Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

তারা সুন্দরী :: বাংলা মঞ্চের এক অমর কিংবদন্তির গল্প।।।

তারা সুন্দরী, একজন খ্যাতনামা বাঙালি মঞ্চ অভিনেত্রী, গায়িকা এবং নৃত্যশিল্পী, থিয়েটারের জগতে একটি অমোঘ ছাপ রেখে গেছেন। ১৮৭৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন, মঞ্চে তার যাত্রা শুরু হয় সাত বছর বয়সে। স্টার থিয়েটারে “চৈতন্য লীলা” নাটকে একটি ছেলের চরিত্রে তার আত্মপ্রকাশ ঘটে। এই প্রথম দিকের সূচনা হয়েছিল বিনোদিনী দাসীর পৃষ্ঠপোষকতায়, বাংলা থিয়েটারের একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব, যা একটি উজ্জ্বল কর্মজীবনের সূচনা করে।

তেরো বছর বয়সে, তারা সুন্দরী ইতিমধ্যে “চৈতন্য লীলা” এবং গোপীতে চৈতন্যের ভূমিকা সহ উল্লেখযোগ্য চরিত্রগুলি চিত্রিত করেছিলেন। তার অভিনয়গুলি কেবল অভিনয় নয় বরং তিনি যে চরিত্রগুলি অভিনয় করেছিলেন তার একটি মূর্ত প্রতীক, তার অতুলনীয় অভিনয় দক্ষতার জন্য তিনি নাট্যসমরাগিনী উপাধি অর্জন করেছিলেন। ১৮৯৪ সালে “চন্দ্রশেখর” নাটকে তার সবচেয়ে প্রশংসিত ভূমিকাগুলির মধ্যে একটি ছিল শৈবালিনী, যা তাকে ব্যাপক খ্যাতি এনে দেয়।
১৮৯৭ সালে, তিনি অমরেন্দ্রনাথ দত্তের নেতৃত্বে ক্লাসিক থিয়েটারে যোগ দেন এবং এর প্রধান অভিনেত্রী হন। এই পরিবর্তনটি তার কর্মজীবনে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, যা তাকে অমৃতলাল মিত্রের কাছ থেকে প্রাথমিক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি দত্তের নির্দেশনায় তার অভিনয় দক্ষতা পরিমার্জিত করার সুযোগ দিয়েছিল। তার নৈপুণ্যের প্রতি তারা সুন্দরীর নিবেদন তাকে অসংখ্য নাটকে অভিনয় করতে দেখেছিল, ১৯২২ সাল পর্যন্ত তার অভিনয় দিয়ে দর্শকদের মোহিত করেছিল।
যাইহোক, ১৯২২ সালে তার ছেলের মৃত্যুর সাথে একটি ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডির পরে, তারা সুন্দরী মঞ্চ থেকে অবসর নেন এবং একটি আশ্রমে ধর্মীয় কার্যকলাপে জড়িত থাকার জন্য ভুবনেশ্বরে চলে যান। বাংলা থিয়েটারের একজন অকুতোভয় গিরিশ চন্দ্র ঘোষ তাকে ফিরে আসতে রাজি না করা পর্যন্ত তিনি কলকাতার মঞ্চে ফিরে আসেন। অবসর থেকে বেরিয়ে আসার পর তার প্রথম ভূমিকা ছিল “দুর্গেশনন্দিনী” নাটকে।
উল্লেখযোগ্য মঞ্চনাটক—
চৈতন্য লীলা, সরলা, চন্দ্রশেখর, দুর্গেশনন্দিনী,হরিশচন্দ্র, রিজিয়া, বলিদান, জানা, শ্রী দুর্গা।
বাংলা মঞ্চে তারা সুন্দরীর অবদান ছিল গভীর। তিনি বাংলা মঞ্চ নাটকের প্রথম দিকে শিশির কুমার ভাদুড়ির মতো উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্বের সাথে কাজ করেছেন, থিয়েটারে শ্রেষ্ঠত্বের উত্তরাধিকার রেখে গেছেন। তারা সুন্দরী ১৯ এপ্রিল ১৯৪৮ সালে মারা যান, কিন্তু বাংলা থিয়েটারে একজন অগ্রগামী ব্যক্তিত্ব হিসাবে তার উত্তরাধিকার প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

স্মরণে ভারতীয় রাজনৈতিক কর্মী এবং মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর স্ত্রী – কস্তুরবা গান্ধী।।।

কস্তুরবাঈ “কস্তুরবা” মোহনদাস গান্ধী ( ছিলেন একজন ভারতীয় রাজনৈতিক কর্মী এবং মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর স্ত্রী। তিনি তার স্বামী এবং সন্তানের সঙ্গে ব্রিটিশ শাসিত ভারতে স্বাধীনতা আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। তিনি তার স্বামী মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী অথবা মহাত্মা গান্ধী দ্বারা অত্যন্ত প্রভাবিত হয়েছিলেন।

কস্তুরবা ১১ এপ্রিল, ১৮৬৯ সালে গোকুলদাস কাপাডিয়া এবং ব্রজকুনওয়ারবা কাপাডিয়ার কন্যা হিসাবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। পরিবারটি গুজরাটি হিন্দু ব্যবসায়ীদের মোধবনিয়া বর্ণের অন্তর্গত এবং পোরবন্দরের উপকূলীয় শহরে অবস্থিত ছিল।
তিনি একজন ভারতীয় রাজনৈতিক কর্মী ছিলেন। তিনি ১৮৮৩ সালে মোহনদাস গান্ধীকে বিয়ে করেন এবং তাঁর দ্বারা খুব প্রভাবিত হন।
কস্তুরবা গান্ধী প্রথম ১৯০৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার রাজনীতির সাথে নিজেকে জড়িত করেন যখন, তার স্বামী এবং অন্যদের সাথে, তিনি ডারবানের কাছে ফিনিক্স সেটেলমেন্ট প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯১৩ সালে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় ভারতীয় অভিবাসীদের সাথে খারাপ আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে অংশ নিয়েছিলেন।
কস্তুরবা এবং গান্ধী ১৯১৪ সালের জুলাই মাসে দক্ষিণ আফ্রিকা ত্যাগ করেন এবং ভারতে বসবাস করতে ফিরে আসেন। কস্তুরবার দীর্ঘস্থায়ী ব্রঙ্কাইটিস থাকা সত্ত্বেও, তিনি ভারত জুড়ে নাগরিক ক্রিয়াকলাপ এবং প্রতিবাদে অংশ নেওয়া অব্যাহত রেখেছিলেন এবং প্রায়শই তার স্বামীর স্থান নিয়েছিলেন যখন তিনি কারাগারে ছিলেন। তার সময়ের বড় অংশ আশ্রমে সেবা করার জন্য নিবেদিত ছিল। এখানে, কস্তুরবাকে “বা” বা মা হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে, কারণ তিনি ভারতে আশ্রমের মা হিসাবে কাজ করেছিলেন।
১৯১৭ সালে, কস্তুরবা বিহারের চম্পারণে মহিলাদের কল্যাণে কাজ করেছিলেন যেখানে গান্ধী নীল চাষীদের সাথে কাজ করছিলেন। ১৯২২ সালে, তিনি গুজরাটের বোরসাদে একটি সত্যাগ্রহ (অহিংস প্রতিরোধ) আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন যদিও তার স্বাস্থ্য খারাপ ছিল। তিনি অনেক আইন অমান্য অভিযান এবং মিছিলে অংশ নিতে থাকেন। ফলস্বরূপ, তিনি বহুবার গ্রেপ্তার এবং জেলে ছিলেন।
১৯৪৪ সালের জানুয়ারিতে, কস্তুরবাজি দুটি হৃদরোগে আক্রান্ত হন যার পরে তিনি বেশিরভাগ সময় তার বিছানায় সীমাবদ্ধ ছিলেন। স্বাস্থ্যের অবনতির কারণে, ২২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৪ তারিখে সন্ধ্যা 7:35 মিনিটে, তিনি ৭৪ বছর বয়সে পুনার আগা খান প্যালেসে মারা যান।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

স্মরণে কিংবদন্তি অভিনেত্রী সুচিত্রা সেন, বাংলা ছবির দর্শকের হৃদয়ে যিনি আজও অম্লান।।।

জন্ম পরিচয়-সুচিত্রা সেন একজন ভারতীয় অভিনেত্রী ছিলেন। ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দের ৬ই এপ্রিল ব্রিটিশ ভারতের বাংলা প্রেসিডেন্সির (অধুনা বাংলাদেশের অন্তর্গত) পাবনা শহরের গোপালপুর মহল্লার হেমসাগর লেনে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা করুণাময় দাশগুপ্ত ছিলেন স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।

মায়ের নাম ইন্দিরা দেবী গৃহবধূ। সুচিত্রা ছিলেন পরিবারের পঞ্চম সন্তান ও তৃতীয় কন্যা। ডাক নাম রমা। তবে বাবা ডাকতেন কৃষ্ণা নামে। পাবনা শহরেই তিনি পড়াশোনা করেছিলেন। তিনি ছিলেন কবি রজনীকান্ত সেনের নাতনী।
তিনি মূলত বাংলা ও হিন্দি চলচ্চিত্রে অভিনয় করে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। বাংলা চলচ্চিত্রে উত্তম কুমারের বিপরীতে নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করে তিনি বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন।

শিক্ষা জীবন-
পাবনা শহরের মহাখালী পাঠশালার পাঠ শেষ করে, তিনি পাবনা গার্লস স্কুলে ভর্তি হন। এই স্কুলে তিনি দশম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। পাক-ভারত বিভাজনের সময় এঁদের পুরো পরিবার কলকাতায় চলে যান।
বৈবাহিক জীবন-
১৯৪৭ সালে বিশিষ্ট শিল্পপতি আদিনাথ সেনের পুত্র দিবানাথ সেনের সঙ্গে সুচিত্রা সেনের বিয়ে হয়। তাদের একমাত্র কন্যা মুনমুন সেনও একজন খ্যাতনামা অভিনেত্রী।তার নাতনী রিয়া সেন ও রাইমা সেন ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।
অভিনয় জীবন-
১৯৫২ সালে সুচিত্রা সেন বাংলা চলচ্চিত্র জগতের সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৫২ সালে শেষ কোথায় ছবির মাধ্যমে তার চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু হয় কিন্তু ছবিটি মুক্তি পায়নি। সুচিত্রা সেনই বাংলা চলচ্চিত্রের প্রথম অভিনেত্রী, যিনি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব থেকে পুরস্কৃত হয়েছিলেন। ‘সাত পাকে বাঁধা’ ছবিতে অনবদ্য অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৬৩ সালে মস্কো চলচ্চিত্র উৎসব থেকে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পান তিনি। ১৯৫৫ সালের দেবদাস ছবির জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতেন, যা ছিল তার প্রথম হিন্দি ছবি। উত্তম কুমারের সাথে বাংলা ছবিতে রোমান্টিকতা সৃষ্টি করার জন্য তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের সবচেয়ে বিখ্যাত অভিনেত্রী। ১৯৬০ ও ১৯৭০ দশকে তার অভিনীত ছবি মুক্তি পেয়েছে। স্বামী মারা যাওয়ার পরও তিনি অভিনয় চালিয়ে গেছেন, যেমন হিন্দি ছবি আন্ধি। এই চলচ্চিত্রে তিনি একজন নেত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। বলা হয় যে চরিত্রটির প্রেরণা এসেছে ইন্দিরা গান্ধী থেকে। এই ছবির জন্য তিনি ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছিলেন এবং তার স্বামী চরিত্রে অভিনয় করা সঞ্জীব কুমার শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার জিতেছিলেন। হিন্দি চলচ্চিত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে প্রতিবছর দাদাসাহেব সম্মাননা প্রদান করে ভারত সরকার। চলচ্চিত্রের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ এ সম্মাননা নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন সুচিত্রা সেন। ২০০৫ সালে দাদাসাহেব সম্মাননা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তিনি। সম্মাননা নিতে কলকাতা থেকে দিল্লি যেতে চাননি বলেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি।
উত্তম-সুচিত্রা জুটি–
বাংলা চলচ্চিত্রের জগতে উত্তম-সুচিত্রা জুটিকে এখনো শ্রেষ্ঠ জুটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। একসময় কলকাতার চলচ্চিত্র পাড়ায় উত্তম-সুচিত্রা জুটি ছাড়া সে সময় কোনো ছবি ‘হিট’ হবে, এটা ভাবা নির্মাতারা ভাবতে পারতেন না। এক পর্যায়ে সাধারণ মানুষ ভাবতে শুরু করে, চলচ্চিত্রের মতো বাস্তবেও হয়তো তারা একই সম্পর্ক ধারণ করেন।দীর্ঘ ২৬ বৎসর অভিনয় জীবনে তিনি মোট ৬১টি ছবিতে অভিনয় করেন। এর ভিতরে ৩১টি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন উত্তম কুমারের বিপরীতে।
চলচ্চিত্রের তালিকা (বাংলা)-
দীপ জ্বেলে যাই (১৯৫৯), চাওয়া পাওয়া (১৯৫৯), হসপিটাল (১৯৬০), স্মৃতিটুকু থাক (১৯৬০)], সপ্তপদী (১৯৬১), সাথীহারা (১৯৬১), বিপাশা (১৯৬২), সাত-পাকে বাঁধা (১৯৬৩), উত্তর ফাল্গুনী(১৯৬৩) ( ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে হিন্দিতে পুনঃনির্মিত হয়েছে মমতা নামে), সন্ধ্যাদীপের শিখা(১৯৬৪), গৃহদাহ (১৯৬৭), কমললতা (১৯৬৯), মেঘকালো (১৯৭০), ফরিয়াদ (১৯৭১), নবরাগ (১৯৭১), আলো আমার আলো (১৯৭২), হারমানা হার (১৯৭২), দেবী চৌধুরানী (১৯৭৪), শ্রাবণ সন্ধ্যায় (১৯৭৪), প্রিয় বান্ধবী (১৯৭৫), আঁধি (১৯৭৫), দত্তা (১৯৭৬), প্রণয় পাশা (১৯৭৮)।
হিন্দি-
বোম্বাই কা বাবু (১৯৬০), সারহাত (১৯৬০)।
পুরস্কার ও সম্মাননা-
তৃতীয় মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী। চলচ্চিত্র সপ্তপদী ( ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দ)।
ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী পুরস্কার মনোনীত, মমতা (১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দ)।
পদ্মশ্রী চলচ্চিত্র শিল্পে বিশেষ অবদানের জন্য (১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দ)।
ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী পুরস্কার মনোনীত, আঁধি। (১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দ)।
বঙ্গবিভূষণ চলচ্চিত্রে সারা জীবনের অবদানের জন্য। (২০১২ খ্রিষ্টাব্দ)।
১৯৭৮ সালে সুদীর্ঘ ২৫ বছর অভিনয়ের পর তিনি চলচ্চিত্র থেকে অবসরগ্রহণ করেন। এর পর তিনি লোকচক্ষু থেকে আত্মগোপন করেন এবং রামকৃষ্ণ মিশনের সেবায় ব্রতী হন।সুচিত্রা শেষ জনসম্মুখে আসেন ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দে, তাঁর গুরু ভরত মহারাজের মৃত্যুর পর। ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি ভারতীয় সময় সকাল ৮টা ২৫ মিনিট নাগাদ কলকাতার বেল ভিউ হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৮২ বছর বয়সে সুচিত্রা সেনের মৃত্যু হয়।

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবপেজ।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ রিভিউ

জানুন ৪০০ বছরের প্রাচীন শীতলা মায়ের পুজোর ইতিহাস ও সংস্কৃতি।।।

রানাঘাট হবিবপুর পুরাতন বাজারের প্রাচীন ও ঐতিহ্য জাগ্রত শীতলা মায়ের পুজো আনুমানিক ৪০০ বছরের প্রাচীন তাকে ঘিরে চলে ১০ দিন উত্‍সব ও মেলা। এখানকার শীতলা মা শুধুমাত্র একটা বট বৃক্ষে পূজিত হয়ে আসছে বিগত ৪০০ বছর ধরে। কথায় আছে বিশ্বাসে মেলায় বস্তু তর্কে বহুদূর হয়তো এই মায়ের কাছে না আসলে অনেকে বিশ্বাস করতে পারবে না এমনটাই জানাচ্ছেন পুজো উদ্যোগতারা ।

এখানে কোনো মূর্তি হিসেবে পূজিত হয়না শুধুমাত্র বট গাছটি শীতলা দেবী হিসেবে পূজিত হয়ে আসছে ৪০০ বছর ধরে।
কথিত আছে গঙ্গা নদী প্রবাহিত ছিল এই বট বৃক্ষে পাশ দিয়ে কোনো এক সময় চাঁদ সদাগর বাণিজ্য করতে গিয়ে এই স্থানে বটো বৃক্ষ নিজে পূজা দিয়েছিলেন।
প্রথমে এক অবাঙালি ব্রাহ্মণ পুজো করলেও বর্তমানে হবিবপুরের ভট্টাচার্য বাড়ির পুরুষেরা বংশানুক্রমিক এই পূজার দায় ভার পায়।
কথিত আছে মায়ের স্বপ্ন আদেশ”হয় ভট্টাচার্য পরিবার কে পুজো করবার তারপরথেকেই তারা পুজো করে আসছেন । চৈত্র মাসের শীতলা অষ্টমী তিথিতে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষের সমাগম হয় এই পুজোতে । তারপর ব্রাহ্ম মুহূর্ত সময়কালে ভট্টাচার্জি বাড়ির বর্তমান পুরোহিত গদাই ভট্টাচার্য চন্ডী পাঠ দাঁড়া দেবী শক্তির গুনোগান করেন।
লোকমূখে শোনা যায় এক সময় বট বৃক্ষের সামনে দিয়ে ভাগীরথী গঙ্গা নদী প্রবাহিত ছিল। এখন গঙ্গা ৭ কিলোমিটার দূরে তারাপুরে অবস্থান করছে।
মা শীতলা দেবী এতই জাগ্রত যারা মায়ের কাছে আসেন বা পূজা দেন তারা উপলব্ধি করতে পারেন এই দেবী কে ভক্তিভরে ডাকলে মা ভক্তদের মনোবাঞ্ছা পূরন করেন এবং অনেকের মনোবাঞ্ছা পূরন হলে তাদের ওজনে বাতাসা ছিটান ভক্তরা। ৬ দিনের হরিনাম সংকীর্তনে ৩ টনের অধিক পরিমাণে বাতাসা ছিটানো হয় ভক্তদের মাঝে।
শুধু হবিবপুর গ্রামের মানুষ এই পূজা সামিল হোন না রাজ্য বিভিন্ন প্রান্তের ভক্তদের পাশাপাশি দেশ বিদেশের ভক্তদের ঢল নামে এই পূজাতো এবছর ১০ হাজারের অধিক ভক্তদের সমাগম ঘটবে অনুমান করা হচ্ছে পূজা দিতে সকাল থেকে বিরাট লম্বা লাইন পড়ে ভক্তরা ডালা সাজিয়ে অনেন ডাবের জল, গঙ্গার জল, দুধ ,আলতা, সিঁদুর ফল, ফুল নিয়ে এসে মায়ের কাছে ভক্তি ভরে পূজা দেন মহা সমারোহে পুজো হয়, অঞ্জলী পরে ও বিশেষ হোমজঙ্গ হয় এবং এখনও পর্যন্ত এই দশদিনের উত্‍সবে অধিকাংশ বাড়িতে নিরামিষ আহার করে থাকেন তাদের বাড়িতে কোনো আমিষ খান না । এই শীতলা মায়ের বিভিন্ন মতবাদ আছে এখানে আগে একজন অবাঙালি সাধুঁ থাকত তিনি স্বপ্নাদেশ পেয়েছিল মায়েরা ৭ বোন মায়েরা এই বট বৃক্ষে অবস্থান করে আছেন আজও সাধারণ মানুষের ধারণা বিশ্বাস, এই বট গাছে অবস্থান করে আছেন লোক মূখে শোনা যায় অনেক ভক্তকে মা দেখা দিয়েছেন।পুজোর আগেরদিন অধিবাস পুজোর দিন নিয়ম অনুযায়ী পুজোর দিন ভোরবেলা মাকে ১০৮ কলশি গঙ্গার জল দিয়ে মাকে স্নান করাতে হবে তাই প্রতিবছর হাজার হাজার ভক্তদের দেখা যায় ১৪ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে আসা যাওয়া করে শান্তিপুর থানার অন্তর্গত কুমলে গঙ্গার থেকে জল নিয়ে এসে মাকে স্নান করানো হয়।যদিও পুজো ঘিরে চলে ১০দিনের কীর্তন ও অনুষ্ঠান। এদিন রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী জগন্নাথ সরকার মন্দিরে গিয়ে পুজো দিয়ে ভোট প্রচার শুরু করেন। অপরদিকে মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী বর্ণালীদের আয়ো মাতৃ মন্দিরে গিয়ে পূজা অর্চনা করেন।

।। নদীয়া, রানাঘাট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

কমলাদেবী চট্টোপাধ্যায় : ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী ও সমাজ সংস্কারক।।।

ভূমিকা :- ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের অব্যর্থ পরিশ্রম যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত রাজনৈতিক দিক থেকে মুক্তি পেয়েছে। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়, তার মূলে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে কমলাদেবী চট্টোপাধ্যায় প্রথমসারির একজন অন্যতম বিপ্লবী ছিলেন।ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুধু শহীদ ভগত্‍ সিং-এর মতই নয় বরং শক্তিশালী নারীদের দ্বারা প্রশস্ত হয়েছিল যারা তাদের মাটিতে দাঁড়িয়েছিল এবং দেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য ব্রিটিশদের সাথে লড়াই করেছিল।

কমলাদেবী চট্টোপাধ্যায় ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি দেশমতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ রূপে। ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিকন্যা ছিলেন কমলাদেবী চট্টোপাধ্যায় ।বকমলাদেবী চট্টোপাধ্যায় ছিলেন ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন বিশিষ্ট নেত্রী । স্বাধীনতার পর ভারতীয় হস্তশিল্প, থিয়েটারকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য তাঁর অক্লান্ত প্রচেষ্টা অবিস্মরণীয়।

শৈশব-

কমলাদেবী ৩ এপ্রিল ১৯০৩ সালে ম্যাঙ্গালোরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পিতামাতার চতুর্থ এবং কনিষ্ঠ কন্যা সন্তান। তার বাবার নাম আন্নানথায়া ধারেশ্বর ও মায়ের নাম গিরিজাবা। কামালদেবী একজন ব্যতিক্রমী ছাত্রী ছিলেন এবং অল্প বয়স হতে তিনি দৃঢ়চেতা এবং সাহসী ছিলেন। তার বাবা-মা’র মহাদেব গোবিন্দ রানাডে, গোপাল কৃষ্ণ গোখলে এবং রামাবাই রানাডে এবং অ্যানি বেসন্তের মতো মহিলা নেতাসহ অনেক বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও বুদ্ধিজীবীদের সাথে বন্ধুত্ব ছিল। যা তরুণ কমলাদেবীকে স্বদেশী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের জন্য উত্‍সাহী করে তুলেছিল।

বৈবাহিক জীবন–

কমলাদেবী ১৯০৩ সালের ৩ এপ্রিল ম্যাঙ্গালোরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তার পিতামাতার চতুর্থ এবং কনিষ্ঠ কন্যা। তাঁর পিতার নাম অন্নথায় ধরেশ্বর এবং মাতার নাম গিরিজাবা। কমলদেবী একজন ব্যতিক্রমী ছাত্রী ছিলেন এবং ছোটবেলা থেকেই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ও সাহসী ছিলেন। তার বাবা-মা মহাদেব গোবিন্দ রানাডে, গোপাল কৃষ্ণ গোখলে এবং রমাবাই রানাডে এবং অ্যানি বেসান্তের মতো মহিলা নেত্রী সহ অনেক বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং বুদ্ধিজীবীদের বন্ধু ছিলেন। যা তরুণ কমলাদেবীকে স্বদেশী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে উত্‍সাহী করে তুলেছিল।

লন্ডন গমন-

বিয়ের কিছুদিন পর, হরিন্দ্রনাথ লন্ডন ভ্রমণে চলে যান এবং কয়েক মাস পরে কমলদেবী তার সাথে যোগ দেন। সেখানে, তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের বেডফোর্ড কলেজে ভর্তি হন এবং পরে সমাজবিজ্ঞানে ডিপ্লোমা অর্জন করেন।
স্বাধীনতা আন্দোলনের আহ্বান–
লন্ডনে থাকাকালীন, কমলাদেবী ১৯২৩ সালে মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলন সম্পর্কে জানতে পারেন এবং অবিলম্বে গান্ধীর সংগঠন সেবাদল, দেশের সেবার জন্য প্রতিষ্ঠিত একটি সংগঠনে যোগ দিতে ভারতে ফিরে আসেন।
১৯২৬ সালে তিনি অল ইন্ডিয়া উইমেনস কনফারেন্স (AIWC) এর প্রতিষ্ঠাতা মার্গারেট ই ক্যাসিনের সাথে দেখা করেন, মাদ্রাজ প্রাদেশিক পরিষদে যোগদানের জন্য অনুপ্রাণিত হন। এইভাবে তিনি ভারতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রথম মহিলা নেতা হয়েছিলেন। কয়েকদিন প্রচারণা চালাতে পারলেও ৫৫ ভোটের ব্যবধানে হেরে যান তিনি। পরের বছর তিনি অল ইন্ডিয়া উইমেনস কনফারেন্স (AIWC) প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর প্রথম সাংগঠনিক সম্পাদক হন। পরের কয়েক বছরে, এআইডব্লিউসি একটি সম্মানিত জাতীয় সংস্থায় পরিণত হয়, যার শাখা এবং স্বেচ্ছাসেবক কর্মসূচি ছিল এবং এর মাধ্যমে আইনি সংস্কারের জন্য কঠোর পরিশ্রম করে।
ভারত সরকার ১৯৫৫ সালে পদ্মভূষণ এবং ১৯৮৭ সালে পদ্মভুবন প্রদান করে, যা ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ বেসামরিক পুরস্কার। তিনি ১৯৬৬ সালে কমিউনিটি লিডারশিপের জন্য র্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার পেয়েছিলেন। ১৯৭৪ সালে, তাঁর জীবনের কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ, তিনি সঙ্গীত নাটক একাডেমি ফেলোশিপ রত্ন সাদাস্যে ভূষিত হন।

তাঁর লেখা বইসমুহ–

ভারতীয় নারীর সচেতনতা (The Awakening of Indian women)
জাপান-এর দুর্বলতা ও শক্তি (Japan-its weakness and strength)
স্বাধীনতার জন্য ভারতীয় নারী যুদ্ধ (Indian Women’s Battle for Freedom)
ভারতীয় কার্পেট এবং মেঝে কভার (Indian Carpets and Floor Coverings)
ভারতীয় সূচিকর্ম (Indian embroidery)
ভারতীয় লোক নৃত্যের ঐতিহ্য (Traditions of Indian Folk Dance)
এছারাও আরও অনেক বই তিনি লিখেছেন।

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট ও উইকিপিডিয়া।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

স্মরণে ভারতের’ফার্স্ট লেডি অফ ইণ্ডিয়ান স্কিন’খ্যাত অভিনেত্রী – দেবিকা রাণী।।।

দেবিকা রানী চৌধুরী, সাধারণত দেবিকা রানী নামে পরিচিত, ১৯৩০ থেকে ১৯৪০ এর দশক পর্যন্ত ভারতীয় চলচ্চিত্রের একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব হিসেবে আবির্ভূত হন। ভারতীয় পর্দার ফার্স্ট লেডি হিসাবে সমাদৃত, চলচ্চিত্র শিল্পে তার অবদানগুলি একটি পরিবর্তনশীল যুগে উল্লেখযোগ্য ছিল।
১৯০৮ সালের ৩০শে মার্চ ব্রিটিশ ভারতের মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির ওয়াল্টেয়ারে একটি ধনী ও শিক্ষিত বাঙালি পরিবারে জন্মগ্রহণকারী দেবিকা রানীর শিকড় সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধিতে গভীরভাবে প্রোথিত ছিল।

তার পিতা কর্নেল এমএন চৌধুরী ছিলেন মাদ্রাজের প্রথম ভারতীয় সার্জন-জেনারেল, যখন তার পূর্বপুরুষ তার পিতামহ, রাজশাহী জেলার পাবনার একজন জমিদার এবং কলকাতার আইনি ও সাহিত্যিক বৃত্তে প্রভাবশালী তিন মামাদের মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের গর্বিত করেছিলেন। .
রানীর প্রথম বছরগুলি যুক্তরাজ্যে অতিবাহিত হয়েছিল, যেখানে তিনি লন্ডনের সাউথ হ্যামলেটের বোর্ডিং স্কুলে শিক্ষিত হন। আভিজাত্যের সাথে তার সংযোগ তার মাতৃ বংশের মাধ্যমে প্রসারিত হয়েছিল, বিশেষত নোবেল বিজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মীয়। দেবিকা রানীর মা, লীলা চৌধুরীর নানী, ঠাকুরের বড় বোন ছিলেন।
১৯৩৩ সালে, দেবিকা এবং তার স্বামী হিমাংশু রাই জার্মানি থেকে ভারতে ফিরে আসেন এবং একটি সিনেমাটিক যাত্রা শুরু করেন যা ভারতীয় চলচ্চিত্রে একটি স্থায়ী ছাপ রেখে যাবে। তাদের ফিল্ম, “কর্মা,” শিল্পের প্রথম দিকের সূচনা করে। এটি ছিল একজন ভারতীয় দ্বারা নির্মিত প্রথম ইংরেজি ভাষার চলচ্চিত্র এবং সেই সময়ে ভারতীয় চলচ্চিত্রে দীর্ঘতম চুম্বনের দৃশ্য দেখানো হয়েছিল, একটি রেকর্ড যা 2014 সালের হিসাবে 80 বছরেরও বেশি সময় ধরে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ছিল। কর্ম,” বলিউডের প্রথম ইংরেজি গান বলে মনে করা হয়।
দেবিকা রানীর আন্তর্জাতিক প্রশংসা বৃদ্ধি পায় লন্ডনের প্রেস থেকে তার প্রশংসার মাধ্যমে। দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফের একজন সমালোচক তার “সৌন্দর্য” এবং “কবজ” এর প্রশংসা করেছেন, এবং একজন নেতৃস্থানীয় তারকা হিসাবে তার উত্থানের পূর্বাভাস দিয়েছেন। ১৯৩৩ সালে, বিবিসি ব্রিটেন তাকে তাদের প্রথম টেলিভিশন সম্প্রচারে অভিনয়ের জন্য আমন্ত্রণ জানায় এবং তিনি ভারতে বিবিসির শর্টওয়েভ রেডিও সম্প্রচারের উদ্বোধন করেন। ইংল্যান্ডে তার সাফল্য সত্ত্বেও, তার হিন্দি চলচ্চিত্র “নাগিন কি রাগিনী”, ১৯৩৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত, ভারতীয় দর্শকদের মোহিত করতে ব্যর্থ হয়। যাইহোক, এটি ভারতীয় সিনেমার অন্যতম প্রধান অভিনেত্রী হওয়ার পথকে বাধা দেয়নি, যা শেষ পর্যন্ত সমালোচকরা স্বীকার করেছেন।
ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে দেবিকা রানীর উত্তরাধিকার ভারতীয় সিনেমায় নারীর চিত্রায়নে তার অগ্রগামী চেতনা এবং স্থায়ী প্রভাবের প্রমাণ। রাজকীয় বংশ থেকে রূপালী পর্দায় তার যাত্রা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং সিনেমাগত উদ্ভাবনের এক অনন্য মিশ্রণকে আবদ্ধ করে।
চলচ্চিত্র—-
অছুত কন্যা, সাবিত্রী, জীবন প্রভাত, ইজ্জত, প্রেম কাহানি, নির্মলা, মমতা অউর মিঞা বিবি, জীবন নাইয়া, জন্মভূমি, বচন, দুর্গা, অনজান, হমারি বাত, কর্ম ম, জওয়ানি কি হাওয়া।
১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে ভারত সরকার দেবিকা রাণীকে পদ্মশ্রী উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি প্রথম দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে সোভিয়েত রাশিয়া তাকে সোভিয়েত ল্যান্ড নেহরু পুরস্কার প্রদান করে।২০১১ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতের যোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রক থেকে তার সম্মানে একটি ডাকটিকিট চালু করে।
১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দের ৯ই মার্চ শ্বাসনালীর সংক্রমণের ফলে এই শহরেই দেবিকার মৃত্যু ঘটে। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার মৃতদেহের সৎকার করা হয়।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

স্মরণে প্রখ্যাত কণ্ঠসঙ্গীত শিল্পী মীরা বন্দ্যোপাধ্যায়।।।

মীরা বন্দ্যোপাধ্যায়, ২৮ মার্চ, ১৯৩০ সালে উত্তর প্রদেশের মিরাটে জন্মগ্রহণ করেন, ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের একটি উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব। শৈলেন্দ্রকুমার চট্টোপাধ্যায়ের কন্যা, মীরার নামকরণ করা হয়েছিল তার জন্মস্থানের নামে। কলকাতার ৮ দেবেন সেন রোডে তার বাড়িটি ছিল বেগম আখতার, আলী আকবর খান এবং আরও অনেকের মতো সঙ্গীতের মহান ব্যক্তিদের জন্য একটি সমাবেশের স্থান, যা তাকে একটি সমৃদ্ধ সঙ্গীত পরিবেশ প্রদান করে।

অল্প বয়সে, তিনি তার বাবার অধীনে এবং পরে চিন্ময় লাহিড়ীর কাছ থেকে ধ্রুপদ ও ধামার প্রশিক্ষণ নেন।
মীরার সঙ্গীত প্রতিভা প্রথম দিকে স্বীকৃত হয়েছিল। অল্প বয়সেই তিনি অল বেঙ্গল মিউজিক কম্পিটিশনে প্রতিটি বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৯৪৩ সালে নৃপেন মজুমদারের আমন্ত্রণে তিনি অল ইন্ডিয়া রেডিওতে অভিনয় শুরু করলে তার কর্মজীবন শুরু হয়। এক বছর পরে, তিনি সঙ্গীতাচার্য গিরিজাশঙ্কর চক্রবর্তী কর্তৃক “গীতাশ্রী” উপাধিতে সম্মানিত হন।
তার বাবা তাকে পাটিয়ালা ঘরানার সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পরে কিংবদন্তি ওস্তাদ বড়ে গুলাম আলী খানের অধীনে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সময় তার যাত্রা অব্যাহত ছিল। এমনকি এই সংযোগের ফলে প্রখ্যাত জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ তাঁর বাড়িতে ওস্তাদের থাকার জন্য কক্ষ অফার করেছিলেন। সঙ্গীতের সাথে মীরার বন্ধন আরও গভীর হয় যখন তিনি ১৯৫৭ সালে প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিয়ে করেন, একজন সহ-শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পী, যার সাথে তিনি বেশ কয়েকটি রেকর্ড প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর অনুরোধে রাশিয়া, পোল্যান্ড এবং চেকোস্লোভাকিয়া সফর করার সময় মীরার আন্তর্জাতিক প্রকাশ ঘটে, বিশ্ব মঞ্চে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত প্রদর্শন করে। তিনি তপন সিনহার নির্দেশে ‘অতিথি’, ‘বৃন্দাবনলীলা’ এবং ‘মেঘমল্লার’-এর মতো ছবিতেও তার কণ্ঠ দিয়েছেন, ভারতীয় সংস্কৃতিতে তার প্রভাবকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন।
তার বর্ণাঢ্য কর্মজীবন জুড়ে, মীরা বন্দ্যোপাধ্যায় রাষ্ট্রপতি ভবনে একটি অনুষ্ঠানে ভারতের রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে একটি বিশেষ পুরস্কার সহ অসংখ্য প্রশংসা পেয়েছিলেন। ১৯৫৩ সালে অল ইন্ডিয়া রেডিওর ন্যাশনাল প্রোগ্রাম অফ মিউজিকের জন্য তার অভিনয় সারা দেশে হৃদয় জয় করে, ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের একজন সম্মানিত দূত হিসাবে তার উত্তরাধিকারকে সিমেন্ট করে।
মীরা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবন এবং কাজ শিল্পের প্রতি তার উত্‍সর্গকে প্রতিফলিত করে, যা তাকে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের জগতে একটি সম্মানিত নাম করে তোলে। ভারতের সমৃদ্ধ সঙ্গীত ঐতিহ্য সংরক্ষণ করে তার অবদান আগামী প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে।
তাঁর অন্যান্য পুরস্কার গুলি হল– গিরিজাশঙ্কর পুরস্কার, আলাউদ্দিন পুরস্কার, সৌরভ পুরস্কার, ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে – আইটিসি এসআরএ পুরস্কার, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সঙ্গীত আকাদেমি পুরস্কার, ভুয়ালকা পুরস্কার।
২০১২ খ্রিস্টাব্দের ২৭ জুন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে কলকাতার বোসপুকুরের বাড়িতে প্রয়াত হন বিদুষী মীরা বন্দ্যোপাধ্যায়।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

স্মরণে, বাঙ্গালী কবি ও সমাজকর্মী মল্লিকা সেনগুপ্ত।।।

মল্লিকা সেনগুপ্ত, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একজন বিশিষ্ট কবি এবং লেখক, তাঁর নারীবাদী এবং সংবেদনশীল সাহিত্যকর্ম দিয়ে নিজের জন্য একটি বিশেষ স্থান তৈরি করেছেন। ২৭ মার্চ, ১৯৬০ সালে, নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে জন্মগ্রহণকারী সেনগুপ্তের কবিতার জগতে যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৮১ সালে। বছরের পর বছর ধরে, তিনি ১১টি কবিতা সংকলন, দুটি উপন্যাস এবং অসংখ্য প্রবন্ধ সহ ২০টি উল্লেখযোগ্য রচনা লিখেছেন।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে অধিভুক্ত মহারানী কাশিশ্বরী কলেজে সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে তার একাডেমিক কেরিয়ারও সমানভাবে উজ্জ্বল ছিল।
৯০ এর দশকে বাংলা সাহিত্যে সেনগুপ্তের অবদান উল্লেখযোগ্য ছিল, বিশেষ করে তিনি অপর্ণা সেনের নির্দেশনায় ‘সানন্দা’ পত্রিকার কবিতা বিভাগ সম্পাদনা করেছিলেন। এছাড়াও তিনি স্বামী সুবোধ সরকারের সাথে ‘ভাষানগর’ একটি সাংস্কৃতিক পত্রিকার সহ-সম্পাদনা করেছিলেন। তার সাহিত্যকর্ম, তার রাজনৈতিক এবং নারীবাদী অবস্থানের জন্য পরিচিত, শুধুমাত্র ভারতেই স্বীকৃত হয়নি বরং বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ সহ আন্তর্জাতিক প্রশংসাও অর্জন করেছে।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার তাকে সুকান্ত পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং ফেলোশিপ ফর লিটারেচার প্রদানের মাধ্যমে সাহিত্য ও সামাজিক সমস্যাগুলির উপর তার গভীর প্রভাবকে স্বীকার করেছে।
সেনগুপ্তের লেখাগুলি প্রায়শই ঐতিহাসিক নারী ব্যক্তিত্বকে তুলে ধরে, আধুনিক নারীবাদী লেন্সের মাধ্যমে তাদের গল্পের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সমসাময়িক কবি সংযুক্তি দাশগুপ্তের মতে, সেনগুপ্তের নারীবাদ নিছক সচেতনতাকে অতিক্রম করে এবং নারীর প্রান্তিকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ হিসেবে প্রকাশ পায়।
তার লেখার মাধ্যমে, মল্লিকা সেনগুপ্ত ক্রমাগত প্রান্তিক নারীদের অধিকার এবং স্বীকৃতির পক্ষে ওকালতি করেছেন, তার কণ্ঠকে নিপীড়নের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী হাতিয়ার করে তুলেছেন। বাংলা সাহিত্য এবং নারীবাদী বক্তৃতায় তার উত্তরাধিকার প্রভাবশালী রয়ে গেছে, পাঠক ও লেখকদের একইভাবে আরও ন্যায়সঙ্গত লেন্সের মাধ্যমে বিশ্বকে দেখতে অনুপ্রাণিত করে।
বিশেষ বই—
কথামানবী কবিতা, পুরুষকে লেখা চিঠি, আমাকে সারিয়ে দাও ভালবাসা, সীতায়ন উপন্যাস

পুরস্কার ও সম্মাননা—

ভারত সরকারের জুনিয়র রাইটার ফেলোশিপ (১৯৯৮); পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সুকান্ত পুরস্কার(১৯৯৮); পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি অনীতা-সুনীল বসু পুরস্কার(২০০৪)।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্নিকন্যা, মোহিনী দেবী।।।

সূচনা-ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের অব্যর্থ পরিশ্রম যার ফলেই ব্রিটিশদের থেকে ভারত রাজনৈতিক দিক থেকে মুক্তি পেয়েছে। ভারত উপমহাদেশের বিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ বিরোধী যে সশস্ত্র বিপ্লববাদী লড়াই-সংগ্রাম সংগঠিত হয় এবং যার ধারাবাহিকতায় ভারত স্বাধীন হয়, তার মূলে যে সকল বিপ্লবীর নাম সর্বজন স্বীকৃত তাঁদের মধ্যে মোহিনী দেবী প্রথমসারির একজন অন্যতম বিপ্লবী ছিলেন।ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুধু শহীদ ভগত্‍ সিং-এর মতই নয় বরং শক্তিশালী নারীদের দ্বারা প্রশস্ত হয়েছিল যারা তাদের মাটিতে দাঁড়িয়েছিল এবং দেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য ব্রিটিশদের সাথে লড়াই করেছিল।

মোহিনী দেবী ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য নাম, যিনি দেশমতৃকার শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্পূর্ণ রূপে। ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিকন্যা ছিলেন তিনি।
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক স্মরণীয় নাম
মোহিনী দেবী। তিনি ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিকন্যা। এছাড়া তার পরিবার বাংলাদেশের প্রগতিমুলক শিক্ষা ও সংস্কৃতির সাথে জড়িত ছিল। ইতিহাসে তাঁর নাম আজও স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। জেনে নেবো তাঁর সংগ্রামী জীবনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।

জন্ম ও পরিবার–

মোহিনী দেবী ১৮৬৩ সালে ঢাকা জেলার মানিকগঞ্জে এক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম রামশঙ্কর সেন ও মাতার নাম উমাসুন্দরী দেবী। ১২ বছর বয়সে তারকচন্দ্ৰ দাশগুপ্তের সঙ্গে বিবাহ হয়। শ্রমিক আন্দোলনের নেত্রী প্রভাবতী দাশগুপ্ত।

শিক্ষাজীবন–

মোহিনী দেবী ভিক্টোরিয়া স্কুলের প্রথম হিন্দু ছাত্রী, কলকাতার অভিজাত অ্যাংলিকান প্রতিষ্ঠান, মোহিনী দেবী (১৮৬৩ – ১৯৫৫) তার মূলে একজন জাতীয়তাবাদী ছিলেন। ঢাকার বেউথার রামশঙ্কর সেনের কন্যা, বারো বছর বয়সে তারকচন্দ্র দাশগুপ্তের সাথে তার বিয়ে হয়। তা সত্ত্বেও, তিনি পন্ডিত শিবনাথ শাস্ত্রী এবং রামতনু লাহিড়ীর অধীনে অধ্যয়নের সুযোগ পেয়েছিলেন, ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগের কলকাতার অধ্যবসায়ী। তিনি ইউনাইটেড মিশনের একজন মহিলা শিক্ষকের কাছে ইংরেজি শিখেছিলেন। এইভাবে তিনি ভারতের সমসাময়িক উন্নয়ন সম্পর্কে সচেতন হন এবং শুরু থেকেই বিভিন্ন সামাজিক কল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হন।

রাজনৈতিক জীবন–

১৯২১-২২ সালে তিনি গান্ধীজীর অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেওয়ার কারণে কারাবরণ করেন। ১৯৩০-৩১ সালে আইন অমান্য আন্দোলনে নেতৃত দেন। এজন্য তাকে ছয় মাসের জেল খাটতে হয়েছিল। ‘নিখিল ভারত মহিলা সমিতির’ সভানেত্রী হিসেবে তার ভাষন উচ্চ প্রশংসিত হয়। ১৯৪৬ সালের দাঙ্গায় মুসলিম প্রধান অঞ্চল এন্টালি বাগানে নিজের বাড়িতে থেকে হিন্দু মুসলিম ঐক্যের প্রচার চালিয়েছিলেন। সে সময় তার বন্ধু-বান্ধব আত্নীয় পরিজন তাকে তিরস্কার করে কিন্তু তাতে তিনি সংকল্প হারান নি। মোহিনী দেবী একদিকে স্বাধীনতা আন্দোলন এর পক্ষে কাজ করেছিলেন অন্যদিকে নারী শিক্ষা, নারী স্বাধীনতা, সমাজসংস্কারমূলক কাজ।

স্বাধীনতা আন্দোলনে-

১৯২০-১৯২২ সালে, ব্রিটিশদের সাথে অসহযোগের জন্য গান্ধীর আহ্বানের উচ্চতায়, তিনি নিজেকে আন্দোলনে উত্সর্গ করেছিলেন। ১৯৩০-১৯৩১ সালের আইন অমান্য আন্দোলনের সময়, তিনি আইন ও পুলিশি বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করে এবং পথে কারাভোগ করে একজন উল্লেখযোগ্য নেতা আন্দোলন হিসাবে আবির্ভূত হন। গান্ধীবাদী আদর্শে তার সম্পূর্ণ সাবস্ক্রিপশন এবং তার আন্দোলন কৌশলের প্রতি অটল জমা দেওয়ার কারণে, তিনি দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে সর্বভারতীয় মহিলা কংগ্রেসের সভাপতি হন; তার বাকপটু বক্তৃতা গান্ধী সহ সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। নিজের এবং তার পরিবারের নিরাপত্তা উপেক্ষা করে, তিনি কলকাতার রাস্তায় নেমে আসেন এবং ১৯৪৬ সালের ভয়াবহ কলকাতা দাঙ্গার অন্ধকার দিনগুলিতে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেন।
গান্ধীজীর আদর্শে অবিচলিত নিষ্ঠা ছিল। ১৯৪৬ খ্রী. কলিকাতায় দাঙ্গার সময় দাঙ্গা-আধুষিত মুসলমান-প্রধান অঞ্চল এন্টনিবাগানে নিজের বাড়িতে থেকে হিন্দু-মুসলমানের ঐক্যের বাণী প্রচার করেন। ‘দি স্কাভেঞ্জার্স ইউনিয়ন অব বেঙ্গল’ এবং ‘জুটি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নে’র প্রেসিডেন্ট তাঁর কন্যা প্ৰভাবতী দাশগুপ্ত ১৯২৭-২৮ থেকে ১৯৩০ – ৩১ খ্রী. পর্যন্ত শ্রমিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে এক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব।

মৃত্যু–

মহান এই সংগ্রামী মোহিনী দেবী ২৫ মার্চ ১৯৫৫ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট ও উইকিপিডিয়া।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ রিভিউ

কর্তাভজা সম্প্রদায় ও কল্যাণীর সতীমার দোল মেলা : দিলীপ রায়।।।

যতদূর জানা যায়, আনুমানিক দুশো বছর আগে আউলিয়া সম্প্রদায়ের সতীমা অর্থাত্‍ সরস্বতী দেবী এই মেলার প্রবর্তন করেন । এপার বাংলা ও বাংলাদেশে যথেষ্ট জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ ঘোষপাড়ার সতীমার দোল মেলা । খ্রিষ্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি বাংলার অন্ত্যজ সম্প্রদায়ের মানুষদয়ের নিয়ে গড়ে ওঠে আউলচাঁদ সম্প্রদায় ।

এই সম্প্রদায়ের আদিগুরু ছিলেন আউলচাঁদ । তাঁর মৃত্যুর পর আউলচাঁদ সম্প্রদায়ের কর্তাপদ লাভ করেন রামশরণ পাল । তাঁরই স্ত্রী ছিলেন সরস্বতী দেবী যিনি পরবর্তীকালে সতী মা নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেন ।
বাউল, কীর্তন, লোকগীতি, পল্লীগীতির সুরে প্রতি বছর মেলা জমে ওঠে । আখড়ায় আখড়ায় সারা রাত ধরে গানের আসর । শ্রোতারা অধিকাংশই গ্রাম ও মফঃস্বলের । বিভিন্ন জায়গায় তৈরী হয় লালন মঞ্চ । গানের পাশাপাশি বিশাল উনুন জ্বালিয়ে ক্ষুন্নিবৃত্তির ব্যবস্থা হয় ঐ আখড়াগুলিতে । দূরদূরান্ত থেকে মেলায় আগত মানুষদের আশ্রয়স্থল এই আখড়াগুলি ।
এবার আসছি কর্তাভজা সম্প্রদায় প্রসঙ্গে ।
কর্তাভজা সম্প্রদায় আঠারো শতকে বৈষ্ণববাদ ও সুফিবাদ থেকে বিকশিত একটি ক্ষুদ্র ধর্মীয় সম্প্রদায় । এই সম্প্রদায়ের মূল গুরু আউল চাঁদ ।
প্রথমেই বলি, আউলচাঁদ হলেন একজন বাঙালি ধর্ম প্রচারক ও কর্তাভজা সম্প্রদায়ের আদিগুরু । কিংবদন্তি বা লোকবিশ্বাস যে, গোরাচাঁদ অর্থাত্‍ শ্রীচৈতন্যদেব আউলচাঁদ রূপে পুনরায় আবির্ভূত হয়েছেন । গৃহী মানুষকে বৈরাগ্য ধর্ম শেখাতে শ্রীচৈতন্য আবির্ভূত হন আউল চাঁদ ফকির হয়ে । এখানে তাই কোনো জাতিভেদ নেই ।
আউলচাঁদের জন্ম-খ্রিষ্টাব্দ নিয়ে অনেক মতভেদ । শোনা যায়, তিনি হিন্দু না মুসলমান সেটা স্পষ্টভাবে জানা যায়নি । তবে প্রচলিত লোক কাহিনী অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনা জেলার উলা গ্রামের (অনেকের মতে, নদীয়া জেলার প্রাচীন জনপদ উলা-বীরনগর) পান ক্ষেত থেকে একটি নবজাতক শিশুকে পাওয়া যায় । ক্ষেতের মালিক মহাদের বারুই ভগবানের আশীর্বাদ ভেবে তাঁকে লালন-পালন শুরু করেন । আউলচাঁদের পুরানো নাম পূর্ণচন্দ্র । সংস্কৃত ভাষা শেখানোর জন্য তাঁকে পাঠানো হয় সে-সময়কার বিখ্যাত বৈষ্ণবাচার্য হরিহরের কাছে । বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পূর্ণচন্দ্র নানা জায়গায় ঘুরে বেড়ান এবং নানাভাবে শিক্ষালাভ করেন । শেষ পর্যন্ত তিনি সিদ্ধিলাভ করেন । তাঁর নতুন নাম হয় ফকিরচাঁদ বা আউলচাঁদ । বড় হয়ে আউলচাঁদ গৃহত্যাগ করেন । বহু দেশ ঘোরার পর নদীয়া জেলার ঘোষপাড়ায় রামশরণ পাল নামে এক ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি তাঁকে আশ্রয় দেন । আউল চাঁদের ২২জন শিষ্যের মধ্যে অন্যতম শিষ্য রামশরণ পাল । ২২জনের মধ্যে রামশরণ পাল আউলচাঁদের মৃত্যর পর গুরুপদ প্রাপ্ত হন । যারজন্য তাঁর নেতৃত্বে পশ্চিম বঙ্গের নদীয়া জেলার ঘোষপাড়ায় প্রতিষ্ঠা করেন কর্তাভজা ধর্মের অন্যতম পীঠস্থান, যা পরবর্তী সময়ে সতী মায়ের মন্দির নামে সবার কাছে পরিচিত । রামশরণ পালের স্ত্রীর নাম সরস্বতী, যার নামেই এই মন্দির—-সতী মায়ের মন্দির । কথিত আছে, সরস্বতী’র প্রথম অক্ষর “স” আর শেষ অক্ষর “তী” অনুসারে সতী । আউলচাঁদের শিষ্য রামশরণ পাল গুরুর ভাবাদর্শকে ভিত্তি করে কর্তাভজা সম্প্রদায় গড়ে তোলেন । এইজন্য ভক্তের নিকট তিনি “কর্তা” এবং তাঁর স্ত্রী সরস্বতী দেবী “কর্তামা” নামে অভিহিত । রামশরণ পালের পর সরস্বতী দেবী এই সম্প্রদায়কে নেতৃত্ব দেন । রামশরণ পালের স্ত্রী কর্তাভজা সম্প্রদায়কে দিশা দেখান । রামশরণের স্ত্রী সরস্বতী দেবী ছিলেন অতীব ধর্মপরায়ণা । শোনা যায়, আউলচাঁদ হিম সাগরের জল ও ডালিম গাছের তলার মাটির সাহায্যে সরস্বতী দেবীকে অলৌকিক উপায়ে মৃত্যের হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন । আরও শোনা যায়, আউলচাঁদ নাকি রামশরণ পাল ও সরস্বতী দেবীর সন্তান হয়ে পরবর্তীতে জন্ম নেন “দুলাল চাঁদ” নামে । দুলাল চাঁদ (১৭৭৬-১৮৩৩) কর্তাভজা সম্প্রদায়কে সাংগঠনিক রূপ দেন । তিনি বহু পদ রচনা করে কর্তাভজা ধর্মমতকে একটা তাত্ত্বিক কাঠামোর উপর প্রতিষ্ঠিত করেন । পদগুলি ভাব-গীত-রূপে ভক্তদের নিকট সমাদৃত । কর্তাভজারা কোনো জাতিভেদ মানেন না । তাঁরা লোভ-মোহ-কাম-ক্রোধকে নৈতিক পাপ বলে মনে করেন । সত্‍ পথে থেকে এবং মিথ্যা কথা পরিহার করে নৈতিকভাবে ধর্মকর্ম করা তাঁদের প্রধান লক্ষ্য । তাঁর সময়ে কর্তাভজা সম্প্রদায়ের খ্যাতি বহুদূর পর্যন্ত গড়ায় । মাত্র ৪৮ বছর বয়সে দুলাল চাঁদের মৃত্যু হয় । এরপর তাঁর মা অর্থাত্‍ সরস্বতী দেবী কর্তা মা বা সতীমা নামে খ্যাতিলাভ করেন ।
নদীয়া জেলার ঘোষপাড়ার রামশরণ পালের আদি ভিটেটুকু ভক্তদের কাছে অতি পবিত্র । ভিটের পাশেই ডালিম গাছ । এই গাছের নীচে যেহেতু সতীমা সিদ্ধিলাভ করেছিলেন সেইজন্য ভক্তরা ডালিম গাছের ডালে ঢিল বেঁধে মানত করেন । মনস্কামনা পূরণ হওয়ার আশায় । বাতাসা, কদমা, চিড়ে, মুড়কি দিয়ে নৈবেদ্য সাজিয়ে ভক্তদের সতীমাকে পুজো দেওয়ার রীতি । আজও সেই ট্রাডিশন অব্যাহত ।
জনশ্রুতি, শেষ বয়সে সরস্বতী দেবী সন্তানহারা হলে দোলপূর্ণিমার দিন গুরু পুজার আয়োজন করেন । সেই থেকে দোল পূর্ণিমার সূচনা । হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে বিভিন্ন জায়গা থেকে বাউলেরা আসেন । তাই স্থানীয়ভাবে সতী মায়ের মেলাটা আউল-বাউলের মেলা বা আখড়া নামে পরিচিত ।
কর্তাভজা সম্প্রদায় মূর্তিপুজা এবং সকল প্রকার আনুষ্ঠানিক যাগযজ্ঞের বিরোধী । কর্তাভজা প্রচারক দুলাল চাঁদ রচিত ভাবের গীতে বলা হয়েছে– “মানুষ ভজ, মানুষ চিন্ত, মানুষ কর সার, সকলি মানুষের খেলা মানুষ বই নাই আর ।” কর্তাভজা সম্প্রদায়ের উল্লেখযোগ্য দিক হলো এখানে হিন্দু গুরুর মুসলমান শিষ্য যেমন আছেন, তেমনি আছেন মুসলমান গুরুর হিন্দু শিষ্য । এই সম্প্রদায়ে নারী পুরুষ নেতৃত্ব নিয়ে কোন প্রশ্ন তোলা হয় না । এই কারণে গুরুদেবের ভূমিকায় নারী পুরুষ উভয়কেই দেখা যায় । একই ভাবে তাঁরা বাউল সম্প্রদায়ের মতো জাতিভেদ প্রথা মানেন না । দুলাল চাঁদের ভাবের গীতে তাই বলা হচ্ছে– “ভেদ নাই মানুষে মানুষে, খেদ কেন ভাই এদেশে ।”
সম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায় কর্তাভজা সম্প্রদায়ে । এ-বিষয়ে কবি নবীন চন্দ্র সেনের বক্তব্য অত্যন্ত প্রনিধানযোগ্য । তাঁর মতে, “কর্তাভজা সম্প্রদায়ে কোনো জাতিভেদ নেই । সকলেই এক রন্ধনশালার পাক গ্রহণ করেন । ছোঁয়াছুয়ির দোষ এদের কাছে মুখ্য নয় । মানুষ সেবা তাঁদের মুখ্য বিবেচ্য বিষয় ।”
কর্তাভজাদের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো গুরুদেবের পুত্র অযোগ্য হলে তাঁরা তাকে গুরু নির্বাচন করতে চান না । তাঁদের নিয়মাবলী নামক ভাবের গীতে এই প্রসঙ্গে অভিমত ব্যক্ত করে বলা হয়েছে কর্তাভজা সম্প্রদায়ের সাধন ভজন সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখেন এমন ব্যক্তিই গুরুদেব হবার অধিকারী । এই জায়গায় কর্তাভজা সম্প্রদায় বর্ণবাদ এবং ব্রাহ্মণ্যবাদের কবল থেকে বেরিয়ে আসতে সমর্থ হয়েছেন ।
আজও কর্তাভজা সম্প্রদায়ের মধ্যে সতীমায়ের কৃপা পাওয়ার নিরিখে যথেষ্ট উন্মাদনা । তাঁদের মধ্যে সরল বিশ্বাস ও ভক্তি আজও উজ্জীবিত । যার জন্য দোল পূর্ণিমার দিন সতী মায়ের মেলায় হাজার হাজার ভক্তের সমাগম ঘটে । এদেশ ছাড়া বাংলাদেশ থেকেও মেলাপ্রাঙ্গনে অনেক মানুষের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো । বাউলদের সমারোহ আলাদা মাধুর্যে ভরপুর থাকে কল্যাণীর সতী মায়ের মেলা । (তথ্যসূত্র: সংগৃহীত) ।
কলমে: দিলীপ রায় (৯৪৩৩৪৬২৮৫৪)

Share This