিয় গুলো যায় হারিয়ে।

কারাগারে চেতনা রেখে চলছে সবাই গা ভাসিয়ে,
দেখায় কেমন দেখো যেন চিন্তায় বিভোর-
করতে কি পারলে কিছু তোমার সব চিন্তা দিয়ে?

সহ্য করা যাচ্ছে নারে আর ভাই-অভিনয়ের
স্বপ্ন মেলা
অনেক তো হলো এবার থামাও-হাস্যকর সব
অভিনয়ের খেলা খেলা–

দেখতে চাই-সবাই যেন থাকে দুধে ভাতে-
দেখো দেখো-চলেযাচ্ছে কেমন পাশ কাটিয়ে
হোক না সবার কার্যসিদ্ধি তবে নিজের
ভালো নয় ভেস্তে দিয়ে-
সকলের জীবন সকলের মত ভাই-আমার জীবন থাক আমার হয়ে।

দেখোনা ভাই আর চলার ফাঁকে
কি তুমি পেলে-কত টুকু দিলে কাকে?

জীবনের চলার পথে পেলাম তো অনেক
কিছু
হারিয়েছে অনেক-তবু ছুটি কেনো মৃগতৃষ্ণার পিছু?

শেষ জীবনে ভালোবেসে দেখবে চোখে ঠুলি আঁটা
করার কিছু থাকবেনা আর ভাই অর্থহীন সব শূন্যতাটা।

Share This
Categories
কবিতা

ব্যস্ত ছিলাম : রাণু সরকার।

অনেক দিন ওপাড়ে আঁধারে ছিলাম নিমজ্জিত,
কতদিন আর থাকা যায়-
তাই সময় বললো এপাড়ে আসতে,অনেক কাজ নাকি বাকি আছে- একরকম জোর করেই পাঠালো-
এলাম এক গোধূলিলগ্নে,
স্রোতের প্রবল বেগে ফেললো এপাড়ে।

কপালে কি যে লিখেছিলো বোঝার উপায় নেই,
চোখ দুটি তো কপালের নিচে কিকরে বুঝবো?
একে তো প্রচ্ছদে ঢাকা আবার সদ্যোজাত, কিকরে
বুঝবো কপালে কী আছে তখন কিছুই বুঝিনি।
তরর্জনীর ছাপ ছিলো বুঝলাম মন্থর গতিতে এতো বছর পর, আমাকে শাসানো হচ্ছে।
তোমার যতোটুকু কাজ ততটুকু করে তাড়াতাড়ি
ফিরে আসবে মায়া- মমতার সাথে বেশি বন্ধুত্ব করবে না, আসতে কষ্ট পাবে।

আমি বললাম এইতো এলাম রাতকে পিছে ফেলে
এখনো চোখেমুখে ক্লান্তির ঘোর কাটেনি এখনি
ফিরবো? তরর্জনীর সংকেত দিয়েই তো পাঠালাম
তুমি রাজি হলে, বললে ডাক দিলেই এক ছুটে চলে আসবে- ঠিক আছে ডাক এলেই চলে যাবো।
যাইহোক এ-পাড়ের রূপ দর্শন করে করে চোখে
এলো জল- কর্মে নিযুক্ত হোলাম, চোখ মুছে মুছে
চলছে দায়িত্ব পালন।

ভাবছি ওপাড়ে ভালোই ছিলাম- কেনো পাঠালো বা কেনো আসলাম? যত করি দর্শন তত হয় রাগ- পারি না সমুচিত জবাব দিতে করতে পারিনা বিরুদ্ধাচরণ, এভাবেই কেটে গেলো কতগুলো বছর।
হঠাৎ একদিন এলো ডাক ভাষাহীন এক সন্ধ্যায় তখন ক্লান্তিহীন পাকা কেশ, প্রণত শরীর চললাম গমনের গন্তব্যস্থলে।

অন্ত্যেষ্টি উৎসবের দিন তখন প্রশান্তচিত্তে করলো সবাই দায়িত্ব পালন, থাকতে পরিনি আমি তখন ছিলাম ও পাড়ের কাজে খুবই ব্যস্ত।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

স্মরণে, ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেত্রী সুমিতা সান্যাল।।।।

ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেত্রী সুমিতা সান্যাল ছিলেন একজন বিখ্যাত ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্র অভিনেত্রী যিনি তার চিত্তাকর্ষক উপস্থিতি এবং ব্যতিক্রমী প্রতিভা দিয়ে রূপালী পর্দায় মুগ্ধ করেছেন ৯ অক্টোবর, ১৯৪৫ সালে কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গে জন্মগ্রহণ করেন, সুমিতা ১৯৬০ এর দশকের শুরুতে তার অভিনয় জীবন শুরু করেন এবং দ্রুত বাংলা চলচ্চিত্রে একটি ঘরোয়া নাম হয়ে ওঠেন।সুমিতা সান্যাল হিন্দি সিনেমায় তার কাজের জন্য পরিচিত।

তিন দশকেরও বেশি সময়ব্যাপী ক্যারিয়ারের সাথে, সুমিতা ৫০টিরও বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন, সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন এবং তরুণ মজুমদারের মতো প্রশংসিত পরিচালকদের সাথে কাজ করেছিলেন।

তিনি বিভূতি লাহার খোকাবাবুর প্রত্যবর্তন ছবিতে উত্তম কুমারের বিপরীতে আত্মপ্রকাশ করেন। পরবর্তীকালে তিনি ১৯৬০ এবং ১৯৭০ এর দশকে পরপর কিছু বাংলা চলচ্চিত্রে উপস্থিত হন। তিনি ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির দার্জিলিংয়ে মঞ্জুলা সান্যাল নামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন গিরিজা গোলকুণ্ডা সান্যাল।

কর্মজীবন—–

পরিচালক বিভূতি লাহা খোকাবাবুর প্রত্যবর্তন চলচ্চিত্রের জন্য তার নাম রেখেছিলেন সুচরিতা। এর পরে পরিচালক কনক মুখোপাধ্যায় সুমিতা নাম রাখার সিদ্ধান্ত নেন। বিখ্যাত অভিনেত্রী লীলা দেশাই সুমিতার খুব পরিচিত ছিলেন। লীলা তাকে অগ্রদূতের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। খোকাবাবুর প্রত্যবর্তন- এ সুযোগ পাওয়ার পর, তিনি দিলীপ কুমারের বিপরীতে সগিনা মাহাতো এবং বিশ্বজিৎ এবং সন্ধ্যা রায়ের পাশাপাশি কুহেলিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন। তিনি বেশ কয়েকটি হিন্দি ছবিতেও অভিনয় করেছেন, যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল ১৯৭০ সালের আনন্দ। এ ছবিটিতে অমিতাভ বচ্চনের বিপরীতে তিনি অভিনয় করেছেন। তিনি টেলিভিশন সিরিয়াল, পেশাদার মঞ্চ এবং গ্রুপ থিয়েটার “রাঙা সভা”-এ অভিনয় করেছিলেন। তিনি হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়ের গুড্ডি, আনন্দ এবং আশীর্বাদের মতো অনেক চলচ্চিত্রের অংশ ছিলেন।

ব্যক্তিগত জীবন—-

তিনি চলচ্চিত্র সম্পাদক সুবোধ রায়কে বিয়ে করেছিলেন। তাদের একটি ছেলে আছে।

বাংলা চলচ্চিত্র—–

খোকাবুর প্রত্যবর্তন, আকাশপ্রদীপ, দেয়া নেয়া, কালশর্ত, স্বর্গ হতে বিদায়, গোধুলি বেলা, অনুষ্টুপ ছন্দ, দিনান্তের আলো, প্রথম প্রেম, একই অঙ্গে এত রূপ, সুরের আগুন, কাল তুমি আলেয়া, নায়ক, শেষ তিন দিন, নূতন জীবন, অশ্রু দিয়ে লেখা, হারানো প্রেম, হঠাৎ দেখা, পঞ্চসার, আপনজন, চিরদিনের, চেনা অচেনা, তিন ভূবনের পারে, মায়া, সাগিনা মাহাতো, নিশাচর, অন্য মাটি অন্য রং, কুহেলি,নতুন সূর্য, জীবন নিয়ে, জবাব, শ্রীমতী।

হিন্দি চলচ্চিত্র——–

আশির্বাদ, আনন্দ, গুড্ডি, মেরে আপনে, ময়ূর বসন্ত।
সুমিতার প্রতিভা অভিনয়ের বাইরেও প্রসারিত হয়েছিল, কারণ তিনি একজন দক্ষ নৃত্যশিল্পী এবং গায়িকাও ছিলেন। বাংলা চলচ্চিত্রে তার অবদান মর্যাদাপূর্ণ বেঙ্গল ফিল্ম জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অ্যাওয়ার্ড সহ অসংখ্য পুরষ্কার এবং প্রশংসার সাথে স্বীকৃত হয়েছে।

সুমিতা সান্যালের উত্তরাধিকার প্রজন্মের অভিনেতা এবং চলচ্চিত্র উত্সাহীদের অনুপ্রাণিত করে চলেছে, ভারতীয় চলচ্চিত্রের সবচেয়ে প্রিয় এবং সম্মানিত অভিনেত্রীদের একজন হিসাবে তার স্থানকে সিমেন্ট করে। ৯ জুলাই, ২০১৭, লেক গার্ডেনস, কলকাতায় তিনি প্রয়াত হন।

Share This