Categories
প্রবন্ধ

আজ ১৬ আগস্ট, ইতিহাসের আজকের এই দিনে যা ঘটেছিল।

আজ ১৬ আগস্ট। ইতিহাস ঘেটে দেখা যায় বছরের প্রতিটি দিনে ঘটেছে অনেক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। আসুন আজকের দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় একনজরে দেখে নিই।  ইতিহাসের আজকের এই দিনে কী কী ঘটেছিল, কে কে জন্ম নিয়েছিলেন ও মৃত্যুবরণ করেছিলেন——-

 

আজ যাদের জন্মদিন—-

১৯০৪ – ওয়েন্ডেল মেরেডিথ স্ট্যানলি, মার্কিন রসায়নবিদ এবং ভাইরাসবিদ।

১৯১৩ – মেনাখেম বেগিন, ইসরায়েলের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ।

১৯৩০ – ইংরেজ কবি ট্রেড হিউজ।

১৯৪৬ – মাসউদ বারজানি, ইরাকে স্বায়ত্তশাসিত কুর্দিশ সরকারের রাষ্ট্রপতি এবং কুর্দিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রধান নেতা।

১৯৫০ – জেফ থমসন, সাবেক ও বিখ্যাত অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট তারকা।

১৯৫৪ – জেমস ক্যামেরন, একাডেমি পুরস্কার বিজয়ী কানাডীয় চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক ও চিত্রনাট্য লেখক।

১৯৫৮ – ম্যাডোনা, আমেরিকান গায়ক-গীতিকার, প্রযোজক, অভিনেত্রী, এবং পরিচালক।

১৯৬০ – টিমোথি হাটন, আমেরিকান অভিনেতা, প্রযোজক ও পরিচালক।

১৯৬২ – স্টিভ কারেল, আমেরিকান অভিনেতা, পরিচালক, প্রযোজক এবং চিত্রনাট্যকার।

১৯৬২ – আইয়ুব বাচ্চু, বাংলাদেশী সঙ্গীত শিল্পী।

১৯৬৬ – তারানা হালিম, বাংলাদেশী টেলিভিশন অভিনেত্রী, নাট্য পরিচালক, লেখক, আইনজীবী এবং সমাজকর্মী।

১৯৬৮ – অরবিন্দ কেজরীওয়াল, ভারতীয় রাজনীতিবিদ, সমাজকর্মী, ভারতীয় রাজস্ব সেবার প্রাক্তন কর্মকর্তা, দিল্লির সপ্তম মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির প্রতিষ্ঠাতা।

১৯৭০ – সাইফ আলি খান, ভারতীয় অভিনেতা এবং প্রযোজক।

১৯৭০ – মনীষা কৈরালা, ভারতীয় অভিনেত্রী।

১৯৭৪ – শিবনারায়ণ চন্দরপল, সাবেক ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটার।

১৯৮০ – শাহিদা বেগম, কক্সবাজারের শ্রেষ্ঠ সহকারী প্রাথমিক শিক্ষিকা।

১৯৯৭ – গ্রেসন চ্যান্স, আমেরিকান সংগীতশিল্পী।

১৮২১ – আর্থার কেলি, ব্রিটিশ গণিতবিদ।

১৮৪৫ – গাব্রিয়েল লিপমান, ফরাসি-লুক্সেমবার্গীয় পদার্থবিজ্ঞানী এবং উদ্ভাবক।

১৮৬০ – মার্টিন হক, ইংরেজ শৌখিন ক্রিকেট তারকা ও অধিনায়ক।

১৮৮৮ – টমাস এডওয়ার্ড লরেন্স, ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ব বিশারদ, সামরিক নীতি নির্ধারক ও লেখক।

১৮৯২ – মার্কিন কার্টুনিস্ট অটো মেসমার।

১৮৯৫ – অস্ট্রিয়ান অভিনেত্রী লিয়ান হেইড।

 

ইতিহাসের পাতায় আজকের দিনের ঘটনাবলী—-

২০০৮ – গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে পুরুষদের ৫০ মিটার ও মহিলাদের ৮০০ মিটার ফ্রিস্টাইল সাঁতার প্রতিযোগিতা শেষ হয়। মহিলাদের ৮০০ মিটার ফ্রিস্টাইল সাঁতার প্রতিযোগিতার ফাইনালে যুক্তরাজ্যের রেবেকা অ্যাডলিংটন হিটে তার করা নতুন অলিম্পিক রেকর্ড আবার ভেঙ্গে ৮:১৪.১০ সময়ে নতুন অলিম্পিক তথা নতুন বিশ্ব রেকর্ড গড়েন।

১৯০৪ – নিউ ইয়র্কে গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল স্টেশনের নির্মাণ কাজ শুরু।

১৯৪৬ – মুসলীম লীগ ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে পালনের সময় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা কলকাতা দাঙ্গা শুরু হয়।

১৯৬০ – সাইপ্রাস দ্বীপ স্বাধীন হয়।

১৯৭২ – বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় উগান্ডা।

১৯৭৫ – সৌদি আরব, সুদান কর্তৃক বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান।

১৮২৫ – বলিভিয়ার প্রজাতন্ত্র ঘোষণা।

১৮৪৩ – ব্রাহ্মধর্মের প্রচার এবং তত্ত্ববোধিনী সভার সভ্যদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষার উদ্দেশ্যে অক্ষয়কুমার দত্তের সম্পাদনায় তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা প্রথম প্রকাশিত হয়।

১৮৫৮ – ব্রিটেনের রানি ভিক্টোরিয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট জেমস বুচাননকে টেলিগ্রাফ পাঠান।

১৮৬৭ – কার্ল মার্কস ‘ক্যাপিটাল’ গ্রন্থের প্রথম খণ্ড লেখা শেষ করেন।

১৮৯৮ -এডউইন প্রেসকট রোলার কোস্টারের প্যাটেন্ট পান।

১৬৮৭ – জব চার্নকের সঙ্গে মোগল শাসনকর্তাদের চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে ইংরেজরা সূতানুটিতে অস্ত্রাগার ও পোতাশ্রয় নির্মাণের অনুমতি লাভ করে।

 

এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন যারা—-

২০০১ – ভারতীয় পদার্থবিদ ও আবহাওয়াবিজ্ঞানী আন্না মনি।

২০০২ – আবু নিদাল, ফিলিস্তিনি ফাতাহ: বিপ্লব পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা।

২০০৩ – ইদি আমিন, উগান্ডার প্রয়াত সামরিক স্বৈরশাসক।

২০১৬ – জোয়াও হ্যাভেলাঞ্জ, ব্রাজিলীয় ব্যবসায়ী ও ক্রীড়া কর্মকর্তা।

২০১৮ – ভারতরত্ন সম্মানে সম্মানিত অটল বিহারী বাজপেয়ী, ভারতের প্রাক্তন (দশম) প্রধানমন্ত্রী।

২০১৯ – পিটার ফন্ডা, মার্কিন অভিনেতা, পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার।

২০২০ – চেতন চৌহান ভারতের প্রথিতযশা সাবেক আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার।

১৯৪৮ – বেব রুথ, মার্কিন বেসবল খেলোয়াড়।

১৯৪৯ – মার্গারেট মিচেল, আমেরিকান লেখিকা ও সাংবাদিক।

১৯৫৭ – আর্ভিং ল্যাংমিউয়র, মার্কিন রসায়নবিজ্ঞানী ও পদার্থবিজ্ঞানী।

১৯৬১ – মৌলভী আবদুল হক, পাকিস্তানি পণ্ডিত এবং ভাষাতত্ত্ববিদ।

১৯৭৭ – এলভিস প্রেসলি, কিংবদন্তিতুল্য মার্কিন রক্‌ সঙ্গীত শিল্পী।

১৯৭৯ – জন জর্জ ডিফেনবাকার, কানাডার রাজনীতিবিদ এবং ১৩তম প্রধানমন্ত্রী।

১৯৯৭ – সুলতান আহমদ নানুপুরী, বাংলাদেশি দেওবন্দি ইসলামি পণ্ডিত ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব।

১৯৯৭ – নুসরাত ফাতেহ আলী খান, পাকিস্তানের কাওয়ালি সঙ্গীত শিল্পী।

১৮৮৬ – শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস, ঊনবিংশ শতকের এক প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালি যোগসাধক, দার্শনিক ও ধর্মগুরু।

১৮৮৮ – জন পেম্বারটন, আমেরিকান ঔষধ প্রস্তুতকারক।

১৮৯৯ – রবার্ট বুনসেন, জার্মান রসায়নবিদ।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

আজ ১৫ আগস্ট, জানুন ভারতের স্বাধীনতা দিবসের ইতিহাস।

১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট ভারতে ২০০ বছরের ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে, শুরু হয় স্বাধীন ভারতের কালযাত্রা, ভারতের ইতিহাসে সূচনা হয় আরেক নতুন অধ্যায়ের।

স্বাধীনতা দিবস হল ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের একটি জাতীয় দিবস। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারত ব্রিটিশ রাজশক্তির শাসনকর্তৃত্ব থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল। সেই ঘটনাটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য প্রতি বছর ১৫অগাস্ট তারিখটি ভারতে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে প্রধানত অহিংস, অসহযোগ ও আইন অমান্য আন্দোলন এবং বিভিন্ন চরমপন্থী গুপ্ত রাজনৈতিক সমিতির সহিংস আন্দোলনের পথে পরিচালিত এক দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের পর ভারত স্বাধীনতা অর্জন করেছিল।

 

স্বাধীনতার ঠিক পূর্ব-মুহুর্তে ব্রিটিশ ভারতীয় সাম্রাজ্য ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজিত হয় এবং তার ফলে ভারত ও পাকিস্তান অধিরাজ্যের জন্ম ঘটে। দেশভাগের সময় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটে। অনেক মানুষ প্রাণ হারান এবং ১ কোটি ৫০ লক্ষেরও বেশি মানুষ বাস্তুহারা হন। পরাধীন ভারতবর্ষ ভেঙে গঠিত হয় দুটি দেশ ভারত ও পাকিস্তান, ১৪ই আগস্ট মধ্যরাতে বিভক্ত হয়ে যায় দুটি দেশ, ভারতে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করা হয় ১৫ই আগস্ট (পাকিস্তানে স্বাধীনতা দিবস পালিত হয় ১৪ই আগষ্ট)।১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট জওহরলাল নেহেরু ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ গ্রহণের পর দিল্লির লাল কেল্লার লাহোরি গেটের উপর ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। তদবধি প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী লাল কেল্লায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন এবং জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন।

দিনটিকে স্মরণে রেখে প্রতি বছর ১৫ই আগস্ট সারা ভারতবর্ষ জুড়ে পালিত হয় স্বাধীনতার উৎসব, সেজে ওঠে গ্রাম, শহর, নগর, গলি, রাস্তাঘাট, স্কুল, কলেজ, অফিস, আদালত, কলকারখানা সমস্ত কিছু। ভারতের প্রতিটি কোণা থেকে জাতীয় সঙ্গীতের সুরেলা আওয়াজ ভেসে আসে,

জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা!

পঞ্জাব সিন্ধু গুজরাট মরাঠা দ্রাবিড় উৎকল বঙ্গ

বিন্ধ্য হিমাচল যমুনা গঙ্গা উচ্ছলজলধিতরঙ্গ

তব শুভ নামে জাগে, তব শুভ আশিষ মাগে,

গাহে তব জয়গাথা।

জনগণমঙ্গলদায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা!

জয় হে, জয় হে, জয় হে, জয় জয় জয় জয় হে।।

ভারতে স্বাধীনতা দিবসের ইতিহাস:-

ভারতে ব্রিটিশ শাসনের সূচনা হয়েছিল ১৭৫৭ সালে পলাশির যুদ্ধে ব্রিটিশের জয়লাভের মধ্য দিয়ে, এরপর থেকে ভারতে শুরু হয় ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আধিপত্য। ভারতে কোম্পানি বিরোধী বিদ্রোহের পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন সরাসরি ব্রিটিশ শাসন দ্বারা পরিবর্তিত হওয়ার আগে পর্যন্ত প্রায় দীর্ঘ ১০০ বছর ধরে বিরাজমান ছিল।

এরপর থেকেই ভারতে শুরু হয়ে যায় সরাসরি ব্রিটিশ শাসন, ইংরেজদের অত্যাচার, শোষণ নিপীড়ন। এসবের বিরুদ্ধে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী জি-র নেতৃত্বে ভারতের জাতীয়তাবাদী ও স্বাধীনতা সংগ্রামী আন্দোলনের সূচনা হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সমকালীন সময়ে। যিনি ভারতীয়দের শান্তিপূর্ণ ও অহিংস নীতিতে আন্দোলনের পথে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন।

১৭শ শতাব্দীতে ইউরোপীয় বণিকরা ভারতীয় উপমহাদেশে বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করতে শুরু করে। ১৮শ শতাব্দীতে অপ্রতিরোধ্য সামরিক শক্তির বলে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি স্থানীয় রাজ্যগুলিকে পরাজিত করে ভারতে নিজেদের শাসন কায়েম করে। ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহের পর ভারত শাসন আইন (১৮৫৮) পাস হয় এবং ব্রিটিশ রাজশক্তি ভারতের প্রত্যক্ষ শাসনভার নিজের হাতে তুলে নেয়। পরবর্তী কয়েক দশকে ধীরে ধীরে ভারতে সুশীল সমাজ গড়ে ওঠে। এই গড়ে ওঠার পিছনে অন্যতম প্রধান চালিকা শক্তি ছিল ১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটিশ সরকার মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার প্রভৃতি শাসনতান্ত্রিক সংস্কারে উদ্যোগী হয়। সেই সঙ্গে দমনমূলক রাওলাট আইনও পাস হয়। এর ফলে ভারতীয় আন্দোলনকারীরা স্বায়ত্ত্বশাসনের দাবি জানাতে থাকেন। এই সময় ভারতীয় জনসাধারণের অসন্তোষ সারা দেশব্যাপী অহিংস অসহযোগ ও আইন অমান্য আন্দোলনের জন্ম দেয়। এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মোহনদাস করমচন্দ গান্ধী (মহাত্মা গান্ধী)।
১৯৩০-এর দশকে ব্রিটিশ সরকার ভারতে আংশিক স্বায়ত্তশাসন মঞ্জুর করার পর আইনসভা গঠিত হয়। এরপর নির্বাচনে কংগ্রেস জয়লাভ করে। পরবর্তী দশকটি ভারতের ইতিহাসে একটি রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার দশক। এই দশকেই ভারত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেয়, কংগ্রেস সর্বশেষ বারের জন্য অসহযোগ আন্দোলন শুরু করে এবং অল-ইন্ডিয়া মুসলিম লিগের ইসলামি জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটে। এই রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার অবসান ঘটে ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের মাধ্যমে। তবে স্বাধীনতা লাভের আগে ভারতীয় উপমহাদেশ ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্রে বিভাজিত হয়।

স্বাধীনতার আগে স্বাধীনতা দিবস

১৯২৯ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের লাহোর অধিবেশনে ‘পূর্ণ স্বরাজ’ ঘোষণাপত্র গৃহীত হয় এবং ২৬ জানুয়ারি তারিখটিকে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। কংগ্রেস জনসাধারণের কাছে আবেদন জানায়, যতক্ষণ না ভারত পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জন করছে ততক্ষণ তারা যেন আইন অমান্য কর্মসূচি পালন করেন এবং “বিভিন্ন সময়ে কংগ্রেস কর্তৃক প্রচারিত নির্দেশাবলি অনুসরণ করেন”। এই ধরনের স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের উদ্দেশ্য ছিল ভারতীয় নাগরিকদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী ধারণার প্রসার এবং ভারতের স্বাধীনতা অনুমোদনের জন্য ব্রিটিশ সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করা।
১৯৩০ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত কংগ্রেস ২৬ জানুয়ারি তারিখটিকে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করে এসেছে। সেই সময় স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে জনসভার আয়োজন করা হত। সেই জনসভায় অংশগ্রহণকারীরা “স্বাধীনতার শপথ” গ্রহণ করতেন।  জওহরলাল নেহেরু তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন, এই জনসভাগুলি ছিল শান্তিপূর্ণ ও ভাবগম্ভীর এবং “এই সব সভায় কোনও প্রকার ভাষণ দেওয়া হত না বা কোনও সনির্বন্ধ মিনতি জ্ঞাপন করাও হত না।” গান্ধী ভেবেছিলেন যে এই সব জনসভার সঙ্গে সঙ্গে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে “…কিছু সৃজনশীল কাজও করা যায়। যেমন, চরকা কাটা, সামাজিকভাবে অস্পৃশ্যদের সেবা করা, হিন্দু-মুসলমান সমন্বয়, সরকারিভাবে নিষিদ্ধ রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপ অথবা এই সব কটি কাজই।” ১৯৪৭ সালে ভারত প্রকৃত অর্থে স্বাধীন হওয়ার পর ভারতের সংবিধান কার্যকর হয় ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি তারিখে। সেই থেকে ২৬ জানুয়ারি তারিখটি ভারতে সাধারণতন্ত্র দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

ভারতে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন:-

প্রতিবছর সারা ভারতবর্ষ জুড়ে ১৫ই আগস্ট দিনটি স্বাধীনতা দিবস হিসাবে পালিত ও উদযাপিত হয় নানান কর্মকান্ড ও অনুষ্ঠানের সমারোহে। ১৫ আগস্ট দিল্লির ঐতিহাসিক লালকেল্লায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। অনুষ্ঠানটি জাতীয় চ্যানেল দূরদর্শনের সাহায্যে সারা দেশে সম্প্রচারিত হয়। রাজ্য রাজধানীগুলিতেও পতাকা উত্তোলন সহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। অন্যান্য শহরে রাজনৈতিক নেতৃবর্গ নিজ নিজ কেন্দ্রে পতাকা উত্তোলন করেন। নানা বেসরকারি সংস্থাও পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। স্কুল-কলেজেও পতাকা উত্তোলন ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েরা এই উপলক্ষে বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সাজপোষাক পরে শোভাযাত্রা করে।

 

সোর্স – Wikipedia ও ইন্টারনেট

Share This
Categories
প্রবন্ধ

স্বাধীনতা দিবসের মর্যাদা : তন্ময় সিংহ রায়।

বৈচিত্র্যময় কর্মব্যস্ততার হিমবাহের নিচে চাপা পড়ে পিষ্টে থাকা দেশাত্মবোধটা পনের’ই আগষ্টের দু’দিন আগে জেগে উঠেই,গলার গীটারের তারের সুরঝঙ্কারে আকাশ বাতাসকে আন্দোলিত করবে…..

“সারে জহাঁ সে অচ্ছা হিন্দোসিতাঁ হমারা,
হম বুলবুলেঁ হ্যাঁয় ইসকী, ইয়ে গুলসিতাঁ হমারা”…
পনের’ই আগষ্ট শেষ,
দু’দিনের অতিমাত্রার জেগে ওঠা আদর্শের সুপ্ত আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ স্তব্ধ!
আবার বিভিন্ন কর্মব্যস্ততায় দেশাত্মবোধটা প্রায় সারাবছর শীতঘুমে আচ্ছন্ন!!….
প্রশ্ন করলেই স্মার্ট উত্তর, ‘আদর্শটা(দেশাত্মবোধের) কি দেখানোর জিনিস?…না চিৎকার করে বলার জিনিস?….যা আছে তা মনেই থাকে।’ .
বহিঃপ্রকাশ  -৫ ডিগ্রী থেকে ০ ডিগ্রীর মধ্যে ওঠা নামা করে।

 

‘প্রফুল্ল চাকী’ নামটা আজ শোনা শোনা লাগে, বিশেষতঃ বর্তমান প্রজন্মের কাছে, হয়তো কোনো জনপ্রিয় গায়ক/ফুটবলার হবেন!!
হানি সিং(ভুল মার্জনীয়),ন্যারো জিন্স আর স্লিভলেস না চিনলেই আজ চরম লজ্জা, ব্যাকডেটেড্!
রাজমিস্ত্রির ভূমিকায় আমরাই আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মে,চেতন/অবচেতন মনেই নানাভাবে আত্মকেন্দ্রিকতার দেওয়াল গাঁথছি অত্যন্ত যত্নসহকারে, বিপ্লবী আদর্শ না!
মুখ্য মন্ত্র… ‘তোরা লেখাপড়া শিখে অনেক বড় হ, নিজের পায়ে দাঁড়া, অনেক পয়সা উপার্জন কর ইত্যাদি।’
ওসব বিপ্লবী মনোভাবাপন্ন জীবন ঝুঁকিপূর্ণ,   লাভ নেই/বোকারা নেয়।

 

পুঁথিগত শিক্ষায় বিদগ্ধজন /আর্থিক  সমৃদ্ধশালী আজও খুঁজলে মিলবে কিন্তু মানসিক সমৃদ্ধশালী ও সামাজিক শিক্ষায় উচ্চশিক্ষিতদের আজ হাতছানি দেয় ডাইনোসর।

অভিভাবক আমরা সবাই কিন্তু ‘যথার্ত’ শব্দটা ত্যাগ করেছে আজ অধিকাংশের সান্নিধ্য, যার  ভবিষ্যত পরিণাম মাঠে-ঘাটে, সমাজের বিভিন্ন জায়গায় আত্মকেন্দ্রিকতার কালো কালো ছোপ!
হিংসা,লোভ, ঈর্ষ্বা, লালসা, স্বার্থপরতায় ভারতের আকাশটা আজ গহীন জমকালো অন্ধকার মেঘে ঢাকা!
বঞ্চিত ফোটন কণাগুলো দুর্ভেদ্য মেঘের স্তরকে উপেক্ষা করে এ দেশকে আলোকিত করতে চেয়েও বারে বারে ব্যর্থ!!

একজন শিক্ষিত অর্থবান/ অর্থবান /শিক্ষিত মানুষের চেয়ে একজন শিক্ষিত মানসিকতার মানুষের প্রয়োজন আজ অত্যাধিক বেশি। দেশমায়ের স্বার্থের সিকিউরিটি গার্ড অপেক্ষা নিজের ও নিজের পরিবারের সিকিউরিটি গার্ড সংখ্যায় আজ অতিক্রম করেছে তার মাত্রাকে!  ক্ষুদিরাম বসু, প্রফুল্ল চাকী ও ভগৎ সিংহ, রাজগুরু’র দেখা আজও মেলে মাঝে মধ্যে তবে এশিয়ান পেইন্টস বা বার্জারের প্রলেপযুক্ত একটা সম্পূর্ণ দেহে।

বলাবাহুল্য, সুপ্রাচীন কাল থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য সুপরিচিত! ঐতিহাসিক সিন্ধু সভ্যতার জন্ম এই অঞ্চলেই।  হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন ও শিখ—বিশ্বের এই চার ধর্মের উৎসভূমি ভারত।
খ্রিষ্টীয় প্রথম সহস্রাব্দে জরথুষ্ট্রীয় ধর্ম (পারসি ধর্ম), ইহুদি ধর্ম, খ্রিষ্ট ও ইসলাম ধর্ম এদেশে প্রবেশ করে, ও ভারতীয় সংস্কৃতিতে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে। অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ থেকে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ধীরে ধীরে ভারতীয় ভূখণ্ডের অধিকাংশ অঞ্চল নিজেদের শাসনাধীনে আনতে সক্ষম হয় ক্রমে ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে এই দেশ পুরোদস্তুর এক ব্রিটিশ উপনিবেশে পরিণত হয়।

মানুষ জন্মগতভাবেই স্বাধীন, তার এই জন্মগত অধিকার যখন অন্যের দ্বারা লুণ্ঠিত হয়, তখনই সে প্রতিবাদ করে ওঠে ও সর্বস্বের বিনিময়ে সচেষ্ট হয় নিজের স্ব-অধীনতা প্রতিষ্ঠায় এবং তার-ই জ্বলন্ত নিদর্শন ছিলো প্রধানত অহিংস, অসহযোগ ও আইন অমান্য আন্দোলন এবং বিভিন্ন চরমপন্থী গুপ্ত রাজনৈতিক সমিতির সহিংস আন্দোলন। এই আন্দোলনের পথে পরিচালিত এক দীর্ঘ রক্তাক্ত সংগ্রামের নির্মম ও করুণ ইতিহাসের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে অবশেষে ১৯৪৭ সালের ১৫ ই আগস্ট বর্বর ব্রিটিশ রাজশক্তির শাসনকর্তৃত্ব থেকে শৃঙ্খলমুক্ত হয়ে ভারত অর্জন করেছিল স্বাধীনতা!! সে স্বাধীনতা ছিলো হিন্দুর, সে স্বাধীনতা ছিলো মুসলমানের, সে স্বাধীনতা ছিলো খৃষ্টান, বৌদ্ধ, জৈন ও শিখ-এর কিন্তু আজ….??                                              একবিংশ শতাব্দীর পোষাকি ভদ্রের স্বাধীন আমরা আত্মকেন্দ্রিকতায় নিমজ্জিত হয়ে পরিনত হয়েছি পূর্ণ বর্বরে! রক্তশূন্য শিরা-উপশিরায় আজ-ও আমাদের বইছে চরম ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা, অর্থলালসা, হিংসা ও ঈর্ষ্বা ! জাতিতে-জাতিতে, মানুষে-মানুষে সম্পর্কের মাঝে আজ পাঁচ মাত্রার ভূমিকম্প!

 

অনুজীবের ভূমিকায় সম্পর্কের ‘সু’-টা ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপের তলায় অসহায়ভাবে শুয়ে ছটফট করছে! এদিকে রাতের অন্ধকার থেকে মুক্তি লাভ করেই ধর্ষকটা আজ চিৎকার করে বলে ওঠে ‘সারে যাঁহা সে আচ্ছা, হিন্দুস্থাঁ হমারা,’ আবার  বিশিষ্ট কোনো জন সাধারণ জনগণের টাকাকে ড্রাইফুড করে স্বাস্থ্যবান পাকস্থলী নিয়ে স্বাধীনতা দিবসে, ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকার দড়িতে হাত রেখে আদর্শে মালভূমি করেন তাঁর বুক। সারা দেশ জুড়ে চলছে দুর্নীতির তান্ডব নৃত্য! পরম তৃপ্তিসহকারে আজ ব্যাকটেরিয়াগুলো শোষণ করছে  ‘সারে যাঁহা সে আচ্ছা, হিন্দুস্থাঁ হমারা’র পুষ্টিরস!   অশুভকে ধ্বংস ও শুভ-কে প্রতিষ্ঠার জন্যে যে প্রধান অস্ত্র একতা-কে হাতিয়ার করে এসেছিলো মূলত স্বাধীনতা সে একতার অবস্থান আজ টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের ঠিক পাশে। স্বাধীনতা দিবসে আজ কর্ণকুহরে প্রবেশ করে ‘প্যায়ার কিয়া তো ডরনা ক্যায়া’ও বোধ করি স্বাধীন হওয়ার আনন্দে একটু আধটু বিপিন বাবু’র কারণ সুধা!

 

নেতাজী সুভাষ, ক্ষুদিরাম ও বিনয়, বাদল, দিনেশ কিংবা ভগৎ সিং-এর আত্মবলিদান প্রকৃতভাবে আজও ছটফট করে নানা রঙের মাকড়সার জালে! এনাদের বোধ করি শুধুই মুখস্থ করা হয় ডিগ্রী বাড়াবার স্বার্থে।
প্রকৃত সত্য ছুঁড়ে মারা, একবিংশে বিপদের সংকেত বহন করে অর্থাৎ বাক্ স্বাধীনতা এ যুগে প্রতিবন্ধীর ভূমিকায়! একবিংশের এ স্বাধীনতা দিবসের আনন্দে/এ হেন বিচিত্র দেশপ্রেম-এ সত্যিই বিস্ময় জাগে!
তিরঙ্গাটায় আজও পাওয়া যায় টাটকা লাল রক্তের গন্ধ!!
প্রশ্ন এখানেই যে সত্যিই সেই  ‘সর্বশ্রেষ্ঠ জীব’ হিসাবে ‘স্বাধীনতা দিবস’-এর প্রকৃত মর্যাদা বজায় রাখার যোগ্যতা আজ-ও আমরা তৈরি করতে পেরেছি/পারছি কি?
সত্যিই কি আমরা প্রকৃত দেশপ্রেমী??

(ব্যতিক্রম অবশ্যই স্বীকার্য ও ভূল-ত্রুটি মার্জনীয়।)

Share This
Categories
প্রবন্ধ

ভারতের স্বাধীনতা  ও  স্বাধীনতার পরবর্তী সময়।

আমরা ভারতবাসী  । ৭৬ তম স্বাধীনতা দিবসের গর্বে আমরা গর্বিত  ।
আমরা ভারতবাসীরা  ভুলতে পারিনি পরাধীনতার জ্বালা  ।  ব্রিটিশ সরকারের তিক্ত দুশো বছরের শৃঙ্খলাবদ্ধের  ইতিহাস । ইংরেজদের বিভৎস দমন নীতি । ইংরেজ সরকারের শাসন ও শোষন ।  ভারতীয়দের উপরে  অমানবিক অত্যাচার । ব্রিটিশদের পৈশাচিক দমন নীতির জন্য ভারতীয় সমাজের মধ্যে বিশৃঙ্খলা । দীনবন্ধু মিত্রের “নীল দর্পণ” নাটকটি থকে আরও  জানতে পারি নীল চাষের করুণ কাহিনী ও সাঁওতাল সমাজের উপর ইংরেজদের অমানবিক অত্যাচারের ঘটনা  । ইংরেজ সরকারের শোষনের মাত্রা ছিলো লাগামছাড়া । নিরীহ ভারতবাসীর উপর কারণে ও অকারণে চলতো অকথ্য নীপিড়ন ।  দেশবাসীদের উপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে  নির্মম শোষন আজও ভারতীয়দের হৃদমাঝারে উজ্জীবিত ।  .
ব্রিটিশ সরকারের দমননীতির বিরুদ্ধে সারা দেশ গর্জে উঠে ।

দেশবাসী সোচ্চার হয় । সারা দেশে বিদ্রোহ শুরু হয় । দেশ মাতার শৃঙ্খলমোচনে বিদ্রোহের আগুন ছড়িয়ে পড়ে দেশের আনাচে কানাচে । ব্রিটিশদের অত্যাচারের আগুনে দগ্ধ হয়ে  আত্নবলিদান ঘটে অনেক দেশপ্রেমী ভারতীয়ের । ইংরেজদের শোষনের বিরুদ্ধে গর্জে উঠে, ফলে অনেক রক্তক্ষরণ ঘটে । অনেক বীর শহিদ হন । ইংরেজদের উৎখাতের মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে গর্জে উঠেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় নেতাজী সুভাষ । দেশকে শৃঙ্খলামুক্ত করতে অকালে প্রাণ হারান বিনয়-বাদল-দীনেশ । শহিদ হন ক্ষুদিরাম বসু । দেশের পরাধীনতার গ্লানি ঝেড়ে ফেলার তাগিদে ভারতবাসীর ত্যাগ অবর্ণনীয় । দেশ স্বাধীনের মূলমন্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন মহাত্না গাঁধী, বিপিন চন্দ্র পাল, সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল, বাল গঙ্গাধর তিলক, আরও অনেকে । অনেক ত্যাগ, অনেক রক্তক্ষরণ, অনেক বলিদান, অনেক শহিদের পরে আমাদের দেশ ভারতবর্ষ ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট স্বাধীনতা লাভ করে । ইংরেজদের অপশাসন দূর করে দেশবাসী আনন্দে মেতে উঠে । ভারতে উদয় হয় নতুন সূর্যের ।
স্বাধীনতা লাভ করার পর ভারত ভাগ হয়ে যায়, ভারত ও পাকিস্তান । পাকিস্তান আবার দুটো ভাগে ভাগ হয়, পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান । পরবর্তীকালে পূর্ব পাকিস্তান ভারতের সহযোগীতায় স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে “বাংলাদেশ” গঠন করে  । পাকিস্তান ও বাংলাদেশ মুসলিম রাষ্ট্র হলেও ভারত একটি “সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক” রাষ্ট্র হিসাবে বিশ্বমাঝারে আবির্ভূত হয় । বাবা সাহেব ভীম রাও আম্বদকরের অক্লান্ত পরিশ্রমে সংবিধানের বাস্তবরূপ ঘটে । ১৯৫০ সালের ২৬শে জানিয়ারি দেশে সংবিধান লাগু হয় । ১৯৩৫ সালের ভারত সরকার আইনের পরিবর্তে ভারতীয় সংবিধান কার্যকরী হয় । এটি ভারতের একটি জাতীয় দিবস। ১৯৫০ সালের ২৬শে জানুয়ারি ভারতীয় গণপরিষদে  সংবিধান কার্যকরী হলে ভারত একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে পরিণত হয় ।
৭৬ তম স্বাধীনতা দিবস । প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও সারা দেশে মহাধুমধামে পালিত হচ্ছে । এবারের স্বাধীনতা উদযাপন একটা মাত্রা বহন করছে । কেননা দেশে এবছর ৭৫ত্ম স্বাধীনতা দিবস । যার জন্য স্বাধীনতা দিবসে গুরুত্ব অপরিসীম ।  উল্লেখ থাকে যে, স্বাধীনতা দিবসে দিল্লির লালকেল্লায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করবেন দেশের মাননীয় প্রধান মন্ত্রী । তা ছাড়া দিল্লির ইন্ডিয়া গেটে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হবে ।
স্বাধীনতার পরেও আমাদের দেশ অনেক সমস্যায় জর্জরিত । বেকার সমস্যা ও দারিদ্রতা জ্বলন্ত উদাহরণ । তবুও স্বাধীন দেশের একজন দেশবাসী হিসাবে আমরা গর্বিত । তাই বিনম্র চিত্তে কুর্ণিশ জানাই স্বাধীনতা সংগ্রামীদের । যাদের আত্নত্যাগের উৎকৃষ্ট নিদর্শন আমাদের দেশের স্বাধীনতা ।।।কলমে : দিলীপ  রায়।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের বিশিষ্ট বিপ্লবী প্রতুলচন্দ্র গাঙ্গুলী।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের অব্যর্থ পরিশ্রম যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত রাজনৈতিক দিক থেকে মুক্তি পেয়েছে। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়, তার মূলে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে প্রতুলচন্দ্র গাঙ্গুলী প্রথমসারির একজন অন্যতম বিপ্লবী ছিলেন। প্রতুলচন্দ্র গাঙ্গুলী ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি দেশমতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ রূপে।

 

প্রাথমিক জীবন—-

 

মহিমচন্দ্র গাঙ্গুলীর পুত্র প্রতুলচন্দ্র গাঙ্গুলী  ঢাকার চাঁদপুরের কাছে চালতাবাড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ১৬ এপ্রিল ১৮৯৪।  নারায়ণগঞ্জের চাঁদপুরের নিকটবর্তী চালতাবাড়ি গ্রামে প্রতুলচন্দ্র গাঙ্গুলী মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। ছাত্র জীবনে নারায়ণগঞ্জ শাখায় অনুশীলন সমিতিতে বিপ্লবীজীবন শুরু করেন। নিষ্ঠা এবং কর্ম তৎপরতার জোরে নেতারূপে সুপ্রতিষ্ঠিত হন তিনি। তবে তার প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা সম্পর্কে সেভাবে কিছুই জানা যায়নি।

গৃহত্যাগ—-

জানা যায়  ১৯০৮-১৯০৯ সালে বিপ্লবী প্রয়াসকে ব্যাপক করবার জন্য তিনি গৃহত্যাগ করেন।স্কুল ছাত্র হিসেবে তিনি অনুশীলন সমিতির নারায়ণগঞ্জ ইউনিটে যোগ দেন;  ১৯৩০-এর দশকে এর মুখপাত্র হন।  রাশবিহারী বসুর মতো প্রতুলচন্দ্রও তার পরিচয় গোপন করতে পারদর্শী ছিলেন;  তাই পুলিশের নথিতে তিনি ভিন্নভাবে পরিচিত ছিলেন।

বিপ্লবী কর্মজীবন—-

ঢাকার অদূরে স্বদেশী ডাকাতির মামলায় তার নাম সবার আগে উঠে আসে;  যেখানে তার বেশিরভাগ সিনিয়রকে সেলুলার জেলে পাঠানো হয়েছিল;  রিভিউ পিটিশনের পর কলকাতা হাইকোর্ট তাকে অব্যাহতি দেয়।  ১৯১৩ সালে, প্রতুলচন্দ্র রবীন্দ্র মোহন সেনের সাথে কলেজ স্কোয়ারে আইবি অফিসার হরিপদ দেকে হত্যা করেন;  তারপর বিশ্বযুদ্ধের সময় রাসবিহারী বসুর সাথে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করতে বারাণসীতে চলে যান।  তিনি ১৯১৪ সালে গ্রেফতার হন এবং ১৯২০ সাল পর্যন্ত বরিশাল কারাগারে বন্দী ছিলেন। চার বছর পরে, তাকে রাজনৈতিক বন্দী ঘোষণা করা হয় এবং বিনা বিচারে মিয়ানমারের (১৯২৭) কারাগারে পাঠানো হয়।
তিনি অসহযোগ আন্দোলনের সময় কংগ্রেসের প্রাদেশিক অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।  ১৯৩০ সালে আবার গ্রেপ্তার হন, তিনি ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত রিমান্ডে ছিলেন;  এক বছর পরে আবার গ্রেপ্তার হতে হয়, যখন নেতাজির সাথে জেলের ভিতরে অনশন করায় তার স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়, তাই পরবর্তীকালে মুক্তি পান।  কিন্তু, বোসের গ্রেট পালানোর পর;  প্রতুলচন্দ্রকে আবার গ্রেফতার করা হয় এবং ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত বাংলার বিভিন্ন কারাগারে পাঠানো হয়। দেশভাগের পর প্রতুলচন্দ্রের মতো একজন ব্যক্তিকেও কলকাতায় চলে যেতে হয়।

মৃত্যু—

সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গে জেলে অনশন করে স্বাস্থ্য ভঙ্গ হওয়ায় সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গে মুক্তি পান তিনি। এরপর সুভাষচন্দ্রের অর্ন্তধ্যানের সঙ্গে সঙ্গে পুনরায় গ্রেপ্তার হয়ে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন জেলে আটক থাকেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর তিনি কলকাতায় বসবাস করেন এবং ১৯৫৭ সালের ৫ জুলাই তাঁর মৃত্যু হয়।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্নিকন্যা, মোহিনী দেবী।

সূচনা—

 

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের অব্যর্থ পরিশ্রম যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত রাজনৈতিক দিক থেকে মুক্তি পেয়েছে। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়, তার মূলে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে মোহিনী দেবী  প্রথমসারির একজন অন্যতম বিপ্লবী ছিলেন।ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুধু শহীদ ভগৎ সিং-এর মতই নয় বরং শক্তিশালী নারীদের দ্বারা প্রশস্ত হয়েছিল যারা তাদের মাটিতে দাঁড়িয়েছিল এবং দেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য ব্রিটিশদের সাথে লড়াই করেছিল। মোহিনী দেবী  ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি দেশমতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ রূপে। ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিকন্যা ছিলেন তিনি।

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক স্মরণীয় নাম
মোহিনী দেবী। তিনি ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিকন্যা। এছাড়া তার পরিবার বাংলাদেশের প্রগতিমুলক শিক্ষা ও সংস্কৃতির সাথে জড়িত ছিল। ইতিহাসে তাঁর নাম আজও স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। জেনে নেবো তাঁর সংগ্রামী জীবনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।

জন্ম ও পরিবার—-

মোহিনী দেবী ১৮৬৩ সালে ঢাকা জেলার মানিকগঞ্জে এক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম রামশঙ্কর সেন ও মাতার নাম উমাসুন্দরী দেবী। ১২ বছর বয়সে তারকচন্দ্ৰ দাশগুপ্তের সঙ্গে বিবাহ হয়। শ্রমিক আন্দোলনের নেত্রী প্রভাবতী দাশগুপ্ত।

 

শিক্ষাজীবন—-

মোহিনী দেবী ভিক্টোরিয়া স্কুলের প্রথম হিন্দু ছাত্রী, কলকাতার অভিজাত অ্যাংলিকান প্রতিষ্ঠান, মোহিনী দেবী (১৮৬৩ – ১৯৫৫) তার মূলে একজন জাতীয়তাবাদী ছিলেন।  ঢাকার বেউথার রামশঙ্কর সেনের কন্যা, বারো বছর বয়সে তারকচন্দ্র দাশগুপ্তের সাথে তার বিয়ে হয়।  তা সত্ত্বেও, তিনি পন্ডিত শিবনাথ শাস্ত্রী এবং রামতনু লাহিড়ীর অধীনে অধ্যয়নের সুযোগ পেয়েছিলেন, ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগের কলকাতার অধ্যবসায়ী।  তিনি ইউনাইটেড মিশনের একজন মহিলা শিক্ষকের কাছে ইংরেজি শিখেছিলেন।  এইভাবে তিনি ভারতের সমসাময়িক উন্নয়ন সম্পর্কে সচেতন হন এবং শুরু থেকেই বিভিন্ন সামাজিক কল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হন।

রাজনৈতিক জীবন—-

১৯২১-২২ সালে তিনি গান্ধীজীর অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেওয়ার কারণে কারাবরণ করেন। ১৯৩০-৩১ সালে আইন অমান্য আন্দোলনে নেতৃত দেন। এজন্য তাকে ছয় মাসের জেল খাটতে হয়েছিল। ‘নিখিল ভারত মহিলা সমিতির’ সভানেত্রী হিসেবে তার ভাষন উচ্চ প্রশংসিত হয়। ১৯৪৬ সালের দাঙ্গায় মুসলিম প্রধান অঞ্চল এন্টালি বাগানে নিজের বাড়িতে থেকে হিন্দু মুসলিম ঐক্যের প্রচার চালিয়েছিলেন। সে সময় তার বন্ধু-বান্ধব আত্নীয় পরিজন তাকে তিরস্কার করে কিন্তু তাতে তিনি সংকল্প হারান নি। মোহিনী দেবী একদিকে স্বাধীনতা আন্দোলন এর পক্ষে কাজ করেছিলেন অন্যদিকে নারী শিক্ষা, নারী স্বাধীনতা, সমাজসংস্কারমূলক কাজ।

স্বাধীনতা আন্দোলনে—

১৯২০-১৯২২ সালে, ব্রিটিশদের সাথে অসহযোগের জন্য গান্ধীর আহ্বানের উচ্চতায়, তিনি নিজেকে আন্দোলনে উত্সর্গ করেছিলেন।  ১৯৩০-১৯৩১ সালের আইন অমান্য আন্দোলনের সময়, তিনি আইন ও পুলিশি বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করে এবং পথে কারাভোগ করে একজন উল্লেখযোগ্য নেতা আন্দোলন হিসাবে আবির্ভূত হন।  গান্ধীবাদী আদর্শে তার সম্পূর্ণ সাবস্ক্রিপশন এবং তার আন্দোলন কৌশলের প্রতি অটল জমা দেওয়ার কারণে, তিনি দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে সর্বভারতীয় মহিলা কংগ্রেসের সভাপতি হন;  তার বাকপটু বক্তৃতা গান্ধী সহ সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল।  নিজের এবং তার পরিবারের নিরাপত্তা উপেক্ষা করে, তিনি কলকাতার রাস্তায় নেমে আসেন এবং ১৯৪৬ সালের ভয়াবহ কলকাতা দাঙ্গার অন্ধকার দিনগুলিতে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেন।
গান্ধীজীর আদর্শে অবিচলিত নিষ্ঠা ছিল। ১৯৪৬ খ্রী. কলিকাতায় দাঙ্গার সময় দাঙ্গা-আধুষিত মুসলমান-প্রধান অঞ্চল এন্টনিবাগানে নিজের বাড়িতে থেকে হিন্দু-মুসলমানের ঐক্যের বাণী প্রচার করেন। ‘দি স্কাভেঞ্জার্স ইউনিয়ন অব বেঙ্গল’ এবং ‘জুটি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নে’র প্রেসিডেন্ট তাঁর কন্যা প্ৰভাবতী দাশগুপ্ত ১৯২৭-২৮ থেকে ১৯৩০ – ৩১ খ্রী. পর্যন্ত শ্রমিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে এক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব।

মৃত্যু—-

মহান এই  সংগ্রামী মোহিনী দেবী ২৫ মার্চ ১৯৫৫ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট ও উইকিপিডিয়া।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

আজ ১১ আগস্ট, ইতিহাসের আজকের এই দিনে যা ঘটেছিল।

আজ ১১ আগস্ট। ইতিহাস ঘেটে দেখা যায় বছরের প্রতিটি দিনে ঘটেছে অনেক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। আসুন আজকের দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় একনজরে দেখে নিই।  ইতিহাসের আজকের এই দিনে কী কী ঘটেছিল, কে কে জন্ম নিয়েছিলেন ও মৃত্যুবরণ করেছিলেন——-

 

আজ যাদের জন্মদিন—-

১৯০৮ – পুলিনবিহারী সেন খ্যাতনামা বাঙালি রবীন্দ্র-বিশারদ।

১৯১১ – প্রেম ভাটিয়া, সাংবাদিক।

১৯২৯ – মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় ভারতীয় বাঙালি সঙ্গীতশিল্পী ও সুরকার।

১৯৩৭ – সালমা সোবহান, বাংলাদেশের প্রখ্যাত ব্যারিস্টার, শিক্ষক, মানবাধিকারকর্মী।

১৯৩৮ – চঞ্চল কুমার মজুমদার, শান্তিস্বরূপ ভটনাগর পুরস্কারে সম্মানিত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ভারতীয় পদার্থবিজ্ঞানী ।

১৯৬৫ – ভায়োলা ডেভিস, মার্কিন অভিনেত্রী ও প্রযোজক।

১৯৭০ – জিয়ানলুকা পেসোত্তো, ইতালীয় ফুটবলার।

১৯৮৩ – ক্রিস হেমসওর্থ, অস্ট্রেলীয় অভিনেতা।

১৮৭০ – টম রিচার্ডসন, ইংরেজ ক্রিকেটার।

১৭৩৭ – ইংরেজ ভাস্কর জোসেফ নোলেকেনস।

১৮৫৮ – নোবেলজয়ী [১৯২৯] ওলন্দাজ চিকিৎসক ক্রিস্টিয়ান আইকমান।

 

ইতিহাসের পাতায় আজকের দিনের ঘটনাবলী—-

২০০৪ – পাকিস্তান পরমাণু বিস্তার রোধ না করলে দেশটির ওপর মার্কিন কংগ্রেসের নিষেধাজ্ঞা প্রস্তাব গ্রহণের আহবান করা হয়।

২০০৮ – গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে মহিলাদের ৪০০ মিটার ফ্রিস্টাইল শেষ হয়। একই দিনে মহিলাদের ২০০ মিটার ফ্রিস্টাইল সাঁতার প্রতিযোগিতা শুরু হয়।

২০১২ – বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাফাত জামিল বীর বিক্রমের মৃত্যু।

১৯০৮ – বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর ফাঁসি কার্যকর হয়।

১৯০৯ – রেডিওর বিপদবার্তা বা এসওএসের ব্যবহার শুরু হয়।

১৯১৪ – জন রে অ্যানিমেশন পেটেন্ট করেন।

১৯২২ – কাজী নজরুল ইসলামের ধুমকেতু পত্রিকা প্রকাশিত হয়।

১৯২৯ – ইরাক ও পারস্য শান্তিচুক্তি করে।

১৯২৯ – রাশিয়া ও চীনের সীমান্তে যুদ্ধ শুরু হয়।

১৯৫২ – মানসিক অসুস্থতার জন্য জর্দানের বাদশাহ তালাল সিংহাসনচ্যুত হন।

১৯৬১ – ভারতে পূর্বে পর্তুগিজ শাসিত অঞ্চল দাদরা ও নগর হাভেলিকে ভারতের সাথে যুক্ত ও একত্রিত করে নতুন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল দাদরা ও নগর হাভেলি গঠন করা হয়।

১৯৮৬ – এশিয়ার জনসংখ্যা ৩০০ কোটি পূর্ণ হয়।

১৮১০ – আজোরে ভয়াবহ ভূমিকম্পে সাও মিগুয়েল গ্রাম তলিয়ে যায়।

১৮৮৪ – টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি করেন অস্ট্রেলিয়ার ম্যাকডোনেল।

১৮৮৮ – বন্ধ হয়ে যায় ক্যালিফোর্নিয়া থিয়েটার।

১৭৮০ – বার্বাডোজে হারিকেন শুরু হয়।

৬৮৩ – মুসলমানরা সমরখন্দ বিজয় লাভ করে।

 

এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন যারা—-

২০০৪ – হুমায়ুন আজাদ, বাংলাদেশী লেখক ও ভাষাবিদ।

২০১২ – শাফায়াত জামিল বীর বিক্রম, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।

২০১৮ – বিদ্যাধর সূর্যপ্রসাদ নাইপল, ভারতীয়-নেপালীয় বংশোদ্ভূত ত্রিনিদাদীয় সাহিত্যিক।

১৯০৮ – ক্ষুদিরাম বসু ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের বাঙালি বিপ্লবীর ফাঁসির মঞ্চে আত্মবলিদান।

১৯৩৫ – স্যার দেবপ্রসাদ সর্বাধিকারী, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বেসরকারি ( ১৯১৪-১৯১৮) উপাচার্য।

১৯৫৫ – অমলেন্দু দাশগুপ্ত, বাঙালি সাহিত্যিক।

১৯৭০ – ইরাবতী কার্বে ভারতের মহারাষ্ট্রের একজন নৃবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ এবং লেখক।

১৯৭২ – নোবেজয়ী [১৯৫১] আফ্রিকান-মার্কিন অণুজীব বিজ্ঞানী ম্যাক্স থিলাব।

১৯৯০ – ননীগোপাল চক্রবর্তী বাঙালি শিশু সাহিত্যিক।

১৯৯৫ – আলোন্‌জো চার্চ, মার্কিন গণিতবিদ এবং যুক্তিবিদ।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

ব্রিটিশ কারাগারে কারারুদ্ধ প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামী নারী, বাসন্তী দেব।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের অব্যর্থ পরিশ্রম যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত রাজনৈতিক দিক থেকে মুক্তি পেয়েছে। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়, তার মূলে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে বাসন্তী দেবী  প্রথমসারির একজন অন্যতম বিপ্লবী ছিলেন।ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুধু শহীদ ভগৎ সিং-এর মতই নয় বরং শক্তিশালী নারীদের দ্বারা প্রশস্ত হয়েছিল যারা তাদের মাটিতে দাঁড়িয়েছিল এবং দেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য ব্রিটিশদের সাথে লড়াই করেছিল। বাসন্তী দেবী  ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি দেশমতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ রূপে। ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিকন্যা ছিলেন বাসন্তী দেবী। তিনি ছিলেন ব্রিটিশ কারাগারে কারারুদ্ধ প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামী নারী।

 

জন্ম পরিবার শিক্ষা—-

 

বাসন্তী দেবী  ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনাকালে ২৩ মার্চ ১৮৮০ সালে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম বরদানাথ হালদার ও মাতার নাম হরিসুন্দরী দেবী। তার পিতা ছিলেন আসামের বিজনি ও অভয়াপুরী এস্টেটের দেওয়ান। দশ বছর বয়েসে তিনি দার্জিলিংয়ের লরেটে কনভেন্টে শিক্ষার জন্যে ভর্তি হন। ১৮৯৬ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের সাথে বিবাহ হয়। বাসন্তী কলকাতার লরেটো হাউসে পড়াশোনা করেন, যেখানে তিনি সতেরো বছর বয়সে চিত্তরঞ্জন দাসের সাথে দেখা এবং বিয়ে করেন। ১৮৯৮ থেকে ১৯০১ সালের মধ্যে দুজনের তিনটি সন্তান জন্মগ্রহণ করেছিল।

 

রাজ নৈতিক জীবন এর শুরু—

 

১৯২০ সালে চিত্তরঞ্জন দাশের সাথে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন। তিনি ১৯২১ সালে নারীদের অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। ১৯২১ সালে চিত্তরঞ্জন দাশ যখন গ্রেপ্তার হন তখন তিনি আইন অমান্য ও হরতালের ঘোষণা দেন। এর পরে তিনিও গ্রেপ্তার হন বড়বাজার এলাকায় হরতাল করার সময়। তাদের গ্রেপ্তারে সারা বাংলা জুড়ে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু তাকে ‘মা’ সম্বোধন করতেন। তিনি ও চিত্তরঞ্জন দাশ মিলে সম্পাদনা করতেন বাঙলার কথা পত্রিকা। ১৯২২ সালে এপ্রিল মাসে চট্টগ্রামে যে বঙ্গীয় প্রাদেশিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় সেখানে তিনি সভানেতৃত্ব করেন এবং দেশবন্ধুর নতুন কর্মপন্থা ইঙ্গিত করেন। দেশবন্ধু তখনও জেলে ছিলেন। তিনি দেশবন্ধুর সাথে সংগঠন গড়ে তোলা ও ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন জন্য কাজ করেছেন। ১৯২২ সালে চট্টগ্রামে বঙ্গীয় প্রাদেশিক সম্মেলনে সভানেত্রী ছিলেন।

 

বৈপ্লবিক জীবন—

 

তার স্বামীর অনুসরণে, বাসন্তী দেবী আইন অমান্য আন্দোলন এবং খিলাফত আন্দোলনের মতো বিভিন্ন আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন এবং ১৯২০ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নাগপুর অধিবেশনেও অংশ নিয়েছিলেন। পরের বছর, তিনি দাসের বোন ঊর্মিলা দেবী এবং সুনিতা দেবীর সাথে যোগ দেন।  নারী কর্মীদের জন্য একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র “নারী কর্ম মন্দির” প্রতিষ্ঠা করুন।  ১৯২০-১৯২১ সালে, তিনি জলপাইগুড়ি থেকে তিলক স্বরাজ ফান্ডে স্বর্ণের অলঙ্কার এবং ২০০০ টি স্বর্ণমুদ্রা সংগ্রহ করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
১৯২১ সালে অসহযোগ আন্দোলনের সময়, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ধর্মঘট এবং বিদেশী পণ্য নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানায়।  কলকাতায়, পাঁচজন স্বেচ্ছাসেবকের ছোট দলকে কলকাতার রাস্তায় খাদি, হাতে কাটা কাপড় বিক্রি করার জন্য নিযুক্ত করা হয়েছিল।  দাস, যিনি স্থানীয় আন্দোলনের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন তার স্ত্রী বাসন্তী দেবীকে এমন একটি দলের নেতৃত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।  সুভাষ চন্দ্র বসুর সতর্কতা সত্ত্বেও দেবী রাস্তায় নেমেছিলেন যে এটি তাকে গ্রেফতার করতে ব্রিটিশদের উস্কে দেবে।  যদিও তাকে মধ্যরাতে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, তার গ্রেপ্তার ব্যাপক আন্দোলনের প্রেরণা জুগিয়েছিল।  কলকাতার দুটি কারাগার বিপ্লবী স্বেচ্ছাসেবকদের দ্বারা পূর্ণ ছিল এবং আরও সন্দেহভাজনদের আটক করার জন্য দ্রুত আটক শিবির তৈরি করা হয়েছিল।  ১৯২১ সালের ১০ ডিসেম্বর পুলিশ দাস ও বসুকে গ্রেপ্তার করে।
দাসের গ্রেপ্তারের পর, বাসন্তী দেবী তার সাপ্তাহিক প্রকাশনা বাঙ্গালার কথা (বাংলার গল্প) এর দায়িত্ব নেন।  তিনি ১৯২১-১৯২২ সালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন।  ১৯২২ সালের এপ্রিলে চট্টগ্রাম সম্মেলনে তার বক্তৃতার মাধ্যমে তিনি তৃণমূল আন্দোলনকে উৎসাহিত করেন।  ভারতের চারপাশে ভ্রমণ, তিনি ঔপনিবেশিকতার বিরোধিতা করার জন্য শিল্পের সাংস্কৃতিক বিকাশকে সমর্থন করেছিলেন।
দাস যেহেতু সুভাষ চন্দ্র বসুর রাজনৈতিক পরামর্শদাতা ছিলেন, বসন্তী দেবীর প্রতি বসন্তের খুব শ্রদ্ধা ছিল।  ১৯২৫ সালে দাসের মৃত্যুর পর, বসু দেবীর সাথে তার ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক সন্দেহ নিয়ে আলোচনা করেছিলেন বলে জানা যায়।  সুভাষ চন্দ্র বসুর ভ্রাতৃপ্রতিম ভাতিজি কৃষ্ণ বোস বাসন্তী দেবীকে তাঁর “দত্তক মা” এবং তাঁর জীবনের চারটি গুরুত্বপূর্ণ মহিলার একজন হিসাবে চিহ্নিত করেছিলেন, বাকি তিনজন হলেন তাঁর মা প্রভাবতী, তাঁর ভগ্নিপতি বিভাবতী (শেরতের স্ত্রী)  চন্দ্র বসু) এবং তার স্ত্রী এমিলি শেঙ্কল।
তার স্বামীর মতো, বাসন্তী দেবীও ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের বিপ্লবী কর্মীদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন।  ১৯২৮ সালে, ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী লালা লাজপত রায় তার শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ মিছিলের বিরুদ্ধে পুলিশের লাঠিচার্জে আহত হওয়ার কয়েকদিন পর মারা যান।  এর পর বাসন্তী দেবী লাজপত রায়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে ভারতীয় যুবকদের উদ্বুদ্ধ করেন।

 

রাজনৈতিক জীবন থেকে অবসর—

 

দেশবন্ধু ও তার তিন সন্তান- দুই কন্যা, অপর্ণা ও কল্যাণী ও একপুত্র চিররঞ্জন। ১৯২৬ সালে একমাত্র পুত্র চিররঞ্জনের মৃত্যুর পর রাজনৈতিক জীবন থেকে অবসর নেন। এর পরেও তাকে অনেক পারিবারিক বিপর্যয় ও ব্যক্তিগত শোক সহ্য করতে হয়েছিল। প্রথমে স্বামী, পুত্র, এরপর নাবালিকা পৌত্রী, পুত্রবধু, জামাতা এবং জ্যেষ্ঠা কন্যার মৃত্যু হয় তার জীবদ্দশায়। তার দৌহিত্র সিদ্ধার্থ শংকর রায় পশ্চিমবঙ্গের ভূতপূর্ব মুখ্যমন্ত্রী ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। এক দৌহিত্রী মঞ্জুলা বসু প্রথম মহিলা অ্যাডভোকেট জেনারেল।

 

সম্মাননা—-

১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার পর, বাসন্তী দেবী সামাজিক কাজ চালিয়ে যান।  বাসন্তী দেবী কলেজ, কলকাতার প্রথম মহিলা কলেজ যা সরকারের অর্থায়নে ১৯৫৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং তার নামে নামকরণ করা হয়েছিল।  ১৯৭৩ সালে, তিনি ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মবিভূষণে সম্মানিত হন।

মৃত্যু—

বাসন্তী দেবী ৭ মে ১৯৭৪ মৃত্যুবরণ করেন। কলকাতা কেওড়াতলা মহাশ্মশান প্রাঙ্গণে তার স্মৃতি সমাধি মন্দির বর্তমান।

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট ও উইকিপিডিয়া।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

পাঞ্জাব কেশরি লালা লাজপত রায় : ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে এক চিরস্মরণীয় নাম।

সূচনা— ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের অব্যর্থ পরিশ্রম যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত রাজনৈতিক দিক থেকে মুক্তি পেয়েছে। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়, তার মূলে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে  পাঞ্জাব কেশরি লালা লাজপত রায় প্রথমসারির একজন অন্যতম বিপ্লবী ছিলেন।পাঞ্জাব কেশরি লালা লাজপত রায়  ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি দেশমতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ রূপে।

 

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে লালা লাজপত রায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা ছাড়াও তিনি আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ছিলেন লাল-বাল-পাল-এর মধ্যে একজন। লাল – লালা লাজপত রায়,বাল – বাল গঙ্গাধর তিলক এবং পাল – বিপিন চন্দ্র পাল, এঁরা তিনজনই ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের চরমপন্থী দলের নেতা ছিলেন এবং ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন।
লালা লাজপত রায়কে পাঞ্জাব কেশরি নামেও পরিচিত । তিনি পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক ও লক্ষী বিমা কম্পানী স্থাপন করেছিলেন। তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের চরম পন্থীদলের লাল-বাল-পালের অন্যতম নেতা।  .
জন্ম ও বংশ পরিচয়— .
লালা লাজপত রায় পাঞ্জাবে ১৮৬৫ সালের ২৮ শে জানুয়ারিতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ছিল রাধা কৃষ্ণান আজাদ। কিছু সময় কাল হরিয়ানার রহতাক এবং হিসাব শহরে তিনি ও কালতি করেছিলেন। সাথে তিনি লাল বাল পাল নামে বিখ্যাত ছিলেন। শৈশবকাল থেকেই তিনি দেশের জন্য নিজেকে নিযুক্ত করেছিলেন।
কর্ম জীবন—
তিনি কিছুসময়কাল হরিয়াণার রোহতক এবং হিসার শহরে উকালতি করেন। লালা লাজপত রায় হিন্দী ভাষায় মধ্যযুগীয় হিন্দুত্ববাদী রাজা শিবাজী ও ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জীবনী রচনা করেন। ইংরেজি ও হিন্দিতে লিখেছিলেন বেশ কয়েকটি বই। মায়ের স্মৃতিতে  প্রতিষ্ঠা করেছিলেন হাসপাতাল।সাংবাদিক লালা লাজপত রায় নিয়মিত লিখতেন ‘দ্য ট্রিবিউন’ (The Tribune) পত্রিকায়।
লালা লাজপত রায় এর সমাজ সেবা—-
তিনি স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর সাথে আর্য সমাজকে পাঞ্জাবে জনপ্রিয় করে তোলেন। এছাড়া অনেক জায়গায় দুর্ভিক্ষের সময় শিবির স্থাপন করে অসহায় মানুষদের সেবা করেছেন।
স্বাধীনতা অন্দোলনে ভুমিকা—
তিনি ভারতে ও বিশেষকরে পাঞ্জাবে পাঞ্জবী ভাষাকে হটিয়ে হিন্দী ভাষা প্রতিস্হাপনের ক্ষেত্রেও সহযোগীতা করেছিলেন। তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দলের অন্যতম নেতা ছিলেন। বাল গঙ্গাধর তিলক ও বিপিন চন্দ্র পালের সহিত তিনি লাল-বাল-পাল নামেই বিখ্যাত ছিলেন। এই তিন নেতারাই ভারতে সর্বপ্রথম ব্রিটিশ থেকে ভারতের স্বাধীনতার দাবী করেন পরবর্তি সময়ে সমগ্র ভারতবাসী এই আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ে। তিনি স্বামী দয়ানন্দ সরসত্বীর সহিত আর্য সমাজকে পাঞ্জাবে জনপ্রিয় করে তোলেন। তিনি অনেক স্থানে দুর্ভিক্ষের সময় শিবির স্থাপন করে লোকের সেবা করেছেন। ১৯২৮ সনের ৩০ অক্টোবর তারিখে তিনি সাইমন কমিশনের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত প্রদর্শনিতে অংশগ্রহণ করেন । সেখানে তিনি পুলিশের লাঠি চার্চে গভীর ভাবে আহত হন। গুরুতরভাবে আহত হয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘’আমার শরীরে করা ব্রিটিশের প্রহার, ব্রিটিশের ধংসের কারণ হয়ে উঠবে’’।
মৃত্যু—
সাইমন কমিশনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশ সুপার জেমস এ স্কট লাঠিচার্জ করার নির্দেশ দেন। স্কট নিজেও লাঠিচার্জ করেন। লালা লাজপত রায়কে স্কট প্রথমে ধরেন কিন্তু তিনি তাঁকে গ্রেফতার না করে লাঠিপেটা করতে শুরু করেন। পুলিশ রিপোর্টে দাবি করা হয়ে, স্কট লালা লাজপত রায়কে ধরার পর লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। আর তাতে মারাত্মকভাবে আহত হন লালাজী। গুরুতরভাবে আহত লালাজীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু লাজপত রায় চিকিৎসায় আর সাড়া দেন নি।১৯২৮ এর ১৭ নভেম্বর হাসপাতালেই  মারা যান ‘পঞ্জাব কেশরী’।
মৃত্যু পরবর্তী সময়—
লালা’র মৃত্যুর ফলে সমগ্র দেশ উত্তেজিত হয়ে উঠে। চন্দ্রশেখর আজাদ, ভগৎ সিং, শিবরাম রাজগুরু ও সুখদেব থাপার ও অন্যান্য স্বাধীনতা সংগ্রামীরা লালাজির মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিজ্ঞা নেয়। ১৯২৮ সনের ১৭ ডিসেম্বর তারিখে এই স্বাধীনতা সংগ্রামীরা লালা’র মৃত্যুর প্রতিশোধ স্বরুপ ব্রিটিশ পুলিশ অফিসার সাংডর্সকে গুলি করে হত্যা করে। সাংডর্সকে হত্যা করার জন্য রাজগুরু, সুখদেব ও ভগত সিংকে ব্রিটিশ সরকারের কারাগার থেকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। এই ভাবে ভারতীয় রাজনীতিতে এক নতুন স্পন্দন সৃষ্টি হয়।
আসুন জেনে নেওয়া যাক ভারতের এই অন্যতম মহান মুক্তিযোদ্ধা সম্পর্কে কিছু না জানা তথ্য——
১) অন্যান্য অনেক মুক্তিযোদ্ধার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে লালা লাজপত রায় ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নেওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন, তখন তিনি অনেকটাই ছোট ছিলেন।
২) ১৮৭৭ সালে তিনি রাধা দেবী-র সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের তিন সন্তান ছিল- দুটি ছেলে এবং একটি মেয়ে।
৩) ১৮৮০ সালে, তিনি লাহোরের সরকারি কলেজে আইন নিয়ে পড়তে যান। এই সময়ে তিনি কয়েকজন তরুণ মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে আলাপচারিতার সুযোগ পান।
৪) লাহোরে থাকার সময়ই, তিনি আর্য সমাজের প্রতিষ্ঠাতা স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীকে দেখেন এবং তাঁর শিক্ষায় অনুপ্রাণিত হয়ে লালা লাজপত রায় আর্য সমাজে যোগ দেন।
৫) ১৮৮৬ সালে তিনি ও তাঁর পরিবার তিনি হিসার-এ চলে আসার পরে সেখানে তিনি আইন নিয়ে প্র্যাকটিস শুরু করেন। পরে তিনি হিসারে আইনজীবী বাবু চূড়ামণি-র সঙ্গে বার কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া-র সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
৬) তিনি, বাবু চূড়ামণির সঙ্গে হিসার জেলায় ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের একটি শাখা প্রতিষ্ঠা করেন এবং ওই একই জেলায় আর্য সমাজের একটি শাখাও প্রতিষ্ঠা করেন।
৭) তিনি ১৮৮৮ এবং ১৮৮৯ সালে কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশনে অংশ নেওয়া চারজন প্রতিনিধিদের মধ্যে একজন হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। উভয় অধিবেশনই এলাহাবাদে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
৮) ১৮৯২ সালে, তিনি লাহোর হাইকোর্টে আইন প্র্যাকটিস করতে যান। এই সময়ে তিনি সাংবাদিকতা নিয়েও প্র্যাকটিস শুরু করেন এবং ‘দ্য ট্রিবিউন’ পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন।
৯) তিনি পাঞ্জান ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক ও লক্ষী বিমা কোম্পানি স্থাপন করেছিলেন। তাঁর নির্দেশনায় দয়ানন্দ অ্যাংলো বৈদিক বিদ্যালয় পরিচালন কমিটিও প্রতিষ্ঠিত হয়।
১০) তিনি খুব শীঘ্রই বুঝতে পেরেছিলেন যে, তাঁকে আইন ত্যাগ করতে হবে এবং ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিতে হবে। সেইমতো তিনি ১৯১৪ সালে আইন প্র্যাকটিস বন্ধ করে দেন।
১১) ১৯০৭ সালের মে মাসে, পাঞ্জাবের রাজনৈতিক আন্দোলনের অংশ নেওয়ার জন্য তাঁকে বার্মার মান্দালয়ে নির্বাসন দেওয়া হয়েছিল।
১২) ১৯২০ সালে অনুষ্ঠিত কলকাতা বিশেষ অধিবেশন চলাকালীন, লালা লাজপত রায় ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের (INC) প্রেসিডেন্ট হন।
১৩) ১৯২৮ সালের ৩০ অক্টোবর তিনি সাইমন কমিশনের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত প্রদর্শনিতে অংশগ্রহণ করেন। সেখানে তিনি পুলিশের লাঠি চার্জে গভীর ভাবে আহত হন।
১৪) ১৯২৭ সালে তাঁর মা যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ায় তিনি তাঁর মায়ের স্মৃতিতে গুলাব দেবী চেস্ট হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। কথিত আছে যে, যেখানে তাঁর মা মারা গিয়েছিলেন হাসপাতালটিও পাকিস্তানের ওই একই জায়গায় অবস্থিত। ১৯৩৪ সালের ১৭ জুলাই এটি উদ্বোধন করা হয়। হাসপাতালটি কেবলমাত্র মহিলাদের দ্বারা পরিচালিত।
১৫) সাইমন কমিশনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশ সুপার জেমস এ স্কট বিক্ষোভকারীদের উপর লাঠি চার্জ করার নির্দেশ দেন। স্কট নিজেই ওই লাঠি চার্জে গিয়ে লালা লাজপত রায়কে ধরে ফেলেন। রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে যে, তিনি লালা লাজপত রায়কে মারাত্মকভাবে লাঞ্ছিত করেছিলেন।
১৬) রায় গুরুতরভাবে আহত হয়ে জনগণের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ”আমার শরীরে করা ব্রিটিশের প্রহার, ব্রিটিশের ধংসের কারণ হয়ে উঠবে।”
১৭) চিকিৎসায় থাকা সত্বেও তিনি সুস্থ হয়ে উঠতে পারেননি এবং ১৯২৮ সালের ১৭ নভেম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান। তাঁর মৃত্যুতে ব্রিটিশ সরকার, স্কট বা অন্য কোনও ব্রিটিশ সরকারী কর্মকর্তার ভূমিকা অস্বীকার করে।
১৮) ১৯৫৯ সালে লালা লাজপত রায় ট্রাস্টের উদ্বোধন করেন পাঞ্জাবের একদল সমাজসেবী।
১৯) ২০১০ সালে, লালা লাজপত রায় পশুচিকিৎসা এবং প্রাণী বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে হরিয়ানা সরকার।
।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট; উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

আজ বাইশে শ্রাবণ, কবি গুরুর প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি — একটি বিশেষ পর্যালোচনা।

ভারতবর্ষের গৌরবের ইতিহাসে যে সকল বিরল প্রতিভার ব্যতিক্রমী মানুষের দৃষ্টান্ত আমরা দেখতে পাই তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথ এমন একজন মানুষ যাঁকে সময় ও কালের গণ্ডীতে বিচার করা যায় না। তিনি শাশ্বত, চির-বর্তমান। তাই জন্মের দেড়শ বছরের বেশি অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের জীবনে আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।
রবীন্দ্রনাথের জীবনের যে দিকটি বেশি করে আমাদের নাড়া দেয় তা হল তাঁর সহনশীলতা, যা তাকে দুঃখ, বিড়ম্বনা জয় করে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে, তাঁকে সাধারণ থেকে আসাধারণত্বের দিকে নিয়ে গেছে এবং মরণশীল জগতে তাঁকে অমরত্ব দান করেছে।
ব্যক্তি রবীন্দ্রনাথের জীবনের পথচলা কখনওই মসৃণ ছিল না। কৈশোর থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত দুঃখ ছিল তাঁর সঙ্গী। কিন্তু দুঃখে তিনি কাতর হয়ে পড়েননি। তাঁর মধ্য দিয়ে খুঁজেছেন বেঁচে থাকার আনন্দ। আপন সৃষ্টির মধ্যেই তিনি ভুলতে চেয়েছেন জীবনের দুঃখ, কষ্ট, যন্ত্রণাকে। ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে তাঁর সৃষ্টি, দুঃখ তাঁকে তাড়া করে বেড়িয়েছে সর্বত্র।
রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টির কথা বলতে গেলে সর্বাগ্রে যা মনে আসে তা হল তাঁর গান। জীবনের এমন কোনো দিক নেই যা নিয়ে রবীন্দ্রনাথ গান লেখেননি। বর্তমানে অজস্র গান, সুর যেখানে সৃষ্টির বর্ষপূর্তির আগে হারিয়ে যায়, সেখানে রবীন্দ্রনাথের গান তার ব্যতিক্রমী সুর মূর্ছনায় শাশ্বত হয়ে আছে। আজও সুখের মুহূর্তে আবেগমথিত মনে যেমন বেজে ওঠে রবীন্দ্রসঙ্গীতের সুর, তেমনি দুঃখ ভারাক্রান্ত, বিরহক্লিষ্ট মন সান্ত্বনা পেতে ডুব দেয় রবীন্দ্রসঙ্গীতে। সারাজীবনে প্রায় তিন হাজার গান রচনা করেছেন রবীন্দ্রনাথ। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, বর্তমানে রবীন্দ্রসঙ্গীতের যে ব্যাপক প্রসারতা তা রবীন্দ্র জীবদ্দশায় ছিল না। রবীন্দ্রনাথের জীবনের বহুবিধ দুঃখের মধ্যে এও ছিল এক বিষম দুঃখ। সেই দুঃখের প্রকাশ আমরা দেখি তাঁর কথায়। মৃত্যুর দু-বছর আগে ১৯৩৯ সালের ১৪ মে, রবীন্দ্রনাথ মংপুতে মৈত্রেয়ীদেবীর সামনে বলেছিলেন, “… দেখো রবিঠাকুর গান মন্দ লেখে না, একরকম চলনসই তো বলতেই হবে। …কম গান লিখেছি! হাজার হাজার গান, গানের সমুদ্র—সেদিকটা বিশেষ কেউ লক্ষ করে না গো, বাংলাদেশকে ভাসিয়ে দিয়েছি। আমাকে ভুলতে পার, আমার গান ভুলবে কী করে?”
সত্যিই রবীন্দ্রনাথ আমাদের ভাসিয়ে দিয়েছেন গানের সমুদ্রে। প্রাণ-প্রাচুর্যতাপূর্ণ তাঁর গান চির নতুন ও চিরন্তন। সেই গান তাঁকে অমরত্ব দান করেছে। কিন্তু উপরোক্ত উক্তি প্রমাণ করে কতটা আক্ষেপ, যন্ত্রণা, দুঃখ মিশে রয়েছে তাঁর কথায়। আসলে জীবিতকালে তাঁর বিরুদ্ধ সমালোচকের অভাব ছিল না। সেকারণে জীবদ্দশায় তিনি তাঁর গানের ব্যাপক প্রসারতা দেখে যেতে পারেননি। তাই বলে তাঁর কলম থেমে থাকেনি। দুঃখ সহ্য করে, বুকের মধ্যে অভিমান চেপে রেখে একের পর এক গান রচনা করে গেছেন তিনি।
আগেই বলেছি রবীন্দ্রনাথের জীবনের পথচলা কখনওই মসৃণ ছিল না। সারাজীবন ধরে নানান বিড়ম্বনা তাঁকে তাড়া করে বেড়িয়েছে। ঘরে-বাইরে রবীন্দ্র অনুরাগী যেমন অনেক ছিল, তেমনি রবীন্দ্র সমালোচকেরও অভাব ছিল না। বিভিন্ন সময় এরা নানাভাবে রবীন্দ্রনাথের নেতিবাচক সমালোচনা করেছেন, তাঁকে কটাক্ষ করেছেন, তাঁকে অপদস্থ করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ কখনও এদের বিরুদ্ধে বিরূপ মন্তব্য প্রকাশ করেননি। শান্ত, সমাহত চিত্তে তিনি সমস্ত সমালোচনা সহ্য করেছেন। হিংসা, বিদ্বেষ তাঁর মনের মধ্যে ছিল না। ছোটোবেলায় তিনি দীক্ষিত হয়েছিলেন ব্রাহ্মধর্মে। যে ধর্মের মূলকথা ছিল সমভাতৃত্ববোধ। আজীবন তিনি সেই ধর্ম বা ধারনা থেকে বিচ্যুত হননি। তাই দেশ কিংবা বিদেশ, যে বা যারা কটাক্ষ করুক না কেন, তিনি দুঃখকে নীরবে সহ্য করেছেন। কারুর বিরুদ্ধে অপ্রিয় কথা বলেননি।
খ্যাতির বিড়ম্বনা বলে একটি কথা আছে। জীবনে যত খ্যাতি তিনি পেয়েছেন ততই বিড়ম্বনাও বেড়েছে। এমনকি রবীন্দ্রনাথের যে নোবেলপ্রাপ্তি নিয়ে আমাদের গর্ব, সেটাও তাঁর জীবনে ছিল এক ভয়াবহ বিড়ম্বনা ও যন্ত্রণার কারণ। তৎকালীন বহু বাঙালী পণ্ডিত রবীন্দ্রনাথের নোবেলপ্রাপ্তির তীব্র কটাক্ষ করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন তাঁর ‘দ্য সং অফারিংস’ কাব্যগ্রন্থের জন্য। এই কাব্যগ্রন্থের কবিতা বা গানগুলির ইংরাজি অনুবাদ করেছিলেন কবি নিজে। কিন্তু তৎকালীন কিছু বাঙালী পণ্ডিত বলতে থাকলেন এই অনুবাদ কবির নিজের নয়। কেননা কবির ইংরাজি জ্ঞান খুব কাঁচা। কেউ বলতে থাকলেন ওগুলো অনুবাদ করেছেন ইয়েটস। কেউ বা বলতে থাকলেন অ্যান্ড্রুজ এর কথা।
রবীন্দ্রনাথ যে ইংরাজিতে বাংলার মতো সাবলীল ছিলেন না তা তিনি নিজের মুখে স্বীকার করেছেন। ভাইঝি ইন্দিরাকে লেখা একটি চিঠিতে একথার উল্লেখ রয়েছে। সেখানে তিনি লিখেছেন, “…আমি যে ইংরাজি লিখতে পারিনে এ কথাটা এমনি সাদা যে এ-সম্বন্ধে লজ্জা করার মতো অভিমানটুকুও আমার কোনোদিন ছিল না। যদি আমাকে কেউ চা খাবার নিমন্ত্রণ করে ইংরাজিতে চিঠি লিখত তাহলে তার জবাব দিতে আমার ভরসা হত না। তুই ভাবছিশ আজকে বুঝি আমার সে মায়া কেটে গেছে—একেবারেই তা নয়—ইংরাজিতে লিখছি, এইটেই আমার মায়া বলে মনে হয়।” তবে গীতাঞ্জলির কবিতাগুলির অনুবাদ যে তাঁর নিজস্ব সে বিষয়ে কোনো সংসয় নেই। নিজের লেখা অনুবাদের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে কবিতা কিংবা গানের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অত্যন্ত খুঁতখুঁতে। পাছে তাঁর কবিতার অর্থ বদলে যায় সেই ভয়ে অনুবাদের ব্যাপারে তিনি অন্য কারও ওপর ভরসা করতে পারেননি। এদিকে রোটেনস্টাইন তাঁর কবিতার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। ইংল্যান্ড সফরে তাঁর হাতে কিছু কবিতা তুলে দেওয়ার জন্য একপ্রকার বাধ্য হয়ে তিনি নিজেই অনুবাদের কাজে মন দেন। ইন্দিরাদেবীকে লেখা উপরিউক্ত চিঠিতে সেকথার বিবরণ রয়েছে। তিনি লিখেছেন, “… গেল বারে যখন জাহাজ চড়বার দিন মাথা ঘুরে পড়লুম, বিদায় নেবার বিষম তাড়ায় যাত্রা বন্ধ হয়ে গেল, তখন শিলাইদহে বিশ্রাম করতে গেলুম। কিন্তু মস্তিস্ক ষোলো আনা সবল না থালে একেবারে বিশ্রাম করার মতো জোর পাওয়া যায় না। তাই অগত্যা মনটাকে শান্ত রাখবার জন্য একটা অনাবশ্যক কাজে হাত দেওয়া গেল। তখন চৈত্রমাসে আমের বোলের গন্ধে আকাশে আর কোথাও ফাঁক ছিল না এবং পাখির ডাকাডাকিতে দিনের বেলাকার সকল কটা প্রহর একেবারে মাতিয়ে রেখেছিল। ছোটোছেলে যখন তাজা থাকে তখন তার মার কথা ভুলেই থাকে। যখন কাহিল হয়ে পড়ে তখনই মায়ের কোলটি জুড়ে বসতে চায়—আমার সেই দশা হল। আমি আমার সমস্ত মন দিয়ে আমার সমস্ত ছুটি দিয়ে চৈত্র মাসটিকে যেন জুড়ে বসলুম—তার আলো আর হাওয়া আর গন্ধ আর গান একটুও আমার কাছে বাদ পড়ল না। কিন্তু এমন অবস্থায় চুপ করে থাকা যায় না—হাড়ে যখন হাওয়া লাগে তখন বেজে উঠতে হয়। ওটা আমার চিরকালের অভ্যেস, জানিসত্। অথচ কোমর বেঁধে কিছু লেখবার মতো বল আমার ছিল না। সেই জন্যে ঐ গীতাঞ্জলির কবিতাগুলি নিয়ে একটি একটি করে ইংরাজিতে তর্জমা করতে বসে গেলুম। যদি বলিস্ কাহিল শরীরে এমনতর দুঃসাহসের কথা মনে জন্ময় কেন—কিন্তু আমি বাহাদুরি করবার দুরাশায় একাজে লাগিনি। আর একদিন যে ভাবের হাওয়ায় মনের মধ্যে রসের উৎসব জেগে উঠেছিল সেইটিকে আর একবার আর এক ভাষার ভিতর দিয়ে মনের মধ্যে উদ্ভাসিত করে দেবার জন্য কেমন একটা তাগিদ এল। একটা ছোট্ট খাতা ভরে এল। এইটি পকেটে নিয়ে জাহাজে চড়লুম। পকেটে নেবার মানে হচ্ছে এই যে, ভাবলুম সমুদ্রের মধ্যে মনটি যখন উসখুশ করে উঠবে তখন ডেক চেয়ারে হেলান দিয়ে আবার একটি দুটি করে তর্জমা করতে বসব। ঘটলও তাই। এক খাতা ছাপিয়ে আর এক খাতায় পৌঁছন গেল।” রবীন্দ্রনাথের এই চিঠি প্রমাণ করে যে গীতাঞ্জলির ইংরেজি অনুবাদ নিয়ে সমালোচকদের কটাক্ষ কতটা মিথ্যা ছিল।
যাই হোক, নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তি যে তাঁর জীবনে বিড়ম্বনা সৃষ্টি করতে চলেছে তা আগাম আঁচ করতে পেরেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ১৯১৩-এর নভেম্বর মাসে শান্তিনিকেতনে কবিগুরুর নোবেলপ্রাপ্তির টেলিগ্রাম এসে পৌঁছোয়। ক্ষিতিমোহন সেন শাস্ত্রী উত্তেজিতভাবে রবীন্দ্রনাথকে সেই আনন্দ সংবাদ দেন। কিন্তু কবিগুরুর মুখে আনন্দের চেয়ে বিষণ্ণতার ছবু ফুটে ওঠে। সেই সময় তাঁর পাশে উপস্থিত এডওয়ার্ড টমসনকে কবি বলেছেন, “I shall ever have any peace again.” যে এজরা পাউন্ড রবীন্দ্রনাথের লেখার উচ্চ প্রশংসা করেছেন, যে ইয়েটস্ তাঁর ইংরাজি গীতাঞ্জলির ভূমিকা লিখেছেন, রবীন্দ্রনাথের নোবেলপ্রাপ্তি তাঁদের খুশি করতে পারেনি। উল্টে তাঁরা রবীন্দ্রনাথের সমালোচনায় মুখর হয়েছেন, তাঁর ইংরাজি অনুবাদ নিয়ে কটাক্ষ করেছেন। আবার ইয়েটস জীবনের সায়াহ্নে এসে অনুযোগ করে চিঠি লিখেছেন রবীন্দ্রনাথকে। সব বিতর্ক ভুলে রবীন্দ্রনাথ তাঁকে আপন করে নিয়েছিলেন।
রবীন্দ্রনাথ বিভিন্ন দেশে গেছেন, বিভিন্ন বিষয়ে বক্তৃতা করেছেন। কিন্তু এখানেও বিড়ম্বনা তাঁকে পিছু ছাড়েনি। জাপান, আমেরিকা, চীন প্রভৃতি দেশে তাঁর বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আমিরকায় দেওয়া বক্তব্যের পর কখনও তাঁকে বলা হয়েছে, তাঁর বক্তব্যের উদ্দেশ্য হিন্দু বিপ্লবী প্রচারে বাধা দেওয়া, কখনওবা বলা হয়েছে তিনি দেশের যথার্থ প্রতিনিধি নন। ১৯২৪ সালে চীনে বক্তৃতা দেওয়ার সময় তাঁকে নানান অপ্রীতিকর অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়। এমনকি ২৫ মে এক বক্তৃতা দেওয়ার সময় চীনা যুবকরা তাঁকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে—‘পরাধীন দেশের দাস ফিরে যাও।’ বিশের দশকে রবীন্দ্রনাথ যখন জার্মানি যান তখন অনেকে তাঁকে দেখেছিলেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দূত হিসাবে। রবীন্দ্রনাথের জীতায়তাবোধ কিংবা দেশপ্রেম নিয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ থাকতে পারে না। তাই উপরোক্ত ঘটনাগুলি তাঁর কাছে অত্যন্ত পীড়াদায়ক। কিন্তু এসব অপমান কিংবা কটাক্ষ তিনি নীরবে সহ্য করেছেন।
তবে রবীন্দ্রনাথের জীবনের সবচেয়ে বড়ো দুঃখ বা শোক হল মৃত্যুশোক। নিজের জীবদ্দশায় পারিবারিক মৃত্যু মিছিলের স্বাক্ষী থেকেছেন তিনি। প্রায় তিরিশজন পরিজনের মৃত্যু দেখতে হয়েছে তাঁকে। মাত্র ১১ বছর বয়সে তিনি মাকে হারান। কিন্তু মায়ের মৃত্যু তাঁর মনে সেভাবে দাগ কাটতে পারেনি। প্রথমবার মৃত্যুর গভীর শোক অনুভব করেন বৌঠান কাদম্বরী দেবীর মৃত্যুতে। কাদম্বরী দেবী ছিলেন তাঁর শৈশবের খেলার সাথী, কৈশোর-যৌবনের বন্ধু। স্বামীর অবহেলায় নিঃসঙ্গ কাদম্বরীও রবীন্দ্রনাথকে অনেকটাই আপন করে নিয়েছিলেন। তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে বিভিন্ন মতামত আছে। সে বিতর্ক দূরে সরিয়ে রেখে বলি, রবীন্দ্রনাথ ও কাদম্বরী দেবী উভয়ে উভয়কে ভালোবাসতেন। তাই কাদম্বরীর মৃত্যু রবীন্দ্রনাথকে প্রবলভাবে আঘাত করেছিল। তাঁর কথায়, “কিন্তু আমার চব্বিশ বছর বয়সের সময় মৃত্যুর সঙ্গে যে পরিচয় হল তা স্থায়ী পরিচয়।” পরবর্তী সময়ে তাঁর নানা লেখায় আমরা দেখতে পাই এই হারানোর যন্ত্রণার সুশোভন প্রকাশ। চল্লিশ বছর বয়সে তিনি হারান সহধর্মিনী ও কর্মসাথী মৃণালিনীদেবীকে। স্ত্রীর মৃত্যুও তাঁকে গভীরভাবে আঘাত দেয় যা প্রকাশ রয়েছে তাঁর বিভিন্ন লেখায়। এর মধ্যে ছোটোপুত্র শমীন্দ্রনাথ যাকে রবীন্দ্রনাথ আদর করে ডাকতেন ‘শমী ঠাকুর’ বলে, তার মৃত্যু কবির মনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছিল। এককথায়, পরিজনদের মৃত্যু তাঁক কষ্ট দিয়েছে বারবার। কিন্তু মৃত্যুকে তিনি গ্রহন করেছেন শান্ত চিত্তে আর অন্তরের কষ্টকে তিনি মর্যাদার সঙ্গে প্রকাশ করেছেন তাঁর লেখালিখির মধ্য দিয়ে। আসলে রবীন্দ্রনাথ জানতেন বৃহৎ কর্মের জন্যই তিনি পৃথিবীতে এসেছেন। তাই মৃত্যুতে কাতর হয়ে পড়া তাঁর চলবে না। শমীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর তিনি জগদীশচন্দ্র বসুকে একটি চিঠিতে লিখেছিলেন, “আমাদের চারিদিকেই এত দুঃখ এত অভাব এত অপমান পড়িয়া আছে যে নিজের শোক লইয়া অভিভূত হইয়া এবং নিজেকেই বিশেষরূপে দুর্ভাগা কল্পনা করিয়া পড়িয়া থাকিতে আমার লজ্জাবোধ হয়।” আবার ১৩২৫ সনের ১৪ শ্রাবণ শান্তিনেকতন থেকে শ্রীমতী রানু অধিকারীরে লেখা এক চিঠিতে তিনি বলেছেন, “… কেননা আমার উপরে যে কাজের ভার আছে; তাই আমাকে দুঃখ ভোগ করে দুঃখের উপরে উঠতে হবে। নিজের শোকের মধ্যে বদ্ধ হয়ে এই মুহূর্ত কাটাইবার হুকুম নেই আমার।”
এই দুটো বক্তব্যই প্রমাণ করে রবীন্দ্রনাথের জীবনবোধ ও জীবন সম্পর্কে তাঁর বৃহত্তর দৃষ্টিভঙ্গী। বৃহত্তর শোক আর দুর্দশার আবহে তিনি নিজের দুঃখ ও শোককে গ্রহন করেছেন। মৃত্যু তাঁকে কষ্ট দিয়েছে, যন্ত্রণা দিয়েছে কিন্তু বিপর্যস্ত করে দিতে পারেনি। মৃত্যুকে তিনি দেখেছেন প্রেমিকের মতো। তাই তিনি বলেছেন, ‘মরণরে, তুহু মম শ্যাম সমান।’
রবীন্দ্রনাথের কাছে মৃত্যুই জীবনের শেষ কথা নয়। জীবনের বহু পরিবর্তনের মতো মৃত্যুও একটি পরিবর্তন। মৃত্যু মানে জীবনের শেষ নয়, শরীরের সমাপ্তি। ১৩৩৮ সনের ১৫ কার্তিক বাসন্তীদেবীকে লেখা একটি চিঠিতে তিনি বলেছেন, “জীবন আর মরণ তো একই সত্তার দুই দিক—চৈতন্যে ঘুম আর জাগরণ যেমন।” এই মৃত্যুশোকের মধ্য দিয়ে তিনি এগিয়ে নিয়ে গেছেন তাঁর সৃষ্টির ধারা। আর মৃত্যুকে তিনি গ্রহন করেছেন শান্ত চিত্তে, প্রকাশ করেছেন মর্যাদার সহিত। যেখানে মৃত্যু নয় তিনি বড়ো করে দেখিয়েছেন জীবনদেবতাকে। নিঃসন্দেহে রবীন্দ্রনাথের এই গভীর সহনশীলতা জীবনের এত বিপর্যয় এড়িয়ে তাঁকে বৃহত্তর জগতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। তাঁকে অমরত্ব দান করেছে।
পরিশেষে বলি, রবীন্দ্রনাথ শুধু একজন সাহিত্যিক, শিল্পী, গীতিকার, সুরকার, নাট্যকার, কর্মযোগী প্রভৃতি ছিলেন না। তিনি আমাদের সামনে এক প্রতীক। দুঃখকে জয় করে এগিয়ে যাওয়ার প্রতীক। গয়ায় থাকাকালীন রবীন্দ্রনাথ একসময় বলেছিলেন, “জীবনে দুঃখ পাওয়ার দরকার আছে।” সত্যিই তাই। তা নাহলে জীবনের প্রকৃত সুখ, বেঁচে থাকার প্রকৃত আনন্দ অনুভব করা যায় না। দুঃখ নিজেকে চিনতে শেখায়, নিজেকে ভাবতে শেখায়। শুধু তাই নয়, দুঃখই দুঃখকে ভুলতে শেখায়। জাহাজে পাড়ি দিয়ে নিরাপদ দূরত্বে পৌঁছোনোর যে সুখ, তার থেকে অনেক বেশি আনন্দ পাওয়া যায় যদি সেই জাহাজ সমুদ্রে চরম ঘূর্ণিতে আটকে পড়ার পর তীব্র লড়াই করে শেষমেশ গন্তব্যে পৌঁছোতে সক্ষম হয়। আমাদের জীবনটাও তাই। জীবনে সুখের চেয়ে দুঃখের ভাগ বেশি। তাই দুঃখে কাতর হয়ে পড়লে জীবন হয়ে ওঠে যন্ত্রণার, বেঁচে থাকা হয়ে ওঠে দুঃসহ। সে কারণে দুঃখে কাতর হওয়া নয়, দুঃখে নিজেকে শক্ত রেখে লড়াই করতে হবে। তাহলে জীবনে প্রকৃত সুখ অর্জন করা সম্ভব। অন্য কিছু নয়, কেবল দুঃখই পারে দুঃখের নিরসন ঘটাতে। তবে তার জন্য চাই সহনশীলতা। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন—
“দুঃখ যদি না পাবে তো
দুঃখ তোমার ঘুচবে কবে
বিষকে বিষের দাহ দিয়ে
দহন করে মারতে হবে।
জ্বলতে দে তোর আগুনটারে
ভয় কিছু না করিস তারে,
ছাই হয়ে সে নিভবে যখন
জ্বলবে না আর কভু তবে।
এড়িয়ে তারে পালাস না রে
ধরা দিতে হোস না কাতর।
দীর্ঘ পথে ছুটে কেবল
দীর্ঘ করিস দুঃখটা তোর
মরতে মরতে মরণটারে
শেষ করে যে একেবারে,
তার পরে সেই জীবন এসে
আপন আসন আপনি লবে।”
রবীন্দ্রনাথের জীবন ইতিহাস পর্যালোচনা করে বারে বারে যে দিকটি আমাদের সামনে প্রকট হয় তা হল তাঁর জীবনভরা দুঃখ, বিড়ম্বনা ও তাঁর অসীম সহনশীলতা। উপরোক্ত কবিতায় দুঃখ এবং তাঁর থেকে মুক্তির পথ কী, তা সুন্দরভাবে ব্যক্ত করেছেন কবি।

 

।।কলমে : সৌরভকুমার ভূঞ্যা।

Share This