Categories
কবিতা

ইশারা : রাণু সরকার।

তুমি ইশারা করে কি
যে বলো-ধুত্ ছাই-
তোমার ইশারার কথা
আমি বুঝি না-
তবে বোঝার চেষ্টা করি,

ইশারায় কি জানি কি বলো
বুঝতেই পারি না,
কেনো ইশারায় ডাকো?
আমি তো একদিন বলেছি
তোমার হয়তো মনে নেই
বেশি দূরে যাই না-
যেতেও পারিনা-
ভয় পাই তুমি তো জানো!

যদি ফিরে আসতে না পারি,
হাত ধরে খাদের কিনারায়
যদি নিয়ে যায়!
মনটা যদি পিছলে খাদে
পড়ে যায়-

আমি বলেছি তো বেশি
দূরে যাই না,
কাছে পিঠেই থাকি,
হাত দু’টি প্রসারিত করে
উচ্চস্বরে ডাক দিয়েই দেখো না-

এক ছুটে চলে আসবো
তোমার বুকে!
মনে কষ্ট পেওনা বুঝিনা বলে-
বলেছি তো–
তবে বোঝার চেষ্টা করি,
কিন্তু বেশি দূরে আমি যাই না!

Share This
Categories
কবিতা

পারঘাটা ::: রাণু সরকার।।।

খেলতে যাবি? চলে আয়-
মাটিতে ছক কেটে চাড়া ভাঙা খোলার
কুটরো ফেলে এক পায়ে ভর দিয়ে খেলবো,
আয় না-চলে আয়–
কেউ বকবেনা তোকে।

তুই কে? মনে পড়ছে না তো-
ভুলে গেছি সব, দৃষ্টি ক্ষীণ শ্রবণশক্তিহীন,
ক্ষণের জন্য পড়ে মনে।
ভুলে যাবো এখন না এলে-

পাকা কেশ পড়েছে ঝরে দৃষ্টিও ক্ষীণ,
হাতে লাঠি ভালো করে ধরে হাঁটতে পারিস না,
পেটে ক্ষিদে থাকে সবসময়-
আধপেটা খেতে দেয় সেও ভাঙা থালায়।

ঘুমোবার জায়গাতে ইঁদুর খেলে লুকোচুরি
ঘুম ভেঙে যায় তাই না বল?
ভোরে চা খেতে ভালোবাসতি সেটাও এখন জোটে না-
সেই তো চলে এলো প্রথম বেলা সুরু,
শাসন আর শাসন এটা করো না ওটা করো না
এ– বাবা এটা ভেঙে ফেললে বলছি না সাবধানে চলবে-

আমার সাথে আয় শান্তি পাবি-

ওই যে– নদী, দেখেছিস না তো-
আমার হাত ধর-
ওপাড়ে যাবো নৌকো করে
তোর আমার মতো কত– সাথি,
খেলবো আয়-
কারোর গলগ্রহ হতে হবে না, কেউ বোকবেনা পড়তে বসা নেই, দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার নেই মানা-
ভয় পাচ্ছিস?
এখন না আসলে পরে পারবি তো এই মঞ্চে
অভিনয় করতে?
বড্ড কঠিন কিন্তু- ভেবে দেখ-

লাঠি নিয়েই দাঁড়াতে পারিস না কী করে অভিনয় করবি?
আয়- খেলবো চাড়া ভাঙা খোলার কুটরো দিয়ে আয় না চলে- বলছি তো কেউ বোকবেনা কেউ||

Share This
Categories
কবিতা

বাদলের প্রত্যাশা ::: রাণু সরকার।।।

আমার হৃদয়ে ফাগুনের বসন্ত জাগে না-
কেনো বলতো? আমি যে ক্ষুধাতুরা সবসময়
থাকি কাতর।
তোমার জাগতে পারে, অট্টালিকায় কর বাস
আহারের জন্য করতে হয় না দুশ্চিন্তা।

আমি আহারের সন্ধানে চলি কষ্টের তাপ
অঙ্গে লেপন করে।
প্রখর রোদের তাপে থাকি তৃষ্ণার্ত।

তখন কোথায় আমার বসন্তের কৃষ্ণচূড়া,
আম্র মুকুলের গন্ধ!
আমি দেখি না তাদের,আমার কাছেই থাকে
দেখার ফুরসত কোথায়,
আমায় দেখে কৃষ্ণচূড়া,পাশ দিয়ে চলে যায় গন্ধ ছড়িয়ে আম্র মুকুল-
আমার গায়ে ঘামের গন্ধ পায় তখন পাসকাটিয়ে
চলে যায় আমের মুকুল।

রোদের প্রখর তাপে
চাষের জমির বুক বিদারণ করে-
করছে আর্তনাদ-
সেও আমার মতো তৃষ্ণার্ত,
কবে যে আসবে মেঘের ভেলায় চেপে বাদল!

গাছেরা স্বপ্ন দেখায় মগ্ন, কত বাসনা তাদের-
প্রতিটি শাখায় আত্মগোপন করে আছে
অর্ধবিকশিত ফুল।

রাতে চলে বাতাসের সাথে কথোপকথন,
নবযৌবনা কচি পাতারা বিহ্বল বাদলের প্রত্যাশায়।
আমার বসন্ত ক্ষুধাতুর, মৌনতা অবলম্বন করেছে,
তোমার বসন্ত থাক প্রেম-প্রীতি নিয়ে!

Share This
Categories
কবিতা

বাক্যালাপ ::: রাণু সরকার।।।

মৃৎশিল্পী মাটি প্রমথিত কোরে
নানা রকমের পুতুল দেবদেবীর মূর্তি
আরো কত কী তৈরি করে।

একদিন মাটি সহ্যশক্তি হারিয়ে ফেলে,
তীক্ষ্ণ আর্তনাদ করে বলছে-
তুমি আমাকে প্রমথিত করছো শিল্পী-
তোমার কী একটুও কষ্ট হয় না হৃদয়ে?
মনেই করতে পারো না আমারও ব্যথা আছে-
নীরবে কষ্ট সহ্য করি কোন আওয়াজ করিনা।
তোমাকে যদি এভাবে কেউ প্রমথিত করে
তোমার কেমন লাগবে?

আমারও দিন আসবে গো শিল্পী সেই দিনটির অপেক্ষায় তাই নির্বাক থাকি।
তখন আমি থাকবো ওপরে তুমি থাকবে নিচে।

গভীর রাতে বাক্যালাপ মাটি ও মৃৎশিল্পীর
দুশ্চিন্তায় নিশ্চল থাকতে পারছে না শিল্পী,
এই কথা শুনে আহার নিদ্রা বন্ধ, আতঙ্কে
বিজড়িত,
কাজে বসে না তার মন।

ঠিকই বলেছে মাটি,
কী করে মাটি নরম করে মূর্তি গড়বো?
তাহলে কী আর কোনদিন মূর্তি গড়া হবে না-
কিন্তু এটাই যে আমার জীবনধারণের একমাত্র পেশা।

Share This
Categories
কবিতা

দুর্যোগের রাত (2) : রাণু সরকার।

এক বর্ষার বিকেলে হঠাৎ প্রচন্ড ঝড় উঠলো,ধুলো উড়ছে, লোকজন ছুটছে, কালপুরষ ও ছুটতে ছুটতে এসে আশ্রয় নিলো এক বাড়ির বারান্দায়।

নির্জন এই গলির আসপাশ সব বাড়ির জানলা দরজা বন্ধ। ঘন ঘন মেঘ ডাকছে, বজ্রপাত হচ্ছে,
জ্বলসে উঠছে আলো, আকাশে আঁকাবাঁকা বিদ্যুতের নীল রেখা টানছে মশালের মতো।

মূলধারায় বৃষ্টি নামলো,বৃষ্টির ঝাপটায় কালপুরষ ভিজে যাচ্ছে,বৃষ্টির জলে একেবারে নেয়ে ঠান্ডায় থর থর করে কাঁপছে।
ভীষণ অসহায় সে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে,বৃষ্টিতে কোথাও যেতে পারছে না,কালপুরুষ ডাক দিলো শুনছেন- অনেক বার ডাকার পর নারীর সুমিষ্ট কন্ঠ ভেসে এলো কানে।
ডাক শুনে খোলা জানালার দিকে তাকালো কালপুরুষ
এক সুন্দর অপরূপ নারী চোখে পড়ল তার।

প্রথমে বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল, ভাবল, এই আমি
কাকে দেখছি এ তো অরুন্ধতী, এটা তোমার বাড়ি?
হ্যাঁ আমার বাড়ি,
ভাবতেই পারছি না তোমার সাথে দেখা হবে,কেমন দেখো আকস্মিক ভাবে সব ঘটে গেলো।
অরুন্ধতী’ তোমার চোখ রহস্যময় একটুও বদলাওনি তুমি আগের মতই দেখছি তোমার চোখ বিদ্যুত হানে মৃদু হেসে অরুন্ধতী বললো তুমি তো বৃদ্ধ হয়েগিছো সেও মৃদু হেসে বললো বয়স বাড়াছে বৃদ্ধ তো হবই।

তুমি ছাড়া আর এখানে কে আছে?
কোন উত্তর দিলো না অরুন্ধতী মাথা নিচু করে আছে
দু’চোখ বেয়ে জল গড়াচ্ছে।
অনেকক্ষণ বাদে উত্তর দিলো সেই কলেজ লাইফের কথা তোমার মনে আছে? মনে নেই আবার খুব আছে।
তুমি মেরুদণ্ডহীন পুরুষ তা না হলে সেই রাতে তোমার বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিলো তোমার মা,কিছু বলতে ও করতে পারলে না।

ভাইয়েরা সব আলাদা হলো, আমার এই অবস্থা মা সহ্য করতে পারেনি স্টোকে আগে মা মারা গেলো বাবা নয় মাস পর সহ্য করতে পারেননি মায়ের মৃত্যু
কিছু টাকা আর এই বাড়িটা রেখে গেছেন ভারা আছে নিচের ঘর গুলো চলছে একা মানুষ আর কি।
দরজা খুলে দিলো বললো ভেতরে এসো-
ফ্রেশ হও খাওয়াদাওয়া করে যাবে,তুমি তাড়িয়ে দিয়েছো বলে তো আমি তা করতে পারি না।
এভাবে বলছো?হ্যাঁ বলছি আজ তোমার জন্য আমার সব হারিগেছে। আচ্ছা বলতো তুমি বিয়ে করছো?
না গো করিনি,কেনো?কি করে করবো তোমাকে ভুলতে পারিনি।এখন কি এক হতে পারি আমরা?
তা আর সম্ভব না নতুন করে যন্ত্রণার জন্ম দিতে চাই না
আমি বেশ আছি। তুমি আর এসো না,
তাহলে যে যন্ত্রণার উপদ্রব আরো বাড়বে।
ভীষণ কষ্ট করে যন্ত্রণা সেলাই করেছি ফোঁড় গুলো খুলে যাবে,এই বয়সে সুচের ফোঁড় সহ্য করতে পারবো না।

Share This
Categories
কবিতা

কেউ আসে না ::: রাণু সরকার।।।

আজকাল তেমন একটা কেউ আসে না,
আসলে তাদের আসার অপেক্ষাতে তো আজ আর নেই,
কী আর থাকবো- ঝুড়িঝুড়ি প্রশ্ন নিয়ে আসে আমার কাছে।

আসলে এতো প্রশ্নের উত্তর রাখার মতো টুকরি নেই আমার-
আমি আবার এতো ভার বহন করতে পারিনা, কষ্ট হয় ভীষণ।

প্রাপ্তবয়স্ক হলে কি হবে- বহন করার ক্ষমতা আছে বেশ,এতোটুকুও ক্লান্তি নেই ওদের-
সেবার এসে অনেক প্রশ্ন রেখে গেলো, ভালোবেসে না রাগ করে জানিনা বাপু।

আলগোছে রেখেছি তুলে নাড়াচাড়া দেইনি-
আমি একটু আটপৌরে জীবন যাপন করে থাকি, জগৎ সম্পর্কে তেমন কোন কৌতুহল দেখাই না- যখন যা হবার হবে।
জীবন কী বুঝতে ঋতু লাগেনা।

Share This
Categories
কবিতা

সাজো ঘটনা ::: রাণু সরকার।।

এক নারী, রোজ সকাল হলে চলে আসে একই জায়গায়, বসে কী যেন ভাবে অস্পষ্ট ও মৃদুস্বরে
কথা বলে।

একদিন স্পষ্ট ভাবে বোঝা যায় তার কথা,
সে- উচ্চস্বরে বললো কত গুলো বছর ধরে ভেবেই যাচ্ছি
কোথায় যে রেখেছি পাচ্ছি না খুঁজে-আমার বাড়ি কোথায়?

ভেবে ভেবে ক্লান্ত হয়ে মরে যাবি তবুও খুঁজে পাবি না তোর বাড়ি,
হা হা হা, হায়রে- নারীর আবার আছে নাকি বাড়ি?

যখন সুস্থ ছিলি একবারও ভেবে দেখার সময়
পাসনি,
মেয়েবেলা আর কৈশোর কাটে বাবার বাড়িতে,
এটাও জানিস না-
যৌবনকাল কাটে স্বামীর বাড়িতে,
যতদিন স্বামী আছে যৌবন আছে রান্না ঘরে কাটাতে হবে,
যে চাকুরি করে তার টাকা আছে তো সব আছে তার ব্যপার আলাদা। সব নারী যদি চাকুরি করতো হতো না আর তোর মতো।
তারপর তোর ছেলের ঘর- যদি ছেলে ও ছেলের বৌ ভালো হয় তবে থাকতে পারবি ও বলবি আমাদের বাড়ি, তোর বলা যাবে না।
ছেলে-বৌ না দেখলে তবে তোকে থাকতে হবে পথে-ঘাটে ,তুই তো চাকুরি করিস না, তোর টাকাও নেই-
পথে-ঘাটেও এখন আর থাকা যায় না রে নারী, দুরবস্থা, বৃদ্ধ হলেও ছাড় নেই।

এবার বল- তোর বাড়ি কোথায়?
বাড়ি খুঁজে খুঁজে শেষে তুই পাগোল হলি।
এই বয়সে স্বামীকে হারালি তারপর গর্ভের
প্রিয়জনের থেকে পেলি না আদরযত্ন শ্রদ্ধা-
নেই তোর প্রতি মনোযোগ তাই তো মানসিক
ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিস-
এখন সবাই তোকে বলে পাগোল—-

Share This
Categories
কবিতা

ভাবনা ::: রাণু সরকার।।।

একদিন সে- ডেকেছিলো-
করেছি অবজ্ঞা!
তার সোহাগ কে দেইনি সময়–
ভাবার অবসর পাইনি
তার অন্তরে এতো ব্যথা-
অন্যমনস্ক ছিলাম হয়তো!

বর্তমানে- তাকানোর স্মৃতি মনকে
পঙ্গু করে!
ঈষৎ ঝাঁকুনি দেয় শরীরে ও প্রশমিত করে পত্রশিরা!
বর্তমানে তার তাকানো কে প্রশ্রয় দেওয়া অলীক দুরাশা!

Share This
Categories
কবিতা

প্রতিবিম্ব : রাণু সরকার।।।

সবসময় আমাকে আগলে রাখে,
আমার সাথে নীরবে কথা হয়-
সুখ দুঃখের-
আমাকে ও খুব ভালোবাসে!

আমার চলার পথ ও নিজেই ঠিক
করে দেয়-
অন্ধকারে যদি ভয় পাই-
তাই তো বুকে জড়িয়ে রেখে কত
স্নেহ কোরে!

আমি আনন্দে দিশাহারা
চোখ বন্ধ করে ওর বুকে
মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ি–

ও আমার প্রতিবিম্ব!

Share This
Categories
কবিতা

ব্যথা : রাণু সরকার।

ব্যথা বলছে, আমারও তো ব্যথা আছে- কেউ কি তা বোঝে?

হ্যাঁ, বোঝে তো–
কেনো স্পর্শেন্দ্রিয় তো বোঝে।

তবে ভাগিদার কে ?
যে ভাগ বা অংশ পায় সে-
সে কে?
সে হচ্ছে অনুভূতি,
তোমার দেহের বিভিন্ন অঙ্গকে
রক্ষা করছে ব্যথা।
ব্যথার উৎস থেকে ব্যথা দূরে সরে যাবার সময় আরো যে ব্যথারা আছে তাদেরকে সাথে করে নিয়ে যায়,
ব্যথা নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে না, সে ভীষণই ব্যস্ত
তাই তো তার এতো কষ্ট।

ব্যথার সৃষ্টি কেমন তুমি কি কখনো বুঝেছো?
ব্যথা আসে ধীরে ধীরে- তারপর বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। তখন সে আহত ক্ষুধিত হিংস্রের মতো হয়ে যায়।

Share This