Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

মূল্যবান মনুষ্য জীবন ও শ্রাবণ মাসের মহিমা : স্বামী আত্মভোলানন্দ (পরিব্রাজক)।

ওঁ নমঃ শ্রীভগবতে প্রনবায়!

আমাদের এই সুন্দর মূল্যবান মনুষ্য জীবনে পবিত্র শ্রাবণ মাস সত্য সনাতন ধর্মে সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সারা বছর শিবপুজো করা হলেও এই শ্রাবণ মাসে দেবাদিদেব মহাদেবকে নিষ্ঠাভরে ও নিয়ম মেনে পুজো করা হয়, বিশেষভাবে সোমবার। কারণ, এটি দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ু ও বর্ষার আগমনের সাথে যুক্ত। শ্রাবণ মাস পঞ্জিকার চতুর্থ মাস এবং এটি ভগবান শিবের মাস হিসেবে পরিচিত। এই মাসে শিবের পূজা ও উপাসনা করা হয় এবং এটি সত্য সনাতন ধর্মানুসারে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। শ্রাবণ মাসের প্রতিটি সোমবার ভক্তদের কাছে শিবের উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত এবং এই দিনে উপবাস ও পূজা করার বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে। শ্রাবণ মাস দেবাদিদেব মহাদেবের প্রিয় মাস হিসেবে বিবেচিত হয় এবং এই মাসে শিবের পূজা করলে বিশেষ ফল লাভ করা যায়।

পৌরাণিক ব্যাখ্যা অনুযায়ী, শ্রাবণ মাসেই সমুদ্র মন্থনের ঘটনা ঘটেছিল। সমুদ্র উত্থিত হলাহল বিষ থেকে গোটা ধরিত্রীকে রক্ষা করার জন্য স্বয়ং মহাদেব নিজ কণ্ঠে হলাহল বিষ ধারণ করেছিলেন। বিষের প্রভাবে মহাদেবের কন্ঠ নীল হয়ে ওঠে। এই কারণেই মহাদেবের অপর নাম নীলকণ্ঠ। বিষের তীব্রতা হ্রাস করার জন্য স্বর্গের দেবতারা শিবের মাথায় গঙ্গাজল ঢালতে থাকেন। সেই কারণেই শ্রাবণ মাসে শিবের মাথায় গঙ্গাজল প্রদান করা হয়। আর তাতেই আদিদেব মহাদেবের আশীর্বাদ প্রাপ্ত হন ভক্তরা। আরো উল্লেখ রয়েছে, সতীর দেহত্যাগের পর দেবী পার্বতী রূপে ফের একবার জন্ম নেন। শিবকে আবার স্বামীরূপে পাওয়ার জন্য কঠোর তপস্যা করতে থাকেন। দীর্ঘদিন ধরে সাধনা করে শিবকে সন্তুষ্ট করলে পার্বতীকে বিবাহ করতে রাজি হন মহাদেব। আর সেই শুভমুহূর্ত ঘটে সোমবার শ্রাবণ মাসেই। তারপর শিবরাত্রির দিনেই শিব-পার্বতীর পুনর্মিলন ঘটেছিল। এই কারণেই শ্রাবণ মাসকে শিবের মাস বলা হয়। সনাতন ধর্ম অনুসারে শিব হলেন আদি দেবতা। সেই কারণে তাঁকে দেবাদিদেব মহাদেব বলা হয়।

অনেক শিবভক্ত এই মাসে প্রতিটি সোমবার শিবের উদ্দেশ্যে এবং প্রতি মঙ্গলবার দেবী পার্বতীর উদ্দেশ্যে উপবাস করেন। শ্রাবণ মাসে ভক্তিভরে শিবের পূজা করলে ভক্তদের মনোবাঞ্ছা পূরণ হয় বলে বিশ্বাস করা হয়। শ্রাবণ মাসে বহু মানুষ বিভিন্ন শিব মন্দিরে তীর্থযাত্রা করেন এবং শিবের মাথায় জল ঢেলে পুণ্য অর্জন করেন। সনাতন ধর্মের মতে, শিবলিঙ্গের অর্থ হল অনন্ত। অর্থাৎ, যাঁর সূচনা বা অন্ত নেই। শিবলিঙ্গ আসলে শিব ও পার্বতীর আদি-অনাদি একক রূপ। শিবলিঙ্গ পুরুষ ও প্রকৃতির সাম্যের প্রতীক। স্ত্রী বা পুরুষ কেউই এই সমাজে একা প্রভাব বিস্তার করতে পারেন না, তা-ই জানিয়ে থাকে শিবলিঙ্গ। শাস্ত্র অনুযায়ী ভারতবর্ষ তথা সারা পৃথিবীতে অনেক শিবলিঙ্গ আছে মানব নির্মিত। কেবলমাত্র ১২ টি শিবলিঙ্গ জ্যোতির্লিঙ্গ ও স্বয়ম্ভূ।

আমার প্রাণদেবতা যুগাচার্য্য স্বামী প্রণবানন্দজী মহারাজ সাক্ষাৎ শিবস্বরূপ, চলমান শিব। গৃহদেবতা নীলরুদ্রের আশির্বাদে শিব-অবতার রূপে শিবশিশুর, দেবশিশুর ধরাধামে আবির্ভাব। পরবর্তিকালে সাক্ষাৎ দেবাদিদেব মহাদেব রূপে আত্মপ্রকাশ হয়। সত্য সনাতন ধর্মে গুরুদেব ভগবান প্রাণদেবতা নিজ নিজ পিতামাতার মত প্রত্যেকের হৃদয় সিংহাসনে বিরাজ করেন। শুভ ও মঙ্গলময় আশির্বাদ আপনাদের সকলের শিরে বর্ষিত হোক… এই প্রার্থনা করি…ওঁ নমঃ শিবায়…
ওঁ গুরু কৃপা হি কেবলম্ ….!

Share This

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *