Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

স্বামী বিবেকানন্দ — আজও প্রাসঙ্গিক ::: দিলীপ রায় (৯৪৩৩৪৬২৮৫৪)।।।

স্বামী বিবেকানন্দ শুধু বাঙালির জীবনের এক আদর্শ মহামানবই নন, তিনি যুগাবতার । তিনি ছিলেন একজন হিন্দু সন্ন্যাসী, দার্শনিক, লেখক, সংগীতজ্ঞ এবং ঊনবিংশ শতাব্দীর ভারতীয় অতীন্দ্রিয়বাদী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের একমাত্র শিষ্য । তাঁর দেখানো আদর্শের রাস্তা যুক্তিবোধের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায় মানুষকে। আধ্যত্মকে এক অন্য পর্যায়ে উন্নত করে বিবেকানন্দ সকলের জীবনকে আরও বেশি করে আলোর দিকে ঠেলে দিয়েছেন । স্বামী বিবেকানন্দ জীবপ্রেমের দীক্ষা পান শ্রীরামকৃষ্ণের কাছ থেকে, যেখানে তিনি বলেছেন ‘যত্র জীব, তত্র শিব’। জীবের সেবা করলে স্রষ্টারও সেবা করা হয় । স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ । সবার আগে মানব সেবা । সুতরাং মানুষের সেবার মাধ্যমে ঈশ্বরের সেবা করা সম্ভব। জীবপ্রেমের দর্শন প্রকাশ পেয়েছে তাঁর দুটি চমৎকার লাইনেঃ
“বহুরুপে সম্মুখে তোমার ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর ?
জীবপ্রেম করে যেইজন সেইজন সেবিছে ঈশ্বর ।“
তাই আমরা কেউ বিবেকানন্দকে পরিপূর্ণভাবে বুঝিনি । কারণ তিনি ছিলেন বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্ব । তিনি প্রচুর বই পড়তেন । দর্শন, ধর্ম, ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান, শিল্পকলা, সাহিত্য, ইত্যাদি বিষয়ে । তা ছাড়া তাঁর বিশেষ আগ্রহ ছিল বেদ, উপনিষদ, ভাগবতগীতা, রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ, প্রভূতি হিন্দু ধর্ম গ্রন্থে । যার জন্য সংগীত, চিত্রকলা, দর্শন, রাষ্ট্রনীতি, ইতিহাস, অর্থনীতি, সমাজতত্ব, ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর ছিলো গভীর ব্যুৎপত্তি । তাই তিনি নিজেই বলেছেন, “বিবেকানন্দকে বুঝতে হলে আরেক বিবেকানন্দকে দরকার” । কর্মী বিবেকানন্দ, সন্ন্যাসী বিবেকানন্দ, গুরু বিবেকানন্দ, শিষ্য বিবেকানন্দ, জ্ঞানী বিবেকানন্দ, যোগী বিবেকানন্দ, কবি বিবেকানন্দ সবই বাহ্য । কারণ এই সমস্ত গুণেই তিনি শীর্ষস্থানের অধিকারী হলেও তাঁর সবচেয়ে বড় পরিচয়, ‘ভালোবাসায় ভরা হৃদয় বিবেকানন্দ’ ।
বিবেকানন্দ রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের “শিব জ্ঞানে জীব সেবা” মন্ত্রে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন । তাই তিনি মানুষের কল্যাণ সাধনকেই প্রকৃত ঈশ্বর সাধনা বলে মনে করেছিলেন ।
বিবেকানন্দ ছিলেন মানব প্রেমিক সন্ন্যাসী । মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি ধর্ম ও বিজ্ঞান উভয়কেই সমানভাবে প্রয়োজন বলে মনে করেছিলেন । তাঁর মতে “ধর্ম”” মানুষের অন্তর্নিহিত দেবত্বকে ফোটাবে । বিজ্ঞান মানুষকে সুখ ও সমৃদ্ধি উপহার দেবে । শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ প্রথমে আত্মবিশ্বাসী হবে । আর আত্মবিশ্বাস থেকে আসবে আত্মনির্ভরশীলতা । বিবেকানন্দের মতে, শিক্ষাই সমাজের সকল সমস্যা দূরীকরণের মূল চাবি কাঠি । শিক্ষার আলো মানুষের মনের অন্ধকারকে দূর করে এবং মানুষকে স্বনির্ভর করতে সাহায্য করে । বিবেকানন্দের শিক্ষা পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্যেই ছিল সমাজে যথার্থ “মানুষ” তৈরি করা –যাতে চরিত্র গঠিত হয়, মনের শক্তি বাড়ে । বুদ্ধি বিকশিত হয়, মানুষ নিজের পায়ে নিজে দাঁড়াতে শেখে । উপরন্ত বিবেকানন্দের শিক্ষা ছিল সার্বজনীন । তিনি চেয়েছিলেন বিশেষভাবে যুব সমাজের নবচেতনার অভ্যুদয় । নিষ্ঠা, সততা ও আত্মনির্ভরতা ছিল তাঁর আরাধ্য । এসব গুণ জগতের সব সমাজের সব মানুষেরই সম্পদ ।
( ২ )
এখানে বিশেষভাবে প্রনিধানযোগ্য – বিবেকানন্দ যেভাবে ভারতবর্ষকে চিনেছিলেন বা অনুভব করেছিলেন, অন্য কোনো ব্যক্তি ঠিক সেভাবে ভারতবর্ষকে অনুভব করতে পারেননি । পুণ্যভূমি ভারতবর্ষে জন্মগ্রহণ করে বিবেকানন্দ ধন্য মনে করেছিলেন । ভগিনী নিবেদিতার ভাষায়, “তিনি নিজেই হয়ে উঠেছিলেন ভারতবর্ষ – রক্তমাংসে গড়া ভারত প্রতিমা ।“ আর কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ রোমাঁ রোলাঁকে (ফরাসী সাহিত্যিক) বলেছিলেন, “যদি ভারতবর্ষকে জানতে চাও বিবেকানন্দকে জানো । বিবেকানন্দের লেখা আগে পড়ো । “
বিবেকানন্দ সহজে ঠাকুর রামকৃষ্ণ দেবকে গুরু মানেননি । প্রথমদিকে নরেন্দ্রনাথ রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবকে গুরু বলে মেনে নিতে অস্বীকার করেছিলেন । এমনকি তাঁর চিন্তাভাবনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ প্রকাশ করেছিলেন । অথচ উল্টে তিনি রামকৃষ্ণ দেবের ব্যক্তিত্বের কাছে বিশেষভাবে আকৃষ্ট হয়েছিলেন । যার জন্য ঘনঘন তিনি দক্ষিণেশ্বরে যাতায়াত শুরু করেন । ব্রাহ্ম সমাজের সদস্য নরেন্দ্রনাথ সেইসময় মূর্তিপূজা, বহুদেববাদ, রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের কালী পুজা সমর্থন করতেন না । এমনকি অদ্বৈত বেদান্তমতবাদকেও তিনি ঈশ্বরদ্রোহিতা ও পাগলামি বলে উড়িয়ে দিতেন । নরেন্দ্রনাথ রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবকে পরীক্ষা করতেন । রামকৃষ্ণ দেবও শান্তভাবে তার যুক্তি শুনে বলতেন, “সত্যকে সকল দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার চেষ্টা করবি ।“
১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দে রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের গলায় ক্যান্সার ধরা পড়ে । চিকিৎসার প্রয়োজনে তাঁকে প্রথমে উত্তর কলকাতার শ্যামপুকুর ও পরে কাশীপুরের একটি বাগান বাড়িতে স্থানান্তরিত করা হয় । সেখানেই নরেন্দ্র নাথের ধর্ম শিক্ষা চলতে থাকে । কাশীপুরে নরেন্দ্রনাথ নির্বিকল্প সমাধি লাভ করেন । তারপর রামকৃষ্ণ দেবের কাছ থেকে সন্ন্যাস ও গৈরিক বস্ত্র লাভ করেন । রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব নরেন্দ্রনাথকে শিক্ষা দেন “মানব সেবাই ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠ সাধনা” । এরপর ১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ই আগষ্ট শেষ রাত্রে কাশীপুরেই রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব প্রয়াত হন । ১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে নরেন্দ্রনাথের গুরুভ্রাতা বাবুরামের মা নরেন্দ্রনাথ ও অন্যান্য সন্ন্যাসীদের আঁটপুরে আমন্ত্রণ জানান । সেখানেই তাঁরা রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের মতো জীবন যাপনের সিদ্ধান্ত নেন । তখন নরেন্দ্রনাথ “স্বামী বিবেকানন্দ” নাম গ্রহণ করেন ।
এরপরে পরিব্রাজকরূপে তাঁকে আমরা কী দেখলাম । ১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দে পরিব্রাজকরূপে মঠ ত্যাগ করেন বিবেকানন্দ । পরিব্রাজক হিন্দু সন্ন্যাসীর এক ধর্মীয় জীবন — এই জীবনে তিনি স্বাধীনভাবে পর্যটন করে বেড়ান কোনো স্থায়ী বাসস্থান ও বন্ধন ছাড়াই । পরিব্রাজক জীবনে বিবেকানন্দের সঙ্গী ছল একটি কমন্ডলু, লাঠি এবং তাঁর প্রিয় দুটি গ্রন্থ –ভাগবদ্গীতা ও ইশানুসরণ । বিভিন্ন ধর্মসম্প্রদায় ও সমাজ ব্যবস্থার সঙ্গে সুপরিচিত হন । এই সময় ভিক্ষোপজীবী হয়ে সারা ভারত পদব্রজেই পর্যটন করেন বিবেকানন্দ । সেইজন্য বিবেকানন্দকে সারা বিশ্বের মানুষ “পরিব্রাজক” হিসেবে জানে । ভারতবর্ষ পর্যটনের সময় তিনি বিভিন্ন পণ্ডিত, দেওয়ান, রাজা এবং হিন্দু-মুসলমান, খ্রিষ্টান এমনকি নিম্নবর্গীয় ও সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গেও মেলামেশা ও একসঙ্গে বাস করেন ।
( ৩ )
১৮৮৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বারাণসী থেকে যাত্রা শুরু করেন । তখন সাক্ষাৎ হয় বিশিষ্ট বাঙালী লেখক ভূদেব মুখোপাধ্যায় ও বিশিষ্ট সন্ত ত্রৈলঙ্গস্বামীর সাথে । বৃন্দাবন, হথরাস ও হৃষীকেশে ভ্রমণের সময় হথরাসে তাঁর সঙ্গে স্টেশন মাস্টার শরৎচন্দ্র গুপ্তের সাক্ষাত হয় । তিনি পরে বিবেকানন্দের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে সদানন্দ নামে পরিচিত হন । তিনি ছিলেন বিবেকানন্দের প্রথম যুগের শিষ্য । ১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দে আবার নৈনিতাল, আলমোড়া, দেরাদুন, ঋষীকেশ, হরিদ্বার এবং হিমালয় ভ্রমণে যান । তারপর রওনা দেন দিল্লি । এইভাবে পশ্চিম ভারত, দক্ষিণ ভারত ভ্রমণ সারেন ।
১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দে ৩০শে জুন থেকে ১৪ই জুলাই শিকাগো যাওয়ার পথে বিবেকানন্দ জাপান ভ্রমণ করেন । তিনি ঘুরে দেখেছিলেন কোবে, ওসাকা, কিওটো, টোকিও আর য়োকোহামা শহর । ১০ই জুলাই ১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দে য়োকোহামার ওরিয়েন্টাল হোটেল থেকে তাঁর ভক্ত মাদ্রাজের আলাসিঙ্গা পেরুমলকে লেখা চিঠিতে বিবেকানন্দ জানিয়েছিলেন জাপান নিয়ে তাঁর মুগ্ধতার কথা । তিনি জাপানীদের “পৃথিবীর সবচেয়ে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন জনগণের অন্যতম” বলে অভিহিত করেছিলেন । তারপর চিন, কানাডা হয়ে তিনি শিকাগো শহরে পৌঁছান ১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে । কিন্তু শিকাগো শহরে পৌঁছে মূলত দুটি সমস্যায় পড়েন । মহাসভা শুরু হতে দেড় মাস বাকী । অন্যটা কোনো খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানের প্রশংসাপত্র বা পরিচয়পত্র ব্যতিরেকে কোনো ব্যক্তিকে প্রতিনিধি হিসাবে বিশ্বধর্ম মহাসভায় গ্রহণ করা হবে না । তারপর তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জন হেনরি রাইটের সংস্পর্শে এলেন । তাঁকে হার্ভার্ডে আমন্ত্রণ জানানোর পর এবং ধর্মসভায় বক্তব্যদানে বিবেকানন্দের প্রশংসাপত্র না থাকা প্রসঙ্গে রাইটের বক্তব্য, “আপনার কাছে প্রশংসাপত্র চাওয়াটা হচ্ছে স্বর্গে সূর্যের আলো দেওয়ার অধিকার চাওয়ার মতো অবস্থা ।“ রাইট তখন প্রতিনিধিদের দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নিকট এক চিঠিতে লিখলেন, “আমাদের সকল অধ্যাপক একত্রে যতটা শিক্ষিত ইনি তাঁদের থেকেও বেশী শিক্ষিত ।“
বিশ্বধর্ম মহাসভা ১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দের ১১ই সেপ্টেম্বর শিকাগোর আর্ট ইনস্টিটিউটে উদ্বোধন হয় । তিনি ভারত এবং হিন্দু ধর্মের প্রতিনিধিত্ব করেন । পাশ্চাত্যে অভিযানের নিরিখে যেসব অভিজ্ঞতা, তাতে শিকাগো বিশ্বধর্ম মহাসম্মেলনে উপস্থিত হয়ে ভারতীয় সনাতন ও বেদান্তের উপর ভাষণ দেওয়া ভীষন তাৎপর্যপূর্ণ । তাঁর বক্তব্য শুরু করলেন, “আমেরিকার ভ্রাতা ও ভগিনীগণ …।“ — সম্ভাষন করে । তাঁর বক্তব্যে সহিষ্ণুতা ও মহাজাগতিক গ্রহণযোগ্যতা প্রসঙ্গ ওঠে । গীতা থেকে উদাহরণমূলক পংক্তি তুলে ধরেন । তাঁর বক্তব্যে বিশ্বজনীন চেতনা ধ্বনিত হয় ।
প্রেসের কাছে তিনি “ভারতের সাইক্লোন সন্ন্যাসী” হিসেবে অভিহিত হন । “নিউ ইয়র্ক ক্রিটিক” লিখেছিল “ঐশ্বরিক অধিকারবলে তিনি একজন বক্তা এবং তাঁর শক্তিশালী, বুদ্ধিদীপ্ত চেহারার চেয়ে বরং আগ্রহোদ্দিপক ছিল ঐ সকল ছন্দময়ভাবে উচ্চারিত শব্দসমূহ ।“ আমেরিকার পত্রিকাসমূহ বিবেকানন্দকে “ধর্মসভার সবচেয়ে মহান ব্যক্তিত্ব” হিসেবে প্রতিবেদন লিখেছিল । পরবর্তীতে শ্রীমতি অ্যানি বেসান্ত ভারতে ফিরে এসে লিখেছিলেন, “গেরুয়াধারী কম বয়স্ক প্রতিনিধি হিসেবে বিশ্বধর্ম মহাসম্মেলন মঞ্চে বিবেকানন্দ ছিলেন সূর্যের মতো তেজস্বী এক পুরুষ ।“
তারপর ১৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ই ডিসেম্বর আমেরিকা ও ইংল্যান্ড ভ্রমণ শেষে ইংল্যান্ড থেকে ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা দেন । তারপর ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই জানুয়ারী কলম্বো তিনি পৌঁছান ।
( ৪ )
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই বিবেকানন্দের সদর্থক ভূমিকা । রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দের একনিষ্ঠ ভক্ত সুভাষ চন্দ্র বসু । সেই বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু বলেছিলেন, বিবেকানন্দ ছিলেন “আধুনিক ভারতের স্রষ্টা ।“ জাতীয়তাবাদ নিয়ে বিবেকানন্দের চিন্তাভাবনার প্রতি তিনি ছিলেন সতত সংবেদনশীল । সুতরাং বিবেকানন্দের স্বদেশমন্ত্র দেশ স্বাধীনতার প্রেক্ষাপটে বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ । বলা চলে বিবেকানন্দ স্বাধীনতা আন্দোলনকে প্রভাবিত করেছিলেন । যার জন্য মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন, “বিবেকানন্দের রচনা তাঁর “দেশপ্রেম হাজারগুণ” বৃদ্ধি করেছিল ।“ যখন পরাধীন ভারতবাসী আত্মশক্তি হারিয়ে ফেলেছিল, তখন বিবেকানন্দ চেয়েছেন মানুষের আত্মশক্তির বিকাশ । তাই তিনি বলেছেন, “তোমরা ঈশ্বরের সন্তান, অমৃতের অধিকারি, পবিত্র ও পূর্ণ । তুমি নিজেকে দুর্বল বলো কী করে ? ওঠো, সাহসী হও, বীর্যবান হও ।“
স্বদেশমন্ত্রে তিনি বলেছেন, হে ভারত, এই পরানুবাদ, পরানুকরণ, পরমুখাপেক্ষা, এই দাসসুলভ দুর্বলতা, এই ঘৃণিত জঘন্য নিষ্ঠুরতা … এইমাত্র সম্বলে তুমি উচ্চাধিকার লাভ করবে ? এই লজ্জাকর কাপুরুষতা সহায়ে তুমি বীরভোগ্যা স্বাধীনতা লাভ করিবে ? হে ভারত, ভুলিও না তোমার নারীজাতির আদর্শ সীতা, সাবিত্রী, দময়ন্তী । ভুলিও না, তোমার উপাস্য উমানাথ সর্বত্যাগী শঙ্কর । ভুলিও না, তোমার বিবাহ, তোমার ধন, তোমার জীবন ইন্দ্রিয়সুখের —নিজের ব্যক্তিগত সুখের জন্য নহে । ভুলিও না, তুমি জন্ম হতেই “মায়ের” জন্য বলিপ্রদত্ত । ভুলিও না, নীচজাতি, মুর্খ, দরিদ্র, অজ্ঞ, মুচি, মেথর তোমার রক্ত, তোমার ভাই । হে বীর, সাহস অবলম্বন করো, সদর্পে বলো —- আমি ভারতবাসী, ভারতবাসী আমার ভাই । বলো, মুর্খ ভারতবাসী, দরিদ্র ভারতবাসী, ব্রাহ্মণ ভারতবাসী, চন্ডাল ভারতবাসী আমার ভাই । সদর্পে বলো, ভারতবাসী আমার ভাই, ভারতবাসী আমার প্রাণ, ভারতের দেবদেবী আমার ঈশ্বর, ভারতের সমাজ আমার শিশুশয্যা, আমার যৌবনের উপবন, আমার বার্ধক্যের বারাণসী । বলো ভাই, ভারতের মৃত্তিকা আমার স্বর্গ । ভারতের কল্যান, আমার কল্যান । “
১৯০২ খ্রিষ্টাব্দের ৪ই জুলায় রাত ৯.১০ মিনিটে ধ্যানরত অবস্থায় দেহত্যাগ করেন । তাঁকে বেলুড়ে গঙ্গা নদীর তীরে একটি চন্দন অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া চিতার উপর দাহ করা হয় । যার বিপরীত পাশে ষোলো বছর আগে রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের মরদেহ দাহ করা হয়েছিল ।
আজ তাঁর শুভ জন্মদিন (জন্মঃ ১২ই জানুয়ারী, ১৮৬৩) । তাঁর শুভ জন্মদিনে আমার শতকোটি প্রণাম ।
———–০————–

Share This
Categories
রিভিউ

সম্মানিত কবি ও গবেষক লিটন রাকিব।

হরিহর মহাবিদ্যালয় সংলগ্ন মাঠে হালদার পাড়া রেডিয়েন্ট ক্লাবের উদ্যোগে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্মদিন উপলক্ষে ঘুটিয়ারী শরিফ মিলন মেলার শুভসূচনা হল। এবছর মেলা তৃতীয় বর্ষে পদার্পণ করলো। উলেখ্য প্রজাতন্ত্র দিবসের  পূর্ণলগ্নে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ক্যানিং এর ভূমিপুত্র তরুন কবি,সম্পাদক ও গবেষক লিটন রাকিব সহ এলাকার বিশিষ্টজনেরা। এদিন লিটন রাকিবকে অগণিত মানুষের উপস্থিতিতে সহৃদয় সংবর্ধনা প্রদান করেন মেলা কমিটির সভাপতি মান্নান লস্কর ও সম্পাদক আক্কাস ঘোরামী। উত্তরীয়, পুষ্পস্তবক ও স্মারক  তুলে দেওয়া হয় উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে। সম্মাননা গ্রহনের পর লিটন রাকিব তাঁর বক্তৃতায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সৌহার্দ এবং সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশে মননশীলতার চর্চায় উতসাহিত করেন তরুন প্রজন্মকে।তিনি আরো বলেন- যেকোনো সৃজনশীলতায় নিগুড়ভাবে মননশীলতা বিরাজ করে।

সমগ্র অনুষ্টানটির  সঞ্চালনায় ছিলেন সাবির আলি লস্কর। মেলায় ভিড় ছিলো চোখে পড়ার মতো।মিলনমেলা চলবে ২ রা ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

নেতাজী বসেছিলেন,  তাই সেই চেয়ারে আর কেউ কখনো বসেননি, নেতাজীর স্পর্শ পাওয়া কাঠের চেয়ারকে বুক দিয়ে আগলে রাখেন দেশুড়িয়া গ্রামের কর্মকার পরিবার।

নেতাজী বসেছিলেন যে চেয়ারে সে চেয়ারে  আর কেউ বসেনি কোনোদিন। ৭৩  বছর ধরে বাঁকুড়ার দেশুড়িয়া গ্রামের কর্মকার বাড়িতে যত্নে রাখা সেই চেয়ার আজো শূন্য। পরিবারের আশা ফের কোনোদিন নেতাজী ফিরে এসে আবার বসবেন সেই চেয়ারে।

সালটা ১৯৪০। বাংলার আকাশে ক্রমশ তীব্রতা বাড়ছে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের। ২৮ এপ্রিলের তপ্ত বাঁকুড়ায় সুভাষ চন্দ্র বসু এসেছিলেন গঙ্গাজলঘাটির বুকে সভা করতে। মঞ্চে তাঁর বসার জন্য রানীগঞ্জ থেকে ভাড়া করে আনা হয়েছিল সুন্দর সোফা। স্থানীয় নেতৃত্বের বসার জন্য মঞ্চে বরাদ্দ ছিল স্থানীয় ভাবে সংগ্রহ করা কাঠের চেয়ার।

 

 

নেতাজী সোফা সরিয়ে বসার জন্য টেনে নিয়েছিলেন সাধারণ একটি কাঠের চেয়ারকে। আগুন ঝরানো বক্তৃতা শেষে নেতাজী মঞ্চ ছাড়তেই আর দেরী করেননি দেশুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা রামরূপ কর্মকার। ছুটেছিলেন মঞ্চের উদ্যেশ্যে। তাঁর বাড়ি থেকে আনা চেয়ারেই যে বসেছিলেন নেতাজী। সটান মঞ্চে উঠে সেই চেয়ার মাথায় তুলে হেঁটে সেদিন বাড়ি ফিরেছিলেন রামরূপ কর্মকার। বাড়িতে ফিরে চেয়ার রেখেছিলেন নিজের বাড়ির ঠাকুর ঘরে।

 

বাড়ির সকলকে বলেছিলেন ওই চেয়ারে নেতাজীর ছোঁয়া আছে। তাই সেই চেয়ার যেন যত্নে রাখা হয়।  তারপর দামোদর দিয়ে বয়ে গেছে বহু জল। প্রিয় নেতাজী নিরুদ্দেশ হয়ে গেছেন। আরও পরে দেশ স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু নেতাজী অন্তর্ধান রহস্যের মিমাংসা আজো হয়নি। নেতাজীকে হারানোর একরাশ যন্ত্রণা নিয়ে আজো দিন কাটে কর্মকার পরিবারের। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বুক দিয়ে কর্মকার পরিবার আগলে রাখেন নেতাজীর ছোঁয়া পাওয়া সেই সাধারণ কাঠের চেয়ারটিকে। পরিবারের কূলদেবী মনসার নিত্য পুজোর পাশাপাশি শূন্য কাঠের চেয়ার কর্মকার বাড়িতে পূজিত হয় দেবতা জ্ঞানে। শূন্য কাঠের চেয়ারকে ঘিরে যাবতীয় আবেগ ও অহঙ্কার আবর্তিত হয় দেশুড়িয়া গ্রামের কর্মকার পরিবারের।

 

কলমে : আবদুল হাই।

Share This
Categories
রিভিউ

বাংলায় হুগলির বৈঁচিগ্রাম বইমেলায় ফুটে উঠলো বাংলা জনপদে বই প্রেমের রঙ্গিন প্রচ্ছদ।

মন সারস সহিত্য ডেস্ক, সৌগত রাণা কবিয়াল:- ভারতবর্ষে তক্ষশিলা যুগ থেকে আজকের হালফ্যাশন অনলাইন পিফিএফ-এ লেখকদের সৃষ্টি পরিচয় নিবন্ধন… পুরোটা পথ জুড়েই বইয়ের প্রতি, জ্ঞানের প্রতি মানুষের অদম্য উচ্ছ্বাস… যার পরিমার্জনায় শীতের আরাম-আদুরে উৎসবমুখর বাঙালীর চতুর্দশতম পার্বণ হিসেবে বইমেলার অলিখিত স্বীকৃতি…!

শীতকাল মানেই হাজার উৎসবের মাঝে জায়গা করে নেওয়া বই উৎসব বা বই পার্বণ…. কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা কিংবা বাংলাদেশের একুশে বইমেলার মতন বৃহৎ পরিসরের পাশাপাশি জেলায় জেলায় ছোট শহর কিংবা গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এরকম অজস্র ক্ষুদ্র স্থানীয় বইমেলা ও লিটল ম্যাগাজিন মেলা…..তারই ধারাবাহিকতায় শহর কলকাতা থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরবর্তী হুগলি জেলার একটি বর্ধিঞ্চু গ্রাম বৈঁচিগ্রামের আঞ্চলিক গ্রন্থমেলা- ‘বৈঁচিগ্রাম বইমেলা’…!
গত ৫ই জানুয়ারি থেকে ১২ই জানুয়ারি পর্যন্ত বৈঁচিগ্রামবাসিরা এবার তাদের ১৫ তম মেলা আয়োজন করে বৈঁচিগ্রাম অগ্রগামী সংস্থার অসাধারণ পরিচালনায়…!

‘গ্রাম থেকে জেগে ওঠে প্রাণ’ থিমকে সামনে রেখে এই বইমেলায় প্রায় ত্রিশটি বিভিন্ন প্রকাশনী সংস্থার অংশগ্রহণে বৈঁচিগ্রাম বইমেলা হয়ে উঠেছিলো বাংলার গ্রামীণ সংস্কৃতির এক চমৎকার মেলবন্ধন…! শীত উৎসবের ভীড়ে মেলার মাঠ প্রাঙ্গণে স্থানীয় শিশু থেকে প্রবীণ, সকল আপামর মানুষের উৎসবমুখর পদচারণায় মেলা মঞ্চের আলো ছড়িয়ে পড়ে বইমেলার প্রতিটি কোনে….! গুগল মাষ্টার মশাইয়ের এই যুগেও নতুন বইয়ের গন্ধ নিতে মেলা প্রাঙ্গণে বই প্রেমীদের ভীড় ভীষণ আশা জাগানিয়া সুখ এনে দেয়…!

সাত দিন ব্যাপি এই পুস্তক মেলার উদ্ভোদন করেন বিশিষ্ট কবি মৃদুল দাশগুপ্ত মহাশয়..উপস্থিত ছিলেন কবি তনুশ্রী রায় মহাশয়া…! মেলা উপলক্ষে ভিন্ন-ভিন্ন দিন নানান সাংস্কৃতিক আয়োজনের মাঝে বিশেষ সাহিত্যিকগনের উপস্থিতিতে মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ সাহিত্য আলোচনা…! সেখানে উপস্থিত হয়ে গ্রামীণ জনপদে সাহিত্য নিয়ে মুল্যবান আলোকপাত বর্ষীয়ান কবি গীতিকার অরুণ চক্রবর্তী মহাশয়, সাহিত্যিক রজত পুরোকায়স্থ মহাশয় ও কবি সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক সাংবাদিক সৌগত রাণা কবিয়াল মহাশয়…! তাদের পাশাপাশি মেলা মঞ্চে সংবর্ধিত হোন স্থানীয় সাহিত্যিক ঘরের মেয়ে মনীষা বন্দ্যোপাধ্যায়…!
মনোজ্ঞ সঙ্গীত সন্ধ্যায় মেলা মঞ্চে নিজেদের অপূর্ব সুর মূর্ছনায় আগত বই প্রেমিদের মুগ্ধতায় পরিপূর্ণ করেন জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী লোপামূদ্রা মিত্র, রূপঙ্কর বাগচি এবং সুরজিৎ ও বন্ধুরা…! মেলায় মঞ্চস্থ হয় নাটক ইচ্ছামৃত্যু… অনুপম বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনায়, রাহুল গোস্বামীর নির্দেশনায় চমৎকার এই নাটকটিতে অভিনয় করেন, জগবন্ধু বন্দ্যোপাধ্যায়, পাপিয়া মুখোপাধ্যায়, প্রজিৎ চ্যাটার্জি, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও
অর্নব ঘোষ প্রমুখ…!


ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের পৃষ্ঠপোষকতায় বিহারী লাল মুখার্জীর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত বি-এল মুখার্জি বিদ্যালয়ের মাঠ প্রাঙ্গণে
বৈঁচিগ্রাম বইমেলার উদ্ভোদনী দিনে উপস্থিত ছিলেন মাননীয়া বিধায়িকা ডক্টর রত্না দে নাগ মহাশয়া, পান্ডুয়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি চম্পা হাজরা মহাশয়া, পান্ডুয়া পঞ্চায়েত সমিতির কর্মদক্ষরা ও জেলা পরিষদের সদস্য ও সদস্যরা, বাটিকা বৈচি অঞ্চলের প্রধান ও উপপ্রধান ও সমাজসেবী আব্দুল মান্নান মহাশয়, অঞ্চলের সব সদস্য সদস্যরা ও আরো বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এবং বইমেলার সম্পাদক সঞ্জিত ব্যানার্জি মহাশয়…!

৯৬০ সালের পরবর্তী সময়ে প্রাচীণ চিনা-দের বইয়ের প্রতি ভালোবাসা নিয়ে ‘শানবিন’ এর প্রচলন… পৃথিবীতে বই সংগ্রহের প্রাচীণতম এই উদাহরণের পাশাপাশি সক্রেটিস সময়েও জ্ঞান অর্জনে বই কেনা বেচার কথা উল্লেখ পাওয়া যায়…! তবে প্রচলিত ইতিহাস অনুযায়ী খ্রিষ্টীয় পনেরো শতকে জোহানস গুটেনবার্গ মুদ্রণযন্ত্র বা ছাপাখানা আবিষ্কার করার পর থেকে জার্মানিতে লিপজিগ মতান্তরে ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরে ছাপা বইমেলার প্রারম্ভিক সূচনা থেকে পরবর্তীতে ১৭ শতকের পর ইউরোপসহ বিশ্বের আরও কিছু দেশে বইমেলা বা গ্রন্থমেলা মানুষের শিক্ষা ও জ্ঞান অর্জনের অন্যতম উৎসব হিসেবে জনপ্রিয়তা অর্জন করে…!

গাছের বল্কলে, গুহায়, পাথরের গায়ে নানান আঁকাবুকির মাধ্যমে তাদের নিজস্ব ও অবস্থানগত বিবরণ তুলে ধরার যে চর্চা শুরু হয়েছিলো..আজকের বইমেলা যেন তারই অত্যাধুনিক বিবর্তন…!
প্রায় চার হাজার বছর আগে প্রাচীন মেসোপটেমিয়ায় ( বর্তমান ইরাক ও সিরিয়া ) ‘গিলগামেশ’ পৃথিবীর প্রথম উপন্যাস থেকে আজকের বৈঁচিগ্রাম বইমেলার মতন আঞ্চলিক বইমেলাগুলোতে বাবা মায়ের হাত ধরে আসা ছোট শিশু সাহিত্যিকদের ভাবনার চিত্রপটে লেখা শিশুতোষ গল্পের বইয়ের সচিত্র মলাট…..
এ যেন এক পূর্ণ পৃথিবীর সভ্যতার কথা বলে যায়…!

সভ্যতার যাদুর ঝুলি যতই জীবনকে দুর্দান্ত বেগ এনে দিক না কেন, মানুষের মনের কথাগুলোর কল্প চিত্রের আবেগ হয়ে বইমেলা সবসময় থাকবে সময়ের বর্তমান চাকায়…!
বই কিনুন..বই পড়ুন..বই উপহার দিন প্রিয়জনকে…!
ধন্যবাদ…

 

সৌগত রাণা কবিয়াল—
— কবি সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক

Share This
Categories
রিভিউ

সে তুমি কবি হও বা নাও হও, আমি জানি কবিতার ঈশ্বর তুমি, কবিতা ::: শুভঙ্কর দাস।।।

“আমি ঈশ্বরের নামমাত্র প্রশংসা করব না,
বরং ঈশ্বরের উচিত আমার স্তুতি করা,আমার হৃদয়ের
সামনে মাথা নত করে ক্রন্দন করা,আমার অশ্রু অথবা
অফুরন্ত আবেগের জন্য আবার একটি জন্ম উপহার দেওয়া,যাতে আমি জ্বলন্ত জীবনের শেষদিন পর্যন্ত

নারীকে,হৃদয়বতীকে এমনভাবে রক্তমাংসমদির ভালোবাসি,মুগ্ধতার পদাবলি রচনা করি এবং একটু স্পর্শের জন্য প্রাণ তুচ্ছ করতে পারি!

যা ঈশ্বরের করা অসম্ভব,অকল্পনীয় এবং অরতিময়!

কে কার সৃষ্টি জানি না!প্রেমের ফুল হাতে নিলেই
ভেতরে যে ধ্বনিত হচ্ছে শ্বাসবায়ুরচিত কবিতা,তা
গালিবের লেখা,লেখা নয়, তাই গালিব

সে তুমি কবি হও বা না হও!”( গালিবের কবিতা।শুভঙ্কর দাস)

প্রায় দু’শতাব্দী আগে এক প্রেমিক-কবির জন্ম হয় ১৭৯৭ সালে আগ্রায়,তিনি সৈনিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও,কখনো অস্ত্র ধরেননি,বরং নিজের হৃদয়কে ফুল করলেন,প্রতিটি শানিত অস্ত্র যাতে ফুল এবং অস্ত্র ভান্ডার ফুলের বাগানে পরিণত হয়।
তিনি উর্দুতে কবিতা লিখতেন। শেষ পর্যন্ত এই ভাষার প্রতি তাঁর পরম নিষ্ঠা ও বিশ্বাস লক্ষ্য করা যায়।তাঁর সারাজীবন ছিল সৌন্দর্য সন্ধানের আকর।তিনি লক্ষ্য করলেন,ঈশ্বরের সৃষ্ট এই জগতে সত্যিকারের সুন্দরতম বলে কিছু থেকে থাকে,তা হল নারী।
সেই নারীর হৃদয় জয় করা তাঁর কাছে শত সাম্রাজ্য জয় করার সমান মনে হত।
ডেই নারীর হৃদয়ে স্থান পাওয়াকে তিনি মনে করতেন বেহস্তে যাওয়ার সমান।
তপ্ত হৃদয়ের ভেতর ছায়া আনতে এবং মরুসদৃশ ওষ্ঠতৃষ্ষা মেটাতে পারে একমাত্র নারী।তাই সেই কবির কাছে প্রেম,নারীর প্রেম জীবন ও মরণ,ত্যাগ ও ভোগের একাত্ম সাধনরূপ হয়ে উঠল।
তাঁর কবিতার ছত্রে ছত্রে বুলবুল,গোলাপ,বসন্ত,চাঁদ, ফুল,ময়ূর,কেশদাম,সুরা, লায়লা-মজনু এবং যে শব্দটি অযুতবার এসেছে, তা হল চুম্বন।
অর্থাৎ তিনি নারীর প্রেমকে ও তার প্রাপ্তিকে জীবনের সবশ্রেষ্ঠ গজল মনে করতেন।
প্রায় ১৭৯৬ টি কবিতা রচনা করেছেন।
তিনি ইংরেজি জানতেন না!
তিনি বাংলা যে জানতেন না,তা বলা বাহুল্য!
তিনি ফার্সি জানতেন কিন্তু পদ রচনায় তিনি উর্দুকেই বাহন করেছিলেন।
তার সত্ত্বেও তাঁর হৃদয়আর্তিকে আটকে রাখা যায়নি!
অনুবাদের মাধ্যমে আলোকিত কবি-প্রেমিক সম্রাট হয়ে আছেন সারা ভুবনে।

তিনি মির্জা আসাদুল্লাহ্ খান।
গোটা জগৎ তাঁকে মির্জা গালিব নামে চেনে।

কাব্য-বিশেষজ্ঞের মতামত এই “গালিব শুধুমাত্র বড় কবি নন,তিনি অত্যন্ত দুরূহ কবি।তাঁর কবিতা ও গজল দু’শতাব্দী অতিক্রম করেও আমাদের কাছে প্রাসঙ্গিক। গালিবকে তাঁর জীবনী ও কবিতায় আমরা পাই সম্পূর্ণ ধর্মনিরপেক্ষ, মেধা ও মননের সমৃদ্ধ সমকালীন ভারতীয় সংস্কৃতির পটভূমিকায় একজন অমিত শক্তিধর স্রষ্টা হিসেবে। সমগ্র উর্দু ও ফারসি কাব্যে একমাত্র ইকবাল ব্যতীত আর কোনো কবি একরকম কালোত্তীর্ণ প্রতিভা নিয়ে উপস্থিত হননি”

আর মহাকবি গালিব নিজে স্বয়ং কী বলেন, তাও শোনা দরকার–
“শোনো,দুটি পৃথিবী আছে,একটি আত্মার, অন্যটি মাটি ও জলের পৃথিবীর। সাধারণ নিয়ম এই যে মাটিজলের পৃথিবীতে যারা অপরাধী তারা আত্মার পৃথিবীতে শাস্তি পাবে,আবার যারা আত্মার জগতে অপরাধী তারা মাটিজলের পৃথিবীতে শাস্তি পাবে”

তাঁর আত্মা কবিতার জন্য নিবেদিত ছিল।তাই তিনি মাটিজলের পৃথিবীতে নানা দুঃখ-কষ্ট ভোগ করে প্রেমকে প্রজ্বলিত করেছেন তিলে তিলে…
তিনি তাই বলেন—
“আমাদের প্রেমের ব্যাকুলতা তোমার মহত্ত্বকে প্রকাশ করে
তোমার পৃথিবী তোমার মুখের তুলনায় অতি সামান্য
একটি আয়না মাত্র! ”
সেই আয়না যদি উর্দু ভাষাতেই সীমাবদ্ধ থাকত,তাহলে সসাগরা বসুন্ধরা এই অতুলনীয় প্রেমের স্বাদ থেকে বঞ্চিত থাকত,তাই আমরা যারা অসহায় অথচ গালিব পড়তে আগ্রহী এবং বহুভাষাজ্ঞানহীন অথচ বহুমাত্রিক প্রেমসন্ধানী, তাদের জন্য অনুবাদ একান্ত প্রয়োজন।
এগিয়ে এলেন কবি তপনকুমার মাইতি।
কবি তপনকুমার মাইতি অখন্ড মেদিনীপুরের প্রেমের কবিতায় অন্যতম শ্রেষ্ঠ রচনাকার।তিনি নিজে অসংখ্য এবং সার্থক প্রেমের কবিতা সৃষ্টি করেছেন।এবং যা আবৃত্তিশিল্পীদের স্বর্ণকলস হতে পারে! যেমন একটি শোনাই—

“ভালোবাসলে সব মানুষের মুখ সুন্দর দেখায়
তখন শত্রুর দিকে হাত বাড়িয়ে বলা যায়,বুকে এসো
তখন ঝরা ফুল হাতে নিয়ে বলা যায়,বৃন্তে ফিরে যাও
তখন ছোট ছোট লোভ ও ঘৃণাগুলো নক্ষত্র হয়ে যায়
তখন অচেনা মানুষের দুঃখের ভেতর দাঁড়ানো যায়

ভালোবাসলে পাখি নেমে আসে গাছ থেকে
মেঘ থেকে বৃষ্টি নেমে আসে

ভালোবাসার মত স্বচ্ছ আয়না আর একটিও নেই। ”

সেই মানুষটি প্রেমের হৃদয় দিয়ে গালিব ভাষান্তর করেছেন। মূল উর্দু কবিতার পাশাপাশি বাংলায় অনুবাদ।কয়েকটি প্রেমপ্রদীপ জ্বালানো যেতেই পারে—

“ঘুম তো তারই,গর্বও তারই,রাত্রিও তার
তোমার অবিন্যস্ত কেশদাম যার বাহুর উপর বিছিয়ে আছে”

“দেওয়াল ও দরজাবিহীন একটি ঘরে বানাতে চাই
সেখানে কোনো পাহারাদার থাকবে না,থাকবে না কোনো পড়শি”

“তুমি বলছ কুড়িয়ে পাওয়া হৃদয়টা ফিরিয়ে দেবে না
হৃদয় কোথায় যে লুকিয়ে রাখবে? আমি পেলাম আকাঙ্ক্ষিত করুণা”

এইরকম কবি তপনকুমার মাইতি একশো দুটি অনুবাদ করেছেন গালিবের কবিতার।মূল উর্দুর সঙ্গে পড়তে এক অনাবিল আনন্দে মন ভরে যায়,তবে হয়তো যে শব্দ বা বাক্য উর্দুতে প্রবাদপ্রতিম হয়ে গেছে,তার বাংলা সেই আবেদন নিয়ে কোথাও কোথাও হাজির হয়নি,অনুবাদ সদর্থক এবং সাবলীল, কিন্তু ভাষান্তরে সেই ধ্বনিময় অনুভবজারিত রস পাওয়া অসম্ভব।
তা সত্ত্বেও কবি তপনকুমার মাইতি আমাদের জন্য যে স্বর্ণখনি নির্মাণ করেছেন,তাতে মুগ্ধ হতেই হয় এবং অবশ্যই পাঠ করতে হয়।

গালিব বাংলা ভাষায় কবিতাচর্চা করতেন না,এমন কি তিনি বাংলার কবিতাসম্ভার জানতেন কি না,জানা যায় না,কিন্তু ১৮২৬ সালে কলকাতায় এসেছিলেন।দিল্লির শেষ বাদশা বাহাদুর শাহের সভাকবি ছিলেন তখন।সেইসময় কলকাতায় তাঁকে ঘিরে একটি উর্দু কবিমন্ডল তৈরি হয়। যে সময় কলকাতায় রাজা রামমোহন রায় একের পর এক সমাজসংস্কারমূলক বাংলা বই রচনা করে চলেছেন এবং রামমোহন নিজে খুব ভালো ফার্সি ও উর্দুভাষা জানতেন।সেদিক থেকে গালিবের সঙ্গে রাজা রামমোহনের সাক্ষাৎ হয়েছিল কি না,জানা যায় না! রামমোহন গালিবের চেয়ে ২৩ বছরের বড় ছিলেন।এবং গালিব যখন কলকাতায় সেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বীরসিংহের টোলে পড়াশুনা করছেন এবং তাঁর বয়স মাত্র ছয়।
এবং সেই সময় বাংলার প্রধান কবি ছিলেন ঈশ্বর গুপ্ত।
তাঁর সম্পাদিত সংবাদপত্রে গালিবের কোনো সংবাদ প্রকাশিত অথবা গালিবের কবিতা অনুবাদ করেছিলেন বা প্রকাশ করেছিলেন কি না,জানা যায় না!
এইসব ইতিহাসের উর্ধ্বে যা থাকে,তা হল গালিবের কবিতা।তাই আমরা হাতের কাছে পেয়ে যাচ্ছি, কবি তপনকুমার মাইতির আয়োজনে,এটাই বড় প্রাপ্তি।এই আলোচনায় অনেকের মনে হতে পারে,শব্দার্থ বা উপমা প্রয়োগ অথবা ভাষান্তরে ভাবের বিস্তার বা সংকোচ হল কি না,তা তো আলোচিত হল না!
না,আমি সেসব করতে বসিনি,সে যোগ্যতাও আমার নেই।আমি শুধু এক কবি হৃদয়ের আর্তি অপর কবিহৃদয় কীভাবে সঞ্জাত করে গালিবপ্রিয় পাঠকের মনে সঞ্চারিত করল,তাই শ্রদ্ধার সঙ্গে তুলে ধরলাম।মহাকবি মধুসূদন তাঁর ব্রজাঙ্গনা কাব্যের একটি জায়গায় বলেছেন—

” যে যাহারে ভালোবাসে/সে যাইবে তার পাশে
মদন রাজার বিধি লঙ্ঘিবে কেমনে?
যদি অবহেলা করি/রুষিবে শম্বর-অরি
কে সমস্বরে স্মরশরে এ তিন ভুবনে?”

এই সত্যিটুকু মির্জা গালিবের কবিতায় আছে,কবি তপনকুমার মাইতির কবিতায় আছে এবং পাঠান্তর তাই আমার মতো তুচ্ছ নগন্য পাঠকের মনেও সোনালি রেখায় স্পন্দিত হয়েছে,এরপর আর কি চাই??
শেষ করব গালিবের কবিতা দিয়ে,যা তপনকুমার অনন্য হৃদয়ময়তায় ফুটিয়ে তুলেছেন—

“অনুযোগে আমিও পূর্ণ, বাদ্যযন্ত্র যেমন রাগিনীতে
একটু বিচ্ছেদ দাও,দেখ কেমন বেজে উঠি”

————————//——————–

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

সাক্ষী দগ্ধ পলাশ :::: শুভঙ্কর দাস।।।।

“এইমাত্র নদী নেমে গেল মনের
শেষ ধাপে,শুকনো পাতার মতো রৌদ্র কাঁপে
মানুষের জন্ম! এ কি কোনো দৈব অভিশাপে!
জানে না জীবন অথবা মৃত্যু!
তার মাঝে এই তো অক্ষরের সন্তান-সন্ততি
সঙ্গে আরও একটু শ্বাসের হাতটি বাড়াস…

নৌকাজন্ম যখন,একটু স্রোতের দিকটা ঘুরে যাস…

জেগে উঠে দেখি,মানুষে বুকে-চোখে ভরে আছে

শুধু মুখোশের লাশ,সাক্ষী দগ্ধ পলাশ! “( পলাশ।শুভঙ্কর দাস)

একটি মানুষ আপাদমস্তক সাহিত্যের সঙ্গী,সাহিত্যের সহযোগী এবং সাহিত্যিকের পরমবন্ধু। এবার আপনার মনে হল,তাহলে একটি দেখা করাই যেতে পারে।আপনি পূর্বেই ভেবে রেখেছেন, সাহিত্য-অন্তপ্রাণ মানে গিয়ে দেখব,রাশি রাশি বই খুলে পড়ছেন অথবা কোনো শ্বেতপাথরের টেবিলে উদাস বাউলের মতো কলমটি ধরে মানুষের জীবনকে ফুটিয়ে তুলছেন সাদা পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠায়,বা ভাবলেন,গিয়েই কথা বলা শুরু করলেই তিনি সাহিত্যের অতীত গৌরব, বর্তমান দুরবস্থা এবং ভবিষ্যৎ ভয়াবহতা নিয়ে সুদীর্ঘ বক্তব্য বা উপদেশ দেবেন!
না,তা কিছুই হবে না।
একটি বর্ণময় আন্তরিক সাহিত্যসভা চলছে..
সেই মানুষটি এই সভার প্রাণপুরুষ এবং সর্বময়কর্তা,তিনি কোথায়?
আপনি গিয়েই বুঝলেন,এখানে সাহিত্যের একটি যাগযজ্ঞ হচ্ছে।
নিশ্চিত মঞ্চের ওপর বসে থাকা কোনো একজন ব্যক্তি তিনি হবেন,কিন্তু কাকে জিজ্ঞেস করি?
অথবা যিনি মাইক্রোফোন ধরে সারা সভাকে শব্দশাসনে রেখেছেন,তিনিও হতে পারেন!
অথবা এই তো এতগুলো বইপ্রকাশ হল,এঁদের মধ্যে তিনি একজন হবেন নিশ্চিত।
এইভাবে খুঁজতে খুঁজতে আপনি দেখবেন এবং বিস্মিত হয়ে উঠবেন,ও হরি!
সাহিত্যবাগানে ঢোকার মুখে একটি সাধারণ মানের জামা-প্যান্ট ও খালি পায়ে অভ্যর্থণা করছিলেন এবং আপনি পা ধোবেন বলে,যিনি পুকুর থেকে জল তুলে দিলেন,তারপর আপনার পথক্লান্তি দূর করার জন্য নিজের হাতে ডাব কেটে আপনাকে খাওয়ালেন, আবার আপনার প্রাতরাশের জন্য ঠোঙাভর্তি মুড়ি-চানাচুর-নারকেল দিলেন এবং আপনাকে হাসিমুখে সভাস্থলের চেয়ার পর্যন্ত বসিয়ে আন্তরিকভাবে বলে উঠলেন,এখানে সাহিত্য নিয়ে আনন্দ করুন এবং বাড়ি যাওয়ার কোনো চিন্তা করবেন না,এখানেই থাকুন এবং সব রকমের সাহিত্য-সেবা এখান থেকেই গ্রহণ করুন।
এবং তা শুধু কথার কথা নয়, একেবারে সত্য ও সুন্দর।

তিনি ভূতনাথ পাণিগ্রাহী।

সাহিত্য-প্রাণ সকল মানুষের জন্য প্রাণপাত করতে রাজি আছেন।
তাহলে প্রশ্ন,কী পড়েন?
—কেন মানুষ পড়ি।এর থেকে ভালো বই আজ পর্যন্ত ছাপা হয়নি
কখন লেখেন?
—ঐ যে ঘুমোনোর আগে জেগে থাকতে লিখি,এখন তো জেগে থাকাটাই আসল কাজ
এই পথে কোনো পথপ্রদর্শক আছে?
— আছেন,আসুন দেখাচ্ছি,বলেই আপনাকে নিয়ে যাবেন,তাঁর তৈরি সাহিত্যবাগান,যার নাম সংলাপ।
সেই সংলাপের আদি এবং একমাত্র সভাপতি দর্শনে।
যিনি ভূতনাথের নাথ।
গিয়ে দেখবেন, শ্বেতপাথরের মর্মরমূর্তি। সেই সদাহাস্যজ্বল আনন্দময় পাগলা ঠাকুর।যিনি বলতেন,তোমাদের চৈতন্য হোক..
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ।
এরপর দেখবেন,ভূতনাথ পাণিগ্রাহী কোনো ভূমিকা ছাড়াই সেই মূর্তির পাদতলে বসে, আপনাকে ইঙ্গিত করে বলবেন,ইনিই সব।
এবার আপনি বুঝে যাবেন,কেন এই সাহিত্যপুরুষ অন্যের থেকে আলাদা।
সেই অক্ষর মাটির চাষা শান্ত-সৌম্য মনে একের পর গ্রন্থ রচনা করে চলেছেন।তার সংখ্যা প্রায় কুড়িটি।
এবার যে গ্রন্থটি হাতে এলেনা,তার নাম দগ্ধ পলাশ।

এ হল ভূতনাথের আশ্চর্য স্বগোতক্তির স্বতঃস্ফূর্ত ধারা।

যে সাহিত্যিক বই নয়, মানুষ পড়েন।যিনি মঞ্চ নয়,মাটিতে বসে বক্তব্য দেন,যিনি মনে করেন,গাঁয়ের চটে-ঘেরা চা-দোকানের আলোচনায় যে দর্শন উঠে আসে,তা বড় বড় দার্শনিকের বইয়েও নেই!
সেই মানুষটি যেন নিজের সঙ্গে নিজে কথা বলে চলেছেন,এই বইটিতে।
বইটির কোনো শুরু নেই,শেষ নেই,একেবারে আমাদের কথা বলার মতো।কোনো সূচিপাতা নেই!
এই বইতে তিনি একটি আশ্চর্য আয়না নির্মাণ করে একের পর এক ছবি অক্ষরে খোদিত করছেন।সেইসঙ্গে যিনি পড়বেন, তাঁকেও অন্তর্গত আয়না করে দিচ্ছেন।
কয়েকটি দৃষ্টান্ত না দিলে ভূতনাথ-দর্পণ বোঝা যাবে না!

এক

লেখাপড়া

লেখাপড়া করা যদি খাওয়া, সঙ্গম আর শুধু বেঁচে থাকাই উদ্দেশ্য হয়, তাহলে ওটা না করাই ভালো! কারণ বাবুর কুকুরেও তো লেখাপড়া না করে,অক্লেশে বরং আরামের বেঁচে থাকে!

কবিতা

আমি জন্ম হলাম।যন্ত্রণা শুধু শুধু দিলাম স্রষ্টাকে।স্পর্শ করলোই না কেউ! দেখলোই না কেউ মুখে তুলে!
কারণ আমি হেমু মুর্মুর মেয়ে যে,নাম? কবিতা।

আত্মমর্যাদা

অর্ধশোয়া জামরুলের পাশে দাঁড়ালাম।কাজ হয়ে যুবতী লাল ফল শয্যায়!হাত বাড়াতেই!
বলল,নির্ভরতা লজ্জার।এভাবেও বাঁচা যায়।মুখ্য বিষয় আত্মমর্যাদা।

ফুল

যে ফুল ফুটুক, ভেতরে ওগুলো ওর শিশির নয়! কান্না! পোকা থেকে দেবতা সবারই চাই! ফুলের,বলি তার আবার চাওয়া কী? রক্ত করলেও সর্বমঙ্গল্যে!
সে যে ফুল ফুটুক। ভেতরে ওগুলো ওর শিরশির নয়! কান্না।

প্রেম
হৃদয় তপ্ত দগ্ধ না হলে,প্রেমের পরশ কি সহজে মেলে?

বৃদ্ধ

বৃদ্ধ কাঁপা হাতটি দিয়ে ঝাকালো হঠাৎ
বলল,বেঁচে আছি
শব্দহীন আমার মুখ!
আকাশে দেখি দলছুট একটি পাখি উড়ে যাচ্ছে, কেবল আজ একা!

এইরকম জীবন ও মৃত্যুর মাঝখানে মানুষের মনের অসংখ্য সিঁড়ি, সহবাস এবং সাধনাকে ভূতনাথ আপন অভিজ্ঞতা ও আলোক মিশিয়ে তুলে ধরেছেন।
এ যে সেই ঠাকুরের রসে-বশে থাকা।
ঠাকুর বার বার বলতেন,কলিযুগে নারদীয় ভক্তি।
জীবিকার সন্ধানে ছুটে চলা মানুষের হাতে যে সময়ের বড় অভাব।তাই শাস্ত্রে যে সকল কর্মের কথা আছে,তার সময় কই?
তাই ঠাকুরের নিদান,ঈশ্বর ও সংসার দুইহাতে ধরে এগিয়ে যেতে হবে,আর তাতে একটাই জিনিস দরকার,তা হল,মন ও মুখ এক করতে হবে।

মন ও মুখের এক করার সেই অমোঘ আয়না নির্মাণের চেষ্টা করেছেন সাহিত্যসাহসী ভূতনাথ পাণিগ্রাহী।
তাঁকে প্রণাম।
————————–//——————

Share This
Categories
রিভিউ

পুবদিকের হৃদয় এবং একজন হৃদয়সন্ধানী কবি ::: শুভঙ্কর দাস।।।

“আঁতুড়ঘরে এক চিলতে রোদ মায়ের আঁচলের স্পর্শের মতো ছুঁয়ে যায়,শিশুপৃথিবী…
এই সূচনা প্রথম যাত্রাপথের…
ফিরে যেতে একাই একদিন, রেখে যাবে,আরও একটু আলো,হৃদয়ের…

সেই দিক যদি পূর্ব হয়,তাহলে বুঝবে প্রতিটি জন্ম আসলে অনন্তের…

শুধু মা আর সূর্য জানে,নিজেদের মতো”

একজন কবিহৃদয় শেষ পর্যন্ত যে শক্তি নিয়ে বেঁচে থাকে,তা হল অপর হৃদয়ের আলো ও উষ্ণতা। মা যেমন আঁতুড়ঘরের প্রতিটি মুহূর্ত চেতন-অবচেতনে গর্ভধারণের প্রথম সময়কাল থেকে মনে মনে এঁকে রাখেন,কবিও সেই মাতৃহৃদয়অনুভবী।
নিজের ভেতর নিজেই আশ্চর্য অনুভবে লক্ষ্য করেন,সামান্য ঘষামাজার গতানুগতিক জীবন-যাপনের গতি ও গ্রহণ কীভাবে অপর হৃদয়ের সন্ধানে পরিবর্তন, পরিমার্জন এবং প্রকাশিত হয়ে চলেছে।এই ক্রমাগত আবেগ ও আবেশের মুখ একমাত্র দর্শন করতে পারে, বোধ।
বোধই হল মাতৃগর্ভের মতো জন্মচক্রের আধার।এখানে শিশুসন্তানের মতো জন্ম নেয় চিন্তা। চেতনা।উপলব্ধি।
যা কবিপ্রাণকে অস্থির করে তোলে,আবার তাই কবির একমাত্র অস্তিত্ব।
সেই ভাবনা কবি সমীররঞ্জন খাঁড়ার কবিতাও আছে—

“শুধু এক পরমান্ন আজও পাহারা দেয়
জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি
মা নামক এক আগুনপ্রেম”

ঘুম থেকে উঠে ঘুমোতে যাওয়ার মাঝখানে যে বিচিত্র ও বিভিন্ন অভিজ্ঞতার প্রপিতামহ ঝুলি ভরে ওঠে,তাই বোধকে খাদ্য ও পুষ্টি জোগায়।সেখান থেকে নির্মিত হয় একের পর এক নতুন দরজা।তাই করে চলেছেন কবি সমীররঞ্জন খাঁড়া।তিনি সবিনয়ে সহৃদয়ে অপর হৃদয়ের মধ্যে প্রবেশ করার চেষ্টা করছেন,অনুভব করছেন এবং তাকেই নিজের ভেতর জারিত করে প্রকাশ করছেন দরজা।
হা,দরজা।
এই দরজা খোলার কাজটি পাঠক করবেন,কিন্তু তার আগে দরজা নির্মাণ করা প্রয়োজন। তাই ধ্বনিত সমীরণে —

“সূর্যের আলো যেমন দিনের জন্ম দেয়
রাত্রির আঁধার আনে নক্ষত্রের দল
তেমনি মানুষও হৃদয়-আকাশ রচনা করে কাহিনি হয়ে ওঠে”

এ কাহিনির সূচনা হয়েছিল সেই অ্যামিবা থেকে…
তারপর জঙ্গল,গুহা,তপোবন,কুরুক্ষেত্র এবং সিংহাসনের পর সিংহাসন পেরিয়ে জন্ম নিল মাটির অভিমুখ। কিন্তু সেখানেও শিকলের পর শিকল,তাই কেটে তৈরি হল এক তেরঙা পতাকার দেশ,স্বদেশবাসী এবং আত্মবলিদানের ওপর আত্মপ্রকাশ। এইসব ইতিহাসের পাতার ভেতর কালো কালো অক্ষরের কারাগারে বন্দী হয়ে যখন দম আটকে গিয়ে গিয়েছিল, তখন কবিতা এসে তাকে জাগিয়ে তুলল,বোঝাল,অনুভূতি মরে গেলে হৃদয় মরে যায়…
আর হৃদয় মরে গেলে সূর্য নিভে যায়…
তাই সূর্যের আলোর দিকে যাত্রা প্রয়োজন এই অন্ধকারে, এই অসুখে…
কবি সমীররঞ্জন খাঁড়া যেন সেই চিরায়ত সত্যকে তুলে ধরার জন্য কবিতার আশ্রয়ে প্রকাশিত হয়েছেন—

“অচিন দেশের কোন্ অন্ধকার গুহা থেকে করো বিদীর্ণ অতি পরিচিত হৃদয়ের ভার,অজানা সময়ে হানো দ্বারে দুর্বিষহ অকস্মাৎ! কেন, কেন তুমি জীবনের সব আকাঙ্ক্ষা করো ম্লান নিষ্ঠুর কষাঘাতে? জানি আমি নই,নাও তুমি শাশ্বত এই ধরিত্রীর”

শাশ্বত ধরিত্রীর জন্য সযতনে নির্মিত সব ছেড়ে চলে যেতে হবে,তাহলে কীসের জন্য এই অনুসন্ধান? এই কবিতা? এই জীবনবোধ!
সাহিত্যিক জর্জ অরওয়েলের একটি অসাধারণ অনুভব আছে,তার হল,আমাদের জীবিতকালেই কোনো বিরাট পরিবর্তন দেখতে পাওয়ার সম্ভবনা কম। আমাদের আসল জীবন আছে ভবিষ্যতের গর্ভে। সে ভবিষ্যৎ ঠিক কতদিন পরে,তাও আমরা জানি না।দশ বছরও হতে পারে,হাজার বছরও হতে পারে।তবুও শুভচিন্তার আর যুক্তিবোধের এলাকাটা অল্প অল্প করে বাড়িয়ে নিয়ে যেতে হবে ”

দুটি চেতনা,শুভচিন্তা এবং যুক্তিবোধ।
এই ধারণার ওপর দাঁড়িয়ে আছে সুমনন কবি সমীররঞ্জন খাঁড়া প্রণীত কাব্যটি “পুবের দিকে হেঁটে চলেছি”
কবিতার বইটির নামকরণের মধ্যে সেই শুভচিন্তা ও যুক্তিবোধের মাত্রামিল লক্ষ্যনীয়।
কিন্তু কবি সমীররঞ্জন খাঁড়া তা কীভাবে ব্যক্ত করেছেন,তা একটু পড়ে নিই আসুন—

এক

“অক্ষর আলোয় বদলে নিই অন্ধকার গলিপথ ”

দুই

“আমি জ্বরের চাদর দু-হাত ঠেলে/এগিয়ে চলেছি পুবের দিকে”

তিন

“অশ্রুকণায় হৃদয় আকাশ হয় ”

চার

” জন্মভিখিরিও সিংহাসন খুঁজে পায়
যদি পরমান্নের ছোঁয়া হৃদয়ে লাগে।”

পাঁচ

“জন্মের মধ্যে ক্ষয় আছে জানি
তবুও জন্মের জন্য জীবন প্রখরতর হয়।”

এই ভাবে ধীরে ধীরে ক্ষয় সরিয়ে জয়, ভয় হারিয়ে ভালোবাসা, ক্ষতি সারিয়ে জ্যোতি,প্রত্যাখ্যান ফেলে প্রস্তাব এবং আগুনকে আলো করার সহৃদয় সন্ধানে কবি সমীররঞ্জন ধুলো-বালি পথ হাঁটছেন।হলদিয়া শিল্পনগরীর শিশু পরিচর্যা ও আরোগ্যলাভের বরাভয় তাঁর হাতে,তিনি সেই শিশুহৃদয়কে সযত্নে ও সতর্কতায় সুস্থ রাখতে দিনরাত ছুটে বেড়াচ্ছেন। তার মধ্যেই তাঁর অনুভবী দৃষ্টি পড়ে এইভাবে যে,শিশুটি পেল নতুন ছাড়পত্র, তা কি সত্যি বেঁচে থাকার পৃথিবীর! সেই কতদিন আগে কত সহজ ভাষায় কিশোর কবি বলেছিলেন—

“চলে যাব— তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ
প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল,
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার ”

সত্যি এই অঙ্গীকার বুকে হাত রেখে ক’জন করতে পারে? যখন কবি সুকান্ত একথা লিখছিলেন,সেই অসহায় ও অবহেলিত শিশুপৃথিবীর কি কোনো উন্নতি হয়েছে? কোনো পরিবর্তন হয়েছে? এখনও অসংখ্য পথশিশু ও কিশোর-কিশোরী সভ্যতার যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে মরছে,এখনও ব্যস্ত রাজপথের ধারে হোটেলে নিয়ন বাতির নিচে বাসন মাজছে কোনো খালি-গায়ের বালক,এখনও চকলেট বা মোতির গহনার কারখানার বিভৎস অন্ধকারে ছোট ছোট হাতগুলো চিরে যাচ্ছে, শ্রমে ও লালসায়… এখনও অসংখ্য শিশু-কিশোরী চালান হয়ে যাচ্ছে পর্ণগ্রাফির জ্বলন্ত আগুনে…
তাই সুকান্তের কবিতা অমলিন,তার আবেদন চির-প্রতিবাদের…
মানুষের যেমন কষ্ট পেলে যেমন আর্তনাদ করে,এই কবিতা সেই আর্তনাদের দলিল।
কবি সমীররঞ্জন সেই আর্তচিৎকারকে আত্মবেদী করে কবিতা রচনা করছেন।
তিনি আসলে চিকিৎসা করতে করতে এটাও ভেবেছেন,এই সব অসংখ্য শিশু সুস্থ হয়ে ফিরে যাক সেই সুকান্তের কবিতার মতো সুন্দর পৃথিবীতে… ” তাইতো এখানে আজ ঘনিষ্ঠ স্বপ্নের কাছাকাছি / মনে হয় শুধু তোমারই মধ্যে আমরা যে বেঁচে আছি”

এই একাত্মবোধ। তাই কবিতা হয়ে ধরা পড়েছে সমীররঞ্জনের কবিতায়।তিনিও একান্তভাবে চাইছেন—

“আমার অক্ষরগুলো চাতক পাখির মতো বর্ষা খোঁজে ”

অথবা

“এসো, তুমি বীজমন্ত্রের বিধাতা হয়ে/ শস্যগোলা তরণী পূর্ণ পৃথিবী করে”

অথবা

” অশ্রুভর্তি থালা লড়াইয়ের সিংহাসন হয়ে ওঠে”

এই চেতনা ও বোধ কবি সমীররঞ্জনের শক্তি ও সাহস।তাঁর কবিসত্তার পূর্ণ আনন্দ ও আলো এই পথেই…
এই কবিতার পরতে পরতে একজন সহৃদয় মানবতার প্রতীক হয়ে অক্ষর সাজিয়েছেন কবি।তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিতে এক সহানুভূতিশীলতা ও সুসমপর্ণবোধ রয়েছে। তিনি নিজে যেন সেই ধারণার বাইরে নয়, এ যেন মাটিতে নেমে মাটি দিয়েই মনের মিনার নির্মাণ করার সুপ্রচেষ্টা।ভক্ত কবীরের একটি দোঁহা আছে—

” তিনকা কবহুঁ না নিদিয়ে, জো পাঁয়ন তর হোয়
কবহুঁ উড়ি আঁখিন পরৈ, পির ঘনেরি হোয়!”
অর্থাৎ অতি ক্ষুদ্র জিনিস বলে অবহেলা করা উচিত নয়। তিনকা অর্থাৎ খড়কুটো বলে পায়ের তলায় চাপা দিয়ে অবহেলা করা উচিত নয়, যে কোনো মুহূর্তে চোখে এসে পড়লে, খুবই কষ্টের কারণ হতে পারে।অর্থাৎ কোনো মানুষকে ছোট বা অবহেলা করা উচিত নয়। ”
সুমনন কবি সমীররঞ্জনের কবিতায় কবীরের দোঁহার প্রভাব আছে,তিনি অতি ক্ষুদ্র জিনিস ও চোখে পড়ে না,এমন অনুভবকে অতি যত্নে তুলে এনেছেন।তাঁর অনুভব সূর্যের আলো শুধু আলো নয়, বরং

” ঘুম ভাঙতেই দেখে–চাকুরির নিয়োগপত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে তার অন্ধ ছেলে
এক চিলতে রোদ এসে আলো করে দেয় উঠোন”

এই আলো,যা মানুষের বুকের মধ্যে আছে,তাই তিনি সন্ধান করছেন পুবের দিকে হেঁটে হেঁটে… আসলে তিনি এইভাবে কবিতায় হাঁটতে হাঁটতে একদিন নিজেই একটি দিক হয়ে উঠবেন,তাই তিনি এত সুন্দর করে আঁকেন বিশ্বাস —

“পুবের দিকে হেঁটে চলেছি
পশ্চিমি হাওয়ার বাঁকে
ঠাকুর দেবতা ঈশ্বর নয়
মানুষই সীমানা আঁকে”

প্রচ্ছদে কবি ও শিল্পী ভগীরথ সর্দার অনবদ্য ভঙ্গিতে পুবদিকের যাত্রাপথ ও যাত্রী অঙ্কন করেছে,যা এই কাব্যটির প্রাণপ্রতিমা আলোকিত। লিপি প্রকাশনা সযতনে ও সুন্দরতায় প্রকাশ করেছেন,তার জন্য বিশুদ্ধ হাততালি অবশ্যই প্রাপ্য।
এই কাব্য যে নতুন প্রজন্মের জন্য নতুন পৃথিবী নির্মাণ, তাই অতি সুন্দরভাবে প্রকাশিত উৎসর্গপত্রে…
সেখানে লেখা,” প্রিয় পুত্র অর্চিস্মানকে, যে বাবার পেশাগত শত ব্যস্ততায় মনে করিয়ে দেয়,’তুমি কিন্তু অনেকদিন কবিতা লেখোনি’

এই সঞ্চারিত আলোকরেখা,এ-ই তো নতুন পৃথিবীর দরজা।শুধু খোলার জন্য অসংখ্য অগণিত অর্চিস্মানের জন্য বাসযোগ্য সুকান্ত পৃথিবী তৈরি করে যেতে হবে,সে মাটিতে হোক বা কবিতায়…

পুবের দিকে হেঁটে চলেছি
কবি সমীররঞ্জন খাঁড়া
প্রকাশকাল।নভেম্বর ২০২১
প্রচ্ছদ। ভগীরথ সর্দার
প্রকাশনা। লিপি
মূল্য। আশি টাকা।

Share This
Categories
রিভিউ

নদীয়া জেলায় সাহিত্য সমাবেশ।

নদীয়া জেলার মুড়াগাছার গাছা বাজারে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল “সাহিত্য সমাবেশ ও গ্রন্থ প্রকাশ” অনুষ্ঠান । ভূমিপুত্র বিশিষ্ঠ সাহিত্যিক বীরেন্দ্রনাথ সরকারের উদ্যোগে গান, আবৃতি, কবিতা পাঠ, ইত্যাদি নিয়ে একটি সুন্দর মনোজ্ঞ অনুষ্ঠান । বিভিন্ন জেলার কবি সাহিত্যিক সেখানে উপস্থিত ছিলেন । অনুষ্ঠানটিতে সভাপতির আসন অলংকৃত করেন সিস্টার নিবেদিতা আই-টি-আই’এর অধ্যক্ষ মাননীয় প্রবোধ কুমার দাস । বাঙালি বিশ্বে স্বনামধন্য এবং এপার বাংলা-ওপার বাংলার জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক দিলীপ রায় প্রধান অতিথি হিসাবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন । বিশেষ অতিথি হিসাবে মঞ্চে গৌরবোজ্জ্বল উপস্থিতি ছিল নজরকাড়া । ছিলেন বিশিষ্ঠ সাহিত্যিক বিমলচন্দ্র গড়াই, বিশিষ্ঠ শিক্ষাবিদ তপন কুমার গাঙ্গুলি, প্রফুল্ল কুমার বিশ্বাস, ড. অমিত কুমার রায়, শিশু সাহিত্যিক স্বপন পাল, বিশিষ্ঠ সমাজ সেবক ভুবন পাল, বিশিষ্ঠ শিক্ষাবিদ মৃত্যুঞ্জয় মণ্ডল ও রবি সরকার । উদ্বোধনী সঙ্গীত দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয় । উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন সহেলী চ্যাটার্জী । তারপর উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন বীরেন্দ্রনাথ সরকার । স্বাগত ভাষণের পর মঞ্চে উপবিষ্ট গুণীজনদের হাত ধরে বীরেন্দ্রনাথ সরকার ও দিলীপ পালের লেখা গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন হয় । মোড়ক উন্মোচনের সময় বীরেন্দ্রনাথ সরকারের স্ত্রী, প্রীতিকণা সরকার ও একমাত্র ছেলে উপস্থিত ছিলেন । তারপর প্রধান অতিথির ভাষণ । প্রধান অতিথি তাঁর ভাষণে বাংলা ভাষার বিভিন্ন প্রেক্ষাপট এবং গাছা বাজারের মতো জায়গায় সাহিত্যের অনুষ্ঠানের তাৎপর্য তুলে ধরেন । তিনি উপস্থিত কবি সাহিত্যিকদের বাংলা সাহিত্য শ্রীবৃদ্ধিতে নজর দিতে অনুরোধ করেন । সমাজ উন্নয়নে তথা দেশ উন্নয়নে কবি সাহিত্যিকদের ভূমিকার কথাও মনে করাতে ভুলে যাননি । মাননীয় তপন কুমার গাঙ্গুলি, স্বপন পাল ও বিমলচন্দ্র গড়াই তাঁদের ভাষণে সাহিত্যের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন । উপস্থিত ছিলেন অর্ক দীপের সাহিত্য সোপানের কর্ণধার ডাঃ দীপ্তি রায় । তিনি কবিতার মাধ্যমে সাহিত্যের নিরিখে সুন্দর বার্তা দিয়েছেন । কবিতা পাঠ করেছেন অনেকেই । তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সুমিতা পয়ড়া (নদীয়া), রণজয় মালাকার (উঃ ২৪ পরগণা) , ফটিক বিশ্বাস (হুগলী), মানিক সরকার (নদীয়া), প্রমুখ । অন্যান্য কবিদের কন্ঠে কবিতা পাঠ অনন্য সুন্দর হয়ে উঠেছিল । কবি সুসময় বিশ্বাস নিজের লেখা ও সুর দেওয়া গান পরিবেশন করলেন । সমস্ত অনুষ্ঠানটি সর্বাঙ্গসুন্দর হওয়ায় সভাপতি তাঁর ভাষণে কর্মকর্তাদের সাধুবাদ জানিয়েছেন । সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ভূমিপুত্র ও শিশু সাহিত্যিক দিলীপ পাল ।

Share This
Categories
রিভিউ

সাহিত্যে চরিত্র হয়ে উঠে আসা সাধারণ মানুষদের নিয়ে মহালয়ার শুভদিনে চোখ সাহিত্য পত্রিকার পূজো আড্ডা ও প্রকাশনা উৎসবের জমকালো আয়োজন কলকাতার বুকে….

গল্প নয় সত্যি হ’য়ে কিছু ইচ্ছে পরিপূর্ণতা পায় তার স্বভাবসুলভ স্বকীয়তায়… ভাষার প্রকাশের ঐশ্বরিক অনুলিখন ফুটে ওঠে ছাপার অক্ষরে পাতায় পাতায়…!

তেমনই এক সুন্দরতম শুদ্ধ সাহিত্যের আয়োজনে,
গত ২৫ শে সেপ্টেম্বর মহালয়ার পূণ্যদিনে কলকাতার কৃষ্ণপদ ঘোষ মেমোরিয়াল ট্রাস্ট হলে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো চোখ সাহিত্য পরিবার আয়োজিত কবি সম্মেলন এবং মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান…!
চোখ সাহিত্য পরিবার সাহিত্যের পাশাপাশি সামাজিক দায়িত্বের কথা মাথায় রেখে বরাবরের মতোই একই ধারায় নির্দিষ্ট ভাবনা ভিত্তিক অনুষ্ঠান করে এসেছে বিগত বছরগুলোতে, যা কিনা সাংস্কৃতিক একটি স্বকীয় উজ্জ্বতম নব ধারার সৃষ্টি করেছে এই সময়ের কলকাতার সাহিত্য অঙ্গনে..!

চোখ সাহিত্য পরিবারের কর্ণধার শ্রী রজত পুরকায়স্থ মহাশয়ের কথা ও ভাবনায়,
” নাচের অনুষ্ঠান কিংবা পূজো প্যান্ডেল হয় একটা থিম বা ভাবনাকে কেন্দ্র করে, একটা সাহিত্যের অনুষ্ঠানও ভাবনা বা থিম নির্ভর হতে পারে এবং হওয়া উচিতও বটে.. এটাই আমরা মনে করেছি এবং সেই ভাবনা থেকেই এবারের থীম বা বিষয় ছিলো সমাজের সাধারণ মানুষ থেকে উঠে আসা সফল কিছু মানুষদের নিয়ে “ওঁরা কাজ করে” শীর্ষক ভাবনার..! উল্লেখ্য যে বিগত বছরে আমাদের মঞ্চ ভাবনা ছিল, কবিপাঠকএবংকবিতারবিষয়.. এই ভাবনাকে সামনে রেখে আমরা মঞ্চে সম্মান জানিয়েছিলাম কবি এবং পাঠকদের…। কবিতার বিষয় বলতে, কবি/সাহিত্যিকরা যাদের নিয়ে মেতে ওঠে সৃষ্টির পরম আনন্দে..যেমন, বাজারের মাছওলা, সবজিওলা, রিক্সাচালক, শ্রমিক এবং ট্রান্সজেন্ডার….. আমরা সবাইকে সম্মান জানিয়েছিলাম প্রথম বর্ষে…। পরের দ্বিতীয় বছরে আমাদের ভাবনা ছিল, ‘তুমিওনারী’…। এই ভাবনায় আমরা মঞ্চে সম্মান জানিয়েছি আমাদের সমাজের মানবিক দিক থেকে অবহেলিত ট্রান্সজেন্ডার ও যৌনকর্মীদের…। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতির সর্বভারতীয় সভাপতি শ্রীমতী ভারতী ঘোষ মহাশয়া..। তাই এবারের মহালয়ার দিন আমাদের মঞ্চ ভাবনা– ‘ওরাকাজকরে’…। এই ভাবনাকে সার্থক করতে এবার মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন, বাঁকুড়া থেকে অপরাজেয় এক নারী.. সুপ্রিয়া পাল বৃষ্টি…। যিনি ভূগোলে এম,এস সি ; বি, এড করেও বাস্তবতার নিরিখে চাকরী না পেয়ে ট্রেনে হকারি করেন..। তিনি কাজ করেন অবিরাম জীবনধারণের তাগিদে। আমার মতে, এই সমাজকে তিনি উপহার দিয়েছেন চরম এক লজ্জা। তিনি আগামী প্রজন্মের অনুপ্রেরণা, আমাদের চোখে এই সমাজের বীরাঙ্গনা…। এবার মঞ্চে আরও উপস্থিত ছিলেন কর্ণেল আবির ঘোষ। তিনি কাজ করেন দেশকে রক্ষা করার জন্য ভারতের অতন্দ্র প্রহরী হয়ে সীমান্তে..। আবির বাবু বিগত কার্গিল যুদ্ধের অন্যতম নায়ক ছিলেন। তাঁকে সম্মান জানাতে পেরে আমরা সম্বৃদ্ধ হয়েছি…! চেষ্টা করেছি আমাদের মঞ্চ ভাবনা ‘ওরাকাজ_করে’ অনুযায়ী এবারের অনুষ্ঠানটিকে উপস্থাপন করতে…!”

অনন্য ভাবনার চোখ সাহিত্য পরিবারের এই প্রাক পূজো মিলনমেলা ও প্রকাশ উৎসব অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্বনামধন্য সাহিত্যিক শ্রী নলিনী বেরা মহাশয়, প্রধান অতিথি ছিলেন আনন্দ প্রকাশনির কর্ণধার শ্রী আনন্দ মণ্ডল মহাশয়, ছিলেন বিখ্যাত সাহিত্যিক শ্রী পৃথ্বীরাজ সেন মহাশয়, আরও ছিলেন তরুণ কবি সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক শ্রী সৌগত রাণা কবিয়াল মহাশয় প্রমুখ বিজ্ঞ মানুষেরা…।

সময় শ্রদ্ধা জানায় সেই কর্মকেই, যে কর্মে মানুষের কথা লেখা থাকে…! রজত পুরোকায়স্থ মহাশয়ের ভাবনায় অসাধারণ ভাবে উজ্জীবিত এক মঞ্চ হয়ে ওঠে গত ২৫ সে সেপ্টেম্বরে কলকাতার বুকে কৃষ্ণপদ ঘোষ মেমোরিয়াল ট্রাষ্ট হলের চোখ সাহিত্য মঞ্চ.. যেখানে নবীন প্রবীণ লেখকগন নিজেদের ভাবনা নিয়ে কথা বলেন, আর চোখ পরিবারের ভাবনায় তাদের মুখোমুখি ছাপায় বোনা সেই চরিত্রগুলো ভেসে ওঠে চোখ সাহিত্য পরিবারের উৎসব বারান্দায়…! অনুষ্ঠান মঞ্চের আলোয় শিশু সাহিত্যিক হিসেবে জ্বলে উঠে দশ বছর বয়সের দেভাংশ চ্যাটার্জি.. মঞ্চে দেবী দুর্গার প্রতিরুপ হয়ে ওঠেন বাঁকুড়ার ট্রেনে নিজের জীবিকার তাগিদে একজন সাধারণ মানুষ থেকে কর্ম-শিল্পী হয়ে ওঠা আমাদের সমাজের চোখের অনাহুত বিবেক গ্লানি নিয়ে ভূগোলের এম এসসি, বি এড সুপ্রিয়া পাল বৃষ্টি…! মঞ্চে উপবিষ্ট সকল মানুষ অহংকারে তাদের দেশের এক কৃতি মানুষ কর্ণেল আবীর ঘোষকে অভিবাদন করে অবচেতন ভাবেই স্যালুট করে জানিয়ে দেয় যে যথাযোগ্য সন্মানে কখনই বাংলার সাহিত্য কর্মীরা কৃপণ নয়… নব ধারায় আগামী ভারতকে তুলে ধরতে কণ্যা স্নেহে মাতৃ দৃষ্টিতে ভালোবাসা আর আশির্বাদের ছবিতে ফুটে ওঠে ন্যাশানাল গেমসে চারটি স্বর্ণপদক প্রাপ্ত সায়ন্তনী সাহা মণ্ডল’…!

কলকাতার কৃষ্ণপদ ঘোষ মেমোরিয়াল ট্রাষ্ট হলের সভাগৃহে চোখ সাহিত্য পত্রিকার এই অনুষ্ঠানে অসাধারণ সঞ্চালনা করেন প্রবীণ শিক্ষক শ্রী দেবাশিস পাল মহাশয় এবং শ্রীমতী স্বাগতাপাল মহাশয়া…।
“চোখ সাহিত্য পরিবার” এর এডমিল শ্রীমতী মৌমিতা চ্যাটার্জী মহাশয়া এবং শ্রী পঙ্কজ দত্ত মহাশয়ের আন্তরিক পরিচালনায়, পত্রিকার সম্পাদক শ্রী রজত পুরকায়স্থ মহাশয়ের অসাধারণ আথিতেয়তায় মঞ্চে
সম্মান জানানো হয় এই সময়ের প্রতিভাবান একঝাঁক কবি সাহিত্যিককে..প্রদান করা হয় সম্মাননা স্বারক ও সনদ পত্র… ।
মঞ্চে সম্মান জানানো হয় ন্যাশানাল গেমসে চারটি স্বর্ণপদক প্রাপ্ত সায়ন্তনী সাহা মণ্ডল কে…! নাট্যকার বিশ্বজিৎ পুরকায়স্থ স্মৃতি সাহিত্য সম্মান প্রদান করা হয় কবি শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল মহাশয়, কবি মধুছন্দা গাঙ্গুলী মহাশয়া, কবি সজল পোদ্দার মহাশয়কে। চোখ সাহিত্য সম্মান -২০২২ প্রদান করা হয় কবি বৃন্দাবন দাস মহাশয়, কবি অসীমবদাস মহাশয়, কবি মহাদেব নস্কর মহাশয়কে…। সেরা পাঠক-২০২২ প্রদান করা হয় অশোক রায় মহাশয়কে…। বীরাঙ্গনা সম্মান -২০২২ প্রদান করা হয় সুপ্রিয়া পাল বৃষ্টি মহাশয়াকে.. ।
অনুষ্ঠানে আরও যে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে, প্রাত্যহিক কবিতা পাঠের আসর এর শিল্পী কবি সুনীল বণিক মহাশয়, শ্রদ্ধেয়া মাধুরী শর্মা মাহাশয়া এবং বর্ণালী মিস্ত্রী মাহাশয়াকে..।

বর্ণাঢ্য এই আয়োজনে মোড়ক উন্মোচন করা হয় কবি রজত পুরকায়স্থ সম্পাদিত চোখ সাহিত্য পত্রিকার পূজো সংখ্যা ও চোখ কাব্য সংকলনের..। এছাড়াও প্রকাশ করা হয় সাতটি একক গ্রন্থ..যথাক্রমে, কবি কৃষ্ণা গুহ’র “নির্বাচিত কবিতা”, কবি বিকাশ গুঁইয়ের “প্রেম ও প্রকৃতি”, কবি সিদ্ধার্থ সেন এবং ডাক্তার লিপিকা সেনের “রং ও তুলি”, কবি কৃষ্ণগোপাল ঘোষের “প্রথম প্রেম”, কবি ড: শিপ্রা মুখোপাধ্যায় হালদারের “পূর্বরাগের প্রণয়লিপি”, বিষ্ময় বালক দেভাংশ চ্যাটার্জির “A Tide Of Tales” এবং রজত পুরকায়স্থের “রাজার কলম হোক ক্রীতদাস”…।

মেধা মননশীলতায় বাংলা সাহিত্য সবসময় দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে প্রধান পঙক্তির সমার্থক..সেই অর্থে আধুনিক সাহিত্যে সত্য এবং সুন্দরকে পাশাপাশি হাত ধরে এগিয়ে নিয়ে যেতে চোখ সাহিত্য পরিবারের মতন এমন ফেরিওয়ালা চাই যাদের হাত ধরে বাংলা সাহিত্য এগিয়ে যাবে তার সঠিক ভবিষ্যতের দিকে…!
জয় হোক শুদ্ধ সাহিত্যের..জয় হোক মানুষের…!

সৌগত রাণা কবিয়াল—
— কবি সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক

Share This
Categories
রিভিউ

চার দেয়ালের ঘেরাটোপের বাইরে উন্মুক্ত আকাশের সন্ধ্যা আলোয় বৃষ্টিস্নাত হয়ে লীনা প্রকাশনীর এক ভিন্নমাত্রার আয়োজনে সুরে-স্বরে মুখরিত হয়ে উঠলো কলকাতার মোহর কুঞ্জের সবুজবীথি।।।।

আলো এসে ভরিয়ে দিচ্ছে কাশ ভোরের সকাল..মাতৃ পক্ষের আগমনী সুরে প্রকৃতি হয়ে কথা বলছে তরুণ কিশোরের মনের ভাষা..বাংলার সাহিত্য পাড়ায়ও তার ছোঁয়া অদ্ভুত এক উজ্জ্বল সুখের কথা হয়ে ফুটে উঠছে আবীর রাঙা সব উৎসবে…!

লীনা প্রকাশনীর আয়োজনে এমনই এক অসাধারণ ভালোবাসা ও বন্ধনে সাহিত্যের মিলনমেলার প্রাণময় এক উৎসবে পরিনত হলো কলকাতার মোহর কুঞ্জ প্রাঙ্গণে গত ২৪ শে সেপ্টেম্বরের সুন্দর বিকেলের রোদ- বৃষ্টির সন্ধিক্ষণে…!

প্রকাশনীর সম্পাদক কবি বাণীব্রত সরকারের মোহরকুঞ্জে লীনা পাবলিকেশনের প্রাক শারদ আড্ডায় মিলিত হলেন এই সময়ের নবীন প্রবীণ কবি সাহিত্যিকগন.. উন্মুক্ত মঞ্চে আড্ডা কবিতায় সুর হয়ে ফুটে উঠলো বাংলার চীরচেনা শরৎ উৎসবের আলো…!

লীনা পাবলিকেশন ও কবিতা নীড় সৃজন বাংলা সাহিত্য পরিবারের যৌথ উদ্যোগের খোলা মনের এই পূজোর আড্ডায় কবি সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক শ্রী সৌগত রাণা কবিয়ালের হাত ধরে উন্মোচিত হলো কবি পলাশ দাসের ‘স্বপ্নের ফেরিওয়ালা’ , প্রবীণ সাহিত্যিক কনককান্তি মজুমদারের যে’দিন আমি থাকবো না’, কবি পঞ্চু নস্করের ‘বিচ্ছুরণ’…! অনুষ্ঠানের রোদ মেঘ বৃষ্টির অসাধারণ এই সান্ধ্য আলোয় কবি সাহিত্যিকদের সন্মানিত করতে তাদের হাতে শারদ সন্মাননা তুলে দেন নীনা প্রকাশনীর কর্ণধার কবি বাণীব্রত সরকার ও বাচিক শিল্পী সেঁজুতি বসু….!

অনুষ্ঠানের প্রারম্ভিক ক্ষণ থেকেই আকাশের মেঘ ছায়ার খেলায় বৃষ্টি ভেজা হয়ে প্রাকৃতিক স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে জমে ওঠে প্রাক শারদীয়া এই আড্ডা… চার দেয়ালের ঘেরাটোপের বাইরে ভিন্নমাত্রার এই আয়োজন সুরে-স্বরে মুখরিত হয়ে ওঠে সাহিত্যের প্রেমময় বন্ধনে…রচিত হয় এক স্মৃতি মাধুকরী ক্ষণের…! স্বতস্ফূর্তভাবে আগত সাহিত্যপ্রেমীরা মজলেন সন্ধ্যার সিক্ত সাহিত্য আড্ডায়..সকলের মন শিশুতোষ ভালোবাসাময় হয়ে উঠলো আগত তরুণ প্রবীণের দৃষ্টি দৃশ্য…!

উল্লেখ্য যে, ইতিপূর্বে ৭ই অগাস্ট লীনা প্রকাশনীর বই প্রকাশের জমকালো আয়োজনে কলকাতার কৃষ্ণপদ ঘোষ মেমোরিয়াল হলের সভাগৃহে এক হয়েছিলেন বাংলার বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও সাহিত্য প্রেমী গন..!

মহালয়ার প্রাক সন্ধ্যায় কলকাতার মোহর কুঞ্জের সবুজবীথিতে লীনা প্রকাশনীর আনন্দময় আগমনীর এই মিলনমেলায় কবিতা গানের সাথে প্রকাশ উৎসবের মাধ্যমে প্রকাশ পেলো বাংলা সাহিত্যের চিরকালীন সৌহার্দপূর্ণ সৃষ্টি উল্লাসের..! এভাবেই এগিয়ে যাক বাংলার সাহিত্যের বৈতরণী, সসম্বৃদ্ধ হোক আগামী প্রজন্মের জন্য মূল্যবান ইতিহাস..!

সৌগত রাণা কবিয়াল…
— কবি সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক

Share This