Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

উত্তর ভারতের হিমাচল প্রদেশের রাজধানী শিমলার কয়েকটি দর্শনীয় স্থান (প্রথম পর্ব)।

ঘুরতে কে না ভালোবাসে। বিশেষ করে বাঙালিরা সুযোগ পেলেই বেরিয়ে পড়ে ভ্রমনের নেশায়। কেউ পাহাড়, কেউ সমুদ্র আবার কেউ প্রাচীন ঐতিহাসিক স্থান ভালোবাসে ভ্রমণ করতে। প্রকৃতি কত কিছুই না আমাদের জন্য সাজিয়ে রেখেছে। কতটুকুই বা আমরা দেখেছি। এ বিশাল পৃথিবীতে আমরা অনেক কিছুই দেখিনি। তবে সোশ্যাল মিডিয়ার দুনিয়ায় আজ গোটা পৃথিবীটা হাতের মুঠোয়় এলেও প্রকৃতিকে চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ করা এ এক আলাদা রোমাঞ্চ, আলাদা অনুভূতি যার রেষ হৃদয়ের মনিকোঠায় থেকে যায় চিরকাল।। তাইতো আজও মানুষ বেরিয়ে পড়়ে প্রকৃতির কে গায়ে মেখে  রোমাঞ্চিত হওয়ার নেশায়। কেউ চায় বিদেশে ভ্রমণে, আবার কেউ চায় দেশের বিভিন্ন স্থান ভ্রমণে। এমনি এক ভ্রমণ এর জায়গা হলো  শিমলা। এখন আমরা জানব শিমলার কিছু দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে।

 

 

শিমলা  উত্তর ভারতের হিমাচল প্রদেশের রাজধানী। উত্তরে মান্ডি এবং কুল্লু জেলা, পূর্বে কিন্নুর, দক্ষিণ-পশ্চিমে উত্তরখান্ড এবং সোলান-সিমুর জেলা দ্বারা পরিবেষ্টিত। ইংরেজ শাসনামলে শিমলাকে গ্রীষ্মকালীন রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৮৭১ সাল থেকে শিমলা পাঞ্জাবের রাজধানী ছিল, পরে ১৯৭১ সালে হিমাচলের রাজধানী হিসেবে ঘোষিত হয়। মাত্র দুই লক্ষ লোকের আবাস এই শিমলায়, যা ভারতের সবচেয়ে কম জনসংখ্যার প্রাদেশিক রাজধানীও বটে।
শিমলা এর দর্শনীয় স্থানগুলো

 

 

ক্রাইস্ট চার্চ —

উত্তর ভারতের প্রাচীনতম গির্জাগুলোর মধ্যে একটি ক্রাইস্ট চার্চ। এটি দ্য রিজে অবস্থিত একটি সুন্দর নিও-গথিক শৈলীর চার্চ।  ক্রাইস্ট চার্চটি ১৮৪৪ সালে নির্মিত হয়েছিল এবং এটি উত্তর ভারতের দ্বিতীয় প্রাচীনতম গির্জা। ক্রাইস্ট চার্চটি রিজ্-এ অবস্থিত এবং এটি তার এলিজাবেথীয় স্থাপত্য ও তার নকশায়িত কাঁচের জানলার জন্য পর্যটকদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়। এছাড়াও গির্জাটিতে একটি পাইপ অর্গান রয়েছে, যেটি দেশের সবচেয়ে এক অন্যতম বৃহৎ হিসাবে বিবেচিত হয়। জানালা, অলঙ্কৃত স্থাপত্য, এবং নির্মল পরিবেশ এখানে স্থাপত্য এবং ইতিহাস উত্‍সাহীদের জন্য এটিকে অবশ্যই দেখার মতো করে তোলে।

সেন্ট মাইকেল ক্যাথিড্রাল—-

সেন্ট মাইকেল চার্চ ১৮৫০ সালে নির্মিত হয়েছিল। এটা শিমলার প্রথম ক্যাথলিক গির্জা। এটিতে পাঁচটি মার্বেলের বেদী আছে যেগুলি ১৮৫৫ সালে ইতালি থেকে আনা হয়েছিল। এছাড়াও গির্জাটিতে সুন্দর নকশায়িত কাঁচের জানলা রয়েছে, যেগুলি চোখদুটিকে উচ্ছাসিত করে তোলে।

জাখু মন্দির—

জাখু পাহাড়ে অবস্থিত সিমলার সর্বোচ্চ বিন্দু জাখু মন্দির একটি জনপ্রিয় মন্দির। জাখু পাহাড় হল শিমলার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এবং পারিপার্শ্বিক ভূ-প্রকৃতির এক অত্যাশ্চর্য নিদারুণ দৃ্শ্য পরিদর্শন করা যায় । পাহাড়ের চূড়ায় স্থিত জাখু মন্দির প্রভু হনুমানের প্রতি উৎসর্গীকৃত। স্থানীয় কিংবদন্তিদের অনুমান অনুযায়ী, সঞ্জীবনী ঔষধি বিদ্যমান এই পাহাড়টিকে তুলে নিয়ে আসার সময় প্রভু হনুমান এখানে বিশ্রাম নিয়েছিলেন। এর ফলস্বরূপ, এই স্থানটি একইভাবে ভক্ত এবং ভ্রমণকারীদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মন্দিরটি থেকে সিমলা এবং আশপাশের পাহাড়ের মনোরম দৃশ্য দেখা যায়। ঘন জঙ্গলের মধ্য দিয়ে এই মন্দিরে যাওয়াই একটি দুঃসাহসিক কাজ।

সামার হিল—-

সিমলা থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সামার হিল একটি নির্মল এবং মনোরম জায়গা, যা তার সবুজ ও নির্মল পরিবেশের জন্য পরিচিত। বাণিজ্যিক সিমলার শত ব্যস্ততা থেকে দূরে কোনও স্থান অন্বেষণকারী পর্যটকদের মধ্যে সামার হিল হল খুবই জনপ্রিয়। এর পথের চারপাশে ওক, সেডার, রডোডেনড্রন এবং আরোও অনেক গাছপালা বেড়ে উঠেছে। এখানে অবস্থিত ম্যানরভিল্যে ম্যানশন হল এই এলাকার সবচেয়ে বিখ্যাত ভবন, কারণ এটিই সেই জায়গা যেখানে মহাত্মা গান্ধী শিমলা ভ্রমণের সময় ছিলেন। এটি প্রকৃতির পদচারণা, পিকনিক এবং উপত্যকার মনোরম দৃশ্য উপভোগ করার জন্য একটি দুর্দান্ত স্থান।

দ্যা রিজ —

মল রোডের পাশে অবস্থিত দ্য রিজ একটি খোলা জায়গা, যা তুষারাবৃত হিমালয়ের প্যানোরামিক দৃশ্য দেখায়। রিজ একটি উন্মুক্ত স্থান, যেটি শিমলার সবচেয়ে বেশি কার্যকলাপ কেন্দ্র রূপে পরিচিত। দ্য রিজ্ বা শৈলশ্রেণীতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ল্যান্ডমার্ক আছে এবং বেশ কিছু কার্যক্রম আয়োজনের পাশাপাশি এখান থেকে পার্শ্ববর্তী পর্বতগুলির এক সুন্দর দৃশ্য পরির্শনেরও সুযোগ দেয়। শহরের এই অংশটি শিমলার জনজীবনের জন্যও খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটির নীচের জলাশয় শহরের একটি প্রধান অংশে জল সরবরাহের দায়ভারে রয়েছে।অবসরে হাঁটা, পিকনিক এবং সিমলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য এটি একটি জনপ্রিয় স্থান।

ম্যাল রোড —

সিমলার সবচেয়ে বিখ্যাত আকর্ষণগুলোর মধ্যে একটি মল রোড। এটি দোকান, রেস্তোরাঁ এবং ঔপনিবেশিক যুগের ভবনে পূর্ণ একটি ব্যস্ত রাস্তা। শিমলার বিপূল সংখ্যক ল্যান্ডমার্ক এখানে অবস্থিত হওয়ায়, ম্যাল রোড পর্যটকদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়। এছাড়াও এখানে বেশ কিছু রেস্তোঁরা, ক্লাব, বার ও দোকান অবস্থিত হওয়ায় এটি শিমলার বাণিজ্যিক কেন্দ্রস্থল হিসাবেও বিবেচিত হয়। যেকোনও ক্রেতাদের জন্য ম্যাল রোড স্বর্গোদ্যানের ন্যায়।মল রোড অবসরে হাঁটা, স্থানীয় হস্তশিল্প কেনাকাটা করার এবং আশপাশের পাহাড়ের সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করার জন্য একটি দুর্দান্ত জায়গা।

 

 

 

 

ভ্যাইসরিগেল লজ—

অবসারভেটারী পাহাড়ের উপর অবস্থিত ভ্যাইসরিগেল লজ।এটি রাষ্ট্রপতির বাসভবন হিসেবেও পরিচিত। ১৮৯৮ সালে নির্মিত হয়েছিল এবং এটি ভারতের ভাইসরয়, লর্ড ডাফরিনের সরকারি বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হত। বর্তমানে এই স্থানটি হল ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ আ্যডভান্স স্টাডিজ। লজটি সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়ের এক অত্যাশ্চর্য দৃ্শ্য পরিদর্শনেরও সুযোগ দেয়। ভাইসারেগাল লজ হলো একটি ঐতিহাসিক ভবন, যা ঔপনিবেশিক যুগে ব্রিটিশ ভাইসরয়ের গ্রীষ্মকালীন বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হতো।

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *