Categories
প্রবন্ধ

ভারতীয় অর্থনীতিতে কৃষি আজও প্রাসঙ্গিক – একটি পর্যালোচনা : দিলীপ রায়।

আমাদের দেশের অর্থনীতির মূল স্তম্ভ হচ্ছে কৃষি । বিশেষ করে গ্রামীণ অর্থনীতি  সম্পূর্ণভাবে কৃষিনির্ভর । কৃষিই  গ্রামীণ মানুষের জীবিকার মূল অবলম্বন । অধিকাংশ মানুষ সরাসরি কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে । অনেকে আবার কৃষির সঙ্গে যুক্ত আনুষঙ্গিক কাজ কর্মে নিয়োজিত । তাই কৃষি গ্রামীণ  অর্থনীতির মেরুদন্ড । বিভিন্ন সমীক্ষার রিপোর্টে জানা গেছে, কৃষি থেকে প্রায় ৬৯ শতাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জীবিকা নির্বাহ করে । কৃষিকাজে পুরুষ, মহিলা এমন কি শিশু ও বয়স্করাও নিযুক্ত ।  এছাড়া দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে (জি ডি পি) এক-পঞ্চমাংশ কৃষি থেকে আসে ও দশ শতাংশ রপ্তানী থেকে আয় আসে । শেষ জনগণনা অনুযায়ী ভারতে গ্রামীণ মানুষের সংখ্যা ৮৩-৩ কোটি । এদের জীবিকার মূল উৎস হল কৃষি,  পশুপালন, মৎস্যচাষ, কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াকরণ, প্রভূতি । “আর্থ-সামাজিক এবং জাতি/বর্ণ আদমশুমারি, ২০১১ (SECC, 2011)” প্রকাশ পেয়েছে ২০১৫তে । ঐ আদমশুমারি অনুযায়ী দেশের ২৪-৩৯ কোটি বাড়ির মধ্যে ১৭-৯১ কোটি বাড়িই গ্রামে । গ্রামীণ বাড়িগুলির মধ্যে ৩১-২৬ শতাংশ বাড়ির মানুষই গরীব । তাঁদের আয়ের কোনো নিশ্চয়তা নেই, বলা চলে তাঁদের আয়ের  উৎস অনিশ্চয়তায় ভরা । তাই কৃষি ক্ষেত্রে অগ্রগতি ঘটাতে পারলে গ্রামীণ কর্মসংস্থান যেমন বাড়বে, তেমনি কৃষি উৎপাদন বাড়াতে পারলে কৃষক ও গ্রামীণ মানুষদের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে । দরিদ্র দূরীকরণ সহজ হবে । অন্যদিকে গ্রামীণ আর্থনীতি চাঙ্গা হবে ।  কৃষি সংযুক্ত ক্ষেত্র যেমন ফল, ফুলচাষ, প্রাণীপালন, দুগ্ধ ও মৎস্য উৎপাদন বাড়বে ।

 

আমরা জানি, ভারতের কৃষিক্ষেত্রে প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষিদের সংখ্যাই বেশী । যাদের জমির পরিমাণ ১ হেক্টরের নীচে তারাই প্রান্তিক চাষি এবং যাদের হাতে ১-২ হেক্টর জমি রয়েছে তারা ক্ষুদ্র চাষি । দেশের কৃষকদের প্রায় ৮৬ শতাংশ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক । উল্লেখ থাকে যে, বাজারের চাহিদা সম্পর্কে যথাযথ ধারণা না থাকা, কার্যকর ও ব্যবসাশ্রয়ী লজিস্টিক্স পরিষেবার তেমনভাবে সুযোগ না  পাওয়া  এবং দরাদরির ক্ষমতা না থাকার কারণে ক্ষুদ্র চাষিরা তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্যের যথাযথ মূল্য পান না । একটি বিশেষ সমীক্ষায় দেখা গেছে যে শ্রমনিবিড় শস্যচাষ বা পশুপালনের ক্ষেত্রে ছোটো ছোটো খামারগুলি অত্যন্ত উপযোগী । কিন্তু এদেশে ক্ষুদ্র কৃষকদের জোতগুলি এতটাই ছোটো যে সেই আয়ে পরিবারের গ্রাসাচ্ছাদন হয় না । এই কারণে ক্ষুদ্র চাষিরা আজও আর্থিকভাবে দুর্বল  । (তথ্যসূত্রঃযোজনা,৫/২২) ।

 

( ২ )
এবার আসছি কৃষিজাত ফসলের কথায় । কৃষি থেকে আয় বা অন্যকথায় লভ্যাংশ দিনের পর দিন কমছে । কৃষিজাত ফসলের দাম অধিকাংশ সময় নিম্নমুখী । বিশেষ করে চাষী যখন সারা বছর চাষের মরশুমটা কায়িক পরিশ্রম করে ফসল ঘরে তুললো, তখন তাঁরা তাঁদের কষ্টার্জিত ফসলের ন্যায্য দাম পেল না । কৃষি উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে এবং জমিদারি প্রথার অবসান ঘটাতে এক সময় ব্যাপক ভূমি সংষ্কার হয়েছিল । বড় বড় জলাশয় তৈরী করে বা বাঁধ নির্মাণ করে সেচের ব্যবস্থা করেছিল যাতে সেচযোগ্য জমি বাড়ানো যায় । কৃষিক্ষেত্রে  উন্নয়নের আরও ধাপ হিসাবে আমরা দেখতে পাই  উচ্চ ফলনশীল বীজের ব্যবহার, সার ও ঔষধের প্রয়োগ ।  তা ছাড়া বহুফসলি চাষের ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির উপর জোর দেওয়া হয়েছিল । কিন্তু বাস্তবে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের ব্যাপকতা সেভাবে বাড়েনি । যার জন্য কৃষি ব্যবস্থা এখনও অনুন্নত এবং সেকেলের ।  শীর্ণদেহি বলদের কাঁধে লাঙ্গল জোয়াল দিয়ে চলছে কৃষিকাজ । তবে একটা কথা এখানে প্রাসঙ্গিক, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য খাদ্য শস্যের উৎপাদন যেমন ধান, গম , জোয়ার, বাজরা, ভুট্টা  অনেকটাই বেড়ে গেছে । মহাজনি প্রথা বিলোপের জন্য কৃষি ঋন দেওয়ার ক্ষেত্রে সমবায় গঠনের উপর জোর দেওয়া হয়েছে । কৃষি ঋনের সহজলভ্যতার জন্য রয়েছে  “জাতীয় কৃষি ও গ্রামোন্নয়ন ব্যাঙ্ক”  (NABARD) । শস্যবীমা ও শস্যের ন্যুনতম দাম বেঁধে দেওয়ার ফলে গরীব কৃষকেরা অনিশ্চয়তার হাত থেকে যদিও কিছুটা রক্ষা পাচ্ছে । কিছুটা হলেও বর্তমানে চিরাচরিত কৃষি প্রথার বদলে আধুনিক পদ্ধতিতে চাষের উপর ঝোঁক দেখা যাচ্ছে ।  অন্যদিকে এটাও ঘটনা, কৃষিজাত দ্রব্যের দাম কিন্তু অন্যান্য দ্রব্যের দামের সঙ্গে সমানতালে বাড়ে না । অথচ যতো দিন যাচ্ছে চাষিদের চাষের খরচ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে । চাষে নিযুক্ত কৃষি শ্রমিকের দাম যেমন বাড়ছে, তেমনি চাষের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র অর্থাৎ রাসায়নিক সার, ফসলের পোকা-মাকড় মারবার ঔষধপত্রের দামও বাড়ছে । ফলে চাষ থেকে উঠে আসা লভ্যাংশ ক্রমহ্রাসমান । চাষীর চাষজাত ফসলের দামের উপর গ্রামীণ অর্থনীতি নির্ভরশীল । অর্থকরী ফসলের উৎপাদনের অবস্থা তথৈবচ । আমরা জানি, অর্থকরী ফসল বলতে বিশেষ করে বাংলায় পাট চাষ । পাটের বাজারের তীব্র মন্দার কারণে পাট চাষও তলানীতে । তা ছাড়া ইদানীং স্বল্প বৃষ্টির কারণে পাট পচানো ভীষণ সমস্যা !  সুতরাং গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গার স্বার্থে কৃষির উপর যথাযথ গুরুত্ব আরোপ ভীষণ জরুরি  ।

 

সেচ ব্যবস্থায় জোর দেওয়া হয়েছে একথা ঠিক, কিন্তু সেটা যথোপযুক্ত নয়  ।  “সেচ ব্যবস্থা” চাষের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত ।  এখানে বলা ভাল, জলসম্পদ সঠিকভাবে চাষের কাজে ব্যবহার করাটা চাষের উন্নয়নে বাস্তবসম্মত ও সময়োপযোগী । ধান, গম, পাট, রবি শস্য, প্রত্যেকটা ফসলের ক্ষেত্রে যথোপযুক্ত সেচ ব্যবস্থা অত্যাবশ্যক । অথচ বাস্তবচিত্র উল্টো । এখনও প্রয়োজনের তুলনায় সেচ ব্যবস্থা অপর্যাপ্ত । সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষায় প্রকাশ, চাষযোগ্য জমির মাত্র ৪৮ শতাংশ সেচের আওতার মধ্যে ।  তবে এটা ঘটনা, সেচ ব্যবস্থার ব্যাপক প্রসারের জন্য সরকারি প্রয়াসের পাশাপাশি নাবার্ড যথেষ্ট আগ্রাসী । বিভিন্ন সূত্র থেকে যেটা বোঝা যাচ্ছে, সেচের জন্যে এখনও নলকূপের উপর ৬০ শতাংশ মানুষ নির্ভরশীল । বাকী ৪০ শতাংশ ক্যানেলের মাধ্যমে সেচ ব্যবস্থা । বর্তমানে সেচ ব্যবস্থার প্রক্রিয়ার উন্নয়নের জন্য আধুনিক সেচ ব্যবস্থা চালু করাটা প্রনিধানযোগ্য । উন্নত চাষের প্রয়োজনে যথাযথ সেচ ব্যবস্থার ব্যবস্থাপনা আশুকর্তব্য । তবেই কৃষি উন্নয়নে জোয়ার আনাটা সম্ভব । (তথ্যসূত্রঃ সংগৃহীত)

 


( ৩ )
এবার আসছি কৃষিকাজে সারের ব্যবহারে । নিয়মিত জমির মাটির  স্বাস্থ্য পরীক্ষা চাষযোগ্য জমিতে উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদে বাঞ্ছনীয় । মাটি পরীক্ষার পর সঠিক সার নির্ধারন চাষের পক্ষে উপোযোগী । যার জন্য মাটি পরীক্ষার চাহিদা দিন দিন বাড়ছে । এই কারণেই ‘রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনা’ চালু হয়েছে । মাটির স্বাস্থ্য কার্ড বিলি ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে । আমরা জানি, কৃষিজমিতে জৈব সার ব্যবহার ফসলের ফলনকে বাড়াতে সাহায্য করে । এই প্রসঙ্গে একটা কথা খুব জরুরি, খাদ্যের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে গেলে খাদ্যের যোগান-বৃদ্ধি অবশ্যম্ভাবী । আবার কিছু কিছু ফসল আছে যেগুলো সরাসরি খাদ্যের ব্যবহারে আসে না, যেমন  তুলো, ইত্যাদি । তবুও আমাদের দেশের কৃষক সমাজ লাভের কথা মাথায় রেখে প্রযুক্তির সাহায্যে তুলো চাষকে লাভযোগ্য ফসল হিসাবে চাষ করছে । এইভাবে চাষের উন্নয়ন গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশে প্রভাব ফেলবে ।
আজকাল গ্রীণহাউস, রক্ষণশীল চাষ (Protected cultivation), ইত্যাদি চাষের কথা শোনা যাচ্ছে । রক্ষণশীল চাষ নাকি উচ্চ প্রযুক্তির চাষ । অথচ রক্ষণশীল চাষের প্রযুক্তি নির্ভর করছে গ্রীণহাউসের কাজের উপর । গ্রীণহাউসের কাজ হচ্ছে মাটি ও জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রনে রাখা । এ্যানার্জিকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো । গ্রীণহাউসের ভিতর এমনভাবে মাইক্রো জলবায়ু  সৃষ্টি হয় বা ব্যবহার হয় যাতে উচ্চ গুণমানের ফসল ফলে । যেমন ভেজিটেবলস্‌, ফুল, ইত্যাদি সারা বৎসর চাষ হয় । এইভাবে চাষকে লাভজনক করার তাগিদে প্রযুক্তির ব্যবহারের ব্যপ্তি ঘটছে । যদিও বাস্তবে রক্ষণশীল চাষের প্রযুক্তি আমাদের দেশে একটা নতুন অধ্যায় । এটার বাস্তবায়নে অনেক বাধা । আমাদের দেশে এই জাতীয় চাষের বাস্তবায়ন প্রশ্ন চিহ্নের মধ্যে ?
এবার দেখা যাক কৃষিক্ষেত্রকে চাঙ্গা করার স্বার্থে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির ভূমিকা । কেন্দ্রিয় সরকারের তথ্য থেকে দেখা যায় মোট প্রদত্ত ঋনের মধ্যে কৃষিক্ষেত্রে বিভিন্ন ব্যাঙ্কগুলির ঋনের পরিমান ২০১০-১১ সালে মাত্র ২১-৭৬ শতাংশ । পশ্চিম বঙ্গে ২০১২-১৩ সালে (এপ্রিল—ডিসেম্বর) তথ্যে প্রকাশ,  বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি কৃষিঋন প্রকল্পে নির্দ্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৪৯ শতাংশ ঋন প্রদান করেছে । আঞ্চলিক ব্যাঙ্কগুলি লক্ষ্যমাত্রার ২৮ শতাংশ ও সমব্যয় ব্যাঙ্কগুলি ৫০ শতাংশ ঋনপ্রদানে সাফল্যে লাভ করেছে । এছাড়া সমব্যয় ব্যাঙ্কগুলি রাজ্যের প্রাথমিক  কৃষিঋন সমব্যয় সমিতিগুলির (প্যাকস্‌) মাধ্যমে কৃষিঋন ও কৃষিকাজের অন্যান্য উপাদানের জন্যে ঋন প্রদান করে । নাবার্ড উৎপাদনের মাধ্যমে সম্পদ সৃষ্টি করার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক, জমি ভাড়া বা ইজারা নিয়ে চাষ করে এমন কৃষক  ও ভাগচাষিদের ঋন পরিষেবা দেবার জন্য প্রকল্প গ্রহন করেছে । এতে কৃষি উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বাড়বে । দেশের আর্থিক উন্নয়নের হার বৃদ্ধির সুবিধা হবে (তথ্যসূত্রঃ যোজনা -৬/১৪, পৃঃ ৪৫) ।

 

( ৪ )
সমবায় সংগঠনগুলি কৃষি উৎপাদনে সর্বক্ষণ ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে আসছে । সেই কারণে গ্রামীণ কৃষি উৎপাদন ও কৃষকদের হিতার্থী হিসাবে সবরকম সহযোগিতা দিতে ও তাদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে সমব্যয় সংগঠনের  সদর্থক ভূমিকা প্রশংসনীয় । প্রাথমিক কৃষিঋন দান, কৃষি কাজে  যাবতীয় উপাদান সরবরাহ, ঋনের ব্যবস্থা, কৃষিবীমার মাধ্যমে কৃষকের ঝুঁকি মোকাবিলা, কৃষিজাত পণ্যের ন্যায্য দামে ক্রয় ও বিক্রয় ও গুদামজাত করতে, হিম ঘরের ব্যবস্থা করতে, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের শিক্ষা, ইত্যাদিতে বিশেষ ভূমিকা গ্রহন করছে ।
এবার একঝলক ভারতীয় অর্থনীতির চিত্রটা দেখে নেওয়া যাক । ভারতের অর্থনীতি বৈচিত্র্যময় । কৃষিকাজ, হস্তশিল্প, বস্ত্রশিল্প, উৎপাদন এবং বিভিন্ন সেবা ভারতের অর্থনীতির অংশ । ভারতের খেটে খাওয়া মানুষের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ প্রত্যক্ষভাবে কিংবা পরোক্ষভাবে কৃষিজমি থেকে জীবিকা নির্বাহ করে । এখনও ভারতের অর্থনৈতিক পরিকাঠামো ৬৯ শতাংশ কৃষির উপর নির্ভরশীল । তবে সেবাখাত ক্রমশ প্রসারলাভ করছে, ফলে ভারতীয় অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠছে । ডিজিটাল যুগের আর্বিভাবের পর শিক্ষিত লোকের সহজলভ্যতাকে কাজে লাগিয়ে ভারত আউটসোর্সিং  ও কারিগরি সহায়তাদানের একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসাবে  পরিণত হয়েছে বা হচ্ছে । এটা ঘটনা, ভারত সফটওয়্যার ও আর্থিক  সেবার ক্ষেত্রে সারা বিশ্বে অতি দক্ষ শ্রমিক সরবরাহ করে থাকে । এছাড়া  ঔষধ শিল্প, জীবপ্রযুক্তি, ন্যানোপ্রযুক্তি, টেলিযোগাযোগ, জাহাজ নির্মান, পর্যটন শিল্পগুলিতে জোড়ালো প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা ।
এই মুহূর্তে যেটা দরকার, কৃষিজাত ফসলের সঠিক দাম । ফসলের ন্যায্য দাম নিয়েই কৃষকদের মধ্যে যতো অশান্তি । ফসলের ন্যায্য দামের জন্য চাই ‘কৃষি বাজার’ । আমাদের দেশের চাষিরা উপযুক্ত বাজারের অভাবে তাঁদের বহু  কষ্টার্জিত ফসলের দাম ঠিকমতো পায় না । ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিরা যাতে না ঠকে, তার জন্য চাই সুসংহত কৃষি বিপননের পরিকাঠামো । প্রয়োজনে কৃষি-বাণিজ্য নীতির খোলনলচে পাল্টানো । যাতে কৃষকের কৃষি-পণ্যের জন্য সরকার কর্তৃক উপযূক্ত “লাভজনক দাম” বা সংগ্রহ মূল্যের নির্ধারন ও নিশ্চয়তা প্রদান সম্ভব হয়  । সবশেষে যেটা জরুরি, সেটা হচ্ছে কৃষি বীমার  সম্প্রসারণ । কৃষি কাজ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ । কৃষি ক্ষেত্রে অনেক অর্থ ও শ্রম বিনিয়োগ করে আশানুরূপ ফল না পেলে কৃষকের দুর্দশা বাড়ে । এজন্য শস্য বীমা, কৃষি বীমা, ইত্যাদি বীমার আরও জোরদার করা সময়োপযোগী । বীমার আওতায় যাতে সমস্ত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষি আসে সেদিকে সরকারি সক্রিয় দৃষ্টিভঙ্গি আশুকর্তব্য ।
এখানে একটি কথা প্রনিধানযোগ্য, যেহেতু ভারতীয় অর্থনীতি কৃষিভিত্তিক ও কৃষিই দেশের প্রায় ৫২ শতাংশ মানুষের প্রধান জীবিকা এবং দেশের প্রধান প্রধান শিল্পগুলির কাঁচামালের মূল উৎস,  তাই কৃষিক্ষেত্রে কৃষি শ্রমিকদের জন্য সর্বাত্মক  সুরক্ষা প্রকল্প থাকা উচিত যেখানে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার বিধানমতো বিভিন্ন  আপৎকালীন পরিস্থিতিতে কৃষকদের আর্থিক সুরাহা দেওয়া হবে । এই ধরনের আপৎকালীন পরিস্থিতির মধ্যে মৃত্যু, পঙ্গুত্ব, শারীরিক আঘাত, বেকারত্ব ও বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনাকে ধরা হয়েছে । এই ধরনের প্রকল্প রূপায়নের জন্য তৃণমূল স্তরে যথাযথ পরিকাঠামো থাকা চাই যাতে কৃষকের কাছে সরাসরি বিভিন্ন সুবিধা পৌঁছে দেওয়া যায় । প্রয়োজনে সংবাদ মাধ্যম ব্যবহার করে প্রকল্পগুলির সুযোগসুবিধার তথ্য বিশদে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে । (তথ্যসূত্রঃ যোজনা৫/২২) ।
পরিশেষে কৃষি ব্যবস্থাকে চাঙ্গা করতে পারলে গ্রামীণ অর্থনীতি আরও চাঙ্গা হবে  । গ্রামীণ  অর্থনীতি চাঙ্গা হলে গ্রামীণ মানুষদের মধ্যে স্বাচ্ছন্দ্যে বাড়বে । তাঁদের মুখে হাসি ফুটবে ।

(তথ্যসুত্রঃ  সংগৃহীত ও যোজনা-৬/১৪)

Share This

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *