Categories
অনুগল্প গল্প নারী কথা

সন্তানস্নেহে : প্রবীর কুমার চৌধুরী ।

আর মাত্র ৫টি  মাস বাকি চাকুরী থেকে অবসর নিতে। কতদিন,কত মাস, বছর দেখতে, দেখতে কেটে গেল চাকুরী জীবনের । আজও মনে হয়  যেন এইতো সেদিন আসলো কর্মক্ষেত্রে। পরীক্ষা, ইন্টারভিউ, তারপর প্রশিক্ষণের চিঠি হাতে পাওয়া।
প্রথম,প্রথম তো প্রশিক্ষিণ সময়ে এতো কাজের চাপ ছিল খাওয়া, নাওয়ার সময় পেতোনা বিপাশা। ক্লাসের সঙ্গে, আবার ওয়ার্ডও ডিউটি করতে হত। সাথে নাইট।
মাঝে, মাঝে তো বিশেষ, বিশেষ অনুষ্ঠানে বাইরের ক্যাম্পগুলোতেও যেতে হতো।অবশ্য সেগুলো বছরে দুয়েকবার। খুব আনন্দ হত সে ক্যাম্পে। ভীষণ ক্লান্ত লাগতো,এতো পরিশ্রম হতো  যে ভাবতো  প্রশিক্ষণ ছেড়ে বাড়ি চলে যাবে।

এই করতে,করতে একদিন বিপাশা তিনবছরের নার্সিং প্রশিক্ষণ শেষ করে প্রথম পোস্টিং পেল বর্ধমান মেডিকেল কলেজে। তারপর  হেলথ উনিভারসিটি থেকে বিএসসি,  এমএসসি  পাশ করলো। ধাপে, ধাপে প্রমোশন পেতে, পেতে আজ সে  একটা ইনস্টিটিউশননের অধ্যাক্ষা।
আজকাল বিপাশা তার চেম্বারে বসে প্রায়ই এসব কথা ভাবে। একটার পর একটা স্মৃতির পাতা উল্টিয়ে চলে বিদায় বেলায়।
আজ একটু আগেই বিপাশা সব ক্লাস ভিজিট করে এসেছে। এখন  কিছু বিল যা  গতকাল  অব্জেকশন হয়ে ফিরে এসেছে সেগুলোর রিপ্লাই লিখছিলো। বিলক্লার্ক মনোতোষ দুবার তাগাদা দিয়েছে”  ম্যাডাম দুটোর পর কিন্তু আর অব্জেকশন বিল জমা নেবে না” ।
কিছুক্ষণের মধ্যেই অব্জেকশনের মিটিয়ে দিয়ে  বিপাশা বেল দিতেই অর্ডালি বিকাশ ঘরে ঘুকতেই বলল ” বিকাশ যাওতো কম্পিউটার অপরেটর সত্যবাবুকে জিজ্ঞাসা কর এলোটমেন্টের যে চিঠিটা করতে দিয়েছি হয়েছে কিনা? হলে সাথে করে নিয়ে আসবে “।
বিপাশা এখানে ডি, ডি, ও হলে কি হবে রোজ একটা, দুটো  ক্লাসও  নেয় অন্যান্য কাজের মধ্যেই । এটা তার মনের খোরাক, শান্তি পায় ছোট, ছোট মেয়েদের সংস্পর্শে। মনে পড়ে ফেলে আসা দিনের কথা। মনে পড়ে ক্লাসমেট দের কথা। অবশ্য কয়েক জনের সাথে এখনও যোগাযোগ আছে। বিনতা, শেফালী, তনুশ্রী, আশালতা, ভারতী বিভিন্ন হাসপাতালে পোস্টিং হলেও প্রায় রাত্রে কথা হয়। ওদের মধ্যে শেফালী সিস্টার ইনচার্জ হয়ে গেছে। তনুশ্রীও মেট্রোন হয়েছে। কিন্তু বিপাশার অমায়িক ব্যবহারে আজও যে সব বান্ধবীরা ওর নিচে আছে কেউই বিপাশাকে এড়িয়ে যেতে পারেনি।এখনও তারাও যোগাযোগ রাখে। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানায়।
বিকাশ বেরিয়ে যেতেই সিস্টার টিউটর মজুলা এসে বলল – ” শুনেছেন ম্যাডাম। ফার্স্ট ইয়ারের মানসী মণ্ডল আজ কদিন ছাতু মুড়ি খাচ্ছে। হোস্টেল থেকে মিল নিচ্ছে না। বললে মুখে কোন কথা নেই। একেবারে চুপচাপ। ওর বন্ধুরাও কারণ জানতে পারেনি “।
বিপাশা অবাক  হয়ে যায় শুনে। ভাবে মানসী মণ্ডল খুব ভালো মেয়ে। অমায়িক ব্যবহার। দেখতেই শুধু সুন্দরীই নয়, লেখাপড়ায় উন্নত,। বারোক্লাসের রেজাল্ট তো  বেশ উপরের দিকে আছে । শতকৱা আশির উপরে নং । স্বভাব খুব নম্র ও ভদ্র, কথাবার্তাও খুব মার্জিত । লেখাপড়া ছাড়াও ভালো নাচ জানে। সুন্দর কবিতা আবৃতি করে। কোন একটা নাটকের গ্রুপে নাকি অভিনয় করতো ট্রেনিং এ আসতে সে গ্রুপ ছেড়ে দিয়েছে।
এবার লাইমলাইট অনুষ্ঠানে তো ওর নাচ দেখে সবাই মোহিত হয়ে গেছে। এমন মেয়েকে স্নেহ না করে কেউ থাকতে পারে?  বিপাশাতো ভীষন পছন্দ করে মেয়েটিকে।
বিপাশা শুনে বলল না ” এটা তো ভালো ব্যাপার নয়। ওকে ডেকে পাঠাও তো ক্লাস থেকে” ।
বিকাশ গিয়ে ডেকে আনলো মানসীকে। ধীর, স্থির পায়ে ঢুকলো সে। বিপাশা
স্নেহভরে জিজ্ঞাসা করলো ” কী ব্যাপার মানসী, তুমি শুনলাম কদিন হোস্টেলের মিল নিচ্ছো না। ছাতুমুড়ি খেয়ে থাকছো। কেন গো শরীর খারাপ। নাকি হোস্টেলের রান্না তোমার ভালো লাগছে না?
মানসী নিরুত্তর,চুপ। বিপাশা আবার জিজ্ঞেসা করলো ” বলো, মিল খাচ্ছো না কেন? কি অসুবিধা তোমার? ”
এবারেও মানসী কোন  উত্তর না দিয়ে চুপ করে মাথা নিচু করে  মার্বেলের মেঝের উপর পায়ের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে আঁকিবুকি কাটতে লাগলো।
মঞ্জুলা মানসীর এই ঔদ্ধত্ব দেখে অবাক। ম্যাডাম জিজ্ঞাসা করছেন এতবার আর ও  কিনা জবাব দেওয়া প্রয়োজন মনে করছে না। ধমকে ওঠে মঞ্জুলা  বলল ” একি ম্যাডাম তোমায় এতবার জিজ্ঞাসা করছেন তুমি ওনার কথায় কোন উত্তর দিচ্ছো না। তোমার গার্জেন কল করবো ” ?
মানসীর বাড়ি হোস্টলের খুব কাছে তাই মঞ্জুলা একথা বলে মানসিকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করলো ।
বিপাশা কাছে ডেকে সস্নেহে আবার জিজ্ঞাসা করলো ‘ আমায় বলো। কোন ভয় নেই। আমি অসুবিধা হলে ব্যবস্থা নেবো “।
ম্যাডামের স্নেহের স্পর্শে এবার মানসী হার মানলো। খুব পরিষ্কার উচ্চারণে আস্তে আস্তে বলল –  ‘ ম্যাডাম গত রবিবারে মা, বাবা এসেছিলেন। সঙ্গে এনেছিলেন পাঁঠার মাংস। বাড়ির কথা, দিদির বিয়ের কথা আলোচনা হচ্ছিলো। আমার খাওয়া হলে  ভুলে করে এটো থালার সাথে পরিষ্কার করা থালাগুলো  ব্যাগে ভরে নিয়ে মা চলে যান। আমিও কথা বলতে, বলতে নিতে ভুলে যাই।  তাই থালার অভাবে আমি ভাত খেতে  পারছিনা  বলেই  ছাতুমুড়ি খাচ্ছি ম্যাডাম “।

মানসীর কথায় মঞ্জুলার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। ব্যাপারটা তার  কিছুই বোধগম্য হলো না। মানসী কি বলছে!
বিপাশা  বিস্ময়ে বলল ” মানে তোমার বাড়ির লোকেরা প্রতি সপ্তাহে এসে তোমার এটো থালা বাড়ি নিয়ে যান? আর সপ্তাহের পরিষ্কার থালা দিয়ে যান?”
মানসী অপরাধীর মতো মুখ করে বলল
”  হ্যাঁ ম্যাডাম। এটো থালা নিয়ে যান আর পরিষ্কার থালা দিয়ে যান। কিন্তু এবার নানাবিষয়ে কথা বলতে বলতে ভুল হয়ে গেছে।

বিপাশা হোহো করে হেসে ওঠে এতক্ষনে। মঞ্জুলাও এতক্ষনে ব্যাপারটা বুঝে সেও  হেসে ওঠে।
ম্যাডামের চেম্বারে সমবেত হাসির আওয়াজে কৌতূহলী হয়ে অন্যান্য সিস্টার টিউটররাও বিপাশার চেম্বারে এসে জড়ো হয়। তারপর সব শুনে  তাঁরাও হাসিতে দেন। সে যেন এক নির্মল হাসির মেলা।
হাসি থামলে বিপাশা স্টোরকিপার  শোভনবাবুকে  ডেকে স্টোর থেকে ফার্স্ট ইয়ারের মানসী মন্ডলের নামে একটা থালা, একটি গ্লাস ও বাটি  ইস্যু করতে বলে। আর  মানসীকে বলে ” শোভনবাবুর থেকে ওগুলো নিয়ে হোস্টেলের মিল খেয়ে ক্লাসে যাও।
প্রায় চারটে নাগাদ বিপাশা তখন শেষ বেলার ডাক দেখছিলো। হোস্টেলের রাঁধুনিদের একজন   মিনতি দাস দরজা ঠেলে মুখ বাড়িয়ে বলল – “একটু আসবো ম্যাডাম? বিপাশা একমনে একটা আর্জেন্ট চিঠি দেখছিল  একটু বিরক্ত হয়ে বলল
” তোমার আবার কী সমস্যা হলো মিনতি” ? ”
মিনতি বলল ” ম্যাডাম মানসী মণ্ডল তো খেয়ে দেয়ে এটো বাসন পরিষ্কার না করে কিচেনে রেখে ক্লাসে চলে গেছে। এখন কে পরিষ্কার করবে”?
বিপাশা কলম থামিয়ে বলল ‘ ওকে ডেকে পরিষ্কার করে রাখতে বলো।  যাও ”
কি মনে হতে বিপাশা নিজেই  কিচেনের দিকে এগিয়ে গেল। দেখে মানসীর বাসন মাজছে আর কাঁদছে।
বিপাশা অবাক হয়ে কারণ জানতে চাইলে  মানসী বলল – ” ম্যাডাম বাসন মাজার সাবানের খাড়ে আমার হাতময় এলার্জি বেরোয় লাল ডুমু, ডুমু। তাই আমায় মা বাবা বাসন মাজতে দেননা আর সেই কারণেই মা থালা, বাটি, গেলাস  মেজে আনেন ও পুরানোটা নিয়ে যান পরিষ্কার করে আনার জন্যে “।
বিপাশা স্নেহের ছাত্রীটিকে  মাথায় হাত বুলিয়ে সস্নেহে বললেন – ” কাল দ্বিতীয় পিরিয়ডে তুমি অবশ্যই স্কিন ডিপার্টমেন্টে গিয়ে ডক্টর ব্যানার্জীকে দেখাবে।আমি বলে রাখবো। তুমি ট্রিটমেন্ট করোনি বোধহয় তাই কষ্ট পাচ্ছ। ভয় নেই একেবারেই সেরে যাবে “।
মানসীর চোখের জল তখনও শুকাইনি। তার কথা শুনে সামনে দাঁড়িয়ে মজা দেখতে আসা কারুর  মুখে এখন একটুও হাসি ফুটলো না।

এখন মানসী তৃতীতবর্ষের ছাত্রী। বিপাশা ম্যাডাম অবসর নিয়েছেন অনেকদিন। তাঁর স্নেহের কথা ভুলতে পারে না  মানসী। এখনও ম্যাডামের সাথে ফোনে যোগাযোগ রেখেছে। হাতের এলার্জি কবেই সেরে গেছে। কোন সমস্যা হলেই ফোনে জিজ্ঞাসা করে। ম্যাডামও আপন সন্তানের মতো সবকিছু সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে দেন। মানসী বিপাশা ম্যাডামের কথায় তার নিজের মায়ের ছোঁয়া পায়।

শুধু মাঝে, মাঝে, মজা করে ম্যাডাম  জিজ্ঞাসা করেন ” এই মেয়ে নিজের এটো
থালা,বাটি, গ্লাস এখন নিজেই মাজো  তো, নাকি মাকে দিয়ে মাজাও …”?

সমাপ্ত
দূরভাষ -৮৭৭৭৭৪১৩০১

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, ভারতীয় বাঙালি ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নারী মুক্তিযোদ্ধা ও প্রথম বিপ্লবী মহিলা শহিদ ব্যক্তিত্ব।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের অব্যর্থ পরিশ্রম যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত রাজনৈতিক দিক থেকে মুক্তি পেয়েছে। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়, তার মূলে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে বাসন্তী দেবী  প্রথমসারির একজন অন্যতম বিপ্লবী ছিলেন।ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুধু শহীদ ভগৎ সিং-এর মতই নয় বরং শক্তিশালী নারীদের দ্বারা প্রশস্ত হয়েছিল যারা তাদের মাটিতে দাঁড়িয়েছিল এবং দেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য ব্রিটিশদের সাথে লড়াই করেছিল।  প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি দেশমতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ রূপে। ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিকন্যা ছিলেন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার।
প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার (৫ মে ১৯১১ – ২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৩১) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের একজন ভারতীয় বিপ্লবী জাতীয়তাবাদী যিনি ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রভাবশালী ছিলেন।  চট্টগ্রাম ও ঢাকায় তার শিক্ষা শেষ করার পর, তিনি কলকাতার বেথুন কলেজে ভর্তি হন।  তিনি স্বাতন্ত্র্যের সাথে দর্শনে স্নাতক হন এবং একজন স্কুল শিক্ষক হন।  তিনি “বাংলার প্রথম নারী শহীদ” হিসেবে প্রশংসিত হন।
প্রীতিলতা ১৯১১ সালের ৫ মে চট্টগ্রামের (বর্তমানে বাংলাদেশে) পটিয়া উপজেলার ধলঘাট গ্রামে একটি মধ্যবিত্ত বাঙালি বৈদ্য পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।  ওয়াদ্দেদার একটি উপাধি ছিল যা পরিবারের একজন পূর্বপুরুষের কাছে প্রদত্ত ছিল যার মূল নাম ছিল দাশগুপ্ত।  তার বাবা জগবন্ধু ওয়াদ্দেদার চট্টগ্রাম পৌরসভার কেরানি ছিলেন।  তার মা প্রতিভাময়ী দেবী ছিলেন একজন গৃহিণী।
কলকাতায় শিক্ষা শেষ করে প্রীতিলতা চট্টগ্রামে ফিরে আসেন।  চট্টগ্রামে, তিনি নন্দনকানন অপর্ণাচরণ স্কুল নামে একটি স্থানীয় ইংরেজি মাধ্যম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকার চাকরি নেন।
প্রীতিলতা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেন।  সুরজো সেন তার সম্পর্কে শুনেছিলেন এবং তাকে তাদের বিপ্লবী দলে যোগ দিতে চেয়েছিলেন।  ১৯৩২ সালের ১৩ জুন প্রীতিলতা তাদের ধলঘাট ক্যাম্পে সুরজো সেন এবং নির্মল সেনের সাথে দেখা করেন।  একজন সমসাময়িক বিপ্লবী, বিনোদ বিহারী চৌধুরী, আপত্তি করেছিলেন যে তারা মহিলাদের তাদের দলে যোগ দিতে দেয়নি।  যাইহোক, প্রীতলতাকে দলে যোগদানের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল কারণ বিপ্লবীরা যুক্তি দিয়েছিলেন যে অস্ত্র পরিবহনকারী মহিলারা পুরুষদের মতো ততটা সন্দেহজনক আকর্ষণ করবে না।
প্রীতিলতা সূর্য সেনের নেতৃত্বে একটি বিপ্লবী দলে যোগদান করেন।সুরজো সেনের বিপ্লবী দলের সাথে প্রীতিলতা টেলিফোন ও টেলিগ্রাফ অফিসে হামলা এবং রিজার্ভ পুলিশ লাইন দখলের মতো অনেক অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন।  জালালাবাদ যুদ্ধে তিনি বিপ্লবীদের বিস্ফোরক সরবরাহের দায়িত্ব নেন।  তিনি পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাবে ১৯৩২ সালে সশস্ত্র আক্রমণে পনেরোজন বিপ্লবীর নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য পরিচিত, যে সময়ে একজন নিহত এবং এগারোজন আহত হয়।  বিপ্লবীরা ক্লাবে অগ্নিসংযোগ করে এবং পরে ঔপনিবেশিক পুলিশের হাতে ধরা পড়ে।  প্রীতিলতা সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন।  একজন আহত প্রীতিলতাকে ঔপনিবেশিক পুলিশ ফাঁদে ফেলেছিল।  গ্রেফতার এড়াতে তিনি সায়ানাইড গিলে ফেলেন।  পরদিন পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে শনাক্ত করে।  তার মৃতদেহ তল্লাশি করে পুলিশ কয়েকটি লিফলেট, রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের ছবি, গুলি, বাঁশি এবং তাদের হামলার পরিকল্পনার খসড়া পায়।  ময়নাতদন্তের সময় দেখা গেছে যে বুলেটের আঘাত খুব গুরুতর ছিল না এবং সায়ানাইডের বিষ তার মৃত্যুর কারণ। তবে, তার আত্মহত্যা ছিল পূর্বপরিকল্পিত এবং গ্রেফতার এড়াতে নয়।  তার সাথে একটি সুইসাইড নোট বা একটি চিঠি ছিল, যেখানে তিনি ভারতীয় রিপাবলিকান আর্মি, চট্টগ্রাম শাখার উদ্দেশ্যগুলি লিখেছিলেন।  চিঠিতে, মাস্টারদা সূর্য সেন এবং নির্মল সেনের নামের সাথে, তিনি আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের সাথে কয়েকবার দেখা করার অভিজ্ঞতার কথাও উল্লেখ করেছিলেন।
।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

বিশ শতকের বাঙালি মহিলা কবি রাধারাণী দেবী র প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

‘অপরাজিতা দেবী’ ছদ্মনামে সাহিত্য জগতে আলোড়ন সৃষ্টিকারী মহিলা কবি – রাধারাণী দেবী – একটি বিশেষ পর্যালোচনা।
রাধারাণী দেবী বিশ শতকের অন্যতম বাঙালি কবি। ভাষার মাধুর্যে ভাবের স্নিগ্ধতায় আর ছন্দের সাবলীল দক্ষতায় ‘অপরাজিতা দেবী’ ছদ্মনামে সাহিত্য জগতে আলোড়ন সৃষ্টিকারী মহিলা কবি। আজ তাঁর জন্ম দিন।

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন—-
রাধারানী দেবী ১৯০৩ সালের ৩০ নভেম্বর কলকাতা, ব্রিটিশ ভারতের জন্মগ্রহণ করেন।  তাঁর পিতা আশুতোষ ঘোষও ছিলেন একজন ম্যাজিস্ট্রেট, পণ্ডিত, সাহিত্যপ্রেমী এবং রবীন্দ্রনাথের গভীর ভক্ত।  রাধারাণী ছিলেন তাঁর এবং নারায়ণী দেবীর দশম সন্তান।  তার শৈশব কেটেছে কোচবিহার জেলার দিনহাটায়, যেখানে তার বাবা কাজ করতেন।  তিনি  ছবিরউন্নিসা গার্লস স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং মাইনর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।  এরপর স্ব-শিক্ষার মাধ্যমে তিনি সংস্কৃত, ইংরেজি ও ফরাসি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেন।  পারিবারিক শিক্ষার পরিবেশে তার শৈশব কেটেছে আনন্দে।
বাড়িতে প্রত্যেক সদস্যদের জন্য আসত ‘প্রবাসী’, ‘শিশু’, ‘মৌচাক’ , ‘সন্দেশ’, ‘সোপান’, ‘ভারতবর্ষ’ প্রভৃতি নানান পত্র পত্রিকা। তার সেজদার হাতে-লেখা ভাইবোনদের পত্রিকা ‘সুপথ’-এ দশ বছর বয়সে লেখা দেন তিনি। তার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় ‘মানসী ও মর্মবাণী’ পত্রিকায়।
কিন্তু তেরো বছর বয়সে প্রকৌশলী সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের সঙ্গে তার বিয়ে হয়।  তার স্বামী যখন কয়েক মাসের মধ্যে ‘এশিয়াটিক ফ্লু’-তে আকস্মিকভাবে মারা যান, তখন তিনি স্বেচ্ছায় কঠিন বিধবা জীবন যাপন করেন।
সাহিত্যজীবন—-
সাহিত্যক্ষেত্রে কবিতা দিয়ে নিজেকে প্রকাশ করতে লাগলেন রাধারাণী দত্ত নামে ‘ভারতবর্ষ’, ‘উত্তরা’,’কল্লোল’, ‘ভারতী’ প্রভৃতি পত্রিকায়। ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে তার প্রথম গল্প ‘বিমাতা’ প্রকাশিত হয় ‘মাসিক বসুমতী’তে। প্রথম প্রবন্ধ ‘পুরুষ’ প্রকাশিত হয় ‘কল্লোল’-এ। এর পাঁচ বছর পরে প্রকাশিত হয় প্রথম কাব্যগ্রন্থ –  ‘লীলাকমল’।
১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে তার ও নরেন্দ্র দেবের যুগ্ম সম্পাদনায় বাংলা কাব্য সংকলন ‘কাব্যদীপালি’ প্রকাশিত হয়। একবার এক সান্ধ্য আড্ডায় রাধারাণীর রচনার পরিপেক্ষিতে প্রমথ চৌধুরী মন্তব্য করেন –
” ‘…আজ পর্যন্ত কোনও মেয়ের লেখায় তার স্বকীয়তার ছাপ ফুটে উঠলো না।’
এই অভিযোগের প্রতিবাদে তিনি ‘অপরাজিতা দেবী’ ছদ্মনামে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ছায়াপাতে শুরু করেন রচনা। তাঁর কবিতার মধ্যে অন্তঃপুরের অন্তরঙ্গ জগত আত্মপ্রকাশ করেছে বিশ্বস্ততার সাথে। যেমন মাধুর্য ও কৌতুক, তেমনই প্রতিবাদ আর বিদ্রোহে সাহিত্যজগৎে এক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল, যা কিনা সেসময় যেকোনো মহিলা কবির কলমে প্রায় অসম্ভব ছিল। ১৯৩০-৩৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তাঁর প্রকাশিত ভালোবাসার কাব্যগ্রন্থ গুলি হল – —‘বুকের বীণা’ (১৯৩০), ‘আঙিনার ফুল’ (১৯৩৪), ‘পুরবাসিনী’ (১৯৩৫), ‘বিচিত্ররূপিনী’ প্রভৃতি।
রাধারাণী ছোটদের জন্য লিখেছেন ‘নীতি ও গল্প’ এবং ‘গল্পের আলপনা’। স্বামীর সম্পাদনায় ছোটদের জন্য মাসিক পত্রিকা ‘পাঠশালা’ প্রকাশে সহায়তা ছাড়াও যৌথভাবে সম্পাদনা করেছেন বাংলা গ্রন্থের সংকলন ‘কথাশিল্প’। বিবাহের মন্ত্রগুপ্তির স্বচ্ছন্দ অনুবাদ করা তাঁর বইটি হল ‘মিলনের মন্ত্রমালা’। এছাড়া বারোয়ারি উপন্যাসও লিখেছেন তিনি।
সম্মাননা—
১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ভুবনমোহিনী স্বর্ণপদক ও লীলা পুরস্কার প্রদান করে। ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে ‘অপরাজিতা রচনাবলী’র জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার রবীন্দ্র পুরস্কারে সম্মানিত করে।
মৃত্যু—-
রাধারাণী দেবী ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে ৯ সেপ্টেম্বর কলকাতায় নিজ বাসভবন ‘ভালো-বাসা’য় প্রয়াত হন।
।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ রিভিউ

আজ আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস, জানুন দিনটি কেন পালিত হয় এবং পালনের গুরুত্ব।

9 আগস্ট বিশ্ব ক্যালেন্ডারে একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন হিসেবে চিহ্নিত, কারণ এটি আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস। এই দিনটি বিশ্বজুড়ে আদিবাসী সংস্কৃতির বৈচিত্র্য, সমৃদ্ধি এবং স্থিতিস্থাপকতাকে স্বীকৃতি ও উদযাপনের জন্য নিবেদিত।

আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসের ইতিহাস

1994 সালে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ বিশ্বব্যাপী আদিবাসীদের সংগ্রাম ও অর্জনের স্বীকৃতিস্বরূপ 9 আগস্টকে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এই দিনটি আদিবাসী জনসংখ্যা সম্পর্কিত জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম বৈঠকের সাথে মিলে যায়, যা 9 আগস্ট, 1982 সালে হয়েছিল।

আদিবাসীরা: তারা কারা?

আদিবাসীরা হল একটি অঞ্চল বা দেশের আদি বাসিন্দা, যাদের একটি স্বতন্ত্র সংস্কৃতি, ভাষা এবং ঐতিহ্যগত জীবনধারা রয়েছে। তাদের পৈতৃক ভূমি এবং প্রাকৃতিক সম্পদের সাথে তাদের গভীর সম্পর্ক রয়েছে, যা তাদের পরিচয়, আধ্যাত্মিকতা এবং জীবিকা নির্বাহের জন্য অপরিহার্য।

বিশ্বব্যাপী 370 মিলিয়নেরও বেশি আদিবাসী রয়েছে, 90 টিরও বেশি দেশে ছড়িয়ে রয়েছে। তারা বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় 5% প্রতিনিধিত্ব করে, তবে বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর 15% এর জন্য দায়ী।

আদিবাসীদের দ্বারা সম্মুখীন চ্যালেঞ্জ

বিশ্বের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং সমৃদ্ধিতে তাদের উল্লেখযোগ্য অবদান থাকা সত্ত্বেও, আদিবাসীরা অসংখ্য চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়, যার মধ্যে রয়েছে:

1. ভূমি অধিকার এবং বাস্তুচ্যুতি: আদিবাসীরা প্রায়ই উন্নয়ন প্রকল্প, খনি এবং বন উজাড়ের কারণে তাদের পৈতৃক জমি ত্যাগ করতে বাধ্য হয়।
2. সাংস্কৃতিক দমন: আদিবাসী ভাষা, ঐতিহ্য, এবং বিশ্বাস প্রায়ই প্রান্তিক বা অবদমিত হয়।
3. দারিদ্র্য এবং অসমতা: আদিবাসীরা উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্যের সম্মুখীন হয়।
4. জলবায়ু পরিবর্তন: আদিবাসী সম্প্রদায়গুলি জলবায়ু পরিবর্তনের দ্বারা অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে প্রভাবিত হয়, কারণ তাদের ঐতিহ্যগত জীবনধারা প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত।

আদিবাসী সংস্কৃতি উদযাপন

আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস হল আদিবাসী সংস্কৃতির বৈচিত্র্য এবং সমৃদ্ধি উদযাপন করার একটি সুযোগ। এখানে তা করার কিছু উপায় রয়েছে:

1. আদিবাসী সংস্কৃতি সম্পর্কে জানুন: বই পড়ুন, ডকুমেন্টারি দেখুন, এবং আদিবাসীদের সাথে তাদের ঐতিহ্য এবং জীবনধারা সম্পর্কে জানতে তাদের সাথে যুক্ত হন।
2. আদিবাসী শিল্পী এবং কলাকুশলীদের সমর্থন করুন: আদিবাসী শিল্পী, সঙ্গীতশিল্পী এবং কারিগরদের প্রচার ও সমর্থন করুন, যারা তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রেখেছে।
3. আদিবাসী অধিকারের জন্য উকিল: আদিবাসীদের মুখোমুখি হওয়া চ্যালেঞ্জগুলি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ান এবং তাদের অধিকার, বিশেষ করে ভূমি অধিকার এবং স্ব-নিয়ন্ত্রণের জন্য উকিল৷
4. আদিবাসী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করুন: সাংস্কৃতিক উত্সব, পাওওয়া, এবং অন্যান্য ইভেন্টে যোগ দিন যা আদিবাসী সংস্কৃতি উদযাপন করে৷

উপসংহার

আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস হল বিশ্বব্যাপী আদিবাসী সংস্কৃতির স্থিতিস্থাপকতা এবং বৈচিত্র্যের উদযাপন। এটি আদিবাসীদের সংগ্রাম ও অর্জনকে স্বীকৃতি দেওয়ার এবং তাদের অধিকার ও আকাঙ্ক্ষার জন্য বৃহত্তর বোঝাপড়া, সম্মান এবং সমর্থন প্রচার করার একটি সুযোগ।

আমরা এই দিনটি উদযাপন করার সময়, আসুন আমরা দেশীয় সংস্কৃতি সংরক্ষণ এবং আমাদের বিশ্ব সম্প্রদায়ে বৃহত্তর অন্তর্ভুক্তি এবং বৈচিত্র্যের প্রচারের গুরুত্বকে স্মরণ করি। একসাথে কাজ করার মাধ্যমে, আমরা সকলের জন্য আরও ন্যায্য এবং ন্যায়সঙ্গত বিশ্ব গড়ে তুলতে পারি।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

স্মরণে- হাজার চুরাশির মা, মহাশ্বেতা দেবী।

 

মহাশ্বেতা দেবী  ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি লেখক এবং একজন কর্মী। তার উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে হাজার চুরাশির মা , রুদালী এবং অরণ্যের অধিকার । তিনি একজন বামপন্থী ছিলেন যিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ , বিহার , মধ্যপ্রদেশ এবং ছত্তিশগড় রাজ্যের উপজাতিদের ( লোধা এবং শবর ) অধিকার ও ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করেছিলেন । তিনি বিভিন্ন সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন যেমনসাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার ( বাংলায় ), জ্ঞানপীঠ পুরস্কার এবং র্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার সহ ভারতের বেসামরিক পুরস্কার পদ্মশ্রী এবং পদ্মবিভূষণ ।

প্রাথমিক জীবন এবং শিক্ষা—————
মহাশ্বেতা দেবী একটি ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ১৪ জানুয়ারি ১৯২৬ তারিখে ঢাকা , ব্রিটিশ ভারতের (বর্তমানে ঢাকা , বাংলাদেশ )। তার বাবা মনীশ ঘটক ছিলেন কল্লোল আন্দোলনের একজন কবি এবং ঔপন্যাসিক  , যিনি ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন যুবনাশ্ব ( বাংলা : আত্মনাশ্ব ) । ঘটকের ভাই ছিলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা ঋত্বিক ঘটক । দেবীর মা, ধরিত্রী দেবীও একজন লেখক এবং একজন সমাজকর্মী ছিলেন  যার ভাইদের মধ্যে রয়েছেন ভাস্কর শঙ্খ চৌধুরী এবং এর প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক।ভারতের ইকোনমিক অ্যান্ড পলিটিক্যাল উইকলি , শচীন চৌধুরী।

দেবীর প্রথম শিক্ষা ছিল ঢাকায়,  ইডেন মন্টেসরি স্কুল । এরপর তিনি পশ্চিমবঙ্গে (বর্তমানে ভারতে) চলে যান। এরপর তিনি মেদিনীপুর মিশন গার্লস হাই স্কুলে অধ্যয়ন করেন। এরপর তাকে শান্তিনিকেতনে ভর্তি করা হয় । এর পরে, তিনি বেলতলা গার্লস স্কুলে পড়াশোনা করেন যেখানে তিনি তার ম্যাট্রিকুলেশন শেষ করেন। তারপর ১৯৪৪ সালে তিনি আসুতোষ কলেজ থেকে আই.এ. তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন এবং ইংরেজিতে বিএ (অনার্স) সম্পন্ন করেন এবং তারপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে এমএ সম্পন্ন করেন ।

মহাশ্বেতা দেবী বহুবার ভারতের উপজাতি মানুষদের উপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন। মহাশ্বেতা দেবীর বিশেষত্ব আদিবাসী, দলিত এবং প্রান্তিক নাগরিকদের অধ্যয়ন তাদের মহিলাদের উপর ফোকাস করে। তারা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতা , মহাজন এবং উচ্চ শ্রেণীর দুর্নীতি ও অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হিসেবে যুক্ত ছিল । তিনি বছরের পর বছর পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিসগড়ের আদিবাসী গ্রামে বসবাস করতেন, তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতেন এবং তাদের কাছ থেকে শিখতেন। তিনি তার কথা ও চরিত্রে তাদের সংগ্রাম ও আত্মত্যাগকে মূর্ত করেছেন।  তিনি দাবি করেছিলেন যে তার গল্পগুলি তার সৃষ্টি নয়, সেগুলি তার দেশের মানুষের গল্প। যেমন একটি উদাহরণ তার কাজ “ছোট্টি মুন্ডি এবং তার তির”।তিনি লোধা এবং শবর , পশ্চিমবঙ্গের আদিবাসী সম্প্রদায়, মহিলা এবং দলিতদের অধ্যয়ন করেছিলেন ।

তার বিস্তৃত বাংলা কথাসাহিত্যে, তিনি প্রায়শই শক্তিশালী কর্তৃত্ববাদী উচ্চ-বর্ণের জমিদার, অর্থ-ঋণদাতা এবং ভেনাল সরকারী কর্মকর্তাদের দ্বারা উপজাতীয় জনগণ এবং অস্পৃশ্যদের উপর নির্মম নিপীড়নের চিত্র তুলে ধরেন।মহাশ্বেতা দেবী ভারতে উপজাতিদের দ্বারা ভোগা বৈষম্যের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকবার তার আওয়াজ তুলেছিলেন। দেবীর ১৯৭৭ সালের উপন্যাস অরণ্যের অধিকার (অরণ্যে অধিকার) ছিল বিরসা মুন্ডার জীবন নিয়ে । এবং ২০১৬ সালের জুন মাসে, দেবীর সক্রিয়তার ফলস্বরূপ, ঝাড়খণ্ড রাজ্য সরকার অবশেষে মুণ্ডার মূর্তি থেকে ম্যানাকলগুলি অপসারণ করতে দেখেছিল, যা উল্লেখযোগ্য তরুণ উপজাতীয় নেতার স্মারক ভাস্কর্যের অংশ ছিল। ব্রিটিশ শাসনের যুগের একটি ফটোগ্রাফের উপর ভিত্তি করে।

দেবী ১০০ টিরও বেশি উপন্যাস এবং ২০ টিরও বেশি ছোট গল্পের সংকলন লিখেছেন প্রাথমিকভাবে বাংলায় লেখা তবে প্রায়শই অন্যান্য ভাষায় অনুবাদ করা হয়। ঝাঁসির রাণীর জীবনী অবলম্বনে তার প্রথম উপন্যাস ঝাঁসির রানী, প্রকাশিত হয় ১৯৫৬ সালে ।

পুরস্কার এবং স্বীকৃতি—————–
সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার (১৯৭৯),  সমাজসেবায় পদ্মশ্রী (১৯৮৬), জ্ঞানপীঠ পুরস্কার (১৯৯৬), রামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার (১৯৯৭),  অফিসার দেল’ অর্ডার দেস আর্টস এত দেস লেটার্স (২০০৩), পদ্মবিভূষণ – ভারত সরকার কর্তৃক প্রদত্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা (২০০৬), সার্ক সাহিত্য পুরস্কার (২০০৭), ম্যান বুকার আন্তর্জাতিক পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন (২০০৯), যশবন্তরাও চবন জাতীয় পুরস্কার (২০১০), বঙ্গবিভূষণ – পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা (২০১১)।

চলচ্চিত্রায়ন—————–
সংঘর্ষ,  রুদালি, হাজার চৌরাসি কি মা,  মাটি মায়,
গাঙ্গোর।
দেবীর প্রধান কাজগুলির মধ্যে রয়েছে——–
হাজর চুরাশির মা,  অরণ্যের অধিকার, অগ্নিগর্ভ, মূর্তি, নীড়েতে মেঘ,  স্তন্যদায়নী, চোট্টি মুন্ডা এবং তার তীর, বর্তিকা।

মৃত্যু———–
২৩ জুলাই ২০১৬ তারিখে, দেবী একটি বড় হার্ট অ্যাটাকের শিকার হন এবং তাকে কলকাতার বেলে ভিউ ক্লিনিকে ভর্তি করা হয় । জুলাই ২৮ তারিখে ৯০ বছর বয়সে একাধিক অঙ্গ ব্যর্থতার কারণে দেবী মারা যান।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ রিভিউ

ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের সংগ্রামী, সমাজকর্মী ও  দিল্লির প্রথম মেয়র।

অরুণা আসাফ আলী ছিলেন একজন ভারতীয় শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিক কর্মী এবং প্রকাশক।  ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে একজন সক্রিয় অংশগ্রহণকারী, তিনি 1942 সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় বোম্বের গোয়ালিয়া ট্যাঙ্ক ময়দানে ভারতীয় জাতীয় পতাকা উত্তোলনের জন্য ব্যাপকভাবে স্মরণীয় হয়েছিলেন, এই আন্দোলনটিকে এটির সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী চিত্রের একটি দেয়। তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সদস্য হয়েছিলেন এবং লবণ সত্যাগ্রহের সময় জনসাধারণের মিছিলে অংশগ্রহণ করেছিলেন।  তিনি গ্রেপ্তার হন, এবং 1931 সালে গান্ধী-আরউইন চুক্তির অধীনে মুক্তি পাননি যা সমস্ত রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তির শর্ত দেয়।  অন্যান্য মহিলা সহ-বন্দীরা প্রাঙ্গণ ছেড়ে যেতে অস্বীকার করেছিল যদি না তাকেও মুক্তি দেওয়া হয় এবং মহাত্মা গান্ধীর হস্তক্ষেপের পরেই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তিনি তার মুক্তির পর 1942 সাল পর্যন্ত রাজনৈতিকভাবে খুব বেশি সক্রিয় ছিলেন না। তার স্বাধীন ধারার জন্য পরিচিত, তিনি এমনকি 1946 সালে নিজেকে আত্মসমর্পণের জন্য গান্ধীর অনুরোধকে অমান্য করেছিলেন। স্বাধীনতার পর, তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন, দিল্লির প্রথম মেয়র হয়েছিলেন। এছাড়াও তিনি 1992 সালে পদ্মবিভূষণ এবং 1997 সালে মরণোত্তর ভারতরত্ন পুরস্কার লাভ করেন।
অরুনা আসাফ আলী 16 জুলাই 1909 সালে কালকা, পাঞ্জাব, ব্রিটিশ ভারতের (বর্তমানে হরিয়ানা, ভারতে) একটি বাঙালি ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।  তার বাবা উপেন্দ্রনাথ গাঙ্গুলী পূর্ব বাংলার (বর্তমানে বাংলাদেশ) বরিশাল জেলার বাসিন্দা কিন্তু ইউনাইটেড প্রদেশে বসতি স্থাপন করেন।  তিনি একজন রেস্টুরেন্টের মালিক ছিলেন।  তার মা অম্বালিকা দেবী ছিলেন ত্রৈলোক্যনাথ সান্যালের কন্যা, একজন প্রখ্যাত ব্রাহ্ম নেতা যিনি অনেকগুলি ব্রাহ্ম স্তোত্র লিখেছিলেন।  উপেন্দ্রনাথ গাঙ্গুলীর ছোট ভাই ধীরেন্দ্রনাথ গাঙ্গুলী (DG) ছিলেন প্রথম দিকের চলচ্চিত্র পরিচালকদের একজন।  আরেক ভাই, নগেন্দ্রনাথ ছিলেন একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক যিনি নোবেল পুরস্কার বিজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একমাত্র জীবিত কন্যা মীরা দেবীকে বিয়ে করেছিলেন।  অরুণার বোন পূর্ণিমা ব্যানার্জী ভারতের গণপরিষদের সদস্য ছিলেন।
অরুণা লাহোরের সেক্রেড হার্ট কনভেন্ট এবং তারপর নৈনিতালের অল সেন্টস কলেজে শিক্ষিত হন।  স্নাতক হওয়ার পর, তিনি কলকাতার গোখলে মেমোরিয়াল স্কুলে শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন।  তিনি এলাহাবাদে কংগ্রেস দলের একজন নেতা আসাফ আলীর সাথে দেখা করেছিলেন।  ধর্ম এবং বয়সের কারণে পিতামাতার বিরোধিতা সত্ত্বেও (তিনি একজন মুসলিম এবং তার 20 বছরেরও বেশি বয়সী ছিলেন) সত্ত্বেও তারা 1928 সালে বিয়ে করেছিলেন।
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অরুণা আসাফ আলীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।  আসাফ আলীকে বিয়ে করার পর তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সদস্য হয়েছিলেন এবং লবণ সত্যাগ্রহের সময় জনসাধারণের মিছিলে অংশগ্রহণ করেছিলেন।  21 বছর বয়সে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এই অভিযোগে যে তিনি একজন ভবঘুরে ছিলেন এবং তাই 1931 সালে গান্ধী-আরউইন চুক্তির অধীনে মুক্তি পাননি যা সমস্ত রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তির শর্ত দিয়েছিল।  অন্যান্য মহিলা সহ-বন্দিরা প্রাঙ্গণ ছেড়ে যেতে অস্বীকার করেছিল যদি না তাকে মুক্তি দেওয়া হয় এবং মহাত্মা গান্ধী হস্তক্ষেপ করার পরেই ছেড়ে দেওয়া হয়।  একটি গণআন্দোলন তার মুক্তি নিশ্চিত করে।
1932 সালে, তাকে তিহার জেলে বন্দী করা হয়েছিল যেখানে তিনি অনশন শুরু করে রাজনৈতিক বন্দীদের প্রতি উদাসীন আচরণের প্রতিবাদ করেছিলেন।  তার প্রচেষ্টায় তিহার জেলের অবস্থার উন্নতি হয়েছিল কিন্তু তাকে আম্বালায় স্থানান্তরিত করা হয় এবং নির্জন কারাবাসের শিকার করা হয়।  মুক্তির পর তিনি রাজনৈতিকভাবে খুব একটা সক্রিয় ছিলেন না, কিন্তু 1942 সালের শেষের দিকে তিনি ভূগর্ভস্থ আন্দোলনে অংশ নেন।
1942 সালের 8 আগস্ট, সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটি বোম্বে অধিবেশনে ভারত ছাড়ো প্রস্তাব পাস করে।  সরকার প্রধান নেতাদের এবং কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সকল সদস্যকে গ্রেফতার করে সাড়া দিয়েছিল এবং এইভাবে আন্দোলনকে সাফল্য থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করেছিল।  তরুণ অরুণা আসাফ আলী 9 আগস্ট অধিবেশনের বাকি অংশে সভাপতিত্ব করেন এবং গোয়ালিয়া ট্যাঙ্ক ময়দানে কংগ্রেসের পতাকা উত্তোলন করেন।  এটি আন্দোলনের সূচনাকে চিহ্নিত করে।  সমাবেশে পুলিশ গুলি চালায়।  বিপদের মুখে তার সাহসিকতার জন্য অরুণাকে 1942 সালের আন্দোলনের নায়িকা বলা হয় এবং পরবর্তী বছরগুলিতে তাকে স্বাধীনতা আন্দোলনের গ্র্যান্ড ওল্ড লেডি বলা হয়।  প্রত্যক্ষ নেতৃত্বের অনুপস্থিতি সত্ত্বেও, স্বাধীনতা অর্জনের জন্য ভারতের তরুণদের আকাঙ্ক্ষার বহিঃপ্রকাশ হিসাবে সারা দেশে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
তার নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল কিন্তু গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি ভূগর্ভস্থ হয়ে যান এবং ১৯৪২ সালে আন্ডারগ্রাউন্ড আন্দোলন শুরু করেন। তার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত ও বিক্রি করা হয়।  ইতিমধ্যে, তিনি রাম মনোহর লোহিয়ার সাথে কংগ্রেস পার্টির একটি মাসিক ম্যাগাজিন ইনকিলাবও সম্পাদনা করেন।  1944 সালের একটি ইস্যুতে, তিনি যুবকদের সহিংসতা এবং অহিংসা সম্পর্কে নিরর্থক আলোচনা ভুলে যেতে এবং বিপ্লবে যোগ দিতে বলেছিল।  জয়প্রকাশ নারায়ণ ও অরুণা আসাফ আলীর মতো নেতাদের “গান্ধীর রাজনৈতিক সন্তান কিন্তু কার্ল মার্ক্সের সাম্প্রতিক ছাত্র” হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।  সরকার তাকে ধরার জন্য 5,000 টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে।
তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং দিল্লির করোলবাগের ডাঃ জোশির হাসপাতালে কিছু সময়ের জন্য লুকিয়ে ছিলেন।  মহাত্মা গান্ধী তাকে একটি হাতে লেখা নোট পাঠিয়েছিলেন লুকিয়ে থেকে বেরিয়ে আসতে এবং নিজেকে আত্মসমর্পণ করার জন্য – যেহেতু তার মিশন সম্পন্ন হয়েছিল এবং তিনি হরিজন কার্যের জন্য পুরস্কারের পরিমাণ ব্যবহার করতে পারেন।  যাইহোক, 1946 সালে তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট প্রত্যাহার করার পরেই তিনি আত্মগোপন থেকে বেরিয়ে আসেন। তিনি মহাত্মার কাছ থেকে পাওয়া নোটটি মূল্যবান ছিলেন এবং এটি তার ড্রয়িং রুমকে সজ্জিত করেছিল।  যাইহোক, তিনি রয়্যাল ইন্ডিয়ান নেভি বিদ্রোহকে সমর্থন করার জন্য গান্ধীর কাছ থেকেও সমালোচনার সম্মুখীন হন, একটি আন্দোলনকে তিনি হিন্দু ও মুসলমানদের একক সর্বশ্রেষ্ঠ একীকরণকারী ফ্যাক্টর হিসেবে দেখেছিলেন যেটি পাকিস্তান আন্দোলনের শীর্ষে ছিল।
তিনি কংগ্রেস সোশ্যালিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন, সমাজতান্ত্রিক ঝোঁক সহ কর্মীদের জন্য কংগ্রেস পার্টির মধ্যে একটি ককাস।  সমাজতন্ত্রের বিষয়ে কংগ্রেস পার্টির অগ্রগতিতে হতাশ হয়ে তিনি 1948 সালে একটি নতুন দল, সমাজতান্ত্রিক দল এ যোগ দেন। তবে তিনি এদাতা নারায়ণনের সাথে সেই দলটি ত্যাগ করেন এবং রজনী পামে দত্তের সাথে মস্কো সফর করেন।  তারা দুজনেই 1950-এর দশকের গোড়ার দিকে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন।  ব্যক্তিগত ফ্রন্টে, 1953 সালে আসাফ আলী মারা গেলে তিনি শোকাহত হন।
1954 সালে, তিনি ভারতীয় নারীদের জাতীয় ফেডারেশন গঠন করতে সাহায্য করেছিলেন, সিপিআই-এর মহিলা শাখা কিন্তু 1956 সালে নিকিতা ক্রুশ্চেভের স্ট্যালিনকে প্রত্যাখ্যান করার পরে পার্টি ত্যাগ করেন।  1958 সালে, তিনি দিল্লির প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন।  তিনি দিল্লিতে সমাজকল্যাণ ও উন্নয়নের জন্য কৃষ্ণ মেনন, বিমলা কাপুর, গুরু রাধা কিষাণ, প্রেমসাগর গুপ্ত, রজনী পালমে জোতি, সরলা শর্মা এবং সুভদ্রা জোশীর মতো তার যুগের সমাজকর্মী এবং ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন।
তিনি এবং নারায়ণন লিঙ্ক পাবলিশিং হাউস শুরু করেন এবং একই বছর একটি দৈনিক পত্রিকা, প্যাট্রিয়ট এবং একটি সাপ্তাহিক, লিঙ্ক প্রকাশ করেন।  জওহরলাল নেহেরু, কৃষ্ণ মেনন এবং বিজু পট্টনায়কের মতো নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতার কারণে প্রকাশনাগুলি মর্যাদাপূর্ণ হয়ে ওঠে।  পরে তিনি অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে প্রকাশনা সংস্থা থেকে সরে আসেন, তার কমরেডদের ধর্ম গ্রহণের লোভে হতবাক হয়ে যান।  জরুরী অবস্থা সম্পর্কে সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও, তিনি ইন্দিরা গান্ধী এবং রাজীব গান্ধীর কাছাকাছি ছিলেন।
তিনি 29 জুলাই 1996-এ 87 বছর বয়সে নিউ দিল্লিতে মারা যান।
অরুনা আসাফ আলী ১৯৬৪ সালের জন্য আন্তর্জাতিক লেনিন শান্তি পুরস্কার এবং 1991 সালে আন্তর্জাতিক বোঝাপড়ার জন্য জওহরলাল নেহেরু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন। তিনি 1992 সালে তার জীবদ্দশায় ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান পদ্মবিভূষণ এবং অবশেষে সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কারে ভূষিত হন।  ভারতরত্ন, মরণোত্তর 1997 সালে।  1998 সালে, তার স্মরণে একটি স্ট্যাম্প জারি করা হয়েছিল।  তার সম্মানে নতুন দিল্লির অরুণা আসাফ আলী মার্গের নামকরণ করা হয়েছে।  অল ইন্ডিয়া মাইনরিটিস ফ্রন্ট বার্ষিক ডক্টর অরুণা আসাফ আলী সদভাবনা পুরস্কার বিতরণ করে।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

মালালা ইউসুফজাই : পাকিস্তানি শিক্ষা কর্মী যিনি সর্বকনিষ্ঠ নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী।

মালালা ইউসুফজাই, একজন পাকিস্তানি শিক্ষা কর্মী, 12 জুলাই, 1997, পাকিস্তানের সোয়াত উপত্যকার মিঙ্গোরায় জন্মগ্রহণ করেন। 11 বছর বয়সে তিনি বিশিষ্ট হয়ে ওঠেন, যখন তিনি তার স্থানীয় সোয়াত উপত্যকায় মেয়েদের স্কুলে যাওয়া নিষিদ্ধ করার তালেবানের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করেন। তার সাহস এবং দৃঢ়তা তাকে বিশ্বব্যাপী আশা এবং অনুপ্রেরণার প্রতীক করে তুলেছে, 17 বছর বয়সে তাকে 2014 সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার অর্জন করে।

প্রারম্ভিক জীবন এবং সক্রিয়তা

মালালার জন্ম জিয়াউদ্দিন ইউসুফজাই, একজন কবি এবং শিক্ষা কর্মী এবং তোর পেকাই ইউসুফজাই। তার নামকরণ করা হয়েছিল একটি লোক নায়িকার নামে, মাইওয়ান্দের মালালাই, যিনি দ্বিতীয় অ্যাংলো-আফগান যুদ্ধের সময় তার সাহসিকতার জন্য পরিচিত। মালালার বাবা সোয়াত উপত্যকায় একটি স্কুল চালাতেন এবং এই অঞ্চলে ইসলামিক আইনের কঠোর ব্যাখ্যা আরোপ করার তালেবানের প্রচেষ্টার একজন সোচ্চার সমালোচক ছিলেন।

2008 সালে, 11 বছর বয়সে, মালালা বিবিসি উর্দু পরিষেবার জন্য একটি ব্লগ লিখতে শুরু করেন, তালেবান শাসনের অধীনে তার জীবনের বিশদ বিবরণ দেন এবং মেয়েদের শিক্ষার পক্ষে কথা বলেন। তার লেখা ছিল মর্মস্পর্শী এবং শক্তিশালী, সোয়াত উপত্যকার মেয়েদের সংগ্রামে কণ্ঠ দিয়েছিল যারা স্কুলে যাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছিল।

তার জীবনের উপর তালেবান প্রচেষ্টা

9 অক্টোবর, 2012-এ, মালালার জীবন নাটকীয় মোড় নেয় যখন সে স্কুলে যাওয়ার পথে তালেবানদের দ্বারা গুলিবিদ্ধ হয়। আক্রমণটি তাকে নীরব করার একটি ব্যর্থ প্রচেষ্টা ছিল, কিন্তু এটি শুধুমাত্র মেয়েদের শিক্ষার জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য তার সংকল্পকে শক্তিশালী করেছিল।

আক্রমণটি ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দেয় এবং সাহস ও স্থিতিস্থাপকতার প্রতীক হিসেবে মালালার অবস্থানকে দৃঢ় করে। তাকে পেশোয়ারের একটি সামরিক হাসপাতালে এয়ারলিফট করা হয় এবং পরবর্তীতে আরও চিকিৎসার জন্য ইংল্যান্ডের বার্মিংহামের একটি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।

নোবেল শান্তি পুরস্কার

2014 সালে, শিশু ও যুবকদের দমনের বিরুদ্ধে এবং সমস্ত শিশুদের শিক্ষার অধিকারের জন্য তার সংগ্রামের জন্য ভারতীয় শিশু অধিকার কর্মী কৈলাশ সত্যার্থীর সাথে মালালাকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল।

মালালার নোবেল পুরষ্কার গ্রহণের বক্তৃতা ছিল কর্মের জন্য একটি শক্তিশালী আহ্বান, যা বিশ্ব নেতাদের শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার এবং সমস্ত শিশুর মানসম্পন্ন শিক্ষার অ্যাক্সেস নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছিল। তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রাপ্ত সর্বকনিষ্ঠ ব্যক্তি হয়ে ওঠেন, এবং তার বক্তৃতা একটি স্থায়ী অভ্যাসের সাথে মিলিত হয়।

শিক্ষার সক্রিয়তা

মালালার সক্রিয়তা তার জন্মভূমি পাকিস্তানে সীমাবদ্ধ থাকেনি। তিনি বিশ্ব ভ্রমণ করেছেন, মেয়েদের শিক্ষার পক্ষে কথা বলেছেন এবং নীতি পরিবর্তনের জন্য বিশ্ব নেতাদের সাথে বৈঠক করেছেন। তিনি “আই অ্যাম মালালা” সহ বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন, যা একটি আন্তর্জাতিক বেস্টসেলার হয়েছে।

2013 সালে, মালালা এবং তার বাবা মালালা ফান্ডের সহ-প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, একটি অলাভজনক সংস্থা যা মেয়েদের শিক্ষা প্রদানের জন্য কাজ করে যেখানে এটি অস্বীকৃত বা অ্যাক্সেস করা কঠিন। তহবিলটি আফগানিস্তান, সিরিয়া এবং নাইজেরিয়ার মতো দেশে প্রকল্পগুলিকে সমর্থন করেছে।

উত্তরাধিকার

মালালার উত্তরাধিকার তার নিজের গল্পের বাইরেও প্রসারিত। তিনি তরুণ প্রজন্মের একটি প্রজন্মকে তাদের অধিকারের জন্য দাঁড়াতে এবং মানসম্মত শিক্ষার দাবিতে অনুপ্রাণিত করেছেন। তার সাহস এবং স্থিতিস্থাপকতা বিশ্বকে দেখিয়েছে যে প্রতিকূলতার মুখেও একজন ব্যক্তি পরিবর্তন করতে পারে।

মালালার গল্পটি মেয়েদের শিক্ষার গুরুত্বকেও তুলে ধরেছে, যা দারিদ্র্যের চক্র ভাঙতে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তার ওকালতি মেয়েদের শিক্ষায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির দিকে পরিচালিত করেছে, অনেক দেশ শিক্ষার জন্য তহবিল বাড়াতে এবং মেয়েদের শিক্ষাকে সমর্থন করার জন্য নীতি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

উপসংহার

মালালা ইউসুফজাইয়ের গল্প সাহস এবং স্থিতিস্থাপকতার শক্তির প্রমাণ। মেয়েদের শিক্ষার জন্য লড়াই করার জন্য তার সংকল্প তরুণ প্রজন্মের একটি প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করেছে এবং বিশ্বব্যাপী মেয়েদের শিক্ষার প্রচারে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির দিকে পরিচালিত করেছে। তার উত্তরাধিকার বিশ্বব্যাপী মানুষকে তাদের অধিকারের জন্য দাঁড়াতে এবং মানসম্পন্ন শিক্ষার দাবিতে অনুপ্রাণিত ও অনুপ্রাণিত করবে।

Share This
Categories
গল্প নারী কথা প্রবন্ধ

বরগাভীমা মন্দিরের ইতিহাস ও তাৎপর্য উন্মোচন।

বর্গাভীমা মন্দির, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের তমলুক শহরে অবস্থিত, একটি ঐতিহাসিক হিন্দু মন্দির যা দেবী কালী দেবী বর্গাভীমাকে উত্সর্গীকৃত। মন্দিরটি এই অঞ্চলের একটি উল্লেখযোগ্য সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ল্যান্ডমার্ক, যা ভক্ত এবং পর্যটকদের একইভাবে আকর্ষণ করে।

ইতিহাস

বর্গাভীমা মন্দিরের 16 শতকের একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে। কিংবদন্তি অনুসারে, মন্দিরটি তমলুকের মহারাজা দ্বারা নির্মিত হয়েছিল, যিনি দেবী বর্গাভীমার একনিষ্ঠ অনুসারী ছিলেন। মন্দিরটি মুঘল এবং ইউরোপীয় প্রভাবের মিশ্রণে ঐতিহ্যবাহী বাংলা স্থাপত্য শৈলী ব্যবহার করে নির্মিত হয়েছিল।

স্থাপত্য

বর্গাভীমা মন্দিরটি তার অত্যাশ্চর্য স্থাপত্যের জন্য বিখ্যাত, যা এই অঞ্চলের অনন্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে প্রতিফলিত করে। মূল মন্দির ভবনটিতে জটিল পাথরের খোদাই, অলঙ্কৃত বারান্দা এবং সুন্দর নকশা করা উঠোন রয়েছে। মন্দিরটিতে শিব, গণেশ এবং কৃষ্ণ সহ অন্যান্য দেবতাদের নিবেদিত বেশ কয়েকটি ছোট মন্দির রয়েছে।

মন্দিরের স্থাপত্যটি বাংলা এবং মুঘল শৈলীর সংমিশ্রণ, একটি বড় গম্বুজ এবং চারটি ছোট গম্বুজ এর চারপাশে রয়েছে। মূল প্রবেশদ্বারটি জটিল খোদাই এবং ভাস্কর্য দ্বারা সজ্জিত এবং দেয়ালগুলি সুন্দর চিত্রকর্ম এবং ম্যুরাল দ্বারা সজ্জিত।

ধর্মীয় তাত্পর্য

বর্গাভীমা মন্দিরটি এই অঞ্চলের একটি উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় ল্যান্ডমার্ক, যা সারা দেশ থেকে ভক্তদের আকর্ষণ করে। মন্দিরটি দেবী বর্গাভীমাকে উৎসর্গ করা হয়েছে, যাকে দেবী কালীর রূপ বলে মনে করা হয়। কিংবদন্তি অনুসারে, তমলুকের মহারাজা দেবী বর্গাভীমাকে পূজা করতেন, যিনি বিশ্বাস করতেন যে তিনি তার রাজ্যকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করবেন।

মন্দিরটিকে একটি শক্তিপীঠ বলেও বিশ্বাস করা হয়, এটি একটি পবিত্র স্থান যেখানে দক্ষিণ ইয়াগের পৌরাণিক ঘটনার সময় দেবী সতীর দেহের অঙ্গগুলি পড়েছিল। মন্দিরটি ভারতের 51টি শক্তিপীঠের মধ্যে একটি, এবং হিন্দুদের জন্য একটি পবিত্র তীর্থস্থান হিসাবে বিবেচিত হয়।

সাংস্কৃতিক তাৎপর্য

বর্গাভীমা মন্দির শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় ল্যান্ডমার্ক নয়, এই অঞ্চলের একটি সাংস্কৃতিক আইকনও বটে। মন্দিরটি বাংলার সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, সারা দেশের পণ্ডিত, শিল্পী এবং সঙ্গীতজ্ঞদের আকর্ষণ করেছে।

মন্দির কমপ্লেক্সে একটি যাদুঘর এবং একটি গ্রন্থাগারও রয়েছে, যেখানে বাংলার ইতিহাস ও সংস্কৃতির সাথে সম্পর্কিত দুর্লভ পাণ্ডুলিপি এবং নিদর্শন রয়েছে। মন্দিরটি সারা বছর ধরে বেশ কয়েকটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং উত্সবের আয়োজন করে, যার মধ্যে বর্গাভীমা মন্দির উত্সব রয়েছে, যা বাংলা সঙ্গীত, নৃত্য এবং শিল্পকে উদযাপন করে।

উপসংহার

বর্গাভীমা মন্দিরটি পশ্চিমবঙ্গের একটি ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিকভাবে উল্লেখযোগ্য ল্যান্ডমার্ক, যা ভক্ত ও পর্যটকদের একইভাবে আকর্ষণ করে। এর অত্যাশ্চর্য স্থাপত্য, সুন্দর উদ্যান, এবং সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এটিকে বাংলার সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার অন্বেষণে আগ্রহী যেকোন ব্যক্তির জন্য একটি অবশ্যই দেখার গন্তব্য করে তোলে।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

পরিবেশ বন্ধু কিঙ্করী দেবী : সৌরভকুমার ভূঞ্যা।

পেশায় তিনি ছিলেন ঝাড়ুদার। জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছে জঞ্জাল সাফ করে। শিক্ষার আলোক-বঞ্চিত নিরক্ষর এই গ্রাম্য মহিলা তার সীমাবদ্ধতার গণ্ডী ছাড়িয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন এক অসম লড়াইয়ে যাতে করে সমাজ থেকে অপরাধ নামক জঞ্জাল কিছুটা অত্যন্ত দূর করা যায়। পদে পদে বাধা এসেছে। প্রাণ সংশয় হয়েছে। হার মানেননি তিনি, পালিয়ে আসেনি যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে। অবশেষে সাফল্যের জয়মাল্য গলায় পরে প্রমাণ করে দিয়েছেন লক্ষ্য যদি মহৎ হয় আর সঙ্গে যদি থাকে জেদ, হার-না-মানা মানসিকতা ও আন্তরিক প্রচেষ্টা তাহলে সাফল্য একদিন না একদিন ধরা দিতে বাধ্য। এই দুঃসাহসিক প্রয়াস তাঁকে ইতিহাসে সম্মানের স্থান দিয়েছে। বর্তমানে পরিবেশ সংক্রান্ত আলোচনায় হয়তো সেভাবে উঠে আসে না তাঁর নাম, তাই বলে তাঁর কৃতিত্বকে কোনোভাবেই খাটো করা যায় না। পরিবেশ বন্ধু এই মহৎ-প্রাণা মহিলা হলেন কিঙ্করী দেবী।
১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে হিমাচল প্রদেশের ঘাতোন গ্রামে এক গরিব দলিত পরিবারে তার জন্ম। তাঁর বাবা কালিয়া রাম ছিলেন সামান্য কৃষক। আর্থিক অনটন ও এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাবের কারণে কিঙ্করী দেবী পড়াশোনা করার সুযোগ পাননি। জীবনের প্রায় শেষদিকে এসে তিনি কেবল নিজের নামটুকু সই করতে শিখেছিলেন। অভাবে কারণে শৈশবে তিনি অপরের বাড়িতে কাজ করতেন। মাত্র চোদ্দ বছর বয়সে তার বিয়ে হয় শানু রামের সঙ্গে। শানু পেশায় ছিল শ্রমিক। কিঙ্করী দেবীর বয়স যখন বাইশ বছর তখন টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে শানু রাম মারা যায়। শুরু হয় কিঙ্করীর জীবন যুদ্ধের আর এক নতুন অধ্যায়। স্বামীহারা, অসহায় বিধবা সংসার প্রতিপালনের জন্য ঝাড়ুদারের কাজ করতে শুরু করেন। এক্ষেত্রে আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতোই হতে পারত তাঁর জীবন। কিন্তু তা হয়নি, কেননা তাঁর ভাবনা ছিল সাধারণের থেকে একটু আলাদা।
কিঙ্করী দেখেন খনি মালিকদের অনিয়ন্ত্রিত খনন ও মাফিয়াদের দৌরাত্ম্যে হিমাচল প্রদেশের পাহাড়ি এলাকা তার সৌন্দর্য হারাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জল সরবরাহ ব্যবস্থা, ধ্বংস হচ্ছে চাষযোগ্য জমি। এসব দেখে তিনি স্থির থাকতে পারেন না। শপথ নেন এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার। প্রথমে তিনি স্থানীয়ভাবে প্রতিবাদ শুরু করেন। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয় না। তখন তিনি আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। People’s Action for People in Need নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তাঁর পাশে এসে দাঁড়ায়। সিমলা হাইকোর্টে তিনি ৪৮ জন খনি শ্রমিকের বিরুদ্ধে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন। সময় এগোতে থাকে কিন্তু মামলার কোনো অগ্রগতি হয় না। এর প্রতিবাদে হাইকোর্টের সামনে ১৯ দিন অনশনে বসেন তিনি। ব্যাপারটা রাজ্য ছাড়িয়ে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে সাড়া ফেলে দেয়। ফলস্বরূপ তাঁর দায়ের করা মামলার বিচার শুরু হয়। ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে সিমলা হাইকোর্ট রাজ্যে খনন কার্যের ওপর স্থিতাবস্থা (Stay Order) জারি করেন এবং সেই সঙ্গে সঙ্গে পাহাড়ি এলাকায় বিস্ফোরণের ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞাজারি করেন। খনি মালিকরা এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টে যান। এই সময় কিঙ্করী দেবীকে ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে সময় কাটাতে হয়েছে। অবশেষে ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে সুপ্রিমকোর্ট তার পক্ষে রায় দেন।
এক অতি সাধারণ, তথাকথিত অশিক্ষিত মহিলার এই লড়াই মুগ্ধ করেছিল আমেরিকার তৎকালীন ফার্স্ট লেডি হিলারি ক্লিনটনকে। ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে বেজিং-এ বসেছিল আন্তর্জাতিক মহিলা সম্মেলন (International Women Conference)। হিলারি ক্লিনটনের উদ্যোগে কিঙ্করী দেবী শুধু এখানে আমন্ত্রিতই হননি, প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে ওই সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদবোধন করার গৌরব লাভ করেন। বন ও পরিবেশ রক্ষায় তার বিশেষ অবদানের জন্য ২০০১ খ্রিস্টাব্দে ভারতবর্ষের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাকে ঝাঁসি রানি ন্যাশন্যাল সম্মানে সম্মানিত করেন।
পরিবেশের লড়াইয়ের পাশাপাশি নিজের জেলায় একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করার জন্য তিনি লড়াই করেছিলেন। আসলে তিনি চাননি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাবে অন্যান্যদের অবস্থা তার মতো হোক। তার নিজের কথায়, “পড়াশোনা করার সৌভাগ্য আমার হয়নি, কিন্তু আমি চাইনি পড়াশোনার অভাবে আমাকে যে কষ্ট ভোগ করতে হয়েছে তা অন্যদেরকে ভোগ করতে হোক।” দীর্ঘ তিন বছর তিনি লড়াই চালিয়ে যান। অবশেষে ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে রাজ্য সরকার তাঁর এলাকায় একটি ডিগ্রি কলেজ স্থাপন করেন। ২০০৭ খ্রিস্টাব্দের ৩০ ডিসেম্বর দীর্ঘ্য রোগভোগের পর তিনি মারা যান।
মানুষ যতই বিজ্ঞানকে করায়ত্ব করুক না কেন, একথা বাস্তব পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হলে অস্তিত্ব সংকটের মুখোমুখি হবে। যা বর্তমানে এক ভয়ংকর বার্তা নিয়ে হাজির। তাই শুধু সরাকরি নয়, সচেতনতা দরকার সাধারণ মানুষের মধ্যেও, যেমনটা আমরা দেখতে পাই কিঙ্করী দেবীর মধ্যে। নিরক্ষর, অল্প বয়সে বিধবা, অত্যন্ত গরিব একজন মহিলা সমস্ত রকম প্রতিবন্ধকতা সঙ্গে নিয়ে পরিবেশ রক্ষায় একপ্রকার নিজের জীবন বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। তার জন্য কোনো প্রশংসাই যথেষ্ঠ নয়। তিনি প্রমাণ করে দিয়েছেন একেবারে সাধারণ সমাজের চোখে তথাকথিত অস্পৃশ্য মহিলারাও অনেক বৃহৎ কাজ করতে পারেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে পরিবেশ বন্ধু হিসাবে অন্যান্যদের নাম যতটা শোনা যায় সেভাবে শোনা যায় না কিঙ্করী দেবীর নাম। অনেকে তো তাঁর নামটাই জানেন না। এটা আমাদের লজ্জা। আজকের সময়ে এইরকম মহৎ-প্রাণা মানুষদের শ্রদ্ধায় স্মরণ করার দরকার আছে।
তথ্যসূত্র – উইকিপিডিয়া

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

বাংলা ছায়া ছবির জগতে ছায়া দেবী এক কিংবদন্তি অভিনেত্রীর নাম।

ভূমিকা—

বাংলা ছায়া ছবির জগতে ছায়া দেবী এক কিংবদন্তি অভিনেত্রীর নাম।ছায়া দেবী একজন প্রতিভাময়ী ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী। স্বর্ণ যুগের এই অভিনেত্রী  বহু সিনেমায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অভিনয় করে তাঁর অভিনয় প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গিয়েছেন।

 

 

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন——-

 

ছায়া দেবীর  পিসিমা ছিলেন অভিনেতা অশোককুমার ও কিশোর কুমারের দিদিমা।ছায়া দেবীর জন্ম ৩ জুন ১৯১৯ সালে এই পিসিমার ( সতীশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী) ভাগলপুরের রাজবাড়ীতে। পিতা হারাধন গঙ্গোপাধ্যায়।

 

প্রাথমিক শিক্ষা ও অভিনয় জীবনে প্রবেশ—-

 

তার প্রাথমিক শিক্ষা ভাগলপুরের মোক্ষদা গার্লস স্কুলে। ভাগলপুর থেকে বাবার সঙ্গে দিল্লি গিয়ে ইন্দ্রপ্রস্থ গার্লস স্কুলে ভর্তি হন এবং সঙ্গীত চর্চা করতে থাকেন। এগারো বৎসর বয়সে রাঁচির অধ্যাপক ভূদেব চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিবাহ হয়। কিন্তু এ বিবাহ কার্যকর হয় না। দশম শ্রেণীর ছাত্রী তিনি বাবার সঙ্গে কলকাতায় এসে কৃষ্ণচন্দ্র দে ও পণ্ডিত দামোদর মিশ্রর কাছে সংগীত শিখতে থাকেন। সেই সঙ্গে বেলা অর্ণবের কাছে নাচের তালিম নিতে থাকেন। নাটক-পাগল দুই পিসতুতো দাদা শ্রীশচন্দ্র ও শৈলেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় তিনি অভিনয় জগতে আসেন।

 

অভিনয় জীবন——-

 

১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দেই তিনি দেবকী বসুর ‘সোনার সংসার’ছবিতে নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করেন।  তবে ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে কনক নামের কিশোরী ছায়া দেবী নাম নিয়ে ‘পথের শেষে’ ছবিতে অন্যতম নায়িকার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবি রাঙা বৌ, ছিন্নহার, প্রভাসমিলন, হাল বাঙলা, বিদ্যাপতি (হিন্দি ও বাংলা), রিক্তা,  জীবন মরণ প্রভৃতি। পথের শেষে – এই ছবিটি হিট হওয়ায় তিনি সোনার মেডেল পেয়েছিলেন।

 

গায়িকা হিসেবে—-

 

অভিনয়ের সঙ্গে সঙ্গে কয়েকটি ছবিতে তিনি গানও গেয়েছেন। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘অভয়ের বিয়ে’ ছবিতে তিনি ৪/৫ খানা গান গেয়েছেন।

 

মুম্বই গমন—

 

এর পরে ছায়া দেবী প্রফুল্ল রায়ের আমন্ত্রণে তিনি মুম্বই গিয়ে সেখানে’মেরাগাঁও ‘ ছবিতে গানে ও অভিনয়ে বিশেষ পারদর্শিতা দেখান। ছায়া দেবী প্রায় পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলা, হিন্দী, তামিল ও তেলুগু ভাষায় শতাধিক ছায়াছবিতে প্রধানত পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে ‘বিদ্যাপতি’ ছায়াছবির জন্য উনি প্রশংসিত হন ও ক্রমে প্রচুর উল্ল্যেখযোগ্য ছবিতে অভিনয় করেন, যেমন বাংলায় পরিচালক তপন সিংহর নির্জন সৈকতে, হাটে বাজারে  এবং আপনজন, সপ্তপদী, মানিক, উত্তর ফাল্গুনী, বা হিন্দীতে অমিতাভ বচ্চনের সাথে আলাপ । বাংলা,হিন্দি ও তামিল তিন ভাষাতেই ‘রত্নদীপ’ ছবিতে তার অভিনয় স্মরণীয়।  ছায়াছবিতে কাজ করার পাশাপাশি বেতার কেন্দ্রে নিয়মিত খেয়াল, ঠুংরি পরিবেশন করেছেন।

তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবি সমূহ—

 

প্রায় দু-শোর বেশি ছবিতে তিনি অভিনয় করেন। সাত পাকে বাঁধা, মুখার্জি পরিবার, অন্তরাল, আরোহী, কাঁচ কাটা হীরে, সূর্যতপা,  থানা থেকে আসছি, মণিহার, গল্প হলেও সত্যি, অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি, হাটেবাজারে, আপনজন’ (রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত), বাঘিনী, কমললতা,  চৌরঙ্গী, কুঁয়াশা, রাতভোর, সাহেব বিবি গোলাম, ত্রিযামা, মায়াবাজার, গলি থেকে রাজপথ, মাণিক, অটলজলের আহ্বান, দেয়ানেয়া, সপ্তপদী, নির্জন সৈকতে, পিতাপুত্র, হারমোনিয়াম, আরোগ্য নিকেতন, রাজা রামমোহন, বাবা তারকনাথ, আলাপ, ধনরাজ তামাং, অরুণ বরণ কিরণমালা, সূর্যসাক্ষী, রঙবেরঙ, প্রায়শ্চিত্ত, রাশিফল, লালগোলাপ, স্বর্ণমণির ঠিকানা, প্রতিকার, বোবা সানাই, প্রতিদান, কলঙ্কিত নায়ক, রাজকুমারী, মুক্তিস্নান, সমান্তরাল, কুহেলী, হার মানা হার, শেষ পর্ব,  পদিপিসির বর্মি বাক্স, দেবীচৌধুরাণী।

 

মৃত্যু—–

 

কিংবদন্তি এই অভিনেত্রী বহু সিনেমায় রেখে গিয়েছেন তাঁর অভিনয় দক্ষতার সাক্ষর।  ২৫ এপ্রিল ২০০১ সালে তিনি প্রয়াত হন। কিন্তু আজও তিনি অমর হয়ে রয়েছেন মানষের হৃদয়ে।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।।

Share This