বাঁকুড়ার জেলার এই রাজবাড়ির দুর্গা পূজার ইতিহাস জানলে অবাক হবেনই হবেন। বাঁকুড়ার ছাতনা রাজবাড়ীর দুর্গাপূজা একদম নিখুঁত ভাবে প্রথা মেনে করা হলেও কি কারণে রাজ পরিবারের সদস্যরা পুজোর পর আর মায়ের মুখ দেখেন না? কিজন্য যান না মায়ের মন্দির? কিভাবে সন্ধ্যে নামতেই চুপি চুপি হয়ে যায় বিসর্জন। কারণ গুলি জানতে পৌঁছে গেলাম ছাতনা রাজবাড়ীর বর্তমান রাজা প্রদীপ সিংহ দেও এর কাছে।
রাজপাট না থাকলেও, এদিন তিনিই সুন্দর করে বলে দিলেন সমস্ত ইতিহাস। বলে দিলেন সামন্ত ভুম ছাতনার সঙ্গে কুলদেবী মা বাসুলীর গভীর সম্পর্ক। বর্তমান রাজার মুখেই জানা গেল ঠিক কিভাবে সামন্ত ভুম ছাতনা এবং মল্লভূম বিষ্ণুপুরের মধ্যে এক বিবাদের জেরে শুরু হয়েছিল ৬০০ বছরের প্রাচীন ছাতনা রাজবাড়ির দুর্গাপুজো।
প্রদীপ সিংহ দেও জানান ছাপনার ভূমিপুত্র চারণ কবি বড়ু চন্ডীদাসকে কেন্দ্র করে চরম বিবাদ সৃষ্টি হয় বিষ্ণুপুর এবং সামন্ত ভুম ছাতনার মধ্যে। তারপর এই দৈব বিবাদ মেটাতে সন্ধি হয়। কথিত আছে সন্ধিতে উল্লেখ করা ছিল সামন্তভূমের কুলদেবী মা বাসুলি পুজিত হবেন বিষ্ণুপুরে এবং মল্লভূমের মা মৃন্ময়ীর আরাধনা হবে সামন্ত ভুম ছাতনায়। তখন থেকেই শুরু ছাতনা রাজবাড়ীর বিষ্ণুপুরি আদলে দুর্গোৎসব।
নিষ্ঠা ভরে পূজিত হন মা মৃন্ময়ী। নিজের হাতে পুজো করেন বর্তমান রাজা প্রদীপ সিংহ দেও। পূজার পর পুনরায় বাসুলি মন্দিরে গিয়ে পূজা সেরে নেন মানসিক শান্তির জন্য। নির্ঘণ্ট অনুযায়ী ছাতনার রাজবাড়িতে দুর্গোৎসব শেষ হলে মন্দিরে এসে মায়ের মুখ দেখেন না রাজ পরিবারের সদস্যরা।
বিসর্জনের দিন সময় হলে সূর্যাস্তের পর ছাতনার এক বিশেষ পাড়া থেকে জমা হন একাধিক মানুষ। বংশপরম্পরা অনুযায়ী বিগত ৬০০ বছর ধরে এনারাই করে আসছেন বিসর্জনের কাজ। বিসর্জনের সময় ঘরের ভেতরে থাকেন রাজ পরিবারের সদস্যরা। তাদের অজান্তেই হয়ে যায় মায়ের বিসর্জন।
একটি ছোট প্রতিবেদনে ছাতনা রাজবাড়ী, কুলদেবী মা বাসুলি এবং রাজবাড়ীর দুর্গাপুজোর পুরো পুঙ্খানুপুঙ্খ ইতিহাস তুলে ধরা সম্ভব নয়। ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে একাধিক কিংবদন্তি। প্রতিবছর ছাতনা রাজবাড়ীতে আগ্রহীরা জমা হন দূর দূরান্ত থেকে। জেনে নেন রাজবাড়ীর ইতিহাস এবং দুর্গাপুজোর কিংবদন্তিগুলি।
।।কলমে : আবদুল হাই,বাঁকুড়া।