Categories
অনুগল্প নারী কথা প্রবন্ধ

ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণদেব এবং মা সারদাদেবী সম্পর্কে কিছু কথা : রাণু সরকার।

ভারতের ৪২ সাধক এবং কিছু সাধিকা জীবদ্দশায় জীবন্মুক্ত। ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণদেব এবং তাঁর স্ত্রী অর্থাৎ মা সারদাদেবী উক্ত জীবন্মুক্ত মানুষদের মধ্যে অন্যতম। তাঁরা দুজন যথাক্রমে ভগবান্ ও ভগবতী, কারণ পরিপূর্ণ ঐশ্বর্য, পরিপূর্ণ ধর্ম, পরিপূর্ণ যশঃ, পরিপূর্ণ শ্রী, পরিপূর্ণ বৈরাগ্য এবং পরিপূর্ণ জ্ঞান — এই ৬ টি ‘ভগ’ নামে কথিত হয়, আর এই ৬টি ‘ভগ’ পরিপূর্ণরূপে তাঁদের দুজনের মধ্যে বিদ্যমান। তাঁরা দুজন ভিন্ন ভিন্ন শরীরে দৃশ্যমান হলেও এক এবং অদ্বিতীয় ঈশ্বর বটে কারণ তাঁরা স্বরূপতঃ রজোগুণ ও তমোগুণ দ্বারা অনভিভূত বিশুদ্ধসত্ত্বগুণপ্রধান সমষ্টি অজ্ঞান উপহিত চৈতন্য, বিশুদ্ধসত্ত্বগুণসম্পন্ন মায়াতে পতিত চৈতন্যের প্রতিবিম্ব ; অব্যক্ত, অন্তর্যামী, জগৎকারণ, সর্বজ্ঞ। তাঁরা দুজন সদ্গুরু অর্থাৎ শ্রোত্রীয় এবং ব্রহ্মনিষ্ঠ কারণ অস্তি নাস্তি এবং এতদুভয়ের পারে যে ব্রহ্ম অবস্থিত, তাঁকে তাঁরা দুজন উত্তমরূপে জানেন। তাঁদের সকল অবস্থিতি অর্থাৎ স্থানই পরম পবিত্র। অষ্টসিদ্ধ ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণদেব হলেন ব্রহ্মবিদ্বরিষ্ঠ, তিনি প্রত্যগাত্ম-জ্ঞানসহায়ে তিনগুণের পরিণামরূপ ইহলৌকিক ও পারলৌকিক সর্ববিষয়ে তৃষ্ণারাহিত্যরূপ পরবৈরাগ্যবান্ পরমহংস সন্ন্যাসী। ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণদেব মহামায়ার সন্তান। মহামায়া, যিনি মহাপ্রণব ॐকারের কলাবিভাগ বা ষট্চক্রাদি ভূমিজয়ক্রমের ১১শ কলা অর্থাৎ যথাক্রমে ব্রহ্মমূখী ও সৃষ্টিমূখী অর্থাৎ যথাক্রমে বিন্দু ও বিসর্গ অর্থাৎ যথাক্রমে উন্মনা ও সমনা যিনি দক্ষিণেশ্বরের মা দক্ষিণাকালিরূপে এবং তাঁর স্ত্রী অর্থাৎ মা সারদাদেবীরূপে বিরাজমান। ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণদেবের ভাব হল মাতৃভাব, এই মাতৃভাব সাধনের শেষ কথা হল, “তুমি মা, আমি তোমার সন্তান।” ব্যবহারিক শব্দে আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বলা যায় যে ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণদেব হলেন ব্রহ্ম এবং তাঁর স্ত্রী অর্থাৎ মা সারদাদেবী হলেন শক্তি, আবার এমনও বলা যায় যে ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণদেব এবং তাঁর স্ত্রী অর্থাৎ মা সারদাদেবী দুজনই অনন্ত শক্তি যা অদ্বৈত অস্তিত্ব অর্থাৎ স্বরূপতঃ ব্রহ্ম। শাস্ত্র বলেন, “ব্রহ্ম ও শক্তি অভিন্ন।”_

Share This
Categories
প্রবন্ধ

তেভাগা আন্দোলনের এক সক্রিয় কর্মী অমল সেন; বিপ্লবী জীবনাদর্শ ও মনুষ্যত্বের প্রতীক।

উপমহাদেশের বাম আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ, তেভাগা আন্দোলনের সংগঠক কমরেড অমল সেনের আজ জন্মবার্ষিকী। কমরেড অমল সেন তেভাগা আন্দোলনের অন্যতম সক্রিয় নেতা, যিনি যশোর-নড়াইল এলাকার কৃষকদের সংগঠিত করেছিলেন। সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে অমল সেনের দৃঢ় অবস্থান ছিল আজীবন। যৌবনের প্রারম্ভে আরাম-আয়েশ তুচ্ছ করে তিনি সংগ্রাম আর শিক্ষার আলোকবর্তিকা হাতে কৃষকের কুঁড়েঘর থেকে মানবমুক্তির আকাঙ্ক্ষা নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তিনি সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেন। পাকিস্তান আমলের ১৯ বছরই তাকে রাজবন্দি হিসেবে জেলে কাটাতে হয়। শারীরিক নিপীড়নও বন্দি অবস্থায় সহ্য করতে হয়। ১৯৮০ সালে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি গঠিত হলে তিনি দলের মহাসচিব নির্বাচিত হন।

 

অমল সেন ১৯ জুলাই ১৯১৩ সালে বৃটিশ ভারতের তৎকালীন যশোর জেলার নড়াইল মহকুমার আফরা গ্রামের এক সামন্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী থাকাকালীন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রামে যুক্ত হয়ে তিনি ‘অনুশীলন’ সমিতির সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। ১৯৩৩ সালে খুলনার বিএল কলেজে রসায়নশাস্ত্রে পড়া অবস্থায় অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত হন এবং ১৯৩৩ সালে এই অঞ্চলের জমিদারদের বিরুদ্ধে কৃষক আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। তার বাবা-কাকাদের জমিদারির বিরুদ্ধে কৃষক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে তিনি এলাকার গরিব কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলনের কিংবদন্তি হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন ‘বাসুদা।’

 

বিপ্লবের প্রয়োজনে অমল সেনকে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ত্যাগ করতে হয়েছিল। কিন্তু অনানুষ্ঠানিক পড়াশোনায় কেবল মার্ক্সীয় দর্শন ও তত্ত্বই নয়; সাহিত্য, শিল্পকলা, বিজ্ঞান এমনকি চিকিৎসাশাস্ত্র সম্পর্কেও তাঁর পারদর্শিতা ছিল। ইতিহাস থেকে শুরু করে আধুনিক সবকিছুই তাঁর মনোযোগ ছিলো। এই বিনয়ী নম্র মানুষটি আবার সংগ্রামে ছিলেন দৃঢ়চিত্ত-সে রাজনৈতিক সংগ্রামই হোক, তাত্ত্বিক সংগ্রামই হোক। ১৯৩৩ সালে খুলনার বিএল কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় কমিউনিস্ট পার্টির সাথে যুক্ত হন। ১৯৩৪ সালে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন। সেই সময় তিনি উপলব্ধি করেন যে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদবিরোধী জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে বিজয়ী হতে হলে ব্যাপক কৃষক জনতাকে ঐক্যবদ্ধ করা ছাড়া সম্ভব নয়।

 

তৎকালীন ভারতবর্ষে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের আবহে বেড়ে ওঠা অমল সেন অতি অল্প বয়সেই জড়িয়ে পড়েন ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র জাতীয়তাবাদী বিপ্লবী আন্দোলনে। কিন্তু বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের ঢেউ এসে লাগে এ দেশেও। মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী আদর্শের প্রতি তিনি দ্রুতই আকৃষ্ট হন । গড়ে তোলেন যশোর-নড়াইল অঞ্চলের ঐতিহাসিক তেভাগা কৃষক আন্দোলন। ‘নড়াইলের তেভাগা আন্দোলনের সমীক্ষা’ বইটিতে কমরেড অমল সেন তাঁর বিশ্লেষণী দক্ষতায় কৃষকের সংগ্রামের চিত্র তুলে ধরেছেন।

 

ব্রিটিশ আমলে কৈশোরে অমল সেন যুক্ত হয়েছিলেন অগ্নিযুগের বাংলার যুব বিদ্রোহী সংগঠন অনুশীলনে। সেখান থেকে তাঁর উত্তরণ ঘটেছিল কমিউনিস্ট পার্টিতে। আর এখানেই তিনি বেছে নেন কৃষকদের, সমাজের একেবারে নিম্নবর্গ কৃষকদের সংগঠিত করার কাজ। এই নিম্নবর্গ কৃষকদের নিয়েই তিনি গড়ে তুলেছিলেন অভূতপূর্ব কৃষক সংগ্রাম, ইতিহাসে যা তেভাগা কৃষক আন্দোলন নামে খ্যাত। তেভাগার এই আন্দোলনে তাঁর অংশের কৃষক সংগ্রামীরা জমিদার, মহাজন আর ব্রিটিশরাজের কাছ থেকে ছিনিয়ে এনেছিলেন বিজয়। সেই বিজয় ব্রিটিশ আমলের বিরুদ্ধে পাল্টা রাষ্ট্রের ভিত গড়ার পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছেছিল।

 

তেভাগা আন্দোলনের সময়েই ভারত ভাগ হয়ে দুটি রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানের জন্ম হয়। আর পাকিস্তানে তেভাগা সংগ্রামী কমিউনিস্টদের জায়গা হয় জেলখানায় অথবা ভূতল বা আন্ডারগ্রাউন্ডে। তখন সাম্প্রদায়িকতা ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। অমল সেনরা সচেষ্ট হলেন নতুন সংগ্রাম গড়ে তুলতে। ভাষা আন্দোলন এ দেশের মানুষকে আবার বদলে দিল।

 

কমরেড অমল সেনের বৈশিষ্ট্য ছিল, তিনি সংগ্রামে ছিলেন সামনের কাতারে দাঁড়িয়ে থাকা নেতা। যখন নির্যাতন, নিপীড়ন নেমে এসেছে, তখনো তিনি সামনে দাঁড়িয়েই তা সহ্য করেছেন। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী ঔপনিবেশিক শক্তি যা করতে পারেনি, তথাকথিত স্বাধীনতা লাভের পর, পাকিস্তান আমলে, বিপ্লবী সংগ্রামীদের জীবনে নেমে আসে সেই নির্যাতন। পাকিস্তান আমলে ১৯ বছরই তাঁকে কাটাতে হয়েছে জেলে।

ভারতীয় উপমহাদেশে গড়ে ওঠা কমিউনিস্ট আন্দোলনের প্রতিটি বাঁকে তিনি তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন। জেলখানায় বসে তিনি স্বস্তিবোধ করলেন ঘটনাবলির এই মোড় পরিবর্তনে। কিন্তু ওই পাকিস্তানের জেলখানায় কমরেডদের এই জীবনশিক্ষা দেওয়া ছাড়া আর কিছু করার উপায় থাকেনি অমল সেনের জন্য। তবে ওই জেলখানাকেই আদর্শ বিদ্যাপীঠ বানিয়েছিলেন তিনি কমিউনিস্ট ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সব কর্মীর জন্য। কেবল রাজনীতি নয়, রাজনীতি, সংস্কৃতি, নাটক, নাচ, গান, বাঁশি বাজানোর সবটাতেই মাতিয়ে রাখতেন কর্মীদের।

 

অমল সেন কেবল একজন বিপ্লবীই ছিলেন না, তিনি ছিলেন ব্যতিক্রমী জীবনের অধিকারী। বিপ্লব ও বিপ্লবী আদর্শের প্রতি তিনি যেমন একনিষ্ঠ ছিলেন, একই সময়ে মানুষ হিসেবে তাঁর জীবনবোধ, রসবোধ, জীবনকে উপভোগ করার শক্তি ছিল অতুলনীয়। তাঁর সংস্পর্শে এসে যেকোনো মানুষ আনন্দ পেত। কি বয়স্ক, কি যুবক-কিশোর-শিশু-সবার কাছেই তিনি ছিলেন আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব।

অমল সেন তাঁর তাঁর ‘জনগণের বিকল্প শক্তি’ লেখায় দীর্ঘ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের নির্যাস হিসেবে জনগণের বিকল্প শক্তি গড়ে তোলার তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ দিয়েছেন । বর্তমান সমাজব্যবস্থার সার্বিক অবক্ষয়ের প্রেক্ষাপটে তাঁর লেখা ‘কমিউনিস্ট জীবন ও আচরণ রীতি প্রসঙ্গে’ বইটি শুধু কমিউনিস্টদের নয়, সার্বিকভাবে ব্যক্তি ও সমাজকল্যাণের দিকনির্দেশক দর্শনের ভূমিকা পালন করতে পারে। ইতিহাস তার গতিপথে কিছু মানুষ সৃষ্টি করে, আবার কিছু মানুষ তাঁদের জীবন দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। তাঁরা কিংবদন্তি। অমল সেন তেমনই একজন মানুষ।

 

কমরেড অমল সেন চলে গেছেন বেশ কয়েক বছর হয়ে গেলো। নতুন প্রজন্মের মানুষেরা তাঁকে বিশেষ চেনেন না। বুর্জোয়া নেতারা যেভাবে প্রচারের আলোতে থাকেন, একজন কমিউনিস্ট নেতার এ দেশে সেই সৌভাগ্য হয় না, যদিও দেশের পরিবর্তনকারী ঘটনায় তাঁদের ভূমিকা অসামান্য। ব্রিটিশ আমল, পাকিস্তান যুগ ও বাংলাদেশ সময়-এই তিন কাল ধরে তাঁর সংগ্রামী জীবন বিস্তৃত। এ দেশের রাজনীতি, সমাজ-সম্পর্ক ও আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি যে ভূমিকা রেখে গেছেন, তাঁর একটি সময়ের হিসাবেই তাঁকে অনন্য জীবনাধিকারী বলা যায়। আজীবন সংগ্রামী কমরেড অমল সেন ২০০৩ সালে ৮৯ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

আমি সতেরও মা, অসতেরও মা – প্রয়াণ দিবসে শ্রীশ্রীমা সারদা দেবী সম্পর্কে কিছু কথা।

“আমি সতেরও মা, অসতেরও মা — শ্রীশ্রীমা সারদা দেবী “

আজ ২০ জুলাই। ১৯২০ সালে আজকের দিনেই ইহজগত ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন মা সারদা। সারদা মা অত্যন্ত সহজ ভাবে জীবনের অতিবাহিত করার পথ দেখিয়ে গিয়েছেন। প্রথাগত শিক্ষা ছাড়াই তিনি গভীর দর্শনের কথা বলে গিয়েছেন, তা সত্যিই অবাক করার মতো। তাঁর দর্শন মেনে চললে জীবন ধারণ অনেক সহজ হয়ে যায়। জীবনে কোন পথে, কীভাবে চলতে হবে সেটাও বলে গিয়েছেন। আসলে তাঁর কাছে সবাই ছিল সন্তানের মতো। তাই সবাইকেই তিনি সন্তান মেনে কাছে টেনে নিতে পারতেন।

 

সারদা দেবী ছিলেন উনিশ শতকের বিশিষ্ট বাঙালি হিন্দু ধর্মগুরু রামকৃষ্ণ পরমহংসের পত্নী ও সাধনাসঙ্গিনী এবং রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সংঘজননী।ভক্তগণ সারদা দেবীকে শ্রীশ্রীমা নামে অভিহিত করে থাকেন। রামকৃষ্ণ আন্দোলনের বিকাশ ও প্রসারে তার ভূমিকা অনস্বীকার্য। হিন্দু নারী এবং হিন্দু – সহধর্মিনীর প্রকৃত প্রকাশ শ্রীশ্রীমার মধ্যে মূর্ত্ত হয়ে উঠেছিল । বিবাহিত হয়েও তিনি ছিলেন আজীবন ব্রহ্মচারিণী ; আবার ব্রহ্মচারিণী হয়েও গৃহিনী । তাঁর জীবন ছিল সরল , শুদ্ধ এবং প্রার্থনার নিবিড় নীরবতার মত শান্তিময় ও সাধনাময়।

জন্ম ও বংশ পরিচয়—

পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর মহকুমার অন্তর্গত প্রত্যন্ত গ্রাম জয়রামবাটীর এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে ১৮৫৩ সালের ২২ ডিসেম্বর  সারদা দেবীর জন্ম হয়। তার পিতা রামচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ও মাতা শ্যামাসুন্দরী দেবী অত্যন্ত ধর্মপরায়ণ ছিলেন। সারদা দেবীর পিতৃকূল মুখোপাধ্যায়-বংশ পুরুষানুক্রমে রামের উপাসক ছিলেন। সারদা দেবী ছিলেন তাদের জ্যেষ্ঠা কন্যা তথা প্রথম সন্তান। জন্মের পর প্রথমে সারদা দেবীর নাম রাখা হয়েছিল “ক্ষেমঙ্করী”। রাশ্যাশ্রিত নাম রাখা হয়েছিল “ঠাকুরমণি”। পরে “ক্ষেমঙ্করী” নামটি পালটে “সারদামণি” রাখা হয়।
বাল্যকালে সাধারণ গ্রামবাসী বাঙালি মেয়েদের মতো সারদা দেবীর জীবনও ছিল অত্যন্ত সরল ও সাদাসিধে। এক বার জয়রামবাটিতে দুর্ভিক্ষের সময় ক্ষুধার্তদের গরম খিচুড়ি বিতরণ করার সময় (তখন মা সারদার অল্প বয়স) তাঁর মধ্যে প্রকৃত জনসেবা করার রূপটি ফুটে উঠেছিল। ওই গরিব মানুষদের পাশে বসে হাতপাখায় তাদের বাতাস করে দিয়েছেন। ওই মানুষগুলো তখন মায়ের পরম স্নেহ পেয়ে আনন্দে মত্ত হয়ে উঠেছিল। অভাব, জ্বালা, যন্ত্রণা ভুলে সকলেই একাত্ম হয়েছিল সে দিন। আর মা সারদার এমন আচরণের নজির নানা উপলক্ষে রয়েছে একাধিক।অন্যের জন্য সহানুভূতির এই বোধ, এ সারদার জন্মগত। সারাজীবনই এই বোধ সঙ্গী তাঁর। সবার সব কষ্ট দূর হয় সে বোধে, কেবলমাত্র শ্রীশ্রীমা সারদা নামের আশ্রয়েই শীতল হয় কত অস্থির হৃদয়। সারদার একটাই পরিচয় তিনি সবার ‘মা’।

 

ছেলেবেলা–

ছেলেবেলায় ঘরের সাধারণ কাজকর্মের পাশাপাশি ছেলেবেলায় তিনি তার ভাইদের দেখাশোনা করতেন, জলে নেমে পোষা গোরুদের আহারের জন্য দলঘাস কাটতেন, ধানখেতে মুনিষদের (ক্ষেতমজুর) জন্য মুড়ি নিয়ে যেতেন, প্রয়োজনে ধান কুড়ানোর কাজও করেছেন। সারদা দেবীর প্রথাগত বিদ্যালয় শিক্ষা একেবারেই ছিল না। ছেলেবেলায় মাঝে মাঝে ভাইদের সঙ্গে পাঠশালায় যেতেন। তখন তার কিছু অক্ষরজ্ঞান হয়েছিল। পরবর্তী জীবনে কামারপুকুরে শ্রীরামকৃষ্ণের ভ্রাতুষ্পুত্রী লক্ষ্মী দেবী ও শ্যামপুকুরে একটি মেয়ের কাছে ভাল করে লেখাপড়া করা শেখেন। ছেলেবেলায় গ্রামে আয়োজিত যাত্রা ও কথকতার আসর থেকেও অনেক পৌরাণিক আখ্যান ও শ্লোক শিখেছিলেন।

বিবাহ ও সংসার জীবন —

 

তিন বছরের বালিকা সারদার সঙ্গে এক গানের আসরে প্রথম দেখা রামকৃষ্ণের। নবীন গায়ক দলের দিকে সারদার দৃষ্টি আকর্ষণ করে জিজ্ঞাসা করা হল, ‘তুমি কাকে বিয়ে করতে চাও’। বালিকা তার ছোট্ট তর্জনী অন্য দিকে রামকৃষ্ণের দিকে নির্দেশ করে বলল— একে। এরপর পাঁচ বছরের বালিকা সারদার বিবাহ হল চব্বিশ বছরের যুবক রামকৃষ্ণের সঙ্গে। রামকৃষ্ণ দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণী কালীর মন্দিরের পূজারি

১৮৫৯ সালের মে মাসে, সেকালে প্রচলিত গ্রাম্য প্রথা অনুসারে মাত্র পাঁচ বছর বয়সেই রামকৃষ্ণ পরমহংসের সঙ্গে তার বিবাহ সম্পন্ন হয়। শ্রীরামকৃষ্ণের বয়স তখন তেইশ। বিবাহের পরেও সারদা দেবী তার পিতামাতার তত্ত্বাবধানেই রইলেন। শ্রীরামকৃষ্ণ ফিরে গেলেন দক্ষিণেশ্বরে।এরপর চোদ্দো বছর বয়সে প্রথম সারদা দেবী স্বামী সন্দর্শনে কামারপুকুরে আসেন। এই সময় তিনি যে তিন মাস শ্রীরামকৃষ্ণের সঙ্গে বাস করেছিলেন, তখনই ধ্যান ও অধ্যাত্ম জীবনের প্রয়োজনীয় নির্দেশ তিনি পান তার স্বামীর থেকে।

 

দক্ষিণেশ্বর যাত্রা—

আঠারো বছর বয়সে তিনি শোনেন, তার স্বামী পাগল হয়ে গেছেন। আবার এও শোনেন যে তার স্বামী একজন মহান সন্তে রূপান্তরিত হয়েছেন। তখন তিনি দক্ষিণেশ্বরে শ্রীরামকৃষ্ণকে দেখতে আসার সিদ্ধান্ত নিলেন। ১৮৭২ সালের ২৩ মার্চ পিতার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বরে আসার পর তার ভয় ও সন্দেহ অপসারিত হয়। তিনি বুঝতে পারেন, তার স্বামী সম্পর্কে যে সব গুজবগুলি রটেছিল তা কেবলই সংসারী লোকের নির্বোধ ধারণামাত্র। তিনি দেখলেন, শ্রীরামকৃষ্ণ তখন সত্যিই এক মহান আধ্যাত্মিক গুরু। দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে এসে নহবতের একতলার একটি ছোটো ঘরে তিনি বাস করতে শুরু করলেন। ১৮৮৫ সাল অবধি তিনি দক্ষিণেশ্বরেই ছিলেন। তবে মাঝে মাঝে তার গ্রাম জয়রামবাটিতে গিয়েও স্বল্প সময়ের জন্য বাস করতেন। এই সময় সারদা দেবী ও দিব্য মাতৃকাকে অভিন্ন জ্ঞান করে শ্রীরামকৃষ্ণ ষোড়শী পূজার আয়োজন করেন। কালীর আসনে বসিয়ে পুষ্প ও উপাচার দিয়ে শ্রীরামকৃষ্ণ পূজা করেন তাকে। অন্য সকল নারীর মতো সারদা দেবীকেও তিনি দেবীর অবতার বলে মনে করতেন। এই কারণে তাদের বৈবাহিক জীবনও ছিল এক শুদ্ধ আধ্যাত্মিক সঙ্গত।সারদা দেবীকেই মনে করা হয় তার প্রথম শিষ্য।
কথিত আছে, শ্রীরামকৃষ্ণ দিব্যদৃষ্টিতে দেখেছিলেন যে তার আধ্যাত্মিক প্রচারকার্য পরবর্তীকালে চালিয়ে নিয়ে যাবেন সারদা দেবী। সেই কারণে তিনি তাকে মন্ত্রশিক্ষা দেন এবং মানুষকে দীক্ষিত করে আধ্যাত্মিক পথে পরিচালিত করতে পারার শিক্ষাও দান করেন। শেষ জীবনে যখন শ্রীরামকৃষ্ণ গলার ক্যানসারে আক্রান্ত তখন সারদা দেবীই স্বামীর সেবা এবং স্বামী ও তার শিষ্যদের জন্য রন্ধনকার্য করতেন।

তীর্থ যাত্রা–

শ্রীরামকৃষ্ণের মৃত্যুর পর তাকে কেন্দ্র করে অঙ্কুরিত ধর্ম আন্দোলনে এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন সারদা দেবী। শ্রীরামকৃষ্ণের প্রয়াণের দুই সপ্তাহ পর লক্ষ্মী দেবী, গোপাল মা প্রমুখ শ্রীরামকৃষ্ণের গৃহস্থ ও সন্ন্যাসী শিষ্যদের সঙ্গে নিয়ে সারদা দেবী উত্তর ভারতের তীর্থ পর্যটনে যাত্রা করেন। রামচন্দ্রের স্মৃতিবিজড়িত অযোধ্যা ও কাশীর বিশ্বনাথ মন্দির দর্শন করেন তারা। পরে তিনি দর্শন করেন কৃষ্ণের লীলাক্ষেত্র বৃন্দাবন। কথিত আছে, এই বৃন্দাবনেই সারদা দেবীর নির্বিকল্প সমাধি লাভ হয়েছিল। এবং এই বৃন্দাবন থেকেই গুরু রূপে তার জীবনের সূত্রপাত হয়। মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত, যোগেন মহারাজ প্রমুখ শ্রীরামকৃষ্ণের শিষ্যদের তিনি মন্ত্রদীক্ষা দান করেন। বৃন্দাবনেই শ্রীশ্রীমা রূপে তার সত্তার সূচনা ঘটে। তার জীবনীকার ও শিষ্যদের মতে, তাকে মা বলে ডাকা কেবলমাত্র সম্মানপ্রদর্শনের বিষয়ই ছিল না। যাঁরাই তার সাক্ষাতে আসতেন, তারাই তার মধ্যে মাতৃত্বের গুণটি আবিষ্কার করতেন।

 

বাগবাজারের মায়ের বাটী—

তীর্থযাত্রার শেষে সারদা দেবী কয়েকমাস কামারপুকুরে বাস করেন। এই সময় একাকী অত্যন্ত দুঃখকষ্টের মধ্যে দিয়ে তার জীবন অতিবাহিত হতে থাকে। ১৮৮৮ সালে এই খবর শ্রীরামকৃষ্ণের ত্যাগী শিষ্যদের কানে পৌঁছলে তারা তাকে কলকাতায় নিয়ে এসে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। স্বামী সারদানন্দ কলকাতায় তার জন্য স্থায়ী বাসভবন নির্মাণ করান।

মা সারদা ও শ্রীরামকৃষ্ণ আন্দোলন–

‘মায়ের বাটী’ নামে পরিচিত বাগবাজারের এই বাড়িটিতেই জয়রামবাটীর পর সারদা দেবী জীবনের দীর্ঘতম সময় অতিবাহিত করেছিলেন। প্রতিদিন অগণিত ভক্ত এই বাড়িতে তার দর্শন, উপদেশ ও দীক্ষালাভের আশায় ভিড় জমাতেন। তার মাতৃসমা মূর্তি ও মাতৃসুলভ ব্যবহার সকলকে মানসিক শান্তি দিত। তার নিজের সন্তানাদি না থাকলেও, শিষ্য ও ভক্তদের তিনি মনে করতেন তার আধ্যাত্মিক সন্তান।শ্রীরামকৃষ্ণ স্বয়ং তাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন নিজের প্রয়াণের পর রামকৃষ্ণ আন্দোলন চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার এবং ভক্তদের বলেছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ ও সারদা দেবীর সত্তায় কোনো পার্থক্য আরোপ না করতে। বলা হয়, কয়েকজন শিষ্যও তার দর্শন লাভের পর আধ্যাত্মিক অনুভূতি প্রাপ্ত হন। কেউ কেউ তার সাক্ষাৎ দর্শনের পূর্বেই দেবী রূপে তার দর্শন লাভ করেন। আবার কেউ কেউ স্বপ্নে তার থেকে দীক্ষা লাভ করেন বলেও কথিত আছে। এইরকমই একটি উদাহরণ হল, বাংলা নাটকের জনক গিরিশচন্দ্র ঘোষ, যিনি মাত্র উনিশ বছর বয়সে স্বপ্নে তার কাছে থেকে মন্ত্র লাভ করেছিলেন। অনেক বছর পরে যখন তিনি সারদা দেবীর সাক্ষাৎ লাভ করেন, তখন অবাক হয়ে দেখেন তার স্বপ্নে দেখা দেবী আসলে ইনিই। উদ্বোধন ভবনে শ্রীরামকৃষ্ণের শিষ্যারা তার সঙ্গ দিতেন। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন গোপাল মা, যোগিন মা, গৌরী দিদি ও লক্ষ্মী মা।

জীবনের অন্তিম লগ্ন–

১৯১৯ সালের জানুয়ারি মাসে শ্রীমা জয়রামবাটী যাত্রা করেন এবং সেখানেই এক বছর কাটান। জয়রামবাটীতে অবস্থানের শেষ তিন মাস তার স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে। ১৯২০ সালে ২৭ ফেব্রুয়ারি অশক্ত অবস্থায় তাকে কলকাতায় আনা হয়। পরের পাঁচ মাস তিনি রোগযন্ত্রণায় অত্যন্ত কষ্ট পান। মৃত্যুর পূর্বে এক শোকাতুরা শিষ্যাকে তিনি উপদেশ দিয়েছিলেন,যদি শান্তি চাও, মা, কারও দোষ দেখো না। দোষ দেখবে নিজের। জগৎকে আপন করে নিতে শেখ। কেউ পর নয়, মা, জগৎ তোমার। মনে করা হয় এই উপদেশটিই বিশ্বের উদ্দেশ্যে তার শেষ বার্তা।

 

তার প্রধান শিষ্যগণ–

স্বামী নিখিলানন্দ, স্বামী বীরেশ্বরানন্দ, স্বামী অশেষানন্দ, স্বামী বিরজানন্দ।

উপদেশ ও উক্তি—

“আমি সত্যিকারের মা; গুরুপত্নী নয়, পাতানো মা নয়, কথার কথা মা নয় – সত্য জননী।”
“মানুষ তো ভগবানকে ভুলেই আছে। তাই যখন যখন দরকার, তিনি নিজে এক একবার এসে সাধন করে পথ দেখিয়ে দেন। এবার দেখালেন ত্যাগ।”
“যেমন ফুল নাড়তে-চাড়তে ঘ্রাণ বের হয়, চন্দন ঘষতে ঘষতে গন্ধ বের হয়, তেমনি ভগবত্তত্ত্বের আলোচনা করতে করতে তত্ত্বজ্ঞানের উদয় হয়।
ভালবাসায় সবকিছু হয়, জোর করে কায়দায় ফেলে কাউকে দিয়ে কিছু করানো যায় না।”
“সৎসঙ্গে মেশো, ভাল হতে চেষ্টা কর, ক্রমে সব হবে।”
“কাজ করা চাই বইকি, কর্ম করতে করতে কর্মের বন্ধন কেটে যায়, তবে নিষ্কাম ভাব আসে। একদণ্ডও কাজ ছেড়ে থাকা উচিত নয়।”
“মনটাকে বসিয়ে আলগা না দিয়ে কাজ করা ঢের ভাল। মন আলগা হলেই যত গোল বাধায়।”
“আমি সতেরও মা, অসতেরও মা।”
“ভাঙতে সবাই পারে, গড়তে পারে কজনে? নিন্দা ঠাট্টা করতে পারে সব্বাই, কিন্তু কি করে যে তাকে ভাল করতে হবে, তা বলতে পারে কজনে?”
শ্রীশ্রীমা ছিলেন ভারতীয় নারীর আদর্শের প্রতীক । তিনি প্রাচীনা হয়েও নবীনা ছিলেন । ভারতীয় প্রাচীন আদর্শে মন্ডিত হয়েও তিনি আধুনিক হিন্দুনারীর সমুজ্জল প্রতীক ছিলেন ।কুসংস্কার ও শিক্ষার অভাবে বিভ্রান্ত ভারতের সাধারণ মানুষের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ও চেতনা ফিরিয়ে আনার কাজে যখন স্বামী বিবেকানন্দ  আসমুদ্রহিমাচল পদব্রজে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন তখন সারদা দেবী ছিলেন তাঁর একমাত্র প্রেরণা । তাঁর আশীর্বাদপুত অধুনা বিস্তৃত রামকৃষ্ণ মিশন আজ বিশ্ববিখ্যাত।   শ্রীমা বলতেন , “ শ্রীরামকৃষ্ণ ও আমি অভেদ । আমার আশীষ তাঁর আশীষতুল্য বলে মনে করবে ।”
জাতিধর্মনির্বিশেষে তার করুণা সবাইকে শান্তি ও আধ্যাত্মিক পথের সন্ধান দিয়েছে । সীতা , সাবিত্রী , শ্রীরাধা , মীরাবাঈ প্রভৃতির মত শ্রীশ্রীমাও ভারতীয় নারী জাতির আদর্শে পূর্ণ প্রকাশিত হয়েছিলেন । মায়ের উপদেশ আজও জীবনে মেনে চলেন অনেকে। তিনি বলেন, ভালবাসায় সবকিছু হয়, জোর করে কায়দায় ফেলে কাউকে দিয়ে কিছু করানো যায় না।”শ্রীশ্রী মা ছিলেন সকলের মা ;এই  বিশ্বজগতের মা। স্বামী বিবেকানন্দ সারদা দেবীকে ,জীবন্ত দুর্গা বলে অভিহিত করেছিলেন ।রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সন্ন্যাসীরা তাঁকে ‘সংঘ জননী’ বলে জানতেন।

অন্তিম যাত্রা–

১৯২০ সালের ২০ জুলাই রাত দেড়টায় কলকাতার উদ্বোধন ভবনে তার প্রয়াণ ঘটে। বেলুড় মঠে গঙ্গার তীরে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। এই স্থানটিতেই বর্তমানে গড়ে উঠেছে শ্রীমা সারদা দেবীর সমাধিমন্দির।

 

উপসংহার—-

 

মা ছিলেন সকল সামাজিক বিধিনিষেধের ওপরে।  তাকে গন্ডিভাঙা মা বলে ভক্তেরা অভিহিত করেছেন।  মা সকলের ইহকাল ও পরকালের আশ্রয়। সকলেই তার করুণা লাভ করেছে।  মুচি,  মেথর,  ডোম,  বাগদি, চন্ডাল, মুসলমান, আতুর সকলেই মায়ের কাছে অবাধ আশ্রয় পেয়ে ধন্য হয়েছে। তাই তো তিনি হয়ে উঠেছিলেন সকলের মা।

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

কেন পালিত হয় আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার দিবস, দিনটির পালনের গুরুত্ব কি?

ভূমিকা—

আজ আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার দিবস। এটি আন্তর্জাতিক অপরাধ বিচার দিবস বা আন্তর্জাতিক বিচার দিবস হিসাবেও পালন করা হয়ে থাকে। আন্তর্জাতিক অপরাধ বিচারের উদীয়মান ব্যবস্থাকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে ১৭ জুলাই সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার দিবস পালিত হয়। ১৭ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গঠনের চুক্তি গ্রহণের তারিখকে স্মরণ করে রাখার জন্য এই দিনটিকে গ্রহণ করা হয়।  তাই আজ মানবতাবিরোধী অপরাধসহ যেকোনো ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে এবং সকলের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে  দেশে দেশে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার দিবস।

 

ইতিহাস—

 

আমরা জানি বিশ্বব্যাপী সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধগুলোর বিচার প্রক্রিয়া সুনিশ্চিত করতে বিশ্বের অনেক দেশেই বিচ্ছিন্নভাবে নানা রকমের আন্দোলন হয়েছে। তবে এ ধরনের বিচার প্রক্রিয়ার আন্তর্জাতিক কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা মোটেই সহজ ছিল না। এর ধারনা আর প্রেক্ষাপটটিও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপরই আন্দোলনের রূপ নিয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত এ রকম একটি আদালত প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছে।

১৯৪৮ সালে জাতিসংঘের জেনোসাইড কনভেনশন স্বাক্ষরিত হয়। ফলে পরবর্তী সময়ে নুরেমবার্গ ও টোকিওতে সংঘটিত হওয়া অপরাধের বিচার কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়। এসব ঐতিহাসিক ঘটনা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ন্যায়বিচার পাবার গুরুত্ব বাড়িয়ে দেয়। গণমানুষের প্রত্যাশাকে আশার আলো দেখিয়ে দিতে সাহায্য করে।

এসব ঘটনা ও সাফল্য ‘রোম সংবিধি’ এর মতো চুক্তি প্রতিষ্ঠার পটভূমি তৈরি করতে সাহায্য করে। শুরুতে ১২০টি দেশ ভোটের মাধ্যমে ‘রোম সংবিধি’ অনুমোদন করে। প্রক্রিয়ার বেশ কয়েকটি দেশ এই চুক্তির সঙ্গে একাত্ম হয়েছে। ।

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ১৯৯৮ সালের এই দিনে নেদারল্যান্ডসের হেগে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১০ সালের ১ জুন উগান্ডার রাজধানী কাম্পালাতে অনুষ্ঠিত রোম বিধির রিভিউ কনফারেন্সে ১৭ জুলাই দিনটি আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয় জাতিসংঘ।

 

পালনের উদ্দেশ্য—-

 

অপরাধের বিচার করে বিশ্বজুড়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য পালিত হয় আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার দিবস।  অপরাধ সেটা যেখানেই হোক আর যে দেশেই হোক, মানুষ যেন বিচার প্রক্রিয়ার আশ্রয় নিতে পারে সেই ধারনাকে প্রতিষ্ঠিত করতে পালন করা হয় আন্তর্জাতিক ন্যায় বিচার দিবস।

একটি স্বাধীন দেশের জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হওয়া আবশ্যক। দেশের প্রতিটি মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়া তার নাগরিক অধিকার। এই ন্যায়বিচারের অধিকার নিশ্চিত করাই এই দিবস পালনের উদ্দেশ্য।

বিশ্বের নানা স্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধগুলোকে যেন বিচার প্রক্রিয়ায় সম্মুখীন করা যায়, সেজন্য প্রতিষ্ঠা করা হয় আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত। ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠা পাওয়া এই বিশেষ আদালতটির সদর দপ্তর নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে। তবে যে কোনো দেশেই এই আদালতের বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে পারে।

 

পালনের গুরুত্ব—

 

আসলে ন্যায়বিচার একটি আপেক্ষিক বিষয়। দেশ, কাল হিসেবে ন্যায়বিচার ভিন্ন। এমনকি অনেক সময় বিচার করলেও তা কার্যকর করা যায় না। সেক্ষেত্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে বলা যায় না। ন্যায়বিচার হতে পারে জলের জন্য, শিক্ষার জন্য, সমঅধিকারের জন্য কিংবা অন্য যে কোনো বিষয়ে। এক্ষেত্রে প্লেটোর রিপাবলিক বইয়ের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। প্লেটো সেখানে বলেছেন সমাজ তৈরি হয় ন্যায়ের মধ্য দিয়ে। ঘরের মধ্যে, সমাজের মধ্যে ন্যায়বিচার হচ্ছে কিনা, ধনী দেশের সঙ্গে সম্পর্কে গরিবের ন্যায়বিচার হচ্ছে কিনা তা দেখতে হবে। সেই বিচারের মধ্য দিয়েই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পায়।

 

উপসংহার—

 

সর্বপরি বলা যায় ন্যায়বিচার ভাবনা টা কেবল মাত্র খাতায় কলমে সীমাবদ্ধ হলে চলবে না। একটি মনুষ প্রকৃত ন্যায়বিচার পাচ্ছে কিনা সেটাও পর্যবেক্ষণ করতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় প্রকৃত ন্যায় বিচার পর্থীরা বঞ্চিত থেকে যায়। সমাজিক প্রভাব প্রতিপত্তি, অর্থবল এর প্রভাব খাটিয়ে অনেকেই নিজেদের দোষ ঢেকে দিতে সক্ষম হয়, যা কখনই কাম্য নয়। তাই ভাবতে হবে দৃশ্যমান বিচারের বাইরেও একটি বিচার আছে। সেখানে মৌলিক ন্যায়বিচার করতে পারছেন কিনা সেটি বিবেচনায় নিতে হবে। সংখ্যাগরিষ্ঠের জন্য ন্যায়বিচার করা সম্ভব না হলে সিস্টেম বদলাতে হবে। যাতে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ন্যায়বিচার প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত না হতে পরে। ন্যায়বিচার পাওয়া একটি মানুষের সমাজিক আধিকার। তাই প্রতি বছর, সারা বিশ্বের লোকেরা এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক অপরাধমূলক বিচার, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সমর্থনে বিভিন্ন ইভেন্টের আয়োজন করে থাকে এবং আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার দিবস পালন করে থাকে।

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

 

Share This
Categories
প্রবন্ধ

ভারতীয় অর্থনীতিতে কৃষি আজও প্রাসঙ্গিক – একটি পর্যালোচনা : দিলীপ রায়।

আমাদের দেশের অর্থনীতির মূল স্তম্ভ হচ্ছে কৃষি । বিশেষ করে গ্রামীণ অর্থনীতি  সম্পূর্ণভাবে কৃষিনির্ভর । কৃষিই  গ্রামীণ মানুষের জীবিকার মূল অবলম্বন । অধিকাংশ মানুষ সরাসরি কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে । অনেকে আবার কৃষির সঙ্গে যুক্ত আনুষঙ্গিক কাজ কর্মে নিয়োজিত । তাই কৃষি গ্রামীণ  অর্থনীতির মেরুদন্ড । বিভিন্ন সমীক্ষার রিপোর্টে জানা গেছে, কৃষি থেকে প্রায় ৬৯ শতাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জীবিকা নির্বাহ করে । কৃষিকাজে পুরুষ, মহিলা এমন কি শিশু ও বয়স্করাও নিযুক্ত ।  এছাড়া দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে (জি ডি পি) এক-পঞ্চমাংশ কৃষি থেকে আসে ও দশ শতাংশ রপ্তানী থেকে আয় আসে । শেষ জনগণনা অনুযায়ী ভারতে গ্রামীণ মানুষের সংখ্যা ৮৩-৩ কোটি । এদের জীবিকার মূল উৎস হল কৃষি,  পশুপালন, মৎস্যচাষ, কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াকরণ, প্রভূতি । “আর্থ-সামাজিক এবং জাতি/বর্ণ আদমশুমারি, ২০১১ (SECC, 2011)” প্রকাশ পেয়েছে ২০১৫তে । ঐ আদমশুমারি অনুযায়ী দেশের ২৪-৩৯ কোটি বাড়ির মধ্যে ১৭-৯১ কোটি বাড়িই গ্রামে । গ্রামীণ বাড়িগুলির মধ্যে ৩১-২৬ শতাংশ বাড়ির মানুষই গরীব । তাঁদের আয়ের কোনো নিশ্চয়তা নেই, বলা চলে তাঁদের আয়ের  উৎস অনিশ্চয়তায় ভরা । তাই কৃষি ক্ষেত্রে অগ্রগতি ঘটাতে পারলে গ্রামীণ কর্মসংস্থান যেমন বাড়বে, তেমনি কৃষি উৎপাদন বাড়াতে পারলে কৃষক ও গ্রামীণ মানুষদের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে । দরিদ্র দূরীকরণ সহজ হবে । অন্যদিকে গ্রামীণ আর্থনীতি চাঙ্গা হবে ।  কৃষি সংযুক্ত ক্ষেত্র যেমন ফল, ফুলচাষ, প্রাণীপালন, দুগ্ধ ও মৎস্য উৎপাদন বাড়বে ।

 

আমরা জানি, ভারতের কৃষিক্ষেত্রে প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষিদের সংখ্যাই বেশী । যাদের জমির পরিমাণ ১ হেক্টরের নীচে তারাই প্রান্তিক চাষি এবং যাদের হাতে ১-২ হেক্টর জমি রয়েছে তারা ক্ষুদ্র চাষি । দেশের কৃষকদের প্রায় ৮৬ শতাংশ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক । উল্লেখ থাকে যে, বাজারের চাহিদা সম্পর্কে যথাযথ ধারণা না থাকা, কার্যকর ও ব্যবসাশ্রয়ী লজিস্টিক্স পরিষেবার তেমনভাবে সুযোগ না  পাওয়া  এবং দরাদরির ক্ষমতা না থাকার কারণে ক্ষুদ্র চাষিরা তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্যের যথাযথ মূল্য পান না । একটি বিশেষ সমীক্ষায় দেখা গেছে যে শ্রমনিবিড় শস্যচাষ বা পশুপালনের ক্ষেত্রে ছোটো ছোটো খামারগুলি অত্যন্ত উপযোগী । কিন্তু এদেশে ক্ষুদ্র কৃষকদের জোতগুলি এতটাই ছোটো যে সেই আয়ে পরিবারের গ্রাসাচ্ছাদন হয় না । এই কারণে ক্ষুদ্র চাষিরা আজও আর্থিকভাবে দুর্বল  । (তথ্যসূত্রঃযোজনা,৫/২২) ।

 

( ২ )
এবার আসছি কৃষিজাত ফসলের কথায় । কৃষি থেকে আয় বা অন্যকথায় লভ্যাংশ দিনের পর দিন কমছে । কৃষিজাত ফসলের দাম অধিকাংশ সময় নিম্নমুখী । বিশেষ করে চাষী যখন সারা বছর চাষের মরশুমটা কায়িক পরিশ্রম করে ফসল ঘরে তুললো, তখন তাঁরা তাঁদের কষ্টার্জিত ফসলের ন্যায্য দাম পেল না । কৃষি উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে এবং জমিদারি প্রথার অবসান ঘটাতে এক সময় ব্যাপক ভূমি সংষ্কার হয়েছিল । বড় বড় জলাশয় তৈরী করে বা বাঁধ নির্মাণ করে সেচের ব্যবস্থা করেছিল যাতে সেচযোগ্য জমি বাড়ানো যায় । কৃষিক্ষেত্রে  উন্নয়নের আরও ধাপ হিসাবে আমরা দেখতে পাই  উচ্চ ফলনশীল বীজের ব্যবহার, সার ও ঔষধের প্রয়োগ ।  তা ছাড়া বহুফসলি চাষের ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির উপর জোর দেওয়া হয়েছিল । কিন্তু বাস্তবে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের ব্যাপকতা সেভাবে বাড়েনি । যার জন্য কৃষি ব্যবস্থা এখনও অনুন্নত এবং সেকেলের ।  শীর্ণদেহি বলদের কাঁধে লাঙ্গল জোয়াল দিয়ে চলছে কৃষিকাজ । তবে একটা কথা এখানে প্রাসঙ্গিক, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য খাদ্য শস্যের উৎপাদন যেমন ধান, গম , জোয়ার, বাজরা, ভুট্টা  অনেকটাই বেড়ে গেছে । মহাজনি প্রথা বিলোপের জন্য কৃষি ঋন দেওয়ার ক্ষেত্রে সমবায় গঠনের উপর জোর দেওয়া হয়েছে । কৃষি ঋনের সহজলভ্যতার জন্য রয়েছে  “জাতীয় কৃষি ও গ্রামোন্নয়ন ব্যাঙ্ক”  (NABARD) । শস্যবীমা ও শস্যের ন্যুনতম দাম বেঁধে দেওয়ার ফলে গরীব কৃষকেরা অনিশ্চয়তার হাত থেকে যদিও কিছুটা রক্ষা পাচ্ছে । কিছুটা হলেও বর্তমানে চিরাচরিত কৃষি প্রথার বদলে আধুনিক পদ্ধতিতে চাষের উপর ঝোঁক দেখা যাচ্ছে ।  অন্যদিকে এটাও ঘটনা, কৃষিজাত দ্রব্যের দাম কিন্তু অন্যান্য দ্রব্যের দামের সঙ্গে সমানতালে বাড়ে না । অথচ যতো দিন যাচ্ছে চাষিদের চাষের খরচ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে । চাষে নিযুক্ত কৃষি শ্রমিকের দাম যেমন বাড়ছে, তেমনি চাষের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র অর্থাৎ রাসায়নিক সার, ফসলের পোকা-মাকড় মারবার ঔষধপত্রের দামও বাড়ছে । ফলে চাষ থেকে উঠে আসা লভ্যাংশ ক্রমহ্রাসমান । চাষীর চাষজাত ফসলের দামের উপর গ্রামীণ অর্থনীতি নির্ভরশীল । অর্থকরী ফসলের উৎপাদনের অবস্থা তথৈবচ । আমরা জানি, অর্থকরী ফসল বলতে বিশেষ করে বাংলায় পাট চাষ । পাটের বাজারের তীব্র মন্দার কারণে পাট চাষও তলানীতে । তা ছাড়া ইদানীং স্বল্প বৃষ্টির কারণে পাট পচানো ভীষণ সমস্যা !  সুতরাং গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গার স্বার্থে কৃষির উপর যথাযথ গুরুত্ব আরোপ ভীষণ জরুরি  ।

 

সেচ ব্যবস্থায় জোর দেওয়া হয়েছে একথা ঠিক, কিন্তু সেটা যথোপযুক্ত নয়  ।  “সেচ ব্যবস্থা” চাষের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত ।  এখানে বলা ভাল, জলসম্পদ সঠিকভাবে চাষের কাজে ব্যবহার করাটা চাষের উন্নয়নে বাস্তবসম্মত ও সময়োপযোগী । ধান, গম, পাট, রবি শস্য, প্রত্যেকটা ফসলের ক্ষেত্রে যথোপযুক্ত সেচ ব্যবস্থা অত্যাবশ্যক । অথচ বাস্তবচিত্র উল্টো । এখনও প্রয়োজনের তুলনায় সেচ ব্যবস্থা অপর্যাপ্ত । সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষায় প্রকাশ, চাষযোগ্য জমির মাত্র ৪৮ শতাংশ সেচের আওতার মধ্যে ।  তবে এটা ঘটনা, সেচ ব্যবস্থার ব্যাপক প্রসারের জন্য সরকারি প্রয়াসের পাশাপাশি নাবার্ড যথেষ্ট আগ্রাসী । বিভিন্ন সূত্র থেকে যেটা বোঝা যাচ্ছে, সেচের জন্যে এখনও নলকূপের উপর ৬০ শতাংশ মানুষ নির্ভরশীল । বাকী ৪০ শতাংশ ক্যানেলের মাধ্যমে সেচ ব্যবস্থা । বর্তমানে সেচ ব্যবস্থার প্রক্রিয়ার উন্নয়নের জন্য আধুনিক সেচ ব্যবস্থা চালু করাটা প্রনিধানযোগ্য । উন্নত চাষের প্রয়োজনে যথাযথ সেচ ব্যবস্থার ব্যবস্থাপনা আশুকর্তব্য । তবেই কৃষি উন্নয়নে জোয়ার আনাটা সম্ভব । (তথ্যসূত্রঃ সংগৃহীত)

 


( ৩ )
এবার আসছি কৃষিকাজে সারের ব্যবহারে । নিয়মিত জমির মাটির  স্বাস্থ্য পরীক্ষা চাষযোগ্য জমিতে উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদে বাঞ্ছনীয় । মাটি পরীক্ষার পর সঠিক সার নির্ধারন চাষের পক্ষে উপোযোগী । যার জন্য মাটি পরীক্ষার চাহিদা দিন দিন বাড়ছে । এই কারণেই ‘রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনা’ চালু হয়েছে । মাটির স্বাস্থ্য কার্ড বিলি ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে । আমরা জানি, কৃষিজমিতে জৈব সার ব্যবহার ফসলের ফলনকে বাড়াতে সাহায্য করে । এই প্রসঙ্গে একটা কথা খুব জরুরি, খাদ্যের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে গেলে খাদ্যের যোগান-বৃদ্ধি অবশ্যম্ভাবী । আবার কিছু কিছু ফসল আছে যেগুলো সরাসরি খাদ্যের ব্যবহারে আসে না, যেমন  তুলো, ইত্যাদি । তবুও আমাদের দেশের কৃষক সমাজ লাভের কথা মাথায় রেখে প্রযুক্তির সাহায্যে তুলো চাষকে লাভযোগ্য ফসল হিসাবে চাষ করছে । এইভাবে চাষের উন্নয়ন গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশে প্রভাব ফেলবে ।
আজকাল গ্রীণহাউস, রক্ষণশীল চাষ (Protected cultivation), ইত্যাদি চাষের কথা শোনা যাচ্ছে । রক্ষণশীল চাষ নাকি উচ্চ প্রযুক্তির চাষ । অথচ রক্ষণশীল চাষের প্রযুক্তি নির্ভর করছে গ্রীণহাউসের কাজের উপর । গ্রীণহাউসের কাজ হচ্ছে মাটি ও জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রনে রাখা । এ্যানার্জিকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো । গ্রীণহাউসের ভিতর এমনভাবে মাইক্রো জলবায়ু  সৃষ্টি হয় বা ব্যবহার হয় যাতে উচ্চ গুণমানের ফসল ফলে । যেমন ভেজিটেবলস্‌, ফুল, ইত্যাদি সারা বৎসর চাষ হয় । এইভাবে চাষকে লাভজনক করার তাগিদে প্রযুক্তির ব্যবহারের ব্যপ্তি ঘটছে । যদিও বাস্তবে রক্ষণশীল চাষের প্রযুক্তি আমাদের দেশে একটা নতুন অধ্যায় । এটার বাস্তবায়নে অনেক বাধা । আমাদের দেশে এই জাতীয় চাষের বাস্তবায়ন প্রশ্ন চিহ্নের মধ্যে ?
এবার দেখা যাক কৃষিক্ষেত্রকে চাঙ্গা করার স্বার্থে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির ভূমিকা । কেন্দ্রিয় সরকারের তথ্য থেকে দেখা যায় মোট প্রদত্ত ঋনের মধ্যে কৃষিক্ষেত্রে বিভিন্ন ব্যাঙ্কগুলির ঋনের পরিমান ২০১০-১১ সালে মাত্র ২১-৭৬ শতাংশ । পশ্চিম বঙ্গে ২০১২-১৩ সালে (এপ্রিল—ডিসেম্বর) তথ্যে প্রকাশ,  বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি কৃষিঋন প্রকল্পে নির্দ্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৪৯ শতাংশ ঋন প্রদান করেছে । আঞ্চলিক ব্যাঙ্কগুলি লক্ষ্যমাত্রার ২৮ শতাংশ ও সমব্যয় ব্যাঙ্কগুলি ৫০ শতাংশ ঋনপ্রদানে সাফল্যে লাভ করেছে । এছাড়া সমব্যয় ব্যাঙ্কগুলি রাজ্যের প্রাথমিক  কৃষিঋন সমব্যয় সমিতিগুলির (প্যাকস্‌) মাধ্যমে কৃষিঋন ও কৃষিকাজের অন্যান্য উপাদানের জন্যে ঋন প্রদান করে । নাবার্ড উৎপাদনের মাধ্যমে সম্পদ সৃষ্টি করার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক, জমি ভাড়া বা ইজারা নিয়ে চাষ করে এমন কৃষক  ও ভাগচাষিদের ঋন পরিষেবা দেবার জন্য প্রকল্প গ্রহন করেছে । এতে কৃষি উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বাড়বে । দেশের আর্থিক উন্নয়নের হার বৃদ্ধির সুবিধা হবে (তথ্যসূত্রঃ যোজনা -৬/১৪, পৃঃ ৪৫) ।

 

( ৪ )
সমবায় সংগঠনগুলি কৃষি উৎপাদনে সর্বক্ষণ ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে আসছে । সেই কারণে গ্রামীণ কৃষি উৎপাদন ও কৃষকদের হিতার্থী হিসাবে সবরকম সহযোগিতা দিতে ও তাদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে সমব্যয় সংগঠনের  সদর্থক ভূমিকা প্রশংসনীয় । প্রাথমিক কৃষিঋন দান, কৃষি কাজে  যাবতীয় উপাদান সরবরাহ, ঋনের ব্যবস্থা, কৃষিবীমার মাধ্যমে কৃষকের ঝুঁকি মোকাবিলা, কৃষিজাত পণ্যের ন্যায্য দামে ক্রয় ও বিক্রয় ও গুদামজাত করতে, হিম ঘরের ব্যবস্থা করতে, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের শিক্ষা, ইত্যাদিতে বিশেষ ভূমিকা গ্রহন করছে ।
এবার একঝলক ভারতীয় অর্থনীতির চিত্রটা দেখে নেওয়া যাক । ভারতের অর্থনীতি বৈচিত্র্যময় । কৃষিকাজ, হস্তশিল্প, বস্ত্রশিল্প, উৎপাদন এবং বিভিন্ন সেবা ভারতের অর্থনীতির অংশ । ভারতের খেটে খাওয়া মানুষের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ প্রত্যক্ষভাবে কিংবা পরোক্ষভাবে কৃষিজমি থেকে জীবিকা নির্বাহ করে । এখনও ভারতের অর্থনৈতিক পরিকাঠামো ৬৯ শতাংশ কৃষির উপর নির্ভরশীল । তবে সেবাখাত ক্রমশ প্রসারলাভ করছে, ফলে ভারতীয় অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠছে । ডিজিটাল যুগের আর্বিভাবের পর শিক্ষিত লোকের সহজলভ্যতাকে কাজে লাগিয়ে ভারত আউটসোর্সিং  ও কারিগরি সহায়তাদানের একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসাবে  পরিণত হয়েছে বা হচ্ছে । এটা ঘটনা, ভারত সফটওয়্যার ও আর্থিক  সেবার ক্ষেত্রে সারা বিশ্বে অতি দক্ষ শ্রমিক সরবরাহ করে থাকে । এছাড়া  ঔষধ শিল্প, জীবপ্রযুক্তি, ন্যানোপ্রযুক্তি, টেলিযোগাযোগ, জাহাজ নির্মান, পর্যটন শিল্পগুলিতে জোড়ালো প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা ।
এই মুহূর্তে যেটা দরকার, কৃষিজাত ফসলের সঠিক দাম । ফসলের ন্যায্য দাম নিয়েই কৃষকদের মধ্যে যতো অশান্তি । ফসলের ন্যায্য দামের জন্য চাই ‘কৃষি বাজার’ । আমাদের দেশের চাষিরা উপযুক্ত বাজারের অভাবে তাঁদের বহু  কষ্টার্জিত ফসলের দাম ঠিকমতো পায় না । ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিরা যাতে না ঠকে, তার জন্য চাই সুসংহত কৃষি বিপননের পরিকাঠামো । প্রয়োজনে কৃষি-বাণিজ্য নীতির খোলনলচে পাল্টানো । যাতে কৃষকের কৃষি-পণ্যের জন্য সরকার কর্তৃক উপযূক্ত “লাভজনক দাম” বা সংগ্রহ মূল্যের নির্ধারন ও নিশ্চয়তা প্রদান সম্ভব হয়  । সবশেষে যেটা জরুরি, সেটা হচ্ছে কৃষি বীমার  সম্প্রসারণ । কৃষি কাজ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ । কৃষি ক্ষেত্রে অনেক অর্থ ও শ্রম বিনিয়োগ করে আশানুরূপ ফল না পেলে কৃষকের দুর্দশা বাড়ে । এজন্য শস্য বীমা, কৃষি বীমা, ইত্যাদি বীমার আরও জোরদার করা সময়োপযোগী । বীমার আওতায় যাতে সমস্ত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষি আসে সেদিকে সরকারি সক্রিয় দৃষ্টিভঙ্গি আশুকর্তব্য ।
এখানে একটি কথা প্রনিধানযোগ্য, যেহেতু ভারতীয় অর্থনীতি কৃষিভিত্তিক ও কৃষিই দেশের প্রায় ৫২ শতাংশ মানুষের প্রধান জীবিকা এবং দেশের প্রধান প্রধান শিল্পগুলির কাঁচামালের মূল উৎস,  তাই কৃষিক্ষেত্রে কৃষি শ্রমিকদের জন্য সর্বাত্মক  সুরক্ষা প্রকল্প থাকা উচিত যেখানে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার বিধানমতো বিভিন্ন  আপৎকালীন পরিস্থিতিতে কৃষকদের আর্থিক সুরাহা দেওয়া হবে । এই ধরনের আপৎকালীন পরিস্থিতির মধ্যে মৃত্যু, পঙ্গুত্ব, শারীরিক আঘাত, বেকারত্ব ও বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনাকে ধরা হয়েছে । এই ধরনের প্রকল্প রূপায়নের জন্য তৃণমূল স্তরে যথাযথ পরিকাঠামো থাকা চাই যাতে কৃষকের কাছে সরাসরি বিভিন্ন সুবিধা পৌঁছে দেওয়া যায় । প্রয়োজনে সংবাদ মাধ্যম ব্যবহার করে প্রকল্পগুলির সুযোগসুবিধার তথ্য বিশদে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে । (তথ্যসূত্রঃ যোজনা৫/২২) ।
পরিশেষে কৃষি ব্যবস্থাকে চাঙ্গা করতে পারলে গ্রামীণ অর্থনীতি আরও চাঙ্গা হবে  । গ্রামীণ  অর্থনীতি চাঙ্গা হলে গ্রামীণ মানুষদের মধ্যে স্বাচ্ছন্দ্যে বাড়বে । তাঁদের মুখে হাসি ফুটবে ।

(তথ্যসুত্রঃ  সংগৃহীত ও যোজনা-৬/১৪)

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

আজ বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস; জানুন দিনটি পালনের লক্ষ্য ও গুরত্ব সম্পর্কে।

সূচনা—-

 

আজ বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস । ১৯৮৯ সাল থেকে পালন করা শুরু হয় দিনটি। এর পিছনে রয়েছে বিশেষ কতকগুলি  কারণ।আজকের বিশ্বে ক্রমশ  দ্রুত বাড়ছে জনসংখ্যা। কিন্তু আমরা জানি জনসংখ্যা বাড়লেও বসবাসের জায়গা কিন্তু সেই একই। এর প্রভাব তাই সমাজে বিভিন্ন রূপে প্রভাব পড়ে। সে সমাজিক হোক কিংবা অর্থনীতি সর্বক্ষেত্রেই। আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে মারাত্মক হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে নষ্ট হচ্ছে স্থিতাবস্থাও। কারন অতিরিক্ত জনসংখ্যা যেমন সম্পদ তেমনি এর সমাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাবও রয়েছে যথেষ্ঠ। তাই এর ভালো-মন্দ এবং অন্যান্য দিকগুলি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে প্রতি বছর ১১ জুলাই অর্থাৎ আজকের দিনটি ‘বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়।

 

কবে শুরু হয়—-

বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস হল একটি বার্ষিক ইভেন্ট , ১৯৮৯ সালে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির গভর্নিং কাউন্সিল জনসংখ্যা ইস্যুতে গুরুত্ব প্রদান ও জরুরী মনোযোগ আকর্ষণের লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী ১১ জুলাই বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয় যা আজও গুরুত্ব সহকারে পালন করা হয়ে চলেছে। তবে আজকের দিনে দাড়িয়ে পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও পর্যবেক্ষণ করে শুধু  খাতায় কলমে নয়, প্রতিটি রাষ্ট্রকে বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ঠ গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে। তা না হলে এই জন বিস্ফরন কোন কোনো ক্ষেত্রে অভিশাপ ডেকে আনতে পারে।

 

বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস পালনের লক্ষ্য—

 

বিশ্ব জনসংখ্যা দিবসের লক্ষ্য হল পরিবার পরিকল্পনার গুরুত্ব , লিঙ্গ সমতা , দারিদ্র্যের মতো বিভিন্ন জনসংখ্যার বিষয়ে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি করা, মাতৃস্বাস্থ্য এবং মানবাধিকার রক্ষা কর। বহু মানুষ তাঁদের লিঙ্গ, জাতি, শ্রেণী, ধর্ম, যৌন অভিমুখ, অক্ষমতা এবং নাগরিকত্বের উপর ভিত্তি করে বৈষম্য, হয়রানি এবং হিংসার সম্মুখীন হন। অতিরিক্ত জনসংখ্যার কারণে বহু জায়গাতেই মানবাধিকারও খর্ব হয়। এই বিষয়টি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতেই দিনটি পালন করা হয়।সারা বিশ্বে এদিন নানা ধরনের সেমিনার, আলোচনাসভা, শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান, নানা ধরনের প্রতিযোগিতা, স্লোগান, কর্মশালা, বিতর্ক, গান ইত্যাদির আয়োজন করা হয়। এই যাবতীয় সমস্যা সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করতেই পালন করা হয় এই বিশেষ দিনটি।

 

ইতিহাস—-

১৯৮৯ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের উন্নয়ন কর্মসূচির তৎকালীন গভর্নিং কাউন্সিল এই দিনটি পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। ১১ জুলাই, ১৯৯০ তারিখটি থেকে ৯০টিরও বেশি দেশে প্রথম এই দিনটি পালিত হয়। তারপর থেকে, সরকার ও সুশীল সমাজের সহযোগিতায় ইউএনএফপিএ জাতীয় অফিসের পাশাপাশি অন্যান্য সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস পালন করে আসছে।

 

দিনটি পালনের গুরুত্ব—-

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব মতে প্রতি মিনিটে বিশ্বে ২৫০টি শিশু জন্মগ্রহণ করে।  রাষ্ট্রসংঘ জনসংখ্যা বৃদ্ধিকেই নিয়ন্ত্রণ করার  চেষ্টা করছে। তবে জনসংখ্যা সমস্যা নিয়ে কিছুটা বিতর্কও আছে। অনেকের মতে পৃথিবীর যা সম্পদ রয়েছে তাতে সর্বোচ্চ ২০০ থেকে ৩০০ কোটি লোককে জায়গা দেওয়া সম্ভব। তাদের মতে ধীরে ধীরে জনসংখ্যা কমিয়ে আনা উচিত। কেবল এ ভাবেই প্রকৃতির ওপর যে নির্যাতন চলছে তা বন্ধ করা যাবে। খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও উন্নত বন্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে বর্ধিত জনসংখ্যার চাহিদাও পূরণ করা সম্ভব বলে মনে করেন অনেকে। জনসংখ্যা সমস্যায় জর্জরিত চিন এক সন্তান নীতির মাধ্যমে জনসংখ্যা কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে। আবার কিছু দেশ ঋণাত্নক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের কারণে উল্টো নীতিও গ্রহণ করেছে।

 

জনসংখ্যা ও মানব সম্পদ—-

 

তবে, জনসংখ্যা কখনই সমস্যা নয়, এটি হলো সম্পদ। কেননা জনসংখ্যাই হতে পারে জনসম্পদ। মূলধন ও প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নির্ভর করে দক্ষ জনসম্পদের ওপর। তাই দক্ষ জনসম্পদ অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম প্রধান ও অপরিহার্য শর্ত। অতিরিক্ত জনসংখ্যার দক্ষতা বাড়াতে গেলে অনেক সময় সম্পদেরও প্রয়োজন হয়। কিন্তু জনসংখ্যা কম হলে সীমিত সম্পদ দিয়েও তাদের দক্ষ করে তোলা সম্ভব হয়।

তাই বলা চলে ‘জনসংখ্যা’ যে কোনো দেশের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। দেশটির আয়তন, ভৌগোলিক অবস্থা বা অবস্থান, সুস্থ কিংবা অসুস্থ, শিক্ষিত বা অশিক্ষিত জনগোষ্ঠী—এই সব বিচারেই ‘জনসংখ্যা’ বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।

 

একটি দেশের মূল অবকাঠামো জনসংখ্যা—-

 

একটি দেশের জনগণ তথা সাধারণ গণমানুষ দেশটির প্রধান চালিকাশক্তি বা প্রাণশক্তি। আর সে প্রাণের প্রকাশ বা স্পন্দন মনোরম হতে পারে যদি মানুষ সাধারণ খাদ্যে-স্বাস্থ্যে-শিক্ষায় সবল ও কর্মক্ষম থাকে। সমৃদ্ধ একটি দেশ নির্মাণ তাহলেই সম্ভবপর হয়।একটি দেশের মূল অবকাঠামো হচ্ছে জনসংখ্যা। যদিও বর্তমান বিশ্বে অধিকাংশ দেশে জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়া এক ধরনের আতঙ্কের খবর। বলা হয়, একুশ শতাব্দীতে জনসংখ্যা বিস্ফোরণ সবচেয়ে সংকটজনক অবস্থার জন্ম দিতে চলেছে। জনসংখ্যা-সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্নে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে প্রতি বছর ১১ জুলাই ‘বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়।

 

উপসংহার—-

 

তাই সামগ্রিক বিষয়টির গুরুত্ব অনুভব করে প্রতি বছর ১১ই জুলাই রাষ্ট্রসংঘের উদ্যোগে সারা বিশ্বে ‘বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস’ পালিত হোয়ে আসছে।  জনসংখ্যাকে সম্পদ বলা হলেও অতিরিক্ত জনসংখ্যা সম্পদ নয়, বরং অতিরিক্ত জনসংখ্যা  বোঝা। করণ যত জনবৃদ্ধি হবে ততই নানান সামস্যা তৈরি হবে। দেখা দেবে প্রাপ্ত অপ্রপ্তির শূন্যতা। পুষ্টি, অপর্যাপ্ত শিক্ষার সুযোগ, বেকারত্ব, চিকিৎসা সেবার অপ্রতুলতা ইত্যাদি সমস্যার মূলে রয়েছে অতিরিক্ত জনসংখ্যা। তাই মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্য নিয়ে রাষ্ট্রসংঘের উদ্যোগে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস পালিত হচ্ছে গুরুত্ব সহকারে।।

।।তথ্য: সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

সৌরভ গাঙ্গুলী : ভারতীয় ক্রিকেটের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র; জন্মদিনে তাকে নিয়ে কিছু কথা।

ক্রিকেট ভালোবাসেনা এমন একজন ভারতীয় খুঁজে পাওয়া মুশকিল।  আমাদের দেশের মানুষ ক্রিকেট অন্তঃপ্রাণ। এখানে ফুটবল যতটা না জনপ্রিয় তার চেয়ে কয়েকগুন বেশী জনপ্রিয় ক্রিকেট। যখন দেশের খেলা থাকে মানুষ ভুলে যায় নাওয়া খাওয়া।  আর যারা ক্রিকেট ভালবাসেন তাদের কাছে সৌরভ গাঙ্গুলী এক অতি পরিচিত,  জনপ্রিয় ও আবেগের নাম। সকলের প্রিয় দাদা।  শুধু ক্রিকেট ভক্তরা’ইবা কেন বলি,  প্রতিটি ভারতবাসির কাছে তিনি এক অতিপরিচিত নাম।  ভারতীয় ক্রিকেটের খোল নলচে পালটে দিয়ে ছিলেন তিনি। বলা চলে তার হাত ধরে ভারতীয় ক্রিকেটের আধুনিকতায় পৌঁছনর প্রথম ধাপ শুরু হয়ে যায়।  চোখে চোখ রেখে কথা বলা,  আগুনে আগ্রাসি মনোভাবের সঞ্চার ঘটিয়ে ছিলেন তিনি।  সেই আমাদের সকলের প্রিয় সৌরভ ওরফে দাদা র আজ জন্মদিন।  এই বিশেষ দিনে তার জীবনের কিছু কথা তুলে ধরলাম।

 

সৌরভ চণ্ডীদাস গাঙ্গুলী ( জন্ম ৮ জুলাই ১৯৭২), দাদা নামেও তিনি পরিচিত (অর্থাৎ “বড় ভাই” বাংলায়), এবং একজন প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার ও ধারাভাষ্যকার।  তাকে ভারতীয় ক্রিকেটের মহারাজা বলা হয়।  তিনি ভারতীয় জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ছিলেন এবং ভারতের অন্যতম সফল ক্রিকেট অধিনায়ক হিসেবে পরিচিত ছিলেন।  অধিনায়ক হিসেবে, তিনি ভারতীয় জাতীয় দলকে ২০০৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে নিয়ে যান।

 

 

সৌরভ গাঙ্গুলী ৮ জুলাই ১৯৭২-এ কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন এবং তিনি চণ্ডীদাস এবং নিরূপা গাঙ্গুলীর কনিষ্ঠ পুত্র।  চণ্ডীদাস একটি সমৃদ্ধ প্রিন্ট ব্যবসা চালাতেন এবং শহরের অন্যতম ধনী ব্যক্তি ছিলেন।  গাঙ্গুলির একটি বিলাসবহুল শৈশব ছিল এবং তার ডাকনাম ছিল ‘মহারাজা’, যার অর্থ মহান রাজা।  গাঙ্গুলির বাবা চণ্ডীদাস গাঙ্গুলি দীর্ঘ অসুস্থতার পর ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ তারিখে ৭৩ বছর বয়সে মারা যান।
যেহেতু কলকাতার মানুষের প্রিয় খেলা ছিল ফুটবল, তাই গাঙ্গুলি প্রথমে এই খেলার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন।  নিরূপা গাঙ্গুলি ক্রিকেট বা অন্য কোন খেলাকে ক্যারিয়ার হিসাবে গ্রহণ করার পক্ষে খুব বেশি সমর্থন করেননি।  ততক্ষণে, তার বড় ভাই স্নেহাশীষ বাংলা ক্রিকেট দলের একজন প্রতিষ্ঠিত ক্রিকেটার ছিলেন।  তিনি গাঙ্গুলির একজন ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নকে সমর্থন করেছিলেন এবং গাঙ্গুলিকে একটি ক্রিকেট কোচিং ক্যাম্পে নাম লেখাতে বলেছিলেন।

 

 

গাঙ্গুলী তখন দশম শ্রেণীতে পড়ছিলেন।
ডানহাতি হওয়া সত্ত্বেও, গাঙ্গুলি বাঁ-হাতি ব্যাট করতে শিখেছিল যাতে তিনি তার ভাইয়ের খেলার সরঞ্জাম ব্যবহার করতে পারেন।  ব্যাটসম্যান হিসেবে কিছু প্রতিশ্রুতি দেখানোর পর তিনি একটি ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি হন।  তাদের বাড়িতে একটি ইনডোর মাল্টি-জিম এবং কংক্রিটের উইকেট তৈরি করা হয়েছিল, যাতে তিনি এবং স্নেহাশিশ খেলাটি অনুশীলন করতে পারেন।  তারা বেশ কিছু পুরানো ক্রিকেট ম্যাচের ভিডিও দেখতেন, বিশেষ করে ডেভিড গাওয়ারের খেলা, যাকে গাঙ্গুলি প্রশংসিত করেছিল।  উড়িষ্যা অনূর্ধ্ব-১৫ দলের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি করার পর, তাকে সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলের ক্রিকেট দলের অধিনায়ক করা হয়, যেখানে তার বেশ কয়েকজন সতীর্থ তার অহংকার বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন। তার প্লেম্যানশিপ তাকে ১৯৮৯ সালে বাংলার হয়ে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে আত্মপ্রকাশ করার সুযোগ দেয়, যে বছর তার ভাইকে দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল।
তিনি ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্যশিল্পী ডোনা গাঙ্গুলীকে বিয়ে করেছেন, তার একটি কন্যা সানা (জন্ম ২০০১) রয়েছে।

 

 

সৌরভ গাঙ্গুলি তার ওডিআই ক্যারিয়ারে ১১৩৬৩ রান করেছেন যা ওয়ানডে ম্যাচে সবচেয়ে বেশি রান করার জন্য বিশ্বের নবম অবস্থানে রয়েছে।  শচীন টেন্ডুলকার এবং ইনজামাম উল হকের পর তিনি তৃতীয় ব্যাটসম্যান যিনি একদিনের ক্রিকেটে ১০০০০ রান পূর্ণ করেছিলেন।  ওডিআই ক্রিকেট বিশ্বকাপে একজন ভারতীয় ব্যাটসম্যানের এক ইনিংসে সর্বোচ্চ স্কোর (১৮৩) করার রেকর্ড তার দখলে।  ২০০২ সালে, উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালমানাক তাকে সর্বকালের ষষ্ঠ সর্বশ্রেষ্ঠ ওডিআই ব্যাটসম্যান হিসেবে স্থান দেয়।  তিনি ২০০৮ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে এবং ২০১২ সালে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন।
গাঙ্গুলি ২০০৪ সালে চতুর্থ সর্বোচ্চ ভারতীয় বেসামরিক পুরস্কার পদ্মশ্রীতে ভূষিত হন।  তিনি ২০১৯ সালে বোর্ড অফ কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়ার সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি আইপিএল স্পট ফিক্সিং এবং বেটিং কেলেঙ্কারির তদন্তের জন্য ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত তদন্ত প্যানেলেরও একজন অংশ।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

জানুন কি ভাবে শুরু হলো বিশ্ব চকলেট দিবস এবং দিনটি পালনের গুরুত্ব।

চকলেট খেতে কে না ভালোবাসে। চকলেট অনেকের কাছেই এক দুর্বলতা। চকলেট শুধু স্বাদেই ভালো নয়, এটি স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী।  ডার্ক চকলেট খাওয়া কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে। হার্টের স্বাস্থ্য এবং রক্তচাপের উন্নতিও ডার্ক চকলেট থেকে দেখা যায়। চকলেটের অনেক উপকারিতা রয়েছে। তবে তা নিয়ম মেনে খাওয়া উচিৎ। একই সময়ে, এটি অতিরিক্ত ওজন হ্রাস এবং ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যা, স্ট্রোক, অ্যাসিড রিফ্লাক্স, নার্ভাসনেস এবং অস্থিরতা, কিডনির উপর প্রভাবের ঝুঁকি সৃষ্টি করে। পেটে ব্যথা এবং হাড়ের ব্যথার মতো সমস্যাও হতে পারে। অতএব, এটি সীমিত পরিমাণে এবং স্বাস্থ্য বিধি মেনে খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একটি জিনিস সকলের শরীরে সমান ভাবে প্রভাব ফেলে না।

 

পাশাপাশি চকলেট বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপহার হিসেবে প্রদানের চল আছে, যা আজও বহমান। তাই এই ভালোবসার জিনিসটির ওপরে আজকের দিনটি বিশেষ ভাবে পালিত হয়। আজ বিশ্ব চকলেট দিবস। বিশ্ব চকলেট দিবস, কখনও কখনও আন্তর্জাতিক চকলেট দিবস হিসাবে পালন করা হয়। বিশ্বব্যাপী ৭ জুলাই, বিশ্ব চকলেট দিবস ২০০৯ সাল থেকে পালন করা হয়।
প্রতি বছর এই দিনটিতে বিশ্বজুড়ে চকলেট প্রেমীরা তাদের প্রিয় খাবারে কোনো বাধন ছাড়াই খেতে দেখা যায় ।  চকলেট দুধ, গরম চকলেট, চকলেট ক্যান্ডি বার, চকলেট কেক, ব্রাউনিজ বা চকলেটে আচ্ছাদিত যেকোনো কিছু সহ চকলেট থেকে তৈরি সব ধরনের জিনিস দিয়ে দিনটি উদযাপন করে ।

জানা যায় চকলেট গ্রীষ্মমন্ডলীয় থিওব্রোমা ক্যাকো গাছের বীজ থেকে আসে।  কোকো বিনগুলিকে অনেক জায়গায় ম্যাজিক বিন বলা হয়।  কমপক্ষে তিন সহস্রাব্দ ধরে চাষ করা হয়েছে এবং মেক্সিকো, মধ্য আমেরিকা এবং উত্তর দক্ষিণ আমেরিকায় এটি বৃদ্ধি পায়।  প্রায় ১১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের কোকো বীজ ব্যবহার করার প্রথম পরিচিত পাওয়া যায় । বিশ্ব চকলেট দিবসে  মেরিঙ্গু পাই, মিল্ক চকলেট পুডিং থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের চকলেট কেক বেকারি, কফি শপ এবং অনেক দোকানে দেখা যাবে। এই দিনটি উদযাপন করার জন্য, লোকেরা তাদের বন্ধু, আত্মীয় এবং পার্টনারকে চকলেট উপহার দেয়।
চকলেটের ইতিহাস প্রায় ২৫০০ বছরের পুরনো বলে জানা যায়। অ্যাজটেক (অ্যাজটেক ছিল একটি মেসোআমেরিকান সংস্কৃতি যা মধ্য মেক্সিকোতে ১৩০০ থেকে ১৫২১ সাল পর্যন্ত উত্তর-শাস্ত্রীয় যুগে বিকাশ লাভ করেছিল।) চকলেট আবিষ্কার করে প্রথম। তারা বিশ্বাস করত যে এটি জ্ঞানের দেবতা কোয়েটজালকোটল তাদের দিয়েছিলেন। তারা অন্যান্য জিনিস লেনদেনের জন্য কোকো ব্যবহার করত বা বলুন, কোকো বীজ মুদ্রা হিসাবে ব্যবহৃত হত।

 

 

জনা যায় ১৬ শতক পর্যন্ত, চকলেট তেঁতো ছিল।  বলা হয় যে ১৫১৯ সালে, স্প্যানিশ অভিযাত্রী হার্নান কর্টেসকে একটি চকোলেট পানীয় দেওয়া হয়েছিল, যা তিনি তার সঙ্গে স্পেনে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং ভালো স্বাদের জন্য এতে ভ্যানিলা, চিনি এবং দারুচিনি যোগ করেছিলেন। স্বাদ পরিবর্তনের পর, চকলেট সারা বিশ্বে পছন্দ হতে শুরু করে। এর পরে, ১৫৫০ সালে, ইউরোপে প্রথমবারের মতো ৭ জুলাই চকলেট দিবস পালিত হয়। এর পরে, এটি বিশ্বের অনেক দেশে পালিত হতে শুরু করে।

অনেক বড় বড় চকলেট কোম্পানি ঊনিশ এবং বিংশ শতকে শুরু হয়েছিল। ১৮৬৮ সালে ক্যাডবেরি, ইংল্যান্ডে শুরু হয়েছিল। ২৫ বছর পরে, মিল্টন এস দ্বারা শিকাগোতে ওয়ার্ল্ডস কলম্বিয়ান এক্সপোজিশনে চকলেট প্রক্রিয়াকরণ সরঞ্জাম কেনা হয়েছিল। হার্শে এখন বিশ্বের বৃহত্তম এবং বিশ্বখ্যাত চকলেট নির্মাতাদের একজন। তিনি চকলেট-কোটেড ক্যারামেল উৎপাদন করে কোম্পানিটি শুরু করেছিলেন। নেসলে ১৮৬০-এর দশকে উদ্ভূত হয়েছিল এবং বিশ্বের বৃহত্তম খাদ্য গোষ্ঠীগুলির মধ্যে একটিতে পরিণত হয়েছে।
তবে আবার বিভিন্ন দেশে চকলেট দিবস বিভিন্ন সময় উদযাপন করাও হয়ে থাকে। যেমন ২৮ অক্টোবর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয় চকলেট দিবস। ইউএস ন্যাশনাল কনফেকশনার্স অ্যাসোসিয়েশন ১৩ সেপ্টেম্বরকে আন্তর্জাতিক চকলেট দিবস হিসাবে তালিকাভুক্ত করে,  যা কাকতালীয়ভাবে চকলেট উৎপাদক মিল্টন এস. হার্শে (জন্ম: ১৩ সেপ্টেম্বর ১৮৫৭) এর জন্ম তারিখের সাথে মিলে যায়। ঘানা, কোকোর দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎপাদক, ১৪ ফেব্রুয়ারি চকলেট দিবস উদযাপন করে।  লাটভিয়ায়, ১১ জুলাই বিশ্ব চকলেট দিবস পালিত হয়।

 

তাই যদি দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে চান তবে প্রিয়জনদের বা কাছের মানুষ, বন্ধু বান্ধবদের চকলেট গিফ্ট করে সবাইকে চমকে দিন বা আপনার প্রিয়জনকে এক বাক্স চকোলেট এবং ফুল পাঠান উপহার হিসাবে। আর  বিশ্ব চকলেট দিবস সম্পর্কে যারা জানেন না তারা আপনার সাথে উদযাপন করতে পেরে রোমাঞ্চিত হবেন।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

প্রতুলচন্দ্র গাঙ্গুলী : ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের বিশিষ্ট বিপ্লবী।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের অব্যর্থ পরিশ্রম যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত রাজনৈতিক দিক থেকে মুক্তি পেয়েছে। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়, তার মূলে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে প্রতুলচন্দ্র গাঙ্গুলী প্রথমসারির একজন অন্যতম বিপ্লবী ছিলেন। প্রতুলচন্দ্র গাঙ্গুলী ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি দেশমতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ রূপে।

 

প্রাথমিক জীবন—-

 

মহিমচন্দ্র গাঙ্গুলীর পুত্র প্রতুলচন্দ্র গাঙ্গুলী  ঢাকার চাঁদপুরের কাছে চালতাবাড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ১৬ এপ্রিল ১৮৯৪।  নারায়ণগঞ্জের চাঁদপুরের নিকটবর্তী চালতাবাড়ি গ্রামে প্রতুলচন্দ্র গাঙ্গুলী মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। ছাত্র জীবনে নারায়ণগঞ্জ শাখায় অনুশীলন সমিতিতে বিপ্লবীজীবন শুরু করেন। নিষ্ঠা এবং কর্ম তৎপরতার জোরে নেতারূপে সুপ্রতিষ্ঠিত হন তিনি। তবে তার প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা সম্পর্কে সেভাবে কিছুই জানা যায়নি।

 

গৃহত্যাগ—-

 

জানা যায়  ১৯০৮-১৯০৯ সালে বিপ্লবী প্রয়াসকে ব্যাপক করবার জন্য তিনি গৃহত্যাগ করেন।স্কুল ছাত্র হিসেবে তিনি অনুশীলন সমিতির নারায়ণগঞ্জ ইউনিটে যোগ দেন;  ১৯৩০-এর দশকে এর মুখপাত্র হন।  রাশবিহারী বসুর মতো প্রতুলচন্দ্রও তার পরিচয় গোপন করতে পারদর্শী ছিলেন;  তাই পুলিশের নথিতে তিনি ভিন্নভাবে পরিচিত ছিলেন।

 

বিপ্লবী কর্মজীবন—-

ঢাকার অদূরে স্বদেশী ডাকাতির মামলায় তার নাম সবার আগে উঠে আসে;  যেখানে তার বেশিরভাগ সিনিয়রকে সেলুলার জেলে পাঠানো হয়েছিল;  রিভিউ পিটিশনের পর কলকাতা হাইকোর্ট তাকে অব্যাহতি দেয়।  ১৯১৩ সালে, প্রতুলচন্দ্র রবীন্দ্র মোহন সেনের সাথে কলেজ স্কোয়ারে আইবি অফিসার হরিপদ দেকে হত্যা করেন;  তারপর বিশ্বযুদ্ধের সময় রাসবিহারী বসুর সাথে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করতে বারাণসীতে চলে যান।  তিনি ১৯১৪ সালে গ্রেফতার হন এবং ১৯২০ সাল পর্যন্ত বরিশাল কারাগারে বন্দী ছিলেন। চার বছর পরে, তাকে রাজনৈতিক বন্দী ঘোষণা করা হয় এবং বিনা বিচারে মিয়ানমারের (১৯২৭) কারাগারে পাঠানো হয়।
তিনি অসহযোগ আন্দোলনের সময় কংগ্রেসের প্রাদেশিক অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।  ১৯৩০ সালে আবার গ্রেপ্তার হন, তিনি ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত রিমান্ডে ছিলেন;  এক বছর পরে আবার গ্রেপ্তার হতে হয়, যখন নেতাজির সাথে জেলের ভিতরে অনশন করায় তার স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়, তাই পরবর্তীকালে মুক্তি পান।  কিন্তু, বোসের গ্রেট পালানোর পর;  প্রতুলচন্দ্রকে আবার গ্রেফতার করা হয় এবং ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত বাংলার বিভিন্ন কারাগারে পাঠানো হয়। দেশভাগের পর প্রতুলচন্দ্রের মতো একজন ব্যক্তিকেও কলকাতায় চলে যেতে হয়।

 

মৃত্যু—

 

সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গে জেলে অনশন করে স্বাস্থ্য ভঙ্গ হওয়ায় সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গে মুক্তি পান তিনি। এরপর সুভাষচন্দ্রের অর্ন্তধ্যানের সঙ্গে সঙ্গে পুনরায় গ্রেপ্তার হয়ে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন জেলে আটক থাকেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর তিনি কলকাতায় বসবাস করেন এবং ১৯৫৭ সালের ৫ জুলাই তাঁর মৃত্যু হয়।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

আফসোস কি আজ হয় আমেরিকার? : তন্ময় সিংহ রায়।

বেনারসের এক মন্দির থেকে বের হওয়ার পথে একবার স্বামী বিবেকানন্দকে ঘিরে ধরেছিল
বেশ কিছু বানর ,
এমত পরিস্থিতিতে স্বামীজি অপ্রস্তুতরূপে ছুটতে লাগলেন দিগভ্রান্ত হয়ে , কিন্তু তা হলে হবে আর কি?
বানর কি আর আধুনিক মানুষ?
স্বভাবতই বানরগুলো সে অবস্থাতে দাঁড়িয়েও অব্যাহত রেখেছে এঁদের বাঁদরামি কর্মকাণ্ড।
কাছে দাঁড়িয়ে থাকা একজন বৃদ্ধ সন্ন্যাসী তা লক্ষ্য করে তাঁকে বলে বসলেন , ‘মশাই! থামুন এবং ওদের মুখোমুখি হোন।’
তা শুনে বিবেকানন্দ তৎক্ষণাৎ ঘুরে এগোতে লাগলেন বানরগুলোর দিকে ,
আর এই মনোভাবের কারণে সব বানর পালিয়েও গেল সেখান থেকে।

 

শেষে এই ঘটনা থেকে তিনি শিখলেন যে , ভয়ে পালিয়ে না গিয়ে তার মুখোমুখি হতে হবে , অর্থাৎ পিছনে না হটে , জয় করতে হবে ভয়কেই।
এর বহু বছর পর তিনি এক সম্বোধনের মাধ্যমে  বলেছিলেন , ‘যদি কোনও কিছু কারণ হয় তোমার ভয়ের , তবে তা থেকে পালিয়ে যেও না , ভয়ের মুখোমুখি হও আর জিতে নাও ভয়কে।’

বিদেশ যাওয়ার সময় স্বামী বিবেকানন্দকে একবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে , ‘আপনার পরিধেয় বাকি জিনিসগুলো কোথায়?’
‘এইতো সব’ , তিনি উত্তর দিলেন।
কেউ কেউ তো আবার ব্যঙ্গ করে বসলেন বলেই , ‘আরে! আপনার সংস্কৃতি কেমন? শরীরে শুধু জাফরানের চাদর জড়ানো?’

 

এ নিয়ে তিনি হেসে বললেন , ‘আমাদের সংস্কৃতি তোমাদের সংস্কৃতি থেকে আলাদা।
আপনাদের সংস্কৃতি গড়ে তোলে আপনাদের
দর্জিরা , অন্যদিকে আমাদের সংস্কৃতি আমাদের চরিত্র দ্বারা তৈরি।
সংস্কৃতি পোশাকে গড়ে ওঠে না , গড়ে চরিত্রের বিকাশে।’
তো এমনই ছিল স্বামীজির জীবন দর্শন।

যাইহোক , জাহাজ ও খান দুয়েক ট্রেন পাল্টে অবশেষে ৩০ শে জুলাই রাত ১১ টায় তিনি উপস্থিত হলেন শিকাগোয়।
ক্লান্ত , অবসন্ন শরীরটা সম্পূর্ণ অপরিচিত পরিবেশে তাঁকে ফেলেছে এক চরম অস্বস্তিজনক পরিস্থিতিতে , এমনটাই যেন তাঁর মনে হচ্ছিল।
অবশেষে পরিস্থিতি ধারণ করলো আরো জটিল আকার যখন তিনি জানতে পারলেন যে , ধর্মমহাসভায় পরিচয়পত্র আবশ্যক ও  যোগদানের তারিখও গেছে রীতিমতন পেরিয়ে।
এ হেন সংবাদ কানে প্রবেশ করা মাত্রই মুহুর্তের মধ্যে তাঁর মনে হতে লাগলো যে , অতি যত্নে সাজানো সমস্ত রঙীন স্বপ্নগুলো তাঁর চোখের সামনেই হয়ে যাচ্ছে ভেঙে-চুরে , দুমড়ে-মুষড়ে!
একদিকে শিকাগোর মতন বড়লোকি শহরে থাকার খরচ ,
অন্যদিকে সামান্য পুঁজি , তাও আবার ফুরিয়ে আসার মুহুর্তে।
হঠাৎই তিনি আবিষ্কার করলেন বস্টন নামক এক শহর , যেখানে থাকা-খাওয়ার খরচ অনেকাংশে কম। অবশেষে বস্টন অভিমুখে রওনাকালীন ট্রেনে স্বামীজির পরিচয় হয় ক্যাথেরিন স্যানবর্ন নামক এক ধনী ও প্রভাবশালী মহিলার সাথে।

 

প্রতিভাদীপ্ত , সুদর্শন ও সুঠামদেহী এক পুরুষের সাথে তিনি নিজেই এসে পরিচয় করে দু-এক কথায় মুগ্ধ হয়ে তাঁর বাড়িতে থাকার জন্যে সেই মহিলা স্বামীজিকে জানালেন হার্দিক আমন্ত্রণ।
এমনই এক সুযোগের একান্ত ইচ্ছায় যেন অপেক্ষা করছিলেন অধীর আগ্রহে তিনি , অতএব সেমত অবস্থায় স্বামীজি সাদরে গ্রহণ করলেন সে আমন্ত্রণ।
ক্যাথেরিন স্যানবর্নের বাড়িতে থাকাকালীন স্বামীজি তাঁর এক শিষ্যকে চিঠিতে জানালেন ,
‘এখানে থাকায় আমার প্রতিদিনের এক পাউন্ড করে বেঁচে যাচ্ছে , আর তাঁর (ক্যাথেরিন স্যানবর্ন) প্রাপ্তি হল এই যে , তিনি তাঁর বন্ধুদের আমন্ত্রণ করে দেখাচ্ছেন আমি নামক ভারতের এক বিচিত্র জীবকে!’

বস্টনে থাকাকালীন ক্যাথেরিন স্যানবর্নের সূত্রে সেখানকার শিক্ষিত সমাজে স্বামীজি ক্রমশই হয়ে উঠেছিলেন ভীষণভাবে পরিচিত।
আর এভাবেই কোনো এক মাহেন্দ্রক্ষণে অকস্মাৎ ক্যাথেরিনের মাধ্যমে স্বামীজির পরিচয় হয় হাভার্ড ইউনিভার্সিটির এমন একজন সুবিখ্যাত প্রফেসার জন হেনরি রাইটের সাথে , যাকে বলা হত ‘বিশ্বকোষতুল্য জ্ঞানভাণ্ডারের অধিকারী।’

 

কিন্তু স্বামীজির তেজোদীপ্ত প্রতিভার আলোকরশ্মির বিচ্ছুরণে বিষ্ময়ে হতবাক হয়ে গেলেন তিনি নিজেই। পরিচয়পত্র না থাকায় তিনি (স্বামীজি) মহাধর্মসম্মেলনে যোগ না দিতে পারার সংক্ষিপ্ত কারণ বিশ্লেষণে প্রফেসার প্রত্যুত্তর করলেন ,
‘মহাশয় , আপনার কাছে পরিচয়-পত্র চাওয়ার অর্থ এমন যে , সূর্যকে প্রশ্ন করা যে তাঁর কিরণ দেওয়ার অধিকার আছে কিনা?’
অতঃপর মহাধর্মসম্মেলনের এক কর্মকর্তার উদ্দেশ্যে প্রফেসার রাইট লিখলেন :
‘ইনি (স্বামীজি) এমন একজন ব্যক্তি যে , আমেরিকার সমস্ত প্রফেসারের পান্ডিত্য এক করলেও এঁর পান্ডিত্যের সমান হবে না।’
অতঃপর বস্টনে সপ্তা তিনেক থাকার পর শেষে তিনি রওনা হলেন শিকাগো অভিমুখে।

১১ সেপ্টেম্বর  ১৮৯৩ , শিকাগোর কলম্বাস হলে সকাল ১০ টায় বিশ্ব ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা ভূমিষ্ঠ হয়েছিল যে আধিদৈবিক , সিংহপুরুষের দ্বিতীয় অধিবেশনের কালজয়ী ও ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমে তিনি আর কেউ নন , স্বয়ং স্বামী বিবেকানন্দ।
“সিস্টার্স এন্ড ব্রাদার্স অব আমেরিকা”……
হাজার হাজার দর্শকমণ্ডলীর হর্ষধ্বনি ও করতালিতে ফেটে পড়েছিল সে মঞ্চ।
মনে হচ্ছিল এক সংক্ষিপ্ত কিন্তু শক্তিশালী আঁধি সেই মুহুর্তে , সেই স্থানের উপস্থিতজনেদের উপর দিয়ে গেল বয়ে।
না , কোনো নির্দিষ্ট ধর্মের জয়ঢাক তিনি বাজাননি। মহাধর্মসম্মেলনে যেখানে সবাই নিজ নিজ ধর্ম সম্বন্ধেই বক্তৃতা দিয়েছিলেন , সেখানে স্বামীজি দেখিয়েছিলেন , সব ধর্মই সত্য , কারণ প্রতিটা ধর্মই মানুষকে পৌঁছে দেয় একই সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কাছে।

১৯৯২ সালে স্বামীজির শিকাগো বক্তৃতার একশত বছর পূর্তির আগে এলেনর স্টার্ক নামক এক আমেরিকান মহিলা স্বামীজিকে নিয়ে ‘দ্য গিফট্ আন-ওপেন্ড.. এ নিউ আমেরিকান রেভলিউশন’ নামক একটি বই লিখেছিলেন , যাতে লেখিকা স্বামীজির বাণীকে বর্ণনা করেছেন ‘উপহার’ বলে অর্থাৎ , ভারতবর্ষ থেকে আমেরিকাকে দেওয়া উপহার।
তিনি বলেছেন , ‘সেই উপহারের প্যাকেট আমেরিকা খুলে পর্যন্ত দেখেনি , স্বামীজির বাণীকে তাঁরা জীবনে ব্যবহারও করেননি।

 

যদি তাঁরা তা করত , একটা নতুন ধরণের বিপ্লব ঘটে যেত সমগ্র আমেরিকাবাসীদের জীবনে।’
ঐ বইতেই তিনি উল্লেখ করেছেন এও যে ,
‘কলম্বাস আবিষ্কার করেছিলেন আমেরিকা মহাদেশের ভূখন্ডটা , কিন্তু বিবেকানন্দ আবিষ্কার করেছিলেন আমেরিকার আত্মাকে।’

‘আমি মুসলমানের মসজিদে যাব , খৃষ্টানদের গির্জায় প্রবেশ করে ক্রুশবিদ্ধ যীশুর সামনে হব নতজানু , বৌদ্ধদের বিহারে প্রবেশ করে আমি বুদ্ধের শরণাপন্ন হব , আবার অরণ্যে প্রবেশ করে হিন্দুদের পাশে বসে ধ্যানমগ্নও হব ,
শুধু তাই নয় , ভবিষ্যতে যে সব ধর্ম আসতে পারে ,
সেগুলোর জন্যেও আমার হৃদয় আমি উন্মুক্ত রাখবো  সর্বদাই।’

কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় আজ ,
একবিংশ শতাব্দীতে এই প্রথম ভাগে দাঁড়িয়েও আমরা চুড়ান্ত সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন , আত্মকেন্দ্রিকতায় নিমজ্জিত ও চরম ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা যেন বইছে আমাদের রক্তে।
রাজনীতি আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে।
বইয়ের পাতা ও মূর্তিতেই অসহায়ভাবে যেন আটকে আছে তাঁর অমূল্য সব আদর্শগাথা।
তাঁর আদর্শের পরমানুটুকুও যেন ক্রমশঃ আমাদের শরীর থেকে হতে চলেছে নিশ্চিহ্ন!
শরীরের লজ্জা আমরা সহজেই ঢাকতে পারি পোষাক দিয়ে কিন্তু মনুষ্যত্বের এ লজ্জা আমরা ঢাকবো কোন পোষাকে??

 

এলেনর স্টার্ক চিনেছিলেন স্বামীজি নামক
কোহিনূরকে , প্রফেসর জন হেনরি রাইট জেনেছিলেন
বিবেকানন্দকে , চিনেছিলেন ক্যাথরিন স্যানবর্ণ ,
কিন্তু আমরা তাঁকে জেনেছি কি তাঁকে আজও?
তাঁর দেখানক পথ কি বাস্তবে আদৌ আমরা করি মিনিমাম অনুসরণ?
মহাসমাধী দিবসের এই পূণ্যলগ্নে বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি ও
সশ্রদ্ধ প্রণাম , পাশ্চাত্যে যোগ ও বেদান্ত দর্শনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্যে।

Share This