Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

“বিশ্ব পরিবেশ দিবস” সম্পর্কে কিছু কথা : দিলীপ রায় ।।।

“আজ বাঁচাও সবুজ, জাগাও সবুজ, ঘোচাও হিংসার রেশ
মনের সবুজ বাঁচলে তবেই
বাঁচবে এ পরিবেশ ।”

বিশ্ব পরিবেশ দিবসের তাৎপর্য হলো, দিবসটি বিশ্বের বা একটি নির্দিষ্ট দেশের সম্মুখীন পরিবেশগত সমস্যা সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা সৃষ্টি করতে পালন করা ।

উদ্ভিদ, মানুষ যে পারিপার্শ্বিক অবস্থার মধ্যে জীবন যাপন করে এবং যে দৃশ্য ও অদৃশ্য উপাদান মানুষের জীবন জীবিকার উপর প্রভাব বিস্তার করে — সম্মিলিতভাবে তাকে পরিবেশ বলে ।
মানুষের চারিদিকে যে প্রাকৃতিক ও মানবিক স্পর্শ রয়েছে যাদের ছাড়া মানুষের অস্তিত্ব সম্ভব নয়, সেসব বিষয়গুলিকে একত্রিতভাবে বলা হয় পরিবেশ ।
সোজা কথা – আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে তাই আমাদের পরিবেশ । অর্থাৎ মাটি, জল, বায়ু, গাছপালা, জীবজন্তু, ইত্যাদি আমাদের পরিবেশ । পরিবেশ সম্পর্কে মাসটন বেটস্‌ বলেছেন, “পরিবেশ হলো সেসব বাহ্যিক অবস্থার সমষ্টি যা জীবনের বৃদ্ধি ও সমৃদ্ধিকে প্রভাবিত করে ।”
এবার দিবসটির ইতিহাসের দিকে নজর দেওয়া যাক । ১৯৬৮ সালের ২০শে মে জাতিসংঘের অর্থনীতি ও সামাজিক পরিষদের কাছে একটি চিঠি পাঠায় সুইডেন সরকার । চিঠির বিষয়বস্তু ছিল প্রকৃতি ও পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে তাঁদের গভীর উদ্বেগের কথা । সে বছরই জাতিসংঘের পক্ষ থেকে পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি সাধারণ অধিবেশনের আলচ্যসূচিতে অন্তর্ভূক্ত করা হয় । পরের বছর জাতিসংঘের পক্ষ থেকে পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা এবং সমাধানের উপায় খুঁজতে সদস্য রাষ্ট্রগুলীর সম্মতিতে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে ১৯৭২ সালে ৫ থেকে ১৫ জুন জাতিসংঘের মানব পরিবেশ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় । সম্মেলনটি ইতিহাসের প্রথম পরিবেশ-বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের স্বীকৃতি পায় । ১৯৭৪ সালে সম্মেলনের প্রথম দিন ৫ই জুনকে জাতিসংঘ “পরবেশ দিবস” হিসেবে ঘোষণা করে । বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব পরিবেশ দিবস । প্রতি বছর ৫ জুন ‘পরিবেশ’ দূষণের হাত থেকে এ বিশ্বকে বাঁচানোর অঙ্গীকার নিয়ে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে । বিশ্ব পরিবেশ দিবস প্রতি বছর ৫ই জুন বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক কর্মোদ্যোগ আর জনসচেতনতার মাধ্যমে পরিবেশ সচেতনতার লক্ষ্যে পালিত দিবস ।
প্রাকৃতিক ভারসাম্য ঠিকমতো বজায় রেখে মানুষ যাতে এই পৃথিবীর বুকে অন্যান্য সমস্ত জীবের সাথে একাত্ম হয়ে এক সুন্দর পরিবেশে বেঁচে থাকে সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করাই বিশ্ব পরিবেশ দিবসের মূল উদ্দেশ্য ।
এবার আসছি পরিবেশবিদরা কী বলছেন ? বিভিন্ন পরিবেশবিদরা বলছেন, পর্যাপ্ত গাছের অভাবে জলের বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে গেছে, এর ফলে এখানে মাইক্রোক্লাইমেট তথা আশেপাশের এলাকা থেকে ভিন্ন জলবায়ু পরিস্থিতি বিরাজ করছে । গাছ না লাগালে আগামী ২০বছর পর এখানে অক্সিজেনের স্বল্পতা দেখা দিতে পারে ।
অনেক পরিবেশবিদরা বলছেন, গাছ মূলত ‘বাষ্পমোচন ও ঘনীভবন’ — এই দুটি প্রক্রিয়ায় বৃষ্টি আনতে সাহায্য করে । গাছ তার শোষিত জলের ১০ শতাংশ সালোকসংশ্লেষণে ব্যবহার করে । আর বাকী ৯০ শতাংশই প্রকৃতিতে বাষ্পমোচন করে দেয় । এতে বাতাসে ভাসমান জলীয়কণার পরিমান বাড়ে, যা বৃষ্টির প্রধান উপাদান । বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, এখন গাছও কম, তাই বৃষ্টি কম ।
“দূষণ মুক্ত সবুজ পৃথিবী গড়তে
গাছ লাগান, প্রাণ বাঁচান ।”
এখানে একটি ঘটনার উল্লেখ না করে পারলাম না । জানেন কি, এক টাকাও খরচ না করে দেশের স্বচ্ছতম নদীর তকমা পেয়েছে মেঘালয়ের এক পাহাড়ি নদী । শুধুমাত্র স্থানীয় মানুষের সচেতনতার ফল । মেঘালয়ের পশ্চিম জয়ন্তিয়া পাহাড় জেলায় অবস্থিত ছোট্টো পরিচ্ছন্ন এবং তকতকে শহর ডাউকি । ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে অবস্থিত ডাউকি কিন্তু দেশের আর পাঁচটা সীমান্তের মতো সবসময় উত্তপ্ত থাকে না । পরিবেশ যেন সর্বদাই মনোরম। যদিও সেনা টহল সবসময় । ডাউকির কাছেই অবস্থিত এশিয়ার সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রাম মাওলিনং । ডাউকির সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান হল উমঙ্গট নদী ।
অথচ গঙ্গা দূষণ রোধে ও পরিবেশ রক্ষায় না জানি ভারত সরকার কত হাজার কোটি টাকা খরচ করে যাচ্ছে ! অথচ ফল কী হচ্ছে, আজও মানুষেরা অজানা !
এবছরের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের থিম – প্লাস্টিক-দূষণ মোকাবিলার পথ সন্ধান করা । ২০২৩ সালের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য হলো “প্লাস্টিক দূষণ সমাধানে সামিল হই সকলে ।” দিবসের স্লোগান নির্ধারন হয়েছে, “সবাই মিলে করি পণ, বন্ধ হবে প্লাস্টিক দূষণ ।” দেশের সুশীল নাগরিক সমাজও পরিবেশ দিবসের স্লোগানের সাথে সামিল হন, আবেদন রইলো । (তথ্যসূত্রঃ সংগৃহীত)
——-০———–

Share This

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *