Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

আজ ১৭ আগস্ট, ইতিহাসের আজকের এই দিনে যা ঘটেছিল।

আজ ১৭ আগস্ট। ইতিহাস ঘেটে দেখা যায় বছরের প্রতিটি দিনে ঘটেছে অনেক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। আসুন আজকের দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় একনজরে দেখে নিই।  ইতিহাসের আজকের এই দিনে কী কী ঘটেছিল, কে কে জন্ম নিয়েছিলেন ও মৃত্যুবরণ করেছিলেন——-
দিবস—–
(ক) ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতা দিবস।
আজ যাদের জন্মদিন—-
১৯২০ – সুনীলকুমার মুখোপাধ্যায় , নৌ-বিদ্রোহের অন্যতম বিপ্লবী শহীদ।
১৯৩২ – বিদ্যাধর সূর্যপ্রসাদ নাইপল, ভারতীয়-নেপালি বংশোদ্ভূত ত্রিনিদাদীয় সাহিত্যিক।
১৯৩২ – মুর্তজা বশীর, বাংলাদেশি চিত্রশিল্পী।
১৯৪০ – শবনম, বাংলাদেশী চলচ্চিত্র অভিনেত্রী।
১৯৪৩ – রবার্ট ডি নিরো, মার্কিন চলচ্চিত্র অভিনেতা, ও পরিচালক।
১৯৭২ – হাবিবুল বাশার, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক।
১৮০১ – ফ্রেডরিকা ব্রেমার, সুইডিশ লেখক ও নারীবাদী সংস্কারক।
১৮৬৬ – মাহবুব আলি খান, ষষ্ঠ আসাফ জাহ, হায়দ্রাবাদের ষষ্ঠ নিজাম।
১৮৭৮ – রেজি ডাফ, অস্ট্রেলীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ছিলেন।
১৮৭৯ – স্যামুয়েল গোল্ডউইন, পোলীয় মার্কিন চলচ্চিত্র প্রযোজক।
১৭৬১ – উইলিয়াম কেরি ব্রিটিশ খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারক, বাংলায় গদ্য পাঠ্যপুস্তকের প্রবর্তক।
ইতিহাসের পাতায় আজকের দিনের ঘটনাবলী—-
২০০৫ – বাংলাদেশের ৬৩টি জেলার ৩০০টি স্থানে প্রায় ৫০০ হাতে তৈরি বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
২০০৬ – পাবনায় বন্দুক যুদ্ধে ১০ জন নিহত।
২০০৮ – গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে ব্যাডমিন্টনে পুরুষদের সিঙ্গলসের ফাইনাল খেলা। একই দিনে মহিলাদের ৫০ মিটার ফ্রিস্টাইল সাঁতার প্রতিযোগিতার ফাইনালে জার্মানির ব্রিটা স্টিফেন ২৪.০৬ সেকেন্ড সময়ে নতুন অলিম্পিক রেকর্ড গড়ে স্বর্ণপদক পান।
১৯০১ – বেঙ্গল থিয়েটার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পুনরায় এটি অরোরা থিয়েটার নামে চালু হয়।
১৯১০ – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতাঞ্জলি বাংলায় প্রথম প্রকাশিত হয়।(সূত্র- আকাশবাণী কলকাতার- প্রাত্যহিকি-১৭/০৮/২০২০)
১৯১৮ – বলশেভিক আন্দোলনের নেতা মইসি উরুৎস্কি নিহত হন।
১৯৪৫ – হল্যান্ডের উপনিবেশের বিরুদ্ধে ইন্দোনেশিয়ার জনগণ আন্দোলন শুরু করে।
১৯৪৫ – ইন্দোনেশিয়া স্বাধীনতা লাভ করে।
১৯৪৭ – ভারত স্বাধীন হওয়ার পর ভারতে নিয়োজিত ব্রিটিশ বাহিনীর প্রথম ব্যাটালিয়ন স্বদেশের উদ্দেশে ভারত ত্যাগ করে।
১৯৬০ – আটলান্টিক মহাসাগরের তীরে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গ্যাবন স্বাধীনতা লাভ করে।
১৯৮২ – জার্মানিতে প্রথম কমপ্যাক্ট ডিস্ক উন্মোচিত হয়।
১৯৮৭ – বৃটিশ কারাগারে আটক হিটলারের সহকারী রুডলফ হেস আত্মহত্যা করে।
১৯৮৮ – পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনালের জিয়াউল হক এবং পাকিস্তানে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আরনল্ড রাফের বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন।
১৯৯৯ – তুরস্কে এক ভয়াবহ ভূমিকম্পে ১৭ হাজার মানুষ নিহত হয়।
১৮১৫ – কলকাতা শহর থেকে ষাঁড় বহিষ্কারের জন্য আইন প্রণীত হয়।
১৮৩৬ – ব্রিটেনে জন্ম, মৃত্যু ও বিবাহ নিবন্ধীকরণ শুরু হয়।
এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন যারা—-
২০০৪ – নিমাইসাধন বসু বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য।
২০০৬ -শামসুর রাহমান, প্রখ্যাত বাংলাদেশী কবি।
২০০৬ – বাংলাদেশী সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক, ও সঙ্গীতজ্ঞ আনোয়ার পারভেজ।
২০২০ – পণ্ডিত যশরাজ ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী।
১৯০৯ – মদন লাল ধিংড়া, ভারতের অগ্নিযুগের বিপ্লবীর ফাঁসি হয়।
১৯৪৯ – পুলিনবিহারী দাস ঢাকা অনুশীলন সমিতির প্রতিষ্ঠাতা।
১৯৬৯ – অটো ষ্টের্ন, নোবেল পুরস্কার বিজয়ী জার্মান পদার্থবিজ্ঞানী।
১৯৭৩ – মার্কিন ঔপন্যাসিক ও কবি কনর্যাড এইকিন।
১৯৮৪ -আচার্য চিন্ময় লাহিড়ী, বিশিষ্ট শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী ।
১৮৫০ – হোজে দে সান মার্টিন, আর্জেন্টাইন জেনারেল এবং পেরুর প্রথম রাষ্ট্রপতি।
১৮৫০ – বিশ্ববিশ্রুত কথাশিল্পী অনরে দ্য বালজাক।
১৭৮৬ – প্রুশিয়ার রাজা ফ্রেডেরিখ দ্য গ্রেট (দ্বিতীয়)।
।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

হংসাবেন মেহতা : ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের এক অবিস্মরণীয় নারী।।

ভূমিকা— ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে বহু নারীই তাঁদের সাহস, ত্যাগ, এবং অনন্য নেতৃত্বের মাধ্যমে চিরস্মরণীয় হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন হংসাবেন মেহতা — যিনি কেবলমাত্র স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামই করেননি, বরং স্বাধীনতার পর ভারতের সংবিধান প্রণয়ন, নারী অধিকার রক্ষা, এবং শিক্ষার প্রসারে অসামান্য ভূমিকা রেখেছেন।
তিনি ছিলেন একজন শিক্ষক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, নারীবাদী, এবং সামাজিক সংস্কারক — এককথায়, এক বহুমুখী ব্যক্তিত্ব।

শৈশব ও পারিবারিক পটভূমি

হংসাবেন মেহতার জন্ম ৪ জুলাই ১৮৯৭ সালে গুজরাটের সুরাট শহরে। তাঁর পিতার নাম ছিল হারিপ্রসাদ দেসাই, যিনি ছিলেন শিক্ষিত, উদারচিন্তাধারার মানুষ। পরিবারটি ছিল মধ্যবিত্ত কিন্তু সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ। ছোটবেলা থেকেই হংসাবেনের মধ্যে সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলার প্রবণতা দেখা যায়।
তিনি প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন সুরাটে এবং পরে বোম্বে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। শিক্ষা জীবনের শুরু থেকেই তাঁর মধ্যে নেতৃত্বগুণের বিকাশ ঘটে, এবং নারী শিক্ষার প্রতি তাঁর গভীর আগ্রহ জন্ম নেয়।

প্রথম জীবনে নারীবাদী চেতনা–

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সময় হংসাবেন পাশ্চাত্য চিন্তাধারার সঙ্গে পরিচিত হন — বিশেষত জন স্টুয়ার্ট মিল এবং এমেলিন প্যাঙ্কহার্স্টের নারী অধিকারের দর্শন তাঁকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।
১৯২০-এর দশকের গোড়ার দিকে তিনি ইংল্যান্ড ভ্রমণ করেন এবং সেখানকার নারী ভোটাধিকার আন্দোলন প্রত্যক্ষ করেন। এই অভিজ্ঞতা তাঁর রাজনৈতিক এবং সামাজিক চেতনার ভিত্তি দৃঢ় করে।

রাজনীতিতে প্রবেশ–

ভারতে ফিরে এসে হংসাবেন সাংবাদিকতা শুরু করেন এবং নারীদের সমস্যা, শিশুদের শিক্ষা, ও সামাজিক সংস্কারের বিষয়ে ধারালো প্রবন্ধ লিখতে থাকেন। তাঁর লেখনী ছিল স্পষ্ট, যুক্তিপূর্ণ, এবং সাহসী।
তিনি গুজরাট মহিলা পরিষদ প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন, যা নারীদের রাজনৈতিক ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করত।
হংসাবেন ১৯৩৭ সালে বম্বে প্রাদেশিক বিধানসভা-র সদস্য নির্বাচিত হন। সেখানেও তিনি নারীর অধিকার রক্ষার জন্য একাধিক বিল প্রস্তাব করেন, যেমন — বাল্যবিবাহ রোধ, বিধবা পুনর্বিবাহের প্রচার, এবং নারীদের কর্মক্ষেত্রে সমান মজুরি।

স্বাধীনতা সংগ্রামে ভূমিকা–

হংসাবেন মেহতা ছিলেন মহাত্মা গান্ধী-র আদর্শে অনুপ্রাণিত।
তিনি অসহযোগ আন্দোলন ও ভারত ছাড়ো আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ১৯৪২ সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় তাঁকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো হয়, যেখানে তিনি প্রায় তিন বছর বন্দি ছিলেন।
কারাবাসের সময়ও তিনি নারী বন্দিদের শিক্ষার ব্যবস্থা করেন এবং তাঁদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা ছড়িয়ে দেন।

সংবিধান সভায় ভূমিকা–

ভারত স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৪৬ সালে হংসাবেন মেহতা সংবিধান সভা-র সদস্য নির্বাচিত হন।
সংবিধান রচনার সময় তিনি নারী অধিকার সংক্রান্ত একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব পেশ করেন।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, তাঁর প্রচেষ্টাতেই ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনা-তে “Equality” বা সমতা শব্দটি যুক্ত হয় এবং নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সমান অধিকার নিশ্চিত করা হয়।
তিনি মানবাধিকার সনদ (Universal Declaration of Human Rights)-এর প্রণয়নেও অবদান রাখেন। জাতিসংঘে ভারতের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি সক্রিয়ভাবে নারী অধিকার এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের পক্ষে বক্তব্য রাখেন।

নারী শিক্ষার প্রসারে অবদান–

হংসাবেন বিশ্বাস করতেন যে স্বাধীনতা অর্থবহ হবে কেবল তখনই, যখন নারীরা শিক্ষিত ও আত্মনির্ভর হবে।
তিনি গুজরাটের গ্রামীণ অঞ্চলে একাধিক বিদ্যালয় ও নারী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করেন।
তাঁর প্রচেষ্টায় বহু মেয়েরা প্রথমবার স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পায়।
তিনি মেয়েদের জন্য বিজ্ঞান, কলা, এবং পেশাগত শিক্ষার প্রসারে জোর দেন, যাতে তারা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারে।

লেখনী ও সাহিত্যকর্ম–

হংসাবেন একজন দক্ষ লেখিকাও ছিলেন। তিনি “Indian Woman” এবং “The Awakening of Indian Women” নামে দুটি প্রভাবশালী বই লেখেন, যেখানে ভারতীয় নারীর ইতিহাস, সংগ্রাম, এবং ভবিষ্যতের পথনির্দেশ তুলে ধরা হয়েছে।
এছাড়াও তিনি অসংখ্য প্রবন্ধ, বক্তৃতা, এবং রিপোর্ট লিখেছেন, যা নারী আন্দোলনের ইতিহাসে অমূল্য দলিল।

পুরস্কার ও স্বীকৃতি–

হংসাবেন মেহতার অবদানকে স্বীকৃতি জানিয়ে ভারত সরকার তাঁকে একাধিক সম্মানে ভূষিত করে।
১৯৮৮ সালে তিনি পদ্মভূষণ লাভ করেন।
এছাড়াও নারী আন্দোলন ও সামাজিক সংস্কারে অবদানের জন্য দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সংস্থা তাঁকে সম্মানিত করে।

ব্যক্তিগত জীবন–

হংসাবেনের বিবাহ হয়েছিল ঝাবেরচন্দ মেহতা-র সঙ্গে, যিনি নিজেও সামাজিক সংস্কারক ও শিক্ষাবিদ ছিলেন। তাঁদের দাম্পত্য জীবন ছিল আদর্শ সহযোগিতামূলক — স্বামী-স্ত্রী মিলে সমাজ সংস্কারের কাজে নিয়োজিত ছিলেন।

মৃত্যু ও উত্তরাধিকার–

হংসাবেন মেহতার মৃত্যু হয় ১৯৯৫ সালে। তবে তাঁর কর্ম, আদর্শ, এবং সংগ্রামের উত্তরাধিকার আজও ভারতীয় নারী আন্দোলনের ইতিহাসে উজ্জ্বল।
তিনি প্রমাণ করে গেছেন যে একজন নারী কেবল ঘরের চার দেওয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় — বরং জাতি, সমাজ, এবং রাষ্ট্র গঠনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

উপসংহার

হংসাবেন মেহতা ছিলেন এক বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী, যিনি স্বাধীনতা সংগ্রাম, সংবিধান রচনা, নারী অধিকার রক্ষা, এবং শিক্ষা প্রসারে সমানতালে অবদান রেখেছেন।
তাঁর জীবন আমাদের শেখায় যে স্বাধীনতার সংগ্রাম কেবল বিদেশি শাসকের বিরুদ্ধে নয় — বরং সামাজিক অন্যায়, লিঙ্গ বৈষম্য, এবং অশিক্ষার বিরুদ্ধেও সমান গুরুত্বপূর্ণ।
তাঁর সংগ্রাম ও আদর্শ আগামী প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে — স্বাধীনতার মূল্য, সমতার গুরুত্ব, এবং শিক্ষার শক্তি উপলব্ধি করতে।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

আজ ১৫ আগস্ট, জানুন ভারতের স্বাধীনতা দিবসের ইতিহাস।

১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট ভারতে ২০০ বছরের ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে, শুরু হয় স্বাধীন ভারতের কালযাত্রা, ভারতের ইতিহাসে সূচনা হয় আরেক নতুন অধ্যায়ের।  .
স্বাধীনতা দিবস হল ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের একটি জাতীয় দিবস।
১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারত ব্রিটিশ রাজশক্তির শাসনকর্তৃত্ব থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল। সেই ঘটনাটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য প্রতি বছর ১৫অগাস্ট তারিখটি ভারতে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে প্রধানত অহিংস, অসহযোগ ও আইন অমান্য আন্দোলন এবং বিভিন্ন চরমপন্থী গুপ্ত রাজনৈতিক সমিতির সহিংস আন্দোলনের পথে পরিচালিত এক দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের পর ভারত স্বাধীনতা অর্জন করেছিল।
স্বাধীনতার ঠিক পূর্ব-মুহুর্তে ব্রিটিশ ভারতীয় সাম্রাজ্য ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজিত হয় এবং তার ফলে ভারত ও পাকিস্তান অধিরাজ্যের জন্ম ঘটে। দেশভাগের সময় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটে। অনেক মানুষ প্রাণ হারান এবং ১ কোটি ৫০ লক্ষেরও বেশি মানুষ বাস্তুহারা হন। পরাধীন ভারতবর্ষ ভেঙে গঠিত হয় দুটি দেশ ভারত ও পাকিস্তান, ১৪ই আগস্ট মধ্যরাতে বিভক্ত হয়ে যায় দুটি দেশ, ভারতে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করা হয় ১৫ই আগস্ট (পাকিস্তানে স্বাধীনতা দিবস পালিত হয় ১৪ই আগষ্ট)।১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট জওহরলাল নেহেরু ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ গ্রহণের পর দিল্লির লাল কেল্লার লাহোরি গেটের উপর ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। তদবধি প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী লাল কেল্লায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন এবং জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন।
দিনটিকে স্মরণে রেখে প্রতি বছর ১৫ই আগস্ট সারা ভারতবর্ষ জুড়ে পালিত হয় স্বাধীনতার উৎসব, সেজে ওঠে গ্রাম, শহর, নগর, গলি, রাস্তাঘাট, স্কুল, কলেজ, অফিস, আদালত, কলকারখানা সমস্ত কিছু। ভারতের প্রতিটি কোণা থেকে জাতীয় সঙ্গীতের সুরেলা আওয়াজ ভেসে আসে,
জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা!
পঞ্জাব সিন্ধু গুজরাট মরাঠা দ্রাবিড় উৎকল বঙ্গ
বিন্ধ্য হিমাচল যমুনা গঙ্গা উচ্ছলজলধিতরঙ্গ
তব শুভ নামে জাগে, তব শুভ আশিষ মাগে,
গাহে তব জয়গাথা।
জনগণমঙ্গলদায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা!
জয় হে, জয় হে, জয় হে, জয় জয় জয় জয় হে।।
ভারতে স্বাধীনতা দিবসের ইতিহাস:-
ভারতে ব্রিটিশ শাসনের সূচনা হয়েছিল ১৭৫৭ সালে পলাশির যুদ্ধে ব্রিটিশের জয়লাভের মধ্য দিয়ে, এরপর থেকে ভারতে শুরু হয় ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আধিপত্য। ভারতে কোম্পানি বিরোধী বিদ্রোহের পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন সরাসরি ব্রিটিশ শাসন দ্বারা পরিবর্তিত হওয়ার আগে পর্যন্ত প্রায় দীর্ঘ ১০০ বছর ধরে বিরাজমান ছিল।
এরপর থেকেই ভারতে শুরু হয়ে যায় সরাসরি ব্রিটিশ শাসন, ইংরেজদের অত্যাচার, শোষণ নিপীড়ন। এসবের বিরুদ্ধে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী জি-র নেতৃত্বে ভারতের জাতীয়তাবাদী ও স্বাধীনতা সংগ্রামী আন্দোলনের সূচনা হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সমকালীন সময়ে। যিনি ভারতীয়দের শান্তিপূর্ণ ও অহিংস নীতিতে আন্দোলনের পথে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন।
১৭শ শতাব্দীতে ইউরোপীয় বণিকরা ভারতীয় উপমহাদেশে বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করতে শুরু করে। ১৮শ শতাব্দীতে অপ্রতিরোধ্য সামরিক শক্তির বলে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি স্থানীয় রাজ্যগুলিকে পরাজিত করে ভারতে নিজেদের শাসন কায়েম করে। ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহের পর ভারত শাসন আইন (১৮৫৮) পাস হয় এবং ব্রিটিশ রাজশক্তি ভারতের প্রত্যক্ষ শাসনভার নিজের হাতে তুলে নেয়। পরবর্তী কয়েক দশকে ধীরে ধীরে ভারতে সুশীল সমাজ গড়ে ওঠে। এই গড়ে ওঠার পিছনে অন্যতম প্রধান চালিকা শক্তি ছিল ১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটিশ সরকার মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার প্রভৃতি শাসনতান্ত্রিক সংস্কারে উদ্যোগী হয়। সেই সঙ্গে দমনমূলক রাওলাট আইনও পাস হয়। এর ফলে ভারতীয় আন্দোলনকারীরা স্বায়ত্ত্বশাসনের দাবি জানাতে থাকেন। এই সময় ভারতীয় জনসাধারণের অসন্তোষ সারা দেশব্যাপী অহিংস অসহযোগ ও আইন অমান্য আন্দোলনের জন্ম দেয়। এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মোহনদাস করমচন্দ গান্ধী (মহাত্মা গান্ধী)।
১৯৩০-এর দশকে ব্রিটিশ সরকার ভারতে আংশিক স্বায়ত্তশাসন মঞ্জুর করার পর আইনসভা গঠিত হয়। এরপর নির্বাচনে কংগ্রেস জয়লাভ করে। পরবর্তী দশকটি ভারতের ইতিহাসে একটি রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার দশক। এই দশকেই ভারত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেয়, কংগ্রেস সর্বশেষ বারের জন্য অসহযোগ আন্দোলন শুরু করে এবং অল-ইন্ডিয়া মুসলিম লিগের ইসলামি জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটে। এই রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার অবসান ঘটে ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের মাধ্যমে। তবে স্বাধীনতা লাভের আগে ভারতীয় উপমহাদেশ ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্রে বিভাজিত হয়।
স্বাধীনতার আগে স্বাধীনতা দিবস
১৯২৯ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের লাহোর অধিবেশনে ‘পূর্ণ স্বরাজ’ ঘোষণাপত্র গৃহীত হয় এবং ২৬ জানুয়ারি তারিখটিকে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। কংগ্রেস জনসাধারণের কাছে আবেদন জানায়, যতক্ষণ না ভারত পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জন করছে ততক্ষণ তারা যেন আইন অমান্য কর্মসূচি পালন করেন এবং “বিভিন্ন সময়ে কংগ্রেস কর্তৃক প্রচারিত নির্দেশাবলি অনুসরণ করেন”। এই ধরনের স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের উদ্দেশ্য ছিল ভারতীয় নাগরিকদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী ধারণার প্রসার এবং ভারতের স্বাধীনতা অনুমোদনের জন্য ব্রিটিশ সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করা।
১৯৩০ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত কংগ্রেস ২৬ জানুয়ারি তারিখটিকে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করে এসেছে। সেই সময় স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে জনসভার আয়োজন করা হত। সেই জনসভায় অংশগ্রহণকারীরা “স্বাধীনতার শপথ” গ্রহণ করতেন।  জওহরলাল নেহেরু তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন, এই জনসভাগুলি ছিল শান্তিপূর্ণ ও ভাবগম্ভীর এবং “এই সব সভায় কোনও প্রকার ভাষণ দেওয়া হত না বা কোনও সনির্বন্ধ মিনতি জ্ঞাপন করাও হত না।” গান্ধী ভেবেছিলেন যে এই সব জনসভার সঙ্গে সঙ্গে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে “…কিছু সৃজনশীল কাজও করা যায়। যেমন, চরকা কাটা, সামাজিকভাবে অস্পৃশ্যদের সেবা করা, হিন্দু-মুসলমান সমন্বয়, সরকারিভাবে নিষিদ্ধ রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপ অথবা এই সব কটি কাজই।” ১৯৪৭ সালে ভারত প্রকৃত অর্থে স্বাধীন হওয়ার পর ভারতের সংবিধান কার্যকর হয় ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি তারিখে। সেই থেকে ২৬ জানুয়ারি তারিখটি ভারতে সাধারণতন্ত্র দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
ভারতে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন:-
প্রতিবছর সারা ভারতবর্ষ জুড়ে ১৫ই আগস্ট দিনটি স্বাধীনতা দিবস হিসাবে পালিত ও উদযাপিত হয় নানান কর্মকান্ড ও অনুষ্ঠানের সমারোহে। ১৫ আগস্ট দিল্লির ঐতিহাসিক লালকেল্লায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। অনুষ্ঠানটি জাতীয় চ্যানেল দূরদর্শনের সাহায্যে সারা দেশে সম্প্রচারিত হয়। রাজ্য রাজধানীগুলিতেও পতাকা উত্তোলন সহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। অন্যান্য শহরে রাজনৈতিক নেতৃবর্গ নিজ নিজ কেন্দ্রে পতাকা উত্তোলন করেন। নানা বেসরকারি সংস্থাও পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। স্কুল-কলেজেও পতাকা উত্তোলন ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েরা এই উপলক্ষে বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সাজপোষাক পরে শোভাযাত্রা করে।
সোর্স – Wikipedia ও ইন্টারনেট

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

আজ ১৫ আগস্ট, ইতিহাসের আজকের এই দিনে যা ঘটেছিল।

আজ ১৫ আগস্ট। ইতিহাস ঘেটে দেখা যায় বছরের প্রতিটি দিনে ঘটেছে অনেক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। আসুন আজকের দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় একনজরে দেখে নিই।  ইতিহাসের আজকের এই দিনে কী কী ঘটেছিল, কে কে জন্ম নিয়েছিলেন ও মৃত্যুবরণ করেছিলেন——-
দিবস—–
(ক)  ভারতের স্বাধীনতা দিবস (১৯৪৭)।
(খ) বাংলাদেশের জাতীয় শোক দিবস।
আজ যাদের জন্মদিন—-
১৯০০ – সন্তোষ কুমার মিত্র, ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন বিপ্লবী শহীদ।
১৯১২ – (ক) আমির খাঁ, ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতশিল্পী।
(খ) ওয়েন্ডি হিলার, ইংরেজ অভিনেত্রী, ডেম উপাধি প্রাপ্ত ও অস্কার বিজয়ী।
১৯১৫ – সত্যেন্দ্রনাথ মৈত্র সারা ভারতে আধুনিক রীতিতে সাক্ষরতা আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ।
১৯১৭ – খোদেজা খাতুন, বাংলাদেশী শিক্ষাবিদ, লেখক ও সমাজ কর্মী।
১৯২২ – সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, একজন বাঙালি কথাশিল্পী।
১৯২৬ – (ক) সুকান্ত ভট্টাচার্য, বাংলা সাহিত্যের প্রগতিশীল চেতনার কিশোর কবি।
(খ) পণ্ডিত প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রখ্যাত বাঙালি উচ্চাঙ্গ কণ্ঠসঙ্গীত শিল্পী।
১৯৩১ – ভারতীয় বাঙালি কবি শরৎকুমার মুখোপাধ্যায়।
১৯৩৭ – নয়ীম গহর, বাংলাদেশী গীতিকার।
১৯৪৫ – আল্যাঁ জুপে, ফ্রান্সের সাবেক প্রধানমন্ত্রী।
১৯৪৫ – খালেদা জিয়া, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী।
১৯৪৭ – রাখী গুলজার, ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী।
১৯৫১ – লায়লা আরজুমান বানু, বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ।
১৯৬৮ – আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন, বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ।
১৯৭৩ – মারজুক রাসেল, বাংলাদেশী কবি, গীতিকার, মডেল এবং অভিনেতা।
১৯৮৯ – ঈশ্বর পাণ্ডে, ভারতীয় ক্রিকেটার।
১৮৭২ – অরবিন্দ ঘোষ, বাঙালি রাজনৈতিক নেতা, আধ্যাত্মিক সাধক এবং দার্শনিক।
১৮৭৩ – রমাপ্রসাদ চন্দ ,ভারতীয় বাঙালি ইতিহাসবিদ এবং পুরাতত্ত্ববিদ।
১৮৭৯ – ইথেল ব্যারিমোর, মার্কিন অভিনেত্রী, অস্কার বিজয়ী।
১৮৯২ – লুই দ্য ব্রোয়ি, ফরাসি পদার্থবিজ্ঞানী, নোবেল পুরস্কার বিজয়ী।
১৭৭১ – ওয়াল্টার স্কট, স্কটল্যান্ডীয় ঐতিহাসিক উপন্যাস রচয়িতা এবং কবি।
ইতিহাসের পাতায় আজকের দিনের ঘটনাবলী—-
২০০৫ – ইহুদীবাদী ইসরাইল ফিলিস্তিনীদের প্রতিরোধের মুখে গাজা উপত্যকা থেকে পিছু হটতে বাধ্য হয়৷
২০০৬ – বাংলাদেশের কাছে পরপর দুইবার হোয়াইট ওয়াশ হয় কেনিয়া।
২০০৮ – ২০০৮ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে মহিলাদের ১০০০০ মিটার দৌড়ের ফাইনালে তিরুনেশ দিবাবা ২৯:৫৪.৬৬ সময়ে নতুন অলিম্পিক রেকর্ড স্থাপন করেন। একই দিনে মহিলাদের ১০০ মিটার ফ্রিস্টাইল সাঁতার প্রতিযোগিতা শেষ হবার সাথে সাথে মহিলাদের ৫০ মিটার ফ্রিস্টাইল সাঁতার প্রতিযোগিতা শুরু হয়।
২০২১ – তালেবান কর্তৃক কাবুল দখলকৃত হয়।
১৯৪১ – পানামা খালের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়।
১৯৪৭ – (২৯ শ্রাবণ, ১৩৫৪ বঙ্গাব্দ,শুক্রবার) ব্রিটিশ শাসন হতে মুক্তি পেয়ে ভারত স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে জন্ম নেয়।
১৯৪৭ – পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ গভর্নর জেনারেল হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন।
১৯৪৮ – কোরীয় উপদ্বীপ বিভক্ত হয়ে দক্ষিণ কোরিয়া স্বাধীন দেশ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে।
১৯৬০ – আফ্রিকার দেশ কঙ্গো প্রজাতন্ত্র ফরাসী উপনিবেশ থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতা লাভ করে৷
১৯৬৫ – ভারতে প্রথম দূরদর্শন প্রদর্শিত হয়।
১৯৭১ – অপারেশন জ্যাকপট সংগঠিত হয়।
১৯৭৫ – বাংলাদেশের জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি সামরিক অভ্যুত্থানে তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ নিহত হন।
১৯৭৫ – বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় সৌদি আরব।
১৯৮২ – ভারতে প্রথম রঙিন টেলিভিশনে দূরদর্শনের সম্প্রচার শুরু হয়।
১৮৫৪ – বাংলায় প্রথম রেলপথ স্থাপন।
১৮৭২ – ইংল্যান্ডে প্রথম গোপন ব্যালটে সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
১৮৭৫ – ব্রিটিশবিরোধী রাজনৈতিক সংগঠন ইন্ডিয়ান লীগের জন্ম।
১৮৮৯ – মোহনবাগান অ্যাথলেটিক ক্লাব কলকাতার প্রসিদ্ধ ফুটবল ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়।
১২৮১ – জাপান আক্রমণ করতে গিয়ে কুবলাই খানের নৌবহর ঝড়ে পতিত হয়ে ধ্বংস হয়। ইতিহাসে এ ঘটনা ডিভাইন উইন্ড বা দৈব বাতাস বলে পরিচিত।
এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন যারা—-
২০২০ – প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী মুর্তজা বশীর।
১৯১০ – গিরিশ চন্দ্র সেন, ইসলামবিষয়ক পণ্ডিত ও ব্রাহ্মধর্ম-প্রচারক।
১৯৪২ – মহাত্মা গান্ধীর ব্যক্তিগত সচিব মহাদেব দেসাই।
১৯৬০ – এরল হোমস, ইংরেজ ক্রিকেটার।
১৯৬৯ – ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়নের ছাত্র আব্দুল মালেক শহিদ হন।
১৯৭৫ (ক) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি ও প্রথম রাষ্ট্রপতি।
(খ)বেগম ফজিলাতুন্নেসা, বাংলাদেশের প্রথম ফার্স্ট লেডি এবং প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের স্ত্রী।
১৯৭৮ – বাণীকুমার নামে সুপরিচিত বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্য, ভারতীয় বাঙালি বেতার সম্প্রচারক, গীতিকার, প্রযোজক ও নাট্য পরিচালক।
১৯৯৪ – কবি ও সাহিত্য সমালোচক হরপ্রসাদ মিত্র।
১৮৩৬ – ইতালীয় নোবেল বিজয়ী লেখক গারসিয়া ডেলেডা।
৭৬৭ – আবু হানিফা, ফিকহশাস্ত্রের একজন প্রখ্যাত বিশেষজ্ঞ এবং হিজরী প্রথম শতাব্দীর একজন গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী ব্যক্তিত্ব।
।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

আজ ১৪ আগস্ট, ইতিহাসের আজকের এই দিনে যা ঘটেছিল।।।

আজ ১৪ আগস্ট। ইতিহাস ঘেটে দেখা যায় বছরের প্রতিটি দিনে ঘটেছে অনেক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। আসুন আজকের দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় একনজরে দেখে নিই।  ইতিহাসের আজকের এই দিনে কী কী ঘটেছিল, কে কে জন্ম নিয়েছিলেন ও মৃত্যুবরণ করেছিলেন——-
দিবস—–
(ক) পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস (১৯৪৭)
আজ যাদের জন্মদিন—-
১৯২৩ – প্রথিতযশা প্রবীণ ভারতীয় সাংবাদিক কুলদীপ নায়ার।
১৯২৬ – রনে গোসিনি, ফরাসি কমিকস সম্পাদক এবং পোলিশ বংশোদ্ভূত লেখক।
১৯৪২ – আমজাদ হোসেন, বাংলাদেশের অভিনেতা, লেখক এবং চলচ্চিত্রকার।
১৯৪২ – শহীদ কাদরী, বাংলাদেশি কবি ও সাহিত্যিক।
১৯৪৫ – স্টিভ মার্টিন, মার্কিন অভিনেতা, কৌতুকাভিনেতা, লেখক, প্রযোজক, নাট্যকার ও সঙ্গীতজ্ঞ।
১৯৪৫ – ভিম ভেন্ডার্স, জার্মান চলচ্চিত্র নির্মাতা, নাট্যকার, লেখক, আলোকচিত্রী।
১৯৫৯ – মার্সিয়া গে হার্ডেন, আমেরিকান অভিনেত্রী।
১৯৬২ – রমিজ রাজা, সাবেক পাকিস্তানি ডান-হাতি ব্যাটসম্যান ক্রিকেটার।
১৯৬৬ – হ্যালি বেরি, মার্কিন মডেল, অভিনেত্রী, ও প্রযোজক এবং বিশ্ব সুন্দরী যুক্তরাষ্ট্র ১৯৮৬।
১৯৬৮ – প্রবীণ আম্রে, সাবেক ভারতীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার।
১৯৭১ – প্রমোদ্যা বিক্রমাসিংহে, সাবেক আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার।
১৯৮১ – কফি কিংস্টন, ঘানা-মার্কিন পেশাদার কুস্তিগীর।
১৯৮৩ – মিলা কুনিস, ইউক্রেনীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন অভিনেত্রী।
১৯৮৩ – সুনিধি চৌহান, ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় একজন সঙ্গীতশিল্পী।
১৮৬৭ – নোবেলজয়ী ইংরেজ ঔপন্যাসিক ও নাট্যকার জন গলসওয়ার্দ।
১৮৯৭ – লাবণ্য প্রভা ঘোষ, ভারতের একজন গান্ধীবাদী স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং মানভূম জেলায় অনুষ্ঠিত বাংলা ভাষা আন্দোলনের একজন নেত্রী ছিলেন।
১৭৭৭ – হান্স ক্রিশ্চিয়ান ওরস্টেড, ড্যানিশ পদার্থবিজ্ঞানী এবং রসায়নবিদ।
১২৫৭ – জাপান সম্রাট হানাজোনো।
ইতিহাসের পাতায় আজকের দিনের ঘটনাবলী—-
২০০৮ – গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে পুরুষদের ১০০ মিটার ফ্রিস্টাইল সাঁতার প্রতিযোগিতা শেষ হয়। একই দিনে মহিলাদের ৮০০ মিটার, ১০০ মিটার ও পুরুষদের ৫০ মিটার ফ্রিস্টাইল সাঁতার প্রতিযোগিতা শুরু হয়। মহিলাদের ৮০০ মিটার ফ্রিস্টাইল সাঁতার প্রতিযোগিতা চলাকালীন, রেবেকা অ্যাডলিংটন ২০০০ সালের অলিম্পিকে সৃষ্ট ব্রুক বেনেটের অলিম্পিক রেকর্ড প্রাথমিক পর্যায়ের ৪নং হিটেই ৮:১৮.০৬ সময়ে ভাঙেন।
১৯০০ – ২০০ মার্কিন নৌ-সেনা অবতরণ করে পিকিং দখল করে নিলে বক্সার বিদ্রোহের সমাপ্তি ঘটে।
১৯১২ – মার্কিন মেরিন সেনা নিকারাগুয়া দখল করে।
১৯৩১ – ইলা সেন ও মীরা দেবী নামে কুমিল্লার অষ্টম শ্রেণীর দুই ছাত্রী ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী তৎপরতার অংশ হিসেবে কুমিল্লার ম্যাজিস্ট্রেট সিজি স্টিভেন্সকে গুলি করে হত্যা করে।
১৯৪১ – রুজভেল্ট ও চার্চিল আটলান্টিক চার্টার নামক শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
১৯৪৫ – দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্তিম পর্যায়ে জাপান রাশিয়ার কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করে।
১৯৪৭ – ব্রিটিশ শাসন হতে পাকিস্তানের স্বাধীনতা লাভ।
১৮২৫ – বৃটিশ পদার্থ বিজ্ঞানী ও রসায়নবিদ মাইকেল ফ্যারাড অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণার পর অপরিশোধিত তেল থেকে পেট্রোল আবিষ্কার করতে সক্ষম হন৷
১৮৪৮ – গঠিত হয় ওরেগন এলাকা।
১৮৮৫ – জাপান জং প্রতিরোধক রং প্যাটেন্ট করে।
১৭৬২ – ইংল্যান্ডের নৌবাহিনী হাভানা দখল করে।
১৭৯০ – সুইডেন ও রাশিয়া শান্তিচুক্তি করে
১৫৫১ – তুরস্কের নৌবাহিনী ত্রিপোলি দখল করে।
১৫৮৫ – রানি প্রথম এলিজাবেথ নেদারল্যান্ডসের সার্বভৌমত্ব খারিজ করে দেন।
১৪৩৭ – মুদ্রণ যন্ত্রের আবিষ্কার।
এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন যারা—-
২০০৪ – চেসোয়াফ মিওশ, পোলীয়-মার্কিনী কবি, লেখক, শিক্ষাবিদ এবং অনুবাদক।
২০১১ – শাম্মী কাপুর, ভারতের মুম্বইয়ের চলচ্চিত্র জগতের জনপ্রিয় চিত্রতারকা শিল্পী ও পরিচালক।
১৯৩৫ – নোবেলজয়ী ফরাসি পদার্থবিদ ফ্রেদেরিক জোলিও-ক্যুরি।
১৯৩৮ – হিউ ট্রাম্বল, বিখ্যাত অস্ট্রেলীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ও অধিনায়ক।
১৯৪১ – নোবেলজয়ী ফরাসি রসায়নবিদ পল সাবাতিয়।
১৯৫৬ – বের্টল্ট ব্রেখট, একজন জার্মান নাট্যকর্মী, নাট্যকার ও কবি।
১৯৬৬ – টিপ স্নুক, দক্ষিণ আফ্রিকান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ও অধিনায়ক।
১৯৭২ – ফরাসি ঔপন্যাসিক, নাট্যকার ও কবি ঝুল রম্যাঁ।
১৯৮১ – ডাডলি নোর্স, দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটার।
১৯৮৫ – গেল সন্ডারগার্ড, একজন মার্কিন অভিনেত্রী।
১৭৭৪ – জোহান জ্যাকব রেইস্ক, জার্মান চিকিৎসক ও পণ্ডিত।
১৪৩৩ – পর্তুগালের রাজা প্রথম জোহান।
।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

ভারতের স্বাধীনতা  ও  স্বাধীনতার পরবর্তী সময়।।।

আমরা ভারতবাসীরা  ভুলতে পারিনি পরাধীনতার জ্বালা  ।  ব্রিটিশ সরকারের তিক্ত দুশো বছরের শৃঙ্খলাবদ্ধের  ইতিহাস । ইংরেজদের বিভৎস দমন নীতি । ইংরেজ সরকারের শাসন ও শোষন ।  ভারতীয়দের উপরে  অমানবিক অত্যাচার । ব্রিটিশদের পৈশাচিক দমন নীতির জন্য ভারতীয় সমাজের মধ্যে বিশৃঙ্খলা । দীনবন্ধু মিত্রের “নীল দর্পণ” নাটকটি থকে আরও  জানতে পারি নীল চাষের করুণ কাহিনী ও সাঁওতাল সমাজের উপর ইংরেজদের অমানবিক অত্যাচারের ঘটনা  । ইংরেজ সরকারের শোষনের মাত্রা ছিলো লাগামছাড়া । নিরীহ ভারতবাসীর উপর কারণে ও অকারণে চলতো অকথ্য নীপিড়ন ।  দেশবাসীদের উপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে  নির্মম শোষন আজও ভারতীয়দের হৃদমাঝারে উজ্জীবিত । .
ব্রিটিশ সরকারের দমননীতির বিরুদ্ধে সারা দেশ গর্জে উঠে ।
দেশবাসী সোচ্চার হয় । সারা দেশে বিদ্রোহ শুরু হয় । দেশ মাতার শৃঙ্খলমোচনে বিদ্রোহের আগুন ছড়িয়ে পড়ে দেশের আনাচে কানাচে । ব্রিটিশদের অত্যাচারের আগুনে দগ্ধ হয়ে  আত্নবলিদান ঘটে অনেক দেশপ্রেমী ভারতীয়ের । ইংরেজদের শোষনের বিরুদ্ধে গর্জে উঠে, ফলে অনেক রক্তক্ষরণ ঘটে । অনেক বীর শহিদ হন । ইংরেজদের উৎখাতের মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে গর্জে উঠেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় নেতাজী সুভাষ । দেশকে শৃঙ্খলামুক্ত করতে অকালে প্রাণ হারান বিনয়-বাদল-দীনেশ । শহিদ হন ক্ষুদিরাম বসু । দেশের পরাধীনতার গ্লানি ঝেড়ে ফেলার তাগিদে ভারতবাসীর ত্যাগ অবর্ণনীয় । দেশ স্বাধীনের মূলমন্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন মহাত্না গাঁধী, বিপিন চন্দ্র পাল, সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল, বাল গঙ্গাধর তিলক, আরও অনেকে । অনেক ত্যাগ, অনেক রক্তক্ষরণ, অনেক বলিদান, অনেক শহিদের পরে আমাদের দেশ ভারতবর্ষ ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট স্বাধীনতা লাভ করে । ইংরেজদের অপশাসন দূর করে দেশবাসী আনন্দে মেতে উঠে । ভারতে উদয় হয় নতুন সূর্যের ।
স্বাধীনতা লাভ করার পর ভারত ভাগ হয়ে যায়, ভারত ও পাকিস্তান । পাকিস্তান আবার দুটো ভাগে ভাগ হয়, পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান । পরবর্তীকালে পূর্ব পাকিস্তান ভারতের সহযোগীতায় স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে “বাংলাদেশ” গঠন করে  । পাকিস্তান ও বাংলাদেশ মুসলিম রাষ্ট্র হলেও ভারত একটি “সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক” রাষ্ট্র হিসাবে বিশ্বমাঝারে আবির্ভূত হয় । বাবা সাহেব ভীম রাও আম্বদকরের অক্লান্ত পরিশ্রমে সংবিধানের বাস্তবরূপ ঘটে । ১৯৫০ সালের ২৬শে জানিয়ারি দেশে সংবিধান লাগু হয় । ১৯৩৫ সালের ভারত সরকার আইনের পরিবর্তে ভারতীয় সংবিধান কার্যকরী হয় । এটি ভারতের একটি জাতীয় দিবস। ১৯৫০ সালের ২৬শে জানুয়ারি ভারতীয় গণপরিষদে  সংবিধান কার্যকরী হলে ভারত একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে পরিণত হয় ।
৭৬ তম স্বাধীনতা দিবস । প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও সারা দেশে মহাধুমধামে পালিত হচ্ছে । এবারের স্বাধীনতা উদযাপন একটা মাত্রা বহন করছে । কেননা দেশে এবছর ৭৫ত্ম স্বাধীনতা দিবস । যার জন্য স্বাধীনতা দিবসে গুরুত্ব অপরিসীম ।  উল্লেখ থাকে যে, স্বাধীনতা দিবসে দিল্লির লালকেল্লায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করবেন দেশের মাননীয় প্রধান মন্ত্রী । তা ছাড়া দিল্লির ইন্ডিয়া গেটে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হবে ।
স্বাধীনতার পরেও আমাদের দেশ অনেক সমস্যায় জর্জরিত । বেকার সমস্যা ও দারিদ্রতা জ্বলন্ত উদাহরণ । তবুও স্বাধীন দেশের একজন দেশবাসী হিসাবে আমরা গর্বিত । তাই বিনম্র চিত্তে কুর্ণিশ জানাই স্বাধীনতা সংগ্রামীদের । যাদের আত্নত্যাগের উৎকৃষ্ট নিদর্শন আমাদের দেশের স্বাধীনতা ।
।।কলমে : দিলীপ  রায়।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

স্বাধীনতা দিবসের মর্যাদা : তন্ময় সিংহ রায়।।।

বৈচিত্র্যময় কর্মব্যস্ততার হিমবাহের নিচে চাপা পড়ে পিষ্টে থাকা দেশাত্মবোধটা পনের’ই আগষ্টের দু’দিন আগে জেগে উঠেই,গলার গীটারের তারের সুরঝঙ্কারে আকাশ বাতাসকে আন্দোলিত করবে…..
“সারে জহাঁ সে অচ্ছা হিন্দোসিতাঁ হমারা,
হম বুলবুলেঁ হ্যাঁয় ইসকী, ইয়ে গুলসিতাঁ হমারা”…
পনের’ই আগষ্ট শেষ,
দু’দিনের অতিমাত্রার জেগে ওঠা আদর্শের সুপ্ত আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ স্তব্ধ!
আবার বিভিন্ন কর্মব্যস্ততায় দেশাত্মবোধটা প্রায় সারাবছর শীতঘুমে আচ্ছন্ন!!….
প্রশ্ন করলেই স্মার্ট উত্তর, ‘আদর্শটা(দেশাত্মবোধের) কি দেখানোর জিনিস?…না চিৎকার করে বলার জিনিস?….যা আছে তা মনেই থাকে।’ .

বহিঃপ্রকাশ  -৫ ডিগ্রী থেকে ০ ডিগ্রীর মধ্যে ওঠা নামা করে।
‘প্রফুল্ল চাকী’ নামটা আজ শোনা শোনা লাগে, বিশেষতঃ বর্তমান প্রজন্মের কাছে, হয়তো কোনো জনপ্রিয় গায়ক/ফুটবলার হবেন!!
হানি সিং(ভুল মার্জনীয়),ন্যারো জিন্স আর স্লিভলেস না চিনলেই আজ চরম লজ্জা, ব্যাকডেটেড্!
রাজমিস্ত্রির ভূমিকায় আমরাই আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মে,চেতন/অবচেতন মনেই নানাভাবে আত্মকেন্দ্রিকতার দেওয়াল গাঁথছি অত্যন্ত যত্নসহকারে, বিপ্লবী আদর্শ না!
মুখ্য মন্ত্র… ‘তোরা লেখাপড়া শিখে অনেক বড় হ, নিজের পায়ে দাঁড়া, অনেক পয়সা উপার্জন কর ইত্যাদি।’
ওসব বিপ্লবী মনোভাবাপন্ন জীবন ঝুঁকিপূর্ণ,   লাভ নেই/বোকারা নেয়।
পুঁথিগত শিক্ষায় বিদগ্ধজন /আর্থিক  সমৃদ্ধশালী আজও খুঁজলে মিলবে কিন্তু মানসিক সমৃদ্ধশালী ও সামাজিক শিক্ষায় উচ্চশিক্ষিতদের আজ হাতছানি দেয় ডাইনোসর।
অভিভাবক আমরা সবাই কিন্তু ‘যথার্ত’ শব্দটা ত্যাগ করেছে আজ অধিকাংশের সান্নিধ্য, যার  ভবিষ্যত পরিণাম মাঠে-ঘাটে, সমাজের বিভিন্ন জায়গায় আত্মকেন্দ্রিকতার কালো কালো ছোপ!
হিংসা,লোভ, ঈর্ষ্বা, লালসা, স্বার্থপরতায় ভারতের আকাশটা আজ গহীন জমকালো অন্ধকার মেঘে ঢাকা!
বঞ্চিত ফোটন কণাগুলো দুর্ভেদ্য মেঘের স্তরকে উপেক্ষা করে এ দেশকে আলোকিত করতে চেয়েও বারে বারে ব্যর্থ!!
একজন শিক্ষিত অর্থবান/ অর্থবান /শিক্ষিত মানুষের চেয়ে একজন শিক্ষিত মানসিকতার মানুষের প্রয়োজন আজ অত্যাধিক বেশি। দেশমায়ের স্বার্থের সিকিউরিটি গার্ড অপেক্ষা নিজের ও নিজের পরিবারের সিকিউরিটি গার্ড সংখ্যায় আজ অতিক্রম করেছে তার মাত্রাকে!  ক্ষুদিরাম বসু, প্রফুল্ল চাকী ও ভগৎ সিংহ, রাজগুরু’র দেখা আজও মেলে মাঝে মধ্যে তবে এশিয়ান পেইন্টস বা বার্জারের প্রলেপযুক্ত একটা সম্পূর্ণ দেহে।

বলাবাহুল্য, সুপ্রাচীন কাল থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য সুপরিচিত! ঐতিহাসিক সিন্ধু সভ্যতার জন্ম এই অঞ্চলেই।  হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন ও শিখ—বিশ্বের এই চার ধর্মের উৎসভূমি ভারত।
খ্রিষ্টীয় প্রথম সহস্রাব্দে জরথুষ্ট্রীয় ধর্ম (পারসি ধর্ম), ইহুদি ধর্ম, খ্রিষ্ট ও ইসলাম ধর্ম এদেশে প্রবেশ করে, ও ভারতীয় সংস্কৃতিতে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে। অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ থেকে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ধীরে ধীরে ভারতীয় ভূখণ্ডের অধিকাংশ অঞ্চল নিজেদের শাসনাধীনে আনতে সক্ষম হয় ক্রমে ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে এই দেশ পুরোদস্তুর এক ব্রিটিশ উপনিবেশে পরিণত হয়।
মানুষ জন্মগতভাবেই স্বাধীন, তার এই জন্মগত অধিকার যখন অন্যের দ্বারা লুণ্ঠিত হয়, তখনই সে প্রতিবাদ করে ওঠে ও সর্বস্বের বিনিময়ে সচেষ্ট হয় নিজের স্ব-অধীনতা প্রতিষ্ঠায় এবং তার-ই জ্বলন্ত নিদর্শন ছিলো প্রধানত অহিংস, অসহযোগ ও আইন অমান্য আন্দোলন এবং বিভিন্ন চরমপন্থী গুপ্ত রাজনৈতিক সমিতির সহিংস আন্দোলন। এই আন্দোলনের পথে পরিচালিত এক দীর্ঘ রক্তাক্ত সংগ্রামের নির্মম ও করুণ ইতিহাসের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে অবশেষে ১৯৪৭ সালের ১৫ ই আগস্ট বর্বর ব্রিটিশ রাজশক্তির শাসনকর্তৃত্ব থেকে শৃঙ্খলমুক্ত হয়ে ভারত অর্জন করেছিল স্বাধীনতা!! সে স্বাধীনতা ছিলো হিন্দুর, সে স্বাধীনতা ছিলো মুসলমানের, সে স্বাধীনতা ছিলো খৃষ্টান, বৌদ্ধ, জৈন ও শিখ-এর কিন্তু আজ….??                                              একবিংশ শতাব্দীর পোষাকি ভদ্রের স্বাধীন আমরা আত্মকেন্দ্রিকতায় নিমজ্জিত হয়ে পরিনত হয়েছি পূর্ণ বর্বরে! রক্তশূন্য শিরা-উপশিরায় আজ-ও আমাদের বইছে চরম ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা, অর্থলালসা, হিংসা ও ঈর্ষ্বা ! জাতিতে-জাতিতে, মানুষে-মানুষে সম্পর্কের মাঝে আজ পাঁচ মাত্রার ভূমিকম্প!
অনুজীবের ভূমিকায় সম্পর্কের ‘সু’-টা ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপের তলায় অসহায়ভাবে শুয়ে ছটফট করছে! এদিকে রাতের অন্ধকার থেকে মুক্তি লাভ করেই ধর্ষকটা আজ চিৎকার করে বলে ওঠে ‘সারে যাঁহা সে আচ্ছা, হিন্দুস্থাঁ হমারা,’ আবার  বিশিষ্ট কোনো জন সাধারণ জনগণের টাকাকে ড্রাইফুড করে স্বাস্থ্যবান পাকস্থলী নিয়ে স্বাধীনতা দিবসে, ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকার দড়িতে হাত রেখে আদর্শে মালভূমি করেন তাঁর বুক। সারা দেশ জুড়ে চলছে দুর্নীতির তান্ডব নৃত্য! পরম তৃপ্তিসহকারে আজ ব্যাকটেরিয়াগুলো শোষণ করছে  ‘সারে যাঁহা সে আচ্ছা, হিন্দুস্থাঁ হমারা’র পুষ্টিরস!   অশুভকে ধ্বংস ও শুভ-কে প্রতিষ্ঠার জন্যে যে প্রধান অস্ত্র একতা-কে হাতিয়ার করে এসেছিলো মূলত স্বাধীনতা সে একতার অবস্থান আজ টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের ঠিক পাশে। স্বাধীনতা দিবসে আজ কর্ণকুহরে প্রবেশ করে ‘প্যায়ার কিয়া তো ডরনা ক্যায়া’ও বোধ করি স্বাধীন হওয়ার আনন্দে একটু আধটু বিপিন বাবু’র কারণ সুধা!
নেতাজী সুভাষ, ক্ষুদিরাম ও বিনয়, বাদল, দিনেশ কিংবা ভগৎ সিং-এর আত্মবলিদান প্রকৃতভাবে আজও ছটফট করে নানা রঙের মাকড়সার জালে! এনাদের বোধ করি শুধুই মুখস্থ করা হয় ডিগ্রী বাড়াবার স্বার্থে।
প্রকৃত সত্য ছুঁড়ে মারা, একবিংশে বিপদের সংকেত বহন করে অর্থাৎ বাক্ স্বাধীনতা এ যুগে প্রতিবন্ধীর ভূমিকায়! একবিংশের এ স্বাধীনতা দিবসের আনন্দে/এ হেন বিচিত্র দেশপ্রেম-এ সত্যিই বিস্ময় জাগে!
তিরঙ্গাটায় আজও পাওয়া যায় টাটকা লাল রক্তের গন্ধ!!
প্রশ্ন এখানেই যে সত্যিই সেই  ‘সর্বশ্রেষ্ঠ জীব’ হিসাবে ‘স্বাধীনতা দিবস’-এর প্রকৃত মর্যাদা বজায় রাখার যোগ্যতা আজ-ও আমরা তৈরি করতে পেরেছি/পারছি কি?
সত্যিই কি আমরা প্রকৃত দেশপ্রেমী??
(ব্যতিক্রম অবশ্যই স্বীকার্য ও ভূল-ত্রুটি মার্জনীয়।)

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্নিকন্যা, মোহিনী দেবী।

সূচনা—
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের অব্যর্থ পরিশ্রম যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত রাজনৈতিক দিক থেকে মুক্তি পেয়েছে। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়, তার মূলে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে মোহিনী দেবী  প্রথমসারির একজন অন্যতম বিপ্লবী ছিলেন।ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুধু শহীদ ভগৎ সিং-এর মতই নয় বরং শক্তিশালী নারীদের দ্বারা প্রশস্ত হয়েছিল যারা তাদের মাটিতে দাঁড়িয়েছিল এবং দেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য ব্রিটিশদের সাথে লড়াই করেছিল। মোহিনী দেবী  ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি দেশমতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ রূপে।
ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিকন্যা ছিলেন তিনি।
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক স্মরণীয় নাম
মোহিনী দেবী। তিনি ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিকন্যা। এছাড়া তার পরিবার বাংলাদেশের প্রগতিমুলক শিক্ষা ও সংস্কৃতির সাথে জড়িত ছিল। ইতিহাসে তাঁর নাম আজও স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। জেনে নেবো তাঁর সংগ্রামী জীবনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।
জন্ম ও পরিবার—-
মোহিনী দেবী ১৮৬৩ সালে ঢাকা জেলার মানিকগঞ্জে এক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম রামশঙ্কর সেন ও মাতার নাম উমাসুন্দরী দেবী। ১২ বছর বয়সে তারকচন্দ্ৰ দাশগুপ্তের সঙ্গে বিবাহ হয়। শ্রমিক আন্দোলনের নেত্রী প্রভাবতী দাশগুপ্ত।
শিক্ষাজীবন—-
মোহিনী দেবী ভিক্টোরিয়া স্কুলের প্রথম হিন্দু ছাত্রী, কলকাতার অভিজাত অ্যাংলিকান প্রতিষ্ঠান, মোহিনী দেবী (১৮৬৩ – ১৯৫৫) তার মূলে একজন জাতীয়তাবাদী ছিলেন।  ঢাকার বেউথার রামশঙ্কর সেনের কন্যা, বারো বছর বয়সে তারকচন্দ্র দাশগুপ্তের সাথে তার বিয়ে হয়।  তা সত্ত্বেও, তিনি পন্ডিত শিবনাথ শাস্ত্রী এবং রামতনু লাহিড়ীর অধীনে অধ্যয়নের সুযোগ পেয়েছিলেন, ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগের কলকাতার অধ্যবসায়ী।  তিনি ইউনাইটেড মিশনের একজন মহিলা শিক্ষকের কাছে ইংরেজি শিখেছিলেন।  এইভাবে তিনি ভারতের সমসাময়িক উন্নয়ন সম্পর্কে সচেতন হন এবং শুরু থেকেই বিভিন্ন সামাজিক কল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হন।
রাজনৈতিক জীবন—-
১৯২১-২২ সালে তিনি গান্ধীজীর অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেওয়ার কারণে কারাবরণ করেন। ১৯৩০-৩১ সালে আইন অমান্য আন্দোলনে নেতৃত দেন। এজন্য তাকে ছয় মাসের জেল খাটতে হয়েছিল। ‘নিখিল ভারত মহিলা সমিতির’ সভানেত্রী হিসেবে তার ভাষন উচ্চ প্রশংসিত হয়। ১৯৪৬ সালের দাঙ্গায় মুসলিম প্রধান অঞ্চল এন্টালি বাগানে নিজের বাড়িতে থেকে হিন্দু মুসলিম ঐক্যের প্রচার চালিয়েছিলেন। সে সময় তার বন্ধু-বান্ধব আত্নীয় পরিজন তাকে তিরস্কার করে কিন্তু তাতে তিনি সংকল্প হারান নি। মোহিনী দেবী একদিকে স্বাধীনতা আন্দোলন এর পক্ষে কাজ করেছিলেন অন্যদিকে নারী শিক্ষা, নারী স্বাধীনতা, সমাজসংস্কারমূলক কাজ।
স্বাধীনতা আন্দোলনে—
১৯২০-১৯২২ সালে, ব্রিটিশদের সাথে অসহযোগের জন্য গান্ধীর আহ্বানের উচ্চতায়, তিনি নিজেকে আন্দোলনে উত্সর্গ করেছিলেন।  ১৯৩০-১৯৩১ সালের আইন অমান্য আন্দোলনের সময়, তিনি আইন ও পুলিশি বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করে এবং পথে কারাভোগ করে একজন উল্লেখযোগ্য নেতা আন্দোলন হিসাবে আবির্ভূত হন।  গান্ধীবাদী আদর্শে তার সম্পূর্ণ সাবস্ক্রিপশন এবং তার আন্দোলন কৌশলের প্রতি অটল জমা দেওয়ার কারণে, তিনি দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে সর্বভারতীয় মহিলা কংগ্রেসের সভাপতি হন;  তার বাকপটু বক্তৃতা গান্ধী সহ সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল।  নিজের এবং তার পরিবারের নিরাপত্তা উপেক্ষা করে, তিনি কলকাতার রাস্তায় নেমে আসেন এবং ১৯৪৬ সালের ভয়াবহ কলকাতা দাঙ্গার অন্ধকার দিনগুলিতে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেন।
গান্ধীজীর আদর্শে অবিচলিত নিষ্ঠা ছিল। ১৯৪৬ খ্রী. কলিকাতায় দাঙ্গার সময় দাঙ্গা-আধুষিত মুসলমান-প্রধান অঞ্চল এন্টনিবাগানে নিজের বাড়িতে থেকে হিন্দু-মুসলমানের ঐক্যের বাণী প্রচার করেন। ‘দি স্কাভেঞ্জার্স ইউনিয়ন অব বেঙ্গল’ এবং ‘জুটি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নে’র প্রেসিডেন্ট তাঁর কন্যা প্ৰভাবতী দাশগুপ্ত ১৯২৭-২৮ থেকে ১৯৩০ – ৩১ খ্রী. পর্যন্ত শ্রমিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে এক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব।
মৃত্যু—-
মহান এই  সংগ্রামী মোহিনী দেবী ২৫ মার্চ ১৯৫৫ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট ও উইকিপিডিয়া।।

Share This
Categories
প্রবন্ধ রিভিউ

আজ ১১ আগস্ট, ইতিহাসের আজকের এই দিনে যা ঘটেছিল।

আজ ১১ আগস্ট। ইতিহাস ঘেটে দেখা যায় বছরের প্রতিটি দিনে ঘটেছে অনেক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। আসুন আজকের দিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় একনজরে দেখে নিই।  ইতিহাসের আজকের এই দিনে কী কী ঘটেছিল, কে কে জন্ম নিয়েছিলেন ও মৃত্যুবরণ করেছিলেন——-
আজ যাদের জন্মদিন—-
১৯০৮ – পুলিনবিহারী সেন খ্যাতনামা বাঙালি রবীন্দ্র-বিশারদ।
১৯১১ – প্রেম ভাটিয়া, সাংবাদিক।
১৯২৯ – মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় ভারতীয় বাঙালি সঙ্গীতশিল্পী ও সুরকার।
১৯৩৭ – সালমা সোবহান, বাংলাদেশের প্রখ্যাত ব্যারিস্টার, শিক্ষক, মানবাধিকারকর্মী।
১৯৩৮ – চঞ্চল কুমার মজুমদার, শান্তিস্বরূপ ভটনাগর পুরস্কারে সম্মানিত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ভারতীয় পদার্থবিজ্ঞানী ।
১৯৬৫ – ভায়োলা ডেভিস, মার্কিন অভিনেত্রী ও প্রযোজক।
১৯৭০ – জিয়ানলুকা পেসোত্তো, ইতালীয় ফুটবলার।
১৯৮৩ – ক্রিস হেমসওর্থ, অস্ট্রেলীয় অভিনেতা।
১৮৭০ – টম রিচার্ডসন, ইংরেজ ক্রিকেটার।
১৭৩৭ – ইংরেজ ভাস্কর জোসেফ নোলেকেনস।
১৮৫৮ – নোবেলজয়ী [১৯২৯] ওলন্দাজ চিকিৎসক ক্রিস্টিয়ান আইকমান।
ইতিহাসের পাতায় আজকের দিনের ঘটনাবলী—-
২০০৪ – পাকিস্তান পরমাণু বিস্তার রোধ না করলে দেশটির ওপর মার্কিন কংগ্রেসের নিষেধাজ্ঞা প্রস্তাব গ্রহণের আহবান করা হয়।
২০০৮ – গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে মহিলাদের ৪০০ মিটার ফ্রিস্টাইল শেষ হয়। একই দিনে মহিলাদের ২০০ মিটার ফ্রিস্টাইল সাঁতার প্রতিযোগিতা শুরু হয়।
২০১২ – বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাফাত জামিল বীর বিক্রমের মৃত্যু।
১৯০৮ – বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর ফাঁসি কার্যকর হয়।
১৯০৯ – রেডিওর বিপদবার্তা বা এসওএসের ব্যবহার শুরু হয়।
১৯১৪ – জন রে অ্যানিমেশন পেটেন্ট করেন।
১৯২২ – কাজী নজরুল ইসলামের ধুমকেতু পত্রিকা প্রকাশিত হয়।
১৯২৯ – ইরাক ও পারস্য শান্তিচুক্তি করে।
১৯২৯ – রাশিয়া ও চীনের সীমান্তে যুদ্ধ শুরু হয়।
১৯৫২ – মানসিক অসুস্থতার জন্য জর্দানের বাদশাহ তালাল সিংহাসনচ্যুত হন।
১৯৬১ – ভারতে পূর্বে পর্তুগিজ শাসিত অঞ্চল দাদরা ও নগর হাভেলিকে ভারতের সাথে যুক্ত ও একত্রিত করে নতুন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল দাদরা ও নগর হাভেলি গঠন করা হয়।
১৯৮৬ – এশিয়ার জনসংখ্যা ৩০০ কোটি পূর্ণ হয়।
১৮১০ – আজোরে ভয়াবহ ভূমিকম্পে সাও মিগুয়েল গ্রাম তলিয়ে যায়।
১৮৮৪ – টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি করেন অস্ট্রেলিয়ার ম্যাকডোনেল।
১৮৮৮ – বন্ধ হয়ে যায় ক্যালিফোর্নিয়া থিয়েটার।
১৭৮০ – বার্বাডোজে হারিকেন শুরু হয়।
৬৮৩ – মুসলমানরা সমরখন্দ বিজয় লাভ করে।
এই দিনে মৃত্যুবরণ করেন যারা—-
২০০৪ – হুমায়ুন আজাদ, বাংলাদেশী লেখক ও ভাষাবিদ।
২০১২ – শাফায়াত জামিল বীর বিক্রম, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
২০১৮ – বিদ্যাধর সূর্যপ্রসাদ নাইপল, ভারতীয়-নেপালীয় বংশোদ্ভূত ত্রিনিদাদীয় সাহিত্যিক।
১৯০৮ – ক্ষুদিরাম বসু ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের বাঙালি বিপ্লবীর ফাঁসির মঞ্চে আত্মবলিদান।
১৯৩৫ – স্যার দেবপ্রসাদ সর্বাধিকারী, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বেসরকারি ( ১৯১৪-১৯১৮) উপাচার্য।
১৯৫৫ – অমলেন্দু দাশগুপ্ত, বাঙালি সাহিত্যিক।
১৯৭০ – ইরাবতী কার্বে ভারতের মহারাষ্ট্রের একজন নৃবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ এবং লেখক।
১৯৭২ – নোবেজয়ী [১৯৫১] আফ্রিকান-মার্কিন অণুজীব বিজ্ঞানী ম্যাক্স থিলাব।
১৯৯০ – ননীগোপাল চক্রবর্তী বাঙালি শিশু সাহিত্যিক।
১৯৯৫ – আলোন্‌জো চার্চ, মার্কিন গণিতবিদ এবং যুক্তিবিদ।
।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

বিজয়া সেন: এক অনন্য নারী স্বাধীনতা সংগ্রামী

ভূমিকা

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অসংখ্য নারী তাঁদের জীবন, স্বপ্ন, পরিবার ও নিরাপত্তা বিসর্জন দিয়েছেন। তাঁদের অনেকের নাম ইতিহাসের পাতায় উজ্জ্বল অক্ষরে লেখা থাকলেও, অনেকের অবদান অজানা রয়ে গেছে। বিজয়া সেন তেমনই একজন সংগ্রামী, যিনি বাংলার স্বাধীনতা আন্দোলনের এক উজ্জ্বল কিন্তু তুলনামূলকভাবে কম আলোচিত নাম। তাঁর রাজনৈতিক সচেতনতা, সামাজিক কর্মকাণ্ড, নারীর অধিকার রক্ষায় অবদান এবং বিপ্লবী কর্মকাণ্ড তাঁকে স্বাধীনতার ইতিহাসে এক বিশেষ স্থান দিয়েছে।

শৈশব ও শিক্ষাজীবন

বিজয়া সেন ১৯১০ সালের দিকে পূর্ববঙ্গের (বর্তমান বাংলাদেশ) এক সাংস্কৃতিক ও শিক্ষিত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ছিলেন স্কুলশিক্ষক এবং মা ছিলেন গৃহবধূ হলেও সাহিত্য ও সংগীতপ্রেমী। ছোটবেলা থেকেই বিজয়ার মনে দেশপ্রেমের বীজ রোপিত হয়েছিল, কারণ তাঁর পরিবার ব্রিটিশ বিরোধী মনোভাবাপন্ন ছিল এবং বাড়িতে প্রায়ই স্বদেশী নেতাদের আলোচনা হত।
শিক্ষাজীবনে বিজয়া ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। তিনি কলকাতার বেথুন কলেজে ভর্তি হন, যা তখন নারীদের জন্য উচ্চশিক্ষার অন্যতম প্রধান প্রতিষ্ঠান ছিল। এখানেই তিনি রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠেন এবং ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ব্রিটিশ বিরোধী সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ শুরু করেন।

রাজনৈতিক প্রেরণা

১৯২৮ সালের সাইমন কমিশন বয়কট আন্দোলন এবং লালা লাজপত রায়ের মৃত্যুর ঘটনায় বিজয়া গভীরভাবে প্রভাবিত হন। বেথুন কলেজে পড়াকালীন তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এবং ছাত্র সংঘের সভায় অংশ নিতে শুরু করেন।
তবে কেবল কংগ্রেসের অহিংস আন্দোলনে সীমাবদ্ধ না থেকে, তিনি বিপ্লবী সংগঠন যুগান্তর এবং বঙ্গীয় যুব সংঘ-এর সঙ্গেও গোপনে যুক্ত হন। তাঁর রাজনৈতিক আদর্শ ছিল একদিকে গান্ধীবাদের অহিংস প্রতিরোধ, অন্যদিকে সশস্ত্র বিপ্লবের প্রস্তুতি—পরিস্থিতি অনুযায়ী কোন পথ গ্রহণ করা হবে, তা তিনি বাস্তবতার ভিত্তিতে বিবেচনা করতেন।

বিপ্লবী কর্মকাণ্ড

বিজয়া সেন কলকাতা ও চট্টগ্রামে বিপ্লবীদের সংবাদ ও অস্ত্র সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বিশেষ করে ১৯৩০ সালের চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন-এর সময় তিনি সূর্য সেনের বিপ্লবী দলের সঙ্গে সমন্বয় রক্ষার জন্য মহিলা কুরিয়ার হিসেবে কাজ করেছিলেন।
তিনি একাধিকবার বিপ্লবীদের আশ্রয় দিয়েছেন, পুলিশের চোখ এড়িয়ে অস্ত্র পরিবহন করেছেন, এবং নারীর পরিচয়ের আড়ালে গোপন বার্তা বহন করেছেন। তাঁর সাহসিকতার কারণে তাঁকে সমসাময়িকরা “বেঙ্গল’স ব্রেভহার্ট” বলে ডাকতেন।

কারাবাস ও নির্যাতন

১৯৩২ সালে ব্রিটিশ পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে, অভিযোগ ছিল রাষ্ট্রদ্রোহ, অবৈধ অস্ত্র রাখা এবং বিপ্লবী সংগঠনের সদস্য হওয়া। কারাগারে বিজয়া সেনকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়।
কারাগারে থেকেও তিনি অন্য বন্দিনী নারীদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা ছড়িয়ে দেন। তিনি কারাগারে গান্ধীজীর বই পড়াতেন, নারীদের সংগঠিত করতেন এবং ব্রিটিশ শাসনের অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চালিয়ে যেতেন।

স্বাধীনতা-পরবর্তী সমাজসেবা

১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর বিজয়া সেন সক্রিয় রাজনীতিতে অংশ নেননি, তবে সামাজিক কাজে নিজেকে সম্পূর্ণ উৎসর্গ করেন। তিনি কলকাতায় বস্তিবাসী শিশুদের জন্য একটি বিনামূল্যের স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন এবং নারীদের স্বনির্ভর করতে হস্তশিল্প প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করেন।
তিনি নারী শিক্ষার প্রসারে একাধিক প্রচারাভিযান চালান এবং একাধিক নারী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁর কাছে স্বাধীনতা কেবল রাজনৈতিক স্বাধীনতা নয়—সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমতা ছিল প্রকৃত স্বাধীনতা।

ব্যক্তিত্ব ও আদর্শ

বিজয়া সেনের ব্যক্তিত্ব ছিল দৃঢ়, স্নেহশীল এবং ন্যায়পরায়ণ। তিনি নারীর ক্ষমতায়ন, ধর্মীয় সহিষ্ণুতা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারে বিশ্বাস করতেন। তাঁর জীবনদর্শন ছিল—

“স্বাধীনতা কেবল মাটির নয়, মন ও মনের স্বপ্নেরও স্বাধীনতা।”

সমসাময়িকদের প্রশংসা

বিজয়া সেনের জীবদ্দশায় অনেক স্বাধীনতা সংগ্রামী তাঁর অবদান স্বীকার করেছেন। প্রখ্যাত বিপ্লবী অনন্ত সিং একবার বলেছিলেন—

“বিজয়া আমাদের জন্য শুধু অস্ত্র বহন করতেন না, সাহসও বহন করতেন।”

উত্তরাধিকার

আজকের দিনে বিজয়া সেনের নাম ইতিহাসের মূলধারায় খুব বেশি উচ্চারিত হয় না, কিন্তু তাঁর জীবন সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করতে পারে। তাঁর কর্মকাণ্ড প্রমাণ করে যে, স্বাধীনতার আন্দোলনে নারী কেবল সহযাত্রী নয়, বরং নেতা ও পথপ্রদর্শকও হতে পারে।

উপসংহার

বিজয়া সেনের জীবন কাহিনী ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক অবিচ্ছেদ্য অধ্যায়। তিনি ছিলেন সাহসী, আদর্শবাদী, এবং মানবিক চেতনার প্রতীক। তাঁর জীবন আমাদের শেখায়—সত্যিকারের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য কেবল শাসক বদল নয়, সমাজ বদল জরুরি।
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে নারীর অবদান নিয়ে যখনই কথা হবে, বিজয়া সেনের নাম সেখানে উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বল করবে।

Share This