Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

মূল্যবান মনুষ্য জীবন ও (অহং)আমি : স্বামী আত্মভোলানন্দ(পরিব্রাজক)।।।

আমাদের সবার পরম সৌভাগ্য পুণ্যভূমি,পবিত্রভূমি ভারতবর্ষ এর পবিত্র রত্নগর্ভা ভূমিতে আমরা জন্মলাভ করেছি। আধ্যাত্মিক দেশ তপোভূমি আমাদের এই ভারতবর্ষ। আমাদের ভারতমাতা স্বমহিমায় উজ্জ্বল।ভারতভূমিতে জন্মলাভ করে সুদুর্লভ এই মনুষ্য জীবন লাভ। ভা – অর্থে জ্যোতি। রত – অর্থে নিমগ্ন, নিবিষ্ট।

এ জ্যোতি অনন্ত জ্যোতি। জ্যোতির সাধনায় নিবিষ্ট যে ভূখণ্ড, তাই আমাদের পবিত্রভূমি, ভারতভূমি। সৌন্দর্যময় আমাদের এই ভারতবর্ষ এর সুন্দর প্রকৃতি ও সকল নৈসর্গিক উপাদানে সমৃদ্ধ। এই মনোরম, অনুপম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অনন্তকাল ধরে আমাদের চিত্তে শিক্ষা ও আনন্দের অমৃতধারা জাগিয়ে তুলছে। আমাদের শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রকৃতির অবদান ও অপরিসীম।
তাই, কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায় বলছেন:-
*ভায়ের মায়ের এত স্নেহ,
কোথায় গেলে পাবে কেহ
ওমা তোমার চরণ দুটি বক্ষে আমার ধরি
আমার এই দেশেতে জন্ম যেন এই দেশেতে মরি।*
তবুও আমি/আমরা আমার আমার করি, আমি (অহং) এই অহঙ্কারটা নষ্ট হয় না।
আমাদের মূল্যবান মনুষ্য জীবনে আমরা মা-বাবা, বোন-ভাই, (পারিবারিক জীবনে স্ত্রী-স্বামী, কন্যা-পুত্র সহ) শিক্ষিকা-শিক্ষক, অধ্যাপিকা-অধ্যাপক,স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, বন্ধু-প্রতিবেশী, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয়গুরু, আধ্যাত্মিক গুরু ইত্যাদি ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান সবার কাছ থেকে শিখেছি, জ্ঞান অর্জন করেছি, আমরা শিক্ষার্থী, আমাদের জীবনে শিক্ষাক্ষেত্রে ইনাদের অবদান অতিব মূল্যবান। আমাদের জন্য জীবনের সব দিক থেকে শিক্ষক আছে। কিন্তু, তবুও আমার আজও মনে হয় জীবনে আমার কিছুই শিক্ষা হয়নি, এখনও আমি শিক্ষার্থী। তবুও আমার আমার করি, আমি (অহং) এই অহঙ্কারটা নষ্ট হয় না।
আমাদের মনুষ্য জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ করা সোজা, কিন্তু ত্যাগ করা কঠিন। যে ত্যাগ করতে পারে সে প্রকৃত সাধু। ত্যাগ না করলে ভগবানে ভক্তি আসে না। ত্যাগ নিশ্চিত চাই। ত্যাগ হচ্ছে-আদর্শ সন্ন্যাসী জীবন। অহঙ্কারটা নষ্ট করা। সে-ই ঠিক ঠিক ত্যাগী যে নিজেকে সম্পূর্ণ রূপে দিয়ে দিয়েছে ভগবানকে, আমার বলতে কিছু রাখে নি।
মিথ্যা বলা মহাপাপ , মিথ্যার মতো মহাপাপ দুনিয়াতে আর নেই। পরনিন্দা, পরচর্চা কখনো করতে নেই। উহাতে নিজেরই ক্ষতি হয়। সব সময় মানুষের গুণ দেখতে হয়। একটু গুণ থাকলেও তাকে বড় করে দেখতে হবে, সম্মান দিতে হবে, প্রশংসা করতে হবে। গুণের আদর না করলে মানুষ বড় হতে পারে না, নিজের মনও উদার হয় না। আমি (অহং) অহঙ্কারটা নষ্ট হয় না।
আমাদের সুন্দর ভারতীয় সমাজে অনন্তকাল ধরে ঋষি, মুনি, সাধু, সন্ন্যাসী, অনেক বিখ্যাত দার্শনিক, অনেক বিখ্যাত বিজ্ঞানী, অনেক বিখ্যাত মহাপুরুষ, সাধুমহাত্মা, মহামানব, অনেক বিখ্যাত মানুষ,সময়ে সময়ে নিজেদের প্রভাব, মহিমা, জ্ঞানের, তপস্যার, আবিস্কারের অবদান রেখে গেছেন এই আমাদের ভারতবর্ষে, মানব সমাজের জন্য, আমাদের শিক্ষার জন্য। তবুও আমাদের শিক্ষা সম্পূর্ণ হয় না। তবুও আমি/আমরা আমার আমার করি, তবুও আমাদের আমি (অহং) অহঙ্কারটা নষ্ট হয় না।
অহংকার কত প্রকারের হয় :-
১. উচ্চশিক্ষার, জ্ঞান এর অহংকার!
২. উচ্চ কুলের জন্মের অহংকার।
৩. রূপের অহংকার!
৪. এবং ধন সম্পদের অহংকার।
আরও কত প্রকারের হয় অহংকার।
অহংকার সবই ব্যর্থ কারণ আমি/আপনি এসব কিছুই সাথে নিয়ে যেতে পারবেন না আপনার সাথে যদি কিছু নিয়ে যান, সেটা হলো এই মধু মাখা সুধা মাখা গুরু-নাম, ভগবান এর নাম l ধর্মের পথে হাঁটলে কষ্ট ঠিকই হবে কিন্তু জয় আপনারই হবে। মনুষ্য জীবন সুদুর্লভ, খুব কষ্ট করে মানুষ জীবন পাওয়া গেছে তাই আমাদের মনুষ্য জীবনের সৎ ব্যবহার করা উচিত । *কিসের এত অহংকার ঘুম ভাঙলেই গতকাল না ভাঙলে পরকাল। মাটির দেহ মাটি হবে পুড়ে হবে ছাই এ দেহ মোর পচা দেহ গৌরব, অহংকার কিসের ভাই।*
স্বামী প্রণবানন্দজি মহারাজ ও বলছেন:- “সকল জন্মের মধ্যে মনুষ্য জন্মই শ্রেষ্ঠ। এই জন্মেই মানুষ ভগবানকে ডাকিতে পারে ও লাভ করিতে পারে। আবার মনুষ্যগণের মধ্যে যিনি ভগবানের আরাধনা করেন, তিনি আরো সৌভাগ্যশালী। যিনি সতত তাঁহার চিন্তায় নিমগ্ন থাকেন, তিনি তাহার চেয়ে ও সৌভাগ্যশালী। আর যিনি সাধনায় সিদ্ধিলাভ করিয়া তাঁহারই ঐশ্বর্যে নিয়ত ডুবিয়া থাকেন, তিনি জগতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ও মহান।”
আজ আমাদের মনুষ্য সমাজে সব কিছুর দাম বেড়েছে মিথ্যা, ঘৃণা, জাল, প্রতারণা। আর দাম কমেছে শুধু মানুষের প্রতি মানুষের বিশ্বাস, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর দাম কমেছে মানুষের জীবনের মূল্য। তবুও আমাদের আমি (অহং) অহঙ্কারটা নষ্ট হয় না। আমি/আমরা আমার আমার করি….! তবুও আমাদের শিক্ষা সম্পূর্ণ হয় না।
ওঁ গুরু কৃপা হি কেবলম্ ….!
স্বামী আত্মভোলানন্দ(পরিব্রাজক) l

Share This

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *