Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

স্মরণে প্রখ্যাত কণ্ঠসঙ্গীত শিল্পী মীরা বন্দ্যোপাধ্যায়।।।

মীরা বন্দ্যোপাধ্যায়, ২৮ মার্চ, ১৯৩০ সালে উত্তর প্রদেশের মিরাটে জন্মগ্রহণ করেন, ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের একটি উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব। শৈলেন্দ্রকুমার চট্টোপাধ্যায়ের কন্যা, মীরার নামকরণ করা হয়েছিল তার জন্মস্থানের নামে। কলকাতার ৮ দেবেন সেন রোডে তার বাড়িটি ছিল বেগম আখতার, আলী আকবর খান এবং আরও অনেকের মতো সঙ্গীতের মহান ব্যক্তিদের জন্য একটি সমাবেশের স্থান, যা তাকে একটি সমৃদ্ধ সঙ্গীত পরিবেশ প্রদান করে।

অল্প বয়সে, তিনি তার বাবার অধীনে এবং পরে চিন্ময় লাহিড়ীর কাছ থেকে ধ্রুপদ ও ধামার প্রশিক্ষণ নেন।
মীরার সঙ্গীত প্রতিভা প্রথম দিকে স্বীকৃত হয়েছিল। অল্প বয়সেই তিনি অল বেঙ্গল মিউজিক কম্পিটিশনে প্রতিটি বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৯৪৩ সালে নৃপেন মজুমদারের আমন্ত্রণে তিনি অল ইন্ডিয়া রেডিওতে অভিনয় শুরু করলে তার কর্মজীবন শুরু হয়। এক বছর পরে, তিনি সঙ্গীতাচার্য গিরিজাশঙ্কর চক্রবর্তী কর্তৃক “গীতাশ্রী” উপাধিতে সম্মানিত হন।
তার বাবা তাকে পাটিয়ালা ঘরানার সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পরে কিংবদন্তি ওস্তাদ বড়ে গুলাম আলী খানের অধীনে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সময় তার যাত্রা অব্যাহত ছিল। এমনকি এই সংযোগের ফলে প্রখ্যাত জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ তাঁর বাড়িতে ওস্তাদের থাকার জন্য কক্ষ অফার করেছিলেন। সঙ্গীতের সাথে মীরার বন্ধন আরও গভীর হয় যখন তিনি ১৯৫৭ সালে প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিয়ে করেন, একজন সহ-শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পী, যার সাথে তিনি বেশ কয়েকটি রেকর্ড প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর অনুরোধে রাশিয়া, পোল্যান্ড এবং চেকোস্লোভাকিয়া সফর করার সময় মীরার আন্তর্জাতিক প্রকাশ ঘটে, বিশ্ব মঞ্চে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত প্রদর্শন করে। তিনি তপন সিনহার নির্দেশে ‘অতিথি’, ‘বৃন্দাবনলীলা’ এবং ‘মেঘমল্লার’-এর মতো ছবিতেও তার কণ্ঠ দিয়েছেন, ভারতীয় সংস্কৃতিতে তার প্রভাবকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন।
তার বর্ণাঢ্য কর্মজীবন জুড়ে, মীরা বন্দ্যোপাধ্যায় রাষ্ট্রপতি ভবনে একটি অনুষ্ঠানে ভারতের রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে একটি বিশেষ পুরস্কার সহ অসংখ্য প্রশংসা পেয়েছিলেন। ১৯৫৩ সালে অল ইন্ডিয়া রেডিওর ন্যাশনাল প্রোগ্রাম অফ মিউজিকের জন্য তার অভিনয় সারা দেশে হৃদয় জয় করে, ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের একজন সম্মানিত দূত হিসাবে তার উত্তরাধিকারকে সিমেন্ট করে।
মীরা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবন এবং কাজ শিল্পের প্রতি তার উত্‍সর্গকে প্রতিফলিত করে, যা তাকে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের জগতে একটি সম্মানিত নাম করে তোলে। ভারতের সমৃদ্ধ সঙ্গীত ঐতিহ্য সংরক্ষণ করে তার অবদান আগামী প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে।
তাঁর অন্যান্য পুরস্কার গুলি হল– গিরিজাশঙ্কর পুরস্কার, আলাউদ্দিন পুরস্কার, সৌরভ পুরস্কার, ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে – আইটিসি এসআরএ পুরস্কার, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সঙ্গীত আকাদেমি পুরস্কার, ভুয়ালকা পুরস্কার।
২০১২ খ্রিস্টাব্দের ২৭ জুন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কলকাতার বোসপুকুরের বাড়িতে প্রয়াত হন বিদুষী মীরা বন্দ্যোপাধ্যায়।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

স্মরণে, বাঙ্গালী কবি ও সমাজকর্মী মল্লিকা সেনগুপ্ত।।।

মল্লিকা সেনগুপ্ত, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একজন বিশিষ্ট কবি এবং লেখক, তাঁর নারীবাদী এবং সংবেদনশীল সাহিত্যকর্ম দিয়ে নিজের জন্য একটি বিশেষ স্থান তৈরি করেছেন। ২৭ মার্চ, ১৯৬০ সালে, নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে জন্মগ্রহণকারী সেনগুপ্তের কবিতার জগতে যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৮১ সালে। বছরের পর বছর ধরে, তিনি ১১টি কবিতা সংকলন, দুটি উপন্যাস এবং অসংখ্য প্রবন্ধ সহ ২০টি উল্লেখযোগ্য রচনা লিখেছেন।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে অধিভুক্ত মহারানী কাশিশ্বরী কলেজে সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে তার একাডেমিক কেরিয়ারও সমানভাবে উজ্জ্বল ছিল।
৯০ এর দশকে বাংলা সাহিত্যে সেনগুপ্তের অবদান উল্লেখযোগ্য ছিল, বিশেষ করে তিনি অপর্ণা সেনের নির্দেশনায় ‘সানন্দা’ পত্রিকার কবিতা বিভাগ সম্পাদনা করেছিলেন। এছাড়াও তিনি স্বামী সুবোধ সরকারের সাথে ‘ভাষানগর’ একটি সাংস্কৃতিক পত্রিকার সহ-সম্পাদনা করেছিলেন। তার সাহিত্যকর্ম, তার রাজনৈতিক এবং নারীবাদী অবস্থানের জন্য পরিচিত, শুধুমাত্র ভারতেই স্বীকৃত হয়নি বরং বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ সহ আন্তর্জাতিক প্রশংসাও অর্জন করেছে।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার তাকে সুকান্ত পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং ফেলোশিপ ফর লিটারেচার প্রদানের মাধ্যমে সাহিত্য ও সামাজিক সমস্যাগুলির উপর তার গভীর প্রভাবকে স্বীকার করেছে।
সেনগুপ্তের লেখাগুলি প্রায়শই ঐতিহাসিক নারী ব্যক্তিত্বকে তুলে ধরে, আধুনিক নারীবাদী লেন্সের মাধ্যমে তাদের গল্পের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সমসাময়িক কবি সংযুক্তি দাশগুপ্তের মতে, সেনগুপ্তের নারীবাদ নিছক সচেতনতাকে অতিক্রম করে এবং নারীর প্রান্তিকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ হিসেবে প্রকাশ পায়।
তার লেখার মাধ্যমে, মল্লিকা সেনগুপ্ত ক্রমাগত প্রান্তিক নারীদের অধিকার এবং স্বীকৃতির পক্ষে ওকালতি করেছেন, তার কণ্ঠকে নিপীড়নের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী হাতিয়ার করে তুলেছেন। বাংলা সাহিত্য এবং নারীবাদী বক্তৃতায় তার উত্তরাধিকার প্রভাবশালী রয়ে গেছে, পাঠক ও লেখকদের একইভাবে আরও ন্যায়সঙ্গত লেন্সের মাধ্যমে বিশ্বকে দেখতে অনুপ্রাণিত করে।
বিশেষ বই—
কথামানবী কবিতা, পুরুষকে লেখা চিঠি, আমাকে সারিয়ে দাও ভালবাসা, সীতায়ন উপন্যাস

পুরস্কার ও সম্মাননা—

ভারত সরকারের জুনিয়র রাইটার ফেলোশিপ (১৯৯৮); পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সুকান্ত পুরস্কার(১৯৯৮); পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি অনীতা-সুনীল বসু পুরস্কার(২০০৪)।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্নিকন্যা, মোহিনী দেবী।।।

সূচনা-ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের অব্যর্থ পরিশ্রম যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত রাজনৈতিক দিক থেকে মুক্তি পেয়েছে। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়, তার মূলে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে মোহিনী দেবী প্রথমসারির একজন অন্যতম বিপ্লবী ছিলেন।ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুধু শহীদ ভগত্‍ সিং-এর মতই নয় বরং শক্তিশালী নারীদের দ্বারা প্রশস্ত হয়েছিল যারা তাদের মাটিতে দাঁড়িয়েছিল এবং দেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য ব্রিটিশদের সাথে লড়াই করেছিল।

মোহিনী দেবী ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি দেশমতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ রূপে। ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিকন্যা ছিলেন তিনি।
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক স্মরণীয় নাম
মোহিনী দেবী। তিনি ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিকন্যা। এছাড়া তার পরিবার বাংলাদেশের প্রগতিমুলক শিক্ষা ও সংস্কৃতির সাথে জড়িত ছিল। ইতিহাসে তাঁর নাম আজও স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। জেনে নেবো তাঁর সংগ্রামী জীবনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।

জন্ম ও পরিবার–

মোহিনী দেবী ১৮৬৩ সালে ঢাকা জেলার মানিকগঞ্জে এক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম রামশঙ্কর সেন ও মাতার নাম উমাসুন্দরী দেবী। ১২ বছর বয়সে তারকচন্দ্ৰ দাশগুপ্তের সঙ্গে বিবাহ হয়। শ্রমিক আন্দোলনের নেত্রী প্রভাবতী দাশগুপ্ত।

শিক্ষাজীবন–

মোহিনী দেবী ভিক্টোরিয়া স্কুলের প্রথম হিন্দু ছাত্রী, কলকাতার অভিজাত অ্যাংলিকান প্রতিষ্ঠান, মোহিনী দেবী (১৮৬৩ – ১৯৫৫) তার মূলে একজন জাতীয়তাবাদী ছিলেন। ঢাকার বেউথার রামশঙ্কর সেনের কন্যা, বারো বছর বয়সে তারকচন্দ্র দাশগুপ্তের সাথে তার বিয়ে হয়। তা সত্ত্বেও, তিনি পন্ডিত শিবনাথ শাস্ত্রী এবং রামতনু লাহিড়ীর অধীনে অধ্যয়নের সুযোগ পেয়েছিলেন, ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগের কলকাতার অধ্যবসায়ী। তিনি ইউনাইটেড মিশনের একজন মহিলা শিক্ষকের কাছে ইংরেজি শিখেছিলেন। এইভাবে তিনি ভারতের সমসাময়িক উন্নয়ন সম্পর্কে সচেতন হন এবং শুরু থেকেই বিভিন্ন সামাজিক কল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হন।

রাজনৈতিক জীবন–

১৯২১-২২ সালে তিনি গান্ধীজীর অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেওয়ার কারণে কারাবরণ করেন। ১৯৩০-৩১ সালে আইন অমান্য আন্দোলনে নেতৃত দেন। এজন্য তাকে ছয় মাসের জেল খাটতে হয়েছিল। ‘নিখিল ভারত মহিলা সমিতির’ সভানেত্রী হিসেবে তার ভাষন উচ্চ প্রশংসিত হয়। ১৯৪৬ সালের দাঙ্গায় মুসলিম প্রধান অঞ্চল এন্টালি বাগানে নিজের বাড়িতে থেকে হিন্দু মুসলিম ঐক্যের প্রচার চালিয়েছিলেন। সে সময় তার বন্ধু-বান্ধব আত্নীয় পরিজন তাকে তিরস্কার করে কিন্তু তাতে তিনি সংকল্প হারান নি। মোহিনী দেবী একদিকে স্বাধীনতা আন্দোলন এর পক্ষে কাজ করেছিলেন অন্যদিকে নারী শিক্ষা, নারী স্বাধীনতা, সমাজসংস্কারমূলক কাজ।

স্বাধীনতা আন্দোলনে-

১৯২০-১৯২২ সালে, ব্রিটিশদের সাথে অসহযোগের জন্য গান্ধীর আহ্বানের উচ্চতায়, তিনি নিজেকে আন্দোলনে উত্সর্গ করেছিলেন। ১৯৩০-১৯৩১ সালের আইন অমান্য আন্দোলনের সময়, তিনি আইন ও পুলিশি বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করে এবং পথে কারাভোগ করে একজন উল্লেখযোগ্য নেতা আন্দোলন হিসাবে আবির্ভূত হন। গান্ধীবাদী আদর্শে তার সম্পূর্ণ সাবস্ক্রিপশন এবং তার আন্দোলন কৌশলের প্রতি অটল জমা দেওয়ার কারণে, তিনি দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে সর্বভারতীয় মহিলা কংগ্রেসের সভাপতি হন; তার বাকপটু বক্তৃতা গান্ধী সহ সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। নিজের এবং তার পরিবারের নিরাপত্তা উপেক্ষা করে, তিনি কলকাতার রাস্তায় নেমে আসেন এবং ১৯৪৬ সালের ভয়াবহ কলকাতা দাঙ্গার অন্ধকার দিনগুলিতে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেন।
গান্ধীজীর আদর্শে অবিচলিত নিষ্ঠা ছিল। ১৯৪৬ খ্রী. কলিকাতায় দাঙ্গার সময় দাঙ্গা-আধুষিত মুসলমান-প্রধান অঞ্চল এন্টনিবাগানে নিজের বাড়িতে থেকে হিন্দু-মুসলমানের ঐক্যের বাণী প্রচার করেন। ‘দি স্কাভেঞ্জার্স ইউনিয়ন অব বেঙ্গল’ এবং ‘জুটি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নে’র প্রেসিডেন্ট তাঁর কন্যা প্ৰভাবতী দাশগুপ্ত ১৯২৭-২৮ থেকে ১৯৩০ – ৩১ খ্রী. পর্যন্ত শ্রমিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে এক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব।

মৃত্যু–

মহান এই সংগ্রামী মোহিনী দেবী ২৫ মার্চ ১৯৫৫ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট ও উইকিপিডিয়া।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ রিভিউ

কর্তাভজা সম্প্রদায় ও কল্যাণীর সতীমার দোল মেলা : দিলীপ রায়।।।

যতদূর জানা যায়, আনুমানিক দুশো বছর আগে আউলিয়া সম্প্রদায়ের সতীমা অর্থাত্‍ সরস্বতী দেবী এই মেলার প্রবর্তন করেন । এপার বাংলা ও বাংলাদেশে যথেষ্ট জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ ঘোষপাড়ার সতীমার দোল মেলা । খ্রিষ্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি বাংলার অন্ত্যজ সম্প্রদায়ের মানুষদয়ের নিয়ে গড়ে ওঠে আউলচাঁদ সম্প্রদায় ।

এই সম্প্রদায়ের আদিগুরু ছিলেন আউলচাঁদ । তাঁর মৃত্যুর পর আউলচাঁদ সম্প্রদায়ের কর্তাপদ লাভ করেন রামশরণ পাল । তাঁরই স্ত্রী ছিলেন সরস্বতী দেবী যিনি পরবর্তীকালে সতী মা নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেন ।
বাউল, কীর্তন, লোকগীতি, পল্লীগীতির সুরে প্রতি বছর মেলা জমে ওঠে । আখড়ায় আখড়ায় সারা রাত ধরে গানের আসর । শ্রোতারা অধিকাংশই গ্রাম ও মফঃস্বলের । বিভিন্ন জায়গায় তৈরী হয় লালন মঞ্চ । গানের পাশাপাশি বিশাল উনুন জ্বালিয়ে ক্ষুন্নিবৃত্তির ব্যবস্থা হয় ঐ আখড়াগুলিতে । দূরদূরান্ত থেকে মেলায় আগত মানুষদের আশ্রয়স্থল এই আখড়াগুলি ।
এবার আসছি কর্তাভজা সম্প্রদায় প্রসঙ্গে ।
কর্তাভজা সম্প্রদায় আঠারো শতকে বৈষ্ণববাদ ও সুফিবাদ থেকে বিকশিত একটি ক্ষুদ্র ধর্মীয় সম্প্রদায় । এই সম্প্রদায়ের মূল গুরু আউল চাঁদ ।
প্রথমেই বলি, আউলচাঁদ হলেন একজন বাঙালি ধর্ম প্রচারক ও কর্তাভজা সম্প্রদায়ের আদিগুরু । কিংবদন্তি বা লোকবিশ্বাস যে, গোরাচাঁদ অর্থাত্‍ শ্রীচৈতন্যদেব আউলচাঁদ রূপে পুনরায় আবির্ভূত হয়েছেন । গৃহী মানুষকে বৈরাগ্য ধর্ম শেখাতে শ্রীচৈতন্য আবির্ভূত হন আউল চাঁদ ফকির হয়ে । এখানে তাই কোনো জাতিভেদ নেই ।
আউলচাঁদের জন্ম-খ্রিষ্টাব্দ নিয়ে অনেক মতভেদ । শোনা যায়, তিনি হিন্দু না মুসলমান সেটা স্পষ্টভাবে জানা যায়নি । তবে প্রচলিত লোক কাহিনী অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনা জেলার উলা গ্রামের (অনেকের মতে, নদীয়া জেলার প্রাচীন জনপদ উলা-বীরনগর) পান ক্ষেত থেকে একটি নবজাতক শিশুকে পাওয়া যায় । ক্ষেতের মালিক মহাদের বারুই ভগবানের আশীর্বাদ ভেবে তাঁকে লালন-পালন শুরু করেন । আউলচাঁদের পুরানো নাম পূর্ণচন্দ্র । সংস্কৃত ভাষা শেখানোর জন্য তাঁকে পাঠানো হয় সে-সময়কার বিখ্যাত বৈষ্ণবাচার্য হরিহরের কাছে । বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পূর্ণচন্দ্র নানা জায়গায় ঘুরে বেড়ান এবং নানাভাবে শিক্ষালাভ করেন । শেষ পর্যন্ত তিনি সিদ্ধিলাভ করেন । তাঁর নতুন নাম হয় ফকিরচাঁদ বা আউলচাঁদ । বড় হয়ে আউলচাঁদ গৃহত্যাগ করেন । বহু দেশ ঘোরার পর নদীয়া জেলার ঘোষপাড়ায় রামশরণ পাল নামে এক ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি তাঁকে আশ্রয় দেন । আউল চাঁদের ২২জন শিষ্যের মধ্যে অন্যতম শিষ্য রামশরণ পাল । ২২জনের মধ্যে রামশরণ পাল আউলচাঁদের মৃত্যর পর গুরুপদ প্রাপ্ত হন । যারজন্য তাঁর নেতৃত্বে পশ্চিম বঙ্গের নদীয়া জেলার ঘোষপাড়ায় প্রতিষ্ঠা করেন কর্তাভজা ধর্মের অন্যতম পীঠস্থান, যা পরবর্তী সময়ে সতী মায়ের মন্দির নামে সবার কাছে পরিচিত । রামশরণ পালের স্ত্রীর নাম সরস্বতী, যার নামেই এই মন্দির—-সতী মায়ের মন্দির । কথিত আছে, সরস্বতী’র প্রথম অক্ষর “স” আর শেষ অক্ষর “তী” অনুসারে সতী । আউলচাঁদের শিষ্য রামশরণ পাল গুরুর ভাবাদর্শকে ভিত্তি করে কর্তাভজা সম্প্রদায় গড়ে তোলেন । এইজন্য ভক্তের নিকট তিনি “কর্তা” এবং তাঁর স্ত্রী সরস্বতী দেবী “কর্তামা” নামে অভিহিত । রামশরণ পালের পর সরস্বতী দেবী এই সম্প্রদায়কে নেতৃত্ব দেন । রামশরণ পালের স্ত্রী কর্তাভজা সম্প্রদায়কে দিশা দেখান । রামশরণের স্ত্রী সরস্বতী দেবী ছিলেন অতীব ধর্মপরায়ণা । শোনা যায়, আউলচাঁদ হিম সাগরের জল ও ডালিম গাছের তলার মাটির সাহায্যে সরস্বতী দেবীকে অলৌকিক উপায়ে মৃত্যের হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন । আরও শোনা যায়, আউলচাঁদ নাকি রামশরণ পাল ও সরস্বতী দেবীর সন্তান হয়ে পরবর্তীতে জন্ম নেন “দুলাল চাঁদ” নামে । দুলাল চাঁদ (১৭৭৬-১৮৩৩) কর্তাভজা সম্প্রদায়কে সাংগঠনিক রূপ দেন । তিনি বহু পদ রচনা করে কর্তাভজা ধর্মমতকে একটা তাত্ত্বিক কাঠামোর উপর প্রতিষ্ঠিত করেন । পদগুলি ভাব-গীত-রূপে ভক্তদের নিকট সমাদৃত । কর্তাভজারা কোনো জাতিভেদ মানেন না । তাঁরা লোভ-মোহ-কাম-ক্রোধকে নৈতিক পাপ বলে মনে করেন । সত্‍ পথে থেকে এবং মিথ্যা কথা পরিহার করে নৈতিকভাবে ধর্মকর্ম করা তাঁদের প্রধান লক্ষ্য । তাঁর সময়ে কর্তাভজা সম্প্রদায়ের খ্যাতি বহুদূর পর্যন্ত গড়ায় । মাত্র ৪৮ বছর বয়সে দুলাল চাঁদের মৃত্যু হয় । এরপর তাঁর মা অর্থাত্‍ সরস্বতী দেবী কর্তা মা বা সতীমা নামে খ্যাতিলাভ করেন ।
নদীয়া জেলার ঘোষপাড়ার রামশরণ পালের আদি ভিটেটুকু ভক্তদের কাছে অতি পবিত্র । ভিটের পাশেই ডালিম গাছ । এই গাছের নীচে যেহেতু সতীমা সিদ্ধিলাভ করেছিলেন সেইজন্য ভক্তরা ডালিম গাছের ডালে ঢিল বেঁধে মানত করেন । মনস্কামনা পূরণ হওয়ার আশায় । বাতাসা, কদমা, চিড়ে, মুড়কি দিয়ে নৈবেদ্য সাজিয়ে ভক্তদের সতীমাকে পুজো দেওয়ার রীতি । আজও সেই ট্রাডিশন অব্যাহত ।
জনশ্রুতি, শেষ বয়সে সরস্বতী দেবী সন্তানহারা হলে দোলপূর্ণিমার দিন গুরু পুজার আয়োজন করেন । সেই থেকে দোল পূর্ণিমার সূচনা । হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে বিভিন্ন জায়গা থেকে বাউলেরা আসেন । তাই স্থানীয়ভাবে সতী মায়ের মেলাটা আউল-বাউলের মেলা বা আখড়া নামে পরিচিত ।
কর্তাভজা সম্প্রদায় মূর্তিপুজা এবং সকল প্রকার আনুষ্ঠানিক যাগযজ্ঞের বিরোধী । কর্তাভজা প্রচারক দুলাল চাঁদ রচিত ভাবের গীতে বলা হয়েছে– “মানুষ ভজ, মানুষ চিন্ত, মানুষ কর সার, সকলি মানুষের খেলা মানুষ বই নাই আর ।” কর্তাভজা সম্প্রদায়ের উল্লেখযোগ্য দিক হলো এখানে হিন্দু গুরুর মুসলমান শিষ্য যেমন আছেন, তেমনি আছেন মুসলমান গুরুর হিন্দু শিষ্য । এই সম্প্রদায়ে নারী পুরুষ নেতৃত্ব নিয়ে কোন প্রশ্ন তোলা হয় না । এই কারণে গুরুদেবের ভূমিকায় নারী পুরুষ উভয়কেই দেখা যায় । একই ভাবে তাঁরা বাউল সম্প্রদায়ের মতো জাতিভেদ প্রথা মানেন না । দুলাল চাঁদের ভাবের গীতে তাই বলা হচ্ছে– “ভেদ নাই মানুষে মানুষে, খেদ কেন ভাই এদেশে ।”
সম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায় কর্তাভজা সম্প্রদায়ে । এ-বিষয়ে কবি নবীন চন্দ্র সেনের বক্তব্য অত্যন্ত প্রনিধানযোগ্য । তাঁর মতে, “কর্তাভজা সম্প্রদায়ে কোনো জাতিভেদ নেই । সকলেই এক রন্ধনশালার পাক গ্রহণ করেন । ছোঁয়াছুয়ির দোষ এদের কাছে মুখ্য নয় । মানুষ সেবা তাঁদের মুখ্য বিবেচ্য বিষয় ।”
কর্তাভজাদের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো গুরুদেবের পুত্র অযোগ্য হলে তাঁরা তাকে গুরু নির্বাচন করতে চান না । তাঁদের নিয়মাবলী নামক ভাবের গীতে এই প্রসঙ্গে অভিমত ব্যক্ত করে বলা হয়েছে কর্তাভজা সম্প্রদায়ের সাধন ভজন সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখেন এমন ব্যক্তিই গুরুদেব হবার অধিকারী । এই জায়গায় কর্তাভজা সম্প্রদায় বর্ণবাদ এবং ব্রাহ্মণ্যবাদের কবল থেকে বেরিয়ে আসতে সমর্থ হয়েছেন ।
আজও কর্তাভজা সম্প্রদায়ের মধ্যে সতীমায়ের কৃপা পাওয়ার নিরিখে যথেষ্ট উন্মাদনা । তাঁদের মধ্যে সরল বিশ্বাস ও ভক্তি আজও উজ্জীবিত । যার জন্য দোল পূর্ণিমার দিন সতী মায়ের মেলায় হাজার হাজার ভক্তের সমাগম ঘটে । এদেশ ছাড়া বাংলাদেশ থেকেও মেলাপ্রাঙ্গনে অনেক মানুষের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো । বাউলদের সমারোহ আলাদা মাধুর্যে ভরপুর থাকে কল্যাণীর সতী মায়ের মেলা । (তথ্যসূত্র: সংগৃহীত) ।
কলমে: দিলীপ রায় (৯৪৩৩৪৬২৮৫৪)

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

বাসন্তী দেবী : ব্রিটিশ কারাগারে কারারুদ্ধ প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামী নারী।।।।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য নাম বাসন্তী দেবী। বাসন্তী দেবী ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিকন্যা। তিনি ছিলেন ব্রিটিশ কারাগারে কারারুদ্ধ প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামী নারী। বাসন্তী দেবী মন ও মানসিকতায় পৌরাণিক সতীনারীদের চারিত্রিক মহত্বটি যেমন অনুকরণীয় মনে করতেন; তেমনি গার্গী, মৈত্রেয়ীদের মতো চারিত্রিক দৃঢ়তায় বুদ্ধি দিয়ে আপন যুক্তি তুলে ধরার ক্ষমতাও রাখতেন।

এ-দুইয়ের মেলবন্ধনে তিনি অনন্যা।তিনি একাধারে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের পত্নী ও স্বাধীনতা আন্দোলনের সক্রিয় সংগ্রামী। সংগ্রামের জন্য কারাবরণ করেছেন। অন্দর ছেড়ে অবগুন্ঠণ ছেড়ে উপনিষদের বিদুষীদের মতো পুরুষের সমকক্ষ হয়ে সহকর্মী হয়ে দেশমুক্তির সাধনা করে গেছেন।
বাসন্তী দেবী ২৩ মার্চ ১৮৮০ সালে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম বরদানাথ হালদার ও মাতার নাম হরিসুন্দরী দেবী। তার পিতা ছিলেন আসামের বিজনি ও অভয়াপুরী এস্টেটের দেওয়ান। দশ বছর বয়েসে তিনি দার্জিলিংয়ের লরেটে কনভেন্টে শিক্ষার জন্যে ভর্তি হন। ১৮৯৬ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের সাথে বিবাহ হয়।
১৮৯৪ থেকে ১৯০১ সালের মধ্যে দুজনের তিনটি সন্তান জন্মগ্রহণ করেছিল। দেশবন্ধু ও তার তিন সন্তান- দুই কন্যা, অপর্ণা ও কল্যাণী ও একপুত্র চিররঞ্জন।
তার স্বামীর অনুসরণে, বাসন্তী দেবী আইন অমান্য আন্দোলন এবং খিলাফত আন্দোলনের মতো বিভিন্ন আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন এবং ১৯২০ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নাগপুর অধিবেশনেও অংশগ্রহণ করেছিলেন। পরের বছর, তিনি দাসের বোন ঊর্মিলা দেবী এবং সুনিতা দেবীর সাথে যোগ দেন। নারী কর্মীদের জন্য একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র “নারী কর্ম মন্দির” প্রতিষ্ঠা করুন। ১৯২০-২১ সালে, তিনি জলপাইগুড়ি থেকে তিলক স্বরাজ ফান্ডের জন্য স্বর্ণের অলঙ্কার এবং ২০০০ টি স্বর্ণমুদ্রা সংগ্রহে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিলেন।
১৯২১ সালে অসহযোগ আন্দোলনের সময়, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ধর্মঘট এবং বিদেশী পণ্য নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানায়। কলকাতায়, পাঁচজন স্বেচ্ছাসেবকের ছোট দলকে কলকাতার রাস্তায় খাদি, হাতে কাটা কাপড় বিক্রি করার জন্য নিযুক্ত করা হয়েছিল। দাস, যিনি স্থানীয় আন্দোলনের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন তার স্ত্রী বাসন্তী দেবীকে এমন একটি দলের নেতৃত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সুভাষ চন্দ্র বসুর সতর্কতা সত্ত্বেও দেবী রাস্তায় নেমেছিলেন যে এটি তাকে গ্রেফতার করতে ব্রিটিশদের উস্কে দেবে। যদিও তাকে মধ্যরাতে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, তার গ্রেপ্তার ব্যাপক আন্দোলনের প্রেরণা জুগিয়েছিল। কলকাতার দুটি কারাগার বিপ্লবী স্বেচ্ছাসেবকদের দ্বারা পূর্ণ ছিল এবং আরও সন্দেহভাজনদের আটক করার জন্য দ্রুত আটক শিবির তৈরি করা হয়েছিল। ১৯২১ সালের ১০ ডিসেম্বর পুলিশ দাস ও বসুকে গ্রেপ্তার করে।
দাসের গ্রেপ্তারের পর, বাসন্তী দেবী তার সাপ্তাহিক প্রকাশনা বাঙ্গালার কথা (বাংলার গল্প) এর দায়িত্ব নেন। তিনি ১৯২১-২২ সালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন। ১৯২২ সালের এপ্রিলে চট্টগ্রাম সম্মেলনে তার বক্তৃতার মাধ্যমে, তিনি তৃণমূল আন্দোলনকে উত্‍সাহিত করেছিলেন। ভারতের চারপাশে ভ্রমণ, তিনি ঔপনিবেশিকতার বিরোধিতা করার জন্য শিল্পের সাংস্কৃতিক বিকাশকে সমর্থন করেছিলেন।
দাস যেহেতু সুভাষ চন্দ্র বসুর রাজনৈতিক পরামর্শদাতা ছিলেন, বসন্তী দেবীর প্রতি বসন্তের খুব শ্রদ্ধা ছিল। ১৯২৫ সালে দাসের মৃত্যুর পর, বসু দেবীর সাথে তার ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক সন্দেহ নিয়ে আলোচনা করেছিলেন বলে জানা যায়। সুভাষ চন্দ্র বসুর ভ্রাতৃপ্রতিম ভাতিজি কৃষ্ণ বোস বাসন্তী দেবীকে তাঁর “দত্তক মা” এবং তাঁর জীবনের চারটি গুরুত্বপূর্ণ মহিলার একজন হিসাবে চিহ্নিত করেছিলেন, বাকি তিনজন হলেন তাঁর মা প্রভাবতী, তাঁর ভগ্নিপতি বিভাবতী (শেরতের স্ত্রী) চন্দ্র বসু) এবং তার স্ত্রী এমিলি শেঙ্কল।
তার স্বামীর মতো, বাসন্তী দেবীও ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের বিপ্লবী কর্মীদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। ১৯২৮ সালে, ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী লালা লাজপত রায় তার শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ মিছিলের বিরুদ্ধে পুলিশের লাঠিচার্জে আহত হওয়ার কয়েকদিন পর মারা যান। এর পর বাসন্তী দেবী লাজপত রায়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে ভারতীয় যুবকদের উদ্বুদ্ধ করেন।
১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার পর, বাসন্তী দেবী সামাজিক কাজ চালিয়ে যান। বাসন্তী দেবী কলেজ, কলকাতার প্রথম মহিলা কলেজ যা সরকারের অর্থায়নে ১৯৫৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং তার নামে নামকরণ করা হয়েছিল। ১৯৭৩ সালে, তিনি ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মবিভূষণে সম্মানিত হন।
বাসন্তী দেবী ৭ মে ১৯৭৪ মৃত্যুবরণ করেন।

।।তথ্য ঋণ : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবপেজ।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

স্মরণে প্রখ্যাত বাঙালি নজরুল সঙ্গীতশিল্পী ও নজরুলগীতি বিশেষজ্ঞা পূরবী দত্ত,ভারতীয় ।।।

পূরবী দত্ত ১৭ মার্চ ১৯৪২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন ভারতীয় গায়িকা ছিলেন।  তিনি কলকাতায় থাকতেন এবং শুধুমাত্র বাংলা ভাষায় গান গেয়েছিলেন, প্রধানত নজরুলের গান গাওয়ার জন্য বিখ্যাত।
পূরবী দত্ত ছিলেন প্রখ্যাত শাস্ত্রীয় কণ্ঠশিল্পী বিভূতি দত্তের মেয়ে, তাই ছোটবেলা থেকেই বাড়িতে তার প্রশিক্ষণ শুরু হয়।  ১৯৪৬ সালে, মাত্র চার বছর বয়সে, তিনি চেতলা মুরারি স্মৃতি সঙ্গীত সম্মিলনী আয়োজিত সর্বভারতীয় সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন যেখানে তিনি তার গানের জন্য রৌপ্য ট্রফি জিতেছিলেন।
পূরবী দত্ত শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পী হলেও তিনি মূলত নজরুল গান গাওয়ার জন্য বিখ্যাত।  তার প্রথম দিনগুলিতে তিনি কলকাতায় অল ইন্ডিয়া রেডিওর বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সাথে যুক্ত ছিলেন এবং তার সঙ্গীত জীবনের বেশিরভাগ অংশ সেখানে রেকর্ড করা হয়েছিল।

যার অধিকাংশই ছিল নজরুলের গান।1950 এবং 60 এর দশকে, তিনি অল ইন্ডিয়া রেডিওর সাথে যুক্ত ছিলেন এবং বিভিন্ন প্রোগ্রামে গান গেয়েছিলেন।  তিনি সারাজীবন নজরুল গীতির প্রশিক্ষণে নিঃস্বার্থভাবে আত্মনিয়োগ করেছেন।  বহু বছর ধরে তিনি গড়িয়াহাটের “বাণীচক্র” এবং পরে “বেঙ্গল মিউজিক কলেজ” এর সাথে যুক্ত ছিলেন।  যেখানে তিনি হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, চিন্ময় চট্টোপাধ্যায় এবং অখিলবন্ধু ঘোষের সাথে পড়াশোনা করেছেন।  তিনি পণ্ডিত জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ, বিমান মুখোপাধ্যায়, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, অধীর বাগচী এবং বাংলার অন্যান্য বিশিষ্ট শিল্পী ও গায়কদের খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন।
নজরুল গীতি নিয়ে পূরবী দত্তের অ্যালবামগুলি খুব জনপ্রিয় হয়েছিল।  নিচে কিছু অ্যালবামের শিরোনাম উল্লেখ করা হলো——
১৯৭৪ কাজী নজরুলের গান – সারেগামা, ১৯৭৫ কাজী নজরুলের গান – সারেগামা, ১৯৮০ ভ্যালেন্টাইন স্পেশাল – বাংলা রোম্যান্টিক নজরুলগীতি, ১৯৮২ হালুদ গন্দর ফুল, ২০১৪ ছাড় ছাড় আঁচল, ২০১৪ ঝুম ঝুম ঝুমরা নাচতে, ২০১৪ শিউলি তোলে ভোরবেলা – আইএনআরইসিও।
প্রায় দেড় বছর নিজেকে সবার থেকে দূরে রাখার পর, ২০০৪ সালের এপ্রিল মাসে পূরবী দত্ত বাংলা সঙ্গীত মেলার মঞ্চে আবার আত্মপ্রকাশ করেন।  তিনি দুটি গান গেয়েছিলেন:”মনে পরে আজ সে কোন জনমে” এবং তার পর “নিরন্ধ্র মেঘে মেঘে অন্ধ গগন।”
তিনি তার গড়িয়াহাটের বাড়ি থেকে চলে আসার পর এই বাড়িতে থাকতেন, জীবনের শেষ দিন অবধি। তার সোনারপুরের বাড়িতে  ১ ডিসেম্বর ২০১৩ সালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

কল্পনা চাওলা : ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রথম নারী মহাকাশচারী।।।

সূচনা- ২০০৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ফেরার পথে ঘটে যায় দুর্ঘটনা। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল পর্যন্ত পৌঁছেও গেছিল তাঁদের মহাকাশযান। আর কয়েক মিনিটেই হয়তো ছুঁয়ে ফেলতেন পৃথিবীর মাটি। তখনই টেক্সাসের উপরে টুকরো টুকরো হয়ে যায় গোটা মহাকাশযান। কলম্বিয়া নভোযান বিপর্যয়ে যে সাতজন মহাকাশচারী এবং ক্রু মৃত্যুবরণ করেন তাদের মধ্যে তিনি একজন।

পৃথিবীতে অবতরণ করতে গিয়ে বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে সংঘর্ষে এই নভোখেয়াযানটি বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছিল।
প্রাথমিক জীবন-
কল্পনা চাওলা ১৪৬৮খ্রিষ্টাব্দের ১৭ মার্চ ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের কারনালে বসবাসকারী এক হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। কল্পনা তার মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপন করেন ঠাকুর বালনিকেতন সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুল, কারনাল থেকে। এর পরে ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি চণ্ডীগড়ের পাঞ্জাব প্রকৌশল কলেজ থেকে মহাকাশ প্রকৌশলের ওপর স্নাতকের পাঠ সম্পন্ন করেন। উচ্চশিক্ষার জন্যে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান এবং সেখানে ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস অ্যাট আর্লিংটন থেকে একই মহাকাশ প্রকৌশল বিষয়ে স্নাতকোত্তর শিক্ষা সমাপ্ত করেন ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে। পরবর্তীতে কল্পনা ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে ইউনিভার্সিটি অফ কলোরাডো অ্যাট বউল্ডের থেকে পিএইচডি ডিগ্রি প্রাপ্ত হন।
আরও চার বছর পরে, ১৯৮৮ সালে নাসায় যোগ দেন।কয়েক বছরেই স্বীকৃত পাইলট হয়ে ওঠেন কল্পনা। পরে নাসা রিসার্চ সেন্টারে ওভারসেট মেথডসের ভাইস প্রেসিডেন্টও হন। বাণিজ্যিক উড়ান চালানোর অনুমোদন ছিল তাঁর। সামুদ্রিক বিমান এবং মাল্টি-ইঞ্জিনের প্লেন চালানোরও লাইসেন্স ছিল তাঁর। পরে ফ্লাইট ইনস্ট্রাকটরও হয়েছিলেন তিনি।
এর মধ্যেই বিয়ে করেন মার্কিন লেখক জাঁ-পিয়ের হ্যারিসনকে। সে সুবাধে ১৯৯১ সালে মার্কিন নাগরিকত্ব পেলে নাসার অ্যাস্ট্রোনট কোরের সদস্য স্বীকৃতি পান কল্পনা।
কর্ম জীবন-
১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দে কল্পনা নাসাতে তার কর্মজীবন শুরুর পর
১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ নভেম্বর পাড়ি দেন প্রথম মহাকাশ অভিযানে। মহাকাশযান কলম্বিয়া এসটিএস ৮৭-তে মিশন বিশেষজ্ঞ হিসেবে ৩৭২ ঘণ্টা মহাকাশে কাটান তিনি। পৃথিবীর কক্ষপথে ২৫২ বার পরিক্রমা করেন। ১০০ লক্ষ মাইলেরও বেশি ভ্রমণ করেন মহাকাশে। তিনিই প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসেবে এই কৃতিত্ব অর্জন করেন।
২০০০ সালে কলম্বিয়া এসটিএস ১০৭-এর মহাকাশ অভিযানে ফের মহাকাশে যাওয়ার সুযোগ পান কল্পনা। নানা কারণে পিছিয়ে যাওয়ায় শেষমেশ ২০০৩ সালের ১৬ জানুয়ারি মহাকাশযাত্রা করেন কল্পনারা। তিনি ছাড়াও আরও ছয় মহাকাশচারী ছিলেন ওই অভিযানে।
মৃত্যু–
পৃথিবীর মাটি ছুঁতে বাকি ছিল মাত্র কয়েক মিনিট। তখনই মুহূর্তের বিস্ফোরণে ছাই হয়ে যায় মহাকাশযান। আর তার ভিতরেই অনন্ত সম্ভাবনা নিয়ে শেষ হয়ে যান ভারতের প্রথম মহিলা মহাকাশচারী কল্পনা চাওলা। সারা পৃথিবী তাঁকে এই নামে চিনলেও, তিনি ছিলেন বাবা-মায়ের আদরের মন্টো। মাত্র ৪২ বছরে শেষ হয়ে যায় তাঁর জীবন। ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দের ১ ফেব্রুয়ারি মহাকাশ থেকে প্রত্যাবর্তনের সময় কলম্বিয়া স্পেস সাটলটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সময় এক দুর্ঘটনার ফলে সাত জন ক্রুসহ বিধ্বস্ত হয় এবং কল্পনা সহ সকলে মারা যান।
শেষ ইচ্ছে-
ইন্দো-মার্কিন এই সাহসিনীর শেষ ইচ্ছে ছিল, মৃত্যুর পর তাঁর দেহভস্ম যেন হিমালয়ের বুকে বা জিওন ন্যাশনাল পার্কে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। মেয়ের ইচ্ছে পূর্ণ করেছিলেন বাবা।কল্পনা চাওলার দেহাবশেষ তাঁর ইচ্ছানুসারে উটাহের জাতীয় উদ্যানে দাহ করা হয়েছিল ও অস্থিভষ্ম ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।
সম্মাননা–
তাঁর সম্মানে, ২০০২ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ভারতে প্রবর্তিত মেট-স্যাট সিরিজের প্রথম উপগ্রহ মেটস্যাট -১ নামকরণ করা হয়েছিল কল্পনা -১।
তাঁর সম্মানে ভারত ও আমেরিকার বেশ কয়েকটি বৃত্তি, রাস্তা, বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠান নামকরণ করা হয়েছে।
উপসংহার-
সৌরজগতের নাগরিক হিসেবে নিজের পরিচয় দেওয়া কল্পনার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছিল ভারত জুড়ে। আজও ভারতের মহাকাশ চর্চায় তাঁর অবদান ভোলেননি কেউ।
সংক্ষেপে জেনে নিন কল্পনা চাওলা সম্পর্কে কয়েকটি তথ্য।
১) কল্পনার জন্ম হয় ১৯৬২ সালের ১৭ মার্চ হরিয়ানার কার্নালে।
২) কল্পনা চাওলা বি টেক পাশ করেন পাঞ্জাব ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে। কোনওদিন তিনি ক্লাশে সর্বোচ্চ নম্বর পাননি। কিন্তু বরাবর থাকতেন প্রথম পাঁচে।
৩) ১৯৮২ তে তিনি চলে যান আমেরিকায়। টেক্সাস ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করেন।
৪) কল্পনার বাবা-মা তাঁর নাম দিয়েছিলেন মন্টো। কিন্তু তিনি মন্টো নামটা নিজের ডাক নামই বানিয়ে ফেলেন।
৫) ১৯৮৩ সালে বিয়ে করেন কল্পনা। তাঁর বরের নাম জিন পিয়েরে হ্যারিসন।
৬) কল্পনা চাওলা পছন্দ করতেন, কবিতা, নাচ, এবং সাইকেল চালাতে।
৭) তাঁর স্বপ্নই ছিল মহাকাশে যাওয়ার। সেই অনুযায়ী তিনি ধাপে ধাপে পড়াশোনা করতে থাকেন।
৮) নাসা রিসার্চ সেন্টারে তিনি ওভারেস্ট মেথডের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
৯) কল্পনা চাওলার কমার্শিয়াল ফ্লাইট চালানোর লাইসেন্সও ছিল।
১০) ১৯৯১ সালে কল্পনা চাওলা আমেরিকার নাগরিকত্ব পান।
১১) নাসা স্পেস ফ্লাইট মেডেল পান তিনি।
১২) ২০০৩ সালের আজকের দিনেই তিনি কলম্বিয়া স্পেস শাটল ধ্বংসের সময় মারা যান।
১৩) কল্পনা বিশ্বাস করতেন না তিনি কোনও দেশের নাগরিক। তিনি বিশ্বাস করতেন তিনি সৌরজগতের নাগরিক।

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

স্মরণে প্রতিভাময়ী অপেশাদার ভারতীয় মঞ্চশিল্পী কেয়া চক্রবর্তী।।।

কেয়া চক্রবর্তী ছিলেন একজন প্রতিভাময়ী অপেশাদার ভারতীয় মঞ্চ অভিনেতা।  কেয়া চক্রবর্তী ১৯৪২ সালের ৫ আগস্ট উত্তর কলকাতার একটি বনেদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।  বাবার নাম অজিত চক্রবর্তী।  তবে ছোটবেলা থেকেই তিনি মায়ের কাছে মানুষ হন।  তিনি স্কটিশ চার্চ কলেজের একজন ভালো ছাত্রী ছিলেন।  ইংরেজিতে এমএ পাস করার পর ওই কলেজে শিক্ষকতা শুরু করেন। ‘আন্তিগোনে’ নাটকে নাম ভূমিকায় অভিনয় করে পশ্চিমবঙ্গ সাংবাদিক অ্যাসোসিয়েশনের ‘শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী’ র পুরস্কার পান।
অভিনয় জীবন———
অভিনয় করতে ভালোবাসতেন কেয়া।  স্কটিশ চার্চ কলেজের ছাত্র থাকাকালীন, ইংরেজি ১৯৫৮, ১৯৫৯, ১৯৬০ সালে আন্তঃকলেজ নাটক প্রতিযোগিতায় সেরা অভিনয়ের জন্য পুরস্কার জিতেছিল।

আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় যুব উৎসবের জন্য দিল্লি এবং মহীশূরে আমন্ত্রিত হয়েছিল।  যাইহোক, তিনি নান্দীকার গ্রুপের প্রযোজিত নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে বাংলা মঞ্চে একজন কিংবদন্তি অভিনেত্রী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।  ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে ‘চার অধ্যায়’ নাটকে প্রথম অভিনয়।  এরপর ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে নিয়মিত অভিনয়।  ‘তিনের পয়সার পালা’ ছবিতে অভিনয়ের পর তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে।  ব্রেখটের ‘ভালো মানুষ’ নাটকের বাংলা সংস্করণে তাঁর দ্বৈত-চরিত্রের অভিনয় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
নান্দীকার এ অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়, রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত ও কেয়া চক্রবর্তী একসাথে অভিনয় একটা স্বর্ণযুগ ছিল । এর পর ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে কলেজের অধ্যাপনা ছেড়ে বিনা বেতনে নান্দীকারের সর্বক্ষণের কর্মী হন।  তার শেষ অভিনীত নাটক ‘ফুটবল’।
কেয়া চক্রবর্তী একজন ভালো অনুবাদক ছিলেন।  অভিনয়ের জন্য বার্নার্ড শ’র নাটক ‘সেন্ট জোয়ান’ অনুবাদ করেছেন।  মাঝে মাঝে টাকার জন্য সিনেমায় অভিনয় করলেও তার আসল ক্ষেত্র ছিল নাটক।  তিনি নাট্যভাবনা নিয়ে কিছু প্রবন্ধ লিখেছেন।
কেয়া চক্রবর্তীর মঞ্চাভিনয় (১৯৬১ – ১৯৭৭ )
নাটক /তাভিনয় সংখ্যা
অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায়:
নটি বিনােদিনী ,  আলাের বাইরে , মূদ্রারাক্ষস , বৃত্ত , বীতংস, অগ্নিবিষয়ক সতর্কতা ও গৌতম ,  হে সময়, উত্তাল সময়, শাহী বাদ ,   নাট্যকারের সন্ধানে দুটি চরিত্র , শের আফগান ,  মঞ্জরী আমের মঞ্জরী , তিন পয়সার পালা,  ভালােমানুষ , নীলিমা , চার অধ্যায় , রাত্রি প্রভৃতি।
রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তর পরিচালনায়—
আন্তিগােনে , ফুটবল,  টক ।
অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায়—- পূর্বরাগ।
শম্ভূ মিত্রের পরিচালনায় ——রক্তকরবী ।
শ্যামানন্দ জালানের পরিচালনায় —–তুঘলক।

মৃত্যু——–

তাঁর মৃতু ছিল মর্মান্তিক ।  সাঁকরাইলে গঙ্গার ওপর ‘জীবন যে রকম’ চলচ্চিত্রের বহিদৃর্শ্য গ্রহণের সময় (শুটিংয়ের সময়) অভিনয় করতে গিয়ে জলে ডুবে তার মৃত্যু ঘটে ১২ মার্চ,  ১৯৭৭৭ খ্রিস্টাব্দে।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

স্মরণে, বিংশ শতাব্দী বাংলা গানের কিংবদন্তি গায়িকা – উৎপলা সেন।।।

উৎপলা সেন ১২ মার্চ, ১৯২৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন বিংশ শতাব্দী বাংলা গানের একজন প্রধান জনপ্রিয় গায়িকা। বাংলা গানের স্বর্ণযুগে প্রেম ও বিরহের গানে তিনি আলাদা বিষণ্ণ সুর তুলে ধরেছেন। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, স্বামী সতীনাথ মুখোপাধ্যায় এবং অন্যান্য গায়কদের সাথে অনেক জনপ্রিয় দ্বৈত গানও গেয়েছেন।
তিনি প্রথমে মা হিরণবালা দেবীর কাছে প্রশিক্ষণ নেন, তারপর ওস্তাদ গুল মোহাম্মদ খানের কাছে।  তিনি ১৯৩৫ সালে ১৯১৩ বছর বয়সে ঢাকা বেতারে প্রথম জনসম্মুখে উপস্থিত হন।  প্রথম রেকর্ড ১৯৩৯ সালে। ১৯৪১ সালে, সুরকার সুধীরলাল চক্রবর্তীর সুর করা এক হাতে মোর পূজা থালি গানটি খুব জনপ্রিয় হয়েছিল।  মহিষাসুরবমর্দিনীর – শান্তি দিল ভরি গানে  আরও জনপ্রিয়তা পান, যা আজও শোনা যায়।

এর পর তিনি
চল্লিশের দশকের গোড়ার দিকে কলকাতায় চলে আসেন এবং তখন থেকেই আকাশবাণীর সঙ্গে যুক্ত হন।  বাংলা চলচ্চিত্রেও গান গেয়েছেন আনেক। বেনু সেনের সাথে প্রথম বিয়ে হয় তাঁ। কিন্তু স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি সঙ্গীত সহকর্মী সতীনাথ মুখোপাধ্যায় কে ১৯৬৮ সালে বিয়ে করেন।  একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়।
তাঁর ৬০০০ এর বেশি সিনেমা এবং রেকর্ডের গানের অধিকাংশই আজ বিস্মৃতপ্রায়। ইদানীং কালে দুই বাঙলাতেই পুরানো দিনের গানের চর্চা বাড়ছে – কিছু গান ‘পুনঃনির্মাণ’ মাধ্যমে আবার শোনা যাচ্ছে – এবং উৎপলা সেনের নাম আবার জনসমক্ষে শোনা যাচ্ছে। তাঁর কিছু জনপ্রিয় গান হলো যেমন, এত মেঘ এত যে আলো, ময়ুরপঙ্ক্ষী ভেসে যায়, পাখি আজ কোন সুরে গায় বা ঝিকমিক জোনাকির দ্বীপ জ্বলে শিয়রে।
দীর্ঘ কয়েক বছর ক্যান্সারাক্রান্ত উৎপলা সেন ১৩ মে, ২০০৫ সালে মারা যান কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

আশির দশক থেকেই সাড়া জাগানো জনপ্রিয়তার অধিকারিণী লেখিকা বাণী বসু, জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি।।।

বাণী বসু একজন সমসাময়িক ভারতীয় বাঙালি লেখিকা – উপন্যাস, প্রবন্ধ, কবিতা লেখেন, অনুবাদও করেন। বাণী বসু আশির দশক থেকে একাধিক সাহিত্য পুরস্কার ও সম্মানে সম্মানিত।  তিনি ১১ মার্চ, ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন।  তিনি বিজয় কৃষ্ণ গার্লস কলেজের ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক ছিলেন।  ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক  করার পর, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম.এ.  করেন।  শিক্ষার প্রথম স্থান ছিল লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ, কলকাতা এবং তারপরে স্কটিশ চার্চ কলেজ।
ছাত্রী জীবন থেকেই বাণী বসু নানা প্রবন্ধ, অনুবাদ গল্প ও কবিতা রচনায় পারদর্শিতার নজির রাখেন। ১৯৮১তে তার প্রথম গল্প আনন্দমেলা ও দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ।

শারদীয়া আনন্দলোকে ১৯৮৭তে তাঁর  প্রথম উপন্যাস জন্মভূমি মাতৃভূমি প্রকাশিত হয় । কিন্তু তার আগেই তার অনেক অনুবাদ প্রকাশিত ও আদৃত হয়েছে। তাঁর উল্লেখ্য অনুবাদগুলি হলঃ শ্রী অরবিন্দের সনেটগুচ্ছ, সমারসেট মমের সেরা প্রেমের গল্প  ও এইচ ডি লরেন্সের সেরা গল্প।
রচিত উপন্যাস——–
তাঁর রচিত উপন্যাস গুলি হলো – উত্তরসাধক, পঞ্চম পুরুষ, বাইরে, অন্তর্ঘাত, কিনার থেকে কিনারে, মেয়েলি আড্ডার হালচাল, রাধানগর, দিদিমাসির জিন, জন্মভূমি মাতৃভূমি, মৈত্রেয় জাতক, অমৃতা, নূহর নৌকা, সুরূপা কুরূপা, অষ্টম গর্ভ, অষ্টম গর্ভ (দ্বিতীয়), খনামিহিরের ঢিপি, ক্ষত্তা, কালিন্দী, কৃষ্ণ, পাঞ্চাল কন্যা কৃষ্ণা, সুযোদন দূর্যোধন, কৃষ্ণ বাসুদেব, কাক জ্যোৎস্না, অল লেডিস ভ্রমণ, একুশে পা, ট্রেকার্স, অশ্বযোনি, ফেরো মন।
পুরস্কার ও সম্মাননা——–
তারাশঙ্কর পুরস্কার (১৯৯১);  আনন্দ পুরস্কার – (মৈত্রেয় জাতক): ১৯৯৭ ; বঙ্কিম পুরস্কার ( ১৯৯৯);  ভুবনমোহিনী দাসী স্বর্ণপদক (২০০৮), কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার – (খনামিহিরের ঢিপি): ২০১০।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This