তিনি কলকাতার প্রাক্তন শেরিফ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৩ সালে তিনি এবং তার কয়েকজন বন্ধু কৃত্তিবাস নামে একটি বাংলা কবিতা পত্রিকা শুরু করেন। পরে তিনি বিভিন্ন প্রকাশনার জন্য লিখেছেন। তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বই হল আমি কী রকম ভাবে বেঁচে আছি, যুগলবন্দী (শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে), হঠাৎ নীরার জন্য, রাত্রির রঁদেভূ, শ্যামবাজারের মোড়ের আড্ডা, অর্ধেক জীবন, অরণ্যের দিনরাত্রি, অর্জুন, প্রথম আলো, সেই সময়, পূর্ব পশ্চিম, ভানু ও রাণু, মনের মানুষ ইত্যাদি।
১৯৩৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্ম, অধুনা বাংলাদেশের মাদারীপুরে। মাত্র চার বছর বয়সে তিনি কলকাতা চলে আসেন। পিতা কালীপদ গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন কলকাতার টাউন স্কুলের শিক্ষক । সেই সূত্রে ১৯৩৮ সাল থেকেই উত্তর কলকাতায় বসবাস শুরু । চার ভাইবোনের মধ্যে সুনীলই বড় । সংসারে অনটন ছিলই সেটা আরও বাড়ল দেশভাগের পর বিশাল পরিবারে তখন কালীপদর রোজগারই ভরসা । উপার্জনের চেষ্টাতেই ব্যস্ত থাকতেন তিনি । সুনীলকে বই পড়ার নেশাটি ধরিয়েছিলেন মা মীরা দেবী । তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ছাত্র বয়স থেকেই হুটহাট বেরিয়ে পড়তেন । জীবনের শেষ পর্যন্ত সেই বাউন্ডুলেপনা তাঁর কোনও দিন থামেনি । সাঁওতাল পরগণা থেকে প্যারিস , নিউ ইয়র্ক থেকে শান্তিনিকেতন , সুনীলের উৎসাহ সমান । তিনি নিজেই বলতেন , লেখক হওয়ার কোনও দুরাকাঙ্খা তার ছিল না । কলেজজীবনে সুনীলের স্বপ্ন বলতে একটাই , জাহাজের খালাসি হয়ে সাত সমুদ্র পাড়ি দেওয়া । খালাসির চাকরি সুনীলকে করতে হয়নি , কিন্তু বাংলা সাহিত্য নীললোহিতকে পেয়েছে । তিনি ২৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৭ সালে স্বাতী ব্যানার্জীকে বিয়ে করেন। তাদের একমাত্র ছেলে সৌভিকের জন্ম ২০ নভেম্বর।
গাঙ্গুলী বাংলা কাল্পনিক চরিত্র কাকাবাবু তৈরি করেছিলেন যার আসল নাম রাজা রায় চৌধুরী এবং তার আবেগ রহস্য সমাধান করা। তিনি কাকাবাবু সিরিজে 36টি উপন্যাস লিখেছেন যা ভারতীয় শিশুসাহিত্যে তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ১৯৮৫ সালে তিনি তাঁর সেই দিনগুলি (সেই সময়) উপন্যাসের জন্য সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার পান। গঙ্গোপাধ্যায় নীল লোহিত, সনাতন পাঠক এবং নীল উপাধ্যায় নামে কলম ব্যবহার করেছেন। তিনি বর্তমান যুগের অন্যতম জনপ্রিয়, সৃজনশীল ও নন্দিত বাঙালি লেখক হিসেবে বিবেচিত।
বাংলাভাষী এই ভারতীয় সাহিত্যিক একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, ছোটোগল্পকার, সম্পাদক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট হিসাবে অজস্র স্মরণীয় রচনা উপহার দিয়েছেন।সুনীলের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ একা এবং কয়েকজন ’ প্রকাশ পায় ১৯৫৮ সালে ।সুনীলের প্রথম কবিতা দেশ – এ প্রকাশিত হয় , তার প্রথম উপন্যাসও দেশেতেই প্রকাশিত হয় । ‘ আত্মপ্রকাশ ’ বেরোয় ১৯৬৬ তারপর একে একে অরণ্যের দিনরাত্রি , প্রতিদ্বন্দ্বী , অর্জুন , জীবন যে রকম …। ১৯৭১ সালে সন্তু – কাকাবাবু সিরিজ শুরু হয়ে গিয়েছিল । আশির দশকে হাত দিলেন বৃহৎ উপন্যাসে । জন্ম নিল ‘ সেই সময় ‘ । ক্রমান্বয়ে রচিত হলো পূর্ব – পশ্চিম , প্রথম আলো …। উনিশ থেকে আটাত্তর । এর মধ্যে সুনীলের শুধু বইয়ের সংখ্যাই আড়াইশোর বেশি । সম্পাদিত গ্রন্থ পঞ্চাশের অধিক । কবিতা , ছড়া , গল্প , উপন্যাস , ভ্রমণসাহিত্য , নাটক , চিত্রনাট্য , শিশুসাহিত্য – এতগুলি শাখায় সাবলীল বিচরণ ছিল তাঁর।দেশি – বিদেশি অজস্র ভাষায় অনুবাদ হয়েছে তাঁর লেখা । সত্যজিৎ রায় , মৃণাল সেন , তপন সিংহ , গৌতম ঘোষের মতো পরিচালকরা সুনীলের কাহিনি অবলম্বনে চলচ্চিত্র করেছেন । তাঁর গল্প থেকে একাধিক টেলিধারাবাহিক হয়েছে । সুনীলের নিজের চিত্রনাট্যে তৈরি ছবি ‘ শোধ ’ জাতীয় পুরস্কার পায় । ‘ সিটি অফ জয় ’ .ছবির মুখ্য পরামর্শদাতাও ছিলেন সুনীলই । ভালবাসতেন কবিতা পড়তে , গান গাইতে । মঞ্চে অভিনয়ও করেছিলেন । কলকাতার শেরিফ হয়েছিলেন একবার । বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি অধ্যাপকও হয়েছিলেন । সাহিত্য অকাদেমির সভাপতির দায়িত্বও সামলাচ্ছিলেন । সুনীলের মতো মজলিসি মানুষ খুব কম দেখা যেত ।
পুরষ্কার—
১৯৭২: আনন্দ পুরস্কার সাধারণ বিভাগে।
১৯৭৯: আকাশবাণী কলকাতা কর্তৃক “জাতীয় কবি” সম্মান প্রদান করা হয়।
১৯৮৩: সেই সোময় বইয়ের জন্য বঙ্কিম পুরস্কার।
১৯৮৪: সেই সোময় বইটির জন্য সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার।
১৯৮৯: পূর্ব-পশ্চিম বইটির জন্য আনন্দ পুরস্কার।
১৯৮৯: সাহিত্য সেতু পুরস্কার।
১৯৯৯: Annada-Snowcem puroska গল্পটির জন্য Nil Lohiter Golpo
২০০৩: অন্নদাশঙ্কর পুরুষ্কার।
২০০৪: প্রথম আলোর জন্য সরস্বতী সম্মান।
২০১১: হিন্দু সাহিত্য পুরস্কার, সংক্ষিপ্ত তালিকা, ফকির
২০১২: সেরা বাঙ্গালি লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড স্টার আনন্দ দ্বারা।
সম্মাননা—
২০০২: কলকাতার শেরিফ।
অনারারি ডি.লিট. বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
২২ শে অক্টোবর ২০১২ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কবি লেখক কৃত্তিবাস যুগের প্রানপুরুষ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মহাপ্রয়ান ঘটে ।
।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।