Categories
প্রবন্ধ

রবি ঘোষ, বিখ্যাত ভারতীয় বাঙালি চলচ্চিত্র অভিনেতা – জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

ভুমিকা— রবি ঘোষ বিখ্যাত ভারতীয় বাঙালি চলচ্চিত্র অভিনেতা। তাঁর অভিনয়ের বিশেষ বৈশিষ্ট্যই ছিল হাস্যরসের মাধ্যমে সামাজিক রূঢ় বাস্তবিক ঘটনাগুলিকে দর্শকের সামনে উপস্থাপন করা। চার্লি চ্যাপলিন বলেছিলেন, “To truly laugh, you must be able to take your pain, and play with it.” তারপর আরও বলেছিলেন, “Life is a tragedy when seen in close-up, but a comedy in long-shot.” এই অমোঘ সমস্ত কথাগুলির সঙ্গে দৃশ্যত মানিয়ে যায় আমাদের প্রত্যেকের পছন্দের এক অভিনেতার নাম। ‘গল্প হলেও সত্যি’, ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’, ‘অভিযান’, ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’, ‘হীরক রাজার দেশে’, ‘পদ্মানদীর মাঝি’, ‘বসন্ত বিলাপ’, ‘কাপুরুষ ও মহাপুরুষ’ এরকম অজস্র ছবিতে একের পর চুটিয়ে অভিনয় করে নিজের জাত চিনিয়েছিলেন। তাই একথা বলাই যায়, শুধু ভারত নয় বিশ্ব চলচ্চিত্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভিনেতা ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঘোষ দস্তিদার ওরফে রবি ঘোষ।

 

 

জন্ম ও কৈশোর–‐

 

তিনি ১৯৩১ সালের ২৪ নভেম্বর কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন।  তার পুরো নাম রবীন্দ্রনাথ ঘোষ দস্তিদার।  ১৯৪৯ সালে তিনি দক্ষিণ সুবর্ধন প্রধান বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন।  বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাশ করে স্নাতকের জন্য আশুতোষ কলেজে যোগ দেন।  ১৯৫৩ থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত তিনি বনশাল কোর্টে চাকরি করেন।

 

বৈবাহিক জীবন—

 

তিনি অভিনেত্রী অনুভা গুপ্তকে বিয়ে করেন। প্রথমা স্ত্রীর মৃত্যুর দশ বছর পর তিনি ২৪শে নভেম্বর, ১৯৮২ সালে বৈশাখী দেবীকে বিয়ে করেন।

 

চলচ্চিত্র জীবন—-

অরবিন্দ মুখোপাধ্যায় তাকে অঙ্গার নাটকে অভিনয় করতে দেখেন। ১৯৫৯ সালে তিনি আহবান চলচ্চিত্রে একটি ছোট চরিত্রে অভিনয় করেন। তপন সিনহার গল্প হলেও সত্যিতে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি সবার নজরে আসেন। ১৯৬৮ সালে প্রখ্যাত চলচ্চিত্রনির্মাতা সত্যজিৎ রায় নির্মিত গুপী গাইন বাঘা বাইন চরিত্রে তার অভিনয় চলচ্চিত্রজগতে একটি মাইলফলক। সত্যজিৎ রায় পরিচালিত গুপী গাইন বাঘা বাইন চলচ্চিত্রে বাঘা চরিত্রে অভিনয় করার জন্য তিনি সবচেয়ে বিখ্যাত হয়ে আছেন। তিনি একজন বিখ্যাত থিয়েটার অভিনেতাও বটে।  তিনি চলাচল থিয়েটার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা।

 

বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করে বিশেষ প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি।  যাইহোক, তিনি তার হাস্যকর চরিত্র চিত্রিত করার জন্য বাংলা চলচ্চিত্রের জগতে সর্বাধিক পরিচিত।  চলচ্চিত্র ছাড়াও তিনি বাংলা মঞ্চ ও টেলিভিশনের পাশাপাশি ছোট পর্দায় অভিনয় করেছেন।

 

 

অভিনীত চলচ্চিত্রসমূহ—

 

কাহিনী (১৯৯৭), বাক্স রহস্য (টেলিভিশন) (১৯৯৬), বৃন্দাবন ফিল্ম স্টুডিওস (১৯৯৬), পাতাং (১৯৯৪), পদ্মা নদীর মাঝি (১৯৯৩), আগন্তুক (১৯৯১), গুপী বাঘা ফিরে এলো (১৯৯১), অন্তর্জালি যাত্রা (১৯৮৭), মহাযাত্রা (১৯৮৭), আমার গীতি (১৯৮৩), বাঁচামরার বাগান (১৯৮০), হীরক রাজার দেশে (১৯৮০), পাকা দেখা (১৯৮০), নৌকাডুবি (১৯৭৯), চারমূর্তি (১৯৭৮), জন অরণ্য (১৯৭৬), কোরাস (১৯৭৪), মৌচাক (১৯৭৪), সঙ্গিনী (১৯৭৪), ঠগিনী (১৯৭৪), বসন্ত বিলাপ (১৯৭৩), মর্জিনা আব্দুল্লাহ (১৯৭৩), আজকের নায়ক (১৯৭২), পদি পিসির বার্মি বাক্স (১৯৭২), সবসে বড়া সুখ (১৯৭২), ধন্যি মেয়ে (১৯৭১), অরণ্যের দিনরাত্রি (১৯৭০), আরোগ্য নিকেতন (১৯৬৯), আপনজন (১৯৬৮), বাঘিনী (১৯৬৮), গুপী গাইন বাঘা বাইন (১৯৬৮), বালিকা বধূ (১৯৬৭), কাল তুমি আলেয়া (১৯৬৬), মণিহার (১৯৬৬), দল গোবিন্দের করচা (১৯৬৬), গল্প হলেও সত্যি (১৯৬৬), উত্তরপুরুষ (১৯৬৬),  গৃহ সন্ধানে (১৯৬৬), স্বপ্ন নিয়ে (১৯৬৬), আরোহী (১৯৬৫), মহাপুরুষ (১৯৬৫), এতটুকু বাসা (১৯৬৫), সুরের আগুন (১৯৬৫), আরোহী (১৯৬৪), লাল পাথর (১৯৬৪), শুভ ও দেবতার গ্রাস (১৯৬৪), মোমের আলো (১৯৬৪), অবশেষে (১৯৬৩), নির্জন সৈকতে (১৯৬৩), কষ্টিপাথর (১৯৬৩), শেষ প্রহর (১৯৬৩), ছায়াসূর্য (১৯৬৩), বিনিময় (১৯৬৩), ন্যায়দন্ড (১৯৬৩), পলাতক (১৯৬৩), আগুন (১৯৬২), অভিযান (১৯৬২) হাঁসুলীবাঁকের উপকথা (১৯৬২), মেঘ (১৯৬১), কিছুক্ষণ (১৯৫৯)।

 

পরিচালিত চলচ্চিত্রসমূহ—-

 

নিধি রাম সরদার (১৯৭৬), সাধু যুধিষ্ঠিরের কড়চা (১৯৭৪)।

পুরস্কার—-

১৯৯৮ সালে আনন্দলোক অ্যাওয়ার্ড (নয়নতারার জন্য)

কলাকার অ্যাওয়ার্ড। ১৯৭০ সালে তিনি গুপী গাইন বাঘা বাইন চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য বিখ্যাত বার্লিন ফিল্ম ফেস্টিভালেও অংশ নেন।

 

মৃত্যু—

 

তিনি ৪ঠা ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৭ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *