Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

স্মরণে, ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেত্রী সুমিতা সান্যাল।।।।

ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেত্রী সুমিতা সান্যাল ছিলেন একজন বিখ্যাত ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্র অভিনেত্রী যিনি তার চিত্তাকর্ষক উপস্থিতি এবং ব্যতিক্রমী প্রতিভা দিয়ে রূপালী পর্দায় মুগ্ধ করেছেন ৯ অক্টোবর, ১৯৪৫ সালে কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গে জন্মগ্রহণ করেন, সুমিতা ১৯৬০ এর দশকের শুরুতে তার অভিনয় জীবন শুরু করেন এবং দ্রুত বাংলা চলচ্চিত্রে একটি ঘরোয়া নাম হয়ে ওঠেন।সুমিতা সান্যাল হিন্দি সিনেমায় তার কাজের জন্য পরিচিত।

তিন দশকেরও বেশি সময়ব্যাপী ক্যারিয়ারের সাথে, সুমিতা ৫০টিরও বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন, সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন এবং তরুণ মজুমদারের মতো প্রশংসিত পরিচালকদের সাথে কাজ করেছিলেন।

তিনি বিভূতি লাহার খোকাবাবুর প্রত্যবর্তন ছবিতে উত্তম কুমারের বিপরীতে আত্মপ্রকাশ করেন। পরবর্তীকালে তিনি ১৯৬০ এবং ১৯৭০ এর দশকে পরপর কিছু বাংলা চলচ্চিত্রে উপস্থিত হন। তিনি ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির দার্জিলিংয়ে মঞ্জুলা সান্যাল নামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন গিরিজা গোলকুণ্ডা সান্যাল।

কর্মজীবন—–

পরিচালক বিভূতি লাহা খোকাবাবুর প্রত্যবর্তন চলচ্চিত্রের জন্য তার নাম রেখেছিলেন সুচরিতা। এর পরে পরিচালক কনক মুখোপাধ্যায় সুমিতা নাম রাখার সিদ্ধান্ত নেন। বিখ্যাত অভিনেত্রী লীলা দেশাই সুমিতার খুব পরিচিত ছিলেন। লীলা তাকে অগ্রদূতের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। খোকাবাবুর প্রত্যবর্তন- এ সুযোগ পাওয়ার পর, তিনি দিলীপ কুমারের বিপরীতে সগিনা মাহাতো এবং বিশ্বজিৎ এবং সন্ধ্যা রায়ের পাশাপাশি কুহেলিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন। তিনি বেশ কয়েকটি হিন্দি ছবিতেও অভিনয় করেছেন, যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল ১৯৭০ সালের আনন্দ। এ ছবিটিতে অমিতাভ বচ্চনের বিপরীতে তিনি অভিনয় করেছেন। তিনি টেলিভিশন সিরিয়াল, পেশাদার মঞ্চ এবং গ্রুপ থিয়েটার “রাঙা সভা”-এ অভিনয় করেছিলেন। তিনি হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়ের গুড্ডি, আনন্দ এবং আশীর্বাদের মতো অনেক চলচ্চিত্রের অংশ ছিলেন।

ব্যক্তিগত জীবন—-

তিনি চলচ্চিত্র সম্পাদক সুবোধ রায়কে বিয়ে করেছিলেন। তাদের একটি ছেলে আছে।

বাংলা চলচ্চিত্র—–

খোকাবুর প্রত্যবর্তন, আকাশপ্রদীপ, দেয়া নেয়া, কালশর্ত, স্বর্গ হতে বিদায়, গোধুলি বেলা, অনুষ্টুপ ছন্দ, দিনান্তের আলো, প্রথম প্রেম, একই অঙ্গে এত রূপ, সুরের আগুন, কাল তুমি আলেয়া, নায়ক, শেষ তিন দিন, নূতন জীবন, অশ্রু দিয়ে লেখা, হারানো প্রেম, হঠাৎ দেখা, পঞ্চসার, আপনজন, চিরদিনের, চেনা অচেনা, তিন ভূবনের পারে, মায়া, সাগিনা মাহাতো, নিশাচর, অন্য মাটি অন্য রং, কুহেলি,নতুন সূর্য, জীবন নিয়ে, জবাব, শ্রীমতী।

হিন্দি চলচ্চিত্র——–

আশির্বাদ, আনন্দ, গুড্ডি, মেরে আপনে, ময়ূর বসন্ত।
সুমিতার প্রতিভা অভিনয়ের বাইরেও প্রসারিত হয়েছিল, কারণ তিনি একজন দক্ষ নৃত্যশিল্পী এবং গায়িকাও ছিলেন। বাংলা চলচ্চিত্রে তার অবদান মর্যাদাপূর্ণ বেঙ্গল ফিল্ম জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অ্যাওয়ার্ড সহ অসংখ্য পুরষ্কার এবং প্রশংসার সাথে স্বীকৃত হয়েছে।

সুমিতা সান্যালের উত্তরাধিকার প্রজন্মের অভিনেতা এবং চলচ্চিত্র উত্সাহীদের অনুপ্রাণিত করে চলেছে, ভারতীয় চলচ্চিত্রের সবচেয়ে প্রিয় এবং সম্মানিত অভিনেত্রীদের একজন হিসাবে তার স্থানকে সিমেন্ট করে। ৯ জুলাই, ২০১৭, লেক গার্ডেনস, কলকাতায় তিনি প্রয়াত হন।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

পরিবেশ বন্ধু কিঙ্করী দেবী : সৌরভকুমার ভূঞ্যা।।।।।।

পেশায় তিনি ছিলেন ঝাড়ুদার। জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছে জঞ্জাল সাফ করে। শিক্ষার আলোক-বঞ্চিত নিরক্ষর এই গ্রাম্য মহিলা তার সীমাবদ্ধতার গণ্ডী ছাড়িয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন এক অসম লড়াইয়ে যাতে করে সমাজ থেকে অপরাধ নামক জঞ্জাল কিছুটা অত্যন্ত দূর করা যায়। পদে পদে বাধা এসেছে। প্রাণ সংশয় হয়েছে।

হার মানেননি তিনি, পালিয়ে আসেনি যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে। অবশেষে সাফল্যের জয়মাল্য গলায় পরে প্রমাণ করে দিয়েছেন লক্ষ্য যদি মহৎ হয় আর সঙ্গে যদি থাকে জেদ, হার-না-মানা মানসিকতা ও আন্তরিক প্রচেষ্টা তাহলে সাফল্য একদিন না একদিন ধরা দিতে বাধ্য। এই দুঃসাহসিক প্রয়াস তাঁকে ইতিহাসে সম্মানের স্থান দিয়েছে। বর্তমানে পরিবেশ সংক্রান্ত আলোচনায় হয়তো সেভাবে উঠে আসে না তাঁর নাম, তাই বলে তাঁর কৃতিত্বকে কোনোভাবেই খাটো করা যায় না। পরিবেশ বন্ধু এই মহৎ-প্রাণা মহিলা হলেন কিঙ্করী দেবী।
১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে হিমাচল প্রদেশের ঘাতোন গ্রামে এক গরিব দলিত পরিবারে তার জন্ম। তাঁর বাবা কালিয়া রাম ছিলেন সামান্য কৃষক। আর্থিক অনটন ও এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাবের কারণে কিঙ্করী দেবী পড়াশোনা করার সুযোগ পাননি। জীবনের প্রায় শেষদিকে এসে তিনি কেবল নিজের নামটুকু সই করতে শিখেছিলেন। অভাবে কারণে শৈশবে তিনি অপরের বাড়িতে কাজ করতেন। মাত্র চোদ্দ বছর বয়সে তার বিয়ে হয় শানু রামের সঙ্গে। শানু পেশায় ছিল শ্রমিক। কিঙ্করী দেবীর বয়স যখন বাইশ বছর তখন টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে শানু রাম মারা যায়। শুরু হয় কিঙ্করীর জীবন যুদ্ধের আর এক নতুন অধ্যায়। স্বামীহারা, অসহায় বিধবা সংসার প্রতিপালনের জন্য ঝাড়ুদারের কাজ করতে শুরু করেন। এক্ষেত্রে আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতোই হতে পারত তাঁর জীবন। কিন্তু তা হয়নি, কেননা তাঁর ভাবনা ছিল সাধারণের থেকে একটু আলাদা।
কিঙ্করী দেখেন খনি মালিকদের অনিয়ন্ত্রিত খনন ও মাফিয়াদের দৌরাত্ম্যে হিমাচল প্রদেশের পাহাড়ি এলাকা তার সৌন্দর্য হারাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জল সরবরাহ ব্যবস্থা, ধ্বংস হচ্ছে চাষযোগ্য জমি। এসব দেখে তিনি স্থির থাকতে পারেন না। শপথ নেন এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার। প্রথমে তিনি স্থানীয়ভাবে প্রতিবাদ শুরু করেন। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয় না। তখন তিনি আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। People’s Action for People in Need নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তাঁর পাশে এসে দাঁড়ায়। সিমলা হাইকোর্টে তিনি ৪৮ জন খনি শ্রমিকের বিরুদ্ধে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন। সময় এগোতে থাকে কিন্তু মামলার কোনো অগ্রগতি হয় না। এর প্রতিবাদে হাইকোর্টের সামনে ১৯ দিন অনশনে বসেন তিনি। ব্যাপারটা রাজ্য ছাড়িয়ে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে সাড়া ফেলে দেয়। ফলস্বরূপ তাঁর দায়ের করা মামলার বিচার শুরু হয়। ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে সিমলা হাইকোর্ট রাজ্যে খনন কার্যের ওপর স্থিতাবস্থা (Stay Order) জারি করেন এবং সেই সঙ্গে সঙ্গে পাহাড়ি এলাকায় বিস্ফোরণের ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞাজারি করেন। খনি মালিকরা এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টে যান। এই সময় কিঙ্করী দেবীকে ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে সময় কাটাতে হয়েছে। অবশেষে ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে সুপ্রিমকোর্ট তার পক্ষে রায় দেন।
এক অতি সাধারণ, তথাকথিত অশিক্ষিত মহিলার এই লড়াই মুগ্ধ করেছিল আমেরিকার তৎকালীন ফার্স্ট লেডি হিলারি ক্লিনটনকে। ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে বেজিং-এ বসেছিল আন্তর্জাতিক মহিলা সম্মেলন (International Women Conference)। হিলারি ক্লিনটনের উদ্যোগে কিঙ্করী দেবী শুধু এখানে আমন্ত্রিতই হননি, প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে ওই সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদবোধন করার গৌরব লাভ করেন। বন ও পরিবেশ রক্ষায় তার বিশেষ অবদানের জন্য ২০০১ খ্রিস্টাব্দে ভারতবর্ষের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাকে ঝাঁসি রানি ন্যাশন্যাল সম্মানে সম্মানিত করেন।
পরিবেশের লড়াইয়ের পাশাপাশি নিজের জেলায় একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করার জন্য তিনি লড়াই করেছিলেন। আসলে তিনি চাননি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাবে অন্যান্যদের অবস্থা তার মতো হোক। তার নিজের কথায়, “পড়াশোনা করার সৌভাগ্য আমার হয়নি, কিন্তু আমি চাইনি পড়াশোনার অভাবে আমাকে যে কষ্ট ভোগ করতে হয়েছে তা অন্যদেরকে ভোগ করতে হোক।” দীর্ঘ তিন বছর তিনি লড়াই চালিয়ে যান। অবশেষে ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে রাজ্য সরকার তাঁর এলাকায় একটি ডিগ্রি কলেজ স্থাপন করেন। ২০০৭ খ্রিস্টাব্দের ৩০ ডিসেম্বর দীর্ঘ্য রোগভোগের পর তিনি মারা যান।
মানুষ যতই বিজ্ঞানকে করায়ত্ব করুক না কেন, একথা বাস্তব পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হলে অস্তিত্ব সংকটের মুখোমুখি হবে। যা বর্তমানে এক ভয়ংকর বার্তা নিয়ে হাজির। তাই শুধু সরাকরি নয়, সচেতনতা দরকার সাধারণ মানুষের মধ্যেও, যেমনটা আমরা দেখতে পাই কিঙ্করী দেবীর মধ্যে। নিরক্ষর, অল্প বয়সে বিধবা, অত্যন্ত গরিব একজন মহিলা সমস্ত রকম প্রতিবন্ধকতা সঙ্গে নিয়ে পরিবেশ রক্ষায় একপ্রকার নিজের জীবন বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। তার জন্য কোনো প্রশংসাই যথেষ্ঠ নয়। তিনি প্রমাণ করে দিয়েছেন একেবারে সাধারণ সমাজের চোখে তথাকথিত অস্পৃশ্য মহিলারাও অনেক বৃহৎ কাজ করতে পারেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে পরিবেশ বন্ধু হিসাবে অন্যান্যদের নাম যতটা শোনা যায় সেভাবে শোনা যায় না কিঙ্করী দেবীর নাম। অনেকে তো তাঁর নামটাই জানেন না। এটা আমাদের লজ্জা। আজকের সময়ে এইরকম মহৎ-প্রাণা মানুষদের শ্রদ্ধায় স্মরণ করার দরকার আছে।

তথ্যসূত্র – উইকিপিডিয়া

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

আধুনিক বিশ্বের প্রথম সত্যিকারের বিখ্যাত নারী বিজ্ঞানী -মারি ক্যুরি, যিনি নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।।।।।

মেরি কুরি ছিলেন আধুনিক বিশ্বের প্রথম সত্যিকারের বিখ্যাত নারী বিজ্ঞানী । তেজস্ক্রিয়তা সম্পর্কে গবেষণায় তাঁর অগ্রণী কাজের জন্য তিনি “আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের মা” হিসাবে পরিচিত ছিলেন , একটি শব্দ যা তিনি তৈরি করেছিলেন। তিনি ছিলেন পিএইচডি প্রাপ্ত প্রথম মহিলা। ইউরোপের গবেষণা বিজ্ঞানে এবং সোরবনে প্রথম মহিলা অধ্যাপক।

মাদাম কুরী একবার নয় , দু’বার বিজ্ঞান গবেষণায় অনন্যসাধারণ কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ যে মহীয়সী নারী নোবেল পুরস্কারে ধন্য হয়েছিলেন । বিশ্বের কোনো নারীর ভাগ্যে এমনটি আর ঘটেনি । এমন কি দু’বার নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন একই ক্ষেত্রে , এমন নজির বিশ্বে বিরল । কুরি পলোনিয়াম এবং রেডিয়াম আবিষ্কার করেন এবং বিচ্ছিন্ন করেন এবং বিকিরণ এবং বিটা রশ্মির প্রকৃতি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ১৯০৩ (পদার্থবিদ্যা) এবং ১৯১১ (রসায়ন) নোবেল পুরস্কার জিতেছিলেন এবং নোবেল পুরস্কারে ভূষিত প্রথম মহিলা এবং দুটি ভিন্ন বৈজ্ঞানিক শাখায় নোবেল পুরস্কার জয়ী প্রথম ব্যক্তি ছিলেন তেজস্ক্রিয়তা গবেষণা এবং পোলোনিয়াম এবং রেডিয়াম আবিষ্কার। তিনি ছিলেন প্রথম মহিলা যিনি নোবেল পুরস্কার জিতেছিলেন এবং প্রথম ব্যক্তি যিনি দ্বিতীয় নোবেল পুরস্কার জিতেছিলেন, এ জন্যে তাঁকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী বলা হয়ে থাকে ।
জীবনের শুরুতে দুঃখ দারিদ্র্য আর প্রিয় ব্যক্তিকে কাছে পাওয়ার মর্মবেদনায় যিনি আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন , বলেছিলেন এই ঘৃণিত পৃথিবী থেকে বিদায় নিলে ক্ষতি খুব সামান্যই হবে – সেই অভিমানী তরুণীটিই নিজের প্রচেষ্টায় পরবর্তীকালে হয়েছিলেন জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানী এবং বিশ্বের সর্বকালের সেরা মানুষদের একজন ।
মারি ক্যুরি ১৮৬৭ সালের ৭ই নভেম্বর পোল্যান্ডের ওয়ারশতে জন্মগ্রহণ করেন, যেটি তখন রাশিয়ান সাম্রাজ্যের অংশ ছিলো। মারি কুরি ওয়ারশর গোপন ভাসমান বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেছিলেন এবং ওয়ার্সাতেই তার ব্যবহারিক বৈজ্ঞানিক প্রশিক্ষণ শুরু করেছিলেন। ১৮৯১ সালে ২৪ বছর বয়সে সে তাঁর বড় বোন ব্রোনিস্লাভাকে অনুসরণ করে প্যারিসে পড়তে যান। সেখানেই সে তার পরবর্তি বৈজ্ঞানিক কাজ পরিচালিত করেছিলেন। ১৯০৩ সালে মারি কুরি তাঁর স্বামী পিয়েরে কুরি এবং পদার্থবিদ হেনরি বেকেরেলের সাথে পদার্থ বিদ্যায় নোবেল পুরস্কার জেতেন। তিনি এককভাবে ১৯১১ সালে রসায়নেও নোবেল পুরস্কার জেতেন।
পদার্থবিজ্ঞানে তিনি নোবেল পান তেজষ্ক্রিয়তা নিয়ে কাজ করার জন্য। আর রসায়নে নোবেল পান পিচব্লেন্ড থেকে রেডিয়াম পৃথক করার জন্য।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় হাসপাতালগুলোতে এক্স-রের সরঞ্জামের ঘাটতি ছিল। যুদ্ধাহত রোগিদের এক্স রে সঠিকভাবে করানোর অর্থ যোগাতে তিনি তহবিল সংগ্রহে নামেন। এসময় অসুস্থ শরীর নিয়ে তিনি ২২০ টি রেডিওলোজি স্টেশন গড়ে তোলেন। এর মধ্যে ২০০ টি ছিল বিভিন্ন জায়গায় স্থায়ী ছিল, এবং ২০ টি ছিল ভ্রাম্যমাণ। এগুলো তিনি বিভিন্ন ধনী মহিলাদের কাছ থেকে গাড়ি ধার নিয়ে তৈরী করেছিলেন। তিনি নিজেও বিভিন্ন স্টেশনে এক্সেরে করতে সাহায্য করতেন এবং যুদ্ধের সময় তার গড়া এই রঞ্জনবিদ্যা ইনস্টিটিউটগুলোয় প্রায় ১০ লাখ যুদ্ধাহতের এক্স রে করা হয়েছিল।
পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারসতে নিজের গড়া রেডিয়াম ইনস্টিটিউটসহ তিনি অন্য একটি রেডিয়াম ইনস্টিটিউটে কাজ করতেন। রেডিয়াম বিষয় নিয়ে রেডিয়াম ইনস্টিটিউটে গবেষণা করে তিনি তাঁর মেয়ে ইরিন, মেয়ের স্বামী ফ্রেডরিক জুলিয়েটের সাথে যৌথভাবে নোবেল পান।
ফ্রান্সের একজন নাগরিক হিসেবে থাকা অবস্থায়ও মারি স্ক্লদভস্কা ক্যুরি (তিনি তাঁর দুটো উপাধিই লিখতেন ) তিনি কখনোই তার পোলিশ পরিচয় ভুলে যাননি। তিনি তাঁর কন্যাদের পোলিশ ভাষা শিখিয়েছিলেন এবং তাদের পোল্যান্ডে নিয়েও গিয়েছিলেন। তিনি নিজে প্রথম যে মৌলটি আবিষ্কার করেন, তাঁর জন্মভূমির নামানুসারে ঐ মৌলের নাম দেন পোলনিয়াম।
মারি ক্যুরি ইউনিভার্সিটি (প্যারিস ৬) এবং ১৯৪৪ সালে লুবলিনে প্রতিষ্ঠিত মারি ক্যুরি-স্ক্লদভস্কা ইউনিভার্সিটিকে সহযোগিতা দিয়েছিলেন। ১৯৪৮ সালে ব্রিটেনে অসুস্থতার শেষ সীমার রোগীদের জন্য মারি ক্যুরি ক্যান্সার কেয়ার আয়োজন করা হয়। মারি ক্যুরিকে উৎসর্গ করে ২টি জাদুঘর আছে। ১৯৬৭ সালে ওয়ার্সর “নিউ টাউনে” উলিকা ফ্রেটা (ফ্রেটা সড়ক) অর্থাৎ মারি ক্যুরির জন্মস্থানে মারিয়া স্ক্লদভস্কা-ক্যুরি মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠা করা হয়।প্যারিসে তাঁর গবেষণাগারটি মিউজি ক্যুরি হিসেবে সংরক্ষিত যা ১৯৯২ সালে উন্মুক্ত করা হয়।
তাঁর প্রতিকৃতি হিসেবে অনেক চিত্রকর্ম তৈরি করা হয়েছে। ১৯৩৫ সালে পোলিশ প্রেসিডেন্ট ইগান্সি মজচিকের স্ত্রী মিচালিনা মজচিকা ওয়ার্সর রেডিয়াম ইন্সটিটিউটের সামনে মারি ক্যুরির একটি প্রতিকৃতি বা মূর্তি উন্মুক্ত করেন। ১৯৪৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে নাৎসি জার্মানিদের বিরুদ্ধে ওয়ার্স জাগরণ ঘটে এবং গোলাগুলিতে প্রতিকৃতিটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যুদ্ধের পর প্রতিকৃতি ও এর পাদস্তম্ভে গুলির চিহ্ন রেখে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১৯৫৫ সালে জোযেফ মাজুর কাচ দিয়ে মারি ক্যুরির প্রতিকৃতি মারিয়া স্ক্লদভস্কা-ক্যুরি মেডালিয়ন নির্মাণ করেন যা ইউনিভার্সিটি অফ বুফালোর পোলিশ রুমের বিশেষ আকর্ষণ।
তাঁকে উৎসর্গ করে বেশকিছু জীবনী লেখা হয়। ১৯৩৮ সালে তাঁর মেয়ে ইভ ক্যুরি মাদাম ক্যুরি প্রকাশ করেন। ১৯৮৭ সালে ফ্রাঙ্কইজ গিরৌড লিখেন মারি ক্যুরি: আ লাইফ। ২০০৫ সালে বারবারা গোল্ডস্মিথ লিখেন অবসেসিভ জিনিয়াস: দ্য ইনার ওয়ার্ল্ড অফ মারি ক্যুরি । ২০১১ সালে লরেন রেডনিজ প্রকাশ করেন রেডিওএকটিভ: মারি এবং পিয়েরে ক্যুরি, এ টেল অফ লাভ অ্যান্ড ফলআউট।
১৯৪৩ সালে গ্রির গারসন এবং ওয়াল্টার পিজন অস্কারের জন্য মনোনীত আমেরিকান চলচ্চিত্র মাদাম ক্যুরি (চলচ্চিত্র)-তে অভিনয় করেন।সাম্প্রতিককালে ১৯৯৭ সালে পিয়েরে ও মারি ক্যুরির উপর একটি ফরাসি চলচ্চিত্র উন্মুক্ত করা হয় যার নাম লেস পামেস ডি এম. সুতজ। এটি একই নামে একটি লিখিত একটি নাট্যগ্রন্থের উপর রচিত। এখানে ইসাবেলে হাপার্ট মারি ক্যুরির ভূমিকা পালন করেন।
লরেন্স আরনোভিচের ”ফলস এজাম্পসন্স” নাটকে মারি ক্যুরির ভূমিকা দেখা যায়, যেখানে অন্য তিন মহিলা বিজ্ঞানীর ভূত তাঁর জীবনের ঘটনাবলী পর্যবেক্ষণ করে। সুসান মারি ফ্রন্তচজাক তাঁর এক-নারীর নাটক মানিয়া: দ্য লিভিং হিস্টোরি অফ মারি ক্যুরি-এ মারি ক্যুরিকে উপস্থাপন করেন যা ২০১৪ সাল নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রের ৩০টি রাজ্য ও নয়টি দেশে প্রদর্শন করা হয়।
বিশ্বজুড়ে বিল, ডাকটিকিট এবং মুদ্রায় ক্যুরির ছবি দেখা গেছে। পোল্যান্ডে ১৯৮০ পরবর্তী সময়ের ব্যাংকনোট জিটটিতে মারি ক্যুরির ছবি দেখা গিয়েছিল এমনকি ইউরো প্রচলনের পূর্বে ফ্রান্সের সর্বশেষ ৫০০-ফ্রাংক নোটে ক্যুরির ছবি ছিল। দারুণ বিষয় হল মালি, টোগো প্রজাতন্ত্র, জাম্বিয়া, এবং গিনি প্রজাতন্ত্রে ডাকটিকিটে পল স্ক্রোডার পরিচালিত ২০০১ সালের ছবিতে সুসান মারি ফ্রন্তচজাকের মারি ক্যুরির ভুমিকায় অভিনয়ের দৃশ্য দেখা যায়।
২০১১ সালে মারি ক্যুরির দ্বিতীয় নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির শতবর্ষ পূর্তিতে ওয়ার্সতে তার জন্মস্থানের সদর দরজায় একটি রূপক (বা প্রতীকী) দেয়ালচিত্র দেখা যায়। এতে দেখা যায় শিশু মারিয়া স্ক্লদভস্কা ক্যুরি একটি টেস্টটিউব ধরে ছিলেন যা থেকে দুইটি পদার্থ নির্গত হচ্ছিল যেগুলো তার প্রাপ্তবয়স্কে আবিষ্কারের কথা: পোলোনিয়াম এবং রেডিয়াম।
এছাড়া ২০১১ সালে ভিস্তুলা নদীর উপর নতুন একটি ওয়ার্স ব্রিজের নাম তার নামে রাখা হয়।
স্বামীর শোক এবং দীর্ঘদিনের একটানা পরিশ্রমে মাদাম কুরীর শরীর ভেঙে পড়ে । ১৯৩৪ সালের মে মাসে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং এর দু’মাস পরেই জুলাই মাসে ৬৭ বছর বয়সে পরলোক গমন করেন । জানা যায় , রেডিয়ামের তেজস্ক্রিয়তাই তার অকাল মৃত্যুর কারণ ছিলো ।
বিশ্বের বিজ্ঞানের ইতিহাসে এই মহীয়সী নারীর নাম চিরস্মরণীয় শুধু তাই নয় , প্রাতঃস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট ও বিভিন্ন ওয়েবপেজ।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

স্বর্ণকুমারী দেবী: বাংলা সাহিত্য ও সমাজ সংস্কারের অগ্রদূত।।।।

স্বর্ণকুমারী দেবী ছিলেন একজন পথপ্রদর্শক বাঙালি কবি, লেখক এবং সমাজকর্মী যিনি ভারতের সাহিত্য ও সামাজিক ল্যান্ডস্কেপে একটি অমোঘ চিহ্ন রেখে গেছেন। 28শে আগস্ট, 1855 সালে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন, তিনি ছিলেন বিশিষ্ট সংস্কারক ও দার্শনিক দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কন্যা এবং বিখ্যাত কবি ও নোবেল বিজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বোন।

স্বর্ণকুমারীর প্রাথমিক জীবন শিক্ষার প্রতি অনুরাগ এবং সমাজে পরিবর্তন আনার প্রবল ইচ্ছার দ্বারা চিহ্নিত ছিল। তিনি বাড়িতেই শিক্ষিত হয়েছিলেন, যেখানে তিনি সাহিত্য, সঙ্গীত এবং শিল্পের প্রতি গভীর ভালবাসা তৈরি করেছিলেন। তার বাবার প্রভাব তার মধ্যে সামাজিক দায়বদ্ধতার একটি দৃঢ় বোধ জাগিয়েছিল, যা তার ভবিষ্যত প্রচেষ্টাকে রূপ দেবে।

সাহিত্য কর্মজীবন—-

স্বর্ণকুমারী অল্প বয়সে লেখালেখি শুরু করেন এবং 1876 সালে তার প্রথম কবিতার সংকলন “নচঘন্টারা” প্রকাশ করেন। তার কবিতার গীতিবাদ, গভীরতা এবং প্রেম, প্রকৃতি এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের মতো বিষয়গুলির অন্বেষণ দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছিল। তিনি “কাব্যবলী” এবং “বসন্তাবলী” সহ আরও কয়েকটি সংকলন প্রকাশ করেছিলেন।
তার লেখা কবিতার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না; তিনি ছোট গল্প, উপন্যাস এবং প্রবন্ধও লিখেছেন। তার “দীপনির্বাণ” (1885) উপন্যাসটি একজন মহিলার লেখা প্রথম বাংলা উপন্যাসগুলির মধ্যে একটি। তার লেখা প্রায়ই নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা এবং সামাজিক সংস্কারের বিষয়বস্তু অন্বেষণ করে।

সামাজিক কাজ—-

সামাজিক কাজের প্রতি স্বর্ণকুমারীর অঙ্গীকার ছিল অটুট। তিনি নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে অগ্রগামী ছিলেন এবং মেয়েদের শিক্ষা ও নারী অধিকারের প্রচারে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। তিনি 1883 সালে লেডিস থিওসফিক্যাল সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন, যার লক্ষ্য ছিল নারী শিক্ষা এবং সামাজিক কল্যাণ প্রচার করা।

তিনি 1886 সালে মেয়েদের জন্য একটি স্কুল স্বর্ণকুমারী দেবী বিদ্যালয়ও প্রতিষ্ঠা করেন। বিদ্যালয়টি সুবিধাবঞ্চিত পটভূমির মেয়েদের শিক্ষা ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করে। শিক্ষা এবং সামাজিক সংস্কারে তার কাজ তার সমসাময়িকদের কাছ থেকে তাকে স্বীকৃতি এবং সম্মান অর্জন করেছে।

উত্তরাধিকার—-

বাংলা সাহিত্য ও সমাজ সংস্কারে স্বর্ণকুমারী দেবীর অবদান অপরিসীম। তিনি ভবিষ্যত প্রজন্মের নারী লেখক ও সমাজকর্মীদের জন্য পথ প্রশস্ত করেছেন। তার কবিতা এবং লেখা পাঠক ও পণ্ডিতদের অনুপ্রাণিত করে চলেছে।
তার উত্তরাধিকার সাহিত্য ও সমাজকর্মের বাইরেও প্রসারিত। তিনি একজন সত্যিকারের অগ্রগামী ছিলেন, বাধাগুলি ভেঙে দিয়েছিলেন এবং সামাজিক নিয়মগুলিকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। তার জীবন এবং কাজ উৎসর্গের শক্তি, কঠোর পরিশ্রম এবং একটি পার্থক্য করার প্রতিশ্রুতির প্রমাণ হিসাবে কাজ করে।

উপসংহারে বলা যায়, স্বর্ণকুমারী দেবী ছিলেন একজন অসাধারণ ব্যক্তি যিনি বাংলা সাহিত্য ও সমাজ সংস্কারে একটি অমোঘ চিহ্ন রেখে গেছেন। তার কবিতা, লেখা এবং সামাজিক কাজ আজও মানুষকে অনুপ্রাণিত ও প্রভাবিত করে চলেছে। তার উত্তরাধিকার সমাজে একজন ব্যক্তির প্রভাবের অনুস্মারক এবং উত্সর্গ এবং উদ্দেশ্যের সাথে নিজের আবেগ অনুসরণ করার গুরুত্ব।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

পূরবী দত্ত শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পী হলেও তিনি মূলত নজরুল গান গাওয়ার জন্য বিখ্যাত – একটি বিশেষ পর্যালোচনা।।।

পূরবী দত্ত ১৭ মার্চ ১৯৪২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন ভারতীয় গায়িকা ছিলেন। তিনি কলকাতায় থাকতেন এবং শুধুমাত্র বাংলা ভাষায় গান গেয়েছিলেন, প্রধানত নজরুলের গান গাওয়ার জন্য বিখ্যাত। পূরবী দত্ত ছিলেন প্রখ্যাত শাস্ত্রীয় কণ্ঠশিল্পী বিভূতি দত্তের মেয়ে, তাই ছোটবেলা থেকেই বাড়িতে তার প্রশিক্ষণ শুরু হয়।

১৯৪৬ সালে, মাত্র চার বছর বয়সে, তিনি চেতলা মুরারি স্মৃতি সঙ্গীত সম্মিলনী আয়োজিত সর্বভারতীয় সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন যেখানে তিনি তার গানের জন্য রৌপ্য ট্রফি জিতেছিলেন।
পূরবী দত্ত শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পী হলেও তিনি মূলত নজরুল গান গাওয়ার জন্য বিখ্যাত। তার প্রথম দিনগুলিতে তিনি কলকাতায় অল ইন্ডিয়া রেডিওর বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সাথে যুক্ত ছিলেন এবং তার সঙ্গীত জীবনের বেশিরভাগ অংশ সেখানে রেকর্ড করা হয়েছিল। যার অধিকাংশই ছিল নজরুলের গান।1950 এবং 60 এর দশকে, তিনি অল ইন্ডিয়া রেডিওর সাথে যুক্ত ছিলেন এবং বিভিন্ন প্রোগ্রামে গান গেয়েছিলেন। তিনি সারাজীবন নজরুল গীতির প্রশিক্ষণে নিঃস্বার্থভাবে আত্মনিয়োগ করেছেন। বহু বছর ধরে তিনি গড়িয়াহাটের “বাণীচক্র” এবং পরে “বেঙ্গল মিউজিক কলেজ” এর সাথে যুক্ত ছিলেন। যেখানে তিনি হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, চিন্ময় চট্টোপাধ্যায় এবং অখিলবন্ধু ঘোষের সাথে পড়াশোনা করেছেন। তিনি পণ্ডিত জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ, বিমান মুখোপাধ্যায়, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, অধীর বাগচী এবং বাংলার অন্যান্য বিশিষ্ট শিল্পী ও গায়কদের খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন।
নজরুল গীতি নিয়ে পূরবী দত্তের অ্যালবামগুলি খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। নিচে কিছু অ্যালবামের শিরোনাম উল্লেখ করা হলো——
১৯৭৪ কাজী নজরুলের গান – সারেগামা, ১৯৭৫ কাজী নজরুলের গান – সারেগামা, ১৯৮০ ভ্যালেন্টাইন স্পেশাল – বাংলা রোম্যান্টিক নজরুলগীতি, ১৯৮২ হালুদ গন্দর ফুল, ২০১৪ ছাড় ছাড় আঁচল, ২০১৪ ঝুম ঝুম ঝুমরা নাচতে, ২০১৪ শিউলি তোলে ভোরবেলা – আইএনআরইসিও।
প্রায় দেড় বছর নিজেকে সবার থেকে দূরে রাখার পর, ২০০৪ সালের এপ্রিল মাসে পূরবী দত্ত বাংলা সঙ্গীত মেলার মঞ্চে আবার আত্মপ্রকাশ করেন। তিনি দুটি গান গেয়েছিলেন:”মনে পরে আজ সে কোন জনমে” এবং তার পর “নিরন্ধ্র মেঘে মেঘে অন্ধ গগন।”
তিনি তার গড়িয়াহাটের বাড়ি থেকে চলে আসার পর এই বাড়িতে থাকতেন, জীবনের শেষ দিন অবধি। তার সোনারপুরের বাড়িতে ১ ডিসেম্বর ২০১৩ সালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

স্মরণে প্রখ্যাত ভারতীয় ব্যালে নর্তকী – অমলা শংকর।।।।

অমলা শংকর একজন ভারতীয় ব্যালে নৃত্যশিল্পী। তিনি উদয় শঙ্করের স্ত্রী, আনন্দ শংকর এবং মমতা শঙ্করের মা এবং রবি শঙ্করের ভাইঝি। উদয় শংকর পরিচালিত কল্পনা সিনেমায় অভিনয় করেন অমলা শংকর।

জীবনী—————-

অমলা শঙ্কর ১৯১৯ সালের ২৭ জুন মাগুরা জেলার বাটাজোর গ্রামে অমলা নন্দী নামে জন্মগ্রহণ করেন।

তার বাবা অক্ষয় কুমার নন্দী চেয়েছিলেন তার সন্তানরা প্রকৃতি এবং গ্রামাঞ্চলের প্রতি আগ্রহী হোক। ১৯৩১ সালে, যখন তিনি ১১ বছর বয়সে, তিনি প্যারিসে আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে গিয়েছিলেন, যেখানে তিনি উদয় শঙ্কর এবং তার পরিবারের সাথে দেখা করেছিলেন। অমলা তখন ফ্রক পরিহিতা। উদয় শঙ্করের মা হেমাঙ্গিনী দেবী তাকে শাড়ি পরিয়ে দেন। অমলা উদয় শঙ্করের নাচের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন এবং সারা বিশ্বে পরিবেশন করেছিলেন।

অভিনয় জীবন——-

অমলা শঙ্কর কল্পনা ছবিতে অভিনয় করেছিলেন।অমলা, উমার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। ছবিটি রচনা, সহ-প্রযোজনা, পরিচালনা করেছিলেন উদয় শঙ্কর, যিনি ছবিতেও উপস্থিত ছিলেন। অমলা শঙ্কর ২০১২ সালের কান চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিয়েছিলেন যেখানে ছবিটি প্রদর্শিত হয়েছিল অমলা শঙ্কর একটি সাক্ষাত্কারে বলেছিলেন- “২০১২ কান ফিল্ম ফেস্টিভাল … আমি কান ফিল্ম ফেস্টিভালের সর্বকনিষ্ঠ চলচ্চিত্র তারকা হিসাবে এসেছি… আমি ৮১ বছর পরে কানে আবার এলাম”।

পুরস্কার——–

২০১১ সালে বঙ্গবিভূষণ (নৃত্য এর জন্য) পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রদত্ত পুরস্কার। তিনি ভারত সরকারের পদ্মভূষণ সম্মানে সম্মানিত হন ( ১৯৯১ সালে )।

মৃত্যু———–

২০২০ সালের ২৪ জুলাই ১০১ বছর বয়েসে পশ্চিমবঙ্গে কলকাতায় তার মৃত্যু হয়।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব মীরা বন্দ্যোপাধ্যায় – প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।।।।

মীরা বন্দ্যোপাধ্যায়, ২৮ মার্চ, ১৯৩০ সালে উত্তর প্রদেশের মিরাটে জন্মগ্রহণ করেন, ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের একটি উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব। শৈলেন্দ্রকুমার চট্টোপাধ্যায়ের কন্যা, মীরার নামকরণ করা হয়েছিল তার জন্মস্থানের নামে। কলকাতার ৮ দেবেন সেন রোডে তার বাড়িটি ছিল বেগম আখতার, আলী আকবর খান এবং আরও অনেকের মতো সঙ্গীতের মহান ব্যক্তিদের জন্য একটি সমাবেশের স্থান, যা তাকে একটি সমৃদ্ধ সঙ্গীত পরিবেশ প্রদান করে।

অল্প বয়সে, তিনি তার বাবার অধীনে এবং পরে চিন্ময় লাহিড়ীর কাছ থেকে ধ্রুপদ ও ধামার প্রশিক্ষণ নেন।
মীরার সঙ্গীত প্রতিভা প্রথম দিকে স্বীকৃত হয়েছিল। অল্প বয়সেই তিনি অল বেঙ্গল মিউজিক কম্পিটিশনে প্রতিটি বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৯৪৩ সালে নৃপেন মজুমদারের আমন্ত্রণে তিনি অল ইন্ডিয়া রেডিওতে অভিনয় শুরু করলে তার কর্মজীবন শুরু হয়। এক বছর পরে, তিনি সঙ্গীতাচার্য গিরিজাশঙ্কর চক্রবর্তী কর্তৃক “গীতাশ্রী” উপাধিতে সম্মানিত হন।
তার বাবা তাকে পাটিয়ালা ঘরানার সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পরে কিংবদন্তি ওস্তাদ বড়ে গুলাম আলী খানের অধীনে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সময় তার যাত্রা অব্যাহত ছিল। এমনকি এই সংযোগের ফলে প্রখ্যাত জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ তাঁর বাড়িতে ওস্তাদের থাকার জন্য কক্ষ অফার করেছিলেন। সঙ্গীতের সাথে মীরার বন্ধন আরও গভীর হয় যখন তিনি ১৯৫৭ সালে প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিয়ে করেন, একজন সহ-শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পী, যার সাথে তিনি বেশ কয়েকটি রেকর্ড প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর অনুরোধে রাশিয়া, পোল্যান্ড এবং চেকোস্লোভাকিয়া সফর করার সময় মীরার আন্তর্জাতিক প্রকাশ ঘটে, বিশ্ব মঞ্চে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত প্রদর্শন করে। তিনি তপন সিনহার নির্দেশে ‘অতিথি’, ‘বৃন্দাবনলীলা’ এবং ‘মেঘমল্লার’-এর মতো ছবিতেও তার কণ্ঠ দিয়েছেন, ভারতীয় সংস্কৃতিতে তার প্রভাবকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন।
তার বর্ণাঢ্য কর্মজীবন জুড়ে, মীরা বন্দ্যোপাধ্যায় রাষ্ট্রপতি ভবনে একটি অনুষ্ঠানে ভারতের রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে একটি বিশেষ পুরস্কার সহ অসংখ্য প্রশংসা পেয়েছিলেন। ১৯৫৩ সালে অল ইন্ডিয়া রেডিওর ন্যাশনাল প্রোগ্রাম অফ মিউজিকের জন্য তার অভিনয় সারা দেশে হৃদয় জয় করে, ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের একজন সম্মানিত দূত হিসাবে তার উত্তরাধিকারকে সিমেন্ট করে।
মীরা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবন এবং কাজ শিল্পের প্রতি তার উৎসর্গকে প্রতিফলিত করে, যা তাকে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের জগতে একটি সম্মানিত নাম করে তোলে। ভারতের সমৃদ্ধ সঙ্গীত ঐতিহ্য সংরক্ষণ করে তার অবদান আগামী প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে।
তাঁর অন্যান্য পুরস্কার গুলি হল-
গিরিজাশঙ্কর পুরস্কার, আলাউদ্দিন পুরস্কার, সৌরভ পুরস্কার, ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে – আইটিসি এসআরএ পুরস্কার, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সঙ্গীত আকাদেমি পুরস্কার, ভুয়ালকা পুরস্কার।
২০১২ খ্রিস্টাব্দের ২৭ জুন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কলকাতার বোসপুকুরের বাড়িতে প্রয়াত হন বিদুষী মীরা বন্দ্যোপাধ্যায়।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

নারী প্রগতি আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃত মহীয়সী কবি “সুফিয়া কামাল” : সুরভি জাহাঙ্গীর।।।।।

নারী প্রগতি আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ কবি সুফিয়া কামাল ১৯১১ সালের ২০ জুন বরিশালের শায়েস্তাবাদে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম সৈয়দ আব্দুল বারী এবং মাতার নাম সৈয়দা সাবেরা খাতুন। বাবা কুমিল্লার বাসিন্দা ছিলেন। যে সময়ে সুফিয়া কামালের জন্ম তখন বাঙালি মুসলিম নারীদের গৃহে বন্দীজীবন কাটাতে হতো।

তখন না আ’লীগের স্কুল-কলেজে পড়ার কোন সুযোগ ছিল না। পরিবারে বাংলা ভাষার প্রবেশ একরকম নিষিদ্ধ ছিল। সেই প্রতিকূল পরিবেশে সুফিয়া কামাল প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ পাননি। তিনি পারিবারিক নানা উত্থান-পতনের মধ্যে স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছেন।

১৯৩৮ সালে সুফিয়া কামালের বয়স যখন সাত বছর তখন তাঁর বাবা সাধকদের অনুসরণে নিরুদ্দেশ যাত্রা করেন। ফলে তাঁকে নিয়ে তাঁর মা সাবেরা খাতুন অনেকটা বাধ্য হয়ে বাবার বাড়িতে এসে আশ্রয় নেন। এ জন্য তাঁর শৈশব কেটেছে নানাবাড়িতে। যে পরিবারে সুফিয়া জন্মগ্রহণ করেন সেখানে নারীশিক্ষাকে প্রয়োজনীয় মনে করা হতো না। তাঁর মাতৃকূল ছিল শায়েস্তাবাদের নবাব পরিবারের এবং সেই পরিবারের কথ্য ভাষা ছিল উর্দু। এ জন্য অন্দরমহলে মেয়েদের আরবি, ফারসি শিক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও বাংলা শেখানোর কোন ব্যবস্থা ছিল না। তিনি বাংলা শেখেন মূলত মায়ের কাছে। নানাবাড়িতে তাঁর বড় মামার একটি বিরাট গ্রন্থাগার ছিল। মায়ের উৎসাহ ও সহায়তায় এ লাইব্রেরির বই পড়ার সুযোগ ঘটেছিল তাঁর।

১৯২৪ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে মামাতো ভাই সৈয়দ নেহাল হোসেনের সাথে সুফিয়ার বিয়ে হয়। নেহাল অপেক্ষাকৃত আধুনিকমনস্ক ছিলেন। তিনি সুফিয়াকে সমাজসেবা ও সাহিত্যচর্চায় উৎসাহিত করেন। সাহিত্য ও পত্র-পত্রিকার সঙ্গে সুফিয়ার যোগাযোগও ঘটিয়ে দেন তিনি। সুফিয়া কামাল সে সময়ের বাঙালি সাহিত্যিকদের লেখা পড়তে শুরু করেন। ১৯১৮ সালে কলকাতায় গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে বেগম রোকেয়া সাখাওয়াতের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়েছিলো। সুফিয়া কামালের শিশুমনে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছিলো বেগম রোকেয়ার কথা ও কাজ।

সাহিত্যপাঠের পাশাপাশি সুফিয়া কামাল সাহিত্য রচনা শুরু করেন। ১৯২৬ সালে তাঁর প্রথম কবিতা ‘বাসন্তী’ তখনকার প্রভাবশালী সাময়িকী সওগাতে প্রকাশিত হয়। ত্রিশের দশকে কলকাতায় থাকার সময়ে বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র, যেমন- রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, শরৎচন্দ্র প্রমুখের কিছুটা সান্নিধ্য পান। মুসলিম নারীদের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করার জন্য বেগম রোকেয়ার প্রতিষ্ঠিত সংগঠন ‘আঞ্জুমানে খাওয়াতিনে ইসলামে’ রোকেয়ার সঙ্গে সুফিয়া কামালের পরিচয় হয়। রোকেয়ার চিন্তাধারা ও প্রতিজ্ঞা তাঁর মধ্যেও সঞ্চারিত হয়‌ এবং যা তাঁর জীবনে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলে।

নিজের সাহিত্য প্রয়াসের সূচনা প্রসঙ্গে তিনি এ ভাবে স্মৃতিচারণ করেছেন, ‘এমনি কোন বর্ষণমুখর দিনে মুসলমান সাহিত্য পত্রিকায় প্রকাশিত কাজী নজরুল ইসলামের লেখা হেনা পড়েছিলাম বানান করে। প্রেম, বিরহ, মিলন- এসবের মানে কি তখন বুঝি? তবু যে কী ভালো, কী ব্যথা লেগেছিল তা প্রকাশের ভাষা কি আজ আর আছে? গদ্য লেখার সেই নেশা। এরপর প্রবাসী পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা পড়তে পড়তে অদ্ভুত এক মোহগ্রস্ত ভাব এসে মনকে যে কোন্‌ অজানা রাজ্যে নিয়ে যেতো। এরপর দেখতাম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন, বেগম সারা তাইফুর লিখছেন। কবিতা লিখছেন বেগম মোতাহেরা বানু। মনে হলো ওরা লিখছেন আমিও কি লিখতে পারি না? শুরু হলো লেখা লেখা খেলা। কী গোপনে, কত কুণ্ঠায়, ভীষণ লজ্জার সেই হিজিবিজি লেখা ছড়া, গল্প। কিন্তু কোনোটাই কি মনের মতো হয়! কেউ জানবে, কেউ দেখে ফেলবে বলে ভয়ে ভাবনায় সে লেখা কত লুকিয়ে রেখে আবার দেখে দেখে নিজেই শরমে সংকুচিত হয়ে উঠি।’ ১৯৩৭ সালে তাঁর গল্পের সংকলন কেয়ার কাঁটা প্রকাশিত হয়। ১৯৩৮ সালে প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ সাঁঝের মায়ার মুখবন্ধ লেখেন কাজী নজরুল ইসলাম। বইটি বিদগ্ধজনের প্রশংসা কুড়ায়, যাদের মাঝে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও ছিলেন।

১৯৩২ সালে তাঁর স্বামীর আকস্মিক মৃত্যু তাঁকে আর্থিক সমস্যায় নিপতিত করে। তিনি কলকাতা কর্পোরেশন স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন এবং ১৯৪২ সাল পর্যন্ত এ পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। এর মাঝে ১৯৩৯ সালে কামালউদ্দিন আহমেদের সাথে তাঁর দ্বিতীয় বিয়ে হয়। দেশ-ভাগের আগে কিছুকাল তিনি নারীদের জন্য প্রকাশিত সাময়িকী বেগম এর সম্পাদক ছিলেন। দেশভাগের পর ১৯৪৭ সালে সুফিয়া কামাল পরিবারসহ ঢাকায় চলে আসেন। ভাষা আন্দোলনে তিনি নিজে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং এ আন্দোলনে তিনি নারীদের উদ্বুদ্ধ করেন।

১৯৫৬ সালে শিশুদের সংগঠন কচিকাঁচার মেলা প্রতিষ্ঠা করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মহিলা হোস্টেলকে ‘রোকেয়া হল’ নামকরণের দাবী জানান। ১৯৬১ সালে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক রবীন্দ্রসঙ্গীত নিষিদ্ধের প্রতিবাদে সংগঠিত আন্দোলনে তিনি জড়িত ছিলেন। এ বছরে ছায়ানটের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৬৯ সালে মহিলা সংগ্রাম কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন, গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেন, পাকিস্তান সরকার কর্তৃক ইতোপূর্বে প্রদত্ত তমঘা-ই-ইমতিয়াজ পদক বর্জন করেন। ১৯৭০ সালে মহিলা পরিষদ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭১ সালের মার্চে অসহযোগ আন্দোলনে নারীদের মিছিলে নেতৃত্ব দেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর বাসভবন সংলগ্ন গোটা ধানমন্ডি এলাকা পাকিস্থানী বাহিনীর নিরাপত্তা হেফাজতে ছিল, আর এ সময় তিনি ধানমন্ডিতে নিজ বাসভবনে সপরিবারে নিরাপদে অবস্থান করেন।

স্বাধীন বাংলাদেশে নারীজাগরণ ও সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সুফিয়া কামাল উজ্জ্বল ভূমিকা রেখে গেছেন। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে শরিক হয়েছেন, কার্ফ্যু উপেক্ষা করে নীরব শোভাযাত্রা বের করেছেন। মুক্তবুদ্ধির পক্ষে এবং সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিপক্ষে আমৃত্যু তিনি সংগ্রাম করেছেন। তিনি ১৯৯৯ সালের ২০ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। তাঁকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। বাংলাদেশী নারীদের মধ্যে তিনিই প্রথম এই বিরল সম্মান লাভ করেন।

সুফিয়া কামাল অসংখ্য গ্রন্থ রচনা করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- সাঁঝের মায়া (১৯৩৮), মায়া কাজল (১৯৫১), মন ও জীবন (১৯৫৭), প্রশস্তি ও প্রার্থনা (১৯৫৮), উদাত্ত পৃথিবী (১৯৬৪)
দিওয়ান (১৯৬৬), অভিযাত্রিক (১৯৬৯), মৃত্তিকার ঘ্রাণ (১৯৭০), মোর জাদুদের সমাধি পরে (১৯৭২), কেয়ার কাঁটা (১৯৩৭), সোভিয়েতে দিনগুলি (১৯৬৮), একাত্তরের ডায়েরি (১৯৮৯), একালে আমাদের কাল (১৯৮৮), ইতল বিতল (১৯৬৫)
নওল কিশোরের দরবারে (১৯৮১)।

সুফিয়া কামাল বিভিন্ন সময়ে অর্ধ-শতাধিক পুরস্কার লাভ করেছেন। এর মাঝে কয়েকটি হল-
পাকিস্তান সরকারের তমঘা-ই-ইমতিয়াজ (১৯৬১, কিন্তু তিনি প্রত্যাখান করেন ১৯৬৯ সালে), বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৬২), সোভিয়েত লেনিন পদক (১৯৭০), একুশে পদক (১৯৭৬), নাসিরউদ্দিন স্বর্ণপদক (১৯৭৭), সংগ্রামী নারী পুরস্কার, চেকোশ্লোভাকিয়া (১৯৮১), মুক্তধারা পুরস্কার (১৯৮২), বেগম রোকেয়া পদক (১৯৯৬)
জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার (১৯৯৫), দেশবন্ধু সি আর দাস গোল্ড মেডেল (১৯৯৬), স্বাধীনতা দিবস পদক (১৯৯৭)।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

স্মরণে, স্বশিক্ষিত খ্যাতিমান ভারতীয় চিত্রশিল্পী – সুনয়নী দেবী।।।।

সুনয়নী দেবী একজন বিখ্যাত ভারতীয় বাঙালি চিত্রশিল্পী।   সুনয়নী দেবী ভারতের কলকাতার সম্ভ্রান্ত ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।   তিনি একজন স্বশিক্ষিত শিল্পী, তিনি কারও কাছ থেকে কোনও আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ নেননি।   বরং, তার শিল্পী ভাই অবনীন্দ্রনাথ, জ্ঞানেন্দ্রনাথ এবং সমরেন্দ্রনাথ ঠাকুরের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে, তিনি ৩০ বছর বয়সে ছবি আঁকা শুরু করেন। ১২ বছর বয়সে রাজা রামমোহন রায়ের নাতি রজনীমোহন চ্যাটার্জির সাথে তার বিয়ে হয়।

সুনয়নী দেবী ১৮৭৫ সালের ১৮ জুন ভারতের সম্ভ্রান্ত ঠাকুর পরিবারের গুণেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং সৌদামিনী দেবীর ঘরে জন্মগ্রহণ করেন।

গুণেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন যুবরাজ দ্বারকানাথ ঠাকুরের প্রপৌত্র এবং মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের তৃতীয় ভাই গিরীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কনিষ্ঠ পুত্র।   সেদিক থেকে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর পিতা।   বারো বছর বয়সে রজনীমোহন চ্যাটার্জির সাথে তার বিয়ে হয়।   যদিও চিত্রকলা বা শিল্পের অন্য কোনও ফর্মে তার কোনও আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না, তবে শিল্পের ক্ষেত্রে একজন মহিলা হিসাবে তিনি যে দক্ষতা অর্জন করেছিলেন তা পার্থ মিত্রের ‘দ্য ট্রায়াম্ফ অফ মডার্নিজম: ইন্ডিয়া’জ আর্টিস্ট অ্যান্ড দ্য অ্যাভান্ট গ্রেড’ (1922-1947) বই থেকে পাওয়া যায়।  )   জানতে পারেন।

চিত্র শৈলী এবং বিষয়—
‘বেঙ্গল আর্ট স্কুল’ এর একজন প্রকৃত প্রাচীন চিত্রশিল্পী হওয়ার অনুপ্রেরণায় তিনি লোক পট আঁকেন যা ঠাকুর বাড়ির মহিলাদের মধ্যে খুবই প্রচলিত ও গৃহস্থালিসংক্রান্ত বিষয় ছিল।
২৩শে ফেব্রুয়ারি ১৯৬২ সালে তিনি প্রয়াত হন।

।। তথ্য: সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

স্মরণে বিখ্যাত এবং কিংবদন্তি ভারতীয় বাঙালি মঞ্চাভিনেত্রী স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত।।।।

স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত (২২ মে ১৯৫০ – ১৬ জুন ২০২১  ) ছিলেন একজন বিখ্যাত এবং কিংবদন্তি ভারতীয় বাঙালি মঞ্চাভিনেত্রী। ভারতীয় থিয়েটারে অভিনয়ে তার অবদানের জন্য তিনি সংগীত নাটক অকাডেমি পুরস্কার পেয়েছেন। তার সহজ সরল ও প্রাণবন্ত অভিনয়ের জন্য দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছিলেন ব্যাপক।
কাজ——
১৯৭০-এর শুরুর দিকে ইলাহাবাদে এ. সি. বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশনার অধীনে স্বাতীলেখা থিয়েটারে কাজ শুরু করেন। তিনি বি. ভি. কারাট, তাপস সেন ও খালেদ চৌধুরীর মতো লোকের উৎসাহও পেয়েছেন। ১৯৭৮ সালে তিনি কলকাতায় চলে আসেন এবং নান্দীকার নাট্যদলে যোগদান করেন। নান্দীকারে রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তের নির্দেশনায় তিনি কাজ করতে থাকেন।

১৯৭৫ সালে সত্যজিৎ রায় নির্দেশিত ঘরে বাইরে ছবিতে ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায় ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সাথে তিনি মুখ্য নারী চরিত্রে অভিনয় করেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঘরে বাইরে উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে ছবিটি বানানো হয়েছিল।

চলচ্চিত্রসমূহ——

২০২১-ধর্মযুদ্ধ-আম্মি-রাজ চক্রবর্তী, ২০২১বেলা শুরু-আরতি সরকার-নন্দিতা রায়-শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়,  ২০১৯-বরফ-শুভমের মা-সুদীপ চক্রবর্তী, ২০১৫-বেলাশেষে-আরতি মজুমদার-নন্দিতা রায়- শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়,  ১৯৮৫-ঘরে বাইরে-বিমলা-সত্যজিৎ রায়।

পুরস্কার—–

ভারতীয় থিয়েটারে অভিনয়ে অবদানের জন্য ২০১১ সংগীত নাটক অকাডেমি পুরস্কার; পশ্চিমবঙ্গ থিয়েটার জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন পুরস্কার; পশ্চিমবঙ্গ নাট্য অকাডেমি পুরস্কার।

জীবনাবসান——

স্বাতীলেখা দীর্ঘদিন কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন। কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে ২৫ দিন ধরে আই সি ইউ তে চিকিৎসা চলছিল। ২০২১ খ্রিস্টাব্দের ১৬ই জুন বুধবার দুপুরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This