Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

বিভূতিভূষণ সরকার, বাঙালি বিপ্লবী ও শিল্পোদ্যোগী – প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।।

 

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের কঠোর পরিশ্রম ও লড়াই, যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত সৃঙ্খল মুক্ত হতে পেরেছভাপেরেছিল। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়, তার মূলে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে বিভূতিভূষণ সরকার  ছিলেন একজন অন্যতম বীর ও নির্ভীক বিপ্লবী। বিভূতিভূষণ সরকার ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি দেশমতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ রূপে।
বিভূতিভূষণ সরকার ছিলেন একজন ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামী ও শিল্পপতি।  তিনি কৃষ্ণা গ্লাস ওয়ার্কস ইন্ডাস্ট্রিজের প্রতিষ্ঠাতা।  বিভূতিভূষণ সরকার ১৯১৭ সালের ২ মে চট্টগ্রামের রাউজান থানার চিকদাইর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।বিভূতিভূষণ সরকার দুই পুত্র এবং এক কন্যার পিতা। তার এক পুত্র ডাঃ কুনাল সরকার প্রতিষ্ঠিত হৃৎপিণ্ড শল্যচিকিৎসক।
১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম বিপ্লব সংগঠিত হয়।  বিভূতিভূষণের বয়স তখন মাত্র ১৩ বছর।  কিন্তু এই বয়সেই তিনি বিপ্লবী দলে যোগ দেন।  চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের সাথে জড়িত বিপ্লবীদের সাথে তার যোগসাজশের কারণে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার হামলা মামলায় তাকে অভিযুক্ত ও গ্রেফতার করা হয়।  তাকে দোষী সাব্যস্ত করে বার্মার আকিয়াব প্রদেশের থারওয়াডি  কারাগারে বন্দী করা হয়।
কারাগার থেকে তিনি আসন্ন ম্যাট্রিক পরীক্ষার প্রস্ততি নিতে চেয়েছিলেন কিন্তু কর্তৃপক্ষ কারাগারে তাকে পড়াশোনার সুযোগ দানে অস্বীকার করলে তিনি প্রতিবাদ করেন। ম্যাট্রিক পরীক্ষার দুই মাস আগে তিনি জেল থেকে ছাড়া পেয়ে পরীক্ষা দিয়ে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। তিনি এরপর আইএসসি পরীক্ষায় দ্বিতীয়, বিএসসি পরীক্ষায় প্রথম শ্রেনীতে প্রথম এবং এমএসসিতে প্রথম শ্রেনীতে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। তিনি আইসিএস পরীক্ষার জন্য মনোনীত হন কিন্তু বিপ্লবী রাজনীতির সঙ্গে যোগ থাকার জন্য তাকে ব্রিটিশ সরকার পরীক্ষায় বসার অনুমতি দেয়নি।
এরপর বিভূতিভূষণ সরকার নিজেকে শিল্পপতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার সিদ্ধান্ত নেন।  তিনি চট্টগ্রাম থেকে কলকাতায় চলে আসেন এবং দক্ষিণ কলকাতার বিখ্যাত ডাক্তারের কন্যা কৃষ্ণাকে বিয়ে করেন।  ১৯৪৩ সালে, তিনি ৬ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে কলকাতার যাদবপুরে একটি শিল্প স্থাপন করেন।  তার স্ত্রীর নামানুসারে কোম্পানিটির নামকরণ করা হয় ‘কৃষ্ণ গ্লাস ওয়ার্কস’।  তার ব্যবস্থাপনায়, কৃষ্ণ গ্লাস ওয়ার্কস একটি প্রধান কাচের জিনিসপত্র উত্পাদনকারী কোম্পানিতে পরিণত হয়।  ১৯৬০ এর দশকের শেষের দিকে এটি ভারতের অন্যতম প্রধান কাচ শিল্পের মর্যাদা অর্জন করেছিল।  সেই সময়ে যাদবপুর, বারুইপুর এবং মুম্বাইতে কৃষ্ণ গ্লাস ফ্যাক্টরির তিনটি শাখা চালু হয়।  এগুলো প্রায় আড়াই হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেয়।  তিনি অল ইন্ডিয়া গ্লাস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিলের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।  এছাড়া তিনি দক্ষিণ কলকাতা রোটারি ক্লাবের সভাপতি নির্বাচিত হন।

বিভূতিভূষণ সরকার ১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি আকস্মিকভাবে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৫৫ বছর বয়সে মারা যান।
।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *