Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

স্মরণে– ভারতের স্বাধীনতা সমগ্রামের বিপ্লবী ও প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর পত্নী কমলা নেহেরু।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের অব্যর্থ পরিশ্রম যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত রাজনৈতিক দিক থেকে মুক্তি পেয়েছে। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়, তার মূলে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে কমলা নেহেরু  প্রথমসারির একজন অন্যতম বিপ্লবী ছিলেন।ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুধু শহীদ ভগৎ সিং-এর মতই নয় বরং শক্তিশালী নারীদের দ্বারা প্রশস্ত হয়েছিল যারা তাদের মাটিতে দাঁড়িয়েছিল এবং দেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য ব্রিটিশদের সাথে লড়াই করেছিল। কমলা নেহেরু ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি দেশমতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ রূপে।

ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিকন্যা ছিলেন তিনি।
কমলা নেহেরু  একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন, যিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতা এবং ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর স্ত্রী। পরবর্তীতে তাঁদের কন‍্যা ইন্দিরা ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন।
1899 সালের 1 আগস্ট কমলা রাজপতি এবং জহর মাল অতল কাউল এর ঘরে জন্মগ্রহণ করেন।  তারা দিল্লিতে বসবাসকারী কাশ্মীরি পণ্ডিত পরিবারের সদস্য।  তিনি ছিলেন জ্যেষ্ঠ সন্তান এবং তার দুই ভাই চাঁদ বাহাদুর কাউল এবং উদ্ভিদবিদ কৈলাশ নাথ কাউল এবং এক বোন স্বরূপ কাটজু ছিল।  তিনি বাড়িতে একজন পণ্ডিত ও মৌলভীর অধীনে শিক্ষা লাভ করেন।
কমলা জোহর লাল নেহরুর সাথে জাতীয় আন্দোলনে যোগ দেন এবং অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি সর্বাগ্রে চলে আসেন।  ১৯২১ সালের অসহযোগ আন্দোলনের সময়, তিনি এলাহাবাদের মহিলাদের সংগঠিত করেন এবং দোকানে বিদেশী কাপড় এবং বিদেশী পানীয় বিক্রির বিরুদ্ধে পিকেটিং শুরু করেন।  যখন তার স্বামীকে “রাষ্ট্রদ্রোহী” বক্তৃতা ঠেকাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তখন তিনি তার জায়গায় এটি পড়তে গিয়েছিলেন।  ব্রিটিশরা শীঘ্রই বুঝতে পেরেছিল যে কমলা নেহেরু মহিলাদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন এবং সারা দেশে মহিলা সংগঠনগুলিকে সংগঠিত করেছিলেন।  স্বাধীনতা আন্দোলনে জড়িত থাকার জন্য সরোজিনী নাইডু এবং অন্যান্য মহিলাদের সাথে তিনি দুবার গ্রেপ্তার হন।  এই সময়ে তিনি তার বাড়িতে স্বরাজ ভবনে একটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র খোলেন যেখানে আহত মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবার এবং এলাহাবাদের অন্যান্য বাসিন্দাদের চিকিৎসা করা হয়।  তাঁর মৃত্যুর পর, মহাত্মা গান্ধী, অন্যান্য কংগ্রেস নেতাদের সাথে সহযোগিতায়, তাঁর স্মৃতিতে এটিকে একটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালে রূপান্তরিত করেন, যা কমলা নেহেরু মেমোরিয়াল হাসপাতাল নামে পরিচিত।
কমলা নেহেরু গান্ধীর আশ্রমে কস্তুরবা গান্ধীর সাথে কিছু সময় কাটিয়েছিলেন যেখানে তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামী জয়প্রকাশ নারায়ণের স্ত্রী প্রভাবতী দেবীর সাথে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন।  তারা ব্রিটিশদের কাছ থেকে ভারতের স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযোদ্ধাও ছিলেন।
কমলা ২৮ ফেব্রুয়ারী ১৯৩৬ সালে সুইজারল্যান্ডের লসানায় যক্ষ্মা রোগে মারা যান, যেখানে তার মেয়ে এবং শাশুড়ি তার পাশে ছিলেন।
।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

ভারতীয় চলচ্চিত্রের ফার্স্ট লেডি – ললিতা পাওয়ার, প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।।।।।

ললিতা পবার  ছিলেন একজন অতিপ্রজ ভারতীয় অভিনেত্রী। হিন্দি, মারাঠি এবং গুজরাটি চলচ্চিত্রের ৭০০ টিরও বেশি ছবিতে অভিনয় করে তিনি চরিত্রাভিনেত্রী হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন, সেখানে তিনি ভালজি পেন্ধারকরের তৈরি নেতাজি পালকর (১৯৩৮), নিউ হানা পিকচার্সের সেন্ট দমজী, ভি. এস খন্দকার রচিত নবযুগ চিত্রাপতের অমৃত এবং ছায়া ফিল্মসের গোরা কুম্ভর এর মতো জনপ্রিয় চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তাঁর অভিনীত অন্যান্য স্মরণীয় ছবির মধ্যে আছে আনাড়ি (১৯৫৯), শ্রী ৪২০ এবং মিস্টার অ্যান্ড মিসেস ৫৫, এবং রামনন্দ সাগরের টেলিভিশন মহাকাব্য ধারাবাহিক রামায়ণের মন্থরার চরিত্রে অভিনয়।
১৯১৬ সালের ১৮ এপ্রিল ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের নাশিক জেলার য়েবলাতে একটি রক্ষণশীল পরিবারে পবার জন্ম গ্রহণ করেন।

জন্মের সময় তার নাম ছিল আম্বা লক্ষ্মণ রাও সাগুন। তার বাবা লক্ষ্মণ রাও শাগুন ছিলেন এক ধনী সিল্ক এবং সুতা পণ্যের ব্যবসায়ী।
তিনি বিশেষ করে মায়ের ভূমিকায়, বিশেষত খারাপ মায়ের বা শ্বাশুড়ীর ভূমিকায় অভিনয় করেন। তার বিখ্যাত অভিনয় হলো রাজ কাপুরের সাথে আনাড়ি (১৯৫৯) ছবিতে কঠোর অথচ দয়ালু মিসেস এল. ডি’সা এর চরিত্রে। হৃষীকেশ মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় তিনি আজীবন অভিনয় করেছেন, যার জন্য তিনি ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রীর পুরস্কার লাভ করেছেন। এবং প্রফেসর (১৯৬২) চলচ্চিত্রে কঠোর মায়ের ভূমিকায় যে প্রেমে পড়েন এবং রামানন্দ সাগরের টেলিভিশন ধারাবাহিক রামায়ণে কুটিল কুব্জা দাসী মন্থরার ভূমিকায় অভিনয় করেন। ১৯৬১ সালে তিনি ভারত সরকারের ভারতীয় চলচ্চিত্রের ফার্স্ট লেডি হিসাবে সম্মানিত হন।
নির্বাচিত চলচ্চিত্রের তালিকা—-
রাম শাস্ত্রী, দাহেজ, অমর গান, দাগ (১৯৫২ সালের চলচ্চিত্র), পারচাইন, শ্রী ৪২০, মি. এন্ড মিসেস ৫৫, আনাড়ি, নাও দো গায়ারাহ, সুজাতা, জঙ্গি (১৯৬১ সালের সুবোধ মুখোপাধ্যায় রচিত চলচ্চিত্র), হাম দুনো, সম্পূর্ণ রামায়ণ, প্রফেসর, সেহরা, গ্রহস্তি,ঘর বাসাকে দেখো,  ফুল অর পাথর, খান্দান, বুন্দ জো বান গাইয়ে মতি, নূর জাহান, আব্রু, মেরি ভাবি, আনন্দ, পুষ্পাঞ্জলী, গোপি, জ্বালা, দুশ্রি সিতা।
১৯৫৯: আনাড়ি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার
১৯৬১: সংগীত নাটক একাদেমি পুরস্কার – অভিনয়
২৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৮ সালে তিনি প্রয়াত হন।
।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

ভারতীয় চলচ্চিত্র ইতিহাসের সবচেয়ে সুন্দরী-আকর্ষণীয় কিংবদন্তি অভিনেত্রী মধুবালা – প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।।

মুমতাজ জাহান দেহলভি হলেন একজন ভারতীয় অভিনেত্রী যিনি অনেক হিন্দি ধ্রুপদী চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।  তার সমসাময়িক নার্গিস এবং মীনা কুমারীর বিপরীতে, তাকে হিন্দি সিনেমার অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচনা করা হয়।  তাকে ভারতীয় চলচ্চিত্র ইতিহাসের সবচেয়ে সুন্দরী-আকর্ষণীয় অভিনেত্রীদের একজন হিসেবেও বিবেচনা করা হয়।
মমতাজ জাহান দেহলভি  একজন অন্যতম ভারতীয় অভিনেত্রী, যিনি অনেক হিন্দি ধ্রুপদী চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তার সমসাময়িক নার্গিস এবং মীনা কুমারীর বিপরীতে তাকে হিন্দি চলচ্চিত্রের সর্বাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে গণ্য করা হয়।তিনি ভারতীয় চলচ্চিত্র ইতিহাসের সর্বাধিক সুন্দর-আকর্ষণীয় অভিনেত্রী হিসেবেও গণ্য হন।  .
মমতাজ জাহান নাম দিয়ে অভিনয় শুরু করলেও অভিনেত্রী দেবিকা রাণী তার নাম দেন মধুবালা।

মধুবালা শিশুশিল্পী হিসেবে বলিউডে অভিনয় শুরু করলেও মূল নারী চরিত্রে অভিনয় শুরু করেন ১৪ বছর বয়সে কিদার শর্মার ‘নীলকমল’ ছবিতে রাজকাপুরের নায়িকা হয়ে। ১৯৪৯ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত মাত্র ২৯ বছরের অভিনয় জীবনে প্রায় ৭০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। ‘মুঘল-ই-আজম’ (১৯৬০) মধুবালার জীবনের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র।
মধুবালা ১৯৩৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি একটি দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।  তার বাবা পাকিস্তানের পেশোয়ারে একটি তামাক কোম্পানিতে কাজ করতেন;  কিন্তু সংসারের অভাবের কারণে চাকরি চলে যাওয়ায় মধুবালা অভিনয়ে যোগ দেন।  তিনি এগারো ভাইবোনের মধ্যে পঞ্চম ছিলেন এবং পাঁচজন অল্প বয়সে মারা যান।
মধুবালা অভিনীত চলচ্চিত্রের তালিকা—-
মেহলো কি খোয়াব, মুঘল-ই-আজম, দো ওস্তাদ, ইনসান জাগ ওঠা, কাল হামারা হায়, ঘী সিপাহী, জাওলা, শরাবী, হাফ টিকিট, বয়ফ্রেন্ড, ঝুমরু, পাসপোর্ট, বারসাত কি রাত, জালি নোট, হাওড়া ব্রিজ, কালা পানি, ফাগুন, পুলিশ, চলতি কা নাম গাড়ি, এক- সাল, নাতা, তীরন্দাজ, নাকাব, বহুত দিন হুয়া, অমর, রেইল কা ডিব্বা, আরমান, সাংদিল, সাকি, বাদল, খাজানা, নাদান, নাজনীন, সাইয়ান, তারানা, বেকসুর, হাঁসতে আঁসু, মধুবালা, নিরালা, নিশানা, পরদেশ, অপরাধী, দৌলত, দুলারি, ইমতিহান, নেকি আওর বদি, পরশ, সিপাহিয়া, জন্মপত্রী, মহল, অমর প্রেম, লাল দুপাট্টা, পারাই আগ, চিত্তর বিজয় , দিল-কি- রানী, খুবসুরত দুনিয়া, মেরা ভগবান, নীল কমল, ফুলওয়ারী, পূজারী, রাজপুতানী, ধন্য ভগত, মুমতাজ মহল, বসন্ত, স্বস্তিক, গেটওয়ে অফ ইন্ডিয়া, ইয়াহুদি কি লাড়কি , ঢাকা কি মলমল, রাজ হাট, শিরিন ফরহাদ, মি. এন্ড মিসেস ৫৫।
সম্মাননা—‐—-
১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ তারিখে তার ৮৬তম জন্মদিনে গুগল ডুডল তৈরি করে সম্মাননা প্রদান করে।
মৃত্যু —–
মধুবালার হৃৎপিন্ডে জন্মগত ছিদ্র ছিল। মধুবালার ক্যারিয়ারের স্বার্থে পরিবারের পক্ষ থেকেই অসুখটা তখন গোপন করা হয়। কাজের চাপ আর বদ্ধ স্টুডিওয়ে দিনের পর দিন কাটাতে কাটাতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। নয় বছর অসুখের সাথে লড়াই করে অবশেষে ২৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৯ সালে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

প্রবাদপ্রতিম ভারতীয় বাঙালি গায়িকা বনশ্রী সেনগুপ্ত’র – প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।।।

বনশ্রী সেনগুপ্ত ছিলেন একজন কিংবদন্তি ভারতীয় বাঙালি গায়িকা।  তিনি ১৯৮৬ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন সঙ্গীত উৎসবে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন।  তিনি বাংলা, হিন্দি, ভোজপুরি, ওড়িয়া এবং অসমীয়া ছবিতেও গান গেয়েছেন।
ব্যক্তিগত জীবন——–
বনশ্রী সেনগুপ্ত ১৯৪৬ সালের দিকে হুগলির চুঁচুড়ায় জন্মগ্রহণ করেন।  তাঁর পিতা শৈলেন্দ্রনাথ রায় ছিলেন একজন গুণী সঙ্গীতজ্ঞ (উচ্চাঙ্গ-সঙ্গীতশিল্পী)।  শান্তি সেনগুপ্তকে বিয়ে করে কলকাতায় চলে আসেন বনশ্রী সেনগুপ্ত।
সঙ্গীতজীবন———-
বনশ্রী সেনগুপ্ত তার প্রথম জীবনে তার পিতা, গুণী সঙ্গীতজ্ঞ শৈলেন্দ্রনাথ রায়ের অধীনে সঙ্গীত শিক্ষা শুরু করেন।

পরবর্তীতে, তিনি বিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ সুধীন দাশগুপ্তের অধীনে ২০ বছর প্রশিক্ষণ নেন।  তিনি সুধীন দাশগুপ্ত, প্রবীর মজুমদার, নীতা সেন, সাগরউদ্দিন খান, সন্তোষ সেনগুপ্ত, দিনেন্দ্র চৌধুরী প্রমুখ সুরকারদের সাথে কাজ করেছেন। বনশ্রী সেনগুপ্ত ১৯৬৬ সালে কণ্ঠশিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তার অসংখ্য গান এবং অ্যালবাম রয়েছে।  ষাট ও সত্তরের দশকে অনেক হিট গান উপহার দিয়েছেন তিনি।  এছাড়া তিনি বাংলা, হিন্দি, ভোজপুরি, ওড়িয়া ও অহমিয়া চলচ্চিত্রে কণ্ঠশিল্পী হিসেবে কাজ করেছেন।

এরূপ চলচ্চিত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: ছুুুটি, নিমন্ত্রণ, বিন্দুর ছেলে, প্রান্তরেখা, রো ভরা বসন্ত, দুুুুলহন বোহি জো পিয়া মন ভায়ে, সানাই, এক যে ছিল দেশ, ন্যায় অন্যায়, আলোয় ফেরা, বিদ্রোহী, অঞ্জলি, ছন্দনীড়, পথ ও প্রাসাদ, নটী বিনোদিনী , বড় বউ  ইত্যাদি। তার গাওয়া উল্লেখযোগ্য ও বিখ্যাত গানের মধ্যে রয়েছে: “আজ বিকেলের ডাকে তোমার চিঠি পেলাম”, ”আমার অঙ্গে জ্বলে রংমশাল”, “ছি ছি ছি এ কী কাণ্ড করেছি”, “দূর আকাশে তোমার সুর”, “আমার আঁধার ঘরের প্রদীপ”, “সুন্দর বনে সুন্দরী গাছ”, “খুশিয়া হি খুশিয়া” ইত্যাদি।এছাড়া, তিনি আকাশবাণী ও দূূরদর্শনেও সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে কাজ করেন।

পুরস্কার——–

বনশ্রী সেনগুপ্ত তার সঙ্গীতকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ উত্তম কুমার পুরস্কার, মাদার তেরেসা পুরস্কার, মাইকেল মধুসূদন দত্ত পুরস্কার, বিএফজেএ পুরস্কার, প্রমথেশ বড়ুয়া পুরস্কার ইত্যাদি অর্জন করেন।

মৃত্যু ——-

বনশ্রী সেনগুপ্ত ২০১৭ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি একাত্তর বছর বয়সে প্রয়াত হন ।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
উপন্যাস নারী কথা

ধারাবাহিক উপন্যাসঃ দামাল মেয়ে কুহেলি (প্রথম পর্ব) :: দিলীপ রায়।।

সানাই কানাই দুই ভাই । সানাই বড় ও কানাই ছোট । সানাইয়ের মেয়ে কুহেলি । কাঞ্চন নগরে তাঁদের বাড়ি । দুই ভাইয়ের পাশাপাশি বসবাস । বেঁচে থাকতে সানাইয়ের বাবা জমি-জায়গা দুজনকে সমান ভাগে ভাগ করে দিয়ে গেছেন । সানাইয়ের বেশী বয়সে বিয়ে । সেইজন্য বিয়ের অনেক বছর বাদে তাদের একমাত্র কন্যা সন্তান, কুহেলি । সানাইয়ের জীবনে সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা, কুহেলি জন্ম নেওয়ার সময় তার স্ত্রী বিয়োগ । স্ত্রীকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল সানাই । কিন্তু কিছুটা ডাক্তারদের অবহেলার কারণে কুহেলির মায়ের অকাল বিয়োগ । সেই থেকে সানাই মনমরা ! তবুও মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে সানাইয়ের বাঁচার স্বপ্ন !
কিন্তু সমস্যা অন্যত্র । সমস্যা শুরু হলো কুহেলির পান্তা মাসিকে নিয়ে । পান্তা মাসি অল্প বয়সে বিধবা । পাশের গ্রাম সুরেশপুরে তার বাড়ি । প্রতিদিন সবজি বোঝাই ঝুড়ি মাথায় নিয়ে গাঁয়ে গাঁয়ে বিক্রি । সবজি বিক্রি করে তার সংসার । পান্তা মাসির একটাই মেয়ে । অল্প বয়সে সেই মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে । মেয়ের শ্বশুর বাড়ি ভরতপুরে । ভরতপুর ব্লক অফিসের পাশে জামাইয়ের চায়ের দোকান । চায়ের দোকান খুব চালু । ভাল ঘরে মেয়ের বিয়ে হওয়ায় পান্তা মাসির খুব শান্তি ! জামাই খুব কর্মঠ । ব্যবহার আর পাঁচটা ছেলের চেয়ে আলাদা । মার্জিত স্বভাব ! সর্বোপরি জামাই পান্তা মাসিকে মায়ের চেয়েও বেশী শ্রদ্ধা করে । মেয়ে বিয়ে দিয়ে এইজন্যে পান্তা মাসির মনে খুব শান্তি । মেয়েটা অন্তত সুখে শান্তিতে বাকী জীবন কাটাতে পারবে !
মেয়ের বিয়ের পর থেকে পান্তা মাসি বাড়িতে একা । সারাদিন মাথায় ঝুড়ি নিয়ে এ-গাঁয়ে সে-গাঁয়ে ঘোরাঘুরি । গাঁয়ে ঘুরে ঘুরে তার সবজি বিক্রি । দিনের শেষে তিন-চারশ টাকা লাভ । তাতেই পান্তা মাসির শান্তি । কেননা পান্তা মাসি অল্পতেই সন্তুষ্ট ।
কুহেলি হাই স্কুলে ভর্তি হলো । ক্লাস ফাইভে । কুহেলির মুখটা ভীষণ মিষ্টি । গাঁয়ের লোকজন প্রায়শই বলে, দুর্গা মায়ের মুখটা কুহেলির মুখে বসানো । তার নাকি প্রতিমার মতো সুন্দর মুখশ্রী । আপশোশ করে বয়স্ক মহিলারা বলেন, কুহেলির মা তাঁর মেয়েটার সুন্দর মুখশ্রী দেখে যেতে পারলো না । মুখপুড়িটা মেয়েকে জন্ম দিয়ে বিদায় নিলো ।
স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর থেকে পান্তা মাসির কুহেলিদের বাড়ি ঘন ঘন যাতায়াত । বাড়ি থেকে বেরিয়ে পান্তা মাসি সবজির ঝুড়ি মাথায় নিয়ে প্রথমেই কুহেলিদের বাড়ি । সেই সময় কুহেলি ঘুম থেকে ওঠে । অন্যদিকে তার বাবা প্রাতর্ভ্রমণ সেরে বাড়ির দাওয়ায় বসে । পান্তা মাসি সানাইকে দেখতে পেলে সবজির ঝুড়ি নামিয়ে তাদের রান্না ঘরে ছোটে । চা বানিয়ে প্রথমে কুহেলির বাবাকে খাওয়ায় । তারপর কুহেলির জন্য টিফিন বানিয়ে দেওয়া । কাজের খুব চাপ না থাকলে, পান্তা মাসি কুহেলিদের দুপুরের রান্না বানিয়ে, তারপর সবজি বিক্রি করতে পাড়ায় ছোটে ।
রান্না ঘরে ঢোকার জন্য কুহেলির বাবার সঙ্গে পান্তা মাসির ঘনিষ্টতা ক্রমশ বাড়তে থাকে । সকাল আটটার মধ্যে কুহেলিদের বাড়ি ঢুকে নিজের বাড়ির মতো পান্তা মাসির কাজ শুরু হয়ে যায় । শোয়ার ঘরের বিছানা তোলা । ঘর-দোর ঝাঁট দেওয়া । কুহেলির যত্ন নেওয়া । কুহেলিকে স্কুলে যাওয়ায় আগে যেমন স্কুল ব্যাগ, স্কুলের জন্য আলাদা টিফিন, ইত্যাদি গুছিয়ে দেওয়া । সকালের চা-জলখাবারের পর্ব শেষ হয়ে গেলে দুপুরের রান্নায় মন দেয় । প্রতিদিন জেলেরা গাঁয়ে মাছ বিক্রি করতে আসে । তাদের কাছ থেকে নিজে মাছ কেনে পান্তা মাসি । ডাল ছাড়া প্রতিদিন মাছের ঝোল ও একটা সবজির তরকারি রান্না করা চাই । তবে রান্না করার পর নিজে কিছুতেই খাবে না । পান্তা মাসিকে খাওয়ার জন্য সানাই অনেক অনুরোধ করেছে । কিন্তু তার একটাই কথা, মা-মরা মেয়েটার কথা ভেবে আমার রান্না করা । তার মুখে দু-মুঠো খাবার তুলে দিতে পারছি, এটাই আমার শান্তি ! আমাকে খেতে বলবেন না প্লীজ, আমি খেতে পারব না । দুপুরের রান্না শেষ করে পুনরায় ঝুড়ি মাথায় পান্তা মাসি সবজি বিক্রি করতে পাশের গ্রামে ছোটে ।
একদিন কৌতুহলবশত কুহেলি পান্তা মাসিকে জিজ্ঞাসা করলো, “তুমি আমাদের বাড়ি এত কাজ করো কেন ? এতে তোমার খাটুনি বাড়ে বই কমে না । আমাদের বাড়িতে পরিশ্রম করে তোমার কী লাভ ?”
ফ্যাকাশে মুখে পান্তা মাসি কিছুক্ষণ কুহেলির দিকে তাকিয়ে রইলো । তারপর ঠোটের কোনে এক চিলতে হাসি দিয়ে কান্তা মাসি বলল, “তুই এই খাটুনির মর্ম বুঝবি না । বড় হলে বুঝতে পারবি ।“
ভরা বৈশাখ মাসে প্রখর তাপের মধ্যে গাঁয়ে ঘুরেঘুরে কাজ করার জন্য পান্তা মাসি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লো । সেই সময় কুহেলি লক্ষ্য করলো, “তার বাবা খুব মনমরা । সকালে ওঠে আগের মতো প্রাণচঞ্চল নয় ! সকালে হাঁটতে বের হয় না । বাড়িতে মনমরা হয়ে বসে থাকে ।“ কুহেলি কাকীমার কাছে জানতে পারলো, সে স্কুলে বেরিয়ে গেলে তার বাবা পান্তা মাসির বাড়ি যায় । তাকে ডাক্তার দেখানো, ঔষধ কেনা, রান্না করা, সবকিছু করে দিয়ে বাড়ি ফেরে । ফলে তার বাবার দুপুরের খাবার খেতে নাকি বেলা তিনটে গড়িয়ে যায় । কাকীমার কাছে এতকথা শুনলেও কুহেলি বাবাকে কিচ্ছুটি জিজ্ঞাসা করে না । তবে কয়েকদিন যাওয়ার পর কুহেলি তার কৌতুহল চেপে রাখতে পারলো না । তাই বাবাকে জিজ্ঞাসা করলো, “বাবা ! পান্তা মাসির কী হয়েছে ?” উত্তরে মনমরা সুরে সানাই বলল, “তোর পান্তা মাসির টাইফয়েড জ্বর হয়েছে ।“
ডাক্তার কী বলল ?
“জ্বর এখন নিয়ন্ত্রণে ।“ ডাক্তারবাবু বললেন । তবে তোর পান্তা মাসিকে দেখভালের জন্য একটা লোক দরকার । আর তা ছাড়া তাকে নিয়মিত দামী দামী ফল খাওয়ানো খুব প্রয়োজন !
“তুমি চিন্তা করো না বাবা । পান্তা মাসি খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবে ।“ বাবাকে সান্ত্বনা দিলো কুহেলি ।
পরেরদিন ঘুম থেকে উঠে এ-ঘর ও-ঘর খুঁজেও বাবাকে পাচ্ছে না কুহেলি । বাবা কোথায় গেলো ? ভয় পেয়ে গেলো কুহেলি । বাবা তাকে না জানিয়ে কোথাও যায় না । কাঞ্চন নগরের শেষ মাথা দিয়ে একে-বেঁকে গেছে নোনাই নদী । দীর্ঘদিনের নোনাই নদী । এই নদীতে গ্রীষ্মকালে ভাল মাছ পাওয়া যায় । কুহেলি জানে, কারণে-অকারণে বাবা মাঝে মাঝে নোনাই নদীর পারে গিয়ে বসে থাকে । তাই কুহেলি ভাবলো, বাবা সম্ভবত নোনাই নদীর পারে গিয়ে বসে থাকতে পারে । তাই কুহেলি হাঁটতে হাঁটতে নোনাই নদীর পারে গিয়ে উপস্থিত । নোনাই নদীর পারে গিয়ে কুহেলি দেখলো, গাঁয়ের অনেক মানুষ সেখানে রয়েছেন । অনেকে খেপলা জালে নদীতে মাছ ধরছে । অত লোকের মাঝে কোথাও তার বাবাকে খুঁজে পাওয়া গেলো না । হতাশ হয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিলো কুহেলি ।
রাস্তায় শীতলের সঙ্গে দেখা ।
“এত সকালে হন্তদন্ত হয়ে কোথায় চললি ?” জিজ্ঞাসা করলো শীতল ।
নোনাই নদীর পারে গিয়েছিলাম, এখন বাড়ি ফিরছি ।
হঠাৎ নোনাই নদীর পারে কেন ?
ঘুম থেকে উঠে দেখি বাবা বাড়িতে নেই । তাই ভাবলাম, বাবাকে নদীর পারে পাওয়া যাবে !
তোর বাবাকে সুরেশপুরে দেখলাম । বলেই শীতল পুনরায় জিজ্ঞাসা করলো, “তোর বাবা এত সকালে ঐ গ্রামে কেন ?”
কাজ আছে নিশ্চয় ! কিন্তু তুই সেখানে কী করছিলি ? পাল্টা প্রশ্ন করলো কুহেলি ।
আমি পড়তে গিয়েছিলাম । তুই তো জানিস, আমাদের অঙ্কের স্যার সুরেশপুরে থাকেন । তাঁর কাছে অঙ্ক শিখতে গিয়েছিলাম ।
সাইকেল থেকে নেমে শীতল হাঁটা শুরু করলো ।
মাঝখানে তিন-চারদিন কুহেলির সাথে শীতলের দেখা হয়নি । গাঁয়ে খেলার মাঠে কুহেলি কয়েকদিন যায়নি । অথচ কুহেলির অন্যান্য বন্ধুরা মাঠে প্রতিদিন যাচ্ছে এবং তারা কিৎ কিৎ, দৌড়, ইত্যাদি খেলায় মত্ত । স্কুল থেকে ফেরার সময়ও কুহেলির সাথে শীতলের দেখা হয়নি । শীতল ক্লাস সেভেনে পড়ে । কিন্তু কুহেলির সাথে শীতলের খুব ভাব । দু-ক্লাস উপরে হলেও শীতল কুহেলিকে খুব পছন্দ করে । টিফিন ভাগ করে খায় । স্কুল থেকে ফেরার সময় একসঙ্গে বাড়ি ফেরে । দুজনের মধ্যে খুব ভাল সম্পর্ক ।
“দুদিন খেলার মাঠে আসলি না কেন ?” শীতল কুহেলিকে প্রশ্ন করলো ।
স্কুল থেকে ফিরে বাবার সঙ্গে কাজ করছিলাম ।
“বাবার সঙ্গে কাজ করছিলি !” কথাটা পুনরুক্তি করেই শীতলের কী হাসি !
হাসছিস কেন ?
বাবার সঙ্গে তুই কী কাজ করছিলি ? তুই কী বাবার মতো কাজ করতে পারিস ?
বড্ড হাসবি না । আমি বাবাকে রাতের রান্নার সবজি কেটে দিচ্ছিলাম ।
তুই কী রান্না জানিস ?
জানি তো ! জানিস শীতল, আমি ভাত ও ডাল রান্না করতে পারি ।
কোনোদিন রান্না করেছিস ?
হ্যাঁ করেছি । গত রবিবারদিন বাবা জরুরি একটা কাজে ভরতপুর গিয়েছিল । যদিও বলে গিয়েছিল বাড়ি ফিরে রান্না করবে । কিন্তু আমি বাবার জন্য অপেক্ষা করিনি । বাবা ফেরার আগেই ভাত ও ডাল বানিয়েছিলাম । ভাতের মধ্যে আলু সেদ্ধ দিয়েছিলাম । বাবা খাবার খেয়ে খুব খুশী !
ডালে ঠিকমতো নুন দিয়েছিলি ?
বোকার মতো প্রশ্ন করিস না । তুই একটা হাঁদারাম !
হাঁদারাম বললি কেন ?
কেন হাঁদারাম বলবো না ! আমি ডাল রান্না করে বাবাকে খাওয়ালাম, অথচ প্রশংসা দূরে থাক একটা ধন্যবাদ দিলি না !
এবার বুঝেছি !
কী বুঝেছিস ?
তোর অভিমান হয়েছে !
আমি অভিমান শব্দের অর্থ বুঝি না । কঠিন কঠিন শব্দ দিয়ে কথা বলবি না । আমি গরীব মানুষ । বাবা স্কুলে পড়াচ্ছে, কিন্তু বাড়িতে মাস্টার রেখে পড়াতে পারছে না । শুধুমাত্র ক্লাসের মাস্টার মশাইদের পড়াগুলি ঠিকমতো করি । সুতরাং অতো কঠিন শব্দ এখনও শিখিনি, বুঝলি !
তারপর বাড়ির দোরগড়ায় পৌঁছে কুহেলি শীতলকে বলল, “আমি এসে গেছি । সুতরাং তুই এখন বাড়িতে ফিরে যা ।“
আজ স্কুল যাবি তো ?
এখনও বুঝতে পারছি না । বাবা এখনও বাড়ি ফেরেনি । সুতরাং বাবা বাড়িতে না ফিরলে স্কুলে যাওয়া হবে কিনা সন্দেহ !
হঠাৎ শীতল পেছন দিকে তাকিয়ে দেখে কুহেলির বাবা বাড়ির দিকে ধেয়ে আসছেন । তখন কুহেলিকে শীতল বলল, তোর বাবা বাড়ির দিকে হন্তদন্ত হয়ে ফিরছেন । এবার নিশ্চয় তোর স্কুলে যাওয়ার সমস্যা নেই ।
এক গাল হাসি দিয়ে কুহেলি বলল, “অবশ্যই স্কুলে যাচ্ছি । তখন দেখা হবে ।“
তারপর শীতলের দিকে তাকিয়ে ‘টা টা’ দিয়ে বাবার দিকে ছুটলো কুহেলি । বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলল, “তুমি যাওয়ার সময় বলে যাওনি ? তাই আমি তোমাকে বিভিন্ন জায়গায় খুঁজেছি ।“
আমার অন্যায় হয়ে গেছে মা । আর আমার ভুল হবে না । এরপর যেখানেই যাই না কেন, তোমাকে অবশ্যই বলে যাবো ।“
কথা দিচ্ছ !
“হ্যাঁ দিচ্ছি ।“ তারপর বাপ-বেটির কী হাসি ।
(চলবে)

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

কৃষ্ণ-ভক্ত বিরহ বিনা দুঃখ নাহি আর :::: রাধাবিনোদিনী বিন্তি বণিক।।।।।

গোদাবরী তটে শ্রীমন্ মহাপ্রভু রায় রামানন্দকে প্রশ্ন করেছিলেন, “দুঃখ মধ্যে কোন্ দুঃখ হয় গুরুতর ?’ রায় রামানন্দ তদুত্তরে বলেছিলেন- “কৃষ্ণ-ভক্ত বিরহ বিনা দুঃখ নাহি আর।।” নিরন্তর ভক্তসঙ্গে ভজনের যে পরিপাটী লাভ করা যায় তা যে কোন একজন সাধকের ঈপ্সিত লক্ষ্য। একজন পথচারী যখন দুর্গম বনপথ দিয়ে একা গমন না করে অনেকের সঙ্গে আলাপচারিতা, কথোপকথন বা হাস্য পরিহাসের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হন, তখন তাঁর দস্যুভয় বা হিংস্র পশু আক্রমণের বিপদের সম্ভাবনা বহুলাংশে হ্রাস পায়।

তেমনই, সাধক যদি নিত্য উপযুক্ত ভক্তসঙ্গ করেন তখন সংসারের দস্যুতুল্য, পশুতুল্য কামনা-বাসনা, বিষয়-বাসনা বা কোন প্রকার ভজন অহংকার তাঁর মনে অযথা উপদ্রব হয়ে তাঁকে সাধন-পথভ্রষ্ট করতে পারে না। তাইতো শ্রীল নরোত্তম ঠাকুর মহাশয় বলেছেন- “করহ ভকত সঙ্গ, প্রেমকথা রসরঙ্গ, তবে হয় বিপদ বিনাশ।” ভক্তসঙ্গ করার দরুণ ভক্তে-ভক্তে হয় বন্ধুত্ব। এ বন্ধুত্ব আমাদের প্রাকৃত জগতের বন্ধুত্ব নয়। দিব্য অপ্রাকৃত বন্ধুত্ব হল তা। প্রাকৃত বন্ধুত্ব নশ্বর, ক্ষণিক। তা স্বার্থ সম্বন্ধের সুক্ষ্ম আবেশ মিশ্রিত হলেও হতে পারে। কিন্তু দুই ভক্তের ভিতর ভক্তিকে কেন্দ্র করে যে বন্ধুত্ব, তা নিত্য, সত্য, স্বার্থগন্ধহীন। কারণ, এই বন্ধুত্বে কৃষ্ণেতর বস্তুতে কোন কৌতূহল থাকে না। এই বন্ধুত্বের একমাত্র লক্ষ্য পরস্পরের নিকট হতে কৃষ্ণপ্রেমরস আস্বাদন, নিরন্তর একে অপরের সঙ্গে কৃষ্ণকথা আলাপন ও একত্রে নাম-সংকীৰ্ত্তন রূপ আনন্দ সমুদ্রে অবগাহন। কৃষ্ণ মাধুর্য আস্বাদনের লোভে এক ভক্ত যখন অপর ভক্তের সঙ্গ-সান্নিধ্য প্রত্যাশা করে, তখন অচিরেই অমলিন, নিষ্পাপ, অপ্রাকৃত বন্ধুত্বের রূপ পায় তাদের উভয়ের অন্তরের টান। এরূপ বন্ধুত্ব সাধনের পরিপুষ্টি আনে। আর তাই সাধক এমন বন্ধুত্ব সঙ্গ প্রত্যাশা করে। তাই তো রামানন্দ রায় যখন মহাপ্রভুকে দশদিন গোদাবরী তীরে বাস করে তাঁকে সঙ্গ দিতে অনুরোধ করেন, তখন মহাপ্রভু বলেন- “দশদিনের কা কথা যাবত্‍ আমি জীব। তাবত্‍ তোমার সঙ্গ ছাড়িতে নারিব।। নীলাচলে তুমি আমি থাকিব এক সঙ্গে। সুখে গোঙাইৰ কাল কৃষ্ণকথা রঙ্গে।।” (চৈ. চ. / মধ্য/ ৮ম পরিঃ)।

কৃষ্ণকথা তো এ জগতে শুদ্ধকথা সার। সে অমৃত যতই পান করা যায় ততই তৃষ্ণা বৃদ্ধি পায় আরও পানের। অদ্ভূত, অলৌকিক, অবিশ্বাস্য প্রভাব কৃষ্ণকথামৃতের। ভক্তমনকে জড়ীয় প্রপঞ্চের ভাবনা থেকে অপসারিত করে আনন্দলোকের মঙ্গলালোকে উদ্ভাসিত করে। পার্থিব লোক হতে হৃদয়কে উত্‍পাটিত করে কৃষ্ণলোকে রোপণ করে, যেখানে মাধুর্য্য-লাবণ্য বলতে যা , সব কিছুই কৃষ্ণকেন্দ্রিক। আর যা কৃষ্ণকেন্দ্রিক তা মায়াগন্ধহীন, কামকলুষমুক্ত। “কৃষ্ণ সূৰ্য্য সম মায়া হয় অন্ধকার। যাঁহা কৃষ্ণ তাঁহা নাহি মায়া অধিকার।। (চৈ. চ./মধ্য/২২পরিঃ)। তা সদানন্দময়, চিদানন্দময়। কৃষ্ণকথা শুরু হলে তা ভক্তমনকে এমন বিবশ করে যে, “সময় বহিয়া যায়, নদীর স্রোতের প্রায়” -তাও ভক্ত টের পায় না। এ কথার আবেশে ভক্ত কখনো হাসে কখনো কাঁদে, কখনো গায় আবার কখনো আনন্দের আতিশয্যে নৃত্যও করে ফেলে। ঠিক যেমন মহাপ্রভু আর রামানন্দ রায় টের পান নি। “এইমত দুইজনে কৃষ্ণকথা রসে। নৃত্য-গীত-রোদন হৈল রাত্রি শেষে।।” (চৈ .চ/মধ্য/৮ম পরিঃ)। তাইতো, এমন দিব্য আনন্দদানকারী বন্ধুত্বে যখন বিচ্ছেদ আসে তখন ভক্তের কাছে তা এক অপূরণীয় বিরাট ক্ষতি।
যখন ঠাকুর হরিদাস মহাপ্রভুকে জানান যে, তিনি এবার মৃত্যুবরণ করতে চান, যাতে মহাপ্রভুর অপ্রকটলীলার বেদনা তাঁকে সহ্য করতে না হয়। তখন মহাপ্রভু বলেন তিনিও ঠাকুর হরিদাসের মতো ভক্তসঙ্গের বিরহ বহন করতে কষ্ট পাবেন। “কিন্তু আমার যা কিছু সুখ সব তোমা লঞা। তোমা যোগ্য নহে, যাবে আমারে ছাড়িয়া।।” (চৈ. চ./ অন্ত্য/১২ পরিঃ)। কৃষ্ণভক্ত-বন্ধুর বিরহবেদনার জ্বালার উপশম হয় না সহজে। সেই দুঃখানুভূতির কোন তুলনা হয় না কোন কিছুর সাথে। সে অভাবের কোন পূরণ হয় না। এমনটা তো হয়েছিল শ্রীল রঘুনাথ দাস গোস্বামীর ক্ষেত্রেও। তাঁর এবং শ্রীল রূপগোস্বামীর ভিতর ছিল এমনই অপ্রাকৃত কৃষ্ণপ্রেমময় বন্ধুত্ব। মহাপ্রভুর অন্তর্ধানের পর যখন তিনি বৃন্দাবনে এসেছিলেন তখন তাঁর মনে মনে সংকল্প ছিল যে, বৃন্দাবনের লীলাস্থলী দর্শন করার পর গিরিরাজ গোবর্দ্ধন হতে ভৃগুপাতে জীবন বিসর্জন দেবেন। কারণ, তাছাড়া অন্য কোন উপায়ে মহাপ্রভুর কৃপা সঙ্গহীনতার মনোবেদনা নাশের পথ ছিল না তাঁর। কিন্তু ব্রজেতে আগমন করে যখন তিনি শ্রীরূপ-সনাতনের সান্নিধ্যে শ্রীব্রজধাম, গিরিরাজ শ্রীগোবর্ধন এবং শ্রীরাধাকুণ্ড দর্শন করলেন তখন তাঁর অন্তরের গৌরসুন্দর-বিরহের কিছুটা লাঘব হয়েছিল, উপশম হয়েছিল। তিনি শ্রীরাধাকুণ্ডের আশ্রয়তটে ভজনে নিমগ্ন হয়েছিলেন। শান্তি পেয়েছিলেন। অথচ, এই ব্রজধাম, এই গেবর্দ্ধন ,এই রাধাকুণ্ডই তাঁর কাছে ভয়াশ্রয়া, ভয়াল, অসহ্য মনে হয়েছিল শ্রীরূপ গোস্বামীর অপ্রকট হবার পর। তাঁর বিরহবেদনায় তিনি লিখেছিলেন-“শূন্যায়তে মহাগোষ্ঠং গিরীন্দ্রোহজগরায়তে। ব্যাঘ্রতুণ্ডায়তে কুণ্ডং জীবাতু রহিতস্য মে।।” অর্থাত্‍, শ্রীরূপ গোস্বামীপাদের বিরহে জীবন ধারণের উপায় স্বরূপ এই মহাগোষ্ঠভূমি আমার নিকট শূণ্য-শূণ্য প্রতিভাত হচ্ছে। শ্রীগোবর্দ্ধন যেন অজগরের ন্যায়। শ্রীরাধাকুণ্ড যেন ব্যাঘ্রের ন্যায় মুখব্যাদান করে বসে আছে, মনে হচ্ছে। মহাবিরহে চরম বিচ্ছেদে মর্মাহত হয়ে, অধীর হয়ে খেদ করে বলেছেন- “গৌরাঙ্গচন্দ্রমিহ রূপযুগং ন পশ্যান হা বেদনাঃ কহি সহে স্ফুটরে ললাটে।”-হায়! শ্রীগৌরাঙ্গচন্দ্র ও শ্রীরূপ-সনাতনকে না দেখে আর কত বিরহ সহ্য করবো ! ওরে ললাট, তুই শতধা বিদীর্ণ হয়ে যা!

ঠিক এমনই বন্ধুপ্রীতি ছিল ঠাকুর নরোত্তম এবং শ্রীনিবাস আচার্য্য ঠাকুরের শিষ্য শ্রীরামচন্দ্র কবিরাজের ভিতর। রামচন্দ্র কবিরাজ শ্রীমন্ মহাপ্রভুর পার্ষদ শ্রীচিরঞ্জীব সেনের পুত্র। পদকর্তা শ্রীগোবিন্দ কবিরাজের জ্যেষ্ঠ সহোদরও। তিনি মহাপণ্ডিত মহাকবি ছিলেন। আর মহাভক্ত তো বটেই। তাঁর সঙ্গে ঠাকুর মহাশয়ের বন্ধুপ্রীতি সম্পর্কে ‘ভক্তিরত্নাকরে’ ঠাকুর নরহরি চক্রবর্তী লিখেছেন- “রামচন্দ্র নরোত্তম দোঁহার যে রীত। আগে জানাইব এথা কহি সে কিঞ্চিত্‍।। তনু মন প্রাণ নাম একই দোঁহার। কবিরাজ নরোত্তম নাম-এ প্রচার।। নরোত্তম কবিরাজ কহে সৰ্ব্বজন। কথাদ্বয় মাত্র যৈছে নর-নারায়ণ।। রামচন্দ্র নরোত্তম বিদিত জগতে। হৈল যুগল নাম সবে সুখ দিতে।।”
নরোত্তম-কবিরাজের তনু-মন-প্রাণ অভিন্নতার একটি চিত্তহারী লীলা আছে। রামচন্দ্র কবিরাজ তখন খেতুরীতে ঠাকুর মহাশয়ের সান্নিধ্যে অবস্থনারত। তাঁর পত্নী রত্নমালাদেবী রামচন্দ্রকে একাধিকবার পত্রমারফত অনুরোধ করেন যে একটি বার অন্ততঃ দর্শনদান করে ধন্য করেন তিনি রত্নমালাদেবীকে। কিন্তু সংসারত্যাগী রামচন্দ্র কবিরাজের মন একটিবারের জন্যও সে অনুরোধে উচাটন হয়নি। তিনি নরোত্তম সঙ্গ ছাড়তে নারাজ। পরিশেষে রত্নমালাদেবী পত্র মারফত অনুরোধ করলেন ঠাকুর মহাশয়কে যাতে তিনি অন্ততঃ একটি বারের জন্য রামচন্দ্র কবিরাজকে গৃহে প্রেরণ করেন বুঝিয়ে। নরোত্তম ঠাকুর কবিরাজ মহাশয়কে বললেন-তিনি যেন সে দিনই দুপুরে প্রসাদ পেয়ে কুমারনগরে নিজের গৃহে যান আর পরদিন প্রভাতে ফিরে আসেন। বললেন , “আমার শপথ ইহা না করিহ অন্যথা। না করিলে, মনে আমি পাব বড় ব্যথা।।’ (গৌরভক্তামৃতলহরী-৮ম খণ্ড, শ্রীকিশোরী দাস বাবাজী)
রামন্দ্র কবিরাজ বেজায় দুর্বিপাকে পড়লেন। বন্ধু নরোত্তমের শপথ অন্যথা করতে পারবেন না আবার সংসারের মোহভরা ঘেরাটোপে এক মুহুর্তের জন্যও যেতে চান না নরোত্তম সঙ্গ ছেড়ে। চিত্ত বড় ব্যাকুল হল। শেষে, “কান্দিতে কান্দিতে প্রেমে করয়ে গমন। খেতুরি পানে একদৃষ্টে করি নিরীক্ষণ।।” (ঐ)। পত্নী সম্ভাষণে গেলেন কবিরাজ মহাশয় বান্ধবের শপথ রক্ষা করতে। রাত্রি দ্বিতীয় প্রহরে কুমারগ্রাম ত্যাগ করে যখন খেতুরীতে প্রত্যাগমন করলেন তখন প্রভাত। পূজারী আরতি করছেন শ্রীমন্দিরে। তিনি একাধারে রাখা মার্জনী (ঝাড়ু)টি তুলে নিয়ে মন্দির প্রাঙ্গন মার্জন করতে লাগলেন। কবিরাজ মহাশয় আড় চোক্ষে ঠাকুর মহাশয়কে দর্শন করে… নিজেকেই নিজে তিরস্কার করে বলতে লাগলেন, ‘হায়। আমি কী অধম চিত্তের অধিকারী। এখানকার এমন দিব্য সুখ আমার ভালো লাগলো না। আমি বহু সময় হেলায় নষ্ট করে এলাম কাল। ধিক্ আমায় ধিক্‌।’-এই প্রলাপ করেই তিনি নিজের পৃষ্ঠে নিজেই মার্জনী দ্বারা প্রহার করতে লাগলেন। অবিলম্বে নরোত্তম ঠাকুর তাঁকে বিরত করতে তাঁর হস্ত ধরে ফেললেন। বললেন, ‘আহা। করো কী, করো কী রামচন্দ্র! আমার যে বড় ব্যথা লাগলো। আর এমন কর্ম কোরো না। দেখতো কী করলে আমার অবস্থা।”-এই বলে নিজের পৃষ্ঠখানি রামচন্দ্রের সম্মুখে ধরলেন। আর রামচন্দ্র কবিরাজ দেখলেন তাঁর বান্ধব নরোত্তমের পৃষ্ঠ ফুলে গিয়েছে প্রহারে। নিজের পৃষ্ঠের প্রতিটি আঘাত নরোত্তম ঠাকুরের পৃষ্ঠে পড়েছে। সকল বেদনা তাঁর বান্ধব নিজের শরীরে ধারণ করেছেন। তখন উভয়ের ক্রন্দন আর থামে না। এমন বন্ধুপ্রীতি যে ইহজগতের ঘটনা নয়। ভাবের আবেশে ভাববিহ্বল তনু-মন-প্রাণ একাত্ম হয়ে ভূমিতে গড়াগড়ি করে বিস্তর ক্রন্দন করলেন। “দোঁহে গলাগলি কান্দে ভূমি গড়ি যায়। দুইজনে হেন প্রীতি জানে গোরারায়।।” (ঐ)।
{ ‘শ্রীগুরুকৃপার দান’ গ্রন্থে, শ্রীপাদ রামদাস বাবাজী মহাশয়ের শ্রীমুখ নিঃসৃত ‘শ্রীরামচন্দ্র কবিরাজের সূচক কীৰ্ত্তনে বলা হয়েছে- “শ্রীআচার্য্য প্রিয়তম নরোত্তম প্রাণ যেন / রামচন্দ্র কবিরাজ সেই। … গুরুবাক্যে নিষ্ঠা তাঁর (রামচন্দ্র-র) ত্রিভুবনে পরচার/ এই বাক্য হয় সুপ্রমাণ…. যদি গুরুপদে হয় রতি তুলনা নাহিক কতি/ শুনহ সে অপূৰ্ব্ব কথন/ একদিন শ্রীআচার্য্য /আদেশিলেন রামচন্দ্রে/ রামচন্দ্র একবার যাও/সম্ভাষণ করে এস/বিবাহিতা পত্নীসনে সম্ভাষণ করে এস./…… অপূর্ব রহস্য কথা…../ সারা নিশি করলেন আলাপন …. শ্রীগুরু-গৌর লীলা প্রসঙ্গ সারা নিশি করলেন আলাপন… নিশি পরভাত হল…. শ্রীগুরুসেবার সময় হয়েছে। চলিলেন ত্বরা করে……/ শ্রীযাজিগ্রামের পথে এসে মনে হল/ প্রভু আজ্ঞা করেছিলেন…./পুনঃরায় ফিরে গেলেন/সম্ভাষণ করলেন/রামচন্দ্রের পুরুষ অভিমান নাই / সেই স্বভাবে রামচন্দ্র করিলেন আলিঙ্গন/লাগিল রামচন্দ্র ললাটে/প্রিয়ার সিঁথির সিন্দুর লাগিল রামচন্দ্র ললাটে/ উপনীত যাজিগ্রামে/তখন নরোত্তম করছিলেন আঙ্গিনা মার্জ্জন/জিজ্ঞাসেন রামচন্দ্রে/ কোথা গিয়েছিলে বা এখন বা যাও কোথা / পত্নী সম্ভাষণে গিয়েছিলাম/ এখন যাই শ্রীগুরুসেবায় /(তখন) নরোত্তম আঘাত করলেন রোষভরে/রামচন্দ্রের পৃষ্ঠদেশে আঘাত করলেন রোষভরে/ সম্মার্জ্জনী লয়ে করে আঘাত করলে রোষভরে/…. আবার মধ্যাহ্নে নরোত্তমের সেবা/ করিতেছিলেন তৈল মৰ্দ্দন/শ্রীনিবাস আচার্য্যের পৃষ্ঠ-দেশে করিতেছিলেন তৈল মৰ্দ্দন/অকস্মাত্‍ দেখতে পেলেন/আচার্য্যের পৃষ্ঠ-দেশে অকস্মাত্‍ দেখতে পেলেন/আচার্য্যের পৃষ্ঠ-দেশে মার্জ্জনীর আঘাত অকস্মাত্‍ দেখতে পেলেন/মনে মনে ভাবলেন /কার অঙ্গে আঘাত করেছি/ এ তো নয় রামচন্দ্রের দেহ/নরোত্তম ব্যাকুল হলেন/অপরাধ স্খালন লাগি/ নরোত্তম করলেন মনে/এ হাত পোড়াব আগুনে নরোত্তম করলেন মনে … সে ভাব বুঝে আচার্য্য বলেন মনে মনে……এ দেশে বিচার নাই বাপ রে বাপ। দিনে মারে ঝাঁটার বাড়ী রাত্রে পোড়ায় হাত।।/কি সুমধুর লীলা রে/বালাই লয়ে মরে যাই/শ্রীগুরুসেবার আদর্শ শ্রীরামচন্দ্র/ শ্রীগুরুপদে আত্ম-সমর্পণের আদর্শ শ্রীরামচন্দ্র/বিকালে তাঁর পদতলে সর্ব্বোত্তমা গতি মিলে……}

এমনই হরিহর আত্মা ছিলেন নরোত্তম-কবিরাজ। যখন শ্রীনিবাস আচার্য্য শিষ্য রামচন্দ্রকে সঙ্গে নিয়ে বৃন্দাবনে গমন করলেন তখন ঠাকুর নরোত্তমের বিপ্রলম্ভ ভাব অর্থাত্‍ বিরহ ভাব আর চক্ষে দেখা যেত না। তিনি তাঁর প্রেমস্থলী নামক ভজন স্থানে ভূমিতে পড়ে অহর্নিশি বুকফাটা রোদন করতেন। বিশ্বে তাঁর মতো বন্ধুবিরহীকে সান্ত্বনাদানের কোন বস্তু বা ভাষা ছিল না। সব শূণ্য তাঁর কাছে তখন। বিরহালনে দগ্ধ হৃদয় হয়ে কী মর্মবিদরী পয়ার লিখলেন-‘রামচন্দ্র কবিরাজ সেই সঙ্গে মোর কাজ /তাঁর সঙ্গ বিনা সব শূণ্য। যদি হয় জন্ম পুনঃ তাঁর সঙ্গ হয় যেন /তবে হয় নরোত্তম ধন্য।। (প্রেমভক্তিচন্দ্রিকা-১১৮)। এখানে ‘সেই সঙ্গে মোর কাজ’ বলতে রামচন্দ্র কবিরাজের মতো ভক্তবন্ধুর সঙ্গপ্রসঙ্গে তিনি যে ভগবত্‍মাধুরী ও কৃষ্ণপ্রেমরস আস্বাদন করতেন তার কথা বলেছেন। আবার নিজের প্রেমভক্তির প্রতি সন্দেহ প্রকাশ করে, ভক্তির অতৃপ্তি স্বভাববশতঃ যারপরনাই দৈন্য ভরে ভেবেছেন হয়তো তাঁকে আবার জন্ম নিতে হবে। আর তখন যদি রামচন্দ্র কবিরাজের মতো ভক্তের সঙ্গ পান তখনই তাঁর জীবন ধন্য হবে। তাঁর পুনঃ প্রার্থনাতেও তাঁকে লিখতে দেখা যায় “রামচন্দ্র সঙ্গ মাগে নরোত্তম দাস।” এ হেন অন্তরে সুহৃদ, পরমপ্রেমিক রামচন্দ্র। কবিরাজের মতো বান্ধব-বিরহে শ্রীল নরোত্তম ঠাকুর তাই লিখেছেন– “তাঁর সঙ্গ বিনা সব শূণ্য ।’ তাইতো — “কৃষ্ণ-ভক্ত বিরহ বিনা দুঃখ নাহি আর” ।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

মেয়ে রা কেনো পায়ে নুপুর পরে? এর আধ্যাত্মিক, বৈজ্ঞানিক ও স্বাস্থ্যকর কি কি গুণ রয়েছে?

ভারতীয় ও বাংলাদেশী সংস্কৃতিতে মেয়েরা ও মহিলাদের দ্বারা পরিধান করা নূপুর, যাকে নূপুরও বলা হয়, তার তাৎপর্য সম্পর্কে এখানে একটি বিস্তৃত নিবন্ধ দেওয়া হল:

নূপুরের সাংস্কৃতিক তাৎপর্য—

নূপুর, যাকে নূপুর বা পায়েল নামেও পরিচিত, হাজার হাজার বছর ধরে ভারতীয় ও বাংলাদেশী সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। নূপুর পরার ঐতিহ্য সিন্ধু সভ্যতার প্রায় ২৫০০ অব্দে শুরু হয়। বাঙালি সংস্কৃতিতে, নূপুরকে নারীদের পোশাকের একটি অপরিহার্য অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, বিশেষ করে বিবাহ এবং উৎসবের মতো বিশেষ অনুষ্ঠানে।

নূপুরের আধ্যাত্মিক তাৎপর্য—

হিন্দু ধর্মে, নূপুরে আধ্যাত্মিক শক্তি থাকে বলে বিশ্বাস করা হয় যা পরিধানকারীর চক্রের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। নূপুরের শব্দ একটি প্রশান্তিদায়ক প্রভাব তৈরি করে, চাপ এবং উদ্বেগ হ্রাস করে বলে মনে করা হয়। কিছু হিন্দু ঐতিহ্যে, নূপুরকে অশুভ আত্মাদের তাড়াতে এবং সৌভাগ্য বয়ে আনতে বিশ্বাস করা হয়।

নুপুরের বৈজ্ঞানিক উপকারিতা—-

যদিও নুপুরের সুনির্দিষ্ট উপকারিতা সম্পর্কে চূড়ান্ত বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই, কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে নুপুর পরা ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার উপর সূক্ষ্ম প্রভাব ফেলতে পারে। উদাহরণস্বরূপ:

– নুপুরের শব্দ একটি শান্ত প্রভাব তৈরি করতে পারে, চাপ এবং উদ্বেগ হ্রাস করতে পারে।

– নুপুরের মৃদু নড়াচড়া পায়ে রক্ত ​​সঞ্চালনকে উদ্দীপিত করতে পারে।

পায়ের উপর নুপুরের চাপ নির্দিষ্ট চাপ বিন্দুকে উদ্দীপিত করতে পারে, শিথিলতা বৃদ্ধি করে এবং ব্যথা হ্রাস করে।

নুপুরের স্বাস্থ্য উপকারিতা—

বিকল্প চিকিৎসার কিছু অনুশীলনকারী বিশ্বাস করেন যে নুপুর পরার বেশ কয়েকটি স্বাস্থ্য উপকারিতা থাকতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে:

– চাপ এবং উদ্বেগ হ্রাস
– রক্ত ​​সঞ্চালন উন্নত করা
– ব্যথা এবং প্রদাহ উপশম করা
– শিথিলতা এবং প্রশান্তি প্রচার করা

নকশা এবং উপকরণ—-

নুপুর সহজ থেকে জটিল বিভিন্ন ডিজাইনে আসে এবং রূপা, সোনা, তামা এবং এমনকি কাঠের মতো বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে তৈরি। কিছু আধুনিক ডিজাইনে পুঁতি, পাথর এবং অন্যান্য সাজসজ্জার উপাদান অন্তর্ভুক্ত থাকে। উপাদান এবং নকশার পছন্দ প্রায়শই উপলক্ষ, ব্যক্তিগত পছন্দ এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উপর নির্ভর করে।

উপসংহার—

পরিশেষে, নূপুর ভারতীয় ও বাংলাদেশী সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা সৌন্দর্য, নারীত্ব এবং বৈবাহিক মর্যাদার প্রতীক। যদিও এর আধ্যাত্মিক ও বৈজ্ঞানিক উপকারিতা ব্যাপকভাবে নথিভুক্ত করা হয়নি, তবুও নূপুর পরার প্রথা হাজার হাজার বছর ধরে ভারতীয় ও বাংলাদেশী সংস্কৃতির একটি লালিত অংশ।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

স্বর্ণযুগের অন্যতম দাপুটে অভিনেত্রী সুপ্রিয়া দেবী, বাংলা চলচ্চিত্র জগতের এক বর্ণময় চরিত্র।।।

সুপ্রিয়া দেবী (৮ জানুয়ারী, ১৯৩৩), একজন বাঙালী অভিনেত্রী, যিনি বাংলা চলচ্চিত্রে ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে অভিনয় করেন। তার আসল নাম কৃষ্ণা এবং ডাকনাম বেনু। উত্তম কুমারের সঙ্গে ‘বসু পরিবার’ ছবিতেই বড় পর্দায় তাঁর আত্মপ্রকাশ। ‘মেঘে ঢাকা তারা’ ছবিতে তাঁর অনবদ্য অভিনয় এখনও সবার হৃদয়ে গেঁথে রয়েছে ৷ মোট ৪৫টি ছবিতে তিনি অভিনয় করেন
সুপ্রিয়া দেবী মায়ানমারের মিয়িত্‌কিনায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা বিখ্যাত আইনজীবী গোপাল চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, বার্মায় বসবাসরত অনেক ভারতীয় ভারতে চলে আসেন। সুপ্রিয়া দেবীর পরিবার শেষ পর্যন্ত দক্ষিণ কলকাতায় বসবাস শুরু করেন।

সুপ্রিয়া দেবী তার বাবার নির্দেশিত দুটি নাটকে অভিনয় করে সাত বছর বয়সে তার অভিনয়ে আত্মপ্রকাশ করেন।  তিনি ছোটবেলা থেকেই নাচের প্রতি খুব আগ্রহী ছিলেন, এমনকি তিনি থাকিন নু থেকে একটি পুরস্কার জিতেছিলেন।  শৈশবকাল থেকেই তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন নীহার দত্ত, যিনি গুহ ঠাকুরতা পরিবারের একজন সদস্যকে বিয়ে করেছিলেন এবং মিসেস নীহার গুহ ঠাকুরতা নামে পরিচিত ছিলেন, যিনি সেই সময়ে বার্মার একজন বিশিষ্ট সমাজসেবী ছিলেন।
১৯৪৮ সালে, ব্যানার্জি পরিবার ভালোর জন্য কলকাতায় পুনর্বাসিত হয়।  তারা ১৯৪২ সালে শরণার্থী শিবিরে বসবাস করত, যখন জাপান জোরপূর্বক বার্মা দখল করে।  যুবতী সুপ্রিয়া ও তার পরিবার জোর করে পায়ে হেঁটে কলকাতায় ফিরতে বাধ্য হয়।
কলকাতায়, তিনি তার নাচের প্রশিক্ষণ অব্যাহত রাখেন এবং গুরু মুরুথাপ্পান এবং পরে গুরু প্রহ্লাদ দাসের কাছ থেকে নৃত্যের প্রশিক্ষণ নেন।  সুপ্রিয়া দেবী এবং তার পরিবারের সাথে বিখ্যাত অভিনেত্রী চন্দ্রাবতী দেবীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল।

১৯৫৪ সালে, সুপ্রিয়া দেবী বিশ্বনাথ চৌধুরীকে বিয়ে করেন এবং পরে তাদের একমাত্র কন্যা সোমা জন্মগ্রহণ করেন।  ১৯৫০ এর দশকের শেষের দিকে একটি বিখ্যাত চলচ্চিত্র দিয়ে ফিরে আসার আগে তিনি কিছু সময়ের জন্য চলচ্চিত্র থেকে অবসর নিয়েছিলেন।
নানা চরিত্র, সে সব চরিত্রের বৈচিত্রময়তা সুপ্রিয়া দেবীকে বসিয়েছে এক ভিন্ন আসনে। এর মধ্যে বহু ছবিতেই তাঁর বিপরীতে ছিলেন বাংলা ছায়াছবির আর এক কিংবদন্তি অভিনেতা উত্তম কুমার। তাঁর সঙ্গে সমান তালে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করাটা বড় সহজ কথা নয়। কিন্তু সুনিপুণ দক্ষতায় দু’জনের এক আশ্চর্য রসায়ন তৈরি হয়েছিল পর্দায়। এএর পর তাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে।  তারপর থেকে তারা বহু বছর ধরে একসাথে থাকতেন।

তাঁর চলচ্চিত্র সমূহ —–

দেবদাস, দুই পুরুষ, সন্ধ্যা রাগ, সন্ন্যাসী রাজা, যদি জানতেম, বাঘবন্দী খেলা, বনপলাশীর পদাবলী, চিরদিনের, দ্য নেমসেক, একটী নদীর নাম, শেষ ঠিকানা, মন নিয়ে, চৌরঙ্গি, তিন অধ্যায়, কাল তুমি আলেয়া, শুধু একটি বছর, হানিমুন, ইমান কল্যাণ, কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী, আপ কি পরিছাঁইয়া, দূর গগন কি ছাঁও মে, লাল পাত্থর, বেগানা, নতুন ফসল, শুন বর নারী, বসু পরিবার, সূর্য শিখা, কোমল গান্ধার, মধ্য রাতের তারা, মেঘে ঢাকা তারা। এত অজস্র চরিত্রের মধ্যেও সুপ্রিয়া চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন ঋত্বিক ঘটকের ছবি ‘মেঘে ঢাকা তারা’ ও ‘কোমলগান্ধার’-এ তাঁর কাজের জন্য। বাঙালির বড় আপন এই অভিনেত্রী বেঁচে থাকবেন তাঁর অভিনীত চরিত্রগুলির মধ্যেই।

তিনি ২০১১ সালে বঙ্গভূষণ পুরস্কার অর্জন করেন, যা পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ বেসামরিক উপাধি। ২০১৪ সালে বাংলা চলচ্চিত্রে তার অবদানের জন্য ভারত সরকার সুপ্রিয়া দেবীকে, ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার “পদ্মশ্রী” তে ভূষিত করেন।

২০১৮ সালের ২৬ জানুয়ারি এই মহান অভিনেত্রী কলকাতায় ৮৫ বছর বয়সে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। টলিউড ইন্ডাষ্ট্রির কাছে তিনি সকলের প্রিয় ‘বেনু দি’। কিংবদন্তি অভিনেত্রীর অভিনয় ক্যারিশ্মা নিয়ে আলোচনা নেহাতই বাতুলতা। তিনি চলে গিয়েছেন ছয় বছর হল৷ তবে সিনেপ্রেমী বাঙালির মননে তিনি থেকে যাবেন আজীবন।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

আঙুরবালা, বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী ও মঞ্চাভিনেত্রী – প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

আঙুরবালা (১৯ অগস্ট, ১৯০০ – ৭ জানুয়ারি, ১৯৮৪) ছিলেন একজন বিশিষ্ট ভারতীয় বাঙালি কণ্ঠশিল্পী ও মঞ্চাভিনেত্রী। নজরুলগীতিতেও তার সমধিক প্রসিদ্ধি ছিল।

 

জন্ম ও পরিবার—–

 

তার পিতৃদত্ত নাম ছিল প্রভাবতী দেবী। তার জন্ম কলকাতার কাশিপুরে। পিতার নাম বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁদের নিবাস ছিল বর্ধমানের ইন্দাসে।

 

শিক্ষাজীবন—–

 

মেধাবী ছাত্রী হিসেবে স্কুলে ছাত্রিবৃত্তি পরীক্ষায় জলপানি লাভ। সঙ্গীত প্রতিভা তার সহজাত। সুকণ্ঠের অধিকারী হওয়ায় শৈশবেই সঙ্গীত সাধনায় আত্মনিয়োগ করেন। সাত বৎসর বয়সে পিতৃবন্ধু অমূল্য মজুমদারের কাছে গানে দীক্ষা। খেয়াল, ঠুংরি, দাদরা ও গজলে একাধিক গুণী ওস্তাদের কাছে তামিল গ্রহণ। কিশোরী বয়সেই গ্রামোফোন কোম্পানি থেকে গানের রেকর্ড প্রকাশ। তার প্রথম গানের রেকর্ড- ‘ বাঁধ না তরীখানি আমার এ নদীকূলে’। তার সঙ্গীত জীবনের উপর উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন জিৎপ্রসাদ, রামপ্রসাদ মিত্র, ঈষাণ ঠাকুর, জমীরুদ্দিন খাঁ এবং কাজী নজরুল ইসলাম। ঈষাণ ঠাকুরের কাছে কীর্তন, জমীরুদ্দিন খাঁর কাছে গজল ও দাদরা এবং কাজী নজরুল ইসলামের কাছে নজরুল গীতি শিখেন। অজস্র বাংলা, হিন্দি ও উর্দু গানে কণ্ঠদান করেন। তার গাওয়া রেকর্ডের সংখ্যা আনুমানিক পাঁচশত। তার রবীন্দ্র সংগীতের রেকর্ডও আছে। অভিনেত্রী হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেন। মিনার্ভা থিয়েটারের সংগে জড়িত থেকে অসংখ্য নাটকে অভিনয় করেন। তার অভিনীত একটি ছবির পরিচালক ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। সংগীত শিল্পী হিসাবে বহু রাজা-মহারাজার দ্বারা আমন্ত্রিত হয়েছেন।

 

সম্মাননা——

 

১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিলিট এবং ভারত সরকারের সঙ্গীত নাটক অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেছিলেন।

 

মৃত্যু—–

 

তিনি ৭ জানুয়ারি ১৯৮৪ সালে মারা যান।

 

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

স্মরণে, ভারতীয় বাঙালি সঙ্গীতশিল্পী রেণুকা দাশগুপ্ত।

রেণুকা দাশগুপ্ত (২২ আগস্ট ১৯১০ — ১ জানুয়ারি ১৯৯১) একজন বাঙালি গায়িকা ছিলেন, যিনি অতুলপ্রসাদ সেনের সেরা পরিচিত গায়িকা হিসেবে বিবেচিত ছিলেন। তিনি অতুলপ্রসাদ সেন, কাজী নজরুল ইসলাম ও দিলীকুমার রায়ের সরাসরি শিষ্য ছিলেন।

রেণুকা দাশগুপ্ত পশ্চিমবঙ্গের কোন্ননগরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি গয়া, ঢাকা ও কলকাতায় বসবাস করতেন। তিনি সাহানা দেবী, অতুলপ্রসাদ সেন, কনক বিশ্বাসের খুডতুতো ভাই। রেণুকা দাশগুপ্ত ১৯২০ এর দশকের শেষদিকে ঢাকায় টিকাটুলিতে কামরুন্নেসা গার্লস হাই স্কুলে সঙ্গীত শিক্ষা নেন। তিনি হীরেন্দ্র চন্দ্র দাশগুপ্তকে বিয়ে করেন। তিনি ১৯৩০ দশকের প্রথম দিকে ভারতীয় প্রকৌশল বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিবিদ্যা প্রতিষ্ঠান, শিবপুরে স্নাতক প্রকৌশলী সম্পূর্ণ করেন এবং কলকাতায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। তিনি কলকাতার বিমান বাহিনীর রেডিও অডিশন কমিটির সাথে যুক্ত ছিলেন।

প্রারম্ভিক কাজ–

তের বৎসর বয়সে রেণুকা প্রথম শ্যামাসংগীতের রেকর্ড করেন। অধিকাংশ রেকর্ড ছিল কীর্তনের। তার কণ্ঠে গীত অতুলপ্রসাদী- পাগলা মনটারে তুই বাঁধ এবং কীর্তনগান – যদি গোকুলচন্দ্র ব্রজে নাহি এল এক সময় বাংলা গানে আলোড়ন এনেছিল। রবীন্দ্রসঙ্গীত ও নজরুল গীতিতে তিনি স্বাচ্ছন্দ্যে ছিলেন। তবে একসময় খ্যাতির অন্তরালে চলে যান।

রবীন্দ্রসংগীত—-

দিনের পরে দিন যে ছিল (১৯৩৫)

আমার কি বেদনা (১৯৩৫)

বসন্তে বসন্তে তোমার কবিরে দাও ডাক

কত কথা তারে ছিল বলিতে

তোমার সুরের ধারা ঝরে যেথায়।

 

নজরুলগীতি–

 

কোন রস-যমুনার কূলে

শুকসারী সম তনুমন মম।

 

অতুল প্রসাদ—

 

পাগলা মনটারে তুই বাঁধ (১৯৩২)

এমনও বাদলে তুমি কোথা

নিদ নাহি আখিপাতে

এসো দুজনে খেলি

ওহে জগৎ কারণ (১৯৬৯/৭০)

চাঁদনী রাতে

আমর চোখ বেঁধে ভবের খেলায়

যদি তোর হৃদ-যমুনা

কে গো গাহিলে

ওগো সাথি মম সাথি

শুকতারা তোমার ছলো ছলো আখি

আমারও প্রাণ কোথা যায়

সে ডাকে আমারে

কি আর চাহিব বল

তব অন্তরও এত মন্থর

শ্রাবণ ঘনঘটা

আজ আমার শূন্য ঘরে

ক্রন্দসী পথচারিণী।

 

অন্যান্য গান (তালিকা অসম্পূর্ণ)—-

 

যদি গোকুলচন্দ্র ব্রজে না এলো – কীর্তন

আয়ে ভিকরিন প্রেম নাগর কি

কী রূপ দেখিনু কালা – জ্ঞানদাস – কীর্তন

দিনে দিনে দিন যে চলে যায় – ভাটিয়ালী

নন্দনান্দন চন্দে চন্দনা – কীর্তন

মাধব তুনু রাহালি আবার মধুপুর – কীর্তন

ক্ষমিও হে শিব।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This