Categories
প্রবন্ধ

জীবন ঘোষাল – ভারত উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব, একটি বিশেষ পর্যালোচনা।।।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের কঠোর পরিশ্রম যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত রাজনৈতিক দিক থেকে মুক্তি পেয়েছে। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়। এই অন্দোলনে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে জীবন ঘোষাল প্রথমসারির একজন অন্যতম বিপ্লবী ছিলেন। জীবন ঘোষাল ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি দেশমতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ রূপে।

 

জীবন ঘোষাল ওরফে মাখনলাল ছিলেন একজন ভারতীয় স্বাধীনতা কর্মী এবং মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে সশস্ত্র প্রতিরোধ আন্দোলনের একজন সদস্য, যেটি ১৯৩০ সালে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগারে অভিযান চালিয়েছিলেন।

বিপ্লবী কার্যক্রম—

 

ঘোষাল ব্রিটিশ ভারতের চট্টগ্রামের সদরঘাটে একটি ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।  তিনি মাখনলাল নামে পরিচিত ছিলেন।  তাঁর পিতার নাম যশোদা ঘোষাল। ছাত্রজীবনেই তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেন।  ঘোষাল চট্টগ্রামে পুলিশের অস্ত্রাগার অভিযানে সক্রিয় অংশ নেন।  ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ১৮ই এপ্রিল মধ্যরাত্রে চট্টগ্রামের সাথে সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার মধ্যদিয়ে এই বিদ্রোহ শুরু হয়। ১৮ এপ্রিল থেকে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত চারদিন কার্যত স্বাধীন থাকে চট্টগ্রাম। মাস্টারদা সূর্যসেনের নেতৃত্বে সংগঠিত এই বিদ্রোহের অন্যতম নায়ক বিপ্লবী জীবন ঘোষাল। প্রয়োজনীয় অস্ত্র সংগ্রহের জন্য চট্টগ্রাম পুলিশ লাইন এবং কেন্দ্রীয় অস্ত্রাগারে হামলা চালায় বিপ্লবীরা। পুলিশের অস্ত্রাগার দখলের জন্য গঠিত দলে ছিলেন জীবন ঘোষাল। তাঁরা সফলভাবে তাঁদের দায়িত্ব পালন করতে সমর্থ হন। এই সময় অতিরিক্ত অস্ত্রশস্ত্র ধ্বংসের নিমিত্তে আগুন লাগাতে গেলে হিমাংশু সেন আহত হন। তাঁকে নিরাপদে রেখে আসার জন্য গনেশ ঘোষ, অনন্ত সিংহ, জীবন ঘোষাল ও আনন্দ গুপ্ত তাকে নিয়ে শহরে গেলে মূল দলের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান তাঁরা। অস্ত্রাগার দখলের পর সেখানে বিপ্লবীদের হেডকোয়ার্টার স্থাপন করা হয় এবং ভারতীয় পতাকা উত্তোলন ও ঘোষণাপত্র পাঠের মধ্য দিয়ে মাস্টারদা সূর্যসেনের নেতৃত্বে গঠিত হয় সামরিক সরকার। চট্টগ্রাম ব্রিটিশ শাসনমুক্ত হয় বীর চট্টলার গুটিকয় দামাল তরুণের অসীম সাহসী উদ্যোগে। তাঁদের এই বিদ্রোহ শোষণ-বঞ্চনার আঁধারে ঢাকা ভারতবাসীকে সূর্যোদয়ের স্বপ্ন দেখিয়েছিল।

 

অপারেশনের পর তিনি আরেক তরুণ বিপ্লবী আনন্দ গুপ্তের সঙ্গে চট্টগ্রাম থেকে কলকাতার দিকে পালিয়ে যান।  গ্রুপের দুই সিনিয়র সদস্য, গণেশ ঘোষ এবং অনন্ত সিং তাদের যাত্রায় তাদের সঙ্গে ছিলেন।  পুলিশ ফেনী রেলওয়ে স্টেশনে দলটিকে চ্যালেঞ্জ করলেও শেষ পর্যন্ত ঘোষাল ও অন্যরা একটি সংক্ষিপ্ত সংঘর্ষের পর পালাতে সফল হয়।  তিনি কলকাতা, মির্জাপুর গলিতে এবং হুগলি জেলার চন্দননগরে আশ্রয় নেন।

 

মৃত্যু—

 

পালানোর পর ঘোষাল আন্ডারগ্রাউন্ডে ছিলেন।  পুলিশ কমিশনার চার্লস টেগার্ট ১৯৩০ সালের ১ সেপ্টেম্বর হুগলির চন্দননগরে গোপন আস্তানায় আক্রমণ করেন এবং পরবর্তী যুদ্ধে ঘোষাল নিহত হন।বিপ্লবী জীবন ঘোষালও দেশের জন্য তাঁর আত্মত্যাগ ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অনুপ্রাণিত করেছিল ।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

কথাশিল্পী বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় সম্বন্ধে দুটি কথা : দিলীপ রায়।।।

আমাদের দেশের প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য কথাশিল্পী বিভূতিভূষণ  বন্দোপাদ্যায়কে শৈশব থেকেই মুগ্ধ করত  । যার জন্য তিনি নিবিড়ভাবে দেখার সুযোগ পেয়েছেন গ্রাম বাংলার এখানে সেখানে লুকিয়ে থাকা ঝোঁপ-জঙ্গল, লতা-পাতা, বিভিন্ন ধরনের ফুল, নানান প্রজাতির পশু-পাখি, পথ-ঘাট, নদী-নালা, ইত্যাদি । পরবর্তী কালে  প্রকৃতির প্রতি  তাঁর অগাধ ভালবাসার  অভিজ্ঞতা নানাভাবে তাঁর রচনাকে প্রভাবিত ও  সমৃদ্ধ করেছে, এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়  । তাঁর অনুভবী এবং সংবেদনশীল মন দিয়ে প্রকৃতির অসামান্য রূপ বর্ণনা করে সাহিত্য সম্ভারকে অন্যতর ভূমিকায় উদ্ভাসিত করেছেন । সেই কারণে আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি,   তাঁর সৃজনশীল সাহিত্য প্রতিভা, অবর্ণনীয় !
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ১২ই সেপ্টেম্বর ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতবর্ষের বাংলা প্রদেশের চব্বিশ পরগণা জেলার কাঁচরাপাড়ার সন্নিকট ঘোষপুর-মুড়াতিপুর গ্রামে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন  ।  তিনি ছিলেন প্রখ্যাত মহানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় ও মৃণালিনী দেবীর পাঁচটি সন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠ সন্তান, অর্থাৎ বিভূতিভূষণ দুই ভাই এবং  তিন বোনের মধ্যে ছিলেন সবার বড় । তাঁর বাবা  ছিলেন  তদানীন্তনকালের একজন প্রখ্যাত সংস্কৃত বিষয়ক পণ্ডিত  । মহানন্দ বন্দোপাধ্যায়ের পাণ্ডিত্য  ও  কথকতার জন্য শাস্ত্রী উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন । উল্লেখ থাকে যে, তাঁদের আদি নিবাস ছিল যশোর জেলার ( বর্তমান চব্বিশ পরগনা জেলার ) অন্তর্ভুক্ত বনগ্রাম মহকুমায় অবস্থিত ইছামতী নদীর তীরে ব্যারাকপুর গ্রামে । শোনা যায়  বাবা মহানন্দ বন্দোপাধ্যায় কথকতা ও পৌরাহিত্য করতেন বলে,  তাঁর  বাল্য ও কৈশোর জীবন কাটে দারিদ্র্য , অভাব  ও  অনটনের মধ্যে । বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে প্রথমে গৌরী দেবী  ও পরে ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে রমা দেবীর সাথে দাম্পত্য জীবনে আবদ্ধ হন ।
এবার আসছি তাঁর শিক্ষা জীবন সম্পর্কে  ।  বাবা মহানন্দ বন্দোপাধ্যায়ের কাছে বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের শিক্ষার হাতেখড়ি  । লেখাপড়ার পাঠ শুরু  । ছোট থেকেই মেধাবী হওয়ার কারণে নিজ গ্রামের  পাঠশালায় পড়াশোনার পর বনগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ে অবৈতনিক শিক্ষার্থী হিসাবে ভর্তি হন  । ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে বনগ্রাম হাইস্কুল থেকে এনট্রান্স পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন । ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার রিপন কলেজ (অর্থাৎ বর্তমান সুরেন্দ্রনাথ কলেজ) থেকে আই-এ পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন । ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে রিপন কলেজ থেকেই বি.এ পরীক্ষায় ডিস্টিংশন সহ উত্তীর্ণ হন । উচ্চতর পড়াশোনার জন্য এম.এ ও আইন বিষয়ে ভর্তি হন । কিন্তু পরিবারের চাপে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে পড়াশোনা ছেড়ে দেন।
এবার আসছি তাঁর কর্ম জীবন সম্পর্কে ।   হুগলী জেলার জাঙ্গিপাড়া গ্রামের বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার মাধ্যমে পেশাগত জীবনে প্রবেশ । এরপরে সোনারপুর হরিনাভী স্কুলেও শিক্ষাকতা করেন  । ঐ সময়ে গৌরী দেবীর মৃত্যু হলে মনের কষ্টে  সন্ন্যাস গ্রহণ করেন । সেখান থেকে ফিরে এসে খেলৎচন্দ্র ঘোষের বাড়িতে গৃহ শিক্ষক ও সেক্রেটারি হিসাবে কাজ  করা শুরু করেন । পরবর্তীকালে  খেলৎচন্দ্রের  সুপারিশ ক্রমে ভাগলপুর সার্কেলের সহকারী ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন  । ভাগলপুরে প্রবাসী হিসাবে বসবাস করতে থাকেন, এখানেই তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস “পথের পাঁচালী” রচিত হয় । এভাবে কিছুদিন কাটানোর পর ধর্মতলায় খেলাৎচন্দ্র মেমোরিয়াল স্কুলে শিক্ষকতা করেন । পরে বনগাঁর নিকট গোপালনগর হরিপদ ইনস্টিটিউশনে আমৃত্যু জীবন পর্যন্ত  শিক্ষাকতা করতে থাকেন ।
সাহিত্য সম্বন্ধে আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি, ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে প্রবাসী পত্রিকায় “উপেক্ষিতা”  নামক গল্প প্রকাশের মধ্য দিয়ে  তাঁর সাহিত্য জীবনে সূত্রপাত  ।  ভাগলপুরের বাঙালিটোলায়  জমিদারির সেরেস্তায় নায়েবের কাজ নিয়ে চলে আসার পর “পথের পাঁচালী” উপন্যাস লেখার মধ্য দিয়ে ভাগলপুরে তাঁর লেখকজীবনের সূত্রপাত  ।  উল্লেখ থাকে যে,  ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে ভাগলপুরে বসবাস কালীন  সময়ে  “পথের পাঁচালী”  রচনা শুরু   এবং ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে সেই লেখার শেষ  ।  এই ভাগলপুরের বাঙালিটোলায় লেখক বিভূতিভূষণকে আবিষ্কার করেন যিনি, তাঁর নাম উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় । এখানে একটা কথা ভীষণ প্রাসঙ্গিক,  উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় সাহিত্য ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছেন দুজন বিখ্যাত সাহিত্যিককে আবিষ্কার করার কারণে । তাঁদের মধ্যে প্রথমজন হলেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় আর দ্বিতীয়জন হলেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় । উপেন্দ্রনাথ একদিকে সাহিত্যপাগল, অন্যদিকে মজলিসি । তাঁর বাড়ির কাছারিঘরে নিত্যদিন জমজমাট সাহিত্য আড্ডা বসতো । সেই আড্ডায়  অপরিচিত যুবক বিভূতিভূষণের ছিল নিত্য যাতায়াত । বৈঠকখানার সেই আড্ডায়  বিভিন্নরকম  সাহিত্য বিষয়ক আলোচনা ও  মন্তব্যে সকলে মেতে উঠতেন । কিন্তু এই যুবকটি কোনো আলোচনায়  অংশগ্রহণ করতেন  না । একদিন বৈশাখ মাসের  বিকেলের আড্ডায় কেউ উপস্থিত হলেন না ।  উপেন্দ্রনাথ কাছারিঘর থেকে নেমে উঁকি দিয়ে দেখলেন বাইরে রাস্তার উপরে একটি লণ্ঠনের  আলো,  সঙ্গে একটা ছায়ামূর্তি । সেই  ছায়ামূর্তি এসে হাজির হলো তাঁর বৈঠকখানায় । আড্ডারঘরে  একেবারে পেছনের বেঞ্চে গিয়ে বিভূতিভূষণ বসলেন । উপেন্দ্রনাথ বললেন, “একি ! আপনি পেছনে বসলেন কেন ?” প্রত্যুত্তরে বিভূতিভূষণ বললেন, “আরো অনেকে আসবেন, আমি কীভাবে সামনের বেঞ্চটিতে বসি ।“   উপেন্দ্রনাথ সঙ্গে সঙ্গে বললেন, “আজকে মনে হচ্ছে আর কেউ আসবেন  না । আসুন, আপনি সামনের চেয়ারটাতে বসুন ।“  নানাবিধ গালগল্পের মধ্যে উপেন্দ্রনাথ হঠাৎ বিভূতিভূষণকে জিজ্ঞেস করলেন, তা আপনার কবিতা কিংবা গল্প-উপন্যাস লেখার বাতিকটাতিক আছে নাকি ? বিভূতিভূষণ উত্তরে বললেন,  “না, তেমন কিছু নয়,  একটা উপন্যাস লিখেছি ।“  কিন্তু লেখাটি আদৌ মানসম্পন্ন হয়েছে কিনা বুঝতে পারছি না ! উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় বিভূতিভূষণকে উদ্দেশ্য করে বললেন,  “তাহলে উপন্যাসের খাতাটি একবার নিয়ে আসুন । দেখি কেমন উপন্যাস লিখেছেন আপনি ?”  এই কথোপকথনের  কয়েক দিনের মধ্যে  বিভূতিভূষণ তাঁর  “পথের পাঁচালী”  উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি জমা দিয়ে গেলেন উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে । তারপর কিছুদিন বাদে একদিন মজলিস শেষে সবাই যখন উঠে  যাচ্ছেন, ঠিক সেই মুহূর্তে উপেন্দ্রনাথ বিভূতিভূষণকে বললেন,  “আপনি এখনই যাবেন না । আপনার সঙ্গে একটু কথা আছে ।“
সাহিত্য আসর থেকে সবাই বিদায় নেওয়ার পর উপেন্দ্রনাথ বিভূতিভূষণকে বললেন,  “ভাই, আপনার হবে । হবে বলছি কেন ?  আপনার লেখা ভাল হয়েছে । কী এক অসাধারণ উপন্যাস লিখেছেন আপনি ! লেখাটা পড়েই মন-প্রাণ দুটিই জুড়িয়ে গেছে আমার । যাই হোক, এবার আসল কথা বলি, আমি ভাগলপুরে আর থাকছি না । কলকাতায় চলে যাচ্ছি । তবে আমার কলকাতায় যাওয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে, সেখান থেকে একটি পত্রিকা বের করব ‘বিচিত্রা’ নামে । সেখানেই  আমি ছাপতে চাই  আপনার এই  উপন্যাসটি । আপনার এই উপন্যাস দিয়েই যাত্রা শুরু করবে ‘বিচিত্রা’ পত্রিকাটি । এর  কিছুদিনের মধ্যেই কলকাতা থেকে প্রকাশিত হতে শুরু করল বিচিত্রা এবং বিভূতিভূষণের উপন্যাসও কিস্তিতে কিস্তিতে ।  উপন্যাসটি প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাহিত্যরসিক পাঠকমহলে গুঞ্জন শুরু হলো—কে এই লেখক ? যে সমাজ ও দেশ-গ্রামের তুচ্ছ জিনিসগুলো এত মনোমুগ্ধ করে তাঁর লেখনীতে ফুটিয়ে তুলেছেন  । হঠাৎ একদিন ‘শনিবারের চিঠি’র সম্পাদক সজনীকান্ত দাস বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে এসে উপস্থিত । নব্বই  টাকা দিয়ে বললেন—”বিভূতিবাবু, আপনি যদি অনুমতি দেন, তবে “পথের পাঁচালী”  উপন্যাসটি বই আকারে ছাপব ।“  এভাবেই শুরু বিভূতিভূষণের পথচলা ।
এই উপন্যাসটি ছিল বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের  প্রথম ও সবচেয়ে বিখ্যাত সাহিত্যকৃতী যা পরবর্তি কালে চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় “পথের পাঁচালী” চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বিশ্ব দরবারে বিখ্যাত হয়ে ওঠে । এছাড়াও তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস  ‘অপরাজিত’ রচনা করেন, যা ছিল পথের পাঁচালী উপন্যাসের পরবর্তী অংশ । এই দুই উপন্যাসের কাহিনীই ছিল তাঁর জীবনকেন্দ্রিক । চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায় এই উপন্যাসের কাহিনীর মাধ্যমে দুটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন যা ভীষণ ভাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করে । ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে কিশোর পাঠ্য ‘চাঁদের পাহাড়’ উপন্যাস ভারতবর্ষের তরুণদের কাছে অতি  জনপ্রিয় ও রোমাঞ্চকর  উপন্যাস। ২০১৩ সালে চিত্র পরিচালক কমলেশ্বর মুখার্জির পরিচালনায় ‘চাঁদের পাহাড়’ চলচ্চিত্র নির্মাণের মাধ্যমে যথেষ্ঠ খ্যাতি অর্জন করে ।
পুরস্কার হিসাবে বিখ্যাত ঔপন্যাসিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ইছামতী উপন্যাসের জন্য ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে মরণোত্তর রবীন্দ্র পুরস্কার পান । এছাড়াও তাঁর জন্মভূমি পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলার বনগাঁ মহকুমার পারমাদান বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের নাম লেখকের সম্মানার্থে  “বিভূতিভূষণ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য”  রাখা হয়েছে ।
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় শেষ জীবনের কয়েকটি বৎসর তাঁর ভালোবাসার শেষ চিহ্ন গৌরীকুঞ্জতে কাটিয়েছেন । তিনি তার বাড়িটির নাম স্ত্রীর নামে ‘গৌরীকুঞ্জ’ রেখেছিলেন ।
১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ১লা নভেম্বর বিহারের ঘাটশিলায় (অধুনা ঝাড়খণ্ডের) ৫৬ বৎসর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পরলোক গমন করেন । বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের সৃষ্টির গুনে ইতিহাসে চিরস্মরণীয়  হয়ে থাকবেন আজীবন । তাঁকে আমার শতকোটি প্রণাম ।  (তথ্যসূত্রঃ সংগৃহীত) ।
——–০———

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

বিশ্ব নিরামিষ দিবস কি, কেন পালিত হয় এবং এর গুরুত্ব।

আজ ‘বিশ্ব নিরামিষ দিবস’, পৃথিবীজুড়ে বাড়ছে ভেগানদের সংখ্যা,  ভেগান শব্দটির সঙ্গে অনেকেরই পরিচয় নেই। নিরামিষাশীরা যখন প্রাণীজাত সমস্ত খাবারের সঙ্গে আড়ি করেন, তখন তাদের বলে ভেগান। অর্থাৎ শুধু মাছ মাংস নয় ভেগানরা ডিম, দুধ আর দুধের যে কোনও খাবার যেমন ছানা, দই, পনীর, সন্দেশ, রসগোল্লাও খান না।

তার মানে, খাবারের প্লেটে মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, মধু কিছুই থাকবেনা।ভিগানিজমে বিশ্বাসীরা এটাকে নিয়ে গেছেন আরও দূরে যেমন চামড়া, উল বা মুক্তার মতো বিষয়গুলো থেকেও দুরে থাকতে হবে।এটাকেই বলা হয় ভিগানিজম, প্রতিনিয়ত এতে বিশ্বাসী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে বিশ্বজুড়ে।

প্রাণীর শরীর থেকে যেহেতু অনেক ধরনের ভাইরাস ছড়ায় এবং তা অতিমারির রূপও ধারণ করতে পারে, ফলে দেশ-বিদেশের বিজ্ঞানীদের একাংশ জোর দিচ্ছেন প্রাণীজ প্রোটিন বর্জন করার উপর।

পুষ্টিবিজ্ঞানীদের অনেকেই বলেন, নিরামিষ খেলে নাকি বেশিদিন বাঁচা যায়।

ভিগানুয়ারি একটা ব্রিটিশ চ্যারিটি সংস্থা যারা জানুয়ারি মাসে ভেগানিজমে অভ্যস্ত হওয়ার জন্য মানুষকে সহায়তা করে। তারা বলছে, প্রতি বছরই অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বাড়ছে। ২০১৯ সালে ১৯০ দেশের আড়াই লাখ মানুষ স্বাক্ষর করেছে।

যেহেতু প্রোটিনের বিকল্প উৎস আছে বাজারে সে কারণে ভিগানিজম বৈশ্বিক ইন্ডাস্ট্রিতে রূপ নিচ্ছে। ভেগানিজমের কেন্দ্রে রয়েছে প্রাণী জগতের প্রতি ভালোবাসা। পশুহত্যার বিরোধী অনেকেই এই খাদ্যাভ্যাস মেনে চলেন। বলা হয়, হিপিদের কারণেই নাকি এই ডায়েট সারা বিশ্বে জনপ্রিয় হয়েছে। শান্তির বাণী ছড়ানোর জন্য তাঁরা প্রাণীজাত খাবার বর্জনের ডাক দিয়েছিলেন। ভারতেও এই ডায়েট ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে।এই খাদ্যাভ্যাসে যেহেতু কোনও রকমের মাংস, মাছ, ডিম এবং দুগ্ধজাত জিনিস খাওয়া যায় না, তাই এগুলো থেকে যে ফ্যাট আসে, সেটাও শরীরে প্রবেশ করে না। অনেক রোগব্যাধিও যে কারণে শরীর থেকে দূরে থাকে। তাই রোগা হওয়ার চেষ্টায় অনেকেই এই ডায়েট মেনে চলেন। ‘ভেজিটেরিয়ান’ শব্দের প্রথম তিনটি ও শেষ দু’টি অক্ষর নিয়ে তৈরি হয়েছে ‘ভেগান’ (Vegan) শব্দটি।  ১৯৪৪ সালে যুক্তরাজ্যের ডাল্টন ওয়াটসন প্রতিষ্ঠা করেন ভেগান সোসাইটি। মি. ওয়াটসনই ‘ভেগান’ শব্দটির প্রচলন ঘটান।

প্রতি বছর  বিশ্ব নিরামিষ দিবস পালনের উদ্দেশ্য শুধুমাত্র নিরামিষ খাবারের প্রচারই নয়, পরিবেশ ও প্রাণীর সুরক্ষার পাশাপাশি নিরামিষ খাবারের উপকারিতা সম্পর্কেও মানুষকে সচেতন করা।

 

।।তথ্য সংগৃহীত : ইন্টারনেট ও বিভিন্ন ওয়েবপেজ।।

 

Share This
Categories
রিভিউ

আজ ১ নভেম্বর, ইতিহাসের দিকে চোখ বুলিয়ে দেখে নেব ইতিহাসের এই দিনে বিশিষ্টজনদের জন্ম-মৃত্যু, দিনসহ ঘটে যাওয়া ঘটনা।

আজ ১ নভেম্বর। এক নজরে দেখে নিই ইতিহাসের এই দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য ঘটনা, বিশিষ্টজনদের জন্ম-মৃত্যু দিনসহ গুরুত্বপূর্ণ আরও কিছু বিষয়।

 

দিবস—–

 

(ক) বিশ্ব ভেগান দিবস।

 

আজ যাদের জন্মদিন—-

১৮৭৮ – কার্লোস সাভেদ্রা লামাস, আর্জেন্টাইন রাজনৈতিক নেতা, নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ।

 

১৮৮৯ – ফিলিপ নোয়েল-বেকার, ব্যারন নোয়েল-বেকার, কানাডিয়ান শান্তি কর্মী, নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী।

 

১৯২৬ – আবু ইসহাক, বাংলাদেশি সাহিত্যিক।

১৯৩২ – একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ।

 

১৯৪৫ – নরেন্দ্র দাভোলকার , ভারতীয় চিকিৎসক,সমাজসেবী ও মহারাষ্ট্র অন্ধশ্রদ্ধা নির্মূলন সমিতির প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি।

 

১৯৪৫ – আবু সাইয়িদ, বাংলাদেশের সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী।

 

১৯৪৯ – মাইকেল ডি. গ্রিফিন, নাসার প্রধান প্রশাসক।

১৯৫০ – রবার্ট বি. লাফলিন, আমেরিকান পদার্থবিদ, নোবেল পুরস্কার পদার্থবিজ্ঞান বিজয়ী।

 

১৯৬২ – আনিস বাজমি, ভারতীয় চলচ্চিত্র পরিচালক, চিত্রনাট্যকার ও প্রযোজক।

১৯৬৩ – মার্ক হিউজ, ওয়েলসীয় ফুটবল খেলোয়াড় ও ম্যানেজার।

১৯৬৮ – আকরাম খান, সাবেক বাংলাদেশী ক্রিকেটার।

 

১৯৭৩ – ঐশ্বরিয়া রাই, ভারতীয় অভিনেত্রী।

 

১৯৭৪ – ভিভিএস লক্ষ্মণ, ভারতীয় ক্রিকেটার।

 

ইতিহাসের পাতায় আজকের দিনের ঘটনাবলী—-

২০০৭ – বাংলাদেশের বিচার বিভাগ কে নির্বাহি বিভাগ হতে আলাদা করা হয়।

২০২০ – চীনে আদমশুমারি শুরু হয়।

১৭৯৪ – ‘ক্যালকাটা মান্থলি জার্নাল’ নামে মাসিক পত্রিকা প্রকাশনা শুরু হয়।

১৮০০ – যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জন অ্যাডামস হলেন দেশটির প্রথম রাষ্ট্রপতি যিনি দি এক্সিকিউটিভ ম্যানসন এ থাকা শুরু করেন (পরবর্তীকালে যার নাম হয় হোয়াইট হাউস)

১৮২১ – পানামার ভূখণ্ড স্পেনের উপনিবেশিক কবল থেকে মুক্ত হয়ে কলোম্বিয়ার সাথে যুক্ত হয়।

১৮৫৮ – ব্রিটিশ রাজতন্ত্র ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছ থেকে ভারতের শাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

১৮৬৪ – প্রথম পোষ্ট অফিসের মাধ্যমে মানি অর্ডার পদ্ধতি চালু হয়।

১৮৮০ – কলকাতায় প্রথম ঘোড়ায় টানা ট্রাম চলাচল শুরু হয়।

১৮৯৭ – ইতালীয় ফূটবল দল জুভেন্টাস ফুটবল ক্লাব গঠিত হয়।

১৯০৩ – পানামার স্বাধীনতাকামী জনতার আন্দোলন সফল হয় এবং তারা স্বাধীনতা অর্জন করে।

১৯১৩ – সানফ্রান্সিসকোতে হরদালের নেতৃত্বে গদর (বিপ্লবী) আন্দোলনের সূচনা হয়।

১৯২৪ – মঙ্গোলীয় প্রজাতন্ত্রের জন্ম হয়।

১৯৪৪ – আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান পরিবহন সংস্থা (ICAO) গঠিত হয়।

১৯৫২ – যুক্তরাষ্ট্র সর্ব প্রথম হাইড্রোজেন বোমার পরীক্ষা চালায়। এই বোমাটি হিরোশিমাতে নিক্ষিপ্ত বোমার চেয়ে প্রায় পাঁচশো গুণ বেশি শক্তিশালী।

১৯৫৪ – আহমদ বিন বালার নেতৃত্বে আলজেরিয়ায় স্বাধীনতাকামী যুদ্ধ শুরু হয়।

১৯৫৫ – পর্তুগালে ভূমিকম্পে ৩০ হাজার লোক নিহত হয়।

১৯৫৬ – বাংলা ভাষা আন্দোলন (মানভূম) এর ফলস্বরূপ মানভূমের একটা অংশ পশ্চিমবঙ্গের সাথে যুক্ত হয় পুরুলিয়া জেলা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে।

১৯৫৬ – ভারতে রাজ্য পুনর্গঠন আইন, ১৯৫৬ মোতাবেক মহীশূর রাজ্য বর্তমানে কর্নাটক, কেরালা ও মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের আত্মপ্রকাশ ও পুনর্গঠন হয়।

১৯৬৩ – দক্ষিণ ভিয়েতনামের রাষ্ট্রপতি নগো দিন দিয়েম নিহত হন।

১৯৭৯ – বলিভিয়ার সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখল করে।

১৯৮১ – অ্যান্টিগুয়া ও বারমুডা স্বাধীন হয়।

১৯৯২ – বাংলাদেশে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়ার মূল ক্যাম্পাস শান্তিডাঙ্গাতে উদ্বোধন করা হয়।

 

এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন যারা—-

১৮৭৩ – দীনবন্ধু মিত্র, বাঙালি নাট্যকার ।

১৯০৩ – টেওডোর মম্‌জেন, জার্মান লেখক, নোবেল সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ী।

১৯১৫ – বাংলা ক্রিকেটের জনক সারদারঞ্জন রায়।

 

১৯৫০ – বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, বাঙালি কথাসাহিত্যিক।

 

১৯৫৫ – রামনাথ বিশ্বাস,ভারতীয় বিপ্লবী, সৈনিক, ভূপর্যটক ও ভ্রমণকাহিনী লেখক। ইনি ১৯৩৬ ও ১৯৩৭ সালে সাইকেলে চড়ে বিশ্বভ্রমণ করেন।

 

১৯৭০ – ফ্রাঁসোয়া মারিয়াক, নোবেলজয়ী ফরাসি সাহিত্যিক।

 

১৯৮৪ – নিবারণ পণ্ডিত, গণসঙ্গীত রচয়িতা।

 

১৯৯৩ – সেভেরো ওচোয়া, স্পেনীয় বায়োকেমিস্ট, নোবেল পুরস্কার চিকিৎসা/ওষুধ বিজয়ী।

 

১৯৯৬ – জুনিয়াস রিচার্ড জয়েবর্ধনে, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট

 

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

Share This