Categories
কবিতা

চন্দনকাঠের চাঁদ, চিতা ও চমৎকার :: শু ভ ঙ্ক র দা স।।।


অনশ্বর গুহার ভেতর ছুটন্ত স্পন্দন
সময়রাক্ষসের চোখে তুচ্ছ, অতি সামান্য অথচ ব্রহ্ম-উদ্যম
তাতেই অলীক নির্মিত গোটা ভুবনের সম্রাট ও সিংহাসন!


মাঘী সংক্রান্তীর কোনো তারাখসা রাত
রক্তমাংসের পুষ্পবৃষ্টি, ঘড়ির কাঁটার উল্লম্ফনসম
ভয়ার্ত জন্ম-আঙুল,চেপে ধরে অনিদ্রিত,অগাধ সফেন স্তন!


কোনো অঙ্কে বিভাজিত নয় অঙ্ক অথচ দৃশ্য শুরু
দিগন্তে মিশে যাওয়া সাদা বলাকার পাখা,সবুজ শীষের শরীর বেয়ে নামা শিশির, ধানসিদ্ধ উনুনের লালাভমুখ
অরব আয়োজনের সাক্ষী
পথচলা গুহার চিত্রের শিকারের পর অবিরাম শান্তি।


অভিযানে অ্যামিবার আলস্যমাখা চিহ্ন বুকের মধ্যে
এনেছে বক্বল বিশুদ্ধতা, গতি তো দুর্বোধ্য, বৃক্ষের পাশে
মাথায় ময়ূরপালক বেঁধে চোখ দেখানো অসূর্যকে
রূপকথার চেয়েও অসীম,অবধারিত..


অরণ্যের সকল পোশাক ফেলে আলোর স্বভাবসত্য
স্নায়ুকিরণ চলাচল সেই মহাশূন্য থেকে পিঁপড়ের পায়ের নূপুরের ধ্বনির মাঝে, যেখানেই আর্তনাদ
প্রার্থনা শিশুহাতের,শুভ্রতার মেঠো অনুবাদ


জলজ পরিবার,শ্বাস ভরে নিয়ে সপরিবারে বাঁশি
হয়ে ওঠার নিরলস নিমগ্নতা,বসুন্ধরা বিজয়ের হাসি
কোনো জীবাস্মস্মৃতির ভেতর গোপন রেখে
এই উপলব্ধি, হৃদয়ের সুউচ্চতা ও স্থাপত্য কল্পনাতীত!


ক্ষমা শব্দের ভেতর রক্ত,শূল,কাঁটা আর বহনকারী মিথ্যের দোষারোপ, আশেপাশে সবই শব,শুধু শিরের
মাঝখানে জাগ্রত তৃতীয় নয়ন
জ্বলছে, জ্বলছে নারীত্ব,পুরুত্বের কাঠে ও কাঠামোয়..


তুষারক্ষেত্রে অযুত পায়ের চিহ্ন পাবে না,শিবরেখা
বরাবর পড়ে আছে পৃথিবীজন্মের কথা,কোথায় ছিল সেই মহাজাগতিক ছিদ্র, মাতৃযোনী,বিস্ফোরণ!
সকল প্রাণ,আসলে ধ্বংসাবশেষ…


স্বপ্নের ভেতর সারাৎসার সিঁড়ি, অথচ কতক্ষণ স্থায়ীত্ব!
হৃদয়ের সক্রিয় শব্দের মূর্তি, সে দৈব হোক বা অদৈব
অঘোষিত সিদ্ধান্ত এই,নিজের সৃষ্টিকে প্রশ্ন না করে
নিজেই উত্তরলিপি পাঠ করো নিজের আয়নায়…

১০
পর্যায়ে রেখা মাত্র দুটি, আদম ও ইভ, সত্যি কোনো
গল্পের নটেগাছ না হলেও প্রতিটি মাটির নিচে শিকড়
যাচ্ছে, কোন টানে? চেতনার অধিকৃত প্রাণে
অস্ত্রগুলি পরীক্ষিত, শুধু আহত ও পরবর্তী শুশ্রূষার
কাহিনি শিশু শুনতে থাকতে মাতৃগর্ভে

১১
অন্তহীন সন্তরণে জল পেতেও পারো আবার নাও পেতে পরো,সাঁতার অশেষ,অমোঘ এবং অপরিবর্তনীয়
নদীর কাছে নৌকা মিলনপ্রত্যাশী,অথচ স্থিরতা নেই
পিতা-মাতার চক্ষু-চমাড়া,সেই ধ্বনিত প্রকাশ

১২
খাঁচা নির্মাণই দেবত্ব,এই দিলাম চাঁদ,এই দিলাম জোছনা
এই দিলাম জোনাকি,এবার আর্ষপ্রয়োগের আবেগে
বিদ্যুৎ, বিনত প্রস্তাব, বৃষ্টি ও মুখর-মেঘে
সব কাঁচাপাকা সন্তানই জয়ের স্মারক…

১৩
আঁচলের হলুদ শস্য, আলপনা সেই স্বর্গাবোধি
অনিপুণ হাতের সোহাগ মাখানো সহবাস
লক্ষ্মীবিদ্যা শেখানোর যুগান্তর শাঁস, যেভাবে নতুন ফসলের গান,মনকণিকার অভিভাবক,অযান্ত্রিক!

১৪
জ্ঞানের কাছে থেমে আছে যা,ক্ষুধার সৈকতস্বাদ
রোদপোহানোর মতো পুঁথিপাঠ,ধর্ম-মোক্ষ-মহৎমঠ
সবই শিশুপালনের মতো আবর্তন
শুধু দীর্ঘরাত পেরিয়ে একটাই লড়াই,মৃত্যু প্রতিদ্বন্দ্বী

১৫
বনমানুষের স্বভাব ঢেলে দিয়েছে ঈশ্বরের অবয়বে
নিজেকে পোশাকের মুখোশে,কাপড়ের সৌজন্যে ঢেকে
নিজেই আবার দায়মুক্ত হয়ে নগ্ন হয় রাতে ও দিনে
কে অন্তরাল? নীলকন্ঠের রেখেছো মোহিত আড়াল!

১৬
অকস্মাৎ জানতে পারল,অনুভব ছাড়া কোনো দরজা
বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে নেই,প্রজ্ঞা, প্রেরণা, প্রদীপ এবং প্রীতি
ফুরিয়েও সঠিক সন্ধি বা সহবাস হয়নি
নিহত চোখের নিচে মুঠো মুঠো বলিরেখা

১৭
সেই মরুপথে যাত্রা, নাভিসরোবরে স্নান,স্বরূপের
সাহসসমগ্র ইতিহাসের অক্ষম পাতা,তার ওপর
মৃতচিতাবাঘের ওপর ছবি তোলার মতো কারুকার্য
অবাক পানীয়,পিপাসার কীরকম সযত্ন সঞ্চারণ!

১৮
জড় ও জমির অধিকাংশ চর্চা ও চেষ্টা, অন্বেষণ
সেইসঙ্গে নরম,তুলতুলে,পদ্মপ্রথম শরীর,খনন
বাদবাকি শুধু শ্রদ্ধাবান হাহুতাশ আর পড়ে থাকে
কিছু জরাসন্ধ ইন্দ্রিয়, যাদের নগ্ন দ্রৌপদীদহন ছাড়া
কিছু বিদ্ধ মহাভারতীয় তীর

১৯
সহসা প্রেমের সারি সারি সঙ্কল্প কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারিকার তলদেশ পর্যন্ত একে-অপরকে
প্রতিষ্ঠিত করতে,দৃশ্য, দৃশ্যের পালিশ,গান,গানের গভীরতা,প্রস্তাব, প্রস্তাবের সংস্কৃতি, সেই সরলতা প্রথম কদম ফুল

২০
অতি কষ্টে শ্মশান সন্ধিতে আসে,আশির কাছে
বা তারও ঢেলা-ভাঙা আগে দেখিয়ে রাখে চতুষ্পদ
বা আয়তক্ষেত্রের মাপ,স্বয়ং পৃথিবী ছেড়ে যাওয়ার
ছায়াছবি,তবুও সরাসরি মুহুর্ত, চুম্বন

২১
উজ্জ্বল নীলগ্রহ একাই বুকে প্রান ভরে নিয়েছে
যেভাবে ডুবসাঁতার দেওয়ার আগে ভরে নেয় দম
মেঘের আসবাব, মাঠের মাধুকরী, পুষ্পের প্রস্তাব
সব স্বয়ংচালিত ক্ষুদ্রকে করে সুবৃহৎ

২২
কেবল কি কাঠামো? যাবতীয় খড়,মাটি,অস্ত্র
যে গড়ে,তার ফুসফুস, পেট,চরিত্রসংশোধন বিন্যাস
কোনো নক্ষত্র মৃত ছাড়া মাটি ছোঁয় না
ঈশ্বরও ধাতবস্বর, আঘাত হলে আকৃতি পায়

২৩
সরলতা ন্যাংটাশিশুর মতো সকলের গৃহের সামনে ধুলোর গড়াগড়ি দেয়,হাসে,দুর্ঘটনায় কাঁদে
পুনর্বাসন সচেষ্টায় সর্বস্ব বিলিয়ে দেয়,শুধু অশান্ত কিছু ছাঁচ দরজা-জানালা বন্ধ করে

২৪
শব্দহীন বেদনার বাতাসে এগিয়ে চলে মহাশূন্যকারিগর
নিজের নিঃশ্বাসের সঙ্গে কথোপকথন, নিজেকে স্পর্শ
করে প্রাণময় করে তোলে পরবর্তী পর্যায়
সেখানেও প্রবাহিত সম্পর্কের সুজনিশাক, তরতাজা

২৫
উৎসমুখে আগ্নেয়ঘর, একটি মাত্র শিল্পী বেঁচে আছে
তাঁকে করুণা করে কেউ সর্বশক্তিমান বলে বাঁচতে চেয়েছে,স্বর্গের কল্পনার চেয়ে মহৎগুণ এই
পিতৃপুরুষের শেষযাত্রায় মাথায় হাত রেখে,নিরাময়ের
নতুন গল্প শোনানো,সত্যি হলেও হতে পারে…

২৬
চাঁদের সংগীত যেকোনো শরীরকে হরিতকীমন্দির করে তুলতে পারে,জীবাণুর সকল পরিচয়, দৃষ্টি, সহবাস
অথবা পরাক্রমী উৎপাদন ভুলিয়ে রাখে নন্দনতত্ত্ব
শুধু লড়াই নেমেছে সমুদ্রের মতো,পুতুল হতে পারবে না!

২৭
শেষপাতে ঈশ্বর এসে খাবেন বলে,পা-ধোয়ার জল, তুলানরম বক্বল,পরমাসুন্দরী সম্ভাষণ সাজিয়ে রেখে
অনুসরণীয় কোনো নৃত্য-গীত এবং স্তব প্রদর্শিত
শুধু ঈশ্বর পশু-পাখি-গিরিগিটি-কেঁচো অথবা গৃহপালিত
প্রীতিময় পুরাণপাতা,সেটাই রহস্য!

২৮
নদী যেদিকে বহমান,পাহাড় যতটা আকাশভেদী
বৃক্ষের শিকড়কৌশল, সব ভাস্কর্য ও স্থাপত্য শেষে
যা রক্ত-ক্লেদ-কফকে রূপময়-শ্রেয়শ্রেষ্ঠ করেছে
প্রণয়,অশ্বিনীকুমারের রথচক্র ঘষটে গেছে মাটিতে

২৯
পাথরে খোদিতরূপ, অবিশ্বাসের আলোড়নে যদি
সকল মূর্তি ভেঙে যায়,জড়ো করা প্রসাধন, প্রভাব
প্রতিশোধ আগুনে পুড়ে,ছাই
সেই ছাইয়ের ওপর অবতার ঘুমায়,ত্রিশূল শর্ত হয়ে

৩০
চাঁদের দুপিঠেই চাবুক,কুমিরের রোদ পোহানোর মতো
বিস্ময় শুয়ে আছে প্রকাশ্যে,নিজেকে এই যজ্ঞের আগুনে উৎসর্গ করেছে,অষ্টধাতুর সঙ্গে মিশিয়ে
চাঁদের চেয়েও অপরূপ অপরাধ করবে বলে…

৩১
নির্মাণ মাইলের পর মাইল হেঁটে আসে,সেখানে সৌখিন পরীক্ষায় অভিষেক, মুকুট বানানো হয়নি বুকের মাংস কেটে,ক্রিয়াধর্মের সূত্র ধরে অপেক্ষা ফিরে আসবে
যা কিছু অন্তর্গত ভালো,ভালোর মহিমা

৩২
হৃদয় সশস্ত্র ডুবোজাহাজ, নিজের শরীরে সামুদ্রিক
তা নয়, যার দর্শনে শ্বাসকার্য চলে,সেখানে যুদ্ধ, যুদ্ধবিরতি,কেন এই মহাকর্ষীয় আন্দোলন, মুখ,মুখর
কোলাহল,মধ্যমণি,সেই মুদ্রা ও মুগ্ধতা

৩৩
হৃদয়ের পান্ডুলিপি কেউ না কেউ সংবিধান ও সম্রাটের
পায়ের কাছে রেখে,মুক্তি ও মধুরিমা
এই যে অবাধ আবেগ,তার শাসিত কেন্দ্রীয় নিউক্লিয়াস
সবই দাগ রেখে,শুধু উষ্ণতাকে তপসিলি তাম্রযুগ!

৩৪
পদাবলির পাতা ইঁদুরের মুখে,খুদের আকাল
মাঠে মাঠে সবুজের লাশ,হাঁড়ি,কলসি,বাটি,চাল,ডাল
আর বৈষ্ণবী রাত,কন্ঠিবদল করে রৌদ্রবিক্রয়
অপরাহ্নে চক্ষুস্থির, এতো পাঠ বাকি নারীর…

৩৫
একটি পরিচ্ছন্ন কাল,তাই কম্পিত হাতের ওপর রাখা
জয়ের সকল চিহ্ন দিয়ে জলেডোবা রাস্তাটুকু চলাচলের
যোগ্য করে,বিশ্বরূপদর্শন। অতীত,ভবিষ্যৎ ও বর্তমানকে
জানার এই প্রক্রিয়া, সৃষ্টির নিয়ামকের দাঁড়িপাল্লা

৩৬
আত্মা কোথা থেকে নিয়ে এসেছে আনাজ,মাছ,মাংস
স্নানের পর ত্রিপিটক খুলে সাদাবস্ত্র নামিয়েছে শির
সেই শিরে চুম্বন করছে সশরীরে নূর, পরমহংসের কাতর
কান্না মিশে আছে অস্তিত্বে,এবার পোড়ায় মায়া,গাছের ছাল

৩৭
আমলকি করতলে রেখে বলছে, মানুষ নয়,মানুষী নয়
লিঙ্গভেদে শুধু মাতা, নিত্যসিদ্ধ,শুধু উচ্চারণ, পিতা,
মুমুক্ষুবৃক্ষ,মাঝখানে সাধনবর্গ সেই যোনিপথে চক্রাকারে
চমৎকার

৩৮
অরণ্য থেকে বেরানো শ্বাস,শূদ্রের হাতে তৈরি মারণাস্ত্র
বালক চলেছে সাধু-দর্শনে,বালিকা ধরেছে,বালকের
শরীরী পটবস্ত্র, যা নিজের শরীর দিয়ে তৈরি
ক্ষত্রিয় অবাক,বৈশ্য বিগলিত,শুধু একটি জ্যোতিরেখায় ব্রাহ্মণ শূদ্রের পায়ের ধুলোয় মন্ত্র লিখছে

৩৯
বেদান্ত-আয়াত এবং বাইবেলের ধ্বনিত চমৎকার ধ্বনি
একশো শতাংশ আন্তরিক জেনে,বদ্ধজীব, আরও আরও
বদ্ধ হয়ে হাসে,সেই হাসিতে বিদ্যুৎ চিরে যায়
কৃষক শুধু গলায় হাড়ের মালা দেখিয়ে বলে
ক্ষিদের পাতা খুলে খুলে নোঙর বানাব…

৪০
সহসা শেষ কথা,শেষ কথাই,মৃত্যুর মতো সংবাদ
মৃত শোনে না,কোনোদিন, অথচ দশ সহস্র গোধন ও সমপরিমাণ স্বর্ণমুদ্রার আশায় সন্ন্যাসী ও সংসারী
সেই সংবাদের সুষ্ঠু আশায় মৃত্যুকে ভেট দেয়…

৪১
সকল ভিক্ষুক হাত জড়ো করে নদীর ওপর,যাদের শরীরে এখনও রাজসভা লেগে,কষ্ট বেশি তাদের
আর যাদের গায়ে লেগে আছে পথের ধুলোয়
তারা স্নানমাত্র সারস

৪২
শ্বাসকার্যে ঈশ্বরের সন্ধ্যা ও সকাল।গোলাকার একটি বলীয় প্রক্রিয়া, তার ওপর মাটি-পাথর-মাংসের নামকরণ ও বুক চিতিয়ে ওঠার নমুনা,সুনিপুণ বিবরণী হিসেবের
ঐ পর্যন্ত কি আকাশ? হলুদ হ্রদের হাহাকার,শুধু সূর্যপ্রতিম সবুজ সবুজ মদের মতো ঘাস!

৪৩
অমরত্বের ভুল বোঝাবুঝি, উপাস্য তাকেই করেছে যে সবচেয়ে ক্ষুরধার অস্ত্র ধরতে পারে,সেই হত্যার সারাৎসার লীলা,এখন আহ্নিক গতির পৃষ্ঠা ছিঁড়ে
ভুবন গড়ার খেলা,খেলার অধিক অভ্যাস,এমন কি ঈশ্বরীয় বিশ্বাস!

৪৪
ঝুলন্ত মাটির বারান্দা, ধনুকহাতে বীরশ্রেষ্ঠ,স্বর্গামাধুরীর মতো মোহময়ী নারীর কোমরে হাত ক্রেডিটকার্ড ধরে থাকা কুবের,তার অনেক নিচে সিনেমার পোস্টারের নিচে খালি পেটে,না,অভুক্ত নয়, অশ্রু চেটে চেয়ে আছে
নবযুগের নায়ক

৪৫
যেকোনো বৃহৎ রাক্ষসের চেয়ে শক্তিশালী কাম,নিসর্গ, দেব-দেবী,পক্ষীরাজঘোড়া,রূপকথা,সমৃদ্ধনগরের জলপথ,আবিষ্কার, আরামপ্রিয় নিদ্রা,নত হয়ে থাকা মুনি-ঋষির শির
তার চেয়েও জন্মগ্রহণ,মানুষের, মানুষের বাচ্চার..

৪৬
মানুষের বসবাসযোগ্য ভূমি,লেখো,অশ্রু, অশ্রু, অশ্রু

৪৭
অনুতাপ চেতনার শেষ তলে ঢেউ তোলে একা
যেন নিঃসঙ্গ সৈনিক
মহাভারতের কোনো অধ্যায়কে ক্ষমা করবে না

৪৮
এখনও প্রেম সমর্থন পায়নি,জিততে কোনোদিন পারেনি!শুধু অপেক্ষার পাথুরে রেখা অথবা জীবাশ্ম হয়ে
স্থির,কোনো এক জীবন্ত হৃদয়ের

৪৯
মৃতদেহের ওপর জন্মান্তরের গাছ,সেই গাছে ধুলো…

৫০
আবার চোখের পাতায় লেখো, অপেক্ষা,অপেক্ষা, অপেক্ষা…

উৎসর্গ। কবি শম্ভু রক্ষিত
চিত্রঋণ।ফেসবুক

————————//———————-
২৫শে ডিসেম্বর, ২০২১.©Suvankar Das.Haldia.

Share This
Categories
কবিতা

একান্তে :: রাণু সরকার।।

খেলেছি কত তোমার সাথে
যখন আমার শুরু হলো প্রথম মেয়েবেলা,
তখন চিনতো কি আমাদের মন-
কে তুমি আর কে আমি!

ছিলোনা আমাদের ভয় লজ্জা অপমানের জ্বালা,
তখন সেই যে আমার প্রথম শুরু বেলা-
মনটা ছিলো বিশ্রামহীন অস্থির উড়ু উড়ু,
থাকাটাই তো স্বাভাবিক।

সকাল সন্ধ্যা রোজ আসতে না তুমি বলো ডাকতে,
যেন তুমি আমার কোন এক কালে ছিলে ভীষন আপন জন,
আমার তো কেউ ছিলো না বলো তুমি ছাড়া খেলার সাথী-
তুমিই ছিলে একজন একান্ত আপনজনা!

ছুটোছুটি করেছি কতনা হাত ধরে,
হেসে খেলে বনের এপ্রান্ত থেকে ওপান্তে।
এখন কি তোমার ওসব কথা মনে পড়ে আমার মতো?
তোমার পাঁচমিশালী টুকরো টুকরো গানের সুরে দিতাম আমি তাল,
করতো না তো একটুও লজ্জা আমার!
তখন নাচতো আমার মন, হতো চঞ্চল,
তখন আমি ছোট্ট খুকী-
সবে গায়ের গন্ধ বাতাসে ওড়ে, বুঝতামনা গানের মর্মার্থ।

আচমকা দিনের সূচনা স্তব্ধ হল সব,
প্রকৃতির এটাই বুঝি নিয়ম,
পশ্চিমেতে সূর্য রেগে ঠায় দাঁড়িয়ে,
যাচ্ছে না কেনো চলে-
বুঝেছি, এবার আমার থাকতে হবে একান্তে নিরালায় ঘরের কোণে।

Share This
Categories
কবিতা

রূপহীন : রাণু সরকার।

কালো তব রূপহীন পাত্রী আমি,
রয়েছে আকুল আকাঙ্ক্ষা, অনেকে বলে কেনো থাকবে কামনা বাসনা?

রক্ত মাংস দিয়ে যে গড়া আমি, থাকতে নেই কি কোনো আকাঙ্ক্ষা?

জানা তো ছিলোই কেউ করবে না পূজা,
যদিওবা একদিন হয় উপাসনা,
প্রদীপ জ্বালিয়ে করবে কি আরাধনা?

হয়তো হবে অর্চনা হেলাফেলায়-
তাল-ছন্দে কি বাজবে মাদল?
পরমানন্দ থাকবে কি অনন্তকাল?

বাধা আসবে জানি তো, তবুও চেয়ে থাকি দ্বারে,
তাকাই বারে বারে
যাকে ধরে মনে,
সেকি তাকায় তব রূপহীন পাত্রীর পানে!

Share This
Categories
কবিতা

বায়স্কোপের নেশা : সৌগত রাণা কবিয়াল।

যদি কঠিন কিছু বলার থাকে,
তবে বলে দিতে পারো আমায়.. !
নিজেকে সুখী করতে একটু নির্লিপ্ত হতে দোষ কি..? ‘অনুভুতি’ বুঝি অংকের হিসেব কোন..?

ভালোবাসায় কোন দাগ দিতে নেই..
কোন আঁচড় দিতে নেই..
বড্ড কোমল সুখের এই ‘ভালোবাসা’..
হয়তোবা কখনো সখনো অনেক দুঃখের…!

আমাদের জন্য অনেক আছে..
তুমি কিংবা আমি ছাড়াও আরও অনেক…!
তুমি হয়তো দুরন্ত কোন মেঘের মতন…
আমি হয়তো মাঠের কোনে বৃষ্টি জমা জল…!

জীবন কখনো কাওকে দিব্যি দেয় না…
কঠিন নিয়মের শেকল বাঁধে না সমাজের মতো.!
চাইলে তুমি উড়ে যেতে পারো পুরোটাই…!
বাতাসের গায়ে কোন গন্ধই যে স্থায়ী নয় কোনদিন…!

এই যে নিয়ম করে লিখতে গেলে কত ব্যাকরণ..!
বাংলায় আমি বরাবরই ভালো..
শুধু সমাস টা মাথায় খেলে কম..
তবে এটুকু বুঝি,
চারপাশের সবকিছুই আমাদের জন্য নয়…
কেও আকাশের জন্য কাঁদে…
আবার কারো মন পড়ে থাকে ঘরের রঙিন পর্দায়..!

দিন শেষে কিন্তু আমরা সবাই একা,বড্ড একা..
অথচ মেনে নেয়ার সাহস হয়ে ওঠে না কারো..
‘মায়া’ জিনিসটা ভয়ানক কঠিন….
ভালোবাসা ছাড়া তাকে শেকলে বাঁধতে গেলে..
বুকে রক্ত জমাট বাঁধে…. !
লালের এই রুপে আমার ভীষণ ভয়…
বড্ড কঠিন ভয়….!

Share This
Categories
কবিতা

শব্দহীন ::: রাণু সরকার।।।

এমনটা তো চাইনি
আমার বলা শেষ!
তুমি এভাবে আসবে ভাবতেই
পারছিনা-

এসেই যখন পড়েছো এখনো
নির্ভীক আছো দাঁড়িয়ে-
তোমার শরীর ফেনাহীন কেনো?
এমনটা তো চাইনি-
চেয়েছিলাম বুদবুদের পুঞ্জ!

আমার চাওয়া নিশ্চয়ই তোমার
জানা আছে-
ক্লান্তিটাকে পর্দার আড়ালে রেখে
আসতে পারতে!
চেয়েছিলাম গুপ্ত আশ্রয়স্থল,
দীর্ঘকাল সাগ্রহে কামনা যায়-
গোলাপের গাছটি কেনো ঢেউয়ে
বাড়ি খাচ্ছে?
ফাঁকা জায়গায় এতো ঢেউ
কোথা থেকে এলো–
এমটা হতে পারে সেকথা জানা
ছিলো নিশ্চয়ই!

Share This
Categories
কবিতা

আদরের অনামিকা :: রাণু সরকার।।।

রাতে ঘুম আসেনি, ভাবনারা ছিলো প্রিয়র অভ্যন্তরে,
ভোরে একটু চোখ বুজে আসছিলো-
মনে হলো প্রিয় নিদ্রাতুর চোখে চুম্বন করলো।

গায়ে তার যৌনগন্ধ,
ঘুমের মধ্যে হৃদয়ে ঢেউ তুলে দিলো,
ঘুমের ঘোরে হাত ধরে নিয়ে যায় জ্যোৎস্নায় স্নান করবে বলে।

দু’জনেই স্নান করছিলো,
কাঁপা কাঁপা স্বরে করলো অঙ্গীকার,
দু’জনের হৃৎশব্দ একসুরে বেজে উঠল-
ঘুমের মধ্যে সে-কি সুখ, প্রেমানন্দে নানান স্পর্শ!

হিংস্রের মত নেশালাগা জ্যোৎস্নার রাত ব্যাকুল বিবস্ত্র শরীর দু’জনের,
এক নিঝুম জ্যোৎস্না রাতে নদীর ধারে ঘাসের কোমল শয্যায় হলো মিলন,
মিলনের অজান্তে বীজ রোপণ করা হয়ে গেলো, কি হবে এখন?

বীজ রোপণ করেছে যখন গাছটির কি নাম দেওয়া যায়,
ভয়ে ভয়ে গাছটির নামকরণ করলো-
নাম দিয়েছে অনামিকা।

গাছটি দু’জনের মিলনের খুব আদরের,
গাছটি স্বপ্নে রোপণ হলল,
কিন্তু দু’জনের খুব আদরের, স্বপ্নের অনামিকা!

২৬|০৪|২০১৮

Share This
Categories
কবিতা

এক শ্রাবণের কথা : রাণু সরকার।

শ্রাবণের আকাশে কালো মেঘের পুঁজিতরাশি,
এই বুঝি এলো বর্ষা রাণী, স্বামী-পুত্র গেছে মাঠে,
ধেয়ে এলো ঘনকাল ও মাগো মা নিমেষে হলো এক হাঁটু জল মাঠ ঘাট হলো এক বোঝা দায়।
হায়-রে শ্রাবণের ধারা দেখো দেখো ধানের মাথা গুলো করছে যেন বিনয়ী বাতাসের তাড়নায়।

গরু-ছাগলের পাল দিচ্ছে কি হাঁক ডাক,গোগৃহ তো জলে ডুবুডুবু গা যাচ্ছে ওদের ভিঁজে। এতোগুলো গাই বাছুরের পাল রাখি কোথায়ও, কে যানতো এভাবে শ্রাবণেরধারা বৈবে অবিরাম।

সূর্য এই বুঝি দিলো ডুব তবে যায় না দেখা মনে হয় একটু আছে বাকি,
বোঝাও কি উপায় আছে আঁধার রেখেছে যে ঘিরে।
এখনো কি পারছে না বুঝতে তারা হুঁশ নেই কি একদম,একা কি করে দেই সব সামাল বৃদ্ধা শ্বাশুড়িটাও পরে আছে বিছানায়।
দুয়ারে এক হাঁটুজল দাঁড়িয়ে দেখছি-কারুর দেখা নেই,ঘনঘন বিদ্যুতের চমকানি,
একা গৃহে ভয়ে ভয়ে প্রাণ ওষ্ঠাগত,
তাকে বলেছিলাম-বেলা না গড়ায় এসো ফিরে তাড়াতাড়ি ঘরে, কে কার কথা শোনে,
সকাল থেকেই ছিলো মেঘেদের মুখ ভার করছিলো তারা কানাকানি।

তখনি বুঝেছি আসবে ধেয়ে নেবে সব ভাসিয়ে ক’দিন আগেই বলেছিলাম গোয়াল ঘরের চালটাতে ঘর চাপাতে হবে কানে নেয় নি কথা।

হঠাৎই কানে এলো কে যেন ডাকছে,বউঠান বাব-বেটা ফিরেছে কি ঘরে?
আমি বলি না গো দাদাঠাকুর ফেরেনি এখনো তারা।
দেখ দেখি কি মুশকিলের কথা,তারা কি বোঝে
না দু’কূল গেছে ভেসে,
বলেছিলেম তো তারে বেলা থাকতেই যেন আসে ফিরে ঘরে।
গৃহিণীর কথা বাসি হলে লাগে কাজে।

Share This
Categories
কবিতা

কোরক : রাণু সরকার।

আমার জন্ম জন্মান্তরের
কিছু সুখ দুঃখের স্মৃতি‐
অত্যাচারিত তারা-
তোমার ঠোঁটে বা হৃদয়ে
কি করে তাদের রাখি!
আমি কোন চিহ্ন রেখে
যাবো না-

তুমি কি আমার?
না—
আমার নও অন্য কারোর!
যদি ভুল বলি করো খমা-

আমার কোন স্মৃতি
থাকে যদি মনে!
ধরা দেবে তুমি নিজে-
ধূর্ত কপটচারী–
খুলতে হবে না দ্বার!

ঠোঁটে যদি পুষ্পকোরকের
অনুভূতি হয়ে থাকে-
সেটা আমার নিবিড় প্রখরতা কদাচ-
দীর্ঘকালের আকাঙ্ক্ষিত
সোহাগের অভ্যর্থনা!

তবে তুমি কি আমার?
না–
ছিলে একসময় এখন
অন্য কারো!
প্রকৃতি সাক্ষী রখেছে-
তবে আকাঙ্ক্ষিত যুগল
ঠোঁট ভরাট হলোনা!
মদিরার কামনা বাসনার চুম্বনে!

Share This
Categories
কবিতা

আদুল : রাণু সরকার।

প্রতিদিন মধ্যাহ্নে তটিনীর জলে স্নান সেরে
আদুল যৌবন
ভেজা কাপড়ে মুড়ে কলসীতে জল ভরে হেঁটে যাও-
চুলে মাখা চন্দন তেলের গন্ধ ভেসে আসে নাকে, মন হয় চঞ্চল!

জলপরীর সাজে দেখায় বেশ জলের বিন্দু চোখেমুখে,
ঠোঁট দুটি যেন মদিরা ঢালা!

এতো সুন্দর দৃশ্য হোতনা দেখা
যদি না থাকতাম আড়ালে অপেক্ষায়!

Share This
Categories
কবিতা

ছোট শিশুর কষ্ট : রাণু সরকার।

বাপটা আমার থেকেও নেই মনে
করি মারা গেছেন
চোখ মেলে দেখিনি বাপের মুখ কেমন,
কোন ভোরে মা গেলো চলে
বাবুর বাড়ির বাসন ধুতে
আমরা এখন তিনজন থাকি রেললাইনের ঝুপরিতে।

আমার কাছে ভাইকে রেখে
কি করে যাই ইস্কুলেতে
খিদের জ্বালায় শুয়ে পড়ে
ভাই যে আমার সারা হলো কেঁদেকেটে।

কাল রাতে পেটে আমার
ব্যথা ছিলো
খাইনি,আমার ভাতটা থেকে গেলো-
পান্তা করে নুন দিয়ে ভাই আমার খেয়ে
নিলো
দাড়িয়ে আছি নিয়ে কোলে
কান্না ভাইয়ের থেমে গেলে।
ইস্কুলের যাবার সময় হলো
এই বুঝি,ঘন্টা বেজে থেমে গেলো-
কি করে যাবো,মা যে এলো না এখনো
হয়তো গিন্নীমা কাজের চাপে রেখে দিলো
এমন তো করেনি কখনো
আমারা গরিব বলে করলো এমন
বাপটা যদি থাকতো এখন।

Share This