কুহেলি চায়ের দোকান খোলায় মুরারী ঘটক বেঁকে বসলো । পরেরদিন সোজা কুহেলিকে ধমক ! মুরারী ঘটক ধমক দিয়ে কুহেলিকে বলল, “এখানে চায়ের দোকান খোলা চলবে না । আমার একমাত্র চায়ের দোকান, সেটা ভীষণ চালু । সুতরাং মোড়ের মাথায় অন্য কারও চায়ের দোকান আমি খুলতে দেবো না ।“
আমার অপরাধ !
অপরাধ কিনা বলতে পারবো না । তবে তুমি দোকান গুটিয়ে না নিলে আমাকে জোরপূর্বক তোমার দোকান ভেঙ্গে দিতে হবে । সেটা আমি করতে চাই না । ছোট্ট একটু জায়গায় দুটি চায়ের দোকান কখনও চলতে পারে না ।“
“কিন্তু কাকু, আমি চায়ের দোকান বন্ধ করার জন্য খুলিনি । আমি সংসার চালানোর জন্য চায়ের দোকান খুলেছি । আর একটা কথা, খবরদার কখনও আমার দোকান ভেঙ্গে দেওয়ার কথা মুখে আনবেন না । আমি নারী বলে ভাববেন না, আমি অবলা । আমাকে কখনই অবলা ঠাউরাবেন না । আমার দোকানের কিছু একটা অঘটন ঘটলে তখন টের পাবেন, আমি কতোটা তেজি ! কথাটা মাথায় রাখবেন ।“ তেজস্বিনীর মতো চোখ গরম করে অথচ ঠাণ্ডা মাথায় কথাগুলো শুনিয়ে দিলো কুহেলি । কুহেলি একটা ব্যাপারে পরিষ্কার, আপদ শুরুতেই বিনষ্ট না করলে ভবিষ্যতে ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে । তাই এতগুলি কথা শোনানো । তা ছাড়া খবর নিয়ে জেনেছে, মুরারী ঘটকের বাড়ি লোহাদহ গ্রামে । নিজের গ্রামে দোকান খুলতে পারেনি । নিজের খামখেয়ালিপনার জন্য সেখান থেকে বিতাড়িত । মোড়ের মাথায় তার বিরূদ্ধে কেউ কিছু বলার নেই, তাই চ্যাটাং চ্যাটাং কথা ।
মুরারী ঘটক ঠায় দাঁড়িয়ে কুহেলির কথা শুনলো । একটিও টুঁ শব্দ করলো না । মেয়েটির তেজ দেখে ঘটক অবাক ! বরং মেয়েটার কথা শুনে রীতিমতো ঘাবড়ে গেলো । মেয়েটাকে ঘায়েল করতে গেলে কথা শুনিয়ে লাভ হবে না । তাকে বশে আনতে অন্য ষড়ষন্ত্রের পন্থা প্রয়োগ করতে হবে । পাড়ার মস্তান লাগাতে হবে । তারা এসে কয়েক ঘা দিলে মেয়েটি টের পাবে “কত ধানে কত চাল” ।
সোমবার । খুব সকালে দোকান খোলার রেওয়াজ ! কেননা কলকাতা বা সন্নিহিত অঞ্চলে যারা চাকরি করেন তাঁরা সপ্তাহান্তে বাড়ি আসেন এবং সোমবার খুব ভোরে কাঞ্চন নগরের মোড় থেকে গাড়ি ধরেন । মোড়ের মাথায় দাঁড়িয়ে থাকার সময় এক কাপ চা ও বিস্কুট খেয়ে তাঁদের যাত্রা শুরু । তাই কুহেলির সকাল সকাল দোকান খোলা এবং যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব চা বানিয়ে খরিদ্দারদের মধ্যে চা পরিবেশন করা ।
দোকানে পৌঁছে কুহেলির চক্ষু চড়কগাছ ! তার দোকানের ইটের উনুন ভাঙ্গা । রাগে নিজেকে ঠিক রাখতে না পেরে সোজা মুরারী ঘটকের উপরে চোটপাট, “আপনি আমার দোকান ভেঙ্গেছেন । আমিও আপনাকে এখানে দোকান চালাতে দেবো না ।“ বলেই হামানদিস্তার আঘাতে তার গ্যাসের উনুন ভেঙ্গে দিয়ে বলল, “এক্ষুণি আমার উনুন সারিয়ে না দিলে আমি তোমাদের দোকান কিছুতেই চালাতে দেবো না । মেয়ে হলেও আপনাদের মতো ধুরন্ধরদের শিক্ষা দিতে আমার হাত এতটুকু কাঁপে না ।“
বারবার চেচিয়ে মুরারী ঘটক কুহেলিকে বলল, “আমরা তোমার দোকান ভাঙ্গিনি । এটা অন্য কারও কাজ !” মুরারী ঘটকের কোনো কথা শোনার ধৈর্য কুহেলির নেই । কুহেলি চায়ের দোকান খুলতে পারছে না । এখানেই তার রাগ । সোমবার দোকান খুললে কিছুটা পয়সার মুখ দেখতে পায় । সেই পয়সায় তার সপ্তাহের সবজির বাজার চলে । সেটা বন্ধ ! তার পেটের ভাত বন্ধ করে দেওয়ার বিরূদ্ধে কুহেলির গর্জন ! ক্রোধে অগ্নিশর্মা !
চিৎকার চেচামেচি । মোড়ের মাথায় মানুষের জটলা । কুহেলি কিছুতেই ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী নয় । অন্যদিকে মুরারী ঘটকও থামছে না । তার বক্তব্য দোষ করলাম না, অথচ আমাকে দোষী বানিয়ে মেয়েটার আস্ফালন ! কুহেলির তর সইলো না । অথচ সরাসরি আমাকে আক্রমণ !
ঘটক তার দোকানের গ্যাসের উনুন ভাঙ্গার একটা বিহিত চায় এবং সেটা তখনই চায় । যার জন্য ঘটক সরাসরি থানায় ফোন করলো ।
থানার বড়বাবু এক গাড়ি পুলিশ নিয়ে স্পটে হাজির । বড়বাবু কুহেলি ও মুরারী ঘটককে ডেকে আলোচনায় বসলেন । মুরারী ঘটকের বক্তব্য, “এটা ঘটনা, মেয়েটা চায়ের দোকান খোলার পর আমি মেয়েটাকে ধমক দিয়েছিলাম । তারপর যখন জানলাম, মেয়েটা সানাইয়ের মেয়ে । বেঁচে থাকবার জন্য তার চায়ের দোকান খোলা । তাই সে মেয়েটার দোকান তুলে দেওয়ার ব্যাপারে আর কোনো কৌতুহল দেখায়নি । ঘটক মনে করে, মেয়েটা সৎভাবে কাজকর্ম করে বেঁচে থাকতে চাইছে । বাঁচুক । সম্ভব হলে, ঘটক মেয়েটাকে সমস্তরকম সহযোগিতা করবে ! কিন্তু কখনই দোকান ভাঙচুরের কথা ভাবেনি । এই দুষ্কর্ম অন্য দুষ্কৃতিদের কাজ ।“
বড়বাবু মনোযোগ দিয়ে দুজনের কথ শুনলেন । তারপর ঐ রাস্তা দিয়ে পথ চলতি মানুষের সঙ্গেও কথা বললেন ।
ইতিমধ্যে কয়লার উনুনে চা বানিয়ে মাটির ভাঁড়ে সেই চা সোজা বড়বাবুর সামনে রাখলো মুরারী ঘটক । বড়বাবুকে ঘটক বলল, ‘স্যার, মেয়েটাকে কিছুতেই বোঝাতে পারছি না এইরকম জঘন্য কাজ আমার দ্বারা অসম্ভব । মেয়েটা আপনার কাছে আমার বিরূদ্ধে অভিযোগ করছে । অথচ মেয়েটা বুঝতে চাইছে না, কারও বিরূদ্ধে অভিযোগ জানাতে গেলে প্রমাণ সহযোগে তার বিরূদ্ধে অভিযোগ জানাতে হয় । অহেতুক সন্দেহের বশে আমাকে যাচ্ছেতাই ভাবে দোষারোপ করছে । শুধু তাই নয়, অবান্তর কথাবার্তা বলছে ।“
বড়বাবু ঘটককে বললেন, “আপনি আপনার দোকানে গিয়ে বসুন । আমরা আপনাদের অশান্তির সুরাহা করতেই এসেছি । সুতরাং আমাদের কাজে বাধা দেবেন না ।“
মুরারী ঘটক একটি বাক্য ব্যয় না করে সরাসরি দোকানে গিয়ে চায়ের জল কয়লার উনুনে বসালো ।
থানার বড়বাবু পুনরায় শুধুমাত্র কুহেলিকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন, “ইতিপূর্বে আপনাকে এলাকার ছেলে-ছোকরারা কোনোদিন বিরক্ত করেছিল ।“
হ্যাঁ স্যার, করেছিল !
কী নাম তার ?
ক্যাবলা কিরণ ।
ক্যাবলা কারও নাম হয় নাকি ?
কুহেলি হেসে উত্তর দিলো, “তাকে আমি ক্যাবলা বলে ডাকি । তার নাম কিরণ । আপনি তাকে কিরণ নামেই ডাকবেন স্যার ।“
কী ধরনের উত্ত্যক্ত, জানাবেন প্লীজ ?
কিরণের বিরক্ত করার ধরন আলাদা । তার ধান্দা ছিল আমার শ্লীলতাহানি । চুরির প্রবণতা তার মধ্যে দেখিনি । তবে আমার হাতে জব্দ হওয়ার পর কিরণকে আমার আশেপাশে আর কোনোদিন দেখা যায়নি ।
বড়বাবু শুধুমাত্র কিরণের নামটা নোট করে নিয়ে বললেন, “এই জাতীয় আর কোনো সমস্যায় আপনি পড়েছিলেন কী ?
না স্যার । অল্পবিস্তর রাস্তাঘাটে যেটুকু হয়েছিল, সেটা সমস্ত উঠতি মেয়েদের জীবনে ঘটে । নতুন করে বলার কিছু নেই ।
তারপর বড়বাবুর দিকে তাকিয়ে হাত জোড় করে কুহেলি বলল, “স্যার, আমাকে বেঁচে থাকার সুযোগ দিন । আমার দোকান এইভাবে ভেঙ্গে দিলে আমি না খেয়ে মারা যাবো স্যার !”
বাবা-মা নেই শুনলাম ! বাড়িতে আর কে কে আছে ?
হতাশভাবে কুহেলি উত্তর দিলো, “পৃথিবীতে আমি শুধুমাত্র একা ।“
আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা কী ?
স্যার আমি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছি ।
“আপনার জীবনের বাস্তব কাহিনী শুনে আমরা হতভম্ব ! খুব করুণ কাহিনী । খুব দুঃখজনক ! খুব সাবধানে থাকবেন । প্রয়োজনে আমাদের খবর দেবেন । আমরা আপনার পাশে আছি । কোনোরকম দুশ্চিন্তা করবেন না । আমরা চাই, আপনার চায়ের দোকান ঠিকঠাক চলুক । আমরা এবার থানার দিকে রওনা দিচ্ছি ।“ থানার বড়বাবু চলে গেলেন ।
মাত্র কয়েকদিনে কুহেলির চায়ের দোকান এলাকায় ভীষণ জনপ্রিয় । তার দোকানের চা খেয়ে খরিদ্দারদের তৃপ্তি আলাদা । যেসব খরিদ্দার ঘটকের দোকানে নিয়মিত চা খেতেন, তারাও কুহেলির দোকানে ভিড় করছেন । তা ছাড়া বর্তমান প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা কুহেলির চায়ের দোকানের নিয়মিত খরিদ্দার । খরিদ্দারের ভিড় মূলত ভোরের সকালে ও বিকেল চারটে থেকে রাত্রি আটটা পর্যন্ত । সেই সময়ে চা বানানোতেই কুহেলিকে ধ্যান দিতে হয় । সেই সময় কুহেলির এদিক-ওদিক তাকাবার ফুরসত থাকে না । ছাতা টাঙিয়ে তার দোকান । সামনে দুটো বসার বেঞ্চ । বিকেলে খরিদ্দারদের বসার জায়গা দেওয়া যায় না । খরিদ্দারেরা কুহেলির ব্যবহারে এতটাই প্রীত যে, তাঁরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চা খেতেও কুন্ঠাবোধ করেন না । এতটাই তাঁদের কুহেলির প্রতি দরদ বা ভালবাসা !
কুহেলি এবার দোকান ঘর তৈরীর কথা ভাবছে । রাস্তার পাশে পাকাপোক্ত ঘর বানানো অসম্ভব । কেননা জায়গাটা সরকারি জায়গা । যেকোনো মুহূর্তে দোকান ঘর ভেঙ্গে দিতে পারে । সুতরাং সকল দোকানদারদের মতো অস্থায়ী ঘর বানানোর কথা ভাবছে কুহেলি । কিন্তু ঘর বানানোর মতো আর্থিক পরিস্থিতি এখনও তার অনুকূল নয় । তাই সময় নিচ্ছে । তবে দোকানের বিক্রিবাট্টা ভাল হওয়ার কারণে কুহেলি আশাবাদী, শীঘ্রই তার পক্ষে ঘর বানানো সম্ভব । কিন্তু এই মুহূর্তে তার আর্থিক অবস্থা শক্তিশালী নয়, বরং দুর্বল ।
কুহেলির জীবনে এখন একটাই চিন্তা, পৃথিবীতে বেঁচে থাকা আর দূরশিক্ষার মাধ্যমে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি নেওয়া ।
ইতিমধ্যে ভরতপুর-লোহাদহ বাস রুটে দুটো নতুন বাস চালু হলো । ফলে কাঞ্চন নগরের মোড় দিয়ে দূরদূরান্তের বিভিন্ন গ্রামের মানুষের যাতায়াত বাড়লো । কাঞ্চন নগরের মোড়ের গুরুত্ব আরও বাড়লো । সারাদিন কমবেশী মানুষের যাতায়াত সর্বক্ষণ । অন্যান্য দ্রব্যসামগ্রীর দোকানও খুললো । সরষে থেকে তেল বের করার যন্ত্র ঘানির মেশিন বসলো । কামার, কুমোর, ছাড়াও টেলারিং, ধোপা-নাপিতের দোকান, রেডিমেট জামা-কাপড়ের দোকান, সবজির দোকান, ইত্যাদি বসলো । অনেক টোটো, রিক্সা, চালু হলো । টোটোর মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রামের সাথে কাঞ্চন নগরের মোড়ের সঙ্গে সংযোগ বাড়লো । ফলে টোটো-রিক্সার পরিষেবা রমরমা । আগামীদিনে কাঞ্চন নগরের মোড় আরও উন্নত করার সরাকারি পরিকল্পনা সকলের জানা । এইজন্য স্থানীয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা নড়েচড়ে বসেছেন । যার জন্য কুহেলি দোকানটা বড় করবার চিন্তায় অস্থির ।
গ্রামবাংলা ঘেঁষা ভরতপুর-লোহাদহ রুট । আগামীতে লোহাদহ ঘাটে বাবলা নদীর উপর ব্রীজ হলে সোনায় সোহাগা । বহরমপুর থেকে সরাসরি বাস চলবে এই রুটে । তখন কাঞ্চন নগরের মোড়ের মর্যাদা আরও বাড়বে । গ্রামের ছেলেমেয়েরা এখন অনেক বেশী শিক্ষিত । তাঁরা সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে কর্মরত । তাঁরা নিজেদের উদ্যোগে গ্রামের মান-মর্যাদা বাড়াতে তৎপর । যার জন্য উন্নয়নের জোয়ার আসছে । সেটা কুহেলি স্পষ্ট আন্দাজ করতে পারছে । তাই তার মনের ভিতর সর্বক্ষণ চিন্তা, একটা দোকান ঘর ।
কানাই কাকা আলাপ করে দিলো কান্দীর যোগেশ বর্মনের সাথে । যোগেশ বর্মন কানাই কাকার বিশেষ বন্ধু । তাঁদের একসঙ্গে পড়াশুনা । গ্রাম থেকে উঠে গিয়ে কান্দীতে বাড়ি করেছেন । খুব কম সময়ের মধ্যে তিনি তাঁর ব্যবসায়ে প্রতিষ্ঠিত । কানাই কাকার অনুরোধে যোগেশ বর্মন সহযোগিতার হাত বাড়িতে দিলেন কুহেলিকে । তাঁর একটাই শর্ত, টাকা ধার নিলে সময়ে শোধ দিতে হবে এবং টাকা শোধ দেওয়ার ক্ষেত্রে অবস্থা অনুযায়ী প্রয়োজনে সময় বাড়িয়ে দিতে তাঁর আপত্তি নেই । শুরু হলো, যোগেশ বর্মনের আর্থিক সহায়তায় কুহেলির স্বপ্নের দোকানের ঘর বানানো ।
উপরে ছাদ দেওয়া যাবে না । রাস্তার পাশে ঘর । সুতরাং যেকোনো সময় সরকারি কোপ পড়তে পারে । তাদের উঠিয়ে দিতে পারে । তাই টিনের চাল দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে ।
হঠাৎ পুলিশের ফোন ! থানার বড়বাবুর ফোন নম্বর দেখে চমকে গেলো কুহেলি । আবার বড়বাবুর ফোন কেন ?
হ্যালো স্যার । কিছু বলবেন ?
হ্যাঁ । আপনার দোকান ভাঙ্গার পেছনে একটা নারী পাচার চক্র কাজ করছে । সুতরাং আপনি সাবধানে থাকবেন । আপনাকে সাবধান করে দেওয়ার জন্য আমার টেলিফোন । যেকোনো সময় আপনাকে ঐ চক্র তুলে নিয়ে যেতে পারে । আপনি একা একা রাত্রিতে বাড়ি ফিরবেন না, এমনকি কোথাও যাবেন না । তা ছাড়া রাত্রিবেলায় বেশী রাত পর্যন্ত চায়ের দোকান চালু রাখাটাও নিরাপদ হবে না । অস্বাভাবিক কিছু বুঝলে অবশ্যই থানায় খবর দেবেন ।
ঘাবড়ে গেলো কুহেলি । পরক্ষণেই পালটা জিজ্ঞাসা করলো থানার বড়বাবুকে, “তাহলে আমার দোকানে ভাঙচুর কারা চালালো ?”
এখনও পরিষ্কার নয় । তবে নারী পাচার চক্রের স্থানীয় মদতদাতা দোকান ভাঙচুরের সাথে জড়িত । মদতদাতার নাম বা তার ঠিকানা এখনও উদ্ধার হয়নি । তবে এই নারী পাচার চক্রটির নেটওয়ার্ক বিশাল বড় । পুলিশি অভিযান চলছে । আপাতত আমাদের থানার অধীনে তাদের টার্গেট, আপনাকে তুলে নিয়ে ভিন্ দেশে চালান করে দেওয়া । তারা জানতে পেরেছে, আপনার বাবা অন্য একজন বিধবার সাথে পালিয়েছেন, এইজন্য তাদের ধারনা আপনাকে অপহরণ করা তাদের পক্ষে খুব সহজ ! তাই কুহেলি দেবী, আপনাকে আমাদের অনুরোধ চক্রটি যতদিন ধরা না পড়ছে ততদিন একটু সাবধানে থাকবেন ।
কান্দী বাজার থেকে ঘরের মাথায় কর্কেট টিনের চালা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় টিন কিনে আনলো । কর্কেট টিন কিনে কান্দী বাস স্ট্যাণ্ড থেকে বাসের মাথায় চাপিয়ে ভরতপুরে নামতেই বেলা গড়িয়ে গেলো । তারপর ভরতপুরে ভ্যান রিক্সার আকাল ! বেশীর ভাগ মেশিন চালিত ভ্যান রিক্সা । তাদের ভাড়ার রেট বেশী । অবশেষে শুকুর আলীর ভ্যান রিক্সা পাওয়া গেলো বটে, কিন্তু তার ভ্যান রিক্সায় এতগুলি টিন ধরবে না । আরও একটা ভ্যান রিক্সা দরকার । কিন্তু দ্বিতীয় ভ্যান রিক্সা পাওয়া যাচ্ছে না । অবশেষে বিডিও অফিসের পাশ থেকে অপর ভ্যান রিক্সাটি পাওয়া গেলো । তারপর দুটি ভ্যান রিক্সা ভাড়া করে সেই টিন ভ্যানে তুললো । সন্ধ্যা গড়িয়ে গেলো । দোকানে যখন টিন নিয়ে পৌঁছালো, তখন ঘড়িতে রাত্রি আটটা । টিনগুলি কাঞ্চন নগরের মোড়ে রেখে গেলেও বিপদ ! কেউ চুরি করে পালাবে । আচ্ছা জ্বালায় পড়লো কুহেলি । শেষে মুরারী ঘটক এগিয়ে এসে বলল, “আমার দোকানে টিনগুলি রেখে নিশ্চিন্তে তুমি বাড়ি যাও । অনেক রাত হয়েছে । দিন-কাল বা রাস্তা-ঘাটের অবস্থা ভাল না । অহেতুক সময় নষ্ট না করে তুমি বাড়ি চলে যাও । আমি টিনগুলি ঘরে তুলে রেখে তবেই আমি বাড়ি ফিরব ।“
কাঞ্চন নগরের দিকে যেতে ছোট্ট একটা বাঁক ! রাস্তাটা দক্ষিণদিকে বাঁক নিয়েছে । বাঁকের আশেপাশে অনেক গাছপালা । ঘন অন্ধকার । চারিদিকে জোনাকিরা মিটমিট আলো দিচ্ছে । গা ছমছমে পরিবেশ । রাস্তা দিয়ে হাঁটতে কুহেলি রীতিমতো ঘামছে । অন্ধকারে চার চাকার গাড়ি দাঁড় করানো ? গাড়ি থেকে একটা মৃদুমন্দ স্বরে ডাক ভেসে আসছে, “কুহেলি !”
(চলবে)
