ওঁ নমঃ শ্রী ভগবতে প্রণবায় ….।
***আমাদের ভারতীয় সত্য সনাতন হিন্দু ধর্মের মধ্যে যখন কোন মানুষকে ঐশ্বর্য, বীর্য, যশ, শ্রী, জ্ঞান ও বৈরাগ্য এই ছয়টি গুনের অধীশ্বর রূপে আরাধনা করা হয় তখন তাকে ভগবান বলা হয়। যেমন ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা স্বামী প্রণবানন্দ। আমাদের ভারতীয় সত্য সনাতন হিন্দু ধর্ম হল সেই বিজ্ঞান যেটা বহু বছর ধরে সাধু, সন্ন্যাসী, জ্ঞানী, মহাত্মাদের সঠিক মার্গ দর্শনে আমাদের দেশে ক্রমশ বেড়ে উঠেছে। তাই হিন্দুধর্ম হল একটা বিজ্ঞান সম্মত ধর্ম যার নাম সনাতন ধর্ম , শাশ্বত চিরন্তন ধর্ম। তাই, আমাদের হিন্দু ধর্মের কোন প্রবর্তক নেই। আমাদের সত্য সনাতন হিন্দু ধর্মে সামাজিক জীবনে ধর্মীয় প্রভাব অপরিসীম।আমাদের সমাজে আমরা মহিলা,পুরুষ,শিশু,বৃদ্ধ, উচ্চ,নিচ, ধনী,দরিদ্র সকল, পেশার মানুষ জাতি, ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে আবহমান কাল ধরে সামাজিক বন্ধনে আবদ্ধ
হয়ে বসবাস করে আসছি। আমাদের এই সত্য সনাতন হিন্দু ধর্ম হল যার ভিত্তি।এই সত্য সনাতন হিন্দু ধর্ম হল অনন্ত,অসীম,সীমাহীন,অন্যগুলো অনেকপরে এবং এক একজন বিশেষ ব্যক্তির / প্রবর্তক এর সৃষ্টি।
আমাদের সমাজে বর্ণাশ্রম প্রথা হল বৈদিকযুগের শ্রমবিভাগ।(Division of labour)
স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শ্রীমদ্ভগবতগীতায় বলেছেন
চার্তুবর্নাং ময়া সৃষ্টং গুনকর্মবিভাগশঃ……..
অর্থাৎ:- গুন ও কর্মের ভিত্তিতে আমি চার বর্নের সৃষ্টি করেছি।স্বভাবজাত গুন অনুসারে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র এর কাজকর্ম পৃথক করা হয়েছে । অর্থাৎ সমাজে সবলোকের স্বভাবজাত প্রবনতা,দক্ষতা এক নয় তাদের স্বভাবজাত প্রবনতা এবং দক্ষতা ভিন্নধর্মী, এর ফলেই শ্রমবিভাজন বা বর্ণাশ্রম। যিনি জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চায় প্রবল ও সাত্বিকী শ্রদ্ধা বিদ্যমান তিনিই ব্রাহ্মণ।পরাক্রম, তেজ, ধৈর্য্য, কলাকুশলতা, যুদ্ধে পরান্মুখতা ইত্যাদি গুন যার মধ্যে আছে এবং যিনি দানে আগ্রহী এবং নেতৃত্বদানের ক্ষমতা সম্পন্ন তিনিই ক্ষত্রিয়। কৃষি গোপালন, ব্যাবসা বানিজ্যে যার মন তিনিই বৈশ্য এবং যার নিজশ্ব প্রচেষ্টা উদ্দ্যম নেই পরের সেবা বা কাজ দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করতে হয় তিনিই শূদ্র।
আমাদের সমাজে এবং পৃথিবীর সবদেশেই অজ্ঞাতসারে বা অলিখিত ভাবে বর্নাশ্রম প্রথা বিদ্যমান। ব্রাহ্মণ গুনসম্পন্ন ব্যাক্তিরা গবেষণা শিক্ষকতা/অধ্যাপনায় নিযুক্ত। ক্ষত্রিয় গুনসম্পন্ন ব্যাক্তিরা সামরিক বা পুলিশ ও আধিকারিক পেশায় নিযুক্ত হচ্ছেন। বৈশ্য গুনসম্পন্ন ব্যাক্তিরা ব্যাবসা বানিজ্যে নিযুক্ত হচ্ছেন। এবং শূদ্র গুনসম্পন্ন ব্যাক্তিরা সেবামূলক বা শ্রমশীল কাজে নিযুক্ত হচ্ছেন। বর্নাশ্রম প্রথা শুধুমাত্র হিন্দু শাস্ত্রাদি দ্বারাই নির্দিষ্ট, কিন্তু জাতি বা অশ্পৃশতা হিন্দু শাস্ত্রে অনুপস্থিত। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শ্রীমদ্ভগবতগীতায় বলেছেন কর্মের ভিত্তিতে আমি চার বর্নের সৃষ্টি করেছি । বর্তমানে ও আমাদের সমাজে যোগ্যতা, দক্ষতা, কর্ম কুশলতা, কর্ম নৈপুণ্যতার ভিত্তিতে সামাজিক ভারসাম্য আছে, জাতির ভিত্তিতে নয়l
মানুষ আমরা সামাজিক জীব। আমাদের সত্য সনাতন হিন্দু ধর্মে সামাজিক জীবনে পরিবারের সাথে ধৈর্য্য ধরা হল ভালবাসা, অন্যের সাথে ধৈর্য্য ধরা হল সম্মান।নিজের সাথে ধৈর্য্য ধরা হলো আত্মবিশ্বাস আর ভগবান সাথে ধৈর্য ধরা হলো বিশ্বাস। আমাদের সমাজে কখনো কোন মানুষ কিন্তু একা থাকে না, তার সাথে জড়িয়ে থাকে তার প্রতি একান্ত নির্ভরশীল মানুষ গুলো ও। তাই যদি আপনি কারো ক্ষতি করার চিন্তা করেন, তার সাথে যারা জড়িত এবং তার প্রতি যারা একান্ত নির্ভরশীল আপনি তাদেরও ক্ষতি করছেন। তাই, কখনো কারো জীবনের ব্যাথার কারন হবেন না।যদি পারেন তাকে উৎসাহিত করেন। নিজের স্বার্থ রক্ষার্থে কখনো অন্যকে ব্যবহার করবেন না।কারো স্বপ্নকে ভাঙ্গবেন না,যদি পারেন কারো জীবনের অনুপ্রেরনা হবেন কখনো নিরাশার আঁধার হয়ে আসবেন না। তাই কাউকে দেবার মতন যদি আপনার কিছু না থাকে তবে অবশ্যই নিজের ভালো ব্যবহার উপহার দিন।
কারন,আমাদের হিন্দু ধর্মে সামাজিক জীবনে পাপ এর বোঝা আপনার জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বয়ে বেড়াতে হবে। মানুষের মুখের কথার মাঝে এমন শক্তি আছে, যে মুখের কথায় কোন মানুষ জীবন ফিরে পায়। আবার সেই মুখের এই কথার কারনেই কোন মানুষ মৃত্যুর দ্বার অব্দি পৌঁছায়। তাই কথা বলার সময় অবশ্যই বুঝে বলবেন। জীবনে কিছু ভালো কাজ না করতে পারলেও কোনও দরিদ্র মানুষকে একবারের জন্যও কিছু সহায়তা করুন, কোনও তৃষ্ণার্তকে এক গ্লাস জল প্রদান করুন, কোনও ক্ষুধার্তকে একটু ফল প্রদান করুন, হয়তো কখনও হঠাৎ অসুস্থ হওয়া কারো একটু সেবা করতে পারেন, হয়তো বর্ষায় ভিজে যাওয়া কারো মাথায় একটু ছাতা ধরতে পারেন,এমনভাবে কিছু কিছু সহায়তা করুন
আমাদের চারপাশের মানুষকে। সর্বদা মনে রাখবেন, আমাদের চারপাশে যা যায় তাই ফিরে আসে আমাদের জীবনে।
তাই, সামাজিক জীবনে দয়ালু হন, ন্যায্য হন, সৎ হন, এবং তবেই এই সমস্ত জিনিস আপনার জীবনে আপনার কাছে ফিরে আসবে। আমাদের সমাজে জীবনে খারাপ সময় আসলেই পুরো পৃৃথিবীকে চেনা যায়। বন্ধু- বান্ধুব, আপন মানুষ, প্রিয় মানুষ সবার আসল রুপটা বেড়িয়ে আসে। দেখা যায় কে আমাদের জন্য কতটুকু করতে পারে, আর কে আমাদের জন্য কি করে। যাদের বিপদে আপদে আপনি সবসময় পাশে ছিলেন দেখবেন আপনার খারাপ সময়ে বেশিরভাগ সময়ই আপনি তাদেরকে পাশে পাবেন না। কেউ ব্যস্ততা দেখাবে, কেউ বিভিন্ন সমস্যা দেখাবে, কেউ যোগাযোগ রাখাই বন্ধ করে দিবে। তখন নিজের উপর খুব রাগ হবে, নিজেকে খুব অসহায় মনে হবে।আবার খারাপ সময়ে এমন কিছু মানুষকে খুঁজে পাই যারা আমাদের আপন না হয়েও আমাদের আপন মানুষ গুলোর চেয়ে ও অনেক বেশি কিছু করে।জীবনে খারাপ সময় আর খারাপ মুহূর্তগুলো আমাদেরকে দিয়ে যায় মানুষ চেনার সবচাইতে বড় শিক্ষা। যে শিক্ষা জীবনে খারাপ সময় না আসলে আমরা হয়ত কোনদিনও অর্জন করতে পারতাম না। সত্যিকারের বন্ধু বা সত্যিকারের আপন মানুষ খুঁজে পাওয়ার জন্য আমাদের জীবনে খারাপ সময় আসাটা খুব দরকার।
সামাজিক জীবনে আমাদের অনেক সময় অহঙ্কারে গর্বে আমাদের অনেকের মানসিকতা একেবারে হীন হয়ে পড়ে ! ধরা কে সরা জ্ঞান করি আমরা ! আমাদের নিজেদের স্থায়িত্ব ই বা কতটুকু আমরা কি কিছু জানি ! অন্যকে সন্মান দিন সন্মান পাবেন ! সংসার ভরে উঠবে সুখে শান্তিতে আনন্দে ! এই বিশ্ব সংসারে আমি কি ? আমি কে ? আমার উদ্ভব কোথা থেকে? আর আমার বিনাশই বা কোথায় কি ভাবে? আমরা কি কেউ জানি ?
তাই, আমাদের সামাজিক জীবনে আমরা যদি অত্যধিক চাওয়া পাওয়ার বাসনা থেকে নিজেকে দুরে রাখতে
পারি, মনে রাখবেন তাহলে তিনি সমাজে আসল সুখের জগতে প্রবেশর পথ খুঁজে পেলেন। তাই, সদ গুরুদেব এর কাছে, ভগবান এর কাছে সকলের মঙ্গল কামনা করি আমাদের সকলের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক এই প্রার্থনা করি ! জগৎগুরু ভগবান স্বামী প্রণবানন্দজী মহারাজের শুভ ও মঙ্গলময় আশির্বাদ সকলের শিরে বর্ষিত হোক! এই প্রার্থনা করি…***
ওঁ গুরু কৃপা হি কেবলম্ ….!
স্বামী আত্মভোলানন্দ