Categories
প্রবন্ধ

মূল্যবান মনুষ্য জীবন ও তার সদ্‌ব্যবহার : স্বামী আত্মভোলানন্দ।

ওঁ নমঃ শ্রী ভগবতে প্রণবায় ।

***আমাদের সুন্দর এই মনুষ্য জীবন সৃষ্টির আদিতে ভগবান ব্রহ্মার দ্বারা  সৃষ্টি মোট চুরাশি লক্ষ প্রকার যোনি ভ্রমণ  করে জীব যোনি  থেকে উদ্ধার পেয়ে সুদুর্লভ মনুষ্য (যোনি) জীবন লাভ হয়। তাই পৃথিবীতে এই সুন্দর জীবনকে উপভোগ করুন। আমাদের জীবনে চলার পথে অনেক ধরনের মানুষের সংস্পর্শে আসা হয়, কেও কেও আপনার  সুখ্যাতি করবে আবার কেও কেও আপনাকে  কটু কথা শোনাবে বা ধিক্কার দেবে। মনে রাখবেন দুজনই  আপনার  প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে উপকার করে। সুখ্যাতি শুনলে, মনে উৎসাহ ও উদ্দীপনা বারে আরও ভালো করার, আর ধিক্কার শুনলে নিজের ভুলকে শোধরানোর সুযোগ এনে দেয়। তাই সব কিছু আনন্দের সাথে গ্রহণ করা উচিৎ।এমন কোন মানুষ নেই, যার মধ্যে কোন ভালো গুন নেই।আর ভালো মানুষগণ সবসময় সবার ভিতরে থাকা ভালো গুন গুলো দর্শন করেন। তাই সবসময়, নিজেকে নিয়েই ভাবা উচিত, নিজের ভুলগুলো বের করা উচিত,তবেই আমরা জীবনে উন্নতি করতে পারবো l

আমাদের মনুষ্য জীবন বেশ মজার, আপনি পৃথিবীতে সাথে কিছুই নিয়ে আসেন নি ,তারপর আপনি সবকিছুর জন্য  সারাজীবন লড়াই করেন এবং পরে সবকিছু ছেড়ে যান এবং কিছুই  সাথে নিয়ে যান না l আমাদের মনে রাখা উচিত জীবনে সুখ্যাতি, অর্থবল, পদমর্যাদা ও ক্ষমতা এই চারটি জিনিস মানুষের চিরস্থায়ী থাকে না আজকে যা আপনার কালকে  তা কিন্তু অন্য কারো হবে।কারণ,সৎ ও সুন্দর  মানুষের জীবনে ধন-সম্পত্তি-পদমর্যাদা নয়,  সবথেকে প্রয়োজনীয় জিনিস হলো নিরোগ দেহ, পরিতৃপ্ত মন, সততা ও মানসিক প্রশান্তি পূর্ণ জীবন, এইগুলো আবার একে অপরের পরিপূরক।জীবনে ভালো হওয়ার চেষ্টা করুন। আমি ভালো তা প্রমান করার কোন দরকার নেই ।আমাদের চিন্তাধারার কোন সীমা নেই, সর্বদা ভাল চিন্তা করুন, ভাল কাজ করুন , ভাল কথা বলুন , অপরকে ভালোবাসা দিন, তারপর ভাল হন।

আমাদের জীবনে সন্তুষ্ট থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ। জীবন  যারা এটাকে উপভোগ করছেন তাদের জন্য জীবন শ্রেষ্ঠ। জীবন  যারা এটিকে বিশ্লেষণ করছেন তাদের জন্য জীবন কঠিন l জীবন যারা এর সমালোচনা করছেন তাদের জন্য জীবন সবচেয়ে খারাপ। আপনি আপনার নিজের জীবনকে নিজে সংজ্ঞায়িত করুন। অন্য লোকেদের আপনার জীবনের স্ক্রিপ্ট লিখতে দেবেন না।আমাদের এই পৃথিবীতে তর্ক করে জয়ী হবার চেয়ে, চুপ থেকে হেরে যাওয়াই ভালো। কারন বুদ্ধিমানেরা পরাজয় ভয় করে না, বরং উপভোগ করে মুর্খদের উল্লাস। আর  যে মানুষ সব হারিয়েও শান্ত আর একাগ্র থাকে সেই জীবন সংগ্রামে  জয়ী হয়।

জগতের সবকিছুই সুন্দর লাগে, যদি সুন্দরতা দেখার জন্য আমাদের একজোড়া সুন্দর চোখ থাকে। মনে খুশি খুশি ভাব থাকে। প্রতিটা দিন সুন্দর মনে হয়।  আপনি  ও সুন্দর, আমি ও সুন্দর , ফুলও সুন্দর, ফলও সুন্দর, বিষও সুন্দর, অমৃতও সুন্দর। জগতের সবকিছুই সুন্দর মনে হয়।  জীবনে এইগুলি হলো সুস্বাস্থ্য , দীর্ঘায়ু ও ভালো থাকার রহস্য। সর্বদা সত্য কথা বলুন ,কারণ, সত্য একটি অস্ত্রোপচারের মত, সামান্য ব্যথা দেয়, কিন্তু স্বস্তি দেয়, আর মিথ্যা হল একটি ব্যথানাশক, যা আপনাকে স্বল্পমেয়াদী স্বস্তি দেয় কিন্তু সারা জীবনের জন্য আপনাকে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেয়।

যদি মহাভারতের কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধক্ষেত্রএর দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করি। কর্ণের রথের চাকা মাটিতে বসে গেলে তিনি তা মাটি থেকে তোলার জন্যে রথ থেকে নিচে নামেন। এসময় তিনি নিরস্ত্র ছিলেন। ভগবান শ্রী কৃষ্ণ তৎক্ষণাৎ অর্জুন কে, কর্ণের উপর বান মেরে হত্যা করার নির্দেশ দেন। অর্জুনও ভগবানের কথা মতো কর্ণকে লক্ষ্য করে একের পর এক বান নিক্ষেপ করে। যা কর্ণ কে ভয়ংকর ভাবে বিদ্ধ করে। এতে কর্ণ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। মাটিতে লুটিয়ে পড়া কর্ণ ভগবান শ্রী কৃষ্ণ কে প্রশ্ন করেন, এই তুমি ভগবান?  এই তুমি করুনাময়?  এই তোমার ন্যায্য বিচার ! যে একজন নিরস্ত্র কে হত্যা করার পরামর্শ দাও ? ভগবান শ্রী কৃষ্ণ স্মিত হেসে জবাব দেন, “চক্রব্যূহে অর্জুন পুত্র অভিমুন্যও নিরস্ত্র হয়ে গেছিলো, যখন সকলে মিলে তাঁকে নৃশংস ভাবে হত্যা করেছিলে, তাঁর মধ্যে তুমিও ছিলে। তখন তোমার এই ধর্মজ্ঞান কোথায় ছিলো কর্ণ ? এ জগতে যে যেরূপ কর্ম করবে আমিও তাঁকে সেইরূপ কর্মফলই প্রদান করি। ইহাই আমার বিচার।”

অতএব, আমাদের এই সুন্দর মনুষ্য জীবনে চলার পথে কর্ম করুন ভেবেচিন্তে। আপনি আজ কাউকে কষ্ট দিলে, যন্ত্রনা দিলে, অবজ্ঞা করলে, কারো দুর্বলতার সুযোগ নিলে আগামীতে আপনার জন্যেও সেই একই কর্মফল অপেক্ষা করে থাকবে এবং স্বয়ং তিনিই (ভগবান) আপনাকে তা প্রদান করবেন।পরিশেষএ জগৎগুরু ভগবান স্বামী প্রণবানন্দজী মহারাজের শুভ ও মঙ্গলময় আশির্বাদ সকলের শিরে বর্ষিত হোক,এই প্রার্থনা করি…***
সর্বে ভবন্তু সুখিনঃ সর্বে সন্তু নিরাময়াঃ।।
ওঁ গুরু কৃপা হি কেবলম্ ….!

Share This
Categories
প্রবন্ধ

আজ ডায়াবেটিস সেবা দিবস, জানুন দিনটি কেন পালিত হয়।

আজ ডায়াবেটিস সেবা দিবস। অধ্যাপক ডা. মো. ইব্রাহিমের মৃত্যু দিবস স্মরণীয় করে রাখতে প্রতিবছর ডায়াবেটিক হাসপাতালগুলোতে ৬ সেপ্টেম্বর দিবসটি পালন করা হয়। অধিকাংশ দেশেই ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ব্যাপকভাবে বাড়ছে, যদিও কিছু উন্নত দেশ এ বৃদ্ধির হারে লাগাম টানতে পেরেছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে উদ্বেগজনক হারে ডায়াবেটিসের রোগী বাড়ছে।  ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যার ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি, ডায়াবেটিসজনিত স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা এবং এতে মৃত্যু ব্যাপকহারে বেড়ে যাওয়ার কারণে ২০১২ সালে আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশন ডায়াবেটিসকে বৈশ্বিক মহামারি হিসাবে ঘোষণা করে।

শহুরে জনসংখ্যার তুলনায় গ্রামাঞ্চলে ডায়াবেটিক রোগী কম দেখা যায়, যা খাদ্য গ্রহণের পার্থক্যের কারণে হতে পারে । এই রোগ প্রতিরোধে শুধু সচেতনতা নয়, জীবনযাত্রার পরিবর্তনও জরুরি । বিশেষজ্ঞদের মতে, অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস এবং কম শারীরিক পরিশ্রমের কারণে ডায়াবেটিস রোগীদের শহরে বেশি দেখা যায় । ডায়াবেটিস হওয়ার পেছনে যেসব বিষয় জড়িত, সেগুলোকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায় : পরিবর্তনযোগ্য-জীবনযাত্রা সম্পর্কিত বিষয় যেমন স্থূলতা, অলস জীবনযাপন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, মানসিক চাপ, ওষুধ ইত্যাদি; পূর্বে চিহ্নিত প্রি-ডায়াবেটিস এবং গর্ভকালীন অপুষ্টি। অপরিবর্তনীয়-পারিবারিক ও বয়স/লিঙ্গ। গবেষণালব্ধ তথ্য ও প্রমাণসাপেক্ষে এটা মোটামুটি নিশ্চিত যে, টাইপ-২ ডায়াবেটিস এবং এর জটিলতাগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব। এ জন্য প্রয়োজন সচেতনতা ও সমন্বিত প্রচেষ্টা।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসা উপলক্ষে এ রোগের আধুনিকতম গবেষণার সঙ্গে ক্লিনিক্যাল চিকিৎসার বাস্তব প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার পথিকৃৎ ডা. ইব্রাহিম ।
ঢাকার সেগুনবাগিচাতে নিজস্ব চিকিৎসা কক্ষে এবং ব্যক্তিগত যন্ত্রপাতি দিয়ে তিনি ডায়াবেটিক চিকিৎসার সূচনা করেছিলেন। ১৯৮৯ সালের এইদিনে জাতীয় অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম মৃত্যুবরণ করেন।জাতীয় অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম মৃত্যুবরণের দিনের স্মরণে এ দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে।এদিন রোগীদের মধ্যে ডায়াবেটিস রোগ নিয়ে সচেতনতা তৈরি করা, কীভাবে একে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় সে বিষয়ে রোগীদের জানানো হয়।

ডায়াবেটিস হলে শরীরে প্রয়োজনীয় ইনসুলিনের মাত্রা কমে যায়, শরীর ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না, প্রস্রাবের সঙ্গে শর্করা বেরিয়ে যায়। এতে রোগী দুর্বল হয় ও ধীরে ধীরে শরীরের অন্যান্য অঙ্গেও ছড়িয়ে যায়।
এ রোগ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তিনি। শুধু তাতেই থেমে থাকেন নি এ চিকিৎসক। এটিকে একাধারে গবেষণা ও গবেষণা ফলাবর্তনানুসারী ক্লিনিক্যাল চিকিৎসার উপায় ও উপলক্ষ নির্মাণ করেছিলেন, প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসা উপলক্ষে এ রোগের আধুনিকতম গবেষণার সঙ্গে ক্লিনিক্যাল চিকিৎসার বাস্তব প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার পথিকৃৎ ডা. ইব্রাহিম ।
ঢাকার সেগুনবাগিচাতে নিজস্ব চিকিৎসা কক্ষে এবং ব্যক্তিগত যন্ত্রপাতি দিয়ে তিনি ডায়াবেটিক চিকিৎসার সূচনা করেছিলেন। প্রাথমিকভাবে মাত্র ২৩ জন রোগীর ওপর গবেষণা ও তাদের চিকিৎসা অগ্রগতি তথা তাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মাত্রা ও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা তিনি চালু করেছিলেন। পরে রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেলে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও অন্যান্য চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় ও সমঝোতার মাধ্যমে রোগী রেফার করে চিকিৎসা করতেন।
১৯৮২ সালে যে বিশাল স্থাপনা ক্রমান্বয়ে গড়ে ওঠে, তা পরে ইব্রাহিম সেন্টার তথা অধুনা বারডেম নামে সুনাম ও সুখ্যাতি অর্জন করে।
বর্তমান জীবনধারায় ডায়াবেটিস একটি বড় সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। পরিবারে এখন দু-একজন ডায়াবেটিক থাকা যেন খুবই স্বাভাবিক । শুধু বয়স্করাই নয়, তরুণরাও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছেন । আমাদের দেশেও তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে অনেক ডায়াবেটিস রয়েছে এবং এই সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। তাই ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য আজকের দিনট পালিত হয়।

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

মূল্যবান মনুষ্য জীবন ও বিনিময় প্রতিদান : স্বামী আত্মভোলানন্দ।

ওঁ নমঃ শ্রী ভগবতে প্রণবায় ….।

 

***আমাদের সুন্দর ভারতীয় সমাজে অনন্তকাল ধরে ঋষি, মুনি, সাধু, সন্ন্যাসী, প্রাচীনকালে হইতে অনেক বিখ্যাত দার্শনিক, অনেক বিখ্যাত বিজ্ঞানী, অনেক বিখ্যাত মহাপুরুষ, সাধুমহাত্মা, মহামানব, অনেক বিখ্যাত মানুষ,সময়ে সময়ে নিজেদের প্রভাব, মহিমা, জ্ঞানের, তপস্যার, আবিস্কারের অবদান রেখে গেছেন এই পৃথিবীতে মানব সমাজের জন্য, আমাদের জন্য। যেমন, উদাহরণ স্বরূপ সুদুর অতীতে রাজা রামমোহন রায়, পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, স্বামী বিবেকানন্দ, স্বামী প্রণবানন্দ, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা আরো অনেক মহামানব।বিনিময়ে তাদের কেউ কি তপস্যার মূল্য, সাধনার মূল্য, কঠোর পরিশ্রমের মূল্য চেয়েছেন? না পেয়েছেন? না আমরা কিছু দিয়েছি কোনোদিন?না দিতে পারবো?

সৌন্দর্যময় আমাদের এই পৃথিবী সকল নৈসর্গিক উপাদানে সমৃদ্ধ। এই মনোরম , অনুপম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অনন্তকাল ধরে আমাদের  চিত্তে আনন্দের অমৃতধারা জাগিয়ে তুলছে। এরই বহিঃপ্রকাশ  আমাদের নানা অনুভবে ও অনুভূতিতে। দিনে দিনে কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়েই শিক্ষা স্বাস্থ্য ও আবাসন গড়ে উন্নত হওয়ার পথে আমাদের সমাজ ও আধুনিক সভ্যতা। যে অরণ্যঘেরা পৃথিবীতে তিলে তিলে মানুষ গড়ে তুলেছে আধুনিক সভ্যতা। আবার আধুনিক সভ্যতা মানুষের ক্রোধেই দাবানলের মতো জ্বলে পুড়ে সভ্যতার বিনাশ হওয়ার পথে  আজ আমাদের সুন্দর সমাজ।

আমরা মানুষ যদি মেঘের দিকে তাকায়, নদীর দিকে তাকায়, দেখি? মেঘ সারা পৃথিবীতে ঘুরে বেড়ায় জল-বৃষ্টি দেয়।নদী গুলি বিশাল জমিতে সেচ দেয়, জল দেয় এবং সমস্ত বিশ্বের পানীয় জল,সবুজ, ফসল উপহার দেয়। উদ্ভিদ,গাছ, বন,অকৃপণ ভাবে আমাদের অক্সিজেন, ছায়া, আশ্রয়,সবুজ ফসল, সবজি, ফুল, ফল, ইত্যাদি উপহার দেয়, আমরা মানুষ সেখানে বাস করি বহু বছর ধরে এবং গাছ কাটি, আমরা  নদীকে দূষিত করি, জমিকে দূষিত করি, উদ্ভিদকে, নদীকে মেঘকে এর ক্ষতি পূরণ কে দিয়েছে ? নদীকে মেঘকে উদ্ভিদকে তাদের কঠোর পরিশ্রমের মূল্য কে দি? আমরা মানুষ সামান্য কারও  উপকার করে বলি—“অনেক করেছি,কিন্তু বিনিময়ে কি পেলাম?”

তাই, কেউ  আপনাকে খারাপ বললেও  আপনি মন  খারাপ করবেন  না, অভিশাপ দিলেও ভয়  করবেন না,কিন্তু ,আপনি শত্রু মিত্র সবার জন্য ঈশ্বরের কাছে  মঙ্গল কামনা করবেন। তাই, আমাদের জীবনে পড়ে গেলে ক্ষতি নেই। কিন্তু পড়ে গিয়ে আবার জীবনে উঠে দাঁড়ানো, ঘুরে দাঁড়ানোই জীবন। হার মানা চলবেনা।আমাদের প্রত্যেকের সর্ব্বদা স্মরণ রাখা প্রয়োজন, আমাদের কথা ও ব্যবহার  মিত্রকে শত্রু ও আপনকে পর করে, আবার কথা ও ব্যবহারই শত্রুকে মিত্র, পরকে আপন করে। নীরবতা এবং হাসি দুটোই জীবনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়। হাসি যেমন সমস্যা মেটাতে সাহায্য করে, নীরবতা সেই সমস্যাগুলিকে এড়িয়ে চলতে শেখায়।আবার,রেগে গিয়ে চিৎকার করে কথা বলা মানুষের মন সরল হয়, কিন্ত যারা রেগে গেলে ও হাসি হাসি মুখে চলাফেরা করে তারা শয়তানের থেকেও ভয়ংকর হয়।
কারণ,*মানুষের জীবনী একধরনের সাহিত্য যা কোন মানুষের জীবনের উপর লেখা হয়। জীবনী কখনও কাল্পনিক হয় না। দোষ-গুন,ভালো-খারাপ  মানুষের  সব দিয়েই জীবনী হয়।প্রতিদান, বিনিময়ে দিয়ে নয়।*

তাই, পৃথিবীতে সবথেকে কঠিন কাজ মানুষকে খুশি রাখতে পারা, কারণ, মানুষের সামান্য একটু স্বার্থে আঘাত লাগলেই, পূর্বের সব উপকারের কথা মানুষ ভুলে যায়।এই সুন্দর প্রকৃতি ও মানুষকে খুশি রাখতে পারে নি? আমরা মানুষ ভয়ংকর স্বার্থপর। কোন কোন সময় খুব ভয় পেলে একা ঘরে  আছেন ভাববেন না, তখন ভেবে নেবেন আপনার  পাশে সবসময় দুই জন থাকেন  ভগবান আর শয়তান , আপনি  যাকে বেশি পছন্দ করবেন  সেই আপনার  পাশে থাকবে, আপনার  ভালোবাসার উপর নির্ভর করবে সেটা কে? ভগবান না শয়তান আপনার পাশে আছেন।সেটা, আপনার অনুভবের, ভাবনার, ভালোবাসার উপর নির্ভর করবে। দান প্রতিদান এর উপর নয়।

আমরা এই সুন্দর পৃথিবীতে কতটুকু বাঁচবো আর কতদিনই বা বাঁচবো ? টিক টিক করে করে সেকেন্ড, মিনিট, ঘন্টা দিন,রাত কিন্তু চলে যাচ্ছে! মৃত্যু খুব সন্তর্পণে এগিয়ে আসছে! এতো অল্প দিনের জীবনে হিংসা, বিদ্বেষ, রাগ, অভিমান, উষ্কানী মূলক কাজ-কর্ম, সম্পত্তি নিয়ে রেষারেষি, ঘৃণা, কষ্ট, মন খারাপ,এই সব ব্যাপার স্যাপার গুলোতে দয়া করে কেউ সময় নষ্ট করবেন না। ভালো বই পড়ুন, রাত জেগে আকাশ দেখুন, ভোরের সূর্যোদয় দেখুন, নদীর ঢেউ অনুভব করুন, প্রতিদিন নিয়ম করে অন্তত একজন মানুষকে ভালো থাকার জন্য সাহায্য করুন, সন্ধ্যায় পাখিরা কিভাবে ঘরে ফেরে দেখুন, পৃথিবী কতো সুন্দর সেটা অনুভব করুন, নি:শ্বাস কতোটা সুন্দর সেটা অনুভব  করুন,  ভগবান, স্রষ্টাকে স্মরণ করুন। কোনও প্রতিদান, বিনিময়, চাওয়া পাওয়ার প্রয়োজন হবে না।

কারণ,*অন্যায় করলে আমাদের শাস্তি হবেই,পাপ বাপকে ও  ছাড়েনা, এই জন্মের পাপ এই জন্মেই ভোগ করে যেতে হবে, সে আপনি  যত বড়োই হওন না কেনো ।*  তাই ,*মনের গোপনে একটি সুন্দর সুরভিত ফুল রেখো মনে মনে, দলে দলে আসবে প্রজাপতি মনের বাগানে, দেখো মনটি মুহূর্তে পরিণত হবে সুরভিত ফুলের বাগানে।* তাই, বিনিময়, প্রতিদান, চাওয়া পাওয়ার বাসনা থেকে যে মানুষ নিজেকে  দুরে রাখতে পারবেন, মনে রাখবেন, সুন্দর  মূল্যবান  মনুষ্য  জীবনে এই পৃথিবীতে তিনি আসল শান্তি-সুখের জগতে প্রবেশ এর পথ খুঁজে পেলেন।
জগৎগুরু ভগবান স্বামী প্রণবানন্দজী মহারাজের শুভ ও মঙ্গলময় আশির্বাদ সকলের শিরে বর্ষিত হোক! এই প্রার্থনা করি…***
ওঁ গুরু কৃপা হি কেবলম্ ….!
স্বামী আত্মভোলানন্দ

Share This
Categories
প্রবন্ধ

আমাদের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের চিন্তাধারা ও শিক্ষাদর্শন এখনো সমানভাবে  পাথেয়।

একদিকে ভারতীয় অধ্যাত্মবাদ,অন্যদিকে পাশ্চাত্য চিন্তাধারা –দুই মিশ্রনে পরিপূর্ণ আধুনিক প্রগতিবাদী মানুষ ছিলেন ডঃ সর্বপল্লীরাধাকৃষ্ণন। নেহেরুজীর মতে,রাধাকৃষ্ণন ছিলেন ‘আধুনিক বিশ্বদর্শনের প্রতিভূ। ……….তিনি বিভিন্নভাবে দেশের সেবা করেছেন।কিন্তু সর্বোপরি তিনি একজন মহৎ শিক্ষক।তাঁর নিকট হতে আমরা অনেক কিছু শিখেছি এবং আজও শিখতে থাকবো।’ নেহেরুজী সত্য কথাই বলেছেন। রাধাকৃষ্ণনের চিন্তাধারা ও শিক্ষাদর্শন আমাদের বত’মান যুগেও সমান প্রাসঙ্গিক এবং  পথচলার পাথেয়।তিনি যে সমস্ত উপদেশ ও শিক্ষা দিয়ে গেছেন তা আমরা যদি ঠিকমত গ্রহণ করতে পারি তাহলে আমাদের পথ চলা সুগম হবে,আমাদের জীবনে উত্তরণ ঘটবে।
অত্যন্ত সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে নিরন্তর দারিদ্রের সাথে সংগ্রাম করেও তিনি দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রপতি পদ অলংকৃত করেছিলেন।দুঃখ-দারিদ্রকে জয় করে তিনি অতি সহজেই বলতে পেরেছেন- ‘Often suffering is not punishment but discipline’.

 

তিনি বলেছেন ,-‘মানুষের জীবন চলমান কর্মের এক ধারাবাহিক প্রকৃতি-এক মুহূর্ত নষ্ট করা চলবেনা।’ রাষ্ট্রপতির সুমহান ঐতিহ্য পালন করতে গিয়ে অনেক সময় তাঁকে বিবেকের দংশনে দংশিত হতে হয়েছিল,তবুও তিনি কখনও সত্যের পথ থেকে বিচ্যুত হননি।তিনি কখনও নিজের আত্মগরিমা প্রকাশ করেননি,তিনি ছিলেন সহজ সরল ও অমায়িক।
তিনি গীতাঞ্জলির ইংরাজি অনুবাদ ‘Song Offerings’ পড়ে রবীন্দ্রনাথের প্রতি গভীর ভাবে আকৃষ্ট হন।রবীন্দ্রনাথের কবিতা “বিপদে মোরে রক্ষা করো এ নহে মোর প্রার্থনা,
বিপদে আমি না যেন করি ভয়।
দুঃখ তাপে ব্যাথিত চিত্তে নাইবা দিলে সান্ত্বনা,
দুঃখে যেন করিতে পারি জয়।”
এই কবিতাটি তাঁর মনে গেঁথে যায়,তিনি বুঝতে পারেন দুঃখের মধ্য দিয়ে যে জয়লাভ তা জীবনের চরম সার্থকতা নিয়ে আসে-
এই উপলব্ধির সঙ্গে উপনিষদের দর্শনতত্ত্বের মিল খুঁজে পেয়েছিলেন রাধাকৃষ্ণন।
উপনিষদের শ্লোকটি হল-
অসতো মা সদগময়
অসতো মা জ্যোতির্গময়,
মৃতোর্মা অমৃতগময়।”
অর্থাৎ অসত্য থেকে সত্য,অন্ধকার থেকে আলোকে এবং মৃত্যু থেকে অমৃতে চলো।
ডঃ রাধাকৃষ্ণনের জীবনের মর্মবাণী ছিল – “দেবমন্দির হচ্ছে নিত্য পবিত্র মন্দির,আর সেই মন্দিরে তুমি নিজেই, যেমন মৃগের দেহের মধ্যেই কস্তুরি বিরাজ করে।আমরা  একাগ্রচিত্তে মনের মালিন্য দূর করবো।” তাঁর মতে ,জন্ম হোক যেখানে সেখানে,কর্মের মাধ্যমেই আমরা বিশ্বমানব হতে পারি। তিনি বলেছেন-“একান্ত নীরবতার মধ্যে বন্দীর বন্ধন মুক্তির জন্য করুন ক্রন্দনের মতো এবং অন্তরকে পাওয়ার জন্য কাতর ক্রন্দনধ্বনির মতো আমাদের কানে ভেসে আসে ব্যাথিত আত্মার সবিলাপ কণ্ঠস্বর।”
তাঁর শিক্ষাদশ’নও আমাদের ভালভাবে উপলব্ধি করা প্রয়োজন।তিনি বলেছেন – “A good Teacher is a candle,it consumes itself to light the way for others.” তাঁর মতে –একজন মানুষের সফলতা,চরিত্র ও ভাল ব্যক্তিত্ব গড়ার পিছনে শিক্ষকের অবদান রয়েছে।একজন শিক্ষককে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।তিনি শুধুমাত্র পুঁথিগত হবেন তা নয়,তিনি জীবনের যে কোনো ক্ষেত্রের শিক্ষক হতে পারেন।তিনি বলবান,গুনবান ও চরিত্রবান করে তুলতে ছাত্রকে সাহায্য করবেন।সমাজগড়ার কারিগর হিসাবে শিক্ষকের গুরুত্ব অনেকখানি।তাঁর মতে, -“Every one acknowledges how a teacher shapes the life of students and we should be ever greatful to them”
জ্ঞানতপস্বী রাধাকৃষ্ণন কয়েকটি অনবদ্য বাণী রেখে গেছেন-সেগুলি নিম্নরূপ –
১। বইয়ের তাৎপর্য হলো আমাদের সংস্কৃতির মধ্যে সেতু নির্মান করা।
২। সহনশীলতা হলো শ্রদ্ধা,যা সীমিত মন অসীমতায় পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজন।
৩। জীবনের আনন্দ ও সুখ শুধুমাত্র জ্ঞান ও বিজ্ঞানের ভিত্তিতে সম্ভব।
৪। সত্যিকারের শিক্ষক তাঁরাই,যাঁরা নিজের জন্য চিন্তা করতে শেখায়।
৫। একজন পরামর্শদাতা শিক্ষক একজন ব্যক্তিকে সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ দেখাতে ক্ষমতায়ন করেন।
৬। যখন আমরা মনে করি আমরা সব জানি,তখনই আমাদের শিখতে হবে।
৭। কেবল নিখুঁত মনের মানুষেরই জীবনে আধ্যাত্মিকতার অর্থ বুঝতে পারেন,নিজের সত্যতা,আধ্যাত্মিক একনিষ্ঠতার পরিচয়।
৮। জ্ঞানও বিদ্যার ফল হলো অনুভব।
৯। মানুষের স্বভাব মূলত ভাল এবং আত্মজ্ঞানের প্রচেষ্টা সমস্ত খারাপকে দূরে ঠেলে ফেলে দেবে।
১০। যদি মানুষ দানবে পরিনত হয় তাহলে তার হার হয়,
যদি মানুষ মহামানব হয়ে যায়,তাহলে এটি তার চমৎকার,
যদি মানুষ মানুষে পরিনত হয় তাহলে এটি তার জয়লাভ।
শিক্ষা সম্পর্কে তিনি খুব সুন্দর কথা বলেছেন – ‘জনগণকে শুধুমাত্র নাগরিক হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ দেবেনা, তাকে মানুষ হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ দেব।’
শিক্ষা সম্পর্কে বিবেকানন্দ প্রায় একই কথা বলেছেন –
“Man making is my mission.”
পরিশেষে বলি, ডঃ রাধাকৃষ্ণন একজন পূর্ণমানব-জ্ঞানের এক অতল সমুদ্র।ঋষির মতো প্রাজ্ঞ,জ্ঞানসাগরের অতল তলের ডুবুরী।সারা পৃথিবীর মানুষ তাঁর পান্ডিত্যের ঝরনা ধারায় স্নাত হয়ে উপলব্ধি করেছেন তাঁর দর্শন,শিক্ষা,সংস্কৃতি,সমাজচিন্তা ও দেশত্ববোধ।আজও তিনি দর্শনের মধ্য দিয়ে বটবৃক্ষের মতো আমাদের ছায়া দিয়ে রেখেছেন।সারাজীবন বহু উচ্চপদে অধিষ্ঠিত হয়েও যেহেতু তিনি প্রথম জীবনে শিক্ষক ছিলেন সেইহেতু তিনি শিক্ষকসমাজকে ভুলে যান নি।তাই তাঁর নিজের জন্মদিনটিকে ‘শিক্ষক-দিবস’ হিসাবে পালন করতে নির্দেশ দিয়ে গেছেন।তিনি পুঁথি সর্বস্ব শিক্ষা দানের বিরোধী ছিলেন এবং তিনি ছাত্রদের প্রকৃত মানুষ গড়ার কথা বলেছিলেন, তাই শিক্ষকদের কঠোর পরিশ্রম করতে হবে সে কথাও উল্লেখ করেছিলেন।
তাই বর্তমান শিক্ষকদের উচিত তাঁর প্রদর্শিত পথে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাদান করা।আজ শিক্ষক দিবসে শিক্ষক সমাজকে  তাই আবার নতুন করে শপথ গ্রহণের মাধ্যমে  তাঁর উপদেশ মতো কঠোর পরিশ্রম করার মানসিকতা নিয়ে প্রকৃত মানুষ গড়ার জন্য সচেষ্ট হতে হবে।তবেই তাঁর জন্মদিনে আমাদের সকলের শিক্ষাগুরুর প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন সার্থক হবে।
এই সত্যসন্ধানী জ্ঞানতপস্বী দীর্ঘ ৮৭ বছর কর্মময় জীবন কাটিয়ে ১৯৭৫ সালের ১৭ই এপ্রিল অমরলোকে যাত্রা করেন।আজ তিনি আমাদের মধ্যে নাই।কিন্তু তিনি আমাদের জন্য রেখে গেছেন তাঁর মূল্যবান বাণী সমূহ ও দর্শন শাস্ত্রের অমূল্য গ্রন্থসমূহ-যেগুলির সাহায্যে পরমার্থিক সত্ত্বার দিব্যজ্যোতি বিদ্যুতের   মতো আমাদের অন্তরকে স্পর্শ করবে।
আসুন,আমরা আজ এই মহামনীষীর শুভজন্মদিন ৫ই সেপ্টেম্বরে বিনম্রচিত্তে তাঁর উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলি –
আমার মাথা নত করে দাও হে
তোমার চরণ ধুলির তলে।

 

কলমে : শ্রী প্রশান্ত কুমার দাস।
শিক্ষারত্ন প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ,বাজিতপুর উচ্চ বিদ্যালয়(উঃমাঃ),
পোঃ-পাথাই, ময়ূরেশ্বর-১,বীরভূম ।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

লোকনাথ বল, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনকারী এবং সূর্য সেনের সশস্ত্র বিপ্লবী।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের অব্যর্থ পরিশ্রম যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত রাজনৈতিক দিক থেকে মুক্তি পেয়েছে। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়, তার মূলে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে লোকনাথ বল  প্রথমসারির একজন অন্যতম বিপ্লবী ছিলেন। লোকনাথ বল  ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি দেশমতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ রূপে।

 

লোকনাথ বল (৮ মার্চ ১৯০৮ – ৪ সেপ্টেম্বর ১৯৬৪) ছিলেন একজন ভারতীয় স্বাধীনতা কর্মী এবং সূর্য সেনের নেতৃত্বে সশস্ত্র প্রতিরোধ আন্দোলনের একজন সদস্য, যেটি ১৯৩০ সালে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগারে অভিযান চালিয়েছিল।  পরে, তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দেন।  ভারতের স্বাধীনতার পর, তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কলকাতা কর্পোরেশনে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেন।

 

লোকনাথ বল ব্রিটিশ ভারতের বঙ্গ প্রদেশের চট্টগ্রাম জেলার ধোরলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।  তাঁর পিতার নাম ছিল প্রাণকৃষ্ণ বল।  ১৮ এপ্রিল ১৯৩০-এ, তার নেতৃত্বে বিপ্লবীদের একটি দল AFI অস্ত্রাগার দখল করে।  পরবর্তীতে, ২২ এপ্রিল ১৯৩০, তিনি ব্রিটিশ সেনাবাহিনী এবং ব্রিটিশ পুলিশের সমন্বয়ে গঠিত একটি সম্মিলিত বাহিনীর সাথে আরেকটি বন্দুকযুদ্ধের নেতৃত্ব দেন।  এই বন্দুকযুদ্ধে তার ছোট ভাই হরিগোপাল বাল (টেগরা) এবং আরও ১১ জন বিপ্লবী মারা যান।  তিনি পালাতে সক্ষম হন এবং ফরাসি অঞ্চল চন্দরনাগরে পৌঁছাতে সক্ষম হন।  ১৯৩০ সালের ১ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধের পর তাকে এবং গণেশ ঘোষকে গ্রেফতার করা হয়।  এই বন্দুকযুদ্ধে তার যুবক সহযোগী জীবন ঘোষাল ওরফে মাখন মারা যায়।  তাকে 1 মার্চ ১৯৩২-এ যাবজ্জীবনের জন্য পরিবহনের শাস্তি দেওয়া হয় এবং পোর্ট ব্লেয়ারের সেলুলার জেলে পাঠানো হয়।  ১৯৪৬ সালে মুক্তি পাওয়ার পর, তিনি মানবেন্দ্র নাথ রায়ের প্রতিষ্ঠিত র‌্যাডিক্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টিতে যোগ দেন।  পরে তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দেন।

তিনি ১ মে ১৯৫২ থেকে ১৯ জুলাই ১৯৬২ সাল পর্যন্ত কলকাতা কর্পোরেশনের দ্বিতীয় ডেপুটি কমিশনার ছিলেন। তিনি ২০ জুলাই ১৯৬২-এ প্রথম ডেপুটি কমিশনার হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন এবং ৪ সেপ্টেম্বর ১৯৬৪-এ কলকাতায় তাঁর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পদে বহাল ছিলেন। তাঁর ছেলে ডাঃ হিমাদ্রি  বাল কলকাতা থেকে এমবিবিএস করে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেন।  তিনি ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর একজন বিখ্যাত গাইনোকোলজিস্ট হয়ে ওঠেন এবং মর্যাদাপূর্ণ আর্মড ফোর্সেস মেডিক্যাল কলেজ পুনে সহ আর্মড ফোর্সেস মেডিক্যাল সার্ভিসের বেশ কয়েকটি টিচিং হাসপাতালে পোস্ট করা হয়।  তিনি ২০১৫ সালে সেনাবাহিনীর কর্নেল হিসাবে অবসর গ্রহণ করেন এবং প্রসূতি ও স্ত্রীরোগবিদ্যার অধ্যাপক হিসাবে পুনের একটি স্থানীয় মেডিকেল কলেজে অধ্যাপনা করছেন।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

আজ আন্তর্জাতিক দাতব্য দিবস, জানুন দিনটি কেন পালিত হয় এবং গুরুত্ব।

মাদার তেরেসার  ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৯৭ সালে ইহধাম ত্যাগ করে দিব্যধামে পদার্পণ করেন। মহীয়সী এই ব্যক্তিত্বের মৃত্যু দিনটিকে বিশেষ মর্যাদা দিয়ে জাতিসংঘের ২০১২ সালের ১৭ ডিসেম্বর সাধারণ পরিষদের রেজুলেশন নং- এ/আরইএস/৬৭/১০৫: খসড়া এ/৬৭/এল.৪৫ ধারায় গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক ৫ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক দাতব্য দিবস পালনের ঘোষণা দেয়।

 

আন্তর্জাতিক দাতব্য দিবস হল একটি আন্তর্জাতিক দিবস যা প্রতি বছর ৫ সেপ্টেম্বর পালন করা হয়।  এটি ২০১২ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের দ্বারা ঘোষণা করা হয়েছিল। আন্তর্জাতিক দাতব্য দিবসের প্রধান উদ্দেশ্য হল সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং সারা বিশ্বে ব্যক্তি, দাতব্য, জনহিতকর ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির জন্য তাদের নিজস্ব জন্য দাতব্য সংক্রান্ত কার্যকলাপের জন্য একটি সাধারণ প্ল্যাটফর্ম প্রদান করা  স্থানীয়, জাতীয়, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উদ্দেশ্য।

আন্তর্জাতিক দাতব্য দিবসটি ২০১১ সালে হাঙ্গেরিয়ান পার্লামেন্ট এবং সরকার দ্বারা সমর্থিত একটি হাঙ্গেরিয়ান নাগরিক সমাজের উদ্যোগ হিসাবে কল্পনা করা হয়েছিল, দৃশ্যমানতা বাড়ানোর জন্য, বিশেষ ইভেন্টগুলি সংগঠিত করতে এবং এইভাবে সংহতি, সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং দাতব্যের জন্য জনসমর্থন বৃদ্ধি করতে।
5 সেপ্টেম্বর কলকাতার মাদার তেরেসার মৃত্যু বার্ষিকীকে স্মরণ করার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল, যিনি ১৯৭৯ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছিলেন “দারিদ্র্য এবং দুর্দশা কাটিয়ে ওঠার সংগ্রামে গৃহীত কাজের জন্য, যা শান্তির জন্য হুমকিস্বরূপ।”
১৭ ডিসেম্বর ২০১২-এ, হাঙ্গেরির একটি প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়ায়, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ৫ সেপ্টেম্বরকে আন্তর্জাতিক দাতব্য দিবস হিসেবে মনোনীত করার জন্য সর্বসম্মতিক্রমে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে।  রেজোলিউশনটি ৪৪টি জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র (আলবেনিয়া, অ্যাঙ্গোলা, অস্ট্রেলিয়া, বেলারুশ, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, বুলগেরিয়া, কম্বোডিয়া, চিলি, ক্রোয়েশিয়া, ডোমিনিকান রিপাবলিক, ইরিত্রিয়া, এস্তোনিয়া, জর্জিয়া, হরিয়া, উং-ডুয়ে-এ, উং-ডুয়ে-এ, জর্জিয়া-তে সহ-স্পন্সর করেছে।  , আয়ারল্যান্ড, ইসরায়েল, ইতালি, জর্ডান, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, লাটভিয়া, লেবানন, লিথুয়ানিয়া, লাক্সেমবার্গ, ম্যাসিডোনিয়া, মাদাগাস্কার, মাল্টা, মন্টিনিগ্রো, পাকিস্তান, পোল্যান্ড, সাইউব কোরিয়া, সাইউব কোরিয়া, রোপনিয়ার কোরিয়া , সিঙ্গাপুর, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া  , থাইল্যান্ড, তুরস্ক, ইউক্রেন) জাতিসংঘের পাঁচটি আঞ্চলিক গ্রুপের প্রতিনিধিত্ব করে।
তার রেজোলিউশনে, সাধারণ পরিষদ সদস্য রাষ্ট্র, জাতিসংঘ ব্যবস্থার সংস্থা এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংস্থা, স্টেকহোল্ডারদের পাশাপাশি নাগরিক সমাজের এনজিওগুলিকে দাতব্য প্রতিষ্ঠানকে উত্সাহিত করে একটি উপযুক্ত পদ্ধতিতে আন্তর্জাতিক দাতব্য দিবস উদযাপনের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে, শিক্ষা এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রম সহ।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া।।

Share This
Categories
গল্প প্রবন্ধ

জানুন, শ্রীজগন্নাথের কপালে কিভাবে এল হীরে : রাধাবিনোদিনী বিন্তি বণিক।

রায়সেনগড়ের রাজার প্রধান সেনাপতি ছিলেন শ্রীঅঙ্গদ । তিনি আবার সম্পর্কে রাজার খুড়াও(কাকা) হতেন । অঙ্গদ তেমন ভক্ত  ছিলেন না । তবে তাঁর পত্নী অত্যন্ত ভক্তিমতী ছিলেন । অঙ্গদ  পত্নীকে ভীষণ ভালোবাসতেন । বলতে গেলে পত্নী-অন্ত-প্রাণ ছিলেন । পত্নীর সুখের জন্য তিনি যে কোন কিছু করতে রাজি । একদিন অঙ্গদের ভবনে পত্নীর গুরুদেব এলেন । সেসময় অঙ্গদ ছিলেন না । গৃহে ফিরে তিনি দেখলেন গুরুদেবের সেবায় ব্যস্ত  তাঁর পত্নী । মুহুর্তেই ক্রোধিত হলেন অঙ্গদ । পত্নীকে  তিরস্কার করে বসলেন এই বলে যে, অন্দরমহলে কীভাবে একজন বাইরের পুরুষ প্রবেশ করলো ! ভক্তিমতী রমণী প্রথমে বোঝাবার চেষ্টা করলেন , গুরু সম্পর্কে এমন প্রাকৃত, হীন ভাবনা মনে আনতে নেই । কিন্তু, পত্নীপ্রেমিক অঙ্গদ কিছুতেই কিছু বুঝতে চান না । ভীষণ ঈর্ষা হয়েছে মনে তাঁর । শান্ত প্রকৃতির, সুশীলা রমণী অত্যন্ত কষ্ট পেলেন যখন অঙ্গদ দু-চার কথা সেই গুরুদেবকেও শুনিয়ে দিলেন । রমণী স্থির করলেন, যে গৃহে আমার গুরুর অপমান হল, সেই গৃহে আমি আর থাকবোই না । কিন্তু , আমার স্বামী তো আমায় গৃহের বাইরে যেতেই দেবেন না । চারিদিকে প্রহরী । তাহলে আমি বরং চিরকালের জন্য পৃথিবী থেকে বিদায় নেব ।
মুখে কিছু পত্নী বলেন না, কিন্তু দিনের পর দিন অনাহারে থাকতে লাগলেন । প্রাণ ত্যাগের অভিসন্ধি  নিয়ে । অবশেষে রুগ্না, ক্লীষ্টা হলেন । অসুস্থ হয়ে পড়লেন । বৈদ্য দেখে শুনে বুঝলেন দীর্ঘদিন অনাহারে থাকার ফল এ । অঙ্গদ যখন জানলেন সব বৃত্তান্ত, ব্যথিত হলেন খুব । নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা হল তাঁর । হাজার হোক  পত্নীই যে তাঁর জগৎ । পত্নীকেই নিজের দেবীরূপে দেখতেন তিনি । অভিমান ভুলে তাই মানিনী পত্নীর মান ভাঙ্গাবার চেষ্টা করলেন; বললেন, “তুমি আহার করো । অন্ন মুখে তোলো । কথা দিচ্ছি যা বলবে তাই আমি মাথা পেতে নেব । শুধু তুমি সুস্থ হয়ে আবার আগের মতন হও । খাবার খাও । আমি তোমায় চাই শুধু । আমি ভুল করেছি, মেনে নিচ্ছি । তুমি আমায় ক্ষমা করে দাও দয়া করে । যা ইচ্ছে আদেশ করো ওগো অভিমানিনী ! দেখো, আমি শুনি কিনা ।” অঙ্গদের কাতর প্রার্থনায় হেসে ফেললেন রমণী , বললেন, “বেশ, তবে এতদিন যা বলেছি, কিন্তু করতে চাওনি , এবার সেটাই করতে হবে তোমাকে। যদি রাজী থাকো তবেই অন্ন মুখে নেব ।” অঙ্গদ—- “তুমি একবার শুধু বলে দেখো । আমি তো কথা দিয়েছি যে শুনবো ।” পত্নী—- “তবে তুমি আমার শ্রীগুরুদেবের থেকে কৃষ্ণমন্ত্রে দীক্ষা নাও ।” অঙ্গদ এখন তাতেই রাজী । এতদিন শোনেননি, কিন্তু, এবার যে তার প্রিয়ার প্রাণসংশয় দেখা দিয়েছে । অগত্যা রাজী না হয়ে উপায় নেই যে !
শ্রীগুরুদেবকে আমন্ত্রণ করে আনানো হল অঙ্গদের ভবনে । অঙ্গদ ক্ষমাপ্রার্থনা করে দীক্ষা নিলেন । পত্নীও যার-পর-নাই আনন্দিতা হলেন স্বামীর সিদ্ধান্তে । গুরুদেব ছিলেন সদ্ গুরু । ফলে তাঁর কৃপা-আশীর্বাদে প্রকৃতই ভাবান্তর ঘটে গেল অঙ্গদের অন্তরে । মন্ত্রজপ করতে করতে, কৃষ্ণনাম নিতে নিতে প্রকৃত বৈষ্ণবে পরিণত হলেন তিনি । এখন তাঁর আমূল পরিবর্তন ঘটে গেছে চরিত্রে । এই অঙ্গদ অন্য এক মানুষ এখন । শ্রীরাধার প্রেমকে স্মরণ করতে-করতে শ্রীকৃষ্ণের শ্রীজগন্নাথ-রূপে পরিবর্তিত হবার কথা ভেবে তিনি তন্ময় হয়ে যান । নিজের অন্তরের পত্নীপ্রেমকে অনুভব করে শ্রীকৃষ্ণের অন্তরে শ্রীরাধার প্রতি যে প্রেম—- তা অনুধাবন করার চেষ্টা করে নয়নাশ্রুতে বক্ষ ভাসান তিনি । শ্রীকৃষ্ণের প্রেমবিগলিত রূপ সেই ‘শ্রীজগন্নাথ’-এর প্রতি অদ্ভুত আকর্ষণ তিনি অনুভব করেন । প্রবল প্রেম জাগ্রত হয় জগন্নাথের জন্য ভক্ত শ্রীঅঙ্গদের হৃদয়ে । ভক্ত যখন আপন হৃদমন্দিরে ভগবানকে বসিয়ে নিজের নয়নবারি দিয়ে ভগবানের শ্রীচরণ ধৌত করে দেন আবেগে, আবেশে, ভক্তিতে, প্রেমে —-তখন ভগবানেরও আসন টলে, তিনিও সেই ভক্তের জন্য আকুল হন । তিনি যে ভক্তাধীন —-ভক্তের অধীন ! ভক্তের ভালোবাসায় বাঁধা পড়তে তাঁর বড় ভালো লাগে । বা বলা ভালো ,  তিনি আপনা হতেই বাঁধা পড়ে যান ভক্তের প্রেমরজ্জুতে ।
অঙ্গদ নয়ন জলে ভাসেন আর নিজের পত্নীকে কৃতজ্ঞতা জানান এই বলে যে, “প্রিয়া ! তোমার কাছে আমি জন্ম-জন্মান্তরের কৃতজ্ঞতা পাশে আবদ্ধ হয়েছি । তুমি যদি আমায় কৃষ্ণভজনের এমন সুন্দর পথের পথিক না করতে, তবে তো আমি এত আনন্দের, এত সুখের সন্ধানই পেতাম না ! সত্যিই তুমি আমার প্রথম গুরু গো, প্রিয়ে !” পত্নী শুনে বলেন—- “না, না, এ তুমি কী বলছো ! বলো না এমন ! তোমার পূর্ব জন্মের সুকৃতি বশেই তুমি যা পাবার পেয়েছে । আমার কী সাধ্য বলো ! আমি তো নিমিত্ত মাত্র ! আর কখনো এমন বলো না যে আমি গুরু !” তখন অঙ্গদ বলেন কেন তুমি কী শোনোনি যে—-
“স্ত্রী কিংবা পুত্র কিংবা পশু কেনে নয় ।
কৃষ্ণে মতি যাহা হৈতে সেই গুরু হয় ।।
বিপ্র কিংবা ন্যাসী কিংবা শূদ্র কেনে নয় ।
যেই কৃষ্ণতত্ত্ববেত্তা সেই গুরু হয় ।।”
অর্থাৎ, স্ত্রী, পুত্র বা পশু —-সে যেই হোক না কেন, যার থেকে কৃষ্ণে মতি আসে তিনিই গুরু । আবার ব্রাহ্মণ, সন্ন্যাসী কিংবা শূদ্র বলে কোন কথা নেই —- কৃষ্ণতত্ত্ববেত্তা হলেই তিনি গুরুপদবাচ্য হন ।
এরপর পতি-পত্নীতে তাঁদের শ্রীগুরুদেবের চরণ স্মরণ করেন । প্রকৃতই তো গুরুদেব সদ্গুরু একজন । তাইতো তাঁর প্রদত্ত মন্ত্রে এত তেজ, এত কৃপা যে সেই মন্ত্র জপতে জপতে হৃদয়ে কৃষ্ণপ্রেম জাগ্রত হয়েছে । অঙ্গদ গভীরভাবে শ্রীকৃষ্ণভজনে ডুবলেন । রাজবিষয় বা জাগতিক ব্যাপার আর তাঁর ভালো লাগে না । যেতে হয় যান রাজসভায় । গ্রাম্য কথায় আর মন বসে না ।  মাঝে মধ্যেই অনুপস্থিত থাকেন সভায় ।
একদিন অঙ্গদ বাড়ীতে আছেন, এমন সময় রাজপেয়াদা হাজির । রাজা মহাশয় ডেকে পাঠিয়েছেন, যুদ্ধে যেতে হবে । যুদ্ধের কথা শুনেই অঙ্গদ তৎক্ষণাৎ ‘না’ বলে দিলেন, বললেন—- “না, না, যুদ্ধ-টুদ্ধ আমার দ্বারা আর হবে না । জীবহিংসা আমি করতে পারবো না । তুমি গিয়ে রাজাকে বলে দাও ।” অঙ্গদ যে আর আগের মানুষ নেই—- সে খবর তো রাজা অনেক দিন আগেই পেয়েছেন, অনুভবও করেছেন তাঁর আচরণে । কিন্তু, এখন যে তাঁকে ভীষণভাবে প্রয়োজন রাজার । যুদ্ধে-অভিজ্ঞ অঙ্গদ ছাড়া জয় অনিশ্চিত । রাজা তাই পেয়াদাকে দিয়ে খবর পাঠালেন—- জীবহিংসা করে প্রাণনাশ তাঁকে করতে হবে না নিজের হাতে । কিন্তু, সেনাদের উপযুক্ত পরিচালনার জন্য তাঁর উপস্থিতি একান্ত আবশ্যক । না হলে এ যাত্রায় রক্ষা নেই । রাজ্যের পরাজয় নিশ্চিত । এভাবে অঙ্গদ নিজের দায়িত্ব এড়াতে কোন মতেই পারেন না । রাজ-আজ্ঞা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতেই হবে ।
অগত্যা অঙ্গদ সবদিক বিচার বিবেচনা করে যুদ্ধে উপস্থিত থাকলেন । যুদ্ধ-বিজ্ঞ অঙ্গদের সুনিপুণ পরিচালন গুণে শত্রু রাজা হার স্বীকার করে নিজের সব সম্পদ অর্পণ করে দিয়ে সে যাত্রায় পার পেলেন । যুদ্ধের নিয়মানুযায়ী  নিজের মাথার পাগড়িটিও দিয়ে দিলেন । সেই পাগড়িতে ছিল নির্মল সুন্দর সুদুর্লভ এক মহা-মূল্যবান হীরকখণ্ডক । নজরে পড়লো সেই হীরে অঙ্গদের । দেখামাত্র তাঁর মনে হল, এই হীরে শুধু বহু মূল্যের  নয়, অতি দুর্লভও । চাইলে মূল্য দিয়েও এমন হীরে লব্ধ করা যায় না । নাহ্, এই হীরের যোগ্য অধিকারী তো কেবল শ্রীজগন্নাথ ! আহা ! এ হীরে যদি তাঁর মস্তকে বা কপালে থাকতো তবে কেমন হত ! না, না, এ হীরে আমি বরং নিজের হাতে জগন্নাথকে দিয়ে আসবো ।
অঙ্গদ দেশে ফিরে লুটে আনা সব সম্পদ রাজাকে দিয়ে দিলেন, কেবল দিলেন না সেই অত্যাশ্চর্য অদ্ভুত সুন্দর হীরেটি । নিজের কাছে গোপনে যত্ন করে রেখে দিলেন জগন্নাথকে দিতে যাবেন বলে । এদিকে রাজা লোক মারফৎ জানতে পারলেন যে, পরাজিত রাজার পাগড়িতে হীরে বসানো ছিল, যা সেনাপতি  অঙ্গদ নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন ।
রাজধন আত্মসাৎ করেছে জেনে রাজার ভীষণ ক্রোধ হল । কিন্তু, যেহেতু অঙ্গদ তাঁর সম্পর্কে খুড়ো হন, এবং মনে মনে শ্রদ্ধা করেন তিনি তাঁকে , তাই শাস্তি না দিয়ে, কেবল হীরেটি ভালো মুখে ফেরৎ চাইলেন । কিন্তু, অঙ্গদ দিতে নারাজ । রাজা বারংবার চেয়েও যখন পেলেন না, তখন তাঁর (অঙ্গদ) ঘরবাড়ি ঘেরাও করলেন । তবু ভয় পেলেন না অঙ্গদ সাধু । মনে মনে ভাবলেন প্রাণ যায় যাক তিনি জগন্নাথকে হীরে পরিয়েই ছাড়বেন । আর তাই বেশ কয়েকজন ঘোড়সওয়ার নিয়ে নিজের পাগড়িতে সযত্নে হীরেটিকে লুকিয়ে রেখে যাত্রা করলেন পুরুষোত্তম ক্ষেত্রের দিকে । রাজা এহেন চাতুরীর কথা শুনে পাঁ‍চশ সেপাহীসহ  পাত্রকে পাঠিয়ে ধাওয়া করালেন অঙ্গদের পিছনে । বললেন, “অঙ্গদকে প্রাণে প্রথমেই মারবে না । হীরে চাইবে কেবল । হীরে যদি ভালো কথায় দিয়ে দেয় তো ভালো । হীরে নিয়ে ওকে ছেড়ে চলে আসবে । কিন্তু, যদি তা না দিতে চায়, তবে মুণ্ডচ্ছেদ করে ফেলবে । ওই হীরে আমার চাই, যার জন্য অঙ্গদ এতখানি সাহসী হয়ে উঠলো যে আমার বিরুদ্ধে যেতেও  কুণ্ঠাবোধ করলো না !”
যথারীতি সেনারা একসময় নাগাল পেয়ে গেল অঙ্গদ ও তাঁর ঘোড়সওয়ারদের । সেনারা রাজার হুকুমের কথা জানালো, হীরে না  দিলে এবার কিন্তু মস্তক ছেদন করা হবে । অঙ্গদ ভাবলেন এ তো মহা ফ্যাসাদে পড়া গেল ! কী করা যায় এখন  ! আর তো তবে জগন্নাথের কাছ অবধি পৌঁছানোই গেল না । হীরে দেবো কেমন করে ! তিনি বললেন, “আমি হীরে দিয়ে দেবো তোমাদের । কিন্তু, তার আগে আমি পাশের এই পুষ্করিণীতে স্নান-পূজা করে আসি । সেনারা রাজি হয়ে গেল  । অঙ্গদ স্নান করে উঠে জলে দাঁড়িয়েই শ্রীজগন্নাথদেবের উদ্দেশ্যে অনেক স্তব-স্তুতি করলেন, পূজা দিলেন নিজের মত করে । এবার হীরাখানি সৈন্যদের ফিরিয়ে দেবার সময় । তিনি হীরা হাতে নিয়ে নয়ন বন্ধ করে শ্রীজগন্নাথের চরণ কমল ধ্যান করে মনে মনে নিবেদন করলেন, “হে পুরুষোত্তম জগন্নাথ ! আমি অতি অভাগা যে এই হীরা তোমার কপালে পরাতে চেয়েও পেরে উঠলাম না । এ হীরা কী অন্যের কপালে সাজে ! এ যে একমাত্র তোমাকেই মানায় । কত ভালোবেসে তোমার জন্য আনলাম, কিন্তু পারলাম না দিতে । হে জগন্নাথ আমি তোমাকে উদ্দেশ্য করেই এই হীরা জলে ফেলে দিচ্ছি । এবার তোমার যদি মন চায়, তবে তুমি গ্রহণ করো । আর, আমার কিছু বলার নেই । এই নিবেদন শুধু করলাম । যা ভালো মনে হয় করো ।” —এরপর হীরা নিয়ে অগাধ জলের মধ্যে ফেলে দিলেন অঙ্গদ । বক্ষ তাঁর নয়নের বারিতে ভেসে যাচ্ছে তখন । কন্ঠ রোধ হয়ে আসছে । দেহে বল নেই । অতি অবসন্ন মনে হচ্ছে নিজেকে । এবার সেনারা তাঁকে নিয়ে যা ইচ্ছে করে করুক । মুণ্ড ছেদন করলে করুকগে যাক ।
এদিকে এতক্ষণ সেনারা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে অঙ্গদের স্নান-পূজা সব নজরে রাখছিল, যাতে সকলের চোখকে ফাঁকি দিয়ে সুযোগ বুঝে সেনাপতি অঙ্গদ পালাতে না পারেন । কিন্তু, তিনি যে এমন কাণ্ড করে বসবে তা কেউ স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি । যখন অঙ্গদ ছুঁড়ে ফেললেন হীরাটি, সকলে একসঙ্গে ‘হায় ! হায় ! এ কী করলেন’ বলে সমস্বরে চীৎকার করে উঠেছিল । আর তারপরই সকলে একসাথে জলে ঝাঁপ দেয় হীরা পাবার লোভে । তারা ভাবলো, অঙ্গদ যায় যাক, হীরা যদি হাতে আসে, অনেক লাভ হবে ।
অঙ্গদ যাত্রা করলেন শ্রীক্ষেত্রের দিকে । ওদিকে  নদীর পাক উঠিয়ে অনেক তল্লাশি করেও হীরার দেখা মিলল না । কেউই পেল না হীরা । রাজাকে জানানো হল । রাজা সব শুনে মৌন হয়ে গেলেন । অনুভব করলেন হীরা জগন্নাথের কপালে পড়াবে বলে অঙ্গদের তীব্র বাসনার কথা ।
ওদিকে পুরুষোত্তম ক্ষেত্রে জগন্নাথের মন্দিরে ঘটলো এক আশ্চর্য ব্যাপার । পাণ্ডারা হঠাৎ দেখলেন জগন্নাথের কপালে একটি বৃহদাকার অপূর্ব সুন্দর হীরকখণ্ড জ্বলজ্বল করছে । তাঁরা ভেবে কুলকিনারা পেলেন না । এই হীরা এল কোথা থেকে !  শিঙ্গারের সময় তো তাঁকে পরানো হয়নি । অদ্ভুত কাণ্ড ! মন্দিরে এ নিয়ে শোরগোল পড়ে গেল । জগন্নাথ  রাত্রে প্রধান পাণ্ডাকে স্বপ্নাদেশ দিলেন—- “আমার কপালের হীরক যে দিয়েছে —-সে আমার ভক্ত ‘অঙ্গদ’ । তার পদার্পণ হবে কাল শ্রীক্ষেত্রে । তোমরা যত্ন করে তাকে দর্শন করাবে সব ।” পরদিন প্রভাত হতেই সন্ধান শুরু হয়ে গেল অঙ্গদ নামের কোন ভক্ত মন্দিরে প্রবেশ করলো কিনা । অপেক্ষার অবসান হল একসময় । অঙ্গদ এলেন জগন্নাথ দর্শনে । পাণ্ডারা তাঁকে যত্ন করে জগন্নাথ দর্শন করালেন । হ্যাঁ, দেখলেন জগন্নাথের মুখে মৃদু-মৃদু হাসি আর মস্তকে ভক্তের ভালবাসার চিহ্ন সেই হীরা—- যা ভগবান সাদরে গ্রহণ করেছেন । অঙ্গদের অন্তর তখন আকুতি ভরা প্রেমে জরজর থরথর । জগন্নাথ তাহলে তাঁর উপহার স্বীকার করেছেন ! এমন যে সৌভাগ্য সত্যই হবে তা তো বিশ্বাসই করতে পারছেন না  অঙ্গদ !
এখনও পর্যন্ত জগন্নাথের বিশেষ বিশেষ শিঙ্গারের দিনে সেই হীরা পরানো হয় তাঁকে।
————–নম্রানতা
রাধাবিনোদিনী বিন্তি বণিক

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ রিভিউ

আজ আন্তর্জাতিক সিডও দিবস, জানুন দিনটি কেন পালিত হয় এবং গুরুত্ব।

 

আজ আন্তর্জাতিক সিডও দিবস। শতাব্দীব্যাপী নারী আন্দোলনের অভিযাত্রা ও বিংশ শতাব্দীর মানবাধিকার আন্দোলনের অনুকূল পরিবেশে জাতিসংঘ নারী আন্দোলনের অগ্রগতির নানা উদ্যোগের ফসল ‘সিডও সনদ’। এই সনদ প্রণয়ন বা কার্যকর করার লক্ষ্যে বিভিন্ন ওয়ার্কিং গ্রুপ নারী জাতির মর্যাদাবিষয়ক কমিশন ও সাধারণ পরিষদের মধ্যে পাঁচ বছর ধরে বিভিন্ন সময় আলোচনা ও পর্যালোচনার পর গৃহীত হয় ‘সিডও সনদ’। বিভিন্ন রাষ্ট্র সনদে স্বাক্ষর শুরু করে ১৯৮০ সালে।

নারীর বিরুদ্ধে সকল প্রকার বৈষম্য দূর করার কনভেনশন (CEDAW) হল একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি যা 1979 সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক গৃহীত হয়।  নারীর অধিকারের একটি আন্তর্জাতিক বিল হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, এটি 3 সেপ্টেম্বর 1981 সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং 189টি রাজ্য এটি অনুমোদন করেছে।  কনভেনশনটি অনুসমর্থনকারী পঞ্চাশটিরও বেশি দেশ কিছু ঘোষণা, সংরক্ষণ এবং আপত্তির সাপেক্ষে তা করেছে, যার মধ্যে 38টি দেশ রয়েছে যারা প্রয়োগকারী নিবন্ধ 29 প্রত্যাখ্যান করেছে, যা কনভেনশনের ব্যাখ্যা বা প্রয়োগ সম্পর্কিত বিরোধ নিষ্পত্তির উপায়গুলিকে সম্বোধন করে।  অস্ট্রেলিয়ার ঘোষণায় তার ফেডারেল সাংবিধানিক ব্যবস্থার ফলে কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা উল্লেখ করা হয়েছে।  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পালাও স্বাক্ষর করেছে, কিন্তু চুক্তিটি অনুমোদন করেনি।  হলি সি, ইরান, সোমালিয়া, সুদান এবং টোঙ্গা CEDAW-তে স্বাক্ষরকারী নয়।

 

জাতিসংঘের উদ্যোগে প্রতিবছর ‘সিডও’ দিবস পালিত হয়। নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য বিলোপ সনদ Convention on the Elimination of All forms of Discrimination(CEDAW)।নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে ১৯৭৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয়  Convention on the Elimination of All Forms of Discrimination against Women, সংক্ষেপে যা  CEDAW হিসেবে পরিচিত। বাংলায় এটিকে চিহ্নিত করা হয় ‘নারীর প্রতি সব বৈষম্য বিলোপ সনদ (সিডও)’। ১৯৭৯ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক সনদটি গৃহীত হলেও ১৯৮১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর থেকে তা কার্যকর করা শুরু হয়।

 

মহিলাদের বিরুদ্ধে বৈষম্য দূরীকরণ সংক্রান্ত কমিটি, সাধারণত ‘CEDAW কমিটি’ হিসাবে সংক্ষেপে, জাতিসংঘের (UN) চুক্তি সংস্থা যা নারীর বিরুদ্ধে সকল প্রকার বৈষম্য দূরীকরণের কনভেনশন (CEDAW) তত্ত্বাবধান করে।  এই কমিটির গঠনটি CEDAW-এর 17 অনুচ্ছেদে রূপরেখা দেওয়া হয়েছিল, যা কমিটির নিয়ম, উদ্দেশ্য এবং পরিচালনা পদ্ধতিও প্রতিষ্ঠা করে।  CEDAW-তে বর্ণিত নিয়মগুলি অনুসরণ করা হচ্ছে তা নিশ্চিত করতে কমিটি তার কার্যকালের পুরো বছর ধরে একাধিক সেশন করেছে।  সময়ের সাথে সাথে কমিটির অনুশীলনগুলি নারীর অধিকার সংক্রান্ত বিষয়গুলির উপর বর্ধিত ফোকাসের কারণে বিকশিত হয়েছে।

 

CEDAW কার্যকর হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় 20টি অনুমোদন পাওয়ার পর 3 সেপ্টেম্বর 1981-এ মহিলাদের বিরুদ্ধে বৈষম্য দূরীকরণ সংক্রান্ত কমিটি গঠিত হয়েছিল৷  CEDAW-এর 17 অনুচ্ছেদ কমিটি গঠন করেছে যাতে CEDAW-এর বিধানগুলি যে দেশগুলি স্বাক্ষর করেছে এবং এর দ্বারা আবদ্ধ হতে সম্মত হয়েছে তাদের দ্বারা অনুসরণ করা হয়েছে।  কমিটির প্রথম নিয়মিত অধিবেশন 18 থেকে 22 অক্টোবর 1982 পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। এই অধিবেশনে কমিটির প্রথম কর্মকর্তারা সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দ্বারা নির্বাচিত হন, মঙ্গোলিয়ার মিসেস এল. ইদার চেয়ারপারসন হন।  নির্বাচিত অন্য কর্মকর্তারা হলেন তিনজন ভাইস-চেয়ারপারসন: কানাডার এম. ক্যারন, যুগোস্লাভিয়ার জেড ইলিক এবং রুয়ান্ডার এল. মুকাইরাঙ্গা।  কমিটির প্রতিনিধি হিসেবে গিয়ানার ডি.পি. বার্নার্ড নির্বাচিত চূড়ান্ত কর্মকর্তা ছিলেন।  এই অধিবেশন চলাকালীন, কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে তার প্রক্রিয়ার নিয়মগুলি গ্রহণ করার জন্য অনুমোদন করেছে৷

 

এর মূল বিষয় হচ্ছে, নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ বা দূরীকরণ। যেখানে রাজনৈতিক, সামাজিক, পারিবারিক সব ক্ষেত্রে নারীর মানবাধিকার নিশ্চিত করার বিষয়টি স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। এটি আইনগত ভিত্তি নিয়ে একটি কনভেনশন আকারে রূপ লাভ করেছে। এ সনদটি মূলত তিনটি প্রেক্ষিত থেকে সমস্যা সমাধানের নির্দেশ দেয়। ক. নারীর নাগরিক অধিকার ও আইনি সমতা নিশ্চিতকরণ, যার মাধ্যমে নারী গণজীবনে ও সমাজে পুরুষের সমপর্যায়ে সব সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। খ. নারীর প্রজনন ভূমিকাকে সামাজিক ভূমিকা হিসেবে গণ্য করা, যাতে প্রজননের কারণে নারীকে কোণঠাসা না করে এ ক্ষেত্রে নারীর অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়া। গ. আচার-প্রথা, সংস্কার ও বিধি যা নারীর জেন্ডার ভূমিকা নির্ধারণ করে, তা বাতিল করা। পরিবার ও সমাজে শুধু ‘মানুষ’ হিসেবে নারীকে গণ্য করা এবং পুরুষের ক্ষমতাভিত্তিতে তার অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। সিডও একমাত্র আন্তর্জাতিক চুক্তি বা সনদ, যা শুধু নারী সংক্রান্ত।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

আজ বিশ্ব নারিকেল দিবস, জানুন দিনটি কেন পালিত হয় এবং দিনটি পালনের গুরুত্ব।

নারকেল একটি অর্থকারী ফসল। এর উপকার, গুণাগুণ হিসেবের বাহিরে। জীবন জীবিকায় এর ভূমিকা আনস্বীকার্য। যে কোন দেশের অর্থনীতিটে নারকেল এক গুরুত্বপূর্ণ আবদান রাখে। এ এমন এক গাছ যার শুরু থেকে শেষ প্রতিটি অঙ্গই কাজেলগে কোনোনা কোনো ক্ষেত্রে। তাই এর গুরুত্ব বোঝাতে প্রতি বছর ২ সেপ্টেম্বর বিশ্ব জুড়ে পালিত হয় বিশ্ব নারকেল দিবস। এই দিনটা পালন করার মূল উদ্দেশ্য হল নারকেলের গুরুত্ব সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা এবং এর উপকারিতা বোঝানো।

 

নারকেল নামটি পর্তুগিজ শব্দ কোকো থেকে এসেছে। যার অর্থ মাথা বা মাথার খুলি এবং বলা বয় যে এটি ইন্দো-মালয় অঞ্চলের কোথও উদ্ভুত হয়েছে। নারকেল গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Cocos Nucifera। ৮২ ফুট বা ২৫ মিটার উচ্চতা হয়ে থাকে এই গাছের। বিশ্বব্যাপী নারকেল সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত হয় তিনটি দেশে। যথা ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপিন। সংস্কৃত ভাষায় নারকেল গাছটিকে কল্পবৃক্ষ বা স্বর্গের গাছ হিসেবেও উল্লেখ করা হয়।

 

নারকেল হচ্ছে পৃথিবীর অন্যতম ভার্সেটাইল ফল, এর একাধিক উপকারিতা আছে। এটা যেমন খাওয়া যায়, তেমনই আবার এর তেল রান্না থেকে ত্বক পরিচর্চায় ব্যবহার করা যায়। এই দিনটি সাধারণত এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় রাষ্ট্রগুলিতে বিশেষ ভাবে পালিত হয়। কারণ এই অঞ্চলগুলিতে অধিক পরিমাণে নারকেল উৎপাদন হয়ে থাকে। নারকেলের স্বাস্থ্যোপযোগিতা ও বাণিজ্যিক লাভ সম্পর্কে জন সচেতনতা গড়ে তোলার জন্য বিশ্ব নারকেল দিবস পালিত হয়। ২০০৯ সালে এই দিনটি প্রথম পালিত হয়। তার পর থেকে প্রতিবছর ২ সেপ্টেম্বর বিশ্ব নারকেল দিবস পালিত হয়ে আসছে।

এশিয়া প্যাসিফিক কোকোনাট কমিউনিটি (APCC) ২০০৯ সালে এই দিবসটি প্রথম উদযাপন করে। তারপর থেকে, প্রতি বছর UN-ESCAP (United nations economic and social commission for Asia Pacific) এবং APCC একত্রে এই দিবসটি উদযাপন করে। দিবসটি পালনের লক্ষ্য হল, এই ফলের প্রচার এবং এর স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।

আমরা জানি,  বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফলগুলির মধ্যে একটি হল নারকেল, পাশপাশি এই ফলের বহুমুখী প্রকৃতি এটিকে বাকি ফলের থেকে আলাদা করে তোলে। নারকেল বা ডাব আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারি, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। নারকেলের জল, দুধ এবং তেল আমাদের স্বাস্থ্য, ত্বক, চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারি। ডাব বা নারকেল দিয়ে বিভিন্ন সুস্বাদু খাবারও তৈরি করা যায়। নারকেল দিবসে, নারকেল থেকে তৈরি বিভিন্ন প্রকার মিষ্টান্ন, নারকেল গাছ থেকে তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী এই প্রদর্শনী তে রাখা হয়।

সারা বিশ্বে প্রায় অনেকগুলো দেশেই নারকেলের চাষ হয়। তার মধ্যে, মইক্রোনেসিয়া, ফিজি,ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া,থাইল্যান্ড,ভারত,ব্রাজিল, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপিন্স অন্যতম। এর মধ্যে সর্বাধিক নারকেল উৎপাদন হয়, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, ফিলিপিন্স, শ্রীলঙ্কা, ও ব্রিজেলে।
এটা বিশ্বের একটি অন্যতম দরকারি গাছ এবং এটিকে প্রায়ই “জীবনের গাছ” হিসাবে উল্লেখ করা হয়। এটি মানুষ খাদ্য, জ্বালানী, প্রসাধনী, ভেষজ ঔষধ সরবরাহ, দালান নির্মান সামগ্রী হিসেবে ব্যবহার করে এবং এর রয়েছে আরও নানাবিধ ব্যবহার।

নারকেল চাষের উপর ভারতের প্রায় কোটি মানুষের জীবিকা নির্ভর করে।  ভারতের কেরল,অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক এবং তামিলনাড়ু তে সর্বাধিক নারকেলের চাষ দেখা যায়। দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ নারকেল এখানেই চাষ হয়। সমুদ্রের পার্শবর্তী স্থানে,লবনাক্ত মাটিতেই নারকেলের চাষ ভালোভাবে হয়।
নারকেল এমন একটি ফল, যা পৃথিবীর সব প্রান্তের মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয়। এই গাছের কাঠ থেকে শুরু করে, পাতা, নারিকেলের ছোবড়া, জল, দুধ, মালা, সবটাই ব্যবহৃত হয় কোনও না কোনও কাজে। তাই অর্থনীতিতে নারিকেলের ভূমিকা যে অসীম তা কিন্তু অস্বীকার করা যায় না।

একটি নারকেল গাছে প্রত্যেক বছর ৭০-১০০ টি নারকেল উৎপন্ন হয়। ভারতবর্ষে প্রায় দেড় কোটি গাছ শুধুমাত্র কেরলেই আছে ,যার কারণে কেরল কে কোকোনাট ল্যান্ডও বলা হয়।

 

ডাব বা নারকেলের জল কয়েকটি উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা যাক—

 

নারকেল একটি সুস্বাদু পুষ্টিকর ফল। এই ফল কাঁচাও খাওয়া যায়, এবং এর থেকে বিভিন্ন ধরনের খাবার ও তৈরি হয়,যেমন কেক, লাড্ডু, বরফি ইত্যাদি। তাছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, পুজো তে, এবং রান্নাতেও ব্যাবহার করা হয়।

নারকেলের পাতা জ্বালানির কাজে ব্যবহার করা হয়,নারকেলের পাতা থেকে তৈরি হয় ঝাঁটা যা সর্বত্রই ব্যবহার করা হয়।
নারকেলের ছোবা থেকে তৈরি হয় দড়ি,সোফা, পাদানি এবং বিভিন্ন ব্যাবহারিক জিনিস।

নারকেল গাছ ও জ্বালানির কাজে ব্যবহার করা হয় এবং নারকেল গাছ চেরাই করে ছোটখাটো আসবাবপত্র ও তৈরি করা হয়।

নারকেল থেকে তৈরি হয় নারকেল তেল যা আমাদের চুলের জন্য উপযোগী।  যার ব্যবহার ভারতে এবং অন্যান্য দেশেও রয়েছে।
নারকেলের জল আমাদের শরীরের পক্ষে প্রচুর মাত্রায় উপযোগী।

নারকেলের জলে রয়েছে গ্লুকোজ, ভিটামিন সি,পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম যা আমাদের শরীরের ব্লাড প্রেসার কে নিয়ন্ত্রণে সহায়তা প্রদান করে।

কোলেস্টল এবং ফ্যাট ফ্রী হবার দরুন এটি হৃদয়ের পক্ষেও লাভদায়ক। এর মধ্যে থাকা আন্টি-অক্সিডেন্টের গুন শরীরের রক্ত সঞ্চালন কে সক্রিয় রাখে। এবং এটি শরীরের ওজন কমানোর ক্ষেত্রেও কার্যকর।

নারকেলের জল আমাদের শরীরের থাইরয়েড হরমোন কে নিয়ন্ত্রণে রাখে।

নারকেলের জল আমাদের কিডনির পক্ষেও উপযোগী, যদি প্রতিদিন নারকেলের জল খাওয়া যায় তাহলে কিডনিতে পাথর হবার সম্ভাবনা থাকে না।

তাছাড়া নারকেলের জল রূপচর্চার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয়।

 

নারকেল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়—

 

নিয়মিত নারকেল খাওয়া ওজন কমাতে সাহায্য করে। কারণ এতে অনেক ফাইবার থাকে।
ত্বকের প্রাকৃতিক ঔজ্জ্বল্য বজায় রাখে- নারকেল বা ডাবের জল এই জল পান করলে বলিরেখা ও ফাইন লাইন কমানো যায় এবং ত্বকের টানটান ভাব বজায় থাকে। ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে নারকেল। নিয়মিত নারিকেল খেলে ত্বক কোমল ও সুন্দর হয়। এছাড়াও নারকেল খেলে ত্বকে বলিরেখা পড়ে না।

হাড় মজবুত করে- ডাবের জল হাড় মজবুত এবং ঘনত্ব বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এর ফলে অল্প বয়সে অস্টিওপোরোসিস, আর্থ্রাইটিস, অস্টিওপেনিয়া ইত্যাদি হাড়ের রোগের সমস্যা রোধ করা যায়।
অ্যাসিডিটি প্রতিরোধ করে- ডাবের জল শরীরের পিএইচ স্তরে ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি অ্যাসিডিটি ও বুক জ্বালার হাত থেকে স্বস্তি দেয়।
চুলের টনিকের কাজ করে- চুল ঝরার সমস্যা থাকলে ডাবের জল পান করা শুরু করে দিন।
হজম শক্তি উন্নত করে- ডাবের জল প্রাকৃতিক উপায়ে সতেজতা প্রদান করে। পাশাপাশি শরীরে ব্লটিং ও গ্যাসের জন্য দায়ী সোডিয়ামের পরিমাণও কম করে। ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি পাচনতন্ত্রকেও মজবুত করে।
ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করে, হজম শক্তি উন্নত করার পাশাপাশি ডাবের জল শরীররে হাইড্রেট রাখে। এটি শরীরের হারিয়ে যাওয়া পুষ্টি উপাদানগুলিকে পুনঃস্থাপিত করে।
নিয়মিত নারকেল খেলে স্তন ক্যানসার, কোলন ক্যানসারসহ অন্যান্য ক্যানসারেরও ঝুঁকি কমে।
ডাবের জল পান করলে শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা কমে ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে নারকেল।
নারকেলের দুধ  হেপাটাইটিস সি, জন্ডিস ও লিভারের বিভিন্ন অসুখ সারাতে নারকেল দুধ কার্যকরী।
নিয়মিত নারকেল খেলে মাথায় খুশকি ও শুষ্কতা দূর হয়। এছাড়াও নারকেল তেল ব্যবহারে চুল পড়া বন্ধ হয়।
নারকেলে বেশি ক্যালোরি থাকায় তা দ্রুত শরীরে শক্তি যোগায়। তাই কাজের মাঝে ক্লান্তি আসলে বা হালকা খিদে পেলে নারকেল খেলে তাৎক্ষণিক অ্যানার্জি বাড়বে।
নারকেলে থাকে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট। যা কোলেস্টেরল বাড়ায় না বরং আথেরোসক্লেরোসিসের ঝুঁকি কমিয়ে হার্ট ভালো রাখতে সহায়তা করে।হৃদযন্ত্র ভালো রাখে নারকেল। এটি রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে হৃদরোগের সমস্যা দূর করে।
নারকেল রক্তের ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এ কারণে ডায়াবেটিস রোগীরাও পরিমিত নারকেল খেতে পারেন। এতে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

নারকেল সম্পর্কে তথ্য—

(ক) ‘coconut’ শব্দটি ‘nut’ এবং পর্তুগিজ শব্দ ‘coco’ এর সমন্বয়ে উদ্ভূত।
(খ) বিশ্বে নারকেল উৎপাদনের ৯০ শতাংশই আসে এশিয়া থেকে।
(গ) ইন্দোনেশিয়া, Philippines, ব্রাজিল এবং শ্রীলঙ্কার পাশাপাশি ভারত বিশ্বের অন্যতম বড় রপ্তানিকারক দেশ।

(ঘ) নারকেল পুরোপুরি পরিপক্ক হতে এক বছর সময় লাগে।

(ঙ) একটি নারকেল গাছ প্রতি বছর কমকরে প্রায় ১০০টি নারকেল দেয়।
তাই বর্তমানে স্বাস্থ্য সচেতন ব্যক্তিরা ডাবের জলকে অধিক গুরুত্ব দিচ্ছেন। এই জল ত্বক, হৃদয়, চুল, রক্তচাপ এবং হজমের পক্ষে বিশেষ উপকারী। সমীক্ষায় জানা গিয়েছে যে, স্পোর্টস ড্রিঙ্কসের তুলনায় এটি অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর, কম ক্যালরি সম্পন্ন। তাই আজ এই বিশেষ দিনটিতে ডাব বা নারকেলের জল কয়েকটি উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো ।
ভারতসহ মোট ১৮টি দেশ নিয়ে এপিসিসি সংস্থাটি গঠিত। এ দিবসের মূল লক্ষ্য হচ্ছে নারকেল শিল্পের উন্নতির মাধ্যমে একটি দেশের অর্থ ব্যবস্থাকে মজবুত করা। নারকেলের মূল্য ও উপকারিতা সম্পর্কে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতে পালিত হয় দিনটি। খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধ, প্রসাধনী, নির্মাণ সামগ্রী ও অন্যান্য নানা কারণে ব্যবহৃত হয় নারকেল। এই নারকেল গাছকে প্রায়শই ‘Tree Of Life’ নামে উল্লেখ করা হয়ে থাকে। এশিয়া প্যাসিফিক কোকোনাট কমিউনিটি (এপিসিসি) নারকেলের মূল্য ও সমাজে তাদের প্রভাবের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এই দিনটির প্রচার শুরু করে।

 

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও  বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

লে-লাদাখ্‌ : ভ্রমণ পিপাসু মানুষের কছে এক স্বর্গ ভূমি।

ঘুরতে কে না ভালোবাসে। বিশেষ করে বাঙালিরা সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়ে ভ্রমনের নেশায়। কেউ পাহাড়, কেউ সমুদ্র আবার কেউ প্রাচীন ঐতিহাসিক স্থান ভালোবাসে ভ্রমণ করতে। প্রকৃতি কত কিছুই না আমাদের জন্য সাজিয়ে রেখেছে। কতটুকুই বা আমরা দেখেছি। এ বিশাল পৃথিবীতে আমরা অনেক কিছুই দেখিনি। তবে সোশ্যাল মিডিয়ার দুনিয়ায় আজ গোটা পৃথিবীটা হাতের মুঠোয়় এলেও প্রকৃতিকে চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ করা এ এক আলাদা রোমাঞ্চ, আলাদা অনুভূতি যার রেষ হৃদয়ের মনিকোঠায় থেকে যায় চিরকাল।। তাইতো আজও মানুষ বেরিয়ে পড়়ে প্রকৃতির কে গায়ে মেখে  রোমাঞ্চিত হওয়ার নেশায়। কেউ চায় বিদেশে ভ্রমণে, আবার কেউ চায় দেশের বিভিন্ন স্থান ভ্রমণে। এমনি এক ভ্রমণ এর জায়গা হলো  লে-লাদাখ্‌ ।

 

জন্মু ও কাশ্মীরকে আমরা ভারতের ভূস্বর্গ হিসাবে জানি । ভূস্বর্গ দর্শনের স্পৃহা অনেক দিনের । লে-লাদাখ্‌ ভ্রমণ ঐ স্পৃহারই  অন্যতম অঙ্গ ।
রাজ্যের একটি জেলা ছিল লে-লাদাখ্‌ ।  এখন লে-লাদাখ্‌ কেন্দ্রিয়শাসিত অঞ্চল । বর্গায়তনে হিসাব করলে লে-লাদাখ্‌ অনেক বড় । কিন্তু লোকসংখ্যার বসবাস খুব কম । সর্বসাকুল্যে আনুমানিক তিন-লক্ষ মানুষের বসবাস । স্থানীয় বাসিন্দা ছাড়া প্রচুর সামরিক ও আধা-সামরিক বাহিনী কর্মরত । এছাড়া রয়েছে দেশী ও বিদেশী ভ্রমণ-পিপাসু মানুষের অহরহ আনাগোনা ।
লে-লাদাখের মানুষ ভীষণ গরীব । তাঁদের উপায়ের জায়গাটাও খুব নড়বড়ে । বলা চলে সীমিত । লে-লাদাখের জনবসতির ত্রিশ শতাংশ মানুষ ক্ষেতি জমির উপর নির্ভরশীল ।  ক্ষেতি জমি বলতে যব, জোয়ার, বাজরা, গম, চাষ । পাহাড়ি কোল ঘেঁষা  জমিতে চাষের দৃশ্য সর্বত্র । ঋতু অনুযায়ী বিভিন্ন চাষবাস । চাষের দৃশ্য নিঃসন্দেহে হৃদয়কাড়া । পয়ত্রিশ শতাংশ মানুষ রুটিরোজগারের জন্য পশুপালনের উপর নির্ভরশীল । পশুপালন বলতে লোমে ভরা ছাগল, গরু, ভেড়া, ইত্যাদি । আর অবশিষ্ট পয়ত্রিশ শতাংশ পর্যটকদের উপর নির্ভরশীল ।
বছরের প্রায় অর্ধেক সময় লে-লাদাখ্‌ বরফে ঢাকা থাকে । মে মাসের শেষে বরফ গলতে শুরু করে এবং সেই সময় থেকে বরফ সরিয়ে যাতায়াতের রাস্তা তৈরী করা শুরু  হয় । টুরিষ্টদের তখন মূলত লে-লাদাখের বিভিন্ন স্থানে ভ্রণের সুযোগ ঘটে । নভেম্বরের প্রথম  সপ্তাহ পর্যন্ত লে-লাদাখ্‌ ভ্রমণ চালু থাকে  !
স্থানীয় বাসিন্দারা প্রায় ছ-মাসের মতো জ্বালানী, খাবার এবং অন্যান্য নিত্য আবশ্যকীয় সামগ্রী মজুত রাখে । কেননা বরফ পড়ার সময় কোনো যানবাহন জোটে না । চুপচাপ নিজেদের এলাকার মধ্যে কাটাতে হয় । যারজন্য লে-লাদাখ্‌বাসীদের আগেভাগেই প্রয়োজনীয় খাবার, জ্বালানী, কাপড়-চোপড় ইত্যাদির ব্যবস্থা করাটা প্রত্যেকের কাছে একরকম বাধ্যতামূলক । জ্বালানী বলতে কাঠের টুকরো, ঘুটে (গোবর থেকে তৈরী), ইত্যাদি ।
সবচেয়ে দুঃখজনক, পুরো লে-লাদাখ্‌ এলাকা বাদ দিলে কোথাও বিশ্ববিদ্যালয় চোখে পড়েনি । বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হলে ছাত্র-ছাত্রীদের শ্রীনগর বা দেশের অন্যত্র শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে  যেতে হয় ।
দিল্লী থেকে খুব সকালের ফ্লাইটে লে । লে এয়ারপোর্ট খুব ছোট । পাশেই সামরিক ছাউনী । ফ্লাইট থেকে নামার সাথে সাথে ভীষণ দমকা হাওয়া ও কন্‌কনে ঠাণ্ডা । ফলে ঠাণ্ডা দমকা হাওয়া থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য আশ্রয় নিতে হয়েছিল এয়ারপোর্টে পাশের অফিস ঘরে । একটা কথা প্রথমেই বলে রাখি, লে-লাদাখের চারিদিকে পাহাড় । তবে পাহাড়ের একটিই বৈশিষ্ট্য, পাহাড় গুলিতে কোনো সবুজ ঘাস নেই । ন্যাড়া । আর দিনের বেশীর ভাগ সময় পাহাড়ের মাথায় সাদা বরফের আনাগোনা । যদিও ভোরবেলায় সাদা বরফের পরিমাণ বেশী ।
তারপর লে এয়ারপোর্ট থেকে হোটেল । হোটেলের নাম “গাওয়া লিঙ ইন্টারন্যাশনাল” । হোটেলে যাওয়ার পথে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা হাওয়া । ফলে চারিদিকে কন্‌কনে শীতল ঠাণ্ডা । হোটেলে ঢুকেও ঠাণ্ডার হাত থেকে রেহাই নেই । সময়টা মে মাসের শেষদিক । নিজের রাজ্যের জেলায় প্রচণ্ড গরম । আর “লে”তে  সম্পূর্ণটাই উল্টো । হাড় হিম করা ঠাণ্ডা । বাইরে তাপমাত্রা মাইনাস ছয় । মাথার উপরে সূর্য আসার পর অল্প খানিকক্ষণের জন্য রৌদ্র । আকাশে রৌদ্র ওঠার পর লে’র অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্য, মনকে খুশীর জোয়ারে ভরিয়ে দেয় ! তারপর দুপুরে মধ্যাহ্ন ভোজের পর “লে” মার্কেটে ঘরাঘুরি । উল্লেখ থাকে যে, ভ্রমণের উদ্দেশে পাহাড়ে ঘোরাঘুরির আগে একদিন বিশ্রাম নেওয়ার তাগিদে “লে”তে ঘুরে বেড়ানো । হোটেল থেকে হাঁটা পথে মার্কেট । তাই দুপুরে খাওয়ার পর “লে” মার্কেটে এবং আশপাশ অঞ্চলে ঘোরাঘুরি । সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে মানুষের আনাগোনা  কমে যায় । রাস্তাঘাট জনশূন্য হতে থাকে । হোটেলের পাশে কয়েকটি  ঝাউগাছ । ঝাউগাছ ভেদ করে দেখা যাচ্ছে ন্যাড়া পাহাড় ! পাহাড়ের মাথায় বরফ । রাত্রিতে দুটো লেপেও ঠাণ্ডা দমন করা কঠিন । এত ঠাণ্ডা,যাকে বলে হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডা  !
পরেরদিন কারুতে  (Karu) এলাম । কাছেই মিলিটারি স্টেশন । সেখানকার জওয়ানরা ভীষণ উপকাস্রী । কারুর কাছে পাহাড় ঘেঁষে জলাশয় । সেখান দিয়ে জল ছুটে চলেছে নীচের দিকে । তারপর এলাম ভগবান বুদ্ধের মন্দির “”হেমিস গোম্পা (HEMIS  GOMPA) । এখানে অনেক বৌদ্ধরা থাকেন । ভগবান বুদ্ধের সেবায় তাঁরা ব্রত । এখানে উল্লেখযোগ্য, লে-লাদাখে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মানুষের সংখ্যা বেশী । “হেমিস গোম্পা”  লে-লাদাখে অন্যতম বৌদ্ধ-মন্দির । অল্প বয়সের বৌদ্ধরা মন্দিরে শাস্ত্র পাঠে তৎপর । বৌদ্ধ-ভিক্ষুরা পর্যটকদের সাথে মেলামেশায় যথেষ্ট আন্তরিক ! টুরিষ্টদের সমস্তরকম সহযোগিতায় তাঁরা যত্নবান ।
এবার আসছি তাংসি  (Tangtse) গাঁওয়ের কথায় । চতুর্দিকে পাহাড় । মধ্যেখানে জলাশয় । চারিদিকে অনেক গাঁও । তার পাশেই ক্ষেতি জমি । জলাশয়ের ধার ঘেঁষা রাস্তা । ঐ রাস্তা দিয়েই পৌঁছালাম তাংসি’তে । তাংসিতে একটা মজার ব্যাপার, কোনো টুরিষ্ট  রাত্রিযাপন করতে চাইলে জলাশইয়ের পাশে “তাঁবু”  খাটানোতে থাকতে পারে । তাঁবুতে থাকাটা একটা আলাদা অনুভূতির অভিজ্ঞতা । প্রচুর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা তাংসি অঞ্চল । অন্যদিকে ঠাণ্ডা ততোধিক ! ।
বরফ কেটে রাস্তা । আমাদের সঙ্গে স্করপিয়ো গাড়ি । স্থানীয় ড্রাইভার । খুব গম্ভীর । ড্রাইভারের মুখে হাসি অধরা । আসলে তার ধাতে “হাসি” নেই । কিন্তু গাড়ি চালানোতে প্রচণ্ড শৃঙ্খলাপরায়ন । কোনো কথায় তার মনোযোগ নেই কোনোকথার উত্তর নেই । তার একটাই স্থির লক্ষ্য, বরফের পাশ দিয়ে খুব ধীরগতিতে অথচ সন্তর্পণে গাড়ি চালিয়ে খরদুংলা (khardung La) পৌঁছানো ।  যতদুর চোখ যায় শুধু সাদা বরফ । কোথায় নদী-নালা, কোথায় গাছ-পালা কিছুই বোঝার উপায় নেই । বরফাচ্ছন্ন খরদুংলা । পৃথিবীর সর্বোচ্চ মোটরগাড়ির রোড  (Highest Motorable Road) । ১৮৩৮০ ফুট উচ্চতা । খরদুংলা পৌঁছানোর সাথে সাথে প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট । অত উঁচুতে শ্বাসকষ্টের সমস্যা । খরদুংলায় কোনো বসতি নেই । শুধুমাত্র ভারতীয় জওয়ানেরা কর্মরত । সেখানকার মিলিটারি ব্যারাকে কয়েকজন জওয়ান কর্তব্যরত । তাঁদের কাছে রয়েছে শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যার ক্ষেত্রে জরুরি গ্যাসের ব্যবস্থা । আমাদের সাথে একই লাইনে আরও কয়েকটা পর্যটকদের গাড়ি  খরদুংলা পৌঁছেছে । তাঁদের মধ্যে কয়েকজন পর্যটককে অক্সিজেন সাপোর্ট দেওয়ার জন্য গ্যাসের প্রয়োজন । মিলিটারিরা দেখলাম হন্তদন্ত হয়ে গ্যাসের সিলিণ্ডার নিয়ে সেইসব পর্যটকদের সেবা শুশ্রূষা করছেন । অন্যদিকে  আমি গাড়ি থেকে নেমে হাঁটাহাঁটি করার দরুন অনেকটা আরামবোধ করলাম । সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার, একজন পরম হিতাকাক্ষ্মী মিলিটারি জওয়ান আমার অবস্থাটা অনুধাবন করে এক কাপ লিকার চা এগিয়ে ধরে  বিনীত স্বরে বললেন, “স্যার, এক কাপ লিকার চা খান । স্বাভাবিক সুস্থ বোধ করবেন ।“ খোঁজ নিয়ে জানলাম, জওয়ানের ঘর নদীয়া জেলার তেহট্টে ।  মিলিটারি ভদ্রলোকের দেওয়া চা খেয়ে সত্যিই অনেকটা হাল্কা বোধ করলাম । তারপর সমস্ত মিলিটারিদের উদ্দেশে স্যালুট জানালাম । এরপর খরদুংলা নিয়ে লেখা ( যেমন কত  মিটার উঁচু, জেলার নাম,  ইত্যাদি) পোস্টারের সামনে দাঁড়িয়ে ফটো তুললাম । সেখানেই লেখা রয়েছে খরদুংলা হচ্ছে পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে উঁচু মোটর যানের রোড, ১৮৩৮০ ফুট উচ্চতা ।
এরপর স্করপিয়ো গাড়ি ছুটলো নুব্রা (Nubra)  ভ্যালির দিকে । নুব্রা ভ্যালিতে যখন আমরা পৌঁছালাম, তখন সূর্য ডুবে গেছে । এখানে উল্লেখ করা প্রনিধানযোগ্য যে, নুব্রা একটা তহসিল  (Tehsil) । সেখানেই দিকসিত (Diksit)  গ্রাম । গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে শায়ক (Shayok) নদী ।  দিকসিত গ্রামে সর্বসাকুল্যে এক হাজার মানুষের বসবাস এবং গোটা নুব্রা ভ্যালিতে বাইশ হাজার মানুষের বসবাস । নুব্রা ভ্যালিতে আরও একট জায়গা জনপ্রিয় গাঁও, তুরতুক । তুরতুকের কাছে টেগোর গ্রামে জামসখ্যাং নামে একট প্রাসাদ রয়েছে । তা ছাড়া নুব্রা ভ্যালি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর । তবে  এখানকার মানুষ খুব গরীব । নুব্রা ভ্যালিতে কৃষি ফসল বলতে গম আর বার্লি । নুব্রা ভ্যালির মানুষ মোমো খেতে ভালবাসেন । শিক্ষিত হওয়ার ক্ষেত্রে  কলেজ পর্যন্ত । নুব্রা ভ্যালিতে একমাত্র বালির দর্শন মেলে । চারিদিকে পাহাড় । মধ্যখানে মরুভূমি । মরুভূমি শুরু হওয়ার  মুখে জলের স্রোতে পা ভেজানোর মজাই আলাদা । মরুভূমির পাশেই শায়ক নদী । শায়ক নদী দিসকিত গ্রাম থেকে ১২ কিমি দূরে । ঐখানে “শায়ক” ও  “সিয়াচেন”  নদীর সংযোগস্থল । জায়গাটা আবার সিয়াচেন ও পাকিস্থানের কাছাকাছি । আগেই বলেছি নুব্রা ভ্যালির প্রাকৃতিক দৃশ্য মনোমুগ্ধকর । আবার অন্যদিকে রাত্রির দিকসিত ভারী সুন্দর । বিজলী বাতি রয়েছে । বিজলী বাতি থাকলে কীহবে, একটু বাদে বাদেই লোডশেডিং । বিদ্যুতের টালবাহানায় স্থানীয় মানুষ নাজেহাল । অধিকাংশ  মানুষ বৌদ্ধ ধর্মালম্বী । এলাকার সর্বত্র মিলিটারিদের আনাগোনা । নুব্রা ভ্যালীর মানুষজন খুব পরিশ্রমী । আবার ততোধিক তাঁদের সরল জীবনযাপন । পরিবারের স্বামী-স্ত্রী উভয়েই উপার্জনের প্রতি ভীষণভাবে যত্নশীল ।
তারপর………?
তারপর  প্যাংগং লেক (Pangong Tso) । প্যাংগং লেক হিমালয়ের একটি এন্ডোরহেইক লেক বা হ্রদ (endorheic lake) ।  পৃথিবী বিখ্যাত এই  প্যাংগং লেক ।  লাদাখ্‌ ও চীনের রুতোগ প্রদেশের সীমান্তে ৪৩৫০ মি (১৪২৭০ ফুট) উচ্চতায় প্যাংগং লেক অবস্থিত । এই হ্রদ ১৩৪ কিমি লম্বা যার মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ তিব্বতে অবস্থিত । এই লেকের পূর্ব দিকটা তিব্বতের অন্তর্গত ও পশ্চিম দিকটি ভারতের । লেকে যাওয়ার উদ্দেশে কিছু শুকনো খাবার এবং যথেষ্ট পরিমাণে খাবারের জল সঙ্গে নিলাম । নুব্রার হোটেল থেকে বলেই দিয়েছিল, রাস্তাঘাটে খাবারের দোকান নেই বললেই চলে । তবে ইদানীং কোথাও কোথাও দোকান চালু হয়েছে । যাই হোক এবার আসছি লেকের জল সম্বন্ধে । লেকের দিকে আমরা ধাবিত হওয়ার সময় গম্ভীর ড্রাইভার বলল, “চুপচাপ বসে থাকুন ।  রাস্তা ভীষণ ঝুঁকিবহুল । যেকোনো সময় ধস নামতে পারে ।  গাড়ির জানালা বন্ধ রাখা বাঞ্ছনীয় । কেননা ধস নামলে পাহাড়ের পাথরগুলি জানালা ভেদ করে শরীরে আঘাত করতে পারে । সুতরাং লেকে যাওয়ার  সফর খুব ঝুঁকিবহুল । গাড়ি চলাকালীন কেউ বেশী নড়াচড়া করবেন না ।“
অবশেষে আমাদের লক্ষ্য অনুযায়ী ঠিক সময়ে পৌঁছালাম প্যাংগং লেক । অনেক দূর প্যাংগং লেক । নুব্রা থেকে খালসার হয়ে প্যাংগং লেকের দূরত্ব প্রায় ৮৫ কিমি । পৌঁছানোর পর আমাদের মধ্যে সীমাহীন আনন্দ । আনন্দোচ্ছ্বাসে মাতোয়ারা । প্রকৃতির অপূর্ব ভাণ্ডার ।  চারিদিকে পাহাড় । পাহাড়ে সবুজের লেশমাত্র নেই । উপরে রৌদ্রোজ্জ্বল  নীল আকাশ । ঝকঝকে নীল আকাশে খণ্ড খণ্ড,  টুকরো টুকরো সাদা মেঘ ।  নীচে লেক । লেকের জলও তেমনি । সমুদ্র-নীল জল ।  জলের রঙ একেক সময় বা একেক জায়গায় একেক রকম ! সারা লেকে আছে শুধু রঙের বৈচিত্র !  রঙিন জল দেখতে ভীষণ সুন্দর । লেকের জল দেখে প্রাণ জুড়ে যায় । শোনা যায়, অনেক সিনেমার স্যুটিং নাকি লেকের ধারে হয়েছে । তার মধ্যে থ্রি-ইডিয়েট অন্যতম । তাঁবুতে থাকার ব্যবস্থা অভিনব । রাত্রিতে আমাদের থাকার কোনো পরিকল্পনা না থাকায় আমরা ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা শুরু করলাম ।  সন্ধ্যার আগে ফেরার তাগাদা । যদিও সন্ধ্যার সময় লেকের ভিউ অন্যরকম । তাঁবুতে যারা রাত্রিযাপন করবেন, তাঁদের পক্ষে লেকের রাত্রির শোভা দর্শন যথেষ্ট আনন্দের । কিন্তু আমাদের সন্ধ্যা নামার আগে লেক থেকে বিদায় নিতে হবে । সূর্য অস্ত যাওয়ার মনোরম দৃশ্য দেখে আমরা অভিভূত । তারপর মন না চাইলেও বিপদের সম্ভাবনাকে দূরে রাখার জন্য আমরা সূর্য অস্ত যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফেরার উদ্দেশে রওনা দিলাম ।
ফেরবার পথে পৌঁছালাম চ্যাংলা Chang La)  । চ্যাংলার উচ্চতা ১৭৬৮৮ ফুট । পৃথিবীতে দ্বিতীয় মোটর যানের রোড হিসাবে চ্যাংলা’কে দাবি করা হয় । সেখানে একমাত্র কয়েকটি মিলিটারি ক্যাম্প ছাড়া মানুষজন, দোকানপাট  চোখে পড়ল না  ।  আছে শুধু পাগল করা মন-মাতানো সাদা বরফ । আর সর্বক্ষণ মনে হচ্ছে মাথার উপরের আকাশটা অনেক কাছে ।  সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার, সেটা হচ্ছে পর্যটকদের নির্বিঘ্নে ভ্রমণে মিলিটারিদের তৎপরতা !
এই প্রসঙ্গে আরও উল্লেখযোগ্য,  কারু (Karu) মিলিটারি জওয়ানদের ব্যবহার !  এক কথায়, অতি উত্তম । নিঃসন্দেহে অতুলনীয় । কারু শহরে পুরোটাই গরীব মানুষের এলাকা । কারু শহরে এছাড়া শান্তি স্তুপো বৌদ্ধ মন্দিরে ও থিক্সে  (Thiksay) মোনাস্টারিতে ভ্রমণ অবর্ণনীয় ।
ফিরে এলাম “লে” মার্কেটে । স্থানীয় মোমো খাবার ভীষণ জনপ্রিয় । যব, বাজরা, গম, ইত্যাদি দিয়ে স্থানীয় খাবার তৈরীর প্রক্রিয়াটা অন্যরকম । তাঁরা বাঙালীদের মতো ভেতো বাঙালী নয় । তাঁদের খুব সাদাসিধে জীবন । শিক্ষার হার খুব কম । স্বাস্থ্য ব্যবস্থা  তথৈবচ । পুরো “লে”-“লাদাখে” সরকারি স্তরের দৃষ্টিভঙ্গি আশু প্রয়োজন ।

সংক্ষেপে লে-লাদাখ্‌ এই  পর্যন্ত ।

 

কলমে : দিলীপ রায়
—————-০—————–

Share This