যেকোনো ভ্রান্ত মতবাদকে তথা দোষযুক্ত মতবাদকে খণ্ডন করতে অদ্বৈতবাদ বিশেষ ভূমিকা পালন করে। আদি শঙ্করাচার্য হলেন সেই অদ্বৈতবাদের প্রতিষ্ঠাতা, কিন্তু তিনি যে শুধুমাত্র অদ্বৈতবাদী তেমনটাও না, বরং তিনি অদ্বৈতবাদ, বিশিষ্টাদ্বৈতবাদ এবং দ্বৈতবাদের মিলন। ভারতে বৌদ্ধদর্শনের শূন্যবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠায় সনাতন সংস্কৃতি যখন লোপ পেতে থাকল, তখন তাঁর আবির্ভাবে এবং তাঁর কঠোর পরিশ্রমে পুনরায় দৃঢ়মূলে সনাতন সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা পেল। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্রের বেদান্তের সর্বোচ্চ তত্ত্ব অদ্বৈতবাদ প্রচারের জন্য তিনি ভারতের সমস্ত সনাতনী সম্প্রদায়ের মধ্যে থেকে দশনামধারী দশটি সন্ন্যাসী সম্প্রদায়কে যথা : তীর্থ, আশ্রম, বন, অরণ্য, গিরি, পর্বত, সাগর, সরস্বতী, ভারতী এবং পুরীকে বাছাই করে তারপর ভারতের চারপ্রান্তে চারটি মঠ যথা : পূর্বে ওড়িশার পুরীতে গোবর্ধনমঠ, পশ্চিমে গুজরাটের দ্বারকায় সারদামঠ, উত্তরে উত্তরখন্ডের বদ্রিকাশ্রমে জ্যোতির্মঠ এবং দক্ষিণে কর্ণাটকের শৃঙ্গেরীতে শৃঙ্গেরীমঠ স্থাপন করে উক্ত দশনামধারী সম্প্রদায়কে একত্রিত করে কার্যভার প্রদান করেন এবং উক্ত মঠে মহন্তরূপে চারজন শঙ্করাচার্যের পরম্পরা শুরু করেন। ভারতের ৪২ সাধকদের মধ্যে অন্যতম হলেন আদি শঙ্করাচার্য, তিনি জাগ্রত চৈতন্য। হিন্দু সম্প্রদায় এবং সনাতন ধর্ম অর্থাৎ আত্মধর্ম অর্থাৎ স্বধর্ম এখনও পর্যন্ত ভারতে বিশেষভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকার নেপথ্যে আদি শঙ্করাচার্যের যে বহু অবদান আছে তা অনস্বীকার্য। অদ্বৈত উপলব্ধি সাধনার সর্বোচ্চ উপলব্ধি, কিন্তু তা উপলব্ধি করতে বহু প্রক্রিয়া অতিক্রম করতে হয়, আদি শঙ্করাচার্যও তা অতিক্রম করেন। তাঁর শুদ্ধ ভক্তি ও সাধনা সমস্ত সনাতনীদের জন্য প্রবল উৎসাহ বহন করে। আদি শঙ্করাচার্য হলেন ব্রহ্মবিদ্বরিষ্ঠ, তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী ব্রহ্ম সত্য, জগত মিথ্যা (ভ্রম), জগত-ব্রহ্ম এক। তাঁর মতবাদ গুরুসহায়ে শুদ্ধচিত্তে মনন করলে ব্রহ্ম উপলব্ধির পথ অর্থাৎ পরম সত্য উপলব্ধির পথ অর্থাৎ জীবদ্দশায় জীবন্মুক্তির পথ সরল হয়।
Category: অনুগল্প
ভারতের ৪২ সাধক এবং কিছু সাধিকা জীবদ্দশায় জীবন্মুক্ত। ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণদেব এবং তাঁর স্ত্রী অর্থাৎ মা সারদাদেবী উক্ত জীবন্মুক্ত মানুষদের মধ্যে অন্যতম। তাঁরা দুজন যথাক্রমে ভগবান্ ও ভগবতী, কারণ পরিপূর্ণ ঐশ্বর্য, পরিপূর্ণ ধর্ম, পরিপূর্ণ যশঃ, পরিপূর্ণ শ্রী, পরিপূর্ণ বৈরাগ্য এবং পরিপূর্ণ জ্ঞান — এই ৬ টি ‘ভগ’ নামে কথিত হয়, আর এই ৬টি ‘ভগ’ পরিপূর্ণরূপে তাঁদের দুজনের মধ্যে বিদ্যমান। তাঁরা দুজন ভিন্ন ভিন্ন শরীরে দৃশ্যমান হলেও এক এবং অদ্বিতীয় ঈশ্বর বটে কারণ তাঁরা স্বরূপতঃ রজোগুণ ও তমোগুণ দ্বারা অনভিভূত বিশুদ্ধসত্ত্বগুণপ্রধান সমষ্টি অজ্ঞান উপহিত চৈতন্য, বিশুদ্ধসত্ত্বগুণসম্পন্ন মায়াতে পতিত চৈতন্যের প্রতিবিম্ব ; অব্যক্ত, অন্তর্যামী, জগৎকারণ, সর্বজ্ঞ। তাঁরা দুজন সদ্গুরু অর্থাৎ শ্রোত্রীয় এবং ব্রহ্মনিষ্ঠ কারণ অস্তি নাস্তি এবং এতদুভয়ের পারে যে ব্রহ্ম অবস্থিত, তাঁকে তাঁরা দুজন উত্তমরূপে জানেন। তাঁদের সকল অবস্থিতি অর্থাৎ স্থানই পরম পবিত্র। অষ্টসিদ্ধ ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণদেব হলেন ব্রহ্মবিদ্বরিষ্ঠ, তিনি প্রত্যগাত্ম-জ্ঞানসহায়ে তিনগুণের পরিণামরূপ ইহলৌকিক ও পারলৌকিক সর্ববিষয়ে তৃষ্ণারাহিত্যরূপ পরবৈরাগ্যবান্ পরমহংস সন্ন্যাসী। ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণদেব মহামায়ার সন্তান। মহামায়া, যিনি মহাপ্রণব ॐকারের কলাবিভাগ বা ষট্চক্রাদি ভূমিজয়ক্রমের ১১শ কলা অর্থাৎ যথাক্রমে ব্রহ্মমূখী ও সৃষ্টিমূখী অর্থাৎ যথাক্রমে বিন্দু ও বিসর্গ অর্থাৎ যথাক্রমে উন্মনা ও সমনা যিনি দক্ষিণেশ্বরের মা দক্ষিণাকালিরূপে এবং তাঁর স্ত্রী অর্থাৎ মা সারদাদেবীরূপে বিরাজমান। ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণদেবের ভাব হল মাতৃভাব, এই মাতৃভাব সাধনের শেষ কথা হল, “তুমি মা, আমি তোমার সন্তান।” ব্যবহারিক শব্দে আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বলা যায় যে ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণদেব হলেন ব্রহ্ম এবং তাঁর স্ত্রী অর্থাৎ মা সারদাদেবী হলেন শক্তি, আবার এমনও বলা যায় যে ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণদেব এবং তাঁর স্ত্রী অর্থাৎ মা সারদাদেবী দুজনই অনন্ত শক্তি যা অদ্বৈত অস্তিত্ব অর্থাৎ স্বরূপতঃ ব্রহ্ম। শাস্ত্র বলেন, “ব্রহ্ম ও শক্তি অভিন্ন।”_
এক শ্রাবণের কথা : রাণু সরকার।
শ্রাবণের আকাশে কালো মেঘের পুঁজিতরাশি,
এই বুঝি এলো বর্ষা রাণী, স্বামী-পুত্র গেছে মাঠে,
ধেয়ে এলো ঘনকাল ও মাগো মা নিমেষে হলো এক হাঁটু জল মাঠ ঘাট হলো এক বোঝা দায়।
হায়-রে শ্রাবণের ধারা দেখো দেখো ধানের মাথা গুলো করছে যেন বিনয়ী বাতাসের তাড়নায়।
গরু-ছাগলের পাল দিচ্ছে কি হাঁক ডাক,গোগৃহ তো জলে ডুবুডুবু গা যাচ্ছে ওদের ভিঁজে। এতোগুলো গাই বাছুরের পাল রাখি কোথায়, কে যানতো এভাবে শ্রাবণেরধারা বৈবে অবিরাম।
সূর্য এই বুঝি দিলো ডুব তবে যায় না দেখা মনে হয় একটু আছে বাকি,
বোঝার কি উপায় আছে আঁধার রেখেছে যে ঘিরে।
এখনো কি পারছে না বুঝতে তারা হুঁশ নেই কি একদম,একা কি করে দেই সব সামাল বৃদ্ধা শ্বাশুড়িটাও পরে আছে বিছানায়।
দুয়ারে এক হাঁটুজল দাঁড়িয়ে দেখছি-কারুর দেখা নেই,ঘনঘন বিদ্যুতের চমকানি,
একা গৃহে ভয়ে ভয়ে প্রাণ ওষ্ঠাগত,
তাকে বলেছিলাম-বেলা না গড়ায় বাব,ছেলে এসো ফিরে তাড়াতাড়ি ঘরে, কে কার কথা শোনে,
সকাল থেকেই ছিলো মেঘেদের মুখ ভার করছিলো তারা কানাকানি।
তখনি বুঝেছি আসবে ধেয়ে নেবে সব ভাসিয়ে ক’দিন আগেই বলেছিলাম গোয়াল ঘরের চালটাতে ঘর চাপাতে হবে কানে নেয় নি কথা।
হঠাৎই কানে এলো কে যেন ডাকছে,বউঠান বাব-বেটা ফিরেছে কি ঘরে?
আমি বলি না গো দাদাঠাকুর ফেরেনি এখনো তারা।
আচ্ছা দাঠাকুর এই বর্ষার কচুপাতা মাথায় দিয়ে বেরিয়েছেন কেনো? কেনো জানো না বউঠান? আমাদের কালো গাইটা গাভিন ভীষণ ডাকছে-ওর খাবার যে নাই – কিছু ঘাস যদি পাই, এই বর্ষায় সব গেছে ডুবে কোথায় ঘাস পাবেন? দেখি হাতড়িয়ে কিছু তো পাবো- আমার কথা ছাড়ো।
দেখ দেখি কি মুশকিলের কথা,তারা কি বোঝে
না দু’কূল গেছে ভেসে, ঘরে ফিরলে খবর দিও বউঠান।
বলেছিলেম তো তারে বেলা থাকতেই যেন আসে ফিরে ঘরে।
গৃহিণীর কথা বাসি হলে লাগে কাজে।
বাঘ : রাণু সরকার।
সুন্দরবন, এশিয়ার সবথেকে বড় নিরবিচ্ছিন্ন বাঘ-বন, আর পৃথিবীর একমাত্র বাদাবন যেখানে দেখা মেলে বাঘের।এখানে বাঘ আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।
সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণে সবথেকে বেশি প্রাণ হারায় মানুষ- এই জোয়ার ভাটার জঙ্গলে।
খাবারের অভাব হলে বনের পার্শ্ববর্তী মানুষের বসতিতে এসে আক্রমণ করে। সাধারণত এরা মানুষের চোখে পড়তে চায় না- তবে কিছু বাঘ আছে মানুষখেকো।
সুন্দরবন অভয়ারণ্যের মধ্য দিয়ে যে নদী গুলো বয়ে গেছে সেই নদী হলো বিদ্যাধরী,মাতলা,
মাথাভাঙা প্রভৃতি।
সুন্দরবনের ঐতিহ্য হলো বাঘ ও গাছগাছালি নৈসর্গিক দৃশ্যাবলি সুন্দরী, খলসি, গেওয়া, কেওড়া,গরান, হোগলা,
গোলপাতা প্রভৃতি।
মধু সংগ্রহ করতে ও মাছ ধরতে গিয়ে মানুষের প্রাণ হারাতে হয়।
বাঘের স্মৃতিশক্তি অন্যান্য প্রাণীর চেয়ে তুলনামূলক বেশি। দেহজুড়ে রঙের বাহারি নকশাখচিত ডোরাকাটা পেটের দিকে হালকা হলুদ পায়ের ভেতরের দিকে সাদা গায়ে কমলা রঙের লম্বালম্বি কালো ধূসর বা বাদামি ডোরাকাটা।
দুটো বাঘের ডোরাকাটা দাগ এক নয়। যাইহোক বাঘের বিবরণ যতটা পেরেছি লিখলাম।
একটি ঘটনা লিখলাম,
সুন্দরবনে মাছ ধরতে গিয়েছিল বাবা ছেলে ও কাকা তিনজন নৌকা নিয়ে সামনেই বাঘ ছিলো গাছের আড়ালে লুকিয়ে তারা কেউই দেখতে পায়নি পেছন থেকে আক্রমণ করলো বাবাকে। কাকা দেখতে পেয়ে ভয়ে দিশাহারা, কোথায় পালাবে ঠিক করতে পারছে না। অবশেষে এক জায়গাতে কোনক্রমে আশ্রয় নিলো ছেলের বয়স কম তাই ভয়কে সাথে নিয়েই চললো লড়াই। প্রথম বাপের ঘারে কামর দিয়ে কিছুক্ষণ বসে রইল আস্তে আস্তে মাথাটি মুখে পুরে দিলো। ছেলেটি দেখছে ভয়ে ভয়ে ভাবছে কিভাবে বাঘের হাত থেকে বাবাকে রক্ষা করা যায়।
বাঘটি এমন ভাবে বসে ছিলো ছেলেটি কিছুই করতে পারছিলো না পাশে নদী ও গাছগাছালি অবশেষে বৈঠা দিয়ে জলে বারি দিতে থাকে বাঘ একটু ভয় পেয়ে বাপকে মুখে করে জলে নেমে পরে জলের নিচে দিয়ে চলছে ওপারে যাবে ছেলের বৈঠাটি ভেঙে গেলো ভাবছে বাবা তো মারা গেছে বাঘের মুখেই বাবার দেহটি রক্ষা করতে হবে খেতে দেওয়া যাবেনা ছেলেটির যত শক্তি ছিলো সব শক্তি দিয়ে চিৎকার করলো বাঘের মত করে, বাঘ ভয়ে আবার পাড়ের দিকে উঠে এলো দেহটি কোনক্রমে মুখ থেকে ফেলে পাশে বসে আছে। এমন ভাবে বসেছে কিছুই করতে পারছে না ছেলে, বাঘ ভীষণ চালাক।
ভাঙা বৈঠা দিয়ে জলে বারি দিতে থাকে বাঘ ধীরে ধীরে একটু দূরে গাছের আড়ালে বসে আছে। বিশাল আকারের বাঘটি ছেলেটি কোনক্রমে বাপের দুহাত ধরে টানতে টানতে নৌকায় তুললো এবার কাকা কাকা বলে ডাক দিলো। কাকা ভয়ে জড়সড় হয়ে বলছে এখানে আমি ছেলে নৌকায় বাবার দেহটি ভয়ে ভয়ে রেখে কাকাকে নৌকায় তুলে তাড়াতাড়ি রওনা দিলো বাড়ির দিকে ভয় তো সাথেই আছে সবসময়ের জন্য। আবার যদি আসে হাত পা কাঁপছে, যেকোরেই হোক বাবার দেহটি বাড়ি নিয়ে যেতেই হবে। বাঘ কিন্তু ওদের পিছু ছাড়ছে না, এপাশ ওপাশ করতে থাকে মানুষটিকে পাবার জন্য,ওর মুখের আহারটি তো ওরা নিয়ে নিলো।
অবশেষে কোনক্রমে নৌকা মাঝ নদীতে নিয়ে একটু স্বস্তি পেলো, তারপর কষ্টকে সাথে নিয়ে বাড়ি ফিরে এলো বাবার মৃতদেহটি নিয়ে।
প্রথম পর্ব
আমার এক পিসি বনগাঁ থাকে একটু ভেতরের দিকে গ্রামে। আমি সেখানে বছরে দু’একবার যাই। ঘুমিয়ে ছিলাম খুব ভোরে হঠাৎ কানে এলো উলুর ধ্বনি,আমি মনে মনে ভাবলাম-
এইরে- এবার না জানি কোন মেয়ের সর্বনাশ হতে চলেছে। আমার মনে আসার অনেক কারণ আছে।
আমার দেখা এরকম অনেক ঘটনা এখানে ঘটেছে।
এখানে আমার এক বন্ধবী সেও কত কষ্টে আছে। আমার বাড়ি কলকাতা আশে পাশেও দেখছি তাই খারাপ ভাবনা মনে আসাটাই স্বাভাবিক।
কোনো মেয়ের বিয়ের কথা শুনলে কিম্বা দেখলে
আমার ভীষণ ভয় লাগে কষ্টের পাশে রাগও থাকে।
আমি চলে গেলাম মেয়েটির বাড়ি আমার পিসির বাড়ির থেকে দশ পা- মেটিকে জিজ্ঞাসা করলাম-
এই মেয়ে, তোর নামটা কি যেন ভুলে গেছি সেই ছোটবেলায় তোকে এই ইছামতি নদীতে স্নান করতে দেখতাম আমি এখানে আসলেই।
গালে হলুদ মাখানো আজ তোর বিয়ে বুঝি?
মেয়েটি উত্তর দিলো তুমি এসব দেখে বুঝতে পারছো না, এটাও কি দিতে হবে বলে?
রাগ করে কথা বলছিস যে-জোর করে দিচ্ছে নাকি বিয়ে?
একটু বড় হলে বাপের ঘরে থাকতে নেই- এটাও কি বুঝিয়ে দিতে হবে?
তোর বাপ মা তোকে ছেড়ে থাকতে পারবে? তুই তো তাদের একটিই মেয়ে।
বাপ-মা যদি মায়া কাটিয়ে থাকতে পারে-
আমারও পারতে হবে।
আমি বোঝালাম-
শোন মেয়ে, বাবের ঘর ছেড়ে শ্বশুর ঘরে যেতে হয় সব মেয়েদের পাগলামী করিস না মেয়েদের যদি বিয়ে না হতো তাহলে কি করে ফুল ফুটতো ও ফল পেতো?
কষ্টের হাসি হেসে সে বললো- মেয়েদের বেলায় নিয়ম-নিষেধ যত- তাই না, তুমি বলো?
ধুর পাগলি, কাঁদিস কেন-বাপের ঘরের মায়া ত্যাগ করতে কষ্ট হচ্ছে বুঝেছি?
ত্যাগ না করলে শ্বশুর ঘর চিনবি কি করে
সেই জন্য সব মেয়েকে যেতে হয় শ্বশুরবাড়িতে
মেয়েটির বিয়ে হয়ে গেলো।
____________________________
যেতে হবে পরের ঘরে
(দ্বিতীয় পর্ব)
কয়েক মাস পর আবার গিয়েছিলাম সেই পিসির বাড়ি,
গভীর রাতে কানে এলো চিৎকার ও কান্নার শব্দ।
মনে খুব কষ্ট হচ্ছিল-
কী জানি কার আবার কী হলো।
শুয়ে ভাবছি কখন ভোর হবে-
দেখতে যাবো কার কী হলো।
ভোর হতেই তাড়াতাড়ি উঠে
হাঁটা দিলাম সেই বাড়ির দিকে
গিয়ে দেখি, সেই বাড়ি সেই মেয়ে
ঘরে ঢুকে দেখি, মেয়েটি চুপ করে শুয়ে আছে।
আমি জিজ্ঞেস করলাম-
এই মেয়ে কী হলো রে তোর,
মরতে গেলি কেন?
কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো,
মরতে গিয়েছিলাম, পারলাম কই মরতে,
খেতে গিয়েছিলাম ইঁদুর মারা বিষ
যমের কাছেও আমি অরুচি।
তবে এসব নাটক করলি কেনো-
মরতে তো পারলিই না,
গ্রামের লোকের সুযোগ করেদিলি কানা-কানি, হাসা-হাসি করতে।
তোর মা-বাপের কি হুশ এলো?
তখনই বোঝা উচিত ছিলো যে- আমার কালো মেয়ে।
তখন বলেছিলি বিয়ে করবিনা-
জোর করে ঠেলে দিলো তাদের হাতে। পণ যা চেয়েছিলো ছেলের বাড়ি থেকে তা দিতে পারলো না তোর বাবা। কালো মেয়ের দিলো বিয়ে।
তখন তোর মানা শোনেনি।
কয়েক মাস আগে তোর বিয়ের দিন আমি এসেছিলাম। দেখ কি ভাগ্য আমার এবারো আমি এসেছি।
কিছু বলবো ভেবেছিলাম সেদিন পারিনি বলতে,
আমি জানতাম এরকম কিছু একটা ঘটবে-
ঠিক ঘটলো। যেহেতু তুই কালো আবার পণ দিলো কম।
তুই পালিয়ে গেলিনা কেনো?
কাজ করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারতিস,
বাপের ঘরে যখন এলি তখন মরতে গেলি কেনো?
তুই তো পড়াশুনা জানিস,রাগে তোকে অনেক কথা বলেছি রাগ করিস না। তোকে দেখে আমার রাগ ও কষ্ট হচ্ছে ।
জানিস মেয়ে,
এ পৃথিবীতে ভালবাসা দিয়ে যাবি আর ঝিয়ের মতো,
খাটবি, সংসারের মানুষের কাছে থেকে মন্দ কথা শুনবি তাও মুখ বুজে-
কিন্তু কোনো উত্তর করা যাবে না।
তাহলে তুই ভালো থাকলেও থাকতে পারিস।
কোনো নিশ্চয়তা নেই, এটাই নিয়ম-
এবার তুই ভেবে দেখ কী করবি, আমাকে জানাস।
আমি আসি রে মেয়ে,
এরকম আর করিস না,
বেঁচে থেকে লড়াই কর-
মরে জিতিয়ে দিস না ওদের।
সুন্দর এক নারীর কাহিনী : রাণু সরকার।
জীর্ণ বস্ত্র, শীর্ণ গাত্র, বেশভূষা মলিন, কোমরে কাপড় গোঁজা, হাতে একটা ছেঁড়াফাটা ব্যাগ, পায়ে দু’রঙের চটি দড়ি দিয়ে বাঁধা, ভালো করে চলতে পারছে না, কোমরে কাপড় গোঁজা, এলোমেলো চুলে বেঁধেছে খোঁপা ঝুলে আছে ঘাড়ের উপর।
ক্ষুধায় কন্ঠ ক্ষীণ, আদরের মানিক কোলে সেও ক্ষুধার জ্বালায় মা মা কোরে মায়ের চোখে মুখে হাত বুলায়, কখনো মায়ের গালে গাল ঠেকায়, তখন মায়ের দু’চোখের কোলে জলের ফোঁটা এই বুঝি গড়িয়ে পড়বে গালে।
আদরের মানিককে চুমু দেয় আর বলে- এই তো সোনা আমরা খাবো, একটু বাকি আছে আমাদের গন্তব্য আসতে।
কষ্ট হয় ভীষণ এই নারীদের দেখলে। তবুও চোখ ফেরাতে পারছি না তার রূপের সৌন্দর্য দেখে। সে দেখতে ভালো না অথচ তার রূপ যেন গা গড়িয়ে পড়ছে।
সুন্দর নারী নিয়ে লেখা হয় অনেক কাব্য কিন্তু এই নারীটির সৌন্দর্য কারোর হয়তো চোখে পড়েনা ধরা, বড্ড কঠিন তার সৌন্দর্যকে অনুভব করা।
কিন্তু সে ক্ষুধার জ্বালায় জর্জরিত ।
বেদনার সুর কাব্যে ঝঙ্কৃত। তারা যে পথচারী, দয়ার দান হলো অন্ন বস্ত্র।
আজও দেখি প্রত্যন্ত রাস্তায় প্লাস্টিকের ছাউনিতে থাকা মানুষ। নেই কোন আলোর ব্যবস্থা রাস্তার পোস্টের আলোতে করে বাস। ধুলো মাটিতে কত কুসুম ভূমিষ্ঠ হয় কি করুণ জীবন এদের।
কোন ভবিষ্যত্ নেই ওদের জন্য কিছু করতে যদি না পারি তবে ওদের সঙ্গে আমার চোখের দুফোটা জল তো ঢালতে পারি। দারিদ্র ওদের নিত্যসঙ্গী।
তবুও আদরের মানিক কোলের দৃশ্য আমায় কুঁড়ে কুঁড়ে খায় এতো সৌন্দর্য দারিদ্রতায় আমার চোখে ধরা পড়ে।
ছোট শিশুর কষ্ট : রাণু সরকার।
বাপটা আমার থেকেও নেই মনে করি মারা গেছেন, চোখ মেলে দেখিনা কখনো বাপের মুখটা কেমন, মায়ের আমার ভীষণ কষ্ট কোন- ভোরে মা চলে যায় বাবুর বাড়ির বাসন ধুতে
আমরা এখন তিনজন থাকি রেললাইনের ধারে।
আমার কাছে ভাইকে রেখে মা রোজ যায়- ভাইকে ফেলে কি করে যাই ইস্কুলে? খিদের জ্বালায় শুয়ে পড়ে ভাই যে আমার সারা হয় কেঁদেকেটে।
কাল রাতে আমার পেটে ব্যথা ছিলো ভাত
খাইনি, আমার ভাতটা রেখে ছিলো মা-ভোরে যখন ভাই কাঁদছিলো খিদের জ্বালায় তখন
পান্তা করে নুন দিয়ে ভাইকে দিলাম সবটা ভাত খাইয়ে কিছুক্ষণ বাদে কান্নাটাও থেমে গেলো।
দাড়িয়ে আছি ভাইকে কোলে নিয়ে মায়ের জন্য
এই বুঝি মা এলো ভাবছি।
ইস্কুলে যাবার সময় পার হয়ে যাচ্ছে, এই ঘন্টা বেজে থেমে গেলো মনে হয়-কি করে যে যাবো,মা এলো না এখনো।
হয়তো গিন্নীমা অনেক কাজ ধরিয়ে দিলো মাকে কাজের চাপে মার আসতে দেরি হচ্ছে।
এমন তো কখনো হয়নি,তবে আমারা গরিব বলেই এমন করলো,বাপটা যদি ভালো হতো তাহলে মায়ের কাজে যেতে হতোনা আর আমার ইস্কুল ও বন্ধ হতোনা।
বৃদ্ধার যখন ভরা যৌবন, তখন একজনকে ভালোবাসতো, ধীরে ধীরে প্রেম গভীর হলো, কিন্তু ক্রমান্বয়ে জানতে পারলো প্রেমিক শরাবখোর ও মাস্তান, কি আর করা যাবে ছেড়ে দিলে প্রেমিকের হাতে খুন অবধারিত মনের সাথে অনেক লড়াই করে অবশেষে বাধ্য হলো বিয়ের পিড়িতে বসতে।
ভালো মন্দ মিলেমিশে চললো, একদিন বুঝতে পারলো সে অন্তঃসত্ত্বা খুশি ছিলো
দুজনেই।
একদিন রাতে পুলিশ মেয়েটির স্বামীকে তুলে নিয়ে গেলো তখন ভীষণ কষ্টে মেয়েটি ভেঙে পড়েও উঠে দাঁড়াল গর্ভে তার সন্তান আছে ভেবে।
কয়েক মাস পর সন্তান ভূমিষ্ঠ হলো, খেয়ে না খেয়ে কোনরকম দিন চলে। এভাবেই তিন বছর কেটে গেলো বাচ্চাটিকে নিয়ে। স্বামী ছাড়া পেয়ে একদিন গভীর রাতে বাড়ি ফিরলো, চলছে তাদের রাগারাগি কিন্তু সহবাসের ছাড় নেই, আবার হলো গর্ভবতী, ভাগ্যের কি পরিহাস, গভীর রাতে হঠাৎ একদিন খুব চিৎকার চেঁচামেচি হচ্ছিলো রাস্তায়। শুনতে পেয়ে মেয়েটি দৌড়ে গেলো, গিয়ে দেখে গুলিবিদ্ধ রক্তাক্ত অবস্থায় স্বামী পরে আছে। দেখে মেয়েটি সেখানে লুটিয়ে পড়লো, যাইহোক
সবাই চোখে মুখে জল দিলো একটু সুস্থ বোধ করাতে মেয়েটিকে বাড়িতে পৌছে দিলো।
মেয়েটির স্বামীর বডি পুলিশ নিয়ে গেলো পোস্টমটেম জন্য। পোস্টমটেম হলো, দাহও হলো, শেষ কাজ কোনরকম করলো টাকা পয়সা তেমন কিছুই রাখেনি মদখোর মাস্তান স্বামী।
কিছুদিন পর একটি মেয়ে সন্তান ভূমিষ্ঠ হলো, সপ্তা খানেক ছিলো মেয়ে বাচ্চাটি তারও মৃত্যু হলো।
মেয়েটি ভেবে নিল ছেলেটি যেন ওর বাবার মতো না হয়- টাকার জন্য নানারকমের কাজ করে নিজে কম খেয়ে-
ছেলেকে উচ্চশিক্ষিত করলো। ছেলে একটি ভালো কাজ পেলো মাকে না বলে বিয়ে করে শ্বশুর বাড়িতে থাকতে শুরু করলো। শ্বশুড় বিশাল টাকার মালিক
ভালোই কাটে ছেলেটির। বয়স হচ্ছে মায়ের, ছেলে খোঁজ নেয় না মা কিভাবে কেমন আছে। কত কষ্ট বলুন তো মহিলার?
মহিলার অনেকটাই বয়স একরকম বুড়িই বলা চলে,
শখআল্লাদ বিসর্জন দিয়ে এই বয়সে কপালের কি দুর্গতি।
মেহিলাটির পাড়ায় এক দর্জির দোকান ছিলো সেখানে টুকিটাকি সেলাই করে যা টাকা পায় তাতে কোনরকম চলে। পাড়ার এক ভদ্রমহিলা তাকে খুব ভালোবাসতো একদিন তার কাছে এসে বললো দিদি অনেক তো হলো এবার তোমার কথা একটু ভাবো, সে বললো কি আর ভাববো বোন। দিদি, আমি একটি কথা বলছি, না করবে না বলো?
-কি কথা?
-আমাদের পাড়ায় ঐ যে মাষ্টার বাবুর বৌ মারা গেছেন তাকে তোমার সাথে বিয়ে দেবো।
-ছি ছি, মানুষ কি বলবে, আর আমার ছেলে! এতোদিন কিছু করিনি এখন এই বয়সে এসে বিয়ে! ছি ছি, না গো আমি পারবো না।
-ভেবে দেখো দিদি, ভদ্র লোকের ছেলে, মেয়ের বিয়ে হয়েছে, চাকুরীর জন্য বিদেশে থাকতে হয় তার সন্তানরাই বলেছে আমায়, আমি তোমার কথা ভেবেই তোমাকে
বললাম, তুমি না বলো না রাজি হয়ে যাও।
তোমার যেটা ভালো মনে হয় করো, ঠিকই বলেছো অনেক তো করলাম, কি পেলাম কষ্ট ছাড়া নিজেকে নিয়ে কখনো ভাবিতো,
আর এই বয়সে বিয়ে মানে দু’জন দু’জনকে সাহায্য করা, এই বয়সে কী আর যৌবন খেলা হয়, দু’জনেরই বাধ্যর্ক ডাক দিয়েছে।
অনেক বোঝানোর পর অবশেষে রাজি হলো বৃদ্ধা মহিলা,বসলো বিয়ের পিঁড়িতে বুড়ো ভদ্রলোকের ছেলে মেয়ে এসেছে
বললো মা তুমি কেঁদোনা আমরা আছি তোমার জন্য। তুমি আমার বাবাকে একটু ভালো বেসো ও যত্ন করো। এভাবেই শুরু হলো বুড়ো বুড়ির নতুন সংসার।
এক ঘটক তার মেয়েকে বিয়ে দেবে পাত্রের ভীষণ দরকার, তার একটি মেয়ে আছে দেখতে বিশেষ ভালো না বলে অভাব হচ্ছে পাত্রের। তার স্ত্রী বলে বলে কানের পোকা বেরকরে দিচ্ছে- বলছে স্বামী মেয়ের বিয়ের দিন পার হচ্ছে কবে বিয়ে দেবে?
মেয়ে তো শেয়ানা হয়েছে এর পরে বিয়ে দিতে কষ্ট হবে।
ছেলে একটা তো দেখে এলাম মাইনা একটু কম পায়,
ছেলেকে দেখে যখন বেরোলাম গিন্নী কি বলবো- পাশের বাড়ির একটি মেয়ে নাম তার টেপি সে এসে বললো হর দম নাকি নেশা করে কি করি বলতো গিন্নী।
আর মাস খানেক দেখবো ,তারপর যাকে পাবো তার সাথেই দেবো বিয়ে-
তুমি এতো চিৎকার করো গিন্নী তোমার ভয়ে ভয়ে মুখ বুঁজে থাকতে হয় আমার।
আর একটি দেখেছি ছেলে,মাইনা যদিও বা পায় একটু বেশি কিন্তু বংশটা একদমই ভালো না ভাবছি কি করা যায়।
শোন গিন্নী, বংশ মাইনা সব যদি ঠিকঠাক মিলে যায় তবেই দেবো বিয়ে।
আমাদের জমির কিছু অংশ দেবো বেঁচে কি বলো?
কেনো না ছেলে ভালো হলে পণ সোনা সবই চাইবে তাই না?
আর একটি ছেলে আছে,শুনেছি বংশটা ভালো ওর ভাগ্যে থাকলে রানী হয়ে থাকতে পারবে।
এখন ভালো সহজ সরল ছেলে কোথায় আছে বলো দেখি শুনি?
এখনের ছেলেরা-প্রেমের শিকারি মদ মাতাল আর কখনো খুন টুন ও করে শুনি।
জেনে শুনে দিতে পারি কিরবো বলো? মেয়ে আমাদের একটু কমজুড়ি দেখতেও ভালো না কি করে যে হলো এমন ভাবতেই পারিনা গিন্নী।
মেয়ে তো আমাদের একটু আবা প্রেমটেম ওসব কিছুই বুঝবে না তাই বলো স্বামী?
চালাক যদি হতো আজ অব্দি-একলা কি থাকতো বল গিন্নী? ঠিক একটা না একটা ছেলে পটিয়ে ফেলতো।
আমি আর গিন্নী মেয়ের পাত্রের আলোচনা করছিলাম
হঠাৎই দরজাতে টুট টুট শব্দ খুলে দেখি মেয়ের সাথে মাঝ বয়সি এক ছেলে,একদম হাঁদা,বোকা দাঁত কিছু আছে ওই ফোকলা দাঁতে হাসছে। দুজনার গায়ে
বিয়ের পোশাক কিজানি ওগো গিন্নী ভুল দেখছি নাতো।
মেয়ে বলছে এই তোমাদের জামাই মা- তোমরা মোটেও ভুল দেখনিকো।
দেখতে কত সুন্দর তাই না মা? মা একটু তাকি হু বললো, দেখেছো মা হাজার টাকা কামাই করে কিন্তু একটাও দাঁত নেই সবাই ছিছি বলে চলে গেলো।
হাজার টাকা মাইনে পায় শুনে-জ্ঞান হারালো গিন্নী স্বামী মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো।
এর মধ্যেই পাড়া পড়শির কানে গেলো-সবাই এসে হাজির, বললো সবাই হাঁদা বোকা মেয়ে তোমার যা করেছে ঠিক করেছে, ভোজের জন্য করো সবাইকে আহ্বান।
তাজা উপন্যাস : রাণু সরকার।
দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলো সেই কোন ছোট বেলায়,
পেটের দায়ে এই রাস্তা তৈরির কাজে লেগেছে মহিলাটি।
মাঝে মধ্যে চা খেত আর কাগজ পড়ত।
মহিলাটির কাগজ পড়া একদিন কন্ট্রাক্টটর বাবুর চোখে পড়ল-অন্যদের থেকে একটু আলাদা ধীর স্থির কাজ করে মন দিয়ে ফাঁকি নেই ওর কাজে।
কন্ট্রাক্টটর বাবু ডেকে বললো মনে হয় তুমি পড়াশোনা কিছু হলেও করেছো? মহিলা একটু হেঁসে মাথা নেড়ে বললো আর পড়াশোনা, পারলাম কই করতে সেও এক উপন্যাস।
তার সাথে কথা বলে জানতে পারলাম অনেক কবি সাহিত্যিকের কথা এবং অনেক জ্ঞানের কথাও, কন্ট্রাক্টর বাবু শুনে আশ্চর্য হলো।
যত কথা বলে তত চিনতে পারে আর মনে মনে ভাবেন এতো প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও এই কাজ করে গুণ আছে বলতে হবে। বাবু বললো
ওনাদের উপন্যাস এখন পড় না?
-আগে পড়তাম বাবু লাইব্রেরীতে গিয়ে, এখন খাবার আর সময় সবকিছুর সঙ্গে চলে লড়াই কি পড়বো বাবু।
একটু কষ্টের হাসি হেসে বললো, বাবু আমি নিচু ঘরের মানুষ পেটে ভাত নেই, ভাবছি পড়ে কি হবে- পেট তো ভরাবে না।
আমিই তো জলজ্যান্ত উপন্যাস-আর কি পড়বো, বরং আপনি আমায় নিয়ে কিছু লিখুন।
একবার যদি লিখতে শুরু করেন বাবু আমার উপন্যাস কোনদিন শেষ করতে পারবেন না।
লিখতে লিখতে অধৈর্য হয়ে পড়বেন কেনো না প্রতিদিনই আমার নতুন বাস্তব উপন্যাস জন্ম নিচ্ছে।
বাসি উপন্যাস পড়লে বাস্তবের তাজা উপন্যাসের কথা জানতে পারবেন না বাবু, বড্ড কঠিন আমার বাস্তব।
যদি পারেন আমার উপন্যাসের একটা বই ছাপা করুন লিখে,
একটু মৃদু হেসে চোখের কোলে জল মুছতে মুছতে রোজের মত কাজ সুরু করলো মহিলা।