Categories
নারী কথা রিভিউ

প্রায় শতাধিক বছর ধরে চলে আসছে কুলাডাবর গ্রামের জগদ্ধাত্রী পুজো ।

হেমন্তের শুক্লপক্ষ নবমী তিথিতে শ্রী শ্রী জগদ্ধাত্রী মাতার পুজো হয়। করিন্দাসুর কে বধ করার জন্য মা দূর্গা জগদ্ধাত্রী রূপ ধারণ করেছিলেন ।নবমী তিথিতে তান্ত্রিক মতে ত্রিসন্ধ্যা পুজো হয় । সকালে সপ্তমী বিহিত পুজো, দুপুরে অষ্টমী এবং রাত্রে নবমী বিহিত পুজো হয় ।

পুজোয় কুস্মান্ড, ইক্ষুদণ্ড ইত্যাদি বলি দেওয়া হয় । মা জগদ্ধাত্রীর দুই পাশে নারদ ও  মার্কন্ডেয় ঋষি   এবং জয়া ও বিজয়া । মা সিংহের উপর উপবেশন করে করিন্দাসুর কে বধে উদ্দত । মায়ের গায়ের রং সকল বেলার সূর্যের রং এর মতো । মায়ের ধ্যানের মন্ত্রের মধ্যেও তা আছে -” বালার্ক সাদৃশ্যাংতনু “। মা “রক্ত বস্ত্র পরিধানাং “।

 

 

বঙ্গদেশে নাদিয়ার কৃষ্ণচন্দ্র মহারাজ জগদ্ধাত্রী পুজো প্রচলন করেছিলেন বলে জানা যায় । শ্রীরামকৃষ্ণর সহধর্মিনী মা সারদামনি
জইরামবাটিতে জগদ্ধাত্রী পুজো করেছিলেন ।

ছোটনাগপুর মালভূমির অন্তর্গত বাঁকুড়া জেলার অধীন জিড়রা গ্রামপঞ্চায়তের কুলাডাবর গ্রামে জগদ্ধাত্রী পুজো প্রায় শতাধিক বছর ধরে চলে আসছে ।

তার আগে এই পুজো এই গ্রাম থেকে পশ্চিমে 5-6 মাইল দূরে বিগত বিহার রাজ্যের মানভূম জেলার বারমাগুড়া অথবা শিয়ালডাঙ্গা গ্রামে হতো । বর্তমানে গ্রামটি পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া গ্রামের অন্তর্গত । এই পুজো স্রাবর্ন গোত্রীয় ব্রাহ্মণ গঙ্গোপাধ্যায় উপাধীধারী “আচার্য রাজউপাধি ধারী ” দের পুজো । গঙ্গোপাধ্যায় উপাধি ধারী ব্রাহ্মণ দের ভূতপূর্ব বসবাস ছিলো হুগলি জেলার  আমাটা গ্রামে ।

 

 

পঞ্চকোটাধীপতি কাশিপুর মহারাজ গঙ্গোপাধ্যায় ব্রাহ্মণ দের জমিদারি দান করে বসবাসের ব্যাবস্থা করেন এই এলাকায়। এই মহারাজের দেওয়া উপাধি “আচার্য্য”। এই কুলাডাবর গ্রামে গদাধর আচার্য্য ও তার পুত্র কাশীনাথ আচার্য্য বসবাস করার জন্য মনস্থির করেন । কাশীনাথ আচার্যের 7জন ছেলে – ভৈরব, গোপাল, বামাপদ, শ্যাম, নন্দ, অনন্ত, রক্ষাকর । কুলাডাবর গ্রামে তৃতীয় সন্তান বামাপদ আচার্য্য কে জমিদারি দেখা শুনার জন্য  প্রেরণ করেন । পরে অনন্যা ছয় ভাই কুলাডাবর এসে বসবাস করতে থাকেন ।

বামাপদ মারা যাওয়ার পর তাহার দুই পুত্র রাবিলোচন ও জয়রাম জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু করেন | রাবিলোচন এর কোনো পুত্র, কন্যা না থাকায় তিনি মায়ের পুজোর খরচ নিমিত্ত ছয় বিঘা কৃষি যোগ্য জমির ব্যাবস্থা করেন ||

উক্ত জমির ও জয়রাম আচার্য্য এর পৌত্র ও প্রো পৌত্র গন নিজেরাই অর্থ দিয়ে পুজোর কার্য ও অথিতি অভ্যাগতদের ভোজনের ব্যাবস্থা করে এসেছেন।

 

 

বহূ মানুষ পাশাপাশি গ্রাম থেকে পুজো উপলক্ষেই এই গ্রামে অথিতি হিসেবে আসেন। এই পুজোয় মায়ের প্রতিমা মৃন্ময়মূর্তি, একচালা ডাকে সজ্জিত ।

শিয়ালডাঙ্গা গ্রাম থেকে মাটি এনে মায়ের মূর্তি গড়ে তোলা হয় । পূর্বে কর্মকার পরিবারের শিল্পীরা এবং বর্তমানে পালপারিবারে শিল্পী “নিমাই পাল ” মায়ের মূর্তি গড়েন। এই পুজোয় মনিহারা গ্রামের চক্রবর্তী পরিবার বংশ পরম্পরায় এই পুজোর সাথে যুক্ত পুরোহিত হিসাবে । বর্তমানে সন্তোষ চক্রবর্তী (ভট্টাচার্য )মহাশয় পুরোহিত কার্যে নিযুক্ত থাকেন।

নবমীর সকাল বেলায় পুরোহিত মহাশয় “কাশির বাঁধ ” হইতে বারী আনেন। এই সময় বহূ ভক্ত স্নান করে মা এর মন্দির পর্যন্ত ডন্ডি  দিয়ে আসেন।

 

 

বর্তমানে এই ডন্ডির রাস্তা টি সুন্দর ভাবে সিমেন্ট দিয়ে ঢালাই করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও এই গ্রামে জগদ্ধাত্রী পুজো উপলক্ষে মেলাও বসে। সমস্ত গ্রাম আলোকসজ্জায় সজ্জিত থাকে । কলকাতার সুবিখ্যাত যাত্রাপার্টির যাত্রানুষ্টান ও সংস্কৃতিক অনুষ্টান অনুষ্টিত হয়। পুজো উপলক্ষে বহূ আত্মীয় ও যারা বাইরে থাকেন তারা সবাই পুজোর সময় সমবেত হন। পুজোর সময় কয়েক দিন গ্রাম টা যেন জাকজমকপূর্ণ ও আনন্দ মুখরিত থাকে । এরপর অবশেষে ক্লান্ত মনে, অশ্রু নেত্রে গ্রামের কাশীরবাঁধে মাকে নিমজ্জিত করা হয়।

 

।। কলমে : আবদুল হাই,বাঁকুড়া।।

 

 

Share This

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *