Categories
প্রবন্ধ

একটি পরিবারে পিতার ভূমিকা।।

পরিবার সমাজের ছোটতম একক, যা মানুষের জীবনের প্রাথমিক শিক্ষা, মূল্যবোধ এবং আচরণের মূলে প্রভাব ফেলে। একটি পরিবারের মূল ভিত্তি হলো ভালোবাসা, সংহতি, সহমর্মিতা এবং দায়িত্ববোধ। এই সকল গুণাবলীর ধারক হতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বাবা। পিতার উপস্থিতি ও তার আচরণ সন্তান এবং পুরো পরিবারের মানসিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। আধুনিক সমাজে যেখানে পরিবার ও সামাজিক কাঠামো ক্রমে পরিবর্তিত হচ্ছে, সেখানে পিতার দায়িত্ব এবং ভূমিকা আগের তুলনায় আরও বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে।

১. পরিবারের অর্থনৈতিক ভিত্তি ও পিতার দায়িত্ব

পিতা সাধারণত পরিবারের প্রধান অর্থনৈতিক সহায়ক হিসেবে বিবেচিত হন। তিনি পরিবার পরিচালনার জন্য অর্থ উপার্জনের দায়িত্ব নেন এবং পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। পিতার সঠিক অর্থনৈতিক পরিকল্পনা সন্তানদের শিক্ষার সুযোগ, স্বাস্থ্যসেবা এবং পরিবারকে সামাজিকভাবে সুস্থিত রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

একটি পরিবারে পিতার অর্থনৈতিক ভূমিকা শুধুমাত্র আয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তিনি পরিবারকে দায়িত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার শিক্ষা দেন। শিশুরা যখন দেখেন পিতা সঞ্চয়, বাজেট পরিকল্পনা এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সচেতন, তখন তারা ভবিষ্যতে অর্থনৈতিকভাবে সুষ্ঠু জীবন যাপন করার শিক্ষা গ্রহণ করে।

২. মানসিক ও নৈতিক দিক

পিতা শুধুমাত্র অর্থের দিক দিয়ে নয়, মানসিক ও নৈতিক দিক থেকেও পরিবারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি সন্তানের মানসিক বিকাশে স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা এবং আত্মবিশ্বাস গঠনের জন্য কাজ করেন। পিতার স্নেহময় উপস্থিতি সন্তানের মানসিক স্থিতিশীলতা ও সামাজিক যোগাযোগ দক্ষতা বাড়ায়।

নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধ শেখানোয় পিতার ভূমিকা অপরিসীম। বাবা তার আচরণ ও সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সন্তানকে সঠিক ও ভুলের মধ্যে পার্থক্য শেখান। উদাহরণস্বরূপ, পিতা যখন সততা, সহানুভূতি, শ্রমের মূল্য ও দায়িত্ববোধের দিক দেখান, তখন সন্তান তার আচরণে সেই গুণাবলী আত্মস্থ করে।

৩. শিক্ষাগত ও মানসিক বিকাশে পিতার প্রভাব

শিশুর শিক্ষাগত বিকাশে পিতার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পিতা কেবল অর্থনৈতিকভাবে শিক্ষার জন্য সুযোগ করে দেন না, তিনি শিশুকে শেখার প্রতি আগ্রহ, অধ্যবসায় এবং কৌতূহল জন্মাতে সাহায্য করেন। বাবা যখন সন্তানকে বিভিন্ন পাঠ্যবিষয়, জীবনদর্শন বা বাস্তব জীবনের সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে নির্দেশনা দেন, তখন শিশু কেবল জ্ঞানই নয়, জীবন দক্ষতাও অর্জন করে।

মানসিক বিকাশে বাবা শিশুর সাহস, মনোবল এবং সমস্যা মোকাবেলার ক্ষমতা গড়ে তুলেন। বাবা যখন সন্তানের সাথে খেলাধুলা, গল্পকথন বা শিক্ষামূলক কার্যক্রমে যুক্ত হন, তখন শিশুর মনোযোগ, চিন্তাভাবনার ক্ষমতা এবং সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পায়।

৪. পরিবারে নেতৃত্বের ভূমিকা

পরিবারের নেতৃত্ব প্রদানে পিতার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিবার পরিচালনা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সংকট মোকাবেলায় পিতা প্রধান দিকনির্দেশক হিসেবে কাজ করেন। বাবা পরিবারের জন্য উদাহরণ স্থাপন করেন, যা সন্তানদের চরিত্র গঠনে প্রভাব ফেলে।

পরিবারে পিতার নেতৃত্ব শুধুমাত্র কর্তৃত্বপূর্ণ নির্দেশ দেওয়ায় সীমাবদ্ধ নয়। তিনি পরিবারকে একত্রিত রাখার, সমস্যা সমাধানের এবং সদস্যদের মধ্যে সমন্বয় বজায় রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। আধুনিক সমাজে পিতা যখন একটি সমানাধিকারভিত্তিক ও সমন্বিত পরিবারের পরিবেশ তৈরি করেন, তখন পরিবারকে মানসিক ও সামাজিকভাবে শক্তিশালী করা সম্ভব হয়।

৫. পিতার সামাজিক ভূমিকা

পিতা কেবল পরিবারে নয়, সমাজেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বাবা পরিবারের বাইরে সামাজিক সম্পর্ক, পরিচয় এবং সম্মান বজায় রাখেন। তিনি সন্তানদের সামাজিক আচরণ, শিষ্টাচার এবং পরিপূর্ণ সামাজিক মূল্যবোধ শেখান।

একজন সচেতন পিতা সন্তানদের শেখান কিভাবে সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে হয়, কিভাবে অন্যের প্রতি সহানুভূতি দেখাতে হয় এবং কিভাবে সমাজের নিয়ম ও নৈতিকতা মেনে চলতে হয়। এই শিক্ষা শিশুর সামাজিক বিকাশে অপরিসীম প্রভাব ফেলে।

৬. আধুনিক সমাজে পিতার ভূমিকা

আজকের আধুনিক সমাজে যেখানে মা-বাবা উভয়েই কাজ করছেন, পিতার ভূমিকা আরও বিস্তৃত হয়েছে। তিনি কেবল অর্থনৈতিক সহায়ক নয়, পরিবারের মানসিক, শিক্ষাগত এবং সামাজিক বিকাশের ক্ষেত্রে সমানভাবে দায়িত্বশীল। আধুনিক পিতারা এখন সন্তানদের দৈনন্দিন যত্ন, শিক্ষাগত সহায়তা, আবেগীয় সমর্থন এবং ঘরকাঘরের কাজেও অংশ নিচ্ছেন।

পরিবারে সমানাধিকার ভিত্তিক সম্পর্ক গড়ে তোলা, সন্তানদের মানসিক বিকাশে মনোযোগী হওয়া এবং ঘরে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা আধুনিক পিতার মূল দায়িত্ব।

৭. পিতার উপস্থিতির প্রভাব

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, যেখানে পিতার সক্রিয় উপস্থিতি থাকে, সেই পরিবারের সন্তানরা মানসিকভাবে স্থিতিশীল, শিক্ষায় আগ্রহী এবং সামাজিকভাবে সক্ষম হয়। পিতার অনুপস্থিতি বা অমনোযোগ শিশুদের মানসিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে, যেমন আত্মবিশ্বাসের অভাব, আচরণগত সমস্যা এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতা।

পিতা যখন সন্তানের জীবনে আদর্শ এবং পথপ্রদর্শক হিসেবে উপস্থিত থাকেন, তখন তারা জীবনের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আত্মনির্ভরশীল ও দায়িত্বশীল হয়ে ওঠে।

৮. চ্যালেঞ্জ ও দায়িত্ব

পিতার জীবনে অনেক চ্যালেঞ্জ আসে। কাজের চাপ, অর্থনৈতিক সমস্যা, সামাজিক চাপ এবং ব্যক্তিগত সমস্যা বাবাদেরকে প্রভাবিত করে। তবে এই সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে তিনি যদি পরিবারের কাছে একটি স্থিতিশীল, নিরাপদ ও উদার পরিবেশ বজায় রাখেন, তখন তার ভূমিকা সার্থক হয়।

পিতার দায়িত্ব শুধুমাত্র অর্থনৈতিক নয়, তিনি মানসিক, নৈতিক, শিক্ষাগত এবং সামাজিক দিক থেকেও পরিবারকে সমর্থন দিতে হবে। এই বহুমাত্রিক দায়িত্ব পূরণ করা একটি চ্যালেঞ্জ, কিন্তু তা পরিবারকে সুখী, সুস্থ এবং সমৃদ্ধ করার জন্য অপরিহার্য।

৯. সমাপনী কথা

পরিবারে পিতার ভূমিকা সমগ্র পরিবারের স্বাস্থ্য, সুখ এবং সমৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য। তিনি কেবল অর্থনৈতিক সহায়ক নয়, মানসিক সমর্থন, নৈতিক শিক্ষা, নেতৃত্ব এবং সামাজিক মূল্যবোধের প্রধান উৎস। আধুনিক সমাজে পিতার ভূমিকা আরও বিস্তৃত হয়েছে, যেখানে তিনি সন্তানের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে।

একটি সফল পরিবার গঠনের জন্য পিতার দায়িত্ব পালন, সন্তানের প্রতি স্নেহময় দৃষ্টি, নৈতিক ও সামাজিক শিক্ষা দেওয়া এবং পরিবারে নেতৃত্ব প্রদান অপরিহার্য। পিতার উপস্থিতি এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ শিশু এবং পুরো পরিবারের জন্য অনন্য শক্তি ও স্থিতিশীলতার উৎস।

পরিশেষে বলা যায়, পিতা হলো পরিবারের অদৃশ্য স্তম্ভ, যার উপস্থিতি পরিবারকে শক্তিশালী, সন্তানের মননশীল, নৈতিক ও সামাজিক দিক দিয়ে উন্নত এবং পুরো সমাজকে সুস্থিত রাখে। বাবা শুধুমাত্র একটি পরিবারে নয়, পুরো সমাজের জন্য অনুপ্রেরণা ও দিকনির্দেশকের ভূমিকা পালন করেন।

Share This
Categories
প্রবন্ধ বিবিধ রিভিউ

গোয়ার দুধসাগর জলপ্রপাত – প্রকৃতির এক বিস্ময়।।

গোয়া মানেই সাধারণত বিচ, নাইটলাইফ আর পার্টি কালচার – কিন্তু প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য গোয়ার অন্যতম রত্ন হলো দুধসাগর জলপ্রপাত (Dudhsagar Waterfalls)। পশ্চিমঘাট পর্বতের কোলে অবস্থিত এই জলপ্রপাত যেন প্রকৃতির এক অপূর্ব উপহার, যা প্রতি বছর অসংখ্য পর্যটককে তার দিকে টেনে আনে।


🏞️ অবস্থান ও সৌন্দর্য

দুধসাগর জলপ্রপাত গোয়া ও কর্ণাটকের সীমান্তে অবস্থিত। এটি ভারতের অন্যতম উঁচু জলপ্রপাত – প্রায় ৩১০ মিটার (১০১৭ ফুট) উঁচু থেকে জল নেমে আসে চার ধাপে। দূর থেকে তাকালে মনে হয় যেন পাহাড় বেয়ে দুধের স্রোত নেমে আসছে, তাই এর নাম “দুধসাগর” – অর্থাৎ দুধের সাগর

বর্ষার সময় যখন মন্ডোভী নদীর জলপ্রবাহ তীব্র হয়, তখন জলপ্রপাতের সৌন্দর্য চরমে পৌঁছায়। চারপাশের সবুজ বন, ঝোপঝাড় আর পাহাড়ের গর্জন মিলিয়ে এক স্বর্গীয় দৃশ্য তৈরি করে।


🚆 যাত্রা ও রোমাঞ্চ

দুধসাগর ভ্রমণের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর অংশ হলো সেখানে পৌঁছানো।

  • ট্রেনপথে: মাদগাঁও থেকে কোল্লেম (Kulem) বা কাসেলরক (Castle Rock) পর্যন্ত ট্রেন ধরে তারপর জঙ্গলপথে হেঁটে যাওয়া যায়। অনেকেই ট্রেনের জানলা থেকে জলপ্রপাতের দৃশ্য দেখতে পছন্দ করেন।
  • জিপ সাফারি: কোল্লেম থেকে জিপ সাফারি নিয়ে জঙ্গলের মধ্য দিয়ে অ্যাডভেঞ্চার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়।

🐾 প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণী

দুধসাগর জলপ্রপাত ভগবান মহাবীর ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারির অংশ। তাই এখানে বানর, হরিণ, পাখি, এমনকি বন্য মোষের ঝাঁকও দেখা যায়। প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এটি এক স্বর্গরাজ্য।


📸 ফটোগ্রাফির স্বর্গ

জলপ্রপাতের কাছাকাছি গেলে চারপাশে জলকণা ছড়িয়ে পড়ে, যা এক অদ্ভুত অনুভূতি তৈরি করে। এখানে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা, ভিডিও করা এক অনন্য অভিজ্ঞতা – বিশেষত ট্রেন যখন জলপ্রপাতের সামনের সেতু পেরিয়ে যায়, তখন সেই দৃশ্য ক্যামেরায় ধরার জন্য অনেক পর্যটক অপেক্ষা করে।


🏖️ ভ্রমণ টিপস

  • সেরা সময়: জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর (বর্ষাকাল) – জলপ্রপাত তখন সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর থাকে।
  • নিরাপত্তা: বৃষ্টির সময় পিচ্ছিল পথ সাবধানে চলতে হবে।
  • প্রস্তুতি: সঙ্গে জলরোধী ব্যাগ, হালকা খাবার ও ক্যামেরা রাখতে ভুলবেন না।

🏁 উপসংহার

দুধসাগর জলপ্রপাত শুধু একটি প্রাকৃতিক বিস্ময় নয়, এটি এক অনন্য অ্যাডভেঞ্চার। জঙ্গলের পথ, পাহাড়ের সৌন্দর্য আর গর্জনরত জলপ্রপাতের দৃশ্য আপনার মনকে পরিপূর্ণ আনন্দ দেবে। গোয়া ভ্রমণে যদি একটু অফবিট অভিজ্ঞতা চান, তাহলে দুধসাগর জলপ্রপাত আপনার ট্রাভেল লিস্টে অবশ্যই থাকা উচিত।

Share This
Categories
প্রবন্ধ বিবিধ রিভিউ

গোয়ার মোলেম ন্যাশনাল পার্ক – প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণীর স্বর্গ।।

গোয়ার নাম শুনলেই আমাদের চোখে ভেসে ওঠে সমুদ্রসৈকত, পার্টি আর রঙিন রাতের ছবি। কিন্তু যারা প্রকৃতিপ্রেমী, বন্যপ্রাণী দেখতে ভালোবাসেন এবং শান্ত-নিরিবিলি পরিবেশ খোঁজেন, তাদের জন্য গোয়া একটি আলাদা রত্ন লুকিয়ে রেখেছে – সেটি হলো মোলেম ন্যাশনাল পার্ক (Mollem National Park)। পশ্চিমঘাটের সবুজ অরণ্যের মাঝে অবস্থিত এই পার্ক প্রকৃতি, বন্যপ্রাণী এবং অ্যাডভেঞ্চারের এক অপূর্ব মেলবন্ধন।


📍 অবস্থান ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য

মোলেম ন্যাশনাল পার্ক গোয়ার দক্ষিণ-পূর্ব অংশে, কর্ণাটক সীমান্তের কাছে অবস্থিত। এটি বৃহত্তর ভগবান মহাবীর বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের অংশ। প্রায় ২৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই পার্কে ঘন অরণ্য, ছোট ছোট নদী, ঝর্ঝর ঝর্ণা এবং পাহাড়ের সারি মিলিয়ে এক অপরূপ দৃশ্য তৈরি করে।

সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো – এখান থেকেই শুরু হয় বিখ্যাত দুধসাগর জলপ্রপাতের ট্রেক


🐾 বন্যপ্রাণীর ভাণ্ডার

এই পার্ক প্রকৃত অর্থেই জীববৈচিত্র্যের এক স্বর্গ। এখানে আপনি দেখতে পাবেন –

  • স্তন্যপায়ী প্রাণী: বন্য মোষ, চিতা, বন্য শূকর, হরিণ, ভারতীয় বাইসন (গৌর), স্লথ বিয়ার
  • পাখি: মালাবার পিয়েড হর্নবিল, কিংফিশার, উল্লুক, প্যারাকিট
  • সরীসৃপ: কিং কোবরা, পাইথন, মনিটর লিজার্ড
  • প্রজাপতি ও পোকামাকড়: নানা রঙের প্রজাপতি ও অদ্ভুত কীটপতঙ্গ

🚙 ভ্রমণের অভিজ্ঞতা

মোলেম ন্যাশনাল পার্কে প্রবেশ করার জন্য কোল্লেম (Kulem) গ্রাম থেকে জিপ সাফারি বুক করা যায়। জিপে করে ঘন জঙ্গল পেরিয়ে যখন আপনি পার্কের ভেতরে প্রবেশ করবেন, তখন প্রকৃতির রহস্যময়তা আপনাকে ঘিরে ফেলবে।

অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য এখানে রয়েছে –

  • ট্রেকিং ট্রেইল
  • বাইক রাইডিং রুট
  • বন্যপ্রাণী ফটোগ্রাফির সুযোগ

🌿 বিশেষ আকর্ষণ

  • দুধসাগর জলপ্রপাত: মোলেম থেকে জঙ্গলের ভেতর দিয়ে গিয়ে দুধসাগরের ঝর্ণার গর্জন উপভোগ করা এক অনন্য অভিজ্ঞতা।
  • তাম্বডি সুরলা মহাদেব মন্দির: ১২শ শতকের এই প্রাচীন মন্দিরটি এই পার্কের কাছেই অবস্থিত এবং গোয়ার ঐতিহাসিক স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন।

🏖️ সেরা সময় ও ভ্রমণ টিপস

  • সেরা সময়: অক্টোবর থেকে মার্চ – আবহাওয়া শীতল ও আরামদায়ক থাকে।
  • কি নেবেন: দূরবীন, ক্যামেরা, হালকা খাবার, পর্যাপ্ত জল এবং আরামদায়ক জুতো।
  • নিরাপত্তা: গাইডের নির্দেশ মেনে চলা খুবই জরুরি, কারণ এটি বন্যপ্রাণীর এলাকা।

🏁 উপসংহার

মোলেম ন্যাশনাল পার্ক শুধুমাত্র একটি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য নয়, এটি প্রকৃতির এক উন্মুক্ত পাঠশালা। এখানে এসে আপনি বুঝতে পারবেন প্রকৃতির সৌন্দর্য ও বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ কতটা গুরুত্বপূর্ণ। সমুদ্রসৈকতের বাইরে গোয়ার এই সবুজ অরণ্যে একবার ঘুরে এলে আপনার ভ্রমণ হবে আরও রঙিন ও স্মরণীয়।

Share This
Categories
প্রবন্ধ বিবিধ

গোয়ার বন্ডলা ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারি – প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক শান্ত আশ্রয়।।

গোয়া মানেই অনেকের মনে প্রথমে ভেসে ওঠে সমুদ্রসৈকত, ক্যাসিনো আর পার্টির রঙিন ছবি। কিন্তু যারা প্রকৃতির সান্নিধ্যে সময় কাটাতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য গোয়ার পাহাড়ি অরণ্যের কোলে রয়েছে এক শান্ত, সবুজ অভয়ারণ্য – বন্ডলা ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারি (Bondla Wildlife Sanctuary)। এটি ছোট হলেও প্রকৃতিপ্রেমী, বন্যপ্রাণীপ্রেমী ও পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছে সমান জনপ্রিয়।


📍 অবস্থান ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য

বন্ডলা স্যাংচুয়ারি গোয়ার উত্তর-পূর্ব অংশে, পন্ডা (Ponda) শহরের কাছে অবস্থিত। প্রায় ৮ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে এই সংরক্ষিত বনভূমি এক সবুজ গালিচার মতো। ঘন স্যাল, টিক ও অন্যান্য গাছপালার ছায়ায় ঢাকা এই বন যেন শহরের কোলাহল থেকে পালিয়ে আসা মানুষের জন্য প্রকৃতির কোলে বিশ্রামের স্থান।


🐒 বন্যপ্রাণীর ভাণ্ডার

এখানকার প্রধান আকর্ষণ হলো এর মিনি-জু এবং ডিয়ার সাফারি পার্ক। এখানে আপনি খুব কাছ থেকে দেখতে পারবেন –

  • স্তন্যপায়ী প্রাণী: চিতল হরিণ, সাম্বার হরিণ, ভারতীয় বাইসন (গৌর), স্লথ বিয়ার
  • প্রাণবন্ত পাখি: ময়ূর, মালাবার ট্রোগন, প্যারাকিট, ড্রোঙ্গো, উডপেকার
  • সরীসৃপ: পাইথন, মনিটর লিজার্ড, কচ্ছপ
  • প্রজাপতি: রঙিন নানা প্রজাতির প্রজাপতি যা বসন্তের সময় পুরো বনকে রঙিন করে তোলে।

এখানে একটি ছোট্ট রেসকিউ সেন্টার রয়েছে যেখানে আহত বা অসুস্থ প্রাণীদের সেবা ও চিকিৎসা করা হয়।


🌳 বিশেষ আকর্ষণ

  • ডিয়ার সাফারি: খোলা জায়গায় হরিণদের মুক্তভাবে ঘুরে বেড়াতে দেখা এক অনন্য অভিজ্ঞতা।
  • ন্যাচার ট্রেইল ও গাইডেড ট্যুর: জঙ্গলের ভেতর ছোট ছোট হাঁটার পথ রয়েছে, যা প্রকৃতিপ্রেমীদের খুব পছন্দ।
  • শিক্ষামূলক কেন্দ্র: স্কুলের বাচ্চাদের জন্য এখানে বন্যপ্রাণী সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা আছে।

🚙 ভ্রমণের অভিজ্ঞতা

বন্ডলা স্যাংচুয়ারি খুব বড় নয়, তাই একদিনেই এটি ঘুরে দেখা সম্ভব। পরিবারের ছোট সদস্যদের জন্যও এটি নিরাপদ এবং আনন্দদায়ক। এখানে পিকনিক স্পট, গার্ডেন এবং ভিউপয়েন্ট রয়েছে, যেখানে বসে আপনি প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন।


🏖️ সেরা সময় ও ভ্রমণ টিপস

  • সেরা সময়: নভেম্বর থেকে মার্চ – আবহাওয়া মনোরম থাকে।
  • প্রবেশ সময়: সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা (সোমবার বন্ধ থাকে)।
  • টিপস: আরামদায়ক জুতো পরুন, পানি ও ক্যামেরা সঙ্গে নিন, বাচ্চাদের নিয়ে গেলে খাবারের ব্যবস্থা করে যান।

🏁 উপসংহার

বন্ডলা ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারি ছোট হলেও এটি গোয়ার এক অমূল্য রত্ন। যারা শান্ত, পরিচ্ছন্ন, পরিবার-বান্ধব প্রকৃতির কোলে কিছু সময় কাটাতে চান, তাদের জন্য এই জায়গাটি একেবারে উপযুক্ত। এখানে এসে বুঝতে পারবেন যে গোয়া শুধু সমুদ্রসৈকতের রাজ্য নয়, এটি প্রকৃতির এক চিরসবুজ ভান্ডার।

Share This
Categories
প্রবন্ধ বিবিধ রিভিউ

🌿 গোয়ার কোটিগাও ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারি – প্রকৃতির এক অমূল্য রত্ন।।

গোয়া শুধুই সমুদ্রসৈকত, পার্টি এবং ইতিহাসের জন্য বিখ্যাত নয়; প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য গোয়ার অরণ্য এবং বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্যও এক অপূর্ব আকর্ষণ। এর মধ্যে অন্যতম হলো কোটিগাও ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারি (Cotigao Wildlife Sanctuary)। এটি গোয়ার দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত এবং প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণীর সঙ্গে এক অনন্য সংযোগ তৈরি করে।


📍 অবস্থান ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য

কোটিগাও ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারি সাওসিমে এবং কর্নারিমের কাছে অবস্থিত। এটি প্রায় ২৯০ হেক্টর বিস্তৃত এবং ঘন সবুজ বনভূমি, পাহাড়ি পথ ও ছোট নদীর ছায়া মিলিয়ে এক শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করে। বনাঞ্চলের মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির টিক, সাল, হরিতকি এবং অন্যান্য অরণ্য গাছ দেখা যায়।

জঙ্গলপথে হাঁটার সময় চারপাশে পাখির কিচিরমিচির, ঝর্ণার কলকল শব্দ এবং গাছের ছায়া প্রকৃতিপ্রেমীদের মনকে ভরে দেয়।


🐾 বন্যপ্রাণীর বৈচিত্র্য

কোটিগাও স্যাংচুয়ারি মূলত বনাঞ্চল ও পাহাড়ি অঞ্চলের জন্য পরিচিত। এখানে রয়েছে –

  • স্তন্যপায়ী প্রাণী: চিতা, হরিণ, বুনো শূকর, বুনো মোষ, লাংউর বানর
  • পাখি: মালাবার হর্নবিল, কিংফিশার, প্যারাকিট, পাখির বিভিন্ন প্রজাতি
  • সরীসৃপ ও প্রজাপতি: পাইথন, মনিটর লিজার্ড এবং রঙিন প্রজাপতি

এছাড়া এখানে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর বনজ সম্পদএথনিক সংস্কৃতি পর্যটকদের জন্য একটি বিশেষ আকর্ষণ।


🚶‍♂️ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা

কোটিগাও স্যাংচুয়ারি পুরোপুরি অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য।

  • ট্রেকিং ট্রেইল: বনাঞ্চলের ভেতরে বিভিন্ন হাঁটার পথ রয়েছে যা ভ্রমণকে স্মরণীয় করে তোলে।
  • নেচার ওয়াক: গাইডের সঙ্গে হাঁটতে গেলে বনভূমির জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়।
  • ফটোগ্রাফি: বন্যপ্রাণী ও জঙ্গলের ছবির জন্য এটি স্বর্গরাজ্য।

এখানে গেলে পর্যটকরা শহরের কোলাহল থেকে দূরে এসে প্রকৃতির মাঝে এক শান্তিপূর্ণ সময় উপভোগ করতে পারেন।


🌿 বিশেষ আকর্ষণ

  • প্রকৃতির সৌন্দর্য: পাহাড়ি বন, ছোট নদী ও ঝর্ণার সংমিশ্রণে এক অপূর্ব পরিবেশ তৈরি হয়।
  • বন্যপ্রাণী দেখা: কিছু পর্যটক ভাগ্যবান হলে চিতা, লাংউর বা পাখি খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ পান।
  • শান্তি ও প্রশান্তি: এটি একটি কম ভিড়ের স্থান, তাই প্রকৃতিপ্রেমীরা এখানে শান্তি ও নিরিবিলি উপভোগ করতে পারেন।

🏖️ ভ্রমণ টিপস

  • সেরা সময়: নভেম্বর থেকে মার্চ – আবহাওয়া শীতল ও মনোরম থাকে।
  • প্রবেশ সময়: সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা
  • টিপস: আরামদায়ক পোশাক, জুতো, ক্যামেরা এবং পর্যাপ্ত জল সঙ্গে রাখুন।

🏁 উপসংহার

কোটিগাও ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারি গোয়ার একটি নীরব, সবুজ অভয়ারণ্য। যারা প্রকৃতির মাঝে সময় কাটাতে, বন্যপ্রাণী দেখার এবং শহরের কোলাহল থেকে পালাতে চান, তাদের জন্য এটি এক অমূল্য স্থান। এখানে এসে ভ্রমণকারীরা প্রকৃতির সঙ্গে এক গভীর সংযোগ অনুভব করেন এবং মনভরে শান্তি ও আনন্দ পান।

Share This
Categories
প্রবন্ধ

গোয়ার ভাগাটর বিচ – সমুদ্র, সূর্যাস্ত ও উৎসবের মিলনক্ষেত্র।।

গোয়া মানেই যেন এক অন্য জগৎ—নীল সমুদ্র, সোনালি বালি, সঙ্গীত, আনন্দ আর অফুরন্ত উদ্দীপনা। উত্তর গোয়ার অন্যতম আকর্ষণীয় সমুদ্রসৈকত হলো ভাগাটর বিচ (Vagator Beach)। যারা একদিকে সমুদ্রের শান্ত সৌন্দর্য আর অন্যদিকে উৎসবের রঙিন আবেশ খুঁজে বেড়ান, তাদের জন্য ভাগাটর একেবারে আদর্শ গন্তব্য।


📍 অবস্থান ও পরিবেশ

ভাগাটর বিচ গোয়ার উত্তরাংশে, আঞ্জুনা বিচের কাছেই অবস্থিত। এটি মূলত দুটি ভাগে বিভক্ত –

  • বিগ ভাগাটর – তুলনামূলক নিরিবিলি ও প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য আদর্শ।
  • লিটল ভাগাটর (ওজরান বিচ) – প্রাণবন্ত, রঙিন এবং বিদেশি পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়।

সোনালি বালির উপর ঢেউয়ের ছন্দ, খাড়া কালো পাথরের প্রাকৃতিক গঠন আর বিশাল নীল আকাশ মিলে এখানে এক অপূর্ব পরিবেশ তৈরি করে।


🌅 সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য

ভাগাটর বিচের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো অপূর্ব সূর্যাস্ত। সন্ধ্যায় সূর্যের লালচে আলো ধীরে ধীরে আরব সাগরের ঢেউয়ের মধ্যে মিলিয়ে যায়। বালির উপর বসে সেই দৃশ্য উপভোগ করা ভ্রমণকারীর মনে আজীবনের মতো অমলিন হয়ে থাকে।


🎶 উৎসব ও পার্টির আবেশ

ভাগাটর শুধু সমুদ্রসৈকত নয়, এটি গোয়ার রাতজাগা জীবন এবং সঙ্গীত উৎসবের কেন্দ্র হিসেবেও পরিচিত।

  • এখানে প্রতি বছর বিশ্বখ্যাত Sunburn Festival অনুষ্ঠিত হয়, যা গোয়ার অন্যতম বড় মিউজিক ফেস্টিভ্যাল।
  • বিচের ধারে বিভিন্ন শ্যাক, ক্যাফে ও নাইটক্লাব পর্যটকদের পার্টি-উদ্দীপনায় ভরিয়ে তোলে।
  • রাতের বেলায় সমুদ্রতটে বসে সঙ্গীত, আলো আর ঢেউয়ের মেলবন্ধন উপভোগ করা এক অন্য অভিজ্ঞতা।

🚤 করণীয় কার্যকলাপ

ভাগাটর বিচ ভ্রমণ শুধু আরাম নয়, সঙ্গে রয়েছে নানা রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা –

  • ওয়াটার স্পোর্টস: জেট স্কি, প্যারাসেলিং, বোট রাইড
  • ট্রেকিং: কাছাকাছি চাপোরা ফোর্টে ওঠার সুযোগ, সেখান থেকে সমুদ্রের অসাধারণ দৃশ্য দেখা যায়।
  • শপিং: বিচের আশেপাশে ছোট ছোট বাজারে হস্তশিল্প, গয়না ও গোয়ান পোশাক পাওয়া যায়।
  • ফটোগ্রাফি: পাথুরে ক্লিফ আর সমুদ্রের মিলনভূমি ফটোগ্রাফারদের জন্য আদর্শ স্পট।

🍴 খাবার ও রসনা

ভাগাটর বিচের আশেপাশে নানা রেস্তোরাঁ ও বিচ শ্যাকে পাওয়া যায় –

  • তাজা সী-ফুড, গোয়ান কারি ও ককটেল
  • আন্তর্জাতিক খাবারের বৈচিত্র্য, বিশেষ করে ইতালিয়ান, কন্টিনেন্টাল ও থাই
  • সাগরের ধারে বসে স্থানীয় ফেনি বা ঠান্ডা ড্রিঙ্কস হাতে খাবার খাওয়ার আনন্দই আলাদা।

🏖️ ভ্রমণ টিপস

  • সেরা সময়: নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি – আবহাওয়া আরামদায়ক এবং উৎসবের মৌসুম।
  • থাকার ব্যবস্থা: আশেপাশে রিসোর্ট, হোটেল ও হোমস্টে সহজলভ্য।
  • টিপস: রাতে বিচ ঘুরে দেখার সময় সতর্ক থাকুন, আর ভিড়ের মধ্যে নিজের জিনিসপত্র নিরাপদে রাখুন।

🏁 উপসংহার

গোয়ার ভাগাটর বিচ হলো এমন এক সমুদ্রতট যেখানে প্রকৃতির সৌন্দর্য আর উৎসবের আনন্দ একসঙ্গে ধরা দেয়। সূর্যাস্তের স্নিগ্ধতা, রাতের সঙ্গীতময় পরিবেশ, রোমাঞ্চকর অ্যাডভেঞ্চার এবং রঙিন সংস্কৃতির মেলবন্ধন ভাগাটরকে গোয়ার অন্যতম সেরা ভ্রমণ গন্তব্যে পরিণত করেছে।

Share This
Categories
কবিতা

গোয়ার মরজিম বিচ – প্রকৃতি, পাখি ও সমুদ্রের শান্তির রাজ্য।।

গোয়া মানেই সাধারণত পার্টি, সঙ্গীত আর ভিড়ভাট্টার সমুদ্রসৈকত। কিন্তু যারা ভিড়ের কোলাহল থেকে দূরে গিয়ে প্রকৃতির শান্ত সান্নিধ্যে কিছুটা সময় কাটাতে চান, তাদের জন্য মরজিম বিচ এক স্বর্গীয় স্থান। উত্তর গোয়ার এই সমুদ্রতট পরিচিত তার শান্ত পরিবেশ, সাদা বালি, নারকেলগাছের সারি এবং অনন্য জীববৈচিত্র্যের জন্য।


📍 অবস্থান ও পরিচিতি

মরজিম বিচ গোয়ার আশেপাশের আরামবোল ও আশভেম বিচের কাছাকাছি, উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত। এটি বিদেশি পর্যটকদের কাছে বিশেষভাবে জনপ্রিয়, বিশেষত রাশিয়ান পর্যটকদের জন্য এটি “লিটল রাশিয়া” নামে খ্যাত।


🐢 অলিভ রিডলি কচ্ছপের আবাসস্থল

মরজিম বিচের অন্যতম আকর্ষণ হলো অলিভ রিডলি কচ্ছপ (Olive Ridley Turtles)। প্রতি বছর শীতকালে এই সমুদ্রসৈকতে কচ্ছপেরা এসে ডিম পাড়ে। স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ সংরক্ষণ সংগঠনগুলির প্রচেষ্টায় এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ সুরক্ষিত রাখা হয়।
পর্যটকরা সুযোগ পেলে এই বিস্ময়কর দৃশ্য প্রত্যক্ষ করতে পারেন, তবে কচ্ছপের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য নিয়ম মানা অত্যন্ত জরুরি।


🦜 পাখিদের স্বর্গ

মরজিম শুধু কচ্ছপ নয়, এটি বিরল প্রজাতির পাখিদেরও আবাসস্থল। বিশেষত শীতকালে এখানে বিভিন্ন অভিবাসী পাখি যেমন – কিংফিশার, প্লোভার, স্যান্ডপাইপার প্রভৃতি দেখা যায়। তাই প্রকৃতিপ্রেমী ও পাখি পর্যবেক্ষকদের জন্য মরজিম এক অনন্য গন্তব্য।


🌅 সমুদ্রসৈকতের সৌন্দর্য

  • সাদা বালির বিস্তীর্ণ তটরেখা – হাঁটার জন্য আদর্শ।
  • নারকেল ও পাম গাছের সারি – প্রাকৃতিক ছায়ার পরশ দেয়।
  • শান্ত ঢেউ – অন্য বিচের তুলনায় এখানে ঢেউ তুলনামূলকভাবে শান্ত, ফলে স্নান বা হাঁটার জন্য নিরাপদ।
  • অপূর্ব সূর্যাস্ত – সন্ধ্যাবেলায় সোনালি আভায় ভরে ওঠে পুরো সৈকত।

🚤 করণীয় কার্যকলাপ

মরজিম বিচে পর্যটকরা নানা ধরনের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন –

  • বিচে যোগ ও মেডিটেশন – শান্ত পরিবেশ মানসিক প্রশান্তির জন্য উপযুক্ত।
  • ওয়াটার স্পোর্টস – যদিও খুব বেশি ভিড় নেই, তবুও জেট স্কি, বোট রাইড ইত্যাদি কিছু ব্যবস্থা আছে।
  • বিচ ওয়াক – সমুদ্রের ধারে দীর্ঘ হাঁটা, বিশেষত সূর্যাস্তের সময় অনবদ্য।
  • স্থানীয় বাজার – আশেপাশে ছোট বাজারে হস্তশিল্প ও রাশিয়ান প্রভাবিত সামগ্রী পাওয়া যায়।

🍴 খাবার ও রেস্তোরাঁ

মরজিম বিচে প্রচুর বিচ শ্যাক ও ক্যাফে রয়েছে। এখানে –

  • তাজা সী-ফুড (চিংড়ি, কাঁকড়া, মাছ)
  • গোয়ান খাবার যেমন ফিশ কারি রাইস
  • আন্তর্জাতিক রন্ধনপ্রণালী, বিশেষ করে রাশিয়ান খাবার সহজলভ্য।

সৈকতের ধারে বসে সাগরের ঢেউয়ের শব্দ শুনতে শুনতে খাবার খাওয়ার অভিজ্ঞতা একেবারে অন্যরকম।


🏖️ ভ্রমণ টিপস

  • সেরা সময়: নভেম্বর থেকে মার্চ, যখন আবহাওয়া শীতল ও আরামদায়ক।
  • থাকার ব্যবস্থা: বিচের ধারে রিসোর্ট, হোটেল ও কটেজ পাওয়া যায়।
  • বিশেষ সতর্কতা: কচ্ছপের ডিম ফোটার সময় সৈকতে নির্দিষ্ট এলাকায় প্রবেশ নিষিদ্ধ, তাই নিয়ম মানা জরুরি।

🏁 উপসংহার

গোয়ার মরজিম বিচ হলো শান্তিপ্রেমী ভ্রমণকারীদের জন্য এক স্বর্গ। এখানে নেই অযথা কোলাহল, নেই অতিরিক্ত ভিড়—আছে শুধু প্রকৃতি, সমুদ্র, পাখি আর কচ্ছপের আবাস। যারা কিছুটা নিভৃত, প্রকৃতিনির্ভর ভ্রমণের খোঁজ করছেন, তাদের জন্য মরজিম বিচ এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা হয়ে উঠবে।

Share This
Categories
প্রবন্ধ বিবিধ রিভিউ

গোয়া’র আরামবোল বিচ – শান্তি, সুর আর সমুদ্রের জাদু।।

গোয়ার সমুদ্রতটের ভিড়ে এক বিশেষ নাম আরামবোল বিচ। যাকে অনেক ভ্রমণপিপাসু “গোয়ার লুকানো স্বর্গ” বলে থাকেন। উত্তর গোয়ার অশ্বেম ও কেরিম বিচের মাঝখানে অবস্থিত এই সমুদ্রতট, যেখানে সমুদ্র, পাহাড়, বালি আর প্রকৃতির অপূর্ব মেলবন্ধন তৈরি করে এক অন্যরকম আবহ।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টান

আরামবোল বিচ মূলত শান্তিপ্রেমী ও প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য আদর্শ স্থান। এখানে ভিড় কম, ফলে সমুদ্রের নির্জন সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় নিরবচ্ছিন্নভাবে। বিস্তীর্ণ বালুকাবেলা, নীলাভ সাগরের জল আর পেছনের সবুজ পাহাড় যেন ছবির মতো এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ তৈরি করে। সূর্যাস্তের সময় সমুদ্রতটের রূপ আরও অপূর্ব হয়ে ওঠে, যেন আকাশ আর জল মিলে একাকার হয়ে যায়।

বিশেষ আকর্ষণ

আরামবোল বিচের আশেপাশে একটি প্রাকৃতিক ফ্রেশওয়াটার লেক রয়েছে, যেটি “আরামবোল সুইট ওয়াটার লেক” নামে পরিচিত। সমুদ্রের এত কাছে মিষ্টি জলের লেক সত্যিই বিস্ময়কর। এছাড়াও কাছেই রয়েছে একটি সালফার স্প্রিং, যার জলে স্বাস্থ্যকর গুণাগুণ আছে বলে স্থানীয়রা বিশ্বাস করেন।

আরেকটি আকর্ষণ হলো এখানকার ছোট ছোট গুহা এবং প্রাকৃতিক হাঁটার পথ। ভ্রমণকারীরা প্রায়ই পাহাড়ি পথে ট্রেক করে সমুদ্র ও লেকের সৌন্দর্য উপভোগ করেন।

সংস্কৃতি ও আবহ

আরামবোল বিচ শুধু প্রকৃতির নয়, সংস্কৃতিরও মিলনস্থল। এখানে প্রায়ই ছোটখাটো লাইভ মিউজিক পারফরম্যান্স, ড্রাম সার্কেল, যোগা ও মেডিটেশন সেশন হয়। বিদেশি পর্যটকেরা এখানে এসে দীর্ঘদিন থাকেন শান্ত পরিবেশে আত্ম-অন্বেষণের খোঁজে। প্রতি সন্ধ্যায় সমুদ্রতটে ড্রাম বাজিয়ে গান, নাচ আর হাসিখুশির পরিবেশ তৈরি হয়, যা একেবারেই ভোলার নয়।

করণীয় কাজ

  • সাগরের ধারে সূর্যস্নান ও সাঁতার কাটা।
  • প্রাকৃতিক লেকে গিয়ে স্নান করা।
  • ড্রাম সার্কেলে যোগ দিয়ে সঙ্গীতের মুগ্ধতায় ভেসে যাওয়া।
  • স্থানীয় দোকান থেকে হ্যান্ডমেড গয়না, বাদ্যযন্ত্র বা পোশাক কেনা।
  • যোগা, মেডিটেশন ও প্যারাগ্লাইডিং-এর মতো অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসে অংশ নেওয়া।

উপসংহার

যদি ভিড়ভাট্টার বাইরে গিয়ে শান্ত, নির্জন অথচ প্রাণবন্ত কোনো জায়গায় সময় কাটাতে চান, তাহলে গোয়ার আরামবোল বিচ আপনার জন্য আদর্শ গন্তব্য। প্রকৃতির কোলে বসে সূর্যাস্ত দেখা, স্থানীয় সংস্কৃতির সাথে মিশে যাওয়া আর সাগরের ঢেউয়ের সুরে হারিয়ে যাওয়া—আরামবোল বিচ সেই অভিজ্ঞতা দেয় যা সারাজীবন মনে গেঁথে থাকে।

Share This
Categories
বিবিধ

আনন্দ-বিষাদের মিশেলে মালদায় বিজয়া দশমীর বিদায় অনুষ্ঠান।

নিজস্ব সংবাদদাতা, মালদাঃ—আজ বিজয়া দশমী।
সিঁদুর রাঙিয়ে উমাকে বিদায় জানানোর পালা।আনন্দের মাঝেও বিষাদের সুর। এই মুহূর্তে চলছে দশমীর শেষ লগ্নের পুজো। সাথে সিঁদুর খেলা ও ঢাকের তালে নাচ। আজ উমা বাবার বাড়ি ছেড়ে কৈলাসে ফিরবেন। সকলের মন ভারাক্রান্ত। পুরাতন মালদহের কালুয়াদীঘি পল্লীশ্রী পুজো মন্ডপে চলছে এই মুহূর্তে মাকে বিদায় জানানোর পালা।প্রকৃতিও সেজে উঠেছিল শরৎরানীর রূপে।
ছেলেপুলে নিয়ে কটাদিনের জন্য বাপের বাড়ি আসা।
অবশেষে কটাদিনের মায়া কাটিয়ে কৈলাসে ফিরে যাওয়ার পালা। বিজয়ার পুজো সমাপন হলে মহিলারা একে অপরকে সিঁদুরে রাঙিয়ে বিদায়ের বিষাদ ভুলে ঘরের মেয়ে উমাকে ভালোবাসা জানান।

Share This
Categories
বিবিধ

মহিলা পরিচালিত নেতাজিনগরের দুর্গোৎসব, বুনিয়াদপুরে সাংস্কৃতিক সূচনা।।

দক্ষিণ দিনাজপুর, নিজস্ব সংবাদদাতাঃ- দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বুনিয়াদপুর শররে মহিলা পরিচালিত নেতাজি নগর সার্বজনীন দুর্গোৎসব এই বছর নবম বর্ষে পদার্পণ করল। মহা সপ্তমীর সন্ধ্যায় প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার শুভ সূচনা করেন বুনিয়াদপুর পৌরসভার পৌর প্রশাসক কমল সরকার সহ বিশিষ্ট গুণীজনেরা।

শুরুটা হয়েছিল ২০১৭ সালে, বুনিয়াদপুর পৌর শহরের বুকে নবনির্মিত একটি পাড়ার বাসিন্দারা একত্রিত হয়ে শুরু করেছিল এই মাতৃ আরাধনা। ধীরে ধীরে এই পাড়ার শ্রী বৃদ্ধি হয়েছে, ছোট্ট নেতাজিনগর এখন এক সু বিশাল পরিবার। বুনিয়াদপুর পৌর শহরের বুকে পাড়ার পুজো গুলোর মধ্যে অন্যতম এই পুজা।

এদিন সন্ধ্যায় এই পুজো মন্ডপে উপস্থিত হয়েছিলেন বুনিয়াদপুর পৌরসভার পৌর প্রশাসক আমল সরকার, উপ পৌর প্রশাসক জয়ন্ত কুন্ডু সহ বিশিষ্ট গুণীজনেরা।

Share This