Categories
প্রবন্ধ

বাংলা যাত্রাজগতের জনপ্রিয় যাত্রাপালার ভৈরব গঙ্গোপাধ্যায় – প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

বাংলা ও বাঙালির কালচারের সঙ্গে যাত্রা শিল্প রক্তের সঙ্গে মিশে রয়েছে। এখন সেই যাত্রা শিল্পে কিছুটা ভাটা পড়লেও এমন এক সময় ছিল যখন যাত্রা ছিলো মানুষের বিনোদনের এক বিশাল বড় অঙ্গ। গ্রামীন অনুষ্ঠান কিংবা শীতের শেষের মরসুমে যাত্রার আসার বসত দিকে দিকে।  বহু দিকপাল যাত্রা শিল্পীর নাম তখন ছিল মানুষের মুখে মুখে। তাদের মধ্যে এমন ই একজন কিংবদন্তী যাত্রা শিল্পী ছিলেন ভৈরব গঙ্গোপাধ্যায়। ভৈরব গঙ্গোপাধ্যায় একজন বিশিষ্ট দরদী মনের মরমী যাত্রা পালাকার। তিনি যাত্রাপালার প্রযোজক-নির্দেশক, গীতিকার ও সুরকারও ছিলেন। আজ তাঁর প্রয়াণ দিবস। এমন দিনে জেনে নেবো তাঁর সম্পর্কে কিছু কথা।

 

সংক্ষিপ্ত জীবনী—

 

ভৈরব গঙ্গোপাধ্যায় ১৯৩৪ সালের ২৫ নভেম্বর বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ, ব্রিটিশ ভারতের পূর্ব বর্ধমান জেলার মন্তেশ্বর থানার ‘মূল’ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।  অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন মূলগ্রামে।  তবে কৈশোর থেকে বাংলার গ্রামে গ্রামে অনুষ্ঠিত যাত্রার প্রতি তাঁর ভালবাসা ও ভক্তি তাঁকে যাত্রা শিল্পের প্রতি আকৃষ্ট করে।  কলকাতার চিৎপুরের যাত্রা জগতে ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রবেশ করে।  তাঁর রচিত প্রথম যাত্রাপালা “নচমহল” মঞ্চস্থ করে ‘সত্যম্বর অপেরা’।  প্রথম লিখিত যাত্রাপালায় তিনি দর্শকদের সম্মান অর্জন করেন। তিনি একজন সহানুভূতিশীল ব্যক্তি ছিলেন।  দরিদ্র সাধারণ মানুষের কথা, অন্যায়, অবিচার, অত্যাচার উঠে এসেছে তাঁর লেখায়।  ভৈরব গঙ্গোপাধ্যায় যেমন একজন অভিনেতা, পরিচালক ও প্রযোজক ছিলেন, তেমনি ছিলেন একজন গীতিকার ও সুরকার।  যাত্রাপালার গানেও যথেষ্ট দক্ষতা ছিল। পালা রচনার পাশাপাশি তিনি পরিচালনায়ও কাজ করেছেন।  ১৯৮৯ সালে, তিনি তাঁর নিজস্ব গ্রুপ “ভৈরব অপেরা” গঠন করেন এবং এটি প্রযোজনা করেন।  এরপর একে একে অনেক যাত্রা লিখেছেন।  তাঁর রচিত যাত্রাপালের সংখ্যা প্রায় আড়াই।  তার জনপ্রিয় যাত্রাপালার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পালাগুলি হল –

দেবী সুলতানা, শ্রীচরণেষু মা, একটি পয়সা, পদধ্বনি,  ভীষ্ম জননী গঙ্গা, মা মাটি মানুষ, অচল পয়সা, গান্ধারী জননী, সাত টাকার সন্তান, পাগলা গারদ, রক্তে ধোয়া ধান, মাতৃঋণ, ঠিকানা পশ্চিমবঙ্গ, কুবেরের পাশা,  জীবন এক জংশন, শান্তি তুমি কোথায়, স্বর্গের পরের স্টেশন, সত্যযুগ আসছে, দু টুকরো মা, ভিখারি ঈশ্বর, ঘরে ঘরে দুর্গা।

 

সম্মাননা—

 

সারা জীবন যাত্রাশিল্পের সাথে ঘনিষ্ঠ ভাবে যুক্ত ছিলেন তিনি। গ্রাম বাংলার সমাদর কুড়িয়েছেন আর অনেক পুরস্কার পেয়েছেন  ভৈরব গঙ্গোপাধ্যায় । তার গ্রামের বাড়িতে আবক্ষ মূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে সরকারি উদ্যোগে।

 

জীবনাবসান—

 

বাংলা যাত্রাজগতের জনপ্রিয় যাত্রাপালাকার ভৈরব গঙ্গোপাধ্যায় ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দের ২৮ শে ডিসেম্বর প্রয়াত হন। তাঁর প্রয়াণে যাত্রা শিল্প জগতে এক বিশাল শূন্যতা সৃষ্টি হয়। এই শিল্পে তাঁর অবদান আজও শ্রদ্ধারসাথে স্মরণ করে সকলে।

 

।। তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

Share This

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *