Categories
প্রবন্ধ

স্মরণে – ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী ও ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের একজন শহীদ, সুখদেব থাপার।।।।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের কঠোর পরিশ্রম ও লড়াই, যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত সৃঙ্খল মুক্ত হতে পেরেছভাপেরেছিল। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়, তার মূলে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে সুখদেব থাপার ছিলেন একজন অন্যতম বীর ও নির্ভীক বিপ্লবী।

সুখদেব থাপার ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি দেশমতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ রূপে। সুখদেব থাপার ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী ও ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের একজন শহীদ। তিনি শহীদ ভগৎ সিংহের এক অনন্য বন্ধু হিসাবেও পরিচিত।
বিপ্লবী সুখদেব পঞ্জাবের লুধিয়ানায় ১৯০৮ সালের ১৫ মে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব থেকেই তিনি ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অত্যাচার দেখেছেন এবং সেই কারণেই তিনি দাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙে বিপ্লবী দলে যোগ দেন। সুখদেবের পিতার নাম শ্রী রামলাল থাপার। তিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট সমাজসেবক। সুখদেবের জন্মের ২ বছর পর তার বাবা মারা যান। সুখদেবকে তার কাকা শ্রী অচিন্তরাম থাপার লালন-পালন করেন। সুখদেবের জন্মের সময় তার কাকা অচিন্তরাম জেল খাটছিলেন। সুখদেব এমন এক বৈপ্লবিক পরিবেশে বড় হয়। সুখদেব যখন তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র, তখন রাজ্যপাল তাঁর স্কুলে আসেন। প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে সমস্ত ছাত্ররা রাজ্যপালকে সালাম দিল, কিন্তু সুখদেব তা করল না। সুখদেবকে তখন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল কেন তিনি গভর্নরকে স্যালুট করেননি, সুখদেব স্পষ্টভাবে বলেছিলেন, তিনি কোনও ইংরেজকে স্যালুট করবেন না।
প্রচন্ড সাহসী ছিলেন তিনি। এরপর সুখদেব আর ভগৎ সিং মিলে পরবর্তীতে বিপ্লবী দলের কাজ চালিয়ে গেলো। একটা বাড়ী ভাড়া নিল। দিনের বেলায় বাইরে থাকত আর রাত করে ফিরত। এভাবেই বাড়ির মালিক ও আশপাশের লোকজনের সন্দেহ হলো। এ কারণে সুখদেব বুদ্ধি করে নিজের মাকে নিয়ে এলো সেই বাড়িতে । এবার কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে, সে উত্তর দিত সে কাজ করে, অনেক দূরে রাস্তার কাজ চলছে। দিন-রাত কাজ করে বাড়ি আসতে দেরি হয়। এই ভাবেই চলতে থাকল তাদের গোপন কার্যকলাপ। চোখে মুখে তখন দেশকে স্বাধীন করার স্বপ্ন। য ভাবেই হোক এই পরাধীনতার গ্লানি কাটাতে হবে এবং ইংরেজ দের এ দেশ থেকে তাড়িয়ে দেশ মাতৃকার শৃঙ্খল মুক্ত করতে হবে।
খুব সাহসী ছিলেন সুখদেব। লাহোরে বোমা তৈরির কাজ শুরু হলে ফিরোজপুর থেকে বোমার কন্টেইনার আনতেন। একবার মালামাল আনতে গিয়ে সিপাহীদের ধাবায় চলে গিয়েছিলেন। সুখদেবকে অনেক মার খেতে হয়েছে। সুখদেব চুপচাপ মারতে থাকলেন, কিন্তু কিছু বললেন না, কারণ তার কাছে তখন পিস্তল, কার্তুজ এবং বোমা বানানোর উপকরণ ছিল। এক সিপাহী বলল এই থলিতে কি আছে, সুখদেব হেসে বুদ্ধি দিয়ে বলল- সিপাহী জি এর মধ্যে পিস্তল আর কার্তুজ আছে, সিপাহীরা এটা কে মজা ভেবে হেসে চলে যায়। তার সাধারন বুদ্ধিমত্তায় সে যাত্রায় বেঁচে যায়।
সাইমন কমিশনের বিরোধিতা করতে গিয়ে লাঠিচার্জে লালা লাজপত রায় মারা গেলে স্যান্ডার্সকে হত্যাকারী বিপ্লবীদের মধ্যে সুখদেবও ছিল। এই ঘটনা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল এবং বিপ্লবীরা এবং সমগ্র দেশ স্যান্ডার্সকে হত্যার আননদ উদযাপন করেছিল। স্যান্ডার্স হত্যা মামলাটি ‘লাহোর ষড়যন্ত্র’ নামে পরিচিতি পায়। এই মামলায় শিবরাম রাজগুরু, সুখদেব ও ভগৎ সিংকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ১৯৩১ সালের ২৩শে মার্চ বিপ্লবীরা ফাঁসির কাষ্ঠে বন্দী হয়ে দেশের তরুণদের হৃদয়ে স্বাধীনতার জন্য নতুন আকাঙ্ক্ষার জন্ম দেয়। লাহোর কারাগারে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পরে শিবরাম রাজগুরু, ভগত সিং এবং সুখদেব থাপারের মরদেহ চরম গোপনীয়তায় দাহ করা হয়। মাত্র ২৪ বছর বয়সে সুখদেব দেশের জন্য নিজেকে বলি দেন।
তাঁদের স্মরণে ভারতের পাঞ্জাবের ফিরোজপুর জেলার শতদ্রু নদীর তীরে হুসেইনিওয়ালা গ্রামে নির্মিত হয় জাতীয় স্মৃতিসৌধ । প্রতি বছর শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করতে ২৩ শে মার্চ তাঁদের মৃত্যুর দিনটিকে স্মরণে রেখে “শহীদ দিবস” উদযাপিত হয়।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *