Categories
প্রবন্ধ

বীরভূমের  রাঙা মাটির রাঙ্গা-পথে সিধু-কানুর নেতৃত্বে সাঁওতাল বিদ্রোহ : প্রশান্ত কুমার দাস।

উনিশ শতকে বঙ্গীয় ‘রেনেসান্স’ বা রেনেসাঁ যে সময়ে প্রকৃত জাতিয়তাবাদের ভিত্তি রচনা করতে ব্যর্থ হয়েছিল ঠিক সেই সময়েই ইংরেজ শাসকের অপশাসন ও জমিদার শ্রেণী আর মহাজনদের শোষণের বিরুদ্ধে সশস্ত্র কৃষক- সংগ্রাম সমগ্র জাতির সামনে এক নতুন সংগ্রামী ঐতিহ্য  সৃষ্টি করেছিল যাকে ভারতের বৈপ্লবিক জাতিয়তাবাদের ভিত্তিভূমি বলা চলে।
ব্রিটিশ শাসনকালে যে সমস্ত কৃষক বিদ্রোহ হয়েছিল তাদের মধ্যে অত্যন্ত  উল্লেখযোগ্য ছিল সাঁওতাল বিদ্রোহ বা খেরওয়ারি হুল বিদ্রোহ।
১৮৫৫ সালের সাঁওতাল বিদ্রোহ ও ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ বা মহাবিদ্রোহ – দুটোকেই ভারতের প্রথম ঐক্যবদ্ধ স্বাধীনতা সংগ্রাম বলা চলে। এই উভয় সংগ্রামই শুরু হয়েছিল ইংরেজ শাসনের কবল থেকে, শোষণ থেকে মুক্তি ও স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার ধ্বনি নিয়ে।
সাঁওতাল বিদ্রোহের প্রকৃত কারণ ছিল জমির উপর একছত্র অধিকার প্রতিষ্ঠার অকাঙ্খা এবং তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল স্বাধীনতা স্পৃহা- যার ফলে তারা ধ্বনি তুলেছিল – “আমাদের নিজ সম্পত্তির অধীনে স্বাধীন সাঁওতাল রাজ্য চাই।”

 

এই প্রসঙ্গে ওল্ডহাম সাহেব মন্তব্য করেছিলেন – “পুলিশ ও মহাজনের অত্যাচারের স্মৃতি যাহাদের দেশপ্রেম জাগাইয়া তুলিয়াছিল সেই আন্দোলন তাহাদের সকলকেই আকৃষ্ট করিল,কিন্তু যে মূল ভাবধারাকে কার্যে পরিণত করিবার চেষ্টা হইতেছিল তাহা ছিল সাঁওতাল অঞ্চল ও সাঁওতাল রাজ্য প্রতিষ্ঠার চিন্তা।”
সাঁওতালী ভাষার বিদ্রোহকে বলা হয় ‘হুল’,সুতরাং সাঁওতাল বিদ্রোহ ‘সাঁওতাল হুল’ নামেই বেশি পরিচিত । ১৮৫৪ সাল থেকেই এই বিদ্রোহের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ উঠতে আরম্ভ করেছিল,তারপর ১৮৫৫ সালে সেই বিদ্রোহ পরিপূর্ণ ভাবে আত্মপ্রকাশ করে দাবাগ্নির মতো চতুর্দিকে বিস্তৃত হলো।শত শত বছরের প্রায় বিচ্ছিন্ন সমাজ জীবনের ধারা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সাঁওতালরা পথ খোঁজে মুক্তি আন্দোলনের মাধ্যমে। জমির অধিকার,জঙ্গলের অধিকার,ফসলের অধিকার,জমিদার ও মহাজনদের শোষণমুক্তির অধিকার  ফিরে পাওয়ার স্বপ্ন যেন এই প্রথম ঘুম থেকে হঠাৎ জেগে ওঠে তারা দেখতে পায়।

 

সাঁওতালরা তাদের সমাজের দুর্দশার কথা গানের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে কোম্পানির কুশাসনের স্বরূপ তুলে ধরেছিল । যেমন –
“নেরা নিয়া নুরু নিয়া
ডিণ্ডা নিয়া ভিটা নিয়া
হায়রে হায়রে! মাপাঃ গপচদ,
নুরিচ নাড়াঁড় গাই কাডা নাচেল লৌগিৎ পাচেল লৌগিৎ
সেদায় লেকা বেতাবেতেৎ ঞাম রুওয়ৌড় লৌগিৎ
তবে দ বোন লুনাগেয়া হো।”
এর অর্থ হচ্ছে –  “স্ত্রীপুত্রের জন্য
জমি জায়গা বাস্তুভিটার জন্য
হায় হায় ! এ মারামারি কাটাকাটি
গো-মহিষ-লাঙ্গল ধন-সম্পত্তির জন্য
পূর্বের মত আবার ফিরে পাবার জন্য
আমরা বিদ্রোহ করবো।“
গানটির প্রতিটি লাইনে প্রতিটি শব্দে শোষণ আর উৎপীড়নে গুমড়ে ওঠা সাঁওতালদের মনের গোপন কথা প্রকাশ পেয়েছিল। সেদিন এই প্রকার আরও অনেক গান তারা রচনা করেছিল সংগ্রাম করে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে।
এরূপ আরো একটা গান এখানে তুলে ধরা হলে –
“আদ বাংবন পৌচঃ সিধু আদ বাংবন থিরঃ,
বাইরি ঞেলতে লৌড়হাই ঘন বাংবন ঞিরঃ।
বহঃক্ ঞুরুঃ রেহঁ সিধু মায়াম লিঙ্গি রেহঁ,
বাংবন পাচঃ লৌড়হাই আবন দেবন সহরঃ।।

এই গানের অর্থ হচ্ছে –
“আর আমরা পিছু হঠব না সিধু আর চুপ থাকবে না,
শত্রু দেখে লড়াই থেকে পালাব না,
মাথা উড়ে গেলেও সিধুর রক্ত বইতে থাকলেও,
আমরা আর পিছু হটবনা,লড়াই মুখো হব।।”

 

এই সব কবিতা বা গানের মধ্য থেকে বোঝা যাচ্ছে আদিবাসী সহজ সরল সাঁওতালরা যুগ যুগ ধরে শোষণ-অত্যাচারের শিকার হওয়ার জন্য তারা বাধ্য হয়ে সশস্ত্র বিপ্লবের পথ বেছে নিয়েছিল। এভাবে ইংরেজ শাসক,জমিদার ও মহাজনদের শোষন –অত্যাচার-অবিচার থেকেই এই বিদ্রোহের সৃষ্টি হয়েছিল এবং বিদ্রোহের মধ্য থেকেই জন্ম নিয়েছিল নেতৃত্ব। সাঁওতাল পরগনার ধূমায়িত বিদ্রোহের মধ্য থেকে বার হয়ে এলেন ঐতিহাসিক সাঁওতাল বা হূল বিদ্রোহের নায়ক সিধু, কানু, চাঁদ ও ভৈরব নামে চার ভাই। এছাড়া এই নেতাদের মধ্যে ছিলেন কালো প্রামানিক, ডোমন মাঝি,বীরসিংহ মাঝি, গোক্ক ইত্যাদি সাওতাঁল আদিবাসী ।
১৮৫৫ সালের ৩০ শে জুন এই সব নেতাদের নেতৃত্বে প্রায় ১০ হাজার সাঁওতাল ভাগনাডিহির মাঠে সমবেত হয়েছিল। তাদের মধ্যে রটনা করে দেওয়া হয়েছিল যে , সিধু, কানু, দৈব নির্দেশপ্রাপ্ত। বিভিন্ন এলাকার কামার, কুমোর, তাঁতি, ছুতোর প্রভৃতি নিম্নশ্রেণির মানুষও এই বিদ্রোহে যোগদান করেছিল, শোনা যায়, দুই লক্ষ সাঁওতাল এই বিদ্রোহে সামিল হয়েছিল,ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে সাঁওতালরা গেরিলা পদ্ধতিতে হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে জমিদার ও মহাজনদের আক্রমণ করে। এই বিদ্রোহীরা এক সময় রাজমহল ভাগলপুরের মধ্যে রেল ও ডাক যোগাযোগের ব্যবস্থা বিছিন্ন করে দেয়,তাদের হাতে শতাধিক ইংরেজ নিহত হয়।”ক্যলকাটা রিভিউ” পত্রিকা থেকে জানা যায় যে, একজন ইংরেজ সেনাপতি মেজর বরোজ সাঁওতালদের সঙ্গে যুদ্ধে পরাজিত হন।

 

এই বিদ্রোহের সংবাদ বিনা মেঘে বজ্রাঘাতের মতো সমস্ত শাসকগোষ্ঠীকে স্তম্ভিত করে দেয়। “ক্যালকাটা রিভিউ” পত্রিকার একজন ইংরেজ মন্তব্য করেছিলেন – “এই রূপ আর কোনো অদ্ভুত ঘটনা ইংরেজের স্মরণকালের মধ্যে দক্ষিণবঙ্গের সমৃদ্ধিকে বিপদগ্রস্ত করিয়া তোলে নাই।“
এই সংবাদে সেনাপতি মেজর বরোজ ভাগলপুরের দিকে সাঁওতাল বাহিনীর গতিরোধ করেন। ১৮৫৫ সালের ১৬ই আগষ্ট ভাগলপুর জেলায় পীরপাইতির ময়দানে উভয়পক্ষের মধ্যে প্রচন্ড রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়। শোনা যায়, মেজর বরোজের বাহিনী চূড়ান্তভাবে অপদস্থ ও  পরাজিত হয়, এতে একজন ইংরেজ অফিসারসহ কয়েক জন ইংরেজ সৈন্য এবং  বেশকিছু সাওতাঁল বিদ্রোহী নিহত হয়। ভাগলপুরের কমিশনার এই যুদ্ধের একটা বিবরণ দিয়েছিলেন – “বিদ্রোহীরা নির্ভিক চিত্তে প্রাণপণে যুদ্ধ করিয়াছিল।তাহাদের যুদ্ধাস্ত্র কেবল তীর ধনুক আর কুঠার। তাহারা মাটির উপর বসিয়া পায়ের দ্বারা ধনুক হইতে তীর ছুড়িতে অভ্যস্ত।”
এক সময়ে বীরভূম জেলার সমগ্র উত্তর পশ্চিমাংশে বিদ্রোহীদের দখলভুক্ত হয়েছিল। সরকারের আত্মসমর্পণ নির্দেশকে বিদ্রোহীরা ঘৃণাভরে পরিত্যাগ করেছিল। সিধু ও কানুর নেতৃত্বে সাঁওতাল বাহিনী পাকুড়ে পৌঁছায় এবং তিনদিন ও তিনরাত্রি পাকুড়কে অবরোধ করে রাখে। এভাবে তারা বীরভূম থেকে ভাগলপুর পর্যন্ত এক বিরাট ভূখন্ডকে অধিকার করে। ডাক-তার ব্যবস্থা, রাস্তাঘাট প্রভৃতি সমস্ত রকমের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে বিছিন্ন করে দেয়।
কিন্তু কয়েকদিন পরেই ইংরেজশাসক চরমপন্থা গ্রহণ করে সামরিক আইন জারি করে অবাধে লুণ্ঠন, নরহত্যা ও ধ্বংস সাধন করে মানুষের মনে এক বিভীষিকার সৃষ্টি করে। তখন সাঁওতালরা বাধ্য হয়ে পশ্চাৎপদ হতে থাকে।জনৈক ইংরেজ সেনাপতি নিজেই স্বীকার করেছিলেন – “আমরা যুদ্ধ করিনি, করেছিলাম গণহত্যা।”

 

১৮৫৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে একদল সাঁওতাল হতাশাগ্রস্ত হয়ে সিধুর গোপন আশ্রয় স্থল জানিয়ে দেয়। তাই ইংরেজরা সহজেই সিধুকে গ্রেপ্তার করে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে। এভাবে পরাধীন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম বীরসন্তান সিধু ইংরেজ শত্রুর হাতে প্রাণ বিসর্জন দিয়ে ভারতের ইতিহাসে অমর হয়ে রয়েছেন। এর কিছুদিন পরে আর এক নায়ক কানু বীরভূমের ওপারবাঁধের নিকটে সশস্ত্র পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।তাকেও ইংরেজ বাহিনী নৃশংসভাবে গুলি করে হত্যা করে। প্রকৃতপক্ষে,এই সাওতাঁল বিদ্রোহে অন্ততপক্ষে ২৫ হাজার সাঁওতাল নিহত হয়েছিলেন ।এভাবে বীরভূম থেকে ভাগলপুর পর্যন্ত বিশাল অঞ্চল সাঁওতালদের রক্তস্রোতে রঞ্জিত হয়েছিল।
সাঁওতাল বিদ্রোহের প্রচন্ড আঘাত থেকে ইংরেজ সরকার উপলব্ধি করে যে, যারা অনায়াসে প্রাণ দিতে পারে, যারা আত্মসমর্পণ করতে চায় না তাদের সঙ্গে সাধারণ মানুষের মিশ্রণের ফলে সারাভারতে আরও বিদ্রোহের বীজ ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই তারা কৌশল করে সাঁওতালদের জনজীবন থেকে বিছিন্ন করার উদ্দেশ্যে সাঁওতাল পরগণাকে ‘সাঁওতাল ডিহি পরগণা’ নামে একটা পৃথক পরগণা গঠন করে।
দুঃখের বিষয় মৃত্যুভয়হীন বীরত্ব ও শৌর্য থাকা সত্ত্বেও সেদিন সাঁওতাল বিদ্রোহের ভবিষ্যৎ ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন, কারন ভারতের অন্য অঞ্চলসমূহ এই বিদ্রোহের সময়েও ছিল শান্ত, নির্লিপ্ত,ও নিস্তরঙ্গ । তাই ইংরেজ শাসক এই বিদ্রোহকে সহজেই দমন করতে সক্ষম হয়েছিল। তা সত্ত্বেও একথা বলা যেতে পারে শুধুমাত্র তীর-ধনুক-টাঙ্গিকে সম্বল করে ত্রিশ থেকে পঞ্চাশ হাজার সাওতাঁল আধুনিক কামান-বন্দুক সজ্জিত পনের হাজার  সুশিক্ষিত সেনার বিরুদ্ধে বীরবিক্রমে যুদ্ধ পরিচালনা করে সমগ্র ভারতবাসীর সম্মুখে যে পথনির্দেশ করেছিল, সেই পথ ১৮৫৭ সালে মহাবিদ্রোহের মধ্য দিয়ে ভারতের মুক্তি সংগ্রামের সুপ্রশস্ত রাজপথে পরিণত হয়েছিল আর সেই রাজপথই পরবর্তীকালে বিংশ শতাব্দীর মধ্য দিয়ে প্রসারিত হলো। ভারতের এই অশিক্ষিত দরিদ্র আদিবাসী সাঁওতাল তথা কৃষক সমাজ সেই রাজপথেরই অভিযাত্রী-  তাঁরাই হচ্ছেন ভারত মাতার  মহান বীর সন্তান, বীরযোদ্ধা – তাই আমরা তাঁদেরই জয়গান গাইবো।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

ঘুরে আসুন প্রজাপতিরদের স্বর্গরাজ্য ইয়েলবং।

ঘুরতে কে না ভালোবাসে। বিশেষ করে বাঙালিরা সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়ে ভ্রমনের নেশায়। কেউ পাহাড়, কেউ সমুদ্র আবার কেউ প্রাচীন ঐতিহাসিক স্থান ভালোবাসে ভ্রমণ করতে। প্রকৃতি কত কিছুই না আমাদের জন্য সাজিয়ে রেখেছে। কতটুকুই বা আমরা দেখেছি। এ বিশাল পৃথিবীতে আমরা অনেক কিছুই দেখিনি। তবে সোশ্যাল মিডিয়ার দুনিয়ায় আজ গোটা পৃথিবীটা হাতের মুঠোয়় এলেও প্রকৃতিকে চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ করা এ এক আলাদা রোমাঞ্চ, আলাদা অনুভূতি যার রেষ হৃদয়ের মনিকোঠায় থেকে যায় চিরকাল।। তাইতো আজও মানুষ বেরিয়ে পড়়ে প্রকৃতির কে গায়ে মেখে  রোমাঞ্চিত হওয়ার নেশায়।  আসুন ঘুরে আসি ভারতের ই জম্মু ও কাশ্মীরের এক গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থান ইয়েলবং।

 

 

ইয়েলবং হল কালিম্পং পাহাড়ের একটি ছোট গ্রাম, যা ফ্রান্সিস রাই অন্বেষণ করেছিলেন।  আপনি শিলিগুড়ি বা নিউ মাল জংশন স্টেশন থেকে সাধারণত ৩ ঘন্টার মধ্যে এই জায়গায় পৌঁছাতে পারেন।  বাগরাকোটের দিকে রাস্তা ধরুন যা এই উভয় জায়গা থেকে ১৮ কিমি দূরে এবং এখান থেকে ইয়েলবং মাত্র ৭ কিমি দূরে।  ইয়েলবং কালিম্পং এর উপত্যকা এবং হিমালয়ের কুয়াশা দ্বারা লুকিয়ে আছে, ইয়েলবং হল উত্তরবঙ্গের একটি অজানা রত্ন যা জলপ্রপাত, গভীর জঙ্গল, প্রজাপতি প্রেমীদের জন্য একটি স্বর্গ, ইয়েলবং রিভার ক্যাম্পিং, Yelbong রিভার ক্যাম্পিং,  এবং এর মধ্যে সেরা হল ইয়েলবং নদী ক্যানিয়ন গুহা।  গুহাটি ২ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং এটিই একমাত্র নদী গিরিখাত গুহা যা উত্তরবঙ্গে ২ কিলোমিটার দীর্ঘ।

ইয়েলবং, পশ্চিমবঙ্গের কালিম্পং জেলার একটি ছোট্ট গ্রামীণ পাহাড়ি জনপদ যেখানে সুন্দর গ্রামবাসীরা আপনাকে স্বাগত জানাতে এবং লুকানো ধন, মাতৃ প্রকৃতি তাদের চারপাশে রাখা এবং তারা তাদের খুব ভালভাবে রক্ষা করছে।  আপনি যদি সিনেমার মতো বনের মধ্যে লুকানো জলপথ এবং উঁচু জলপ্রপাত দ্বারা বেষ্টিত অন্বেষণ এবং ট্রেকিংয়ের পাগল হন, তাহলে আপনাকে উত্তরবঙ্গের ইয়েলবং ছাড়া আর যেতে হবে না।  জলপ্রপাতের মধ্য দিয়ে এর উত্তেজনাপূর্ণ সরু পথের কারণে নদীর গিরিখাত দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে, জায়গাটি এখন দ্রুত একটি অ্যাডভেঞ্চারের জন্য এলাকার পছন্দসই স্থান হয়ে উঠছে।  এই ছোট্ট পাহাড়ি গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আপনার আত্মাকে ভরিয়ে দেবে।  এটি পাহাড়ি ঢাল, বন এবং নদী দ্বারা বেষ্টিত।  সূর্যোদয়ের আশ্চর্যজনক দৃশ্য, সেইসাথে সূর্যাস্ত, আপনাকে মন্ত্রমুগ্ধ করে তুলবে।  পাখির কিচিরমিচির, সুন্দর প্রজাপতির চুম্বন, পাহাড়ের ঢালে বয়ে যাওয়া নদীর শব্দ, মনোরম, যত্নশীল মানুষ সব মিলে এই জায়গাটিকে একটি স্বপ্নময় গন্তব্য করে তোলে।

 

ইয়েলবং রিভার ক্যানিয়ন ট্রেকিংয়ের জন্য বিখ্যাত, রুমটি নদীর ধার বরাবর পাথরের উপর দিয়ে পায়ের টাল সামলে কেভে পৌঁছানো একটা চ্যালেঞ্জ। এটি প্রায় ২ কিলোমিটার বিস্তৃত নদীর পাড় ঘেঁষে ট্রেকপথ যার শেষে একটি গুহার দেখা মিলে যেরকমটা হয়ত ভারতের পশ্চিমবঙ্গে সেরকম খুব একটা নেই। পাহাড়ী নদী তার আপন ছন্দে কখনো উত্তাল কখনো নিস্তরঙ্গ ঝিরিঝিরি হয়ে বয়ে চলেছে গুহার বুক চিরে। তবে এতোটুকু বলা যেতেই পারে – কেভে প্রবেশ করার পর নিজেকে খুঁজে পাবেন অন্য এক দুনিয়ায়। কেভের পথও বেশ চ্যালেঞ্জিং। নিজেকে মেন্টালি ও ফিজিক্যালি আগে থেকে তৈরি করে এই ট্রেকে আসা বাধ্যতামূলক। ।  সিনেমার মতোই লুকানো জলপথ এবং বনের মধ্যে উঁচু জলপ্রপাত দ্বারা বেষ্টিত এবং এটি অ্যাডভেঞ্চার প্রেমীদের মধ্যে দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জনের প্রধান কারণ।
একটি গিরিখাত হল একটি গভীর, সরু উপত্যকা যার চারপাশে পাথুরে খাড়া দেয়াল রয়েছে, সাধারণত একটি নদী যার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়।  নদীর গিরিখাত একই সাথে ভুতুড়ে এবং রোমাঞ্চকর।  ইয়েলবং এ উত্তরবঙ্গের সেরা ক্যানিয়ন ট্রেক রয়েছে।  আপনি জঙ্গলের গভীরে অনেক সুন্দর এবং দর্শনীয় জলপ্রপাত দেখতে পাবেন, যা বিশ্রাম এবং শান্তিপূর্ণ সময় উপভোগ করার জন্য উপযুক্ত।  এই ট্র্যাক চলাকালীন ২ প্রকৃতির লুকানো ধন আপনাকে লালন করবে, একটি হল ‘রেনবো জলপ্রপাত’ – একটি জলপ্রপাত যা রংধনু রঙ ছড়িয়ে দেয় এবং অন্যটি ‘থ্রি-স্টেপ জলপ্রপাত’।  মূল অ্যাডভেঞ্চার ট্রেক এখান থেকে শুরু হয় যা র‌্যাপেলিং, সাঁতার কাটা, বোল্ডারিং, গুহায় স্ক্রলিং, রিভার ক্রসিং এবং অ্যাডভেঞ্চার অ্যাক্টিভিটিগুলির আরও অনেক শর্তকে একত্রিত করে।

 

 

ইতিহাস—

“ইয়েলবং এর স্থানীয় ছেলে ফ্রানচিস ছোট বেলায় কয়লার খনিতে হিরে খুঁজতে গিয়ে প্রথম এই রিভার ক্যানিয়নটি আবিষ্কার করেন। প্রথমে ভয়ে ফিরে এলেও পরে দলবল নিয়ে পুরো টাই খুঁজে বের করেন। আগে এই পুরো রিভার বেড টাই কয়লার খনি হলেও পরে ১৯৬২ সালের দিকে ধস নেমে খননকার্য বন্ধ হয়ে যায়। পুরো ট্রেক টাই বেশ রোমহর্ষক এবং খুব সোজা মোটেই নয়। প্রথমে গ্রাম থেকে ট্রেক করে ৫ কিলোমিটার এর মতো নামতে হবে রিভার বেডে। এরপর ক্যানিয়নে জল, পাথর ডিঙিয়ে এগিয়ে চলতে হবে পুরোটা দেখতে। পুরো ব্যাপার টাই বেশ থ্রিলিং এবং অনবদ্য।

 

ইয়েলবং যাওয়ার উপায়—

এবার জেনে নেবো ইয়েলবং যাওয়ার উপায়। ট্রেনে করে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন, তারপর ওখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে ইয়েলবং। গাড়ি বাগরাকোট স্টেশন থেকে ইয়েলবং এর দিকে যাবে। গোটা রাস্তা ৩০ কিলোমিটার মতো , তবে সময় লাগবে ৩ ঘন্টার মতো। গাড়ি একদম গ্রামের ভিতর এর রাস্তায় না যেতে চাইলে অগত্যা ৪ কিলোমিটার মতো পায়ে হাঁটাই ভরসা।

 

কোথায় থাকবেন—

ইয়েলবং একটি ইকো ফ্রেন্ডলি গ্রাম। ইয়েলবং রিভার ক্যানিয়ন প্রকৃতির এক বিরল সৃষ্টি যা ভারতে খুব কমই পাওয়া যায়। এখানে এখন বেশ কিছু হোম স্টে চালু হয়েছে।

 

 

ইয়েলবং-এ কি করবেন–

ইয়েলবং রিভার ক্যানিয়নে ট্রেক করুন।
প্রজাপতি দেখুন।
পাখি দেখুন।
ফরেস্ট হাইক করুন।
মাউন্টেন ভিউ।
ট্রেক করুন বা ইয়েলবং-এ অন্যান্য লুকানো জায়গাগুলি অন্বেষণ করুন।
নদীর ধারে নাইট ওয়াক করুন। আপনাদের মন ভোরে যাবে।

 

সর্বপরি বলা যেতে পারে ইয়েলবং প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য এক টুকরো স্বর্গ।  সেগুলি পর্যবেক্ষণ করতে এবং কিছু স্ন্যাপ নিতে ভুলবেন না।  আপনার ফটোগ্রাফিক দক্ষতা অন্বেষণ একটি নিখুঁত জায়গা। আপনি অফবিট লুকানো জলপ্রপাত দেখতে পারেন।  স্থানীয় বন্ধু তৈরি করুন, দেশীয় ছেলেদের সাথে খেলুন। জীবনের সরলতা পর্যবেক্ষণ করতে ইয়েলবং গ্রামের চারপাশে হাঁটুন।

 

।।ছবি ও তথ্য : সংগৃহীত গুগল ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

 

 

 

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের এক গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থান তুরতুক — এক ভ্রমণ কাহিনী।

ঘুরতে কে না ভালোবাসে। বিশেষ করে বাঙালিরা সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়ে ভ্রমনের নেশায়। কেউ পাহাড়, কেউ সমুদ্র আবার কেউ প্রাচীন ঐতিহাসিক স্থান ভালোবাসে ভ্রমণ করতে। প্রকৃতি কত কিছুই না আমাদের জন্য সাজিয়ে রেখেছে। কতটুকুই বা আমরা দেখেছি। এ বিশাল পৃথিবীতে আমরা অনেক কিছুই দেখিনি। তবে সোশ্যাল মিডিয়ার দুনিয়ায় আজ গোটা পৃথিবীটা হাতের মুঠোয়় এলেও প্রকৃতিকে চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ করা এ এক আলাদা রোমাঞ্চ, আলাদা অনুভূতি যার রেষ হৃদয়ের মনিকোঠায় থেকে যায় চিরকাল।। তাইতো আজও মানুষ বেরিয়ে পড়়ে প্রকৃতির কে গায়ে মেখে  রোমাঞ্চিত হওয়ার নেশায়।  আসুন ঘুরে আসি ভারতের ই জম্মু ও কাশ্মীরের এক গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থান তুরতুক।

 

তুর্তুক বাল্টিস্তান অঞ্চলে অবস্থিত, একটি অঞ্চল প্রায় সম্পূর্ণরূপে পাকিস্তান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।  তুর্তুক হল ভারতের নিয়ন্ত্রণাধীন পাঁচটি বাল্টি-জনবহুল গ্রামের মধ্যে একটি, বাকি চারটি হল বোগদাং, ত্যাক্ষী, চালুনখা এবং ধোথাং।  এটি গ্রামের মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং এটির দাবি রয়েছে শ্যাওক উপত্যকার দক্ষিণ চোরবাট অংশের ঐতিহাসিক রাজধানী।  যদিও বোগডাং ১৯৪৮ সাল থেকে ভারত-শাসিত লাদাখের অংশ ছিল, অন্য চারটি গ্রাম ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় ভারতীয় সেনাবাহিনী দখল করে নেয়।

 

তুর্তুক হল একটি গ্রাম এবং লাদাখের ভারতীয় কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে একটি নামী সম্প্রদায় উন্নয়ন ব্লকের সদর দফতর।  এটি কারাকোরাম রেঞ্জ এবং হিমালয়ের মধ্যে স্যান্ডউইচ করা একটি ছোট গ্রাম এবং ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছাকাছি ভারতের উত্তরের গ্রামগুলির মধ্যে একটি।  তুর্তুক লেহ জেলার নুব্রা তহসিলে, শেওক নদীর তীরে অবস্থিত।  ভৌগোলিকভাবে, গ্রামটি বালতিস্তান অঞ্চলে, যেটি পাকিস্তানি প্রশাসনের অধীনে ছিল, তুরতুক ব্লকের পাঁচটি গ্রাম ছাড়া যা ভারতের অংশ।  এই গ্রামগুলিই ভারতের একমাত্র অঞ্চল যেখানে বাল্টি জনগোষ্ঠী রয়েছে।  Turtuk তার ফলের জন্য পরিচিত, বিশেষ করে এপ্রিকট। ১৯৭১ সালের যুদ্ধ পর্যন্ত তুর্তুক পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে ছিল, যখন ভারতীয় সেনাবাহিনী গ্রামটি দখল করে নেয়।  এটি সিয়াচেন হিমবাহের প্রবেশদ্বারগুলির মধ্যে একটি।

 

“তুরতুক (Turtuk) বিধাতার বিশেষ আশীর্বাদপ্রাপ্ত ভারতের সীমানার শেষ গ্রাম যা সমুদ্র সীমা থেকে ৯৮৪৬ ফিট (৩০০১ মিটার) উচুতে অবস্থিত। অদ্ভুত সুন্দর তুরতুক গ্রামটি সায়ক ভ্যালীতে অবস্থিত যা নুব্রা ভ্যালী এর অংশ বিশেষ। লেহ শহর থেকে এই গ্রামের দূরত্ব ২০৫ কিলোমিটার এবং নুব্রা ভ্যালীর ডিস্কিট শহর থেকে ৮৮ কিলোমিটার। ৩০০০ এর চেয়ে কিছু বেশি লোকের বসবাস আছে এই গ্রামে। ২০১০ সালে ট্যুরিস্টদের জন্যে এই গ্রামকে খুলে দেয়া হয়।

 

তুর্তুকের আশেপাশে পর্যটন—-

 

২০১০ সালে তুর্তুক পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছিল। গ্রামটি শ্যাওক উপত্যকার দৃশ্য দেখায়।
শ্যাওক নদীর উপরে মালভূমিতে অবস্থিত কয়েকটি গোম্পা রয়েছে এবং গ্রামে একটি পুরানো রাজকীয় বাড়ি রয়েছে।  তুর্তুক ভারতের কয়েকটি স্থানের মধ্যে একটি যেখানে কেউ বাল্টি সংস্কৃতির সাক্ষী হতে পারে এবং গ্রামে কয়েকটি হোমস্টে এবং গেস্ট হাউস পাওয়া যায়।  এটিই শেষ বড় গ্রাম যেখানে নিয়ন্ত্রণ রেখার আগে পর্যটন কার্যকলাপের অনুমতি দেওয়া হয়

 

 

এই গ্রামের চারপাশ পাহাড় দিয়ে ঘেরা। এই গ্রামের সবটুকু সবুজে মোড়ানো। এখানে ধান থেকে শুরু করে গম, জব, আলু, কপিসহ অন্যান্য তরকারি, আপেলসহ নানা রকম ফলমূল হয় নিয়মিত। নানা রকম ফুল, পাথুরে বাড়ি, ঝরনার বিশুদ্ধ পানি সবই আছে এখানে। গায়ে গায়ে লেপটে থাকা পাহাড়ের সারি, পাহাড় থেকে বয়ে চলা ঝরনা, ঝিরি ও নদী। এই গ্রামের বাইরের পাহাড়গুলো যখন বরফে বরফে মোড়ানো থাকে, তখনো এখানে বরফ পড়লেও সেটা খুব বেশি নয়, যাতে করে জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়। বরফ পড়ে ঠিকই, কিন্তু একটু রোদের পরশ পেলেই সেই বরফ দ্রুত গলে গিয়ে পাশের সায়ক নদীতে গিয়ে পতিত হয়।”

 


সংস্কৃতি ও প্রাকৃতিক পরিবেশ—-

 

“তুরতুক এর সব ঘর বাড়িই একদম নিখাদ পাথরের তৈরি। শুধু পার্থক্য এই যে, যাদের আর্থিক অবস্থা একটু ভালো, তারা পাথর সাইজ মতো করে কেটে নিয়ে কিছু সিমেন্টের ব্যবহার করে সাজানো বাড়ি বানাতে পারে। আর যাদের সেই অবস্থা নেই তারা নিজেদের মতো করে পাথর সংগ্রহ করে একটার পর একটা বসিয়ে দেয়, কখনো নদীর কাদার সাহায্যে বা শুধু পাথরের স্তূপ সাজিয়েই বানিয়ে ফেলে বসবাসের জন্য আস্ত ঘর বা বাড়ি। এখানে আছে বিদ্যুৎ, টিভি, ডিশের সংযোগসহ আর নানা রকম সুযোগ সুবিধা। এমনকি আছে মোবাইলও। এই গ্রামের যারা একটু অবস্থা সম্পন্ন বা যাদের নিজেদের থাকার ঘর ছাড়াও আছে দু-একটি বেশি বা তার চেয়ে বেশি রুম, সেগুলো ওরা টুরিস্টদের জন্য ভাড়া দিয়ে থাকে। যেখানে একদম কোলাহলমুক্ত একটি দিন বা রাত কাটিয়ে দেওয়া যেতে পারে নিশ্চিন্তে।

 

কিভাবে যাবেন—-

তুরতুক এ যেতে হলে আপনাকে বেশ রোমাঞ্চপ্রিয় হতে হবে। কলকাতা থেকে ট্রেনে দিল্লি, দিল্লি থেকে শ্রীনগর বা মানালি হয়ে বাসে বা রিজার্ভ জিপে করে লেহ শহরে। দিল্লি থেকে বাই রোডে লেহ যেতে সময় লাগবে অন্তত তিনদিন। দুই জায়গায় রাতে থাকতে হবে, শ্রীনগর বা মানালিতে এক রাত আর লেহ যেতে পথে আর এক রাত। রাতের থাকার খরচ নির্ভর করবে রুচি আর মানসিকতার ওপরে ৫০০ থেকে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত পাবেন, মানালি বা শ্রীনগর থাকতে। তবে এই রাস্তায় যেতে হলে বেশ কিছু ঝুকির ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে।”
খাওয়া দাওয়া—–

 

তুরতুকে থাকার পাশাপাশি টুরিস্টদের জন্য আছে কিছু খাবার হোটেলও, যেখানে বেশ সহনীয় মূল্যে পাবেন নানা রকম পছন্দের খাবার।

 

ইতিহাস—

 

ব্রগপা যুগ—-

 

তুর্তুকে বসবাসকারী প্রাচীনতম পরিচিত উপজাতি ছিল একটি দারদিক উপজাতি, স্থানীয়ভাবে ব্রোগপা নামে পরিচিত, যারা এখন পাকিস্তানের চিলাস থেকে স্থানান্তরিত হয়েছে বলে মনে করা হয়।  তারা তুর্তুকে একটি অজানা সময় থেকে, বেশিরভাগ সম্ভবত, খ্রিস্টীয় ১৩ শতক পর্যন্ত বাস করত।  খ্রিস্টীয় ১৩ শতকের দিকে কোন এক সময়ে, চুলি এবং ইয়াংদ্রুং নামে দুই যোদ্ধা তুর্তুকে আসেন।  তারা রাজাকে হত্যা করে এবং অবশেষে স্থানীয়দের বেশিরভাগই তুর্তুককে স্রোতের ধারে এবং পাহাড়ের ওপারে, এখন হানু, দাহ এবং ডোমখার নামক গ্রামে পালিয়ে যায়।  এই মুহূর্তে, তুর্তুকের জনসংখ্যার অধিকাংশই চুলি এবং ইয়াংড্রং-এর সরাসরি বংশধর।  সময়ের সাথে সাথে, বাইরে থেকে লোকেরা কাজের সন্ধানে তুর্তুকে আসে, আরও বৈচিত্র্য আনে।  শিখ সাম্রাজ্য কর্তৃক বাল্টিস্তান জয়ের আগ পর্যন্ত তুর্তুক একটি স্বাধীন রাজ্য ছিল বলে মনে করা হয়।
তুর্তুকের লোকেরা ইসলামের আগে বন ধর্মের অনুসারী ছিল।  বনের আচারগুলি ঐতিহ্যের পাশাপাশি স্থাপত্য উভয় ক্ষেত্রেই দেখা যায়।  বিখ্যাত পারস্যের সুফি কবি ও ধর্ম প্রচারক সৈয়দ আলী শাহ হামদানির কারণে তুর্তুকে ইসলাম এসেছে।  বাল্টিস্তানের অন্যান্য জায়গার মতো তুর্তুকের লোকেরাও শাহ হামদানির একজন শিষ্য সৈয়দ মোহাম্মদ নূরবকশের নামানুসারে সুফি সম্প্রদায়ের সুফি নূরবকশিয়া অনুশীলন করে।  কিন্তু ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যে, শিয়া, হানাফী এবং পরবর্তীতে ওহাবিদের মত বাইরের প্রভাবশালী সম্প্রদায় বাল্টিস্তানের সুফি নূরবকশিয়া এবং তুরতুকের নূরবকশিয়াকেও ধর্মান্তরিত করতে শুরু করে।  অতি সম্প্রতি, তুরতুকের হানাফীরাও সুন্নিদের আরও চরম উপসেটে রূপান্তরিত হয়েছে।  এই মুহুর্তে, জনসংখ্যার মাত্র অর্ধেকই নূরবকশিয়াদের চর্চা করে আর বাকিরা হয় সুন্নি বা ওয়াহাবি সম্প্রদায়ের।

 

ইয়াবগো রাজবংশ—-

 

তুর্তুক সহ বাল্টিস্তানের চোরবাত-খাপলু অঞ্চলটি এক হাজার বছর ধরে তুর্কিস্তানি ইয়াবগো রাজবংশ দ্বারা শাসিত হয়েছিল।  তাদের শাসন শুরু হয়েছিল যখন বেগ মানথাল ৯ম শতাব্দীতে ইয়ারকান্দ থেকে এই অঞ্চলে আসেন এবং খাপলু জয় করেন।  ১৩শ শতাব্দীতে ইসলামী পণ্ডিত ও কবি মীর সাইয়্যেদ আলী হামাদানির আগমনের আগ পর্যন্ত এই অঞ্চলে বৌদ্ধধর্মের আধিপত্য ছিল।

 

ডোগরা রাজবংশ—

 

হাজার বছরের ইয়াবগো শাসন ১৮৩৪ সাল পর্যন্ত অব্যাহত ছিল, যখন শিখ সাম্রাজ্যের একজন ভাসাল জম্মুর রাজা গুলাব সিং এই অঞ্চলটি জয় করেছিলেন।  রাজত্ব হারানোর পর, ইয়াবগো আবদুল্লাহ খান পরিবারের নাম পরিবর্তন করে কাচো (“হালকা ওজনের জন্য বাল্টি) রেখেছিলেন, যদিও পরিবারটি একটি ধনী, শক্তিশালী পরিবার ছিল।
প্রথম অ্যাংলো-শিখ যুদ্ধের পর, ব্রিটিশরা গুলাব সিং-এর অধীনে জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে।  গুলাব সিংয়ের ডোগরা রাজবংশ ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ রাজের অধীনে এই অঞ্চল শাসন করেছিল।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

 

 

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

আজ ‘আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস’ ও ‘আন্তর্জাতিক নির্যাতনবিরোধী দিবস’, জানব দিন দুটি পালনের গুরুত্ব সম্পর্কে কিছু কথা।

 

আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস।

 

মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার রোধে সারা বিশ্বে দিবসটি পালিত হয়। এবারের প্রতিপাদ্য- ‘মাদক সেবন রোধ করি, সুস্থ সুন্দর জীবন গড়ি’। মাদকের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ১৯৮৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভায় ২৬ জুনকে মাদকবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস হিসাবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।পরের বছর থেকে বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।

মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার এবং অবৈধ পাচারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক দিবস হল মাদকের অপব্যবহার এবং অবৈধ মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে জাতিসংঘের একটি আন্তর্জাতিক দিবস । এটি ১৯৮৯ সাল থেকে প্রতি বছর ২৬ জুন পালিত হয়। চীনে প্রথম আফিম যুদ্ধের ঠিক আগে ২৫ জুন, ১৮৩৯-এ শেষ হয়েছিল হুমেন , গুয়াংডং -এ লিন জেক্সুর আফিম ব্যবসার অবসানের স্মরণে ২৬ জুন তারিখটি। ৭ ডিসেম্বর ১৯৮৭-এর সাধারণ পরিষদের রেজোলিউশন ৪২/১১২ দ্বারা এই পালন করা হয়েছিল ।

২৬ জুন ১৯৮৭, ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার এবং অবৈধ পাচার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে দুটি গুরুত্বপূর্ণ পাঠ্য ( মাদক অপব্যবহার নিয়ন্ত্রণে ভবিষ্যত কার্যক্রমের ব্যাপক বহুবিভাগীয় রূপরেখা এবং মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার এবং অবৈধ পাচার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলনের ঘোষণা ) গৃহীত হয়েছিল। ১৭-২৬ জুন ১৯৮৭ সময়কালে। সম্মেলন সুপারিশ করে যে মাদকের অপব্যবহার এবং অবৈধ পাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের গুরুত্ব চিহ্নিত করার জন্য একটি বার্ষিক দিবস পালন করা উচিত। ১৭ জুন এবং ২৬ জুন উভয় তারিখই প্রস্তাব করা হয়েছিল এবং পরবর্তী বৈঠকে ২৬ জুন বেছে নেওয়া হয়েছিল এবং খসড়া এবং চূড়ান্ত রেজোলিউশনে লিখিত হয়েছিল।

 

সারা পৃথিবী জুড়ে আজ মাদক পাচার একটি গভীর সঙ্কটের রূপ নিয়েছে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলিতে, যেসব দেশে অর্থের অভাবে ভুগছেন বহু সংখ্যক মানুষ, এবং নিরাপত্তার অভাবে আটকানো যায় না বহু অপরাধ। এই পরিস্থিতিতে অপরাধের পথে মানুষকে চালিত করা সহজতর হয়ে পড়ে। সমীক্ষায় প্রকাশ, মাদক পাচারের ফলে ব্যাহত হয় শিক্ষা, বাড়ে অপরাধ। আন্তর্জাতিক স্তরে মাদক বিরোধী দিবস পালনের উদ্দেশ্য, সমস্যাটির প্রতি আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করা, এবং বিভিন্ন স্তরে আলচনার মঞ্চ গড়ে তোলা। এই দিনটি পালন করার প্রধান উদ্দেশ্য হলো মাদক সেবন ও পাচারের মারাত্মক প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, এবং প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা।

 

বিভিন্ন দেশের মানুষ একসঙ্গে দিবসটি উদযাপন করে। যেহেতু ওষুধের ব্যবহার বৃদ্ধি পায়, দিনটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ইন্টারন্যাশনাল ড্রাগ পলিসি কনসোর্টিয়াম দ্বারা সমন্বিত , এটি দাবি করে যে ওষুধ নীতির পন্থাগুলি স্বাস্থ্য, মানবাধিকার এবং মাদক ব্যবহারকারী লোকেদের অপরাধীকরণের অবসানের দিকে মনোনিবেশ করা উচিত। আজ ২৬ জুন, আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস। মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার রোধে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভারতেও দিবসটি পালিত হচ্ছে। এবারে দিবসটির  প্রতিপাদ্য- ‘মাদক সেবন রোধ করি, সুস্থ সুন্দর জীবন গড়ি’।

 

 

আন্তর্জাতিক নির্যাতনবিরোধী দিবস।

 

নির্যাতনের শিকারদের সমর্থনে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক দিবস হল প্রতি বছর ২৬ জুন নির্যাতনের অপরাধের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য এবং সারা বিশ্বে ভুক্তভোগী এবং বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের সম্মান ও সমর্থন করার জন্য একটি আন্তর্জাতিক পালন করা হয়।

 

এই দিনটি সমাজে অগ্রহণযোগ্য মানবিক নির্যাতন সম্পর্কে জনগণের মধ্যে শুধু সচেতনতাই ছড়ায় না, তাদের জানিয়ে দেয় যে এটি একটি অপরাধ।

বিশ্ব জুড়ে, অসংখ্য মানুষ আছে যারা শারীরিক বা মানসিক নির্যাতনের সম্মুখীন হয়।  যদিও এটি আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে একটি অপরাধ, এমন অনেক ঘটনা রয়েছে যা রিপোর্ট করা হয়নি।  তাই, সমস্ত স্টেকহোল্ডারদেরকে একত্রিত হওয়ার জন্য আহ্বান জানানোর জন্য যারা অপব্যবহার ও নির্যাতনের মুখোমুখি হয়েছেন এবং অব্যাহত রেখেছেন, প্রতি বছর ২৬ জুন নির্যাতনের শিকারদের সমর্থনে আন্তর্জাতিক দিবস হিসাবে পালন করা হয়।  জাতিসংঘ দাবি করে যে নির্যাতনের পরিণতি হল এটি সহিংসতার চক্রে পরিণত হতে পারে এবং পরবর্তী প্রজন্মের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।

 

ইতিহাস—-

 

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ দুটি কারণে দিনটিকে বেছে নেয় । প্রথমত, ২৬ জুন ১৯৪৫ সালে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাঝখানে জাতিসংঘের সনদ স্বাক্ষরিত হয়েছিল – প্রথম আন্তর্জাতিক উপকরণ যা জাতিসংঘের সদস্যদের মানবাধিকারকে সম্মান ও প্রচার করতে বাধ্য করে । দ্বিতীয়ত, ২৬ জুন ১৯৮৭ ছিল যখন নির্যাতন এবং অন্যান্য নিষ্ঠুর, অমানবিক বা অবমাননাকর আচরণ বা শাস্তির বিরুদ্ধে জাতিসংঘের কনভেনশন কার্যকর হয়েছিল।
বার্ষিক নির্যাতনের শিকারদের সমর্থনে আন্তর্জাতিক দিবস পালনের সিদ্ধান্তটি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ডেনমার্কের প্রস্তাবে গৃহীত হয়েছিল, যা বিশ্বখ্যাত আন্তর্জাতিক পুনর্বাসন কাউন্সিল ফর টর্চার ভিকটিম (আইআরসিটি) এর আবাসস্থল।

 

১৯৯৮ সালের ২৬ জুন নির্যাতনের শিকারদের সমর্থনে প্রথম আন্তর্জাতিক দিবস উদযাপন করে, জাতিসংঘ সমস্ত সরকার, স্টেকহোল্ডার এবং বৈশ্বিক সমাজের সদস্যদের এই আইনের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে এবং নির্যাতনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এবং যারা  বিশ্বের প্রতিটি কোণে এটি কার্যকর করুন।  দিনটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এটি তাদের সমর্থনে সকলকে ঐক্যবদ্ধ করে যারা মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর তারপর থেকে, সারা বিশ্বের কয়েক ডজন দেশে প্রায় ১০০টি সংস্থা প্রতি বছর ইভেন্ট, উদযাপন এবং প্রচারাভিযানের মাধ্যমে দিবসটিকে চিহ্নিত করে।
১৬ জুলাই ২০০৯ তারিখে, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনাতে নির্যাতনের শিকারদের সমর্থনে আন্তর্জাতিক দিবসটিকে সরকারী ছুটি হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছিল ।

সর্বশেষ ২৬ জুন গ্লোবাল রিপোর্ট (২০১২) অনুসারে, বিশ্বের ৬০টি দেশে অন্তত ১০০টি সংস্থা সম্মেলন, কর্মশালা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ, সাংস্কৃতিক ও সঙ্গীত অনুষ্ঠান, শিশুদের জন্য অনুষ্ঠান ইত্যাদির মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করেছে। এশিয়ায় এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন প্রতি বছর আঞ্চলিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এশিয়ার বিভিন্ন দেশে নির্যাতন বিরোধী নেটওয়ার্ক যারা এখনও নির্যাতনের ব্যাপক ব্যবহারে ভুগছে তারা সমাবেশ এবং জনসাধারণের অনুষ্ঠান করে। এই কারণেই জাতিসংঘ এই দিনটিকে নির্যাতনের শিকারদের সমর্থনে আন্তর্জাতিক দিবস হিসাবে বেছে নিয়েছে।

 

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

ঘুরে আসুন জম্মু ও কাশ্মীরের এক গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থান সোনমার্গ।

ঘুরতে কে না ভালোবাসে। বিশেষ করে বাঙালিরা সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়ে ভ্রমনের নেশায়। কেউ পাহাড়, কেউ সমুদ্র আবার কেউ প্রাচীন ঐতিহাসিক স্থান ভালোবাসে ভ্রমণ করতে। প্রকৃতি কত কিছুই না আমাদের জন্য সাজিয়ে রেখেছে। কতটুকুই বা আমরা দেখেছি। এ বিশাল পৃথিবীতে আমরা অনেক কিছুই দেখিনি। তবে সোশ্যাল মিডিয়ার দুনিয়ায় আজ গোটা পৃথিবীটা হাতের মুঠোয়় এলেও প্রকৃতিকে চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ করা এ এক আলাদা রোমাঞ্চ, আলাদা অনুভূতি যার রেষ হৃদয়ের মনিকোঠায় থেকে যায় চিরকাল।। তাইতো আজও মানুষ বেরিয়ে পড়়ে প্রকৃতির কে গায়ে মেখে  রোমাঞ্চিত হওয়ার নেশায়।  আসুন ঘুরে আসি ভারতের ই জম্মু ও কাশ্মীরের এক গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থান সোনমার্গ  ।

 

সোনমার্গ বা সোনামার্গ যার জন্য দাঁড়ায় সোনার তৃণভূমি জম্মু ও কাশ্মীরের গান্দেরবাল জেলায় অবস্থিত একটি হিল স্টেশন। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিস্ময়কর। এখানে, আপনি প্রকৃতির বিস্ময় অন্বেষণ করতে পাবেন। চমত্কার কনিফার গাছগুলি পুরো পর্বতকে উজ্জ্বল করে তোলে। তুষার যা পাহাড়ের সুন্দর বাদামী রঙকে ঢেকে দেয় তা আশ্চর্যজনকভাবে অন্বেষণ, লালন এবং অভিজ্ঞতার জন্য মনোরম দৃশ্য তৈরি করে।

 

শ্রীনগর থেকে ৮২ কিমি উত্তর-পূর্বে অবস্থিত কাশ্মীর এর আর এক স্বর্গ সোনমার্গ। এপ্রিল মে মাসে সোনমার্গ তার রূপের ডালি উজাড় করে দেয় পর্যটকদের কাছে। শ্রীনগর থেকে সোনমার্গ যেতে পথে পড়বে গান্দেরবল, কঙ্গন, গুন্দ প্রভৃতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাহাড়ি জনপদ। আর পুরো পথটাই সাথে থাকবে দামাল সিন্ধুনদ। পাইন, ফার, বার্চ আর দূর দুরান্তের পাহাড়শ্রেণীর শোভা দেখতে দেখতে আপনি মোহিত হয়ে পড়বেন। চারপাশে পাহাড় আর সোনালি ঘাসে ঢাকা সোনমার্গ নিয়ে জনশ্রুতি রয়েছে যে এই উপত্যকার কোথাও এক কুপ আছে জার জলে সোনালি রঙ ধরে উপত্যকায়। এই জন্য নাম সোনমার্গ অর্থাত্‍ সোনালী উপত্যকা। সোনমার্গ থেকে পায়ে পায়ে বা ঘোড়ায় চেপে পৌঁছে যাওয়া যায় খাজিয়ার হিমবাহের কোলে। শীতের সময় এখানে বরফ নিয়ে মেতে ওঠে সবাই।

 

সোনমার্গ এর দর্শনীয় স্থানসমূহ–

 

সোনমার্গ অন্যতম কাশ্মীরে দেখার জন্য সেরা জায়গা. সোনমার্গের কাছে আপনি যে পর্যটন স্থানগুলি ঘুরে দেখতে পারেন তার তালিকা এখানে রয়েছে।

১. থাজিওয়াস হিমবাহ

সোনমার্গ যার অর্থ ‘সোনার তৃণভূমি’ অনায়াসে তার আকর্ষণ বহন করে। তুষারে পূর্ণ হওয়ায়, এই হিমবাহটি ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় ভ্রমণ গন্তব্যগুলির মধ্যে একটি জম্মু ও কাশ্মীর. শহর থেকে 3 কিমি দূরে অবস্থিত এবং আনুমানিক 9,186 ফুট উচ্চতায় অবস্থিত, এই স্থানটি তার মনোরম কাশ্মীর উপত্যকা সহ তুষার এর কবজ দেখার জন্য বেশ মনোরম।

২. জোজি-লা-পাস

এই সুন্দর পাসটিই কাশ্মীর উপত্যকাকে একত্রিত করে লাদাখ. জোজি-লা পাস সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় 3,528 মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। এই জায়গাটি অভিজ্ঞতার জন্য অবিশ্বাস্য এবং আপনার প্রিয়জনদের সাথে লালন-পালন করে।

৩. বিষনসার লেক

সোনমার্গের একটু বাইরে অবস্থিত, এই হ্রদের ফিরোজা নীল জল রূপালী পাহাড়ের সাথে একটি সবুজ তৃণভূমি দ্বারা বেষ্টিত। এই পর্বতগুলি একটি উত্তেজনাপূর্ণ দূরত্বে অবস্থিত। আপনার প্রিয়জনের সাথে কিছু আশ্চর্যজনক স্মৃতি উপভোগ করার ক্ষেত্রে এটি বেশ দুর্দান্ত জায়গা।

৪. হোয়াইট রিভার রাফটিং

এটা কোনো অ্যাডভেঞ্চার রাইডের চেয়ে কম নয়। এই রাইডটি আপনাকে একটি অ্যাড্রেনালিন রাশ দিতে যথেষ্ট চিত্তাকর্ষক। এবং এই কার্যকলাপ সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষ কি পছন্দ করে. আপনি একটি দীর্ঘ র‌্যাফটিং অভিযানে যাওয়ার কথাও বিবেচনা করতে পারেন যা শুরু হয় বালতাল এবং সোনমার্গে অবস্থিত শুটকারি ব্রিজে শেষ হয়।

৫. নীলাগ্রাদ নদী

এটি তার নিরাময় ক্ষমতার জন্য পরিচিত এবং এই কারণেই এটি অত্যন্ত সম্মানিত। প্রতি রবিবার প্রচুর স্থানীয় মানুষ এখানে আসেন শুধু এর পবিত্র জলে স্নান করতে।

৬. কৃষ্ণসার লেক

কৃষ্ণসার হ্রদটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় 3,801 মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। এখানকার মনোরম দৃশ্য মুগ্ধ করে। ঘন আলপাইন দ্বারা বেষ্টিত, এই জায়গাটি একটি খুব শীতল এবং মনোরম পরিবেশ রয়েছে। লোকেরা মাছ ধরার জন্য এবং দুঃসাহসিক জলের ক্রিয়াকলাপ উপভোগ করার জন্য প্রায়শই এই জায়গায় আসে।

 

ভ্রমণের উপযুক্ত সময়—

সোনমার্গ ভ্রমনের উপযুক্ত সময় মার্চ – নভেম্বর। এটি সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় রূপ নেয় এপ্রিল-মে মাসে। তবে যারা স্নোফল দেখতে কাশ্মীর যেতে চান তাদের জন্যে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি উত্তম। কারন এ সময়টায় কাশ্মীরে সব থেকে বেশী স্নোফল পাবার সম্ভাবনা থাকে। এই সময়ে, সার্বিক তাপমাত্রা দর্শনীয় কার্যকলাপের জন্য বেশ মনোরম।

 

সোনমার্গ কিভাবে যাবেন—-

যদি অফবীট জায়গা গুলো আপনার ভ্রমণ লিস্টে না থাকে তাহলে শ্রীনগর থেকে দিনে দিনে সেরে নিতে পারেন সোনমার্গ ভ্রমণ। তবে পথের শোভা উপভোগ করতে হলে এ পথে নিজস্ব গাড়ি ভাড়া করে আসাই ভালো। মারুতি ওমনি ভাড়া পাওয়া যায়। টাটা সুমোও রয়েছ কারগিলগামী শেয়ার সুমোও যাচ্ছে এ পথে।

 

কোথায় থাকবেন—

সোনমার্গে থাকবার সেরা জায়গা জম্মু কাশ্মীর পর্যটনের ট্যুরিস্ট হাটে, এছাড়া হোটেল রয়্যাল, হোটেল স্নো ল্যান্ড, হোটেল পিকস, রয়েছে।

 

সোনমার্গের ইতিহাস—-

 

ঐতিহাসিক লেন্স থেকে দেখলে, আমরা জানতে পারি যে প্রাচীন কাল থেকেই সোনামার্গ ভারতীয় ইতিহাসের বর্ণনায় একটি বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করেছে, কারণ এটি সিল্ক রোডের প্রবেশদ্বার হিসাবে পরিচিত ছিল যা কাশ্মীর ভূমিকে সংযুক্ত করেছিল। গিলগিট হয়ে চীন ও অন্যান্য উপসাগরীয় দেশ।
১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার সাথে সাথে সোনমার্গ, যা তখন কাশ্মীরের একটি স্থানীয় শহর ছিল জম্মু ও কাশ্মীরের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠে। আজ, এই জায়গাটি অমরনাথ মন্দির এবং লাদাখ অঞ্চলের মতো কাছাকাছি অবস্থিত পর্যটন এলাকার জন্য বেস ক্যাম্প হিসাবে পরিচিত।

।।তথ্য: সংগৃহীত ইন্টারনেট ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

 

 

 

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

ঘুরে আসুন ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের এক গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থান ইউসমার্গ।

ঘুরতে কে না ভালোবাসে। বিশেষ করে বাঙালিরা সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়ে ভ্রমনের নেশায়। কেউ পাহাড়, কেউ সমুদ্র আবার কেউ প্রাচীন ঐতিহাসিক স্থান ভালোবাসে ভ্রমণ করতে। প্রকৃতি কত কিছুই না আমাদের জন্য সাজিয়ে রেখেছে। কতটুকুই বা আমরা দেখেছি। এ বিশাল পৃথিবীতে আমরা অনেক কিছুই দেখিনি। তবে সোশ্যাল মিডিয়ার দুনিয়ায় আজ গোটা পৃথিবীটা হাতের মুঠোয়় এলেও প্রকৃতিকে চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ করা এ এক আলাদা রোমাঞ্চ, আলাদা অনুভূতি যার রেষ হৃদয়ের মনিকোঠায় থেকে যায় চিরকাল।। তাইতো আজও মানুষ বেরিয়ে পড়়ে প্রকৃতির কে গায়ে মেখে  রোমাঞ্চিত হওয়ার নেশায়।  আসুন ঘুরে আসি ভারতের ই জম্মু ও কাশ্মীরের এক গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থান ইউসমার্গ।

 

 

Yusmarg বা Yousmarg (অর্থাৎ ‘যিশুর তৃণভূমি’) হল ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের বুদগাম জেলার পশ্চিম অংশের একটি পাহাড়ি স্থান।  এটি রাজ্যের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী শ্রীনগর থেকে ৫৩ কিমি (৩৩ মাই) দক্ষিণে অবস্থিত।  Yousmarg সুন্দর ল্যান্ডস্কেপ, তরুণ পাইন নার্সারি, সবুজ চারণভূমি এবং হৃদয় স্পর্শকারী লটিক এবং লেন্টিক জলাশয়ের জন্য স্থান প্রদান করে।  নীলনাগ, দুধগঙ্গা এবং নতুনভাবে তৈরি করা কৃত্রিম বাঁধ তৃণভূমির সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে দেয়।  প্রকৃতি ইউসমার্গকে মনোরম উদ্ভিদ ও প্রাণীজগত দিয়েছে।  ইউসমার্গকে প্রায়শই ট্রেকারদের স্বর্গ হিসাবে উল্লেখ করা হয়। ইউসমার্গে কিছু পরিমিত থাকার বিকল্প রয়েছে তবে কিছু নতুন হোমস্টে এলাকার আশেপাশে এসেছে। নিকটতম গ্রাম নাগবালে অবস্থিত ট্রাইব হোমস্টে এবং ক্যাফে বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করছে।  জায়গাটি দেহাতি, কাঠের এবং কাশ্মীরি স্থাপত্য ঐতিহ্যকে প্রতিফলিত করে।  প্রাণীজগতের মধ্যে, স্থানীয়রা দাবি করে যে তারা প্রায়শই নেকড়ে, ভাল্লুক, বনমানুষ, বিড়াল, বিভিন্ন ধরণের অ্যাভস (উড়ার পাশাপাশি উড়ন্ত) দেখে।  জলজ প্রাণীর মধ্যে, স্কিজোথোরাক্সিক প্রচুর পরিমাণে ধরা পড়ে।

স্থানীয়রা বিশ্বাস করেন যে যিশু কাশ্মীরে এসেছিলেন এবং কিছু সময়ের জন্য ইয়াসমার্গে থেকেছিলেন। এটি একটি আল্পাইন উপত্যকা যা তুষার পর্বতমালা এবং পাইন দ্বারা আবৃত।

 

 

চতুর্দিকে পাইনের সারি। তাকালেই দেখা যাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে পাহাড়। মাঝে মাঝে দেখা যাবে ঘাড় নিচু করে ঘাস খাচ্ছে ঘোড়া। ইট-কাঠ-কংক্রিটের জগৎ থেকে দিনকয়েক অক্সিজেনের খোঁজে পাড়ি জমাতেই পারেন ইয়ুসমার্গে। সবুজের সন্ধানে ঘোড়ার পিঠে সওয়ার হয়ে পাইনের জঙ্গলে বেশ কিছুটা সময় কাটাতেই পারেন। ক্লান্তি মেটাতে জঙ্গলের শেষে পাহাড়ের কোলে নীলনাগ লেকে সেরে নিতে পারেন স্নান।

 

 

শোনা যায়, সুলতানি শাসনকালে, কাশ্মীরের সুলতান ইউসুফ শাহের খুব পছন্দের অবসরযাপনের জায়গা ছিল এটি। ফার, পাইনে ঘেরা গোটা উপত্যকাটিই মখমলি সবুজ ঘাসে আবৃত। দুধগঙ্গা নদী (জলের রং দুধসাদা, তাই নদীর নামও হয়েছে দুধগঙ্গা) অপরূপ নৃত্যবিভঙ্গে বয়ে যাচ্ছে উপত্যকার বুক চিরে। ঢেউ খেলানো নয়নাভিরাম সবুজ উপত্যকায় মনের সুখে চরে বেড়াচ্ছে নধরকান্তি ভেড়ার পাল। আর চারপাশের ফার, পাইনের ঠাসবুনোটের মধ্যেও নজর টানল রংবেরঙের সুদৃশ্য কিছু কটেজ। ইচ্ছে করলে অপার শান্তির বাতাবরণে অবস্থিত এই সুন্দর উপত্যকায় কয়েকটি দিন কাটাতেও পারেন পর্যটকেরা। হাতে যথেষ্ট সময় থাকলে তখন ঘোড়ায় চেপে কিংবা পায়ে হেঁটে ঘুরেও আসতে পারবেন কাছাকাছি দ্রষ্টব্য স্থানগুলি। নীলনাগ লেক, দুধগঙ্গা (সঙ্গসফেদ তুষারশৃঙ্গ থেকে সৃষ্ট হয়েছে এই নদী) ভিউ পয়েন্ট, ‘হে জন’ দরগা ইত্যাদি জায়গাগুলি ঘুরে নেওয়া যায়। পরিষ্কার আবহাওয়ায় ইউসমার্গ থেকেই দিব্যি দেখা যায় মাউন্ট টাট্টাকোটি, মাউন্ট রোমেস হং , সানসেট পিক প্রভৃতি তুষারশৃঙ্গ।

 

ভূগোল—

 

কাশ্মীরি ভাষায় ইউসমার্গ অনুবাদ করে দ্য মেডো অফ জিসাস।  এটা যীশু দ্বারা পরিদর্শন করা হয়েছে বলা হয়.  এটি একটি আলপাইন উপত্যকা যা তুষার আচ্ছাদিত পর্বত এবং পাইন ও ফারের তৃণভূমিতে আচ্ছাদিত।  এটি জম্মু ও কাশ্মীরের বুদগাম জেলার একটি শহর চারারি শরীফ থেকে ১৮ কিমি (১১ মাইল) দক্ষিণে অবস্থিত।  এটি দুদগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত যা জেহলাম নদীর একটি উপনদী।  এটি পীর পাঞ্জাল শৃঙ্গে অবস্থিত, হিমালয়ের একটি সাব রেঞ্জ।  চূড়াগুলি হল: সূর্যাস্ত শিখর এবং তাতাকুটি চূড়া যেগুলির জন্য অভিযানগুলি এই পাহাড়ি স্টেশন থেকে পরিচালিত হয়।  এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৩৯৬ মি (৭৮৬১ ফুট) উচ্চতায় অবস্থিত।

 

৪ কিমি ট্র্যাক নীলনাগ নামক একটি ছোট হ্রদের দিকে নিয়ে যায়, যা তার নীল জলের জন্য বিখ্যাত।  ১০ কিমি ট্র্যাক সাং-ই-সফেদ উপত্যকার হিমায়িত লেকের দিকে নিয়ে যায়, যেটি বেশিরভাগ গ্রীষ্মকালেও বরফে ঢাকা থাকে।  অন্যান্য পর্যটন কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে ঘোড়ায় চড়া, মাছ ধরা, শীতকালে স্কিইং এবং ফটোগ্রাফি।

 

 

শ্রীনগর থেকে ইয়ুসমার্গ যাওয়ার রাস্তায় পড়বে চারার-ই-শরিফ। সামনের দিগন্ত চেরা সবুজ গালিচা আর শান্ত পরিবেশ মনকে ভরিয়ে দেবে। এখানে পর্যটকদের আনাগোনা একটু কম বলে পরিবেশ আরও শান্ত।

 

 

ইউসমার্গ যাওয়ার উপায়—

জম্মু ও কাশ্মীরের রাজধানী, ৪৭ কিমি দূরে শ্রীনগর বা শ্রীনগর বিমানবন্দর (SXR) থেকে ইউসমার্গ সহজেই অ্যাক্সেস করা যায়।  গাড়ি বা বাসে ২ ঘন্টার কম সময়ে ছরারী শরীফ শহর হয়ে যায়। শ্রীনগর থেকে গাড়ি রির্জাভ করলে ভাড়া পড়বে ২০০০-৪০০০ রূপী। শেয়ারে যেতে চাইলে প্রথমে চারার-ই-শরিফ পর্যন্ত যেতে হবে। তারপর সেখান থেকে ইউসমার্গ যেতে হবে।

 

কোথায় থাকবেন—-

ইউসমার্গ থেকে শ্রীনগরের দূরত্ব কম হওয়ায় তেমন কেউ রাত্রিবাস করে না কিন্তু একদিন থাকলে তা সারাজীবন মনের মনিকঠায় গেঁথে যাবে।” তাই আর দেরী কেন। সময় সুযোগ করে বেরিয়ে পরুন এক অনাবিল অনন্দের সাক্ষী হতে।

 

।। তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

 

 

Share This
Categories
প্রবন্ধ

“মানুষ অভ্যাসের দাস”  ভাবনাটার উপর দুটি কথা : দিলীপ  রায়।

ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি মানুষ অভ্যাসের দাস । সুতরাং স্ত্রী-পুরুষ, জাতি-বর্ণ এবং বয়স নির্বিশেষে সকলের কাছে অভ্যাস একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । আসলে আমাদের অভ্যাসগুলি ধীরে ধীরে স্বভাবে বা চরিত্রে পরিণত হয় । তাই চলমান ও নতুন অভ্যাসের ব্যাপারে একটু ভেবেচিন্তে এগোনো দরকার  । ইতিবাচক  অভ্যাস নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়, বরং বলা ভাল  ইতিবাচক অভ্যাস  মানুষকে অনেক শান্তি দেয় । আবার খারাপ অভ্যাস দৈনন্দিন জীবনে একটা মানুষকে বিষাদে ভরে দিতে পারে । সকাল থেকে রাত্রি পর্যন্ত চব্বিশ ঘন্টার কর্মকাণ্ডে  খারাপ ও অপ্রীতিকর অভ্যাসগুলি বর্জন করা যুক্তিযুক্ত । সকালে উঠে ব্যায়াম করা যেমন একটা ভাল অভ্যাস, ঠিক তেমনি ধূমপান করা খারাপ অভ্যাস । সততা, নিয়মানুবর্তিতা, শৃঙ্খলাপরায়ণতা, বেশী রাতে ঘুমাতে না-যাওয়া,  ভোরে ঘুম থেকে ওঠা, নিয়মিত শরীর চর্চা করা, বড়দের সম্মান করা, অপরের উপকার করা, বাবা-মার প্রতি সযত্ন হওয়া, সকলের সাথে সু-ব্যবহার বজায় রাখা,  এগুলো ভাল অভ্যাস । স্বাস্থ্য সচেতনার নিরিখে নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধোওয়া, ট্রেনে-বাসে-হাসপাতালে মুখে মাস্ক পরা, এগুলি ভাল অভ্যাস ।  অন্যদিকে মদ্যপান, ধূমপান, মাদক দ্রব্য গ্রহণ, মিথ্যা কথা বলা, বেশী খাওয়া, কর্মক্ষেত্রে উৎকোচ গ্রহণ করা, হিংসা, লোভ, অপরের  প্রতি অকারণে ঈর্ষা, এগুলি  খারাপ অভ্যাস এবং এগুলি মানুষের জীবনে ধ্বংসের কারণ ।
অভ্যাস আবার পরিবর্তনশীল । যদি আমাদের বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন চাই তাহলে আমাদের নিজেদের বদলাতে হবে । যেমন আমাদের চলমান জীবনে  পুরানো অভ্যাস ত্যাগ করে সৃষ্টিমূলক ইতিবাচক  নতুন অভ্যাস তৈরী করা দরকার ।  তেমনি বর্তমান অভ্যাসের উন্নতিসাধন করাটাও সমভাবে দরকার । কোনো অভ্যাস পরিবর্তনের প্রথম ধাপ হল কোনো কিছু ছেড়ে দেওয়া বা ত্যাগ করা । যত তাড়াতাড়ি পুরানোটাকে ছেড়ে দেওয়া যাবে, ঠিক তত তাড়াতাড়ি নতুনটিকে গ্রহণ ও ব্যবহার করা যাবে । কিন্তু বিভিন্ন কারণে পরিবর্তনটা মানা অনেক সময় কঠিন হয়ে দাঁড়ায় । যেমন নিজের শোয়ার খাটটির স্থান পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে মন কিছুতেই সায় দিতে চায় না । কেননা আমরা একটা গণ্ডির মধ্যে থেকে অভ্যস্ত, সেটার পরিবর্তন চটজলদি মন থেকে মানা কঠিন ।
অভ্যাসের পরিবর্তন, নতুন অভ্যাস গঠন এবং খারাপ অভ্যাস বর্জন  — এসবের জন্য চাই আমদের ইচ্ছাশক্তির বিকাশ । এটা ঘটনা, যখন আমরা কোনো অভ্যাস
বা স্বভাব পরিবর্তন করার সংকল্প করি, তখন শুরুটা ভাল হয় । কিন্তু কিছুদিন পর আমাদের উৎসাহ এবং মনোবল নিস্তেজ হয়ে যায় । কী কারণে এরূপ পরিণাম হয় ? ঠিক এই প্রশ্নটাই গীতাতে অর্জুন শ্রীকৃষ্ণকে করেছেনঃ “কী কারণে, যন্ত্রচালিতের মতো, অনিচ্ছা সত্ত্বেও লোকে অন্যায় ও অকাজে লিপ্ত হয় ?” এটা স্বাভাবিক, আমরা সকল ইচ্ছাশক্তির অধিকারী নই । আসলে আমাদের ইচ্ছাশক্তি হল আমাদের আভ্যন্তরীণ সংক্রমণরোধক ক্ষমতা । অন্যদিকে ভোগ্য ইন্দ্রিয় বিষয়গুলি হল আমাদের প্রলোভনস্বরূপ । তারা আমাদের ঐ সংক্রমণব্যবস্থাকে আক্রমণ বা আমাদের ইচ্ছাশক্তিকে গ্রাস করে । আসলে ইচ্ছাশক্তি হচ্ছে এমন এক দক্ষতা, যা ক্রমাগত অনুশীলন করে আয়ত্ত করা বা অর্জন করা সম্ভব  । যতই ইচ্ছাশক্তির চর্চা করা যায় ততই তা দৃঢ়তর হতে থাকে  । তাই প্রথমে ছোট কাজের অভ্যাস গড়ে ওঠে, তারপর সেই অভ্যাস ক্রমশ দৃঢ় হয় । সুতরাং অভ্যাস গঠন ও পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ইচ্ছাশক্তির ভূমিকা অপরিসীম ।
আমরা অভ্যাস গঠনের দিকে তাকালে দেখতে পাই,   স্কুল-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে অভ্যাস গঠনের সর্বোৎকৃষ্ট জায়গা । এটা ঘটনা, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল অভ্যাস গঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে । তাই স্কুল ও অভিভাবকের পারস্পরিক সহযোগিতা শিশুদের সুষমভাবে বেড়ে ওঠা এবং ভালো অভ্যাস গঠনে যথেষ্ট  সহায়ক । একটা কথা প্রচলিত আছে “সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ”, আর কিশোর (১৪ বছর থেকে ১৭ বছর) বয়সে এই প্রবাদটার প্রতিফলন আমরা দেখি বেশী । কেননা এই সময়টাতে কিশোরদের দৈনন্দিন জীবনের দিকে অভিভাবকদের নজর দেওয়া ভীষণ জরুরি । নজরদারির  অভাব ঘটলে কিশোরেরা বদ অভ্যাসগুলি সহজেই রপ্ত করে নিতে পারে  । অন্যভাবে বলা যায়, সৎ সঙ্গ একজন জীবনের পরিপূর্ণতার দিকে নিয়ে যায় আর অসৎ সঙ্গ তার সুনাম, সাফল্যকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়  ।
পরিবর্তনমুখী অভ্যাস নিয়ে কয়েকটি সুন্দর কথার অবতারণা । যেমন আপনার বা আমার চোখ আছে, তাই আপনি একটি সুন্দর জিনিস দেখলেন বা কোনো মুখ দেখলেন । চোখ রয়েছে দেখার জন্য । তাই আপনি ঐ জিনিসটা বা মুখটার দিকে তাকিয়েছেন । এটাকে বলা হবে আপনি ব্যাপারটাকে গুরুত্ব দিয়েছেন । তারপরে যদি আপনি আবার তাকান, তাহলে বলা হবে আপনি আগ্রহী । বারবার তাকালে বলা হবে আপনি অনুরক্ত ।  পরিশেষে যদি দেখা যায় আপনি ঐ মুখটা না দেখে থাকতে পারছেন না, তাহলে বুঝতে হবে আপনি আসক্ত হয়ে পড়েছেন । এটা অভ্যাসেরই নামান্তর । এই অভ্যাস কীভাবে ধীরে ধীরে গড়ে উঠে তার মনস্তাত্ত্বিক বর্ণনা দিয়ে শ্রীকৃষ্ণ গীতার দ্বিতীয় অধ্যায়ে বলেছেন,”বিষয়সমূহ চিন্তা করতে করতে তাতে মানুষের আসক্তি জন্মে, আসক্তি থেকে কামনা বা তৃষ্ণা জাত হয় । কামনা প্রতিহত হলে তা ক্রোধে পরিণত হয় ; ক্রোধ থেকে জাত হয় মোহ অর্থাৎ কর্তব্য-অকর্তব্যরূপ বিবেকনাশ । মোহ থেকে আসে স্মৃতির বিলোপ, স্মৃতিবিভ্রম থেকে আমাদের বুদ্ধি বিনষ্ট হয় । আর পরিশেষে বিনষ্টবুদ্ধি আমাদের বিনাশের গহ্বরে ঠেলে দেয় ।“
আসক্তির ক্ষেত্রে অভ্যাসের ভূমিকা অনস্বীকার্য । ধরা যাক একজন ধূমপান শুরু করলো । ধূমপানে তার খুব শান্তি । ধূমপান ক্রমশ অভ্যাসে পরিণত হল । যাকে বলে ধূমপানে তার আসক্তি জন্মালো । এটা মদ্যপানের ক্ষেত্রেও ঘটতে পারে । এগুলি এখনও সমাজের চোখে খারাপ অভ্যাস ।
নলিনীডাঙা গাঁয়ের নরহরি দত্ত সদ্য অবসর নিয়েছেন । অল্প বেতনের জন্য সারাজীবন দুপুরের টিফিন হিসাবে মুড়ি ও কাঁচা লঙ্কা খেতেন । সেই অভ্যাস এখনও বহমান । দুপুরবেলায়  মুড়ি ও কাঁচা লঙ্কা না খেলে তাঁর নাকি শরীর আনচান করে । তাঁর মুখে অনবরত শোনা যায় “মানুষ অভ্যাসের দাস”, যেমন তিনি নিজে । মুড়ি ছাড়া দুপুরবেলায় তাঁর অন্য খাবার রুচে না ।
অবশেষে বলা যায়, “মানুষ অভ্যাসের দাস” কথাটি সঙ্গত । তেমনি আমার ব্যক্তিগত মতে, অভ্যাসও পরিবর্তনশীল । যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ইতিবাচক পরিবর্তন সবসময় কাম্য । তাতে নিজের মঙ্গল তথা সমাজের মঙ্গল । (তথ্যসূত্রঃ তথ্য সংগৃহীত ও উদ্বোধন-শ্রাবণ ও ভাদ্র, ১৪2৮)
——————-০———————–
এ১০ক্স/৩৪, কল্যাণী-৭৪১২৩৫ (ভারত)

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

আন্তর্জাতিক জনসেবা দিবস কি, কেন পালিত হয় জানুন।

ভূমিকা—

 

প্রতি বছর ২৩শে জুন বিশ্বব্যাপী জাতিসংঘের পাবলিক সার্ভিস দিবস পালন করা হয়।   মূলতঃ জাতিসংঘের প্রস্তাবনা ও তত্ত্বাবধানে পালিত হয় বলে এই দিবসটি জাতিসংঘ জনসেবা দিবস নামেও পরিচিত; অন্যদিকে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ২০১৭ সালে দিবসটিকে জাতীয় জনসেবা দিবস নামে পালিন করা হয়।

 

পালনের উদ্দেশ্যে—

 

আন্তর্জাতিক জনসেবা দিবস বিশ্বজুড়ে জাতিসংঘ কর্তৃক পালিত একটি বিশেষ দিন, যা এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোতে প্রতিবছর ২৩ জুন তারিখে উদযাপিত হয়। এই দিনটি উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় জনসেবার অবদানকে তুলে ধরতে এবং জনসাধারণের সেবাকে মূল্য দিতে।  এই দিনটি বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন জনসেবা সংস্থা এবং বিভাগ দ্বারা সমাজের উন্নয়ন এবং উন্নতিতে সরকারী কর্মচারীদের ভূমিকাকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ব্যাপকভাবে পরিচিত।  অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে, জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ক বিভাগের ডিভিশন অফ পাবলিক ইনস্টিটিউশন এবং ডিজিটাল গভর্নমেন্ট সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকারের সহযোগিতায় একটি ভার্চুয়াল ইভেন্টের আয়োজন করবে, যার প্রতিপাদ্য ছিল “ভবিষ্যৎ উদ্ভাবন।  পাবলিক সার্ভিস: এসডিজিতে পৌঁছানোর জন্য একটি নতুন যুগের জন্য নতুন সরকারী মডেল”।

 

জাতিসংঘের পাবলিক সার্ভিস দিবস: ইতিহাস–

২০ ডিসেম্বর ২০০২ তারিখে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ একটি প্রস্তাব ৫৭/২৭৭ পাস করে প্রতি বছর ২৩ জুনকে জাতিসংঘের পাবলিক সার্ভিস দিবস হিসেবে দেখার জন্য মনোনীত করে।  দিনটি সেই তারিখের বার্ষিকীকে চিহ্নিত করে যখন আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা শ্রম সম্পর্ক সংক্রান্ত কনভেনশন (পাবলিক সার্ভিস), 1978 (নং 151) বিশ্বজুড়ে সমস্ত বেসামরিক কর্মচারীদের কাজের অবস্থা নির্ধারণের জন্য গৃহীত হয়েছিল। ফলশ্রুতিতে ২০০৩ সালে সর্বপ্রথম বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই দিবসটি পালিত হয়।

 

লক্ষ্য ও গুরুত্ব—

 

বিশ্বব্যাপী জনসেবা দিবস উদযাপনের কারণ হিসাবে জাতিসংঘের ঘোষণায় বলা হয় যে, “সম্প্রদায়ের কাছে জনসেবার মূল্য এবং গুণ উদযাপন করে;  উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় জনসেবার অবদান তুলে ধরে;  সরকারী কর্মচারীদের কাজকে স্বীকৃতি দেয় এবং যুবকদের সরকারী সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়তে উৎসাহিত করে।”

 

পালিত কর্মসূচী—-

 

দিবসটি সম্প্রদায়ের কাছে জনসেবার গুরুত্ব, উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় এর অবদান, কাজের স্বীকৃতি এবং যুবকদের সরকারি খাতে ক্যারিয়ার গড়তে উত্সাহিত করে।

বর্ণাঢ্য র‌্যালি, আনন্দ শোভাযাত্রা ও আলোচনা অনুষ্ঠান আয়োজন করার পাশাপাশি এদিন সাধারণ জনগণকে বিভিন্ন সেবা দেয়ার সাথে জড়িত ব্যক্তিবর্গকে তাদের নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় প্রশাসন-পরিচালকগণ ছাড়াও সেবাগ্রহীতাদের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানানো ও বিভিন্ন ক্ষেত্র অবদানের জন্য পুরস্কৃত করা হয়।

 

উপসংহার—

 

পাবলিক সার্ভিস দিবস এর লক্ষ্য সম্প্রদায়ের কাছে জনসেবার মূল্য উদযাপন করা, সরকারী কর্মচারীদের কাজের স্বীকৃতি দেওয়া এবং যুবকদের সরকারী সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়তে উৎসাহিত করা।  আসুন আজ আমাদের শহরে আমাদের সরকারি কর্মচারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তাদের সম্মান করার সুযোগটি উপলব্ধি করি!

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

আজ আন্তর্জাতিক যোগ দিবস, জানুন পালনের গুরুত্ব।

২০১৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এর সূচনা হওয়ার পর ২০১৫ সাল থেকে আন্তর্জাতিক যোগ দিবসটি বার্ষিক ২১ জুন সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে। যোগ হল একটি শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক অনুশীলন যা প্রাচীন ভারতে উদ্ভূত হয়েছিল।  ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ২০১৪ সালে তার জাতিসংঘের ভাষণে ২১ জুন তারিখের পরামর্শ দিয়েছিলেন, কারণ এটি উত্তর গোলার্ধে বছরের দীর্ঘতম দিন এবং বিশ্বের অনেক অংশে এটির একটি বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে৷

 

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ২০১৪ সালে তার জাতিসংঘের ভাষণে, ২১ জুন একটি বার্ষিক যোগ দিবসের পরামর্শ দিয়েছিলেন, কারণ এটি উত্তর গোলার্ধে বছরের দীর্ঘতম দিন এবং বিশ্বের অনেক অংশে এটির একটি বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে৷  প্রাথমিক প্রস্তাবের পর, জাতিসংঘ ২০১৪ সালে “যোগ দিবস” শিরোনামে খসড়া রেজোলিউশন গ্রহণ করে। ভারতের প্রতিনিধিদলের দ্বারা পরামর্শ আহ্বান করা হয়েছিল।  ২০১৫ সালে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আন্তর্জাতিক যোগ দিবস উপলক্ষে ১০ টাকার স্মারক মুদ্রা জারি করেছিল।  এপ্রিল ২০১৭ সালে, জাতিসংঘের ডাক প্রশাসন (UNPA) আন্তর্জাতিক যোগ দিবস উপলক্ষে একটি একক শীটে আসনের উপর ১০ টি স্ট্যাম্প জারি করেছে।

 

জাতিসংঘ ঘোষণা—

 

 

 

১১ ডিসেম্বর ২০১৪-এ, ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি অশোক মুখার্জি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে খসড়া প্রস্তাব পেশ করেন।  খসড়া পাঠ্যটি ১৭৭টি সদস্য রাষ্ট্রের কাছ থেকে ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে যারা পাঠ্যটিকে স্পনসর করেছিল, যা ভোট ছাড়াই গৃহীত হয়েছিল।  এই উদ্যোগটি অনেক বিশ্ব নেতাদের সমর্থন পেয়েছে।  মোট ১৭৭টি দেশ এই রেজোলিউশনটির সহ-স্পন্সর করেছে, যা এই ধরনের প্রকৃতির যেকোনও UNGA রেজোলিউশনের জন্য সহ-স্পন্সরদের সবচেয়ে বেশি সংখ্যা।
২১ জুন তারিখ হিসাবে প্রস্তাব করার সময়, মোদি বলেছিলেন যে তারিখটি উত্তর গোলার্ধে বছরের দীর্ঘতম দিন ছিল (দক্ষিণ গোলার্ধে সবচেয়ে ছোট), বিশ্বের অনেক অংশে বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে।  ভারতীয় ক্যালেন্ডারে, গ্রীষ্মের অয়নকাল দক্ষিণায়নে রূপান্তরকে চিহ্নিত করে।  গ্রীষ্মের অয়নকালের পরের দ্বিতীয় পূর্ণিমাটি গুরু পূর্ণিমা নামে পরিচিত।  হিন্দু পুরাণে, শিব, প্রথম যোগী (আদি যোগী), এই দিনে বাকি মানবজাতিকে যোগের জ্ঞান প্রদান শুরু করেছিলেন এবং প্রথম গুরু (আদি গুরু) হয়েছিলেন।
জাতিসংঘের প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর, ভারতের আধ্যাত্মিক আন্দোলনের বেশ কয়েকজন নেতা এই উদ্যোগের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।  ইশা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সদগুরু বলেছেন, “মানুষের অভ্যন্তরীণ মঙ্গলের প্রতি বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করার জন্য এটি এক ধরনের ভিত্তিপ্রস্তর হতে পারে, একটি বিশ্বব্যাপী জিনিস… এটি বিশ্বের জন্য একটি অসাধারণ পদক্ষেপ।”  আর্ট অফ লিভিং-এর প্রতিষ্ঠাতা, রবি শঙ্কর, মোদির প্রচেষ্টার প্রশংসা করে বলেছেন, “রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া যে কোনও দর্শন, ধর্ম বা সংস্কৃতির পক্ষে বেঁচে থাকা খুব কঠিন। যোগ এখন পর্যন্ত প্রায় অনাথের মতো বিদ্যমান ছিল। এখন, সরকারী স্বীকৃতি  জাতিসংঘের মাধ্যমে যোগব্যায়ামের সুবিধা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেবে।”

 

প্রস্তুতিতে ২১ জুন ২০১৫ এ বিশ্বজুড়ে প্রথম আন্তর্জাতিক যোগ দিবস পালিত হয়েছিল৷ আয়ুষ মন্ত্রক ভারতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করেছিল৷  ৩৫৯৮৫ জন, যার মধ্যে PM মোদি এবং ৮৪টি দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা, নতুন দিল্লির রাজপথে ৩৫ মিনিটের জন্য ২১টি আসন (যোগের ভঙ্গি) সঞ্চালন করেছেন, যা এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বৃহত্তম যোগ ক্লাসে পরিণত হয়েছে এবং অংশগ্রহণকারী দেশগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক—৮৪— সহ।  সেই থেকে প্রতি বছর ভারতে এবং সারা বিশ্বের শহরগুলিতে অনুরূপ দিবসগুলি অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

ভারত উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম বিপ্লবী কমরেড নলিনী দাস এক কিংবদন্তী নায়ক।

ভূমিকা—

 

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের অব্যর্থ পরিশ্রম যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত রাজনৈতিক দিক থেকে মুক্তি পেয়েছে। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়, তার মূলে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে নলিনী দাস প্রথমসারির একজন অন্যতম বিপ্লবী। নলিনী দাস (১ জানুয়ারি ১৯১০ – ১৯ জুন, ১৯৮২) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব এবং অগ্নিযুগের বিপ্লবী। ১৯২৯ সনে মেছুয়াবাজার বোমার মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে তিনি আত্মগোপন করেন। পলাতক অবস্থায় ১৯৩০ সনে কলকাতার পুলিস কমিশনার চার্লস টেগার্ট সাহেবকে হত্যা-প্রচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার হন।

 

জন্ম—-

 

একনিষ্ঠ দেশ সেবক এই অকৃতদার মহান বীরের জন্ম ১৯১০ সালের ১লা জানুয়ারি উত্তর শাহবাজপুর বর্তমান ভোলার সদর উপজেলায়। স্থানীয় জমিদার স্টেটের নায়েব দূর্গা মোহন দাসের পুত্র নলিনী দাস ভোলা শহরের কালীনাথ বাজার এলাকায় শৈশব কাটিয়েছিলেন। তার শিক্ষা জীবনের শুরুও ভোলাতেই।  পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় হরতাল ধর্মঘটে যোগ দিয়ে কারাবরণ করেন। এ কারনে তিনি ব্রিটিশদের হাত থেকে ভারতমাতাকে মুক্তি করার জন্য অগ্নি শপথ নেন। ১৯২৪ সালে তিনি যুক্ত হন বিপ্লববাদী যুগান্তর দলে। পড়াশুনা আর দেশের স্বাধীনতার জন্য দৃঢ়চিত্তে শুরু অক্লান্ত পরিশ্রম। ১৯২৮ সালে ভোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাশ করে বরিশাল বি. এম. কলেজে আই.এস.সি. ক্লাসে ভর্তি হন। বরিশালে সে সময় তিনি একজন ভালো ফুটবল খেলোয়াড় ছিলেন। পরীক্ষার আগেই মামলা পড়ায় আর পরীক্ষা দিতে পারেননি।.এস.সি পরীক্ষার পূর্বেই কলিকাতা মেছুয়া বাজার বোমা মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। শুরু হয় পালাতক জীবন। পলাতক অবস্থায় ১৯৩০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কলকাতার পুলিশ কমিশনার ট্রেগার্ড সাহেবকে হত্যার প্রচেষ্টা মামলায় তিনি গ্রেফতার হন। ওই মামলার বিচারে তিনি খালাস পান।

 

ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন ও স্বাধীনতা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা —

 

ভোলা সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর ছাত্র নলিনী দাস ১৯২১ সালে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস ও খেলাফত আন্দোলন কমিটির আহ্বানে পাঞ্জাবের জালিওয়ানবাগে ব্রিটিশের নৃশংসয় গণহত্যার প্রতিবাদে হরতাল ও ধর্মঘটে অংশ গ্রহণ করেন। এই অপরাধে ব্রিটিশ পুলিশ অপর ৫ ছাত্রের সাথে নলিনী দাসও গ্রেফতার করে। মাত্র ১১ বছর বয়সে শুরু হয় নলিনী দাসের কারা জীবন। এই মহান সৈনিক আন্দামানের কারা নির্বাসনসহ ৭২ বছর জীবনের ২৩ বছরই কাটিছেন কারাগারের অন্ধকারে। অপর দিকে ২১ বছর ছিলেন আত্মগোপনে। সেখানে থেকেও তিনি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন ও স্বাধীনতা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।

 

ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিতে কাজ—-

 

নলিনী দাস ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বরে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির নিষ্ঠাবান কর্মী হিসেবে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বিধ্বস্ত কলকাতায় প্রতিরোধ কমিটির কাজে তৎপর ছিলেন।

 

বরিশালে কর্মজীবন—-

 

নলিনী দাস দেশবিভাগের পর বরিশালে চলে যান। ভোলা জেলায় কৃষক আন্দোলনের কাজে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রতিরোধকালে এক মিথ্যা মামলায় পাকিস্তান সরকার ১০ বছর কারাদণ্ড প্রদান করে। হাইকোর্ট থেকে মুক্তি পেলেও জেল গেটে পুনরায় গ্রেপ্তার হন। ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বিনা বিচারে রাজবন্দি হিসেবে আটক থাকেন। এরপর মুক্তি পান এবং আবার আটক করা হয়। ১৯৫৬ খ্রিস্টবাদের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্দী জীবনযাপন করেন। সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রীসভার আমলে ছাড়া পান। ১৯৫৮ সালে স্বৈরাচারী আইয়ুব সরকার তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করে। ১৯৫৮ সাল থেকে আত্মগোপন অবস্থায় বরিশালের গ্রামে গ্রামে কমিউনিস্ট পার্টির সংগঠন গড়ে তোলেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

 

জেল ও পলাতক জীবন—-

সত্তর বছরের জীবনের ভেতরে ২৩ বছর আন্দামান সেলুলার জেল, ব্রিটিশ ভারতের অন্যানয জেল, ভারতের জেল ও পাকিস্তানের কারাগারে অতিবাহিত করেন। ২০ বছর নয় মাস কাটান গোপন পলাতক জীবন।

 

একটানা ১৪ বছর জেল খাটার পর তিনি আপর জন্মভূমিতে ফিরে এলে ভোলাবাসী তাকে বিশাল সংবর্ধনা প্রদান করে। ব্রিটিশরা চলে গেলেও নলিনী দাসের ফের পাকিস্তানের সৈরাচারী সরকারের বিভিন্ন অন্যায়ের প্রতিবাদে মুখর হয়ে ওঠেন। ৪৭ সালেই পাকিস্তান মুসলিমলীগ সরকার তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। শুরু হয় তার আবারও পলাতক জীবন। ৫০ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা চলাকালে বরিশালের নিভৃত এক পল্লীতে গোপন সভা চলাকালীন সময়ে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে। পরে তাকে ১০ ছরের কারা দ- দেয়া হয়। ৫৯ সালের যুক্তফ্রন্ট সরকার তাকে মুক্তি দেন। ৬৯ সালে আইয়ুব খানের শাসনামলে পুনরায় তিনি আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হন। ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে ফের সক্রিয় হয়ে ওঠেন। তার রচিত “ স্বাধীনতা সংগ্রামে দ্বীপান্তরে বন্দী” গ্রন্থ থেকে বিপ্লবী জীবনের নানা রোমঞ্চকর তথ্য পাওয়া যায়।

 

জনকল্যাণে আত্মনিয়োগ—

 

নলিনী দাস শুধু ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলন ও স্বাধীনতা আন্দোলনই করেন নি। তিনি এদেশের অবহেলিত কৃষক শ্রমিকের মুক্তির আন্দোলনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। বিভিন্ন সময়ের দুর্ভিক্ষ, খরা, মহামারি আর দাঙ্গার সময় তিনি সাধারণ মানুষের পাশে দাড়িয়েছেন। স্বাধীনতার পরে দেশ পুনর্গঠনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। ভোলা শহরে তার পৈত্রিক কোটি টাকার সম্পদ তিনি জনকল্যাণে ব্যায় করেছেন। গঠন করেছেন দূর্গামোহন দাস জনকল্যাণ ট্রাস্ট। দানবীর হিসেবে পরিচিত এই মহান ব্যক্তির দানকৃত সম্পদ নিয়ে গড়ে তোলা হয় লায়ন্স হোমিও কলেজ ও নলিনী দাস হাসপাতাল, নলিনী দাস বালিকা বিদ্যালয়, নলিনী দাস স্মৃতি পাঠাগারসহ বিভিন্ন কল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান।জনগণের কল্যাণে স্মস্ত স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি দুর্গামোহন ট্রাস্টের নিকট প্রদান করেন।

 

মৃত্যু—

 

ইস্পাত দৃঢ় সংকল্প ও অফুরন্ত কর্মশক্তির অধিকারী, আমৃত্যু ত্যাগী এই বিপ্লবী যোদ্ধা তাঁর সারাটি জীবন মানুষের মুক্তি ও স্বাধীনতার জন্য লড়াই-সংগ্রাম করেছেন। মানব সভ্যতাকে সাম্যবাদে উত্তোরণের ক্ষেত্রে বিপ্লবী সংগ্রামে তিনি ছিলেন আত্মনিবেদিত। মার্কসবাদের মতবাদকে গ্রহণ করে কমিউনিজমের মহান ব্রত নিয়ে নিবেদিত করেছেন জীবনের প্রতিটি মূহূর্ত। আপোষহীণ দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনের এই মহান ব্যক্তি দূরারোগ্য যক্ষা রোগে আক্রান্ত হয়ে কলকাতায় উন্নত চিকিৎসার জন্য গেলে ১৯৮২ সালের ১৯ জানুয়ারি মৃত্যু বরণ করেন।

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This