Category: কবিতা
মনের মানুষ গুরু মহারাজ : রাণু সরকার।
ঘুরিফিরি একতারা হাতে,
বুলি চলে তরঙ্গের সাথে,
অন্তরঙ্গ বন্ধু টুং টাং
চায় বাজতে।
নদীর ঘাটে বসে,
তাকিয়ে থাকি উদাস মনে,
পড়বো তার শ্রীচরণে,
দেখা যদি পাই কোনক্রমে।
ঘুম আসে না রাত্রি হলে,
তাকিয়ে থাকি জানালা খুলে,
সকালসন্ধ্যা জপি তারে,
আসে না সে আমার দ্বারে।
দূর হতে দেখি তারে অস্পষ্ট চোখে,
পাষাণ সে আসে না তবু আমার সম্মুখে।
ওগো, আমার মনের মানুষ
আমি দেখতে চাই তোমায়!
তোমার দেখা না পেলে প্রাণের
পাখি যাবে উড়ে
খাঁচাটি মিশবে কালো ধোঁয়ায়।
প্রাণপাখি যাবো যাবো করছে
স্বজনেরা কে কোথায় আছো
এসো কাছে,
মনের মানুষ,স্মরণ করিয়ে দিও
তোমার নাম মনে করে,
অতি কষ্টে খাঁচার মায়া ত্যাগ করে
পাখি দিলো উড়াল খাঁচা চললো
পালকি চড়ে।
সোনার খাঁচা পুড়ে হলো এক মুঠো ছাই,
কিছু ভুল ছিলো হয়তো আমার দেখা দিলো না তাই।
মানবিকতা : রাণু সরকার।
অন্ধকূপে ডুবে যাচ্ছে মানবিকতা,
খুঁজে পাওয়া যাবে না ভবিষ্যতে পরিমাপন যন্ত্রের সাহায্যেও,
অধঃপতিত অবস্থায় এখন বর্তমান,
সংকটের বন্ধনে আছে আবদ্ধ।
মানব জীবনের সম্মুখে সংকটকাল-
জীবন্ত মানুষ ঘুরে বেড়ায় মৃত্যুর দরবারে,
গোপন পথেও চলছে প্রতারণা,
হারিয়ে ফেলছে সভ্যতার অঙ্গীকার।
মানুষের পরিচয় দিতে কষ্ট হয়-
নব প্রজন্মের কাছে,
বারেবারে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়।
মানবিকতা এখন ক্ষতবিক্ষত,
কারাবন্দি অবস্থায় জানা নেই তার গন্তব্যস্থল,
ঠায় দাঁড়িয়ে তাই দিন গোনে মুক্তির।
তবে, মুক্তি কি পাবে মনে সংশয় জাগে।
চির তরুণী : রাণু সরকার।।
ঊর্ধ্বে অসীম আকাশকুসুম-
প্রকৃত প্রেমের পাত্র,
নিম্নে বিপুলায়তন ভূখণ্ড-
যেন মনে হয় চির তরুণী
এক রমনী,
বহুদূরের অতীত থেকে নিগড়
প্রেমনদীর দিশেহারা ভাব,
আঁধারে চলে তাদের দুর্দমনীয়
রসজনিত শৃঙ্গার,
তখন ধরিত্রী হয়
রজঃস্বলা-
নিঃশব্দে অন্যের অলক্ষ্যে
অঙ্গবিক্ষেপ করে গোপনে।
তখন ধরাধাম বৃষ্টিমুখর–
তাদের যৌনমিলনে
গড়ে ওঠে প্রাণিজগৎ,
সৃষ্ট হয় জীবজগতের ধারণকারী মেদিনী-
তিনি হলেন পালিকা ধরিত্রী মাতা।
তৃষ্ণালু ::: রাণু সরকার।।
মন :: রাণু সরকার।।
ব্যাধি :: রাণু সরকার।।।
দৃষ্টির অগোচরে যে ব্যাধি আছে
কোনদিনও কেউ পারবে না তার
অঙ্গে ধারণ করতে,
অপরিচিত কি নীরবে বেসুরে
অশ্রুকণা ঝরবে-
দিবারাত্রি সন্ধান করেও পাইনি তার
গোপন ঠিকানা,
নিষ্ফল দুরূহ প্রশ্ন ব্যাকুল বসবাস
করে গোপন মনে।
প্রকৃতির সাথে দৃষ্টিবিনিময় করে দেখা
সকলেই অত্যন্ত দ্বিধান্বিত–
সমব্যথী কি আছে ?
নিজের যন্ত্রণার ভার সহ্য করে
নিজেরই বহন করা।
বারিধরা :: রাণু সরকার।।
তপ্ত রোদে মাঠঘাট বির্দীণ,
বর্ষার অপেক্ষায় থেকে থেকে অবশেষে সে এলো-
অবিরাম বারিধারা ঝরছে দেখে মনে হয় যেন কাঁচের
কুচি ঝরঝর করে ধরণীর স্তনগ্রন্থিতে
উপছে পড়ছে!
তখন তরুলতাপাতা তৃপ্ত হয়ে মনের হরষে করে নৃত্য!
গ্রীষ্মের দহনের পর চারিধার নবরূপে
অলঙ্কার স্বরূপ,
শুকনো মাটির গুঁড়োতে মাখা মলিন রূপ।
পিপাসিত মাঠঘাট রসবতী হয়ে হয় ঋতুমতী-
নতুন বীজের আশায় শ্রীঅঙ্গে ধারণ করে।
নতুন করে সাজিয়ে তোলে সম্পূর্ণরূপে তৃপ্ত
চারিধার তখন সে রূপবতী।
বাদলগগন :: রাণু সরকার।।
ভাবতে পারিনি, সেদিন আচমকা দেবে
আমায় বিদায়-
অব্যক্ত কিছু কথা বলার ছিলো
বলতে গিয়েও পারিনি বলতে সেথায়-
এলে তো লোভাতুরের মতো,আনলে নীরদবাহনকে সাথে করে
যদি বাদল আসতো সাথে সত্যি বলছি নিতাম তাকে প্রিয় করে!
কেনো জানো বলতে গিয়েও থেমে গেলাম-
ভেবে ছিলাম বৃষ্টিবাদল আসবে, এলে বর্ণচ্ছটা ছড়িয়ে দিতাম!
তোমার আচরণে হচ্ছিল গাত্রদাহ-
সাথে যদি আসতো ঘূর্ণিবায়ু- তবে থাকতে দিতাম এক সপ্তাহ।
চৈতিপবন : রাণু সরকার।
মেঘজালের আবরণ সড়িয়ে এসো
করি খেলা-
মনে পড়ে যে আনন্দ হারিয়ে গেছে
খুঁজে নিই চলো-
যা গেছে খোয়া তা নিয়ে অনুশোচনা
করে কি লাভ বলো-
এসেছিলে হৃদয়ে-সে এক যুগান্তে
বাদলগগনে ধূসর দিনে,
পড়েছে কি মনে?
যেদিনের বিচ্ছেদবেদনা ছিলো হনন
তুল্য,
তুমি অনুভূতিহীন-
আজ যখন এলে অন্তরালে কেনো?
তোমার হয়তো মনে নেই এখন চৈতির
শেষের দিক,
আসবো শ্রাবণধারায়-
অন্তরের পাড় ভেঙে প্রকাশিত করো
আধাঁর ঘরের প্রদীপ প্রখররূপে উজ্জ্বল!
তুমি এখন ভিন্ন দিকের দুরত্বে আছো,
এসেছিলে যে?
তবে কার প্রতিক্ষায় ছিলে নীরদের
পশ্চাদপসরণে?
হে আমার ক্ষণিকের সন্তুষ্টি প্রীতি।।