Categories
প্রবন্ধ

১৯শে মে বাংলা ভাষা অন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি : দিলীপ রায় (৯৪৩৩৪৬২৮৫৪)।

আজ ১৯শে মে । ১৯৬১ সালের আজকের দিনে বাংলা মাতৃভাষা অন্দোলনে অসম রাজ্যের শিলচরে ১১ জন তরতাজা প্রাণ দিয়েছিলেন ।
প্রথমেই বলে রাখি অসম রাজ্যে দুটি উপত্যকা — একটি ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা যেমন গুয়াহাটি ও আশপাশ এলাকা এবং অন্যটি হচ্ছে বরাক উপত্যকা । ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় অসম রাজ্যের অন্তর্গত বাংলাভাষী ভূ-খণ্ড বরাক উপত্যকার মধ্যে রয়েছে করিমগঞ্জ, হইলাকান্দি, বদরপুর, শিলচর প্রভৃতি বাঙালি অধ্যুষিত শহর । দেশ বিভাগের আগে অবিভক্ত সিলেট জেলাসহ এই বরাকের অধিবাসী বাঙালিরাই পুরো আসাম প্রদেশের নেতৃত্ব দিয়েছে । আপনাদের হয় তো মনে থাকবে, অবিভক্ত অসম রাজ্য ভেঙে তৈরি হয় ত্রিপুরা, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মেঘালয় ও অরুণাচল প্রদেশ রাজ্য ।
আসামের বরাক উপত্যকার বাংলা ভাষার আন্দোলন ছিল আসাম সরকারের অসমীয়া ভাষাকে সরকারি ভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে । ১৯৬০-৬১ সালের ঘটনা । তৎকালীন আসাম প্রদেশ সরকার সিদ্ধান্ত নিলো, বাংলাভাষী অধ্যুষিত এই অঞ্চলের সরকারি ভাষা হবে অসমীয়া । বরাক উপত্যকার সাধারণ মানুষ হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে এই সিদ্ধান্তকে ভাল চোখে দেখলেন না । তাই বাংলা ভাষার স্বীকৃতির জন্যে তাঁরা মরণপণ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়লেন । এই গণ আন্দোলনের প্রধান উল্লেখযোগ্য ঘটনাটি ঘটে ১৯৬১ সালের ১৯ মে । সেদিন ১১ জন প্রতিবাদীকে শিলচর রেলওয়ে স্টেশনে আসাম পুলিশ গুলি করে হত্যা করে । সেই আন্দোলনের জেরে শেষপর্যন্ত আসাম সরকার পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিল । শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তারপর থেকে ১৯শে মে, বাংলা ভাষা শহীদ দিবস হিসেবে দিনটি পালিত হচ্ছে সারা দেশে ।
এবার পেছনের দিকে আসা যাক । আমরা জানি, পাকিস্তান সরকারের উর্দু ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে বাংলাদেশের রক্তক্ষয়ী ভাষা অন্দোলনের কথা । ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বরকত-সালাম-জব্বারেরা শহিদ হয়েছিলেন বাংলা ভাষার মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখতে । তারপর ধাপে ধাপে বাংলা ভাষার নিরিখে ১৯৭১ সালে জন্ম নিয়েছিল একটি রাষ্ট্র, নাম বাংলাদেশ ।
এবারে আসছি তৎকালীন আসাম রাজ্যের বাঙালী অধ্যুষিত বরাক উপত্যকায় অসমীয়া ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার ঘৃণ্য চক্রান্ত প্রসঙ্গে । ১৯৬০ সালের এপ্রিলে আসাম প্রদেশ কংগ্রেস কমিটিতে অসমীয়া ভাষাকে প্রদেশের একমাত্র সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষণা করার একটি প্রস্তাবের সূচনা হয় । তারপর ১০ অক্টোবর, ১৯৬০ সালের তদানীন্তন আসামের মুখ্যমন্ত্রী বিমলা প্রসাদ চলিহা অসমীয়াকে আসামের একমাত্র সরকারী ভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব উত্থাপন করেন । যদিও উত্তর করিমগঞ্জ-এর বিধায়ক রণেন্দ্রমোহন দাস এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন । কিন্তু তা সত্ত্বেও ২৪ অক্টোবর প্রস্তাবটি বিধানসভায় গৃহীত হয় ।
তারপর অসমীয়া ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার বিরূদ্ধে বরাক উপত্যকার মানুষদের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা শুরু হয় । মানুষ প্রতিবাদে গর্জে ওঠেন । ফলশ্রুতি হিসাবে বরাক উপত্যকার মানুষেরা সরকারের প্রতিবাদ করতে ১৯৬১ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি কাছাড় গণ সংগ্রাম পরিষদ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন । আসাম সরকারের এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে ১৪ এপ্রিল শিলচর, করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দির মানুষেরা সংকল্প দিবস হিসাবে পালন করেন । বরাকের জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করার জন্য গণ সংগ্রাম পরিষদ ২৪ এপ্রিল দীর্ঘ পদযাত্রা শুরু করেছিল । ২মে শেষ হওয়া এই পদযাত্রাটিতে অংশ নেওয়া অন্দোলনকারিরা প্রায় ২০০ মাইল উপত্যকাটির গ্রামে গ্রামে ঘুরে প্রচার চালিয়েছিলেন । পদযাত্রার শেষে সিদ্ধান্ত হয়, ১৯ মে তাঁরা ব্যাপক হরতাল করবেন । ১৯ মে শিলচর, করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দিতে হরতাল ও পিকেটিং শুরু হয় । করিমগঞ্জে আন্দোলনকারীরা সরকারী কার্যালয়, রেলওয়ে স্টেশন, কোর্ট, ইত্যাদিতে পিকেটিং করেন । শিলচরে তারা রেলওয়ে স্টেশনে সত্যাগ্রহ করেছিলেন । বিকেল ৪টার সময়সূচির ট্রেনটির সময় পার হওয়ার পর হরতাল শেষ করার কথা ছিল । ভোর ৫:৪০ এর ট্রেনটির একটিও টিকিট বিক্রি হয়নি । সকালে হরতাল শান্তিপূর্ণ ভাবে অতিবাহিত হয়েছিল । কিন্তু বিকালে স্টেশনে অসম রাইফেল এসে উপস্থিত হয় । বিকেল প্রায় ২:৩৫ নাগাদ স্টেশনে আন্দোলনকারীদেরকে বন্দুক ও লাঠি দিয়ে মারতে শুরু করে । এরপর সাত মিনিটের ভিতর তারা ১৭ রাউণ্ড গুলি আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে চালায় । ন’জন সেদিনই নিহত হয়েছিলেন, দু’জন পরে মারা যান । (নীচে শহীদদের ফটোসহ নাম দেওয়া হলো ) । সবচেয়ে যেটি গুরুত্বপূর্ণ, প্রথম একজন মহিলা ভাষা অন্দোলনে শহীদ হয়েছিলেন, নাম কমলা ভট্টাচার্য ।
সেই আন্দোলনের জেরে শেষ পর্যন্ত আসাম সরকার পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিল এবং আসাম সরকার বরাক উপত্যকায় বাংলাকে সরকারী ভাষা হিসাবে ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছিল । তারপর সেই ঘটনার পর থেকে ১৯শে মে বাংলা ভাষা শহীদ দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে সারা দেশে । উল্লেখ থাকে যে বরাক উপত্যকায় শুধু নয়, পৃথিবীর আপামর বাংলা ভাষাভাষীর মানুষ ১৯ মে কে বাংলা ভাষা শহীদ দিবস হিসাবে পালন করে আসছে যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে । তাই বলা চলে, ১৯৬১ সালের ১৯শে মে বরাক উপত্যকার শিলচরের ভাষা অন্দোলন — বিশ্বের মাতৃভাষা আন্দোলনের অন্যতম দৃষ্টান্ত । (তথ্যসূত্রঃ সংগৃহীত)
১৯শে মে ভাষা দিবসের শহীদদের প্রতি আমার বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি ।

Share This
Categories
রিভিউ

আজ ১৮ মে, ইতিহাসের আজকের এই দিনে যা ঘটেছিল।

আজ ১৮মে। ইতিহাস ঘেটে দেখা যায় বছরের প্রতিটি দিনে ঘটেছে অনেক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। আসুন আজকের দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় একনজরে দেখে নিই।  ইতিহাসের আজকের এই দিনে কী কী ঘটেছিল, কে কে জন্ম নিয়েছিলেন ও মৃত্যুবরণ করেছিলেন——-

 

দিবস—–

 

(ক) আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবস।

 

আজ যাদের জন্মদিন—-

১৯০১ – ভিঞ্চেন্ত দু ভিগ্নেয়াউদ, মার্কিন প্রাণরসায়নবিদ।

১৯০৫ – হেডলি ভেরিটি, পেশাদার ইংরেজ ক্রিকেটার।

১৯১৩ – চার্লস ট্রেনেট, ফরাসি গায়ক ও গীতিকার।

১৯৩৩ – এইচ. ডি. দেব গৌড়া, ভারতীয় রাজনীতিবিদ।

১৯৩৬ – এস এম আহমেদ হুমায়ুন, বাঙালি লেখক ও সাংবাদিক।

১৯৩৭ – জ্যাক স্যানটার, লুক্সেমবার্গ আইনজ্ঞ, রাজনীতিবিদ ও ২২ তম প্রধানমন্ত্রী।

১৯৩৮ – রবীন্দ্রজীবনকার প্রশান্তকুমার পাল।

১৯৪২ – নবি স্টিলেস, সাবেক ইংরেজ ফুটবল খেলোয়াড়।

১৯৪৪ – ডব্লিউ. জি. সেবাল্ড, জার্মান লেখক ও শিক্ষাবিদ।

১৯৫৫ – চও ইউন-ফাট, হংকং অভিনেতা।

১৯৬০ – ইয়ানিক নোয়া, সাবেক ফরাসি টেনিস খেলোয়াড় ও গায়ক।

১৯৭০ – টিনার ফেয়, আমেরিকান অভিনেত্রী, প্রযোজক ও চিত্রনাট্যকার।

১৯৭৫ – জ্যাক জনসন, আমেরিকান গায়ক, গীতিকার ও গিটার।

১৯৭৮ – রিকার্ডো কারভালহো, পর্তুগিজ ফুটবলার।

১৯৮৬ – কেভিন অ্যান্ডারসন, দক্ষিণ আফ্রিকার টেনিস খেলোয়াড়।

১৯৯০ – ইয়ুইয়া ওসাকো, জাপানি ফুটবলার।

 

১৮৫০ – অলিভার হেয়াভিসিডে, ইংরেজ প্রকৌশলী, গণিতবিদ ও পদার্থবিজ্ঞানী।

১৮৬৮ – দ্বিতীয় নিকোলাস (রুশ সম্রাট) রাশিয়ার সর্বশেষ সম্রাট।

১৮৭২ – বারট্রান্ড রাসেল, একজন ইংরেজ বিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক, লেখক এবং সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী।

১৮৭৬ – হারমান মুলার, জার্মান সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ ও ১২ তম চ্যান্সেলর।

১৮৮৩ – ওয়াল্টার গ্রপিউস, জার্মান বংশোদ্ভূত আমেরিকান স্থপতি ও জন এফ কেনেডি ফেডারেল ভবন পরিকল্পাকারী।

১৮৯১ – রুডলফ কারনাপ, জার্মান-আমেরিকান দার্শনিক।

১৮৯৭ – ফ্রাঙ্ক ক্যাপ্রা, ইতালীয় আমেরিকান চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক এবং লেখক।

১০৪৮ – ওমর খৈয়াম, ইরানের কবি, গণিতবেত্তা, দার্শনিক ও জ্যোর্তিবিদ।

 

ইতিহাসের পাতায় আজকের দিনের ঘটনাবলী—-

 

১৯৪৩ – জাতিসংঘ ত্রাণ ও পুনর্বাসন এজেন্সি প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৯৪৫ – ইউরোপে আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে।

১৯৭২ – বাংলা একাডেমী অর্ডার ১৯৭২ জারি করা হয়।

১৯৭৪ – রাজস্থানের পোখরানে ভারতের প্রথম পরমাণু পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরমাণু বিস্ফোরণটিকে স্মাইলিং বুদ্ধ সাংকেতিক নামে অভিহিত করা হয়।

১৯৭৬ – ভারত প্রথম পারমাণবিক বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটায়।

১৯৮০ – চীন আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের সকল পরীক্ষা সম্পন্ন করে।

১৮০৪ – ফ্রান্সের সংসদ সিনেটে এক আইন পাশের মধ্য দিয়ে নেপোলিয়ান বেনাপার্ট সেদেশের সম্রাট হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন।

১৮৩০ – ফ্রান্স আলজেরিয়া দখলের জন্য ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে।

১৮৬০ – আব্রাহাম লিংকন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

১৮৯৯ – হেগে শান্তি সম্মেলনে ২৬টি দেশ আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে বিবাদ মীমাংসায় সম্মত হয়।

১৭৯৮ – লর্ড ওয়েলেসলি গভর্নর জেনারেল হয়ে কলকাতায় আসেন।

 

এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন যারা—-

২০০১ – ডব্লিউ এ এস ওডারল্যান্ড, অস্ট্রেলীয় নাগরিক, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত একমাত্র বিদেশী মুক্তিযোদ্ধা।

২০০৭ – পিয়ের-জিল দ্য জেন, ফরাসি পদার্থবিজ্ঞানী।

২০০৯ – ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণ, শ্রীলঙ্কার বিচ্ছিন্নতাবাদী তামিল দল লিবারেশন টাইগার্স অফ তামিল ইলম এর প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক নেতা।

২০১৫ – হাল্ডোর আসগ্রিমসন, আইসল্যান্ডীয় একাউন্টেন্ট, রাজনীতিবিদ ও ২২ তম প্রধানমন্ত্রী।

১৯০৯ – ইসহাক আলবেনিজ, স্প্যানিশ পিয়ানোবাদক ও সুরকার।

১৯২২ – শার্ল লুই আলফোঁস লাভরঁ, ফরাসি চিকিৎসক।

১৯৩৪ – চারণ কবি মুকুন্দ দাস, স্বদেশী ও অসহযোগ আন্দোলনের সময় বহু স্বদেশী বিপ্লবাত্মক গান ও নাটক রচনা করে খ্যাতি অর্জন করেন।

১৯৪৩ – নীলরতন সরকার, প্রখ্যাত বাঙালি চিকিৎসক ও শিক্ষাবিদ।

১৯৫৬ – মরিস টেট, ইংল্যান্ডের বিখ্যাত আন্তর্জাতিক তারকা ছিলেন।

১৯৮১ – আর্থার ওকনেল, আমেরিকান অভিনেতা।

১৯৮৪ – নলিনীকান্ত সরকার, বাঙালি সাহিত্যিক, সাংবাদিক, কবি, গায়ক, সাহিত্যবোদ্ধা ও ছন্দশ্রী।

১৯৯৯ – জপমালা ঘোষ, বাংলা ছড়ার গানের জনপ্রিয় গায়িকা।

১৮০০ – আলেকজান্ডার সুভোরোভ, রাশিয়ান সাধারণ।

১৮৮৬ – অক্ষয়কুমার দত্ত, বাংলা সাহিত্যের প্রবন্ধকার ও সাংবাদিক।

১৭৯৯ – পিয়ের বিউমার্কাইজ, ফরাসি বহুবিদ্যাজ্ঞ।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবস, জানুন দিনটির গুরুত্ব এবং কেন পালিত হয়।

জাদুঘর এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোর সংগ্রহ সংরক্ষিত থাকে। এতে বৈজ্ঞানিক, শৈল্পিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন বস্তুগুলো সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করা হয় এবং তা জনসমক্ষে প্রদর্শন করা হয়।আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবস ২০২৩-এর থিম হল “জাদুঘরের ভবিষ্যত: পুনরুদ্ধার এবং পুনর্গঠন।”  দিনটিতে জাদুঘরের তাৎপর্য তুলে ধরা হয়— যাতে ছাত্র, শিক্ষক, গবেষক ও পণ্ডিত ব্যক্তিদের গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি হয় এবং নাগরিকরা তার আপন ঐতিহ্য সম্পর্কে ভাবতে শেখেন।ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অব মিউজিয়ামসের আহ্বানে ১৯৭৭ সালে প্রথম বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হয়। সেই থেকে প্রতিবছর দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অব মিউজিয়ামস (আইসিওএম)। এ উপমহাদেশে জাদুঘরের ধারণাটি এসেছে ব্রিটিশদের মাধ্যমে। ভারতীয় এশিয়াটিক সোসাইটির সদস্যরা এ অঞ্চলের জাতিতাত্ত্বিক, প্রত্নতাত্ত্বিক, ভূ-তাত্ত্বিক এবং প্রাণী বিষয়ক নমুনা সংগ্রহ করে সেগুলোকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের ব্যাপারে উদ্যোগী হন। লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস, যিনি এশিয়াটিক সোসাইটির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন— তিনি কলকাতার পার্ক স্ট্রিটে জমির ব্যবস্থা করেন। ১৮০৮ সালে সেখানে জাদুঘরের জন্য ভবন নির্মাণ শেষ হয়। এ প্রক্রিয়ায় ১৮১৪ সালে উপমহাদেশের প্রথম জাদুঘর ‘এশিয়াটিক সোসাইটি মিউজিয়াম’-এর জন্ম ও প্রতিষ্ঠা হয়।

 

ইন্টারন্যাশনাল মিউজিয়াম ডে (আইএমডি) হল একটি আন্তর্জাতিক দিন যা প্রতি বছর ১৮ মে ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অফ মিউজিয়ামস (আইসিওএম) দ্বারা সমন্বিত হয়।  ইভেন্টটি একটি নির্দিষ্ট থিম হাইলাইট করে যা প্রতি বছর পরিবর্তিত হয় যা একটি প্রাসঙ্গিক থিম বা আন্তর্জাতিকভাবে যাদুঘরের মুখোমুখি সমস্যা প্রতিফলিত করে।  IMD জাদুঘর পেশাদারদের জনসাধারণের সাথে দেখা করার এবং জাদুঘরগুলি যে চ্যালেঞ্জগুলির মুখোমুখি হয় সে সম্পর্কে তাদের সতর্ক করার এবং সমাজের উন্নয়নে যাদুঘরগুলির ভূমিকা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করার সুযোগ প্রদান করে৷  এটি যাদুঘরের পেশাদারদের মধ্যে কথোপকথনের প্রচারও করে।

 

ইতিহাস—-

 

প্রথম আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবসটি ১৯৭৭ সালে সংঘটিত হয়েছিল, ICOM দ্বারা সমন্বিত।  “জাদুঘরগুলির সৃজনশীল আকাঙ্খা এবং প্রচেষ্টাকে আরও একীভূত করার এবং তাদের কার্যকলাপের প্রতি বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করার লক্ষ্যে” একটি বার্ষিক ইভেন্ট তৈরি করার জন্য ICOM দ্বারা একটি রেজোলিউশন গ্রহণের পরে IMD প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
প্রতি বছর, বিশ্বজুড়ে জাদুঘরগুলির ভূমিকা প্রচারের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে জাদুঘরগুলিকে IMD-এ অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়।  তারা বার্ষিক থিম সম্পর্কিত ইভেন্ট এবং কার্যক্রমের মাধ্যমে তা করে।  ইভেন্টের জন্য একটি বার্ষিক থিম প্রথম ১৯৯২ সালে গৃহীত হয়েছিল। ICOM থেকে একটি আন্তর্জাতিক পোস্টার প্রথম ১৯৯৭ সালে তৈরি করা হয়েছিল এবং সেই বছরে ২৮টি দেশ অভিযোজিত হয়েছিল।  ২০০৯ সালে, আইএমডি ৯০ টিরও বেশি দেশে ২০০০০টি জাদুঘরে ইভেন্টের আয়োজনে অংশগ্রহণের জন্য আকর্ষণ করেছিল।  ২০১০ সালে, ৯৮টি দেশ উদযাপনে অংশগ্রহণ করেছিল, ২০১১ সালে ১০০টি দেশ এবং ২০১২ সালে ১২৯টি দেশে ৩০০০০টি জাদুঘর। ২০১১ সালে, অফিসিয়াল IMD পোস্টারটি 37টি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছিল।  ২০১৪ সাল নাগাদ, ১৪০টি দেশের ৩৫০০০টি জাদুঘর IMD-তে অংশ নিচ্ছিল।

 

থিম–

 

২০২৩ – জাদুঘর, স্থায়িত্ব এবং সুস্থতা

২০২২ – দ্য পাওয়ার অফ মিউজিয়াম

২০২১ – জাদুঘরগুলির ভবিষ্যত: পুনরুদ্ধার করুন এবং পুনরায় কল্পনা করুন

২০২০ – সমতার জন্য যাদুঘর: বৈচিত্র্য এবং অন্তর্ভুক্তি

২০১৯ – সংস্কৃতি কেন্দ্র হিসাবে যাদুঘর: ঐতিহ্যের ভবিষ্যত

২০১৮ – হাইপারসংযুক্ত মিউজিয়াম: নতুন পদ্ধতি, নতুন জনসাধারণ

২০১৭ – জাদুঘর এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ইতিহাস: যাদুঘরে অকথ্য বলা

২০১৬ – জাদুঘর এবং সাংস্কৃতিক ল্যান্ডস্কেপ

২০১৫ – একটি টেকসই সমাজের জন্য জাদুঘর

২০১৪ – মিউজিয়ামের সংগ্রহগুলি সংযোগ তৈরি করে৷

২০১৩ – জাদুঘর (স্মৃতি + সৃজনশীলতা = সামাজিক পরিবর্তন)

২০১২ – পরিবর্তিত বিশ্বে জাদুঘর।  নতুন চ্যালেঞ্জ, নতুন অনুপ্রেরণা

২০১১ – মিউজিয়াম এবং স্মৃতি: বস্তুগুলি আপনার গল্প বলে৷

২০১০ – সামাজিক সম্প্রীতির জন্য যাদুঘর

২০০৯ – জাদুঘর এবং পর্যটন

২০০৮ – সামাজিক পরিবর্তন ও উন্নয়নের এজেন্ট হিসেবে জাদুঘর

২০০৭ – জাদুঘর এবং সর্বজনীন ঐতিহ্য

২০০৬ – জাদুঘর এবং তরুণরা

২০০৫ – সংস্কৃতির সেতুবন্ধন জাদুঘর

২০০৪ – জাদুঘর এবং অধরা ঐতিহ্য (ইনট্যাঞ্জিবল কালচারাল হেরিটেজ)

২০০৩ – জাদুঘর এবং বন্ধুরা

২০০২ – জাদুঘর এবং বিশ্বায়ন

২০০১ – জাদুঘর: সম্প্রদায় নির্মাণ

২০০০ – সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতির জন্য যাদুঘর

১৯৯৯ – আবিষ্কারের আনন্দ

১৯৯৮-১৯৯৭ – সাংস্কৃতিক সম্পত্তির অবৈধ ট্রাফিকের বিরুদ্ধে লড়াই

১৯৯৬ – আজকে আগামীকালের জন্য সংগ্রহ করা হচ্ছে

১৯৯৫ – প্রতিক্রিয়া এবং দায়িত্ব

১৯৯৪ – জাদুঘরে পর্দার আড়ালে

১৯৯৩ – জাদুঘর এবং আদিবাসীরা

১৯৯২ – জাদুঘর এবং পরিবেশ

 

বিশ্বব্যাপী আইকনিক জাদুঘরের তালিকা—

 

ল্যুভর মিউজিয়াম, প্যারিস

স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউশন, ওয়াশিংটন, ডিসি

ব্রিটিশ মিউজিয়াম, লন্ডন

মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অফ আর্ট, নিউ ইয়র্ক

ভ্যাটিকান মিউজিয়াম, ভ্যাটিকান সিটি

অ্যাক্রোপলিস মিউজিয়াম, এথেন্স

জাতীয় প্রাসাদ যাদুঘর, তাইপেই

হারমিটেজ মিউজিয়াম, সেন্ট পিটার্সবার্গ

ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ নৃবিজ্ঞান, মেক্সিকো সিটি

উফিজি গ্যালারি, ফ্লোরেন্স

 

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

 

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সমাজ দিবস, জানুন দিনটির গুরুত্ব এবং কেন পালিত হয়।

বিশ্ব টেলিকমিউনিকেশন অ্যান্ড ইনফরমেশন সোসাইটি ডে (ডব্লিউটিআইএসডি) এর উদ্দেশ্য হল ইন্টারনেট এবং অন্যান্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির (আইসিটি) ব্যবহার সমাজ ও অর্থনীতিতে এবং সেইসাথে সেতু করার উপায়গুলি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করা।  ওয়ার্ল্ড টেলিকমিউনিকেশন অ্যান্ড ইনফরমেশন সোসাইটি দিবস হল একটি আন্তর্জাতিক দিন যা ২০০৬ সালের নভেম্বরে তুরস্কের আন্টালিয়াতে ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন প্লেনিপোটেনশিয়ারি কনফারেন্স দ্বারা ঘোষিত হয়, যা প্রতি বছর ১৭ মে পালিত হয়।

 

 ইতিহাস—

 

 বিশ্ব টেলিযোগাযোগ দিবস–

 

১৮৬৫ সালের ১৭ মে আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠার স্মরণে দিনটি আগে ‘বিশ্ব টেলিযোগাযোগ দিবস’ হিসেবে পরিচিত ছিল। এটি ১৯৭৩ সালে মালাগা-টোরেমোলিনোসে প্লেনিপোটেনশিয়ারি কনফারেন্স দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
এই দিনটির মূল উদ্দেশ্য ছিল ইন্টারনেট এবং নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে আনা সামাজিক পরিবর্তন সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধি করা।  এটি ডিজিটাল বিভাজন কমাতে সাহায্য করাও লক্ষ্য করে।

 

 বিশ্ব তথ্য সমাজ দিবস–

ওয়ার্ল্ড ইনফরমেশন সোসাইটি দিবস ছিল একটি আন্তর্জাতিক দিবস যা ২০০৫ সালে তিউনিস-এ ইনফরমেশন সোসাইটির ওয়ার্ল্ড সামিটের পর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের রেজোলিউশন দ্বারা ১৭ মে ঘোষণা করা হয়েছিল।

 

বিশ্ব তথ্য সমাজ দিবস একটি আন্তর্জাতিক দিবস। তিউনিসে অনুষ্ঠিত ২০০৫ তথ্য সমাজের উপর বিশ্ব সম্মেলনের পর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত একটি প্রস্তাবনার মাধ্যমে ১৭ মে এই দিবস হিবেসে ঘোষণা করা হয়। দিবসটি পূর্বে ১৭ মে, ১৮৬৫ সালে, আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠার স্মৃতিরক্ষা বিশ্ব টেলিযোগাযোগ দিবস হিসেবে পরিচিত ছিল। ১৯৭৩ সালে মালাগা-টরেমোলিনসে অয়োজিত এক পূর্ণক্ষমতাপ্রাপ্ত সম্মেলনে প্রবর্তিত হয়।
এই দিবসের প্রধান প্রতিপাদ্য ইন্টারনেট এবং নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে সঙ্ঘটিত সামাজিক পরিবর্তনের বৈশ্বিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা। এছাড়াও ডিজিটাল ডিভাইড হ্রাস করার লক্ষ্যেও কাজ করে থাকে।

 বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সমাজ দিবস–

২০০৬ সালের নভেম্বরে, তুরস্কের আন্টালিয়ায় আইটিইউ প্লেনিপোটেনশিয়ারি কনফারেন্সে ১৭ মে বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সোসাইটি দিবস হিসাবে উভয় ঘটনা উদযাপন করার সিদ্ধান্ত নেয়।

 

হালনাগাদ রেজোলিউশন ৬৮ সদস্য রাষ্ট্র এবং সেক্টর সদস্যদের প্রতি বছর উপযুক্ত জাতীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে দিবসটি উদযাপন করার জন্য আমন্ত্রণ জানায়:

কাউন্সিল দ্বারা গৃহীত থিমের উপর উদ্দীপক প্রতিফলন এবং ধারণা বিনিময়

সমাজের সমস্ত অংশীদারদের সাথে থিমের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিতর্ক

থিমের অন্তর্নিহিত বিষয়গুলির উপর জাতীয় আলোচনার প্রতিফলন করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা, যা আইটিইউ এবং এর বাকি সদস্যদের কাছে ফেরত দেওয়া হবে

 

আগের সব বিষয়—-

 

১৯৬৯ ইউনিয়নের ভূমিকা ও কার্যক্রম।

১৯৭০ টেলিযোগাযোগ এবং প্রশিক্ষণ।

১৯৭১ মহাকাশ ও টেলিযোগাযোগ।

১৯৭২ বিশ্ব টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক।

১৯৭৩ আন্তর্জাতিক সহযোগিতা।

১৯৭৪ টেলিযোগাযোগ এবং পরিবহন।

১৯৭৫ টেলিযোগাযোগ এবং আবহাওয়াবিদ্যা।

১৯৭৬ টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য।

১৯৭৭ টেলিযোগাযোগ এবং উন্নয়ন।

১৯৭৮ রেডিও যোগাযোগ।

১৯৭৯ মানবজাতির সেবায় টেলিযোগাযোগ।

১৯৮০ গ্রামীণ টেলিকম।

১৯৮১ টেলিযোগাযোগ এবং স্বাস্থ্য।

১৯৮২ আন্তর্জাতিক সহযোগিতা।

১৯৮৩ এক বিশ্ব, এক নেটওয়ার্ক।

১৯৮৪ টেলিকমিউনিকেশন: একটি বিস্তৃত দৃষ্টি।

১৯৮৫ টেলিকম উন্নয়নের জন্য ভাল।

১৯৮৬ পার্টনার অন দ্য মুভ।

১৯৮৭ টেলিকম সমস্ত দেশে পরিষেবা দেয়।

১৯৮৮ ইলেকট্রনিক যুগে প্রযুক্তিগত জ্ঞানের বিস্তার।

১৯৮৯ আন্তর্জাতিক সহযোগিতা।

১৯৯০ টেলিযোগাযোগ এবং শিল্প উন্নয়ন।

১৯৯১ টেলিযোগাযোগ এবং মানব নিরাপত্তা।

১৯৯২ টেলিযোগাযোগ এবং মহাকাশ: Xintiandi।

১৯৯৩ টেলিযোগাযোগ এবং মানব উন্নয়ন।

১৯৯৪ টেলিযোগাযোগ এবং সংস্কৃতি।

১৯৯৫ টেলিযোগাযোগ এবং পরিবেশ।

১৯৯৬ টেলিযোগাযোগ এবং ক্রীড়া।

১৯৯৭ টেলিযোগাযোগ এবং মানবিক সহায়তা।

১৯৯৮ টেলিকম ট্রেড।

১৯৯৯ ই-কমার্স।

২০০০ মোবাইল কমিউনিকেশন।

২০০১ ইন্টারনেট: চ্যালেঞ্জ, সুযোগ এবং সম্ভাবনা।

২০০২ মানুষকে ডিজিটাল ডিভাইড ব্রিজ করতে সাহায্য করা।

২০০৩ সমস্ত মানবজাতিকে যোগাযোগে সহায়তা করা।

২০০৪ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি: টেকসই উন্নয়নের পথ।

২০০৫ একটি ন্যায্য তথ্য সোসাইটি তৈরি করতে পদক্ষেপ নিন।

২০০৬ অগ্রসর বিশ্ব সাইবার নিরাপত্তা।

২০০৭ আইসিটি পরবর্তী প্রজন্মকে উপকৃত করুক।

২০০৮ আইসিটি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উপকার করতে দিন। এবং সমস্ত লোককে আইসিটি সুযোগগুলি উপভোগ করতে দিন।

২০০৯ শিশুদের অনলাইন নিরাপত্তা রক্ষা করুন।

২০১০ আইসিটি শহুরে জীবনকে উন্নত করে।

২০১১ আইসিটি গ্রামীণ জীবনকে উন্নত করে।

২০১২ তথ্য যোগাযোগ এবং মহিলা।

২০১৩ আইসিটি এবং সড়ক নিরাপত্তার উন্নতি।

২০১৪ ব্রডব্যান্ড টেকসই উন্নয়ন প্রচার করে।

২০১৫ টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি: উদ্ভাবনের চালিকাশক্তি।

২০১৬ আইসিটি উদ্যোক্তা প্রচার এবং সামাজিক প্রভাব প্রসারিত করুন।

২০১৭ বিগ ডেটা বিকাশ করুন এবং প্রভাব বিস্তার করুন।

২০১৮ সমস্ত মানবজাতির সুবিধার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঠিক ব্যবহার প্রচার করুন।

২০১৯ মানককরণের ব্যবধানকে সংকুচিত করা।

২০২০ সংযোগ লক্ষ্য ২০৩০: টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের প্রচারের জন্য ICT ব্যবহার করা।

২০২১ চ্যালেঞ্জিং সময়ে ডিজিটাল রূপান্তরকে ত্বরান্বিত করা।

২০২২ বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং আবার স্বাস্থ্য।

 

উল্লেখ্য,  ইন্টারনেট এবং অন্যান্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির (ICT) ব্যবহার সমাজ ও অর্থনীতিতে এবং সেইসাথে ডিজিটাল বিভাজন দূর করার উপায়গুলি নিয়ে আসতে পারে সেই সম্ভাবনার সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করার জন্য প্রতি বছর বিশ্ব টেলিকমিউনিকেশন অ্যান্ড ইনফরমেশন সোসাইটি দিবস পালিত হয়।

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

ডিজিটাল যুগে শিক্ষা ও জ্ঞানের হালহকিকৎ : দিলীপ রায়।

আমরা জানি, প্রাত্যহিক জীবনের চালিকা শক্তি হচ্ছে জ্ঞান ও শিক্ষা । এখন দেখা যাক জ্ঞান ও শিক্ষা বলতে আমরা কী বুঝি  ?  শিক্ষার মধ্য দিয়ে মানুষের অন্তনির্হিত শক্তি ও সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত ও প্রস্ফুটিত হয় এবং জ্ঞান অর্জন ও জ্ঞান সৃষ্টির পথ উন্মুক্ত হয় । এই জ্ঞানের মাধ্যমে মানুষ  তার সমাজকেও সমৃদ্ধ করে । শিক্ষা ব্যক্তি ও সমষ্টির জ্ঞান, সৃজনশীলতা, কর্মদক্ষতা, চরিত্র ও মানসিক শক্তির বিকাশ ঘটায় । আবার অনেকের মতে, বিদ্যা হলো একটা পুস্তকে আবদ্ধ, একটি জ্ঞানের শিখা মাত্র । আর জ্ঞান হলো সেই শিখা থেকে অসংখ্য শিখা হয়ে আলোকিত হওয়ার উপায় । শিখার আলোয় চারিদিকে আলোকিত হয় । জ্ঞান বলতে কোনো বিষয় সম্পর্কে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক শিক্ষা থাকাকে  বোঝায় । দর্শন শাস্ত্রের জ্ঞান নিয়ে যে অংশটি আলোচনা করে তাকে আবার  জ্ঞানতত্ত্ব  বলে ।
সম্ভবত আমার মতো অনেকের মনেই  প্রশ্ন ওঠাটা স্বাভাবিক,  “প্রযুক্তিঃ আশীর্বাদ না অভিশাপ ?” প্রচণ্ড  গতিতে  প্রযুক্তির  ব্যবহার  বাড়ছে । প্রযুক্তির অকল্পনীয় উন্নয়ন বলতে গেলে সব  কিছুকে সম্ভব করে হাতের নাগালে  এনে দিয়েছে । আগে প্রযুক্তির ব্যবহার কম ছিল । প্রযুক্তির লভ্যতা ও ব্যবহার সীমাবদ্ধ ছিল সমাজের নির্দিষ্ট কিছু মানুষের  মধ্যে । একটা ফোন করতে মানুষ ছুটতেন পিসিও বুথে । আরও কিছুদিন আগে দুই শব্দে মৃত্যু খবর জানাতে ছুটতে হতো দূরের পোস্ট অফিসে,  টেলিগ্রাম করার জন্য ।  মানি অর্ডারের মাধ্যমে গ্রামে গঞ্জে টাকা পাঠানোর রেওয়াজ সেদিনও ছিল । ট্রেনের টিকিট, ব্যাঙ্ক, সিনেমা, বিল মেটানো, সবক্ষেত্রেই লম্বা লাইন  । এমনও দেখা গেছে কলকাতার জিপিও’র পাশে  কয়লা ঘাটের রেলের সংরক্ষিত কাউন্টারে ট্রেনের টিকিট কাটার জন্য রাত থেকে লাইন দিতে হতো । বর্তমানে  পরিস্থিতির নাটকীয় পরিবর্তন  ঘটেছে ।  প্রযুক্তির ব্যবহার মানুষের জীবনযাত্রার ছবিটার আমূল পরিবর্তন করে  দিয়েছে । এইজন্য জেগে উঠেছে “ডিজিটাল ইন্ডিয়া” যার প্রভাব ভৌগলিক সীমানাকেও ছাপিয়ে গেছে ।  জানা যায়, ভারতের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা সারা বিশ্বে  তুলে ধরার লক্ষ্যে এই ডিজিটাল ইন্ডিয়ার কর্মসূচি ।
( ২ )
এখানে উল্লেখ থাকে যে, ডিজিটাইজেশনের দিকে ভারতের দ্রুতগতির  যাত্রা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি পরিকাঠামোর সম্প্রসারণ এবং গত দুই দশক ধরে বিভিন্ন বৈদ্যুতিন সামগ্রী ও ডেটা সহজে নাগালের মধ্যে আসায়  শিক্ষা ক্ষেত্রে   EdTech এর  দ্রুত উত্থান ও গ্রহণযোগ্যতার পথ সুগম হয়েছে । ভারতের  EdTech ক্ষেত্র, বিশ্বের বৃহত্তম শিক্ষাপ্রযুক্তি ক্ষেত্রগুলির অন্যতম । আমরা জানি, EdTech হলো শিক্ষাদান ও শিক্ষা গ্রহণের উন্নয়ন ঘটাতে প্রযুক্তি, অর্থাৎ সফটওয়্যার এবং/অথবা হার্ডওয়্যারের ব্যবহার । EdTech অ্যাপ ডাউনলোড করা স্মার্টফোন এখন শিক্ষার সমার্থক হয়ে উঠেছে । শ্রেণীকক্ষ এখন ইট-সিমেন্টের চৌহদ্দী ছাড়িয়ে ক্লিক এবং পোর্টালে স্থানান্তরিত । দূর-দূরান্তে থাকা, আধুনিক সুবিধাবঞ্চিত পড়ুয়াদের কাছে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে EdTech গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এবং এই ভূমিকার জন্য  আগামীদিনে EdTech ক্ষেত্রের বিকাশ অব্যাহত থাকবে ।
শুধুমাত্র পড়ুয়ারাই  নয়, শিক্ষকরাও আকর্ষণীয় শিক্ষণগত অনুশীলনের মাধ্যমে EdTech থেকে উপকৃত হচ্ছেন, তাঁদের শিক্ষাদান পদ্ধতি আরও উন্নত হচ্ছে । ইন্টারঅ্যাকটিভ হোয়াইটবোর্ড, শিক্ষামূলক ভিডিও, এবং অন্যান্য ডিজিটাল সম্পদের সুবাদে পড়ুয়াদের শিক্ষাগ্রহণ আরও মনোগ্রাহী হয়ে উঠছে ।
ডিজিটাল প্রযুক্তির যুগে জন্ম নেওয়া  ও বেড়ে ওঠা মানুষ ছোটবেলা থেকে ইন্টারনেট এবং কম্পিউটারে সড়গড় । প্রযুক্তির সাথে তাদের হরিহর আত্মা । এরা বড় হয়ে উঠছে স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, কম্পিউটার, ইন্টারনেট, সোশ্যাল নেটওয়ার্ক, ইত্যাদিকে ঘিরে । এখানে বলা বাহুল্য, ডিজিটাল প্রযুক্তি তাদের জীবনের একটা  স্বাভাবিক অঙ্গ । তারা সহজ-সাবলীল্ভাবে ডিজিটাল প্রযুক্তিকে  কাজে লাগায় । তাই এসব তরুন-তরুনীদের মাথা থেকে বের হয় অনেক ধরনের উদ্ভাবন  । তবে এটা ঘটনা, ফোনাফুনি, ইমেল, টেক্সটিং ও টুইটের হাত ধরে এরা বুঁদ হয়ে আছে । বর্তমান প্রজন্মের মানুষেরা সহজেই নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে এবং পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে ।  পুরানো ধ্যান ধারণার বাবা-মায়ের মতো নয়, তারা তাদের কর্ম ও ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে বেশী আগ্রহী ।
ভারতীয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রযুক্তির প্রভাব এখন অনেক সুগভীর । শোনা যায়, এই বছরের জানুয়ারীতে সংখ্যায় প্রায় আট বিলিয়ন লেনদেন হয়েছে ডিজিটাল প্রথায় । প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনার ক্ষেত্রে দ্রুত কীভাবে উন্নয়নশীল দেশগুলির বিকাশে প্রভাব ফেলতে পারে ভারত তার নজিরবিহীন উদাহরণ রেখেছে এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে । ভারত চায় সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতার উপর আধারিত এই কর্মপন্থা অন্য দেশেও অনুসৃত হোক । কারণ এই পন্থা উদ্ভাবনমূলক কর্মসূচীসমূহের আঁতুরঘর হয়ে ওঠার এবং দরিদ্র দেশগুলির উত্থানের চালিকাশক্তি হয়ে ওঠার ক্ষমতা রাখে ।
( ৩ )
এবার আবার আসছি বিদ্যা, শিক্ষা ও জ্ঞান  প্রসঙ্গে । ব্যক্তিগত ও জাতীয় নৈতিক, মানবিক, সাংস্কৃতিক, বিজ্ঞান ভিত্তিক ও সামাজিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করে  শিক্ষার্থীদের মননে, কর্মে ব্যবহারিক জীবনে উদ্দীপন সৃষ্টি করা । সুতরাং মূল্যবোধ তৈরী করা এই মুহূর্তে সময়োচিত ও  আশুকর্তব্য ।  জ্ঞানের উৎস নিয়ে দার্শনিকদের ভিন্ন ভিন্ন মত । উল্লেখযোগ্য চারটি মত —– বুদ্ধিবাদ, অভিজ্ঞতাবাদ, বিচারবাদ ও স্বজ্ঞাবাদ । বুদ্ধিবাদ অনুসারে বুদ্ধিই যথার্থ জ্ঞান লাভের মাধ্যম বা উৎস । ডেকার্ট, লিবনিজ, প্রমুখ দার্শনিক বুদ্ধিবাদের সমর্থক । অভিজ্ঞতাবাদ অনুসারে, ইন্দ্রিয়জ অভিজ্ঞতা জ্ঞানলাভের উৎস । লক, বার্কলি, হিউম প্রমুখ অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক । বিচারবাদ অর্থ — বুদ্ধি ও অভিজ্ঞতার সমন্বয়েই জ্ঞানের উৎপত্তি । কান্ট  এই মতবাদের সমর্থক । স্বজ্ঞা বা সাক্ষাৎ প্রতীতিই যথার্থ জ্ঞান লাভের উৎস । দার্শনিক বার্গসোঁ স্বজ্ঞাবাদের প্রবক্তা ।  অন্যদিকে বিদ্যা প্রাথমিকভাবে বিজ্ঞান, শিক্ষা, দর্শন, বা কোনো বাস্তব জ্ঞানের  ক্ষেত্রে “সঠিক জ্ঞান” বোঝায় যা বিতর্কিত বা খণ্ডন করা অসম্ভব  ! যার অর্থ হলো বিবেচনা করা, সন্ধান করা, জানা, অর্জন করা বা বোঝা । অনেকের মতে বিদ্যা অর্জনের মূল উদ্দেশ্য — মানুষ হওয়া । আবার অনেকে বিদ্যা অর্জন অন্য অর্থে বুঝে থাকেন । আমরা বুঝি বিদ্যা অর্থ শিক্ষা ।  দুটি দৃষ্টিকোন থেকে শিক্ষার উদ্দেশ্যকে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে । একটি ব্যক্তিক, অপরটি সমষ্টিক বা রাষ্ট্রীক দৃষ্টি ভঙ্গি ।  ব্যক্তিক দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়টি একটি পুরাতন প্রবাদ বাক্য- “লেখা পড়া করে যেই / গাড়ি ঘোড়া চড়ে সেই”- দিয়েই সঠিক ভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। কেননা ঐ প্রবাদ বাক্যের মর্মার্থ আমাদের দেশের মানুষের মানসভূমে গভীর ভাবে শিকড় বিস্তৃত করে আছে । মেয়েদের ক্ষেত্রে অনেকের চিন্তা  আরও সংকীর্ণ ও আত্মকেন্দ্রিক । অধিকাংশ বাবা-মা তাদের মেয়েকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠান একটাই উদ্দেশে,  যাতে শিক্ষিত ও ভাল অর্থ উপার্জকারী পাত্র শিকার করা যায় ।  তবে অবশ্যই ব্যতিক্রম আছে । পারিবারিক সংস্কৃতির উপর এটি নির্ভর করে । তা ছাড়া বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে, নারী শিক্ষার কলেবর  ঊর্ধ্বগতি !  কিন্তু ধনী-গরীব নির্বিশেষে এই সংকীর্ণ  চিন্তা পরিহার করার সময় এসেছে । নারীরা  এখন “মহলের” অলঙ্কার ‘মহিলা’ নয়; নারীরা এখন অনেক উন্নত-মনস্ক  মানুষ । দেশের উন্নয়নের নিরিখে  তারাও পুরুষদের সম-মর্যাদার ।  “Education is the method of civilization” “শিক্ষাই সভ্যতার বাহন ।” সভ্যতার অগ্রসরতা মানেই মানব সমাজের বিকাশ । আধুনিক যুগে প্রতি রাষ্ট্রের একটি শিক্ষানীতি থাকে এবং সেই  অনুসারে শিক্ষা পদ্ধতিকে সাজানো হয় । আমাদের দেশেও একাধিক শিক্ষানীতি প্রণীত হয়েছে । আমাদের জাতীয় শিক্ষা নীতির (NEP, 2020)  উদ্দেশ্য হচ্ছে , বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম এবং শিক্ষার্থীদের পাঠ্যক্রমের বিষয়বস্তু হ্রাস করে প্রয়োজনীয় শিক্ষা এবং সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা এবং অভিজ্ঞতা শিক্ষার উপর বৃহত্তর ফোকাস  ।
সর্বশেষে এটাই বলা যায়,  শিক্ষার  অন্যতম  লক্ষ্য হলো জ্ঞানার্জন । জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমেই মানুষের বিভিন্ন দিকে দক্ষতা বাড়ে । মানুষের চিন্তাশক্তির বিকাশলাভ তখনই ঘটে যখন জ্ঞানার্জন সম্ভব  । জ্ঞান  অর্জন করলে  যেমন ব্যক্তির মানসিক  উন্নতিসাধন  হয়  তেমনই ব্যবহারিক  দিকেও প্রভূত উন্নতিসাধন ঘটে । সুতরাং প্রযুক্তির ব্যবহার যতই বাড়ুক,  শিক্ষা ও জ্ঞানের প্রবহমান অটুট  থাকবে  নিজস্ব মহিমায় ।

 

(তথ্যসূত্র ও ছবি: সংগৃহীত ও যোজনা ০২ & ০৫/২৩)

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

একটি শিশুর বেড়ে ওঠা থেকে জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে পরিবারের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

আজ ১৫ মে আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস। ১৯৯৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রসংঘ সাধারণ পরিষদের এক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৫ মে আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস হিসেবে ঘোষিত হয়। রাষ্ট্রসংঘ ১৯৯৪ সালকে আন্তর্জাতিক পরিবার বর্ষ ঘোষণা করেছিল। সমাজ ও ব্যক্তি জীবনে একটি পরিবারের ভূমিকা কি তা আমরা সকালেই জানি। একটি শিশুর বেড়ে ওঠা থেকে জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে পরিবারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। পরিবার এমন একটি সমাজিক বন্ধন যা একটি ব্যক্তিকে জীবনের চলার পথে সমূহ ঝড় ঝঞ্ঝা প্রতিহত করতে সহযোগিতা করে। তাই এ ক্ষেত্রে যৌথ পরিবারের ভূমিকা আরো বেশী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কারন সুখে দুঃখে সকলকে একসঙ্গে না হোক কাউকে না কাউকে পাশে পাওয়া যায়। নিজেদের সুখ দুঃক্ষ গুলো ভাগ করে নেওয়া যায়। কিন্তু দুক্ষের বিষয় হলো এই যে  যতো দিন যাচ্ছে ততই ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র হচ্ছে পরিবার। কর্মের আর ব্যস্ততার দোহাই দিয়ে আমরা নিজেদের ক্রমেই ভাগে ভাগে ভাগ করে নিচ্ছি। বঞ্চিত হচ্ছি, পরিবারের ছোটদের কিংবা নব প্রজন্ম কে বঞ্চিত করছি যৌথ পরিবারের আসল সুখ থেকে।

 

কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে  মনে হচ্ছে একান্নবর্তী কিংবা যৌথ পরিবারের ধারণা যেন এখন ‘সেকেলে’ হয়ে গেছে। বিশেষ করে, শহুরে জীবন ব্যবস্থায় এই ব্যাপারটি চরম আকার ধারণ করেছে। আমরা যেন ছুটে চলেছি  সুখ নামক এক অসুখের পেছনে। একা থাকব একা পরব, আমি আমার সন্তান আমার বৌ এই যেন একটা গন্ডি তৈরি করছি সকলে। কিন্তু ভুলে যাচ্ছি প্রকৃত সুখ কি সেটা ভাবতে বা বুঝতে। যৌথ পরিবারে হয়তো মতগত বিভিন্ন পার্থক্য থাকে, আর এটাই সভাবিক। কিন্তু যৌথ বা একান্নবর্তি পরিবারের মধ্যে যে সুযোগ সুবিধা গুলো থাকে সেটাও আমাদের ভাবতে হবে। কিন্তু দিন দিন জেনে আমরা সেই ভাবনা থেকে সরে আসছি। এর ফলও ভুক্তে হচ্ছে ক্ষুদ্র পরিবার গুলোকে। হঠাৎ অসুখ বিসুখ,  বিপদে আপদে বা বিপর্যয়ে সেই সমস্যা গুলো প্রকট হয়ে ওঠে। আমরা বুঝি না প্রতিটা অনু পরিবারও একদিন বড় হবে। সন্তান বড় হবে, তার বিয়ে হবে, তার সন্তান হবে এই ভাবেই। আর, আমরা কেবল ভাংতেই আছি!!

 

আমরা জানি পরিবার মানেই হচ্ছে মা, বাবা, ভাই, বোন, দাদা, দিদি, দাদু, দিদা, কাকা, কাকি সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে বসবাস।  আমাদের সমাজব্যবস্থায় পরিবারের এই ধারণা প্রচলিত অতীত থেকেই। কিন্তু দিন যতোই যাচ্ছে, আমরা যেন ততোই এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসছি। যেন ক্রমেই ‘স্বামী-স্ত্রী-সন্তানে’ই সীমাবদ্ধ করে ফেলছি আমরা পরিবারকে। সেখানে মা-বাবা কিংবা দাদা-দাদীর কোন স্থান নেই। মা-বাবাকে হয়তো গ্রামের বাড়িতে কাটাতে হচ্ছে নিঃসঙ্গ-অসহায় জীবন। আবার অনেক মা-বাবার ঠিকানা হচ্ছে ‘বৃদ্ধাশ্রম’। এর থেকে বড় যান্ত্রনার অর কি হতে পারে ! অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে একান্নবর্তী কিংবা যৌথ পরিবারের ধারণা যেন এখন ‘সেকেলে’ হয়ে গেছে। বিশেষ করে, শহুরে জীবন ব্যবস্থায় এই ব্যাপারটি চরম আকার ধারণ করেছে।  রক্তের বন্ধন মানেই পারিবারিক বন্ধন। পরিবারের সকল সদস্যের মধ্যে অকৃত্রিম সুসম্পর্ক গড়ে তোলা এবং তা অটুট রাখা আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব। আমাদের চিরায়ত সমাজ ব্যবস্থায় সুন্দর জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হচ্ছে, সুন্দর পারিবারিক বন্ধন। পরিবারের সকল সদস্যের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বন্ধুর মতো হলে পারিবারিক নানা জটিল সমস্যা ও মোকাবেলা করা যায়। সকলের এগিয়ে চলার পথ হয় মসৃণ।  তাই যৌথ পরিবারের ঐতিহ্য ধরে রাখার মানসিকতা সৃষ্টির লক্ষে দিবসটি পালিত হচ্ছে।

 

তবে সুপ্রাচীন কাল থেকে যে যৌথ পরিবারে চিত্র সারাবাংলা জুড়ে ছিল এখন তা অনেকটাই ম্লান। শহুরে জীবনে অনেক আগেই বিলীন হয়েছে যৌথ পরিবারের চিত্র। আগে গ্রামে কিছু যৌথ পরিবার দেখা গেলেও এখন তাও নেই। কেউ ইচ্ছে করে কিংবা কেউ কর্মের তাগিদে ভেঙে দিচ্ছে যৌথ পরিবারের ধারনা গুলো। বংশ মর্যাদা এমনকি ঐতিহ্যের পরিবারেও বিলীন একত্রে বাস করার ইতিহাস। যা দেখতে এক সময় মনুষ অভ্যস্থ ছিল তা এখন স্বপনের মতন। হয়তো সিনেমার পর্দায় কেবল ভেসে ওঠবে গল্পের মতো অতিতের ইতিহাস।

নৃবিজ্ঞানী ম্যালিনোস্কির মতে – “পরিবার হল একটি গোষ্ঠী বা সংগঠন আর বিবাহ হল সন্তান উৎপাদন ও পালনের একটি চুক্তি মাত্র”। সামনার ও কেলারের মতে- ‘পরিবার হল ক্ষুদ্র সামাজিক সংগঠন, যা কমপক্ষে দু’ পুরুষকাল পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে”- এ সংজ্ঞার প্রেক্ষিতে বোঝা যায়, বিবাহপ্রথার আগেও সমাজে পরিবারের সৃষ্টি হয়েছিল- কারণ এ সম্পর্কে আবদ্ধ হওয়ার আগে থেকেই মানুষ দলবদ্ধ জীবনযাত্রা করত যা পারিবারিক জীবনযাপনের স্বাক্ষরবহ। তবে বিভিন্ন সমাজে বিভিন্ন সংস্কৃতির পরিবারের ভূমিকা ভিন্ন ভিন্ন ভাবে পরিলক্ষিত হয়। এর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বৈচিত্র্যপূর্ণ নানামুখী ধারা যে কারণে ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পরিবর্তনের সঙ্গে এর গঠন ও অন্যান্য অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে এবং হচ্ছে। যে শিশুটি ভবিষ্যতের নাগরিক, তার মনোজগত প্রস্তুত হয় পরিবারে। পরিবারের ধারা কেমন, কী ধরনের প্রথা-রীতিনীতি, এ সবের উপর ভিত্তি করে তার জীবনভঙ্গি গড়ে ওঠে। তাই শিশুর সুষ্ঠু পারিবারিক শিক্ষা শৈশব তথা শিশুর মন তথা সাদা কাগজের পাতায় যে ছাপ রাখে, তা ওর পরবর্তী জীবনে অসাধারণ ভূমিকা রাখে। তাই রাষ্ট্র পরিচালনায় যেমন কিছু সংবিধান আছে তেমনি পারিবারিক সংবিধানও থাকা দরকার। যেমন পরিবারের সবার সঙ্গে সদ্ভাব গড়ে তোলা, সাংসারিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা, মিথ্যে না বলা, গুরুজনদের শ্রদ্ধা করা, নির্দিষ্ট সময়ে ঘরে ফেরা, নিজের কাজ নিজে সম্পন্ন করা, মিথ্যেকে ঘৃণা করা এবং মানবিক মূল্যবোধগুলোর চর্চার মাধ্যমে অন্তরকে বিকশিত করা। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, আমাদের সমাজে প্রচলিত যৌথ পরিবারে পারস্পরিক সম্প্রীতি গভীর হয়, অটুট থাকে। অসুখ বিসুখসহ নানা সমস্যায় একে অন্যের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। এতে অনেক বড় সমস্যাও সমাধান হয়ে যায় অতি সহজে। সময়ের তাগিদে যৌথ পরিবার কিংবা পারিবারিক বন্ধন অটুট রাখার বিষয়টি যখন এই সমাজে ক্রমান্বয়ে গুরুত্বহীন হয়ে উঠছে, ঠিক সেই মুহূর্তে আজকের এই আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস পালনের গুরুত্ব অপরিসীম। আসুন আমরা সেই ভাবনাকে বুকে নিয়ে আবার একি সূত্রে আবদ্ধ হই ।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

 

Share This
Categories
রিভিউ

আজ ১৫ মে, ইতিহাসের আজকের এই দিনে যা ঘটেছিল।

আজ ১৫ মে। ইতিহাস ঘেটে দেখা যায় বছরের প্রতিটি দিনে ঘটেছে অনেক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। আসুন আজকের দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় একনজরে দেখে নিই।  ইতিহাসের আজকের এই দিনে কী কী ঘটেছিল, কে কে জন্ম নিয়েছিলেন ও মৃত্যুবরণ করেছিলেন——-

 

দিবস—–

(ক) আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস।

 

আজ যাদের জন্মদিন—-

১৯০২ – রিচার্ড ডি ডেলেই, শিকাগোর মেয়র।

১৯০৩ – মারিয়া রাইখ, জার্মান বংশোদ্ভূত গণিতবিদ এবং প্রত্নতত্ত্ববিদ।

১৯০৫ – (ক)  ভারতীয় বাঙালি লেখক ও সাহিত্যিক শ্যামলকৃষ্ণ ঘোষ।

(খ) জোসেফ কটেন, মার্কিন অভিনেতা।

১৯০৭ – সুখদেব থাপার, ভারতীয় মুক্তিযোদ্ধা।

১৯০৯ – জেমস মেসন, ইংরেজ অভিনেতা।

১৯১৫ – পল স্যামুয়েলসন, বিখ্যাত মার্কিন অর্থনীতিবিদ ও আধুনিক অর্থনীতির জনক।

১৯১৫ – চারু মজুমদার, ভারতীয় বিপ্লবীনেতা।

১৯৩২ – প্রখ্যাত রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী সাগর সেন ।

১৯৩৫ – টেড ডেক্সটার, বিখ্যাত ইংরেজ ক্রিকেটার।

১৯৬৭ – মাধুরী দীক্ষিত, প্রখ্যাত ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী।

১৯৮১ – প্যাট্রিস এভরা, ফরাসি-সেনেগালীয় আন্তর্জাতিক ফুটবলার।

১৮১৭ – দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, ভারতের ধর্মীয় সংস্কারক; রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতা।

১৮৪৮ – ভিক্টর ভাসনেতসভ, রুশ চিত্রশিল্পী।

১৮৫৬ – এল ফ্রাঙ্ক বাম, মার্কিন লেখক।

১৮৫৭ – উইলিয়ামিনা ফ্লেমিং, স্কটল্যান্ডীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী।

১৮৫৯ – পিয়েরে কুরি, নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ফরাসি পদার্থবিজ্ঞানী।

১৮৬২ – আর্থার শ্নিজলার, অস্ট্রীয় নাট্যকার।

১৮৯০ – ক্যাথেরিন অ্যান পোর্টার, মার্কিন লেখক।

১৮৯১ – মিখাইল বুলগাকভ, রুশ লেখক।

১৮৯২ – জিমি ওয়াইল্ড, মুষ্টিযোদ্ধা ।

১৮৯৫ – প্রেসকট বুশ, মার্কিন সিনেটর এবং জর্জ ডব্লিউ বুশের পিতামহ।

১৮৯৫ – উইলিয়াম ডি বায়রন, মার্কিন কংগ্রেসম্যান।

১৮৯৮ – আর্লেট্টি ফরাসি মডেল এবং অভিনয়শিল্পী।

১৭২০ – ম্যাক্সিমিলিয়ান হেল, স্লোভাকীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী।

১৭৭৩ – ক্লেমেন্স ভন মেটরনিখ, জার্মান-অস্ট্রিয়ান রাজনীতিবিদ, রাষ্ট্রনায়ক এবং তার যুগের একজন গুরুত্বপূর্ণ কূটনীতিক।

১৭৮৬ – জেনারেল ডিমিট্রিস প্লাপাউটিস, গ্রিসের স্বাধীনতা যুদ্ধের মহান বিপ্লবী সেনানায়ক।
১৮৯৯ – জিন ইটিন্নি ভ্যালুই, ফরাসি জেনারেল।

১৬০৮ – রেনে গোপিল, ফরাসি ক্যাথলিক ধর্মপ্রচারক।

১৫৬৭ – ক্লাউদিও মোন্তেভের্দি, ইতালীয় গীতিকার।

১৩৯৭ – রাজা সেজোং, কোরিয়ার রাজা।

 

ইতিহাসের পাতায় আজকের দিনের ঘটনাবলী—-

১৯৫১ – দৈনিক সংবাদ-এর আত্মপ্রকাশ।

১৯৫৪ – আদমজি মিলে বাঙালি-অবাঙালি দাঙ্গা। সরকারি হিসাবে নিহত ৪০০, বেসরকারি মতে ৬০০।

১৯৬০ – কঙ্গো প্রজাতন্ত্র স্বাধীন হয়।

১৯৭২ – বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ব্রাজিল।

১৯৮৮ – আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েত সেনা প্রত্যাহার শুরু।

১৮১৮ – বাংলা ভাষার প্রথম সংবাদপত্র বেঙ্গল গেজেট প্রকাশিত হয়।

১৭৭৬ – প্রথম বাষ্প চালিত জাহাজ বানানো হয়েছিলো।

১৬২৫ – অস্ট্রিয়ায় ১৬ বিদ্রোহী কৃষকের ফাঁসি হয়।

১০০৪ – দ্বিতীয় হেনরি ইতালির রাজা হিসেবে অভিষিক্ত।

 

এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন যারা—-

১৯৩৬- স্যার রাজেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়,ভারতের যশস্বী বাঙালী শিল্পপতি।

১৯৯৪ – সুরকার, কণ্ঠশিল্পী ও সঙ্গীত পরিচালক আবদুল আহাদ।

১৮৮৬ – মার্কিন নারী কবি এমিলি ডিকিনসন।

১৮৯৪-ভূদেব মুখোপাধ্যায়, একজন বিশিষ্ট লেখক এবং শিক্ষাবিদ।

১১৫৭ – রুশ যুবরাজ ইউরি ডলগোরুক।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

আজ ‘মা দিবস’, জানব দিনটি পালনের ইতিহাস ও তাৎপর্য।

জীবনের কোনও মুহূর্তেই ‘মা’-কে বাদ দিয়ে ভাবা যায় না। এই একটা শব্দ মনে অনেক শক্তি যোগায়, যা সকল প্রকার বাধাকে কাটিয়ে উঠতে যথেষ্ট। মা ছাড়া জীবন অচল, নিঃসঙ্গ যাত্রায় প্রতিটি মূহূর্ত নির্জন, জীবনে মায়ের প্রয়োজনীয়তা অসীম, মায়ের আশীর্বাদেই কঠিন পরিস্থিতিও হয় সহজ। মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার পৃথিবী জুড়ে পালিত হয় ‘মাদার্স ডে’। যদিও প্রতিটি দিন মায়ের জন্য সমান, কিন্তু মাতৃ দিবস এমন একটি দিন, যেদিন শিশুরা তাদের মায়ের এই একটি দিন বিশেষ তৈরি করতে চায়। এই খুশি উপলক্ষে মাতৃ দিবসে  মা-কে শুভেচ্ছা জানান। এই বছর এই বিশেষ দিনটি পড়েছে ১৪ মে।

 

মা দিবস হল পরিবার বা ব্যক্তির মাকে সম্মান করার একটি দিন, সেইসাথে মাতৃত্ব, মাতৃত্বের বন্ধন এবং সমাজে মায়েদের প্রভাব তা স্মরণ করা । তবে এটি বিশ্বের অনেক অংশে বিভিন্ন দিনে পালিত হয়, সাধারণত মার্চ বা মে মাসে।  এটি অনুরূপ উদযাপনের পরিপূরক, পরিবারের সদস্যদের সম্মান করে, যেমন ফাদার্স ডে, ভাই-বোন দিবস এবং দাদা-দাদি দিবস।

 

ঠিক কবে থেকে পালিত হচ্ছে মাতৃ দিবস? এর ইতিহাসই বা কী? এই সম্পর্কে অনেক ভিন্ন মতামত রয়েছে। একাংশের মতে প্রাচীন গ্রীক এবং রোমানদের মধ্যেই মাকে শ্রদ্ধা জানাতে এই বিশেষ উদযাপনের দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া যায় প্রথম। তারা মাতৃদেবী রিয়া এবং সাইবেলের সম্মানে উৎসবের আয়োজন করে। অন্যদিকে কেউ কেউ বিশ্বাস করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মাতৃদিবস উদযাপন হয় প্রথম। ১৯০৮ সালে মার্কিন কর্মী আনা জার্ভিস প্রথম এই দিন উদযাপন করেন।আনা জার্ভিস তাঁর মা, অ্যান রিভস জার্ভিসের সঙ্গে থাকতেন। এমনকি তিনি কখনও বিয়েও করেননি। মায়ের মৃত্যুর পর, আনা জার্ভিস তাঁরই স্মরণে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন এবং বলা হয় যে এখান থেকেই মাতৃ দিবসের সূচনা হয়েছিল।আনা জার্ভিস ছিলেন একজন শান্তি কর্মী যিনি গৃহযুদ্ধের সময় আহত সৈন্যদের যত্ন নেওয়ার জন্য মাতৃ দিবস ওয়ার্ক ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আনা জার্ভিস তার পরিবার এবং দেশের প্রতি তার মায়ের উত্সর্গ এবং আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে চেয়েছিলেন এই দিনটির মাধ্যমে। আনা জার্ভিসের প্রয়াসেই মাতৃ দিবস বা মাদার’স ডে ১৯১৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সরকারী স্বীকৃতি পায়। সেই থেকে প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার গোটা বিশ্বে মাতৃ দিবস পালিত হয়ে আসছে।

 

বেশিরভাগ দেশেই মা দিবস হল একটি সাম্প্রতিক রীতি, যা উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপে ছুটির দিনটির রীতি অনুসারে চলে এসেছে। যখন অন্যান্য বহু দেশ ও সংস্কৃতি এটিকে গ্রহণ করে তখন এই দিনটিকে একটি অন্য মাত্রা দেওয়া হয়, বিভিন্ন পর্বের (ধর্মীয়, ঐতিহাসিক বা পৌরানিক) সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়, এবং একটি একদমই অন্য দিন বা বিভিন্ন দিনে এটিকে পালন করা হয়।
কিছু কিছু দেশে বহু আগে থেকেই মাতৃত্বের প্রতি উৎসর্গিত কয়েকটি অনুষ্ঠান ছিল এবং সেইসব অনুষ্ঠানে মার্কিন মা দিবসের মত মায়েদের কার্নেশন (গোলাপী ফুল) এবং আরো অন্য উপহার দেওয়া হত।
অনুষ্ঠান পালনের রীতিটি অনেক রকম। অনেক দেশে মা দিবস পালন না করলে এটিকে প্রায় একটি অপরাধ গণ্য করা হয়। অনেক দেশে আবার মা দিবস একটি স্বল্প-পরিচিত উৎসব যা মূলত প্রবাসী মানুষেরা পালন করে থাকে বা বিদেশী সংস্কৃতি হিসাবে মিডিয়া সম্প্রচার করে থাকে (U.K বা যুক্তরাজ্যে দীপাবলী পালনের মত)।

 

যদিও কিছু দেশে মা উদযাপনের বহু-শতাব্দীর ইতিহাস রয়েছে, তবে ছুটির আধুনিক আমেরিকান সংস্করণটি ২০ শতকের গোড়ার দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হয়েছিল অ্যানা জার্ভিসের উদ্যোগে, যিনি প্রথম মা দিবসের পূজার আয়োজন করেছিলেন এবং  ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার গ্রাফটনের অ্যান্ড্রুস মেথডিস্ট এপিস্কোপাল চার্চে উদযাপন, যেটি আজ আন্তর্জাতিক মা দিবসের মন্দির হিসেবে কাজ করে।  এটি হাজার হাজার বছর ধরে বিশ্বজুড়ে বিদ্যমান মা এবং মাতৃত্বের অনেক ঐতিহ্যবাহী উদযাপনের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত নয়, যেমন গ্রীক কাল্ট থেকে সাইবেলে, মাতৃদেবতা রিয়া, হিলারিয়ার রোমান উত্সব, বা অন্যান্য খ্রিস্টান ধর্মযাজক মাদারিং  রবিবার উদযাপন (মাদার চার্চের ছবির সঙ্গে যুক্ত)।  যাইহোক, কিছু দেশে, মা দিবস এখনও এই পুরানো ঐতিহ্যের সমার্থক।  মা দিবসের আমেরিকান সংস্করণটি খুব বেশি বাণিজ্যিকীকরণের জন্য সমালোচিত হয়েছে।  জার্ভিস নিজেই, যিনি একটি লিটারজিকাল পালন হিসাবে উদযাপন শুরু করেছিলেন, এই বাণিজ্যিকতার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন এবং প্রকাশ করেছিলেন যে এটি তার উদ্দেশ্য ছিল না।  এর প্রতিক্রিয়ায়, কনস্ট্যান্স অ্যাডিলেড স্মিথ ইংরেজিভাষী বিশ্বের অন্যান্য অনেক অংশে মাতৃত্বের একটি বিস্তৃত সংজ্ঞার স্মারক হিসেবে মাদারিং সানডে-এর পক্ষে সফলভাবে ওকালতি করেছেন।

 

আধুনিক ছুটির দিনটি প্রথম পালিত হয় ১৯০৭ সালে, যখন আনা জার্ভিস পশ্চিম ভার্জিনিয়ার গ্রাফটনের অ্যান্ড্রুস মেথডিস্ট এপিস্কোপাল চার্চে প্রথম মা দিবসের উপাসনা করেন।  অ্যান্ড্রু’স মেথডিস্ট চার্চ এখন আন্তর্জাতিক মা দিবসের মন্দিরটি ধারণ করে।  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মা দিবসকে একটি স্বীকৃত ছুটিতে পরিণত করার জন্য তার প্রচারণা শুরু হয়েছিল ১৯০৫ সালে, যে বছর তার মা অ্যান রিভস জার্ভিস মারা যান।  অ্যান জার্ভিস ছিলেন একজন শান্তি কর্মী যিনি আমেরিকান গৃহযুদ্ধের উভয় পক্ষের আহত সৈন্যদের যত্ন নিতেন এবং জনস্বাস্থ্য সমস্যা সমাধানের জন্য মাদার্স ডে ওয়ার্ক ক্লাব তৈরি করেছিলেন।  তিনি এবং অন্য একজন শান্তি কর্মী এবং ভোটাধিকার জুলিয়া ওয়ার্ড হাওয়ে একটি “শান্তির জন্য মা দিবস” তৈরি করার জন্য জোর দিয়েছিলেন যেখানে মায়েরা জিজ্ঞাসা করবেন যে তাদের স্বামী এবং ছেলেরা আর যুদ্ধে নিহত হবেন না।  এটি একটি সরকারী ছুটি হওয়ার ৪০ বছর আগে, ওয়ার্ড হাউ ১৮৭০ সালে তার মাদার্স ডে ঘোষণা করেছিলেন, যা “আন্তর্জাতিক প্রশ্নের বন্ধুত্বপূর্ণ মীমাংসা, শান্তির মহান এবং সাধারণ স্বার্থ” প্রচার করার জন্য সমস্ত জাতীয়তার মায়েদের একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানায়।  আনা জার্ভিস এটিকে সম্মান জানাতে চেয়েছিলেন এবং সমস্ত মাকে সম্মান জানাতে একটি দিন নির্ধারণ করতে চেয়েছিলেন কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন যে একজন মা হলেন “সেই ব্যক্তি যিনি আপনার জন্য বিশ্বের যে কারও চেয়ে বেশি করেছেন”।

১৯০৮ সালে, ইউ.এস. কংগ্রেস মাদার্স ডেকে একটি সরকারী ছুটিতে পরিণত করার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে, মজা করে যে তাদেরও একটি “শাশুড়ি দিবস” ঘোষণা করতে হবে।  যাইহোক, আনা জার্ভিসের প্রচেষ্টার কারণে, ১৯১১ সাল নাগাদ সমস্ত মার্কিন রাজ্য ছুটি পালন করে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে মা দিবসকে স্থানীয় ছুটির দিন হিসেবে স্বীকৃতি দেয় (প্রথমটি হল ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া, জার্ভিসের হোম স্টেট, ১৯১০ সালে)।  ১৯১৪ সালে, উড্রো উইলসন একটি ঘোষণায় স্বাক্ষর করেন যেটি মা দিবসের নামকরণ করে, যা মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার অনুষ্ঠিত হয়, মায়েদের সম্মানের জন্য একটি জাতীয় ছুটির দিন হিসাবে।
যদিও জার্ভিস, যিনি মা দিবসকে একটি লিটারজিকাল পরিষেবা হিসাবে শুরু করেছিলেন, উদযাপনটি প্রতিষ্ঠা করতে সফল হয়েছিলেন, তিনি ছুটির বাণিজ্যিকীকরণে বিরক্ত হয়েছিলেন এবং এটি “হলমার্ক হলিডে” শব্দগুচ্ছের সাথে যুক্ত হয়েছিল।  ১৯২০ এর দশকের গোড়ার দিকে, হলমার্ক কার্ড এবং অন্যান্য কোম্পানিগুলি মা দিবসের কার্ড বিক্রি করা শুরু করেছিল।  জার্ভিস বিশ্বাস করতেন যে কোম্পানিগুলি মা দিবসের ধারণাকে ভুল ব্যাখ্যা করেছে এবং শোষণ করেছে এবং ছুটির জোর অনুভূতির উপর ছিল, লাভ নয়।  ফলস্বরূপ, তিনি মা দিবস বয়কট সংগঠিত করেন এবং জড়িত কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দেন।  জার্ভিস যুক্তি দিয়েছিলেন যে উপহার এবং আগে থেকে তৈরি কার্ড কেনার পরিবর্তে লোকেদের তাদের ভালবাসা এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে হাতে লেখা চিঠির মাধ্যমে তাদের মায়েদের প্রশংসা ও সম্মান করা উচিত।  জার্ভিস ১৯২৩ সালে ফিলাডেলফিয়াতে একটি ক্যান্ডি মেকারদের কনভেনশনে এবং ১৯২৫ সালে আমেরিকান ওয়ার মাদারদের একটি সভায় প্রতিবাদ করেছিলেন। এই সময়ের মধ্যে, কার্নেশনগুলি মা দিবসের সাথে যুক্ত হয়ে গিয়েছিল এবং অর্থ সংগ্রহের জন্য আমেরিকান যুদ্ধের মায়েদের দ্বারা কার্নেশন বিক্রি করা ক্ষুব্ধ হয়েছিল।  জার্ভিস, যাকে শান্তি নষ্ট করার জন্য গ্রেফতার করা হয়েছিল।
ব্রিটেনে, কনস্ট্যান্স অ্যাডিলেড স্মিথ মাদারিং সানডে-এর পক্ষে ওকালতি করতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন, এটি ইতিমধ্যেই বিদ্যমান একটি খ্রিস্টান ধর্মযাজক উদযাপন যেখানে বিশ্বস্তরা গির্জায় যান যেটিতে তারা বাপ্তিস্মের ধর্মানুষ্ঠান পেয়েছিলেন, একটি সমতুল্য উদযাপন হিসেবে।  তিনি মাদার চার্চ, ‘পৃথিবী ঘরের মা’, মেরি, যিশুর মা এবং মাদার নেচার উদযাপনের মধ্যযুগীয় ঐতিহ্যের কথা উল্লেখ করেছেন।  তার প্রচেষ্টা ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ এবং ইংরেজি-ভাষী বিশ্বের অন্যান্য অংশে সফল হয়েছিল।

 

তাই, আন্তর্জাতিক মাদার’স ডে বা মাতৃ দিবস প্রতিটি শিশুর জন্য একটি বিশেষ দিন। বছরের এই বিশেষ দিনটি প্রত্যেক সন্তান ও মায়ের জন্য এক বিশেষ দিন। মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা  জানাতে পালিত হয় দিনটি। এই দিনে, শিশু, তরুণ এবং বৃদ্ধ, তাদের মায়েদের উপহার, ফুল, কার্ড দিয়ে বা বিশেষ খাবার বা কার্যকলাপের জন্য তাদের নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে তাদের ভালবাসা এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। মায়ের আদরে যে আরাম, ভরসা আছে, তা আর পৃথিবীর কারও আদরে নেই।

পৃথিবীতে সবাই বদলে যায়, কিন্তু বদলায় না মা। মা দিবসে পৃথিবীর সকল মা কে তাই জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা ও অশেষ ভালোবাসা।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

Share This
Categories
কবিতা

দামাল মেয়ে কুহেলি (ধারাবাহিক উপন্যাস; পঞ্চম পর্ব) : দিলীপ রায়।

কুহেলির কান্নার আওয়াজে গাঁয়ের মানুষের ভিড় । অনেক লোকজনের মধ্যে কানাই কাকা ছুটে এসে ভাইঝিকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল, “তোর ভয় কী ? আমরা তো আছি । তুই দুশ্চিন্তা করিস না মা !“
অতো লোকের মাঝে মাতৃসম কাকীমার বলার ভঙ্গিমা অশোভনীয় । কাকীমা বলল, “তোর বাবা তোকে রেখে পান্তা মাসিকে নিয়ে পালিয়ে গেলো । একটিবারের জন্য তোর কথা ভাবলো না । আমরা থাকলে কী হবে ? আমরা সবসময় তোকে আগলে রাখতে পারবো না । ঐদিকে আমার ছেলেপুলেদের দেখবো, নাকি তোকে সামলাবো । আচ্ছা জ্বালায় পড়া গেলো । না চাইতেই ভাসুরের মেয়ে এখন আমাদের সংসারের অতিরিক্ত বোঝা হয়ে দাঁড়ালো !”
কান্না থামিয়ে কুহেলি কাকীমাকে হাত জোড় করে বলল, “দোহাই কাকীমা, আমি তোমাদের বোঝা হয়ে থাকবো না । সুতরাং আবোল-তাবোল কথা বন্ধ রাখো । সম্ভব হলে বাবাকে ফিরিয়ে এনে দাও, নতুবা আমি একাই আমার বাড়িতে বাঁচতে পারবো । সেক্ষেত্রে আমি তোমাদেরকে বিরক্ত করবো না ।“
রাত বাড়ছে । গাঁয়ের দলুই জেঠু এগিয়ে এসে কুহেলির মাথায় হাত রেখে বললেন, “চিন্তা করিস না মা । গাঁয়ে আমরা তোর পাশে রয়েছি । দরকার হলে আমরা তোর পাশে সর্বদা থাকবো । এখন তোকে একটা কাজ করতে হবে মা ?”
কী কাজ জেঠু ?
বাবা নিখোঁজ ! সুতরাং থানায় জানাতে হবে ।
থানায় এত রাত্রে আমি কীভাবে যাবো ?
একা যাবে কেন ? কেউ না গেলে আমি তোর সাথে যাবো । তবে …?
তবে কী জেঠু ?
এ-ক্ষেত্রে তোর কাকুর যাওয়া উচিত !
কানাই কাকাকে দলুইবাবু ডাকলেন এবং বললেন, “তোমার দাদাকে পাওয়া যাচ্ছে না, এই বিষয়টা থানায় জানাতে হবে এবং এফ-আই-আর করতে হবে । নতুবা পরে থানায় ‘না-জানানোর’ জন্য কথা উঠতে পারে ! তা ছাড়া থানায় জানানো তোমার কর্তব্যের মধ্যে পড়ে । দাদাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, সেক্ষেত্রে তুমি হাত-পা গুটিয়ে থাকতে পারো না । সুতরাং থানায় তোমাকে অবশ্যই জানাতে হবে ।
কানাই বলল, “দলুই দাদা, আমি থানায় এই সব কাজে কোনোদিন যাইনি । সুতরাং আমার সঙ্গে কয়েকজন গেলে ভাল হতো ।
“তোমাদের সাথে আমি যাচ্ছি । তোমরা বরং রেডি হয়ে নাও । আমরা এক্ষুণি বেরিয়ে যেতে চাই !” বললেন দলুইবাবু ।
দলুই জেঠু ও কানাই কাকাকে নিয়ে থানায় পৌঁছালো কুহেলি । তখন থানায় বড়বাবু ছিলেন না । তিনি জরুরি মিটিংয়ে মহাকুমা অফিসে গেছেন । সেখান থেকে ফিরে থানায় ঢোকেননি । সুতরাং থানার ডিউটি অফিসার এফ-আই-আর নিতে গররাজি । তাঁর বক্তব্য, “বড়বাবুর নির্দেশ ছাড়া আমি আপনাদের বক্তব্য ডায়েরি করতে পারব না । আপনারা বরং আগামীকাল আসুন ।“ ০.
কুহেলি লক্ষ্য করলো, “কানাই কাকার মুখ শুকনো । সে বারংবার দলুই জেঠুর দিকে তাকাচ্ছে । এখন কী করণীয়, সেটাই বুঝে উঠতে পারছে না । তা ছাড়া কানাই কাকা থানা-পুলিশের কিচ্ছু বোঝে না । এতকাল এইসব ঝুট ঝামেলা বড় ভাই হিসাবে বাবা সামলাতো । তাই কানাই কাকা ধন্দে, তারা এখন কী করবে ?”
দলুই জেঠু প্রমাদ গুণলেন, থানা থেকে বাড়ি ফিরে গেলে চলবে না । একটা কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে ফিরতে হবে । তিনি চাইছেন, এফ-আই-আর করে তবেই বাড়ি ফিরবেন । তাই কুহেলি লক্ষ্য করলো — দলুই জেঠু কানাই কাকাকে বললেন, “চলো কানাই, আমরা থানার বড়বাবুর ফোন নম্বরটা নিই । তারপর বড়বাবুর সাথে কথা বলে একটা সিদ্ধান্তে আসা যাবে ।“
“সেটাই ভাল দাদা । বড়বাবুর সঙ্গে কথা বললে একটা সুরাহার পথ বের হবে ।“ কানাই কাকা দলুই জেঠুকে বলল ।
থানার ডিউটি অফিসারের কাছ থেকে বড়বাবুর ফোন নম্বর সংগ্রহ করলেন দলুই জেঠু । থানার ডিউটি অফিসার দলুই জেঠুকে সতর্ক করে দিয়ে বললেন, “বড়বাবুকে কখনই বলবেন না, আমি আপনাকে ফোন নম্বর দিয়েছি । কেননা বড়বাবু জানতে পারলে অহেতুক আমাকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করবেন ।“
“ঠিক আছে । নিশ্চিন্ত থাকুন । আমি আপনার কাছ থেকে ফোন নম্বর পেয়েছি, সেটা বড়বাবুকে জানাচ্ছি না ।‘ দলুই জেঠু থানার ডিউটি অফিসারকে আশ্বস্ত করলেন ।
থানার বাইরে বেরিয়ে এসে দলুই জেঠু থানার বড়বাবুকে ফোন করলেন । রিং হচ্ছে, কিন্তু ফোন তুলছেন না । পুনরায় ফোন করলেন দলুই জেঠু । ঐদিক থেকে উত্তর, “হ্যালো, আপনি কে বলছেন ?”
স্যার, আমি কাঞ্চন নগরের দলুইবাবু বলছি ।
এত রাত্রিতে ফোন ?
হ্যাঁ স্যার । আমরা থানায় এসেছি আপনার সাথে দেখা করতে ।
থানায় আমি নেই । এখন আমি বাড়িতে । হঠাৎ আপনাদের থানায় আসার কারণ জানতে পারি ?
স্যার, সর্বনাশ হয়ে গেছে ! আমাদের গাঁয়ের সানাইকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না । তার একমাত্র মেয়ে কুহেলি । কুহেলির কান্না থামানো যাচ্ছে না । কুহেলির আবার মা নেই । খুব সমস্যা ! বাড়িতে এখন শুধুমাত্র কুহেলি । তাই আমরা থানায় এসেছি এফ-আই-আর করতে ।
কিন্তু এখন আমি থানায় যেতে পারবো না ।
দরকার নেই । আপনাকে আসতে হবে না । বরং আপনি থানার ডিউটি অফিসারকে বলে দিন, যাতে তিনি আমাদের বক্তব্য ডায়েরি করেন ।
ঠিক আছে । বলে দিচ্ছি । তবে ডিউটি অফিসার মিসিং ডায়েরি করবেন ।
“তাতে আমাদের আপত্তি নেই ।“ দলুই জেঠু বললেন ।
ডায়েরি করে বাড়ি ফিরতে ফিরতে ভোর চারটে । আর ঘুমালো না কুহেলি । সকাল বেলায় স্নান সেরে মাথার চুল শুকোতে উঠোনে এসে দাঁড়ালো । এমন সময় চার-পাঁচজন ঠ্যাটা ছেলে কুহেলিকে ইঙ্গিত করে বলল, “তোমাকে পাহাড়া দেওয়ার জন্য আমরা এসেছি ।“
কুহেলি নীরব !
কুহেলির নীরবতা অবলোকন করে তারা অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তার বিচ্ছুরণ ঘটাতে পারলো না । অবশেষে তারা পালিয়ে গেলো । কিন্তু কুহেলি মনে মনে ভাবলো, “তার জীবনে এইসব উটকো মানুষের ঝামেলার দিন শুরু । তবুও কুহেলি দমবার পাত্রী নয় । কুহেলির মতে, সময়-সুযোগ মতো প্রত্যেকেই উপযুক্ত জবাব দেবে । নেহাত আজ মন খারাপ ! মেজাজ ভাল নেই । নতুবা তিনটেকে ঘা-কতক দিলেই পাহাড়া দেওয়ার সখ ঘুচিয়ে দিতে পারতো । কুহেলি যেমন শারীরিক দিয়ে শক্ত, তেমনি মনের দিক দিয়েও সমানভাবে শক্ত ও তেজি । যার জন্য তার ভয়ডর কম ।
এখন কী করবে ভেবে কূল-কিনারা পাচ্ছে না কুহেলি । সামনে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা । পড়াশুনায় মন বসছে না । ঘরে যেটুকু চাল-ডাল আছে, তাতে কয়েকদিন চলবে । তারপর কী হবে ? ইতিমধ্যে কাকীমা পরামর্শ দিয়ে গেছে, এই পরিস্থিতিতে কুহেলির মামা বাড়িতে চলে যাওয়া উচিত । সেটাও ভেবেছে কুহেলি । মামা বাড়িতে থাকলে, নিরাপত্তার দিক দিয়ে নিশ্চিন্তে থাকবে । কিন্তু সেখানেও থাকা নিয়ে তার সংশয় ! কেননা একটাই মামা । মামা ঠিক আছেন । কিন্তু মামীমার আচরণ একটু অন্যরকম । এর আগে মামা বাড়িতে যখন বেড়াতে গেছে, তখন মামীমা সহজভাবে কুহেলির সঙ্গে মিশতেন না । তাঁর হাবভাব ছিল, আপদ বিদায় হলে বাঁচি । তাই আগে মায়ের অবর্তমানে যতোবার মামা বাড়ি বেড়াতে গেছে, ততোবার কুহেলির মনে হয়েছে মামীমা ভাবছেন আপদ বিদেয় হলে ভাল হতো । মামীমা সম্বন্ধে কুহেলির অভিজ্ঞতা বাবাকে তৎক্ষণাত জানিয়েছিল । কিন্তু বাবা বুঝিয়েছিল, “কয়েকটা দিনের মামলা । কোনোরকমে মানিয়ে চলাটাই যুক্তিযুক্ত !” কুহেলি ছোট হলেও তখন বুঝেছিল, মা চলে গেছে মানেই তার মা-হীন জীবনে অনেক দুঃখ কষ্ট সইতে হবে ।
কিন্তু এইরকম একটা অকল্পনীয় বিপদের সম্মুখীন হবে সেটা কুহেলি কস্মিনকালেও ভাবেনি ! বাবা তাকে না জানিয়ে এইরূপ একটা সিদ্ধান্ত নেবে, তার ভাবনার অতীত । বাবা সবসময় তাকে নিয়ে তটস্থ থাকতো । বাপ-বেটির বন্ডিং ছিল অন্যের কাছে ঈর্ষণীয় ! বাবা কোথাও গেলে এমনকি বাজারে গেলেও তাকে জানিয়ে যেতো । তেমনি বাবা না খেলে কুহেলি কখনও একা খেতে বসতো না । শীতলের সঙ্গে মেলামেশা নিয়ে পান্তা মাসি তাকে অনেক কটু কথা শুনিয়েছে, কিন্তু বাবা তাকে একটা কথাও বলেনি । বাবার বিশ্বাস ছিল, “তার মেয়ে কখনই এমন কোনো অপ্রীতিকর কাজ করবে না যেটা তার (সানাইয়ের) সম্মানে আঘাত লাগে ।“ তবুও কুহেলি বাবাকে জানিয়ে রেখেছিল, “শীতল তার সঙ্গে মিশছে । তবে সেটা নিছক বন্ধু পর্যায়ে !” তখন বাবা বলেছিল, “তুমি সবার সঙ্গে মিশবে । সেক্ষেত্রে বাধা নেই । কিন্তু তুমি বড় হয়েছো । তাই ভাবতে হবে, মেলামেশাটা তোমার জীবনে যেনো কোনোরকম অশান্তি না নিয়ে আসে ?” মাথা নেড়ে কুহেলি বাবাকে আশ্বস্ত করে বলেছিল, “বেগতিক বুঝলে আমি তোমাকে প্রথম জানাবো ।“
পান্তা মাসি বাড়িতে ঢোকার পর থেকে বাবার মনের পরিবর্তন হতে শুরু করে । প্রথমদিকে পান্তা মাসির আচার আচরণ ঠিক ছিল । যতো দিন যেতে লাগলো, পান্তা মাসি নিজস্ব সংসারের জন্য বেঁকে বসলো । তখন দুই নৌকায় পা দিয়ে চলা বাবার পক্ষে খুব কষ্ট হচ্ছিলো । সেটা কথাবার্তায় বোঝা যেতো । তবুও মেয়ের মাথায় হাত দিয়ে সর্বদা বলতো, “বাবা, তোমাকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে । আমি তোমাকে নিজের পায়ে দাঁড়ানো দেখতে চাই ।“ কিন্তু সেই বাবা কুহেলিকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর দৃশ্য দেখে যেতে পারলো না । তবুও এই হতাশার মধ্যেও কুহেলি স্থির প্রতিজ্ঞ, “সে বাবার কথা রাখবেই ।“ যেভাবে হোক নিজের পায়ে দাঁড়াবে । পড়াশুনা চালিয়ে যাবে । তাতে যতো ঝড়ঝঞ্ঝাট আসুক, সে তার টার্গেট পূরণে স্থির প্রতিজ্ঞ ।
এক সপ্তাহ বাদে স্কুলে গেলো কুহেলি । ইতিমধ্যে স্কুলে চাউর হয়ে গেছে, কুহেলির বাবা কোনো এক বিধবা মহিলাকে নিয়ে পালিয়েছে । স্কুলে ছেলে-মেয়ে সকলের অবান্তর প্রশ্নবাণে কুহেলির কান ঝালাপালা । লজ্জার মাথা খেয়ে তার কাছের মেয়ে বন্ধুরা আরও একটু এগিয়ে কুহেলিকে জিজ্ঞাসা করলো, “তোর নতুন মা-টা কেমন ? তারা সুখ আহ্লাদের জন্য তোকে ফেলে পালিয়ে গেলো ? তুই বাড়িতে এখন একা থাকবি কীভাবে ?”
স্কুলে বন্ধু-বান্ধবীদের অপ্রীতিকর কথার হাত থেকে রেহাই পেতে ক্লাস না করে বাড়ি ফিরে এলো কুহেলি । ফাঁকা বাড়িতে কুহেলি একা । কিচ্ছু ভাল লাগছে না । সকালে সেদ্ধ ভাত রান্না করে খেয়ে গেছে । এখন ঘরে খাওয়ার কিছু নেই । বাড়ি ফেরার পর তার খিদে চূড়ান্ত । শেষে বাধ্য হয়ে দুটি রুটি বানিয়ে কাঁচা লঙ্কা দিয়ে খেয়ে নিলো । অন্য সময় হলে, বাবা ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠতো মেয়েকে খাওয়াবার জন্য । তাই বাবার কথা ভেবে কুহেলির মন খারাপ ! চোখে জল আসার মতো । স্কুল থেকে ফিরে এসে বাবার জন্য কুহেলির মন ছটফট । মায়ের ফটোর সামনে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো, “মা, তুমি কেন আমাদের ছেড়ে চলে গেলে । তুমি চলে না গেলে আজ আমাকে এই অন্ধকার জীবনে প্রবেশ করতে হতো না ।“
হন্তদন্ত হয়ে কানাই কাকা ছুটে এসে বলল, তোদের জমিতে পাশের গ্রামের নলিনী চাষ করছে । আমি গিয়ে জিজ্ঞাসা করতেই নলিনী বলল, “তারা তোদের সমস্ত চাষের জমি কিনে নিয়েছে ।“ জমি বিক্রির ব্যাপারে তুই কী কিছু জানিস !
না কাকা । আমি কিচ্ছু জানি না । আমাদের কতো বিঘা চাষের জমি, সেটাও আমি জানি না । সবটাই বাবা দেখতো । কখন জমি বিক্রি হলো বা কারা জমি কিনলো, এসব ব্যাপারে আমার কিচ্ছু জানা নেই ।
তাহলে তোর সংসার চলবে কী করে ?
চোখের জল ফেলে কুহেলি কাকাকে বলল, “আমি কিচ্ছু জানি না কাকা ।“
দাদা, এইভাবে জমি বিক্রি করে বাড়ি ছেড়ে নিরূদ্দেশ হবে আমরা কেউ কিচ্ছু টের পাইনি । মেয়েটা বড় হয়েছে সেটা জেনেও তার বোঝা উচিত ছিল মেয়ের বাঁচার জন্য একটা ব্যবস্থা করে যাওয়া । মেয়েটা এখন কীভাবে বাঁচবে ? কানাই কাকা মাথা চুলকিয়ে বলল, “ সেটাই এখন বড় চিন্তা !”
কাকা, তুমি উতলা হবে না । যেভাবে হোক বাঁচতে পারব । নতুবা আমাকে উপায়ের পথ ভাবতে হবে ? একটা ব্যবস্থা ঠিক হয়ে যাবে ।
“তা হয় না মা ।“ কানাই কাকা অনেকটা নরম । কুহেলির জন্য চিন্তিত ! তাই আবার বলল, “একটা কথা বলবো মা । তুই বরং তোর মামা বাড়ি চলে যা । নতুবা এখানে থাকা তোর প্রচণ্ড কষ্ট হবে । আমি কাকা হয়ে সেটা দেখতে পারবো না । তোর কাকীমাকে তুই চিনিস । সুতরাং তোর একা থাকাটাও আমার কাছে মানসিক চাপের হয়ে উঠবে । মামা বাড়ি গেলে তুই পড়াশুনাও চালিয়ে যেতে পারবি ।
তুমি ভেবো না কাকা । আরও কয়েকটা দিন যাক । আমার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা হয়ে যাক । তারপর চিন্তা করব, মামা বাড়ি যাব কিনা ?
কুহেলির কথা শুনে কানাই কাকা ফ্যাল ফ্যাল করে তার দিকে তাকিয়ে রইল । কানাই কাকা চোখের জল মুছতে মুছতে কুহেলির বাড়ি ত্যাগ করলো ।
বিকেলে হঠাৎ শীতল এসে হাজির । কুহেলির সব কথা শুনেছে । বাড়িতে ফেরার পর থেকে বাড়ির সকলে মিলে শীতলকে চেপে ধরেছে, তুই যার সঙ্গে মেলামেশা করিস্‌ তার বাবা একটা বিধবা মহিলাকে নিয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে । তোর আবার সানাইয়ের মেয়ের সঙ্গে মেলামেশা । এটা কতটা লজ্জার, সেটা তুই বুঝতে পারবি না । বাড়ির এই ধরনের কথায় আমি প্রচণ্ড বিরক্ত । কেউ একটিবারের জন্য বলল না, কুহেলি কেমন আছে বা এখন কোথায় আছে ? তাই বাড়ি ফিরে ছুটে এলাম তোমার সঙ্গে দেখা করতে । আরও একটা খবর জানিয়ে রাখি, আমি কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে ভর্তি হয়েছি । সুতরাং এখন থেকে কলকাতাতে থাকতে হবে । সেইজন্য তোমাকে নিয়ে আমার দুশ্চিন্তা বেশী । জানি না, কীভাবে তোমাকে সহযোগিতা করতে পারবো ? এই মুহূর্তে তোমার খুব কাছাকাছি থাকাটা আমার ভীষণ দরকার ?
আমাকে নিয়ে একটুও ভাবতে হবে না শীতলদা । আমি যেভাবে হোক বাঁচবো ! কতো মানুষ অসহায় ! তারাও তো পৃথিবীতে বেঁচে আছে । সুতরাং আমিও তাদের মতো বেঁচে থাকতে পারবো । তুমি এক্টুও চিন্তা করবে না ।
চোখ বন্ধ করে তোমার ডান হাতটা এগিয়ে দাও ?
চোখ বন্ধ করে কেন ?
মুখে বলা যাবে না ।
চোখ বন্ধ করে কুহেলি ডান হাত এগিয়ে দিলো । এবার শীতল পকেট থেকে একশ টাকা নোটের একটা বাণ্ডিল তার হাতে দিয়ে বলল, “এটা রেখে দাও । কাজে লাগবে । এখন থেকে টাকার দরকার হলে নির্দ্বিধায় বান্দাকে বলবে । আমি যেভাবে হোক তোমার হাতে টাকা পৌঁছে দেবো । এটা আমার নিজস্ব সিদ্ধান্ত !”
কিন্তু কুহেলি কিছুতেই টাকা নেবে না । শীতলের মুখের উপর কুহেলির একটাই কথা, “আমি টাকা নিতে পারবো না । ছোটবেলা থেকে বাবা আমাকে একটা জিনিস শিখিয়েছে, “নিজের পায়ে দাঁড়াতে !” সেই ক্ষেত্রে কারও কাছ থেকে টাকা নিয়ে আমি বাঁচতে পারবো না । তুমি আমাকে ভুল বুঝবে না । আমি তোমার কাছ থেকে কিছুতেই টাকা নেওয়া সম্ভব না । এটা আমার ব্যক্তিসত্তা অর্থাৎ আমার নীতিতে বাধবে । তুমি প্লীজ জোর করো না ।
রেগে গেলো শীতল । তুমি এখন কীভাবে চলবে ? নিশ্চয় হাতে কোনো টাকা পয়সা নেই । তোমাকে আবার আমার অনুরোধ, প্লীজ টাকাটা রাখো । ভবিষ্যতে কাজে লাগবে ।
জোড় হাত করে কুহেলি বলল, “শীতলদা, আর অনুরোধ করবে না । তোমার কাছে এটা আমার অনুরোধ ।“
( চলবে )

Share This
Categories
প্রবন্ধ

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য — প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি :  দিলীপ রায় (৯৪৩৩৪৬২৮৫৪)।

“দৃঢ় সত্যের দিতে হবে খাঁটি দাম,
হে স্বদেশ, ফের সেই কথা জানলাম ।“
সুকান্ত ভট্টাচার্য

প্রথমেই বলে রাখি, কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যকে বলা হয় গণমানুষের কবি । অসহায়-নিপীড়িত, নির্যাতিত, সর্বহারা মানুষের সুখ, দুঃখ তাঁর কবিতার মূল বিষয়। অবহেলিত মানুষের অধিকার আদায়ের স্বার্থে ধনী-মহাজন অত্যাচারী প্রভুদের বিরূদ্ধে সুকান্ত ভট্টাচার্যের কলম ছিল সক্রিয় । তাঁর কবিতায় ফুটে উঠেছে শোষণ-বঞ্চনার বিরূদ্ধে অভিব্যক্তি । তিনি চেষ্টা করেছেন কবিতার মাধ্যমে শ্রেণী বৈষম্য দূর করতে । সর্বক্ষণ তাঁর শ্যেন দৃষ্টি ছিল মানবতার জয়ের দিকে । অসুস্থতা এমনকি অর্থাভাব তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি । তাঁর মানবিক বোধ অবিস্মরণীয় । মানুষের কল্যাণ করা ছিল তাঁর একমাত্র ধ্যান-জ্ঞান । মানবিক চেতনায় উদ্‌বুদ্ধ হয়ে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য বাংলা কাব্যধারার প্রচলিত প্রেক্ষাপটকে আমূল বদলে দিতে পেরেছিলেন । সেই কারণে আজও আমাদের কাছে তিনি নমস্য কবি ।
সুকান্ত ভট্টাচার্যের জন্ম ১৫আগস্ট, ১৯২৬ এবং মৃত্যু ১৩ মে, ১৯৪৭ । তাঁর মৃত্যু হয়েছিল ঠিক দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে । বাংলা সাহিত্যের নিরিখে তিনি ছিলেন তরুন কবি । তাঁর কবিতার পটভূমি মূলত মার্কসবাদী ভাবধারার এবং প্রগতিশীল চেতনার প্রেক্ষাপটে ।
বাবা ছিলেন নিবারন ভট্টাচার্য এবং মা সুনীতি দেবী । কালীঘাটের মহিম হালদার স্ট্রিটে মাতামহের বাড়িতে তাঁর জন্ম । তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল অবিভক্ত ফরিদপুর জেলার অর্থাৎ বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার, উনশিয়া গ্রামে । তিনি স্কুলে পড়ার সময় ছাত্র আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন । আর তা ছাড়া বামপন্থী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়ার কারণে তাঁর আনুষ্ঠানিক শিক্ষার পরিসমাপ্তি ঘটে । এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, সুকান্তের বাল্যবন্ধু ছিলেন কবি অরুণাচল বসু । তাঁর জীবনে বাল্যবন্ধু অরুণাচল বসুর প্রভাব অবর্ণনীয় । অরুণাচল বসুর মা কবি সরলা বসু । তিনি সুকান্ত ভট্টাচার্যকে পুত্রস্নেহে ভালবাসতেন । সুকান্ত ছেলেবেলায় মাতৃহারা হলেও সরলা বসু তাঁকে সেই অভাব কিছুটা পূরণ করে দিয়েছিলেন । কবির জীবনের বেশির ভাগ সময় কেটেছিল কলকাতার বেলেঘাটার ৩৪ হরমোহন ঘোষ লেনের বাড়িতে । সেই বাড়িটি এখনও অক্ষত আছে । শোনা যায়, পাশের বাড়িটিতে এখনও বসবাস করেন সুকান্তের একমাত্র জীবিত ভাই বিভাস ভট্টাচার্য।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, তেতাল্লিশের মম্বন্তর, ফ্যাসিবাদী আগ্রাসন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রভৃতির বিরূদ্ধে কলম ধরেন । ১৯৪৪ সালে তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন । সেই বছর আকাল নামক একটি সংকলন গ্রন্থ তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়।
আট-নয় বছর বয়স থেকেই সুকান্ত লিখতে শুরু করেন । স্কুলের হাতে লেখা পত্রিকা “সঞ্চয়ে” একটি ছোট্ট হাসির গল্প দিয়ে প্রথম আত্মপ্রকাশ । তারপর কয়েকদিন পরে তাঁর লেখা বিবেকান্দের জীবনী প্রথম ছাপার মুখ দেখে বিজন গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘শিখা’ কাগজে । মাত্র এগারো বছর বয়সে ‘রাখাল ছেলে’ নামে একটি গীতিনাট্য রচনা করেন । এটি পরে ‘হরতাল’ বইতে সংকলিত হয় । এখানে জানিয়ে রাখি, পাঠশালাতে পড়ার সময়ে ‘ধ্রুব’ নাটকের নাম ভূমিকায়‍ অভিনয় করেছিলেন সুকান্ত ভট্টাচার্য । সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাল্য বন্ধু লেখক অরুণাচল বসুর সঙ্গে মিলে আরেকটি হাতে লেখা কাগজ ‘সপ্তমিকা’ সম্পাদনা করেন । সেই সময় হাতে লেখা দেওয়াল পত্রিকার প্রচলন ছিল চোখে পড়ার মতো । বেশীর ভাগ দেওয়াল পত্রিকা স্টেশনের প্লাটফর্মে সাটানো থাকত, যাতে বেশী মানুষ পড়তে পারেন । অরুণাচল বসু তাঁর আমৃত্যু বন্ধু ছিলেন ।
মার্কসবাদী চেতনায় আস্থাশীল কবি হিসেবে সুকান্ত ভট্টাচার্য কবিতা লিখে বাংলা সাহিত্যে আলাদা জায়গা করে নিয়েছিলেন । সুকান্ত ভট্টাচার্য কমিউনিস্ট পার্টির পত্রিকা “ দৈনিক স্বাধীনতার” (১৯৪৫) ‘কিশোর সভা’ বিভাগ সম্পাদনা করতেন । সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতায় অনাচার ও বৈষ্যমের বিরূদ্ধে প্রতিবাদি কন্ঠস্বর ফুটে ওঠে । গণমানুষের প্রতি গভীর মমতা প্রকাশ পেয়েছে তাঁর প্রত্যেকটি কবিতায় । তাঁর রচনাবলির মধ্যে বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য: ছাড়পত্র (১৯৪৭), পূর্বাভাস (১৯৫০), মিঠেকড়া (১৯৫১), অভিযান (১৯৫৩), ঘুম নেই (১৯৫৪), হরতাল (১৯৬২), গীতিগুচ্ছ (১৯৬৫) প্রভৃতি । পরবর্তী কালে উভয় বাংলা থেকে সুকান্ত সমগ্র নামে তাঁর রচনাবলি প্রকাশিত হয় ।
পার্টি ও সংগঠনের কাজে অত্যধিক পরিশ্রমের ফলে দুরারোগ্য ক্ষয়রোগে আক্রান্ত হন এবং ১৯৪৭ সালের ১৩ মে কলকাতায় মারা যান । মাত্র একুশ বৎসর বয়সে প্রতিভাধর কবির দেহাবসান ঘটে । স্বল্প বয়সে কবির দেহাবসান ঘটলেও সামান্য কয়েকবছরে অত্যাশ্চর্য কবিত্ব শক্তির পরিচয় দিয়ে গেছেন যেটা আজও আমাদের মধ্যে অমলিন । (তথ্যসূত্র: সংগৃহীত)
কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ৭৭তম প্রয়াণ দিবসে আমার শতকোটি প্রণাম ।

Share This