পিপাসু শস্যক্ষেত্র,
অনাবৃষ্টিতে হৃদয়ভরা পিপাসার
প্রচণ্ড দহন!
বাদলের তীব্র আবেগে
হবে সে ঋতুমতী!
তার অভিলাষ সে সগর্ভা হবে!
বীজকোষ জায়া অঙ্গে পরিপোষণ কোরে প্রতিভাসিত করবে নিজ বৃত্তের মাঝে,
সম্পূর্ণায়ন জীবনাবর্তের।
খরা : রাণু সরকার।

চলো দূরে কোথাও হারিয়ে যাই
দীঘল নদীর জলে ডুবে ডুবে
জীবনের স্বাদ খুঁজি।
ও ভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?
তুমি সমুদ্র ভালোবাসো চলো সমুদ্রের কাছাকাছি যাই
সমুদ্রের গর্জন শুনতে তোমার ভালো লাগবে।
রাত জেগে পাশাপাশি বসে থাকবো সমুদ্রের ধারে –
মাঝে মাঝে খুব রাগ হয় তোমার এই নীরবতায়।
“আমার যে ভালো লাগছেনা তা প্রকাশ করেছি বিন্দু মাত্র।
আর নীরবতার কথা বলছো —
প্রকৃতি সে তো আমায় টানছে।
এসো পাহাড়ি ঝর্ণা দেখবো আমরা দুজনেই স্নাণ করবো
তুমি ও ভাবে তাকাবে না ।
আমি মোমের মত গলে গলে যাচ্ছি।
তোমার ঐ চোখে কি আছে?”
এবার আমার হাতটা ধরো আমরা কিন্তু পাহাড়ি ঝর্ণার
কাছাকাছি।
এসো আমরা স্নণ করবো অনেক দিনের অপেক্ষা
খুব লজ্জা করছে তোমার এখানে কেউ নেই।
শুধু তুমি আর আমি।
তোমার হাঁটু ছেড়ে যাওয়া লম্বা বেনুণী খুলে ফেলো।
খুব সুন্দর লাগছে তোমাকে।
এ ভাবে কখনও দেখিনি তোমাকে।
তুমি এই অরণ্যের রাজ কন্যা —
“আর তুমি মেঘনাথ ”
হঠাৎ আচমকা ট্রেনের হুইসালের শব্দের মত কেপে ওঠে অরণ্য।
“খুব হাসছো তাইনা ”
তোমার হাসির শব্দে প্রকৃতি নানা রুপ ধারন করছে।
“আমার হাতটা শক্ত করে ধর পাহাড়ের গাঁয়ে সন্ধ্যা
নেমে এসেছে।
তুমি আর আমি আকাশের শরীর ছুঁয়ে এসেছি ”
বুঝেছি তোমার হাত শক্ত করে ধরতে হবে।
“আমি তো আগেই বলেছি তোমার হাত ধরে পৃথিবীর
পথে হাঁটবো।
রেখেছিলো সেদিন ও আমার হাতে হাত
অনাবিল আনন্দ ভালোবাসার স্পর্শ এখোনো সারা
শরীর ছুঁয়ে আছে।
আমি আজ তোমার শহরে
তোমাকেই খুঁজছি —
রোদহীন শহর শেওলা পড়া পিজঢালা পথ এক পশলা
বৃষ্টি।
তারপরেও এ শহরে অসুখ ধরেছে।
এই যান্ত্রিক শহরে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।
পায়ে পায়ে জনতার ভিড়ে হাড়িয়ে যাই ব্যস্ততার চাপে।
কাশবনের আপন আলোয়ে দূরে কোথাও হারিয়ে
যেতে মন চায়।
আকাশ জানে একলা থাকার কষ্ট
……………………………………………..💖লাজু চৌধুরী –
সবুজ কৈশোর আমার ওবেলার যা কিছু আছে সব তোমায় দিলাম।
যদিও দিতে কষ্ট হচ্ছে তবুও কালের কাছে আমি বাধ্য।
আমার এই অবেলায় এসবের প্রয়োজন নেই।
এরা এখন আমার কাছে বেমানান তাই তোমায় দিলাম।
তুমি এদের যত্ন কোরো তাহলে অনেকদিন তাজা থাকবে।
বলো, সবুজ কৈশোর তুমি খুশি হওনি ?
আমি এদের কথা ভেবে ক্লান্ত-
মায়ায় পড়েছিলাম
দিতেই পারছিলাম না।
আজ তোমাকে দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ক্ষীণ দুর্বল,
অনেকদিন এরা আমার বশীভূত ছিলো তো।
জীবন একটা আকাঙ্খার নাম
নিজেকে পরতে পরতে চিনতে পারা
কী চাই কী পাই তার একটা খতিয়ানের মত
বিশ্বাস ভালবাসা ন্যায় অন্যায় বোধ
প্রতি মুহূর্তের ক্ষয়ে যাওয়া নিঃশ্বাসের সঙ্গে
জড়িয়ে থাকার একটা দলিল
লিখতে লিখতে চেতনা আর অবচেতনের
সংযোগ
হাসি খেলা ফেলে আসা সময়ের মেল বন্ধন
কখন ফুরিয়ে আসে বেলা
সবকিছু ছেড়ে নদীতীরে এসে খেয়া খানি দোলে
টলমল পায়ে উঠে দেখ নিস্তব্ধ চরাচরে
একা একদম একা ।
মৃৎশিল্পী মাটি প্রমথিত কোরে
নানা রকমের পুতুল দেবদেবীর মূর্তি
আরো কত কী তৈরি করে।
একদিন মাটি সহ্যশক্তি হারিয়ে ফেলে,
তীক্ষ্ণ আর্তনাদ করে বলছে-
তুমি আমাকে প্রমথিত করছো শিল্পী-
তোমার কী একটুও কষ্ট হয় না হৃদয়ে?
মনেই করতে পারো না আমারও ব্যথা আছে-
নীরবে কষ্ট সহ্য করি কোন আওয়াজ করিনা।
তোমাকে যদি এভাবে কেউ প্রমথিত করে
তোমার কেমন লাগবে?
আমারও দিন আসবে গো শিল্পী সেই দিনটির অপেক্ষায় তাই নির্বাক থাকি।
তখন আমি থাকবো ওপরে তুমি থাকবে নিচে।
গভীর রাতে বাক্যালাপ মাটি ও মৃৎশিল্পীর
দুশ্চিন্তায় নিশ্চল থাকতে পারছে না শিল্পী,
এই কথা শুনে আহার নিদ্রা বন্ধ, আতঙ্কে
বিজড়িত,
কাজে বসে না তার মন।
ঠিকই বলেছে মাটি,
কী করে মাটি নরম করে মূর্তি গড়বো?
তাহলে কী আর কোনদিন মূর্তি গড়া হবে না-
কিন্তু এটাই যে আমার জীবনধারণের একমাত্র পেশা।
আমার হৃদয়ে ফাগুনের বসন্ত জাগে না-
কেনো বলতো? আমি যে ক্ষুধাতুরা সবসময়
থাকি কাতর।
তোমার জাগতে পারে, অট্টালিকায় কর বাস
আহারের জন্য করতে হয় না দুশ্চিন্তা।
আমি আহারের সন্ধানে চলি কষ্টের তাপ
অঙ্গে লেপন করে।
প্রখর রোদের তাপে থাকি তৃষ্ণার্ত।
তখন কোথায় আমার বসন্তের কৃষ্ণচূড়া,
আম্র মুকুলের গন্ধ!
আমি দেখি না তাদের,আমার কাছেই থাকে
দেখার ফুরসত কোথায়,
আমায় দেখে কৃষ্ণচূড়া,পাশ দিয়ে চলে যায় গন্ধ ছড়িয়ে আম্র মুকুল-
আমার গায়ে ঘামের গন্ধ পায় তখন পাসকাটিয়ে
চলে যায় আমের মুকুল।
রোদের প্রখর তাপে
চাষের জমির বুক বিদারণ করে-
করছে আর্তনাদ-
সেও আমার মতো তৃষ্ণার্ত,
কবে যে আসবে মেঘের ভেলায় চেপে বাদল!
গাছেরা স্বপ্ন দেখায় মগ্ন, কত বাসনা তাদের-
প্রতিটি শাখায় আত্মগোপন করে আছে
অর্ধবিকশিত ফুল।
রাতে চলে বাতাসের সাথে কথোপকথন,
নবযৌবনা কচি পাতারা বিহ্বল বাদলের প্রত্যাশায়।
আমার বসন্ত ক্ষুধাতুর, মৌনতা অবলম্বন করেছে,
তোমার বসন্ত থাক প্রেম-প্রীতি নিয়ে!
খেলতে যাবি? চলে আয়-
মাটিতে ছক কেটে চাড়া ভাঙা খোলার
কুটরো ফেলে এক পায়ে ভর দিয়ে খেলবো,
আয় না-চলে আয়–
কেউ বকবেনা তোকে।
তুই কে? মনে পড়ছে না তো-
ভুলে গেছি সব, দৃষ্টি ক্ষীণ শ্রবণশক্তিহীন,
ক্ষণের জন্য পড়ে মনে।
ভুলে যাবো এখন না এলে-
পাকা কেশ পড়েছে ঝরে দৃষ্টিও ক্ষীণ,
হাতে লাঠি ভালো করে ধরে হাঁটতে পারিস না,
পেটে ক্ষিদে থাকে সবসময়-
আধপেটা খেতে দেয় সেও ভাঙা থালায়।
ঘুমোবার জায়গাতে ইঁদুর খেলে লুকোচুরি
ঘুম ভেঙে যায় তাই না বল?
ভোরে চা খেতে ভালোবাসতি সেটাও এখন জোটে না-
সেই তো চলে এলো প্রথম বেলা সুরু,
শাসন আর শাসন এটা করো না ওটা করো না
এ– বাবা এটা ভেঙে ফেললে বলছি না সাবধানে চলবে-
আমার সাথে আয় শান্তি পাবি-
ওই যে– নদী, দেখেছিস না তো-
আমার হাত ধর-
ওপাড়ে যাবো নৌকো করে
তোর আমার মতো কত– সাথি,
খেলবো আয়-
কারোর গলগ্রহ হতে হবে না, কেউ বোকবেনা পড়তে বসা নেই, দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার নেই মানা-
ভয় পাচ্ছিস?
এখন না আসলে পরে পারবি তো এই মঞ্চে
অভিনয় করতে?
বড্ড কঠিন কিন্তু- ভেবে দেখ-
লাঠি নিয়েই দাঁড়াতে পারিস না কী করে অভিনয় করবি?
আয়- খেলবো চাড়া ভাঙা খোলার কুটরো দিয়ে আয় না চলে- বলছি তো কেউ বোকবেনা কেউ||
এই মেয়ে, একই সময় রোজ পুকুর পাড়ে বসে কী ভাবিস?
কী আর ভাববো, বর্তমানের কথা ছাড়া কী আর আছে আমার।
তোর নাম কিরে মেয়ে?
আমার নাম ? হা হা হা হা —
হাসছিস যে–
হ্যাঁ, তোর নাম কী বল?
কী বলি- সবাই বরাঙ্গনা বলে ডাকে , এটা আবার নাম হয়? হ্যাঁ গো বাবু হয় আমাদের মতো মেয়েদের ভালো নামে কেউ ডাকে না।
ভালো করে কথা বল? তোর নাম কী?
শরীর- সবাই তো এই নামে ডাকে ও চেনে।
এইসব কাজ করিস কেনো?
সে অনেক কথা, বাবু।
বলতে বলতে ভোর হয়ে যাবে।
আসুক ভোর, তবু তুই বল-
তুই লেখাপড়া জানিস?
কিছু জানি।
তবে কোথাও না কোথাও কাজ করতে পারতিস, এই কাজে কেনো এলি?
মায়ের ক্যানসার বাবার প্যারালিসিস, ভাইটা বিয়ে করে চলে গেছে বাড়ি থেকে, আমি আর যেতে পারিনি এদের ছেড়ে।
তবে এই কাজ কেনো?
এতো টাকা কোথায় পাবো- তাই বেছে নিলাম এই কাজ।
অনেক টাকা একবার বিছানায় গা ঠেকালেই।
আমি কিছু টাকা দেবো নিবি?
নেবো তবে কখন কোথায় গা এলাতে হবে বলুন।
থাম মেয়ে, আমি এ ধরনের মানুষ নই।
তবে কাজ ছাড়া টাকা দেবেন কেনো?
আমার ইচ্ছে হলো তাই।
আপনার ইচ্ছে আমি নাও তো মানতে পারি।
তুই এই কাজ করবি না কখনো।
তাহলে আমার চলবে কি করে?
আমি একটা ব্যবসা করি, তুই আমার এই ব্যবসায় সাহায্য কর।বল করবি?
করবো বাবু, আমাকে বাঁচালেন বাবু, আমি উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে পারিনি টাকার অভাবে।
ঠিক আছে, এই আমার নম্বর দিলাম। যোগাযোগ করিস, ঠিকানা বলে দেবো।
আমি চলে যাচ্ছি, মনে যেন থাকে, কাল চলে যাস আর এই কাজ কখনো করবি না।
এবার তোর নামটা বল?
আমার নাম শিউলি,
বাহ্ খুব সুন্দর নাম,
ঠিক আছে বাড়ি চলে যা এখনই,ওই দিকে আর যেতে না দেখি।
ঠিক আছে বাবু এখই চলে যাবো, আমার কথা গুলো যেন মনে থাকে, হ্যাঁ বাবু মনে থাকবে।
কাল চলে যাবো আপনার অফিসে, কিন্তু? কী কিন্তু?বল?থামলি কেনো? আমাকে যে সবাই চেনে বাবু, আপনার সম্মান হানি হবে না তো?
আপনি আর একবার ভেবে দেখুন বাবু?
আপনি সম্মানিত ব্যাক্তি আমি চাই না আমার জন্য আপনার কোন ক্ষতি হোক।
বেশি কথা বলার স্বাভব পাল্টাতে হবে-
আমার ব্যাপার আমি বুঝে নেবো তোর মাথা ব্যথা করতে হবে না ।
আমি যা বলেছি তাই করবি মনে যেন থাকে আজ চললাম কাল দেখা হবে।
অনেক দিন ওপাড়ে আঁধারে ছিলাম নিমজ্জিত,
কতদিন আর থাকা যায়-
তাই সময় বললো এপাড়ে আসতে,অনেক কাজ নাকি বাকি আছে- একরকম জোর করেই পাঠালো-
এলাম এক গোধূলিলগ্নে,
স্রোতের প্রবল বেগে ফেললো এপাড়ে।
হাতে কী যে একটা দিয়ে ছিলো ছাই বুঝতে কী
আর পারি?
একে তো প্রচ্ছদে ঢাকা আবার সদ্যোজাত, কিকরে
বুঝবো তাতে কী আছে তখন কিছুই বুঝিনি।
একটি খাম তার মধ্যে তরর্জনীর ছাপ,
বুঝলাম মন্থর গতিতে এতো বছর পর, আমাকে শাসানো হচ্ছে।
তোমার যতোটুকু কাজ ততটুকু করে তাড়াতাড়ি
ফিরে আসবে মায়া- মমতার সাথে বেশি বন্ধুত্ব করবে না, আসতে কষ্ট পাবে।
আমি বললাম এইতো এলাম রাতকে পিছে ফেলে
এখনো চোখেমুখে ক্লান্তির ঘোর কাটেনি এখনি
ফিরবো? তরর্জনীর সংকেত দিয়েই তো পাঠালাম
তুমি রাজি হলে বললে ডাক দিলেই এক ছুটে চলে আসবে- ঠিক আছে ডাক এলেই চলে যাবো।
যাইহোক এ-পাড়ের রূপ দর্শন করে করে চোখে
এলো জল- কর্মে নিযুক্ত হোলাম, চোখ মুছে মুছে
চলছে দায়িত্ব পালন।
ভাবছি ওপাড়ে ভালোই ছিলাম- কেনো পাঠালো বা কেনো আসলাম? যত করি দর্শন তত হয় রাগ- পারি না সমুচিত জবাব দিতে করতে পারিনা বিরুদ্ধাচরণ, এভাবেই কেটে গেলো কতগুলো।
হঠাৎ একদিন এলো ডাক ভাষাহীন এক সন্ধ্যায় তখন ক্লান্তিহীন পাকা কেশ, প্রণত শরীর চললাম গমনের গন্তব্যস্থলে।
অন্ত্যেষ্টি উৎসবের দিন তখন প্রশান্তচিত্তে করলো সবাই দায়িত্ব পালন, থাকতে পরিনি আমি তখন ছিলাম ও পাড়ের কাজে খুবই ব্যস্ত|
দুঃখ, সে তো যজ্ঞের উজ্জ্বল শিখা-
জ্বলছে অবিরাম,
প্রনয়, এক সময় দীপ্যমান তবে
নিত্য সংশয়ের সম্মুখীন হতে হয়!
প্রেম, সে তো খুবই দুর্লভ বিষয়-
বিরহ, এখন তীর্থে বাস করতে চায়-
যজ্ঞের উজ্জ্বল শিখায় আতুর নিকষিত প্রাণ!
মুক্তি পায় না তৃষ্ণাতুরা, পরিতাপের তীব্র দহন চলে অবিরাম,
গৌরব ক্ষয় হয়,
অশ্রুজলের উৎসবে স্নান সারা হয়!
মৃগতৃষ্ণার পূর্ণতা পাওয়া দুর্লভদর্শন
যজ্ঞের উজ্জ্বল দীপশিখায় দিতে হয় আহুতি,
ঘরণী প্রাণ কী ভঙ্গুর?