জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায় হলেন ভারতের একজন প্রখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক, গায়ক ও গীতিকার। তিনি গানকে ভালোবেসেছিলেন, ভালোবাসতেও শিখিয়েছিলেন। বাংলা রবীন্দ্রপরবর্তী যুগে বাংলা গানের জগতে নতুন দিশা দেখিয়েছিলেন জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়। তাঁর হাত ধরেই বাংলা গানের স্বর্ণযুগের সেতুবন্ধন হয়েছিল। ‘বধূয়া আমার চোখে জল এনেছে’, ‘এ কোন সকাল রাতের চেয়ে অন্ধকার’ তাঁর বিখ্যাত গানগুলোর মধ্যে অন্যতম৷ ২০১৩ সালে তাঁকে রাজ্য সঙ্গীত আকাদেমি থেকে জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। তাঁর এই সৃষ্টি বাঙালির তথা বাংলা গানের হৃদয়ে অমর হয়ে আছে ও থাকবে।
জন্ম ও পারিবারিক পরিচিতি—
১৯৩৪ সালের ১৩ ডিসেম্বর অবিভক্ত বাংলার চুঁচুড়ায় জন্মগ্রহণ করেন জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়। আট ভাইয়ের মধ্যে জটিলেশ্বর সবচেয়ে ছোট। দাদারা অনেকেই ভালো গান গাইতেন । গান গাওয়ার পেছনে তাঁর অনুপ্রেরণা মা অন্নপূর্ণা ও দাদা কপিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়। ১৯৫৫ সালে প্রথম আকাশবাণীতে গান গাওয়ার সুযোগ পান জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়। ১৯৭৪ সালে তাঁর রেকর্ড করা ‘এ কোন সকাল’ গানটি আজো বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানা দুরবস্থার কথা তুলে ধরতে ব্যবহার করা হয়।
সঙ্গীত চর্চা—
সতীনাথ মুখোপাধ্যায়, চিন্ময় লাহিড়ী ও সুধীন দাশগুপ্তের কাছ থেকে তিনি সঙ্গীতের শিক্ষা নেন।১৯৬৩ সালে মেগাফোন থেকে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম গানের ‘রেকর্ড’। তাঁর প্রথম রেকর্ড সুর ও কথা ছিল সুধীন দাশগুপ্তের। এরপর ১৯৬৪ সালে সলিল চৌধুরীর কথা ও সুরে মেগাফোন থেকেই বের হয় তাঁর দ্বিতীয় রেকর্ড, সেই বিখ্যাত গান ‘পাগল হাওয়া’। এর পর মেগাফোন, এইচএমভি থেকে নিয়মিত প্রকাশিত হতে শুরু করে তাঁর গাওয়া গান। বাংলা আধুনিক গানের স্বর্ণযুগে অন্য মাত্রা যোগ করে তাঁর কণ্ঠ ও সঙ্গীতারোপের কুশলতা। তাঁর জনপ্রিয় সৃষ্টির মধ্যে অন্যতম ”কেউ বলে ফাগুন/ কেউ বলে পলাশের মাস..”, ”আমার স্বপন কিনতে পারে”, ”আহা ভালোবেসে এই বুঝেছি”, ”এ কোন সকাল রাতের চেয়েও অন্ধকার”, ”কাঁদে গো শচীমাতা নিমাই নিমাই”, ”যদি সত্যিই আমি গান ভালোবেসে থাকি”..প্রভৃতি।
পুরস্কার ও সম্মাননা—
২০১৩ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সঙ্গীত আকাদেমি কর্তৃক জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ পদকে ভূষিত হন। এছাড়াও তিনি সেরা সঙ্গীত পরিচালকের পুরস্কার পেয়েছেন ‘দামু’ ও ‘নটী বিনোদিনী’ চলচ্চিত্রে সুরারোপ করে।
মৃত্যু—
২১ ডিসেম্বর ২০১৭সালে তিনি প্রয়াত হন। মৃত্যু কালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। মাল্টি-অরগ্যান ফেলিওর হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়।
।।তথ্য: সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।