ঘুরতে কে না ভালোবাসে। বিশেষ করে বাঙালিরা সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়ে ভ্রমনের নেশায়। কেউ পাহাড়, কেউ সমুদ্র আবার কেউ প্রাচীন ঐতিহাসিক স্থান ভালোবাসে ভ্রমণ করতে। প্রকৃতি কত কিছুই না আমাদের জন্য সাজিয়ে রেখেছে। কতটুকুই বা আমরা দেখেছি। এ বিশাল পৃথিবীতে আমরা অনেক কিছুই দেখিনি। তবে সোশ্যাল মিডিয়ার দুনিয়ায় আজ গোটা পৃথিবীটা হাতের মুঠোয়় এলেও প্রকৃতিকে চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ করা এ এক আলাদা রোমাঞ্চ, আলাদা অনুভূতি যার রেষ হৃদয়ের মনিকোঠায় থেকে যায় চিরকাল।। তাইতো আজও মানুষ বেরিয়ে পড়়ে প্রকৃতির কে গায়ে মেখে রোমাঞ্চিত হওয়ার নেশায়। আসুন ঘুরে আসি ভারতের ই জম্মু ও কাশ্মীরের এক গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থান ইউসমার্গ।
Yusmarg বা Yousmarg (অর্থাৎ ‘যিশুর তৃণভূমি’) হল ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের বুদগাম জেলার পশ্চিম অংশের একটি পাহাড়ি স্থান। এটি রাজ্যের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী শ্রীনগর থেকে ৫৩ কিমি (৩৩ মাই) দক্ষিণে অবস্থিত। Yousmarg সুন্দর ল্যান্ডস্কেপ, তরুণ পাইন নার্সারি, সবুজ চারণভূমি এবং হৃদয় স্পর্শকারী লটিক এবং লেন্টিক জলাশয়ের জন্য স্থান প্রদান করে। নীলনাগ, দুধগঙ্গা এবং নতুনভাবে তৈরি করা কৃত্রিম বাঁধ তৃণভূমির সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে দেয়। প্রকৃতি ইউসমার্গকে মনোরম উদ্ভিদ ও প্রাণীজগত দিয়েছে। ইউসমার্গকে প্রায়শই ট্রেকারদের স্বর্গ হিসাবে উল্লেখ করা হয়। ইউসমার্গে কিছু পরিমিত থাকার বিকল্প রয়েছে তবে কিছু নতুন হোমস্টে এলাকার আশেপাশে এসেছে। নিকটতম গ্রাম নাগবালে অবস্থিত ট্রাইব হোমস্টে এবং ক্যাফে বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। জায়গাটি দেহাতি, কাঠের এবং কাশ্মীরি স্থাপত্য ঐতিহ্যকে প্রতিফলিত করে। প্রাণীজগতের মধ্যে, স্থানীয়রা দাবি করে যে তারা প্রায়শই নেকড়ে, ভাল্লুক, বনমানুষ, বিড়াল, বিভিন্ন ধরণের অ্যাভস (উড়ার পাশাপাশি উড়ন্ত) দেখে। জলজ প্রাণীর মধ্যে, স্কিজোথোরাক্সিক প্রচুর পরিমাণে ধরা পড়ে।
স্থানীয়রা বিশ্বাস করেন যে যিশু কাশ্মীরে এসেছিলেন এবং কিছু সময়ের জন্য ইয়াসমার্গে থেকেছিলেন। এটি একটি আল্পাইন উপত্যকা যা তুষার পর্বতমালা এবং পাইন দ্বারা আবৃত।
চতুর্দিকে পাইনের সারি। তাকালেই দেখা যাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে পাহাড়। মাঝে মাঝে দেখা যাবে ঘাড় নিচু করে ঘাস খাচ্ছে ঘোড়া। ইট-কাঠ-কংক্রিটের জগৎ থেকে দিনকয়েক অক্সিজেনের খোঁজে পাড়ি জমাতেই পারেন ইয়ুসমার্গে। সবুজের সন্ধানে ঘোড়ার পিঠে সওয়ার হয়ে পাইনের জঙ্গলে বেশ কিছুটা সময় কাটাতেই পারেন। ক্লান্তি মেটাতে জঙ্গলের শেষে পাহাড়ের কোলে নীলনাগ লেকে সেরে নিতে পারেন স্নান।
শোনা যায়, সুলতানি শাসনকালে, কাশ্মীরের সুলতান ইউসুফ শাহের খুব পছন্দের অবসরযাপনের জায়গা ছিল এটি। ফার, পাইনে ঘেরা গোটা উপত্যকাটিই মখমলি সবুজ ঘাসে আবৃত। দুধগঙ্গা নদী (জলের রং দুধসাদা, তাই নদীর নামও হয়েছে দুধগঙ্গা) অপরূপ নৃত্যবিভঙ্গে বয়ে যাচ্ছে উপত্যকার বুক চিরে। ঢেউ খেলানো নয়নাভিরাম সবুজ উপত্যকায় মনের সুখে চরে বেড়াচ্ছে নধরকান্তি ভেড়ার পাল। আর চারপাশের ফার, পাইনের ঠাসবুনোটের মধ্যেও নজর টানল রংবেরঙের সুদৃশ্য কিছু কটেজ। ইচ্ছে করলে অপার শান্তির বাতাবরণে অবস্থিত এই সুন্দর উপত্যকায় কয়েকটি দিন কাটাতেও পারেন পর্যটকেরা। হাতে যথেষ্ট সময় থাকলে তখন ঘোড়ায় চেপে কিংবা পায়ে হেঁটে ঘুরেও আসতে পারবেন কাছাকাছি দ্রষ্টব্য স্থানগুলি। নীলনাগ লেক, দুধগঙ্গা (সঙ্গসফেদ তুষারশৃঙ্গ থেকে সৃষ্ট হয়েছে এই নদী) ভিউ পয়েন্ট, ‘হে জন’ দরগা ইত্যাদি জায়গাগুলি ঘুরে নেওয়া যায়। পরিষ্কার আবহাওয়ায় ইউসমার্গ থেকেই দিব্যি দেখা যায় মাউন্ট টাট্টাকোটি, মাউন্ট রোমেস হং , সানসেট পিক প্রভৃতি তুষারশৃঙ্গ।
ভূগোল—
কাশ্মীরি ভাষায় ইউসমার্গ অনুবাদ করে দ্য মেডো অফ জিসাস। এটা যীশু দ্বারা পরিদর্শন করা হয়েছে বলা হয়. এটি একটি আলপাইন উপত্যকা যা তুষার আচ্ছাদিত পর্বত এবং পাইন ও ফারের তৃণভূমিতে আচ্ছাদিত। এটি জম্মু ও কাশ্মীরের বুদগাম জেলার একটি শহর চারারি শরীফ থেকে ১৮ কিমি (১১ মাইল) দক্ষিণে অবস্থিত। এটি দুদগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত যা জেহলাম নদীর একটি উপনদী। এটি পীর পাঞ্জাল শৃঙ্গে অবস্থিত, হিমালয়ের একটি সাব রেঞ্জ। চূড়াগুলি হল: সূর্যাস্ত শিখর এবং তাতাকুটি চূড়া যেগুলির জন্য অভিযানগুলি এই পাহাড়ি স্টেশন থেকে পরিচালিত হয়। এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৩৯৬ মি (৭৮৬১ ফুট) উচ্চতায় অবস্থিত।
৪ কিমি ট্র্যাক নীলনাগ নামক একটি ছোট হ্রদের দিকে নিয়ে যায়, যা তার নীল জলের জন্য বিখ্যাত। ১০ কিমি ট্র্যাক সাং-ই-সফেদ উপত্যকার হিমায়িত লেকের দিকে নিয়ে যায়, যেটি বেশিরভাগ গ্রীষ্মকালেও বরফে ঢাকা থাকে। অন্যান্য পর্যটন কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে ঘোড়ায় চড়া, মাছ ধরা, শীতকালে স্কিইং এবং ফটোগ্রাফি।
শ্রীনগর থেকে ইয়ুসমার্গ যাওয়ার রাস্তায় পড়বে চারার-ই-শরিফ। সামনের দিগন্ত চেরা সবুজ গালিচা আর শান্ত পরিবেশ মনকে ভরিয়ে দেবে। এখানে পর্যটকদের আনাগোনা একটু কম বলে পরিবেশ আরও শান্ত।
ইউসমার্গ যাওয়ার উপায়—
জম্মু ও কাশ্মীরের রাজধানী, ৪৭ কিমি দূরে শ্রীনগর বা শ্রীনগর বিমানবন্দর (SXR) থেকে ইউসমার্গ সহজেই অ্যাক্সেস করা যায়। গাড়ি বা বাসে ২ ঘন্টার কম সময়ে ছরারী শরীফ শহর হয়ে যায়। শ্রীনগর থেকে গাড়ি রির্জাভ করলে ভাড়া পড়বে ২০০০-৪০০০ রূপী। শেয়ারে যেতে চাইলে প্রথমে চারার-ই-শরিফ পর্যন্ত যেতে হবে। তারপর সেখান থেকে ইউসমার্গ যেতে হবে।
কোথায় থাকবেন—-
ইউসমার্গ থেকে শ্রীনগরের দূরত্ব কম হওয়ায় তেমন কেউ রাত্রিবাস করে না কিন্তু একদিন থাকলে তা সারাজীবন মনের মনিকঠায় গেঁথে যাবে।” তাই আর দেরী কেন। সময় সুযোগ করে বেরিয়ে পরুন এক অনাবিল অনন্দের সাক্ষী হতে।
।। তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।