Categories
কবিতা

অবশেষে : শীলা পল।

সারাজীবন সবাই কে ভালোবেসে এলাম
এখন দেখছি একতরফা
আমিই বেসে গেছি
আমি তো কিছুই চাই নি
বড় কষ্ট হয় শেষ জীবনে
এসে যখন দেখি আমার ভালোবাসার ঝুলিটি শূন্য
কারুর প্রতি আমার অভিমান নেই আমারই মস্ত বড় একটা ত্রুটি যে ভালোবাসা ছাড়া আর কিছুই জানি না।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

“মিলেট” হচ্ছে পুষ্টিকর খাদ্য-শস্য — একটি পর্যালোচনা : দিলীপ রায়।

প্রথমেই আমাদের জানা দরকার “মিলেট” কী ? জোয়ার, বাজরা, রাগি, ইত্যাদি কয়েকটি ক্ষুদ্র দানাশস্যকে একত্রে মিলেট বলে । পৃথিবীর মধ্যে ভারতেই সবচেয়ে বেশী মিলেট উৎপন্ন হয় । সাধারণত দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতের গরীব অধিবাসীরা খাদ্যশস্য হিসেবে এই ফসলগুলি বেশী ব্যবহার করে । মিলেট শস্য বেশী পরিমানে লক্ষ্য করা যায় মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ রাজ্যে ।
এটা ঘটনা — কৃষি ও সহযোগী ক্ষেত্রগুলি যেমন দুগ্ধ, পশুপালন, মৎস্য, হাঁস-মুরগি, রেশম চাষ, ইত্যাদি ভারতীয় অর্থনীতির স্তম্ভ ! কৃষি যেমন অর্থনীতির স্তম্ভ তেমনি স্বাস্থ্য হলো সমৃদ্ধ সমাজের এক অপরিহার্য অঙ্গ । স্বাস্থ্য সম্বন্ধে মানুষ কম-বেশী ওয়াকিবহাল । তাই স্বাস্থ্য দেখ-ভালের নিরিখে মিলেট খাদ্য-শস্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্য সচেতনতার প্রেক্ষাপটে মিলেট দানাশস্যকে বলা চলে অধিক পুষ্টিকর ।
সেই কথা মাথায় রেখে ও মিলেট শস্যের উপকারিতার কথা বিবেচনা করে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভা ২০২৩ সালকে “আন্তর্জাতিক মিলেট বর্ষ” হিসেবে ঘোষণা করেছে । সকলের ধারণা, কৃষি ও খাদ্য বৈচিত্র্য বৃদ্ধিতে মিলেট বড় ভূমিকা নিতে পারে । মিলেটের বৈচিত্র্যময় ব্যবহার অতীতে খুব শোনা যায় । মুঘল বাদশাহ জাহাঙ্গীর পছন্দ করতেন “লাজিজা” –এক ধরনের মটর মিশ্রিত মিলেটের খিচুড়ি । শোনা যায় এর প্রচলন ছিল গুজরাটে । কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে নানান ধরনের মিলেট ভেজানো কিংবা সেদ্ধ করে নেওয়ার পর তাদের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ পাওয়া যায় ।
জীবিকা ও কৃষকদের আয় বৃদ্ধি এমনকি বিশ্বের খাদ্য ও পুষ্টিগত চাহিদা মেটাতে মিলেট একটি গুরুত্বপূর্ণ দানাশস্য । তাই শস্যটির চাহিদা ও উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে ঘোষিত হয়েছে আন্তর্জাতিক মিলেট বর্ষ, ২০২৩ । যার জন্য ভারত সরকার জোয়ার, বাজরা, রাগি ইত্যাদি শস্যের ফলন বাড়াতে ও স্বাস্থ্যে এদের উপকারিতা বিষয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছে । ইতিমধ্যে এই দানাশস্যে পুষ্টির অনুপাত বেশী থাকার জন্য “পুষ্টিকর দানাশস্য” হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে । অন্যদিকে সরকারের মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রক অঙ্গনওয়াড়ি পরিষেবার পরিপুরক পুষ্টি কর্মসূচিতে খাবারের পুষ্টিগত মান বাড়াতে জোয়ার, বাজরার কথা উল্লেখ করেছে । শোনা যায় ওড়িশা, তেলেঙ্গানা, চন্ডিগড়, ইত্যাদি রাজ্য ও কেন্দ্রিয় শাসিত অঞ্চলে পরিপুরক পুষ্টিতে জোয়ার-বাজরা ঠাঁই পাচ্ছে ।
মিলেট হলো এক ধরনের দানাশস্য যেগুলির বীজ ছোট এবং যেগুলিকে সহজে চাষ করা যায় । এগুলি চাষের জন্য বাইরে থেকে দামী রাসায়নিক সার, কীটনাশক ইত্যাদি ক্রয় করতে হয় না । মিলেট পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ এবং এগুলি খাদ্য ও জীবিকার নিরাপত্তা বজায় রাখে । মিলেট চাষের দু-রকমের উপযোগিতা রয়েছে । মিলেট চাষ করলে মানুষের জন্য খাদ্যশস্য এবং সেইসঙ্গে গবাদি পশুর জন্য খড়ও পাওয়া যায় । আবার কিছু অঞ্চলে মিলেটই মানুষের প্রধান খাদ্য । মিলেটের ফসল – বৈচিত্র ও চাষব্যবস্থা সেই ফসলগুলির বাস্তুতন্ত্রের কৃষিবৈচিত্রকে সমৃদ্ধ করে । কেদো মিলেটও অত্যন্ত পুষ্টিকর । এর মধ্যে গ্লুটেন নেই, এটা সহজপাচ্য, সেইসঙ্গে এটি ফাইটোকেমিক্যাল উপাদান, অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট এবং ডায়েটারি ফাইবার সমৃদ্ধ । পোলাও, খিচুড়ি, উপমা, পরোটা, দোসা ও চাপাটি তৈরীতে শস্য হিসাবে মিলেট ব্যবহার করা যায় । মিলেট থেকে বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য তৈরী করা যায় যেমন মাল্টিগ্রেন পাস্তা, মাল্টিগ্রেন সুইট মিক্স, মাফিন, পুষ্টিকর মিলেট আটা, রাগি ফ্লেক্স, রাগি পাপড়, পাউরুটি, কুকিজ, রাগি স্নাক্স, ফ্লেকড জোয়ার, মিলেটের আটা, ইত্যাদি ।
( ২ )
এবার আসছি মিলেট শস্য মানুষের কী উপকারে আসতে পারে । প্রথমত এটি একটি বিকল্প প্রধান খাদ্য হয়ে উঠতে পারে । মিলেটে কার্বোহাইড্রেট-ফাইবার অনুপাত কম থাকার কারণে, জীবনযাত্রাগত বিভিন্ন রোগের মোকাবিলায় এটা কাজে আসে । মিলেট হলো “পুষ্টির পরিপূরক” যাতে রয়েছে ফাইটোকেমিক্যাল এবং অ্যান্টি-নিউট্রিয়েন্ট, যা সুস্বাস্থ্য রক্ষায় অপরিহার্য এবং দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার চিকিৎসায় বিশেষ কার্যকর । গর্ভবতী মহিলাদের স্বাস্থ্য তথা পুষ্টির উপর মিলেটভিত্তিক খাদ্যের একটা ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে । গর্ভবতী মহিলাদের খাদ্যতালিকায় পরিপূরক খাদ্য হিসাবে মিলেট-ভিত্তিক খাদ্যকে যাতে অন্তর্ভুক্ত করা যায় সেই দিকে ধ্যান দেওয়া সময়োপযোগী । কারণ গর্ভবতী ও স্তন্যদাত্রী মায়েদের জন্য মিলেটভিত্তিক পরিপূরক খাদ্যদ্রব্যগুলি খুবই পুষ্টিকর । আমরা জানি, খাদ্য-তালিকায় ফাইবার থাকা বিশেষ প্রয়োজন । এই ফাইবার গ্লোকোজ নিয়ন্ত্রণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । মিলেট, লিউসিনের একটি চমৎকার উৎস, এটা ধীরে ধীরে কার্বোহাড্রেট (এবং খনিজ পদার্থ) হজম করায়, যা পোস্ট-প্রান্ডিয়াল গ্লুকোজের মাত্রার আকস্মিক বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করে । ফলে এটি ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য একটি পুষ্টিকর খাবার । চাল ও গমের মতো অধিক পরিচিত খাদ্যশস্যের তুলনায় মিলেটে অধিক পুষ্টিকর খাদ্যগুণ রয়েছে । মিলেট ক্যালশিয়াম, আয়রন এবং ফাইবারে ভরপুর যা একটি শিশুর বেড়ে উঠতে সাহায্য করে । আশার কথা, ছোটদের খাবারে মিলেটের ব্যবহারও ক্রমশ বাড়ছে ।
জোয়ার-বাজরা পুষ্টির এক ভাঁড়ার বলে সুবিদিত । দেশে অপুষ্টিকর সমস্যা ঘোচানোর জন্য ইদানীং জোয়ার-বাজরা খাওয়ার প্রচলনের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে । এটা ঘটনা, আজকালকার মানুষ বেশি স্বাস্থ্য সচেতন । যার জন্য পুষ্টিকর জোয়ার-বাজরার ব্যবহার ক্রমবর্ধমান । এককালে “গরীব মানুষের খাদ্যশস্য” বলে পরিচিত জোয়ার-বাজরার দাম ছিল খুব কম । তা ছাড়া চাল, ডাল, গম উৎপাদনে অধিক গুরুত্ব আরোপ হওয়ায় দানাশস্যের উৎপাদনও কম ছিল । কিন্তু বর্তমানে দানাশস্যের ব্যবহারও ক্রমশ বাড়ছে । চাহিদাও ঊর্ধ্বমুখি । তামিলনাড়ুতে দানাশস্য ব্যবহার করে তৈরী হচ্ছে দোসা, পোঙ্গল, রাভা দোসা, প্রভূতি । সাধারণত চাল থেকে দোসা তৈরী হয় । তবে দানাশস্য চাল ও গমের চেয়ে অধিক পুষ্টিসম্পন্ন । রুটি পরোটার ক্ষেত্রে আটা বা ময়দার বদলে মিলেটের পরোটা অনেক পুষ্টিকর । মিলেটের খাওয়ায় অনেক উপকার । মিলেটে প্রচুর ফাইবার থাকায় এটা ডায়াবিটিকদের জন্য ভীষণ উপকারী । এতে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিওক্সিডেন্টস রয়েছে । তাই এটাও কিন্তু ক্যানসারের মতো মারণ রোগ প্রতিরোধ করতে পারে ।
( ৩ )
বাংলাদেশেও মিলেটের চাষ দেখা যায় । বাংলাদেশের জীবনধারায় খাদ্য হিসেবে মিলেটের ব্যবহার নাকি খুব প্রাচীন কাল থেকে । সেই দেশের মানুষের খাদ্যাভাস বা নানান প্রথার সঙ্গে এই দানাশস্যের অনুষঙ্গ জড়িয়ে রয়েছে । তবে সেই দেশে ধান, গম ও ভুট্টার পরে চার নম্বরে স্থান দেওয়া হয়েছে মিলেট চাষকে । বাংলাদেশে মিলেটকে জোয়ার, বাজরা ছাড়াও চিনা বা কাউন বলে । মিলেটকে বাংলাদেশে জোয়ার বা সরগাম (Jower or Sorghum) , যব (Oat), চিনা (Proso millet), কাউন (Foxtail millet), ইত্যাদি নামে মানুষে জানে । বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ সরগামের অপর নাম জোয়ার জানে । শুষ্ক এলাকার জন্য মানুষ ও পশুপাখির খাদ্য হিসেবে খুব গুরুত্বপূর্ণ । চিনা সাধারণত গরুর ঘাসের জন্য ব্যবহৃত হয় । যদিও বাংলাদেশের চিনার চাষ প্রাচীন কাল থেকে । বিশেষ করে পাবনা, টাঙাইল, জামালপুর, ফরিদপুর, জেলায় বেশী চাষ হয় । কাউন চাষ তুলনামূলক কম । কাউনের জাউ বা খিচুড়ি খুব জনপ্রিয় । তা ছাড়া গ্রামাঞ্চলে চাউনের ভাতও খেতে দেখা যায় ।
সবশেষে যেটা আমাদের জীবনধারা ও খাদ্যাভাস নিয়ে ভাববার বিষয়, সেটা হচ্ছে প্রয়োজনে জীবনধারা ও খাদ্যাভাস পর্যালোচনা করে তার পরিমার্জন করাটাও স্বাস্থ্যের নিরিখে অত্যন্ত জরুরি, বলা চলে সময়োপযোগী । সেই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা সামলাতে সক্ষম, পুষ্টিগুণসম্পন্ন, জল সাশ্রয়ী এই ফসলকে আরও উৎপাদনমুখি করে তুলতে উদ্যোগী হওয়া বাঞ্ছনীয় । যাতে মানুষ এই দানাশস্যের পুষ্টির সুফল অধিকমাত্রায় পেতে পারে । আন্তর্জাতিক মিলেট বর্ষকে মাথায় রেখে দেশের সুশীল নাগরিক সমাজ জোয়ার-বাজরা-রাগি ইত্যাদি শস্যের প্রতি নজর দিলে দানাশস্য পুষ্টিকর খাদ্য হিসাবে আবার ঘরে ঘরে মানুষের পাতে ফিরে আসবে । (তথ্যসূত্রঃ সংগৃহীত ও যোজনা-০১/২০২৩)
———০———–
লেখকঃ কথা সাহিত্যিক (ভারত)

Share This
Categories
কবিতা

স্বপ্নে পাওয়া প্রেম : রাণু সরকার।

তুমি আমার স্বপ্নে থেকে ছিলে
চিরদিনের জন্য না বলে গেলে হারিয়ে,
তোমার এভাবে হারিয়ে যাওয়াটা আর পারছিনা নিতে মানিয়ে।

পেয়েছিলাম স্বপ্নে মুক্তো,হারিয়ে গেলো, পারলাম না বাস্তবে করতে সৃষ্টি,
গোপনে সবে শুরু করেছিলাম রাখা
যদি কারো পড়ে কুদৃষ্টি।

ভুলতে পারছি না
ক্ষণে ক্ষণে চোখে ভাসে তোমার মুখখান,
হৃদয় আমার মায়াময় তাই তো বিঁধলো পুষ্পবাণ।

স্বপ্নে তোমায় চুম্বন করি,মনে হয় পান করি মদিরা,
হয়ে যাই অবশ,
তোমার ঠোঁটে কি আছে গো,
পাগল হোলাম নেশা লাগা ঠোঁটের পরশ।

স্বপ্নেও ভাবিনি ক্ষণিকের জন্য এসে তুমি কাঁদিয়ে যাবে চলে,
আমার জীবন থেকে হারিয়ে গেলো সকাল সন্ধ্যা সব উৎসবের আলো,
তুমি তো জানতে চলে যাবার সময় নিকটে
তবে কেনো এসেছিলে।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

মার্কসবাদী আদর্শে বিশ্বাসী উৎপল দত্ত চিরকাল শােষিত বঞ্চিত মানুষের সংগ্রামে নিজেকে যুক্ত করেছেন তার নাটক ও নাট্য প্রযােজনার মধ্য দিয়ে!

ভূমিকা—-

উৎপল দত্ত একজন ভারতীয় অভিনেতা, পরিচালক এবং লেখক-নাট্যকার ছিলেন।  তিনি মূলত বাংলা থিয়েটারের একজন অভিনেতা ছিলেন, যেখানে তিনি আধুনিক ভারতীয় থিয়েটারে একজন অগ্রগামী ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেন, যখন তিনি ১৯৪৯ সালে “লিটল থিয়েটার গ্রুপ” প্রতিষ্ঠা করেন। এই দলটি অনেক ইংরেজি, শেক্সপিয়র এবং ব্রেখ্টের নাটক রচনা করেছিল, যা বর্তমানে থিয়েটার নামে পরিচিত।  “এপিক থিয়েটার” সময়কাল, এটি অত্যন্ত রাজনৈতিক এবং উগ্র থিয়েটারে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে নিমজ্জিত করার আগে।  তাঁর নাটকগুলি তাঁর মার্কসবাদী মতাদর্শের প্রকাশের জন্য একটি উপযুক্ত বাহন হয়ে ওঠে, যা কল্লোল (১৯৬৫), মানুষের অধিকার, লৌহা মনোব (১৯৬৪), টিনার টোলোয়ার এবং মহা-বিদ্রোহার মতো সামাজিক-রাজনৈতিক নাটকগুলিতে দৃশ্যমান।  এছাড়াও তিনি ৪০ বছরের ক্যারিয়ারে ১০০ টিরও বেশি বাংলা ও হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেছেন এবং মৃণাল সেনের ভুবন শোম (১৯৬৯), সত্যজিৎ রায়ের আগন্তুক (১৯৯১),  চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য সর্বাধিক পরিচিত।   এবং হৃষিকেশ মুখার্জির হিন্দি কমেডি যেমন গোল মাল (১৯৭৯) এবং রং বিরাঙ্গি (১৯৮৩)।  তিনি তাঁর মৃত্যুর কিছু আগে ১৯৯৩ সালে দূরদর্শনে ব্যোমকেশ বক্সীর (টিভি সিরিজ) সীমান্ত হীরার পর্বে একজন ভাস্কর স্যার দিগিন্দ্র নারায়ণের ভূমিকাও করেছিলেন। তিনি ১৯৭০ সালে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং তিনটি ফিল্মফেয়ার সেরা কমেডিয়ান পুরস্কার পান।  ১৯৯০ সালে, ভারতের ন্যাশনাল একাডেমি অফ মিউজিক, ড্যান্স অ্যান্ড থিয়েটার সঙ্গীত নাটক আকাদেমি তাকে তার সর্বোচ্চ পুরস্কার, থিয়েটারে আজীবন অবদানের জন্য সঙ্গীত নাটক আকাদেমি ফেলোশিপ প্রদান করে।

 

প্রাথমিক জীবন এবং শিক্ষা—-

 

উৎপল দত্ত বাংলা গণনাট্য আন্দোলনের সময়ে বিশিষ্ট অভিনেতা এবং নাট্যকার। উৎপল দত্ত ১৯২৯ সালের ২৯ মার্চ বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন।  তাঁর পিতা গিরিজারঞ্জন দত্ত।  তিনি সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ, কলকাতা, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স নিয়ে স্নাতক হন।

 

ব্যক্তিগত জীবন–

 

১৯৬০ সালে, দত্ত থিয়েটার এবং চলচ্চিত্র অভিনেত্রী শোভা সেনকে বিয়ে করেন। তাদের একমাত্র মেয়ে, বিষ্ণুপ্রিয়া দত্ত, জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ আর্টস অ্যান্ড অ্যাসথেটিক্স, নয়া দিল্লিতে থিয়েটার এবং পারফরম্যান্স স্টাডিজের একজন অধ্যাপক।

 

কর্মজীবন—

 

গণনাট্য আন্দোলন ছিল মূলত রাজনৈতিক আদর্শের প্রতিফলন, মার্ক্সবাদ থেকে প্রণীত এক ধারা যেখানে মঞ্চ হয়ে ওঠে প্রতিবাদের মাধ্যম তিনি মঞ্চের কারিগর ,বাংলা মঞ্চনাটকে অভিনয় করতেন। তিনি শেক্সপিয়ার আন্তর্জাতিক থিয়েটার কোম্পানির সাথে ভ্রমণ করেছেন বেশ কয়েকবার। তাকে গ্রূপ থিয়েটার অঙ্গনের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের অন্যতম হিসাবে গন্য করা হয়। কৌতুক অভিনেতা হিসাবেও তার খ্যাতি রয়েছে।

তিনি হিন্দি চলচ্চিত্র গুড্ডি, গোলমাল, শওকিন ও রং বিরঙ্গিতে (১৯৮৩) -তে অভিনয় করেছেন। তিনি সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় হীরক রাজার দেশে, জয় বাবা ফেলুনাথ এবং আগন্তুক সিনেমায় অভিনয় করেছেন। মননশীল ছবি ছাড়াও অজস্র বাণিজ্যিক বাংলা ছবিতে খলনায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন উৎপল দত্ত। রাজনৈতিক দর্শনের দিক থেকে তিনি ছিলেন বামপন্থী ও মার্ক্সবাদী। উৎপল দত্তের বিখ্যাত নাটকের মধ্যে রয়েছে টিনের তলোয়ার, মানুষের অধিকার ইত্যাদি। তার নাটক গুলি কে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। পূর্ণাঙ্গ নাটক, পথ নাটিকা, যাত্রাপালা।

 

উৎপল দত্ত রচিত নাটকের তালিকা—

 

বাংলা রাজনৈতিক নাটকের ইতিহাস সুপ্রাচীন। নীলদর্পণ থেকেই এই রাজনৈতিক নাটকের সূচনা। কিন্তু উৎপল দত্তকে বলতে হয় অবিমিশ্র রাজনৈতিক নাট্যকার। তাঁর সমস্ত নাটকের মধ্যেই থাকে সচেতন উদ্দেশ্য। পূর্ণাঙ্গ, একাঙ্ক, পথনাটক ইত্যাদি মিলে উৎপল দত্তের নাটকের সংখ্যা প্রায় সন্তরটি। বিষয়বস্তুর দিক থেকেও নাটকগুলি বিচিত্র, কিন্তু রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি সর্বত্রই সেখানে অতন্দ্র থেকেছে। মৌলিক এই নাটকগুলি ছাড়াও আছে অসংখ্য অনুবাদ নাটক। আরাে উল্লেখ্য, রাজনৈতিক বক্তব্য উপস্থাপন করতে গিয়ে উৎপল দত্ত কখনও শিল্পসৃষ্টির অজুহাতে বা শাসক শক্তির কোপদৃষ্টি থেকে আত্মরক্ষার জন্য কোনাে অস্পষ্টতা বা অবরণের আশ্রয় নেন নি। তার বক্তব্য স্পষ্ট, সুবােধ্য এবং অকুতােভয়।

 

লাল দূর্গ, বণিকের মাণদন্ড,  এংকোর (অনুবাদ গল্প), দিল্লী চলো, ছায়ানট(১৯৫৮), অঙ্গার(১৯৫৯), ফেরারী ফৌজ(১৯৬১), ঘুম নেই (১৯৬১), মে দিবস (১৯৬১), দ্বীপ (১৯৬১), স্পেশাল ট্রেন (১৯৬১), নীলকন্ঠ(১৯৬১), ভি.আই.পি (১৯৬২), মেঘ (১৯৬৩), রাতের অতিথি (১৯৬৩), সমাজতান্ত্রিক চাল (১৯৬৫), কল্লোল(১৯৬৫), হিম্মৎবাই (১৯৬৬), রাইফেল (১৯৬৮), মানুষের অধিকার (১৯৬৮), জালিয়ানওয়ালাবাগ (১৯৬৯), মাও-সে-তুং (১৯৭১), পালা-সন্ন্যাসীর তরবারি (১৯৭২), বৈশাখী মেঘ (১৯৭৩), দুঃস্বপ্নের নগরী(১৯৭৪), এবার রাজার পালা, স্তালিন-১৯৩৪, তিতুমির, বাংলা ছাড়ো, দাঁড়াও পথিকবর, কৃপান, শৃঙ্খলছাড়া, মীরকাসিম, মহাচীনের পথে, আজকের শাজাহান, অগ্নিশয্যা, দৈনিক বাজার পত্রিকা, নীল সাদা লাল, একলা চলো রে, ক্রুশবিদ্ধ কুবা, নীলরক্ত, লৌহমানব, যুদ্ধং দেহি, লেনিনের ডাক, চাঁদির কৌটো, রক্তাক্ত ইন্দোনেশিয়া, মৃত্যুর অতীত, ঠিকানা, টিনের তলোয়ার, ব্যারিকেড, মহাবিদ্রোহ, মুক্তিদীক্ষা, সূর্যশিকার, কাকদ্বীপের এক মা, ইতিহাসের কাঠগড়ায়, কঙ্গোর কারাগারে, সভ্যনামিক, নয়াজমানা, লেনিন কোথায়, সীমান্ত, পুরুষোত্তম, শৃঙ্খল ঝঙ্কার, জনতার আফিম, পাণ্ডবের অজ্ঞাতবাস, মধুচক্র, প্রফেসর মামালক, শোনরে মালিক, সমাধান, অজেয় ভিয়েতনাম, তীর।

 

পুরষ্কার এবং স্বীকৃতি—-

 

থিয়েটারে আজীবন অবদানের জন্য ১৯৯০ সঙ্গীত নাটক আকাদেমি ফেলোশিপ

শ্রেষ্ঠ অভিনেতার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার – জিতেছেন
১৯৭০ ভুবন শোম – ভুবন শোম

ফিল্মফেয়ার সেরা কমেডিয়ান পুরস্কার – জিতেছে
১৯৮০ গোল মাল – ভবানী শঙ্কর
১৯৮২ নরম গরম – ভবানী শঙ্কর
১৯৮৪ রং বিরঙ্গি – পুলিশ ইন্সপেক্টর ধুরন্ধর ভাতাওদেকর

বেঙ্গল ফিল্ম জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অ্যাওয়ার্ড: সেরা অভিনেতার পুরস্কার- জিতেছেন
১৯৯৩ আগন্তুক – মনোমোহন মিত্র

ফিল্মফেয়ার সেরা পার্শ্ব অভিনেতার পুরস্কার – মনোনীত৷
১৯৭৫ অমানুষ – মহিম ঘোষাল
১৯৮০ গোল মাল – ভবানী শঙ্কর
১৯৮৬ সাহেব – বদ্রী প্রসাদ শর্মা

 

 

মৃত্যু—–

 

১৯৯৩ খ্রীস্টাব্দের ১৯শে আগস্ট তিনি কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট ও উইকিপিডিয়া।।

 

Share This
Categories
কবিতা রিভিউ

উপেক্ষিত ভাষাশহীদ : শুভঙ্কর দাস।

২১ শে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবস।আন্তর্জাতিক ও আন্তরিক আলোর।
এই সূর্যস্মরণীয় দিনটির জন্য এ-ই মানুষটির অবদান অতুলনীয়। অথচ ভাষাদিবসের প্রেক্ষাপটে তাঁর কথা খুবই কম শোনা যায়,কম উচ্চারিত হতে দেখা যায় এবং কোনো সৃজনকর্ম তাঁকে নিয়ে রচিত হয় না!
কেন?
১৯ মার্চ প্রবল শক্তিশালী ও সর্বপ্রধান মহম্মদ আলি জিন্না ঢাকায় এসে চেঁচিয়ে উঠলেন,উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।তাঁর মুখের ওপর যাঁরা প্রতিবাদ করতে দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন,তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত।
ধীরেন্দ্রনাথের যুক্তি ছিল,দেশের ছয় কোটি নব্বই লক্ষ নাগরিকের মধ্যে চার কোটি চল্লিশ লক্ষ মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলেন,অতএব বাংলাই হোক রাষ্ট্রভাষা।
কিন্তু মুসলিম লিগ তা খারিজ করে দেয়,তার কারণ সহজেই অনুমেয়।
সেই মহান ভাষাসৈনিককে এর জন্য মারাত্মক মূল্য চোকাতে হয়েছিল।১৯৭১ সালে পাকসেনারা অশীতিপর সমাজকর্মী ধীরেন্দ্রনাথকে কুমিল্লার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ময়নামতী ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।
বাহান্নর ভাষা আন্দোলন শুধু মাতৃভাষার রক্ষা করেনি,একটা দেশের জন্ম দিয়েছল,সেই দেশের জন্মপরতে ধীরেন্দ্রনাথের নাম অবিচ্ছেদ্য।তাঁকে বিস্মৃত হওয়া মানে একটা ভাষাকে,একটা দেশকে অস্বীকার করা।
তাঁকে জানিয়ে অক্ষরের শ্রদ্ধা।

চার কোটি চল্লিশ লক্ষের সিংহাসন

শুভঙ্কর দাস

অক্ষরের কোনো ধর্ম হয়?
মায়ের মুখের ভাষায় কোনো কাঁটা,কোনো উদ্ধত আঙুল,কোনো স্বেচ্ছাচারীর মুর্খামি
কালো কালো রেখায় মাথা তুলতে পারে?

কোনোদিন পারে না,যে মুহূর্তে অর্ধমের অন্ধকার বাংলা বর্ণে মিশিয়ে দেবে,যে মুহূর্তে রক্তচক্ষু মিশিয়ে দেবে আদুরে অক্ষরে,যে মুহূর্তে বন্দুকে বিচার করবে বিবেকের বাণী,সেই মুহূর্তে ধীরেন্দ্রনাথ শুধু উচ্চারণ করবেন,চার কোটি চল্লিশ লক্ষের মুখের ভাষা…

বাংলা,বাংলা এবং শেষ রক্তবিন্দুর সত্য, বাংলা

২১ ফেব্রুয়ারি একটা এমন দেশের নাম,যেখানে মায়ের আঁচলে সত্যিকারের ভুবন আঁকতে নিজের প্রাণ পর্যন্ত তুলে দিতে পারে
তেমন দেশের মাটিতে যদি সিংহাসন গড়ে ওঠে

তাতে হাসিমুখে বসে থাকবেন ধীরেন্দ্রনাথ।

—————-//———————-
২৯ মার্চ,২০২৩

Share This
Categories
কবিতা

অহংকার : রাণু সরকার।

এমন কিছু সম্মানিত ও গুণসম্পন্ন নারী বা পুরুষ আছেন
নামটা উজ্জ্বল বলে তাদের মনে ভীষণ দাম্ভিকতা চলে আসে।

কথাই বলা যায় না তাদের সাথে, বন্ধুত্ব তো দুরস্থ।
আমার ভাগ্যে যখন এমনটা জুটেছে, তখন আমি ভীষণই কষ্ট পেয়েছি-
হয়তো তারা ভাবেন মনে মনে ধুত্ এদের সাথে কী কথা বলবো, আমার মতো তো আর এতো গুণী বা নাম যশ নেই, তাই একটু অবহেলার চোখেই দেখেন।

অনেক বিষয়ের ওপর তাদের নাম যশ থাকতেই পারে, সেটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার।
কিন্তু অহংকার কিছুটা শিশুসুলভ মনোভাবের মতো।
অনেক সময় দেখা যায় একটা পরিণত মানুষের মধ্যে অহংকার অসহ্য লাগে।
পতনের মূল কারণ এরা বুঝতে পারেন না বা বুঝতে চান না যে মানুষ্যত্বের অভাব যা জীবনে চলার পথে সমস্যার দিকে পরিচালিত করে সেটাও ভাবনাতে আসে না, নাম যশে ভুলে থাকে।

তবে কেউ যদি আত্মসম্মান বোধে দূরত্ব বজায় রাখে তবে হয়তোবা সে শান্তি অনুভব করলেও করতে পারে।

Share This
Categories
কবিতা

পুরুষ কথা : রাণু সরকার।

পুরুষদের কি কাঁদতে নেই?
হ্যাঁ, আছে তো।
পুরুষদেরও কষ্ট আছে অনেক–

অব্যক্ত কষ্ট সাথে করে চলতে হয় সবসময়-
লোহার বর্মে তো পুরুষ আচ্ছাদিত নয় যে কাঁদবে না-
হ্যাঁ, পুরুষরাও কাঁদে।

তবে পুরুষের কাঁদা দিনের আলোর আড়ালে থাকে, অনেক কষ্টের বাসনা-
কষ্টের নানান প্রকাশভঙ্গি।

বৃষ্টি ভেজা দিনে অনেক পুরুষ কাঁদে
যাতে অশ্রুধারা মিশে যায় বৃষ্টিধারায় অন্যের অসাক্ষাতে।

রুটি-রুজির কথা ভাবতে ভাবতে ভাবতে কাঁদা তাদের ফুরিয়ে যায়-
রুজিরোজগার ভাবনা দেয় না তাদের কাঁদতে।

ভোরের আলো ফোটার আগেই শুরু হয় তাদের অভিযান রুজির সন্ধান।
রাতের অন্ধকারে তাদের ঘরে ফেরা
শুধু পরের দিনের আলো ফোটার অপেক্ষায়।

কাঁদতে গেলেই কে যেন টেনে ধরে তাদের,
এ বলে আমার এটা নেই,
ও বলে আমার ওটা নেই।
পরিবারের বায়না মেটাতে মেটাতেই ভুলে যায় নিজের জন্য একটু কেঁদে হালকা হওয়া।
এই নেইগুলো আনতে আনতেই ভুলে যায় তার নিজের কথা-
অর্ধেক কাঁদা যে রেখে এসেছিলো ওটা আর পরে খুঁজে পায় না-
তাই আর হয় না তাদের কাঁদা সারা।

সহ্য করতে যখন আর পারে না তখন ছিটকে বেরিয়ে এসে ডুকরে ডুকরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে-
আবার কখনো বুকে হাত রেখে বোবা চিৎকার করে-
কেউ যেন না দেখে।
কেউ না দেখুক একজন কিন্তু দেখে- সে হলো অন্তর্যামী।

সময়-রুটি-রুজি কাঁদতে দেয় না-
তাই পুরুষের কাঁদা কেউ দেখতে পায় না-
বুকে থেকে যায় কষ্টগুলো।
হয়তো খুঁজলে দেখা য়াবে বুকে কত পলির স্তর জমে আছে।

কিছু নারী স্তর দেখতে পায়-
শুধু দেখতে পেলে হবে না
হৃদয়ঙ্গম করতে ও তো হবে-
তা না হলে বোঝা যাবে না
তার কতটা কষ্ট।

পুরুষের পলির স্তর কত দূর পর্যন্ত
সেটা সব নারী দেখতে পায় না বা দেখতে চায় না-
এই স্তর দেখতে হলে দিব্যজ্ঞানী হতে হবে নচেৎ দেখতে পাবে না।
কিন্তু তাহলে নারীকে অনেক কিছু ত্যাগ করতে হবে।
হ্যাঁ কিছু নারী আছেন ত্যাগী তারা দেখতে পায়-
আবার কিছু নারী আছেন দেখতে পায় না।
আমার দেখা অনেক আছে বলিও তাদের মাথা নিচু করে রাখে কোন উত্তর করে না, এই গুণটা আছে ভালো- হয়তো বুঝেতে পারে তাই চুপ থাকে,
অনেকে সুধরেও গেছেন আমার বলাতে।

Share This
Categories
রিভিউ

কবিতার সর্বস্ব ও কবির সর্বনাশ ::: শুভঙ্কর দাস।।।

‘কবিতা’ কথাটি উচ্চারণ করার আগে
অন্তত একটি এমন কবিতা পড়ুন,যাতে আপনার মনে হতে পারে,আয়না শুধু কাচের নয়,অক্ষরেরও হয়!
‘কবিতা’ নিয়ে কণামাত্র মতামত প্রকাশের আগে
অন্তত একজন কবির কথা আত্মজীবনীর মতো জানুন
যাতে আপনার মনে হতে পারে
আত্মীয়স্বজন বলতে শুধু রক্তের সম্বন্ধ বোঝায় না!

এই কবিতার মতো দেখতে সাজানো কথাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্রিয়াপদ ‘পড়ুন’।
অর্থাৎ পড়া।
এই পড়ার লোকের খুবই অভাব।
রক্তাল্পতার মতো পাঠকাল্পতার রোগে ভুগছে বাংলা কাব্য-কবিতা।
কবি জীবনানন্দ দাশ ইংরেজি সাহিত্যের পড়ুয়া শিক্ষক এবং বাংলা কবিতার মনন নক্ষত্রের প্রধান। তিনি যেমন শিরোধার্য রবীন্দ্রনাথের লেখা আত্মস্থ করার চেষ্টা করতেন,তেমনি সমসময়ের বন্ধুবর্গের লেখাও, যেমন দিনেশ দাসের লেখাও পড়তেন এবং পড়ার মতো পড়ে,সেই সব কবিতার মননশীল আলোচনা বা মতামত ব্যক্ত করতেন।
অনেকেই জানেন না,কবি জীবনানন্দ কবিতা চর্চার জীবনে কবি দীনেশ দাসের মুগ্ধ পাঠক এবং আলোচক। দীনেশ দাসকে চেনেন তো?
সেই যে যিনি লেখেন

” বাইরে অদূরে
থান-কাপড়ের মতো একটি পবিত্র দিন শুকায় রোদ্দুরে।”

অথবা

“তোমার পায়ের পাতা সবখানে পাতা
কোনখানে রাখব প্রণাম!”

অথবা

“বাঁকানো চাঁদের সাদা ফালাটি
তুমি বুঝি খুব ভালোবাসতে?
চাঁদের শতক আজ নহে তো
এ যুগের চাঁদ হল কাস্তে!”

যাক! এবার মনে পড়বেই।

একটি জায়গায় জীবনানন্দ কবি দীনেশ দাসের কবিতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছিলেন,এখন বুঝতে পারি,কবিতা শুধু যে শিল্পকুশলতার নয়, আরোও ওপরের জিনিস।
পাঠক ছিলেন রবীন্দ্রনাথ।
শান্তিনিকেতনে কেউ যদি দুটি শব্দ লিখে পোস্টকার্ডও পাঠাতেন,রবীন্দ্রনাথ তাও পড়তেন।
প্রমথ চৌধুরী পড়ার জন্য গ্রন্থকীট বলে উপহাসের পাত্র হয়েছিলেন অথচ সেই পড়ার গুণে তিনি বঙ্গসাহিত্যের একজন শ্রেষ্ঠ গদ্যকার হতে পেরেছিলেন।
স্বামী বিবেকানন্দ মাত্র উনচল্লিশ আয়ুর সময়কালে যা পড়েছেন,তা একজন মানুষ শতায়ু জীবনে পারবে না!
সৈয়দ মুজতবা আলি তো গ্রন্থকেই জীবনের দরজা-জানালা এবং সোপান করেছিলেন।
বুদ্ধদেব বসু তো কবিতার ওপর ভবন ও ভুবন নির্মাণ করেছিলেন!
তারপর সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সবাই লেখার পরিমাণ মাপতে ব্যস্ত,তাঁর সেই সময় বা প্রথম আলো উপন্যাসের সহকারী গ্রন্থসূচি তালিকা নিয়ে দুই ফর্মারই বই হয়ে যেতে পারে!
মোদ্দা কথা, সেই সব পাঠকধন্য সোনালি দিন কোথায় গেল!
কবিতার বইয়ের পাঠক কোথায়?
ক’জন গাঁটের কড়ি খরচ করে কবিতার বই কেনেন?
সর্বনাশ! কেনার কথা বলে ফেললাম, হা হরি! হায় আল্লা!
কোনো কবিতার বই প্রকাশের পর যদি পঞ্চাশজনকে বিতরণ স্টাইলে দেওয়া হয়,তাহলে দেড়জন মাত্র মতামত জানান,যদি সেই কবি অতিব সৌভাগ্যবান হন।
তারপর যদি সরকারি বা বেসরকারি ডাকযোগে কবিতার বই পাঠান,তাহলে তো কথাই নেই,ডাক নিশ্চিতভাবে পৌঁছে যাওয়ার দিন অতিক্রম করে কবি যদি ফোন করে জানতে চান,কবিতার বইটি পেয়েছেন? তাতে ফোনের অপর প্রান্তের উত্তর আসবে,আপনি কী পাঠিয়েছিলেন?আসলে এতো বইপত্র আসে,বুঝতে পারছি না! আচ্ছা, আপনাকে পরে জানাচ্ছি!
ব্যাস ফোনটা কেটে যাবে এবং এই ‘পরে জানাচ্ছি’ আর কোনোদিন ফিরবে না।
এই এতো কথার সার কথা এই,কবিতা পড়ুন এবং কবিতাই আপনাকে অনুভবের সঠিক পথ দেখাবে।
প্রশ্ন উঠবে, কবিতাই কেন?
সহজ উত্তর, কবিতারই মানবমনের সর্বোত্তম নির্যাস।কবিতার চোখ দিয়ে মানুষ এবং তার সম্পর্কের পরম অনুভব ব্যক্ত ও বিস্তার দান করতে পারে।
কবিতা পড়ুন এবং তাকে স্পর্শ করতে পারলে তারপর গদ্য, উপন্যাস, গল্প অথবা গান সবকিছুর অন্তর্নিহিত আলোর কাছে অতি সহজেই পৌঁছাতে পারবেন,শুধু অক্ষর সাধন নয়, আধ্যাত্মিক এবং সংসার সত্যও অনুধাবন করতে পারবেন।
কবিতা পড়ুন এবং পড়ার যোগ্য হয়ে ওঠুন। গভীরভাবে হৃদয়স্থ করতে থাকুন,তারপর ডাক্তারি,ইঞ্জিনিয়ারগিরি,মাস্টারি, ব্যবসায়ী,বিপ্লবী,সাংবাদিক, রাজনীতি,ফুচকা অথবা বেলুন ফাটানো, যা ইচ্ছে করুন।
সবকিছু কবিতার মধ্যে দিয়ে উত্তর এবং উর্বরতা খুঁজে পাবেন।
এটাই সত্য।
ধরুন,আপনি পিতা অথবা মাতা।
কর্মক্ষেত্রের শেষে যখন বাড়ি ফিরে গিয়ে দেখলেন,সন্তানের জ্বর অথবা তার খাওয়া হয়নি, সেই মুহূর্তে আপনার বুকের বাঁদিক যেই ধক্ করে উঠল,তাই অনুভব।
তাই কবিতার পথ এবং কবিতার প্রকাশ।
এটা আনন্দের ক্ষেত্রেও ঘটতে পারে,সেই একই জিনিস।

অনুভবকে রূপ দেয় চূড়ান্ত কবিতা।
আর একথা সর্বজনগ্রাহ্য সত্যি, অনুভবহীন মানুষ মাত্রই বিপজ্জনক, শুধু বিপজ্জনক নয়,বিশ্বধ্বংসাত্মক।
মনুষ্যত্ব নির্মাণ করতে হলে কবিতা পড়তেই হবে।
যা এই দুঃসময়ে প্রচণ্ড অভাব।

এতো বড় বড় কথার কিছু নেই।
এবার অতি সহজ করে সংক্ষিপ্ত সার।
কবিতা পড়তে হবে।নতুনভাবে।নতুন চোখে।
আপনার পাশে বসে সাহিত্যসভায় যে কবিকে দেখছেন,তাকে সত্যিকারের চিনুন কবিতার মধ্য দিয়ে।
আপনি এতদিন কবিকে দেখেছেন,
সে কালো কি ফর্সা,সে মোটা কি রোগা,সে আমিষ না নিরামিষ, সে বিবাহিত নাকি ডিভোর্সী, সে বাসে ঘুমায় নাকি টিকিট কাটে না! খাওয়ার গপগপ করে খায় নাকি কাকের মতো ছড়ায়,সে বিড়ি ফোঁকে নাকি মদ খায়,সে প্রেম করে নাকি পরকীয়া,সে বহুমূত্র রোগী নাকি উচ্চরক্তচাপ, সে স্কুল মাস্টার নাকি কয়লা খনির শ্রমিক, সে লিটল ম্যাগাজিন করে নাকি ঢাউস ম্যাগাজিন,তার সঙ্গে সুবোধ নাকি জয়ের আলাপ আছে,সে নন্দনে চেঁচায় নাকি গন্ধমাদন তোলে, সে অন্তর্বাস পরে নাকি উলঙ্গ থাকে, এসব স্রেফ ছুঁড়ে ফেলুন,
ছুঁড়ে, মুড়ে এবং এমন নিরাপদ দূরত্ব ফেলুন,যাতে আপনাকে প্রকৃত পাঠক হতে বাধা দিতে না পারে!
এবার মন ও মনন বদলে ফলুন।
এবার কবিতা দিয়ে কবিকে দেখুন, চিনুন এবং বোঝার মতো বুঝুন।
দেখবেন আপনার জগৎ বদল হয়ে গেছে এবং সত্যিকারের জগতে আপনি বসবাস করা শুরু করে দিয়েছেন।
কারণ অনুভব বা চিন্তন

কবির পোশাকে
কবির দাঁতে
কবির হাসিতে
কবির বকবকাকিতে
কবির ফতুয়ায়
কবির চুলে
কবির টাকে
কবির টাকায়
কবির বাজারে ব্যাগে
কবির বউ-এ
কবির বোনে
কবির ফেসবুকে
কবির হোয়াটসঅ্যাপে
কবির সেলফিতে
কবির বইদোকানে মাথা চুলকানোতে
কবির মাইক্রোফোন ধরে হাঁপানোয়
কবির বই প্রকাশে
কবির গালিগালাজে
কবির ধূমপানে
কবির প্রেমিকায় নেই।
নেই।নেই।নেই।একদম নেই।
আছে শুধু কবিতায়।একমাত্র কবিতায়। তাই কবিতা পড়ুন।একথা মফস্বল ও মহানগর সবের ক্ষেত্রে সমান সত্য ও চরম চমৎকার।
কবিতা পড়ুন।
কবিতার মাধ্যমে কবিকে প্রতিষ্ঠা করুন অন্তরে এবং আকাশে….
কিন্তু কাকে বলি? কে যে বোঝে!

২১ শে মার্চ,২০২২. শুভঙ্কর দাস।

Share This
Categories
কবিতা

বাবা-মেয়ে : রাণু সরকার।

বাবা বলেন, জানিস মা, মেয়েদের হাসি ছেলেদের হাসির থেকেও সুদৃশ্য।

এটাও জানিস না তুই! জেনে নে- ছেলেদের কান্না কত কষ্টদায়ক। জানিস, ছেলেরা সহজে কাঁদে না, কাঁদতে পারে না।

ছেলেদের সবকিছু অনুপূরণ করতে গিয়ে তারা কাঁদার কথা ভুলে যায় বা সময় পায় না।
যখন কান্না ধরে রাখতে পারেনা তখনই আড়ালে ফুপিয়ে কাঁদে বা বৃষ্টির সাথে বন্ধুত্ব করে, বৃষ্টি নিজের হাতে দু’চোখ ধুয়ে দিয়ে যায় যেন কেউ বুঝতে না পারে যে সে কেঁদে ছিলো।

তাই বলি কি মা সামনের দিন গুলো একটু ভেবে চিন্তে চলিস।

Share This
Categories
কবিতা রিভিউ

কবিতার পবিত্রতার ছুঁয়ে : শু ভ ঙ্ক র দা স।

বরিশালে জন্ম হলেও বালকটি বড় হওয়া কলকাতায়…
ইস্কুলের গণ্ডী পেরানোর অনেক আগেই কবিতায় নিমজ্জন। সেইভাব জাগ্রত হল,বরিশালে এক জমিদারের বৈঠকখানায় রবি বর্মার রামায়ণ-মহাভারতের ছবি দেখে,ভাবলেন চিত্রচিল্পী হবেন,কিন্তু ছবি আঁকা শুরু করলেন অক্ষরে…
সহসা মা মারা গেলেন।
বালকটি অসহায়,নিঃসঙ্গ এবং উদাস।
লিখলেন প্রথম কবিতা,মাকে নিয়ে,লিখে টাঙিয়ে রাখলেন দরজার পাশেই…
বরিশাল থেকে মাসির হাত ধরে মহানগরের পথে..
প্রচন্ড দারিদ্র্য এবং অসংখ্যবার বাসাবদল।
এর মধ্যে সেই বালক বড় হতে লাগলেন এবং মনেপ্রাণে এই বিশ্বাস প্রোথিত হল,কবিতার জন্য তাঁর জন্মগ্রহণ।
টিউশনির টাকায় পত্রিকা প্রকাশ।
নাম, কবিপত্র।
যেটি পরে সাহিত্যপত্রের ইতিহাস সৃষ্টি করে।
বাষট্টির বছর ধরে প্রকাশ হয়ে আসছিল। এক বিরাট বিস্ময়!
দেখা হল,বিষ্ণু দে,সুভাষ মুখোপাধ্যায়, প্রেমেন্দ্র মিত্র, বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রাম বসু,নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, আলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত এবং সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে..
আলাপ হল,প্রেরণা ও উৎসাহে পেলেন এক নতুন শক্তি।
তারপর মনে হল, কবিতার বই বের করতে হবে।
পান্ডুলিপি তৈরি হল,নাম দিলেন,’দর্পণে অনেক মুখ’।
কিন্তু ছাপতে কে? টাকা কোথায়?
কবির কী অবস্থা!
নিজে ভালো করে কবি খেতেই পান না!অন্য লোকের কাছে আশ্রিত।
অথচ তাঁর ধ্যানজ্ঞান,কবিতার বই বের করবেন।
এক বন্ধু কবিতা পড়ে বলল,আমি টাকা দেবো।
কবিযুবক ছুটলেন সিগনেটের কর্ণধার দিলীপ গুপ্তের কাছে।
প্রচ্ছদ আঁকলেন,পূর্ণেন্দু পত্রী।
সেই শুরু, আবির্ভাব হল এক নতুন কবিপুরুষের…
তিনি পবিত্র মুখোপাধ্যায়।
তিনি তো লিখতে পারেন—

“অনন্তকাল কেউ বেঁচে থাকবে না
খড়কুটোর রহস্য বেরিয়ে পড়বার আগেই
আমি
খুলে ফেললাম আনুগত্যের দস্তানা
হেলমেটের সবুজ ঢালুপথের ওপর দাঁড়িয়ে পড়লো সূর্য
আমি রেকাবে পা রাখলাম রেকাবে রাখলাম পা
রেকাবে”

কী আশ্চর্য!
কবি পবিত্র মুখোপাধ্যায় সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে পা রাখার ভুলে পড়ে যান,তারপর হাসপাতালে..
তারপর অশেষ কবিতার যাত্রায়..

অলংকরণ। ভগীরথ সর্দার।।

Share This