Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল : দ্যা লেডি উইথ দ্যা ল্যাম্প।

আজ আন্তর্জাতিক মিডওয়াইফ বা ধাত্রী দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় আজ ভারতেও পালন করা হচ্ছে দিবসটি। নার্সিং এমন একটি পেশা যা সাধারণ জনগণের স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত। এ পেশার মাধ্যমে ব্যক্তিগত, পারিবারিক কিংবা সামাজিকভাবে কোন রোগী বা ব্যক্তির স্বাস্থ্য পুণরুদ্ধার এবং জীবনযাত্রার গুরুত্বতা তুলে ধরা হয়। এ পেশার সাথে সম্পৃক্ত, দক্ষ কিংবা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তি নার্স বা সেবিকা নামে পরিচিত। প্রধানতঃ নারীরাই নার্সিং পেশার সাথে জড়িত থাকেন। তবে এখন অনেক পুুুরুষেও এই পেশার সাথে যুুুুক্ত হচ্ছেন। ফ্লোরেন্স নাইটিংগেলের জন্মদিন কে স্মরণীয় করে রাখতে আজকের দিনটি অর্থাৎ আন্তৰ্জাতিক ধাত্রী দিবস সমগ্র বিশ্বে প্ৰতিবছর ১২ মে তারিখে পালন করা হয়। ১৮২০ সালের এই তারিখে আধুনিক নার্সিং পরিষেবার মাৰ্গদৰ্শক ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের জন্ম হয়েছিল। এই দিবস পালনের মাধ্যমে সম্মান জানানো হয় সেই নারীকে যিনি তার কর্মের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করেছেন – নার্সিং একটি পেশা নয় সেবা। ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের প্ৰতি শ্ৰদ্ধা জানাবার সাথে বিশ্বের ধাত্রীদের রোগীদের প্ৰতি দেওয়া স্বাস্থ্যসেবার জন্য কৃতজ্ঞতা প্ৰকাশ করা হয়।

ইতিহাস—

ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল এর জন্মদিন কে আন্তৰ্জাতিক ধাত্রী দিবস হিসেবে পালিত হয়। তিনি ছিলেন আধুনিক নার্সিং সেবার অগ্রদূত, একজন লেখিকা এবং পরিসংখ্যানবিদ। যিনি দ্যা লেডি উইথ দ্যা ল্যাম্প নামে পরিচিত ছিলেন। ১৮২০ সালের ১২ মে মাসে ইতালির ফ্লোরেন্সে জন্মগ্রহণ করেন ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল।
ছোটবেলা থেকে তার স্বপ্ন ছিল নার্স হওয়া। কিন্তু তখনকার সময়ে নার্সিংকে সম্মানের চোখে দেখা হতো না। এছাড়া তার পিতা-মাতা চাননি ফ্লোরেন্স নার্স হোক। তাই ফ্লোরেন্সকে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বাধ্য হয়। কেননা তার নিজ বাড়িতে তার স্বপ্নটি পূরণ করা সম্ভব ছিলনা।
১৮৫৫ সালে তিনি নার্স প্রশিক্ষণের জন্য তহবিল সংগ্রহের জন্য কাজ শুরু করেন। নিরলস প্রচেষ্টায় ১৮৫৯ সালে তিনি নাইটিঙ্গেল ফান্ডের জন্য সংগ্রহ করেন প্রায় ৪৫ হাজার পাউন্ড। পরবর্তী সময়ে তিনি ভারতবর্ষের গ্রামীণ মানুষের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর গবেষণা চালান। যা ভারতবর্ষে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা পৌছে দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অবদান রাখে।লন্ডনের সেন্ট থমাস হাসপাতালে নার্সিংকে সম্পূর্ণ পেশারূপে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ১৮৬০ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘নাইটিঙ্গেল ট্রেনিং স্কুল’ যার বর্তমান নাম ‘ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল স্কুল অব নার্সিং । ডা. এলিজাবেথ ব্ল্যাকওয়েলের সাথে যৌথভাবে ১৮৬৭ সালে নিউইয়র্কে চালু করেন ‘উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজ’। এ ছাড়াও তিনি বিভিন্ন সময় নার্সিংয়ের উপর বইও লিখেছেন। ১৮৮৩ সালে রাণী ভিক্টোরিয়া তাকে ‘রয়েল রেডক্রস’ পদক প্রদান করেন। প্রথম নারী হিসাবে ‘অর্ডার অব মেরিট’ খেতাব লাভ করেন ১৯০৭ সালে। ১৯০৮ সালে লাভ করেন লন্ডন নগরীর ‘অনারারি ফ্রিডম’ উপাধি। এ ছাড়াও ১৯৭৪ সাল থেকে তার জন্মদিন ১২ মে পালিত হয়ে আসছে ‘ইন্টারন্যাশনাল নার্সেস ডে’। যার মধ্যেমে সম্মান জানানো হয় এক নারীকে যিনি তার কর্মের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করেছেন- নার্সিং একটি পেশা নয় সেবা। ১৯১০ সালের ১৩ আগস্ট ৯০ বছর বয়সে প্রয়াত হন ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল।

 

ক্রিমিয়ার যুদ্ধে নার্সিং ইতিহাসে বৈপ্লবিক উন্নয়ন ও পরিবর্তন ঘটেছিল। এতে ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল পেশাদারী পর্যায়ে নার্সিংয়ের পরিধি এবং নীতিমালা প্রণয়ন ও বিশ্লেষণপূর্বক তার প্রণীত নোটস অন নার্সিং গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।
পেশাদারী পর্যায়ে এ পেশার মানোন্নয়নে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নার্স ব্যক্তিত্বরূপে ম্যারি সীকোল, এগনেস এলিজাবেথ জোন্স এবং লিন্ডা রিচার্ড ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে আছেন। ম্যারি সীকোল ক্রিমিয়ায় কাজ করেছেন; এগনেস এলিজাবেথ জোন্স ও লিন্ডা রিচার্ডস গুণগত মানসম্পন্ন নার্সিং বিদ্যালয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানে প্রতিষ্ঠা করেন। তন্মধ্যে – লিন্ডা রিচার্ডস আমেরিকার প্রথম পেশাদার ও প্রশিক্ষিত নার্সরূপে ১৮৭৩ সালে বোস্টনের নিউ ইংল্যান্ড হসপিটাল ফর উইম্যান এন্ড চিল্ড্রেন থেকে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেছিলেন।
বিশ্বের ১ম দেশ হিসেবে নিউজিল্যান্ডে জাতীয় পর্যায়ে নার্সদেরকে নিবন্ধিত করা হয়। ১২ সেপ্টেম্বর, ১৯০১ সালে নার্সেস রেজিস্ট্রেশন এ্যাক্ট প্রণীত হয়। এলেন ডাফার্টি ছিলেন নিউজিল্যান্ডের প্রথম নিবন্ধিত নার্স। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম অঙ্গরাজ্যরূপে নর্থ ক্যারোলাইনায় নার্সিং লাইসেন্স ল ১৯০৩ সালে গৃহীত হয়। ১৯৯০-এর দশকে নার্সদেরকে ঔষধ দেয়া, ডায়াগনোস্টিক, প্যাথলজি পরীক্ষাসহ রোগীদেরকে প্রয়োজনে অন্য পেশাদারী স্বাস্থ্যকর্মী বা চিকিৎসকের কাছে স্থানান্তরের অনুমতি দেয়া হয়।

 

আন্তর্জাতিক ধাত্রী পরিষদ বা ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অফ নার্সেস (আইসিএন) ১৯৬৫ সাল থেকে এই দিনটি উদযাপন করে আসছে। ১৯৫৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কল্যাণ বিভাগের একজন কর্মকর্তা ডরোথি সাদারল্যান্ড প্রস্তাব করেন যে প্রেসিডেন্ট ডোয়াইট ডি আইজেনহাওয়ার “ধাত্রী দিবস” ঘোষণা করবেন; তবে তিনি তা অনুমোদন করেননি।
১৯৭৪ সালের জানুয়ারি মাসে, ১২ মে দিনটি উদযাপনের জন্য নির্বাচিত হয় কারণ এটি আধুনিক নার্সিংয়ের প্রতিষ্ঠাতা ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের জন্মবার্ষিকী। প্রতি বছর, আইসিএন আন্তর্জাতিক নার্স দিবসের কিট প্রস্তুত এবং বিতরণ করে। কিটে সর্বত্র নার্সদের ব্যবহারের জন্য শিক্ষাগত এবং উন্মুক্ত তথ্য উপকরণ রয়েছে।

 

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
কবিতা নারী কথা

নারী : অজয় কুমার রজক।

রং বেরঙের রঙিন শাড়ি,
কপালে টিপ, খোঁপায় ফুল, অপূর্ব তুমি নারী।
জন্ম মোদের নারীর গর্ভে,
বুক ফুলে ওঠে তোমার গর্বে।
সকল মনীষী, মহাপুরুষ ,বীরপুরুষের জন্মদাত্রী,
তুমি দুর্গা, লক্ষ্মী- সরস্বতী, তুমি জগদ্ধাত্রী।
সংসারেও তুমি দশভূজা,
অতি যত্নে পরিবারের সকলের কর পূজা।
কখনো মা, কখনো বোন, কখনো মেয়ে ও প্রেয়সী।
তোমার সঙ্গ বিনা অসহায়, জীবন হতশ্রী।
জীবন- সংসার এগোবে না এক বিন্দু,
ভালবাসার আধার তুমি, তুমি করুণা সিন্ধু।
কর্তব্য, দায়িত্ববোধে অটল,
সংসারকে রাখো সর্বদা সচল।
কে বলে নারী বন্দী সুখী গৃহকোণে!
আজ সামিল তারাও কর্ম রণাঙ্গনে।
চাকুরী করে, প্লেন চালায়, মহাকাশে দেয় পাড়ি,
নয় অবলা, চালায় মোটর আর সংসার গাড়ি।
নারীদের অবহেলিত করছ যারা,
পাষণ্ড, নির্মম, অধম তারা।
জেনো দুই বংশেরই প্রদীপ নারী,
মুছে যাক সকল দখলদারি।

Share This
Categories
নারী কথা

কবিতা পরমেশ্বরী : শুভ্রাশ্রী মাইতি।

দুপুরের ঘুঘুডাকা নির্জনতা। পাতা পড়লেও বোধহয় শব্দ শোনা যাবে পুকুরে–টুপ্। মামার বাড়ির লাইব্রেরির চৌদ্দো হাজার বইয়ের আলমারির পাশে বইপাঠে নিমগ্ন একাকী বালিকা।
অক্ষর, অক্ষর পেরিয়ে শব্দ, ছন্দ, উপমা, যতি, ব্যঞ্জনা, অভিজ্ঞতা, উপলব্ধি আর বোধির এক আশ্চর্য আলোকিত রূপকথা জগত। পা ফেলে মেয়েটি, সন্তপর্ণে। মাকে দেখেছে তো সে ছোট থেকে, এই অজানা জগতটি থেকে ঘুরেফিরে বেরোতে। জাবদা খাতায় মুক্তোর মতন অক্ষর সাজিয়ে লিখে ফেলতে মনের কথা। কেমন যেন আলো আলো হয়ে ওঠে মায়ের মুখটা তখন। মাকে জিজ্ঞেস করে জেনেছে, একে বলে কবিতা। অবাক হয়েছে খুব। কি আশ্চর্য, একেবারে তারই নামটি কেটে বসানো যে। লেখাগুলোকে বড় আপন মনে হয় তার। মায়ের পেটের বোনটি যেন।
সে ও লিখতে শুরু করে খাতায়। ছোট মনের ছোট, ছোট কথা। দুঃখ-ব্যথা। বয়স মোটে ছয় কি সাত। এতটুকু মেয়ে হলে হবে কি, হৃদয় আর বোধ যেন তার কত বড়। শুধু ফুল, পাখি, গাছ, নদী নয়, তাকে টানত জীবন। মানুষের জীবন। চারপাশ থেকে কুড়িয়ে নেওয়া ছোট, বড় অভিজ্ঞতা। কৃত্রিম বা বানানো কোন কিছুতে তার বিশ্বাস নেই মোটে। জীবনে যা নেই, তাকে কলমে এনে কি এমন রাজ্যোদ্ধার হবে—এমনই ছিল ভাবখানি তার।
কৈশোরে কবিতার জগতে নতুন ভুবনের দরজা খুলে দিল তার কাছে বুদ্ধদেব বসুর কবিতা পত্রিকা এবং জীবনানন্দ দাশের কবিতাবলী। মেয়েটি বুঝল, তার অনেক কিছু বলার আছে। আর এই বলার একটা মাধ্যম হল তার লেখালিখি। লেখা হয়ে উঠল তার নিয়তি।
যৌবনে পা দিয়ে সে দেখল মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক, সামাজিক বঞ্চনা, নারী-পুরুষের বৈষম্য, ক্ষমতার রাজনীতি, পুরুষের আধিপত্যবাদী অনুশাসন। অথচ কত শান্ত, নিশ্চুপ সকলে। সমস্ত অসমতার বিরূদ্ধে গর্জে উঠল তার প্রতিবাদী কলম, সহজ, প্রত্যয়ী উচ্চারণে—
‘ না, আমি হবো না মোম
আমাকে জ্বালিয়ে ঘরে তুমি লিখবে না।

কবিতা লেখার পর বুকে শুয়ে ঘুমোতে দেব না।’

লোনাজলের ঝাপসা হয়ে যাওয়া নারীর ভেতর এই যে আরেক নারী, তার ক্ষোভ, ক্রোধ, অভিমান নিয়ে যে ‘বাসন্তী অসুখ’ তাকে তিনি চোখের ঝিনুকে নয়, ধরলেন কলমের শাণিত তরবারিতে, জলের অক্ষরে—
‘ কি নেবে দেহের থেকে? মাংস মেদ বসা?
প্রাগৈতিহাসিক অগ্নি? পোড়া মাংসের ঘ্রাণ, রক্ত-পানীয়
নখ দাঁত চুল কিংবা অন্নপাত্র দিব্য করোটি?
অথবা কি নিষ্কাশন করে নেবে প্রতিভা ও মেশিনের মিশ্র কুশলতা?

দেহের থেকে চাড় দিয়ে ক্রমাগত খুলে নেবে শিশু।’
পুরুষতান্ত্রিক সমাজের নির্মিত আশ্রয় দাত্রী, রহস্যময়ী, পেলব নারীর সাজানো মিথকে ভেঙে বিশ শতকের আধুনিক নারীসত্তার দৃপ্ত উচ্চারণে নারীকে প্রথম প্রতিষ্ঠা করলেন তিনি কলমের জোরে।
‘কবিতা পরমেশ্বরী’, কবি, সেই কবিতা সিংহকে আজ এই নারীদিবসে জানাই অন্তরের অক্ষরফুলে সশ্রদ্ধ প্রণাম। তাঁর ‘সহজসুন্দরী’- হয়ে যেন বলে উঠতে পারি আমরা একদিন—-
‘ আমি
মৃত্যুর মতন নগ্ন, অশ্বারোহিণী এক
নিজ অশ্বে একা
অহংকার ছুঁড়ে দেওয়া আরো বড় অহংকারে ধনী।'( ‘অহংকার’)

‘আমিই প্রথম বিদ্রোহিণী ‘। ( ঈশ্বরকে ইভ)

Share This
Categories
কবিতা নারী কথা

নারীর তপ্ত আঙিনা : রাণু সরকার।

ভালোবাসার ছোঁয়া পেলে নারী পৌঁছে যায় তার শৈশবে।
যৌবনের প্রারম্ভে নারী খোঁজে পুরুষের অঙ্গের ঘ্রাণ,
খুঁজে ফেরে যথার্থ পুরুষের সঙ্গ,
কে হবে তার জীবনের প্রকৃত বন্ধু-
জীবনপ্রবাহে ভাসিয়ে দেবে স্বেচ্ছায়,
এগিয়ে চলার পথে প্রতি মুহূর্তে রাখবে তার হাতে হাত।

প্রেম সদা অমলিন-
শুভ্র বেলি-রজনীগন্ধায় অর্ঘ্য ক’রে দেহ-মন অর্পণ,
নারী করে সমর্পন সুখে দিন যাপনের আশায়।

পুরুষ প্রেমিক স্বপ্নময়….
হৃদয়ে অনুরণন, কাব্যময়তায় মায়াজালে বদ্ধ
নারী,
প্রেমের আলিঙ্গন পেলে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে আবদ্ধ হয়।

বিবাহ হয় দু’টি শরীরের নিবিড়তায়-
ভূমিষ্ঠ হয় দেহ-মন দোঁহে,
মিলনের আনন্দে পরম মোহে স্রোতে ভাসে!

ক্রমে প্রেমিক পতিত হয় পতির আসনে-
আস্তে আস্তে আসে সংম্পর্কে চরম সংঘাত,
জীবনটা তিতিক্ষায় কেমন যেন কেটে যায়।

সৌভাগ্যবতী নারীর জীবনেও দেখা মেলে কৃষ্ণগহ্বর!
অনেক কিছু পেয়েও যেন না পাওয়ার যন্ত্রণা-
কার যেন অভিশাপে ভরে থাকে নারীর জীবন।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

দ্য নাইটেঙ্গেল অফ ইন্ডিয়া ‘সরোজিনী নায়ডু’।

ভূমিকা—-

“মহাত্মা গান্ধীর “মিকি মাউস” সরোজিনি নাইডুর মৃত্যুদিবসে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।”

সরোজিনী নায়ডু (১৩ ফেব্রুয়ারি ১৮৭৯ – ২ মার্চ ১৯৪৯) ছিলেন স্বনামধন্য ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী, বিশিষ্ট বাগ্মী ও ইন্দো-অ্যাংলিয়ান কবি। তিনি ছিলেন ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন সক্রিয় যোদ্ধা। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম করতে গিয়ে সরোজিনী নাইডু অনেকবার কারাবরণ করেছেন, কিন্তু স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে পিছু হটেননি। মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে তিনি যোগ দেন ডান্ডি পদযাত্রায়। গান্ধী, আব্বাস তয়েব ও কস্তুরবা গান্ধী গ্রেফতার হলে তিনি ধারাসন সত্যাগ্রহে নেতৃত্ব দেন। তিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট বাগ্মী এবং ইংরেজি ভাষার যশস্বী কবি।  তিনি ভারতীয় কোকিল (দ্য নাইটেঙ্গেল অফ ইন্ডিয়া) নামে পরিচিত। সরোজিনী নায়ডু ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম (ভারতীয়) মহিলা সভাপতি নির্বাচিত হন। স্বাধীন ভারতে তিনি উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের রাজ্যপালও হয়েছিলেন।

 

 

জন্ম ও পরিবার—

 

১৮৭৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি সরোজিনী চট্রোপাধ্যায় ভারতের হায়দরাবাদ শহরের একটি হিন্দু ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পৈতৃক বাড়ি ছিল অধুনা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার কনকসার গ্রামে। তিনি ছিলেন বিজ্ঞানী, দার্শনিক ও শিক্ষাবিদ অঘোরনাথ চট্টোপাধ্যায় ও কবি বরদাসুন্দরী দেবীর জ্যেষ্ঠা কন্যা।  অঘোরনাথ ছিলেন নিজাম কলেজের প্রতিষ্ঠাতা এবং তিনি ও তার বন্ধু মোল্লা আব্দুল কায়ুম ছিলেন হায়দরাবাদের ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম সদস্য। পরবর্তীকালে রাজনৈতিক আন্দোলনে অংশ নেবার জন্য তাকে কলেজের অধ্যক্ষের পদ থেকে পদচ্যুত করে হয়। সরোজিনীর ভাই বীরেন চট্টোপাধ্যায় ছিলেন এক বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কমিউনিস্ট বিপ্লবী।

 

 

শিক্ষা—-

 

সরোজিনী নাইডু ছোটবেলা থেকেই খুব বুদ্ধিমান ছিলেন। ১২ বছর বয়সে, তিনি ১২ তম পরীক্ষায় ভাল নম্বর নিয়ে পাস করেছিলেন। তিনি ১৩ বছর বয়সে ‘লেডি অফ দ্য লেক’ নামে একটি কবিতা লিখেছিলেন। যা তাকে বিখ্যাত করেছে। স্কুলে বসে অঙ্কের ১৩০০ লাইনে এই কবিতাটি লিখেছিলেন। এতে হায়দ্রাবাদের নিজাম এত খুশি হয়েছিলেন যে তাকে বিদেশে পড়ার জন্য বৃত্তি দেওয়া হয়েছিল। তিনি প্রথমে লন্ডনের কিংস কলেজে এবং পরে কেমব্রিজের গ্রিটন কলেজে পড়াশোনা করতে যান। বারো বছর বয়সে সরোজিনী মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় সমগ্র মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৮৯১ সাল থেকে ১৮৯৪ সাল পর্যন্ত পড়াশোনা বন্ধ রেখে তিনি নানা বিষয় অধ্যয়ন করেন। ১৮৯৫ সালে ইংল্যান্ডে প্রথমে লন্ডনের কিংস কলেজ ও পরে কেমব্রিজের গার্টন কলেজে পড়াশোনা করেন। সরোজিনী উর্দু, তেলুগু, ফার্সি ও বাংলা ভাষা শিখেছিলেন। তার প্রিয় কবি ছিলেন পি. বি. শেলি।

 

স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণ—–

 

সরোজিনী নাইডু গান্ধীজির ব্যক্তিত্ব দেখে খুব মুগ্ধ হয়েছিলেন এবং গান্ধীজির চিন্তাধারায় প্রভাবিত হয়ে তিনি নিজেকে দেশের জন্য উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি সত্যাগ্রহ ও সংগঠনে একজন দক্ষ সেনাপতি হিসেবেও তাঁর প্রতিভা দেখিয়েছিলেন। তিনি জাতীয় আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন এবং জেলে যান।

১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরোজিনী যোগ দেন স্বাধীনতা আন্দোলনে। ১৯০৩ সাল থেকে ১৯১৭ সালের মধ্যবর্তী সময়ে তিনি গোপালকৃষ্ণ গোখলে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ, অ্যানি বেসান্ত, সি. পি. রামস্বামী আইয়ার, মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহরু প্রমুখের সংস্পর্শে আসেন।
১৯১৫ সাল থেকে ১৯১৮ সালের মধ্যবর্তী সময়ে তিনি ভারতের নানা স্থানে যুবকল্যাণ, শ্রমের গৌরব, নারীমুক্তি ও জাতীয়তাবাদ বিষয়ে বক্তৃতাদান করেন। ১৯১৬ সালে জওহরলাল নেহরুর সঙ্গে সাক্ষাতের পর তিনি চম্পারণে নীলচাষীদের হয়ে আন্দোলন শুরু করেন। ১৯২৫ সালে তিনি কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনিই ছিলেন কংগ্রেসের প্রথম মহিলা সভাপতি।

 

১৯১৯ সালের মার্চ মাসে ব্রিটিশ সরকার রাওলাট আইন জারি করে সকল প্রকার রাজদ্রোহমূলক রচনা নিষিদ্ধ করে। এর প্রতিবাদে গান্ধীজি অসহযোগ আন্দোলন সংগঠিত করলে সরোজিনী সর্বপ্রথমেই আন্দোলনে যোগ দেন। পরে ব্রিটিশ সরকার এই আন্দোলনের উপর ব্যাপক দমননীতি প্রয়োগ করে।
১৯১৯ সালের জুলাই মাসে সরোজিনী ইংল্যান্ডে হোমরুল লিগের দূত মনোনীত হন। ১৯২০ সালের জুলাই মাসের তিনি ভারতে প্রত্যাবর্তন করার পর ১ অগস্ট গান্ধীজি অসহযোগ আন্দোলন ঘোষণা করেন। ১৯২৪ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি পূর্ব আফ্রিকান ভারতীয় কংগ্রেসের দুই জাতীয় কংগ্রেস প্রতিনিধির অন্যতম রূপে নির্বাচিত হন।
১৯২৮ সালের অক্টোবর মাসে তিনি নিউ ইয়র্ক সফর করেন। এই সময় যুক্তরাষ্ট্রে আফ্রিকান আমেরিকান ও আমেরিইন্ডিয়ানদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের নিন্দা করেন তিনি। ভারতে প্রত্যাবর্তনের পর তিনি কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন।

 

১৯৩০ সালের ২৬ জানুয়ারি জাতীয় কংগ্রেস ব্রিটিশ সাম্রাজ্য থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ৫ মে গান্ধীজিকে গ্রেফতার করা হয়। এর অনতিকাল পরেই গ্রেফতার হন সরোজিনী। এই সময় কয়েক মাস তিনি কারারুদ্ধ থাকেন। ১৯৩১ সালের ৩১ জানুয়ারি, গান্ধীজির সঙ্গে সঙ্গে তাকেও মুক্তি দেওয়া হয়। সেই বছরেই পরে আবার তাদের গ্রেফতার করা হয়। স্বাস্থ্যহানির কারণে অল্পদিনের মধ্যেই ছাড়া পেয়ে যান সরোজিনী। গান্ধীজি মুক্তি পান ১৯৩৩ সালে। ১৯৩১ সালে গান্ধীজি ও পণ্ডিত মালব্যের সঙ্গে তিনিও গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দেন। ১৯৪২ সালের ২ অক্টোবর ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অংশ নেবার জন্য তাকে পুনরায় গ্রেফতার করা হয়েছিল। এই সময় গান্ধীজির সঙ্গে ২১ মাস কারারুদ্ধ ছিলেন সরোজিনী।

মহাত্মা গান্ধী যখন স্বাধীনতা নিয়ে দেশে যে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছিল তা শান্ত করার চেষ্টা করছিলেন, সেই সময় সরোজিনী নাইডু তাকে ‘শান্তি দূত’ বলে অভিহিত করেছিলেন এবং সহিংসতা বন্ধ করার আবেদন করেছিলেন।

 

 

মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে সরোজিনী নায়ডুর সম্পর্ক এতটাই অন্তরঙ্গ ছিল গান্ধীজি তাঁকে ‘ভারত নাইটিঙ্গেল’ উপাধি দেন। কিন্তু চিঠিতে তিনি কখনো কখনো ‘প্রিয় বুলবুল’, ‘প্রিয় মীরাবাই’ এমনকি ‘আম্মাজান’, ‘মা’ও মজা করে লিখতেন। সরোজিনীও তাকে ‘তাঁতি’, ‘লিটল ম্যান’ এবং কখনো কখনো ‘মিকি মাউস’ বলে সম্বোধন করতেন।

 

ব্যক্তিগত জীবন—-

 

১৭ বছর বয়সে সরোজিনী ড. মুথ্যালা গোবিন্দরাজুলু নায়ডুর প্রেমে পড়েন। ১৯ বছর বয়সে পড়াশোনা সমাপ্ত করে তার সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন তিনি। উল্লেখ্য, সেই যুগে অসবর্ণ বিবাহ সমাজে নিষিদ্ধ ছিল। সরোজিনী ব্রাহ্মণ হলেও গোবিন্দরাজুলু ছিলেন অব্রাহ্মণ। ১৮৯৮ সালে মাদ্রাজে ১৮৭২ সালের আইন অনুযায়ী তাদের বিবাহ হয়। তাদের চারটি সন্তান হয়েছিল: জয়সূর্য, পদ্মজা, রণধীর ও লীলামণি। কন্যা পদ্মজা পরবর্তীকালে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হন।

 

কর্ম জীবন—-

 

১৯৪৭ সালের মার্চ মাসে এশীয় সম্পর্ক সম্মেলনের স্টিয়ারিং কমিটির পৌরোহিত্য করেন সরোজিনী নায়ডু।
১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট স্বাধীনতার পর সরোজিনী নায়ডু যুক্তপ্রদেশের (বর্তমানে উত্তরপ্রদেশ) রাজ্যপাল নিযুক্ত হন।

 

 

তাঁর রচনাবলি—-

 

লেখাপড়ার পাশাপাশি কবিতাও লিখতেন। গোল্ডেন থ্রেশহোল্ড ছিল তাঁর প্রথম কবিতা সংকলন। তাঁর দ্বিতীয় ও তৃতীয় কাব্য সংকলন ‘সময়ের পাখি’ এবং ‘ব্রোকেন উইং’ তাঁকে বিখ্যাত করে তোলে। সরোজিনী চট্টোপাধ্যায়কে পৃথিবীর ইতিহাসের সেরা কবিদের মধ্যে অন্যতম মনে করা হয়। বিশ্বনন্দিত অনেক মার্কিন ও ব্রিটিশ সাহিত্যিক তার সাহিত্যের অকুণ্ঠ প্রশংসা করেছেন। পোয়েট্রি সুপ নামের একটি ওয়েবসাইট তাকে পৃথিবীর ইতিহাসের সেরা ১০০ জন কবির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছে, যেখানে তার অবস্থান ছিল ১৯তম। সরোজিনী উর্দু, তেলুগু, ফারসি ও বাংলা ভাষা শিখেছিলেন। সরোজিনী নাইডু ইংরেজি ভাষায় কবিতাও লিখতেন।

উল্লেখযোগ্য  রচনাবলি—

The Golden Threshold (১৯০৫);  The Bird of Time: Songs of Life, Death & the Spring (১৯১২); The Broken Wing: Songs of Love, Death and the Spring (১৯১৭);
The Sceptred Flute: Songs of India (১৯৪৩); The Feather of the Dawn (১৯৬১);  The Gift of India;

 

মৃত্যু—-

 

স্বনামধন্য ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের সক্রিয় যোদ্ধা, বিশিষ্ট বাগ্মী ও ইন্দো-অ্যাংলিয়ান কবি বিক্রমপুর কন্যা ভারতীয় কোকিলা সরোজিনি নাইডু ১৯৪৯ সালের আজকের দিনে উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপাল থাকা অবস্থায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।  তার মৃত্যুর পর যুগ যুগ ধরে এই অতি অসামান্য বিদুষী নারী সমগ্র মহিলাজাতির পথপ্রদর্শিকা হিসেবে সম্মানিত হযে আসছেন।

 

।।ছবি ও তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
নারী কথা রিভিউ

প্রাণে প্রাণে যে প্রদীপ জ্বলে : জয়তী ধর পাল।

একই বৃন্তে যেমন দুটি কুসুম ফুটে ওঠে , তেমনি একটি মহীরূহকে আশ্রয় করে রচিত হয়েছে দুটি সাহিত্যকুসুম। মহীরূহটি অবিভক্ত মেদিনীপুরের জনপ্রিয় গান্ধিবাদী নেতা শ্রী কুমারচন্দ্র জানা , আর সাহিত্যকুসুম দুটির একটি উপন্যাস ‘মাটিমাখা মহাপ্রাণ’ , অপরটি নাটক ‘সুতাহাটার গান্ধি’।
শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছিলেন , নাটকে লোকশিক্ষে হয়। এই লোকশিক্ষে যথার্থ না হলে , স্বাধীন দেশেও আমরা পরাধীন থাকব। আর তাই স্বাধীনতার স্বপ্ন আমাদের যারা দেখিয়েছিলেন তাদের অন্যতম পুরোধা দেশমিত্র কুমারচন্দ্র জানাকে আশ্রয় করে কবি শুভ্রাশ্রী মাইতি লিখেছেন নাটক ‘সুতাহাটার গান্ধি’ , যে নাটক আমাদের স্বাধীনতার যথার্থ চালচিত্রের সাথে পরিচিত করায় আলোর কলমে।
কুমারচন্দ্র জানার ব্যক্তিগত জীবন আর স্বাধীনতার সংগ্রামের বিস্তৃত প্রেক্ষাপটকে নাট্যকার খুব অল্প পরিসরে এই পাঁচ অঙ্কের নাটকে জীবন্ত করে তুলেছেন এক অসাধারণ দক্ষতায়। সময়ের প্রতীক হিসাবে গায়ে সাদা কাপড় জড়ানো চরিত্রগুলির ভাষ্য কোরিওগ্রাফির মধ্যে দিয়ে প্রবাহমান সময়কে বহতা নদীর মতোই উপস্থাপন করেছেন । কোরিওগ্রাফি কোথাও কোথাও মঞ্চে জন্ম দেয় কবিতার…
(অন্ধকার মঞ্চ জুড়ে জোনাকির ছোট ছোট বৃত্ত আলোর নকশা তৈরি করবে তখন। সকলে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকবে সেই দিকে …। আবহ – ও জোনাকি কি সুখে ওই ডানা দুটি মেলেছ…)।
জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের মঞ্চ উপস্থাপনা দর্শক মনে জন্ম দেয় শিহরনের…
(ঝুঁকে থাকার সময়রূপী সামনের জন সামনের প্লেটে রাখা লাল আবির ছিটিয়ে দেবে চারপাশে। গুলির শব্দ । পেছনের পর্দায় আলোর ঝলকানি, লাল আলো। চিৎকার। আর্তনাদ। সময়রূপী পাঁচজন লাল কাপড়ের বাঁধনে নিজেদের জড়াতে জড়াতে প্রকাশ করবে যন্ত্রণার অভিব্যক্তি ও মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে ধীরে ধীরে।)
ছোট্ট কুমার বিদ্যাসাগরের মতো মহাপুরুষদের গল্প হলেও সত্যি কথা পড়তে পড়তে বড় হয়ে ওঠে , অন্যকে শ্রদ্ধা তার ভেতরে এক আলোর জন্ম দেয় , আর সেই আলো হাজার কাজের ফাঁকে ফাঁকে পড়ার সময় বের করার অঙ্গীকারবদ্ধ করে তাঁকে। কুমার তার জীবনের মূলমন্ত্রে ‘ ঠকিলেও , ঠকাইব না ‘ ( যা বইটির প্রচ্ছদে ধ্রুবপদের মতো ব্যবহৃত হয়েছে ) দীক্ষিত করেন তার ছাত্রদের , যারা এই দেশের ভবিষ্যৎ। নাটকে পাই ,
কুমার : তা পারে। তবে একটা কথা মনে রেখো সবসময়- ‘ঠকিলেও ঠকাইব না’। এই দরিদ্র মাস্টারের আর কিছু না হোক , এই কথাটিকে জীবনের ধ্রুবতারা করে তোলো তোমরা।
সকলে : ঠকিলেও ঠকাইব না। ঠকিলেও ঠকাইব না।
তিনি প্রকৃতই একজন আদর্শ শিক্ষক হিসাবে মানুষ গড়ার কারিগরের ভূমিকা নেন তাই বালিগঞ্জ জগবন্ধু ইনস্টিটিউশন এর সভাপতি আশুতোষ চৌধুরী। বলেন,
আশুতোষ : এ একেবারে খাঁটি কথা মুরলীবাবু । কুমারবাবু শুধু পুঁথিপড়া বিদ্যাদিগ্গজ ছাত্র নয় , দেশের জন্য খাঁটি সোনার মানুষ গড়ার কাজে হাত লাগিয়েছেন জোরকদমে। উনি আমাদের স্কুলের সম্পদ।
কুমার অনুভব করেন ‘দেশ মানে শুধু বাহিরমহল নয় , দেশ মানে অন্দরমহলও , আমাদের অন্তরমহলও’। এই উপলব্ধি শ্রদ্ধায় আমাদের মাথা নত করে …
কুমার : মানে শুধু আমাদের , মানে পুরুষজাতির উন্নতি হলেই হবে না , আমাদের অন্তর ছুঁয়ে আছেন যাঁরা , অন্তর তৈরি করছেন যাঁরা , তাঁদেরও তুলে আনতে হবে ঘরের অন্ধকার কোন থেকে। সামিল করতে হবে এই দেশ গঠনের মহাযজ্ঞে।
তাই স্ত্রী চারুশিলার সাথে বিবাহবন্ধনকে নাট্যকার চিহ্নিত করেছেন ‘শ্রী যোগ হল শক্তির সাথে’ বলে।
হিন্দু মুসলমানের পারস্পরিক শ্রদ্ধা ভালবাসা ফিরে ফিরে এসেছে নাটকটিতে। মুহুরি ভূদেব চক্কোত্তির হুমকির উত্তরে কুমার দৃঢ় স্বরে বলেন,
কুমার : আমাকে ভাঙবেন আপনি কি করে ? আমাকে ভাঙতে গেলে যে এই আশ্রম ভাঙতে হবে। এই দেশ ভাঙতে হবে , ভাঙতে হবে হিন্দু-মুসলমানের ভাই-ভাই সম্পর্ক। তা কি আর আমি হতে দেবো কখনো? তোমরা কি দেবে বলো?
কুমার যখন এ কথা বলেন তখন কুমারের মধ্যে যেন অখন্ড গোটা ভারতকে দেখতে পাই তাই। কুমারনারায়ন তথা কুমারচন্দ্র হয়ে ওঠেন মহম্মদ কুমারচন্দ্র ,
মৌলভী : ( ছুটে এসে বুকে জড়িয়ে ধরেন কুমারকে ) আপনি সাধারণ মানুষ নন কুমারবাবু , আজ আপনি চোখ খুলে দিলেন সবার। আপনাকে প্রণাম। আজ থেকে আপনার আরেক নাম হল মহম্মদ কুমারচন্দ্র ।
সকলে : জয় কুমারচন্দ্রের জয় , মহম্মদ কুমারচন্দ্রের জয়।
নাট্যকার প্রতিটি চরিত্রের মুখে যথাযথ সংলাপ প্রয়োগ করে তাদের করে তুলেছেন জীবন্ত রক্ত মাংসের মানুষ। তারই কয়েকটি নিদর্শন ,
১. মিস্টার স্মিথ : শাট্ আপ , রাস্কেল ! কে চায় টুমাদের সাহায্য ? ব্ল্যাক নিগার কোথাকার । টুমি যে হাসছিলে হামার ড্রেসের কাদা ডেকিয়া… সেটা কি অপমান নয় যথেষ্ট ?
২. গোমস্তা : খালি বিগ্ টক , বিগ বিগ টক্ , তাই না ! বুঝবে একদিন মজা… একটা ছোট জাতকে মাথায় তুলে নাচা…
৩. ফতেমা : (ছুটে এসে কুমারের পায়ে পড়ে কাঁদতে থাকে) দাঠাউর মুই কুন অন্যায় কাম করি নাই গো। প্যাটের জ্বালা নিভাতে , মেয়া লাতির মুখে দুটা অন্ন তুলি দিবার জন্য কাম করিতে চাইছিলি শুধু । এ গেরামে মোর খসমের ভিটাবাড়ি। মুই কখনো এর অমঙ্গল চাইতি পারি?
৪. কুমার : জানি না সূর্য । বুকের মধ্যে কে যেন ডাক দিয়ে যায় বারবার । গাঁয়ের ফকিরবাবার সুর ভেসে আসে কানে । গান্ধিজির গলার স্বর গমগম করে ওঠে, সুরেনবাবুর বক্তৃতায় শিরা-উপশিরায় আগুন ছোটে যেন… আমার বুকের মধ্যে উথাল পাথাল হয় খুব। কান্না দলা পাকিয়ে উঠে গলায়। আমার মা আমার দেশ – সব যেন একাকার হয়ে যায় আমার কাছে।
বেশিরভাগ দৃশ্য শেষ হচ্ছে গানের মধ্যে দিয়ে যা ঘটনা রেশকে দর্শকমনে অনুরণিত করে।
পরানচক স্কুলের মাস্টারমশাই মানসবাবু বলেন,
মানসবাবু : কুমার , তোমার মধ্যে আমি খাঁটি সোনা দেখেছি। আমি চাই তোমার মত ছেলেরা নিজেকে প্রস্তুত করে তুলুক । নিজেকে চিনুক। দেবদূত হয়ে ফিরে আসুক এ পোড়া দেশ গাঁয়ে। মানুষের সামনে আয়না ধরুক , নিজেকে চেনার নিজেকে জানার… আঁধার কেটে যাক সব নতুন দিনের আলোয় …ওই শোনো ফকির বাবা গান ধরেছেন কেমন…
নাটকটিও যেন দর্শকদের সামনে তুলে ধরে এক আয়না, যার মধ্যে প্রতিবিম্বিত হয় আমাদের আশা আকাঙ্ক্ষা স্বপ্ন।
নাটকের শেষে সময়ের হাত ধরে তৈরি হয়, এক অপূর্ব কবিতা …অপূর্ব আলো… অপূর্ব বন্দনা …অনন্ত …অফুরন্ত…
(সকলে একটি সুন্দর কোরিওগ্রাফিতে মাটিতে হাঁটু ঠেকিয়ে বসবে। প্রদীপজ্বলা হাত বাড়িয়ে থাকবে সামনে… নতুন দিনের আলো একটু একটু করে ছড়িয়ে পড়বে নাটকের মঞ্চেও। )
আবহে বাজবে –
ভেঙেছ দুয়ার এসেছ জ্যোতির্ময়
তোমারি হউক জয়…

‘মাটিমাখা মহাপ্রাণ’ এক আলোমাখা উপন্যাস , এ আলো ভোরের সূর্যোদয়ের মতোই আশাবাদী , দুপুরের তেজদীপ্ত গগনের মতোই অগ্নিময় , সন্ধ্যের গোধূলির মতোই স্নিগ্ধ শান্তি বর্ষণকারী।
একজন মহামানবের জীবনের ছবি আঁকতে গিয়ে লেখক শুভঙ্কর দাস যে চালচিত্র রচনা করেছেন …যে স্বদেশী আন্দোলনের প্রেক্ষাপট এঁকেছেন… তাতে সমকালীন দেশ কালকে নিপুন বুনোটে সাজিয়েছেন। লেখনীর অমোঘ আকর্ষণে সময়দেবীর সুতোতে টান পড়েছে , সেই টানে যেমন জীবন্ত হয়ে উঠেছেন বিদ্যাসাগর , গান্ধীজি , বীরেন্দ্র শাসমল , আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র , মদনলাল ধিংড়ার মতো অসামান্য চরিত্ররা , তেমনি বিধবা হররমা পতি বা রমানাথের মত আড়ালে থেকে যাওয়া নিঃস্বার্থ মানুষেরা তাদের আপন মহিমায় উজ্জ্বল হয়ে আছেন। আর আছেন রবীন্দ্রনাথ , প্রতিটি অধ্যায়ের পথ চলার শুরুতে তাঁর আলোকোজ্জ্বল উদ্ধৃতি নিয়ে পথপ্রদর্শক হয়ে। তার সাথে যুক্ত হয়েছে লেখকের মনের মাধুরী মিশিয়ে কিছু কাল্পনিক চরিত্র , যারা উপন্যাসটিকে মাটির রূপকথা করে তুলেছে এক আশ্চর্য রূপটানে। যেমন আব্দুল ফকিরের চরিত্রটি বারবার ফিরে ফিরে এসেছে , যে গানে গানে প্রকৃত মানুষ হবার শিক্ষা দেয় , যে বলে ,
‘মনকে বলো , জগতে সবই সুন্দর , কালো এলে আলো করব , আর কান্না এলে পান্না দেখব , এইভাবেতে বাঁচতে চাই…।’
রবীন্দ্রনাথের কথায় , ‘ ঐতিহাসিক উপন্যাসের মূলরস হবে মানবরস ‘। এই উপন্যাসের প্রতিটি অক্ষরে সেই মানবরসের ধারা নদীর মতই বহমান। দেশের জন্য আত্মোৎসর্গের দৃঢ় পণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সন্তানস্নেহ , ভ্রাতৃপ্রেম ,সহধর্মিণীর আত্মত্যাগ , বন্ধুবাৎসল্য , গুরুজনকে শ্রদ্ধার দৃঢ় ভিত্তি প্রস্তরের উপর। কুমারের বাবা গরিব চাষী ঠাকুরদাস একটা ছেঁড়া বইয়ের পাতা নিয়ে ঘোরেন বইটি সংগ্রহের চেষ্টায় , যার জন্য তিনি নিজের সারা বছরের অন্নসংস্থানে চাল বিলিয়ে দিতেও প্রস্তুত। এই উত্তরাধিকারই বহন করেন কুমার। শিশু কুমার ঝড় জলের সারারাত কেঁদে কেঁদে খোঁজে বর্ণপরিচয় , উঠোনকে স্লেট করে লিখে চলে অ আ। কুমারের মা লক্ষ্মীদেবী পানাভর্তি পুকুর পরিষ্কার করে , পুকুরপাড়ে ডাঁই হয়ে ওঠা কচুরিপানা দেখিয়ে বলেন ,
‘এই হচ্ছে দুঃখ কষ্ট আর আঘাত , পুকুর হলো জীবন , এইভাবে এগুলো সরিয়ে আলো আনতে হবে , এগিয়ে যেতে হবে , বুঝলি…’
এমন শিক্ষা যে মায়ের , তাঁর সন্তানই তো হয়ে ওঠেন অন্ধকারে নিমজ্জিত পরাধীন জাতির আলোর দিশারী। স্ত্রী চারুশীলাদেবী স্বামীর জন্য ভাত সাজিয়ে বসে থাকেন , মৃদু হেসে বলেন ,
‘যে অপেক্ষা করতে জানে, সে যার জন্য অপেক্ষা করছে , তার পদধ্বনি শুনতে পায়।’
এরকম সহধর্মিনীকে যিনি পাশে পান , তিনিই তো পারেন… একদিন ঘর ও বাহির মিলে এই দেশকে সোনার দেশ গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখতে…। মাস্টারমশাই ক্ষীরোদচন্দ্র কুমারের হাতে ‘আনন্দমঠ’ তুলে দিয়ে বলেন,
‘ মানুষের মতো মানুষ হও , তুমি যেন নিজেই একটা পথ হয়ে উঠতে পারো।’
এইরকম মাস্টারমশায়ের আশীর্বাদ মাথায় নিয়েই কুমারচন্দ্র বন্ধু গঙ্গাধরকে বলে ,
‘ ভাই , আমি ধুলোর মতো হতে চাই , মাড়িয়ে যাক , থুতু ফেলুক , কিন্তু আমি তো জানি , সেই ধুলোতে জল ঢেলে কখনো মূর্তি , কখনো শস্য ফলানো যায় ! এই বিশ্বাস আমার কোনদিন হারাবে না ! ‘
এই মাটিমাখা মহাপ্রাণের ছোঁয়ায় তাই মাটি জাগে , সেইসঙ্গে জাগে মাটিমাখা মানুষগুলো , যাদের কেউ কোনদিন সম্মান করেনি , মানুষ ভাবেনি !
উপন্যাসিক শুভঙ্করের প্রথম পরিচয় তিনি একজন কবি , তাই কবির কলমে উপন্যাসের কাহিনী বর্ণনা কোথাও কোথাও কবিতার ব্যঞ্জনায় হয়ে উঠেছে এক এক টুকরো উজ্জ্বল হীরকখন্ড ! উপন্যাসটি শুরু হয় রবীন্দ্রনাথের উদ্ধৃতির পর কবিতার ব্যঞ্জনায়…
‘চার্চের সুউচ্চ ঘন্টা-তোরণের পেছনে অস্তমিত সূর্য । দেখলে মনে হয় , সুদীর্ঘ ও সুতীব্র অন্ধকার দূর করতে করতে নিজেই তীরবিদ্ধ যোদ্ধার মতো ক্লান্ত , রক্তাক্ত এবং একাকী । সেই চার্চে এখনই ঈশ্বর-বন্দনা শুরু হবে। তার জন্য ঘন্টাধ্বনি হচ্ছে।’
অথবা , বালক কুমারের অধ্যয়নমগ্নতার বর্ণনা…
‘দূর থেকে দেখলে মনে হতো এ যেন সেই তপোবনের একটি খণ্ড দৃশ্য । সেখানে ছিল অপরূপ সবুজ গাছগাছালির সৌন্দর্য , এখানে মাঠের পর মাঠে রোদ মেঘের লুকোচুরি খেলা।
তার মধ্যে একজন একলব্যের মতো সেই রোদ-মেঘকে গুরু কল্পনা করে পড়াশুনা করে চলেছে।’
এইভাবে হাত ধরাধরি করে পাশাপাশি চলে কবিতা আর উপন্যাস …তৈরি করে এক খন্ড মানব ইতিহাস !

আজকের এই দিশেহারা সমাজে নিজেকে দীপ করে জ্বালতে হবে , সেই আলোয় পথ দেখে চলতে হবে … নব প্রাণের আলোয় সমাজকে করতে হবে কলুষমুক্ত। আর সেই জীবনদীপে সলতে পাকানোর কাজটি করে দেয় , কুমারচন্দ্র জানার মত সৎ কর্মযোগী দেশপ্রেমিক সাধক মহামানবদের জীবনীপাঠ। দেশকে ভালো না বাসলে দেশের মানুষকে ভালো না বাসলে কখনোই প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠা যায় না , তাইতো মানবজমিন পতিত রয়ে যায়। এইরকম নাটক , উপন্যাস , কবিতা, গল্প , প্রবন্ধ গ্রন্থ লেখা ও পাঠের মধ্যে দিয়ে সেই মানবজমিনে সোনা ফলানোর আশায় অপেক্ষায় থাকে সময় …

সুতাহাটার গান্ধি
শুভ্রাশ্রী মাইতি
লিপি প্রকাশন

মাটিমাখা মহাপ্রাণ
শুভঙ্কর দাস
লিপি প্রকাশন

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

নারী নবজাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ মুক্তা সালভে ::: সৌরভকুমার ভূঞ্যা।।।

অনেক বিশ্বাস মতে ঈশ্বর স্রষ্টা। তিনি এই জগত সৃষ্টি করেছেন। সেই হিসেবে নারী পুরুষ উভয়ে তার সৃষ্টি। তাই যদি সত্য হয় তাহলে নারী পুরুষ উভয়ে সমান। সমান অধিকার তাদের প্রাপ্য। কিন্তু একটা দীর্ঘ সময় জুড়ে রয়েছে নারী বঞ্চনার ইতিহাস। “সমাজে পুরুষেরা কেন নারীদের দুর্বল ভাবে? কেন তাদের সমান অধিকার দেয় না?” আজ থেকে প্রায় দেড়শো বছর আগে নিজের লেখা বই “স্ত্রী-পুরুষ তুলনা”-তে এমন জোরালো প্রশ্ন রেখেছিলেন নারী নবজাগরনের অন্যতম পথিকৃৎ তারাবাই সিন্ধে। মনে করা হয় তিনিই প্রথম ভারতীয় মহিলা যিনি নারীবাদী বই লিখেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, “যে পুরুষ নারীদের শিক্ষার আলো দিতে পারে না, তাদের অধিকার দিতে পারে না, বিধবাদের দুর্দশা থেকে মুক্তি দিতে পারে না, সে পুরুষ নিজেকে শ্রেষ্ঠ কিংবা বলবান ভাবে কী করে?” গোটা বই জুড়ে এভাবে শানিত কলমে প্রতিবাদ করেছেন তিনি। এককথায় তার প্রতিবাদ ছিল পুরুষদের বিরুদ্ধে, পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে।

তারাবাই সিন্ধের মতো এরকমই প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন আরও এক নারী। তবে পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে নয়, তিনি প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন একটা সমাজ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে। আরও পরিস্কার করে বললে, একজন দলিত নারী হয়েও বর্ণশ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণদের বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন তিনি। বলেছিলেন, “যদি বেদ কেবলমাত্র ব্রাহ্মণদের হয় (এমনটা দাবি করত ব্রাহ্মণেরা), তাহলে আমরা বেদ অনুসারে চলতে বাধ্য নই।” ব্রাহ্মণরা বলতেন শুদ্রদের বেদ পড়া দূরে থাক, বেদের দিকে তাকানোটাও ছিল পাপ। সে কথা উল্লেখ করে মুক্তা বলেছিলেন, “বেদ-এর দিকে তাকালেই যদি আমাদের পাপ হয়, তাহলে বেদ-এর নীতি নিয়ম মান্য করা আমাদের বোকামি নয় কি?” ব্রাহ্মণ আধিপত্য সমাজ ব্যবস্থার দিকে এরকম কঠোর প্রশ্ন ছুঁরে দিয়েছিলেন সতেরো বছরের দলিত কিশোরী মুক্তা সালভে। মনে করা হয়ে থাকে তিনিই প্রথম ভারতীয় মহিলা দলিত লেখিকা। মহারাষ্ট্রের খ্যাতনামা বিপ্লবী ক্রান্তিবীর লাহুজির নাতনি তিনি।

উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ। মহারাষ্ট্রে তখন পেশোয়ার শাসন। জাতপাত ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থায়, সমাজের মাথা ছিলেন বর্ণশ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণেরা। আর সবচেয়ে নিচে ছিল শূদ্র। মুক্তা সালভে ছিলে মাং সম্প্রদায়ের মহিলা। মাং এবং মাহার সম্প্রদায় ছিল দলিত (শূদ্র)। সমাজে দলিতদের স্থান ছিল অবর্ণনীয়। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ধর্মাচরণ প্রভৃতি কোনোকিছুর অধিকার ছিল না তাদের। মন্দির, স্কুল প্রভৃতির দরজা ছিল তাদের জন্য বন্ধ। তারা ছিল অস্পৃশ্য, অচ্ছুৎ। তাদের স্পর্শ দূরে থাক, উচ্চ বর্ণের লোকেরা তাদের ছায়াও মাড়াত না একসময়। ব্রাহ্মণরা তাদের মানুষ বলে গন্য করত না। গরু-মহিষের থেকেও তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করত। নির্ধারিত কয়েকটি নিম্ন পেশা ছাড়া অন্য কোনো কাজ করার অধিকার ছিল না তাদের। ফলে দারিদ্র্য ছিল তাদের নিত্যসঙ্গী। এককথায়, নিদারুন অপমান আর বঞ্চনার জীবন কাটাতে বাধ্য হত তারা। কেউ পড়াশোনা করতে চাইলে তার জীবনে নেমে আসত চরম বিপর্যয়। সামান্য সামান্য অপরাধে (হয়তো তা সে অর্থে অপরাধও নয়)তাদের চরম শাস্তি দেওয়া হত। অস্পৃশ্য, অচ্ছুৎ হয়ে অপমান আর অবমাননার জীবন কাটাতে বাধ্য হত তারা। একটা দীর্ঘ সময় অন্ধকারে ডুবেছিল তাদের জীবন। এই অন্ধকারের প্রধান কারণ ছিল শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকা।

দলিতদের নিয়ে যারা আন্দোলন করেছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন মহাত্মা জ্যোতিবারাও ফুলে এবং বি-আর আম্বেদকর। সমাজ সংস্কারক জ্যোতিবারাও বুঝেছিলেন শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে না পারলে দলিতদের এই অবস্থার উন্নতি হওয়া সম্ভব নয়। বিশেষত তিনি জোর দিয়েছিলেন নারীশিক্ষার ওপর। নিজের স্ত্রী সাবিত্রীবাই ফুলেকে তিনি পড়াশোনা করিয়েছিলেন। স্বামীর অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতায় সাবিত্রীবাই কেবল নিজে শিক্ষিত হননি, নারী সমাজকে শিক্ষার আলোকে আলোকিত করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। স্বামী-স্ত্রী মিলে মেয়েদের জন্য স্কুল স্থাপন করেছিলেন। সাবিত্রীবাই হলেন প্রথম ভারতীয় মহিলা শিক্ষক। শুধু তাই নয় প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসেবে তিনি কোনো স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব পালন করেছেন।

সকল সম্প্রদায়ের মহিলাদের শিক্ষিত করার জন্য ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের ১ জানুয়ারি জ্যোতিবারাও এবং সাবিত্রীবাই একটি স্কুল স্থাপন করেন। মাত্র ৮ জন মহিলা নিয়ে এই স্কুল শুরু হয়। এই ৮ জন মহিলার মধ্যে ১৪ বছরের মুক্তা সালভে ছিলেন একজন। এখানে তিনি তিন বছর পড়াশোনা করেছেন। বাবা-মায়ের কাছ থেকে মুক্তা জানতে পেরেছিলেন দলিত মানুষদের পূর্বেকার অবর্ণনীয় দুর্দশার কথা। নিজের সময়েও তিনি দেখেছেন দলিতদের বঞ্চনা, অপমান। শিক্ষার আলো তার চোখ খুলে দেয়। মনের অন্ধকার দূর করে। তাকে সাহসী করে তোলে। তৎকালীন সময়ে দাঁড়িয়ে ব্রাহ্মণদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস যেখানে মানুষের ছিল না, সেখানে সতেরো বছরের কিশোরী মুক্তা সালভে একেবারে কলম তুলে নেন লিখে ফেলেন একটি প্রবন্ধ, “Mang Maharanchya Dukhavisatha (About the Grief of Mahar and Mangs)” ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দের ‘Dnyanodaya’ নামক পাক্ষিক পত্রিকায় দুই কিস্তিতে এই প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। প্রথম কিস্তি প্রকাশিত হয় ১৫ ফেব্রুয়ারি, দ্বিতীয় কিস্তি প্রকাশিত হয় ১ মার্চ সংখ্যায়।

পুরো প্রবন্ধে তিনি জোরালো প্রতিবাদ করেছেন সমাজের জাত-পাত, ধর্ম বিভাজন নিয়ে। ব্রাহ্মণদের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ তোলেন। তাদের জমি দখল করে ব্রাহ্মণরা নিজেদের বসতি স্থাপন করে তাদের তাড়িয়ে দিয়েছে, এমন জোরালো অভিযোগ জানান। ধর্মের নিষ্ঠুরতা নিয়ে ঈশ্বরের কাছে আবেদন করেছেন, “হে ভগবান, দয়া করে বল আমাদের ধর্ম কী। হে ভগবান, আমাকে তোমার সত্যকার ধর্ম শেখাও। যাতে করে সেই মতো আমরা চলতে পারি।”

ধর্ম বলতে তিনি সেই ধর্মের কথা বলেছেন যা সংকীর্ণতা মুক্ত। যেখানে সমানাধিকার থাকবে। মানুষে-মানুষে ভেদাভেদ থাকবে না। তিনি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছেন, ” এমন ধর্ম, যেখানে এক ব্যক্তি সুবিধা পায়, অন্যরা বঞ্চিত হয়, তাকে এই পৃথিবী থেকে লুপ্ত করে দাও। এমন ধর্ম যেন আমাদের মধ্যে আর কখনও প্রবেশ করতে না পারে।”

এ-কথা বলা কতখানি দুঃসাহসিক, কতখানি স্পর্ধার তা সেই সময়ের সমাজ ব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কল্পনা করলে আমরা সহজেই অনুমান করতে পারি। সেই সঙ্গে এটাও বুঝতে পারি, কতখানি দুঃসাহস ছিল তার মধ্যে। একটি দীর্ঘ প্রতিষ্ঠিত চরম শক্তিধর সমাজ ব্যবস্থার বুকে তিনি ঘা মেরেছিলেন। সেটা পেরেছিলেন, কেননা শিক্ষার আলো তিনি পেয়েছিলেন। এটাও বুঝেছিলেন শুধু তিনি বললে হবে না। বাকিদেরও এগিয়ে আসতে হবে। তার জন্য চাই শিক্ষার আলো। তাই তিনি তার প্রবন্ধের শেষে বলেছেন, “ওহে মাং ও মাহাররা, তোমরা গরিব, অসুস্থ। কেবল জ্ঞানের ঔষধই পারে তোমাদের সারিয়ে তুলতে। শিক্ষাই পারে তোমাদের কুসংস্কারের জঘন্য বিশ্বাস থেকে দূরে সরাতে। শিক্ষা তোমাদের ন্যায় পরায়ণ ও নীতিবান করে তুলবে তোমাদের ওপর যে অত্যাচার তা রোধ করতে পারবে। যে সব লোকেরা তোমাদের সঙ্গে পশুর মতো ব্যবহার করে, তা করতে আর তারা সাহস পাবে না।”

শিক্ষার শক্তি কতখানি তা তিনি তার তিন বছরের শিক্ষাজীবনে অনুভব করতে পেরেছিলেন। কিন্তু গতানুগতিক ধারার প্রভাবে দলিত সম্প্রদায়ের সমস্ত মানুষের শিক্ষার প্রতি তেমন উৎসাহ ছিল না। শিক্ষা যে তাদের প্রয়োজন, এটা তারা অনুভব করতে পারত না। তাদের সেই ঘুম থেকে জাগাতে চেয়েছেন তিনি। বলেছেন, “পড়াশোনা কর। কঠোর পরিশ্রম কর। শিক্ষিত হও এবং একজন ভালো মানুষ হয়ে ওঠো।”

মুক্তা সালভের আর কোনো লেখার তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে এই একটিমাত্র লেখার মাধ্যমে তিনি নিজেকে একটি আলাদা জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন। নারীমুক্তি তথা দলিত সমাজের অধিকারের দাবিতে তার এই লেখা এক শানিত হাতিয়ার। একটি সমাজ ব্যবস্থাকে একটু হলেও তিনি ধাক্কা দিতে পেরেছিলেন।

বর্তমান সময়ে আমাদের আলোচনায় উঠে আসে বহু উজ্জ্বল নারীদের নাম। মুক্তা সালভের মতো মহিলারা হারিয়ে গেছেন বিস্মৃতির অন্তরালে। কিন্তু, সলতে পাকানোর কাজটা তারা করেছিলেন। নারী নবজাগরণে এদের ভূমিকা কোনো অংশেই কম নয়। আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে এদেরকে বেশি বেশি করে স্মরণ করা অবশ্যই প্রয়োজন।

Share This
Categories
নারী কথা

আয়ালাসোমায়াজুলা ললিতা ::: সৌরভকুমার ভূঞ্যা।।।

বয়স মাত্র আঠারো। কোলে চার মাসের শিশু সন্তান। সদ্য বিধবা মেয়েটির চারপাশে একরাশ অন্ধকার। নিজ ঘরে অনেকটা পরগাছার মতো জীবন। উঠতে বসতে গঞ্জনা, আপবাদ। একে তো স্বামী হারানোর বেদনা, অন্যদিকে চারপাশের অসহনীয় পরিবেশ। তিলে তিলে দগ্ধ হওয়া মেয়েটি তখন আকুল ভাবে খুঁজছে মুক্তির পথ। আর মৃত্যুর থেকে মুক্তির সহজ উপায় আর কী হতে পারে! কিন্তু মৃত্যুতেই কি মুক্তি নাকি হেরে যাওয়া? মেয়েটি ভাবে কেন সে হেরে যাবে জীবনের কাছে? তার দোষ কোথায়? ওই ছোট্ট শিশুটিরও দোষ কোথায়? তাহলে মুক্তি কোথায়? মেয়েটি ভাবে। বুঝতে পারে পরাধীনতার জীবন মুক্ত হয়ে যদি সে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে, তাহলে মুক্তি সমম্ভ। আর তার জন্য চাই লেখাপড়া। কিন্তু মেয়েদের লেখাপড়া করার পথটাও সুগম নয়। তারপরে সে বিধবা। কিন্তু পিছিয়ে গেলে চলবে না। মেয়েটি নিজেকে বোঝায় হেরে যাওয়া চলবে না। পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াবেই। নিজের জন্য বাঁচবে। বাঁচবে তার মেয়ের জন্য। শুরু হয় তার জীবনের নতুন লড়াই, নতুন অধ্যায়। সাফল্যের বরমাল্য গলায় পরে নতুন নজির সৃষ্টি করে হয়েছিলেন দেশের প্রথম মহিলা ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। অসামান্যা এই নারী হলেন আয়ালাসোমায়াজুলা ললিতা।
১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ২৭ আগস্ট চেন্নাইয়ের এক মধ্যবিত্ত তেলেগু পরিবারে ললিতার জন্ম। সাত ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন পঞ্চম। বাবা পাপ্পু সুব্বারাও ছিলেন গুইন্ডির কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং-এর অধ্যাপক। ছেলেমেয়ে উভয়ের শিক্ষার ব্যাপারে তিনি ছিলেন সচেতন। তার সব ছেলেই ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছেন।
সেকেন্ডারি স্কুল লিভিং সার্টিফিকেট পাওয়ার পর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায় ললিতার। তৎকালীন সামাজিক নিয়ম মেনে মাত্র পনেরো বছর বয়সে বিয়ে যায় ললিতার। ১৯৩৭-এ তাঁর মেয়ের জন্ম হয়। মেয়ের বয়স যখন মাত্র চার মাস তখন তার স্বামী মারা যায়। অষ্টাদশী বিধবা ললিতার জীবনে নেমে আসে চরম বিপর্যয়। ছেলের অকাল মৃত্যুর জন্য শাশুড়ি ললিতাকে নানারকম কথা শোনাতেন। তাঁকে অপয়া বলে গালিগালাজ করতেন। জীবনটা দুর্বিসহ হয়ে ওঠে। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া ললিতা ঘুরে দাঁড়ানোর সংকল্প নেন।
শুরু হয় ললিতার জীবনের নতুন অধ্যায়। কুইন মেরি কলেজ থেকে তিনি ইন্টার মিডিয়েট পাশ করেন প্রথম বিভাগে। সিদ্ধান্ত নেন বাবা-ভাইদের মতো ইঞ্জিনিয়ার হবেন। সেই সময় একজন মেয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্তটি বেশ অভিনব ও সাহসের। তবে বাবা তাঁর সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানালেন।
যাই হোক, ইঞ্জিনিয়ারিং তো পড়বেন কিন্তু কোথায়? তখন গুইন্ডির কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং-এ মেয়েদের পড়ার সুযোগ ছিল না। পরিত্রাতা হয়ে এগিয়ে এলেন বাবা। তিনি কলেজের প্রিন্সিপ্যাল এবং পাবলিক ইনস্ট্রাকশান ডিরেক্টরকে মেয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার ব্যাপারটা বলেন এবং বুঝিয়ে তাদের মত আদায় করেন। কলেজের ইতিহাসে তৈরি হয় এক নতুন অধ্যায়। ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হন ললিতা।
কলেজের অসংখ্য ছেলের মধ্যে একমাত্র মেয়ে হয়ে প্রথম প্রথম বেশ অস্বস্তি ও অসুবিধার মধ্যে পড়েন ললিতা। ধীরে ধীরে তিনি সব অসুবিধা কাটিয়ে ওঠেন। কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁর জন্য আলাদা হোস্টেলের ব্যবস্থা করেন। ললিতার একাকীত্বের ব্যাপারটা কলেজ কর্তৃপক্ষ বুঝতে পেরেছিলেন। তাঁরা ভাবেন যদি আরও মেয়েকে পড়ার সুযোগ দেওয়া হয় তাহলে এই সমস্যা দূর হবে। সেই মতো পরের বছর তাঁরা মেয়েদের ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার ব্যাপারে বিজ্ঞাপন দেন। সেই বিজ্ঞাপন দেখে দুজন মহিলা ভর্তি হন, পি-কে থ্রেশিয়া ও লীলাম্মা কোশি জর্জ। তাদের বিষয় ছিল সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং।
১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন ললিতা। স্থাপন করেন এক নতুন নজির। তিনি হলেন ভারতের প্রথম মহিলা ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করার পর তিনি জামালপুর রেলওয়ে ওয়ার্কশপে এক বছর শিক্ষানবিশীর কাজ করেন প্রাকটিক্যাল ট্রেনিং-এর জন্য। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি সেন্ট্রাল স্টান্ডার্ড অর্গানাইজেশনে সহকারী ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগ দেন। পোস্টিং হয় সিমলাতে। এখানে তিনি দু-বছরের কিছু বেশি সময় কাজ করেন। ১৯৪৬-এর ডিসেম্বর মাসে তিনি এই কাজ ছেড়ে দেন।
ললিতার বাবা পাপ্পু সুব্বারাও কিছু গবেষণার কাজ করছিলেন। বাবার অনুরোধে চাকরি ছেড়ে ললিতা সেই গবেষণার কাজে যোগ দেন। কিন্তু ন-মাস পর তিনি এই কাজও ছেড়ে দেন। এরপর তিনি কলকাতায় অ্যাসোসিয়েটেড ইলেকট্রিক্যাল ইনডাস্ট্রিজে যোগ দেন। ইঞ্জিনিয়ারিং ও সেলস ডিপার্টমেন্টে কাজ করতেন তিনি। এখানে তিনি বেশকিছু উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ভারতের বৃহত্তম ভাকরা নাঙ্গাল বাঁধের বৈদ্যুতিক জেনারেটর নিয়ে কাজ। তিরিশ বছরের বেশি এখানে কাজ করেছেন তিনি।
১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে লন্ডনের কাউন্সিল অব দ্য ইনস্টিটিউশন অহ ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারস তাকে অ্যাসোশিয়েট সদস্য হিসেবে নিযুক্ত করেন। ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি এখানকার পূর্ণ সময়ের সদস্য হয়েছিলেন। ১৯৬৪-এর জুন মাসে নিউইয়র্কে আয়োজিত প্রথম ইন্টারন্যাশন্যাল কনফারেন্স অব ওমেন ইঞ্জিনিয়ারস অ্যান্ড সাইন্টিস্টস-এ তিনি আমন্ত্রণ পান। নিজের ব্যবস্থাপনায় তিনি এই কনফারেন্সে যোগ দেন। এখান থেকে ফিরে আসার পর বেশ কিছু পত্রপত্রিকায় তাঁর সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। নিজের বক্তব্যে তিনি মেয়েদের পড়াশোনা ও কাজে যোগাদানের ব্যাপারে উৎসাহিত করেন। মেয়েদের ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশোনা কতখানি গুরুত্বপূর্ণ সে ব্যাপারে নিজের মন্তব্য প্রকাশ করেন। ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি লন্ডনের ওমেন ইঞ্জিনিয়ারিং সোসাইটির স্থায়ী সদস্য হন।
১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দের ১২ অক্টোবর ব্রেন অ্যানিউরিজমে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ষাট বছর বয়সে মারা যান ললিতা।
পরাধীন ভারতবর্ষে মেয়েদের পড়াশোনার ব্যাপারে তেমন উৎসাহ দেওয়া হত না, তাদের পড়াশোনা করার বিশেষ করে উচ্চশিক্ষা করার নানা রকম প্রতিবন্ধকতা ছিল। সেই সময়ে দাঁড়িয়ে এক বিধবা মেয়ের হয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে তিনি কেবল অনন্য নজির স্থাপনই করেননি, আগামী প্রজন্মের মহিলাদের কাছে নিজেকে দৃষ্টান্ত হিসেবে স্থাপন করেছিলেন।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

মাতৃভাষা ও সত্যিকারের মা ::: শুভঙ্কর দাস।।।

“আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে?
কথায় না বড় হয়ে, কাজে বড় হবে,”

আমি জানি এই দুটি চরণ পড়া মাত্র পাঠক পরের দুটি চরণ অনায়াস আনন্দে উচ্চারণ করে ফেলবেন।
এবং কবির নামও হয়তো বলতে পারবেন।
অবশ্য এই কবির পুত্রের নাম জীবনানন্দ দাশ,এক ডাকে সকলেই জানেন।কবিতা পড়েন।এখনও পর্যন্ত বাংলা কবিতার জগতে তাঁর প্রভাব রবীন্দ্রনাথের পরেই…
কীভাবে লিখতেন কবি জীবনানন্দের মা,
সংসারের কাজকর্মে ফাঁকে ফাঁকে অবলীলায় কবিতা রচনা করতে পারতেন।হয়তো খুব ব্যস্ত হয়ে কিছু করছেন,’ব্রহ্মবাদী’ পত্রিকার সম্পাদক আচার্য মনোমোহন চক্রবর্তী এসে বললেন, এখুনি কবিতা চাই,প্রেসে পাঠাতে হবে,লোক দাঁড়িয়ে আছে।
শুনে কবি-মাতা খাতা কলম নিয়ে রান্নাঘরে ঢুকে একটা হাতে খুন্তি, অপর হাতে কলম নাড়ছেন,যেমন চিঠি লিখছেন।বড়ো একটা ঠেকছে না কোথাও! এবং সম্পাদক মহাশয় একটু পরে হাতে পেতেন একটি মৌলিক কবিতা।
এবং এই দৃশ্য রান্নাশালের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে দেখতেন বালক জীবনানন্দ, খুবই অবাক হতেন!
এবং জেনে রাখুন,মায়ের কবিত্ব ও বই পড়ার আগ্রহই জীবনানন্দকে কবিতার প্রতি,বইপাঠের প্রতি আকৃষ্ট করেছিল।মা তাঁকে বই পড়তে ও কবিতা লিখতে প্রাণিত করতেন।
এবং পড়াতেন মহাপুরুষের জীবনী,যাতে জীবনানন্দ তাঁদের জীবনের ওপর কবিতা রচনা করতে পারে,আসল অর্থ ছিল,সেই জীবনের কথা জেনে নিজের জীবনের পথ তৈরি করা।
এইভাবে ‘বঙ্গবাণী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় জীবনানন্দের কবিতা,দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশকে নিয়ে।
নাম ছিল,’দেশবন্ধু প্রয়াণে’।
কবিতাটি কেমন হয়েছে জানার জন্য মায়ের কাছে নিয়ে যায় পত্রিকাটি।
তাতে মায়ের মতামত হল,চিত্তরঞ্জন সম্বন্ধে লিখেছো, ভালোই করেছ,কিন্তু রামমোহন ওপর লিখতে বলেছি তোমাকে,মহর্ষির ওপরেও”
এইরকমভাবে পুত্র জীবনানন্দকে মাতা একটা মহাপুরুষের তালিকা করে দিয়েছিলেন।
কারণ তাতেই হবে—

” মুখে হাসি,বুকে বল,তেজে ভরা মন
মানুষ হইতে হবে,এই তার পণ”

সেই পণে ও মায়ের ঐকান্তিক আলোর পথে গিয়ে আমরা পেলাম বাংলা কবিতার এক মহা-অনুভবী কবিকে,যাঁকে পাঠ ছাড়া আধুনিক কবিতার গতি ও গর্ব নেই!
মায়ের নাম নিশ্চিত জানেন?
এটি কমেন্টে লিখুন,কারণ এই ধরণের মায়ের বড় অভাব বর্তমান সময়ে,বই পড়া তো দূরের কথা,মহাপুরুষের জীবনীপাঠ তো পরের কথা,সন্তানকে মোবাইল আসক্তি থেকে সরাতে গিয়ে নিজেই একটি অ্যাপে পরিণত হয়ে যাচ্ছেন!এখনকার মিনি মাতাগণ
নিজেই বই পড়েন না!মহাপুরুষের জীবনী পড়েন না! ফলে যেমন বৃক্ষ, তেমনই ফল…
তাই এই মাতা-কবির নাম কমেন্ট-ঘরে লিখুন এবং অন্তর সঠিক পথে চালিত হোক।কারণ

“আমাদের দেশে হবে সেই মা কবে?
মোবাইল ছাড়িয়ে বই ধরিয়ে দেবে
মুখে বাংলা, বুকে বাংলা, বই-ভরা মন
পাঠক হতেই হবে এই সত্য আমরণ”

একান্ত ক্ষমাপ্রার্থী শুভঙ্কর দাস।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

নারী : অর্ধেক আকাশ ছাড়িয়ে।

“বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর
অর্দ্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্দ্ধেক তার নর।”
কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই বিখ্যাত লাইন দুটি উচ্চারণ করতে করতে মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগে, আমাদের সমাজে নারীরা কি তাদের সমান অধিকার পেয়েছে? সাম্প্রতিক সময় থেকে অতীত, ইতিহাসের পাতায় চোখ রাখলে আমরা দেখতে পাই সমান অধিকার দূরে থাক নারীরা তাদের যোগ্য সম্মান পায়নি, এখনও হয়তো সেভাবে পায় না। একথা ঠিক বর্তমানে তাদের সামাজিক অবস্থার অনেকটা উন্নতি হয়েছে কিন্তু অবমাননা, বঞ্চনা, লাঞ্ছনা প্রভৃতি ব্যাপারগুলো আজও থেকে গেছে। আমাদের সমাজে একটা সময় ছিল যখন মেয়েদের শিক্ষার অধিকার ছিল না। তারা শিক্ষিত হলে তাদের জীবনে অকাল বৈধব্য নেমে আসবে, সমাজ-সংসার রসাতলে যাবে এরকম ভাবনা মানুষের মনে ছিল। নানাবিধ কুসংস্কার, আচার, প্রথার জালে জড়িয়ে তাদের দমিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। সেই দমিয়ে রাখার প্রয়াস আজও চলছে। হয়তো পূর্বের থেকে পদ্ধতিগুলো কিছুটা বদলে গেছে। নারীরাও এসব মেনে নেয় কিংবা মেনে নিতে বাধ্য হয় কেননা পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে সর্বদাই দুর্বল বলে ভাবা হয়েছে, শারীরিক এবং মানসিক উভয় দিক থেকেই। নারীদের একটা বিরাট অংশও মনে মনে নিজেদের সেরকমই মনে করে। এতে তাদের কোনো দোষ নেই। কেননা যুগের পর যুগ ধরে এমন ধরনা যদি তাদের মাথার মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় তাহলে এই ভাবনা ভাবাই স্বাভাবিক। কিন্তু ভাবনাটি কি আদৌ ঠিক? শারীরিক দিক দিয়ে নারীরা হয়তো পুরুষদের থেকে কিছুটা দুর্বল কিন্তু অন্যান্য বিষয়েও কি তাই? তাছাড়া শারীরিক দিক দিয়েও বা তাদের দুর্বল বলি কী করে? সৃষ্টির ধারক কি দুর্বল হতে পারে? যে নারী গর্ভে সন্তান ধারণ করে, দশ মাস দশ দিন সেখানে লালন পালন করে, তীব্র যন্ত্রণা সহ্য করে তাকে পৃথিবীর আলো দেখায় তাকে শারীরিকভাবে দুর্বল ভাবা বোকামি। আর বর্তমান সময়ে নারীরা সমস্ত কাজে পুরুষদের সঙ্গে সমানতালে পাল্লা দিচ্ছে। বৃহৎ ক্ষেত্র বাদ দিয়ে একেবারে সাধারণ কথাই ধরা যাক। একজন সাধারণ গৃহবধূকে নিত্যদিন সংসারে যে কাজ করতে হয় তা তাদের শারীরিক দুর্বলতা নয়, সক্ষমতাই প্রমাণ করে। এসব সাংসারিক কাজগুলো আমাদের বিচার বিবেচনায় স্থান পায় না বলে নারীদের শক্তি, সামর্থ কিংবা দক্ষতা আমাদের চোখে পড়ে না। সে যাই হোক, তর্কের খাতিরে না হয় ধরে নিলাম নারীরা শারীরিকভাবে দুর্বল কিন্তু মানসিক এবং বৌদ্ধিক দিক দিয়ে? আমার মনে হয় এক্ষেত্রে নারীরা দুর্বল তো নয়ই বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা পুরুষদের থেকে অনেক এগিয়ে। বর্তমান ছেড়ে একেবারে অতীত থেকে কিছু দৃষ্টান্ত দিলে আমার মনে হয় ব্যাপারটা পরিস্কার হবে।

যে কৃষিকাজ আদিম মানুষকে যাযাবর জীবন থেকে মুক্তি দিয়ে তাকে স্থিতিশীল ও তুলনামূলক উন্নত জীবন দিয়েছিল সেই কৃষিকাজের পরিকল্পনা প্রথম মাথায় এসেছিল নারীদের। সাহিত্যের দিকে চোখ বোলালে দেখা যাবে সেখানেও তাদের উজ্জ্বল উপস্থিতি। বিশ্বের প্রথম লেখক হলেন মেসোপোটিয়ান রাজা প্রথম সারগনের কন্যা এনহেদুয়ান্না। তাঁর লেখার নিদর্শন পাওয়া যায় খ্রিস্টপূর্ব ২৩০০ অব্দে। বিশ্বের প্রথম পেশাদার পুস্তক সমালোচক হলেন আমেরিকার মার্গারেট ফুলার। তাঁর রচিত বই ‘ওম্যান ইন দা নাইনটিন সেঞ্চুরি’। বিশ্বের প্রথম ঔপন্যাসিক হলেন লেডি মুরাসাকি নামে এক জাপানী মহিলা। যিনি ১০০০ থেকে ১০০৮ অব্দের মধ্যে লিখেছিলেন ‘দ্য টেল অব গেঞ্জি’। আমাদের বাংলা ভাষায় প্রথম আত্মজীবনী লেখেন একজন মহিলা, রাসসুন্দরী দেবী। পঞ্চম শতাব্দীর বিখ্যাত গনিতবিদ ও জ্যোতির্বিদ ছিলেন হাইপেশিয়া যাকে নৃশংসভাবে প্রাণ দিতে হয়েছিল ধর্মীয় উন্মাদদের হাতে। যাঁর মৃত্যুতে মানব সভ্যতার ইতিহাসে সৃষ্টি হয়েছিল এক কৃষ্ণ অধ্যায়। যে অন্ধকার সময় চলেছিল প্রায় এক হাজার বছর।

আমাদের দেশের অতীত ইতিহাস ঘাঁটলে আমরা অসংখ্য মহীয়সী নারীর কথা জানতে পারি। বৈদিক যুগের আদি পর্বে নারীরা পুরুষদের সঙ্গে সমান অধিকার ভোগ করার সুযোগ পেত। ঘোষ, অপালা, বিশ্ববারা, গার্গী, মৈত্রেয়ীর মতো বহু মহিয়সী নারীর উল্লেখ আছে বেদ, উপনিষদের আদি গ্রন্থে। এমনকি মধ্যযুগে যখন সমাজে নারীদের অবস্থানের অনেক অবনতি ঘটেছিল তখনও আমরা খনা কিংবা লীলাবতীর মতো বিদূষী নারীকে পেয়েছি। তাহলে কী করে বলি মেধা ও মননের দিক থেকে নারীরা পিছিয়ে? তাছাড়া পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীদের হয়তো একটা গন্ডীর মধ্যে আটকে থাকতে বাধ্য করা হয়েছে কিন্তু তাদের মেধা কিংবা বুদ্ধিকে পুরুষরা কাজে লাগায়নি একথা কী করে বলা যায়? কাজী নজরুল বলেছেন—“কোন কালে একা হয়নি কো জয়ী/পুরুষের তরবারি/শক্তি দিয়েছে প্রেরণা দিয়েছে/ বিজয়লক্ষ্মী নারী।”

একটি সংসারকে সুন্দর করে চালনা করা, তাকে নান্দনিকতায় সাজিয়ে তোলা প্রভৃতিতে পুরুষদের তুলনায় নারীরা অনেক বেশি দক্ষ। আর বর্তমান সময়ে আমরা দেখতে পাই সমাজের সমস্ত ক্ষেত্রে নারীদের গর্বিত পদচারনা। যুগ যুগ ধরে তাদের নানাভাবে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে হয়তো তাদের মধ্যেকার শক্তিশালী সত্তাটি যাতে না প্রকট হয়ে পড়ে সে জন্য। দুর্বলকে তো দমিয়ে রাখার প্রয়োজন হয় না। এই দমিয়ে রাখার প্রয়াস প্রমাণ করে তারা সবদিক দিয়ে পিছিয়ে নয় বরং এগিয়ে। এই দমিয়ে রাখার প্রয়াসটাই আসল দুর্বলতা, ভাবনা ও মানসিকতার। যদি তা না করা হত তাহলে যুগের পর যুগ ধরে সমাজে নারীদের যে দুর্দশার জীবনধারা আমরা দেখে এসেছি বা বর্তমানেও দেখছি, সেটা হত না। তাতে লাভ হত আমাদের সমাজ-সংসার সবকিছুর। একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, হাতে হাত রেখে চলার মধ্যে কোনো দুর্বলতা বা হীনতা নেই, থাকে বন্ধুত্ব আর বিশ্বাস যা যে কোনো ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার পথকে অনেক মসৃণ করে।

আমার মনে হয় নারীদের মধ্যে যে অফুরন্ত শক্তি আছে তাকে দমিয়ে না রেখে, স্ফূরণের সুযোগ দিতে হবে। তাতে আমাদের সকলেরই লাভ। সেই সঙ্গে সঙ্গে নারীদেরও বুঝতে হবে নিজেকে, নিজের মধ্যেকার শক্তিকে। আমরা যদি পুরাণে চোখ রাখি তাহলে দেখতে পাই দেবী মহামায়া একদিকে যেমন জননী অন্যদিকে তেমনি রনসংহারকারী, অসুর নিধনকারী। আজকের সময়েও নারীদের তাদের মধ্যেকার এই দ্বৈত সত্তাকে উপলব্ধি করতে হবে। তাহলে সমাজে তাদের স্থান মজবুত হবে।

সবশেষে বলি, নারীদের অবমাননা নয়, বঞ্চনা কিংবা লাঞ্ছনা নয়, তাদের দমিয়ে রাখার প্রয়াসও নয়—ভালোবাসা আর যথাযথ মর্যাদায় যদি তাকে সমাজে স্থান দেওয়া হয় তাহলে সভ্যতার সঠিক বিকাশ সম্ভব, যা আজকের সময় কিছুটা হলেও বুঝেছে। আগামী সময়েও সেই ধারার অগ্রগমন শুধু নারী সমাজ নয়, আমাদের পুরো সমাজ ব্যবস্থাকে একটা সুদৃঢ় অবস্থানে স্থাপিত করবে।

কলমে : সৌরভকুমার ভূঞ্যা।

Share This