Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

বাসন্তী দেবী : ব্রিটিশ কারাগারে কারারুদ্ধ প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামী নারী।।।।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য নাম বাসন্তী দেবী। বাসন্তী দেবী ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন ব্যক্তিত্ব ও অগ্নিকন্যা। তিনি ছিলেন ব্রিটিশ কারাগারে কারারুদ্ধ প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামী নারী। বাসন্তী দেবী মন ও মানসিকতায় পৌরাণিক সতীনারীদের চারিত্রিক মহত্বটি যেমন অনুকরণীয় মনে করতেন; তেমনি গার্গী, মৈত্রেয়ীদের মতো চারিত্রিক দৃঢ়তায় বুদ্ধি দিয়ে আপন যুক্তি তুলে ধরার ক্ষমতাও রাখতেন।

এ-দুইয়ের মেলবন্ধনে তিনি অনন্যা।তিনি একাধারে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের পত্নী ও স্বাধীনতা আন্দোলনের সক্রিয় সংগ্রামী। সংগ্রামের জন্য কারাবরণ করেছেন। অন্দর ছেড়ে অবগুন্ঠণ ছেড়ে উপনিষদের বিদুষীদের মতো পুরুষের সমকক্ষ হয়ে সহকর্মী হয়ে দেশমুক্তির সাধনা করে গেছেন।
বাসন্তী দেবী ২৩ মার্চ ১৮৮০ সালে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম বরদানাথ হালদার ও মাতার নাম হরিসুন্দরী দেবী। তার পিতা ছিলেন আসামের বিজনি ও অভয়াপুরী এস্টেটের দেওয়ান। দশ বছর বয়েসে তিনি দার্জিলিংয়ের লরেটে কনভেন্টে শিক্ষার জন্যে ভর্তি হন। ১৮৯৬ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের সাথে বিবাহ হয়।
১৮৯৪ থেকে ১৯০১ সালের মধ্যে দুজনের তিনটি সন্তান জন্মগ্রহণ করেছিল। দেশবন্ধু ও তার তিন সন্তান- দুই কন্যা, অপর্ণা ও কল্যাণী ও একপুত্র চিররঞ্জন।
তার স্বামীর অনুসরণে, বাসন্তী দেবী আইন অমান্য আন্দোলন এবং খিলাফত আন্দোলনের মতো বিভিন্ন আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন এবং ১৯২০ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নাগপুর অধিবেশনেও অংশগ্রহণ করেছিলেন। পরের বছর, তিনি দাসের বোন ঊর্মিলা দেবী এবং সুনিতা দেবীর সাথে যোগ দেন। নারী কর্মীদের জন্য একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র “নারী কর্ম মন্দির” প্রতিষ্ঠা করুন। ১৯২০-২১ সালে, তিনি জলপাইগুড়ি থেকে তিলক স্বরাজ ফান্ডের জন্য স্বর্ণের অলঙ্কার এবং ২০০০ টি স্বর্ণমুদ্রা সংগ্রহে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিলেন।
১৯২১ সালে অসহযোগ আন্দোলনের সময়, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ধর্মঘট এবং বিদেশী পণ্য নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানায়। কলকাতায়, পাঁচজন স্বেচ্ছাসেবকের ছোট দলকে কলকাতার রাস্তায় খাদি, হাতে কাটা কাপড় বিক্রি করার জন্য নিযুক্ত করা হয়েছিল। দাস, যিনি স্থানীয় আন্দোলনের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন তার স্ত্রী বাসন্তী দেবীকে এমন একটি দলের নেতৃত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সুভাষ চন্দ্র বসুর সতর্কতা সত্ত্বেও দেবী রাস্তায় নেমেছিলেন যে এটি তাকে গ্রেফতার করতে ব্রিটিশদের উস্কে দেবে। যদিও তাকে মধ্যরাতে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, তার গ্রেপ্তার ব্যাপক আন্দোলনের প্রেরণা জুগিয়েছিল। কলকাতার দুটি কারাগার বিপ্লবী স্বেচ্ছাসেবকদের দ্বারা পূর্ণ ছিল এবং আরও সন্দেহভাজনদের আটক করার জন্য দ্রুত আটক শিবির তৈরি করা হয়েছিল। ১৯২১ সালের ১০ ডিসেম্বর পুলিশ দাস ও বসুকে গ্রেপ্তার করে।
দাসের গ্রেপ্তারের পর, বাসন্তী দেবী তার সাপ্তাহিক প্রকাশনা বাঙ্গালার কথা (বাংলার গল্প) এর দায়িত্ব নেন। তিনি ১৯২১-২২ সালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন। ১৯২২ সালের এপ্রিলে চট্টগ্রাম সম্মেলনে তার বক্তৃতার মাধ্যমে, তিনি তৃণমূল আন্দোলনকে উত্‍সাহিত করেছিলেন। ভারতের চারপাশে ভ্রমণ, তিনি ঔপনিবেশিকতার বিরোধিতা করার জন্য শিল্পের সাংস্কৃতিক বিকাশকে সমর্থন করেছিলেন।
দাস যেহেতু সুভাষ চন্দ্র বসুর রাজনৈতিক পরামর্শদাতা ছিলেন, বসন্তী দেবীর প্রতি বসন্তের খুব শ্রদ্ধা ছিল। ১৯২৫ সালে দাসের মৃত্যুর পর, বসু দেবীর সাথে তার ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক সন্দেহ নিয়ে আলোচনা করেছিলেন বলে জানা যায়। সুভাষ চন্দ্র বসুর ভ্রাতৃপ্রতিম ভাতিজি কৃষ্ণ বোস বাসন্তী দেবীকে তাঁর “দত্তক মা” এবং তাঁর জীবনের চারটি গুরুত্বপূর্ণ মহিলার একজন হিসাবে চিহ্নিত করেছিলেন, বাকি তিনজন হলেন তাঁর মা প্রভাবতী, তাঁর ভগ্নিপতি বিভাবতী (শেরতের স্ত্রী) চন্দ্র বসু) এবং তার স্ত্রী এমিলি শেঙ্কল।
তার স্বামীর মতো, বাসন্তী দেবীও ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের বিপ্লবী কর্মীদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। ১৯২৮ সালে, ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী লালা লাজপত রায় তার শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ মিছিলের বিরুদ্ধে পুলিশের লাঠিচার্জে আহত হওয়ার কয়েকদিন পর মারা যান। এর পর বাসন্তী দেবী লাজপত রায়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে ভারতীয় যুবকদের উদ্বুদ্ধ করেন।
১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার পর, বাসন্তী দেবী সামাজিক কাজ চালিয়ে যান। বাসন্তী দেবী কলেজ, কলকাতার প্রথম মহিলা কলেজ যা সরকারের অর্থায়নে ১৯৫৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং তার নামে নামকরণ করা হয়েছিল। ১৯৭৩ সালে, তিনি ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মবিভূষণে সম্মানিত হন।
বাসন্তী দেবী ৭ মে ১৯৭৪ মৃত্যুবরণ করেন।

।।তথ্য ঋণ : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবপেজ।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

স্মরণে প্রখ্যাত বাঙালি নজরুল সঙ্গীতশিল্পী ও নজরুলগীতি বিশেষজ্ঞা পূরবী দত্ত,ভারতীয় ।।।

পূরবী দত্ত ১৭ মার্চ ১৯৪২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন ভারতীয় গায়িকা ছিলেন।  তিনি কলকাতায় থাকতেন এবং শুধুমাত্র বাংলা ভাষায় গান গেয়েছিলেন, প্রধানত নজরুলের গান গাওয়ার জন্য বিখ্যাত।
পূরবী দত্ত ছিলেন প্রখ্যাত শাস্ত্রীয় কণ্ঠশিল্পী বিভূতি দত্তের মেয়ে, তাই ছোটবেলা থেকেই বাড়িতে তার প্রশিক্ষণ শুরু হয়।  ১৯৪৬ সালে, মাত্র চার বছর বয়সে, তিনি চেতলা মুরারি স্মৃতি সঙ্গীত সম্মিলনী আয়োজিত সর্বভারতীয় সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন যেখানে তিনি তার গানের জন্য রৌপ্য ট্রফি জিতেছিলেন।
পূরবী দত্ত শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পী হলেও তিনি মূলত নজরুল গান গাওয়ার জন্য বিখ্যাত।  তার প্রথম দিনগুলিতে তিনি কলকাতায় অল ইন্ডিয়া রেডিওর বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সাথে যুক্ত ছিলেন এবং তার সঙ্গীত জীবনের বেশিরভাগ অংশ সেখানে রেকর্ড করা হয়েছিল।

যার অধিকাংশই ছিল নজরুলের গান।1950 এবং 60 এর দশকে, তিনি অল ইন্ডিয়া রেডিওর সাথে যুক্ত ছিলেন এবং বিভিন্ন প্রোগ্রামে গান গেয়েছিলেন।  তিনি সারাজীবন নজরুল গীতির প্রশিক্ষণে নিঃস্বার্থভাবে আত্মনিয়োগ করেছেন।  বহু বছর ধরে তিনি গড়িয়াহাটের “বাণীচক্র” এবং পরে “বেঙ্গল মিউজিক কলেজ” এর সাথে যুক্ত ছিলেন।  যেখানে তিনি হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, চিন্ময় চট্টোপাধ্যায় এবং অখিলবন্ধু ঘোষের সাথে পড়াশোনা করেছেন।  তিনি পণ্ডিত জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ, বিমান মুখোপাধ্যায়, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, অধীর বাগচী এবং বাংলার অন্যান্য বিশিষ্ট শিল্পী ও গায়কদের খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন।
নজরুল গীতি নিয়ে পূরবী দত্তের অ্যালবামগুলি খুব জনপ্রিয় হয়েছিল।  নিচে কিছু অ্যালবামের শিরোনাম উল্লেখ করা হলো——
১৯৭৪ কাজী নজরুলের গান – সারেগামা, ১৯৭৫ কাজী নজরুলের গান – সারেগামা, ১৯৮০ ভ্যালেন্টাইন স্পেশাল – বাংলা রোম্যান্টিক নজরুলগীতি, ১৯৮২ হালুদ গন্দর ফুল, ২০১৪ ছাড় ছাড় আঁচল, ২০১৪ ঝুম ঝুম ঝুমরা নাচতে, ২০১৪ শিউলি তোলে ভোরবেলা – আইএনআরইসিও।
প্রায় দেড় বছর নিজেকে সবার থেকে দূরে রাখার পর, ২০০৪ সালের এপ্রিল মাসে পূরবী দত্ত বাংলা সঙ্গীত মেলার মঞ্চে আবার আত্মপ্রকাশ করেন।  তিনি দুটি গান গেয়েছিলেন:”মনে পরে আজ সে কোন জনমে” এবং তার পর “নিরন্ধ্র মেঘে মেঘে অন্ধ গগন।”
তিনি তার গড়িয়াহাটের বাড়ি থেকে চলে আসার পর এই বাড়িতে থাকতেন, জীবনের শেষ দিন অবধি। তার সোনারপুরের বাড়িতে  ১ ডিসেম্বর ২০১৩ সালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

কল্পনা চাওলা : ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রথম নারী মহাকাশচারী।।।

সূচনা- ২০০৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ফেরার পথে ঘটে যায় দুর্ঘটনা। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল পর্যন্ত পৌঁছেও গেছিল তাঁদের মহাকাশযান। আর কয়েক মিনিটেই হয়তো ছুঁয়ে ফেলতেন পৃথিবীর মাটি। তখনই টেক্সাসের উপরে টুকরো টুকরো হয়ে যায় গোটা মহাকাশযান। কলম্বিয়া নভোযান বিপর্যয়ে যে সাতজন মহাকাশচারী এবং ক্রু মৃত্যুবরণ করেন তাদের মধ্যে তিনি একজন।

পৃথিবীতে অবতরণ করতে গিয়ে বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে সংঘর্ষে এই নভোখেয়াযানটি বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছিল।
প্রাথমিক জীবন-
কল্পনা চাওলা ১৪৬৮খ্রিষ্টাব্দের ১৭ মার্চ ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের কারনালে বসবাসকারী এক হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। কল্পনা তার মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপন করেন ঠাকুর বালনিকেতন সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুল, কারনাল থেকে। এর পরে ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি চণ্ডীগড়ের পাঞ্জাব প্রকৌশল কলেজ থেকে মহাকাশ প্রকৌশলের ওপর স্নাতকের পাঠ সম্পন্ন করেন। উচ্চশিক্ষার জন্যে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান এবং সেখানে ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস অ্যাট আর্লিংটন থেকে একই মহাকাশ প্রকৌশল বিষয়ে স্নাতকোত্তর শিক্ষা সমাপ্ত করেন ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে। পরবর্তীতে কল্পনা ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে ইউনিভার্সিটি অফ কলোরাডো অ্যাট বউল্ডের থেকে পিএইচডি ডিগ্রি প্রাপ্ত হন।
আরও চার বছর পরে, ১৯৮৮ সালে নাসায় যোগ দেন।কয়েক বছরেই স্বীকৃত পাইলট হয়ে ওঠেন কল্পনা। পরে নাসা রিসার্চ সেন্টারে ওভারসেট মেথডসের ভাইস প্রেসিডেন্টও হন। বাণিজ্যিক উড়ান চালানোর অনুমোদন ছিল তাঁর। সামুদ্রিক বিমান এবং মাল্টি-ইঞ্জিনের প্লেন চালানোরও লাইসেন্স ছিল তাঁর। পরে ফ্লাইট ইনস্ট্রাকটরও হয়েছিলেন তিনি।
এর মধ্যেই বিয়ে করেন মার্কিন লেখক জাঁ-পিয়ের হ্যারিসনকে। সে সুবাধে ১৯৯১ সালে মার্কিন নাগরিকত্ব পেলে নাসার অ্যাস্ট্রোনট কোরের সদস্য স্বীকৃতি পান কল্পনা।
কর্ম জীবন-
১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দে কল্পনা নাসাতে তার কর্মজীবন শুরুর পর
১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ নভেম্বর পাড়ি দেন প্রথম মহাকাশ অভিযানে। মহাকাশযান কলম্বিয়া এসটিএস ৮৭-তে মিশন বিশেষজ্ঞ হিসেবে ৩৭২ ঘণ্টা মহাকাশে কাটান তিনি। পৃথিবীর কক্ষপথে ২৫২ বার পরিক্রমা করেন। ১০০ লক্ষ মাইলেরও বেশি ভ্রমণ করেন মহাকাশে। তিনিই প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসেবে এই কৃতিত্ব অর্জন করেন।
২০০০ সালে কলম্বিয়া এসটিএস ১০৭-এর মহাকাশ অভিযানে ফের মহাকাশে যাওয়ার সুযোগ পান কল্পনা। নানা কারণে পিছিয়ে যাওয়ায় শেষমেশ ২০০৩ সালের ১৬ জানুয়ারি মহাকাশযাত্রা করেন কল্পনারা। তিনি ছাড়াও আরও ছয় মহাকাশচারী ছিলেন ওই অভিযানে।
মৃত্যু–
পৃথিবীর মাটি ছুঁতে বাকি ছিল মাত্র কয়েক মিনিট। তখনই মুহূর্তের বিস্ফোরণে ছাই হয়ে যায় মহাকাশযান। আর তার ভিতরেই অনন্ত সম্ভাবনা নিয়ে শেষ হয়ে যান ভারতের প্রথম মহিলা মহাকাশচারী কল্পনা চাওলা। সারা পৃথিবী তাঁকে এই নামে চিনলেও, তিনি ছিলেন বাবা-মায়ের আদরের মন্টো। মাত্র ৪২ বছরে শেষ হয়ে যায় তাঁর জীবন। ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দের ১ ফেব্রুয়ারি মহাকাশ থেকে প্রত্যাবর্তনের সময় কলম্বিয়া স্পেস সাটলটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সময় এক দুর্ঘটনার ফলে সাত জন ক্রুসহ বিধ্বস্ত হয় এবং কল্পনা সহ সকলে মারা যান।
শেষ ইচ্ছে-
ইন্দো-মার্কিন এই সাহসিনীর শেষ ইচ্ছে ছিল, মৃত্যুর পর তাঁর দেহভস্ম যেন হিমালয়ের বুকে বা জিওন ন্যাশনাল পার্কে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। মেয়ের ইচ্ছে পূর্ণ করেছিলেন বাবা।কল্পনা চাওলার দেহাবশেষ তাঁর ইচ্ছানুসারে উটাহের জাতীয় উদ্যানে দাহ করা হয়েছিল ও অস্থিভষ্ম ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।
সম্মাননা–
তাঁর সম্মানে, ২০০২ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ভারতে প্রবর্তিত মেট-স্যাট সিরিজের প্রথম উপগ্রহ মেটস্যাট -১ নামকরণ করা হয়েছিল কল্পনা -১।
তাঁর সম্মানে ভারত ও আমেরিকার বেশ কয়েকটি বৃত্তি, রাস্তা, বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠান নামকরণ করা হয়েছে।
উপসংহার-
সৌরজগতের নাগরিক হিসেবে নিজের পরিচয় দেওয়া কল্পনার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছিল ভারত জুড়ে। আজও ভারতের মহাকাশ চর্চায় তাঁর অবদান ভোলেননি কেউ।
সংক্ষেপে জেনে নিন কল্পনা চাওলা সম্পর্কে কয়েকটি তথ্য।
১) কল্পনার জন্ম হয় ১৯৬২ সালের ১৭ মার্চ হরিয়ানার কার্নালে।
২) কল্পনা চাওলা বি টেক পাশ করেন পাঞ্জাব ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে। কোনওদিন তিনি ক্লাশে সর্বোচ্চ নম্বর পাননি। কিন্তু বরাবর থাকতেন প্রথম পাঁচে।
৩) ১৯৮২ তে তিনি চলে যান আমেরিকায়। টেক্সাস ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করেন।
৪) কল্পনার বাবা-মা তাঁর নাম দিয়েছিলেন মন্টো। কিন্তু তিনি মন্টো নামটা নিজের ডাক নামই বানিয়ে ফেলেন।
৫) ১৯৮৩ সালে বিয়ে করেন কল্পনা। তাঁর বরের নাম জিন পিয়েরে হ্যারিসন।
৬) কল্পনা চাওলা পছন্দ করতেন, কবিতা, নাচ, এবং সাইকেল চালাতে।
৭) তাঁর স্বপ্নই ছিল মহাকাশে যাওয়ার। সেই অনুযায়ী তিনি ধাপে ধাপে পড়াশোনা করতে থাকেন।
৮) নাসা রিসার্চ সেন্টারে তিনি ওভারেস্ট মেথডের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
৯) কল্পনা চাওলার কমার্শিয়াল ফ্লাইট চালানোর লাইসেন্সও ছিল।
১০) ১৯৯১ সালে কল্পনা চাওলা আমেরিকার নাগরিকত্ব পান।
১১) নাসা স্পেস ফ্লাইট মেডেল পান তিনি।
১২) ২০০৩ সালের আজকের দিনেই তিনি কলম্বিয়া স্পেস শাটল ধ্বংসের সময় মারা যান।
১৩) কল্পনা বিশ্বাস করতেন না তিনি কোনও দেশের নাগরিক। তিনি বিশ্বাস করতেন তিনি সৌরজগতের নাগরিক।

।।তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

স্মরণে প্রতিভাময়ী অপেশাদার ভারতীয় মঞ্চশিল্পী কেয়া চক্রবর্তী।।।

কেয়া চক্রবর্তী ছিলেন একজন প্রতিভাময়ী অপেশাদার ভারতীয় মঞ্চ অভিনেতা।  কেয়া চক্রবর্তী ১৯৪২ সালের ৫ আগস্ট উত্তর কলকাতার একটি বনেদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।  বাবার নাম অজিত চক্রবর্তী।  তবে ছোটবেলা থেকেই তিনি মায়ের কাছে মানুষ হন।  তিনি স্কটিশ চার্চ কলেজের একজন ভালো ছাত্রী ছিলেন।  ইংরেজিতে এমএ পাস করার পর ওই কলেজে শিক্ষকতা শুরু করেন। ‘আন্তিগোনে’ নাটকে নাম ভূমিকায় অভিনয় করে পশ্চিমবঙ্গ সাংবাদিক অ্যাসোসিয়েশনের ‘শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী’ র পুরস্কার পান।
অভিনয় জীবন———
অভিনয় করতে ভালোবাসতেন কেয়া।  স্কটিশ চার্চ কলেজের ছাত্র থাকাকালীন, ইংরেজি ১৯৫৮, ১৯৫৯, ১৯৬০ সালে আন্তঃকলেজ নাটক প্রতিযোগিতায় সেরা অভিনয়ের জন্য পুরস্কার জিতেছিল।

আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় যুব উৎসবের জন্য দিল্লি এবং মহীশূরে আমন্ত্রিত হয়েছিল।  যাইহোক, তিনি নান্দীকার গ্রুপের প্রযোজিত নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে বাংলা মঞ্চে একজন কিংবদন্তি অভিনেত্রী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।  ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে ‘চার অধ্যায়’ নাটকে প্রথম অভিনয়।  এরপর ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে নিয়মিত অভিনয়।  ‘তিনের পয়সার পালা’ ছবিতে অভিনয়ের পর তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে।  ব্রেখটের ‘ভালো মানুষ’ নাটকের বাংলা সংস্করণে তাঁর দ্বৈত-চরিত্রের অভিনয় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
নান্দীকার এ অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়, রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত ও কেয়া চক্রবর্তী একসাথে অভিনয় একটা স্বর্ণযুগ ছিল । এর পর ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে কলেজের অধ্যাপনা ছেড়ে বিনা বেতনে নান্দীকারের সর্বক্ষণের কর্মী হন।  তার শেষ অভিনীত নাটক ‘ফুটবল’।
কেয়া চক্রবর্তী একজন ভালো অনুবাদক ছিলেন।  অভিনয়ের জন্য বার্নার্ড শ’র নাটক ‘সেন্ট জোয়ান’ অনুবাদ করেছেন।  মাঝে মাঝে টাকার জন্য সিনেমায় অভিনয় করলেও তার আসল ক্ষেত্র ছিল নাটক।  তিনি নাট্যভাবনা নিয়ে কিছু প্রবন্ধ লিখেছেন।
কেয়া চক্রবর্তীর মঞ্চাভিনয় (১৯৬১ – ১৯৭৭ )
নাটক /তাভিনয় সংখ্যা
অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায়:
নটি বিনােদিনী ,  আলাের বাইরে , মূদ্রারাক্ষস , বৃত্ত , বীতংস, অগ্নিবিষয়ক সতর্কতা ও গৌতম ,  হে সময়, উত্তাল সময়, শাহী বাদ ,   নাট্যকারের সন্ধানে দুটি চরিত্র , শের আফগান ,  মঞ্জরী আমের মঞ্জরী , তিন পয়সার পালা,  ভালােমানুষ , নীলিমা , চার অধ্যায় , রাত্রি প্রভৃতি।
রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তর পরিচালনায়—
আন্তিগােনে , ফুটবল,  টক ।
অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায়—- পূর্বরাগ।
শম্ভূ মিত্রের পরিচালনায় ——রক্তকরবী ।
শ্যামানন্দ জালানের পরিচালনায় —–তুঘলক।

মৃত্যু——–

তাঁর মৃতু ছিল মর্মান্তিক ।  সাঁকরাইলে গঙ্গার ওপর ‘জীবন যে রকম’ চলচ্চিত্রের বহিদৃর্শ্য গ্রহণের সময় (শুটিংয়ের সময়) অভিনয় করতে গিয়ে জলে ডুবে তার মৃত্যু ঘটে ১২ মার্চ,  ১৯৭৭৭ খ্রিস্টাব্দে।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

স্মরণে, বিংশ শতাব্দী বাংলা গানের কিংবদন্তি গায়িকা – উৎপলা সেন।।।

উৎপলা সেন ১২ মার্চ, ১৯২৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন বিংশ শতাব্দী বাংলা গানের একজন প্রধান জনপ্রিয় গায়িকা। বাংলা গানের স্বর্ণযুগে প্রেম ও বিরহের গানে তিনি আলাদা বিষণ্ণ সুর তুলে ধরেছেন। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, স্বামী সতীনাথ মুখোপাধ্যায় এবং অন্যান্য গায়কদের সাথে অনেক জনপ্রিয় দ্বৈত গানও গেয়েছেন।
তিনি প্রথমে মা হিরণবালা দেবীর কাছে প্রশিক্ষণ নেন, তারপর ওস্তাদ গুল মোহাম্মদ খানের কাছে।  তিনি ১৯৩৫ সালে ১৯১৩ বছর বয়সে ঢাকা বেতারে প্রথম জনসম্মুখে উপস্থিত হন।  প্রথম রেকর্ড ১৯৩৯ সালে। ১৯৪১ সালে, সুরকার সুধীরলাল চক্রবর্তীর সুর করা এক হাতে মোর পূজা থালি গানটি খুব জনপ্রিয় হয়েছিল।  মহিষাসুরবমর্দিনীর – শান্তি দিল ভরি গানে  আরও জনপ্রিয়তা পান, যা আজও শোনা যায়।

এর পর তিনি
চল্লিশের দশকের গোড়ার দিকে কলকাতায় চলে আসেন এবং তখন থেকেই আকাশবাণীর সঙ্গে যুক্ত হন।  বাংলা চলচ্চিত্রেও গান গেয়েছেন আনেক। বেনু সেনের সাথে প্রথম বিয়ে হয় তাঁ। কিন্তু স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি সঙ্গীত সহকর্মী সতীনাথ মুখোপাধ্যায় কে ১৯৬৮ সালে বিয়ে করেন।  একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়।
তাঁর ৬০০০ এর বেশি সিনেমা এবং রেকর্ডের গানের অধিকাংশই আজ বিস্মৃতপ্রায়। ইদানীং কালে দুই বাঙলাতেই পুরানো দিনের গানের চর্চা বাড়ছে – কিছু গান ‘পুনঃনির্মাণ’ মাধ্যমে আবার শোনা যাচ্ছে – এবং উৎপলা সেনের নাম আবার জনসমক্ষে শোনা যাচ্ছে। তাঁর কিছু জনপ্রিয় গান হলো যেমন, এত মেঘ এত যে আলো, ময়ুরপঙ্ক্ষী ভেসে যায়, পাখি আজ কোন সুরে গায় বা ঝিকমিক জোনাকির দ্বীপ জ্বলে শিয়রে।
দীর্ঘ কয়েক বছর ক্যান্সারাক্রান্ত উৎপলা সেন ১৩ মে, ২০০৫ সালে মারা যান কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

আশির দশক থেকেই সাড়া জাগানো জনপ্রিয়তার অধিকারিণী লেখিকা বাণী বসু, জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি।।।

বাণী বসু একজন সমসাময়িক ভারতীয় বাঙালি লেখিকা – উপন্যাস, প্রবন্ধ, কবিতা লেখেন, অনুবাদও করেন। বাণী বসু আশির দশক থেকে একাধিক সাহিত্য পুরস্কার ও সম্মানে সম্মানিত।  তিনি ১১ মার্চ, ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন।  তিনি বিজয় কৃষ্ণ গার্লস কলেজের ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক ছিলেন।  ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক  করার পর, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম.এ.  করেন।  শিক্ষার প্রথম স্থান ছিল লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ, কলকাতা এবং তারপরে স্কটিশ চার্চ কলেজ।
ছাত্রী জীবন থেকেই বাণী বসু নানা প্রবন্ধ, অনুবাদ গল্প ও কবিতা রচনায় পারদর্শিতার নজির রাখেন। ১৯৮১তে তার প্রথম গল্প আনন্দমেলা ও দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ।

শারদীয়া আনন্দলোকে ১৯৮৭তে তাঁর  প্রথম উপন্যাস জন্মভূমি মাতৃভূমি প্রকাশিত হয় । কিন্তু তার আগেই তার অনেক অনুবাদ প্রকাশিত ও আদৃত হয়েছে। তাঁর উল্লেখ্য অনুবাদগুলি হলঃ শ্রী অরবিন্দের সনেটগুচ্ছ, সমারসেট মমের সেরা প্রেমের গল্প  ও এইচ ডি লরেন্সের সেরা গল্প।
রচিত উপন্যাস——–
তাঁর রচিত উপন্যাস গুলি হলো – উত্তরসাধক, পঞ্চম পুরুষ, বাইরে, অন্তর্ঘাত, কিনার থেকে কিনারে, মেয়েলি আড্ডার হালচাল, রাধানগর, দিদিমাসির জিন, জন্মভূমি মাতৃভূমি, মৈত্রেয় জাতক, অমৃতা, নূহর নৌকা, সুরূপা কুরূপা, অষ্টম গর্ভ, অষ্টম গর্ভ (দ্বিতীয়), খনামিহিরের ঢিপি, ক্ষত্তা, কালিন্দী, কৃষ্ণ, পাঞ্চাল কন্যা কৃষ্ণা, সুযোদন দূর্যোধন, কৃষ্ণ বাসুদেব, কাক জ্যোৎস্না, অল লেডিস ভ্রমণ, একুশে পা, ট্রেকার্স, অশ্বযোনি, ফেরো মন।
পুরস্কার ও সম্মাননা——–
তারাশঙ্কর পুরস্কার (১৯৯১);  আনন্দ পুরস্কার – (মৈত্রেয় জাতক): ১৯৯৭ ; বঙ্কিম পুরস্কার ( ১৯৯৯);  ভুবনমোহিনী দাসী স্বর্ণপদক (২০০৮), কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার – (খনামিহিরের ঢিপি): ২০১০।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

স্মরণে, আজাদ হিন্দ ফৌজের প্রথম মহিলা গুপ্তচর – নীরা আর্য।।।

তিনি ছিলেন আজাদ হিন্দ ফৌজের প্রথম মহিলা গুপ্তচর, আজাদ হিন্দ ফৌজের ঝাঁসি রেজিমেন্টের নেতৃত্বে ছিলেন লক্ষী সেহেগল। দক্ষিণ এশিয়ায় বসবাসকারী ভারতীয় বংশোদ্ভুত মহিলা স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে ১৯৪৩ সালে গড়ে উঠেছিল এই রেজিমেন্ট। ট্রেনিং ক্যাম্প ছিল ব্যাংকক, রেঙ্গুন ও সিঙ্গাপুর।

নীরা আর্য আজাদ হিন্দ ফৌজের রানি ঝাঁসি রেজিমেন্টের সৈনিক ছিলেন। নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর জীবন বাঁচাতে তিনি নিজের স্বামীকে হত্যা করেন। নেতাজী তাঁকে নীরা নাগিনী বলে অভিহিত করলে তিনি নীরা নাগিনী নামে পরিচিতি লাভ করেন। বৃটিশ সরকার তাঁকে একজন গুপ্তচর হিসাবে গণ্য করেছিল। তার ভাই বসন্ত কুমারও আজাদ হিন্দ ফৌজে ছিলেন।
প্রখর বুদ্ধিমত্তা, সাহসী ও আত্মসম্মান বোধ-
অনেক লোকশিল্পী নীরা নাগিন ও তার ভাই বসন্ত কুমারের জীবন নিয়ে কবিতা ও ভজন রচনা করেছেন। নীরা নাগিনী নামে তার জীবনের একটি মহাকাব্যও রয়েছে। তার জীবন নিয়ে একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। তিনি ছিলেন এক দুর্দান্ত দেশপ্রেমিক, সাহসী ও আত্মসম্মান বোধে গর্বিত মহিলা। তার শেষ জীবন কাটে হায়দ্রাবাদে। সেখানকার মহিলারা তাকে গর্বের সাথে ‘পদ্মমা’ বলে সম্বোধন করতেন।
জন্ম ও শিক্ষাজীবন–
নীরা আর্য ১৯০২ সালের ৫ মার্চ ভারতের তত্‍কালীন যুক্তপ্রদেশের অধুনা উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের বাগপত জেলার খেকড়া শহরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার পিতা শেঠ ছজুমল ছিলেন সে সময়ের এক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। তার ব্যবসা-বাণিজ্য সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। তার পিতার ব্যবসায়ের মূল কেন্দ্র ছিল কলকাতা। তাই কলকাতাতে তার পড়াশোনা শুরু হয়েছিল। নীরা আর্য হিন্দি, ইংরেজি, বাংলার পাশাপাশি আরও অনেক ভাষায় দক্ষ ছিলেন। তিনি ব্রিটিশ ভারতের সিআইডি ইন্সপেক্টর শ্রীকান্ত জয়রঞ্জন দাসকে বিবাহ করেন। শ্রীকান্ত জয়রঞ্জন দাস ছিলেন ইংরেজপ্রভু ভক্ত অফিসার। মূলতঃ শ্রীকান্ত জয়রঞ্জন দাসকে গুপ্তচরবৃত্তি করে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুকে হত্যা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।
স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ–
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জীবন বাঁচাতে তিনি ইংরেজ সেনাবাহিনীর পদস্থ অফিসার শ্রীকান্ত জয়রঞ্জন দাসকে হত্যা করেছিলেন। একসময় সুযোগ পেয়ে শ্রীকান্ত জয়রঞ্জন দাস নেতাজিকে হত্যার জন্য গুলি চালিয়েছিলেন, কিন্তু সেই গুলি নেতাজির গাড়ীর চালককে বিদ্ধ করে । কিন্তু এরই মধ্যে নীরা আর্য শ্রীকান্ত জয়রঞ্জনের পেটে বেয়নেট চালিয়ে হত্যা করে। শ্রীকান্ত জয়রঞ্জন দাস নীরা আর্যের স্বামী ছিলেন, তাই স্বামী হত্যার কারণে নেতাজি তাঁকে নাগিনী বলে অভিহিত করেছিলেন। আজাদ হিন্দ ফৌজ আত্মসমর্পণের পরে, সমস্ত বন্দী সৈন্যকে দিল্লির লাল কেল্লায় বিচারে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু নীরাকে স্বামী হত্যার কারণে দ্বীপান্তরের সাজা দেওয়া হয়েছিল। জেলে বন্দীদশায় সেখানে তাঁকে কঠোর শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল।
আজাদ হিন্দ ফৌজের প্রথম গুপ্তচর–
নীরা আর্য আজাদ হিন্দ ফৌজের প্রথম গুপ্তচর হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। পবিত্র মোহন রায় আজাদ ভারতীয় সেনাবাহিনীর মহিলা এবং পুরুষ উভয় গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান ছিলেন। নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু নিজেই নীরাকে এই দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তার সঙ্গী মনবতী আর্য, সরস্বতী রাজামণি এবং দুর্গা মল্লা গোর্খা এবং যুবক ড্যানিয়েল কালে তার সামরিক গোয়েন্দা শাখার সাথে যুক্ত ছিল। তারা নেতাজির জন্য গুপ্তচরবৃত্তির কাজ করত। তারা বিভিন্ন কাজের অছিলায় ব্রিটিশ অফিসারদের বাড়ি ও সেনাশিবিরে প্রবেশ করতেন তথ্য সংগ্রহের জন্য, তারপর তা নেতাজীর কাছে পাঠাতেন। এই কাজ করতে গিয়ে ধরা পড়লে প্রথমে নথিগুলি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া ও পরে পিস্তল চালিয়ে আত্মহত্যা করতে হবে, এই নিয়ম তারা কঠোর ভাবে মেনে চলতেন।
রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে নীরাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড-
দক্ষিণ এশিয়ার অক্ষশক্তির পরাজয়ের পর ছত্রভঙ্গ হয়ে গিয়েছিল আজাদ হিন্দ ফৌজ। ধরা পড়েছিলেন আজাদ হিন্দ ফৌজের হাজার হাজার সেনানী। রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে লালকেল্লায় তাদের বিচার শুরু হয়, বেশির ভাগ সেনানী ছাড়া পেলেও নীরাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়, জাহাজে করে পাঠানো হয় আন্দামানের সেলুলার জেলে। সেখানে তার ওপর যে অমানুষিক অত্যাচার হয়েছিল তা সত্যিই ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।
আন্দামানে নীরাকে রাখা হয়েছিল একটি ছোট কুঠরিতে, সেখানে বাকি বন্দিরা ছিল মুক্ত, কিন্তু নীরাকে বন্য জন্তুর মত প্রথমদিন বেঁধে রাখা হয়েছিল। গলায় বাঁধা ছিল চেন ও হাতে-পায়ে ছিল শেকল লাগানো বেড়ি। নীরাকে কিছু খেতে দেওয়া হয়নি প্রথম দিন। শোয়ার জন্য মাদুর কিংবা কম্বল কিছুই দেওয়া হয়নি প্রথমে। কুঠরির কনকনে ঠাণ্ডার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ে ছিলেন পরিশ্রান্ত নীরা। মাঝরাতে এক প্রহরী কুঠরিতে ঢুকে গায়ের ওপর ছুঁড়ে দিয়েছিল দুটো কম্বল। সকাল বেলায় প্রথম জুটেছিল খাবার, খেতে দেওয়া হয়েছিল ফুটন্ত খিচুড়ি।
এরপরেও আরও অনেক পাশবিক অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে নীরাকে। সারা শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়ে গিয়েছিল। তবুও মনে মনে স্বপ্ন দেখতেন স্বাধীন ভারতে সূর্যোদয় দেখবেন। এই মহান ত্যাগের সম্মান দেয়নি দেশ। নীরা আন্দামানে আসার একবছর পর স্বাধীন হয়েছিল দেশ। মুক্তি পেয়েছিলেন নীরা। এই আত্মত্যাগের সম্মান দেয়নি দেশ। অভিমানে সাধারণের ভিড়ে হারিয়ে গিয়েছিলেন অসাধারণ নীরা।
স্বাধীনতা পরবর্তী জীবন-
স্বাধীনতার পরে, তিনি ফুল বিক্রি করে জীবনযাপন করেছিলেন, তবে কোনও সরকারী সহায়তা বা পেনশন গ্রহণ করেননি। তার ভাই বসন্ত কুমারও একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি স্বাধীনতার পর সন্ন্যাসী হয়েছিলেন। নীরা স্বাধীনতা সংগ্রামে তার ভূমিকা নিয়ে আত্মজীবনীও লিখেছেন। উর্দু লেখক ফারহানা তাজ’কে তিনি তার জীবনের অনেক ঘটনা শুনিয়েছিলেন। তিনি তার জীবন নিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের পটভূমিতে একটি উপন্যাসও রচনা করেন।
সম্মাননা-
নীরা আর্য নামে একটি জাতীয় পুরষ্কারও চালু করা হয়েছে। ছত্তিশগড়ের অভিনেতা অখিলেশ পান্ডে প্রথম নীরা আর্য পুরষ্কারের জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবং তাঁকে নীরা আর্য পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল।
জীবনাবসান-
শেষ জীবনে তিনি তিনি দরিদ্র, অসহায়, নিঃস্ব হয়ে পরেছিলেন। হায়দরাবাদের ফালকনুমার একটি কুঁড়ে ঘরে বাস করতেন। নীরা আর্য জীবনের শেষ দিনগুলিতে ফুল বিক্রি করে কাটিয়েছেন এবং সরকারি জমিতে থাকার কারণে তার কুঁড়েঘরটিও শেষ মুহুর্তে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। সকলের অলক্ষ্যে ১৯৯৮ সালের ২৬শে জুলাই উসমানিয়া হাসপাতালে প্রয়াত হয়েছিলেন ৯৬ বছরের বীরাঙ্গনা এক অগ্নিকন্যা নীরা আর্য্য।
।।তথ্য : সংগৃহীত ইন্টারনেট ও উইকিপিডিয়া।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

স্মরণে, বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যাওয়া এক বিদুষী কবি – তরু দত্ত।।।।

তরু দত্ত র জন্ম  মার্চ ৪, ১৮৫৬ সালে। তিনি এক ভারতীয় বাঙালি কবি , অনুবাদক ও ঔপন্যাসিক ছিলেন, যিনি ইংরেজি এবং ফরাসিতে রচনা করেছিলেন ।  বোন অরু ও ভাই আবজুর পর তিনি ছিলেন কনিষ্ঠ সন্তান।  লেখক এবং ভারতীয় বেসামরিক কর্মচারী রমেশ চন্দ্র দত্ত ছিলেন তার খুড়তুত ভাই।  তাদের পরিবার ১৮৬২ সালে খ্রিস্টান হয়ে ওঠে।
তিনি ইংল্যান্ডে ফরাসি ভাষায় উচ্চ শিক্ষা লাভ করেন।  তিনি 1871 – 1873 সাল কেমব্রিজে কাটিয়েছিলেন এবং সেই সময় কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে “হায়ার লেকচারস ফর উইমেন” তে অংশ নিয়েছিলেন।  এই সময়ে তরু দত্ত সিডনির সাসেক্স কলেজের রেভারেন্ড জন মার্টিনের মেয়ে মেরি মার্টিনের সাথে দেখা করেন এবং তাদের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।

দেশে ফিরেও তারা চিঠি আদান-প্রদান করতে থাকে।  ইংল্যান্ড থেকে আগত আত্মীয়দের কাছে তরু দত্তের চিঠিগুলি তাঁর চিঠির সংগ্রহের অন্তর্ভুক্ত।  তার মৌলিক কবিতাগুলো ছোট হলেও মানব জীবনের নানা সমস্যা নিয়ে কাজ করে।  লা জার্নাল নামে একটি ফরাসি উপন্যাস এবং বিয়াঙ্কা নামে একটি ইংরেজি উপন্যাস রয়েছে।
তাঁর সংকলন ‘এ শেফ গ্লানড ফরাসি ফিল্ডস’-এ তাঁর ফরাসি কবিতা এবং প্রাচীন গীতিনাট্য এবং ‘লিজেন্ড অফ হিন্দুস্তান’-এর ইংরেজি অনুবাদ রয়েছে যা তাঁর সংস্কৃত সাহিত্যের অনুবাদ ও রূপান্তরগুলি সংকলন করে।  তিনি ”এ সি অব ফলিএজ” কবিতাটিও লিখেছেন।  তিনি একটি সুন্দর কবিতাও লিখেছেন লোটাস।  এতে কবি ফুল সম্পর্কে তার ধারণা উপস্থাপন করেন।  তিনি মানুষের আকারে ফুলের প্রতিনিধিত্ব করেন।  কবি পদ্ম গোলাপকে চিত্র হিসেবে ব্যবহার করেছেন।
অগাস্ট ৩০, ১৮৭৭ সালে তিনি প্রয়াত হন।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

বাংলা চলচ্চিত্রের নির্বাক ও সবাক দুই যুগেরই স্বনামধন্য ও জনপ্রিয় নায়িকা – নিভাননী দেবী, নৃত্য ও সঙ্গীতে সমান পারদর্শী ছিলেন।।।

নিভানানী দেবী বাংলা চলচ্চিত্রের নির্বাক ও সবাক- উভয় যুগেরই একজন সুপরিচিত এবং জনপ্রিয় নায়িকা।  মঞ্চে অভিনয় শুরু করে চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন।  তিনি নৃত্য ও সঙ্গীতে সমান পারদর্শী ছিলেন।
জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন—–
নিভানানী দেবীর জন্ম ২ মার্চ, ১৮৯৫-এ পিতা যতীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিনেত্রী ব্রজরাণী দেবীর ঘরে।  তিনি নয় বছর বয়সে তার মাকে এবং ১৫ বছর বয়সে তার বাবাকে হারান। এই পরিস্থিতিতে নিভানানিকে তার ছয় ভাইবোনের সাথে তার মামার বাড়িতে থাকতে হয়েছিল।  সেখানে তাদের লালন-পালন করেন বিখ্যাত অভিনেত্রী চুনিবালা, তাদের মায়ের বন্ধু, এবং তার হাত ধরে ৬ বছর বয়সে বাংলার মঞ্চে প্রবেশ করেন।

অর্ধেন্দুশেখর মুস্তাফি পরিচালিত “সমাজ” নাটকে ছোট ছেলে হিসেবে তার প্রথম অভিনয়।  নাচ-গানেও পারদর্শী ছিলেন।  অর্ধেন্দুশেখর মুস্তাফি, অভিনেত্রী তারাসুন্দরী এবং পরে নরেশ মিত্রের কাছ থেকে তাঁর অভিনয়ের প্রথম শিক্ষা নেওয়া হয়েছিল।
অভিনয় জীবন——
তিনি প্রথম ‘বলিদান’ নাটকে অভিনয় করে খ্যাতি পান।  ন্যাশনাল থিয়েটারে থাকাকালীন, তিনি যশোরের ধনী জমির মালিক এবং নাট্যপ্রেমী হেমেন্দ্রনাথ রায়চৌধুরীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।  বিয়ের পর তিনি মঞ্চ ছেড়ে চলে যান, কিন্তু পরে অপরেশচন্দ্র মজুমদার এবং প্রবোধ গুহের অনুরোধে তিনি স্টার থিয়েটারে ‘অযোধ্যার বেগম’ নাটকে প্রথমে গুজরি চরিত্রে এবং পরে তারাসুন্দরী অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রধান রাণীর চরিত্রে অভিনয় করেন।  সে সময় বার্মা আর্ট থিয়েটারের সঙ্গে রেঙ্গুনেও অভিনয় করেন।  মিনার্ভা থিয়েটারে থাকাকালীন, আকাশবাণী ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বেতার কেন্দ্রের সাথেও যুক্ত হন।
প্রায় পঞ্চাশ বৎসরের অভিনেত্রী জীবনে মঞ্চ ছাড়া চলচ্চিত্রে ৩৫০ টি ছায়াছবিতে অভিনয় করেছেন। শঙ্করাচার্য, বিষবৃক্ষ, নিষিদ্ধ ফল, প্রহ্লাদ প্রভৃতি নির্বাক ছবিতে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা লাভ করেন।
নিভাননী অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবিগুলি হল –
চিরকুমার সভা,  কপালকুণ্ডলা,  মীরাবাঈ,  পরপারে,  ইম্পস্টার,  প্রভাস মিলন,  জীবন মরণ,  বামনাবতার, বড়দিদি।
তার অভিনীত আরো ছায়াছবিগুলি হল –
‘প্রতিশোধ’, ‘শ্রীরাধা’,  ‘যখের ধন’, ‘অমরগীতি’, ‘শাপমুক্তি’, ‘ব্যবধান’, ‘কবি জয়দেব’, ‘জননী’,  ‘দেশের দাবি’ ‘রামপ্রসাদ’, স্বয়ংসিদ্ধা’  ‘সহধর্মিণী’, মানে না মানা’, ‘সাত নম্বর বাড়ি’, প্রভৃতি।
নিভাননী দেবী এক শৌখিন নাট্যদলের হয়ে ‘বিপ্রদাস’ নাটকে শেষ অভিনয় করেন এবং তার শেষ অভিনীত ছায়াছবি ছিল ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে মুক্তিপ্রাপ্ত “রাতের রজনীগন্ধা”। ওই ছবিতে তার সঙ্গে উত্তমকুমার, অপর্ণা সেন ,অজয় ব্যানার্জি, বঙ্কিম ঘোষ প্রমুখেরাও ছিলেন।
মৃত্যু—‐–
১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দের ২২ শে ডিসেম্বর তিনি পরলোক গমন করেন।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This
Categories
নারী কথা প্রবন্ধ

স্মরণে খ্যাতনামা বাঙালি সাহিত্যিক শৈলবালা ঘোষজায়া।।।

শৈলবালা ঘোষজায়া একজন খ্যাতনামা বাঙালি সাহিত্যিক। বাংলায় বহু উপন্যাস, ছোটগল্প রচনা করেছিলেন তিনি।
শৈলবালা ২ মার্চ, ১৮৯৪ সালে বাংলাদেশের কক্সবাজারে জন্মগ্রহণ করেন, যেখানে তার বাবা কাজ করতেন।  পরে বাবা, ডাক্তার কুঞ্জবিহারী নন্দী অবসর গ্রহণ করেন এবং বর্ধমান জেলায় চলে আসেন।   তিনি বর্ধমান রাজ গার্লস স্কুলের মেধাবী ছাত্রী ছিলেন।  পিতা ও বড় ভাইয়ের কাছ থেকে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন।  বিয়ের পর লেখাপড়ার কোনো পরিবেশ না থাকলেও গোপনে রাতের বেলা পড়া-লেখা করতেন।  শেখ আন্দু উপন্যাসটি লিখে স্বামীর হাত ধরে প্রবাসী পত্রিকায় পাঠান।  এই রচনাটিই তাকে খ্যাতি এনে দেয়।  বাংলা নারী প্রগতিশীল সাহিত্যে শৈলবালা ঘোষজায়া একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।

১৯০৭ সালে, বর্ধমানের মেমারি গ্রামের নরেন্দ্রমোহন ঘোষের সাথে বাল্যকালে তার বিয়ে হয়।  শ্বশুরগৃহে সাহিত্যচর্চা প্রায় নিষিদ্ধ ছিল, তার স্বামী নরেন্দ্রমোহন তার সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত নরেন্দ্রমোহন উন্মাদ রোগাক্রান্ত হয়ে যান ও তার আক্রমনে শৈলবালা নিজে এক চোখের দৃষ্টি হারান। স্বামী মারা গেলে তিনি একটি আশ্রমে থেকে লেখালিখি চালিয়ে গিয়েছিলেন দীর্ঘকাল অবধি।
শৈলবালা ঘোষজায়ার প্রকাশিত ৩৮ টি গ্রন্থ ছাড়াও বিভিন্ন মাসিকপত্রে উপন্যাস, আত্মজীবনী ছোটগল্প ইত্যাদি প্রকাশিত ও সমাদৃত হয়েছে। শিশুদের জন্যে রহস্য উপন্যাসও লিখেছেন তিনি। তার রচিত গ্রন্থগুলির মধ্যে নমিতা, জন্ম অপরাধী, জন্ম অভিশপ্তা, মঙ্গল মঠ, মনীষা, ইমানদার, মুচি, বিনির্ণয়, গঙ্গাজল, তেজস্বতী, চৌকো চোয়াল, জয়পতাকা, স্মৃতিচিহ্ন, অন্তরের পথে ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। কবিকঙ্কন চন্ডীর ওপর গবেষণামূলক প্রবন্ধ লিখে সরস্বতী উপাধি পান তিনি।
কলকাতা  স্নাতক মহিলা সংস্থা  এবং সাহিত্যকারের যৌথ উদ্যোগে লীলা মজুমদার এবং মহাশ্বেতা দেবীর নেতৃত্বে আয়োজিত একটি সাহিত্য সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে তাকে সম্মানিত করা হয়। তার সাহিত্যসেবার জন্যে নদীয়ার মানদ মন্ডলী তাকে ‘সাহিত্য ভারতী’ ও ‘রত্নপ্রভা’ উপাধি প্রদান করে।
মৃত্যু—‐—
২১ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৪ সালে মারা যান শৈলবালা ঘোষজায়া।

।। তথ্য : সংগৃহীত উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন ওয়েবসাইট।।

Share This