ওঁ নমঃ শ্রী ভগবতে প্রণবায় ।
পরম পবিত্র ভারতভূমিতে জন্মলাভ করে সুদুর্লভ এই মনুষ্য জীবন লাভ। তাই, আসুন আমার, আপনার, সবার জীবনে কিভাবে পরিণত বয়সে উদ্বেগমুক্ত, দুশ্চিন্তা মুক্ত পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, যাপন করবেন বর্তমান ভারতবর্ষতে তার কিছু উপায় জানার চেষ্টা করি।এখন আমাদের পারিবারিক,সামাজিক বন্ধন গুলো খুব শিথিল,ছোট পরিবার, সুখী পরিবার, যৌথ পরিবার আমাদের শেষ, পারিবারিক বন্ধন ও শেষ। এখন আমাদের বর্তমানে সামাজিক ব্যবস্থায় আপনার
সন্তানদের মোবাইল, বাবা, মা, স্যার, মিস প্রেমিক প্রেমিকা (Dady, Mammi,Sir,Mam, Mobile,Girl friend, Boy friend)ছাড়া আর কোন কিছু সামাজিক, পারিবারিক সম্পর্ক আর থাকবে না। বিশেষ করে আমাদের বাঙ্গালী হিন্দু পরিবারে।
আপনার নিজস্ব স্থায়ী বাসস্থানে বাস করুন যাতে আপনি স্বাধীন ভাবে জীবনযাপন করতে পারেন, যদি আপনার এটি কুঁড়েঘর ও হয়, যদি কুঁড়েঘর তাও নাও থাকে, তাও, কাঁদবেন না, দুশ্চিন্তা করবেন না। আপনার ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স এবং বৈষয়িক সম্পদ আপনার নিজের কাছে রাখুন, গভীর প্রেমে পড়ে কারও নামে রাখার কথা ভাববেন না, যদি কিছু না থাকে তবে আরও ভাল, ঝামেলা শেষ।
আপনার সন্তানদের প্রতিশ্রুতির উপর নির্ভর করবেন না, যে তারা আপনাকে সেবা করবে, কারণ সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে তাদের অগ্রাধিকার পরিবর্তন হয়। এছাড়াও মনের পরিবর্তন হয় এবং কখনও কখনও তারা চাইলেও পরিস্থিতির জন্য কিছু করতে পারে না!
আপনার বন্ধুদের গ্রুপে যারা আপনার মত তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন, যারা আপনার জীবনকে সুখী দেখতে চান, অর্থাৎ সত্যিকারের শুভাকাঙ্ক্ষী হতে চান যারা, তাদের। কারো সাথে নিজেকে তুলনা করবেন না এবং কারো কাছে কোন কিছু প্রত্যাশা রাখবেন না! কারণ এই জিনিস গুলি আপনাকে জীবনে দুশ্চিন্তা, কষ্ট ছাড়া কিছুই দেবে না।
আপনার সন্তানদের জীবনে হস্তক্ষেপ করবেন না, তাদের জীবন তাদের নিজের মতো করে বাঁচতে দিন। এবং আপনি আপনার জীবনকে আপনার মতো করে বাঁচতে দিন, কারণ, সবকিছুই স্বার্থপরতার জগত এখন।কারণ, যৌথ পরিবার আর নেই, সব দাম্পত্য পরিবার, ছোট পরিবার এই নেট দুনিয়াতে। কারণ, আর দশ বছর পর কাকা, পিসি, মাসি,দিদি,দাদা,এই সম্পর্ক গুলি ছোট পরিবারে আর থাকবে না। বাবা, মা, এক সন্তান আমাদের সব হিন্দু পরিবারে, এই নেট দুনিয়াতে।কারণ, মাসিবাড়ি, মামাবাড়ি,পিসিবাড়ি গরমের ছুটিতে আর থাকবে না আমাদের। যৌথ পরিবার শেষ আমাদের ভারতবর্ষ বাঙ্গালী হিন্দু পরিবারে।
আপনি আপনার মর্যাদার ভিত্তিতে কাউকে সেবা করতে পারেন। কখনই কিছু করার বা সম্মান পাওয়ার আশায় সেবার চেষ্টা করবেন না, এটি স্বার্থপরতা এবং বিভ্রান্তির দিকে নিয়ে যাবে আপনাকে। মানুষের সবার কথা শুনুন কিন্তু আপনার স্বাধীন চিন্তার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিন! যাতে আপনার মনে হয়, আমি কিছু করতে না পারলেও এই কাজটি খুব ভালোভাবে করেছি।
জীবনে কখনই দুঃখিত হবেন না যে আমি এটি পারিনি। জীবনে এমন কিছু করুন বা না করুন কখনই গুরুত্বপূর্ণ মনে করবেন না যে আমি অনেক কিছু করেছি বা করিনি। আপনার জীবন আনন্দের সাথে কাটানোর চেষ্টা করুন, নিজেও খুশি থাকুন এবং অন্যকেও খুশি রাখুন।
আপনার স্বাস্থ্যের যত্ন নিন, ডাক্তারি পরীক্ষা ছাড়াও, আপনার আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী ভাল পুষ্টিকর খাবার খান এবং যতটা সম্ভব আপনার নিজের হাত দিয়ে আপনার নিজের কাজ করুন। ছোটখাটো সমস্যায় পাত্তা দেবেন না, ছোট ছোট শারীরিক সমস্যা বয়সের সাথে সাথে চলতেই থাকে, যেভাবেই হোক একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর উপর যেতেই হবে, তাই ভয়ের কি আছে।
প্রতি বছর একবার বা তার বেশি একটি ছোট ভ্রমণ করুন যদি আপনি এটি করতে না পারেন, তাহলে পরিচিত এবং কাছের লোকেদের জায়গা পরিদর্শন করুন। কারণ, ভ্রমণ জীবনে সতেজতার আনন্দএর অনুভূতি নিয়ে আসে।
তাই, সময় থাকতে আপনার সন্তানদের পারিবারিক, সামাজিক শিক্ষা-সংস্কার দিন। এবং ভারতীয় সংস্কৃতি,
ভারতীয় সভ্যতায় আপনার সন্তানদের শিক্ষিত করে তুলুন। প্রথমে আপনার সন্তানদের প্রতিযোগিতার ইঁদুর দৌড়এ না নামিয়ে ভাল মানুষ তৈরি করুন। তারপর, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী,অধ্যাপক সবকিছু আপনার সন্তান হতে পারবে। আপনাকেও বৃদ্ধাশ্রমএ থাকতে হবে না।বৈদেশিক অর্থ ইনকামের স্বপ্ন দেখাবেন না, জাতীয়তাবাদ, দেশপ্রেম, সেবামূলক মনোভাব এর প্রতি সন্তানদের আকৃষ্ট করে তুলুন।
কারণ, আমার, আপনার জীবনে সফলতা ঈশ্বরের দান, পাশে থাকা মানুষগুলোর দান, আপনার বংশধারার দান, পরিস্থিতির দান । এতে আপনার কৃতিত্ব খুব সামান্যই, জীবনে আপনি সফল হলেই আপনার জীবন-যন্ত্রণার কাহিনী পৃথিবী জানবে, মূল্য পাবে… নচেৎ আপনি পরিহাসের পাত্র হবেন, অন্যের আক্রমণের স্থল হবেন। আপনার অসফলতার কারণ হিসেবে কোনোরকম শারীরিক, মানসিক, পারিবারিক বা সামাজিক অজুহাত খাড়া করে কোন লাভ নেই, সময় এসব অনুমোদন করে না। আপনাকে সবটুকু কষ্ট হাসিমুখে বয়ে,এগিয়ে যেতে হবে। তাই অহেতুক অহংকার বর্জনীয়।
প্রার্থনা করুন কিন্তু ভিক্ষা করবেন না, এমনকি ঈশ্বরের কাছেও ভিক্ষা নয়, যদি আপনি ঈশ্বরের কাছে কিছু চান তবে কেবল ক্ষমা এবং সাহস প্রার্থনা করুন। আমি বিশ্বাস করি আপনি যদি নিঃস্বার্থভাবে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেন তবে আপনি শীঘ্রই ঈশ্বরের সাথে সংযুক্ত হয়ে যাবেন।
সুমহান ভারত সেবাশ্রম সংঘ এর প্রতিষ্ঠাতা স্বামী প্রণবানন্দ মহারাজ ও বলছেন:-* “যখনই চিত্ত বিশেষ উদ্বেগপূর্ণ হয় তখনই গুরুপ্রদত্ত মন্ত্র জপ করিতে হয়। এইরূপ করিলে উদ্বেগ কমিয়া চিত্তের প্রফুল্লতা ও মনের প্রশান্ততা আসিবে এবং অশান্ত মন শান্ত হইবে।”*
শ্রী শ্রী জগৎ গুরু ভগবান স্বামী প্রণবানন্দজী মহারাজের শুভ ও মঙ্গলময় আশির্বাদ আপনাদের সকলের শিরে বর্ষিত হোক… এই প্রার্থনা করি…!
ওঁ গুরু কৃপা হি কেবলম্ ।
স্বামী আত্মভোলানন্দ