Categories
কবিতা রিভিউ

মৌরিফুলের কবির সুঘ্রাণ ও সৌন্দর্য : শু ভ ঙ্ক র দা স।

“ধুস,তাই কি কখনো হয়
রৌদ্রের সাথে বৃষ্টির পরিণয়”

এই অসামান্য আলোকময় প্রেমের কবিতাটি মল্লিনাথ চট্টোপাধ্যায়ের লেখা।
এবং হ্যাঁ,এই চরণগুচ্ছের মধ্যে একটি শব্দ ‘ধুস’ এর জন্য মল্লিনাথ চট্টোপাধ্যায়কে আমার প্রিয়তর কবি করেছে,প্রেমের কবি করেছে এবং আটপৌরে জীবনের সংবেদনশীল রচনাকার করেছে।
এক হাজার চরণের মহাকাব্যের পাশে এই দুটি চরণ সমানভাবে বসতে পারে,সসম্মানে এবং সাধনায়…
এটি আমার ব্যক্তিগত মতামত।
কিন্তু আমরা কজন কবি মল্লিনাথ চট্টোপাধ্যায়কে চিনি?
কজন তাঁর কবিতা পড়েছি?
কজন তাঁর সাধারণ, অতি সাধারণ জীবনযাত্রার মধ্যে এইসব অসামান্য অনুভবের কবিতা সৃষ্টির কাহিনি জানি!
জানি না!
তখন মল্লিনাথ নিজেই বলেন চায়ের বৈঠকী মজলিসি মুগ্ধতায়,

“চালচুলোহীন মানুষের কিছু কথা থাকে,কিছু প্রশ্ন থাকে।
কোনো কোনো গাঢ় দুপুরের আলোয় সে সব কথা
উথালিপাথালি ওড়ে
বানপুকুরের পাড় ধরে উড়ে যায় খাটপুকুরের দিকে
কোনোদিন তারা পাক খায় শহরের এমাথা ওমাথা
তারপর ফিরে আসে
ভিতরের ঘরে
এখানে চালও নেই, চুলোও নেই, সেখানে শুধুই
সে আর তার কিছু কথা,কিছু স্বপ্ন হামাগুড়ি
দিয়ে এপাশ ওপাশ করে”

হ্যাঁ,কবিতায় যে শহরের কথা বলা হয়েছে, তা হল পূর্ব মেদিনীপুরের ঐতিহাসিক শহর তাম্রলিপ্ত। এইখানে মল্লিনাথ চট্টোপাধ্যায় কবিতার বন্দর, মনের মালপত্র এইখানেই হিউয়েং সাংএর হাতে সঁপে দেবেন বলে ঘুরে বেড়ান সাদা পাজামা আর ফতুয়া পরে…
দিনরাত, রাতদিন।

আচ্ছা এই মল্লিনাথ চট্টোপাধ্যায় বললেন,কিছু কথা, কিছু স্বপ্ন, এইগুলো কেমন করে হামাগুড়ি দিয়ে পাঠকের বুকের মধ্যে সেঁধিয়ে গিয়ে তুমুল বেগে দৌড়াদৌড়ি করছে, একটু দেখে নিই,

এক

“বহু পুরাতন পয়ারের গায়ে যেখানে পড়েছে ধুলো
দিন শেষ করে সবে সাঁঝবেলা তরুণ সেখানে শুনলো”

দুই

“এমন করেই দিন কেটে যায়,উদাস হাওয়ায়
একলা একা বাঁচতে হবে তীব্র চাওয়ায়।’

তিন

” সহজ ছিল না আস্থা রাখা অপরিসীমে
তাই একা একা ভিজেছি হিমে ”

চার

“নদীর জলে নৌকা ভাসে
চোখের জলে তুমি
বুকের ভিতর বাড়ছে ব্যথার
নিবিড় মরুভূমি ”

পাঁচ

“রৌদ্র গন্ধ মেখে শুয়ে আছে নিঃসঙ্গ বিছানা
কেউ নেই তার বুকে আদরে সোহাগে
সে একা শুয়ে আছে একার ভিতরে”

আহ্ কী জ্যোৎস্নাধৌত অনুভব,” সে একা শুয়ে আছে একার ভিতরে ”
এ যেন কবি মল্লিনাথ চট্টোপাধ্যায়ের নিজের আয়না।তাই কবিকে অনায়াসে মৌরিফুলের কবি বলা যায়,মৌরিফুল যেমন সুগন্ধি ও সুস্বাদে ফুটে থাকে ছোট্ট ছোট্ট মাটিজুড়ে,তেমনই মল্লিনাথ চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা সেইরকম মন ও মননের মাটি জুড়ে বিন্দু বিন্দু বোধশব্দ হয়ে জেগে থাকে।
তাই তিনি মৌরিফুলের কবি।
এমন একজন প্রেমের গভীরতা ও পেয় হয়ে ওঠানো অক্ষরকর্মীকে কবি মৃদুল দাশগুপ্ত বলেন

“আমার বন্ধু মল্লিনাথ মরিয়া জীবনযুদ্ধে সেই কিশোর বয়স থেকে সে লিখ চলেছে।এমনকি নিজের দিকে ভ্রূক্ষেপ না করে,চারিদিকে তাকিয়ে ”

কবি শ্যামলকান্তি দাশ বলেন,

“শত দুঃখের মধ্যেও কবিতা থেকে মল্লিনাথ সরে যায়নি।অনেক উৎকৃষ্ট কবিতা লিখেছে সে।কবিতাই এখন হয়তো তার সহায়,সম্বল।একমাত্র আশ্রয়। ”

কবি সত্যপ্রিয় মুখোপাধ্যায় লিখলেন,

“প্রায় ৪৫ বছর ধরে নিরবচ্ছিন্ন কবিতা লিখে চলছেন মল্লিনাথ। গৃহশিক্ষকতার সামান্য অর্থকে সম্বল করে শুধু কবিতাকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থেকেছেন।কলেজ জীবনে এক সহপাঠিনীর প্রেমে ভেসে গিয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু শেষ পর্যন্ত বৃদ্ধ বাবা ও অবিবাহিতা বোনকে নিয়ে সারাজীবন কাটিয়ে দিলেন,সেও কবিতাকে ভালোবাসেই”

সহদেব প্রধান শ্রদ্ধার সঙ্গে লিখেছেন,

“সমস্ত উচ্চাশা লোভ খ্যাতি সংবরণ করে শুধু কবিতার জন্য দারিদ্র্যের কণ্টকাকীর্ণ রুগ্ন অথচ মর্যাদার পথ বেছে নেওয়া,এ লড়াইটা সবাই লড়তে পারে না,তাই সাধারণ হয়েও কবি মল্লিনাথ অসাধারণ। ”

তাই বোধহয় মৌরিফুলের কবি মল্লিনাথ চট্টোপাধ্যায় এভাবে লিখতে পারবেন,

“তুমি তো কতই সহজে
গিয়েছ ভুলে
নির্জন সেই হঠাৎ প্রেমের হাওয়া
তোমাকে সাজানো
অনামা রঙিন ফুলে
সারাটা দুপুর, তোমাকেই শুধু চাওয়া।”

এখন যদি আমরা এই রকম মৌরিফুলের কবির সুগন্ধি ও সৌন্দর্য না চিনতে শিখি, না বুঝতে শিখি,তাহলে আমাদের প্রেমে পড়ার অর্থ কী?
আমাদের ভালোবাসা প্রকাশের অন্ধত্ব ও অন্ধকার দূর হবে কী করে?
আপনি যা ভেবেছেন,প্রেমের প্রতি, নিজের প্রেমিকার প্রতি,আবার অপরদিকের ক্ষেত্রেও তাই সত্য, তা কিন্তু অর্ধ,অসম্পূর্ণ এবং অবয়বহীন।
তাকে সুন্দর ও সাবলীল করতে হলে প্রেমের কবিতা পড়তে হবে এবং অবশ্যই মল্লিনাথ চট্টোপাধ্যায়কে পড়তে হবে।
আপনি কবিতা চর্চা করেন,আপনাকে আরও বেশি করে পড়তে হবে। হবেই।
তাহলে মল্লিনাথ চট্টোপাধ্যায়কে, যিনি মৌরিফুলের কবি তাঁকে পাবেন কীভাবে?
একটা উপায়,আপনি সোজা তমুলক চলে যান,সেখানে মাতা বর্গভীমার দর্শন করে রাস্তায় যাকে হোক জিজ্ঞেস করবেন, মৌরিফুলের কবিকে কোথায় পাওয়া যাবে?
কেউ না কেউ বলেই দেবেন।
আপনি দেখা করে নেবেন,কবিতাও শুনে নেবেন।
তারপর হয়তো আপনি সরাসরি কবি মল্লিনাথকেই না চিনেই জিজ্ঞেস করে বসলেন, তখন উত্তর একটু দেরিতে পাবেন।
তার কারণ আমি ভাঙব না!
আপনি নিজে অনুসন্ধান করুন।
উপায় দুই, একজন নবীন কবি আছেন,তাঁর নাম অরিন্দম প্রধান,নাটক তাঁর প্যাসন,কবিতা তাঁর প্রাণ। তিনি আবার সম্পর্কের কবিতায় অসাধারণ অনুভাবী, তিনি একটি দরজা তৈরি করেছেন।
তাঁর কাছে গিয়ে সবিনয়ে বলুন,কবিবর, একটু মৌরিফুলের কবির দরজাটা খুলে দেবেন?
অবশ্যই খুলে দেবেন,কারণ অরিন্দম প্রধান নিজেই তো মল্লিনাথ চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে লিখেছেন,

“হে প্রেম,ক্ষুধা নিবৃত্ত করো
ছাইটুকু ফেলে দিয়ে শুষে নাও শব্দের হাড়
মানুষ আগুন ধরানো এক ঋতু পাখি
রঙের ঝোলা
পুড়ে যাওয়া প্রেম থেকে বেরিয়ে আসে
জীবনের সুতো ”
সেই সময়
আপনি সরাসরি মল্লিনাথে প্রবেশ করতে পারবেন এবং মল্লিনাথ সঙ্গে সঙ্গে মৌরিফুলের মতো বলে উঠবেন,

“দৃশ্যত তোমার মুখোমুখি হই না
অথচ
আমাদের দেখা শোনা হচ্ছে প্রতিদিন ”

—————————-//———————–

নির্জন কবি মল্লিনাথ
সম্পাদনা। অরিন্দম প্রধান
প্রচ্ছদ। অঙ্কন মাইতি
প্রকাশ। লিপি
মূল্য। ২৫০ টাকা

ওহ্ একটা কথা বলার ছিল,এটা ঠিক আলোচনা নয়,যাঁরা মৌরিফুলের কবির কোনোদিন ছবি দেখেন অথবা সামনাসামনি হননি,তিনি অনায়াসে কবি ও শিল্পী অঙ্কন মাইতির অপূর্ব আলো দিয়ে আঁকা ছবিটি দেখুন,মুগ্ধ হবেনই।
লিপি প্রকাশনার কর্ণধার কবি গৌতম ভট্টাচার্য এতো মনোহর মুদ্রণ ও অসাধারণ প্রোডাকশন করেছে যে,মল্লিনাথ নামক মৌরিফুলের কবির ঘ্রান ও ঘনত্ব ধারণা করতে কোনোরূপ কষ্ট ও কাঠিন্য মনে হয় না!

Share This
Categories
কবিতা নারী কথা

নারী : অজয় কুমার রজক।

রং বেরঙের রঙিন শাড়ি,
কপালে টিপ, খোঁপায় ফুল, অপূর্ব তুমি নারী।
জন্ম মোদের নারীর গর্ভে,
বুক ফুলে ওঠে তোমার গর্বে।
সকল মনীষী, মহাপুরুষ ,বীরপুরুষের জন্মদাত্রী,
তুমি দুর্গা, লক্ষ্মী- সরস্বতী, তুমি জগদ্ধাত্রী।
সংসারেও তুমি দশভূজা,
অতি যত্নে পরিবারের সকলের কর পূজা।
কখনো মা, কখনো বোন, কখনো মেয়ে ও প্রেয়সী।
তোমার সঙ্গ বিনা অসহায়, জীবন হতশ্রী।
জীবন- সংসার এগোবে না এক বিন্দু,
ভালবাসার আধার তুমি, তুমি করুণা সিন্ধু।
কর্তব্য, দায়িত্ববোধে অটল,
সংসারকে রাখো সর্বদা সচল।
কে বলে নারী বন্দী সুখী গৃহকোণে!
আজ সামিল তারাও কর্ম রণাঙ্গনে।
চাকুরী করে, প্লেন চালায়, মহাকাশে দেয় পাড়ি,
নয় অবলা, চালায় মোটর আর সংসার গাড়ি।
নারীদের অবহেলিত করছ যারা,
পাষণ্ড, নির্মম, অধম তারা।
জেনো দুই বংশেরই প্রদীপ নারী,
মুছে যাক সকল দখলদারি।

Share This
Categories
কবিতা

নাচুনে বসন্ত :: রাণু সরকার।।।

বসন্তে শুধু কোকিল নয়
অন্যান্য পাখিরাও সুমধুর সুরে গান করে আর এডালে-ওডালে নেচে বেড়ায়,
তবে কোকিল বেশি ডাকে।

গভীর প্রণয় জাগে এই বসন্তে,
কামোচ্ছ্বাসে সঙ্গী খুঁজে
বেড়ায় পুরুষ কোকিল- তাই সুরেলা স্বরে ডাকতে থাকে-
সঙ্গীকে পাবার তীব্র
আকাঙ্ক্ষা যখন অতন্দ্র হয়
তখন আসে তার সঙ্গী সঙ্গম করতে।
এই সুরেলা ধ্বনি জীবাধারে ছড়িয়ে পড়ে,
অব্যক্ত থাকে জীবাধারের হৃদয়ে ঘনিষ্ঠ ভাব!

অভিলাষ অতন্দ্র হয় নানান নাচুনে-
পদ্য-গদ্য-গীতিকাব্যতে।

বসন্তের এই বাতাসের গন্ধ শুঁকে টের পাই
অতীতের স্মৃতি-
চঞ্চল হয় কবির মন, কত কি জাগে মনে।

বসন্ত তুমি কত সুন্দর সোহাগ মাখাও হৃদয়ে।

Share This
Categories
কবিতা

পোয়াতি ::: রাণু সরকার।।।

এসে দেখি তুমি অবহেলায় ঘুমিয়ে আছো-
কেনো তোমার শরীর খারাপ বুঝি?
এতো খোঁজ নিচ্ছো যে-
তুমি কি ভালোবাসো?

না, বাসি না-
ভালো না বাসলেও বিচ্ছেদের ব্যথাটা ভালো বুঝতে পারি।

ভালো না বেসে কিকরে বোঝো?

বুঝি গো বুঝি, শোন তবে-
আমার ভালোবাসা পোয়াতি হয়েছিলো-
ভরা মাস তীরটা এসে জঠরে বিঁধলো,
জীবনমরণ কঠিন সমস্যা আমি বেঁচে গেলাম
কিন্তু গর্ভেই মৃত্যু ঘটলো আমার ভালোবাসা জন্ম নেবার সুযোগ পেলোনা!

Share This
Categories
কবিতা

শেষ সফর :: রাণু সরকার।।

শেষকালে যখন সফর হবে শকটে
দূরের রাস্তা দিয়ে মন্থর গতিতে চলবে পা,
মুখে ধ্বনিত হবে নাম!
সদর দ্বারে দেখবে দাঁড়িয়ে, দু’গাল বেয়ে পড়বে ঝরে শুক্তি,
একটু দাঁড়াতে বোলো, অকুন্ঠচিত্তে দু’একটি দিও আমার গালে ছড়িয়ে!

তোমার দাম্ভিকতা হয়তো বা যাবে চলে,
তখন গর্বে আপন কুলায় হবো বিলীন!
তখন পারবে কি সোহাগের চিহ্নে সজ্জীকরণ করতে
শৈলপ্রান্তে?

বৃথা গেলো যে জনম
শৈলপ্রান্তে না হয় একটু অধরের স্পর্শ দিলে!
তখন ছিলো হতচেতন মন,
আসবো আবার ফিরে তখন তুমি থেকো পাশে পাশে!
ভুলভ্রান্তি গুলো সব শুধরে রেখো আগে থেকে-
জুঁইয়ের মালা রেখো কিন্তু দুটো!
মুখোমুখি বসবো হাতে হাত রেখে!

Share This
Categories
কবিতা

নারী হওয়া কি পাপ : রাণু সরকার।

নারী কেনো সইছিস এতো তাপ?
বলতে পারো—
কেনো?
নারী হয়ে জন্মনিলে মানুষের চোখে পাপ-

রাস্তায় চলতে গেলে হতে হয়-ইভটিজিংয়ের শিকার
রুখে তোকে দাঁড়াতে হবে মানুষ গুলোর
মানসিক বিকার-

“পণ” না দিলে নির্যাতন-করতে হবে মোকাবিলা-
পরাধীনতার শিকল পরে সহ্য করিস জ্বালা,
পায়ের শিকল ছুড়ে ফেলে-পরনা জয়ের মালা-

দূর্গা রূপ ধারণ করে করবি-দৈত্য-দানব বিনাশ-
তোর পিছনে অনেক নারী ভয় কেনো তুই পাশ-
তোল না প্রবল ঝড়-
সেই ঝড়েতে শত্রু-অনেক হবে নাশ-

বীরাঙ্গনা হয়ে-
এগিয়ে গেলে-সব গ্লানি ভুলে যাবি-
রুখে যদি দাঁড়াতে পারিস
সুন্দর এক দিন আসবে জানবি।

Share This
Categories
কবিতা নারী কথা

নারীর তপ্ত আঙিনা : রাণু সরকার।

ভালোবাসার ছোঁয়া পেলে নারী পৌঁছে যায় তার শৈশবে।
যৌবনের প্রারম্ভে নারী খোঁজে পুরুষের অঙ্গের ঘ্রাণ,
খুঁজে ফেরে যথার্থ পুরুষের সঙ্গ,
কে হবে তার জীবনের প্রকৃত বন্ধু-
জীবনপ্রবাহে ভাসিয়ে দেবে স্বেচ্ছায়,
এগিয়ে চলার পথে প্রতি মুহূর্তে রাখবে তার হাতে হাত।

প্রেম সদা অমলিন-
শুভ্র বেলি-রজনীগন্ধায় অর্ঘ্য ক’রে দেহ-মন অর্পণ,
নারী করে সমর্পন সুখে দিন যাপনের আশায়।

পুরুষ প্রেমিক স্বপ্নময়….
হৃদয়ে অনুরণন, কাব্যময়তায় মায়াজালে বদ্ধ
নারী,
প্রেমের আলিঙ্গন পেলে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে আবদ্ধ হয়।

বিবাহ হয় দু’টি শরীরের নিবিড়তায়-
ভূমিষ্ঠ হয় দেহ-মন দোঁহে,
মিলনের আনন্দে পরম মোহে স্রোতে ভাসে!

ক্রমে প্রেমিক পতিত হয় পতির আসনে-
আস্তে আস্তে আসে সংম্পর্কে চরম সংঘাত,
জীবনটা তিতিক্ষায় কেমন যেন কেটে যায়।

সৌভাগ্যবতী নারীর জীবনেও দেখা মেলে কৃষ্ণগহ্বর!
অনেক কিছু পেয়েও যেন না পাওয়ার যন্ত্রণা-
কার যেন অভিশাপে ভরে থাকে নারীর জীবন।

Share This
Categories
কবিতা

কথামাত্র : শীলা পাল।

ভুলবো না কোনও দিন
চতুর্দশী কন্যাটি লজ্জায় লাল হয়
এই কথা টি বহুজন বহুবার বলে গেছে
ভোরের বেলায় চাঁপার গন্ধে মিশিয়ে দিয়ে
দ্বিপ্রহরের ব্যস্ত সময় চোখে চোখ রেখে
মুগ্ধতার ঝিলিক মৃদু হাসি মৃদু ভাষে কত
কথার বন্দনা রচনা হয়ে যেত
বৈকালের নিবিড় বাঁধনে কত মধুর কাব্যকথা
শুনতে শুনতে চুপিচুপি সন্ধ্যা এসে আড়াল
হয়ে দাঁড়াত
তখন জানা হয়ে গেছে স্তুতি আর বাস্তবের
গতিপথ দুটো ভিন্ন
না বলা কথা টাই অবশেষে জানাল
সবাই ভুলে যায় কিন্তু ভুলব না বলে।

Share This
Categories
কবিতা

আহা এসো এই বসন্তবাতাসে : শীলা পাল।

এযে আমার প্রাণের সখার মতো
মধু বাতাস এসে জড়িয়ে ধরে কি আহ্লাদে
আমার রঙের খেলা যায় নি এখনও ফুরিয়ে
সে কথাটি বলে যায় বারে বারে
পলাশগুলি ফুটেছে কত আহ্লাদে
শিমূল বনের উদাস হাওয়া বলে যায় কানে কানে
সব ছেড়ে দিয়ে এসো আমার কাছে
আমার রঙে করব তোমায় রঙীন
আমার চোখ দুটি বুজে যায় আবেশে
কে যে ডাকে এমন করে বুঝতে পারিনা
লাল রঙে যেন ঢেকে গেছে চারিদিক
শরীরে আমার টুপটুপ
করে ঝরে হলুদে মাখানো পলাশের ডাল থেকে থোকা থোকা হলুদ ফুল
এত রঙ আমি রাখি কোথায়
আমি দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরি বুকে
এমন ভালো আর কি কেউ বাসতে পারে
বসন্ত যে এসেছে ভুবন জুড়ে
এসো আমার প্রাণে– –বলি মনে মনে বলি হৃদয় দিয়ে।

Share This
Categories
কবিতা

প্রেমিক : শীলা পাল।

আমার পছন্দ ছিল
হাল্কা সবুজ রঙ
তুমি দেয়ালে সেই রঙ লাগিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলে পছন্দ ?
আমি হেসেছিলাম
আমার হাসিতে কী আছে জানি না
সে সবসময়ই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে আগ্রহ ভরে
আমি কখন হেসে উঠব
এই আশায়
বিশাল শরীর তার
হাল্কা আমিকে নির্দ্বিধায়
বুকের ওপর তুলে নিয়ে
একতলা থেকে দোতলা তিনতলা পেরিয়ে ছাদে নিয়ে গিয়ে বলত এবার আকাশ দ্যাখো
আমি ভয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে আকাশ দেখতাম
সেই আকাশের দুটো স্বপ্নময় চোখ দেখে আমার আঁখি আবেশে বুজে যেত
একটুও স্বপ্ন নয়
আমার হৃদয় দিয়ে দেখা একটি জীবন্ত প্রেম।
সদ্য যৌবনার এরকম
প্রস্ফুটিত ফুলের মতো
হাসি যে তার বড় প্রিয় ছিল
এখন এই দিনশেষে
তার আড়বাঁশি টি বাজবে কখন বসে আছি।

Share This