Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

নদীয়ার শান্তিপুরের অষ্টক গান : এক প্রাচীন সংস্কৃতির পুনর্জীবনের গল্প।।।

পশ্চিমবঙ্গের ও বাংলাদেশের প্রাচীন লোকজ সংস্কৃতির একটি অন্যতম প্রধান ধারা। এটি সাধারণতঃ ‘বাঙালি হিন্দু’ সমাজে চৈত্র সংক্রান্তির নানাবিধ আচার-অনুষ্ঠানের সময় পরিবেশিত হয়ে থাক। সাধারণভাবে, চৈত্র মাসের শেষ-তিন দিন “গাজন উৎসবে “শিবের গাজন” উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থানে, বিশেষতঃ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সংগঠিত লোক মেলায় বিভিন্ন ধরনের গান ও আচার-অনুষ্ঠানাদিতে অন্যতম প্রধান আনুষঙ্গিক পরিবেশনা হিসেবে আয়োজন করা হয় অষ্টক গীত ও নৃত্য।ঠিক কি কারণে বা কোথা থেকে “অষ্টক” নাম উদ্ভব ঘটেছে সে সম্পর্কে সঠিকভাবে কোনো তথ্য জানা যায় না; বরং এই বিষয়ে নান-ধরনের মতামত প্রচলিত রয়েছে।

কেউ বলেন, “এতে আটটি বৈষ্ণবীয় প্রসঙ্গ থাকায়”; কেউ বলেন, “প্রতি দলে আট জনে মিলে রাধা-কৃষ্ণের উক্তি-প্রত্যুক্তিমূলক নাট্যধর্মী গীত পরিবেশন করায়”; কারো মতে, “এটি শ্রীকৃষ্ণের অষ্টপ্রহরের লীলা-সংক্রান্ত নাট্যগীতি হওয়ায়”- একে “অষ্টক গীত বা নৃত্য” বলা হয়। আবার এ সম্পর্কে কোন কোন গবেষকের মতে, “এ-সব গানে সনাতন ধর্মীদের অষ্ট-অবতার রাধা, কৃষ্ণ, সুবল, বিশাখা, ললিতা, বৃন্দা, বড়িমাই ও বলরাম-এর বিভিন্ন কার্য-চরিত্রের সমন্বয় ঘটেছে বলে এটি অষ্টক গীত বা নৃত্য বলে পরিচিত”; আবার কেও কেও বলেন, “অবতার শ্রীকৃষ্ণ তার অষ্ট বা আটজন শখীকে নিয়ে লীলা করতেন এবং এ-গানে সেই উপাখ্যান আলোচিত হয় বলে একে অষ্টক গীত / নৃত্য বলে”। অন্য-দিকে, বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, এই গীত / নৃত্যে “বাসলী দেবী”-এর বন্দনাও রয়েছে, যা মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের অন্যতম নিদর্শন বড়ু চন্ডীদাস রচিত “শ্রীকৃষ্ণকীর্তন” কাব্যের ভণিতায়ও লক্ষণীয়; তাই বলা যায় উৎস যা-ই হোক না কেন, লোক-সংস্কৃতির এই ধারাটি সুদূর প্রাচীন কাল হতে এদেশের লোক-মানসের সাথে প্রচলিত প্রথার একটি অংশ হিসেবে পরিগণিত হয়ে আসছে।

সেরকমই নদীয়ার শান্তিপুরে প্রায় ৭০বছর ধরে চিরাচরিত ভাবে হয়ে আসছে অষ্টক গানের আসর। বিভিন্ন সাজে সুসজ্জিত হয়ে মানুষের বাড়ি থেকে বিভিন্ন জায়গায় পরিবেশিত হচ্ছে অষ্টক গান। এলাকার মানুষ খুবই খুশি এই প্রাচীন রীতির কারণে। উদ্যোক্তারা জানাচ্ছে হারিয়ে যেতে বসেছে এই প্রাচীন সংস্কৃতি তবে তারা গুটি কয়েক মানুষ আজও আই রীতিকে বাঁচিয়ে রাখার প্রানপন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এলাকার যুব সমাজো আজ হাত বাড়িয়েছে আই রীতিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ।

Share This

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *