Categories
কবিতা

শূন‍্যতা : শীলা পাল।

খুঁজে পাচ্ছি না আমার অনেক কিছু
আমার আদুরে সকাল ,যখন চোখ বুজে
মনে হত আরেকটু শুয়ে থাকি
খুঁজে পাচ্ছি না সেই ভালোলাগার মুহূর্তগুলো ।

ছোট ছোট অনেক ভালো লাগা কেমন করে
হারিয়ে গেছে বুঝতে পারি নি ,প্রথম ভোরের
শিশিরে কতদিন যে পা ফেলি নি
ইচ্ছে গুলো কেমন করে যেন হারিয়ে যায় !

ভাবি সবকিছু র একটা সময় থাকে
তা পেরিয়ে গেলেই সব মলিন হয়ে যায়।

Share This
Categories
কবিতা

আমার মেঘলা দিন : শীলা পাল।

এতো মেঘ জমেছিল মনে ,জমেছিল বনে,
জমেছিল নতুন পাতায় ।
তুমি এলে বৈশাখী হাওয়ায় ভেসে ,এলে আনমনে
শিতলপাটি বিছিয়ে ডাকলে
একটু এসে বোস আমার পাশে।
কবরী খুলে এলোচুলে দুয়ারে খানিক দাঁড়ালে
দীঘল আঁখি মেলে প্রাণের সব সুখ টুকু ঢেলে
ভেসে গেলে পূবের হাওয়ায় ।
আজও বসে আছি অপেক্ষায়
সেই হাসিটি হৃদয়ে মাখবো বলে।

Share This
Categories
কবিতা

রূপজীবী :: রাণু সরকার।।

ওগো বধূ, তোমাকে দেবার মতো আছে তো কিছু কৃত্রিম গহনা–
আমি ধনহীন, তা তো তুমি জানোই-
যা আছে তাই নিয়ে কেনো খুশি থাকোনা;
তোমার কণ্ঠে এখন আর সেই সুমধুর ধ্বনি নেই- তুমি খুশি নও, তাই না?

আমার ঘরে পাবেনা সুখ, এই জীবনে
তোমায় ভীষণ ভালোবাসি, পড়ে নাকি মনে?
তুমি গৃহবধূ, কেনো তুমি যাও- আমার বন্ধুরে বাঁধতে, ঘুরে ঘুরে বেড়াও এ বনে ও বনে।

সোহাগের ভেলায় ভাসছ,
অন্তরে যে ব্যথা আছে- সেকি ভুলতে পেরেছ?
নিজের যাকিছু আছে তাই নিয়ে থাকো,
কি লাভ করে এনেছ?

কত সুন্দর ছিলো আমাদের সংসার,
অবহেলায় কেনো করছো পরিহার,
পরে কী হবে- ভেবেছো কি একবার?

তুমি হলে রূপজীবী, আমার সঙ্গে করলে ছলনা-
আমার কি ভুল ছিলো? ধনহীন তাই না?
যতই ভেলায় ভাসো, সফল তুমি হবে না!
দ্বিতীয়জন কখনো ভালো হয় না-
মধু খেয়ে পাপড়ি করে ছিন্নবিচ্ছিন্ন- এখন তুমি অচেতন, তাই বোঝালেও বুঝবে না!

মন উড়তে উদ্যত, শাসনে পারবে না আনতে, কেমনে থাকবে সংসারে?
পর্যুষিত ফুলে গৃহ দেবতার পূজা হবে কিকরে?
তুই বারনারী তোকে দিয়ে নিত্য পূজা হবে নারে-
বদগন্ধ ফুল জল নির্গমনের পথে অবিন্যস্ত হয় রে।

Share This
Categories
কবিতা

কৃষ্ণপক্ষের শেষ তিথি : রাণু সরকার।

কৃষ্ণপক্ষের শেষ তিথি, নিবিড় আঁধারে কে গো তুমি এলে অগোচরে,
খেজুরগাছের সারি তার আড়াল দিয়া দুইগুণ আঁধারে,
মিহি কেশ গলায় পলাশের মালা পরি,
মৃদু বেনার মদিরাক্ষি গন্ধে, গভীর রাতে নিখিল বিশ্ব গেলো ভরি,

কাজলে আঁকা উজ্জ্বল বাঁকা চাহনি, নিক্ষেপ করে তড়িৎ- মুখচন্দ্রিকা মধুর হাসি,
নীলাভ বস্ত্র পরিয়া শিয়রে দাঁড়ালো আসি!
বীণার ধ্বনির চেয়েও মধুর কন্ঠস্বর-হে অনুরাগী,
অবিদ্যমান শয্যা শয়নে জাগ্রত আজ্ঞা করে কিসের লাগি?

দয়া হলো বুঝি তার- অন্তরে ছুড়েদিলো সুখের কিছু ব্যথা,
জুড়ি’ জোটালো বীণাপাণী আবেগ বাণী কন্ঠে বললো কথা,
চঞ্চল বসন্তবাস অন্তরে পুষ্প ফুটে,
তার পায়ের নুপুরের ধ্বনি হৃদয়ে বেজে ওঠে,

তার ছন্দে গন্ধে রচনা হলো গজল-গীতি
তার উপবনের দ্বারে প্রচার হলো প্রতিনিয়ত নিতি;
চাই না নাম যশ এতে কোন কাজ নেই, চাই না ধনমান,
তুমি কি পারো না গো তোমার মত করে শেখাতে স্তোত্র উচ্চারণ।

কোন কথা না বলে প্রমোদ কাননে দিলে বিরাগ ভরে
বীণাটি টেনে নিয়ে ধরলো কোমল বুকের পরে;
আঙুল স্পর্শ করে তারে মধুরকন্ঠসংগীতে দিলো ভরিয়া
থাকলে না আমার হৃদয়ে- কেনো যে গেলে ফিরিয়া!
পলাশ কুঁড়ি ভেবে ছিলো কি একবার ফুটতে হবে কিনা,
বৃষ্টিপ্রেমী পাখি পাখায় ঠোঁট গুঁজে, উন্মেষ চেতনা;

কৃষ্ণপক্ষের শেষ তিথিতে- নিবিড় আঁধারে গেলো মিলাইয়া–
দুইগুণ আঁধার খেজুর গাছের সারি নীহার মাথায় লয়ে চললো তার আড়াল দিয়া!
তার চলার পথে সংগীতের রাগ উঠলো বাজি
মহৎ প্রাণ কোমল পরশ রূপের দীপ্তি হারিয়ে গেলো বুঝি;
অল্প সময়ের ব্যবধানে কাঁপে অন্তর- শুধুই আকুলতা,
ঘুরে ঘুরে ফিরি সর্বদা এথা হোথা খুঁজি, তাহারে পাই কোথা!

Share This
Categories
কবিতা

জন্মদাত্রী : রাণু সরকার।

বাবুর বাড়ি বাসন ধোয়ার কাজ করে যে সে আমার জন্মদাত্রী মা–
অতীত বর্তমান ভুলতে পারি না।
দারিদ্রের কোনো পছন্দ আছে নাকি, খাই তো কাঁকর মেশানো খুদ,
দীর্ঘ উপবাসে ছিলো এক গাই, শীর্ণদেহ শুকিয়ে গেছে দুধ–
তারপরও
কিছুদিন বেঁচে ছিলো প্রাণে, চলে না আর জীর্ণদেহ,
ভাঙাচোরা মাটির দেয়াল, বাঁচবো কদিন তবুও হিসাব করি গেল,
কথাবলা, হাঁটা সবই তার কোলে, তার বুকে ছড়িয়েছি দু’পা,
বাবুর বাড়ির পান্তা এনে খাওয়ায়, কিকরে ভুলি তা?

সে আমার মা, স্বয়ং ভগবান,
কিকরে ঘুচাই, দুঃখ-কষ্টে ভরা ছিলো মায়ের মন।
গুমরে উঠতো হৃদয় কষ্ট-যন্ত্রণার বিষে,
এতো গুণবতী মায়ের কথা ভুলি কিসে।
প্রাণপণ প্রবল কর্মে নিষ্ঠা, কিন্তু অন্তরে ছিলো একটু ভয়,
কোথায় গেলো কষ্টেরা, শক্তিসাধন করেছিলো মৃত্যুঞ্জয়।

প্রচণ্ড মানসিক শক্তি ছিলো- এইরকম মা সবসময় চাই,
মায়ের কথা কিকরে ভুলি- এখনো মনে পড়ে ভুলি নাই।
মায়ের জঠরে জন্মে করি মায়ের নাম গান,
এই মাকে কেউ কি করে অপমান?
বাবুদের বাড়ি কাজ করেছে বলে কিকরে ভুলি মায়ের বাণী?
অব্যক্ত অন্তরের কষ্ট গুলো নিয়েই চলে গেলেন রাণী।

Share This
Categories
কবিতা

চঞ্চল প্রাণ :::: রাণু সরকার।।।।

দোষ কীর্তন গাইবে সবাই জানি–
তবু প্রিয়া তোমার কাছেই বাজাবো আমার প্রিয় তানপুরা খানি।
হাত আমার শাসনে নেই, তাল হারিয়েছে তারে,
ধৈর্য্যহীন চিত্তচাঞ্চল্য প্রহার করে পাঁজরের দ্বারে,
প্রিয়া তুমি মান কোর না,বাঁধ তার বুঝে নিয়ে
চেষ্টা যেন সফল হয়, তোমার ভাবের উদ্রেক বিহ্বলতা দিয়ে।
বেজে উঠুক সে তার অন্তরে আছে কথা যত
গুঞ্জরণ রবে হৃদয়ের গোপন ব্যথা আছে যত,
করে করুক কানাঘুষা লোকে, লুটোপুটি হবে হেসে–
তোমার চোখের উজ্জ্বল জ্যোতি যেন মন্ত্র দিলো শেষে।

ভয় পেওনা প্রিয়া–
একান্তে যে কুটির আছে- ক্ষুদ্র জনপদের গায়,
উদাহৃদয় নদীর ধারের পথ আকাঁ বাঁকা,
চারিধারে বনজাত ঝাউ তমালের শাখা।
খুব একটা মানুষের সমাগম নেই বলা যায়-
কি জানি কে এই সময়ে সঙ্গীতের সুর বাজায়!
পথের পথিক পারবে বলতে লাগালো সুর;
কে দিলো তারে এ ব্যথার সুর তালে ছন্দে যে ভরপুর;
এ সুরের প্রধান নাই, নাই কোন অট্টালিকা বাদ্যযন্ত্র কি আছে,
আছে একটি ভক্তিমান থাকে দেবীর কাছে!

ওই নদীটির তীর–
বনজাত তমালের শাখে ঘনিয়ে আসে রাত গভীর;
মুক্ত থাকুক দ্বার, তুমি কি পাবে ভয়!
ভয় করোনা প্রিয়া আমার- পাহাড়া দেয় যে বেতনের বিনিময়!
দখিনের বাতাস ঢুকছে কুটিরে থরথর কাঁপছে প্রদীপ খানি,
ধৈর্য্যধরো এবেলায় সুর টানি!
হাতটি আমার অবস কেনো, বুকও কাঁপছে সাথে,
অশ্রুবর্ষণ কেনো, তবে উৎকণ্ঠিত বেদনাতে।
সজ্ঞা হারিয়ে নীরবে কখন রাত বেড়ে যায়
জোনাকির আলোতে ঝিঁঝি নৃত্য করে ,তানপুরা সজ্ঞা হারায়।
পাগল পবন যদি না থামে–
সহসা বিহানে যদি বর্ষা নামে;
এবার কুটিরের ফাঁকে পবন এলে প্রদীপ যাবে নিবে!
কেউ কি আছে দুয়ার খানি টেনে দেবে!

Share This
Categories
কবিতা

জমি : রাণু সরকার।

ভাবছি যত বিঘা দুঃখের জমি আছে কেনো ফাঁকা থাকবে?
আবাদ করবো কিছু শান্তির বীজরোপণ করে
অনেক কষ্ট করে রেখেছি শান্তির বীজ
হয়তো একটু দেরি হবে ফুল ফুঁটতে তবে মনে হয় ফুঁটবে।
আর কতদিন এভাবে ফাঁকা থাকবে যত আবর্জনায়
ভরে আছে পরিচ্ছন্ন করতে একটু সময় লাগবে।

কিছুদিনের জন্য শত্রু হয়ে মনে মনে অপ্রকাশ্যে ঘৃণা করে ক্ষতিসাধন করে জমিটাকে অগ্নিদগ্ধ করেছে।
অকেন গুলো বছর কালো হয়েছিলো ভেবেছিলাম এই জমিটিতে আর কিছুই করা সম্ভব না।
ধৈর্য্য শক্তি বারিয়ে উদ্যোগ নিলাম কেনোনা
মানুষের নানান কথা আর সহ্য করতে পারছিলাম না।

Share This
Categories
কবিতা

সৌম্যমূর্তি : রাণু সরকার।।

তুমি দৃশ্যমান তোমার আড়ালে সব আছে….
সুশৃঙ্খল ভাবে সাজানো।
কোন ঋতুর সাজে সেজেছো?
শাড়ি,গয়না নূপুর,দুল,ফিতে এই গুলো…
কোন ঋতুর বললে না তো?

এতো সুন্দর কারুকার্য রয়েছে সৌম্যমূর্তি জুড়ে।
ঘন ঝোপঝাড়ের ঘ্রাণ পাচ্ছি ভয়াবহ খাদ!
ঝর্ণার চঞ্চল নৃত্যের শব্দ দূর থেকে যেন ভেসে আসছে
কারা তালে ছন্দে মাদল বাজাচ্ছে কোথায়?

সৌম্যমূর্তি প্রচ্ছদের আড়ালে কোথায় যে খুঁজি?
কোথায় যেন দেখেছি ঠিক তোমার মতো উঁচু স্তূপ।
দিনের শেষে সূর্যাস্তের লাল আভা মাখছিলে গায়ে-
তুমি বিহানে এমন করে তাকালে মনে হলো সদ্য সূর্যমুখী!

কোথায় আছে ঐশ্বর্যের খিলান?
বলে দিলে প্রচ্ছদ উল্টে দেখতে পারি যা আমার হৃদয়বাসনা।
আবরণে রশ্মিরাগ সবটুকুই তুমি আমার মনে।

Share This
Categories
কবিতা

অতীত :: রাণু সরকার।।

হারিয়ে গেছে যে অতীত বারংবার আসে
আঘাত করবার জন্য।
আজ এতোটাই নিঃস্ব পরিমাপ করে দেখি,
শ্বাস গ্রহণ ও ত্যাগ করতে করতে হয়তো একদিন নিঃশেষ হবো-
মিলিত কন্ঠের আওয়াজ প্রাণনাশ করছে।
সূক্ষ্ম কিছু নাড়ি এখনো জেগে আছে ওদের ঘুম নেই-
ওরা শোকপ্রকাশ করে অশ্রুবিন্দুতে।
দিগন্ত, দূর অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত তমসা নতশিরে।
মন্দিরে কারা যেন প্রত্যহ বাজায় মন্দিরা।
হৃদয়বাসনা অনেক পূর্ণতা পেলো না শুধুই ব্যাঘাত।
উচ্চৈঃস্বরে পরমাত্মার কাছে প্রকাশ করা।
উৎকণ্ঠিত মন্থর গতিতে চলে জনশূন্য দেবালয়ে।

Share This
Categories
কবিতা

সাথী : শীলা পাল।।

তুই সঙ্গে থাকলে—-
আমার মনের
আকাশ কতো নীল হয়ে যায় !
পুষ্প বনে রঙের ঝর্ণা ,
বাতাসে চপলতার ইশারা ,
নদীর স্রোতে উচ্ছলতা
সব যেন আমাকে ঘিরে থাকে।

তোর স্পর্শে
পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়ে
যে ঝর্ণা তার সমস্ত উচ্ছ্বাস
আমি আমার অনুভূতি দিয়ে
বুঝতে পারি ,আমি গলতে থাকি
ওই ধোঁয়াশা জলকণার মতো।

তুই কাছে এলে
আমি স্থানুবৎ।আমার চোখ পলকহীন
ঝড়ের পূর্বাভাসের মতো,
এক নিস্তব্ধতা ঢেকে ফেলে।

একটু ছোঁয়ায় বৃষ্টি এসে
ভাসিয়ে নিয়ে যায়
বাঁধ ভাঙে প্লাবনের।

Share This