Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

ঘুরে আসুন প্রজাপতিরদের স্বর্গরাজ্য ইয়েলবং।

ঘুরতে কে না ভালোবাসে। বিশেষ করে বাঙালিরা সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়ে ভ্রমনের নেশায়। কেউ পাহাড়, কেউ সমুদ্র আবার কেউ প্রাচীন ঐতিহাসিক স্থান ভালোবাসে ভ্রমণ করতে। প্রকৃতি কত কিছুই না আমাদের জন্য সাজিয়ে রেখেছে। কতটুকুই বা আমরা দেখেছি। এ বিশাল পৃথিবীতে আমরা অনেক কিছুই দেখিনি। তবে সোশ্যাল মিডিয়ার দুনিয়ায় আজ গোটা পৃথিবীটা হাতের মুঠোয়় এলেও প্রকৃতিকে চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ করা এ এক আলাদা রোমাঞ্চ, আলাদা অনুভূতি যার রেষ হৃদয়ের মনিকোঠায় থেকে যায় চিরকাল।। তাইতো আজও মানুষ বেরিয়ে পড়়ে প্রকৃতির কে গায়ে মেখে  রোমাঞ্চিত হওয়ার নেশায়।  আসুন ঘুরে আসি ভারতের ই জম্মু ও কাশ্মীরের এক গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থান ইয়েলবং।

 

 

ইয়েলবং হল কালিম্পং পাহাড়ের একটি ছোট গ্রাম, যা ফ্রান্সিস রাই অন্বেষণ করেছিলেন।  আপনি শিলিগুড়ি বা নিউ মাল জংশন স্টেশন থেকে সাধারণত ৩ ঘন্টার মধ্যে এই জায়গায় পৌঁছাতে পারেন।  বাগরাকোটের দিকে রাস্তা ধরুন যা এই উভয় জায়গা থেকে ১৮ কিমি দূরে এবং এখান থেকে ইয়েলবং মাত্র ৭ কিমি দূরে।  ইয়েলবং কালিম্পং এর উপত্যকা এবং হিমালয়ের কুয়াশা দ্বারা লুকিয়ে আছে, ইয়েলবং হল উত্তরবঙ্গের একটি অজানা রত্ন যা জলপ্রপাত, গভীর জঙ্গল, প্রজাপতি প্রেমীদের জন্য একটি স্বর্গ, ইয়েলবং রিভার ক্যাম্পিং, Yelbong রিভার ক্যাম্পিং,  এবং এর মধ্যে সেরা হল ইয়েলবং নদী ক্যানিয়ন গুহা।  গুহাটি ২ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং এটিই একমাত্র নদী গিরিখাত গুহা যা উত্তরবঙ্গে ২ কিলোমিটার দীর্ঘ।

ইয়েলবং, পশ্চিমবঙ্গের কালিম্পং জেলার একটি ছোট্ট গ্রামীণ পাহাড়ি জনপদ যেখানে সুন্দর গ্রামবাসীরা আপনাকে স্বাগত জানাতে এবং লুকানো ধন, মাতৃ প্রকৃতি তাদের চারপাশে রাখা এবং তারা তাদের খুব ভালভাবে রক্ষা করছে।  আপনি যদি সিনেমার মতো বনের মধ্যে লুকানো জলপথ এবং উঁচু জলপ্রপাত দ্বারা বেষ্টিত অন্বেষণ এবং ট্রেকিংয়ের পাগল হন, তাহলে আপনাকে উত্তরবঙ্গের ইয়েলবং ছাড়া আর যেতে হবে না।  জলপ্রপাতের মধ্য দিয়ে এর উত্তেজনাপূর্ণ সরু পথের কারণে নদীর গিরিখাত দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে, জায়গাটি এখন দ্রুত একটি অ্যাডভেঞ্চারের জন্য এলাকার পছন্দসই স্থান হয়ে উঠছে।  এই ছোট্ট পাহাড়ি গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আপনার আত্মাকে ভরিয়ে দেবে।  এটি পাহাড়ি ঢাল, বন এবং নদী দ্বারা বেষ্টিত।  সূর্যোদয়ের আশ্চর্যজনক দৃশ্য, সেইসাথে সূর্যাস্ত, আপনাকে মন্ত্রমুগ্ধ করে তুলবে।  পাখির কিচিরমিচির, সুন্দর প্রজাপতির চুম্বন, পাহাড়ের ঢালে বয়ে যাওয়া নদীর শব্দ, মনোরম, যত্নশীল মানুষ সব মিলে এই জায়গাটিকে একটি স্বপ্নময় গন্তব্য করে তোলে।

 

ইয়েলবং রিভার ক্যানিয়ন ট্রেকিংয়ের জন্য বিখ্যাত, রুমটি নদীর ধার বরাবর পাথরের উপর দিয়ে পায়ের টাল সামলে কেভে পৌঁছানো একটা চ্যালেঞ্জ। এটি প্রায় ২ কিলোমিটার বিস্তৃত নদীর পাড় ঘেঁষে ট্রেকপথ যার শেষে একটি গুহার দেখা মিলে যেরকমটা হয়ত ভারতের পশ্চিমবঙ্গে সেরকম খুব একটা নেই। পাহাড়ী নদী তার আপন ছন্দে কখনো উত্তাল কখনো নিস্তরঙ্গ ঝিরিঝিরি হয়ে বয়ে চলেছে গুহার বুক চিরে। তবে এতোটুকু বলা যেতেই পারে – কেভে প্রবেশ করার পর নিজেকে খুঁজে পাবেন অন্য এক দুনিয়ায়। কেভের পথও বেশ চ্যালেঞ্জিং। নিজেকে মেন্টালি ও ফিজিক্যালি আগে থেকে তৈরি করে এই ট্রেকে আসা বাধ্যতামূলক। ।  সিনেমার মতোই লুকানো জলপথ এবং বনের মধ্যে উঁচু জলপ্রপাত দ্বারা বেষ্টিত এবং এটি অ্যাডভেঞ্চার প্রেমীদের মধ্যে দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জনের প্রধান কারণ।
একটি গিরিখাত হল একটি গভীর, সরু উপত্যকা যার চারপাশে পাথুরে খাড়া দেয়াল রয়েছে, সাধারণত একটি নদী যার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়।  নদীর গিরিখাত একই সাথে ভুতুড়ে এবং রোমাঞ্চকর।  ইয়েলবং এ উত্তরবঙ্গের সেরা ক্যানিয়ন ট্রেক রয়েছে।  আপনি জঙ্গলের গভীরে অনেক সুন্দর এবং দর্শনীয় জলপ্রপাত দেখতে পাবেন, যা বিশ্রাম এবং শান্তিপূর্ণ সময় উপভোগ করার জন্য উপযুক্ত।  এই ট্র্যাক চলাকালীন ২ প্রকৃতির লুকানো ধন আপনাকে লালন করবে, একটি হল ‘রেনবো জলপ্রপাত’ – একটি জলপ্রপাত যা রংধনু রঙ ছড়িয়ে দেয় এবং অন্যটি ‘থ্রি-স্টেপ জলপ্রপাত’।  মূল অ্যাডভেঞ্চার ট্রেক এখান থেকে শুরু হয় যা র‌্যাপেলিং, সাঁতার কাটা, বোল্ডারিং, গুহায় স্ক্রলিং, রিভার ক্রসিং এবং অ্যাডভেঞ্চার অ্যাক্টিভিটিগুলির আরও অনেক শর্তকে একত্রিত করে।

 

 

ইতিহাস—

“ইয়েলবং এর স্থানীয় ছেলে ফ্রানচিস ছোট বেলায় কয়লার খনিতে হিরে খুঁজতে গিয়ে প্রথম এই রিভার ক্যানিয়নটি আবিষ্কার করেন। প্রথমে ভয়ে ফিরে এলেও পরে দলবল নিয়ে পুরো টাই খুঁজে বের করেন। আগে এই পুরো রিভার বেড টাই কয়লার খনি হলেও পরে ১৯৬২ সালের দিকে ধস নেমে খননকার্য বন্ধ হয়ে যায়। পুরো ট্রেক টাই বেশ রোমহর্ষক এবং খুব সোজা মোটেই নয়। প্রথমে গ্রাম থেকে ট্রেক করে ৫ কিলোমিটার এর মতো নামতে হবে রিভার বেডে। এরপর ক্যানিয়নে জল, পাথর ডিঙিয়ে এগিয়ে চলতে হবে পুরোটা দেখতে। পুরো ব্যাপার টাই বেশ থ্রিলিং এবং অনবদ্য।

 

ইয়েলবং যাওয়ার উপায়—

এবার জেনে নেবো ইয়েলবং যাওয়ার উপায়। ট্রেনে করে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন, তারপর ওখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে ইয়েলবং। গাড়ি বাগরাকোট স্টেশন থেকে ইয়েলবং এর দিকে যাবে। গোটা রাস্তা ৩০ কিলোমিটার মতো , তবে সময় লাগবে ৩ ঘন্টার মতো। গাড়ি একদম গ্রামের ভিতর এর রাস্তায় না যেতে চাইলে অগত্যা ৪ কিলোমিটার মতো পায়ে হাঁটাই ভরসা।

 

কোথায় থাকবেন—

ইয়েলবং একটি ইকো ফ্রেন্ডলি গ্রাম। ইয়েলবং রিভার ক্যানিয়ন প্রকৃতির এক বিরল সৃষ্টি যা ভারতে খুব কমই পাওয়া যায়। এখানে এখন বেশ কিছু হোম স্টে চালু হয়েছে।

 

 

ইয়েলবং-এ কি করবেন–

ইয়েলবং রিভার ক্যানিয়নে ট্রেক করুন।
প্রজাপতি দেখুন।
পাখি দেখুন।
ফরেস্ট হাইক করুন।
মাউন্টেন ভিউ।
ট্রেক করুন বা ইয়েলবং-এ অন্যান্য লুকানো জায়গাগুলি অন্বেষণ করুন।
নদীর ধারে নাইট ওয়াক করুন। আপনাদের মন ভোরে যাবে।

 

সর্বপরি বলা যেতে পারে ইয়েলবং প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য এক টুকরো স্বর্গ।  সেগুলি পর্যবেক্ষণ করতে এবং কিছু স্ন্যাপ নিতে ভুলবেন না।  আপনার ফটোগ্রাফিক দক্ষতা অন্বেষণ একটি নিখুঁত জায়গা। আপনি অফবিট লুকানো জলপ্রপাত দেখতে পারেন।  স্থানীয় বন্ধু তৈরি করুন, দেশীয় ছেলেদের সাথে খেলুন। জীবনের সরলতা পর্যবেক্ষণ করতে ইয়েলবং গ্রামের চারপাশে হাঁটুন।

 

।।ছবি ও তথ্য : সংগৃহীত গুগল ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

 

 

 

Share This

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *